আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য,
যিনি বলেছেন “ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।” [সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,,
مَا بَالُ رِجَالٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللهِ مَا كَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللهِ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ قَضَاءُ اللهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللهِ أَوْثَق.
“লোকদের কী হলো যে, তারা এমন শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর বিধানে নেই। আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাত্বিল বলে গণ্য হবে, শত শর্ত হলেও। আল্লাহর ফায়সালাই সবচেয়ে সঠিক এবং আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়।”
📚[স্বহীহ্ বুখারী, হা/২১৬৮]
. 🔸প্রারাম্ভিকা,
দ্বীনের কল্যানের জন্য শরী’আহ্ বিরোধীদের সমালোচনা করা শার’ঈ মানহাজের (Methodology) অন্তর্ভুক্ত। এটা আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত মানহাজ, তাঁর রসূলের (স্বল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ বর্ণিত মানহাজ, যুগ যুগ ধরে চলে আসা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ ও তাঁদের সত্যিকারের অনুসারীদের মানহাজ। হক্বপন্থী সালাফীদের কাছে এই মানহাজ অবিদিত কোন বিষয় নয়, বরং সুবিদিত ও অতি পরিচিত বিষয়। তারা এটাকে শরী’আহ্ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু কিছু শৈথিল্যপন্থী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি পর্বতের চেয়েও ভারী এবং লৌহের চেয়েও কঠিন। তাই তাদের অনেকেই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনা। কথিপয় বিভ্রান্ত ব্যক্তি এই দ্বীনী মানহাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মস্তিষ্কপ্রসূত বাত্বিল ক্বাইদাহ্ উপস্থাপন করে। যুগে যুগে আমাদের ‘আ-লিমগণও সেই বাত্বিল শর্ত ও উসূলকে খণ্ডন করে তাদের দাবির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং এখনও করছেন।
ফালিল্লা-হিল হামদ।
.
বর্তমানে আমাদের কিছু দেশীয় ভাইদের মধ্যেও এই নিত্যনতুন ক্বা'ইদাহ্ প্রণয়নের প্রবণতা বেশ প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাদের তৈরি বাত্বিল উসূল বা ক্ব‘ইদাহ্গুলোর একটি হল,কোন ব্যক্তির সমালোচনা করতে হলে আগে তার সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে।
যখনি আপনি দ্বীনের দা’ওয়াতে আমদানীজাত বিভিন্ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ভ্রান্ত মুফতী ও বিদ’আতী শাইখদের সমালোচনা করতে যাবেন তখনি আপনার উপর খড়গহস্ত হয়ে এই উসূল প্রয়োগ করবে!
বলবে, তিনি তো আলিম আর আপনি?আপনার কি তাঁর মত জ্ঞান আছে?তিনি তো আল আযহার বা মদিনায় পড়েছেন আর আপনি? আগে তাঁর মত জ্ঞান নিয়ে আসুন,তাঁর মত গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করুন, তারপর সমালোচনা করিয়েন ইত্যাদি অথচ এটা একটা বাত্বিল কথা।
[আল্লাহ্ তাদেরকে হিদায়াত দান করুন। আ-মীন]
. আমরা আজকে উল্লিখিত ভ্রান্ত ক্ব‘ইদাহর অসারতা এবং তাদের প্রণীত বাত্বিল শর্ত ও উসূল খন্ডন করব ইনশা-আল্লা-হ্। আমরা কয়েকটি পয়েন্টে কথা বলব। যথাক্রমে সেগুলো হল-
1️⃣ শরী’আহ্ বিরোধীদের সমালোচনা করার গুরুত্ব।
2️⃣ আ-লিম - কে?
3️⃣ কারা আলিম সার্টিফাই করবেন?
4️⃣ রদ করার জন্য কি আলিম হওয়া শর্ত?
5️⃣ একজন বিভ্রান্ত বক্তার পর্যালোচনা!
6️⃣ কথিপয় ব্যক্তির উপহাসের অপনোদন!
.প্রিয় পাঠক, তাহলে আসুন, জেনে নিই উপরিউক্ত এই বাত্বিল ক্ব‘ইদাহর অসারতা সম্পর্কে -
1️⃣ শরী’আহ্ বিরোধীদের সমালোচনা করার গুরুত্ব:
✍ তামীম আদ দা-রী (রদ্বিয়াল্লা-হু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
" الدِّينُ النَّصِيحَةُ " قُلْنَا لِمَنْ قَالَ " لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ."
“সদুপদেশ দেয়াই দ্বীন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য উপদেশ ? তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের জন্য।”
[📚স্বহীহ্ মুসলিম, কিতা-বুল ঈমা-ন, হা/৫৫]
✍ ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খলফ আল বার্বাহারী (রহিমাহুল্লা-হ্) [মৃতঃ ৩২৯ হিঃ] বলেছেন,
ﻻﻳﺤﻞ ﺃﻥ ﺗﻜﺘﻢ ﺍﻟﻨّﺼﻴﺤﺔ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺑﺮّﻫﻢ ﻭﻓﺎﺟﺮﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ، ﻓﻤﻦ ﻛﺘﻢ ، ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ، ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻓﻘﺪ ﺧﺎﻥ ﺍﻟﻠّﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ.
“পূণ্যবান হোক বা পাপাচারী হোক, দ্বীনের ব্যাপারে কোন মুসলিমের কাছে নাস্বীহাহ্ গোপন করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি তা গোপন করল, সে মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করল। আর যে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিল, সে মূলত দ্বীনকেই ধোঁকা দিল। আর যে দ্বীনকে ধোঁকা দিল, সে তো আল্লা-হ্, তাঁর রসূল এবং মু’মিনদের সাথে খেয়ানত করল।”
[📚ইমাম বার্বাহারী (রহিমাহুল্লা-হ্), শারহুস সুন্নাহ্, পৃষ্ঠাঃ ৯৩; মাকতাবাতুল গুরাবা-ইল আছারিয়্যাহ্, মাদীনাহ্ ছাপা; সনঃ ১৪১৪ হিঃ/১৯৯৩ খ্রিঃ (১ম প্রকাশ)]
✍ মু’মিনদের প্রতি নাসীহাহ্ কেমন হওয়া উচিত তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাক্বীহুঝ ঝামান আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ স্ব-লিহ্ বিন ফাওঝান আল ফাওঝান (হাফিয্বাহুল্লা-হ্) [জন্মঃ ১৩৫৪ হিঃ/১৯৩৫ খ্রিঃ] বলেছেন,
أن تُرشِدهم إلي الصواب، وتحذّرهم من الأخطاء، و أن تأمر بالمعروف وتنهي عن المنكر، و أن تعلِّم الجاهلَ وتذكِّر الغافلَ.
“তুমি তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে, ভুল থেকে সতর্ক করবে। তুমি সৎকাজের আদেশ দিবে, আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। অজ্ঞকে শিক্ষা দিবে, আর (ঘুমন্ত) উদাসীনকে জাগ্রত করবে।”
📚[শাইখ স্বলিহ্ আল ফাওঝান, ইতহা-ফুল ক্ব-রী বিত তা’লীক্বা-তি ‘আলা- শারহিস সুন্নাহ্ লিল ইমা-ম আল বার্বাহা-রী; খণ্ডঃ ১; পৃষ্ঠাঃ ৩১২; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়া-দ্ব (রিয়াদ) ছাপা; সনঃ ১৪৩০ হিঃ/২০০৯ খ্রিঃ (২য় প্রকাশ)]
✍ বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ্ সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী আশ শাইখুল ‘আল্লামাহ্ ইমাম ‘আব্দুল ‘আঝীঝ বিন ‘আব্দুল্লাহ্ বিন বাঝ (রহিমাহুল্লা-হ্) [মৃতঃ ১৪২০ হিঃ/১৯৯৯ খ্রিঃ] বলেছেন,
"ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﺴﻜﻮﺕ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻟﻠﻔﺎﺟﺮ ﻭﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻉ ﻭﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﻏﻠﻂ ﻋﻈﻴﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻧﺘﺸﺎﺭ ﺍﻟﺸﺮ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﺧﺘﻔﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﻗﻠﺘﻪ ﻭﺧﻔﺎﺀ ﺍﻟﺴﻨﺔ. ﻓﺎﻟﻮﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﻜﻠﻤﻮﺍ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻭﻳﺪﻋﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻨﻜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭﻳﺤﺬﺭﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻭﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﻭﺑﺼﻴﺮﺓ ."
“পাপাচারী, মূর্খ ও বিদ’আতীর বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা ‘আ-লিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা এটা একটা মারাত্মক গলদ। এটা অকল্যান ও বিদ’আত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটা কল্যান কমে যাওয়া, দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ্ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং ‘আ-লিমদের জন্য হক্ব বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বা-ত্বিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদের সতর্ক করা ওয়া-জিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শার’ঈ ‘ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।”
📚[ইমাম ইবনু বাঝ (রহিমাহুল্লা-হ্), মাজমূ’উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতিম মুতানাওয়্যা’আহ্; খণ্ডঃ ৬; পৃষ্ঠাঃ ৫৩; দারুল ক্বসিম, রিয়াদ্ব (রিয়াদ) ছাপা; সনঃ ১৪২০ হিজরী]
✍ সৌদি ফাতা-ওয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আঝীঝ বিন ‘আব্দুল্লাহ্ আলুশ শাইখ (হাফিয্বাহুল্লা-হ্) [জন্মঃ ১৩৬২ হিঃ/১৯৪৩ খ্রিঃ] বলেছেন,
ﺍﻟﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺣﻤﺎﻳﺔ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺼﻖ ﺑﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﺘﺄﻟﻴﻒ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻃﺒﻌﻬﺎ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺣﻖ ﻭﺩﻋﻮﺓ ﻟﻠﺤﻖ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻤﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻥ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻓﺈﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻄﺄ.
“বিদ’আতীদেরকে খন্ডন(Refute) করা আল্লা-হর পথে জিহা-দের অন্তর্ভুক্ত। এটা নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে শরী’আহ্কে হেফাজত করার অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করা, তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করাটাই হক্ব এবং এটাই হক্বের দা’ওয়াত ও আল্লা-হর রাস্তায় জিহা-দ। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, বিদ’আতীদেরকে রদ করে গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করা নব উদ্ভাবিত বিষয়, সে অবশ্যই ভুলের উপর রয়েছে।”
📚[রিয়াদ্ব পত্রিকা; শুক্রবার, ৪ মুহার্রাম, ১৪২৪ হিজরী; সংখ্যাঃ ১২৬৭৪;]
. 2️⃣ আ-লিম - কে?-------
‘আলিম ও মুজতাহিদ অভিধান দুটি অভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির মুহাদ্দিস ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”المُجتهِدُ في الحقيقةِ هو العَالِمُ.“
“প্রকৃতপক্ষে মুজতাহিদ ব্যক্তিই হলেন ‘আলিম।”
📚[ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুল উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৬৭২; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম ছাপা; সন: ১৪৩৫ হিজরী (৪র্থ প্রকাশ)]
‘মুজতাহিদ’ একটি বিশেষ্য, যা ‘ইজতিহাদ’ ক্রিয়ামূল থেকে উদগত হয়েছে। ইজতিহাদের আভি
আবিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের দিকে লক্ষ করলে আমরা মুজতাহিদের পরিচয় সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা লাভ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
আভিধানিক অর্থে —
”بذل المجهود واستفراغ الوسع في فعل من الأفعال، ولا يستعمل إلا فيما فيه مشقة، يقال: اجتهد في حمل الصخرة، ولا يقال: اجتهد في حمل العصا أو النواة.“
“কোনো কাজে চেষ্টাপ্রচেষ্টা করা এবং শক্তিসামর্থ্য ব্যয় করাকে ইজতিহাদ বলে। এই অভিধাটি শুধুমাত্র ঐ কাজের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হবে, যাতে কষ্ট ও ক্লেশ যুক্ত থাকে। একারণে বলা হবে, সে (ভারি) প্রস্তরখণ্ডটি বহন করতে ইজতিহাদ করেছে। একথা বলা হবে না যে, সে একটি লাঠি বা একটি আঁটি বহন করতে ইজতিহাদ করেছে।”
📚 [শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) প্রমুখ; তাসহীলুল উসূল ইলা ফাহমি ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ১১৪; দারুল ইমাম আহমাদ, কায়রো ছাপা; সন: ১৪৩২ হি./২০১১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
পারিভাষিক অর্থে —
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”بذل الجهد لإدراك حكم شرعي.“
“কোন একটি শার‘ঈ বিধান জানার জন্য চেষ্টাপ্রচেষ্টা করাকে ইজতিহাদ বলে।”
📚 [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আল-উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৮৫; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম ছাপা; সন: ১৪২৬ হিজরী]
3️⃣ কারা আ-লিম সার্টিফাই করবেন?
একজন জুহুরীই কেবলমাত্র চিনতে পারে কোনটা আসল রত্ন কোনটা সস্তা পাথর, একজন স্বর্ণকারই চিনতে পারে কোনটা খাঁটি স্বর্ণ আর কোনটা সিটি গোল্ড বা ইমিটেশান!
ঠিক তেমনি কেবলমাত্র একজন প্রকৃত আলেমই চিনতে পারেন, কে আলেম আর কে জাহেল (মূর্খ)।
আল্লাহুল মুস্তা‘আন।
সালাফদের [সাহাবী(রাঃ)-তাবেয়ী(রহঃ)-ত
✍ মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
”ﻣﺎ ﺃﺟَﺒْﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻔَﺘْﻮﻯ ﺣﺘﻰ ﺳﺄﻟﺖ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﻋْﻠَﻢ ﻣﻨﻲ : ﻫﻞ ﺗَﺮﺍﻧﻲ ﻣَﻮﺿِﻌﺎ ﻟﺬﻟﻚ ؟ ؛ ﺳﺄﻟﺖ ﺭَﺑﻴﻌَﺔ ، ﻭﺳﺄﻟﺖ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ، ﻓﺄَﻣَﺮﺍﻧﻲ ﺑﺬﻟﻚ ، ﻓﻘﻠﺖ ﻟﻪ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋَﺒْﺪ ﺍﻟﻠﻪ : ﻟﻮ ﻧَﻬَﻮْﻙ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺖ ﺃﻧْﺘَﻬﻲ ؛ ﻻ ﻳَﻨﺒَﻐﻲ ﻟﺮَﺟُﻞ ﺃﻥ ﻳﺮﻯ ﻧَﻔﺴَﻪ ﺃﻫﻼ ﻟِﺸَﻲﺀ ، ﺣﺘﻰ ﻳَﺴﺄَﻝ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﻋْﻠَﻢ ﻣﻨﻪ.“
“আমি ফতোয়ার জবাব দেয়নি,যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তিনি আমাকে এর উপযুক্ত মনে করেন কিনা। আমি রবী‘আহ্কে জিজ্ঞেস করেছি, আমি ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদকে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা আমাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে (ইমাম মালিককে) বললাম, হে আবূ ‘আব্দুল্লাহ, তাঁরা যদি আপনাকে নিষেধ করতেন ? তিনি বললেন, তাহলে আমি বিরত থাকতাম। কোন ব্যক্তির উচিত নয় নিজেকে কোনো বিষয়ের উপযুক্ত মনে করা, যতক্ষণ না সে (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে) তার চেয়ে বেশি জানা ব্যক্তিকে (নিজের) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে।”
📚 [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৬২; মুআসসাসাতুর রিসালাহ্ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
✍ ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন,
”ﻣَﺎ ﺃَﻓْﺘَﻴْﺖُ ﺣَﺘَّﻰ ﺷَﻬِﺪَ ﻟِﻲ ﺳَﺒْﻌُﻮﻥَ ﺃَﻧِّﻲ ﺃَﻫْﻞٌ ﻟِﺬَﻟِﻚَ.“
“আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ফাতওয়া দিইনি, যতক্ষণ না সত্তরজন (‘আলিম) আমার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আমি এ কাজের উপযুক্ত।”
📚 [আবূ নু‘আইম আল ইসবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩১৬; আছার নং: ৮৯৭০]
✍ ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”الناس في حقائق الإيمان متفاضلون تفاضلا عظيما، فأهل الطبقة العليا يعلمون حال أهل السفلى من غير عكس، كما أن أهل الجنة في الجنة ينزل الأعلى إلى الأسفل، ولا يصعد الأسفل إلى الأعلى، والعالم يعرف الجاهل؛ لأنه كان جاهلا والجاهل لا يعرف العالم لأنه لم يكن عالماً.“
“ঈমানের প্রকৃতত্বের ক্ষেত্রে মানুষ বিশাল (মর্যাদাগত) পার্থক্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। সর্বোচ্চ স্তরের অধিবাসীরা কোনরূপ বৈপরীত্য ছাড়াই নিচের স্তরের অধিবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে জানে। যেমনভাবে জান্নাতে জান্নাতবাসীদের মধ্যে উঁচু স্তরের অধিবাসী নিচু স্তরের অধিবাসীর নিকট নামতে পারবে, কিন্তু নিচু স্তরের অধিবাসী উঁচু স্তরের অধিবাসীর নিকট উঠতে পারবে না। ‘আলিম জাহিলকে চিনতে পারেন, কেননা তিনি একসময় জাহিল ছিলেন। কিন্তু জাহিল ‘আলিমকে চিনতে পারে না, কারণ সে কখনো ‘আলিম ছিল না।”
📚 [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ্), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৩৫; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ্ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদের রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]
✍ ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”ﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻻ ﻳﻌﻠﻢ ﺭﺗﺒﺔ ﻧﻔﺴﻪ ، ﻓﻜﻴﻒ ﻳﻌﺮﻑ ﺭﺗﺒﺔ ﻏﻴﺮﻩ!؟“
“জাহিল ব্যক্তি নিজের অবস্থান সম্পর্কেই অবগত নয়, সে কিভাবে অন্যের অবস্থান সম্পর্কে জানবে !?”
📚 [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩২১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ্ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
.
4️⃣ রদ করার জন্য কি আলিম হওয়া শর্ত?
✍ আল্লামাহ্ ইসহাক্ব বিন আহমাদ আল ‘আছলী আল হাম্বালী (রহিমাহুল্লা-হ্) ইবনুল জাওঝী (রহিমাহুল্লা-হ্) [মৃতঃ ৫৯৭ হিঃ] কে রদ করতে গিয়ে বলেছেন,
ﻓﻼ ﻳﺨﻔﻰ ﺃﻥ : ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ... ﻓﻠﺴﺖَ ﺑﺄﻋﻠﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ؛ ﺣﻴﺚ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻋﻤﺮ : ﺃﺗﺼﻠﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﺃُﺑَﻲِّ ؟ ! ﻓﺄُﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ : (ﻭﻻ ﺗُﺼﻞِّ ﻋﻠﻰ ﺃﺣﺪٍ ﻣﻨﻬﻢ)، ﻭﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳُﻨْﻜِﺮ ﻣﻦ ﻗﻞ ﻋﻠﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﻛَﺜُﺮَ ﻋﻠﻤﻪ ﺇﺫﺍً ﻟﺘﻌﻄﻞ ﺍﻷﻣﺮ ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ، ﻭﺻﺮﻧﺎ ﻛﺒﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﺣﻴﺚ ﻗﺎﻝ ﺗﻌﺎﻟﻰ (ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻻ ﻳﺘﻨﺎﻫﻮﻥ ﻋﻦ ﻣﻨﻜﺮ ﻓﻌﻠﻮﻩ)، ﺑﻞ ﻳﻨﻜﺮ ﺍﻟﻤﻔﻀﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﺎﺿﻞ."
“একথা অবিদিত নয় যে, দ্বীন হল নাস্বীহাহ্ তথা কল্যানকামিতার নাম।... তুমি রাসূল (স্বল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেয়ে বেশি জ্ঞানী নও। যাঁকে ইমাম ‘উমার (রদ্বিয়াল্লা-হু ‘আনহু) বলেছেন, “আপনি (মুনাফিক্ব সর্দার) ইবনু উবাইয়ের জানাঝাহ্ পড়ছেন! ?” তখন ক্বুরআন অবতীর্ণ হল:-
“মুনাফিক্ব কাফিরদের কেউ মারা গেলে আপনি তাদের জানাঝাহর স্বলাত পড়বেন না।” [সূরাহ্ তাওবাহ্ঃ ৮৪]
যার ‘ইলম কম সে যদি (তার চেয়ে) বেশি ‘ইলমওয়ালা ব্যক্তিকে খন্ডন(Refute) না করত,তাহলে তো সৎকাজের প্রতি আদেশদানের পুরো বিষয়টিই ভেস্তে যেত। আর আমরা হয়ে যেতাম বানী ইস্রা-ঈল জাতির মত। যাদের ব্যাপারে আল্লা-হ্ তা’আ-লা বলেছেন, “তারা যে সব অসৎকর্ম করত তা থেকে একে অন্যকে নিষেধ করত না”। [সূরাহ্ মা-ইদাহ্ঃ ৭৯]
📚[ইমাম ইবনু রজাব হাম্বালী (রহিমাহুল্লা-হ্), যাইলু ত্ববাক্বা-তিল হানা-বিলাহ্; খণ্ডঃ ৪; পৃষ্ঠাঃ ১৬৪-১৬৫;
► গৃহীতঃ- www.sahab.net/forums/
নোট: শাইখ (রহিমাহুল্লা-হ্) ‘র এই কথাটি- “যার ‘ইলম কম সে যদি (তার চেয়ে) বেশি ‘ইলমওয়ালা ব্যক্তিকে রিফিউট না করত, তাহলে তো সৎকাজের প্রতি আদেশদানের পুরো বিষয়টিই ভেস্তে যেত। আর আমরা হয়ে যেতাম বানী ইস্রা-ঈল জাতির মত।”
সুতরাং এটা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,দ্বীনী বিষয়ে কারো ভুলের সমালোচনা করতে হলে তার সমপরিমাণ ‘ইলম ও যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। সুতরাং যারা এই সমতাবিধানের শর্তারোপ করে,তাদের আরোপকৃত শর্ত বাত্বিল।
✍ আশ শাইখুল আল্লামাহ ড. সালিহ আল ফাউযান হাফিয্বাহুল্লাহ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো,
أنوي أن أكتب عن بعض الجماعات الضالة، والتحذير منها، لكن هذه الجماعة لم تخرج من الملة، وقد مدحها البعض من العلماء وأخشى أن يدعو علي، فما توجيهكم لي علما بأن هذه الجماعة منحرفة؟
“আমি একটি ভ্রান্ত দল সম্পর্কে লিখতে চাই ও তাদের থেকে সতর্ক করতে চাই। তবে এ দল দ্বীন থেকে বের হয়নি,একজন 'আলেম এই দলের প্রশংসাও করেছেন। আমি ভয় করছি যে তিনি আমার বিরুদ্ধে যাবেন। তাই এ সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? জ্ঞাতব্য যে, এই দলটি একটি বিপথগামী দল।
শাইখ জবাব দেন,
الواجب عليك بيان الحق، الواجب عليك بيان الحق، إذا كنت متأكدًا من الأخطاء التي عندهم، والضلالات التي عندهم، متأكد مائة بالمائة، وعندك مقدرة وعندك علم تستطيع البيان يجب عليك هذا. (وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ) (إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى) ما يجوز كتمان العلم، إذا كان عندك علم ومتيقن من ضلالات بعض الطوائف فبينها للناس من أجل أن يحذروها وهذا من النصيحة. قال -صلى الله عليه وسلم- "الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ" . رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم: 55]. ولا تخش الناس، عليك أن تخش الله -سبحانه وتعالى- وبيّن الحق وترد الباطل، ولا تخش الناس . نعم. اهـ
সত্যটা বর্ণনা করা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক,সত্যটা বর্ণনা করা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক। তুমি যদি তাদের ভুল ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হও এবং তোমার যদি সে সামর্থ্য ও জ্ঞান থাকে যা দ্বারা আপনি সেগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারবে, তবে এটা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহ বলেন, وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ
স্মরণ করুন, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন: ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না’। [আয়াত আলে ইমরান ১৮৭]
আরও বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى
নিশ্চয় যারা গোপন করে আমরা যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি,মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পর,তাদেরকে আল্লাহ্ লা'নত করেন এবং লা'নতকারীগণও তাদেরকে লা'নত করেন। [ আল বাকারাহ ১৫৯]
জ্ঞান লুকিয়ে রাখা বৈধ নয়। যদি তোমার ভিতরে 'ইলম থাকে ও তুমি সেই বিভ্রান্তি গুলো সম্পর্কে জেনে থাক, তাহলে তুমি সেগুলো মানুষদের জানিয়ে দিও,যাতে তারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকেন। আর এটি নাসীহাতের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ’র রাসূল ﷺ- বলেন, "الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ"
দ্বীন হচ্ছে নাসীহাহ। আমরা বললাম, কার জন্য নসীহাহ? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তার রাসূলের জন্য, তার কিতাবের জন্য, মুসলিম ইমামের ও জনসাধারনের জন্য। [হাদিস মুসলিম ৫৫]
মানুষকে ভয় করো না। তোমার উচিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করা। হক্ব বর্ণনা করো, বাত্বিলকে খণ্ডন (রদ) করো, আর মানুষকে ভয় করো না। না‘আম।
► গৃহীত: http://www.manhaj.com/
.
✍ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ রমঝান আল হাজিরী (হাফিয্বাহুল্লা-হ্) -কে প্রশ্ন করা হয় যে, 'একজন ছোটখাটো ত্ব-লিবুল ‘ইলম সম্পর্কে আপনার অভিমত কী,যে নিজেকে জারাহ্ ও তা’দীল নিয়ে ব্যস্ত রাখে' ?
উত্তরে তিনি (হাফিয্বাহুল্লাহ) বলেন - “জারাহ্ ও তা’দীল দ্বারা যদি বিদ’আতী ফিরক্বাহর বিরুদ্ধে কথা বলা উদ্দেশ্য করা হয়ে থাকে। যেমন আত তাবলীগ, আল ইখওয়া-ন, তাহলে আল্লা-হ্ তাকে সফলতা দান করুন ! যদিও সে একজন পাঁচ বছরের ছেলে হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরুপ, এই ছেলেটি যদি আরেকজন ধূমপায়ী ছেলে থেকে সতর্ক(warn) করে এবং বলে যে, “অমুক এবং অমুক ধূমপান করে”, তবে কোনটি বেশি মারাত্মক ? প্রবৃত্তির অনুসারীর বিরুদ্ধে সতর্ক করা,না শুবহা-তের অনুসারী (বিদ’আতী) ব্যক্তি থেকে সতর্ক করা ?
তবে তার স্বভাব এরকম হওয়া উচিত না যে, সে বলবে, “অমুক এবং অমুক আহলুল বিদ’আহর অন্তর্ভুক্ত” কিংবা “অমুক এবং অমুক এইটা, অমুক এবং অমুক ওইটা”। না! এসব ব্যাপার ‘আ-লিমদের জন্য। আর যেসব ক্ষেত্রে ‘আ-লিমগণ ইতিমধ্যেই সমাপ্তি টেনেছেন এবং কথা বলেছেন, সেসব ক্ষেত্রে এটা তার কোন ক্ষতি করবে না (অর্থাৎ, ‘আ-লিমদের অনুসরণে কারো বিরুদ্ধে কিছু বললে সমস্যা নেই)।
এমনকি তুমি যদি একজন বাচ্চাকে দেখো যে, সে বলছে- ইউসুফ আল ক্বরদ্বা-উয়ী আহলুল বিদ’আহর অন্তর্ভুক্ত, তাহলে সে সত্য বলছে ! (ইউসুফ আল ক্বরদ্বা-উয়ী) আহলুল বিদ’আহর অন্তর্ভুক্ত, এবং এটি জানা কথা যে, সে একজন ফিতনাহবাজ লোক। সে এই যুগের সবচেয়ে বড় খা-রিজীদের একজন।
এইটা যেমন জানা যে, সবচেয়ে বড় মা-জূসী (অগ্নিপূজক) কে এবং সবচেয়ে বড় ইহুদী কে, তেমনিভাবে এইটাও জানা কথা যে, এই যুগের সবচেয়ে বড় খারিজী এই ব্যক্তি-- আল ক্বরদ্বা-উয়ী।”
► গৃহীত:
https://www.youtube.com/
.
নোট: শাইখ (হাফিয্বাহুল্লা-হ্) ‘র ফাতওয়া থেকে সুসাব্যস্ত হয়ে গেল যে, বিদ’আতী ফিরক্বা-র বিরুদ্ধে একজন ছোট বাচ্চাও বলতে পারে। তাহলে ঐ বাচ্চার কি আগে বিদ’আতীর সমপরিমাণ ‘ইলম অর্জন করতে হবে ? তা নাহলে সে বিদ’আতীর বিরুদ্ধে বলতে পারবে না ? কক্ষনো নয়! সে অবশ্যই বিদ’আতীর বিরুদ্ধে বলতে পারবে। বিদ’আতীর সমান ‘ইলম না থাকলেও সে তাঁর বিরুদ্ধে বলতে পারবে। যেহেতু ‘আলিমগণ বা তাঁদের যোগ্য ত্বলিবগণ তাকে বিদ’আতী বলেছেন।
সুতরাং, ‘ইলমী সমতার এই দাবি যে বা-ত্বিল, তা উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ‘আলিমদের বক্তব্যের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল।
. 5️⃣ এবার একজন বিভ্রান্ত বক্তার পর্যালোচনা:
আহলুস সুন্নাহর উলামা- মাশায়েখ ,দ্বায়ীগণের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ এবং বাতিলপন্থী কর্তৃক
বিভিন্ন মিথ্যাচার, তোহমত লাগানোর বিষয়টি এক্কেবারে নতুন নয় বরং তা বেশ পুরনো! এতদসত্ত্বেও হক্ব ও বাত্বিলের লড়াই যুগ যুগ ধরে চলমান রয়েছে!
সকলের জ্ঞাতার্থে সুস্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দিতে চাই যে,আমরা যেকোন ভ্রান্ত ফ্বিরকা,দল, মতবাদ বা ব্যক্তির বিরোধিতা করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের জন্যে! এক্ষেত্রে কারো সাথে আমাদের ব্যক্তিগত দ্বন্ধ নেই বললেই চলে! আমরা যখন কোন বিরোধী মতবাদের বা দ্বায়ীর সমালোচনা করি অথবা উলামায়ে'ছু দের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে কলম ধরি, তখন সেটা নিজের মনের খায়েশ মেটানোর জন্যে নয় বরং সুন্নাহ নির্দেশিত পথেই এর প্রতিবিধান করি।
[ আল্লাহ তাওফ্বিক দাতা]
✍ উস্তাযুল আ-লিম, ইমাম আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রাহি’মাহুল্লাহ বলেন -
“হক্কপন্থী লোকেরা যদি কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা,সেই কথা বর্ণনা না করতো, তাহলে ভ্রষ্টতার শিকার হয়েছে এমন লোকেরা তাদের ভুলের উপরেই থেকে যেত। তখন সাধারণ লোকেরা অন্ধভাবে সেই ভ্রষ্টতার অনুসরণ করতো। সুতরাং যারা সত্য জেনেও চুপ করে ছিলো,লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার পাপ তাদের উপরেও পড়তো।”
📚 [মাজমু ফাতাওয়াঃ ৩/৭২]
এই পর্যায়ে আমরা সুরেলা কণ্ঠের বক্তা মিজানুর রাহমান আল আযহারী [হাদাহুল্লাহ] নামক এক ব্যক্তির কয়েকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা করব!
▶️ বক্তব্য - (এক),
"বিতির নামায তিনটি নিয়মে পড়া যায়! আমরা হানাফিরা যে পদ্ধতিতে বিতির নামায পড়ি তার আম দলিল রয়েছে! মৌলিক তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটি দিয়ে বিতির নামায পড়ুন কিন্তু বিভ্রান্তি সৃস্টি করা যাবেনা!
আমরা কেউ তাবলীগ জামাত করি, কেউ জামাতে ইসলামী করি, কেউ চরমোনাই পীরের মুরিদ, কেউ হেফাজতে ইসলাম, কেউ কাওমী, কেউবা আলিয়া কিন্তু এই ভূখন্ডে আমাদের দাড়িওয়ালা,টুপিওয়ালাদের মাঝে রয়েছে শতবছরের ঐক্য! এইজন্যই দাওয়াতের নামে, সহিহ হাদিসের নামে, ইসলামের নামে এদেশের ঐক্য আপনারা নষ্ট করবেন না! এই ঐক্য নষ্ট করার কোন অধিকার আপনাদের নাই! অতএব, এই ভূখন্ডে কঠিন ইসলাম প্রচার করা আপনাদের দরকার নেই!
► লিংকঃ
https://www.youtube.com/
[মুলভাব সংক্ষেপিত ]
🔸পর্যালোচনাঃ
প্রথমত, বিতির নামায তিনটি নয় দুইটি নিয়মে পড়ার বিশুদ্ধ বর্ননা পাওয়া যায় হাদিসে! এদেশের হানাফী-রা যে পদ্ধতিতে বিতির নামায আদায় করেন তার পক্ষে কোন গ্রহনযোগ্য দলিল নেই!
দ্বিতীয়ত, বক্তা অভিযোগ করেন " সহিহ হাদিসের নামে নাকি সমাজে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে"! বিশুদ্ধ দ্বীনের দাওয়াতের কারণেই নাকি তাদের শতবছরের কথিত ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে"!
আমি পাঠকদের কাছে জানতে চাই - কখন,কবে, কোথায় এদেশীয় ভিবিন্ন ফিরকাবন্দী ওয়ালাদের ঔক্য ছিল?দেওবন্দীদের একাংশের কাছে পীর পন্থীরা সবসময়ই ভ্রান্ত ছিল,আবার মুল ধারার দেওবন্দীদের কাছে জামাতীরা পথভ্রষ্ট এমনকি মওদুদী সাহেবকে রদ্দ করে তারা শত শত বই পর্যন্ত রচনা করেছেন! কওমীদের একাংশ ফুলতলীদের পিছনে নামাজ পড়ে না,জামাতীদের কাছে চরমোনাই হল পথভ্রষ্ট , দেওয়ানবাগী সর্বমহলে গোমরাহ,কওমী আর আলিয়ার দ্বন্দ্ব বহু পুরানো,এইতো গতবছরই ব্রেরলভীদের সাথে দেওবন্দীদের খুনাখুনির ঘটনা ঘটে,কিছুদিন আগেও তাবলীগের দুই গ্রুপের খুনাখুনির ঘটনাগুলি জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল! হ্যায়াতিদের কাছে মামাতিরা বিভ্রান্ত আবার মামাতিদের কাছে হ্যায়াতি!
এবার আপনিই বলুন -- এ সমাজে ঐক্য কখন ছিল?
মোদ্দা কথা হল - বক্তা সাহেবকে তার জাহালতের উপর ক্রন্দন করা উচিত এইজন্য যে, তিনি আজও ঐক্যের মানদণ্ড সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল নন! কেননা ফিক্বহি 'মাসআলা - মাসায়েল 'কখনো ঐক্যের ভিত্তি হতে পারেনা!
পাঠকদের জেনে রাখা জরুরী যে এই বক্তা সাহেবগন কিছু ভাল কথার আড়ালে ভিবিন্ন মনভোলানো যুক্তি ও বচন দ্বারা আহলে সুন্নাহর বিরোধীতা অত:পর নিজ হস্তের কলম কিংবা মুখের বচন দ্বারা আহলে সুন্নাহর গর্দান উড়িয়ে দিয়ে বাতিল পন্থীদের রসদ জোগায়!
. ▶️ বক্তব্য - (দুই)
'মুসা আলাইহিস সালাম যখন লোহিত সাগরে নিজ হাতের লাঠি দিয়ে আঘাত করলেন তখন সেখানে একটি "ব্রিজ" তৈরি হয়েছিল!
► লিংকঃ
https://www.youtube.com/
[মুলভাব সংক্ষেপিত]
🔸পর্যালোচনাঃ
ইতিহাসবিদদের গ্রন্থ থেকে লোহিত সাগরে 'ব্রিজ' তৈরি হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না! বরং একটি রাস্তা তৈরি হয়েছিল [কিন্তু সেটা ব্রিজ নয়] এমন বর্ননা পাওয়া যায়! সুতরাং বক্তার উল্লিখিত দাবিটা মিথ্যা ও বানোয়াট!
. ▶️ বক্তব্য - (তিন) ,
এই ভিডিও-তে রাসূল ﷺ-এর দেহের গড়নের বর্ননা দিতে গিয়ে বক্তা সাহেব বলেন -"আল্লাহর রাসূল ﷺ-
এর বডি ছিল সিক্স পেক! যুবক ভাইয়েরা, তোমরাও সবসময় এমনভাবে ফিট থাকবা" !
► লিংকঃ
https://www.youtube.com/
[মুলভাব সংক্ষেপিত]
🔸পর্যালোচনাঃ
কোরআন,হাদিস কিংবা সাহাবায়ে ক্বেরামের ক্বওল তো দূরের কথা, কোন জাল হাদিস দ্বারাও এমন আজগুবী বর্ণনা ছাবিত হয়নি! তাছাড়া যে রাসূল ﷺ-এর ছুলায় কোন কোন সময় আগুন পর্যন্ত জ্বলতো না, উপোস দিনাতিপাত করেছেন মাঝেমাঝে, সেই রাসূল ﷺ-এর কিনা 'সিক্স পেক' ছিল !!!
আপনারা যারা জিম করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন 'সিক্স পেক' বডি বানানো কতটা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ।
অতএব, বক্তার উক্ত বক্তব্যটি বিভ্রান্তিকর, মনগড়া এবং বানোয়াট।
▶️ বক্তব্য - (চার)
দুটি প্রশ্নোত্তর রয়েছে এই ভিডিওতে!
১. কোন ব্যক্তি মারা গেলে যেয়াবাত, চল্লিশা খাওয়ানো কি জায়েজ?
২. মৃত ব্যক্তির পাশে বসে কোরআন মাজিদ পড়া ও খতম দেওয়া কি সাওয়াবের কাজ?
উত্তরে বক্তা সাহেব বলেন,
১.আপনি [৪০ শা] খাওয়ান! খাওয়াতে দোষ নেই! মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য খাওয়ালে মাইয়াতের
গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন! কিন্তু খাওয়াবেন মিস্কিনদেরকে,এয়াতিমদেরকে কারণ তারা বেশি হকদার! কিন্তু এখনকার চল্লিশাতে মিস্কিনদের জায়গা হয়না বরং পয়সা ওয়ালারা এসে লাইনে বসে থাকে! অথচ দরকার ছিল আপনার আব্বা মারা গেছে তাই কোন এতিমখানায় একটি গরু দান করে দেন, তারা খেয়ে দোয়া করবে!
২. কোরআন তেলোয়াত করতে পারবেন! কারণ হাদিসে এসেছে মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে 'সুরা ইয়াসিন' তেলোয়াত করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা হাল্কা হয়!
৩. অতিরিক্ত হিসেবে তিনি এখানে আম্নাজান খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা-র কবরে সাওয়াল-জাওয়াব সংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণনা করেন (রেফারেন্সবিহীন)।
তিনি বলেন -আম্মাজান খাদিজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা-দাফন করার পর আল্লাহর রাসূল ﷺ- উনার কবরের পাশে দাড়িয়ে রইলেন,কবরের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য! এমতাবস্থায় জিবরাইল (আঃ) এসে বলল, খাদিজার জবাব স্বয়ং আল্লাহ দিবেন, আপনি চলে যান! অতপর তিনি বাড়ী ফিরে গেলেন!
► লিংকঃ
https://www.youtube.com/
[মুলভাব সংক্ষেপিত]
🔸পর্যালোচনাঃ
১. মৃত ব্যক্তির জন্য ভোজ,চারদিনা,চল্লিশা,যেয়াবত
২. শ্রোতার প্রশ্ন ছিল "মৃত্য ব্যক্তির পাশে বসে কোরআন তেলোয়াত,খতম করা যাবে কিনা" অথচ বক্তা সাহেব মুমূর্ষু রোগীর পাশে বসে 'সুরা ইয়াসিন ' পড়ার দলিল দিয়ে সেটাকে জায়েজ বানিয়ে দিচ্ছেন! মুমূর্ষু রোগী আর মৃত্য ব্যক্তি কি এক হল?
সকলের জেনে রাখা জরুরী যে,মৃত ব্যক্তির পাশে সারিবদ্ধভাবে বসে কোরআন খতম করা নব আবিস্কৃত বিদায়াত! বক্তা এখানে হক্ব (সত্য)- কে পাশ কাটিয়ে বিদাআতের দিকে সুস্পষ্ট আহবানকারী বলেই প্রতীয়মান হয়েছে!
৩. 'স্বয়ং আল্লাহ তাআলা,আম্মাজান খাদিজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা-র কবরের (৩টি) প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ' এটা ভিত্তিহীন - জাল রেওয়াত!
.
6️⃣ কথিপয় ব্যক্তির উপহাসের অপনোদন:
বর্তমান সময়ে একটা ভয়াবহ ফিতনা হল কিছু দ্বায়ীর আড়াআড়ি অবস্থান! মানহাজের ক্ষেত্রে সহজিয়া এসকল দ্বায়ীগন 'মু"তাদিল' দাবিদার হলেও কার্যত
এদের লিখনী, বইপত্র, বক্তব্য থেকে বাত্বিল পন্থীরাই প্রশ্রয় পায়!
প্রকৃতপক্ষে ‘সালফে সালেহীন’ (সাহাবীদের) আক্বীদাহ (ধর্মীয় বিশ্বাস) ও মানহাজে (কর্ম পদ্ধতি বা চলার নীতিতে) বিশ্বাসী নয় এমন দ্বায়ীদের আশ্রয় কেন্দ্র হচ্ছে এদের কলমের নিচে! যা দিবালোকের ন্যায় স্পট হলেও অন্ধভক্তির কারণে কিছু ভাই তা বুঝতে ব্যর্থ হন!
এরা সালাফী দাবিদার হয়েও ‘জারাহ ও তা’দীলের’ ইলমকে পছন্দ করেনা এমনকি শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং গোমরাহীতে লিপ্ত বক্তা কিংবা দলসমূহের বিরুদ্ধে মুসলিমদেরকে সতর্ক করার মানহাযে বিশ্বাসী নয়।
বাত্বিলের প্রতি শৈথিল্যতা প্রদর্শনের মনোভাবে বিশ্বাসী এসকল দ্বায়ীগন সালাফী মানহাযের সাথে সুস্পষ্ট শত্রুতা পোষণকারী এবং ভ্রান্ত মত ও পথের প্রচারক এমন দ্বায়ীদেরকে ভিবিন্ন কৌশলে ডিফেন্ড করেন যা খুবই দুঃখজনক !
আমরা যখন ভ্রান্ত মতাদর্শীদের রদ করে তাদের বিভ্রান্তির ব্যাপারে উম্মাহ-কে সর্তক করি তখন 'সমতা বিধানের মানহাজে বিশ্বাসী'রা আমাদেরকে উপহাস করে বলে থাকেন যে, 'আমরা নাকি আলিমদের রদ করছি'! অথচ আলিমদের দারসে বসার কারণে ঐ লোকগুলি ত্বলেবুল ইলম হতে পারেন কিন্তু এটা সুনিশ্চিত যে,ওরা আলিম নন যা আমরা উপরে আলিমের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় প্রমাণ করেছি!
.
মিজানুর রাহমান আল আযহারী-র মত ব্যক্তিদের থেকে যখন আমাদের কিছু ভাই সতর্ক করছে তখন গুটিকয়েক ত্বলেব এই বলে উপহাস করছে যে 'আসুন আলিমদের ফিল্টারিংয়ের জন্য একটা আলাদা সংস্থা খুলি" [আউজুবিল্লাহ ]
অথচ ওই ব্যক্তিগন (আযহারী এবং আরও যারা আছে) আলিমই নন বরং ত্বলিবুল ইলম এবং তার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যগুলো অলরেডি দুইজন দ্বায়ী খন্ডনও করেছেন !
সুন্নাহর হত্যাকারী, হক্ব গোপন করে বিদা'আতের আশ্রয়দানকারী, সুন্নাহপন্থীদের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণকারী, কুতুব,বান্না,মওদূদী সাহেবের প্রশংসাকারী এবং একই মতাদর্শে বিশ্বাসী এমন বক্তাদেরকেও সালাফীদের কেউ বিভিন্ন অজুহাতে নির্লজ্জ ডিফেন্ড করতে পারে তা আমাদের জানা ছিলনা!
যাইহোক, উম্মাহর কল্যাণের স্বার্থে বিদা'আতিদের গোমরাহী থেকে সতর্কতার গুরুত্ব অপরিসীম!
🔸 ১ম বক্তব্য,
✍ ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,
«أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ الصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ . فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ . فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ».
“মারওয়ান সর্বপ্রথম ‘ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুত্ববাহ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করেন। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, খুত্ববাহর আগে সালাত (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। তখন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ওই ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গৰ্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) তা পরিবর্তন করে, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে,তবে জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]
🔸২য় বক্তব্য,
✍‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
«مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ».
“আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবীকেই কোন উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সঙ্গী ছিল। তারা তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। তারপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর (দ্বীনের ব্যাপারে) যা করে, তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি (অর্থাৎ, বিদ‘আত)। অতএব যে ব্যক্তি তাদের হাত (শক্তি) দ্বারা মোকাবেলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যক্তি জবান দ্বারা মোকাবেলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা মোকাবেলা করবে সেও মু’মিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫০; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]
🔸৩য় বক্তব্য,
✍ মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম,
«إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم».
“অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)- বলা আমার কাছে খুব ভারী মনে হয়।” আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি,তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?”
[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]
🔸৪র্থ বক্তব্য,
✍ ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,
«واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ».
“জেনে রেখ, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হয় ব্যক্তি পথ ভুল করেছে, অথচ সে স্রেফ কল্যাণের অভিলাষীই ছিল। এক্ষেত্রে তাঁর ভুলের অনুসরণ করা যাবে না। নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর নাহয় ব্যক্তি সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।”
[ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
. নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। উপরিউক্ত এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা - আমাদেরকে সালাফী মানহাজে অটল রাখুন এবং এর উপরই আমাদের মৃত্যু দিন। [আ-মীন]
[ এই আর্টিকেল রচনায় যে'দুইজন ভাই সর্বাত্নক সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন - আ-মী-ন]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
লেখক - Akhtar Bin Amir
লিঙ্ক- আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪] -:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com jannaterpoth.wildapricot.org