কাফিরদেরকে ছেড়ে বিদআতি মুসলিমদের রাদ্দ করা নিয়ে ব্যাস্ত কেন?

প্রখ্যাত সালাফী ‘আলিমে দ্বীন আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ-শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৮ হি.] বলেন,

”فالاهتمام بالسنّة والردّ على المبتدعة هذا ظاهر في حال أئمة الإسلام، فقد كانت حياتهم في الردّ على المبتدعة، ولم يشغلوا أنفسهم بالردّ على الكفار الأصليين من اليهود والنصارى، فإذا رأيت كلام الإمام أحمد، وسفيان، وحمّاد بن زيد، وحمّاد بن سلمة، ونعيم بن حمّاد –وهو من أئمة أهل السنّة– والأوزاعي، وإسحاق، وعليّ بن المديني، ونحوهم من أئمة أهل السنّة والإسلام وجدت أن جلّ كلامهم وجهادهم إنما هو في الردّ على المبتدعة، وفي نقض أصول المبتدعة –وإن كانوا باقين على أصل الإسلام– ولم يشغلوا أنفسهم بالردّ على اليهود والنصارى وسائر ملل أهل الكفر، وذلك لأن شرّ المبتدع قد لا يظهر لكثير من أهل الإسلام، ولا يؤمن على أهل الإسلام، أما الكافر الأصلي من اليهود والنصارى فشرّه وضرره بيّن واضح لكلّ مسلم، لأن الله –جلّ وعلا– بيّن ذلك في كتابه، وحالهم ظاهر لأهل الإسلام، أما أهل البدع فالشرّ منهم كثير.ولهذا لا يحسن أن يُنسب إلى أهل السنّة والجماعة أنهم مفرّطون في الردّ على اليهود والنصارى ومنشغلون بالردّ على أهل الإسلام، كما قال بعض العقلانيين من المعتزلة وغيرهم : إن أهل السنّة انشغلوا بالردّ على أهل الإسلام وتركوا الردّ على الكفار من اليهود والنصارى وسائر أهل الملل الزائغة.هذا سببه هو ما سبق بيانه من أن شر البدع أعظم، لأن هؤلاء يدخلون على المسلمين باسم الإسلام، وأما اليهود والنصارى ففي القلب منهم نفرة، فهدي أئمة الإسلام كان ظاهرا في الردّ على المبتدعة والردّ على أهل الأهواء، ولم يُعرف عنهم كبير عمل في الرد على اليهود والنصارى.وليس معنى ذلك : أن المؤمنين من أهل السنّة لا ينشغلون بالردّ على اليهود والنصارى، لكن ما تميّز به أئمة أهل السنّة، وإلا فالردّ على كل مُعادٍ للإسلام : من الكفار الأصليين، ومن أهل البدع متعيّن وفرض، لكن من انشغل بالردّ على المبتدعة لا يُقال له : لم تركت اليهود والنصارى ولم تردّ عليهم وانشغلت بهؤلاء؟ نقول : هذا هدي الأئمة الأولين، وكلُّ يرُدّ في مجاله : منّا من يرُدّ على اليهود والنصارى، ومنّا من يردّ على المبتدعة، ونحن جميعا نكون حامين لبيضة الإسلام، من تلبيسات الملبسين، ومن بدع المبتدعين، وشرك المشركين، وضلالات الكفّار من اليهود والنصارى وغيرهم.“

“সুন্নাহ’র প্রতি এবং বিদ‘আতীদের রদ করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করার বিষয়টি ইসলামের ইমামগণের অবস্থানে স্পষ্ট। কখনো কখনো বিদ‘আতীদের রদ করতে করতে তাঁদের জীবন অতিবাহিত হয়ে গেছে, তাঁরা প্রকৃত কাফির তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের রদ করতে প্রবৃত্ত হননি। তুমি যদি ইমাম আহমাদ, সুফইয়ান, হাম্মাদ বিন যাইদ, হাম্মাদ বিন সালামাহ, নু‘আইম বিন হাম্মাদ –ইনিও আহলুস সুন্নাহ’র ইমামদের একজন–, আওযা‘ঈ, ইসহাক্ব, ‘আলী বিন মাদীনী প্রমুখ আহলুস সুন্নাহ ও ইসলামের ইমামগণের কথার দিকে লক্ষ কর, তাহলে দেখবে, তাদের অধিকাংশ কথা ও প্রচেষ্টা স্রেফ বিদ‘আতীদের রদ করা এবং বিদ‘আতীদের মূলনীতি খণ্ডন করার ক্ষেত্রেই ব্যয় হয়েছে –যদিও তারা (বিদ‘আতীরা) ইসলামের উপরই অবশিষ্ট ছিল–, তাঁরা ইহুদি-খ্রিষ্টান এবং যাবতীয় কাফির সম্প্রদায়কে রদ করার কাজে মশগুল হননি।

এটা একারণে যে, বিদ‘আতীদের অনিষ্ট কখনো কখনো অসংখ্য মুসলিমের কাছে অস্পষ্ট থাকে। মুসলিমদের জন্য বিদ‘আতী নিরাপদ নয়। পক্ষান্তরে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত প্রকৃত কাফিরের অনিষ্ট ও অপকারিতা সকল মুসলিমের কাছে সুস্পষ্ট। কেননা মহান আল্লাহ তা তাঁর কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তাদের অবস্থা মুসলিমদের কাছে স্পষ্ট। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের অনিষ্টতা অনেক।

একারণে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দিকে সম্পৃক্ত করে এরূপ কথা বলা ঠিক নয় যে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের রদ করার ক্ষেত্রে শিথিল, আর মুসলিমদের রদ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। যেমন মু‘তাযিলাহ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের যুক্তিবিদরা বলে, “আহলুস সুন্নাহ মুসলিমদের রদ নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে, আর কাফিরদের তথা ইহুদি-খ্রিষ্টান ও যাবতীয় ভ্রষ্ট ধর্মকে রদ করা পরিত্যাগ করেছে।”

এর কারণ সেটাই, যা কিছুপূর্বে গত হয়ে গেল। আর তা হলো—বিদ‘আতীদের অনিষ্ট ভয়াবহ। কেননা তারা ইসলামের নাম দিয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে (মুসলিমের) অন্তরেই বিদ্বেষ আছে। বিদ‘আতী ও প্রবৃত্তিপূজারীদের রদ করার ক্ষেত্রে ইসলামের ইমামগণের আদর্শ স্পষ্ট। তাঁদের নিকট থেকে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে রদ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো কর্মের কথা জানা যায় না।

এর মানে এই নয় যে, মু’মিন আহলুস সুন্নাহ’রা ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে রদ করতে প্রবৃত্ত হবে না। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণ এ ব্যাপারে বিশিষ্ট নন। অন্যথায় সকল ইসলাম বিরোধীদের তথা প্রকৃত কাফির সম্প্রদায় ও বিদ‘আতীদের রদ করা আবশ্যকীয় কর্ম (ফরজ)। কিন্তু যে ব্যক্তি বিদ‘আতীদের রদ করার কাজে নিয়োজিত হয়েছে, তাকে একথা বলা যাবে না যে, ‘কেন তুমি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ছেড়ে দিয়ে, তাদেরকে রদ না করে, ওদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়েছ?’

আমরা বলি, এটাই পূর্বসূরি ইমামগণের আদর্শ। প্রত্যেকেই তার স্বীয় পরিধির মধ্যে থেকে রদ করবে। আমাদের মধ্যে কেউ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের রদ করবে, আবার কেউ বিদ‘আতীদের রদ করবে। আমরা সবাই সংশয়বাদীদের সংশয়, বিদ‘আতীদের বিদ‘আত, মুশরিকদের শিরক এবং কাফির সম্প্রদায় তথা ইহুদি-খ্রিষ্টান প্রভৃতির ভ্রষ্টতা থেকে ইসলামের আদর্শকে হেফাজত করব।”

[‘আল্লামাহ সালিহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৬৩-৬৪; আজুর্রি ডট কম কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সফট কপি (তারিখ বিহীন)।]

•অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা
fb.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments