নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন sahih-akida.simplesite.com
https://rasikulindia.blogspot.com/
শুরু করছি মহান দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। শান্তি অবতীর্ণ হোক নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর সঙ্গিসাথী ও পরিবারবর্গের ওপর।
পোস্টটি একটি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করে শুরু করা যাক। ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন আহলুল সুন্নাহর প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম আবু নাসর ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সা‘ঈদ ইবনু হাতিম আল-ওয়া‘ঈলী আল-বাকরী আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)। ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “এখানে মাক্কাহতে আমাদের সাথে এক লোক আছে যে হাদীস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সে তার বেশীরভাগ সময় এই বলে চিল্লাফাল্লা করে শেষ করে যে, সে আশ‘আরী নয়। অতঃপর সে বলে, ‘আমি তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিবর্গ দেখেছি, এবং আমি (এমন আশ‘আরীদেরকে) দেখেছি যাদের পায়ের নীচের ধুলো সৃষ্টি থেকে উত্তম।’ এবং আশ‘আরীদের মধ্য থেকে কোনো লোক যখন শহরে আসতো তখন সে তাকে অনুসরণ করতো ও কাছে টেনে নিতো। এবং আমাদের সঙ্গীদের মধ্য থেকে কোন লোক যখন তার নিকট গমন করতো তখন সে তার থেকে দূরে থাকতো ও তার থেকে সতর্ক করতো। এবং যখনই হাম্বলীদের (আহলুস সুন্নাহ/আহলুল হাদীস/সালাফী) ‘উলামাদের মধ্য থেকে কোনো একজন ‘আলিমের ব্যাপারে উল্লেখ করা হতো সে তার দোষ খুঁজতো। এবং সে বলতো, ‘আহমাদ উত্তম ব্যক্তি, কিন্তু তিনি তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছেন যারা মিথ্যা বলে।’ এটি ছিলো তার একটি অপকৌশল। এর মাধ্যমে সে দুর্ভোগ ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনবে না।”
(ইমাম আস-সিজযী কর্তৃক আল-হারফ এবং আস-সাওত অস্বীকারকারীদের রাদ করে লেখা চিঠি, পৃষ্ঠা ২৩২)।
ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তিটি থেকে আমরা যেসব বিষয় বুঝতে পারলাম সেগুলো হলো: বিদ‘আতীদের কেউ কেউ আহলুস সুন্নাহর কাছে তাদের ‘আক্বীদাহ-মানহাজ গোপন করে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ভান ধরে, আহলুস সুন্নাহর ইমামদের প্রতি তারা ভালোবাসা প্রদর্শন করে কিন্তু তাদের অনুসারীদের ঘৃণা করে, তারা তাদের বিদ‘আত গোপন করলেও তারা বাস্তবে যেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অনুসারী, সেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অন্যান্য অনুসারীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও মেলামেশা গোপন করতে অক্ষম হয়।
আর যেহেতু মুখোশধারী বিদ‘আতীরা এই দুটি বিষয়—তাদের ভালোবাসা ও ঘৃণা কাদের প্রতি এবং তাদের সঙ্গিসাথী কারা—গোপন করতে অক্ষম হয়, সেহেতু এই মুখোশধারী বিদ‘আতীদের মুখোশ উন্মোচনের অন্যতম পদ্ধতি হলো এই দুটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখা। এবং আমাদের সালাফগণ ঠিক এই কাজটিই করতেন। আল্লাহ যদি তাওফীক্ব দেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা পূর্ববর্তী ইমামগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করে একটি পোস্ট করবো এই বিষয়ে যে - ব্যক্তির মান নির্ণয় করা হবে সে কাদের ভালোবাসে এবং কাদের ঘৃণা করে তার ভিত্তিতে, আর এই পোস্টে আমরা ব্যক্তির মান নির্ণয় যে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে করা হবে এই ব্যাপারে রাসূল ﷺ-এর হাদীস, সাহাবাদের আছার এবং পূর্ববর্তী ইমামদের বেশ কিছু উক্তি উল্লেখ করবো। পোস্টের আসন্ন মূল অংশে উল্লিখিত উক্তিসমূহ শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ)’র “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বওলিল মা‘সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ” গ্রন্থের “সালাফগণ ব্যক্তির মান নির্ণয় করতেন তার সঙ্গী ও সহচরদের অবস্থার ভিত্তিতে” শীর্ষক অধ্যায় থেকে সংগৃহীত হয়েছে। “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর” গ্রন্থটি পড়েছেন এবং পুনঃসমীক্ষা করেছেন শাইখ হারিসীর সম্মানিত শাইখ যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আর এই অমূল্য গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন সৌদি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান্যবর মন্ত্রী মহোদয় আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ-শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)।
•
ব্যক্তির মান নির্ণীত হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে:
১. আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
”الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِل.“
‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’’
[আবূ দাউদ, হা/৪৮৩৩; তিরমিযী, হা/২৩৭৮; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/৯২৭; সনদ: হাসান]
•
২. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,
”الأَرْوَاحُ جُنُوْدٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَف.“
‘‘সমস্ত রূহ সেনাবাহিনীর মত একত্রে সমবেত ছিল। সেখানে তাদের যে সমস্ত রূহের পরস্পর পরিচয় ছিল, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর পরিচিতি ও সৌহার্দতা থাকবে। আর সেখানে যাদের মধ্যে পরস্পর পরিচয় হয়নি, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর মতভেদ ও মতবিরোধ থাকবে।’’
[সাহীহ বুখারী, হা/৩৩৩৬; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৩৮]
{ইমাম খত্বত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৮ হি.] বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা (সুনির্ধারিত) পারস্পরিক সৌহার্দতার ভিত্তিতেই রূহসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের মধ্যে কারা সৌভাগ্যবান হবে (তথা জান্নাতে যাবে) এবং কারা দুর্ভাগা হবে (তথা জাহান্নামে যাবে) সেটাও সৃষ্টির শুরুতেই নির্ধারণ করেছেন। (রুহজগতে) রূহগুলো ছিলো দুইটি আলাদা ভাগে বিভক্ত। সুতরাং দুনিয়াতে যখন তাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন তাদের মধ্যে সৌহার্দতা ও মতবিরোধ হবে ঐ রূহ জগতে তাদেরকে যে সৌহার্দতার উপর সৃষ্টি করা হয়েছে তার ভিত্তিতেই। ফলে ভালোরা ভালোদের দিকে ঝুঁকবে, আর খারাপরা খারাপদের দিকেই ঝুঁকবে।’’ (ইমাম নাওয়াউয়ীর শারহে মুসলিম, ২৬৩৮ নং হাদীছের ভাষ্য দ্রষ্টব্য) - অনুবাদক।}
•
৩. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
”اعتبروا الناس بأخدانهم المسلم يتبع المسلم والفاجر يتبع الفاجر.“
‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। যে ব্যক্তি মুসলিম, সে মুসলিমেরই অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি পাপাচারী, সে পাপাচারীরই অনুসরণ করে।’’
[ত্ববারানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯১৯; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল ইবানাহ, আছার নং: ৫০২]
•
৪. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
”إنما يمشي الرجل ويصاحب من يحبه ومن هو مثله.“
‘‘প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তি তার সাথেই চলাফেরা করে এবং তারই সঙ্গী হয়, যাকে সে পছন্দ করে এবং যে হয় (স্বভাবচরিত্রে) তারই অনুরূপ।’’
[বাইহাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ), শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৩৯; আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৯, ৫০০]
•
৫. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,
”اعتبروا الناس بأخدانهم فإن الرجل لا يخادن إلا من يعجبه نحوه.“
‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। নিশ্চয়ই মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যে (স্বীয় কথাবার্তা বা চলাফেরায়) তাকে মুগ্ধ করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৬, ৫০১]
•
৬. শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,
”من فقه الرجل ممشاه ومدخله مجلسه.“ ثم قال أبو قلابة: ”قاتل الله الشاعر حين يقول:
عن المرء لا تسئل وأبصر قرينه ~ فإن القرين بالمقارن يقتدي.“
‘‘এটা একজন ব্যক্তির ফিক্বহের (বুঝের) অন্তর্ভুক্ত যে, সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, কাদের কাছে গমন করে এবং কাদের সাথে ওঠাবসা করে।’’
এরপর আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘আল্লাহ্ ধ্বংস করুন ঐ কবিকে, যে বলেছিল-
কোনো ব্যক্তির (হালচাল জানতে) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস কোরো না, বরং লক্ষ্য করো কে তার সঙ্গী। কারণ, সকল সঙ্গী তার নিজ সঙ্গীরই অনুসরণ করে থাকে।’’
[ইবনুল মুবারাকের আয-যুহ্দ; আছার নং: ৯৮৮; ইবনু আবী ‘আসািমের আয-যুহ্দ, আছার নং: ৭৭; আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৬৮, ৩৭৭, ৪৫৯]
{শাইখ হারিছী (হাফিয্বাহুল্লাহ) বইটির ১ম সংস্করণে কিছু কথা বলেছেন, যা ২য় সংস্করণে নেই। উপরিউক্ত উক্তিটি আরো স্পষ্ট করার জন্য সেই অংশটুকু তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন,
“ইমাম আসামা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৫ হি.] ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটির ব্যাপারে বলেন,
”لم أر بيتا قط أشبه بالسنة من قول عدي.“
‘‘আমি কখনও এমন পঙক্তি দেখিনি, যা সুন্নাহর সাথে ‘আদী বিন ঝাইদের এই কথার চেয়ে বেশী সাদৃশ্য রাখে।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৮)
আমি (শাইখ হারিছী) বলছি, ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটি সম্ভবত আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে মুগ্ধ করেছিল।’
দ্র.: লাম্মুদ দুর্রিল মানছূর (১ম সংস্করণ), পৃষ্ঠা: ১৭; সংগৃহীত: সাহাব ডট নেটের ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বিক্বরীনিহ’’ শীর্ষক আর্টিকেল।
{‘আদী বিন ঝাইদ [মৃত: ৩৫ হি.] ছিল এক হীরাবাসী খ্রিষ্টান কবি। সে আরবি, ফার্সি ও রোমক ভাষায় পারঙ্গম ছিল। ‘আদীই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যে তৎকালীন পারস্য সম্রাটের আদেশক্রমে আরবি ভাষায় দীওয়ানে কিসরা লিখে। পরবর্তীতে এই কাজই তাকে পারস্য সম্রাটের দোভাষী হতে সাহায্য করেছিল। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া। - অনুবাদক।}
•
৭. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেন,
”لو أن مؤمنا دخل مسجدا فيه ماية نفس ليس فيهم إلا مؤمن واحد لجاء حتى يجلس إليه . ولو أن منافقا دخل مسجدا فيه ماية ليس فيهم إلا منافق واحد لجاء حتى يجلس إليه.“
‘‘একজন মু’মিন যদি কোনো মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মুনাফিক্ব আছে, কিন্তু মু’মিন আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মু’মিন (মাসজিদের) ঐ মু’মিন ব্যক্তিটির কাছেই বসবে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিক্ব যদি কোন মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মু’মিন আছে, কিন্তু মুনাফিক্ব আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মুনাফিক্ব (মাসজিদের) ঐ মুনাফিক্ব ব্যক্তিটির কাছেই বসবে’’।
[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৮]
•
৮. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,
”اعتبروا الأرض باسمائها واعتبروا الصاحب بالصاحب.“
‘‘কোন ভূখণ্ডকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তাকে যে নাম দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে। আর ব্যক্তিকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তার সঙ্গীর ভিত্তিতে।’’
[শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৪০; কাশফুল খফা, হা/৪১৪; আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৩]
•
৯. ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত রূহের হাদীছটির টিকায় বলেছেন,
”فلا يمكن أن يكون صاحب سنة يمالي صاحب بدعة إلا من النفاق.“
‘‘সুতরাং মুনাফিক্বী ছাড়া কোনো আহলুস সুন্নাহর লোকের দ্বারা বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব সম্ভব নয় (অর্থাৎ, বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে অবশ্যই তাকে মুনাফিক্বী করতে হবে)।’’
[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯]
{ইমাম ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] এই আছারটি বর্ণনা করার পর বলেন, ‘‘ফুদ্বাইল (রাহিমাহুল্লাহ) সত্যই বলেছেন। আমরা এটা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯ এর টিকা) - অনুবাদক}
•
১০. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন আবূ কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৯ হি.] বলেছেন,
”قال سليمان بن داود عليه السلام : لا تحكموا على أحد بشيء حتى تنظروا من يخادن.“
‘‘সুলাইমান বিন দাউদ (‘আলাইহিমাস সালাম) বলেছেন, তোমরা কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে ততক্ষণ পর্যন্ত মন্তব্য কোরো না, যতক্ষণ না তুমি তার বন্ধুদেরকে প্রত্যক্ষ করছো।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৬০]
•
১১. ইমাম আবূ হাতিম আর রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৭ হি.] বলেছেন,
”قدم موسى بن عقبة الصوري بغداد فذكر لأحمد بن حنبل فقال : انظروا على من نزل وإلى من يأوي.“
‘‘মূসা বিন ‘উক্ববাহ আসা সূরী বাগদাদে আগমন করল। বিষয়টি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ্) কে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘দেখো, ও কাদের বাড়িতে যাচ্ছে এবং কাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।’”
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১৪]
•
১২. তাবি‘ঈদের মধ্যে অন্যতম মুহাদ্দিছ ও মুফাসসির ইমাম ক্বাতাদাহ বিন দি‘আমাহ আস সাদওয়াসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১৮ হি.] বলেন,
”إنا والله ما رأينا الرجل يصاحب من الناس إلا مثله، فصاحبوا الصالحين من عباد الله، لعلكم أن تكونوا معهم أو مثلهم.“
‘‘আল্লাহর ক্বসম, আমরা মানুষকে তাদেরই সাহচর্য গ্রহণ করতে দেখেছি যারা (চলাফেরায় ও সাভাবচরিত্রে) তার অনুরূপ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সৎ বান্দাদের সাহচর্য গ্রহণ করো। হয়তো তোমরা তাঁদের সাথী হবে অথবা তাঁদের মতই (সৎ বান্দা) হয়ে যাবে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১১]
•
১৩. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীস আল ইমামুল হাফিয শু‘বাহ বিন হাজ্জাজ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৬০ হি.] বলেছেন,
”وجدت مكتوبا عندي : إنما يصاحب الرجل من يحب.“
‘‘আমি আমার কাছে একটি লিখিত (নীতিকথা) পেয়েছি। আর তা হলো, ‘প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যাকে সে পছন্দ করে বা ভালোবাসে।’।”
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০০]
•
১৪. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ শাইখুল ইসলাম ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] বলেছেন,
”من ستر عنا بدعته لم تخف عنا ألفته.“
‘‘যেই আমাদের কাছে তার বিদ‘আতকে গোপন করুক না কেনো, তার মেলামেশা ও বন্ধুত্ব আমাদের কাছে গোপন থাকবে না।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২০, ৫০৮; সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- ইমাম আল লালাকাঈর শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ২৫৭]
•
১৫. শাইখুল ইসলাম ইমাম আ‘মাশ (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৪৭ হি.] বলেছেন,
”كانوا لا يسألون عن الرجل بعد ثلاث : مـمــشـــاه، ومدخـــلـــه، وألفه من الناس.“
‘‘সালাফগণ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে তিনটি বিষয় জিজ্ঞেস করার পর আর কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। আর সেগুলো হলো: (১) সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, (২) সে কোথায় যায় তথা তার গমনস্থল কোথায়, (৩) লোকদের মধ্যে কাদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪১৯]
•
১৬. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আল ইমামুল হাফিয হিশাম বিন হাসান আল আযদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৮ হি.] বলেছেন,
”دعي أيوب السختياني إلى غسل ميت فخرج مع القوم فلما كشف عن وجه الميت عرفه فقال : أقبلوا قبل صاحبكم، فلست أغسله، رأيته يماشي صاحب بدعة.“
‘‘(তাবি‘ঈ) আইয়ূব আস সাখতিয়ানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৩১ হি.] কে একটি লাশ গোসল করানোর জন্য ডাকা হল। তিনি লোকদের সাথে বের হলেন। যখন তিনি লাশের চেহারার পর্দা সরালেন, তখন মৃত ব্যক্তিটিকে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের লাশের দিকে অগ্রসর হও। আমি তাকে গোসল করাবো না। কারণ আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে চলাফেরা করতে দেখেছি।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৮]
•
১৭. মুহাম্মাদ বিন ‘উবাইদুল্লাহ আল গুল্লাবী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন,
”يتكاتم أهل الأهواء كل شيء إلا التآلف والصحبة.“
‘‘বিদ‘আতীরা বন্ধুত্ব ও সাহচর্য ছাড়া সবকিছুই গোপন করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১০]
•
১৮. ইমাম মু‘আয বিন মু‘আয (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৯৬ হি.] ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে বলেন,
”يا أبا سعيد، الرجل وإن كتم رأيه، لم يخف ذلك في ابنه ولا صديقه ولا في جليسه.“
‘‘হে আবূ সা‘ঈদ, যদিও মানুষ তার মতাদর্শকে লোকদের থেকে গোপন করে, তবুও সে মতাদর্শ তার ছেলে, বন্ধু এবং সহচরের কাছে গোপন থাকে না।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৯]
•
১৯. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ হাফিয ‘আমর বিন ক্বাইস আল মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رأيته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“
‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা করো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৪, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯২; একই বক্তব্য সামনে ইমাম আহমাদ থেকে আসছে]
•
২০. ‘আমর বিন ক্বাইস মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন,
”إن الشاب لينشأ، فإن آثر أن يجالس أهل العلم كاد أن يسلم، وإن مال إلى غيرهم كاد أن يعطب.“
‘‘যুবক (তার যৌবনেই) বেড়ে উঠে। সেই সময় সে যদি ‘আলিমদের মাজলিস বেছে নেয়, তবে সে বেঁচে যায়। পক্ষান্তরে সে যদি অন্যদের (বিদ‘আতীদের) মাজলিসের দিকে ঝুঁকে, তবে সে ধ্বংসে নিপতিত হয়।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৫, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৩]
•
২১. আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীছ আল ইমামুল হাফিয ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদ আল ক্বাততান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৯৮ হি.] বলেছেন,
”لما قدم سفيان الثوري البصرة جعل ينظر إلى أمر الربيع ـ يعني ابن صبيح ـ وقدره على الناس ، سأل : أي شيء مذهبه ؟ قالوا : ما مذهبه إلا السنة قال : من بطانته ؟ قالوا : أهل القدر قــال : هو قدري .“
‘‘সুফইয়ান ছাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] যখন বসরায় আসলেন, তখন তিনি রবী‘ বিন সাবীহ সম্পর্কে এবং তার ব্যাপারে লোকদের ধারণার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া শুরু করলেন। তিনি লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার মাযহাব কী ?’ তারা বললো, ‘তার মাযহাব সুন্নাহ্ ছাড়া আর কিছুই নয়।’তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার সঙ্গীসাথী কারা ?’ তারা বলল, ‘ক্বাদারীরা (তাক্বদীর অস্বীকারকারীরা)।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে সেও ক্বাদারী।’’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১]
•
২২. ইমাম ইবনু বাত্তাহ আল ‘আবকারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] ইমাম সুফইয়ান ছাওরীর উক্তিটি বর্ণনা করার পর বলেছেন,
”رحمة الله على سفيان الثوري، لقد نطق بالحكمة فصدق وقال بعلم، فوافق الكتاب والسنة وما توجبه الحكمة ويدركه العيان ويعرفه أهل البصيرة، قال الله تعالى : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ؛ الآية.“
‘‘সুফইয়ান সাওরীর উপর আল্লাহ রহম করুন। তিনি (স্বীয়) প্রজ্ঞার ভিত্তিতে সত্য ও যথার্থই বলেছেন এবং কথাটি তিনি বলেছেন ‘ইলমের ভিত্তিতে। আর তা ক্বুরআন ও সুন্নাহ সম্মত, প্রজ্ঞাপূর্ণ, বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জ্ঞানবানদের নিকট সুবিদিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘হে মু’মিনগণ, তোমরা তোমাদের নিজেদের লোক ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। কারণ তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না, তারা কেবল তোমাদের দুর্ভোগই কামনা করে।’’ (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১১৮)’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১ এর টিকা]
•
২৩. ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান বিন আশ’আছ আস সিজিস্তানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৫ হি.] বলেন,
’’ﻗﻠﺖ ﻷﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﺃﺭﻯ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﺃﻫـﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ، ﺃﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ، ﺃﻭ - ﺑﻤﻌﻨﻲ ﺑﻞ - ﺗُﻌْﻠِﻤﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﺭﺃﻳﺘﻪ ﻣﻌﻪ ﺻﺎﺣﺐ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﺈﻥ ﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ ﻭ ﺇﻻ ﻓﺄﻟﺤﻘﻪ ﺑﻪ، ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ : ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺑﺨﺪﻧﻪ.‘‘
‘‘আমি আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বালকে বললাম, ‘আমি পরিবারের একজন লোককে বিদ’আতীদের সাথে দেখছি। আমি কি তার সাথে কথা বলা বর্জন করব ?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং তুমি তাকে জানাবে যে, তুমি তার সাথে যাকে দেখেছ, সে হল বিদ’আতী। সে যদি ঐ বিদ’আতীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে, তাহলে ভালো। নতুবা তুমি তাকে ঐ বিদ’আতীর সাথেই যুক্ত করে দিবে (অর্থাৎ, তার মতাবলম্বী মনে করবে)। ইবনু মাস’ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, ব্যক্তিকে তার গোপন সঙ্গীর মাধ্যমেই চেনা যায়’।’’
[ত্ববাক্বাতুল হানাবিলাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬০; আছার নং: ২১৬; ইমাম ইবনু মুফলিহ আল মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শার‘ইয়্যাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ, বাইরূত, ছাপা; সন: ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
•
২৪. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
”ومن كان محسناً للظن بهم وادعى أنه لم يعرف حالهم، عرف حالهم، فإن لم يباين ويظهر لهم الإنكار، وإلا ألحق بهم وجعل منهم.“
‘‘যে ব্যক্তি তাদের (বিদ’আতীদের) প্রতি সুধারণা রাখে এবং এই দাবি করে যে, সে তাদের অবস্থা জানেনা, তাহলে তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। এরপরেও সে যদি নিজেকে তাদের থেকে পৃথক না করে এবং প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যাখ্যান না করে, তাহলে তাকে তাদেরই মতাবলম্বী মনে করতে হবে এবং তাকে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য করা হবে।’’
[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৩৩; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহর রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]
•
২৫. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইবনু ‘আওন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫১ হি.] বলেছেন,
”من يجالس أهل البدع أشد علينا من أهل البدع.“
‘‘যারা বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করে, তারা স্বয়ং বিদ‘আতীদের চেয়েও আমাদের নিকট বেশি বিপদজনক।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৮৬]
•
২৬. ইমাম হাম্মাদ বিন যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেন, একদা (তাবি‘ঈ) ইউনুস বিন ‘উবাইদ [মৃত: ১৩৯ হি.] আমাকে বললেন,
”يا حماد، إني لأرى الشاب على كل حالة منكرة ولا آيس من خيره؛ حتى أراه يصحب صاحب بدعة، فعندها أنه قد عطب.“
‘‘হে হাম্মাদ, আমি যুবককে সকল প্রকার খারাপ অবস্থায় (কর্মে) দেখেও তার (কল্যাণের ব্যাপারে) নিরাশ হইনা। কিন্তু যখনই আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে মিশতে দেখি, তখনই জেনে নিই যে, এবার সে ধ্বংসে নিপতিত হয়েছে।’’
[📚আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ্ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৪]
•
২৭. ইমাম আহমাদের ছাত্র আবুল ফার্জ আশ শীরাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৮৬ হি.] তাঁর লেখা ‘আত তাবসিরাহ’ গ্রন্থে বলেছেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেন,
”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رايته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“
‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠেছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা কোরো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’
[ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শারী‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৭৭; এই আছারটি ‘আমর বিন ক্বইস আল মুলাঈর উক্তিরূপে গত হয়ে গেছে, ১৯ নং উক্তি দ্রষ্টব্য]
•
২৮. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৬ হি.] বলেছেন,
”من نعمة الله على الشاب والأعجمي إذا تمسكا أن يوفقا لصاحب سنة، يحملهما عليها.“
‘‘একজন যুবক এবং একজন অনারব লোকের উপর এটা আল্লাহর নি‘আমত (অনুগ্রহ) যে, তারা যখন ‘ইবাদত শুরু করে তখন আহলুস সুন্নাহর একজন লোককে (সাথী হিসেবে পেয়ে) সাহায্যপ্রাপ্ত হয়; যিনি তাদের দু’জনকে সুন্নাহর পথ অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করেন।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৩; আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯১; শারহু উসাূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ্; আছার নং: ৩১]
•
২৯. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৫৬ হি.] থেকে বর্ণিত, আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”إن من سعادة الحدث والأعجمي أن يوفقهما الله لعالم من أهل السنة.“
‘‘অল্প বয়স্ক যুবক এবং অনারব লোকের এটা সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তাদেরকে আহলুস সুন্নাহর কোনো ‘আলিমের সাহচর্য লাভ করার তাওফীক্ব দান করেন।’’
[আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ৩০]
বি.দ্র.: ‘ব্যক্তির মান নির্ণয় হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে’ শিরোনামটির আওতায় উল্লিখিত ২৯টি উক্তি শাইখ হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ‘‘লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর...’’ গ্রন্থের ৩৬ নং অধ্যায় ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বি ক্বরীনিহী ওয়া মামশাহু’’ থেকে নেয়া হয়েছে। উল্লিখিত গ্রন্থের ১৭৪-১৮০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য; দারুল মিনহাজ, কায়রো ছাপা (২য় সংস্করণ)।
•
আল্লাহ আমাদের সালাফদের মানহাজ পরিপূর্ণরূপে অনুসরণের তাওফীক্ব দান করুক, এবং যারা সালাফদের মানহাজের অনুসারী না হয়েও তা হওয়ার ভান করে লোকদের ধোঁকা দিতে চায়, তাদের ধোঁকা থেকে আমাদের রক্ষা করুক। আমীন।
•উৎস: sahab.net
salafipublications.com
sunnahpublishing.net
•
অনুবাদক:
মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা
রিফাত রাহমান সিয়াম
পোস্টটি একটি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করে শুরু করা যাক। ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন আহলুল সুন্নাহর প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম আবু নাসর ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সা‘ঈদ ইবনু হাতিম আল-ওয়া‘ঈলী আল-বাকরী আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)। ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “এখানে মাক্কাহতে আমাদের সাথে এক লোক আছে যে হাদীস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সে তার বেশীরভাগ সময় এই বলে চিল্লাফাল্লা করে শেষ করে যে, সে আশ‘আরী নয়। অতঃপর সে বলে, ‘আমি তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিবর্গ দেখেছি, এবং আমি (এমন আশ‘আরীদেরকে) দেখেছি যাদের পায়ের নীচের ধুলো সৃষ্টি থেকে উত্তম।’ এবং আশ‘আরীদের মধ্য থেকে কোনো লোক যখন শহরে আসতো তখন সে তাকে অনুসরণ করতো ও কাছে টেনে নিতো। এবং আমাদের সঙ্গীদের মধ্য থেকে কোন লোক যখন তার নিকট গমন করতো তখন সে তার থেকে দূরে থাকতো ও তার থেকে সতর্ক করতো। এবং যখনই হাম্বলীদের (আহলুস সুন্নাহ/আহলুল হাদীস/সালাফী) ‘উলামাদের মধ্য থেকে কোনো একজন ‘আলিমের ব্যাপারে উল্লেখ করা হতো সে তার দোষ খুঁজতো। এবং সে বলতো, ‘আহমাদ উত্তম ব্যক্তি, কিন্তু তিনি তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছেন যারা মিথ্যা বলে।’ এটি ছিলো তার একটি অপকৌশল। এর মাধ্যমে সে দুর্ভোগ ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনবে না।”
(ইমাম আস-সিজযী কর্তৃক আল-হারফ এবং আস-সাওত অস্বীকারকারীদের রাদ করে লেখা চিঠি, পৃষ্ঠা ২৩২)।
ইমাম আস-সিজযী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তিটি থেকে আমরা যেসব বিষয় বুঝতে পারলাম সেগুলো হলো: বিদ‘আতীদের কেউ কেউ আহলুস সুন্নাহর কাছে তাদের ‘আক্বীদাহ-মানহাজ গোপন করে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ভান ধরে, আহলুস সুন্নাহর ইমামদের প্রতি তারা ভালোবাসা প্রদর্শন করে কিন্তু তাদের অনুসারীদের ঘৃণা করে, তারা তাদের বিদ‘আত গোপন করলেও তারা বাস্তবে যেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অনুসারী, সেই ‘আক্বীদাহ-মানহাজের অন্যান্য অনুসারীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও মেলামেশা গোপন করতে অক্ষম হয়।
আর যেহেতু মুখোশধারী বিদ‘আতীরা এই দুটি বিষয়—তাদের ভালোবাসা ও ঘৃণা কাদের প্রতি এবং তাদের সঙ্গিসাথী কারা—গোপন করতে অক্ষম হয়, সেহেতু এই মুখোশধারী বিদ‘আতীদের মুখোশ উন্মোচনের অন্যতম পদ্ধতি হলো এই দুটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখা। এবং আমাদের সালাফগণ ঠিক এই কাজটিই করতেন। আল্লাহ যদি তাওফীক্ব দেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা পূর্ববর্তী ইমামগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করে একটি পোস্ট করবো এই বিষয়ে যে - ব্যক্তির মান নির্ণয় করা হবে সে কাদের ভালোবাসে এবং কাদের ঘৃণা করে তার ভিত্তিতে, আর এই পোস্টে আমরা ব্যক্তির মান নির্ণয় যে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে করা হবে এই ব্যাপারে রাসূল ﷺ-এর হাদীস, সাহাবাদের আছার এবং পূর্ববর্তী ইমামদের বেশ কিছু উক্তি উল্লেখ করবো। পোস্টের আসন্ন মূল অংশে উল্লিখিত উক্তিসমূহ শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ)’র “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বওলিল মা‘সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ” গ্রন্থের “সালাফগণ ব্যক্তির মান নির্ণয় করতেন তার সঙ্গী ও সহচরদের অবস্থার ভিত্তিতে” শীর্ষক অধ্যায় থেকে সংগৃহীত হয়েছে। “লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর” গ্রন্থটি পড়েছেন এবং পুনঃসমীক্ষা করেছেন শাইখ হারিসীর সম্মানিত শাইখ যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আর এই অমূল্য গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন সৌদি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান্যবর মন্ত্রী মহোদয় আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ-শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)।
•
ব্যক্তির মান নির্ণীত হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে:
১. আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
”الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِل.“
‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’’
[আবূ দাউদ, হা/৪৮৩৩; তিরমিযী, হা/২৩৭৮; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/৯২৭; সনদ: হাসান]
•
২. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,
”الأَرْوَاحُ جُنُوْدٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَف.“
‘‘সমস্ত রূহ সেনাবাহিনীর মত একত্রে সমবেত ছিল। সেখানে তাদের যে সমস্ত রূহের পরস্পর পরিচয় ছিল, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর পরিচিতি ও সৌহার্দতা থাকবে। আর সেখানে যাদের মধ্যে পরস্পর পরিচয় হয়নি, এখানে তাদের মধ্যে পরস্পর মতভেদ ও মতবিরোধ থাকবে।’’
[সাহীহ বুখারী, হা/৩৩৩৬; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৩৮]
{ইমাম খত্বত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৮ হি.] বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা (সুনির্ধারিত) পারস্পরিক সৌহার্দতার ভিত্তিতেই রূহসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের মধ্যে কারা সৌভাগ্যবান হবে (তথা জান্নাতে যাবে) এবং কারা দুর্ভাগা হবে (তথা জাহান্নামে যাবে) সেটাও সৃষ্টির শুরুতেই নির্ধারণ করেছেন। (রুহজগতে) রূহগুলো ছিলো দুইটি আলাদা ভাগে বিভক্ত। সুতরাং দুনিয়াতে যখন তাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন তাদের মধ্যে সৌহার্দতা ও মতবিরোধ হবে ঐ রূহ জগতে তাদেরকে যে সৌহার্দতার উপর সৃষ্টি করা হয়েছে তার ভিত্তিতেই। ফলে ভালোরা ভালোদের দিকে ঝুঁকবে, আর খারাপরা খারাপদের দিকেই ঝুঁকবে।’’ (ইমাম নাওয়াউয়ীর শারহে মুসলিম, ২৬৩৮ নং হাদীছের ভাষ্য দ্রষ্টব্য) - অনুবাদক।}
•
৩. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
”اعتبروا الناس بأخدانهم المسلم يتبع المسلم والفاجر يتبع الفاجر.“
‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। যে ব্যক্তি মুসলিম, সে মুসলিমেরই অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি পাপাচারী, সে পাপাচারীরই অনুসরণ করে।’’
[ত্ববারানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯১৯; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল ইবানাহ, আছার নং: ৫০২]
•
৪. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
”إنما يمشي الرجل ويصاحب من يحبه ومن هو مثله.“
‘‘প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তি তার সাথেই চলাফেরা করে এবং তারই সঙ্গী হয়, যাকে সে পছন্দ করে এবং যে হয় (স্বভাবচরিত্রে) তারই অনুরূপ।’’
[বাইহাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ), শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৩৯; আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৯, ৫০০]
•
৫. ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,
”اعتبروا الناس بأخدانهم فإن الرجل لا يخادن إلا من يعجبه نحوه.“
‘‘তোমরা লোকদেরকে তাদের সঙ্গীবর্গের মাধ্যমে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো। নিশ্চয়ই মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যে (স্বীয় কথাবার্তা বা চলাফেরায়) তাকে মুগ্ধ করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৬, ৫০১]
•
৬. শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,
”من فقه الرجل ممشاه ومدخله مجلسه.“ ثم قال أبو قلابة: ”قاتل الله الشاعر حين يقول:
عن المرء لا تسئل وأبصر قرينه ~ فإن القرين بالمقارن يقتدي.“
‘‘এটা একজন ব্যক্তির ফিক্বহের (বুঝের) অন্তর্ভুক্ত যে, সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, কাদের কাছে গমন করে এবং কাদের সাথে ওঠাবসা করে।’’
এরপর আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘আল্লাহ্ ধ্বংস করুন ঐ কবিকে, যে বলেছিল-
কোনো ব্যক্তির (হালচাল জানতে) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস কোরো না, বরং লক্ষ্য করো কে তার সঙ্গী। কারণ, সকল সঙ্গী তার নিজ সঙ্গীরই অনুসরণ করে থাকে।’’
[ইবনুল মুবারাকের আয-যুহ্দ; আছার নং: ৯৮৮; ইবনু আবী ‘আসািমের আয-যুহ্দ, আছার নং: ৭৭; আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৬৮, ৩৭৭, ৪৫৯]
{শাইখ হারিছী (হাফিয্বাহুল্লাহ) বইটির ১ম সংস্করণে কিছু কথা বলেছেন, যা ২য় সংস্করণে নেই। উপরিউক্ত উক্তিটি আরো স্পষ্ট করার জন্য সেই অংশটুকু তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন,
“ইমাম আসামা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৫ হি.] ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটির ব্যাপারে বলেন,
”لم أر بيتا قط أشبه بالسنة من قول عدي.“
‘‘আমি কখনও এমন পঙক্তি দেখিনি, যা সুন্নাহর সাথে ‘আদী বিন ঝাইদের এই কথার চেয়ে বেশী সাদৃশ্য রাখে।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৩৭৮)
আমি (শাইখ হারিছী) বলছি, ‘আদী বিন যাইদের পঙক্তিটি সম্ভবত আবূ ক্বিলাবাহ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে মুগ্ধ করেছিল।’
দ্র.: লাম্মুদ দুর্রিল মানছূর (১ম সংস্করণ), পৃষ্ঠা: ১৭; সংগৃহীত: সাহাব ডট নেটের ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বিক্বরীনিহ’’ শীর্ষক আর্টিকেল।
{‘আদী বিন ঝাইদ [মৃত: ৩৫ হি.] ছিল এক হীরাবাসী খ্রিষ্টান কবি। সে আরবি, ফার্সি ও রোমক ভাষায় পারঙ্গম ছিল। ‘আদীই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যে তৎকালীন পারস্য সম্রাটের আদেশক্রমে আরবি ভাষায় দীওয়ানে কিসরা লিখে। পরবর্তীতে এই কাজই তাকে পারস্য সম্রাটের দোভাষী হতে সাহায্য করেছিল। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া। - অনুবাদক।}
•
৭. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেন,
”لو أن مؤمنا دخل مسجدا فيه ماية نفس ليس فيهم إلا مؤمن واحد لجاء حتى يجلس إليه . ولو أن منافقا دخل مسجدا فيه ماية ليس فيهم إلا منافق واحد لجاء حتى يجلس إليه.“
‘‘একজন মু’মিন যদি কোনো মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মুনাফিক্ব আছে, কিন্তু মু’মিন আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মু’মিন (মাসজিদের) ঐ মু’মিন ব্যক্তিটির কাছেই বসবে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিক্ব যদি কোন মাসজিদে প্রবেশ করে, যেখানে ১০০ জন মু’মিন আছে, কিন্তু মুনাফিক্ব আছে স্রেফ ১ জন। তবে অবশ্যই সে মুনাফিক্ব (মাসজিদের) ঐ মুনাফিক্ব ব্যক্তিটির কাছেই বসবে’’।
[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৮]
•
৮. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] আরো বলেন,
”اعتبروا الأرض باسمائها واعتبروا الصاحب بالصاحب.“
‘‘কোন ভূখণ্ডকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তাকে যে নাম দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে। আর ব্যক্তিকে (ভালো বা মন্দ) গণ্য করো তার সঙ্গীর ভিত্তিতে।’’
[শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৪৪০; কাশফুল খফা, হা/৪১৪; আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৩]
•
৯. ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত রূহের হাদীছটির টিকায় বলেছেন,
”فلا يمكن أن يكون صاحب سنة يمالي صاحب بدعة إلا من النفاق.“
‘‘সুতরাং মুনাফিক্বী ছাড়া কোনো আহলুস সুন্নাহর লোকের দ্বারা বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব সম্ভব নয় (অর্থাৎ, বিদ‘আতীর সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে অবশ্যই তাকে মুনাফিক্বী করতে হবে)।’’
[আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯]
{ইমাম ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] এই আছারটি বর্ণনা করার পর বলেন, ‘‘ফুদ্বাইল (রাহিমাহুল্লাহ) সত্যই বলেছেন। আমরা এটা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি।’’ (আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২৯ এর টিকা) - অনুবাদক}
•
১০. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন আবূ কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৯ হি.] বলেছেন,
”قال سليمان بن داود عليه السلام : لا تحكموا على أحد بشيء حتى تنظروا من يخادن.“
‘‘সুলাইমান বিন দাউদ (‘আলাইহিমাস সালাম) বলেছেন, তোমরা কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে ততক্ষণ পর্যন্ত মন্তব্য কোরো না, যতক্ষণ না তুমি তার বন্ধুদেরকে প্রত্যক্ষ করছো।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৬০]
•
১১. ইমাম আবূ হাতিম আর রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৭ হি.] বলেছেন,
”قدم موسى بن عقبة الصوري بغداد فذكر لأحمد بن حنبل فقال : انظروا على من نزل وإلى من يأوي.“
‘‘মূসা বিন ‘উক্ববাহ আসা সূরী বাগদাদে আগমন করল। বিষয়টি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ্) কে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘দেখো, ও কাদের বাড়িতে যাচ্ছে এবং কাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।’”
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১৪]
•
১২. তাবি‘ঈদের মধ্যে অন্যতম মুহাদ্দিছ ও মুফাসসির ইমাম ক্বাতাদাহ বিন দি‘আমাহ আস সাদওয়াসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১৮ হি.] বলেন,
”إنا والله ما رأينا الرجل يصاحب من الناس إلا مثله، فصاحبوا الصالحين من عباد الله، لعلكم أن تكونوا معهم أو مثلهم.“
‘‘আল্লাহর ক্বসম, আমরা মানুষকে তাদেরই সাহচর্য গ্রহণ করতে দেখেছি যারা (চলাফেরায় ও সাভাবচরিত্রে) তার অনুরূপ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সৎ বান্দাদের সাহচর্য গ্রহণ করো। হয়তো তোমরা তাঁদের সাথী হবে অথবা তাঁদের মতই (সৎ বান্দা) হয়ে যাবে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১১]
•
১৩. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীস আল ইমামুল হাফিয শু‘বাহ বিন হাজ্জাজ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৬০ হি.] বলেছেন,
”وجدت مكتوبا عندي : إنما يصاحب الرجل من يحب.“
‘‘আমি আমার কাছে একটি লিখিত (নীতিকথা) পেয়েছি। আর তা হলো, ‘প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার সাথেই বন্ধুত্ব করে, যাকে সে পছন্দ করে বা ভালোবাসে।’।”
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০০]
•
১৪. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ শাইখুল ইসলাম ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] বলেছেন,
”من ستر عنا بدعته لم تخف عنا ألفته.“
‘‘যেই আমাদের কাছে তার বিদ‘আতকে গোপন করুক না কেনো, তার মেলামেশা ও বন্ধুত্ব আমাদের কাছে গোপন থাকবে না।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২০, ৫০৮; সামান্য শব্দের পরিবর্তনে- ইমাম আল লালাকাঈর শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ২৫৭]
•
১৫. শাইখুল ইসলাম ইমাম আ‘মাশ (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৪৭ হি.] বলেছেন,
”كانوا لا يسألون عن الرجل بعد ثلاث : مـمــشـــاه، ومدخـــلـــه، وألفه من الناس.“
‘‘সালাফগণ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে তিনটি বিষয় জিজ্ঞেস করার পর আর কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। আর সেগুলো হলো: (১) সে কাদের সাথে চলাফেরা করে, (২) সে কোথায় যায় তথা তার গমনস্থল কোথায়, (৩) লোকদের মধ্যে কাদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪১৯]
•
১৬. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ আল ইমামুল হাফিয হিশাম বিন হাসান আল আযদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৮ হি.] বলেছেন,
”دعي أيوب السختياني إلى غسل ميت فخرج مع القوم فلما كشف عن وجه الميت عرفه فقال : أقبلوا قبل صاحبكم، فلست أغسله، رأيته يماشي صاحب بدعة.“
‘‘(তাবি‘ঈ) আইয়ূব আস সাখতিয়ানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৩১ হি.] কে একটি লাশ গোসল করানোর জন্য ডাকা হল। তিনি লোকদের সাথে বের হলেন। যখন তিনি লাশের চেহারার পর্দা সরালেন, তখন মৃত ব্যক্তিটিকে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের লাশের দিকে অগ্রসর হও। আমি তাকে গোসল করাবো না। কারণ আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে চলাফেরা করতে দেখেছি।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৯৮]
•
১৭. মুহাম্মাদ বিন ‘উবাইদুল্লাহ আল গুল্লাবী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন,
”يتكاتم أهل الأهواء كل شيء إلا التآلف والصحبة.“
‘‘বিদ‘আতীরা বন্ধুত্ব ও সাহচর্য ছাড়া সবকিছুই গোপন করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫১০]
•
১৮. ইমাম মু‘আয বিন মু‘আয (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৯৬ হি.] ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে বলেন,
”يا أبا سعيد، الرجل وإن كتم رأيه، لم يخف ذلك في ابنه ولا صديقه ولا في جليسه.“
‘‘হে আবূ সা‘ঈদ, যদিও মানুষ তার মতাদর্শকে লোকদের থেকে গোপন করে, তবুও সে মতাদর্শ তার ছেলে, বন্ধু এবং সহচরের কাছে গোপন থাকে না।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৫০৯]
•
১৯. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ হাফিয ‘আমর বিন ক্বাইস আল মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رأيته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“
‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা করো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৪, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯২; একই বক্তব্য সামনে ইমাম আহমাদ থেকে আসছে]
•
২০. ‘আমর বিন ক্বাইস মুলাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন,
”إن الشاب لينشأ، فإن آثر أن يجالس أهل العلم كاد أن يسلم، وإن مال إلى غيرهم كاد أن يعطب.“
‘‘যুবক (তার যৌবনেই) বেড়ে উঠে। সেই সময় সে যদি ‘আলিমদের মাজলিস বেছে নেয়, তবে সে বেঁচে যায়। পক্ষান্তরে সে যদি অন্যদের (বিদ‘আতীদের) মাজলিসের দিকে ঝুঁকে, তবে সে ধ্বংসে নিপতিত হয়।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৫, ৫১৮; ইবনু বাত্তাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৩]
•
২১. আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীছ আল ইমামুল হাফিয ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদ আল ক্বাততান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৯৮ হি.] বলেছেন,
”لما قدم سفيان الثوري البصرة جعل ينظر إلى أمر الربيع ـ يعني ابن صبيح ـ وقدره على الناس ، سأل : أي شيء مذهبه ؟ قالوا : ما مذهبه إلا السنة قال : من بطانته ؟ قالوا : أهل القدر قــال : هو قدري .“
‘‘সুফইয়ান ছাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] যখন বসরায় আসলেন, তখন তিনি রবী‘ বিন সাবীহ সম্পর্কে এবং তার ব্যাপারে লোকদের ধারণার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া শুরু করলেন। তিনি লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার মাযহাব কী ?’ তারা বললো, ‘তার মাযহাব সুন্নাহ্ ছাড়া আর কিছুই নয়।’তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার সঙ্গীসাথী কারা ?’ তারা বলল, ‘ক্বাদারীরা (তাক্বদীর অস্বীকারকারীরা)।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে সেও ক্বাদারী।’’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১]
•
২২. ইমাম ইবনু বাত্তাহ আল ‘আবকারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] ইমাম সুফইয়ান ছাওরীর উক্তিটি বর্ণনা করার পর বলেছেন,
”رحمة الله على سفيان الثوري، لقد نطق بالحكمة فصدق وقال بعلم، فوافق الكتاب والسنة وما توجبه الحكمة ويدركه العيان ويعرفه أهل البصيرة، قال الله تعالى : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ؛ الآية.“
‘‘সুফইয়ান সাওরীর উপর আল্লাহ রহম করুন। তিনি (স্বীয়) প্রজ্ঞার ভিত্তিতে সত্য ও যথার্থই বলেছেন এবং কথাটি তিনি বলেছেন ‘ইলমের ভিত্তিতে। আর তা ক্বুরআন ও সুন্নাহ সম্মত, প্রজ্ঞাপূর্ণ, বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জ্ঞানবানদের নিকট সুবিদিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘হে মু’মিনগণ, তোমরা তোমাদের নিজেদের লোক ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। কারণ তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না, তারা কেবল তোমাদের দুর্ভোগই কামনা করে।’’ (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১১৮)’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪২১ এর টিকা]
•
২৩. ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান বিন আশ’আছ আস সিজিস্তানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৫ হি.] বলেন,
’’ﻗﻠﺖ ﻷﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﺃﺭﻯ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﺃﻫـﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ، ﺃﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ، ﺃﻭ - ﺑﻤﻌﻨﻲ ﺑﻞ - ﺗُﻌْﻠِﻤﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﺭﺃﻳﺘﻪ ﻣﻌﻪ ﺻﺎﺣﺐ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﺈﻥ ﺗﺮﻙ ﻛﻼﻣﻪ ﻭ ﺇﻻ ﻓﺄﻟﺤﻘﻪ ﺑﻪ، ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ : ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺑﺨﺪﻧﻪ.‘‘
‘‘আমি আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বালকে বললাম, ‘আমি পরিবারের একজন লোককে বিদ’আতীদের সাথে দেখছি। আমি কি তার সাথে কথা বলা বর্জন করব ?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং তুমি তাকে জানাবে যে, তুমি তার সাথে যাকে দেখেছ, সে হল বিদ’আতী। সে যদি ঐ বিদ’আতীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে, তাহলে ভালো। নতুবা তুমি তাকে ঐ বিদ’আতীর সাথেই যুক্ত করে দিবে (অর্থাৎ, তার মতাবলম্বী মনে করবে)। ইবনু মাস’ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, ব্যক্তিকে তার গোপন সঙ্গীর মাধ্যমেই চেনা যায়’।’’
[ত্ববাক্বাতুল হানাবিলাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬০; আছার নং: ২১৬; ইমাম ইবনু মুফলিহ আল মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শার‘ইয়্যাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ, বাইরূত, ছাপা; সন: ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
•
২৪. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
”ومن كان محسناً للظن بهم وادعى أنه لم يعرف حالهم، عرف حالهم، فإن لم يباين ويظهر لهم الإنكار، وإلا ألحق بهم وجعل منهم.“
‘‘যে ব্যক্তি তাদের (বিদ’আতীদের) প্রতি সুধারণা রাখে এবং এই দাবি করে যে, সে তাদের অবস্থা জানেনা, তাহলে তাকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। এরপরেও সে যদি নিজেকে তাদের থেকে পৃথক না করে এবং প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যাখ্যান না করে, তাহলে তাকে তাদেরই মতাবলম্বী মনে করতে হবে এবং তাকে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য করা হবে।’’
[ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৩৩; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহর রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]
•
২৫. প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ ইমাম ইবনু ‘আওন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫১ হি.] বলেছেন,
”من يجالس أهل البدع أشد علينا من أهل البدع.“
‘‘যারা বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করে, তারা স্বয়ং বিদ‘আতীদের চেয়েও আমাদের নিকট বেশি বিপদজনক।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৮৬]
•
২৬. ইমাম হাম্মাদ বিন যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেন, একদা (তাবি‘ঈ) ইউনুস বিন ‘উবাইদ [মৃত: ১৩৯ হি.] আমাকে বললেন,
”يا حماد، إني لأرى الشاب على كل حالة منكرة ولا آيس من خيره؛ حتى أراه يصحب صاحب بدعة، فعندها أنه قد عطب.“
‘‘হে হাম্মাদ, আমি যুবককে সকল প্রকার খারাপ অবস্থায় (কর্মে) দেখেও তার (কল্যাণের ব্যাপারে) নিরাশ হইনা। কিন্তু যখনই আমি তাকে বিদ‘আতীর সাথে মিশতে দেখি, তখনই জেনে নিই যে, এবার সে ধ্বংসে নিপতিত হয়েছে।’’
[📚আর রদ্দু ‘আলাল মুবাতাদি‘আহ, ইবনুল বান্নার পাণ্ডুলিপি (জামি‘আহ্ ইসলামিয়্যাহর ১৬২৯ নং পাণ্ডুলিপি); আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯৪]
•
২৭. ইমাম আহমাদের ছাত্র আবুল ফার্জ আশ শীরাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৮৬ হি.] তাঁর লেখা ‘আত তাবসিরাহ’ গ্রন্থে বলেছেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেন,
”إذا رأيت الشاب أول ما ينشأ مع أهل السنة والجماعة فارجه، فإذا رايته مع أهل البدع فايأس منه، فإن الشاب على أول نشوئه.“
‘‘যখন তুমি কোনো যুবককে দেখবে যে, সে (তার যৌবনের) শুরুতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকদের সাথে বেড়ে উঠেছে, তখন তুমি তার (কল্যাণের) আশা কোরো। আর যখন তুমি (ঐ সময়) তাকে বিদ‘আতীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখো, তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাও। কেননা যুবক তার বেড়ে ওঠার সূচনায় যে আদর্শে গড়ে উঠে, পরবর্তীতে সে ঐ আদর্শ অনুযায়ীই নিজেকে পরিচালিত করে।’’
[ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল আদাবুশ শারী‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৭৭; এই আছারটি ‘আমর বিন ক্বইস আল মুলাঈর উক্তিরূপে গত হয়ে গেছে, ১৯ নং উক্তি দ্রষ্টব্য]
•
২৮. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৬ হি.] বলেছেন,
”من نعمة الله على الشاب والأعجمي إذا تمسكا أن يوفقا لصاحب سنة، يحملهما عليها.“
‘‘একজন যুবক এবং একজন অনারব লোকের উপর এটা আল্লাহর নি‘আমত (অনুগ্রহ) যে, তারা যখন ‘ইবাদত শুরু করে তখন আহলুস সুন্নাহর একজন লোককে (সাথী হিসেবে পেয়ে) সাহায্যপ্রাপ্ত হয়; যিনি তাদের দু’জনকে সুন্নাহর পথ অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করেন।’’
[আল ইবানাহ; আছার নং: ৪৩; আশ শারহু ওয়াল ইবানাহ; আছার নং: ৯১; শারহু উসাূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ্; আছার নং: ৩১]
•
২৯. ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন শাওযাব আল খুরাসানী (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ১৫৬ হি.] থেকে বর্ণিত, আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
”إن من سعادة الحدث والأعجمي أن يوفقهما الله لعالم من أهل السنة.“
‘‘অল্প বয়স্ক যুবক এবং অনারব লোকের এটা সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তাদেরকে আহলুস সুন্নাহর কোনো ‘আলিমের সাহচর্য লাভ করার তাওফীক্ব দান করেন।’’
[আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আছার নং: ৩০]
বি.দ্র.: ‘ব্যক্তির মান নির্ণয় হবে তার সাহচর্যের ভিত্তিতে’ শিরোনামটির আওতায় উল্লিখিত ২৯টি উক্তি শাইখ হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ‘‘লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর...’’ গ্রন্থের ৩৬ নং অধ্যায় ‘‘হুকমুস সালাফ ‘আলাল মার’ই বি ক্বরীনিহী ওয়া মামশাহু’’ থেকে নেয়া হয়েছে। উল্লিখিত গ্রন্থের ১৭৪-১৮০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য; দারুল মিনহাজ, কায়রো ছাপা (২য় সংস্করণ)।
•
আল্লাহ আমাদের সালাফদের মানহাজ পরিপূর্ণরূপে অনুসরণের তাওফীক্ব দান করুক, এবং যারা সালাফদের মানহাজের অনুসারী না হয়েও তা হওয়ার ভান করে লোকদের ধোঁকা দিতে চায়, তাদের ধোঁকা থেকে আমাদের রক্ষা করুক। আমীন।
•উৎস: sahab.net
salafipublications.com
sunnahpublishing.net
•
অনুবাদক:
মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা
রিফাত রাহমান সিয়াম
0 Comments