বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’, ইংরেজি নববর্ষ ‘থার্টিফাস্ট’ কিংবা


বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’, ইংরেজি নববর্ষ ‘থার্টিফাস্ট’ কিংবা হিজরি নববর্ষ '১ম মহরম' পালন করা হারাম।


 আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমতুলল্লাহি ওবারাকাতু
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’, ইংরেজি নববর্ষ ‘থার্টিফাস্ট’ কিংবা হিজরি নববর্ষ '১ম মহরম' পালন করা হারাম।

ইব্ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “কোন মুসলিমের সুযোগ নেই কাফেরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, না তাদের ধর্মীয় উৎসবে, না মৌসুমি উৎসবে, না তাদের কোন ইবাদতে। কারণ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সর্বশেষ নবী দ্বারা সম্মানিত করেছেন, যাকে পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী দীন দেয়া হয়েছে। যদি মূসা ইব্ন ইমরান জীবিত থাকত, যার উপর তাওরাত নাযিল হয়েছে; কিংবা ঈসা ইব্ন মারইয়াম জীবিত থাকত, যার উপর ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে; তারাও ইসলামের অনুসারী হত। তারাসহ সকল নবী থাকলেও কারো পক্ষে পরিপূর্ণ ও সম্মানিত শরিয়তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকত না। অতএব মহান নবীর আদর্শ ত্যাগ করে আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব এমন জাতির অনুসরণ করা, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট, মানুষকে পথ ভ্রষ্টকারী ও সঠিক দীন থেকে বিচ্যুত। তারা বিকৃতি, পরিবর্তন ও অপব্যাখ্যা করে আসমানি ওহির কোন বৈশিষ্ট্য তাদের দীনে অবশিষ্ট রাখেনি। দ্বিতীয়ত তাদের ধর্ম রহিত, রহিত ধর্মের অনুসরণ করা হারাম, তার উপর যত আমল করা হোক আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। তাদের ধর্ম ও মানব রচিত ধর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ যাকে চান সঠিক পথের সন্ধান দান করেন”।[15]
প্রিয় পাঠক, নববর্ষ উদযাপন করে আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি না। তারা অভিশপ্ত ও গোমরাহ। এসব তাদের বানানো উৎসব, কুসংস্কার ও পাপ কম। ইহুদিদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭﺍْ ﻳُﺤَﺮِّﻓُﻮﻥَ ﭐﻟۡﻜَﻠِﻢَ ﻋَﻦ ﻣَّﻮَﺍﺿِﻌِﻪِۦ ﻭَﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺳَﻤِﻌۡﻨَﺎ ﻭَﻋَﺼَﻴۡﻨَﺎ ﻭَﭐﺳۡﻤَﻊۡ ﻏَﻴۡﺮَ ﻣُﺴۡﻤَﻊٖ ﻭَﺭَٰﻋِﻨَﺎ ﻟَﻴَّۢﺎ ﺑِﺄَﻟۡﺴِﻨَﺘِﻬِﻢۡ ﻭَﻃَﻌۡﻨٗﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِۚ ﻭَﻟَﻮۡ ﺃَﻧَّﻬُﻢۡ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺳَﻤِﻌۡﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌۡﻨَﺎ ﻭَﭐﺳۡﻤَﻊۡ ﻭَﭐﻧﻈُﺮۡﻧَﺎ ﻟَﻜَﺎﻥَ ﺧَﻴۡﺮٗﺍ ﻟَّﻬُﻢۡ ﻭَﺃَﻗۡﻮَﻡَ ﻭَﻟَٰﻜِﻦ ﻟَّﻌَﻨَﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻜُﻔۡﺮِﻫِﻢۡ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ٤٦﴾ ] ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٤٦ ]
“ইহুদিদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’। আর তুমি শোন না শোনার মত, তারা নিজেদের জিহ্বা বাঁকা করে এবং দীনের প্রতি খোঁচা মেরে বলে, ‘রাইনা’।[16] আর তারা যদি বলত, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম এবং তুমি শোন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ’ তাহলে এটি হত তাদের জন্য কল্যাণকর ও যথার্থ। কিন্তু তাদের কুফরির কারণে আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। তাই তাদের কম সংখ্যক লোকই ঈমান আনে”।[17]
খৃস্টানদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলে:
﴿ﻭَﻣِﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗَﺎﻟُﻮٓﺍْ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺼَٰﺮَﻯٰٓ ﺃَﺧَﺬۡﻧَﺎ ﻣِﻴﺜَٰﻘَﻬُﻢۡ ﻓَﻨَﺴُﻮﺍْ ﺣَﻈّٗﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﺫُﻛِّﺮُﻭﺍْ ﺑِﻪِۦ ﻓَﺄَﻏۡﺮَﻳۡﻨَﺎ ﺑَﻴۡﻨَﻬُﻢُ ﭐﻟۡﻌَﺪَﺍﻭَﺓَ ﻭَﭐﻟۡﺒَﻐۡﻀَﺎٓﺀَ ﺇِﻟَﻰٰ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِۚ ﻭَﺳَﻮۡﻑَ ﻳُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﺼۡﻨَﻌُﻮﻥَ ١٤﴾ ] ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ١٤ ]
“আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’, আমি তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার একটি অংশ ভুলে গেছে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা উস্কে দিয়েছি এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন”।[18]
মুসলিম ভাই, আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান পালন করি তার অধিকাংশ ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের তৈরি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমরা আকিকা ত্যাগ করে খাতনার সময় ঘটা করে অনুষ্ঠান করি। খাতনা করা সুন্নত, এতে কোন অনুষ্ঠান নেই, তাতে আমরা অনুষ্ঠান করি, এদিকে আকিকা দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ, অথচ আমরা তাই ত্যাগ করছি। আমরা কি এতটাই নির্বোধ বনে গেলাম! আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে সতেরো বার সূরা ফাতেহা পাঠ করে সিরাতে মুস্তাকিমের প্রার্থনা করি, বাস্তবে আমরা যা ত্যাগ করছি, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ ও সুন্নত। কমপক্ষে সতেরো বার অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের রাস্তা থেকে পানাহ চাই, অথচ বাস্তবে আমরা তাদের অনুসরণ করছি, অর্থাৎ ইহুদি ও খৃস্টানদের পথ। এ কেমন বৈপরীত্য! আমাদের অবচেতনতা যেন পাগলামিকেও হারমানায়।
ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকরা মুসলিমের শত্রু
নববর্ষ উদযাপন করে আমরা যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছি, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের শত্রু। তারা কখনো আমাদের বন্ধু হবে না, যাবত আমরা আমাদের দীন ত্যাগ করে তাদের ধর্মের অনুসরণ না করি। তারা আমাদের দীন ও নবীকে নিয়ে উপহাস করে। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺨِﺬُﻭﺍْ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭﺍْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢۡ ﻫُﺰُﻭٗﺍ ﻭَﻟَﻌِﺒٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍْ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻭَﭐﻟۡﻜُﻔَّﺎﺭَ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀَۚ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٥٧﴾ ] ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥٧ ]
“হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”।[19]
অন্যত্র ঘোষণা দিচ্ছেন, যে তাদের দিকে ধাবিত হবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺨِﺬُﻭﺍْ ﭐﻟۡﻴَﻬُﻮﺩَ ﻭَﭐﻟﻨَّﺼَٰﺮَﻯٰٓ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀَۘ ﺑَﻌۡﻀُﻬُﻢۡ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀُ ﺑَﻌۡﺾٖۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَﻮَﻟَّﻬُﻢ ﻣِّﻨﻜُﻢۡ ﻓَﺈِﻧَّﻪُۥ ﻣِﻨۡﻬُﻢۡۗ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﻬۡﺪِﻱ ﭐﻟۡﻘَﻮۡﻡَ ﭐﻟﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ٥١﴾ ] ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٥١ ]
“হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না”।[20]
অতএব তাদের ঈদ ও উৎসবে যোগ দেয়া, তাদের সমর্থন জানানো কিংবা কোন ধরণের সহায়তা করা নিজের দীনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
[15] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: (২/১৪২)
[16] আরবীতে ‘রাইনা’ শব্দের অর্থ ‘আমাদের তত্ত্বাবধান করুন’। ইহুদিরা শব্দটিকে বিকৃত করে উচ্চারণ করত, যা তাদের ভাষায় (হিব্রুতে) গালি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
[17] সূরা নিসা: (৪৬)
[18] সূরা নিসা: (১৪)
[19] সূরা মায়েদা: (১৫৭)
[20] সূরা মায়েদা: (৫১)

Post a Comment

0 Comments