Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

১ম পর্ব | ১ম অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)


নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন https://rasikulindia.blogspot.com/ ইসলামিক বই
১ম পর্ব | ১ম অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
▌১ম অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
·
শাইখ পরিচিতি:

ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ছিলেন। তিনি একাধারে ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ ছিলেন। তিনি স্বীয় যুগে আহলুস সুন্নাহ’র ইমাম এবং শাইখুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ছিলেন। তিনি ১৩৩০ হিজরী মোতাবেক ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান। কিন্তু ‘ইলম অর্জনের অদম্য ইচ্ছা তাঁকে ‘ইলম অর্জন করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। তিনি অনেক বড়ো বড়ো ‘আলিমের নিকট থেকে ‘ইলম অর্জন করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—ইমাম সা‘দ বিন হামাদ বিন ‘আতীক্ব, ইমাম হামাদ বিন ফারিস, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ প্রমুখ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।

তিনি একাধারে সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির প্রধান, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রধান, রাবেতায়ে ‘আলাম আল-ইসলামীর প্রাতিষ্ঠানিক বোর্ডের প্রধান, রাবেতার ফিক্বহ একাডেমির প্রধান এবং মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ অলংকৃত করেছিলেন।

ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, “নিশ্চয় আশ-শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) শ্রেষ্ঠ ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আমরা মহান আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন জান্নাতকে তাঁর আবাসস্থল হিসেবে নির্ধারণ করেন।” [শাইখ ড. ‘আব্দুল ‘আযীয আস-সাদহান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-ইমাম আল-আলবানী দুরূস ওয়া মাওয়াক্বিফ ওয়া ‘ইবার; পৃষ্ঠা: ২৬২; দারুত তাওহীদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং বিগত শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল মাগরিব ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বিউদ্দীন হিলালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪০৭ হি./১৯৮৭ খ্রি.] ইমাম ইবনু বাযকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতায় বলেছেন, “ ‘ইলম ও আখলাকে আমি এই যুগে তাঁর নজির দেখিনি, যে আখলাকের সৌরভ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি ফতোয়া প্রদানে একজন মুহাক্বক্বিক্ব ইমামে পরিণত হয়েছেন, আর জটিল সমস্যাগুলো তাঁর কাছে পরিণত হয়েছে সহজ বিষয়ে।” [আর-রাসাইলুল মুতাবাদালাহ বাইনাশ শাইখ ইবনি বায ওয়াল ‘উলামা; পৃষ্ঠা: ৩২৯; গৃহীত: https://tinyurl.com/ycxf9q9k]

ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে ইমাম ইবনু বায এবং ইমাম আলবানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “নিশ্চয় তাঁরা দুজন—হাদীস, আল্লাহ’র দিকে আহ্বান এবং বিদ‘আতীদের সাথে লড়াই করার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ দুজন ‘আলিম।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=eYz7WEE8LEY (অডিয়ো ক্লিপ)]

ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, বর্তমান যুগে ফিক্বহ ও হাদীসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি উত্তরে বলেন, “আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই যুগে ফিক্বহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী শাইখ ইবনু বায (হাফিযাহুল্লাহ)। অনুরূপভাবে এ যুগে হাদীসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী শাইখ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (হাফিযাহুল্লাহ)।” [ইমাম মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), ইজাবাতুস সা’ইল ‘আলা আহাম্মিল মাসাইল; পৃষ্ঠা: ৫৫৯-৫৬০; দারুল হারামাইন, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

এমনকি ইমাম মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] “'আযাউল উম্মাহ বি ওয়াফাতি জাবালিস সুন্নাহ (সুন্নাহ’র পর্বতের মৃত্যুতে উম্মাহকে সান্ত্বনাদান)”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপে বলেছেন, “শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাবি‘ঈ ‘আব্দুল্লাহ বিন মুবারাকের মতো!” [sahab.net]

মাসজিদে হারাম ও মাসজিদে নববীর ধর্মীয় তত্ত্বাবধানের জন্য গঠিত সাধারণ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক প্রধান এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আস-সুবাইল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৪ হি.] বলেছেন, “আজ মুসলিম উম্মাহ– উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমের মৃত্যুতে বিপদগ্রস্ত হয়েছে। যিনি বর্তমান যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমাম, তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ ‘আল্লামাহ, তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, ‘ইলম ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী আল্লাহ’র দিকে আহ্বানকারী দা‘ঈ, হক ও হিদায়াতের পথে জিহাদকারী মুজাহিদ সামাহাতুল ‘আল্লামাতিল জালীল আশ-শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায।” [আল-মাদীনাহ পত্রিকা, সংখ্যা: ১৩১৭৪; গৃহীত: নাসির আয-যাহরানী, ইমামুল ‘আসর; পৃষ্ঠা: ২৬৩]

সৌদি আরবের ফতোয়া প্রদানকারী স্থায়ী কমিটি এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন, “আমাদের শীর্ষস্থানীয় ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত হলেন সামাহাতুশ শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যাকে গভীর জ্ঞান, সৎকর্মপরায়নতা, আল্লাহ’র দিকে আহ্বান, ইখলাস, সততা এবং সকলের কাছে সুবিদিত কল্যাণকর বিষয়াদি দিয়ে তাঁর উপর মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আল-হামদুলিল্লাহ, তাঁর নিকট থেকে অসংখ্য কল্যাণকর বিষয় প্রকাশিত হয়েছে, যেমন: গ্রন্থাবলি, লিখনসমগ্র, অডিয়ো ক্লিপস, দারসসমগ্র প্রভৃতি।” [দ্র.:https://m.youtube.com/watch?v=Wbec9OgsEFY(অডিয়ো ক্লিপ)]

সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন, “আমরা সুন্নাহ’র পর্বতকে হারালাম। তাঁর মৃত্যুসংবাদ মুসলিমদের মধ্যে বিদ্যুদ্বেগে ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা বর্তমান যুগে মহান আল্লাহ’র পরে তিনিই ছিলেন একমাত্র আশ্রয়স্থল, যাঁর উপর মুসলিমরা সকল ক্ষেত্রে এবং ফাতওয়া প্রদান, দা‘ওয়াত ও সঠিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে নির্ভর করত।” [নাসির আয-যাহরানী, ইমামুল ‘আসর; পৃষ্ঠা: ১৫৯]

সৌদি আরবের ফাতাওয়া প্রদানকারী স্থায়ী কমিটি এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ বাকার আবূ যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি.] বলেছেন, “প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন সুন্নাহ’র পর্বত এবং জামা‘আতের নেতা। তিনি সালাফদের সম্মান রক্ষাকারী। তাঁর অবদান বিরাট। আল্লাহ আমাদের শাইখের উপর রহম করুন এবং তাঁর (আল্লাহ’র) প্রশস্ত জান্নাতে তাঁর আবাস নির্ধারণ করুন।” [আদ-দা‘ওয়াহ ম্যাগাজিন, সংখ্যা: ৯৭২৫; গৃহীত: নাসির আয-যাহরানী, ইমামুল ‘আসর; পৃষ্ঠা: ১৬২; ইবরাহীম মাহমূদ, রিসাউল আনাম লি ফাক্বীদিল ইসলাম, পৃষ্ঠা: ২৫]

সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান আল-বাসসাম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৩ হি.] বলেছেন, “আমাদের শাইখ সামাহাতুশ শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) ইসলাম এবং মুসলিমদের খেদমতে যে প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন, সেজন্য তিনি বর্তমানে ‘শাইখুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন’ উপাধীর অধিকারী।” [শাইখ ‘আব্দুর রহমান বিন ইউসুফ (হাফিযাহুল্লাহ), আল-ইনজায ফী তারজামাতিল ইমাম ‘আব্দিল ‘আযীয ইবনি বায; পৃষ্ঠা: ২৯৭-২৯৮]

ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] ইমাম ইবনু বাযের জীবনী লিখতে গিয়ে বলেছেন, “আমি এই অসাধারণ জ্ঞানী ইমামকে চিনেছি তাঁর ‘ইলম, আমল, আখলাক, ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি তাঁর গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে, আর সালাফী দা‘ওয়াত এবং প্রাচ্য ও প্রাতিচ্যে সালাফীগণ ও তাঁদের দা‘ঈদের ব্যাপারে তাঁর গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে।” [তাযকীরুন নাবিহীন, পৃষ্ঠা: ৩০১; শাইখের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত সফট কপি]

ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “তুমি কীভাবে এই মানহাজের অনুসারীদেরকে দ্বীনের অংশ নিয়ে দলাদলির, উম্মাহ’র বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে উদাসীনতার এবং উম্মাহ’র জন্য চিন্তা না করার অপবাদ দাও? অথচ তাদের মধ্যে রয়েছেন আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুজাহিদ, দুনিয়ার সকল প্রান্তের মুসলিমদের অবস্থা সম্পর্কে সজাগ ব্যক্তিত্ব; এমনকি মনে করা হয়, মঙ্গলগ্রহেও যদি কোনো ইসলামী দল থাকত, তাহলে তিনি তাদেরও অনুগামী হতেন। জেনে রেখো, তিনি হলেন আশ-শাইখ ইবনু বায!” [ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ), আহলুল হাদীস হুমুত্ব ত্ব’ইফাতুল মানসূরাতুন নাজিয়াহ; পৃষ্ঠা: ৭৬; প্রকাশনার নামবিহীন; সন: ১৪১৩ হি./১৯৯৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ); শাইখের ওয়েবসাইট (rabee.net) থেকে সংগৃহীত সফট কপি]

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫০ হি.] ইমাম ইবনু বাযের বলেছেন, “তিনি ছিলেন প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী। তিনি হাদীস, ‘উলূমুল হাদীস, রিজালশাস্ত্র, ফিক্বহ এবং তাফসীরের ব্যাপারে অনেক জানতেন। সুন্দর ভঙ্গিতে এবং অলংকারপূর্ণ ভাষায় কথা বলতেন। যখন তিনি কথা বলতেন, তখন তিনি এমনভাবে দলিল পেশ করতেন যেন দলিলগুলো তাঁর ঠোঁটের আগায় রয়েছে। তিনি ক্বুরআন-সুন্নাহ থেকে খুব দ্রুত দলিল গ্রহণ (ইস্তিদলাল) করতে পারতেন। তিনি কোনোরূপ চিন্তা ও দ্বিধা ছাড়াই একটি বিষয়ে অনেক দলিল পেশ করতেন। তিনি হলেন হাদীস ও ‘উলূমুল হাদীসের ইমাম, আর তাফসীর ও ফিক্বহের বিদ্বান (‘আলিম)।” [আদ-দা‘ওয়াহ ম্যাগাজিন, সংখ্যা: ৯৭২৫; গৃহীত: নাসির আয-যাহরানী, ইমামুল ‘আসর; পৃষ্ঠা: ১৫৯-১৬০; ইবরাহীম মাহমূদ, রিসাউল আনাম লি ফাক্বীদিল ইসলাম, পৃষ্ঠা: ২১-২৩]

বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] ইমাম ইবনু বাযকে “মুহাক্বক্বিক্ব ‘আলিম” বলেছেন। [sahab.net]

আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয আর-রাজিহী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬০ হি.] বলেছেন, “আমরা মনে করি, আমাদের সম্মানিত শাইখ এবং পিতা ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আল্লাহওয়ালা ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের উপর আল্লাহ ‘ইলম দিয়ে ও আমল করার তাওফীক্ব দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন, যাদের খ্যাতি ও প্রসিদ্ধিকে আল্লাহ সুউচ্চ করেছেন, পৃথিবীতে যাদের গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছেন, যাদের মাধ্যমে এবং যাদের ‘ইলম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহ মুসলিমদের উপকৃত করেছেন। আমরা মনে করি, তিনি ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের অবশিষ্টাংশ। তাঁর (রাহমাতুল্লাহি ‘আলাইহ) বৈশিষ্ট্য, কথাবার্তা, কাজকর্ম ও চেষ্টাপ্রচেষ্টায় ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) কথাই স্মরণ হয় এবং তাঁর কাজকর্মে শুধু তাই পাওয়া যায়, যা সম্মানিত কিতাব ও পবিত্র নাবাউয়ী সুন্নাহ’য় প্রমাণিত।” [sahab.net]

সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬৯ হি./১৯৪৭ খ্রি.] বলেছেন, “গ্র্যান্ড মুফতী সামাহাতুশ শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বাযের মৃত্যুতে যে দুর্যোগ আপতিত হয়েছে, সেটাই বুঝিয়ে দেয় মুসলিম বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষ তাঁকে কী পরিমাণ ভালোবাসে। নিঃসন্দেহে তাঁর (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত্যু মুসলিম বিশ্বের জন্য ক্ষতি। গতকালও প্রয়োজন ছিল তাঁর মতো একজন সমঝদার বিদ্বান এবং মহান শাইখের, যিনি ছিলেন এই যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমাম।” [ইবরাহীম মাহমূদ, রিসাউল আনাম লি ফাক্বীদিল ইসলাম; পৃষ্ঠা: ৯৩]

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-মানী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৪৯ হি.] বলেছেন, “নিঃসন্দেহে আমাদের শাইখ এবং পিতা আশ-শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বর্তমান যুগের ইমাম এবং মুজাদ্দিদ। তিনি কোনো বিতর্ক ছাড়াই হাদীস এবং রিজালশাস্ত্রের ইমাম। তিনি ফিক্বহশাস্ত্রে এবং সূক্ষ্মদর্শিতায় একজন ইমাম। তিনি স্বীয় জবান, লিখনী এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দানের ক্ষেত্রে একজন ইমাম। তিনি মহানুভবতা ও বদান্যতায় একজন ইমাম। তিনি দয়া, বিনয়, পরিতুষ্টি, পরহেজগারিতা ও সততার ক্ষেত্রে একজন ইমাম। নিশ্চয় আমাদের শাইখ আশ-শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীযের এত বিশ্বস্ততা, সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা, আস্থা, ভালোবাসা এবং নির্ভরযোগ্যতা আছে, যা আমরা বর্তমান যুগের কোন ‘আলিমের কাছে পাই না। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, বিদ্যাসাগর ও বিদ্বান। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন এবং তাঁর কৃতিত্ব, জ্ঞান ও কর্মপন্থার মাধ্যমে মুসলিমদের উপকৃত করুন।” [শাইখ ‘আব্দুর রহমান বিন ইউসুফ (হাফিযাহুল্লাহ), আল-ইনজায ফী তারজামাতিল ইমাম ‘আব্দিল ‘আযীয ইবনি বায (‘ভূমিকা’ দ্রষ্টব্য); পৃষ্ঠা: ২-৩]

এই মহান ‘আলিমে দ্বীন ১৪২০ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন।

১ম বক্তব্য:

বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র ফাতওয়া—

السؤال: أحسن الله إليك حديث النبي ﷺ في إفتراق الأمم وقوله «ستفترق أمتي على ثلاث وبعين فرقة كلها في النار ألا واحدة» فهل جماعة التبليغ على ما عندهم من شركيات وبدع وجماعة الاخوان المسلمين على ما عندهم من تحزب وشق للعصا علي ولاة الأمر، هل هاتان الفرقتان تدخلان في الفرق الهالكة؟
الجواب: تدخل في الإثنين والسبعين، ومن خالف عقيدة أهل السنة والجماعة دخل في الإثنتين والسبعين، والمراد بقول النبي ﷺ أمتي أي أمة الإجابة أي استجابوا لله وأظهروا إتباعهم له.
السائل: يعني هاتين الفرقتين من ضمن الإثنتين والسبعين؟
الشيخ: نعم، من الإثنتين والسبعين.

প্রশ্ন: “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। নাবী ﷺ এর হাদীস—‘আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, শুধুমাত্র একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে।’ তাবলীগ জামা‘আতের অনেক শির্কী ও বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড আছে। আবার মুসলিম ব্রাদারহুডের আছে দলবাজি এবং শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মতো কর্মকাণ্ড। তাহলে এই দুটি দল কি ধ্বংসপ্রাপ্ত দলসমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে?”

উত্তর: “এই দল দুটি (পথভ্রষ্ট) ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত। যারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ পরিপন্থি কাজ করে, তারাই (পথভ্রষ্ট) ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত। নাবী ﷺ এর কথা “আমার উম্মত” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উম্মাতুল ইজাবাহ। অর্থাৎ, যারা আল্লাহ’র ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তাঁর জন্য নিজেদের আনুগত্যকে প্রকাশ করেছে।

প্রশ্নকর্তা: “তার মানে উল্লিখিত দল দুটি (পথভ্রষ্ট) ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত?”

শাইখ: “হ্যাঁ, (তারা) ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত।” [এই কথাটি ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর মৃত্যুর দুই বছর বা তারও কম সময় পূর্বে ১৪১৬ হিজরী সনে ত্বা’ইফে (তায়েফ) তাঁর “শারহুল মুনতাক্বা” এর একটি দারসে বলেছেন।
দ্র.: ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “আক্বওয়ালু ‘উলামা-ইস সুন্নাহ ফী জামা‘আতিত তাবলীগ”; পৃষ্ঠা: ৫; সংগৃহীত: rabee.net; মাজমূ‘উ রাবী‘; খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৪৪৪; দারুল ইমাম আহমাদ, মিশর কর্তৃক প্রকাশিত (সনতারিখ বিহীন); ফাতওয়া’র অডিয়ো লিংক:http://ar.alnahj.net/audio/805.]
·

২য় বক্তব্য:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: سماحة الشيخ، حركة الإخوان المسلمين دخلت المملكة منذ فترة وأصبح لها نشاط واضح بين طلبة العلم، ما رأيكم في هذه الحركة؟ وما مدى توافقها مع منهج السنة والجماعة؟
الجواب: حركة الإخوان المسلمين ينتقدها خواص أهل العلم؛ لأنه ليس عندهم نشاط في الدعوة إلى توحيد الله وإنكار الشرك وإنكار البدع، لهم أساليب خاصة ينقصها عدم النشاط في الدعوة إلى الله، وعدم التوجيه إلى العقيدة الصحيحة التي عليها أهل السنة والجماعة.
فينبغي للإخوان المسلمين أن تكون عندهم عناية بالدعوة السلفية، الدعوة إلى توحيد الله، وإنكار عبادة القبور والتعلق بالأموات والاستغاثة بأهل القبور كالحسين أو الحسن أو البدوي، أو ما أشبه ذلك، يجب أن يكون عندهم عناية بهذا الأصل الأصيل بمعنى لا إله إلا الله، التي هي أصل الدين، وأول ما دعا إليه النبي ﷺ في مكة دعا إلى توحيد الله، إلى معنى لا إله إلا الله، فكثير من أهل العلم ينتقدون على الإخوان المسلمين هذا الأمر، أي : عدم النشاط في الدعوة إلى توحيد الله، والإخلاص له، وإنكار ما أحدثه الجهال من التعلق بالأموات والاستغاثة بهم، والنذر لهم والذبح لهم، الذي هو الشرك الأكبر، وكذلك ينتقدون عليهم عدم العناية بالسنة : تتبع السنة، والعناية بالحديث الشريف، وما كان عليه سلف الأمة في أحكامهم الشرعية، وهناك أشياء كثيرة أسمع الكثير من الإخوان ينتقدونهم فيها، ونسأل الله أن يوفقهم ويعينهم ويصلح أحوالهم.

প্রশ্ন: “সম্মানিত শাইখ, অনেকদিন হয়ে গেল মুসলিম ব্রাদারহুড (ইখওয়ানুল মুসলিমীন) নামক সংগঠন সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। আর ত্বালিবুল ‘ইলমদের মধ্যে এই সংগঠনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট উদ্যমতা দেখা যাচ্ছে। এই সংগঠনের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজের সাথে এই সংগঠনের সামঞ্জস্যতা কতটুকু?”

উত্তর: “শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণ মুসলিম ব্রাদারহুড নামক সংগঠনের সমালোচনা করেছেন। কেননা আল্লাহ’র তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াত এবং শির্ক ও বিদ‘আতের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে তাদের কোনো তৎপরতা নেই। তাদের কিছু নিজস্ব পদ্ধতি আছে। কিন্তু যে বিষয়গুলো তাদের সংগঠনকে ত্রুটিপূর্ণ করে, তা হলো—আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যমহীনতা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর দিকে লোকদেরকে পরিচালিত না করা।

সুতরাং মুসলিম ব্রাদারহুডের জন্য সালাফী দা‘ওয়াত ও আল্লাহ’র তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াতের প্রতি সচেষ্ট হওয়া এবং কবরপূজা, মৃতদের সাথে সম্পৃক্ততা, কবরবাসীদের কাছে যেমন: হাসান, হুসাইন, বাদাউয়ী প্রমুখের কাছে ফরিয়াদ করার বিরোধী হওয়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাদের নিকট সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলভিত্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক, যা দ্বীনের মূলভিত্তি। নাবী ﷺ মক্কায় সর্বপ্রথম আল্লাহ’র তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থের দিকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন। অসংখ্য ‘আলিম এই বিষয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমালোচনা করেছেন। তথা আল্লাহ’র তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াত, আল্লাহ’র জন্য একনিষ্ঠতার দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা নেই এবং মূর্খরা যেসব বিদ‘আত উদ্ভাবন করেছে যেমন: মৃতদের সাথে সম্পৃক্ততা, তাদের কাছে ফরিয়াদ করা, তাদের উদ্দেশ্যে মানত ও যবেহ করা প্রভৃতি, যা মূলত বড়ো শির্ক, এগুলোর বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা নেই।

অনুরূপভাবে ‘আলিমগণ যে বিষয়ে তাদের সমালোচনা করেছেন তা হলো—সুন্নাহ অধ্যয়নের প্রতি, হাদীস শারীফের প্রতি এবং শার‘ঈ বিধিবিধানের ক্ষেত্রে উম্মাহ’র সালাফগণ যে আদর্শের উপর ছিলেন, সে আদর্শের প্রতি তাদের আগ্রহ ও মনোযোগ নেই। এরকম আরও বেশকিছু বিষয় আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে অনেক ভাই তাদের সমালোচনা করেছেন। আমি আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তাদেরকে তাওফীক্ব দেন, তাদেরকে সাহায্য করেন এবং তাদের অবস্থাসমূহ সংশোধন করেন।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৪০-৪১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৩য় বক্তব্য:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: أخ يسأل عن بعض الجماعات الإسلامية، مثل جماعة التبليغ وجماعة الإخوان المسلمين، ويقول : هل هؤلاء من أهل السنة والجماعة؟
الجواب: كـلهم عندهم نقـص، جماعة التبليغ وجماعة الإخوان المسلمين، يجب أن يحاسبوا أنفسهم وأن يستقيموا على الحق، وأن ينفذوا ما دل عليه الكتاب والسنة، في توحيد الله والإخلاص له، والإيمان به واتباع شريعته، وعلى الإخوان المسلمين وفقهم الله أن يحاسبوا أنفسـهم وأن يحكموا شـرع الله فـيما بينهم، وأن يستقيموا على دين الله : قولا وعملا وعقيدة، وأن يحذروا مخالفة أمره أينما كـانوا، وعلى جماعة التبليغ أيضا أن يحذروا ما كان يفعلـه أسـلافهم من تعظيم القبور، والبناء عليها أو جعلها في المساجد أو دعائها والاستغاثة بهـا، كـل هـذا مـن المنكرات، والاستغاثة بها من الشرك الأكـبر، فعليهم أن يحذروا ذلك، لهم نشاط في الدعوة إلى الله، وكثير منهم ينفع الله به الناس، لكن عند أسلافهم عقيدة غير صـالحة، فيجب على الخلف أن يتطهروا منها، وأن يـحـذروا العقيـدة الرديئة وأن يستقيموا على توحيد الله حتى ينفع الله بهم وبجهادهم.

প্রশ্ন: “এক ভাই ইসলামী দলসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছেন। যেমন: তাবলীগ জামা‘আত, মুসলিম ব্রাদারহুড প্রভৃতি। তিনি জিজ্ঞেস করছেন, তারা কি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত?”

উত্তর: “তাদের প্রত্যেকেরই ত্রুটি আছে। অর্থাৎ, তাবলীগ জামা‘আত এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের। তাদের জন্য আত্মসমালোচনা করা, হকের উপর অটল থাকা এবং আল্লাহ’র তাওহীদ, তাঁর জন্য একনিষ্ঠতা, তাঁর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর শরিয়তের অনুসরণ করার মাধ্যমে কিতাব ও সুন্নাহর দাবি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। মুসলিম ব্রাদারহুডের –আল্লাহ তাদেরকে সৎকর্মের তাওফীক্ব দিন– উপর আবশ্যক হলো—আত্মসমালোচনা করা, নিজেদের মধ্যে আল্লাহ’র আইন বাস্তবায়ন করা, কথা, কাজ ও ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে আল্লাহ’র দ্বীনের উপর অটল থাকা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহ’র নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করা থেকে সতর্ক থাকা। তাবলীগ জামা‘আতের উপর আবশ্যক হলো—তাদের পূর্ববর্তীরা যেসব কাজ করত সেসব থেকে বেঁচে থাকা তথা কবরকে সম্মান করা, কবরের উপর সৌধ নির্মাণ করা বা মাসজিদে কবর দেওয়া, কবরের কাছে প্রার্থনা করা এবং কবরের কাছেই ফরিয়াদ করা প্রভৃতি থেকে বেঁচে থাকা। কেননা এগুলো সবই মন্দ কাজের অন্তর্ভুক্ত। কবরের কাছে ফরিয়াদ করা বড়ো শির্ক। এ থেকে বেঁচে থাকা তাদের উপর আবশ্যক। আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের উদ্যমতা আছে। তাদের অনেকের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের উপকার করেন। কিন্তু তাদের পূর্ববর্তীদের [অর্থাৎ, তাবলীগের আকাবিরদের – অনুবাদক] এমন ‘আক্বীদাহ আছে, যা বিশুদ্ধ নয়। সুতরাং পরবর্তীদের জন্য এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের নিষ্কলুষ রাখা, ভ্রান্ত ‘আক্বীদাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহ’র তাওহীদের উপর অটল থাকা ওয়াজিব, যাতে করে আল্লাহ তাদের মাধ্যমে এবং তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে পারেন।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ৫৭]
·

৪র্থ বক্তব্য:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: بماذا تنصحون الدعاة حيال موقفهم من المبتدعة؟ كما نرجو من سماحتكم توجيه نصيحة خاصة إلى الشباب الذين يتأثرون بالانتماءات الحزبية المسماة بالدينية؟
الجواب: نوصي إخواننا جميعا بالدعوة إلى الله سبحانه بالحكمة والموعظة الحسنة والجدال بالتي هي أحسن؟ أمر الله سبحانه بذلك مع جميع الناس ومع المبتدعة إذا أظهروا بدعتهم ، وأن ينكروا عليهم سواء كانوا من الشيعة أو غيرهم - فأي بدعة رآها المؤمن وجب عليه إنكارها حسب الطاقة بالطرق الشرعية. والبدعة هي ما أحدثه الناس في الدين ونسبوه إليه وليس منه، لقول النبي: «من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»، وقول النبي ﷺ : «من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»، ومن أمثلة ذلك بدعة الرفض، وبدعة الاعتزال، وبدعة الإرجاء، وبدعة الخوارج، وبدعه الاحتفال بالموالد، وبدعة البناء على القبور واتخاذ المساجد عليها إلى غير ذلك من البدع، فيجب نصحهم وتوجيههم إلى الخير، وإنكار ما أحدثوا من البدع بالأدلة الشرعية وتعليمهم ما جهلوا من الحق بالرفق والأسلوب الحسن والأدلة الواضحة لعلهم يقبلون الحق.
أما الانتماءات إلى الأحزاب المحدثة فالواجب تركها، وأن ينتمي الجميع إلى كتاب الله وسنة رسوله، وأن يتعاونوا في ذلك بصدق وإخلاص، وبذلك يكونون من حزب الله الذي قال الله فيه سبحانه في آخر سورة المجادلة ﴿أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾ بعدما ذكر صفاتهم العظيمة في قوله تعالى: ﴿لا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ﴾ الآية.
ومن صفاتهم العظيمة ما ذكره الله عز وجل في سورة الذاريات في قول الله عز وجل ﴿إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُحْسِنِينَ كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ﴾ فهذه صفات حزب الله لا يتحيزون إلى غير كتاب الله، والسنة والدعوة إليها والسير على منهج سلف الأمة من الصحابة رضي الله عنهم وأتباعهم بإحسان.
فهم ينصحون جميع الأحزاب وجميع الجمعيات ويدعونهم إلى التمسك بالكتاب والسنة، وعرض ما اختلفوا فيه عليهما فما وافقهما أو أحدهما فهو المقبول وهو الحق، وما خالفهما وجب تركه. ولا فرق في ذلك بين جماعة الإخوان المسلمين، أو أنصار السنة والجمعية الشرعية، أو جماعة التبليغ أو غيرهم من الجمعيات والأحزاب المنتسبة للإسلام. وبذلك تجتمع الكلمة ويتحد الهدف ويكون الجميع حزبا واحدا يترسم خطا أهل السنة والجماعة الذين هم حزب الله وأنصار دينه والدعاة إليه. ولا يجوز التعصب لأي جمعية أو أي حزب فيما يخالف الشرع المطهر.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের ব্যাপারে দা‘ঈদের অবস্থানের প্রেক্ষিতে আপনি তাঁদেরকে কী নসিহত করবেন? অনুরূপভাবে আমরা আপনার কাছে দ্বীনের নামে বিভিন্ন দলে যোগদান করার হিড়িকে প্রভাবিত যুবকদের প্রতি খাস নসিহত কামনা করছি।”

উত্তর: “আমরা আমাদের সকল ভাইকে আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার উপদেশ দিব; প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং উত্তম বিষয়ের দ্বারা বিতর্ক করার মাধ্যমে, যেমনটি (বিতর্ক) আল্লাহ সকল মানুষের সাথে এবং বিদ‘আতীরা যখন তাদের বিদ‘আত প্রকাশ করে তখন তাদের সাথে করার আদেশ দিয়েছেন। আর তারা (ভাইয়েরা) যেন তাদের বিরোধিতা করে, চাই তারা শী‘আ হোক বা অন্য বিদ‘আতী হোক। মু’মিন যখন কোনো বিদ‘আত দেখে, তখন তার উপর সামর্থ্য অনুযায়ী শার‘ঈ পদ্ধতিতে বিদ‘আতের বিরোধিতা করা ওয়াজিব। বিদ‘আত হলো—মানুষ যা দ্বীনের মধ্যে নতুনভাবে আবিষ্কার করে তা দ্বীনের দিকে সম্পৃক্ত করে, অথচ তা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। নাবী ﷺ বলেছেন, “কেউ আমাদের এ শরিয়তে এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটাল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” (সাহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮) নাবী ﷺ আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের কোনো (শার‘ঈ) নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; ‘বিচার-ফায়সালা’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ৮)

যেমন রাফিদ্বীদের বিদ‘আত, মু‘তাযিলীদের বিদ‘আত, মুরজিয়াদের বিদ‘আত, খারিজীদের বিদ‘আত, মীলাদ (নাবী ﷺ এর জন্মদিবস) উদ্যাপনের (উদ্'যাপনের) বিদ‘আত, কবরের উপর সৌধ ও মাসজিদ নির্মাণের বিদ‘আত প্রভৃতি। সুতরাং তাদেরকে নসিহত করা, কল্যাণের দিকে আসার নির্দেশনা প্রদান করা, শার‘ঈ দলিলসমূহের মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবিত বিদ‘আতের বিরোধিতা করা এবং কোমলতা, উত্তম পদ্ধতি ও সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে তাদের অজানা সত্য তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া ওয়াজিব; হয়তো তারা হক গ্রহণ করবে।

পক্ষান্তরে বিভিন্ন বিদ‘আতী দলে যোগদান করার মতো কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। আর সবাই মিলে আল্লাহ’র কিতাব ও তাঁর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ’র দিকে সম্পর্কযুক্ত হওয়া এবং সত্যবাদিতা ও একনিষ্ঠতার মাধ্যমে এ ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ওয়াজিব। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহ’র দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে; যে দলের ব্যাপারে মহান আল্লাহ সূরাহ মুজাদালাহ’র শেষে বলেছেন, “জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ’র দলই সফলকাম।” (সূরাহ মুজাদালাহ: ২২) তিনি কথাটি বলেছেন এই দলের মহান বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করার পর। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো জাতিকে তুমি পাবে না যে, তারা তার সাথে বন্ধুত্ব করছে, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করেছে।” (সূরাহ মুজাদালাহ: ২২)

মহান আল্লাহ তাদের কিছু মহান বৈশিষ্ট্য সূরাহ যারিয়াতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝরনাধারায়। তাদের রব তাদের যা দিবেন তা তারা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণকারী হবে। ইতঃপূর্বে এরাই ছিল সৎকর্মশীল। রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমাপ্রার্থনায় রত থাকত। আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে যাচ্ঞাকারী ও বঞ্চিতের হক।” (সূরাহ যারিয়াত: ১৫-১৯)

এগুলো আল্লাহ’র দলের বৈশিষ্ট্য। তারা আল্লাহ’র কিতাব ও সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কিছুর উপর দলবদ্ধ হয় না। তারা সুন্নাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেয় এবং উম্মাহ’র সালাফগণের তথা সাহাবীবর্গ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এবং উত্তমরূপে তাঁদের অনুসরণকারী অনুসারীবৃন্দের মানহাজের উপর পথ চলে। তারা সকল দল ও সংগঠনকে নসিহত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার দিকে আহ্বান করে। তারা যে ব্যাপারে মতবিরোধ করে, সে ব্যাপারটি তারা কিতাব ও সুন্নাহ’র উপর পেশ করে। যে মতটি কিতাব ও সুন্নাহ’র সাথে বা দুটির কোন একটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাই গ্রহণযোগ্য, আর তাই হক। আর যে মতটি কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধী হয়, তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব।

এক্ষেত্রে মুসলিম ব্রাদারহুড, আনসারুস সুন্নাহ, জমঈয়তে শার‘ইয়্যাহ, তাবলীগ জামা‘আত এবং ইসলামের দিকে সম্পৃক্তকারী অন্যান্য দলসমূহের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর মাধ্যমে মুসলিম সংহতি অর্জিত হয়, মানুষ ঐক্যবব্ধ হয় এবং সবাই এক দলে পরিণত হয়, যে দলটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আদর্শ অনুসরণ করে। তারাই আল্লাহ’র দল, তাঁর দ্বীনের পৃষ্ঠপোষক এবং তাঁর দ্বীনের দিকে আহ্বানকারী। পবিত্র শরিয়তের বিরোধিতায় কোনো দল বা জামা‘আতের প্রতি গোঁড়ামি রাখা নাজায়েয।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৭৬-১৭৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৫ম বক্তব্য:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: وهذه رسالة وردت إلى البرنامج من الأخ بخيت أحمد الأمين من السودان، يقول في رسالته: أريد منكم أن تفيدوني علمًا عن دعوة الإخوان المسلمين، وهل هناك اختلاف بين دعوتهم ودعوة جماعة أنصار السنة، أفيدونا أفادكم الله؟
الجواب: الإخوان المسلمون وأنصار السنة كلاهما من الدعاة إلى الله، وكلاهما نرجو لهما الخير، ولكن أنصار السنة فيما نعلم أنشط منهم في إيضاح التوحيد وبيان حقيقة الشرك، وأكثر منهم عناية بهذا الأمر، فكانوا معروفين في مصر وفي السودان بالعناية ببيان التوحيد والتحذير من الشرك والتعلق بالأموات والاستغاثة بأهل القبور. وأما الإخوان المسلمون فليس لهم نشاط واضح في بيان التوحيد وبيان عقيدة أهل السنة والجماعة، وإنما دعوتهم عامة إلى الإسلام، وهذا لا يكفي، بل يجب على الإخوان المسلمين وعلى غيرهم من الدعاة أن يكون نشاطهم تفصيليًا، وأن يعنوا بالعقيدة الصحيحة، وأن يوضحوها للناس حتى يخرج مدعي الإسلام من عقيدة الكفر إلى العقيدة الصحيحة، فإنه قد يدعي الإسلام وقد يتكلم به ويصلي مع الناس وهو مع ذلك يعبد الأموات ويستغيث بـالبدوي أو بـالحسين أو بالشيخ عبد القادر أو بفلان وفلان، ويسأله المدد والغوث إذا مر بقبورهم، وهذا كفر أكبر نعوذ بالله من ذلك، وقد يكون عندهم طريقة من طرق الصوفية خبيثة، فالواجب البيان والإيضاح.
فـأنصار السنة في هذا الباب أنشط وأكمل للدعوة وأقوى في هذا الأمر، والإخوان المسلمون يمدحون على نشاطهم في الدعوة الإسلامية العامة، ويرجى لهم المزيد من التوفيق، لكن يؤخذ عليهم فيما بلغني وفيما أعلم يؤخذ عليهم عدم العناية بالتفصيل فيما يتعلق بالعقيدة وفيما يتعلق بالبدع التي يتعاطاها بعض الناس.
فالواجب عليهم أن يغيروا من سيرتهم، وأن يجتهدوا في إيضاح العقيدة الصحيحة، وأن يدعوا إلى توحيد الله والإخلاص له، وينبهوا على دعوة الأموات والاستغاثة بهم وأنها شرك وكفر، وأن يوضحوا أيضًا الطرق الصوفية الخبيثة المنكرة التي في بلادهم، وأن الواجب على الناس جميعًا أن يتبعوا طريق النبي ﷺ ويسيروا على سيرته، وأن يحذروا الطرق الموجهة المخالفة لسيرته عليه الصلاة والسلام، وإن فعلها من فعلها من الأكابر، فإن العبرة بالحق لا بالناس، العبرة بالحق الذي جاء به المصطفى ﷺ ودرج عليه صحابته المرضيون، وإن كانوا ضعفاء وإن كانوا فقراء، ولا عبرة بمن خالف الحق وإن كانوا من الأكابر والرؤساء والعظماء والأغنياء، لا، لا ينبغي النظر إلى هذا، بل ينبغي النظر إلى العمل والحقيقة والعقيدة فيشجع أهل العقائد الصحيحة ويدعى لهم بالتوفيق، وينشطون على الثبات على ما هم عليه، ويدعى أهل العقائد المنحرفة وإن كانوا كبارًا لا يستحيا منهم ولا يداهنون، يدعون إلى الحق، ويوضح لهم ما هم فيه من الخطأ في العقيدة أو في الأخلاق أو في البدع التي يؤيدونها، هذا هو الواجب على أنصار السنة ، وعلى الإخوان المسلمين وعلى جميع الدعاة إلى الله جل وعلا الواجب عليهم أن ينصحوا لله ولعباده، وأن يوضحوا العقيدة الصحيحة، وأن يبينوا حقيقة التوحيد الذي دعت إليه الرسل عليهم الصلاة والسلام، وأن ينبهوا على الشرك الذي أنكرته الرسل وحذروا منه، وأن لا يداهنوا الناس في هذا الأمر، وأن لا يكون همهم كثرة الناس، لا، المهم وجود الحقيقة ولو كانوا قليلين، المهم أن تكون الدعوة صافية نقية، وأن يكون أهلها مستقيمين على الحق ثابتين عليه ولو كانوا قليلين، فالقليل مع الصدق والإخلاص أنفع بكثير من الكثيرين مع الضعف والجهل وقلة البصيرة أو قلة الصدق والإخلاص ولا حول ولا قوة إلا بالله. نعم.

প্রশ্ন: “(নূরুন ‘আলাদ দার্বের ফাতাওয়া) প্রোগ্রামে সুদানের ভাই বুখাইত আহমাদ আল-আমীনের পক্ষ থেকে এই পত্র এসেছে। তিনি তাঁর পত্রে বলেছেন, আমরা আপনার কাছে এই প্রত্যাশ্যা করছি যে, আপনি আমাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত প্রসঙ্গে জানাবেন। তাদের দা‘ওয়াতের মধ্যে এবং আনসারুস সুন্নাহ’র দা‘ওয়াতের মধ্যে কি মতভেদ রয়েছে? আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করুন।”

উত্তর: “মুসলিম ব্রাদারহুড এবং আনসারুস সুন্নাহ উভয়েই আল্লাহ’র দিকে আহ্বানকারী দা‘ঈদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা উভয়ের ব্যাপারেই কল্যাণের আশা রাখি। কিন্তু আমাদের জানামতে তাওহীদকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে এবং শির্কের হকিকত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আনসারুস সুন্নাহ তাদের চেয়ে বেশি উদ্যমী এবং এ ব্যাপারে তাদের চেয়ে বেশি মনোযোগী। মিশর এবং সুদানে তাওহীদ বর্ণনা করার ব্যাপারে এবং শির্ক, মৃতদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, আর কবরবাসীদের কাছে ফরিয়াদ করা থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে তাদের যত্ন ও মনোযোগ সুপরিচিত।

পক্ষান্তরে তাওহীদ বর্ণনা করা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ বর্ণনা করার ব্যাপারে মুসলিম ব্রাদারহুডের কোন সুস্পষ্ট উদ্যমতা নেই। বরং তাদের দা‘ওয়াত হলো আমভাবে ইসলামের দিকে আহ্বান করা। আর এটা যথেষ্ট নয়। বরং মুসলিম ব্রাদারহুড এবং অন্যান্য দা‘ঈদের উদ্যমতা বিস্তারিত (তাফসীলী) হওয়া, বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ’র প্রতি তাদের গুরুত্ব দেওয়া এবং মানুষের কাছে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব; যাতে করে তারা মুসলিম দাবিদারদের কুফরী ‘আক্বীদাহ থেকে বের করে বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ’র দিকে নিয়ে আসতে পারে।

কখনো কখনো কেউ নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে, ইসলামের কথা বলে, মানুষের সাথে সালাত আদায় করে। অথচ সে মৃত ব্যক্তিদের ইবাদত করে, বাদাউয়ী, হুসাইন, শাইখ ‘আব্দুল ক্বাদির, বা অমুক-তমুক ব্যক্তির পূজা করে। তাদের কবরের নিকট দিয়ে গমন করার সময় তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এটা বড়ো কুফর। আমরা এ থেকে আল্লাহ’র কাছে পানাহ চাই। কখনো কখনো তাদের নিকট মন্দ সূফীবাদী তরিকাসমূহের কোনো তরিকা থাকে। সুতরাং ওয়াজিব হলো—এসব বিষয় বর্ণনা করা এবং সুস্পষ্ট করা।

আনসারুস সুন্নাহ এই বিষয়ে দা‘ওয়াতদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্যমী ও পূর্ণাঙ্গ এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী। ব্যাপকভাবে ইসলামী দা‘ওয়াতের জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রশংসা করা হবে এবং তাদের জন্য বেশি বেশি তাওফীক্ব কামনা করা হবে। কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে এবং আমি তাদের ব্যাপারে যা জানি, সেজন্য তাদেরকে দোষারোপ করা হবে। ‘আক্বীদাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এবং মানুষ যেসব বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনার প্রতি মনোযোগী না হওয়ার কারণে তাদেরকে দোষারোপ করা হবে।
সুতরাং তাদের উপর ওয়াজিব হলো—তাদের এই পদ্ধতি পরিবর্তন করা, বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে চেষ্টাপ্রচেষ্টা করা, আল্লাহ’র তাওহীদ ও তাঁর প্রতি ইখলাসের দিকে আহ্বান করা, মৃত ব্যক্তিদের কাছে প্রার্থনা করা এবং তাদের কাছে ফরিয়াদ করার ব্যাপারে এই মর্মে সতর্ক করা যে—এটা শির্ক ও কুফর, এবং তাদের দেশে যেসব মন্দ খবিসমার্কা সূফী তরিকা রয়েছে সেসবের ব্যাপারে বিশদভাবে বর্ণনা করা।

সকল মানুষের উপর ওয়াজিব হলো—নাবী ﷺ এর পথের অনুসরণ করা এবং তাঁর আদর্শে পথচলা এবং তাঁর আদর্শ বিরোধী তরিকাসমূহ থেকে সতর্ক থাকা। যদিও (ব্রাদারহুডের) আকাবির তথা বড়ো বড়ো গুরুরা এসব কাজ করেছে, তবুও তারা তা থেকে বিরত থাকবে। কেননা সত্য নিরূপিত হবে হকের মাধ্যমে, মানুষের মাধ্যমে নয়। সত্য নিরূপিত হবে সেই হকের মাধ্যমে, যা নিয়ে এসেছেন মুসত্বাফা ﷺ এবং যা অনুসরণ করেছেন (আল্লাহ’র পক্ষ থেকে) সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত সাহাবীগণ। যদি তারা দুর্বল ও দরিদ্র হয়, তবুও তারা হকের অনুসরণ করবে। কেননা যে হকের বিরোধিতা করে, তার মাধ্যমে সত্য নিরূপিত হবে না। যদিও বিরোধীরা বড়ো ব্যক্তি, বড়ো নেতা এবং সম্পদশালী হয়। না, এসবের দিকে নজর দেওয়া উচিত নয়। বরং নজর দেওয়া উচিত আমল, ‘আক্বীদাহ এবং বাস্তবতার দিকে।

বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ পোষণকারীরা সাহসী হবে এবং তাদের জন্য (হিদায়াতের) তাওফীক্ব কামনা করবে। তারা যে হক আদর্শের উপর আছে, সে আদর্শের উপর অটল থাকতে উদ্যমী হবে। আর ভ্রষ্ট ‘আক্বীদাহ পোষণকারীদের দা‘ওয়াত দিবে, যদিও তারা বড়ো হয়। তারা বড়োদের ব্যাপারে কোনো লজ্জা করবে না এবং মোসাহেবিও করবে না। তারা হকের দিকে আহ্বান করবে। আর তারা ‘আক্বীদাহ ও আখলাক্বের ক্ষেত্রে, অথবা তারা যেসব বিদ‘আতকে শক্তিশালী করেছে সেসব ক্ষেত্রে ভুলের মধ্যে রয়েছে—এসব ভুল তারা তাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে। এটা আনসারুস সুন্নাহ, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং আল্লাহ’র দিকে আহ্বানকারী সমস্ত দা‘ঈর উপর ওয়াজিব।

তাদের উপর ওয়াজিব হলো—আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের জন্য নসিহত করা, বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ বর্ণনা করা, রাসূলগণ (‘আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম) যে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন সে তাওহীদের হাকীকত বর্ণনা করা, রাসূলগণ যে শির্কের বিরোধিতা করেছেন এবং তা থেকে সতর্ক করেছেন সে শির্ক থেকে সতর্ক করা, এ ব্যাপারে মানুষের মোসাহেবি না করা, এবং মানুষের আধিক্যই তাদের মূল প্রত্যাশা না হওয়া। না, প্রকৃত বিষয় থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তারা সংখ্যায় কম হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—দা‘ওয়াত স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট হওয়া এবং দা‘ওয়াত দানকারীদের হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, যদিও তারা সংখ্যায় কম হয়। দুর্বলতা, অজ্ঞতা, জ্ঞানের স্বল্পতা, কিংবা সত্যবাদিতা ও ইখলাসের স্বল্পতা-সহ সংখ্যায় বেশি হওয়ার চেয়ে সত্যবাদিতা ও একনিষ্ঠতা-সহ সংখ্যায় কম হওয়া অনেক বেশি উপকারী। আল্লাহ ব্যতীত কারো কোনো শক্তি ও সামর্থ্য নেই। না‘আম।” [দ্র.:https://tinyurl.com/y8gujy3e (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল লিংক)]
·

৬ষ্ঠ বক্তব্য:
কিছু লোক একটি মিথ্যা দাবি করে যে, ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর মৃত্যুর পূর্বে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রশংসা করেছেন! অথচ তাদের এই দাবির পক্ষে কোনো দলিল নেই। ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র শ্রেষ্ঠ ছাত্র যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত ফাতওয়াটি নিম্নরূপ—

السؤال: ظهر بعض الدعاة يقول إن سماحة الشيخ ابن باز رحمه الله قد توفي وهو يثني وينصح بجماعة التبليغ والإخوان المسلمين، فهل هذا الكلام صحيح؟
الجواب: هذا الكلام غير صحيح، ونحن جالسنٰه أكثر من عشر سنوات ما سمعناه يثني إلا على أهل السنة والجماعة، ويدعو إلى أهل السنة والجماعة وينصح لمن أخطئ من الجماعات الأخرى أن يتراجع عن خطأه من التبلغيين وغيرهم، هذا الذي أعرفه عن شيخي الشيخ ابن باز رحمه الله، نعم.

প্রশ্ন: “একজন দা‘ঈর আবির্ভাব ঘটেছে, যে বলছে, সম্মানিত শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাবলীগ জামা‘আত এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রশংসারত অবস্থায় মারা গেছেন। এই কথা কি সঠিক?”

উত্তর: “এই কথা সঠিক নয়। আমরা তাঁর সাথে দশ বছর ওঠাবসা করেছি। আমরা কখনো শুনিনি যে, তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত অন্য কারও প্রশংসা করেছেন। তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দিকে মানুষকে আহ্বান করতেন। অন্য দলের কেউ ভুল করলে তিনি তাকে সেই ভুল থেকে ফিরে আসার নসিহত করতেন; তাবলীগীদের এবং অন্যান্যদেরও (নসিহত করতেন)। আমার শাইখ আশ-শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র ব্যাপারে আমি এটাই জানি। না‘আম।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/en/node/14255.]

একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রথমে মুসলিম ব্রাদারহুডের হকিকত সম্পর্কে জানতেন না। সেকারণে তাঁর নেতৃত্বে সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের ৬২৫০ নং ফাতওয়া’য় ব্রাদারহুডকে ‘হকের নিকটবর্তী দল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ইমাম মুক্ববিল (রাহিমাহুল্লাহ) এই ফাতওয়া’র গঠনমূলক জবাব দিয়েছেন, যা সামনের আলোচনায় আসবে, ইনশাআল্লাহ। ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) ব্রাদারহুডের প্রকৃতত্ব সম্পর্কে না জানার কারণে তিনি তাদের ভুল বর্ণনা করা সত্ত্বেও কিছু ফাতওয়া’য় তাদের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েছেন। কিন্তু শেষ জীবনে তাঁর কাছে ব্রাদারহুডের হকিকত স্পষ্ট ও উদ্ভাসিত হয়েছিল। যেকারণে তিনি তাঁর মৃত্যুর দুই বছর পূর্বে এক ফাতওয়া’য় সরাসরি ব্রাদারহুডকে আহলুস সুন্নাহ থেকে খারিজ তথা বিদ‘আতী দল বলে উল্লেখ করেছেন। যে ফাতওয়াটি আমরা অত্র অধ্যায়ের ‘১ম বক্তব্য’ শীর্ষক শিরোনামের আওতায় উল্লেখ করেছি।
·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari/(সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)

Post a Comment

0 Comments