শিয়া~
শব্দটিকে কেন্দ্র করে এক বিশাল কাফের জনগোষ্ঠী নানারকম দাবিদাওয়া করে
থাকে। ইহুদি ইবন সাবার ঔরসজাত এই ধর্মের ইতিহাস,কার্যক্রম ইত্যাদি জানার
আগে জরুরি হল ভাষাগতভাবে শিয়া শব্দকে জানা এবং কুরআন ও হাদিসে,ইতিহাসে এর
ব্যবহার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান নেয়া।
➽ আরবি শব্দকোষে ‘শিয়া’:
☀ আরবি ভাষাবিদ ইবন দুরাইদ বলেনঃ অমুক অমুকের ‘শিয়া’ এই কথার দ্বারা বুঝায় সে ঐ ব্যক্তির চিন্তাধারার। কোন বিষয়ে কোন ব্যক্তিকে যখন “مشايعة”(মুশায়’আ) বা সাহায্য করা হয়,তখন বলা হয় সে তার শিয়া(شيعت), কোন ব্যাপারে কোন ব্যক্তিকে পরস্পর সঙ্গ দেয়া(সহযোগিতা করা) হলে সাহায্যকারীকে ঐ ব্যক্তির শিয়া বলা হয়। [জামহুর আল-লুগাত, ৬৩/৩]
☀ ভাষাবিদ আবুল মানসুর আল-আযহারী বলেনঃ শিয়া হল কোন ব্যক্তির সাহায্যকারী ও অনুসারী,এবং যেসব জাতি তার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয় তারা তার শিয়া। এই অনুসারী(شيع)দের সমষ্টিকে অনুসারীদল(أشياع) বলা হয়।ভিন্ন অর্থে, শিয়ারা এমন এক জাতি যারা নবী মুহাম্মদ(ﷺ) এর আহলে বাইতের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন করে এবং তাদের সমর্থন করে। আগুনের শিয়া বলা হয় যা আগুনের সাথে সাক্ষাৎ হলে আগুনকে আরো প্রজ্বলিত করে তুলে।
এছাড়াও কোন ব্যক্তির শিয়া(شيعت فلاناً) বলা হয় যারা তাকে শেষবিদায় দিতে বের হয়েছে।
আরো, বলা হয়, আমরা রমজান মাসের পরে শাওয়াল মাসেও ছয়টার অনুসরণ করলাম(شيعنا شهر رمضان بست من شوال) অর্থাৎ রমজানের পরে শাওয়ালেও ছয়টা রোযা রাখলাম।
আরবরা আরো বলে থাকে- তোমার কাছে আসব আগামীকাল,অথবা তার পরের শিয়া(أو شَيعَهُ);অর্থাৎ আগামীকালের পরে/অনুসরণে যেই দিন। শিয়া হল যারা একে অপরের পরবর্তীতে থাকে। শিয়া ফেরকা-যারা একে অপরের অনুসরণ করে কিন্তু সবক্ষেত্রে তারা একমত নয়।[তাহযিব আল-লুগাত ৬১/৩]
☀ ইবনে মুনযুর বলেনঃ শিয়া কোন একজন ব্যক্তির অনুসরণ করে ও তাকে সাহায্য করে,এদের সমষ্টিকে শি’উন/দল বলে; আর এরকম দলের সমষ্টিকে আশইয়ান(أشياع) বলে। শিয়ার উসুল- মানুষের মধ্যে এক দল/ফেরকা, যার মধ্যে একক-দ্বৈত,সম্মিলিত,নারী-পুরুষ সবাই একই শব্দ ও একই অর্থের ভিতরে পরে।এই নাম পরে আলী ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব পোষণকারী দলের জন্য বিশেষায়িত হয়ে পরে। [লিসানুল আরব; شيع অধ্যায়]
☀ আহলে বাইতের বংশধর মুরতাযা আল-যাবিদী বলেনঃ প্রত্যেক মানুষ যারা কাউকে সংগঠিত হয়ে সাহায্য করে তারা তার শিয়া। শিয়া’র মূল المشايعة(মুশায়’আহ) থেকে যার অর্থ অনুসরণ করা।
এই নাম(শিয়া) আলী ও আহলে বাইতের সমর্থক দাবিদারদের জন্যই শক্তিশালী হয়।এরা উম্মতের অনির্দিষ্ট সংখ্যক অংশ,বিদাআত(উদ্ভাবন) করে,অপেক্ষমান ইমাম(পলাতক মেহদি)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ও শায়খাইন(আবু বকর ও উমর রা.)কে কটূক্তি করে, তাদের সীমালঙ্ঘনকারীরা শায়খাইনকে তাকফির করে। তাদের মধ্যে অনেকেই যিন্দীক পর্যায়ে চলে যায়। [তাজুল উরুস ৪০৫/৫; কাতরাল মুহিত ১১০০/১]
এখানে আমরা জানতে পারি যে, আরবি ভাষায় ‘শিয়া’ শব্দটি কোন পবিত্রতাসূচক বা হক্ক অর্থে বিশেষায়িত না, এমনকি আহলে বাইতের সঙ্গেও নির্দিষ্ট না। কোন মতাদর্শের উপরে যে কেউ দল গঠন করলে অথবা একে অন্যের অনুসরণ,সমর্থন করলেই তারা শিয়া; তা ভাল হোক বা খারাপ। ইহুদি ইবনে সাবা দল গঠনের পড়ে সেই “শিয়া”কে আলী(রা) ও আহলে বাইতের সমর্থনের মোড়ক চাপিয়ে ‘আলী’র শিয়া’ বলা হয়; তখন থেকেই শিয়া ধর্মের দিকে ‘শিয়া’ শব্দ বেশি ঝুঁকে।
➽ শিয়া-শব্দের ঐতিহাসিক ব্যবহারঃ
ইসলামের ইতিহাসের পাতায় শিয়া শব্দটি যে অর্থে এসেছে তা হল-সাহায্যকারী ও অনুসারী। খলিফা আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা)এর মধ্যকার সালিস দলিলে এর ব্যবহার পাই আমরা।
☀ শিয়া শব্দটা এমন অর্থে পাই যে- যারা আলী(রা)এর অনুসরণ করে তারা শিয়া, তেমনি যারা মুয়াবিয়া(রা)এর অনুসরণ করে তারাও শিয়া! শিয়া শব্দটা শুধু আলী(রা)র অনুসারীদের জন্য খাস ছিল এমন না! যেমনটা সালিশের চুক্তির পাতায় এসেছে-
“এই চুক্তিপত্র হল আলী বিন আবু তালিব,মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান, ও তাদের অনুসারীদের জন্য(وشيعتهما) সম্মতিক্রমে।” আরও- “আলী ও তাঁর শিয়ারা আবদুল্লাহ ইবন কায়স(আবু মুসা আশআরী রা.) এর উপরে সন্তুষ্ট(বিচারক হিসেবে),মুয়াবিয়া ও তাঁর শিয়ারা আমর ইবন আস এর উপরে রাজি(বিচারক)” । এছাড়া আরো-“অতপর যখন শাসকদ্বয়ের কেউ মারা যাবে তখন তাদের শিয়ারা আমির বেছে নিবে” ; “কোন একজন আমির যদি এই চুক্তির নির্ধারিত সময়সীমা পূরণের আগে মারা যায় তবে তাদের শিয়ারা নিজ নিজ খুশিমত আমির বেছে নিবে” [তারিখে তাবারী ১০৩/৩; আল বিদায়া ৩০৬/৭; আল আখবারুল আতওয়াল ১৯৪-১৯৬পৃ]
শিয়া ধর্মের অনুসারীদের ইতিহাস গ্রন্থেও আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা) উভয়ের জন্য শিয়া শব্দের ব্যবহার পাই,
☀ আহমদ আল ইয়াকুবী লিখে- “মুয়াবিয়া যখন ইয়েমেনের দিকে যাবার সময় বুসর বিন আরতাতকে বলেন-সানআ এলাকা না আসা পর্যন্ত চলতে থাকো আর সেখানে তো আমাদের জন্য শিয়া আছেই” [তারিখে ইয়াকুবী, ১৮৬/১]
ওই সময়ের অনেক পর পর্যন্ত শিয়া পরিভাষাটি আলী(রা)এর অনুসারীদের জন্য দলিল হিসাবে প্রকাশ পায়নি। এর উদ্ভব ঘটে নিজেদেরকে আলীর শিয়া-দাবিকারীদের কার্যকরী সমাবেশের মাধ্যমে; আলাদাভাবে শিয়া-শব্দের উদ্ভব ঘটে হুসাইন(রা)এর হত্যার পরে। যেমনটা -
☀ শিয়া ঐতিহাসিক আবুল হাসান আল-মাসঊদী তার ইতিহাসগ্রন্থে লিখে- “এবং, ৬৫ হিজরিতে শিয়ারা কুফায় উদ্দীপক কার্যক্রম করে” [মুরুজ আয-যাহাব ১০০/৩]
☀ আল আযহারের বিজ্ঞ আলেম ও ফিকহবিদ মুহাম্মদ আবু যাহরা লিখেন- “এটা ভুলে যাওয়া হয় যে মুয়াবিয়াও তার অনুসারীদের শিয়া শব্দে সম্বোধন করেছিল; কিন্তু ইতিহাসের ঘটনাবলী বলে যে- আলী(রা)এর হত্যার আগে শিয়া উপাধিটি আলীর অনুসারীদের জন্য বিশেষায়িত ছিল না” [আল মিরাছ ইন্দা-জাফরিয়্যাহ ২২পৃ]
➽ কুরআনে ‘শিয়া’ শব্দঃ
কুরআন মাজিদে প্রায় ১২ জায়গায় শিয়া শব্দটি এসেছে। আসুন সেগুলার প্রয়োগ দেখিঃ-
۩ সূরা নূরঃ ১৯- “যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ(تَشِيعَ) করুক..” ☞ এখানে ছড়িয়ে দেয়া অর্থ,এই আয়াত নাযিল হয়েছিল- কোন অপবাদ শুনে সেটার সমর্থনে প্রচার,ছড়ানো নিয়ে।
۩ সূরা আনআমঃ ৬৫- “...তোমাদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত(يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا) করে সবাইকে মুখোমুখী করে দিবেন এবং এককে অন্যের উপর আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন” ☞ এই আয়াতে দলে-উপদলে বিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য শিয়া শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেকোন সম্প্রদায় নিজেরা বিবাদে লিপ্ত হয়ে নানা রকম দল সৃষ্টি হওয়া এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ। রাসূল(ﷺ)ও উম্মতের জন্য ৩ টি দুয়া করেছিলেন,কিন্তু তার মধ্যে ২টী কবুল হয়; উম্মত বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত না হবার দুয়াটী নামঞ্জুর রয়ে যায় [সহি মুসলিম ৫১৪৫;ইবন খুযাইমা ৫৩৫;মুসনাদ আহমদ ২৩২৩৭]
۩ সূরা আনআমঃ ১৫৯- “নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল(وَكَانُوا شِيَعًا) হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার(রাসূল ﷺ) কোন সম্পর্ক নেই।” ☞ এখানে “শিয়া” দ্বারা বুঝানো হয়েছে পূর্ববর্তী উম্মতের,জমহুর মতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের যারা নিজেরা দ্বীনের কিছু অংশ মেনে,কিছু বাদ দিয়ে এবং পরস্পরবিরোধী মত সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল।
۩ সূরা হিজরঃ ১০- “আমি আপনার পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের(شِيَعِ) মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি” ☞ এখানে শিয়া দ্বারা পূর্ববর্তী অবাধ্য সম্প্রদায়ের তখা বলা হয়েছে যারা তাদের নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করত ও কুফর করত।
۩ সূরা মারিয়ামঃ ৬৯- “অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের(كُلِّ شِيعَةٍ) মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব” ☞ অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের খারাপ লোক তাদের সময় ও মতাদর্শ অনুযায়ী আলাদা হবে।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ৪- “ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে(شِيَعًا) বিভক্ত করে” ☞ ফেরাউন তার ক্ষমতার স্বার্থে রাজ্যের অধিবাসীদের বিভিন্ন মতানৈক্যের ভিত্তিতে বিভক্ত/শিয়া করে রেখেছিল।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ১৫- “..এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল..” ☞ মুসা(আ) শহরে গিয়ে দুইজনকে লড়তে দেখলেন, একজন তাঁর নিজ দল/উম্মত এর অর্থাৎ বনী ইসরাইলের, আরেকজন তাঁর শত্রু ফিরাউনের কিবতী দলের।
۩ সূরা রূমঃ ৩২- “যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে(شِيَعًا) বিভক্ত হয়ে পড়েছে” ☞ যারা আল্লাহর তাওহিদের দ্বীন ইসলামকে বিকৃত করে শিরক-কুফরে লিপ্ত হয়েছে এবং নিজেরা বিভিন্ন বাতিল মত উদ্ভাবন করে ফেরকা/শিয়া সৃষ্টি করেছে; মূলত ইহুদি-খ্রিস্টান।
۩ সূরা সাবাঃ ৫৪- “তাদের ও তাদের বাসনার মধ্যে অন্তরাল হয়ে গেছে, যেমন-তাদের সমপন্থীদের(بِأَشْيَاعِهِم) সাথেও এরূপ করা হয়েছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল” ~ অর্থাৎ পূর্বের যামানার বিভিন্ন সম্প্রদায়/শিয়াদের সাথেও এরকম করা হয়েছিল যারা কাফির ছিল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুনিয়া ভোগ বিলাসে বিভ্রান্তিতে ছিল।
۩ সূরা সাফফাতঃ ৮৩- “এবং নিশ্চয়ই তাঁর(নূহ আ.) অনুগামীদের(شِيعَتِهِ) একজন ছিলেন ইবরাহীম” ☞ ইবরাহীম(আ) ছিলেন নূহ(আ)এর দ্বীনের অনুসারী, তাওহিদের প্রচারক ও শিরক-কুফর এর বিরোধী ছিলেন। যেমনটা, আমাদের নবী মুহাম্মদ(ﷺ) ছিলেন ইবরাহীম(আ)এর দ্বীনের প্রচারক।
۩ সূরা ক্কমরঃ ৫১- “আমি তোমাদের মত লোকদেরকে(أَشْيَاعَكُمْ) ধ্বংস করেছি, অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?” ☞ এখানে পূর্বের যুগের ধবংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়/শিয়া দেরকে বুঝানো হয়েছে।
আমরা এপর্যন্ত দেখতে পাই যে, কুরআন মাজিদে কোথাওই শিয়া-শব্দের তেমন অর্থ নেই, যেমনটা সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা দাবি করে যে,আল্লাহ্র তরফ থেকে শিয়া হতে বলা হয়েছে। বরং অভিশপ্ত,বিখণ্ডকারী ও দ্বীনচ্যুত ফেরকা হিসাবেই শিয়া শব্দের উল্লেখ হয়েছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন দল হিসাবে উল্লেখ হয়েছে, সেই হিসাবে ধরলে শিয়ারাও ইসলামের বাইরে আলাদা দল। সূরা সাফফাতে একজন নবী নূহ(আ)’র অনুগামী হিসাবে ইবরাহীম(আ)’র কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ মুস্তফা(ﷺ) এর মাধ্যমে দ্বীন ও নবূওয়্যাত শেষ হয়েছে, এরপরে এরকম কোন শিয়া ধারার দাবি করলে তারা কাফের।
➽ হাদিসে শিয়া-রাফেজী শব্দঃ-
সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা প্রায়শই আমাদের মুসলমানদের কিতাব(মুসনাদে আহমদ,তাবারানী) ও তাফসির(তাবারী,দুররে মানসুর) ইত্যাদির কিছু হাদিস দেখিয়ে দাবি করতে চেষ্টা করে যে রাসূল(ﷺ) বলে গেছেন আলী(রা) এর শিয়া(দল/অনুসারী) হতে।
এই ক্ষেত্রে ঐসব কিতাবে কেন,কি হিসাবে হাদিস তুলা হয়েছে,পরিষ্কার অর্থ কি হতে পারে তা তো নাই, হাদিসের মানও বিচার করা হয় না,যে- তা আসলে কতটুকু নির্ভরযোগ্য বা জাল কিনা।
যদি বর্জনীয় “শিয়া” হতে বলা বর্ণনা গ্রহণ করতে হয়,তাহলে রাফেজী শিয়াদের হত্যার হাদিসও তো গ্রহণ করা লাগে ।কোন রকম জারহ-তাদীল ও মান-যাচাই ব্যতিরেকে এক নজরে দেখি,যেভাবে শিয়ারা উদ্ধৃত করে থাকেঃ-
১. আলী বিন আবি তালিব(রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, “শেষ যামানায় এক জাতি আত্নপ্রকাশ করবে ,তাদের নাম হবে রাফেযী, তারা ইসলাম ছেড়ে দিবে(يرفضون الإسلام)” [মুসনাদে আহমদ,১০৩/১; হাদিস ৮০৮; মুসনাদ আল-বাযযার হাদিস ৪৬৯]।
ইমাম বুখারী(র) এর তারিখে কাবির ২৭৯/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
২. ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল(ﷺ) এর সাথে ছিলাম এবং আলীও সেখানে উপস্থিত ছিল। রাসূল(ﷺ) বললেন, “হে আলী, শীঘ্রই এক জাতির উদ্ভব ঘটবে, যারা আহলে বাইতের ভালাবাসার দাবি করবে এবং রাফেদ নামে পরিচিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে ক্কিতাল করবে, কারণ তারা মুশরিক।” {মুসনাদে আবি ইয়ালা,হাদিস ২৫৮৬; মু’জামুল কাবির,হাদিস ১২৯৯৭-৯৮}
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(র) তার ফাযায়েলে সাহাব কিতাবে ৪১৭,৪৪০/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
৩. ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন- “শেষ যামানায় একদল লোক আসবে যারা ‘রাফেযী’ নামে চিহ্নিত হবে।তারা ইসলাম এরূপে ত্যাগ করবে,যেভাবে তারা উচ্চারণ করবে।তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, কারণ তারা মুশরিক”। {মুসনাদে আবদ বিন হুমায়দ,হাদিস-৬৯৮; কানযুল উম্মাল,হাদিস- ১১২৮; মুসনাদ আল হারিস-যাওয়ায়েদ হায়সামী,হাদিস- ১০৪৩}
৪. উম্মে সালামা(রা) থেকে বর্ণিত, এক রাতে নবী(ﷺ) আমার সাথে ছিলেন,তাই ফাতিমা তাঁর কাছে আসল ও তাঁর আগে আলী। নবী(ﷺ) তাকে বললেন, “হে আলী, তুমি ও তোমার সঙ্গীরা জান্নাতি।তবে তারা ব্যতীত যারা দাবি করে তারা তোমাকে ভালবাসে,সেই দল ইসলাম উচ্চারণ করে যদিও তারা তা উচ্চারণ করে(দাবি করে),তারা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠ অতিক্রম করেনা, তাদের সংক্ষিপ্ত নাম আছে তা হল “রাফেযী”(পরিত্যাগকারী)। তুমি যদি তাদের দেখ, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, কারণ তারা মুশরিক”। আলী(রা) বললেন,হে আল্লাহ্র নবী,তাদের চিহ্ন কি? নবী(ﷺ) বললেন, “তারা জুম’আর সালাতে অংশ নেয় না।জামআত ত্যাগ করে ও প্রথম যুগের মুসলিমদের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে”। {মু’জামুল আওসাত ৬৬০৫; তারিখে বাগদাদ ৩৫৮/১২}
ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৫. ফাতিমা(রা) থেকে বর্ণিত, নবী(ﷺ) আলীকে দেখে বললেন- “সে জান্নাতে যাবে। তার অনুসারীদের মধ্য হতে একদল ইসলাম এর কথা উচ্চারণ করে তা পালন এর দাবি করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছুঁড়ে ফেলবে।তাদের নাম হবে রাফেযী।তাদের পেলে কতল করবে,কারণ তারা মুশরিক” {মুসনাদে আবি ইয়ালা ১১৬/১২; ইবনে হিব্বান এর আল মাজরুহিন ২০৪/১}। ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৬. এছাড়া সুনানে আবু দাঊদের হাদিসে দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-তারা দাজ্জালের “শিয়া” وَهُمْ شِيعَةُ الدَّجَّالِ وَحَقٌّ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُلْحِقَهُمْ بِالدَّجَّالِ - তারা হচ্ছে দাজ্জালের অনুসারী এবং আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দাজ্জালের সঙ্গে মিলিত করবেন। [হাদিস ৪৬৯২,সুন্নাহ অধ্যায়]
উপরের হাদিসগুলো শিয়া,রাফেযী শব্দের উল্লেখ আছে এমন হাদিস এর মধ্য থেকে তুলে আনা উদাহরণ।কোন রকম তাহকিক, সনদ এর যাচাইবাছাই ছাড়া এগুলা তুলে দেয়া হল।
এরকম হাদিসের বেশ কিছুর ব্যাপারেই জারহ-তাদিল এর আলেমরা,ইমামরা বিচার বিশ্লেষণ এর পরে হাদিসের সনদে সমস্যা উল্লেখ করে গেছেন।যদিও বিভিন্ন বিখ্যাত কিতাবের বিশাল সংকলন এর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
আর মুসলমানরা বিশুদ্ধতার পক্ষপাতী, তাই- সহি হাদিস এর অনুসারী,দুর্বল হাদিসের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনকারী ও জাল রিওয়ায়াত বর্জনকারী। একারণে আমরা মুসলিমরা এসব হাদিস দেখিয়ে বলি না যে- শিয়াদের মেরে ফেল,রাফেজীদের সাথে যুদ্ধ কর ইত্যাদি!
মুসলমানদের মুসনাদ,মুসান্নাফ,জামি’ হাদিস কিতাবে কোথাও কোন হাদিস নিয়ে “এইযে এখানে শিয়া হতে বলা আছে,ইঙ্গিত আছে” ইত্যাদি দাবি করার আগে ইহুদিজাত শিয়াদের উচিত এখানে যে হাদিসের কিছু উদাহরণ দেয়া হল, সেগুলা নিয়েও বিবেচনা করা; তারপরে মন্তব্য করতে আসা।
➽ আরবি শব্দকোষে ‘শিয়া’:
☀ আরবি ভাষাবিদ ইবন দুরাইদ বলেনঃ অমুক অমুকের ‘শিয়া’ এই কথার দ্বারা বুঝায় সে ঐ ব্যক্তির চিন্তাধারার। কোন বিষয়ে কোন ব্যক্তিকে যখন “مشايعة”(মুশায়’আ) বা সাহায্য করা হয়,তখন বলা হয় সে তার শিয়া(شيعت), কোন ব্যাপারে কোন ব্যক্তিকে পরস্পর সঙ্গ দেয়া(সহযোগিতা করা) হলে সাহায্যকারীকে ঐ ব্যক্তির শিয়া বলা হয়। [জামহুর আল-লুগাত, ৬৩/৩]
☀ ভাষাবিদ আবুল মানসুর আল-আযহারী বলেনঃ শিয়া হল কোন ব্যক্তির সাহায্যকারী ও অনুসারী,এবং যেসব জাতি তার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয় তারা তার শিয়া। এই অনুসারী(شيع)দের সমষ্টিকে অনুসারীদল(أشياع) বলা হয়।ভিন্ন অর্থে, শিয়ারা এমন এক জাতি যারা নবী মুহাম্মদ(ﷺ) এর আহলে বাইতের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন করে এবং তাদের সমর্থন করে। আগুনের শিয়া বলা হয় যা আগুনের সাথে সাক্ষাৎ হলে আগুনকে আরো প্রজ্বলিত করে তুলে।
এছাড়াও কোন ব্যক্তির শিয়া(شيعت فلاناً) বলা হয় যারা তাকে শেষবিদায় দিতে বের হয়েছে।
আরো, বলা হয়, আমরা রমজান মাসের পরে শাওয়াল মাসেও ছয়টার অনুসরণ করলাম(شيعنا شهر رمضان بست من شوال) অর্থাৎ রমজানের পরে শাওয়ালেও ছয়টা রোযা রাখলাম।
আরবরা আরো বলে থাকে- তোমার কাছে আসব আগামীকাল,অথবা তার পরের শিয়া(أو شَيعَهُ);অর্থাৎ আগামীকালের পরে/অনুসরণে যেই দিন। শিয়া হল যারা একে অপরের পরবর্তীতে থাকে। শিয়া ফেরকা-যারা একে অপরের অনুসরণ করে কিন্তু সবক্ষেত্রে তারা একমত নয়।[তাহযিব আল-লুগাত ৬১/৩]
☀ ইবনে মুনযুর বলেনঃ শিয়া কোন একজন ব্যক্তির অনুসরণ করে ও তাকে সাহায্য করে,এদের সমষ্টিকে শি’উন/দল বলে; আর এরকম দলের সমষ্টিকে আশইয়ান(أشياع) বলে। শিয়ার উসুল- মানুষের মধ্যে এক দল/ফেরকা, যার মধ্যে একক-দ্বৈত,সম্মিলিত,নারী-পুরুষ সবাই একই শব্দ ও একই অর্থের ভিতরে পরে।এই নাম পরে আলী ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব পোষণকারী দলের জন্য বিশেষায়িত হয়ে পরে। [লিসানুল আরব; شيع অধ্যায়]
☀ আহলে বাইতের বংশধর মুরতাযা আল-যাবিদী বলেনঃ প্রত্যেক মানুষ যারা কাউকে সংগঠিত হয়ে সাহায্য করে তারা তার শিয়া। শিয়া’র মূল المشايعة(মুশায়’আহ) থেকে যার অর্থ অনুসরণ করা।
এই নাম(শিয়া) আলী ও আহলে বাইতের সমর্থক দাবিদারদের জন্যই শক্তিশালী হয়।এরা উম্মতের অনির্দিষ্ট সংখ্যক অংশ,বিদাআত(উদ্ভাবন) করে,অপেক্ষমান ইমাম(পলাতক মেহদি)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ও শায়খাইন(আবু বকর ও উমর রা.)কে কটূক্তি করে, তাদের সীমালঙ্ঘনকারীরা শায়খাইনকে তাকফির করে। তাদের মধ্যে অনেকেই যিন্দীক পর্যায়ে চলে যায়। [তাজুল উরুস ৪০৫/৫; কাতরাল মুহিত ১১০০/১]
এখানে আমরা জানতে পারি যে, আরবি ভাষায় ‘শিয়া’ শব্দটি কোন পবিত্রতাসূচক বা হক্ক অর্থে বিশেষায়িত না, এমনকি আহলে বাইতের সঙ্গেও নির্দিষ্ট না। কোন মতাদর্শের উপরে যে কেউ দল গঠন করলে অথবা একে অন্যের অনুসরণ,সমর্থন করলেই তারা শিয়া; তা ভাল হোক বা খারাপ। ইহুদি ইবনে সাবা দল গঠনের পড়ে সেই “শিয়া”কে আলী(রা) ও আহলে বাইতের সমর্থনের মোড়ক চাপিয়ে ‘আলী’র শিয়া’ বলা হয়; তখন থেকেই শিয়া ধর্মের দিকে ‘শিয়া’ শব্দ বেশি ঝুঁকে।
➽ শিয়া-শব্দের ঐতিহাসিক ব্যবহারঃ
ইসলামের ইতিহাসের পাতায় শিয়া শব্দটি যে অর্থে এসেছে তা হল-সাহায্যকারী ও অনুসারী। খলিফা আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা)এর মধ্যকার সালিস দলিলে এর ব্যবহার পাই আমরা।
☀ শিয়া শব্দটা এমন অর্থে পাই যে- যারা আলী(রা)এর অনুসরণ করে তারা শিয়া, তেমনি যারা মুয়াবিয়া(রা)এর অনুসরণ করে তারাও শিয়া! শিয়া শব্দটা শুধু আলী(রা)র অনুসারীদের জন্য খাস ছিল এমন না! যেমনটা সালিশের চুক্তির পাতায় এসেছে-
“এই চুক্তিপত্র হল আলী বিন আবু তালিব,মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান, ও তাদের অনুসারীদের জন্য(وشيعتهما) সম্মতিক্রমে।” আরও- “আলী ও তাঁর শিয়ারা আবদুল্লাহ ইবন কায়স(আবু মুসা আশআরী রা.) এর উপরে সন্তুষ্ট(বিচারক হিসেবে),মুয়াবিয়া ও তাঁর শিয়ারা আমর ইবন আস এর উপরে রাজি(বিচারক)” । এছাড়া আরো-“অতপর যখন শাসকদ্বয়ের কেউ মারা যাবে তখন তাদের শিয়ারা আমির বেছে নিবে” ; “কোন একজন আমির যদি এই চুক্তির নির্ধারিত সময়সীমা পূরণের আগে মারা যায় তবে তাদের শিয়ারা নিজ নিজ খুশিমত আমির বেছে নিবে” [তারিখে তাবারী ১০৩/৩; আল বিদায়া ৩০৬/৭; আল আখবারুল আতওয়াল ১৯৪-১৯৬পৃ]
শিয়া ধর্মের অনুসারীদের ইতিহাস গ্রন্থেও আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা) উভয়ের জন্য শিয়া শব্দের ব্যবহার পাই,
☀ আহমদ আল ইয়াকুবী লিখে- “মুয়াবিয়া যখন ইয়েমেনের দিকে যাবার সময় বুসর বিন আরতাতকে বলেন-সানআ এলাকা না আসা পর্যন্ত চলতে থাকো আর সেখানে তো আমাদের জন্য শিয়া আছেই” [তারিখে ইয়াকুবী, ১৮৬/১]
ওই সময়ের অনেক পর পর্যন্ত শিয়া পরিভাষাটি আলী(রা)এর অনুসারীদের জন্য দলিল হিসাবে প্রকাশ পায়নি। এর উদ্ভব ঘটে নিজেদেরকে আলীর শিয়া-দাবিকারীদের কার্যকরী সমাবেশের মাধ্যমে; আলাদাভাবে শিয়া-শব্দের উদ্ভব ঘটে হুসাইন(রা)এর হত্যার পরে। যেমনটা -
☀ শিয়া ঐতিহাসিক আবুল হাসান আল-মাসঊদী তার ইতিহাসগ্রন্থে লিখে- “এবং, ৬৫ হিজরিতে শিয়ারা কুফায় উদ্দীপক কার্যক্রম করে” [মুরুজ আয-যাহাব ১০০/৩]
☀ আল আযহারের বিজ্ঞ আলেম ও ফিকহবিদ মুহাম্মদ আবু যাহরা লিখেন- “এটা ভুলে যাওয়া হয় যে মুয়াবিয়াও তার অনুসারীদের শিয়া শব্দে সম্বোধন করেছিল; কিন্তু ইতিহাসের ঘটনাবলী বলে যে- আলী(রা)এর হত্যার আগে শিয়া উপাধিটি আলীর অনুসারীদের জন্য বিশেষায়িত ছিল না” [আল মিরাছ ইন্দা-জাফরিয়্যাহ ২২পৃ]
➽ কুরআনে ‘শিয়া’ শব্দঃ
কুরআন মাজিদে প্রায় ১২ জায়গায় শিয়া শব্দটি এসেছে। আসুন সেগুলার প্রয়োগ দেখিঃ-
۩ সূরা নূরঃ ১৯- “যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ(تَشِيعَ) করুক..” ☞ এখানে ছড়িয়ে দেয়া অর্থ,এই আয়াত নাযিল হয়েছিল- কোন অপবাদ শুনে সেটার সমর্থনে প্রচার,ছড়ানো নিয়ে।
۩ সূরা আনআমঃ ৬৫- “...তোমাদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত(يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا) করে সবাইকে মুখোমুখী করে দিবেন এবং এককে অন্যের উপর আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন” ☞ এই আয়াতে দলে-উপদলে বিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য শিয়া শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেকোন সম্প্রদায় নিজেরা বিবাদে লিপ্ত হয়ে নানা রকম দল সৃষ্টি হওয়া এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ। রাসূল(ﷺ)ও উম্মতের জন্য ৩ টি দুয়া করেছিলেন,কিন্তু তার মধ্যে ২টী কবুল হয়; উম্মত বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত না হবার দুয়াটী নামঞ্জুর রয়ে যায় [সহি মুসলিম ৫১৪৫;ইবন খুযাইমা ৫৩৫;মুসনাদ আহমদ ২৩২৩৭]
۩ সূরা আনআমঃ ১৫৯- “নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল(وَكَانُوا شِيَعًا) হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার(রাসূল ﷺ) কোন সম্পর্ক নেই।” ☞ এখানে “শিয়া” দ্বারা বুঝানো হয়েছে পূর্ববর্তী উম্মতের,জমহুর মতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের যারা নিজেরা দ্বীনের কিছু অংশ মেনে,কিছু বাদ দিয়ে এবং পরস্পরবিরোধী মত সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল।
۩ সূরা হিজরঃ ১০- “আমি আপনার পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের(شِيَعِ) মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি” ☞ এখানে শিয়া দ্বারা পূর্ববর্তী অবাধ্য সম্প্রদায়ের তখা বলা হয়েছে যারা তাদের নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করত ও কুফর করত।
۩ সূরা মারিয়ামঃ ৬৯- “অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের(كُلِّ شِيعَةٍ) মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব” ☞ অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের খারাপ লোক তাদের সময় ও মতাদর্শ অনুযায়ী আলাদা হবে।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ৪- “ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে(شِيَعًا) বিভক্ত করে” ☞ ফেরাউন তার ক্ষমতার স্বার্থে রাজ্যের অধিবাসীদের বিভিন্ন মতানৈক্যের ভিত্তিতে বিভক্ত/শিয়া করে রেখেছিল।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ১৫- “..এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল..” ☞ মুসা(আ) শহরে গিয়ে দুইজনকে লড়তে দেখলেন, একজন তাঁর নিজ দল/উম্মত এর অর্থাৎ বনী ইসরাইলের, আরেকজন তাঁর শত্রু ফিরাউনের কিবতী দলের।
۩ সূরা রূমঃ ৩২- “যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে(شِيَعًا) বিভক্ত হয়ে পড়েছে” ☞ যারা আল্লাহর তাওহিদের দ্বীন ইসলামকে বিকৃত করে শিরক-কুফরে লিপ্ত হয়েছে এবং নিজেরা বিভিন্ন বাতিল মত উদ্ভাবন করে ফেরকা/শিয়া সৃষ্টি করেছে; মূলত ইহুদি-খ্রিস্টান।
۩ সূরা সাবাঃ ৫৪- “তাদের ও তাদের বাসনার মধ্যে অন্তরাল হয়ে গেছে, যেমন-তাদের সমপন্থীদের(بِأَشْيَاعِهِم) সাথেও এরূপ করা হয়েছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল” ~ অর্থাৎ পূর্বের যামানার বিভিন্ন সম্প্রদায়/শিয়াদের সাথেও এরকম করা হয়েছিল যারা কাফির ছিল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুনিয়া ভোগ বিলাসে বিভ্রান্তিতে ছিল।
۩ সূরা সাফফাতঃ ৮৩- “এবং নিশ্চয়ই তাঁর(নূহ আ.) অনুগামীদের(شِيعَتِهِ) একজন ছিলেন ইবরাহীম” ☞ ইবরাহীম(আ) ছিলেন নূহ(আ)এর দ্বীনের অনুসারী, তাওহিদের প্রচারক ও শিরক-কুফর এর বিরোধী ছিলেন। যেমনটা, আমাদের নবী মুহাম্মদ(ﷺ) ছিলেন ইবরাহীম(আ)এর দ্বীনের প্রচারক।
۩ সূরা ক্কমরঃ ৫১- “আমি তোমাদের মত লোকদেরকে(أَشْيَاعَكُمْ) ধ্বংস করেছি, অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?” ☞ এখানে পূর্বের যুগের ধবংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়/শিয়া দেরকে বুঝানো হয়েছে।
আমরা এপর্যন্ত দেখতে পাই যে, কুরআন মাজিদে কোথাওই শিয়া-শব্দের তেমন অর্থ নেই, যেমনটা সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা দাবি করে যে,আল্লাহ্র তরফ থেকে শিয়া হতে বলা হয়েছে। বরং অভিশপ্ত,বিখণ্ডকারী ও দ্বীনচ্যুত ফেরকা হিসাবেই শিয়া শব্দের উল্লেখ হয়েছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন দল হিসাবে উল্লেখ হয়েছে, সেই হিসাবে ধরলে শিয়ারাও ইসলামের বাইরে আলাদা দল। সূরা সাফফাতে একজন নবী নূহ(আ)’র অনুগামী হিসাবে ইবরাহীম(আ)’র কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ মুস্তফা(ﷺ) এর মাধ্যমে দ্বীন ও নবূওয়্যাত শেষ হয়েছে, এরপরে এরকম কোন শিয়া ধারার দাবি করলে তারা কাফের।
➽ হাদিসে শিয়া-রাফেজী শব্দঃ-
সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা প্রায়শই আমাদের মুসলমানদের কিতাব(মুসনাদে আহমদ,তাবারানী) ও তাফসির(তাবারী,দুররে মানসুর) ইত্যাদির কিছু হাদিস দেখিয়ে দাবি করতে চেষ্টা করে যে রাসূল(ﷺ) বলে গেছেন আলী(রা) এর শিয়া(দল/অনুসারী) হতে।
এই ক্ষেত্রে ঐসব কিতাবে কেন,কি হিসাবে হাদিস তুলা হয়েছে,পরিষ্কার অর্থ কি হতে পারে তা তো নাই, হাদিসের মানও বিচার করা হয় না,যে- তা আসলে কতটুকু নির্ভরযোগ্য বা জাল কিনা।
যদি বর্জনীয় “শিয়া” হতে বলা বর্ণনা গ্রহণ করতে হয়,তাহলে রাফেজী শিয়াদের হত্যার হাদিসও তো গ্রহণ করা লাগে ।কোন রকম জারহ-তাদীল ও মান-যাচাই ব্যতিরেকে এক নজরে দেখি,যেভাবে শিয়ারা উদ্ধৃত করে থাকেঃ-
১. আলী বিন আবি তালিব(রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, “শেষ যামানায় এক জাতি আত্নপ্রকাশ করবে ,তাদের নাম হবে রাফেযী, তারা ইসলাম ছেড়ে দিবে(يرفضون الإسلام)” [মুসনাদে আহমদ,১০৩/১; হাদিস ৮০৮; মুসনাদ আল-বাযযার হাদিস ৪৬৯]।
ইমাম বুখারী(র) এর তারিখে কাবির ২৭৯/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
২. ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল(ﷺ) এর সাথে ছিলাম এবং আলীও সেখানে উপস্থিত ছিল। রাসূল(ﷺ) বললেন, “হে আলী, শীঘ্রই এক জাতির উদ্ভব ঘটবে, যারা আহলে বাইতের ভালাবাসার দাবি করবে এবং রাফেদ নামে পরিচিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে ক্কিতাল করবে, কারণ তারা মুশরিক।” {মুসনাদে আবি ইয়ালা,হাদিস ২৫৮৬; মু’জামুল কাবির,হাদিস ১২৯৯৭-৯৮}
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(র) তার ফাযায়েলে সাহাব কিতাবে ৪১৭,৪৪০/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
৩. ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন- “শেষ যামানায় একদল লোক আসবে যারা ‘রাফেযী’ নামে চিহ্নিত হবে।তারা ইসলাম এরূপে ত্যাগ করবে,যেভাবে তারা উচ্চারণ করবে।তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, কারণ তারা মুশরিক”। {মুসনাদে আবদ বিন হুমায়দ,হাদিস-৬৯৮; কানযুল উম্মাল,হাদিস- ১১২৮; মুসনাদ আল হারিস-যাওয়ায়েদ হায়সামী,হাদিস- ১০৪৩}
৪. উম্মে সালামা(রা) থেকে বর্ণিত, এক রাতে নবী(ﷺ) আমার সাথে ছিলেন,তাই ফাতিমা তাঁর কাছে আসল ও তাঁর আগে আলী। নবী(ﷺ) তাকে বললেন, “হে আলী, তুমি ও তোমার সঙ্গীরা জান্নাতি।তবে তারা ব্যতীত যারা দাবি করে তারা তোমাকে ভালবাসে,সেই দল ইসলাম উচ্চারণ করে যদিও তারা তা উচ্চারণ করে(দাবি করে),তারা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠ অতিক্রম করেনা, তাদের সংক্ষিপ্ত নাম আছে তা হল “রাফেযী”(পরিত্যাগকারী)। তুমি যদি তাদের দেখ, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, কারণ তারা মুশরিক”। আলী(রা) বললেন,হে আল্লাহ্র নবী,তাদের চিহ্ন কি? নবী(ﷺ) বললেন, “তারা জুম’আর সালাতে অংশ নেয় না।জামআত ত্যাগ করে ও প্রথম যুগের মুসলিমদের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে”। {মু’জামুল আওসাত ৬৬০৫; তারিখে বাগদাদ ৩৫৮/১২}
ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৫. ফাতিমা(রা) থেকে বর্ণিত, নবী(ﷺ) আলীকে দেখে বললেন- “সে জান্নাতে যাবে। তার অনুসারীদের মধ্য হতে একদল ইসলাম এর কথা উচ্চারণ করে তা পালন এর দাবি করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছুঁড়ে ফেলবে।তাদের নাম হবে রাফেযী।তাদের পেলে কতল করবে,কারণ তারা মুশরিক” {মুসনাদে আবি ইয়ালা ১১৬/১২; ইবনে হিব্বান এর আল মাজরুহিন ২০৪/১}। ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৬. এছাড়া সুনানে আবু দাঊদের হাদিসে দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-তারা দাজ্জালের “শিয়া” وَهُمْ شِيعَةُ الدَّجَّالِ وَحَقٌّ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُلْحِقَهُمْ بِالدَّجَّالِ - তারা হচ্ছে দাজ্জালের অনুসারী এবং আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দাজ্জালের সঙ্গে মিলিত করবেন। [হাদিস ৪৬৯২,সুন্নাহ অধ্যায়]
উপরের হাদিসগুলো শিয়া,রাফেযী শব্দের উল্লেখ আছে এমন হাদিস এর মধ্য থেকে তুলে আনা উদাহরণ।কোন রকম তাহকিক, সনদ এর যাচাইবাছাই ছাড়া এগুলা তুলে দেয়া হল।
এরকম হাদিসের বেশ কিছুর ব্যাপারেই জারহ-তাদিল এর আলেমরা,ইমামরা বিচার বিশ্লেষণ এর পরে হাদিসের সনদে সমস্যা উল্লেখ করে গেছেন।যদিও বিভিন্ন বিখ্যাত কিতাবের বিশাল সংকলন এর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
আর মুসলমানরা বিশুদ্ধতার পক্ষপাতী, তাই- সহি হাদিস এর অনুসারী,দুর্বল হাদিসের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনকারী ও জাল রিওয়ায়াত বর্জনকারী। একারণে আমরা মুসলিমরা এসব হাদিস দেখিয়ে বলি না যে- শিয়াদের মেরে ফেল,রাফেজীদের সাথে যুদ্ধ কর ইত্যাদি!
মুসলমানদের মুসনাদ,মুসান্নাফ,জামি’ হাদিস কিতাবে কোথাও কোন হাদিস নিয়ে “এইযে এখানে শিয়া হতে বলা আছে,ইঙ্গিত আছে” ইত্যাদি দাবি করার আগে ইহুদিজাত শিয়াদের উচিত এখানে যে হাদিসের কিছু উদাহরণ দেয়া হল, সেগুলা নিয়েও বিবেচনা করা; তারপরে মন্তব্য করতে আসা।
➽ আরবি শব্দকোষে ‘শিয়া’:
☀ আরবি ভাষাবিদ ইবন দুরাইদ বলেনঃ অমুক অমুকের ‘শিয়া’ এই কথার দ্বারা বুঝায় সে ঐ ব্যক্তির চিন্তাধারার। কোন বিষয়ে কোন ব্যক্তিকে যখন “مشايعة”(মুশায়’আ) বা সাহায্য করা হয়,তখন বলা হয় সে তার শিয়া(شيعت), কোন ব্যাপারে কোন ব্যক্তিকে পরস্পর সঙ্গ দেয়া(সহযোগিতা করা) হলে সাহায্যকারীকে ঐ ব্যক্তির শিয়া বলা হয়। [জামহুর আল-লুগাত, ৬৩/৩]
☀ ভাষাবিদ আবুল মানসুর আল-আযহারী বলেনঃ শিয়া হল কোন ব্যক্তির সাহায্যকারী ও অনুসারী,এবং যেসব জাতি তার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয় তারা তার শিয়া। এই অনুসারী(شيع)দের সমষ্টিকে অনুসারীদল(أشياع) বলা হয়।ভিন্ন অর্থে, শিয়ারা এমন এক জাতি যারা নবী মুহাম্মদ(ﷺ) এর আহলে বাইতের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন করে এবং তাদের সমর্থন করে। আগুনের শিয়া বলা হয় যা আগুনের সাথে সাক্ষাৎ হলে আগুনকে আরো প্রজ্বলিত করে তুলে।
এছাড়াও কোন ব্যক্তির শিয়া(شيعت فلاناً) বলা হয় যারা তাকে শেষবিদায় দিতে বের হয়েছে।
আরো, বলা হয়, আমরা রমজান মাসের পরে শাওয়াল মাসেও ছয়টার অনুসরণ করলাম(شيعنا شهر رمضان بست من شوال) অর্থাৎ রমজানের পরে শাওয়ালেও ছয়টা রোযা রাখলাম।
আরবরা আরো বলে থাকে- তোমার কাছে আসব আগামীকাল,অথবা তার পরের শিয়া(أو شَيعَهُ);অর্থাৎ আগামীকালের পরে/অনুসরণে যেই দিন। শিয়া হল যারা একে অপরের পরবর্তীতে থাকে। শিয়া ফেরকা-যারা একে অপরের অনুসরণ করে কিন্তু সবক্ষেত্রে তারা একমত নয়।[তাহযিব আল-লুগাত ৬১/৩]
☀ ইবনে মুনযুর বলেনঃ শিয়া কোন একজন ব্যক্তির অনুসরণ করে ও তাকে সাহায্য করে,এদের সমষ্টিকে শি’উন/দল বলে; আর এরকম দলের সমষ্টিকে আশইয়ান(أشياع) বলে। শিয়ার উসুল- মানুষের মধ্যে এক দল/ফেরকা, যার মধ্যে একক-দ্বৈত,সম্মিলিত,নারী-পুরুষ সবাই একই শব্দ ও একই অর্থের ভিতরে পরে।এই নাম পরে আলী ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব পোষণকারী দলের জন্য বিশেষায়িত হয়ে পরে। [লিসানুল আরব; شيع অধ্যায়]
☀ আহলে বাইতের বংশধর মুরতাযা আল-যাবিদী বলেনঃ প্রত্যেক মানুষ যারা কাউকে সংগঠিত হয়ে সাহায্য করে তারা তার শিয়া। শিয়া’র মূল المشايعة(মুশায়’আহ) থেকে যার অর্থ অনুসরণ করা।
এই নাম(শিয়া) আলী ও আহলে বাইতের সমর্থক দাবিদারদের জন্যই শক্তিশালী হয়।এরা উম্মতের অনির্দিষ্ট সংখ্যক অংশ,বিদাআত(উদ্ভাবন) করে,অপেক্ষমান ইমাম(পলাতক মেহদি)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ও শায়খাইন(আবু বকর ও উমর রা.)কে কটূক্তি করে, তাদের সীমালঙ্ঘনকারীরা শায়খাইনকে তাকফির করে। তাদের মধ্যে অনেকেই যিন্দীক পর্যায়ে চলে যায়। [তাজুল উরুস ৪০৫/৫; কাতরাল মুহিত ১১০০/১]
এখানে আমরা জানতে পারি যে, আরবি ভাষায় ‘শিয়া’ শব্দটি কোন পবিত্রতাসূচক বা হক্ক অর্থে বিশেষায়িত না, এমনকি আহলে বাইতের সঙ্গেও নির্দিষ্ট না। কোন মতাদর্শের উপরে যে কেউ দল গঠন করলে অথবা একে অন্যের অনুসরণ,সমর্থন করলেই তারা শিয়া; তা ভাল হোক বা খারাপ। ইহুদি ইবনে সাবা দল গঠনের পড়ে সেই “শিয়া”কে আলী(রা) ও আহলে বাইতের সমর্থনের মোড়ক চাপিয়ে ‘আলী’র শিয়া’ বলা হয়; তখন থেকেই শিয়া ধর্মের দিকে ‘শিয়া’ শব্দ বেশি ঝুঁকে।
➽ শিয়া-শব্দের ঐতিহাসিক ব্যবহারঃ
ইসলামের ইতিহাসের পাতায় শিয়া শব্দটি যে অর্থে এসেছে তা হল-সাহায্যকারী ও অনুসারী। খলিফা আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা)এর মধ্যকার সালিস দলিলে এর ব্যবহার পাই আমরা।
☀ শিয়া শব্দটা এমন অর্থে পাই যে- যারা আলী(রা)এর অনুসরণ করে তারা শিয়া, তেমনি যারা মুয়াবিয়া(রা)এর অনুসরণ করে তারাও শিয়া! শিয়া শব্দটা শুধু আলী(রা)র অনুসারীদের জন্য খাস ছিল এমন না! যেমনটা সালিশের চুক্তির পাতায় এসেছে-
“এই চুক্তিপত্র হল আলী বিন আবু তালিব,মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান, ও তাদের অনুসারীদের জন্য(وشيعتهما) সম্মতিক্রমে।” আরও- “আলী ও তাঁর শিয়ারা আবদুল্লাহ ইবন কায়স(আবু মুসা আশআরী রা.) এর উপরে সন্তুষ্ট(বিচারক হিসেবে),মুয়াবিয়া ও তাঁর শিয়ারা আমর ইবন আস এর উপরে রাজি(বিচারক)” । এছাড়া আরো-“অতপর যখন শাসকদ্বয়ের কেউ মারা যাবে তখন তাদের শিয়ারা আমির বেছে নিবে” ; “কোন একজন আমির যদি এই চুক্তির নির্ধারিত সময়সীমা পূরণের আগে মারা যায় তবে তাদের শিয়ারা নিজ নিজ খুশিমত আমির বেছে নিবে” [তারিখে তাবারী ১০৩/৩; আল বিদায়া ৩০৬/৭; আল আখবারুল আতওয়াল ১৯৪-১৯৬পৃ]
শিয়া ধর্মের অনুসারীদের ইতিহাস গ্রন্থেও আলী(রা) ও মুয়াবিয়া(রা) উভয়ের জন্য শিয়া শব্দের ব্যবহার পাই,
☀ আহমদ আল ইয়াকুবী লিখে- “মুয়াবিয়া যখন ইয়েমেনের দিকে যাবার সময় বুসর বিন আরতাতকে বলেন-সানআ এলাকা না আসা পর্যন্ত চলতে থাকো আর সেখানে তো আমাদের জন্য শিয়া আছেই” [তারিখে ইয়াকুবী, ১৮৬/১]
ওই সময়ের অনেক পর পর্যন্ত শিয়া পরিভাষাটি আলী(রা)এর অনুসারীদের জন্য দলিল হিসাবে প্রকাশ পায়নি। এর উদ্ভব ঘটে নিজেদেরকে আলীর শিয়া-দাবিকারীদের কার্যকরী সমাবেশের মাধ্যমে; আলাদাভাবে শিয়া-শব্দের উদ্ভব ঘটে হুসাইন(রা)এর হত্যার পরে। যেমনটা -
☀ শিয়া ঐতিহাসিক আবুল হাসান আল-মাসঊদী তার ইতিহাসগ্রন্থে লিখে- “এবং, ৬৫ হিজরিতে শিয়ারা কুফায় উদ্দীপক কার্যক্রম করে” [মুরুজ আয-যাহাব ১০০/৩]
☀ আল আযহারের বিজ্ঞ আলেম ও ফিকহবিদ মুহাম্মদ আবু যাহরা লিখেন- “এটা ভুলে যাওয়া হয় যে মুয়াবিয়াও তার অনুসারীদের শিয়া শব্দে সম্বোধন করেছিল; কিন্তু ইতিহাসের ঘটনাবলী বলে যে- আলী(রা)এর হত্যার আগে শিয়া উপাধিটি আলীর অনুসারীদের জন্য বিশেষায়িত ছিল না” [আল মিরাছ ইন্দা-জাফরিয়্যাহ ২২পৃ]
➽ কুরআনে ‘শিয়া’ শব্দঃ
কুরআন মাজিদে প্রায় ১২ জায়গায় শিয়া শব্দটি এসেছে। আসুন সেগুলার প্রয়োগ দেখিঃ-
۩ সূরা নূরঃ ১৯- “যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ(تَشِيعَ) করুক..” ☞ এখানে ছড়িয়ে দেয়া অর্থ,এই আয়াত নাযিল হয়েছিল- কোন অপবাদ শুনে সেটার সমর্থনে প্রচার,ছড়ানো নিয়ে।
۩ সূরা আনআমঃ ৬৫- “...তোমাদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত(يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا) করে সবাইকে মুখোমুখী করে দিবেন এবং এককে অন্যের উপর আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন” ☞ এই আয়াতে দলে-উপদলে বিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য শিয়া শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেকোন সম্প্রদায় নিজেরা বিবাদে লিপ্ত হয়ে নানা রকম দল সৃষ্টি হওয়া এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ। রাসূল(ﷺ)ও উম্মতের জন্য ৩ টি দুয়া করেছিলেন,কিন্তু তার মধ্যে ২টী কবুল হয়; উম্মত বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত না হবার দুয়াটী নামঞ্জুর রয়ে যায় [সহি মুসলিম ৫১৪৫;ইবন খুযাইমা ৫৩৫;মুসনাদ আহমদ ২৩২৩৭]
۩ সূরা আনআমঃ ১৫৯- “নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল(وَكَانُوا شِيَعًا) হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার(রাসূল ﷺ) কোন সম্পর্ক নেই।” ☞ এখানে “শিয়া” দ্বারা বুঝানো হয়েছে পূর্ববর্তী উম্মতের,জমহুর মতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের যারা নিজেরা দ্বীনের কিছু অংশ মেনে,কিছু বাদ দিয়ে এবং পরস্পরবিরোধী মত সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল।
۩ সূরা হিজরঃ ১০- “আমি আপনার পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের(شِيَعِ) মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি” ☞ এখানে শিয়া দ্বারা পূর্ববর্তী অবাধ্য সম্প্রদায়ের তখা বলা হয়েছে যারা তাদের নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করত ও কুফর করত।
۩ সূরা মারিয়ামঃ ৬৯- “অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের(كُلِّ شِيعَةٍ) মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব” ☞ অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের খারাপ লোক তাদের সময় ও মতাদর্শ অনুযায়ী আলাদা হবে।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ৪- “ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে(شِيَعًا) বিভক্ত করে” ☞ ফেরাউন তার ক্ষমতার স্বার্থে রাজ্যের অধিবাসীদের বিভিন্ন মতানৈক্যের ভিত্তিতে বিভক্ত/শিয়া করে রেখেছিল।
۩ সূরা ক্কাসাসঃ ১৫- “..এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের(شِيعَتِهِ) সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল..” ☞ মুসা(আ) শহরে গিয়ে দুইজনকে লড়তে দেখলেন, একজন তাঁর নিজ দল/উম্মত এর অর্থাৎ বনী ইসরাইলের, আরেকজন তাঁর শত্রু ফিরাউনের কিবতী দলের।
۩ সূরা রূমঃ ৩২- “যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে(شِيَعًا) বিভক্ত হয়ে পড়েছে” ☞ যারা আল্লাহর তাওহিদের দ্বীন ইসলামকে বিকৃত করে শিরক-কুফরে লিপ্ত হয়েছে এবং নিজেরা বিভিন্ন বাতিল মত উদ্ভাবন করে ফেরকা/শিয়া সৃষ্টি করেছে; মূলত ইহুদি-খ্রিস্টান।
۩ সূরা সাবাঃ ৫৪- “তাদের ও তাদের বাসনার মধ্যে অন্তরাল হয়ে গেছে, যেমন-তাদের সমপন্থীদের(بِأَشْيَاعِهِم) সাথেও এরূপ করা হয়েছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল” ~ অর্থাৎ পূর্বের যামানার বিভিন্ন সম্প্রদায়/শিয়াদের সাথেও এরকম করা হয়েছিল যারা কাফির ছিল এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুনিয়া ভোগ বিলাসে বিভ্রান্তিতে ছিল।
۩ সূরা সাফফাতঃ ৮৩- “এবং নিশ্চয়ই তাঁর(নূহ আ.) অনুগামীদের(شِيعَتِهِ) একজন ছিলেন ইবরাহীম” ☞ ইবরাহীম(আ) ছিলেন নূহ(আ)এর দ্বীনের অনুসারী, তাওহিদের প্রচারক ও শিরক-কুফর এর বিরোধী ছিলেন। যেমনটা, আমাদের নবী মুহাম্মদ(ﷺ) ছিলেন ইবরাহীম(আ)এর দ্বীনের প্রচারক।
۩ সূরা ক্কমরঃ ৫১- “আমি তোমাদের মত লোকদেরকে(أَشْيَاعَكُمْ) ধ্বংস করেছি, অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?” ☞ এখানে পূর্বের যুগের ধবংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়/শিয়া দেরকে বুঝানো হয়েছে।
আমরা এপর্যন্ত দেখতে পাই যে, কুরআন মাজিদে কোথাওই শিয়া-শব্দের তেমন অর্থ নেই, যেমনটা সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা দাবি করে যে,আল্লাহ্র তরফ থেকে শিয়া হতে বলা হয়েছে। বরং অভিশপ্ত,বিখণ্ডকারী ও দ্বীনচ্যুত ফেরকা হিসাবেই শিয়া শব্দের উল্লেখ হয়েছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন দল হিসাবে উল্লেখ হয়েছে, সেই হিসাবে ধরলে শিয়ারাও ইসলামের বাইরে আলাদা দল। সূরা সাফফাতে একজন নবী নূহ(আ)’র অনুগামী হিসাবে ইবরাহীম(আ)’র কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ মুস্তফা(ﷺ) এর মাধ্যমে দ্বীন ও নবূওয়্যাত শেষ হয়েছে, এরপরে এরকম কোন শিয়া ধারার দাবি করলে তারা কাফের।
➽ হাদিসে শিয়া-রাফেজী শব্দঃ-
সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা প্রায়শই আমাদের মুসলমানদের কিতাব(মুসনাদে আহমদ,তাবারানী) ও তাফসির(তাবারী,দুররে মানসুর) ইত্যাদির কিছু হাদিস দেখিয়ে দাবি করতে চেষ্টা করে যে রাসূল(ﷺ) বলে গেছেন আলী(রা) এর শিয়া(দল/অনুসারী) হতে।
এই ক্ষেত্রে ঐসব কিতাবে কেন,কি হিসাবে হাদিস তুলা হয়েছে,পরিষ্কার অর্থ কি হতে পারে তা তো নাই, হাদিসের মানও বিচার করা হয় না,যে- তা আসলে কতটুকু নির্ভরযোগ্য বা জাল কিনা।
যদি বর্জনীয় “শিয়া” হতে বলা বর্ণনা গ্রহণ করতে হয়,তাহলে রাফেজী শিয়াদের হত্যার হাদিসও তো গ্রহণ করা লাগে ।কোন রকম জারহ-তাদীল ও মান-যাচাই ব্যতিরেকে এক নজরে দেখি,যেভাবে শিয়ারা উদ্ধৃত করে থাকেঃ-
১. আলী বিন আবি তালিব(রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, “শেষ যামানায় এক জাতি আত্নপ্রকাশ করবে ,তাদের নাম হবে রাফেযী, তারা ইসলাম ছেড়ে দিবে(يرفضون الإسلام)” [মুসনাদে আহমদ,১০৩/১; হাদিস ৮০৮; মুসনাদ আল-বাযযার হাদিস ৪৬৯]।
ইমাম বুখারী(র) এর তারিখে কাবির ২৭৯/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
২. ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল(ﷺ) এর সাথে ছিলাম এবং আলীও সেখানে উপস্থিত ছিল। রাসূল(ﷺ) বললেন, “হে আলী, শীঘ্রই এক জাতির উদ্ভব ঘটবে, যারা আহলে বাইতের ভালাবাসার দাবি করবে এবং রাফেদ নামে পরিচিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে ক্কিতাল করবে, কারণ তারা মুশরিক।” {মুসনাদে আবি ইয়ালা,হাদিস ২৫৮৬; মু’জামুল কাবির,হাদিস ১২৯৯৭-৯৮}
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(র) তার ফাযায়েলে সাহাব কিতাবে ৪১৭,৪৪০/১ এ হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
৩. ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন- “শেষ যামানায় একদল লোক আসবে যারা ‘রাফেযী’ নামে চিহ্নিত হবে।তারা ইসলাম এরূপে ত্যাগ করবে,যেভাবে তারা উচ্চারণ করবে।তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, কারণ তারা মুশরিক”। {মুসনাদে আবদ বিন হুমায়দ,হাদিস-৬৯৮; কানযুল উম্মাল,হাদিস- ১১২৮; মুসনাদ আল হারিস-যাওয়ায়েদ হায়সামী,হাদিস- ১০৪৩}
৪. উম্মে সালামা(রা) থেকে বর্ণিত, এক রাতে নবী(ﷺ) আমার সাথে ছিলেন,তাই ফাতিমা তাঁর কাছে আসল ও তাঁর আগে আলী। নবী(ﷺ) তাকে বললেন, “হে আলী, তুমি ও তোমার সঙ্গীরা জান্নাতি।তবে তারা ব্যতীত যারা দাবি করে তারা তোমাকে ভালবাসে,সেই দল ইসলাম উচ্চারণ করে যদিও তারা তা উচ্চারণ করে(দাবি করে),তারা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠ অতিক্রম করেনা, তাদের সংক্ষিপ্ত নাম আছে তা হল “রাফেযী”(পরিত্যাগকারী)। তুমি যদি তাদের দেখ, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, কারণ তারা মুশরিক”। আলী(রা) বললেন,হে আল্লাহ্র নবী,তাদের চিহ্ন কি? নবী(ﷺ) বললেন, “তারা জুম’আর সালাতে অংশ নেয় না।জামআত ত্যাগ করে ও প্রথম যুগের মুসলিমদের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে”। {মু’জামুল আওসাত ৬৬০৫; তারিখে বাগদাদ ৩৫৮/১২}
ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৫. ফাতিমা(রা) থেকে বর্ণিত, নবী(ﷺ) আলীকে দেখে বললেন- “সে জান্নাতে যাবে। তার অনুসারীদের মধ্য হতে একদল ইসলাম এর কথা উচ্চারণ করে তা পালন এর দাবি করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছুঁড়ে ফেলবে।তাদের নাম হবে রাফেযী।তাদের পেলে কতল করবে,কারণ তারা মুশরিক” {মুসনাদে আবি ইয়ালা ১১৬/১২; ইবনে হিব্বান এর আল মাজরুহিন ২০৪/১}। ইবনুল জাওযী(র) তাঁর ইলাল আল মুতানাহিয়াত কিতাবে ১৬৭/১ এ হাদিসটি এনেছেন।
৬. এছাড়া সুনানে আবু দাঊদের হাদিসে দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-তারা দাজ্জালের “শিয়া” وَهُمْ شِيعَةُ الدَّجَّالِ وَحَقٌّ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُلْحِقَهُمْ بِالدَّجَّالِ - তারা হচ্ছে দাজ্জালের অনুসারী এবং আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দাজ্জালের সঙ্গে মিলিত করবেন। [হাদিস ৪৬৯২,সুন্নাহ অধ্যায়]
উপরের হাদিসগুলো শিয়া,রাফেযী শব্দের উল্লেখ আছে এমন হাদিস এর মধ্য থেকে তুলে আনা উদাহরণ।কোন রকম তাহকিক, সনদ এর যাচাইবাছাই ছাড়া এগুলা তুলে দেয়া হল।
এরকম হাদিসের বেশ কিছুর ব্যাপারেই জারহ-তাদিল এর আলেমরা,ইমামরা বিচার বিশ্লেষণ এর পরে হাদিসের সনদে সমস্যা উল্লেখ করে গেছেন।যদিও বিভিন্ন বিখ্যাত কিতাবের বিশাল সংকলন এর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
আর মুসলমানরা বিশুদ্ধতার পক্ষপাতী, তাই- সহি হাদিস এর অনুসারী,দুর্বল হাদিসের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনকারী ও জাল রিওয়ায়াত বর্জনকারী। একারণে আমরা মুসলিমরা এসব হাদিস দেখিয়ে বলি না যে- শিয়াদের মেরে ফেল,রাফেজীদের সাথে যুদ্ধ কর ইত্যাদি!
মুসলমানদের মুসনাদ,মুসান্নাফ,জামি’ হাদিস কিতাবে কোথাও কোন হাদিস নিয়ে “এইযে এখানে শিয়া হতে বলা আছে,ইঙ্গিত আছে” ইত্যাদি দাবি করার আগে ইহুদিজাত শিয়াদের উচিত এখানে যে হাদিসের কিছু উদাহরণ দেয়া হল, সেগুলা নিয়েও বিবেচনা করা; তারপরে মন্তব্য করতে আসা।
0 Comments