মওদুদী মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন: [ ২য় পর্ব
-------------------------- -------------------------- -----------
মওদূদী ছাহেবের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলামী আইন ও সংবিধান প্রণীত হবে না। আর সংবিধান প্রণীত না হলে শরী‘আতও থাকবে না। তাই যে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সেদেশে ইবাদত ও আনুগত্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতা যেমন অর্জিত হয়নি, তেমনি সংবিধানও প্রণীত হয়নি। সুতরাং শরী‘আত ও ইবাদত কোথায় থেকে আসবে? তাছাড়া দ্বীন বলতে কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা, তাই তা অর্জন ছাড়া ইসলাম অনুপস্থিত। এ জন্য বর্তমানে মুসলিমরা যে শরী‘আত পালন করছে, তাদের দৃষ্টিতে তা শরী‘আত নয়।
উক্ত দাবীর ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন সৃষ্টি হবে, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত একজন মুসলিম কী করবে? মুসলিম থাকার জন্য এবং আল্লাহ প্রদত্ত শরী‘আত পালন করার জন্য কি ইসলামী রাষ্ট্র শর্ত? বর্তমানে ইবাদতের নামে ছালাত (নামায), ছিয়াম (রোজা), হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে কোন লাভ হবে কি? উক্ত প্রশ্নগুলোর প্রেক্ষিতে তিনি জবাব দিয়েছেন যে, এগুলো মূলতঃ ট্রেনিং কোর্স ও বড় ইবাদতে পোঁছার সিঁড়ি।
তাঁর মতে উক্ত ইবাদতগুলোও ঐ ‘বড় ইবাদত’ বা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের আশায় করা হচ্ছে। তাহলে ইবাদতগুলো আল্লাহ্র উদ্দেশে না হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশেই হচ্ছে। এটাই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাছাড়া এগুলো ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’ হলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তা পালন করার প্রয়োজন থাকে না। এই স্থানে এসে মওদূদী ছাহেবের থিওরি ছূফীবাদের সাথে মিলে গেছে। কারণ ছূফীদের দৃষ্টিতে ‘ফানাফিল্লাহ’ হয়ে গেলে আর কোন ইবাদত করা লাগে না। [দলীলঃ আল-ফাছল ফিল মিলাল ৪/১৪৩ পৃষ্ঠা] অন্যদিকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে তারা আল্লাহ্র কাছে কী দাবী করবে? কারণ তারা তো আল্লাহ্র উদ্দেশে কিছুই করেনি। যা করেছে সবই রাষ্ট্রক্ষমতার অর্জনের জন্য।
.
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ উক্ত দর্শনের সাথে খারেজী, শী‘আ, রাফেযী ও ছূফী দর্শনের মিল রয়েছে। যেমন- (ক) খারেজীদের মূল উদ্দেশ্য হল যেকোন পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করা (খ) শী‘আদের উদ্দেশ্যও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য তারা নেতৃত্বকে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার সাথে সংযুক্ত করেছে এবং দ্বীনের রুকন সমূহের মধ্যে একটি রুকন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। (গ) অনুরূপ শী‘আদের অন্যতম উপদল রাফেযীরা ‘রাষ্ট্রক্ষমতা’ অর্জনকে দ্বীনের মূলনীতি সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রধান মূলনীতি হিসাবে নির্ধারণ করেছে। (ঘ) আর ছূফীদের আক্বীদা হল, যিকির ও যুহদের মাধ্যমে আল্লাহ্র মধ্যে বিলীন হলে বা ফানাফিল্লাহ হলে আর ইবাদতের প্রয়োজন হয় না। উক্ত মতবাদগুলোর সাথে মওদূদী ছাহেবের মতের মিল থাকার কারণে অনেকেই তাকে রাফেযী বলেছেন, কেউ শী‘আ বলেছেন। হানাফী আলেমগণ তাকে হানাফী বলে স্বীকার করেননি। যদিও তিনি নিজেকে হানাফী বলেছেন।
[দলীলঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী, রাসায়েল ও মাসায়েল অনুবাদ : আব্দুল মান্নান তালিব ও আব্দুল আযীয (ঢাকা : শাতাব্দী প্রকাশনী, জুন ২০০৯), ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪০]
.
সুধী পাঠক! পবিত্র কুরআনের এই অভিনব কল্পিত ব্যাখ্যা এবং চোখ ঝলসানো চাকচিক্যময় যুক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্র কায়েমের প্রতি প্রলোভন দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ পরহেযগার, মুত্তাক্বী, ঈমানদার, আলেম-ওলামা ও ইসলামী পণ্ডিতগণকে বুঝানো হয়েছে যে, তাঁরা যেন আমল-ইবাদত সমূহকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ না মনে করেন; বরং রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনকেই ‘বড় ইবাদত’ মনে করেন। এ কারণেই মানুষ আজ তাওহীদী আক্বীদা ও আমলকে অতি তুচ্ছ মনে করছে; ইসলামের অসংখ্য বিধানকে প্রত্যাখ্যান করছে। শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য ছুটছে। অথচ শী‘আদের উক্ত দর্শন সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন,
‘নেতৃত্বের প্রসঙ্গকে দ্বীনের আহকামের দাবীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা এবং মুসলিমদের অন্যান্য তামাম বিষয়ের মধ্যে তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে চরম মিথ্যাচার,.. বরং এটা কুফরী। [দলীলঃ ইবনু তাইমিয়াহ, মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, সংক্ষেপায়নেঃ শায়খ আব্দুল্লাহ আল-ফানীমান (রিয়ায : মাকতাবাতুল কাওসার, ১৯৯১/১৪১১, ১/২৮ পৃষ্ঠা।]
.
সুধী পাঠক! রাফেযী মতবাদকেই যদি ইবনু তায়মিয়াহ ‘কুফরী মতবাদ’ বলে থাকেন, তাহলে আজ তিনি বেঁচে থাকলে মওদূদী মতবাদ সম্পর্কে কী বলতেন! অতএব ক্ষমতা অর্জনের এই সংস্কৃতির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ এই লোভ নাশকতা ও নৈরাজ্যের জন্ম দেয়। ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিজরী) উক্ত মর্মে মুহাল্লাব (রহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তি পেশ করেছেন। তিনি বলেন,
‘রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতি লোভ লালসাই জনগণের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টির মূল কারণ। অবশেষে এতে তুমুল রক্তপাত ঘটে এবং মানুষের ধন-সম্পদ ও ইযযত-আবরুকে বৈধ মনে করা হয়। আর এ কারণেই পৃথিবীতে বিশৃংখলা-বিপর্যয় বিরাট আকার ধারণ করে’। [দলীলঃ ফাৎহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১৩/১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদিস/৭১৪৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ‘আহকাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭]
[ চলবে ]
--------------------------
মওদূদী ছাহেবের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলামী আইন ও সংবিধান প্রণীত হবে না। আর সংবিধান প্রণীত না হলে শরী‘আতও থাকবে না। তাই যে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সেদেশে ইবাদত ও আনুগত্য করার কোন সুযোগ নেই। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতা যেমন অর্জিত হয়নি, তেমনি সংবিধানও প্রণীত হয়নি। সুতরাং শরী‘আত ও ইবাদত কোথায় থেকে আসবে? তাছাড়া দ্বীন বলতে কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা, তাই তা অর্জন ছাড়া ইসলাম অনুপস্থিত। এ জন্য বর্তমানে মুসলিমরা যে শরী‘আত পালন করছে, তাদের দৃষ্টিতে তা শরী‘আত নয়।
উক্ত দাবীর ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন সৃষ্টি হবে, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত একজন মুসলিম কী করবে? মুসলিম থাকার জন্য এবং আল্লাহ প্রদত্ত শরী‘আত পালন করার জন্য কি ইসলামী রাষ্ট্র শর্ত? বর্তমানে ইবাদতের নামে ছালাত (নামায), ছিয়াম (রোজা), হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে কোন লাভ হবে কি? উক্ত প্রশ্নগুলোর প্রেক্ষিতে তিনি জবাব দিয়েছেন যে, এগুলো মূলতঃ ট্রেনিং কোর্স ও বড় ইবাদতে পোঁছার সিঁড়ি।
তাঁর মতে উক্ত ইবাদতগুলোও ঐ ‘বড় ইবাদত’ বা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের আশায় করা হচ্ছে। তাহলে ইবাদতগুলো আল্লাহ্র উদ্দেশে না হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশেই হচ্ছে। এটাই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাছাড়া এগুলো ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’ হলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তা পালন করার প্রয়োজন থাকে না। এই স্থানে এসে মওদূদী ছাহেবের থিওরি ছূফীবাদের সাথে মিলে গেছে। কারণ ছূফীদের দৃষ্টিতে ‘ফানাফিল্লাহ’ হয়ে গেলে আর কোন ইবাদত করা লাগে না। [দলীলঃ আল-ফাছল ফিল মিলাল ৪/১৪৩ পৃষ্ঠা] অন্যদিকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে তারা আল্লাহ্র কাছে কী দাবী করবে? কারণ তারা তো আল্লাহ্র উদ্দেশে কিছুই করেনি। যা করেছে সবই রাষ্ট্রক্ষমতার অর্জনের জন্য।
.
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ উক্ত দর্শনের সাথে খারেজী, শী‘আ, রাফেযী ও ছূফী দর্শনের মিল রয়েছে। যেমন- (ক) খারেজীদের মূল উদ্দেশ্য হল যেকোন পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করা (খ) শী‘আদের উদ্দেশ্যও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য তারা নেতৃত্বকে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার সাথে সংযুক্ত করেছে এবং দ্বীনের রুকন সমূহের মধ্যে একটি রুকন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। (গ) অনুরূপ শী‘আদের অন্যতম উপদল রাফেযীরা ‘রাষ্ট্রক্ষমতা’ অর্জনকে দ্বীনের মূলনীতি সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রধান মূলনীতি হিসাবে নির্ধারণ করেছে। (ঘ) আর ছূফীদের আক্বীদা হল, যিকির ও যুহদের মাধ্যমে আল্লাহ্র মধ্যে বিলীন হলে বা ফানাফিল্লাহ হলে আর ইবাদতের প্রয়োজন হয় না। উক্ত মতবাদগুলোর সাথে মওদূদী ছাহেবের মতের মিল থাকার কারণে অনেকেই তাকে রাফেযী বলেছেন, কেউ শী‘আ বলেছেন। হানাফী আলেমগণ তাকে হানাফী বলে স্বীকার করেননি। যদিও তিনি নিজেকে হানাফী বলেছেন।
[দলীলঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী, রাসায়েল ও মাসায়েল অনুবাদ : আব্দুল মান্নান তালিব ও আব্দুল আযীয (ঢাকা : শাতাব্দী প্রকাশনী, জুন ২০০৯), ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪০]
.
সুধী পাঠক! পবিত্র কুরআনের এই অভিনব কল্পিত ব্যাখ্যা এবং চোখ ঝলসানো চাকচিক্যময় যুক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্র কায়েমের প্রতি প্রলোভন দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ পরহেযগার, মুত্তাক্বী, ঈমানদার, আলেম-ওলামা ও ইসলামী পণ্ডিতগণকে বুঝানো হয়েছে যে, তাঁরা যেন আমল-ইবাদত সমূহকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ না মনে করেন; বরং রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনকেই ‘বড় ইবাদত’ মনে করেন। এ কারণেই মানুষ আজ তাওহীদী আক্বীদা ও আমলকে অতি তুচ্ছ মনে করছে; ইসলামের অসংখ্য বিধানকে প্রত্যাখ্যান করছে। শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য ছুটছে। অথচ শী‘আদের উক্ত দর্শন সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন,
‘নেতৃত্বের প্রসঙ্গকে দ্বীনের আহকামের দাবীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা এবং মুসলিমদের অন্যান্য তামাম বিষয়ের মধ্যে তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে চরম মিথ্যাচার,.. বরং এটা কুফরী। [দলীলঃ ইবনু তাইমিয়াহ, মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, সংক্ষেপায়নেঃ শায়খ আব্দুল্লাহ আল-ফানীমান (রিয়ায : মাকতাবাতুল কাওসার, ১৯৯১/১৪১১, ১/২৮ পৃষ্ঠা।]
.
সুধী পাঠক! রাফেযী মতবাদকেই যদি ইবনু তায়মিয়াহ ‘কুফরী মতবাদ’ বলে থাকেন, তাহলে আজ তিনি বেঁচে থাকলে মওদূদী মতবাদ সম্পর্কে কী বলতেন! অতএব ক্ষমতা অর্জনের এই সংস্কৃতির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ এই লোভ নাশকতা ও নৈরাজ্যের জন্ম দেয়। ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিজরী) উক্ত মর্মে মুহাল্লাব (রহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তি পেশ করেছেন। তিনি বলেন,
‘রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতি লোভ লালসাই জনগণের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টির মূল কারণ। অবশেষে এতে তুমুল রক্তপাত ঘটে এবং মানুষের ধন-সম্পদ ও ইযযত-আবরুকে বৈধ মনে করা হয়। আর এ কারণেই পৃথিবীতে বিশৃংখলা-বিপর্যয় বিরাট আকার ধারণ করে’। [দলীলঃ ফাৎহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ১৩/১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদিস/৭১৪৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ‘আহকাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭]
[ চলবে ]
0 Comments