Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

মওদুদী মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন: [ ৩য় পর্ব ]

 মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন: [ ৩য় পর্ব ]
---------------------------------------------------------------
উক্ত দর্শনের কারণেই অসংখ্য মুসলিম এই চরমপন্থী মতবাদের মরণ ফাঁদে আটকে পড়েছে। আর আক্বীদাগত পার্থক্যের কারণে এরা শত ভাগে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতি দৃশ্যমান। (ক) সশস্ত্র বিপ্লব (খ) গণতান্ত্রিক ভোটাভুটি। তবে শেষোক্ত পদ্ধতির উদ্যোক্তাগণ প্রথমোক্ত পদ্ধতিতে সক্ষম হলে কখনো হাত ছাড়া করবে না। এমন আক্বীদা পোষণকারীরা দ্বীনের নামে দুনিয়া ভোগ করার যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, তাতে তারা দুনিয়াও হারাচ্ছে আখেরাতও হারাচ্ছে। কারণ:

(১) দ্বীন ক্বায়েমের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো কেবল একটি ক্ষেত্র রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের সিঁড়ি গণ্য করা হয়। ফলে ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য থাকলেও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে দ্বীন পালন করা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হয় না; বরং উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতা অর্জনের সিঁড়িকে মযবুত করা।
.
(২) যারা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করতে চায়, তাদের মূল লক্ষ্য থাকে- নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র ক্যাডার তৈরি করা, সাধারণ জনগণ উদ্দেশ্য নয়। পক্ষান্তরে ব্যালটধারীদের মূল লক্ষ্য হল চতুর্মুখী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতা-কর্মী, যারা জনগণের ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। জনগণের মধ্যে দ্বীন থাক বা না থাক সেদিকে ভ্রূক্ষেপ থাকে না। ভোটই তাদের মুখ্য বিষয়।
.
(৩) নেতা-কর্মীদের দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্য হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েমের জন্য নানারূপী প্রশিক্ষণ ও কৌশল শিক্ষা দেয়া। সেখানে তাওহীদ ভিত্তিক ঈমান-আক্বীদা ও আমল ইবাদতের যেমন কোন গুরুত্ব থাকে না, তেমনি তাওহীদ ও শিরক, সুন্নাত ও বিদ‘আত, ছহীহ ও যঈফ সঠিক-বেঠিকের পার্থক্যের প্রয়োজন হয় না। বরং এ সমস্ত বিষয়কে অতি তুচ্ছ ও খুঁটিনাটি বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। প্রচার করা হয় যে, এগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করবেন না। পক্ষান্তরে ঐ রাষ্ট্রক্ষমতা আয়ত্ত করাকেই ‘বড় ইবাদত’ গণ্য করা হয়।
.
(৪) লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে কেবল নেতা-কর্মীরাই মাত্র একটি ক্ষেত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয় (যদিও তা ত্রুটিপূর্ণ)। আর অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কে জানা-বুঝার বিষয়টি সম্পূর্ণ অবহেলিত থেকে যায়। এর প্রভাবে জনসাধারণও দ্বীন সম্পর্কে কোন ধারণা পায় না, বরং অজ্ঞই থেকে যায়।
.
(৫) কথিত জিহাদী জোশে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে বিভিন্ন ইতিহাস, স্মরণীয় ঘটনা, কল্পিত কেচ্ছ-কাহিনী, মিথ্যা বর্ণনার প্রতিই তাদের বেশী ঝোঁক থাকে। কুরআন-সুন্নাহ ও অন্যান্য মৌলিক বিষয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের ব্যাপকতা একেবারেই শূন্যের কোটায়।
.
(৬) ক্ষমতা অর্জনের উপর্যুপরি বাসনায় আবদ্ধ হয়ে সঠিকতা বিচারের বিবেক হারিয়ে ফেলে। এমনকি স্বার্থসিদ্ধির জন্য হক-বাতিল, বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারাম, ইসলামী, অনৈসলামী বিষয় সমূহের মধ্যে পার্থক্যেরও তোয়াক্কা করা হয় না। দলীয় স্বার্থে নিরপরাদ মানুষকে হত্যা করতেও তারা কুণ্ঠিত হয় না।
.
(৭) অবশেষে দ্বীন কায়েমে ব্যর্থ হলে বা বাধাপ্রাপ্ত হলে একদিকে হতাশাগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কারণ তাদের সন্তুষ্টির মূল মাধ্যম যেটা তা অর্জিত হয়নি। অন্যরাও নিরাশায় চোরাগলিতে সার্বক্ষণিক দংশিত হয়। দ্বীন কায়েমের ভুল ব্যাখ্যার কারণে তারা এভাবে উভয়টিই হারায়।
.
নেতৃত্ব বা রাষ্ট্রক্ষমতা এমন একটি আকর্ষণীয় বিষয় যে, ইসলামের নামে যত ভ্রান্ত দলের সূচনা হয়েছে, সবই ক্ষমতাকে লক্ষ্য করেই হয়েছে। কিন্তু শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব কতটুকু? এটা ভাবার বিষয়। যেমন- মানব জীবনের সবকিছুই দু’টি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। একটি আক্বীদা অন্যটি আমল অর্থাৎ বিশ্বাস ও কর্ম। সবকিছুই এ দু’য়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী কী? এ প্রশ্নের উত্তরে বেরিয়ে আসবে আক্বীদার মূল ছয়টি রুকন আর আমল বা ইসলামের মূল পাঁচটি রুকন, যা শরী‘আতের অন্যান্য বিষয়গুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাগ্রে পালনীয়; কিন্তু ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ঈমান ও ইসলামের রুকনের অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্য খারেজী ও শী‘আরা ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতাকে ঈমান ও ইসলামের রুকনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। কারণ এটা না করলে কেউ গুরুত্ব দিবে না। অতএব কেউ নিজে পালন করতে চাইলে সর্বাগ্রে প্রধান বিষয়গুলো পালন করবে। অনুরূপ কেউ দাওয়াতী কাজ করতে চাইলে সর্বাগ্রে ঐ প্রধান বিষয়গুলোর প্রতি দাওয়াত দিতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ এগুলো ছাড়া কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে মুসলিম হতে পারে না। নবী-রাসূলগণ তাই সর্বাগ্রে এ দিকেই দাওয়াত দিয়েছেন।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"নিশ্চয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে যখন কাফেরেরা ইসলাম গ্রহণ করত, তখন তাদের উপর ইসলামের বিধান জারী হত। ঐ অবস্থায় তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার কথা বলা হত না। আর এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কেউ বর্ণনাও করেননি। এ মর্মে কোন আম বর্ণনাও নেই, খাছ বর্ণনাও নেই। বরং আমরা দৃঢ়তার সাথে জানি যে, কাফেরেরা ইসলামে প্রবেশ করতে চাইলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাছে রাষ্ট্রীয় ইমামের কথা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং দ্বীনের আহকামের মধ্যে এটা কিভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? [দলীলঃ মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ ১/২৯ পৃষ্ঠা]

উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশে ‘রাজনীতিই ধর্ম’ এই দর্শনের আবির্ভাব ঘটলে আহলেহাদীছগণ সর্বাগ্রে তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অনুরূপ হানাফী মাযহাবের বিদ্বানগণও প্রতিবাদ জানান এবং এই দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেন।
[দলীলঃ আলোচনা দ্রষ্টব্য আল্লামা আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কুরায়শী, ‘একটি পত্রের জওয়াব’ ও মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ‘তিনটি মতবাদ’ বই দ্রষ্টব্য]
.
জানা আবশ্যক যে, ইসলামে দ্বীন ক্বায়েমের অব্যাহত ধারা নূহ (আঃ)-এর যুগ থেকেই চলে আসছে। এটা নতুন কিছু নয়। সর্বশেষ নবী হিসাবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তার বাস্তব রূপরেখা প্রদর্শন করে গেছেন। তাই সেই চিরন্তন ধারাকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন দর্শনের দিকে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
[ চলবে ]
#সুন্নাহর_পথযাত্রী___৯৮

Post a Comment

0 Comments