▌৩১শ অধ্যায়: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ


▌৩১শ অধ্যায়: সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ
·পরিষদ পরিচিতি:

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ (হাইআতু কিবারিল ‘উলামা আস-সা‘ঊদিয়্যাহ) একটি সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের পূর্ণনাম হলো “আর-রিআসাতুল ‘আম্মাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা (‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের সাধারণ পরিষদ)”। ১৯৭১ সালে এই পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পরিষদেরই শাখা প্রতিষ্ঠান হলো “আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা (‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি)”, যে প্রতিষ্ঠানটি আমাদের দেশে ‘সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড’ নামে পরিচিত। সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ মূলত ধর্মীয় গবেষণা, সরকারকে পরামর্শ প্রদান এবং সাধারণ মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ফাতাওয়া প্রদানের মতো নেক কাজের আঞ্জাম দিয়ে থাকে।

সাধারণত সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রধান হয়ে থাকেন। সর্বপ্রথম এই পরিষদের প্রধান হয়েছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর পরে এই পরিষদের প্রধান হন ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর পরে এই পরিষদের প্রধান হন বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)। অনেক বড়ো বড়ো ‘উলামায়ে কেরাম এই পরিষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন এবং এখনও আছেন।

এই পরিষদের সদস্য ছিলেন বা এখনও আছেন, এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম হলেন—ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী, ইমাম ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ আল-বাসসাম, ‘আল্লামাহ সালিহ বিন গুসূন, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন মানী‘, ‘আল্লামাহ সা‘দ আশ-শিসরী, ‘আল্লামাহ সুলাইমান আবা খাইল প্রমুখ। রাহিমাহুমুল্লাহু মিনহুম ওয়া হাফিযাহুমুল্লাহ। এই পরিষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হলো– www.alifta.net। সংগৃহীত: উইকিপিডিয়া।

·১ম বক্তব্য:
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ (হাইআতু কিবারিল ‘উলামা) স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে যে, ব্রাদারহুডের সাথে আমাদের মতবিরোধ মানহাজের ক্ষেত্রে, সাধারণ মাসআলাহ’র ক্ষেত্রে নয়। সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রধান গ্র্যান্ড মুফতী আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে “আল-মুফতী: ইখতিলাফুনা মা‘আল ইখওয়ান ফিল মানহাজ ওয়া লাইসাল উসূল” শিরোনামে একটি ছোট্ট আর্টিকেল রয়েছে, যেখানে ব্রাদারহুডের ব্যাপারে তাঁর এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে। আর্টিকেলটি নিম্নরূপ—

أكد سماحة مفتي عام المملكة ورئيس هيئة كبار العلماء وإدارة البحوث العلمية والإفتاء فضيلة الشيخ عبدالعزيز بن عبدالله آل الشيخ أن داعش والقاعدة والإخوان امتطوا الإسلام لآرائهم وأهوائهم وخداع الناس، ومن يدعو شبابنا إلى الانتظام معهم فقد أخطأ وضل سواء السبيل.
من جهة أخرى قالت هيئة كبار العلماء على لسان أمينها العام: إن البعض يعتقد أن خلافنا مع الإخوان في مسائل محددة ومعدودة، وهذا ليس بصحيح؛ فالخلاف معهم في المنهج قبل أن يكون في المسائل.
وأوضحت الهيئة أن زعزعة الأمن، والجناية على الأنفس، والممتلكات الخاصة والعامة تعتبر جريمة تستهدف الإفساد، وأن كل من شارك في عمل إرهابي، أو تستر، أو حرض، أو موّل، أو بغير ذلك من وسائل الدعم يستحق العقوبة الزاجرة الرادعة.
“সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রধান সম্মানিত শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ নিশ্চিত করেছেন যে, আইএস, আল-কায়েদা ও ব্রাদারহুড তাদের মতাদর্শ এবং বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডের জন্য ইসলামকে বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। যে ব্যক্তি আমাদের যুবকদেরকে তাদের দলে যোগদান করার দিকে আহ্বান করছে, সে ভুল করছে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।

অপরদিকে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ তার সেক্রেটারি জেনারেলের জবানে বলেছে, “কিছু লোক মনে করে, ব্রাদারহুডের সাথে আমাদের বিরোধ কিছু নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ মাসআলাহ’র ক্ষেত্রে। এটি সঠিক নয়। বরং মাসআলাহ’র ক্ষেত্রে বিরোধ হওয়ার আগে তাদের সাথে আমাদের বিরোধ মানহাজের ক্ষেত্রে।”

আর সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ স্পষ্ট করেছে যে, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা এবং জান ও নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট মালের অনিষ্ট সাধন করা অপরাধ হিসেবে পরিগণিত, যে অপরাধ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করে। আর যারাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, বা আত্মগোপন করে থাকে, অথবা অন্যায় কর্মে প্ররোচিত করে, বা এসবে অর্থ যোগান দেয়, অথবা অন্যান্য সমর্থন ও সহযোগিতার যোগান দেয়, তারাই ‘এসব কাজ থেকে নিবৃত্তিকারক শাস্তি’ পাওয়ার হকদার হয়।” [দ্র.: https://tinyurl.com/yaons74y (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– mufti.af.org.sa এর আর্টিকেল লিংক)]
·
২য় বক্তব্য:
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ তার সেক্রেটারি জেনারেলের জবানে স্পষ্টভাবে মুসলিম ব্রাদারহুডের সুন্নাহ বিরোধী মানহাজের কথা ব্যক্ত করেছে। সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ১৯শে জুন তারিখে সেক্রেটারি জেনারেলের কথা টুইট করা হয়েছে। টুইটটির টেক্সট হুবহু তুলে দেওয়া হলো—

ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺍﻹﺧﻮﺍﻥ ﻟﻴﺲ ﻟﻬﻢ ﻋﻨﺎﻳﺔ ﺑﺎﻟﻌﻘﻴﺪﺓ، ﻭﻻ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ، ﻭﻣﻨﻬﺠﻬﻢ ﻗﺎﺋﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺨﺮﻭﺝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﻭﻟﺔ؛ ﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺎﺕ، ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺎﺕ. # ﺍﻷﻣﻴﻦ _ ﺍﻟﻌﺎﻡ.
“মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘আক্বীদাহ ও সুন্নাহ’র ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। তাদের মানহাজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা প্রথম দিকে এমন না থাকলেও, শেষের দিকে এমন হয়েছে। # সেক্রেটারি _ জেনারেল।” [দ্র.: https://mobile.twitter.com/ssa_at/status/876755235749994496?lang=bn.]
·
এই পর্বের মাধ্যমে শেষ হলো ‘কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড’ সিরিজ। ফালিল্লাহিল হামদ। প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের এই ক্ষুদ্র দা‘ওয়াতী প্রচেষ্টাকে কবুল করে নিন এবং লৌকিকতার পঙ্কিলতা থেকে একে উত্তমরূপে হেফাজত করুন। আর যাঁরা এই সিরিজ লিখে, লেখককে উৎসাহ দিয়ে, সহযোগিতা করে এবং সিরিজের লেখাগুলো প্রচার করে সালাফী দা‘ওয়াতের একটি মহৎ খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, আল্লাহ তাঁদের সবাইকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari (সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)

Post a Comment

0 Comments