সুনার আলোকে ইমাম মালিকের হাত বাধার স্থান

Image may contain: text
মাদীনাহ’র প্রখ্যাত ‘আলিম, ফাদ্বীলাতুশ-শাইখ, আল-ফাক্বীহ, আল-উসূলী ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়,
“আমাদের কিছু ভাই সালাতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তাদের হাত দুই পাশে ছেড়ে রাখেন। যখন আমরা তাদের হাত তাদের বুকে স্থাপন করতে বলি তারা বলেন, ‘আমাদের মাযহাব হলো মালিকী, আমরা হাত দুই পাশে ছেড়ে রেখে সালাত আদায় করি।’ ইমাম মালিক কি তার দুই হাত দুই পাশে ছেড়ে রেখে সালাত আদায় করতেন?”
শাইখ: “কোন সন্দেহ নেই – হে ভাইয়েরা – সুন্নাহ হলো সালাতের সময় বাম হাতের ওপর ডান হাত বুকের ওপর রাখা। ইমাম মালিক – রাহিমাহুল্লাহ – সুন্নাহর ইমামদের একজন, এবং এই উম্মাহর অত্যন্ত গুনসম্পন্ন একজন ‘আলিম। তিনি সুন্নাহকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থান দিতেন। তিনি বলতেন, “সবার কথা-ই গ্রহণ অথবা বর্জন করা যাবে শুধু এই কবরবাসীর ছাড়া’’, এবং তিনি (নাবী ﷺ এর) কবরের দিকে ইশারা করতেন কারণ তিনি মাদীনাহতে নাবী ﷺ-এর মাসজিদে ছিলেন। তাঁর ইখলাসপূর্ণ নিয়তের কারণে আল্লাহ তাকে অনুসারী দিয়েছেন ও তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং তার পরবর্তীরা তার জন্য দু‘আ করে, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন এবং মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে পুরস্কৃত করুন।
ইমাম মালিক মুয়াত্তা-তে বর্ণনা করেন, যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের সময় তার ডান হাত তার বাম হাতের ওপর রাখতেন। এবং ইমাম মালিকের রীতি ছিলো যদি তিনি মনে করতেন কোন কারণবশত কোন একটি হাদিসের ওপর ‘আমাল করা হবে না, বর্ণনাটির শেষে তিনি বলতেন, “এবং আমাদের ‘আমাল এই অনুযায়ী নয়”, অর্থাৎ মাদীনাহর ‘উলামাদের ‘আমাল এই অনুযায়ী ছিলো না। তো আমরা কি লক্ষ্য করে দেখেছি যে এই হাদিসটির শেষে ইমাম মালিক এটা বলেছেন? উত্তর হলো, ‘না।’ তিনি এটা বলেননি। এবং এভাবেই আমরা জানতে পারি যে, ইমাম মালিক এই হাদিস অনুযায়ী ‘আমাল করেছেন। যদি কেউ আমাদের বলে যে, “তাহলে কেন ইমাম মালিকের ব্যাপারে এটা বলা হয়েছে যে তিনি দুই পাশে হাত ছেড়ে দিয়ে সালাত আদায় করতেন?’’ আমি বলি: আল-হাফিয ইবনু ‘আব্দিল বার আল-মালিকী আত-তামহীদে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম মালিক – রাহিমাহুল্লাহ – তাঁকে বিচারপতির পদে আসীন হতে অনুরোধ করা হয়েছিলো এবং তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কারণ যাকে বিচারপতি নিয়োগ করা হলো তাকে ছুরি ছাড়া জবাই করা হলো। তো তিনি বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে অস্বীকৃতি জানান, সুতরাং তাকে প্রহার করা হয় এবং তার বাহু অক্ষম হয়ে যায়। ফলস্বরূপ তিনি তার বাহু উত্তোলনে সক্ষম ছিলেন না। সুতরাং যারা তাকে এভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছে, (তারা) এটি প্রচার করেছে এমনটা ভেবে যে এটাই তার মাযহাব, যদিও এটি আসলে তার মাযহাব ছিলো না। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এর জীবনের শেষ দিকে তিনি জামা'আতে সালাত আদায় করতে যেতেন না। তো আমরা কি এটা বলতে পারি যে ইমাম মালিকের মাযহাব হলো একজন লোক জামা'আতে সালাত আদায় করতে যাবে না? না, কখনোই না। বরং ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) তার জীবনের শেষের দিকে একটি রোগে আক্রান্ত হন যেটা তাকে মাসজিদে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। তিনি বলতেন, “অজুহাতগ্রস্ত সবাই তার অজুহাত প্রকাশ করতে সক্ষম নয়।” এর কারণ হলো তার অজুহাতটি মানুষের কাছে গোপন ছিলো এবং এটি বলার মতো ছিলো না।
অতএব, আমরা বলি, আমাদের বিশ্বাস হলো, ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এর মাযহাব হলো সালাতের সময় বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখা, কারণ তিনি এটা তার মুয়াত্তা-তে বর্ণনা করেছেন। ইমাম চতুষ্টয়, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ এবং ইমাম আহমাদ সবাই বলেছেন, “হাদীস সাহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব।” আর ইমাম মালিক সালাতে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখার হাদীস সাহীহ সাব্যস্ত করেছেন, এবং এর প্রমাণ হলো তিনি এটি মুয়াত্তা-তে বর্ণনা করেছেন। একারণে আমরা বলি: সালাতে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখা এই মহান ইমামের মাযহাব। আল্লাহ তার ওপর রহম করুন ও তাকে ক্ষমা করুন।”
https://youtu.be/yZzj2BEgiLQ
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম
fb.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments