▌শাসক'কে অবজ্ঞা, অত:পর...
.
প্রখ্যাত সাহাবী মুগীরা ইবনে শুবা ছিলেন, ইরাকের গভর্নর। এখানকার লোকেরা তার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করত- কিন্তু তিনি কখনোই নিজের অসম্মানের জন্য বদলা নিতেন না।
একবার কোনও এক কর্মকর্তা তাঁকে বললেন, আপনি এদের সাহস বড়ো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মুগীরা রা. বললেন, আমি সবরের উপর রয়েছি।
কিন্তু এরা নিজেরাই নিজেদের হত্যা করে ফেলছে। কারণ আমার পর যেই গভর্নর হয়ে আসুক, সে তাদের প্রতি রূঢ় হবে। পরে দেখা গেল, যিয়াদ এল গভর্নর হয়ে।
ইসলামী ভূ-শাসনের ইতিহাসে অন্যতম কঠোর ব্যক্তিত্ব। দেখা গেল সেইসব বিদ্রোহীদের সকলেই তার সময়ে নিহত হল। শুধু এতটুকুই নয়, যিয়াদ নিজের কঠোর চরিত্রের ফলে জুলুমও করতে শুরু করল।
সে খলিফার কাছে চিঠি লিখে জানাল, আমি এতদিন আমার বাঁ হাতের দ্বারা ইরাককে সোজা করেছি, এবার আমার ডানহাতকে হিজাজের দিকে প্রসারিত করতে চাই। অনুমতিও পেল।
লোকেরা আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের কাছে গিয়ে তাঁর জুলুমের ব্যাপারে বলল, আব্দল্লাহ ইবনে উমার রা. পশ্চিম দিকে ফিরলেন, রবের কাছে বদদোয়া করলেন।
বললেন, ‘লোকেদের এর জুলুম থেকে হিফাযত করো’। দোয়া কবুল হল। যিয়াদের ডানহাতে একটা ফোঁড়া হল। সেই ফোঁড়া থেকে পচন ধরল। যিয়াদ মারা গেলেন। *
লোকেরা যে ব্যবহার মুগীরা ইবনে শুবা রা. এর সাথে করেছিল- সেটার পরিণতিতে তাঁদের জন্য শাস্তি হিসেবে আল্লাহ্ যিয়াদকে চাপিয়ে দিলেন। আবার যিয়াদ যখন জুলুম করতে শুরু করল।
তখন মাজলুমের বদদোয়ায় যিয়াদও ভয়াবহ পরিণতির শিকার হলেন। দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংস হল। এই দোয়া কবুল হবার আগ পর্যন্ত তাঁকে অবকাশ দিয়েছিলেন।
সে শিক্ষা নেয় নি, তওবার পথে ফিরে আসে নি। ইরাকবাসীদের ব্যাপারেও একই কথা। আবার কুফাবাসীরা আলী রা. এর সাথে যে প্রতারণা করেছিল, তেমনিভাবে হুসাইন রা. এর সাথেও।
আলী রা. তাঁদের বিশৃঙ্খলায় ক্ষুব্ধ হয়ে বদদোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহ্ আপনি কুফাবাসীর উপর বনু সাক্বাফের কোনও গোলামকে চাপিয়ে দিন’।
সেই বদদোয়ার ফল ছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আস-সাক্বাফির কুফার গভর্নর হয়ে যাওয়া। হাজ্জাজের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই কুফাবাসীর জন্য অবকাশ ছিল তওবা করার, তা না করায় তাঁদের উপর জালিম শাসক চেপে বসে।
এরপর হাজ্জাজ নিজেই যখন জুলুমের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছায়, এর পূর্ব পর্যন্ত তারও অবকাশ ছিল। কিন্তু তিনিও তওবার পথে আসেন নি। একদিন প্রখ্যাত তাবেয়ী সাইদ বিন যুবাইরকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে।
এ খবর হাসান বসরির কাছে পৌঁছালে তিনি বদদোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহ্ তুমি হাজ্জাজকে ধংস করো’। এরপর হাজ্জাজের পেট সংক্রমিত হয়। পেটের ভেতর কিড়ে জন্ম নেয়। দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর তিন দিনের মধ্যেই মারা যান’। **
এই ঘটনাগুলো এই জন্যে বললাম যে, এটা আল্লাহ্র একটা সুনান অর্থাৎ রীতি, যখন লোকেরা পাপে নিমজ্জিত হয়, তখন আল্লাহ্ শাস্তি হিসেবে জালিম শাসক চাপিয়ে দেন।
আর যখন শাসক জুলুমের মাত্রা অতিক্রম করে তখন রবের শাস্তি, মাজলুমের হাহাকার তার ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহ্ পাপীদের ব্যাপারে সাময়িক অবকাশের কথা কোরআনে জানিয়েছেন, সূরা ইব্রাহিমে।
আবার পরিণতির কথা বলে সাবধান করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ শিক্ষা নেয় না। আমরা যখন জুলুমের শিকার হই, তখন এই চিন্তা আমরা করি না যে, আমাদেরই পাপের ফসল এসব।
নিজেরা পাপ থেকে ফিরে রবের দিকে প্রত্যাবর্তন না করলে এর থেকে মুক্তি মিলবে না। আবার জালিমও এটা ভুলে যায়, মাজলুমের হাহাকার আল্লাহ্ ফিরিয়ে দেয় না। পতন অবশ্যম্ভাবী।
সুতরাং দুনিয়াব্যাপী যত স্তরে মুসলমান আজ জুলুমের শিকার, তাঁদের জন্য কল্যাণের পথ একটাই, রবের কাছে নিজেদের পাপের ব্যাপারে তওবা করা আর চেষ্টা করা এবং রবের সাহায্য প্রার্থনা করা।
বাকি কাজ তো আল্লাহই আঞ্জাম দিবেন। আফসোসের ব্যাপার, আমরা জুলুম থেকে মুক্তি চাই, অথচ যে কারণে জালিম আমাদের উপর চেপে বসেছে সেই গুনাহের দিকে আরও অধিক ধাবিত হই!
পরিপূর্ণ ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যাতীত আমাদের আর কোনও মুক্তির পথ নাই। পথ একটাই আর তা হচ্ছে, তাকওয়ার, তওবার। মুসলমানের বিজয় এই পথ ছাড়া অসম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ
*আল কামিল ফিত-তারিখ।
*আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া।
লেখকঃ
আরজু আহমাদ।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]
► ইছলাহ্ পেজের সঙ্গে থাকুন, সত্যের সঙ্গে চলুন।
► https://www.facebook.com/ichlah/
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
.
প্রখ্যাত সাহাবী মুগীরা ইবনে শুবা ছিলেন, ইরাকের গভর্নর। এখানকার লোকেরা তার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করত- কিন্তু তিনি কখনোই নিজের অসম্মানের জন্য বদলা নিতেন না।
একবার কোনও এক কর্মকর্তা তাঁকে বললেন, আপনি এদের সাহস বড়ো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মুগীরা রা. বললেন, আমি সবরের উপর রয়েছি।
কিন্তু এরা নিজেরাই নিজেদের হত্যা করে ফেলছে। কারণ আমার পর যেই গভর্নর হয়ে আসুক, সে তাদের প্রতি রূঢ় হবে। পরে দেখা গেল, যিয়াদ এল গভর্নর হয়ে।
ইসলামী ভূ-শাসনের ইতিহাসে অন্যতম কঠোর ব্যক্তিত্ব। দেখা গেল সেইসব বিদ্রোহীদের সকলেই তার সময়ে নিহত হল। শুধু এতটুকুই নয়, যিয়াদ নিজের কঠোর চরিত্রের ফলে জুলুমও করতে শুরু করল।
সে খলিফার কাছে চিঠি লিখে জানাল, আমি এতদিন আমার বাঁ হাতের দ্বারা ইরাককে সোজা করেছি, এবার আমার ডানহাতকে হিজাজের দিকে প্রসারিত করতে চাই। অনুমতিও পেল।
লোকেরা আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের কাছে গিয়ে তাঁর জুলুমের ব্যাপারে বলল, আব্দল্লাহ ইবনে উমার রা. পশ্চিম দিকে ফিরলেন, রবের কাছে বদদোয়া করলেন।
বললেন, ‘লোকেদের এর জুলুম থেকে হিফাযত করো’। দোয়া কবুল হল। যিয়াদের ডানহাতে একটা ফোঁড়া হল। সেই ফোঁড়া থেকে পচন ধরল। যিয়াদ মারা গেলেন। *
লোকেরা যে ব্যবহার মুগীরা ইবনে শুবা রা. এর সাথে করেছিল- সেটার পরিণতিতে তাঁদের জন্য শাস্তি হিসেবে আল্লাহ্ যিয়াদকে চাপিয়ে দিলেন। আবার যিয়াদ যখন জুলুম করতে শুরু করল।
তখন মাজলুমের বদদোয়ায় যিয়াদও ভয়াবহ পরিণতির শিকার হলেন। দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংস হল। এই দোয়া কবুল হবার আগ পর্যন্ত তাঁকে অবকাশ দিয়েছিলেন।
সে শিক্ষা নেয় নি, তওবার পথে ফিরে আসে নি। ইরাকবাসীদের ব্যাপারেও একই কথা। আবার কুফাবাসীরা আলী রা. এর সাথে যে প্রতারণা করেছিল, তেমনিভাবে হুসাইন রা. এর সাথেও।
আলী রা. তাঁদের বিশৃঙ্খলায় ক্ষুব্ধ হয়ে বদদোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহ্ আপনি কুফাবাসীর উপর বনু সাক্বাফের কোনও গোলামকে চাপিয়ে দিন’।
সেই বদদোয়ার ফল ছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আস-সাক্বাফির কুফার গভর্নর হয়ে যাওয়া। হাজ্জাজের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই কুফাবাসীর জন্য অবকাশ ছিল তওবা করার, তা না করায় তাঁদের উপর জালিম শাসক চেপে বসে।
এরপর হাজ্জাজ নিজেই যখন জুলুমের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছায়, এর পূর্ব পর্যন্ত তারও অবকাশ ছিল। কিন্তু তিনিও তওবার পথে আসেন নি। একদিন প্রখ্যাত তাবেয়ী সাইদ বিন যুবাইরকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে।
এ খবর হাসান বসরির কাছে পৌঁছালে তিনি বদদোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহ্ তুমি হাজ্জাজকে ধংস করো’। এরপর হাজ্জাজের পেট সংক্রমিত হয়। পেটের ভেতর কিড়ে জন্ম নেয়। দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর তিন দিনের মধ্যেই মারা যান’। **
এই ঘটনাগুলো এই জন্যে বললাম যে, এটা আল্লাহ্র একটা সুনান অর্থাৎ রীতি, যখন লোকেরা পাপে নিমজ্জিত হয়, তখন আল্লাহ্ শাস্তি হিসেবে জালিম শাসক চাপিয়ে দেন।
আর যখন শাসক জুলুমের মাত্রা অতিক্রম করে তখন রবের শাস্তি, মাজলুমের হাহাকার তার ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহ্ পাপীদের ব্যাপারে সাময়িক অবকাশের কথা কোরআনে জানিয়েছেন, সূরা ইব্রাহিমে।
আবার পরিণতির কথা বলে সাবধান করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ শিক্ষা নেয় না। আমরা যখন জুলুমের শিকার হই, তখন এই চিন্তা আমরা করি না যে, আমাদেরই পাপের ফসল এসব।
নিজেরা পাপ থেকে ফিরে রবের দিকে প্রত্যাবর্তন না করলে এর থেকে মুক্তি মিলবে না। আবার জালিমও এটা ভুলে যায়, মাজলুমের হাহাকার আল্লাহ্ ফিরিয়ে দেয় না। পতন অবশ্যম্ভাবী।
সুতরাং দুনিয়াব্যাপী যত স্তরে মুসলমান আজ জুলুমের শিকার, তাঁদের জন্য কল্যাণের পথ একটাই, রবের কাছে নিজেদের পাপের ব্যাপারে তওবা করা আর চেষ্টা করা এবং রবের সাহায্য প্রার্থনা করা।
বাকি কাজ তো আল্লাহই আঞ্জাম দিবেন। আফসোসের ব্যাপার, আমরা জুলুম থেকে মুক্তি চাই, অথচ যে কারণে জালিম আমাদের উপর চেপে বসেছে সেই গুনাহের দিকে আরও অধিক ধাবিত হই!
পরিপূর্ণ ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যাতীত আমাদের আর কোনও মুক্তির পথ নাই। পথ একটাই আর তা হচ্ছে, তাকওয়ার, তওবার। মুসলমানের বিজয় এই পথ ছাড়া অসম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ
*আল কামিল ফিত-তারিখ।
*আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া।
লেখকঃ
আরজু আহমাদ।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]
► ইছলাহ্ পেজের সঙ্গে থাকুন, সত্যের সঙ্গে চলুন।
► https://www.facebook.com/ichlah/
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
0 Comments