তারাবীহ সালাত৮ রাকাত, কোন ক্রমেই তা ২০ রাকাত নয়।


তারাবীহ ৮ রাকাত, কোন ক্রমেই তা ২০ রাকাত নয়।
তারাবীহ ৮ রাকাত, কোন ক্রমেই তা ২০ রাকাত নয়।
রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত।রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকেতারাবীহএবং রামাযান ও অন্যান্যসময়ে শেষরাতে পড়লে তাকেতাহাজ্জুদবলা হয়।
তারাবীহ :    মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ(রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন)অর্থ :সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসেতারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাকআত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح)তারা-বীহঅর্থ :প্রশান্তির বৈঠকসমূহ(আল-মুনজিদ)
তাহাজ্জুদ :    মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা।সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকেজেগে ওঠা বা রাত্রিজেগে ছালাত আদায় করা(আল-মুনজিদ)
উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুললায়েল সবকিছুকে এক কথায় সালাতুল লাবা রাত্রির নফল ছালাতবলা হয়।রামাযানে রাতেরপ্রথমাংশে যখন জামাআত সহ এই নফল ছালাতের প্রচলন হয়, তখন প্রতি চার রাকআতঅন্তর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হত। সেখান থেকে তারাবীহনামকরণ হয়(ফাৎহুল বারী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)এই নামকরণের মধ্যেই তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে, তারাবীহ প্রথম রাতে একাকী/জামাআত সহ এবং তাহাজ্জুদ শেষরাতেএকাকী পড়তে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদদুটিই পড়েছেন মর্মে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না  মিরআত ৪/৩১১ পৃঃ, ‘ছালাতঅধ্যায়-৪, ‘রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ-৩৭
রাত্রির ছালাতের ফযীলত :    রাত্রির ছালাত বা ছালাতুল লায়েলনফল হলেও তা খুবই ফযীলতপূর্ণ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হল রাত্রির (নফল) ছালাত  মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯ ছওমঅধ্যায়-৭, ‘নফল ছিয়ামঅনুচ্ছেদ-৬
তিনি আরও বলেন,
আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ারআসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়াদেব? কে আছ আমারকাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমিতাকে ক্ষমা করে দেব? এভাবে তিনি ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহবান করেন
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৩, ‘ছালাতঅধ্যায়-৪, ‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দানঅনুচ্ছেদ-৩৩; মুসলিম হা/১৭৭৩
০১।      তারাবীহর জামাআত :রাসূলুল্লাহ (সঃ) রমযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি    মসজিদেজামাআতের   সাথে তারাবীহরসালাত আদায় করেছেন। প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশপর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ওমুল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সালাত আদায় করেন।
আবুদাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/১২৯৮ ছালাতঅধ্যায়-৪, ‘রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ-৩৭
পরের রাতে মুছল্লীগণ তাঁর কক্ষের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি যে, এটি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায়কি-না আর যদি ফরয হয়ে যায়, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে পারবে না’…  মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৯৫ রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ-৩৭
তারাবীহর ফযীলত :রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তিরামাযানের রাত্রিতে ঈমানের সাথেও ছওয়াবের আশায় রাত্রির ছালাত আদায় করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফকরা হয়মুসলিম, মিশকাত হা/১২৯৬ রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ-৩৭
০২।      বন্ধ হবার পরে তারাবী পুনরায় চালু হওয়া
সম্ভবত: নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী খেলাফতের উপরে আপতিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ওঅন্যান্য ব্যস্ততার কারণে ১ম খলীফা হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)-এরসংক্ষিপ্ত খেলাফতকালে (১১-১৩ হিঃ) তারাবীহর জামাআত পুনরায় চালু করা সম্ভবপর হয়নি। ২য়খলীফা হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) স্বীয় যুগে (১৩-২৩ হিঃ) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতারকারণে এবং বহুসংখ্যক মুছল্লীকে মসজিদে বিক্ষিপ্তভাবে উক্ত ছালাত আদায় করতে দেখেরাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া সুন্নাত অনুসরণ করে তাঁর খেলাফতের ২য় বর্ষে ১৪হিজরী সনে মসজিদেনববীতে ১১ রাকআতে তারাবীহর জামাআত পুনরায় চালু করেন  মিরআত ২/২৩২ পৃঃ; , ৪/৩১৫-১৬ ও ৩২৬ পৃঃ
০৩   রাকআত সংখ্যা
সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদিসের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ(সঃ)  থেকে ৩ ধরনের সংখ্যা বর্ননা করা হয়েছে।
ক)   ১১ রাকাতঃ-  আয়িশাহ(রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে ও ভংগিতে বর্নিত হয়েছে যে, নাবী(সঃ) রাত্রিকালে ইশার পরের ২ রাকাত ও ফাজরের পূর্বের ২ রাকাত সুন্নাত ছাড়া মোট ১১ রাকাত সলাত আদায় করতেন।এক বর্ননায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ(সঃ) রমাযান ও অন্যান্য মাসেও রাত্রে ১১ রাকাতের বেশী নফল আদায় করতেন না। বুখারী-১১৪৭,১১৩৯,৯৯৪,২০১৩  মুসলিম- সলাতুল্লাইল ওয়াল বিতর-৬/১৬, ১৭ ,২৭
বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩য় খন্ড- হাদীস নং- ১৫৯২-১৫৯৭,  বুখারী আজিজুল হক- ১ম খন্ড-হাদিস নং-৬০৮,  বুখারী আধুনিক প্রকাশনী-১ম খন্ড-হাদিস-১০৭৬-দ্বিতীয় খন্ড-হাদীস-১৮৭০,  মিশকাত-নূর মোহাম্মাদ আযমী-৩য় খন্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য বই-২য় খন্ড হাদিস নং-১২২৮,   হাদিস শরীফ  মওলানা আবদুর রহীম-২য় খন্ড-৩৯০ পৃষ্টা,  বুখারী-১ম খন্ড-১৫৪-২৬৯ পৃষ্ঠা,  মুসলিম-২৫৪ পৃষ্ঠা,আবু দাউদ-১ম খন্ড-১৮৯ পৃষ্ঠা,নাসাঈ-১৪৮ পৃষ্ঠা,  তিরমিযী-৯৯ পৃষ্ঠা,  ইবনু মাজা-৯৭-৯৮ পৃষ্ঠা,  মুয়াত্তা মালিক-১৩৮ পৃষ্ঠা, সহীহ ইবনে খুজায়মা-৩য় খন্ড-৩৪১ পৃষ্ঠা,যাদুল মাআদ- ১ম খন্ড-১৯৫ পৃষ্ঠা, মুত্তাফাক্ব আলাইহ,   মিশকাত হা/১১৮৮ রাত্রির ছালাতঅনুচ্ছেদ-৩১ বুখারী ১/১৫৪ পৃঃ, হা/১১৪৭;  মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ, হা/১৭২৩;    তিরমিযী হা/৪৩৯;    আবুদাঊদ হা/১৩৪১;    নাসাঈ হা/১৬৯৭;   মুওয়াত্ত্বা, পৃঃ ৭৪, হা/২৬৩;  আহমাদ হা/২৪৮০১;   ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১১৬৬;    বুলূগুলমারাম হা/৩৬৭;    তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৪৩৭;   বায়হাক্বী ২/৪৯৬ পৃঃ, হা/৪৩৯০;    ইরওয়াউল গালীল হা/৪৪৫-এর ভাষ্য, ২/১৯১-১৯২;    মিরআতুল মাফাতীহ হা/১৩০৬-এর ভাষ্য, ৪/৩২০-২১
খ)    ১৩ রাকাতঃ-   ইবনু আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাত্রিকালে রসুলুল্লাহ(সঃ) ১৩ রাকাত নফল সলাত আদায় করতেন।  বুখারী-১১৩৮, তিরমিযী-(তুহফাসহ)-৪৪০
ইবনু আব্বাসের(রাঃ) হাদীসে ১১ রাকাতের চেয়ে ২ রাকাত বেশী পাওয়া যায়।বাড়তি এই ২ রাকাতের  ব্যাখ্যা বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়।নাসাঈ গ্রন্থে ইবনু আব্বাসের(রাঃ) হাদীসের ১৩ রাকাতের বর্ননা এসেছে। ৮রাকাত রাতের সলাত , ৩ রাকাত বিতর ও ২ রাকাত ফজরের পূর্বের সুন্নাত। (নাসাঈ-৩/২৩৭,ফাতহুল বারী-২/৫৬২)।   ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত ধরে আয়েশাও(রাঃ) ১৩ রাকাতের কথা বর্ননা করেছেন। বুখারী-১১৪০, মুসলিম- সলাতুল লাইলি ওয়াল বিতর-৬/১৭-১৮ ,ফাতহুল বারী-২/৫৬২,  বুখারীতে আয়েশা(রাঃ)এর  কোন কোন বর্ননায় ১১ ও ২ রাকাতকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে। বুখারী-৯৯৪,১১৪০
       যে সমস্ত বর্ননায় ১৩ রাকাতের বিস্তারিত বিবরন আসেনি, সেগুলো  এশার ২ রাকাত কিংবা ফজরের সুন্নাত উদ্দেশ্যে।  ফাতহুল বারী-২/৫৬২  কোন কোন বর্ননায় এসেছে রাসুলুললাহ(সঃ) রাত্রের সলাত উদ্বোধন করতেন, হালকা ২ রাকাত সলাত আদায়ের মাধ্যমে।হতে পারে এই ২ রাকাত নিয়ে ১৩ রাকাত।কিন্তু এই ২ রাকাত সলাত বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে এশার সলাত বলেই মনে হয়(‘সালাতুত তারাবী-আলবানী১৭ নং টীকা)
গ)    ১৫ রাকাতঃ-     ঈশার পরের ও ফজরের পূর্বের ২ রাকাত সুন্নাত সলাতসহ আয়েশা ও ইবনু আব্বাস(রাঃ) উভয়েই ১৫ রাকাত বর্ননা করেছেন। সহীহ হাদিস সমূহের মাধ্যমে ও পূর্বাপর সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহগনের মতে রাসুলুল্লাহ(সঃ) ১১ বা এশা/ফজরের সুন্নাত  মিলিয়ে ১৫ রাকাতের বেশী রাতের সলাত পড়েননি। রমজান সম্পর্কিত রিসালাহ – আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম
ঘ)      সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন,   খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হযরত উবাই ইবনু কাব ও তামীমদারী (রাঃ)-কে রামাযানের রাত্রিতে ১১ রাকআত ছালাত জামাআত সহকারে আদায়েরনির্দেশ প্রদানকরেন। এই ছালাতফজরের প্রাক্কাল (সাহারীরপূর্ব) পর্যন্ত দীর্ঘ হ
 মুওয়াত্ত্বা (মুলতান, পাকিস্তান: ১৪০৭/১৯৮৬) ৭১ পৃঃ,    রামাযানে রাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৩০২ রামাযান মাসেরাত্রি জাগরণঅনুচ্ছেদ-৩৭; মিরআত হা/১৩১০, ৪/৩২৯-৩০, ৩১৫ পৃঃ;    বায়হাক্বী ২/৪৯৬, হা/৪৩৯২ত্বাহাভী শরহ মাআনিল আছার হা/১৬১০
০৪।     ৮ রাকাত  বনাম ২০ রাকাত তারাবী        
কেউ বলতে পারেন, যদি ১১ বা ১৩-এর অধিক রাকাত তারাবীহ পড়া সহীহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত না হয়, বরং সহীহ সাব্যস্ত হাদীসের বিপরীত হয়, তবে সউদী আরবে মক্কা-মদীনার মসজিদ দুটোতে কেন ২০ রাকাত পড়ানো হয় ? এটা সত্য কথা। তবে মক্কার মসজিদুল হারাম,মাসজিদে আয়েশাসহ ২/৩ টা মসজিদ ও মদীনার মসজিদে নব্বী,কুবা ও কিবলাতাইন এবং বিভিন্ন শহরে ২/১ টা মসজিদ করে মসজিদ ছাড়া সৌদী আরবের হাজার হাজার মসজিদে সহীহ হাদীস অনুযায়ী ১১ রাকাত পড়ানো হয়। ২০ রাকাত সহীহ হাদীসে না থাকলে, বাইতুল্লাহ /মসজিদে নব্বীতে কিভাবে পড়ানো হয় ?
      জবাব হল, ৮০১ হিজরী থেকে শুরু করে, ১৩৪৩ হিজরী পর্যন্ত মোট  ৫৪২ বছর ধরে মক্কার “মসজিদুল হারামে”  “১ সালাত ৪ জামাতে” আদায় করার  বিদ’য়াত যদি এতদিন চলতে পারে, তবে তারাবীর  ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের বিপরীত আমল চালু থাকা কোন ব্যাপার না। এখন থেকে  মাত্র ৭০ বছর আগে “৪ জামাত” উঠে গেছে, সহীহ হাদীস অনুযায়ী “১ জামাত”  আদায় করা হচ্ছে। তেমনি হঠাৎ হয়তো এমন একজন সংস্কারক আসবেন, যিনি  সঠিকটা চালু করবেন।কিন্তু  ৫৪২ বছরে কি বিশাল পরিমান মানুষ, এই বিদ’য়াতী আমল করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেকাজেই আমাদের সঠিক হাদীস অনুসরন করা উচিৎ, মক্কা-মদীনা নয়
০৫।     ২০ রাকাত কিভাবে চালু হোল ?
২০ রাকাত চালু হবার পিছে প্রধানতঃ ৩ টা কারন ছিলঃ-
ক)      দীর্ঘ কিয়ামে কষ্ট ও রাকাত বাড়ানো।
     বর্ধিত রাকআত সমূহ পরবর্তীকালে সৃষ্ট। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাত্রির ছালাত ১১ বা ১৩ রাকআত আদায়করতেন। পরবর্তীকালে মদীনার লোকেরা দীর্ঘ ক্বিয়ামে দুর্বলতা বোধ করে। ফলেতারা রাকআত সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে, যা ৩৯ রাকআত পর্যন্ত পৌঁছে যায়  ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূফাতাওয়া (মক্কা: আননাহযাতুল হাদীছাহ ১৪০৪/১৯৮৪), ২৩/১১৩।
খ)      বেশী নেকীর আশায় ‘রাতের সালাত দুই দুই করে’ এই হাদীসের অন্য ব্যাখ্যা।
      অনেক  বিশেষজ্ঞ, ২৩ রাকআত পড়েন ও বলেন শত রাকআতের বেশীও পড়াযাবে, যদি কেউ ইচ্ছাকরে। দলীল হিসাবে ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীছটি পেশ করেনযে, ‘রাত্রির সালাত দুই দুই (مَثْنَىمَثْنَى) করে। অতঃপর ফজর হয়ে যাবারআশংকা হলে একরাকআত পড়। তাতে পিছনের সব ছালাত বিতরে (বেজোড়ে) পরিণত হবে
এখানে,  ২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত পড়ার কথা বলা হয়েছে, মহানবী(সঃ) যতটুকু পড়েছেন। ২ রাকাত করে অসীম রাকাত নামাজ পড়ার কথা বলা হয়নি। আর পরবর্তীতে মদীনার মানুষই এটাকে  সবোর্চ্চ রাকাতে নিয়ে যায়পরে বর্তমান রাজতন্ত্র  এটাকে  ২০ রাকাতে পরিনত করেন। কারন এটা হতে পারে,  ৩৯ কিংবা ৪১ রাকাত এমন ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে, সেখান থেকে ৮ রাকাতে প্রত্যাবর্তন হয়তো তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল।  তবে রাজতাতান্ত্রিক শাসক গোষ্ঠি যে এটা খারাপ উদ্দেশ্যে করেছে, এমন না(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৪, ‘বিতরঅনুচ্ছেদ-৩৫)উপরের ব্যাখ্যা সঠিক হলে, রাকআতের কোনসংখ্যাসীমা নেই এবং যত রাকআত খুশী পড়া যাবে, এটা সঠিক না
গ)      ’২০ রাকাত তারাবী’  ও কিছু তথ্য ।
         সমস্ত তথ্য এক করার পর এটা বুঝা যায় যে, রাসুল(সঃ)  তারাবী প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন ও সেটা ছিল ৮ রাকাত । ২০ রাকাতের সমস্ত হাদীস অত্যন্ত দূর্বল।সেই বর্ননা মতে, তারপরও লোকেরা বাসায় ফিরে গিয়ে নিজে নিজে কিছু সালাত আদায় করতেন,তবে সেটা পরিমান বুঝার উপায় নাই।তার আগে, মসজিদে নিজে নিজে অথবা ছোট ছোট করে জামাতের মাধ্যমে তারাবী পড়ে নিতেন। হযরত উমর(রাঃ) ২০ রাকাত পড়ার প্রচলন করেন ও সবাই তার সাথে ঐক্যমত পোষন করেন।
        এটা হযরত ওমর(রাঃ),ওসমান(রাঃ) ও হযরত আলী(রাঃ) এই ৩ খলীফার সময় পর্য্যন্ত চলতে থাকে। এই কারনে ইমাম আবু হানিফা(রহ),ইমাম(শাফেয়ী), ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহ) ২৯ রাকাত সমর্থন করেছিলেন।ইমাম মালিকের একটি রায় এর সপক্ষে রয়েছে।হযরত উমার ইবনে আব্দুল আজীজ(রহ) ২০ রাকাতের পরিবর্তে ৩৬ রাকাত পড়া শুরু করেছিলেন, যদিও সেটা,খলিফা ও সুন্নাহ অনুযায়ী সঠিক ছিল না। বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল, মক্কার বাহিরের লোকেরা যেন, মক্কার সমান  সওয়াবের অধিকারী হয়। মক্কার লোকদের নিয়ম ছিল, তারা তারাবীর ৪ রাকাতের পর, তারা কাবা ঘর তাওয়াফ করে নিত।এই দুজন বুজুর্গ তাওয়াফের পরিবর্তে, সালাত শুরু করে দিল।এই নিয়ম যেহেতু মদীনায় চালু ছিল,আর ইমাম মালেক(রাঃ) মক্কাবাসীদের কাজকে সনদ মনে করতেন, তাই তিনি ৩৬ রাকাতকে সমর্থন জানান।যেখানে তারাবী হয় না,সেই স্থানের মুসলিম জনপদ সবাই গুনাহগার হবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন।   
ঘ)      হযরত উমার(রাঃ)এর সময়ে সাহাবাদের মধ্যে ২০ রাকাতের ইজমার প্রচার।
   ২০ রাকআত তারাবীহর উপরে ওমরেরযামানায় ছাহাবীগণের মধ্যে ইজমাবা ঐক্যমত হয়েছে বলে যে দাবী করা হয়, তাএকেবারেই ভিত্তিহীন ও বাতিল কথা মাত্র।হযরত উমার(রাঃ)
৮ রাকাত ও জামায়াতে পড়া পুনরায় চালু করেছিলেন।   
তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৮০৩-এর আলোচনা দ্রঃ ৩/৫৩১ পৃঃ; মিরআত ৪/৩৩৫

০৭।     মাযহাবী ফিৎনা,মুসলিম ঐক্য ও মহান আল্লাহ।
        মাযহাব শব্দের অর্থ পথ।সুন্নাহ শব্দের অর্থও পথ। সুন্নাহর প্রতিশব্দ হচ্ছে মাযহাব। সমস্ত মাযহাবের পথ হচ্ছে  রাসুলের(সঃ) মাযহাব বা রাসুলের(সঃ) সুন্নাহ।মূলতঃ সঠিক সুন্নাত  অনুসরনের জন্যই  সম্মানিত সমস্ত ইমাম নিজের জীবন বাজী রেখে, হাদীস সংগ্রহ করেছিলেন। ফলে আমাদের জন্য সহীহ হাদীসের অনুসরন সহজ হয়েছে। তখন যোগাযোগ একটা বিশাল ব্যাপার ছিল।উনাদের সংগৃহীত হাদীসগুলো আমাদের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ।এই ধরনের একটা বিরাট ও দুংসাহসিক কাজে,ভুল সাধারন ব্যাপার।কারন উনাদের জন্য পারস্পরিক যোগযোগ একটা কঠিন ব্যাপার ছিল।উল্লেখ্য যে, আবু হানীফা(রহঃ) ৮০ হিজরী, ইমাম মালেক(রহ) ৯৩/৯৪ হিজরী, ইমাম শাফেয়ী(রহঃ) ১৫০ হিজরী এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহঃ) ১৬৪ হিজরীতে  জন্মগ্রহন করেন। ইমামদের জন্মের বহু আগেই রাসুল(সঃ) মৃত্যুবরন করেন।
        এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ হবার ফলে আমরা সমস্ত হাদীস মিলায়ে দেখার ও কার কোথাও ভুল হাদীস এসেছে, এটা দেখার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই সহীহ হাদীসকে অনুসরন করতে হবে, ভুল/দূর্বল হাদীসকে বাদ দিতে হবে। এটা না করলে ‘আমলে’ বিরাট পরিবর্তন আসবে ও দ্বীনে বিভেদ সৃষ্টি  হবে।
মূলতঃ  হানাফি,সুন্নী,আহলে হাদীস,শাফেয়ী,হাম্বলী,মালেকী,শিয়া, সালাফি,সালাফির বিভিন্ন দল ,আহলে সুন্নাত আল জামায়াত,ওহাবী প্রভৃতি ফিৎনাগুলো এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।সহীহ হাদীস অনুসরন করা ছাড়া আমরা এই বিভেদ নিরসন কিংবা  মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারবো না।প্রতিটা দলই সঠিক পথে আছে বলে দাবী করছে। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন,
#        “ যারা দ্বীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে,তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়  আনআম- ১৫৯ 
#     “যদি তোমাদের মধ্যে মতভেদ  থাকে, তাহলে আল্লাহ ও তার রাসুলের(সঃ) কাছে ফিরে যাও।যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের  উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।“    নিসা-৫৯
#      “মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হইও না।যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শরিক বানিয়ে উপাসনা করে। আর তাদের মতো হইও না, যারা দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করে, বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয় আর প্রত্যেক দল উল্লাস করে যে, তারা সত্যের পথে আছে“  রোম-৩১,৩২
#      “ ইবরাহীম(আঃ) ইহুদী অথবা খৃষ্টান ছিলেন না, তিনি ছিলেন আত্নসমর্পনকারী মুসলিম“   আল-ইমরান-৬৭
#     “তিনি তোমাদের জন্য যে, দ্বীন মনোনীত করেছেন, সে দ্বীন হচ্ছে ইবরাহীমের আর তিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম,আগের সকল কিতাবে এবং এই কিতাবেও। সুতরাং নামায আদায় করো এবং যাকাত দাও“  হজ্জ-৭৮
রাসুল(সঃ)   বলেনঃ-
#       “রিবঈ ইবনে হিরাস থেকে বর্নিত, তিনি আলীকে এক ভাষনে বলতে শুনেছেন,”রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন,তোমরা আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ কোর না।কেননা যে ব্যাক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে, সে জাহান্নামে যাবে”। মুসলিম
#      “৭৩ টা দল হবে আর ১টা দল বাদে সবাই দোযখে যাবে।এবং নাযাতপ্রাপ্ত দলে তারাই থাকবে, যারা নবীজি এবং তার সাহাবাগনকে অনুসরন করবে।“
#      “তোমাদের মধ্যে কিছু লোক থাকবে, যারা এমন কিছু জিনিস প্রচার করবে,যেগুলো আমার সুন্নাহ নয়”।
#      “একটা সময় আসবে যখন সমাজে অনেক খারাপ কাজ হবে।আর কখনো কেউ যদি মুসলিম উম্মাহর একতা নষ্ট করতে চায়, তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত কর।আর তাতেও যদি সে ক্ষান্ত না হয়, তাহলে তাকে মেরে ফেল”।  মুসলিম-৩য় খন্ড- ৪৫৬৫
সব মাযহাব বলেনঃ-
#       “সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব।যদি তোমরা  সহীহ হাদীস পাও, তাহলে সেটাই আমার মাযহাব।যদি তোমরা একটা সহীহ হাদীসও পাও,তাহলে সেটাই আমার জীবন-দর্শন”ইমাম আবু হানিফা(রহ)    
#       “যদি আমার কোন ফতওয়া আমার কোন একটা মতামত আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধে যায় এবং রাসুল(সঃ)এর কথার বিরুদ্ধে যায়,তাহলে আমার সে মতামত বাতিল করে দাও”।ইমাম আবু হানিফা(রহ)
#      “আমিতো একজন মানুষ।আমার ভুল হতে পারে।তবে মাঝে মাঝে আমার কথা সঠিক। তবে আমার কোন মতামত যদি আল্লাহর কুরআন ও রাসুলের(সঃ) এর হাদীসের বিরুদ্ধে যায়, আমার ফতওয়া বাতিল করে দিও।  ইমাম মালিক(রহ)
০৬)    ২০ রাকাত তারাবী ও জাল হাদীস প্রসংগে
#     ইবনে আব্বাস(রাঃ)  বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ(সঃ) রমাযান মাসে (জামায়াত ছাড়া) ২০ রাকাত তারবী পড়তেন।তারপর বিতর পড়তেন
এটা জাল হাদিস। হাদীসটি বর্নিত হয়েছে, ইবনে আবি শায়বা ‘মুসান্নাফ’ ২/৯০/২। আবদ বিন হামিদ মুনাতাখাব মিনাল মুসনাদ, তাবারানী ‘মু’জামুল কাবীর’ ৩/১৪৮/২ ও আওসাত ইবনে আলী ‘কামেল’ ১/২৩, খতীব  “মুওয়াজ্জেহ” গ্রন্থ ১/২১৯, বাইহাকী ও অন্যান্যরা । এদের প্রত্যেকেই আবী শায়বার সনদে এটা বর্ননা করেছেন।
ক)    ইমাম তাবারানী বলেন, ইবনে আব্বাস(রাঃ) হতে এই সনদ ব্যাতীত অন্য সনদে এটি বর্নিত হয়নি।
খ)      ইমাম বায়হাকী বলেন, এটি আবু শায়বার একক বর্ননা, আর সে হল যঈফ রাবী।
গ)      আল্লামা আলবানী(রহঃ) ও হাইসামী(রহঃ) বলেন, এখানে আবু শায়বা হল যয়ীফ।
ঘ)      হাফিজ(রহঃ) বলেন, ইবনে আবু শায়বার সম্পৃক্ততার কারনে সনদটি দূর্বল।
গ)      হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত হাদিস বিশেষজ্ঞ আল্লামা জালালুদ্দীন যায়লায়ী হানাফী(রহঃ)-ও এই সনদকে দূর্বল বলেছেন।তিনি হাদীসের  “মতন”কে অস্বীকার করে বলেন, এটি আয়েশা(রাঃ) বর্নিত “১১ রাকাত তারাবীর” বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত।
ঘ)     অতঃপর দেখুন, নাসবুর রায়া ২/১৫৩, হাফিজ ইবনু হাজার(রহ)-ও একই কথা বলেছেনফকীহ আহমদ বিন হাজার(রহঃ) ‘ফাতাওয়া কুবরা’ গ্রন্থ বলেন,-নিশ্চয় ওটি চরম দূর্বল হাদিস।ইরোয়া গালীল-৪৪৫
ঙ)     ইমাম নাসাঈ(রহঃ) বলেন, সে পরিত্যক্ত। ইমাম শুবা(রহঃ) বলেন,  সে মিথ্যাবাদীইমাম দারেমী(রহঃ) বলেন, তার বর্নিত তথ্য দলিল হিসাবে গন্য নয়(মিযানুল ইতিদাল ১ম খন্ড)
চ)      আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী(রহঃ) বলেন, আমার দৃষ্টিতে ৩ টা কারনে হাদীসটা জালঃ-
১)    এটি “আয়েশা(রাঃ) ও জাবের(রাঃ)” বর্নিত হাদীসের বিপরীত।
২)    সনদে আবু শায়বার দূর্বলতা চরম।ইমাম বায়হাকীসহ অন্যদে উদ্ধৃতি থেকে সেটা বুঝা গেছে।ইবনে মাঈন বলেছেন, সে নির্ভরযোগ্য নয়। জাওযাযানী বলেছেন, সে বর্জিত।শুবা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম বুখারী বলেছেন, তার ব্যাপারে কেউ মত ব্যাক্ত করেনি। ইমাম বুখারী যখন কারো ব্যাপারে বলেন, তখন তার অবস্থান হয় নিকৃষ্টতর ও তার নিকট অধিকতর খারাপ। 
৩)   আবু শায়বার হাদীসে বলা হয়েছে যে, নবী(সঃ) রমাযানে জামায়াত ছাড়া নামায পড়েছেন।এটি জাবের(রাঃ) হাদীসের বিরোধী। তাছাড়া আয়েশার(রাঃ) নবী(সঃ)-এর পর পর ৩ দিন তারাবী জামাতে পড়ার কথা আছে। তারপরে জাবের(রাঃ)এর হাদিসঃ-
“ বরং আমি ভয় করেছিলাম, তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার। ফলে তা পালনে তোমরা অপারগ হয়ে পড়বে(বুখারী,মুসলিম)এগুলো প্রমান করে যে, আবু শায়বার হাদিস বানোয়াট।  সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফা আল মাওযু-৫৬০ 
#    ইয়াহহিয়া বিন সাঈদ হতে বর্নিত- ‘নিশ্চয় উমার(রাঃ) এক ব্যাক্তিকে তাদের সাথে ২০ রাকাত সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। 
হাদীসটা মুনকাতে। ইবনে আবি শায়বা-মুসান্নাফ ২য় খন্ড-১৬৩ পৃষ্ঠা-হাদীস-৭৬৮২এই বর্ননাটি মুনকাতি।
ক)    আল্লামা মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’  গ্রন্থ বলেছেন, আল্লামা নিমভী(রঃ) “আসার আস-সুনান” গ্রন্থ বলেছেন,ইয়াহহিয়া বিন সাঈদ আনসারী  হযরত উমার(রাঃ) এর সময় পান নাই।
খ)    আল্লামা নাসিরউদ্দিন আলবানী(রহ) বলেন, তার সিদ্ধান্ত নিমভী-এর অনুরুপ। এই আসারটি মুনকাতে, যেটা দলিল গন্য হবার জন্য শুদ্ধ নয়। তাছাড়া এটি হযরত উমার(রাঃ) হতে বিশুদ্ধ সনদে বর্নিত প্রতিষ্ঠিত হাদীসের বিপরীত।
হাদীসটি হলঃ
উমার(রাঃ) দুজন সাহাবী, ‘উবাই বিন কাব(রাঃ) ও তামীমদারীকে(রাঃ)কে (রমযান মাসে) ১১ রাকাত পড়ার  নির্দেশ প্রদান করেছিলেন’।  মুয়াত্তা মালিক-২৫৩
হাদিসটি  ‘মুয়াত্তা মালিক গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে।এমনি ভাবে ইয়াহহিয়া বিন সাঈদের হাদীস ভুল।
 গ)   তাছাড়া ইয়াহহিয়া বিন সাইদকে কেউ কেউ মিথ্যাবাদী বলেছেন। যেমন ইমাম হাতিম(রহ) বলেন, ইয়াহহিয়া বিন সাইদ বর্নিত কোন কথাই সত্য নয়। কারন সে হোল মিথ্যাবাদী। জবহে আততাদীল ৯ম খন্ড,  তাহযীবুত তাহযীব- ৬ষ্ঠ কন্ড        
#     আবুল হাসান বলেন, আলী এক ব্যাক্তিকে ২০ রাকাত তারাবী পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন
এই হাদীসের সনদ যঈফ।মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা-২য় খন্ড-বাইহাকী-২/৪৯৬  ।
ক)    ইমাম বায়হাকী বলেন, এর সনদে দূর্বলতা রয়েছে।
খ)     নাসির উদ্দীন আলবানী(র) বলেন, এতে আবুল হাসানা ত্রুটিযুক্ত।তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেছেন, সে কে, তা জানা যায় নি।
গ)    হাফিয(রঃ) বলেন, সে অজ্ঞাত।আবুল হাসানা কর্তৃক বর্নিত হাদীস প্রত্যাখ্যাত। মিযানুল ইতিদাল- ১ম খন্ড,  যঈফ সুনানুল কুবরা-২য় খন্ড, বায়হাকী
#    আব্দুল আযীয বিন রাফে বলেন, উবাই ইবনে কাব(রাঃ) রমজানে মদীনায় লোকদের সাথে ২০ রাকাত নামায় পড়েছেন ও বিতর পড়েছেন ৩ রাকাত  
হাদীসটি  মুনকাতে। মুসান্নাফ আবী শায়বা ২/৯০/১এখানে আব্দুল আজীজ ও উবাই এর মধ্যে ‘ইনকিতা’ আছে। কেননা, উভয়ের মৃত্যুর ব্যবধান ১০০ বা তারও বেশী(তারাবুক তাহযীব)এজন্যই আল্লামা নিমভী হিন্দী(রহঃ) বলেছেন, আব্দুল আজীজ বিন রাফে ইবাই ইবনে কাবের সময় পান নাই।আল্লামা আলবানী(র) বলেন , এখানে উবাই বিন ‘আসারটি’ মুনকাতে। সাথে সাথে এটি উমার(রাঃ) ও  উবাই(রাঃ) এর প্রমানিত ৮ রাকাত তারাবীর হাদীসের বিরোধী।
একই ভাবে আবু ইয়ালায় বর্নিত,উবাই বিন কাব(রাঃ), “রাসুলুল্লাহ(সঃ)এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল(সঃ) রমযানের রাত্রিতে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। রাসুলুল্লাহ(সঃ) বললেন, তা কি হে  উবাই(রাঃ) !সে বললো, আমার ঘরের নারীরা বলে যে,আমরা কুরআন পড়বো না, বরং আপনার সাথে নামায পড়বো। আমি তাদের নিয়ে ৮ রাকাত নামায পড়লাম ও বিতর পড়লাম”।    
নাসিরউদ্দিন আলবানী(র) ও  হাইসামী(রঃ) বলেন, এর সনদ হাসান।
#     সায়িদ বিন ইয়াযীদ বলেন, আমরা উমার ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) এর সময়ে ২০ রাকাত তারাবী ও বিতর পড়লাম     নাসবুর রায়ালি আহাদীসে-২য় খন্ড-৯৯ পৃষ্ঠা
হাদীসটা যয়ীফ। হাদীসের সনদে আবু ওসমান বাসরী আছে, সে হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত।খালিদ বিন মুখাল্লাদ রয়েছে, সে যয়ীফ। তার বর্ননা প্রত্যাখ্যাত, তার বর্ননা দলিল হিসাবে গ্রহনযোগ্য না।তদুপরি সে ছিল শিয়া ও মিথ্যাবাদী  তাহযীব ২য় খন্ডইয়াযীদ বিন খুসাইফা আছে, তার সকল বর্ননা প্রত্যাখ্যাত। মিযানুল ইতিদাল,তাহযীবুত তাহযীব-২য় খন্ড
 #    ইয়াযীদ বিন রুমান বলেন, উমার(রাঃ)এর সময় লোকেরা(রমযানে) ২৩ রাকাত নামায পড়তো
এটির সনদ যয়ীফ।
ক)       মালিক ১/১৩৮,ফিরইয়াবী ৭৬/১, বাইহাকী তার ‘সুনান’ ২/৪৯৬ এবং ‘মারেফা’ গ্রন্থে হাদিসটাকে ‘যয়ীফ’ বলেছেন। কারন ইয়াজিদ বিন রুমান হযরত উমার(রাঃ) এর জমানা পান নাই।
খ)      ইমাম যায়লারী হানাফি(রহঃ)ও  ‘নাসবুর গ্রন্থে’২/১৫৪  একই কথা বলেছেন। 
গ)      ইমাম নব্বী(রঃ) এটাকে ‘মজমু’  গ্রন্থে যয়ীফ বলেছেন।তারপর বলেছেন, বাইহাকী এটা বর্ননা করেছেন, কিন্তু এটা ‘মুরসাল’। কারন ইয়াজিদ বিন রুমান উমার(রাঃ)এর সময়ে ছিলেন না।  
ঘ)    আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী(রঃ) তার ‘ইরওয়ালিল গালিল ও আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী(রঃ)  তার ‘উমদাতুল কারী শরহে সহীহ বুখারী’৫/৩০৭  গ্রন্থে এটিকে যঈফ বলেছেন।
০৭       তারাবীহর রাকাত সম্পর্কে মনীষীদের পর্যালোচনা
ক)       শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী হানাফী বলেন, রাসুলুল্লাহ(সঃ)  থেকে ২০ রাকাতের প্রমান নাই। ২০ রাকাতের হাদিস দূর্বল সনদে বর্নিত হয়েছে। এই দূর্বলতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দেস একমত।
খ)      আল্লামা ইবনেল হুমাম(রহঃ)(হিদায়ার লেখক)  বলেন, তাবারানী ও ইবনে আবী শায়বার হাদীস দূর্বল ও বুখারী/মুসলিমে বর্নিত বিশুদ্ধ হাদীসের বিরোধী।কাজেই এটা বর্জনীয়
গ)     আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী(রহঃ)  বলেন, রাসুলুল্লাহ(সঃ) হতে কেবলমাত্র ৮ রাকাত তারাবীহ এর হাদীস সহীহ সনদে বর্নিত হয়েছে। ২০ রাকাতের হাদীস যঈফ।এই ব্যাপারে সবাই একমত। স্বীকার করা ছাড়া আমাদের উপায় নাই যে, রাসুলুল্লাহর(সঃ)  তারাবীহ ছিল ৮ রাকাত। আল উরফুশ শাযী- ৩০৯ পৃষ্ঠা
ঘ)     মোল্লা আল কারী হানাফী(রহ)  বলেন, হানাফী শায়খদের কথার দ্বারা ২০ রাকাত বুঝা যায় বটে, কিন্তু দলীলানুযায়ী ৮ রাকাত সঠিকমিরকাত-১ম খন্ড
ঙ)      আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী(রহ)  বলেন, ২০ রাকাতের হাদীস সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায়, তা বিনা দ্বিধায়  বর্জনীয়
চ)      একই মন্তব্য করেছেন,  ইমাম নাসাঈ ‘যুআফা’ গ্রন্থে,আল্লামা আইনী হানাফী ‘উমদাতুল কারী’ গ্রন্থে, আল্লামা ইবনু আবেদীন ‘হাশিয়া দূররে মুখতার’ গ্রন্থ ও অন্যান্য বহু মনীষীগন
ছ)      ইমাম মালিকসহ(রহঃ) ও ইবনুল আরাবীসহ অন্যরা এই সংখ্যাকে অপছন্দ করেছেন
ছ)     বর্তমান-শ্রেষ্ঠ  নাসিরউদ্দিন আলবানী(রহঃ) তার লেখা “সালাতুত তারাবীহ” গ্রন্থ বলেন, রাসুল(সঃ) ১১ রাকাত আদায় করেছেন।২০ রাকাতের হাদীস দূর্বল। তাই ১১ রাকাতের বেশী পড়া    
জায়েজ নয়। কেননা বৃদ্ধি করাটাই রাসুলুল্লাহ(সঃ)এর কাজকে বাতিল ও কথাকে অসার করে দেয়
রাসুলুল্লাহ(সঃ)  বলেন, “তোমরা আমাকে যেরুপ সালাত আদায় করতে দেখেছ, ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় কর
আর সেজন্যই ফজরে সুন্নাত ও অন্যান্য সালাত বাড়ানো বৈধ নয়।যখন কারো জন্য সুন্নাত স্পষ্ট হয় না এবং প্রবৃত্তির অনুসরনও করে না, ১১ রাকাতের বেশী তারাবীহ পড়ার কারনে তাদেরকে আমরা বিদয়াতীও বলি না এবং গোমরাহও বলি না
০৮।    তিনি ছিলেনসৃষ্টিজগতের প্রতি রহমত স্বরূপ(আম্বিয়া ২১/১০৭)এবং বেশী না পড়াটা ছিল উম্মতের প্রতি তাঁর অন্যতম রহমত।
 ০।     তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা সালাআদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছবুখারী হা/৬৩১; , মিশকাত হা/৬৮৩ ছালাতঅধ্যায়-৪, ‘দেরীতে আযানঅনুচ্ছেদ-৬
কথার মধ্যে সালাতের ধরন ও রাকআত সংখ্যা সবইএসে যায়তাঁর উপরোক্ত কথার ব্যাখ্যা হল তাঁর কর্ম, অর্থাৎ ১১ রাকআতছালাত
১০     সমস্ত ইসলামী চিন্তাবিদগন এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ১১রাকআত পড়তেন এবং কখনো এর ঊর্ধ্বে পড়েননি এবং এটা পড়াই উত্তম, তখন তারা কেন১১ রাকআতেরউপর আমলের ব্যাপারে একমত হতে পারেন না? কেন তারা অসীম রাকাত পড়ার নিয়ম দেখয়ে  আবার ২৩ রাকআতে সীমাবদ্ধ থাকেন? এটা উম্মতকেহীহ হাদীসেভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখছে ।
১১    জেনে রাখা ভাল যে, রাকআত গণনার চেয়ে ছালাতের খুশূ-খুযূ ও দীর্ঘ সময় ক্বিয়াম, কুঊদ, রুকূ, সুজূদ অধিকযরূরী। যা আজকের মুসলিম সমাজে প্রায় লোপ পেতে বসেছে। ফলে রাত্রির নিভৃত ছালাতের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
১২     রাসুল(সঃ)  ৮ রাকাত পড়েছিলেন, আমাদেরও  সেটা করা উচিৎ।তিনি যতটুকু সময় নিয়ে পড়তেন, নামাযের খুযু-খুশু(সময়নিষ্ঠা, বিনয়, একাগ্রতা ও তাকওয়া) বজায় রাখার জন্য আমাদেরও ধীরে সেদিকে যাওয়া উচিৎ।আমরা যদি মহানবী(সঃ)কে মডেল মানি তাহলে আমাদের উনাকে অনুসরন করা উচিৎ। তা নাহলে এটাকে বিদয়াতে পরিনত হবে আর সেটা সাজা আমাদের ভোগ করতে হবে, আপাত দৃষ্টিতে এটা যত সুন্দরই মনে হউক না কেন। তবে এগুলো হতে সময় লেগেছে, যেতেও কিছু সময় লাগবে।
#    রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা সালাআদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ
#     বিদায় হজ্জের ভাষনে বলেন, “তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছিঃ- কুরআন ও হাদিস।
#     মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন,  ‘তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে, তোমরা আল্লাহ-রাসুলের কাছে ফিরে আস’। অর্থাৎ  কুরআন-হাদিসের কাছে আস। 

Post a Comment

0 Comments