▌মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’র ‘আক্বীদাহগত অবস্থা

মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’র ‘আক্বীদাহগত অবস্থা
·হাসান আল-বান্না (১৯০৬-১৯৪৯ খ্রি.) হিজরী ১৩৪৭ সাল মোতাবেক ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’ তথা ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী দল, যার ওপর ইসলামের লেবাস পরানো হয়েছে। সামসময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণ এই দলকে “বিদ‘আতী ফিরক্বাহ” আখ্যা দিয়েছেন। এই দলের অসংখ্য অনুসারী ও সমর্থক রয়েছে, মুসলিমদের মধ্যে।
অনুরূপভাবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’রও অসংখ্য সমর্থক ও অনুসারী রয়েছে, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে। অনেক মুসলিম এ দলের প্রতিষ্ঠাতা ও দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, বিধায় তাঁরা খুব সহজেই ধোঁকাগ্রস্ত হন। যারা এদের প্রকৃতত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সত্ত্বেও এদের সমর্থন করে, তারা পথভ্রষ্ট বিপথগামী, যাদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। সত্যানুসন্ধানী মুসলিমগণ যাতে এদের প্রকৃতত্ব সম্পর্কে জেনে এদের থেকে সতর্ক থাকতে পারেন এবং অন্যকে সতর্ক করতে পারেন, সে লক্ষ্যেই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের অবতারণা।
·
সম্মানিত পাঠক, এই নিবন্ধটি মূলত আমার লেখা “কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড” বইয়ের অপ্রকাশিত ভূমিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। ভূমিকার এই অংশে হাসান আল-বান্না’র ‘আক্বীদাহগত অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হয়েছে। মুসলিম ভ্রাতৃমণ্ডলীকে সতর্ক ও সচেতন করার জন্য আমরা এই অংশটি নিবন্ধ আকারে পেশ করছি।
যারা জানেন না, তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, “কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড” একটি বৃহৎ কলেবরের নিবন্ধ, যার মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড বা জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে সামসময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ‘আলিমদের ফাতাওয়া সংকলন করা হয়েছে। নিবন্ধটির একটি বড়ো অংশ ২০ পর্বে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। সবগুলো পর্বের লিংক জমা করে পোস্ট করা হয়েছে, আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। পোস্ট লিংক: https://tinyurl.com/y2p5u2zn
এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’র যেসব ‘আক্বীদাহগত বিভ্রান্তি ছিল, তার কিয়দংশ নিম্নে আলোচিত হলো। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
১. তাফউয়ীদ্ব করার বিদ‘আতী বক্তব্য:
হাসান আল-বান্না আল্লাহ’র সিফাত তথা গুণাবলিকে তাফউয়ীদ্ব করার বিদ‘আতী মত পোষণ করতেন। তাফউয়ীদ্ব শব্দের অর্থ ন্যস্ত করা, সোপর্দ করা প্রভৃতি। আল্লাহ’র সিফাতের ক্ষেত্রে এর পারিভাষিক অর্থ—সিফাতের শব্দাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, আর শব্দের অর্থ ও প্রকৃতত্বের ব্যাপারে স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি কোনোটাই না করে এরূপ বলা যে, এগুলো আমি আল্লাহ’র কাছে সোপর্দ করলাম।
·
হাসান আল-বান্না বলেছেন,
وإن البحث في مثل هذا الشأن مهما طال فيه القول لا يؤدي في النهاية إلا إلى نتيجة واحدة هي التفويض لله تبارك وتعالى.
“এ জাতীয় বিষয়ের বিতর্কে যতই দীর্ঘ আলোচনা হোক না কেন, সবশেষে এর ফল একটাই হবে। আর তা হলো তাফউয়ীদ্ব লিল্লাহ তথা মহান আল্লাহ’র কাছে বিষয়টি সোপর্দ করা।” [রাসাইলুল ‘আক্বাইদ, পৃষ্ঠা: ৭৪; গৃহীত: ফাইসাল বিন ‘আবদুহ বিন ক্বাইদ আল-হাশিদী, রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ: লিমাযা তারাকতু দা‘ওয়াতাল ইখওয়ানিল মুসলিমীন ওয়াত্তাবা‘তুল মানহাজাস সালাফী; পৃষ্ঠা: ১৭; দারুল আসার, সানা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ); গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)]
·
তিনি আরও বলেছেন,
ونحن نعتقد أن رأي السلف من السكوت وتفويض علم هذه المعاني إلى الله تبارك وتعالى أسلم وأولى بالإتباع حسمًا لمادة التأويل والتعطيل.
“আমরা বিশ্বাস করি, (এ ব্যাপারে) সালাফগণের মত ছিল চুপ থাকা। আর তা’উয়ীল ও তা‘ত্বীলের মূলোৎপাটন করার নিমিত্তে এই অর্থের ‘ইলমকে মহান আল্লাহ’র কাছে সোপর্দ করাই অধিক নিরাপদ এবং উপযোগী।” [মাজমূ‘আতু রাসাইলিল বান্না রিসালাতুল ‘আক্বাইদ, পৃষ্ঠা: ৪৯৮; গৃহীত: রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ: লিমাযা তারাকতু দা‘ওয়াতাল ইখওয়ানিল মুসলিমীন ওয়াত্তাবা‘তুল মানহাজাস সালাফী; পৃষ্ঠা: ১৭-১৮]
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেছেন,
فتبين أن قول أهل التفويض الذين يزعمون أنهم متبعون للسنة والسلف من شر أقوال أهل البدع والإلحاد.
“অতএব স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সোপর্দকারী আহলে তাফউয়ীদ্বরা, যারা ধারণা করে যে, তারা সুন্নাহ ও সালাফদের অনুসারী, তাদের কথা বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতীদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট কথাগুলোর অন্তর্ভুক্ত।” [দার’উ তা‘আরুদ্বিল ‘আক্বলি ওয়ান নাক্বল, পৃষ্ঠা: ২০১-২০৫; গৃহীত: রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৮]
·
২. ইমাম মাহদীকে অস্বীকার:
হাসান আল-বান্না বলেছেন,
لم نر في السنة الصحيحة ما يثبت دعوى المهدي، وإنما أحاديثه تدور على الضعف والوضع.
“আমরা বিশুদ্ধ সুন্নাহ’য় এমন কোনো দলিল দেখিনি, যা মাহদী আগমনের দাবি প্রমাণ করতে পারে। বরং এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো দুর্বল এবং জাল।” [হাসান আল-বান্না প্রণীত ‘হাদীসুস সুলাসা’, পৃষ্ঠা: ১০৮; গৃহীত: রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৯]
·
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল-ফাক্বীহুল মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
لقد تواترت الأخبار واستفاضت بكثرة رواتها عن المصطفى ﷺ بمجيء المهدي، وأنه من أهل بيته وأنه يخرج مع عيسى عليه السلام فيساعده على قتل الدجال وأنه يؤم هذه الأمة ويصلي خلفه.
“নাবী ﷺ থেকে এ ব্যাপারে বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারী কর্তৃক মুতাওয়াতির সূত্রে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, মাহদী আগমন করবেন, তিনি নাবী ﷺ এর পরিবারের লোক হবেন, তিনি ‘ঈসা (‘আলাইহিস সালাম) এর সাথে বের হবেন, দাজ্জাল নিধনে তাঁকে সাহায্য করবেন, এই উম্মতের নেতৃত্ব দিবেন এবং তাঁর পিছনে সালাত আদায় করা হবে।” [সিলসিলাহ সাহীহাহ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৩৭২; রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৯]
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
فإن الإيمان بوجوب الواجبات الظاهرة المتواترة وتحريم المحرمات الظاهرة المتواترة : هو من أعظم أصول الإيمان وقواعد الدين، والجاحد لها كافر بالإتفاق.
“মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত সুস্পষ্ট ওয়াজিব বিষয়াবলির আবশ্যকিয়তা এবং মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত সুস্পষ্ট হারাম কর্মাবলির নিষিদ্ধতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের মূলনীতি ও দ্বীনের মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয়কে অস্বীকারকারী সর্বসম্মতিক্রমে কাফির।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ৪৯৬; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: يوجد لدينا رجل ينكر المسيح الدجال والمهدي ونزول عيسى عليه السلام، ويأجوج ومأجوج ولا يعتقد في شيء منها، ويدعي عدم صحة ما ورد في ذلك من أحاديث، مع العلم بأنه لا يفقه شيئاً في علم الحديث ولا في غيره، وقد نوقش في هذه الأمور من قبل علماء؛ ولكنه يزعم أن كل الأحاديث الواردة في هذه الأمور مكذوبة على النبي ﷺ، ودخيلة على الإسلام، وهو يصلي ويصوم ويأتي بالفرائض، فما حكمه وفقكم الله؟
الجواب: مثل هذا الرجل يكون كافراً نعوذ بالله؛ لأنه أنكر شيئاً ثابتاً عن رسول الله عليه الصلاة والسلام، فإذا كان بين له أهل العلم ووضحوا له، ومع هذا أصر على تكذيبها وإنكارها فيكون كافراً؛ لأن من كذب الرسول ﷺ فهو كافر، ومن كذب الله فهو كافر، وقد صحت وتواترت هذه الأخبار عن رسول الله في نزول المسيح ابن مريم من السماء في آخر الزمان، وفي خروج يأجوج ومأجوج، وفي خروج الدجال في آخر الزمان، وفي مجيء المهدي، كل هذه الأربعة ثابتة، المهدي في آخر الزمان يملأ الأرض قسطاً بعدما ملئت جوراً، ونزول المسيح ابن مريم وخروج الدجال في آخر الزمان، وخروج يأجوج ومأجوج، كل هذا ثابت بالأحاديث الصحيحة المتواترة عن رسول الله عليه الصلاة والسلام، فإنكارها كفر وضلال، نسأل الله العافية والسلامة. نعم.
প্রশ্ন: “আমাদের নিকট একজন লোক আছে, যে মাসীহুদ দাজ্জাল, মাহদী, ‘ঈসা (‘আলাইহিস সালাম) এর অবতরণ এবং ইয়াজুজ-মাজুজ অস্বীকার করে। সে এগুলোর কিছুই বিশ্বাস করে না। সে দাবি করে এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসসমূহ বিশুদ্ধ নয়। জ্ঞাতব্য যে, সে হাদীসশাস্ত্র ও অন্যান্য শাস্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানে না। আর ‘আলিমদের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোর পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সে মনে করে, এ জাতীয় বিষয়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীস নাবী ﷺ এর নামে মিথ্যাচার এবং ইসলামের মধ্যে আনিত নবসৃষ্টি। অথচ সে সালাত পড়ে, সিয়াম পালন করে এবং ফরজ বিষয়াদি আদায় করে। ওই ব্যক্তির বিধান কী? আল্লাহ আপনাকে সৎকর্মের তাওফীক্ব দিন।”
উত্তর: “এই ধরনের ব্যক্তি কাফির বিবেচিত হবে। আল্লাহ’র কাছে এ থেকে পানাহ চাচ্ছি। কেননা সে এমন বিষয় অস্বীকার করেছে, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত। তার কাছে যদি ‘আলিমগণ বিষয়টি বর্ণনা করেন এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন, এতৎসত্ত্বেও সে এই বিষয়গুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও অস্বীকার করার উপর অটল থাকে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা যে ব্যক্তি রাসূল ﷺ কে অস্বীকার করে, সে কাফির। যে ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করে, সে কাফির। আর শেষযুগে আসমান থেকে মারইয়াম তনয় মাসীহের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, শেষযুগে দাজ্জালের আবির্ভাব এবং মাহদীর আগমন সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বিশুদ্ধ মুতাওয়াতির সূত্রে বিপুল সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এই চারটি বিষয়ই সুপ্রমাণিত। শেষযুগে পৃথিবী জুলুমে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর মাহদী এসে পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে পরিপূর্ণ করবেন। মারইয়াম তনয় মাসীহ অবতরণ করবেন, শেষযুগে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে, ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব ঘটবে। এগুলো সবই রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বিশুদ্ধ মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এগুলো অস্বীকার করা কুফুরী এবং ভ্রষ্টতা। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। না‘আম।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y2wdzrs9 (ইমাম ইবনু বাযের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– binbaz.org.sa এর আর্টিকেল)]
·
৩. মিত্রতা (ওয়ালা) ও বৈরিতার (বারা) ‘আক্বীদাহয় অস্পষ্টতা:
·
একজন মুসলিম মানুষের সাথে কীভাবে বৈরিতা ও মিত্রতা পোষণ করবে, তার বর্ণনা কুরআন সুন্নাহ’য় এসেছে। বৈরিতা ও মিত্রতার ক্ষেত্রে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত। যথা:
১ম ভাগ: যাদেরকে খাঁটি ও নিষ্কলুষভাবে ভালোবাসতে হবে, যাদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রাখা যাবে না। তাঁরা হলেন খাঁটি মু’মিন সম্প্রদায়। যেমন: নাবীগণ, সিদ্দীক্বগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ। আল্লাহ বলেছেন, “যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু’।” (সূরাহ হাশর: ১০)
২য় ভাগ: যাদের প্রতি খাঁটিভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে হবে, যাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা ও মিত্রতা পোষণ করা যাবে না। তারা হলো খাঁটি কাফির সম্প্রদায়। যেমন: কাফির, মুশরিক, মুনাফিক্ব, মুরতাদ, নাস্তিক ও বিধর্মী সম্প্রদায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী কোনো জাতিকে এরূপ পাবে না যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে এমন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করে, যদিও তারা তাদের পিতা, বা পুত্র, কিংবা ভাই, বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে, যেগুলোর তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহ’র দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ’র দলই সফলকাম।” (সূরাহ মুজাদালাহ: ২২)
৩য় ভাগ: যাদেরকে একদিক থেকে ভালোবাসতে হবে, আবার একদিক থেকে ঘৃণা করতে হবে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে ভালোবাসা-ঘৃণা দুটিই একত্রিত হবে। তারা হল পাপাচারী মু’মিন ব্যক্তিবর্গ। তাদেরকে ভালোবাসতে হবে, তাদের ঈমানের কারণে। আর তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে, শির্ক-কুফরের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের পাপাচারিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে। অধিকন্তু তাদের প্রতি ভালোবাসার দাবি হচ্ছে তাদেরকে নসিহত করা এবং মন্দকর্মে তাদের বিরোধিতা করা। বিধি মোতাবেক তাদের মন্দকর্মের বিরোধিতা করা ওয়াজিব। [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-ইরশাদ ইলা সাহীহিল ই‘তিক্বাদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৮৯-২৯০; আর-রিআসাতুল ‘আম্মাহ লি ইদারাতিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১২ (২য় প্রকাশ)]
·
হাসান আল-বান্না বলেছেন,
إن خصومتنا لليهود ليست دينية، لأن القرآن الكريم حض على مصافاتهم ومصادقتهم.
“আমাদের সাথে ইহুদিদের বিরোধ ধর্মীয় নয়। কেননা কুরআনুল কারীম তাদের সাথে আন্তরিক আচরণ ও বন্ধুত্ব করতে উৎসাহিত করেছে।” [‘আব্দুল হালীম মাহমূদ, আহদাসুন সানা‘আতিত তারীখ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪০৯-৪১০; গৃহীত: রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ২১-২২]
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
ما حكم الشرع في من يقول إن خصومتنا مع اليهود ليست دينية وقد حث القرآن على مصافاتهم ومصادقتهم؟
“যে ব্যক্তি বলে, ‘আমাদের সাথে ইহুদিদের বিরোধ ধর্মীয় নয়; কেননা কুরআনুল কারীম তাদের সাথে আন্তরিক আচরণ ও বন্ধুত্ব করতে উৎসাহিত করেছে’—তার ব্যাপারে শরিয়তের বিধান কী?”
তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
هذه مقالة باطلة خبيثة؛ اليهود من أعدى الناس للمؤمنين، هم من أشر الناس، بل هم أشد الناس عداوة للمؤمنين من الكفار، كما قال تعالى: لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا. [المائدة: ٨٢]، فاليهود والوثنيون هم أشد الناس عداوة للمؤمنين؛ وهذه المقالة مقالة خاطئة ظالمة قبيحة منكرة.
“এটা অনিষ্টকর বাতিল কথা। মানুষের মধ্যে ইহুদিরাই মু’মিনদের প্রতি সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ পোষণ করে। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। বরং কাফিরদের মধ্যে তারাই মু’মিনদের প্রতি সবেচেয়ে বেশি বিদ্বেষী। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, “তুমি অবশ্যই মু’মিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় সবচেয়ে কঠোর পাবে ইহুদিদেরকে এবং যারা শির্ক করেছে তাদেরকে।” (সূরাহ মাইদাহ: ৮২) ইহুদি ও মূর্তিপূজারীরা মু’মিনদের প্রতি সবেচেয়ে বেশি বিদ্বেষ পোষণকারী। আর এটি একটি ভুল, জুলুমকারী, জঘন্য ও মন্দ কথা।” [ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ), আল-‘আওয়াসিম মিম্মা ফী কুতুবি সাইয়্যিদ কুতুব মিনাল ক্বাওয়াসিম; পৃষ্ঠা: ৮২-৮৩; শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত সফটকপি]
·
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
ما تقول فيمن يقول: إن خصومتنا لليهود ليست دينية، لأن القرآن الكريم حض على مصافاتهم ومصادقتهم؟
“যে ব্যক্তি বলে, ‘আমাদের সাথে ইহুদিদের বিরোধ ধর্মীয় নয়; কেননা কুরআনুল কারীম তাদের সাথে আন্তরিক আচরণ ও বন্ধুত্ব করতে উৎসাহিত করেছে’—তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,
هذا الكلام فيه خلط وتضليل، اليهود كفار وقد كفَّرهم الله تعالى ولعنهم، وكفَّرهم رسول الله ولعنهم، قال تعالى: لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيل، وقال عليه الصلاة والسلام: (لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى)، وقال تعالى: إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّة، وقال تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ. فعداوتنا لهم دينية، ولا يجوز لنا مصادقتهم، ولا محبتهم، لأن القرآن نهانا عن ذلك.
“এই কথার মধ্যে বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা রয়েছে। ইহুদিরা কাফির। মহান আল্লাহ তাদেরকে কাফির বলেছেন এবং তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে কাফির বলেছেন এবং তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে, তাদেরকে অভিসম্পাত করা হয়েছে।” (সূরাহ মাইদাহ: ৭৮) নাবী ﷺ বলেছেন, “ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ওপর আল্লাহ’র অভিশাপ।” (সাহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৪) মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হলো নিকৃষ্ট সৃষ্টি।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ: ৬) তিনি আরও বলেছেন, “হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। তারা একে অপরের বন্ধু।” (সূরাহ মাইদাহ: ৫১) তাদের সাথে আমাদের বিরোধ ধর্মীয়। তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা এবং তাদেরকে ভালোবাসা আমাদের জন্য জায়েজ নয়। কেননা কুরআন আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছে। যেমনটি পূর্বোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৬০-৬৩; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]
·
৪. নাবী ﷺ বান্দার পাপ ক্ষমা করেন– এমন ‘আক্বীদাহ পোষণ করা:
·
হাসান আল-বান্না’র ভাই ‘আব্দুর রহমান আল-বান্না বর্ণনা করেছেন যে, হাসান আল-বান্না নাবী ﷺ এর জন্মদিবস পালন করতেন। তিনি ১লা রাবী‘উল আওয়্যাল থেকে ১২ই রাবী‘উল আওয়্যাল পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূল ﷺ এর প্রশংসায় কবিতা ও সঙ্গীত বলতেন। তাঁর বলা কবিতাগুলোর অন্যতম দুটি পঙ্‌ক্তি হলো—
صلى الإله الذي على النور الذي ظهر ~ للعالمين ففاق الشمس و القمرا.
هذا الحبيب مع الأحباب قد حضرا ~ و سامح الكل فيما قد مضى و جرا.
“আল্লাহ সেই নূরের ওপর দয়া বর্ষণ করুন, যেই নূর বিশ্বজগতের কাছে প্রকাশিত হয়েছে এবং চন্দ্র-সূর্যকে ছাড়িয়ে গেছে। এই হাবীব (অর্থাৎ, নাবী ﷺ) হাবীবদের সাথে উপস্থিত হয়েছেন এবং পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন!” [হাসান আল-বান্না বি আক্বলামি তালামিযাতিহী ওয়া মু‘আসিরীহি; পৃষ্ঠা: ৭১-৭২; গৃহীত: রিসালাতুন উখুউয়িয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ২৯]
·
অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন, وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ “যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? তারা যা করেছে, জেনেশুনে তা তারা বারবার করে না।” [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১৩৫]
·
৫. ভ্রান্ত দলসমূহের সাথে একাত্মতা:
·
হাসান আল-বান্না তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ভ্রান্ত দলসমূহের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। একারণে তাঁর দলে ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী থেকে শুরু করে শী‘আ, আশ‘আরী, সূফী, এমনকি খ্রিষ্টানরাও যোগ দিয়েছে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধি লাভের জন্য একসাথে কাজ করেছে। হাসান আল-বান্না ‘আল-মানার’ পত্রিকায় রাশীদ রিদ্বা উদ্ভাবিত একটি মূলনীতি গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন, ‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব।’ [হাসান আল-বান্না বি আক্বলামি তালামিযাতিহী ওয়া মু‘আসিরীহি; পৃষ্ঠা: ১৯০; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ১৫৬; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]
একজন সচেতন সালাফী মুসলিম কখনোই এই মূলনীতি মেনে নিতে পারে না। কারণ ইসলাম ভ্রষ্টদের সাথে আপস করতে শেখায়নি। ইসলাম শিখিয়েছে ভ্রষ্টতাকে প্রত্যাখ্যান করতে।
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) এই মূলনীতির ব্যাপারে বলেছেন,
أما عذر بعضنا لبعض فيما اختلفنا فيه فليس على إطلاقه، فما كان من مسائل الإجتهاد التي يخفى دليلها فالواجب عدم الإنكار فيها من بعضنا على بعض، أما ما خالف النص من الكتاب والسنة فالواجب الإنكار على من خالف النص بالحكمة والموعظة الحسنة.
“আমরা যে ব্যাপারে একমত নই, সে ব্যাপারে পরস্পরকে মার্জনা করার বিষয়টি নিঃশর্ত নয়। মতানৈক্য যদি ইজতিহাদী মাসআলাহ’য় সংঘটিত হয়, যার দলিল স্পষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে আবশ্যক হল পরস্পরের বিরোধিতা না করা। পক্ষান্তরে তা কিতাব ও সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট দলিলের পরিপন্থি হলে, হিকমাহ ও উত্তম উপদেশ সহকারে দলিল বিরোধী ব্যক্তির বিরোধিতা করা আবশ্যক।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
فضيلة الشيخ، من المعلوم أن الشيعة والمرجئة هؤلاء كلهم يختلفون مع أهل السنة والجماعة اختلافاً عظيماً، وهناك قاعدة بعض العلماء يسمونها القاعدة الذهبية: (يعين بعضنا بعضاً فيما اتفقنا ويعذر بعضنا بعضاً فيما اختلفنا) فكيف نعذر هؤلاء الشيعة؟
“সম্মানিত শাইখ, এটা সুবিদিত যে, শী‘আ ও মুরজিয়া সম্প্রদায়ের সবাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সাথে বড়ো ধরনের মতানৈক্য করেছে। আর একটি মূলনীতি আছে, যেটাকে কতিপয় বিদ্বান সোনালী মূলনীতি বলে থাকেন। মূলনীতিটি হল—‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব।’ তাহলে আমরা কীভাবে ওই শী‘আদেরকে মার্জনা করব?”
তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
هذه القاعدة الذهبية ليست قاعدة ذهبية ولا تستحق أن تكون قاعدة، بل ما اتفقنا فيه فهو من نعمة الله عز وجل، والإتفاق خير من الإختلاف، وما اختلفنا فيه فقد يعذر فيه المخالف وقد لا يعذر، فإذا كان الاختلاف في أمر يسوغ فيه الاختلاف فهذا لا بأس به، وما زال الأئمة يختلفون، فالإمام أحمد والشافعي ومالك وأبو حنيفة كلهم يختلفون، وأما إذا كان الخلاف لا يعذر فيه كالخلاف في العقائد، فإنه لا يعذر بعضنا بعضاً، بل الواجب الرجوع إلى ما دل عليه الكتاب والسنة، فعلى المرجئة وعلى الشيعة وعلى كل مبتدع أن يرجع إلى الكتاب والسنة ولا يعذر، فهذه القاعدة ليست قاعدة ذهبية، ولعلك تسميها قاعدة خشبية. عرفت الآن الذي يسوغ فيه الاجتهاد، هذا لا بأس أن نسمح للمخالف، والذي لا يسوغ فيه الاجتهاد كمسائل العقائد التي يخالف فيها الإنسان السلف لا يمكن أن يعذروا.
“এই সোনালী মূলনীতি মূলত সোনালী মূলনীতি নয়। আর এটি মূলনীতি হওয়ার হকদারও নয়। বরং আমরা যে ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেটি মহান আল্লাহ’র অনুগ্রহ। আর মতৈক্য মতদ্বৈধতার চেয়ে উত্তম। পক্ষান্তরে আমরা যে ব্যাপারে একমত নই, সে ব্যাপারে বিরোধী ব্যক্তিকে মার্জনা করা হতে পারে, আবার মার্জনা করা নাও হতে পারে। মতানৈক্য যখন এমন বিষয়ে সংঘটিত হয়, যে বিষয়ে মতানৈক্য সিদ্ধ রয়েছে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। ইমামগণ সর্বদাই এরূপ মতানৈক্য করেছেন। ইমাম আহমাদ, শাফি‘ঈ, মালিক, আবূ হানীফাহ—ইনাদের প্রত্যেকেই মতানৈক্য করেছেন। তবে মতানৈক্য যদি এমন ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়, যেক্ষেত্রে মতানৈক্য ক্ষমার্হ নয়—যেমন ‘আক্বীদাহগত বিষয়ে মতানৈক্য—সেক্ষেত্রে পরস্পরকে মার্জনা করা হবে না। বরং ওই বিষয়ের দিকে ফিরে যাওয়া ওয়াজিব, যা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং মুরজিয়া ও শী‘আ সম্প্রদায়ের এবং সকল বিদ‘আতীর কর্তব্য হলো কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করা। এক্ষেত্রে মার্জনা করা হবে না। এই মূলনীতি সোনালী মূলনীতি নয়, বরং তুমি একে কাষ্ঠবৎ মূলনীতি বলতে পার। তুমি এখন জেনেছ, যে ব্যাপারে ইজতিহাদের সিদ্ধতা রয়েছে, সে ব্যাপারে বিরোধী ব্যক্তিকে মার্জনা করায় কোনো সমস্যা নেই। আর যে ব্যাপারে ইজতিহাদের সিদ্ধতা নেই, যেমন ‘আক্বীদাহগত বিষয়ে মানুষ সালাফদের বিরোধিতা করছে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে মার্জনা করা সম্ভব নয়।” [দ্র.: ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), লিক্বাআতুল বাবিল মাফতূহ; লিক্বা নং: ৭৫; গৃহীত: http://binothaimeen.net/content/3496 (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
هناك بعض من الدعاة يضع قاعدة يقول إنها من توحيد الكلمة، (نتفق فيما اتفقنا عليه، ويعذر بعضنا بعضا فيما اختلفنا فيه).
“কতিপয় দা‘ঈ একটি মূলনীতি উদ্ভাবন করেছেন, যেটাকে তাঁরা ‘ঐক্যের কালিমাহ’ বলে আখ্যায়িত করছেন। সেটি হল—‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব’।”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
إذا كان الاتفاق في العقيدة نعم، قد يحصل اختلاف في مسائل الفروع، والمجتهد يؤخذ بما أصاب فيه، ويترك ما خالف فيه، فإذا كان الاتفاق على العقيدة، والاختلاف إنما هو في مسائل الفقه والفروع، فهذا له وجه، أما إذا كان الاختلاف في العقيدة، فعلى أي شيء اتفقنا إذن؟! ما اتفقنا على شيء، وهذا هو الظاهر اللي يريدون، هذا ما يجوز. نعم.
“মতৈক্য যদি ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে হয়, তাহলে হ্যাঁ, ঠিক আছে। শাখাগত মাসআলাহগুলোতে মতানৈক্য সংঘটিত হয়। মুজতাহিদ ‘আলিম এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবেন, আর বিপরীত সিদ্ধান্তটি পরিত্যাগ করবেন। যখন ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে মতৈক্য হবে এবং ফিক্বহ ও শাখাগত বিষয়ে মতানৈক্য হবে, তখন তার একটি তাৎপর্য থাকে। কিন্তু যদি ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রেই মতানৈক্য হয়, তাহলে আমরা কীসের ওপর ঐক্যবদ্ধ হব? আমরা কোনো কিছুর ওপরেই ঐক্যবদ্ধ হব না। বাহ্যিকভাবে এটিই তাদের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এটি বৈধ নয়। না‘আম।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/14191.]
·
ইমাম সালিহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
ما تقولون في هذه العبارة (نجتمع فيما اتفقنا عليه ويعذر بعضنا بعضا فيما اختلفنا فيه) وهل هي عبارة سلفية على إطلاقها؟
“এই বক্তব্যের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী যে, ‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব’? এটি কি নিঃশর্তভাবে সালাফী মূলনীতি?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
بل هي عبارة بدعية لا خير فيها؛ ... فتنة؛ معنى هذا أن يسير مستبحوا بعض المحرمات ومعتقدي بعض البدع يسير مع من لا يرى ذلك فيما يتفقان عليه وإذا اختلفا فليعذر كل واحد منهما الأخر؛ يجب أن يكون الناس على بصيرة من أمرهم.
“বরং এটি একটি বিদ‘আতী কথা। এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এটি ফিতনাহ। এর অর্থ হচ্ছে কতিপয় হারাম কর্মকে হালাল গণ্যকারী এবং কতিপয় বিদ‘আতে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করবে, যারা ওই মত পোষণ করে না। (অর্থাৎ, সালাফীদের সাথে মেলামেশা করবে – সংকলক) তারা যে বিষয়ে একমত, সে বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আর তারা যে বিষয়ে একমত নয়, সে বিষয়ে তারা একে অপরকে মার্জনা করবে। সুতরাং মানুষের জন্য তাদের নিজেদের বিষয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া জরুরি।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php….]
ইমাম মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ, ইমাম ‘উবাইদ আল-জাবিরী-সহ আরও অনেক ‘আলিম এই মূলনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ব্যাপারে আলোচনা দীর্ঘায়ত করতে চাচ্ছি না, বিধায় সেসব বক্তব্য পেশ করলাম না।
·
আল্লাহ আমাদেরকে সত্যকে উপলব্ধি করার এবং তা সাদরে গ্রহণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.
·রচনাকাল—
বিকাল ৪টা ২৭ মিনিট।
মঙ্গলবার।
১৪ই শাওয়াল, ১৪৪০ হিজরী।
৪ঠা আষাঢ়, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
১৮ই জুন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।
Image may contain: 1 person, text

Post a Comment

0 Comments