Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌দুনিয়ার হাকিকত : কারাগার থেকে বলছি!


▌দুনিয়ার হাকিকত : কারাগার থেকে বলছি! 
.
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য যিনি বলেছেন, “আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয়ই আখিরাতের নিবাসই হল প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত”। --- [সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৪]
.
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,, 
"দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত।’--- [মুসলিম : ২৯৫৬, তিরমিজি : ২৩২৪, ইবন মাজাহ ৪১১৩, আহমদ ৮০৯০, ২৭৪৯১, ৯৯১৬]
.
প্রারাম্ভিকা,
এই পৃথিবীর বুকে আমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া- দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নাম নয় বরং এটা পরীক্ষাকেন্দ্র ,পরবর্তীতে অনন্তকালের আরেকটি জীবন রয়েছে যার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা আবশ্যক! এই পূর্বপ্রস্তুতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে "দুনিয়া মোহ"! ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার প্রবল আকর্ষণ চারদিক থেকে আমাদের এমনভাবে ঘেরাও করে ফেলেছে যে, আমরা আখিরাতের ফিকির থেকে গাফেল হয়ে গিয়েছি। অথচ মৃত্যুর স্মরণ ও পরকালের প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে সুশোভিত ও আলোকিত করে।
এটা আল্লাহর বিধান যে, মু’মীন বান্দাগণের উপর কখনো কখনো ঈমানের পরীক্ষা, গোনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপদ-আপদ আপতিত হবে। সবর, ছলাত, তাক্বওয়া, তাওয়াক্কুল ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে এসব পরীক্ষা মোকাবেলা করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন, "আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈয্যশীলদের সুসংবাদ দাও। 
--- [ সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫ ]
আরো বলেন, "মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি` বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। 
--- [ সূরা আনকাবুত : ২-৩ ]
আরো বলেন,
أمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ ٱلْبَأْسَآءُ وَٱلضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوا۟ حَتَّىٰ يَقُولَ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ مَتَىٰ نَصْرُ ٱللَّهِ أَلَآ إِنَّ نَصْرَ ٱللَّهِ قَرِيبٌ
"তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। তাদেরকে ( অত্যাচার, নির্যাতনে) এমনভাবে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাসূল এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? ( তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল) তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।" ----- [ সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২১৪ ]
.
প্রিয় ভাই! একথা কখনোই মনে করবেন না যে, আপনি জান্নাত প্রত্যাশী আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনাকে তা বিনা পরীক্ষায় দিয়ে দিবেন। আপনার চাইতে অধিক তাক্বওয়াবান, পরহেজগার বান্দারাও কঠিন পরীক্ষায় সম্মুখীন হয়েছেন। তারাও দুনিয়াবী বালা মসিবতে দিনাতিপাত করছেন। এত দুঃখ দূর্দশা, যুলম - নির্যাতনের পরেও দ্বীনের উপর তাদের অটলতা বিন্দুমাত্র কমেনি। পূর্ববতীদের অটলতা দেখবেন!? তাহলে আসুন আপনাকে দেখাই ___
খাব্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا قَيْسٌ عَنْ خَبَّابِ بْنِ الأَرَتِّ قَالَ شَكَوْنَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِيْ ظِلِّ الْكَعْبَةِ قُلْنَا لَهُ أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُوْ اللهَ لَنَا قَالَ كَانَ الرَّجُلُ فِيْمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الأَمْرَ حَتَّى يَسِيْرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا اللهَ أَوْ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُوْنَ
একদিন আমরা (কয়েকজন সাহাবী) রাসূল ﷺ-এর নিকট (মক্কার কাফের-মুশরেকদের কর্তৃক) আমাদের উপর আপতিত দুঃখ-দুর্দশা ও অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তাঁর চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চান না? আপনি কি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করেন না?
তখন রাসূল ﷺ- বললেন, “তোমাদের উপর কি এমন দুঃখ নির্যাতন এসেছে? তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোড়া হতো এবং সেই গর্তের মধ্যে তার দেহের অর্ধেক পুঁতে তাকে দাঁড় করিয়ে তার মাথার উপর করাত দিয়ে তাকে দ্বি-খণ্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এরকম অমানুষিক অত্যাচার তাকে তার দ্বীন থেকে বিরত রাখতে পারতো না। আবার কারো শরীর থেকে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়িয়ে হাড় থেকে গোশত আলাদা করে ফেলা হতো। কিন্তু এতেও তাকে তার দ্বীন থেকে ফিরাতে পারতো না।
আমি আল্লাহর কসম করে বলছি! এই দ্বীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। তখন যেকোন উটের আরোহী সানআ’ (ইয়েমেনের একটা শহর) থেকে হাযারা-মাউত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নিরাপদে সফর করবে। আর এই দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। এবং মালিক তার মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া আর কারো ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা খুবই তাড়াহুড়া করছো।" --- [ সহীহ বুখারী : ৩৬১২ ]
.
হে প্রিয় ভাই! এবার চিন্তা করুন কোথায় আপনার, আমার ঈমানের গায়রত!? আপনি, আমি কখনো এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি? হইনি! সামান্য দুনিয়াবী বালা - মসিবতে পড়লে তাতেই কত হাঁ-হুঁতাশ করি। একটু কষ্টে পড়লেই শেকায়াত করা শুরু করি!
স্বরণ করুন উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন বিলাল [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র ] কথা, যিনি পেটের ক্ষুধায় মদিনার রাস্তায় বেহুঁশ হয়ে গিয়েছেন। আরো স্বরণ করুন প্রানাধিক প্রিয় নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর কথা, যিনি ক্ষুধা নিবারণের জন্য ঘরে কিছু না পেয়ে দুপুরের প্রখর রোদে রিযিকের তালাশে বের হয়ে গিয়েছিলেন! বলুনতো আপনি, আমি লাইফে কয়দিন উপোস থেকেছি? কয়দিন!? বলুন কয়দিন!? তারপরেও আল্লাহর নি'য়ামতের অস্বীকার করবেন!? 
.
সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একদিন 
রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত কে? উত্তরে রাসূল ﷺ- বলেন, ‘নবীগণ, অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী।
অত:পর তিনি বলেন, মানুষকে তার দ্বীন অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। দ্বীনী অবস্থান পাকাপোক্ত হলে পরীক্ষা কঠিন হয়। দ্বীনী অবস্থান দুর্বল হলে পরীক্ষাও শিথিল হয়। মুছীবত মুমীন ব্যক্তিকে পাপশূন্য করে দেয়, এক সময়ে দুনিয়াতে সে নিষ্পাপ অবস্থায় বিচরণ করতে থাকে।
---- [ তিরমিযী : ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ : ৪০২৩ ]
.
যেখানে আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষায় ফেলেছেন, সেখানে আপনি, আমি তো কিছুই নই। আপনার, আমার উপর যেসকল বালা-মসিবত এসেছে বা আসছে তা নিশ্চয়ই আল্লাহর ঐসকল নেককার বান্দাদের চেয়ে ঢের বেশি নয়! তারা যদি দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারে, আপনি কেন হতাশ হচ্ছেন।?
.
প্রিয়নবী মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন, 
যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য বা ওজন থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’ 
--- [ তিরমিযী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০ ]
.
তিনি আরো বলেছেন, , ‘‘নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর যিকর এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলিম ও তালেবে-ইলম নয়।’’ 
---- [ তিরমিযী : ২৩২২, ইবনু মাজাহ : ৪১১২ মিশকাত ৫১৭৬, আত-তালীকুর রাগীব : ১/৫৬। ] 
.
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘তোমরা জমি-জায়গা, বাড়ি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।’’ 
--- [ তিরমিযী : ২৩২৮, আহমাদ :৩৫৬৯, ৪০৩৮, ৪২২২ ]
.
তিনি আরো বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় মুমীন বান্দাকে দুনিয়া হতে ফিরিয়ে রাখেন, যেমনভাবে তোমরা তোমাদের শংকাগ্রস্থ রোগীকে খাদ্য ও পানীয় থেকে ফিরিয়ে রাখো। 
--- [ মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬২৭ ]
.
হে প্রিয় ভাই! এখনো দুনিয়াকে কামড়ে ধরে থাকবেন? এরপরেও আপনার হুঁশ ফিরবেনা!? তাকিয়ে দেখুন ঐ কবরবাসীর দিকে, যারা আপনার মতই দুনিয়াকে কামড়ে ধরে রেখেছিল মালাকুল মউত আসার আগ পর্যন্ত কিন্তু আজ তারা কোথায়!? কি নিয়ে গেছেন আর কি ই বা রেখে গেছেন!? নশ্বর এই দুনিয়ার পিছনে যারাই ছুটেছে তাদেরই আখিরাত বরবাদ হয়ে গেছে ! সুতরাং সাবধানে পা ফেলেন।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে আখিরাতমুখী জীবন যাপনের তাওফীক্ব দান করুন, আমাদের দুঃখ, দূর্দশা লাঘব করূন, হতাশাগ্রস্থ হৃদয়গুলিকে সবর করার শক্তি দিন, দুনিয়ার যাবতীয় বালা-মসিবত থেকে হিফাযত করূন এবং আখিরাতে এর বিনিময়ে চিরসুখের আবাসস্থল দান করূন। আ-মীন।
.
⦁ সংকলন :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, 
আখতার বিন আমীর।

Post a Comment

0 Comments