Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

বিদআত থেকে সাবধান! 01

বিদআত থেকে সাবধান!

Friday, September 07, 2018 7:57 PMAnonymous
বিদআত থেকে সাবধান!
মূল লেখক: ড: শাইখ সালেহ বিন ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ)
অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী
দাঈ ও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।

 বিদ’আত থেকে সাবধান!-১ বিদআত থেকে সাবধান

সুপ্রিয় ভাই, দ্বীনের মধ্যে যখন বিদআতের প্রার্দূভাব দেখা দেয় তখন দ্বীন ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে। এক পযার্যে তা মৃত্যু বরণ করে। তাই বিষয়টির গুরুত্বের কারণে এই ব্লগে ধারাবাহিকভাবে বিদ’আত সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হবে। আলোচনায় আপনাদের যদি কোন বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয় তবে অনুগ্রহ পূর্বক প্রশ্ন করবেন। ইনশআল্লাহ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হবে। তাহলে সবাইকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি। আশাকরি আপনাদেরকে সঙ্গে পাব। আজকের পোষ্টে যে সকল বিষয় আলোচিত হয়েছে সেগুলো হল:
১) বিদআতের সংজ্ঞা (শাব্দিক অর্থ ও ইসলামের পরিভাষায় বিদআত কাকে বলে)
২) বিদআতের প্রকারভেদ।
৩) দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধান।
৪) একটি সর্তকতা (বিদআতকে ভাল ও খারাপ এ দুভাগে ভাগ করা প্রসঙ্গে)।
বিদআতের সংজ্ঞাঃ
বিদআত শব্দটি আরবী البدع শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হল পূর্বের কোন দৃষ্টান্ত ও নমুনা ছাড়াই কোন কিছু সৃষ্টি ও উদ্ভাবন করা। যেমন আল্লাহ বলেছেন, بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
অর্থঃ পূর্বের কোন নমুনা ব্যতীত আল্লাহ তায়া’লা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারাঃ ১১৭) তিনি আরো বলেন: قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ
“হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি প্রথম রাসূল নই। (সূরা আহ্ ক্বাফঃ ৯) অর্থাৎ মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আমিই প্রথম রেস্বলাতের দায়িত্ব নিয়ে আসিনি বরং আমার পূর্বে আরো অনেক রাসূল আগমণ করেছেন।”
ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে এমন বিষয় তৈরী করা, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ছিলনা বরং পরবর্তীতে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
 বিদআতের প্রকারভেদঃ
বিদআত প্রথমতঃ দু’প্রকারঃ-
(১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত
(২) দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত।
পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কশীল সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হল তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন-র্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরও বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আ‘মাল করবে, যে বিষয়ে আমাদের অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।
দ্বীনের ব্যাপারে বিদআতের প্রকারভেদঃ
দ্বীনের মধ্যে বিদআত দু’প্রকার। (১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত এবং (২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।
১) বিশ্বাসের ভিতরে বিদআত। যেমন যাহমীয়া, মু’তাযেলা, রাফেযী এবং অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার আকীদা সমূহ।
২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন আল্লাহ আদেশ দেন নি, এমন বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ-
(১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা,
(২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা,
(৩) শরীয়ত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং
(৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।
প্রথম প্রকারঃ
এমন নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা, ইসলামী শরীয়তের মাঝে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন নতুন কোন নামায, সওম এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী ও অন্যান্য নামে বিভিন্ন ঈদের প্রচলন করা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করা অথবা হ্রাস করা। যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল।
 তৃতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (ﷺ)এর সুন্নাতের বিরোধী।
 চতুর্থ প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন শাবান মাসের ১৫তারিখ দিনের বেলা সওম রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ সওম ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই। সওম নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫তারিখে দিনের বেলা সওম রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।
দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধান
দ্বীনের ব্যাপারে সকল প্রকার বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة
অর্থঃ তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।
রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় তৈরী করবে, যা তার অন্তর্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যত হবে।
তিনি আরও বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আ‘মাল করবে, যার মধ্যে আমাদের আদেশ নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।
উপরের হাদীছগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। তবে এ হারাম বিদআতের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিদআতের কিছু কিছু প্রকার প্রকাশ্য কুফরীরই নামান্তর। যেমন কবরবাসীদের নৈকট্য হানিসলের উদ্দেশ্যে কবরের চতুর্দিকে কাবা ঘরের তাওয়াফের ন্যায় তাওয়াফ করা, কবরের উদ্দেশ্যে পশু যবাই করা, নযর-মান্নত পেশ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও রয়েছে, যা শির্ক না হলেও মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা, কবর উঁচু করা, পাকা করা, কবরের উপর লিখা, কবরের কাছে নামায আদায় করা, দু’আ করা ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও আছে, যা শির্ক বা তার মাধ্যমও নয়, তবে সঠিক আকিদার পরিপন্থী ও বহির্ভুত। যেমন খারেজী, ক্বাদরীয়াও মুর্জিয়াদের আকিদাহ সমূহ। তাছাড়া এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত যেমন বৈরাগী হয়ে সংসার ত্যাগ করা, সূর্যের উত্তাপে দাড়িয়ে সওম পালন করা এবং যৌন উত্তেজনা দমন করার জন্য খাসী হয়ে যাওয়া।
একটি সতর্কতাঃ
আমাদের দেশের কিছু কিছু আলেম বিদআতকে হাসানা এবং সাইয়েআ এদু’ভাগে ভাগ করে থাকে। বিদআতকে এভাবে ভাগ করা সম্পূর্ণ ভুল এবং রাসূল (ﷺ)এর হাদীছের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। আর এই শ্রেণীর আলেমগণ বলে থাকে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী নয়। বরং এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা হাসানা বা উত্তম বিদআত। হাফেয ইবনে রজব (রঃ) বলেন, “প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী” এটি একটি সংক্ষিপ্ত কিন’ পরিপূর্ণ বাক্য। এখানে প্রতিটি বিদআতকেই গোমরাহী বলে সাব্যস- করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বিদআতের কোন প্রকারকেই হাসানা বলেন নি। এই হাদীছটি দ্বীনের অন্যতম মূলনীতির অন-র্ভূক্ত। আল্লাহর রাসূলের বাণী “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা আমাদের অন-র্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” অতএব যে ব্যক্তি কোন নতুন বিধান রচনা করে দ্বীনের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দিবে, তা গোমরাহী বলে বিবেচিত হবে। তা থেকে দ্বীন সম্পূর্ণ মুক্ত। চাই সে বিষয়টি বিশ্বাসগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক অথবা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য আমলগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক।
সুতরাং বিদআতে হাসানার পক্ষে মত প্রকাশকারীদের কোন দলীল নেই। কিছু লোক তারাবীর নামাযের ব্যাপারে উমার (রাঃ) এর উক্তি “এটি কতই না উত্তম বিদআত ” এ কথাটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিদআত আবিষকৃত হয়েছে, যা সালাফে সালেহীনগণ সমর্থন করেছেন। যেমন গ্রন্থাকারে কুরআন একত্রিত করণ, হাদীছ সঙ্কলন করণ ইত্যাদি।
উপরোক্ত যুক্তির উত্তর এই যে, শরীয়তের ভিতরে এ বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি রয়েছে। এগুলো নতুন কোন বিষয় নয়। উমার (রাঃ) এর কথা, “এটি একটি উত্তম বিদআত”, এর দ্বারা তিনি বিদআতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বিদআত বলা হয়, সে অর্থ গ্রহণ করেন নি। মৌলিকভাবে ইসলামী শরীয়তে যে বিষয়ের অসি-ত্ব রয়েছে, তাকে বিদআত বলা হয়নি। এমন বিষয়কে যদি বিদআত বলা হয়, তার অর্থ দাড়ায় জিনিষটি শাব্দিক অর্থে বিদআত, পারিভাষিক অর্থে বিদআত নয়। সুতরাং শরীয়তের পরিভাষায় এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়, যার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
আর গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের পক্ষে দলীল রয়েছে। নবী (ﷺ) কুরআনের আয়াতসমূহ লিখার আদেশ দিয়েছেন। তবে এই লিখাগুলো একস্থানে একত্রিত অবস্থায় ছিলনা। তা ছিল বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সাহাবাগণ তা এক গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। যাতে কুরআনের যথাযথ হেফাযত করা সম্ভব হয়।
তারাবীর নামাযের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, রাসূল (ﷺ) তাঁর সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত পর্যন্ত তারাবীর নামায আদায় করেছেন। ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরবর্তীতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণের প্রত্যেকেই রাসূল (ﷺ) এর জীবিতাবস্থায়ও মৃত্যুর পর একাকী এ নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে উমার (রাঃ) সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করেছেন, যেমনিভাবে তাঁরা রাসূল (ﷺ) এর পিছনে তাঁর ইমামতিতে এ নামায আদায় করতেন। তাই ইহা বিদআত নয়।
হাদীছ লিখিতভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারেও দলীল রয়েছে। রাসূল (ﷺ) কতিপয় সাহাবীর জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ লিখে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণ দেয়ার পর আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবী রাসূল (ﷺ) এর কাছে ভাষণটি লিখে দেয়ার আবেদন করলে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, اكتبوا لأبى شاه)) অর্থাৎ আবু শাহের জন্য আমার আজকের ভাষণটি লিখে দাও। তবে রাসূল (ﷺ)এর যুগে সুনির্দিষ্ট কারণে ব্যাপকভাবে হাদীছ লিখা নিষেধ ছিল। যাতে করে কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে যখন রাসূল (ﷺ) ইনে-কাল করলেন এবং কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরিভুত হলো, তখন মুসলিমগণ হাদীছ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা লিখার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। যারা এ মহান কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়া’লা উত্তম বিনিময় দান করুন। কারণ তারা আল্লাহর কিতাব এবং নবী (ﷺ)এর সুন্নাতকে বিলুপ্তির আশংকা থেকে হেফাজত করেছেন।
বিদ’আত থেকে সাবধান-২
মুসলিম সমাজে বিদআতের অনুপ্রবেশ ও তার কারণ
বিদআতের উৎপত্তিঃ বিদআতের উ পত্তির ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়।
 ১) বিদআত প্রকাশের যুগঃ
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদার যুগের শেষের দিকে মুসলিম জাতির ঈমান ও ইবাদতের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিদআতের প্রকাশ ঘটেছে। যার সংবাদ রাসূল (ﷺ) আগেই আমাদেরকে প্রদান করেছেন এবং বিদআত থেকে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন:
(عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ)
অর্থঃ আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা সে সময় আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। বিদআতী ফির্কাসমূহের মধ্যে কাদরীয়া, মুর্জিয়া, শিয়া এবং খারেজী সমপ্রদায়ের বিদআত সর্বপ্রথম হিজরী দ্বিতীয় শতকে প্রকাশ পায়। এসময় সাহাবাদের অনেকেই জীবিত ছিলেন। তাঁরা এসমস্ত বিদআতী মতবাদের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। অতঃপর মু’তাজেলা সমপ্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। যার ফলে মুসলিমদের মাঝে অসংখ্য ফিতনা-ফাসাদের সৃষ্টি হয় এবং পরস্পরের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। মুসলিম জাতির বিরাট এক অংশ বিদআতী মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অতঃপর সম্মানিত সাহাবাদের যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর সূফীবাদ নামে আর এক নতুন মতবাদ দেখা দেয়। পর্যায়ক্রমে কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ, কবর পাকা করা ও কবরকে কেন্দ্র করে অসংখ্য বিদআতের প্রকাশ ঘটে। এভাবে সময়ের ব্যবধানে সাথে সাথে বিদআতের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন আকার ধারণ করতে থাকে।
২) বিদ’আত প্রকাশের অঞ্চল সমূহঃ
বিদআত প্রকাশের দিক দিয়ে ইসলামী অঞ্চলগুলো কয়েক ভাগে বিভক্ত। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ)এর সাহাবাগণ মোট পাঁচটি শহরে বসবাস করতেন। এ সমস্ত দেশ থেকে ঈমানের আলো বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। শহর পাঁচটি হলঃ মক্কা, মদীনা, বসরা, কুফা ও শাম। এ সমস্ত দেশ থেকে কুরআন, হাদীছ, ফিক্ হ ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিস্তার লাভ করেছিল। পরবর্তীতে মদীনা মুনাওয়ারা ব্যতীত বাকী ৪টি স্থান থেকেই বড় বড় বিদআতগুলির প্রকাশ ঘটেছে। কুফা নগরী থেকে বের হয়েছে শিয়া ও মুর্জিয়াদের বিদআতী কথা ও মতবাদ গুলো। অতঃপর তা অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বসরা শহর থেকে কাদরীয়া, মু’তাজেলাদের বিদআতসহ বিভিন্ন ধরণের ভ্রান্ত ইবাদতের আবির্ভাব হয়ে অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করে। সিরিয়া থেকে বের হয় আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের প্রতি ঘৃণা ও তাঁদের সম্মানে কালীমা লেপন কারীদের বিদআতী কথা-বার্তা। জাহ্ মীয়াদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে খোরাসানের সীমান্তবর্তী কোন এক অঞ্চলে। আর এটি হল সর্বনিকৃষ্ট বিদআত। যে দেশ রাসূল (ﷺ)এর মদীনা থেকে যত দূরে অবস্থিত, সেখানকার বিদআতও তত ভয়াবহ ও জঘন্য। উছমান (রাঃ)এর শাহাদাত বরণের পরপরই বের হয়েছে খারেজী সমপ্রদায় ও তাদের বিদআতী মতবাদগুলো। তবে রাসূল (ﷺ) এর শহর মদীনা এ সমস্ত বিদআত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল। যদিও কোন কোন লোক মদীনাতে অবস্থান করেও গোপনে কিছু কিছু বিদআতী আকীদা পোষণ করত। কিন্তু তারা অপমানিত অবস্থায় মদীনা বাসীদের সাথে বসবাস করত। মদীনাতে তাদের সামাজিক কোন প্রভাব ও মূল্য ছিলনা। একদল ক্বাদরীয়া মতবাদের লোক মদীনাতে লাঞ্ছিত অবস্থায় বসবাস করত। অপর দিকে কুফায় শীয়া ও মুর্জিয়া, বসরায় মুতাজেলা ও বিদআতী নিয়মে ইবাদতকারীদের দল এবং সিরিয়ায় নাসীবীয়া সমপ্রদায়ের লোকেরা প্রকাশ্যে বিদআতের চর্চা করতে থাকে। সহীহ বুখারীতে রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, আখেরী যামানায় দাজ্জালের ফিতনা মদীনাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ইমাম মালেক (রঃ)এর সময়কাল পর্যন্ত মদীনাতে ইলম ও ঈমানের শিক্ষা বর্তমান ছিল। সম্মানিত তিন যুগে মদীনাতে বিদআতের নাম-নিশানা ছিলনা। দ্বীনের মৌলিক বিশ্বাসে আঘাতকারী কোন বিদআতও বের হয়নি। যেমনটি বের হয়েছে অন্যান্য শহর থেকে।
বিদআত প্রকাশের কারণসমূহ
কোন সন্দেহ নেই যে, নিঃশর্তভাবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণই বিদআত ও সকল প্রকার গোমরাহী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থঃ এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের দিকে গমণ করোনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে। (সূরা আনআমঃ ১৫৩) আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)এর বর্ণিত হাদীছে নবী (ﷺ) এআয়াতের অর্থকে অতি সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:
خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثُمَّ تَلَا ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থঃ রাসূল (ﷺ) আমাদের সামনে মাটিতে একটি রেখা টানলেন। সে রেখার উপর হাত রেখে বললেন, এটি হল আল্লাহর পথ। অতঃপর সে রেখার ডানে ও বামে আরো অনেক গুলো রেখা অঙ্কন করে বললেন, এ সবগুলোই পথ। তবে এ সব পথের মাথায় একটি করে শয়তান দাড়িয়ে আছে। সে সদাসর্বদা মানুষকে ঐ পথের দিকে আহবান করছে। একথা বলার পর রাসূল (ﷺ) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ : وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِه
অর্থঃ এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে। (সূরা আনআমঃ ১৫৩) সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাতের পথ থেকে বিমুখ হবে, বিদআতী ও ভ্রান্ত পথগুলো তাকে নিজের দিকে টেনে নিবে।
যে সমস্ত কারণে মুসলিম জাতির ভিতরে বিদআতের উৎপত্তি হয়েছে, সে কারণগুলো সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ-
১) দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ
সময় যতই অতিবাহিত হয়েছে এবং মানুষ যখনই নবুওয়াতের সংস্পর্শ থেকে দূরে অবস্থান করেছে, তখনই ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের কমতি দেখা দিয়েছে এবং মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
অর্থঃ আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। তিনি আরো বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا
অর্থঃ আল্লাহ মানুষের অন্তর থেকে দ্বীনি ইলমকে টেনে বের করে নিবেন না। কিন্তু ইলমকে উঠিয়ে নিবেন আলেমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত যখন কোন আলেম জীবিত থাকবেন না, মানুষেরা তখন মূর্খ লোকদেরকে নিজেদের নেতা নির্বাচন করবে। তাদেরকে দ্বীনের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বিনা ইলমেই তারা ফতোয়াবাজীতে লিপ্ত হবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার সাথে সাথে মানুষদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।
দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও জ্ঞানী লোক ব্যতীত বিদআতের মুকাবেলা করার মত কোন শক্তি নেই। যখন জ্ঞান ও জ্ঞানীগণ উঠে যাবেন, তখন বিদআত ও বিদআতীদের পক্ষে সুযোগ সৃষ্টি হবে।
২) প্রবৃত্তির অনুসরণঃ
এটাই স্বাভাবিক যে, কোন লোক যখন আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (ﷺ) সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে, তখন সে আপন প্রবৃত্তির অনুসরণে লিপ্ত হবে। যেমন আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন:
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنْ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
অর্থঃ অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জেনে নিন যে, তারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সমপ্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না। (সূরা কাসাসঃ ৫০) আল্লাহ আরো বলেন:
أَفَرَأَيْتَ مَنْ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
অর্থঃ আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন? যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে? অতএব তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করনা? (সূরা আল-জাসিয়াঃ ২৩) সুতরাং আপন খেয়াল-খুশীর অনুসরণ বিদআতের পথকে উম্মুক্ত করে।
৩) আলেমদের অন্ধ অনুসরণঃ
আলেম ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ মানুষকে দলীল-প্রমাণের অনুসরণ এবং সত্য জানার আগ্রহ ও তা কবূল করার পথে বিরাট অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন,: وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ
অর্থঃ যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে থাকে আমরা বরং আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না এবং সত্য পথপ্রাপ্তও ছিলনা। (সূরা বাক্বারাঃ ১৭০) বর্তমান যুগের কতক মাজহাবপন্থী, সুফী ও কবর পুজারীদের একই অবস্থা। তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে ডাকা হলে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আমলসমূহ বর্জন করতে বলা হলে তারা তাদের মাজহাব, মাশায়েখ এবং বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে থাকে।
৪) কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য করাঃ
বিধর্মী কাফের-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা নতুন নতুন বিদআত সৃষ্টির বিরাট একটি কারণ। আবু ওয়াকেদ আল- লাইছী (রাঃ)এর হাদীছে একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)এর সাথে হুনাইন যুদ্ধের জন্য বের হলাম। আমরা ছিলাম নতুন মুসলিম। আমরা দেখলাম মুশরিকদের জন্য একটি বড়ই গাছ রয়েছে। তারা সেখান থেকে বরকত লাভের আশায় নিজেদের অস্ত্র ঐ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। গাছটির নাম ছিল জাতু আনওয়াত অর্থাৎ বরকতময় বৃক্ষ। আমরা সে গাছটির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাদের জন্য যেমন বরকতময় বৃক্ষ রয়েছে, আমাদের জন্যও একটি বরকতময় বৃক্ষ নির্ধারণ করে দিন। যাতে আমরা যুদ্ধের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখব এবং বরকত হাসিল করব। রাসূল (ﷺ) তাদের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, “আল্লাহু আকবার” নিশ্চয় এটি একটি পথ। ঐ সত্বার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, তোমরা এমন রীতি-নীতির কথা বললে যেমনটি বলেছিল বনী ইসরাইল সমপ্রদায় আল্লাহর নবী মূসা (আঃ)কে। আল্লাহ বলেন: قَالُوا يَامُوسَى اجْعَل لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ
অর্থঃ তারা বলেছিল, হে মূসা! তাদের জন্য যেমন মা’বূদ রয়েছে, আমাদের জন্যও অনুরূপ একটি মা’বূদ নির্ধারণ করে দিন। মূসা (আঃ) বললেন, নিশ্চয় তোমরা একটি মূর্খ জাতি। (সূরা আরাফঃ ১৩৮) অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন, তোমরা তো দেখছি অবশ্যই অতীত জাতিসমূহের পথের অনুসরণ করবে।
এই হাদীছের মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে, কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করাই বনী ইসরাঈলদেরকে তাদের নবীর কাছে এরকম একটি জঘন্য আবদার করতে উৎসাহিত করেছে। তাদের আবদার ছিল, তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য একটি মাবূদ নির্ধারণ করে দেয়া হোক, তারা সে মাবূদের এবাদত করবে এবং তা থেকে বরকত হাসিল করবে। বর্তমান কালেও একই অবস্থা। অধিকাংশ মুসলিম বিদআত ও শির্কী কর্মসমূহে কাফের-মুশরেকদের অনুসরণ করে চলেছে। যেমন ঈদে মীলাদুন্ নবী, বিভিন্ন উপলক্ষে দিন ও সপ্তাহ পালন করা, ধর্মীয় বিভিন্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠান পালন করা, নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিমূর্তি তৈরী করা, স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করা, মাতম করা, মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার বিদআতের প্রচলন করা, কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা ইত্যাদি।
 বিদআত থেকে সাবধান-৩
বিদআত সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনার তৃতীয় পর্বে আজকের পোস্টে মোট চারটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। যথা:
১) বিদআতীদের ব্যাপারে মুসলিম মিল্লাতের আলেমদের অবস্থান।
২) বিদআতীদের প্রতিবাদে আলেমগণের পদ্ধতি।
৩) সমকালীন বহুল প্রচলিত কতিপয় বিদআতের উদাহরণ।
৪) রবীউল আওয়াল মাসে নবী (ﷺ) এর জন্ম দিবস উপলক্ষে মীলা দ মাহফিল উদ্ যাপন করা।
তাহলে আসুন আজকের বিষয়গুলো পড়ার চেষ্টা করি।
বিদআতীদের ব্যাপারে মুসলিম মিল্লাতের আলেমদের অবস্থান
যুগে যুগে আহ্ লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমগণ বিদআতীদের বিদআতী কার্য-কলাপের সামনে কখনই চুপ থাকেন নি। বরং সব সময়ই প্রতিবাদ করত: তাদের কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিয়ে এসেছেন। পাঠক সমীপে এ সম্পর্কে কতিপয় দৃষ্টান্ত উপাস্থাপন করা হল:
১) উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু দারদা রাগান্বিত অবস্থায় একদা আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! জামাতে নামায আদায় ব্যতীত মুসলিমদের মধ্যে আমি নবী মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাতের কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।
২) আমর বিন ইয়াহয়া হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার পিতাকে আমার দাদা হতে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমরা একবার ফজরের নামাযের পূর্বে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)এর ঘরের দরজার সামনে বসা ছিলাম। উদ্দেশ্য হল, তিনি যখন বের হবেন, আমরা তার সাথে পায়ে হেঁটে মসজিদের দিকে যাত্রা করব। এমন সময় আমাদের কাছে আবু মূসা আশআরী (রাঃ) আগমন করে বললেন, আবু আব্দুর রাহমান (ইবনে মাসউদের উপনাম) কি বের হয়েছেন? আমরা বললাম, এখনও বের হন নি। তিনিও আমাদের সাথে বসে গেলেন। তিনি যখন বের হলেন, আমরা সকলেই তাঁর কাছে গেলাম। আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বললেন, হে আবু আব্দুর রাহমান! আমি মসজিদে এখনই একটি নতুন বিষয় দেখে আসলাম। আলহামদু লিল্লাহ, এতে খারাপ কিছু দেখিনি। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন সেটি কি? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আপনার হায়াত দীর্ঘ হলে আপনিও তা দেখতে পাবেন। আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বললেন, আমি দেখলাম, মসজিদে একদল লোক বৃত্তাকারে বসে নামাযের অপেক্ষা করছে। প্রত্যেক দলের মাঝখানে একজন লোক রয়েছে। আর সবার হাতে রয়েছে ছোট ছোট পাথর। মাঝখানের লোকটি বলছে, একশবার আল্লাহু আঁকবার পাঠ কর। এতে সবাই একশবার আল্লাহ আকবার করে। তএরপর বলে, একশবার আল-হাম্ দুলিল্লাহ পাঠ কর। এ কথা শুনে সবাই একশবার আ-লহাম্ দু লিল্লাহ পাঠ করে থাকে। তারপর লোকটি বলে, এবার একশবার সুবহানাল্লাহ্ পাঠ কর। সবাই একশবার সুবহানাল্লাহ্ পাঠ করে থাকে। এ কথা শুনে ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, তুমি তাদেরকে তাদের পাপের কাজগুলো গণনা করে রাখতে বললে না কেন? আর এটা বললে না কেন যে, তাদের নেকীর কাজগুলো থেকে একটি নেকীও নষ্ট হবে না। কাজেই এগুলো হিসাব করে রাখার কোন দরকার নেই। অতঃপর ইবনে মাসউদ (রাঃ) চলতে থাকলেন। আমরাও তার সাথে চললাম এবং একটি হালাকার (বৈঠকের) কাছে এসে উপস্থিত হলাম। তিনি তাদের কাছে দাড়িয়ে বললেন, একি করছ তোমরা? তারা সকলেই বলল, পাথরের মাধ্যমে গণনা করে আমরা তাকবীর, তাসবীহ্ ইত্যাদি পাঠ করছি। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, তাহলে তোমরা তোমাদের পাপের কাজগুলোর হিসাব কর। কারণ পাপের কাজগুলো হিসাব করে তা থেকে তাওবা করা দরকার। আমি এ ব্যাপারে জিম্মাদার হলাম যে তোমাদের ভাল কাজগুলোর একটি ভাল কাজও নষ্ট হবে না। এ কথা বলার কারণ এই যে আল্লাহর কাছে কারও আ‘মাল বিনষ্ট হয়না। বরং একটি আমলের বিনিময়ে দশটি ছাওয়াব দেয়া হয় এবং দশ থেকে সাত শত গুণ পযর্ন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ (ﷺ)এর উম্মত! অমঙ্গল হোক তোমাদের! কিসে তোমাদেরকে এত তাড়াতাড়ি ধ্বংস করল?!! এখনও নবী মুহাম্মদের (ﷺ) অসংখ্য সাহাবী জীবিত আছেন। এই তো রসূল (ﷺ) এর কাপড় এখনও পুরাতন হয়নি। তাঁর ব্যবহারকৃত থালা-বাসনগুলো এখনও ভেঙ্গে যায়নি। ঐ সত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তোমরা যে দ্বীন তৈরী করেছ তা কি মুহাম্মদের দ্বীন হতে উত্তম? না তোমরা গোমরাহীর দ্বার উন্মুক্ত করেছ? তারা বলল, হে আবু আব্দুর রাহমান! আমরা এর মাধ্যমে কল্যাণ ছাড়া অন্য কোন ই”ছা করিনি। তিনি বললেন অনেক কল্যাণকামী আছে, সে তার উদ্দেশ্য পযর্ন্ত পৌঁছতে পারে না। আল্লাহর নবী (ﷺ) আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, একটি দল কুরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু কুরআন তাদের গলদেশের ভিতরে প্রবেশ করবে না। আল্লাহর শপথ করে বলছি, মনে হয় তাদের অধিকাংশই তোমাদের মধ্য থেকে বের হবে। অতঃপর ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাদেরকে ছেড়ে চলে আসলেন। আমর ইবনু সালামা (রাঃ) বলেন, আমরা তাদের অধিকাংশকেই দেখলাম, নাহ্ রাওয়ানের যুদ্ধে খারেজীদের সাথে আমাদের বির”দ্ধে একত্রিত হয়েছে।
৩) একজন লোক ইমাম মালিক (রঃ)এর নিকট আগমন করে বলল, আমি কোথা হতে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, রসূল (সসাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহ্ রাম বাঁধার জন্য যে সমস্ত স’স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধ। লোকটি বলল, আমি যদি রসূল (সসাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্ধারিত স’ান থেকে আরো একটু দূর হতে ইহরাম বাঁধি, তাহলে কি বৈধ হবেনা? ইমাম মালিক (রঃ) বললেন, আমি ইহাকে বৈধ মনে করিনা। সে বলল, আপনি ইহার মধ্যে অপছন্দের কি দেখলেন? তিনি বললেন, আমি তোমার উপর ফিত্ নার ভয় করছি। সে বলল, ভাল কাজ বেশী করে করার ভিতর ফিত্ নার কি আছে? ইমাম মালিক লোকটির এ কথা শুনে বললেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন: فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থঃ অতএব, যারা তাঁর নবীর (ﷺ) আদেশের বির”দ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিতনা (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাসি- তাদেরকে আক্রমণ করবে। (সূরা নূর: ৬৩) এর চেয়ে বড় মসিবত আর কি হতে পারে যে, তুমি এমন একটি ফজীলতের মাধ্যমে নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করতে চাচ্ছ, যার মাধ্যমে স্বয়ং রসূল (সসাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করেন নি।
বিদআতের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে সালাফদের থেকে এমনি আরো অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ কয়েকটি উদাহরণই পাঠক সমাজের জন্য পেশ করা হল। আশা করি তাই যথেষ্ট হবে।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)<> -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- https://rasikulindia.blogspot.comesoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments