Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?

▌বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?
·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

কতিপয় বিদ‘আতী একটি অদ্ভুত অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। তারা বলে, বর্তমান যুগের পরিস্থিতি সালাফদের যুগের পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন। সুতরাং সালাফদের মানহাজ তাঁদের যুগের জন্য উপযোগী হলেও, বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী নয়। অর্থাৎ, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগের জন্য পারফেক্ট নয়। ধূর্ত বিদ‘আতীদের এই অভিনব কৌশল কতইনা নিকৃষ্ট! আল্লাহ’র কাছে এদের থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
সালাফী মানহাজের ব্যাপারে ধূর্ত বিদ‘আতীদের এ জাতীয় কূটকৌশলের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

ومنهم من يقول لسنا مكلفين بفقه السلف وعلم السلف، لسنا مكلفين نشق طريقنا نحن، نستنبط الأحكام من جديد، نوجد لنا فقهاً جديداً هذه فقه قديم، فقه السلف فقه قديم، ويقولون ما يصلح لهذا الزمان هو صالح لزمانهم، زماننا غير فيزهدون في فقه السلف، ويدعون إلى فقه جديد، كثر هذا في الجرائد والمجلات من الكُتاب وأهل الضلال، يريدون أن يفلتوا أيدينا من منهج السلف، لأننا إذا لم نعرف مذهب السلف وزهدنا به ولم ندرسه، فإنه لا يكفي الانتساب إلى السلف من غير علم ومن غير بصيرة بمذهبه، هذا ما يريدون منه، يريدون أن نترك مذهب السلف وفقه السلف وعلم السلف ونحدث فقهاً جديدا كما يقولون يصلح لهذا الزمان مع أن هذا كذب، وشريعة الإسلام صالحة لكل زمان ومكان إلى أن تقوم الساعة.
فمنهج السلف صالح لكل زمان ومكان، نور من الله عز وجل، لا يزهدك فيه كلام هؤلاء المخذلين أو الضالين لا يزهدك فيه.
الإمام مالك رحمه الله يقول: «لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها»، الذي أصلحها أولها ما هو؟
هو الكتاب والسنة واتباع الرسول صلى الله عليه وسلم، العمل بالقرآن والعمل بالسنة هذا هو الذي أصلح أول الأمة ولا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها.

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “আমরা সালাফদের ফিক্বহ ও সালাফদের ‘ইলমের ব্যাপারে শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা এর আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা নিজেরাই আমাদের রাস্তা তৈরি করব। আমরা নতুন করে বিধিবিধান উদ্ঘাটন করব। আমরা আমাদের জন্য নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করব। এগুলো প্রাচীন ফিক্বহ। সালাফদের ফিক্বহ হলো প্রাচীন ফিক্বহ।” তারা বলে, “এটি (সালাফদের ফিক্বহ) এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, এটি তাদের যুগের জন্য উপযোগী ছিল, আমাদের যুগ ভিন্নতর।” তারা সালাফদের ফিক্বহ ত্যাগ করতে বলে, আর নব্য ফিক্বহের দিকে আহ্বান করে। বিভিন্ন কলামিস্ট ও পথভ্রষ্টদের মাধ্যমে এই বিষয়টি পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আমাদের হাতকে সালাফদের মানহাজ থেকে মুক্ত করতে চায়।

কেননা আমরা যখন সালাফদের মানহাজ জানব না, সে ব্যাপারে অনাগ্রহী হব এবং তা অধ্যয়ন করব না, তখন সালাফদের মানহাজের ব্যাপারে না জেনে সালাফদের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করা যথেষ্ট হবে না। আর তারা এটাই চায়। তারা চায় যে, আমরা সালাফদের মানহাজ, ফিক্বহ ও ‘ইলম পরিত্যাগ করি, আর তাদের ভাষ্য মোতাবেক এই যুগের জন্য উপযোগী নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করি, যদিও তাদের ভাষ্য মিথ্যা। ইসলামী শরিয়ত কিয়ামত অবধি সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। এটি মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আগত নূর (জ্যোতি)। ওই নিরাশকারী ভ্রষ্টদের কথা যেন তোমাকে এ থেকে অনাগ্রহী না করে।

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।” এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, সেটা কী? তা হলো কিতাব, সুন্নাহ এবং রাসূল ﷺ এর অনুসরণ। কুরআনের প্রতি আমল এবং সুন্নাহ’র প্রতি আমল। এটাই এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছে। আর এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই পারে এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফিস সালিহি ওয়া হাজাতুল উম্মাতি ইলাইহি”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক:www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/15030.]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবুল হারিস মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুর রহমান বিন আবূ যি’ব—ইবনু আবী যি’ব নামে প্রসিদ্ধ—(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৯ হি.] বলেছেন,

إن الحق لا تنقله الأزمان عن مواضعه ، ولا تغيره عن وجهه.

“নিশ্চয় যুগসমূহ হককে তার যথাস্থান থেকে স্থানান্তরিত করে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা থেকেও তাকে পরিবর্তিত করে না।” [ইমাম আবূ সুলাইমান আর-রাব‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-জুয’উ ফীহি মিন আখবারি ইবনি আবী যি’ব; পৃষ্ঠা: ৫৮; মুআসসাসাতুর রাইয়্যান, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); গৃহীত: সাহাব ডট নেট]

অর্থাৎ, হক অপরিবর্তিত। হক সকল যুগের জন্যই উপযোগী। সুতরাং আধুনিক যুগে সালাফদের মানহাজ অনুপযোগী, এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

·
ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] —যিনি কিনা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছাকাছি যুগের মানুষ ছিলেন এবং ইমাম আহমাদের ছাত্রদের ছাত্র ছিলেন—বলেছেন,

فانظر رحمك الله كلّ من سمعت من كلامه من أهل زمانك خاصة فلا تَعْجَلَّنَ، ولا تدخلنّ في شيء منه حتى تسأل وتنظر هل تكلم فيه أحد من أصحاب النبي ﷺ ورضي الله عنهم أو أحد من العلماء؟ فإن وجدت فيه أثراً عنهم فتمسك به، ولا تُجاوزه لشيء، ولا تختار عليه شيئاً فتسقط في النار.

“আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি যাদের কথা শুনো, তাদের প্রত্যেককে লক্ষ করো, বিশেষ করে তোমার যুগের লোকদেরকে। তুমি তাড়াহুড়া কোরো না। তুমি তাদের কোন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না তুমি প্রশ্ন করছ, আর লক্ষ করছ যে, এ ব্যাপারে কি নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ, অথবা (নির্ভরযোগ্য ও সালাফদের মানহাজের অনুসারী এমন) ‘আলিমদের কেউ কথা বলেছেন? তুমি যদি এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো কথা পাও, তাহলে তা আঁকড়ে ধরো। তুমি কোনো কিছুর জন্যই তা অতিক্রম কোরো না। তুমি তার ওপর কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিয়ো না। নতুবা তুমি জাহান্নামে পতিত হবে।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

ইমাম বারবাহারী’র ওপর আল্লাহ রহম করুন। তাঁর কথা পড়ে মনে হচ্ছে, তিনি যেন কথাগুলো এই যুগের ধূর্ত বিদ‘আতীদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন।

·
❏ বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইখওয়ানী দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূরের কুফরি বক্তব্য ও তার জবাব:

সুরূরিয়্যাহ মানহাজের প্রবক্তা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূর বিন নায়িফ যাইনুল ‘আবিদীন [মৃত: ২০১৬ খ্রি.] বলেছেন,

نظرت في كتب العقيدة فرأيت أنها كتبت في غير عصرنا وكانت حلولاً لقضايا ومشكلات العصر الذي كتبت فيه رغم أهميتها ورغم تشابهه المشكلات أحياناً، ولعصرنا مشكلاته التي تحتاج إلى حلول جديدة، ومن ثم فأسلوب كتب العقيدة فيه كثير من الجفاف لأنها نصوص وأحكام، ولهذا أعرض معظم الشباب عنها وزهدوا بها.

“আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে, এগুলো আমাদের যুগে লেখা হয়নি। এগুলো সে যুগের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকারী ছিল, যে যুগে এগুলো কখনো কখনো তার গুরুত্ব এবং (সে সময়ের) সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার কারণে লেখা হয়েছিল। আমাদের যুগেরও বিভিন্ন সমস্যা আছে, যেগুলো নতুন সমাধানের মুখাপেক্ষী। আর ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” [মুহাম্মাদ সুরূর, মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৫; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا غلط عظيم كتب العقيدة: الصحيح أنها ليست جفاءً، قال الله، قال الرسول. فإذا كان يصف القرآن والسنة بأنها جفاء؛ فهذا رِدَّة عن الإسلام، هذه عبارة سقيمة خبيثة.

“এটি একটি মহাভুল। সঠিক কথা হলো—‘আক্বীদাহর বইপুস্তক বাতিল নয়। এগুলো স্রেফ ক্বালাল্লাহ, আর ক্বালার রাসূল (আল্লাহ ও রাসূলের কথা)। সে যদি কুরআন-সুন্নাহকে বাতিল বলে থাকে, তবে তা ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল। এটি একটি নোংরা রোগাগ্রস্ত কথা।”
এছাড়াও তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “বইটিতে যদি এই কথা থেকে থাকে, তাহলে তা বিক্রি করা না-জায়েজ। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক (إن كان فيه هذا القول فلا يجوز بيعه، ويجب تمزيقه)।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রদত্ত “আফাতুল লিসান”– শীর্ষক লেকচার; লেকচার প্রদানের তারিখ: ২৯শে যুলহাজ্ব, ১৪১৩ হিজরী; অনূদিত অংশের সময়: ৩৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড থেকে ৩৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত; লেকচার লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=QfoTo2MVqnY (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا القائل من دعاة الضلال؛ نسأل الله العافية فيجب أن نَحْذَر من كتابه هذا، وأن نُحذِّر منه. وأذكر لكم أن الشيخ محمد أمان الجامي – وفقه الله – قد أملى شريطًا كاملاً على هذه الكلمة «أن كتب العقيدة نصوص وأحكام …» رد عليه ردًا بليغًا فعليكم أن تبحثوا عن الشريط وأن تنشروه بين المسلمين، حتى يحذروا من هذا الخبث، ومن هذا الشر الوافد إلى بلاد المسلمين.
نعم؛ هذا شريط قيم جدًا، جزا الله خيرًا شيخنا الشيخ محمد أمان الجامي، ونصر به الإسلام والمسلمين.

“এই কথার কথক পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা আল্লাহ’র কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তার এই বই থেকে সতর্ক থাকা এবং (মানুষকে) তা থেকে সতর্ক করা আবশ্যক। আমি তোমাদেরকে বলছি, শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (আল্লাহ তাঁকে তাওফীক্ব দান করুন) এই কথা—“আক্বীদাহর বইপুস্তক স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান”– এর ব্যাপারে তাকে পূর্ণরূপে রদ করে একটি অডিও ক্লিপ (টেপ/ক্যাসেট) বের করেছেন। তোমাদের জন্য এই অডিও ক্লিপটি খুঁজে বের করে তা মুসলিমদের মধ্যে প্রচার করা আবশ্যক। যাতে করে মুসলিমরা এই দুষ্কর্ম এবং মুসলিমদের দেশে আগত এই অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
হ্যাঁ, এটি খুবই মূল্যবান একটি অডিও ক্লিপ। আল্লাহ আমাদের শাইখ আশ-শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের উপকৃত করুন।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৯; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
ইয়েমেনের প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৬ হি./২০১৫ খ্রি.] সুরূরিয়্যাহ মানহাজের ভুলত্রুটি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন,

المأخذ الأول : ولاؤهم لمحمد سرور وقد قال : كلمة (الكفر)، وهذه الكلمة هي التي ذكرها في كتابه «منهج الأنبياء في الدعوة إلى الله»، إذ قال : «نظرت في كتب العقيدة ... إلى أن قال: فرأيت أن أسلوبها فيه كثير من الجفاف ، لأنها نصوص وأحكام ولهذا أعرض عنها معظم الشباب» وهذه الكلمة لما سُئل عنها الشيخ ابن عثيمين قال هذه الكلمة كفر، ولما سئل عنها الشيخ الفوزان قال : هذا كفر، من قال هذا ؟! قالوا هذا محمد سرور قال : هذا رجل خبيث، ولما سئل عنها الشيخ ابن باز – إلا أنها حرفت على السائل – بكلمة (جفاء) بدل (جفاف) فقال : هذه ردة وكلمة خبيثة قالوا يا شيخ ما حكم بيع هذا الكتاب والقراءة فيه؟! قال: يحرم بيعه ويجب تمزيقه. وعام 1408هـ جاء محمد سرور بنفسه إلى دماج وأنا حين ذاك موجود، فألقى محاضرة بعد المغرب ولم أكن قد علمت أنه سطر هذه الكلمة الخبيثة في كتابه المذكور من قبل أربع سنين حتى سمعتها منه مشافهة قالها بلسانه بأن كتب العقيدة فيها كثير من الجفاف ولما انتهى من كلمته قال لي الشيخ مقبل تفضل تكلم وكان محمد سرور موجوداً فقلت: إن هذا الكلام على كتب العقيدة ووصفها بأن فيها كثيراً من الجفاف لا يجوز وهذا حرام ويجب على المسلم أن يعظم كلام الله وكلام رسول الله، والعقيدة هي أساس ديننا، ولا قبول للأعمال إلا أن تكون موحداً لله سبحانه وتعالى ومن ذوي العقيدة الصافية ... الخ، وظهر عليه الغضب والإنفعال ولما انتهينا من صلاة العشاء ذهبنا إلى بيت الشيخ مقبل –حفظه الله– أيضاً كان كالذي يأكل نفسه ما هو موافق على ما قلنا في رد ظلمه وعدوانه على كتب العقيدة وبعد أربع سنين من ذلك الحين تأتي كلمة الشيخ عبدالعزيز بن باز –حفظه الله– ثم تتابع كلام أهل العلم كالشيخ الفوزان والشيخ ابن عثيمين.

“প্রথম ভুল: তারা (সুরূরীরা) মুহাম্মাদ সুরূরের জন্য মিত্রতা স্থাপন করে। অথচ সে কুফরি কথা বলেছে। এই কথা সে তার লেখা “মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। সে বলেছে, “আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে... ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” এই কথার ব্যাপারে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কথা কুফর।’ এ ব্যাপারে শাইখ ফাওযানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি কুফর। কে বলেছে এই কথা?!’ তাঁকে বলা হয়েছে, ‘এই লোক মুহাম্মাদ সুরূর।’ তখন তিনি বলেন, ‘এ তো খবিস লোক।’ তার ব্যাপারে শাইখ ইবনু বাযকে প্রশ্ন করা হলে—তবে প্রশ্নকারী জাফাফ (শুষ্কতা) শব্দের পরিবর্তে জাফা (বাতিল) বলেছে—তিনি বলেন, ‘এটি রিদ্দাহ তথা মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল, এটি জঘন্য কথা।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এই বই বিক্রি ও তা পড়ার বিধান কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘বইটি বিক্রি করা নাজায়েয। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক।’

১৪০৮ হিজরীতে স্বয়ং মুহাম্মাদ সুরূর দাম্মাজে এসেছিল। আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সে মাগরিবের পর বক্তব্য দিল। আমি জানতাম না যে, সে এই জঘন্য কথা চার বছর আগেই তার উল্লিখিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছে, যা আমি সরাসরি তার মুখ থেকে শুনেছি। সে তার জবানে বলেছে যে, ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকে শুষ্কতা রয়েছে। সে যখন তার কথা শেষ করল, তখন শাইখ মুক্ববিল আমাকে বললেন, ‘এসো, কিছু কথা বলো।’ তখনও মুহাম্মাদ সুরূর উপস্থিত রয়েছে। আমি তখন বললাম, “ ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহে শুষ্কতা রয়েছে—এরূপ বলা জায়েজ নয়, এটি হারাম। আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রাসূলের কথাকে সম্মান করা মুসলিমের ওপর আবশ্যক। ‘আক্বীদাহ আমাদের দ্বীনের মূলভিত্তি। মহান আল্লাহকে এক গণ্যকারী (তাওহীদবাদী) এবং বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত কারও আমল কবুল করা হবে না।...”

তার মধ্যে ক্রোধ ও উত্তেজনা দেখা গেল। আমরা ‘ইশার সালাত শেষ করে শাইখ মুক্ববিল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বাসায় গেলাম। সে যেন (ক্রোধে) নিজেকে খেয়ে ফেলছিল। ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে তার বিদ্বেষ ও জুলুমের ব্যাপারে আমরা যা বলেছি, সে ব্যাপারে সে আমাদের সাথে একমত ছিল না। এই ঘটনার চার বছর পর এ ব্যাপারে শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য এসেছে। তারপর অন্যান্য ‘আলিমগণের বক্তব্য এসেছে। যেমন: শাইখ ফাওযান, শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন।” [শাইখ ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “ ‘ইশরূনা মা’খাযান ‘আলাস সুরূরিয়্যাহ”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক:www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=51016.]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يزعم بعض الناس أن منهج أهل السنة و الجماعة لم يعد مناسباً لهذا العصر ، مستدلين بأن الضوابط الشرعية التي يراها أهل السنة و الجماعة لا يمكن أن تتحقق اليوم؟

“কতিপয় লোক মনে করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী হিসেবে বিবেচিত নয়; এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত যেসব শার‘ঈ মূলনীতির মত পোষণ করে, সেগুলো বর্তমান সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

الذي يرى أن منهج السلف الصالح لم يعد صالحاً لهذا الزمان، هذا يعتبر ضالاً مضللاً؛ لأن منهج السلف الصالح هو المنهج الذي أمرنا الله باتباعه حتى تقوم الساعة، يقول ﷺ : فإنه من يعش منكم فسوف يرى اختلافاً كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسكوا بها وعضّوا عليها بالنواجذ.
وهذا خطاب للأمة إلى أن تقوم الساعة، وهذا يدل على أنه لابد من السير على منهج السلف، وأن منهج السلف صالح لكل زمان ومكان، والله سبحانه وتعالى يقول : وَالسَّابِقُونَ الأوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ [التوبة : ١٠٠] وهذا يشمل الأمة إلى أن تقوم الساعة.
فالواجب عليها أن تتابع منهج السابقين الأولين من المهاجرين و الأنصار ، و الإمام مالك بن أنس يقول : لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلح أولها.
فالذي يريد أن يعزل الأمة عن ماضيها ويعزل الأمة عن السلف الصالح يريد الشر بالمسلمين، ويريد تغيير هذا الإسلام ويريد إحداث البدع و المخالفات، وهذا يجب رفضه ويجب قطع حجته و التحذير من شره، لأنه لابد من التمسك بمنهج السلف والاقتداء بالسلف ولابد من السير على منهج السلف.
وذلك في كتاب الله عز وجل وفي سنة رسوله ﷺ كما ذكرنا، فالذي يريد قطع خلف الأمة عن سلفها في الأرض يجب أن يرفض قوله وأن يرد قوله وأن يحذر منه، والذين عرف عنهم هذا القول السيء لا عبرة بهم.

“যে মনে করে, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, সে নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ তো সেই মানহাজ, কেয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে মানহাজের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)

এই সম্বোধন কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহ’র উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, অবশ্যই সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করতে হবে, আর ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। মহান আল্লাহ বলেছেন, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী এবং যারা উত্তমরূপে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও আল্লাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” (সূরাহ তাওবাহ: ১০০) মহান আল্লাহ’র এই বাণী কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহকে শামিল করে।

উম্মাহ’র ওপর অবশ্য করণীয় হলো, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী, তাঁদের মানহাজ অনুসরণ করা। ইমাম মালিক বিন আনাস বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।”

সুতরাং যে ব্যক্তি উম্মাহকে তার অতীত থেকে আলাদা করতে চায়, উম্মাহকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের থেকে আলাদা করতে চায়, সে মূলত মুসলিমদের অনিষ্ট কামনা করে। সে এই ইসলামকে পরিবর্তন করতে চায় এবং বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড উদ্ভাবন করতে চায়। তাকে বর্জন করা, তার দলিল কর্তন করা এবং তার অনিষ্ট থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। কেননা অবশ্যই সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরতে হবে এবং সালাফদের অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই সালাফদের মানহাজে পথ চলতে হবে।

আর এটি মহান আল্লাহ’র কিতাব এবং তাঁর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ’য় রয়েছে, যেমনটি আমরা উল্লেখ করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি পৃথিবীতে এই উম্মাহ’র খালাফকে (শেষ প্রজন্ম) তার সালাফদের (প্রথম প্রজন্ম) থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, সে ব্যক্তির কথা প্রত্যাখ্যান করা, তার কথা খণ্ডন করা এবং তার থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাদের নিকট থেকে এই খারাপ কথা এসেছে বলে জানা গেছে, তাদের কোনো মূল্য নেই।” [ড. ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আর-রিফা‘ঈ, মুরাজা‘আতুন ফিল ফিক্বহিল ওয়াক্বি‘ইস সিয়াসিয়্যি ওয়াল ফিকরী (শাইখ ইবনু বায, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান এবং শাইখ সালিহ আস-সাদলানের সাথে কথোপকথন); পৃষ্ঠা: ৫৫-৫৬; দারুল মা‘আরিজিদ দাওলিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগেও গ্রহণযোগ্য। যারা বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ অগ্রহনযোগ্য—বলে প্রচার করে, তারা বিদ‘আতী। আল্লাহ আমাদেরকে ধূর্ত বিদ‘আতীদের সৃষ্ট যাবতীয় সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments