Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

▌বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি
·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

আমাদের অগ্রবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ ইমামদের সর্বজনগৃহীত একটি নীতি ছিল—বিদ‘আতীদের সাথে কেউ যেন ওঠাবসা বা চলাফেরা বা মেলামেশা না করে। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের শ্রদ্ধেয় ইমাম, শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আহলুস সুন্নাহ’র মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

أصول السنة عندنا : ترك الخصومات والجلوس مع أصحاب الأهواء.

“আমাদের নিকট সুন্নাহ’র মূলনীতি হচ্ছে, বিদ‘আতীদের সাথে তর্কবিতর্ক এবং (তাদের সাথে) ওঠাবসা বর্জন করা।” [ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ), উসূলুস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩; তারিখ ও প্রকাশনার বিহীন; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

·
এই মূলনীতি গৃহীত হয়েছে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীবর্গ এবং তাঁদের পরবর্তী অনুসারীগণ কর্তৃক অবলম্বিত মানহাজ থেকে।

আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “এক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, ‘সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।’ এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নাবী ﷺ আনন্দ সহকারে তার সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথেই আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন।’ তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “হে ‘আইশাহ, তুমি কখনো আমাকে অশালীন দেখেছ? কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬০৩২; সাহীহ মুসলিম, হা/২৫৯১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ, মাদীনাহ’র শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুফতী, ইমাম সুলাইমান বিন ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বানূ তামীম গোত্রে সাবীগ বিন ‘ইসল নামে এক ব্যক্তি ছিল। একবার সে মাদীনাহ’য় আগমন করে। তার কাছে বেশ কিছু গ্রন্থ ছিল। সে লোকদেরকে কুরআনের মুতাশাবিহ তথা দ্ব্যর্থবোধক আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল। ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাকে ডেকে পাঠান। আর তার জন্য তিনি খেজুর গাছের (কাঁদির) অনেকগুলো শুকনো দণ্ড প্রস্তুত করেন। সে যখন তাঁর নিকটে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করে, তখন তিনি বলেন, ‘তুমি কে?’ সে বলে, ‘আমি আল্লাহ’র গোলাম সাবীগ।’ ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আর আমি হলাম আল্লাহ’র গোলাম ‘উমার।’ এই বলে তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ওই প্রস্তুতকৃত শুকনো খর্জূর দণ্ডগুলো দিয়ে পিটাতে লাগলেন। তিনি তাকে মারতেই থাকলেন, এমনকি মারতে মারতে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন, আর ওই ব্যক্তির মুখ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। সে বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন, যথেষ্ট হয়েছে। আল্লাহ’র কসম, আমার মাথায় যা (ভ্রান্ত বিশ্বাস) ছিল তা উধাও হয়ে গেছে’।” [ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৩৮; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬০; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

ইবনু যুর‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সাবীগ বিন ‘ইসলকে বসরায় দেখেছি। সে যেন খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত এক উট, সে (লোকদের) বৈঠকগুলোতে যেত। যখনই সে কোনো বৈঠকে বসত, তখনই ওই বৈঠকের লোকেরা উঠে চলে যেত এবং তাকে বর্জন করত। সে যদি এমন সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বসত যারা তাকে চিনে না, তাহলে অপর বৈঠকের লোকেরা তাদের ডাক দিয়ে বলত, আমীরুল মু’মিনীনের কড়া নির্দেশ আছে (অর্থাৎ, ওই লোককে পরিত্যাগ করো)।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ১১৪০; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬১]

·
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,

من أحب أن يكرم دينه فليعتزل مجالسة أصحاب الأهواء، فإن مجالستهم ألصق من الجرب.

“যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সম্মান করতে পছন্দ করে, সে যেন বিদ‘আতীদের সংস্রব বর্জন করে। কেননা বিদ‘আতীদের সংস্রব খোস-পাঁচড়ার চেয়েও অধিক সংক্রামক।” [ইমাম ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহয়ু ‘আনহা; আসার নং: ১৩১; পৃষ্ঠা: ৯৬; মাকতাবাতু ইবনি তাইমিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন,

لا تجالس أهل الأهواء فإن مجالستهم ممرضة للقلوب.

“তুমি বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা তাদের সাথে ওঠাবসা অন্তরে রোগ সৃষ্টি করে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৭১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,

لا تجلس مع صاحب بدعة، فإني أخاف أن ينزل عليك اللعنة.

“তুমি বিদ‘আতীর সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমার উপর লা‘নাত বর্ষণ করা হবে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৪১; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৬২]

ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] আরও বলেছেন,

ومن جلس مع صاحب بدعة فاحذره، ومن جلس مع صاحب البدعة لم يعط الحكمة، وأحب أن يكون بيني وبين صاحب بدعة حصن من حديد، آكل مع اليهودي والنصراني أحب إلي من أن آكل عند صاحب بدعة.

“যে ব্যক্তি বিদ‘আতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি থেকে সাবধান থাক। যে ব্যক্তি কোনো বিদ‘আতীর সাথে বসে, তাকে হিকমাহ (প্রজ্ঞা) দেওয়া হয় না। আমি তো এটা পছন্দ করি যে, আমার ও বিদ‘আতীর মধ্যে একটি লোহার কেল্লা (স্থাপিত) হবে। কোনো বিদ‘আতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টানের নিকট খাওয়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।” [আবূ নু‘আইম (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১০৩; ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৪৯ (শব্দগুচ্ছ লালাকাঈ’র)]

·
শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ নু‘আইম ফাদ্বল বিন ‘আমর আত তাইমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৮ হি.] বলেছেন,

دخل الثوري يوم الجمعة فإذا الحسن بن صالح بن حي يصلي، فقال: نعوذ بالله من خشوع النفاق وأخذ بنعليه فتحول.

“এক জুমু‘আহর দিন সুফইয়ান সাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] মাসজিদে প্রবেশ করলেন। সে সময় (বিদ‘আতী) হাসান বিন সালিহ বিন হাই সালাত পড়ছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, ‘আমরা আল্লাহ’র কাছে মুনাফিক্বের বিনয়নম্রতা থেকে পানাহ চাচ্ছি।’ তারপর তিনি তাঁর জুতো নিয়ে ফিরে গেলেন।” [তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৮০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৬৩]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] কে বলা হলো,

إن رجلاً يقول: أنا أجالس أهل السنة وأجالس أهل البدع، فقال الأوزاعي: هذا رجل يريد أن يساوي بين الحق والباطل.

“এক ব্যক্তি বলছে, ‘আমি আহলুস সুন্নাহ’র সাথেও ওঠাবসা করি, আবার বিদ‘আতীদের সাথেও ওঠাবসা করি।’ তখন আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, ‘এই লোক হক এবং বাতিলকে সমান করতে চাচ্ছে’।” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০]

এই আসারটি বর্ণনা করার পর ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] বলেছেন, “আওযা‘ঈ সত্যই বলেছেন। আমি বলছি, এই ব্যক্তি হক ও বাতিলের এবং ঈমান ও কুফরের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নয়। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং নাবী ﷺ থেকে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ “যখন তারা মু’মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানদের (সর্দারদের) সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি’।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৪)” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০ – এর টীকা]

·
❏ বিদ‘আতীদের সাথে মেলামেশার কুফল:

ইমাম ইয়া‘কূব বিন শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৬২ হি.] বলেছেন, “বানূ সাদওয়াস গোত্রে ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে নাবী ﷺ এর একদল সাহাবীকে পেয়েছিল। এতৎসত্ত্বেও সে খারিজী মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিল। এর কারণ সম্পর্কে আমাদের কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তা হলো, তার এক চাচাতো বোন ছিল, যে খারিজী মতাদর্শ লালন করত। ‘ইমরান সেই মেয়েকে বিয়ে করে, তাকে তার ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে ফেরানোর জন্য। কিন্তু ওই মেয়েই তাকে নিজের মতাদর্শে দীক্ষিত করে ফেলে।” [তারীখু দিমাশক্ব; খণ্ড: ৪৩; পৃষ্ঠা: ৪৯০; তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ৩২৩; গৃহীত: শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ), লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বাওলিল মা’সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ১৮৮; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

পরবর্তীতে এই খারিজী ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান ইসলামের চতুর্থ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকারী ‘আব্দুর রহমান বিন মুলজিম আল-খারিজী’র প্রশংসা করে দীর্ঘ কবিতা রচনা করে। আল্লাহ’র কাছে যাবতীয় বিদ‘আত ও তার বাহকদের সংস্পর্শ থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
ভারতবর্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, “এই সাদৃশ্য স্থাপনের মধ্যে বেশ কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ সকল বিদ‘আত এবং তা পালনকারী বিদ‘আতীদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। যেহেতু জলাতঙ্ক রোগ সংক্রামক ব্যাধির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জলাতঙ্ক রোগের উৎস রয়েছে কুকুরের মধ্যে। সেই কুকুর যখন কাউকে কামড় দেয়, তখন সেও তার মতোই (ব্যাধি বহনকারী) হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে এই রোগ থেকে না মরে নিস্তার পায় না। একইভাবে একজন বিদ‘আতী যখন কারও কাছে নিজের (ভ্রান্ত) মতাদর্শ এবং সংশয় পরিবেশন করে, তখন খুব কম সময়ই সে ওই (বিদ‘আতীর) দুর্যোগ থেকে নিস্তার পায়। বরং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) হয় সে ওই বিদ‘আতীর সাথে তার (সংশয়পূর্ণ) মতাদর্শে পতিত হয় এবং তার দলেরই একজন সদস্য বনে যায়। নতুবা ওই বিদ‘আতী এই ব্যক্তির অন্তরে সংশয় প্রোথিত করে; যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু সক্ষম হয় না।

এটা পাপাচারিতার বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাপচারী ব্যক্তি তার সাথের ব্যক্তিটির অনিষ্ট করে না এবং স্বীয় পাপাচারিতায় তাকে প্রবিষ্ট করে না। তবে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্ঠতা ও মেলামেশা থাকলে এবং তার পাপকাজে বারবার উপস্থিত হলে ভিন্ন কথা। (সালাফদের থেকে বর্ণিত) আসারসমূহে যে বর্ণনা এসেছে তা এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে ওঠাবসা করতে ও তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন, এবং বিদ‘আতীদের সাথে যারা কথা বলে তাদের সাথেও কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আর এ ব্যাপারে তাঁরা কঠোরতা অবলম্বন করেছেন।” [ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭৮; গৃহীত: শাইখ খালিদ আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ১০২-১০৩; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মহান মূলনীতি। তাই আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে উক্ত মূলনীতিটি হেফাজত করার মাধ্যমে সালাফী মানহাজের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments