Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

পানাহারের আদব বিষয়ে কিছু কথা ২৮টি


 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী
পানাহারের আদব বিষয়ে কিছু কথা 
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বস্ত্ত হল খাদ্য ও পানীয়। জীবন ধারণের জন্য এ খাদ্য হালাল হওয়া অতিব জরুরী। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا

‘‘অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র (মালই) কবুল করে থাকেন। আল্লাহ মু’মিনদেরকে সেই আদেশ করেছেনযে আদেশ করেছিলেন নবী-রসূলগণকে। তাই তো তিনি নবী-রসূলগণরে উদ্দেশ্যে বলেন,

يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

অর্থাৎহে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্তসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।[1] আর তিনি (মু’মিনদের উদ্দেশ্যে) বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ

 অর্থাৎহে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে সকল রুজী দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্ত্ত আহার কর---।[2] অতঃপর তিনি সেই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেনযে লম্বা সফর করলেনদীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার বিক্ষিপ্তঅবিন্যস্ত এবং সমস্ত শরীর ধূলিমলিন বেশে নিজ হাত দু’টিকে আকাশের দিকে লম্বা করে তুলে দু‘আ করে, ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রভু!’ কিন্তু তার আহার্য হারামতার পানীয় হারামতার পরিধেয়  পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারাই তার পুষ্টিবিধান হয়েছে। অতএব তার দু‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে?[3]
আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা কা’ব বিন উজরার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! সে মাংস কোন দিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে নাযার পুষ্টিসাধন হারাম খাদ্য দ্বারা করা হয়েছে।’’[4]
রসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন-

يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ، إِنَّهُ لاَ يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ

‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! যে মাংস হারাম খাদ্য দ্বারা প্রতিপালিত হবেতার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।’’[5]
পানাহারের বিভিন্ন আদব রয়েছে ইসলামে। যে সকল আদব পালন করলে মানুষের চরিত্র ও সুম্বাস্থ্য গড়ে ওঠে। সেই আদবের কিছু পরবর্তী অংশে।

[1]. সূরা মু’মিনূন-২৩: ৫১
[2]. সূরা বাক্বারাহ-২:১৭২

[3]. মুসলিম হা/১০১৫তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/২৯৮৯মিশকাত হাদীস একাডেমী হা/২৭৬০

[4]. দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৭৭৬মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৪৪৮১সহীহইমাম মুসলিমের শর্তে সনদ শক্তিশালী। 

[5]. সহীহ তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/৬১৪,
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১। সোনা-চাঁদির পাত্রে খাওয়া বৈধ নয়

যেহেতু এ হল অহংকারী কাফেরদের পাত্র। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করো না। কারণতা দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য এবং আখেরাতে তোমাদের জন্য।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (সোনা)-চাঁদির পাত্রে পান-(আহার) করেআসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান-(আহার) করে।’’[2]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩৩মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৬৭

বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩৪
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২। অমুসলিমদের পাত্রে (তাদের দোকান ও হোটেলে) খাওয়া নিষেধ

তবে তাদের পাত্র (দোকান বা হোটেল) ছাড়া যদি মুসলিমদের কোন পাত্র (দোকান বা হোটেল) না পাওয়া যায়তাহলে নিরুপায় অবস্থায় তাদের সেই পাত্র (ধোয়ার পর তাদের দোকান বা হোটেলে) খাওয়ার অনুমতি রয়েছে।[1]
[1]. বুখারীমুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৯৩০
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৩। ঠেস বা হেলান দিয়ে খাওয়া অপছন্দনীয় কাজ

মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আমি হেলান দিয়ে খাই না।’’[1] তিনি হেলান দিয়ে খেতে নিষেধও করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেন- لَا تَأْكُلْ مُتَّكِئًا ‘‘হেলান দিয়ে খেয়ো না’’।[2] যেভাবে খেলে হেলান দিয়ে খাওয়া হয়সেইভাবে খাওয়া মকরূহ। দেওয়াল বা চেয়ারের সাথে পিঠের অথবা মাটির সাথে বাম হাতের হেলান দিয়ে খাওয়া অপছন্দনীয়। যেহেতু অনুরূপ বসা বিনয়ীদের লক্ষণ নয় এবং হেলান দিয়ে খেলে বেশী খাওয়া হয়। আর বেশী খাওয়া ইসলামে বাঞ্ছনীয় নয়। উবুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া নিষেধ। রসূল (সাঃ) বলেন

وَأَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى بَطْنِهِ

‘‘ কোন ব্যক্তি যেন উবুর হয়ে পেটের উপর ভর করে না খায়’’।[3] সুতরাং খেতে বসার সঠিক ও সুন্নাতী বৈঠক হল নিম্নরূপঃ
 (ক) দুই হাঁটু ও পায়ের পাতার উপর (নামায পড়ার মত) বসা। অনুরূপ খেতে বসে মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন,

إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا

‘‘আল্লাহ আমাকে সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন এবং অহংকারী ও উদ্ধত বানাননি।’’[4]
(খ) উভয় পায়ের রলাকে খাড়া রেখে উভয় পাছার উপর বসা। মহানবী (সাঃ) এরূপ বসে খেজুর খেয়েছেন।[5]
ডান পা-কে খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে খাওয়া চলে।[6] অবশ্য এরূপ বসে খাওয়া সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।
সতর্কতার বিষয় যে, দুই পা-কে গুটিয়ে আড়াআড়িভাবে রেখে হাঁটু ভাঁজ করে (বাবু হয়ে) বসে খাওয়াকেও অনেকে হেলান দিয়ে খাওয়ার মধ্যে গণ্য করেছেন।[7] অবশ্য অসুবিধার কারণে অথবা কাপড় খারাপ হওয়ার ভয়ে সেভাবে বসে খাওয়া হারামও নয়।
[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৮২৭৯বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৩৯৯

[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩১২২

[3]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৪ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৩৭০সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৩৯৪সহীহ।

[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৩ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৬৩সহীহ।

[5]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৪৪ প্রমুখ

[6]. ফতহুল বারী ৯/৪৫২

[7]. শারহুন নাওয়াবী ১৩/২২৭
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৪। খাবার সময় খাবার প্রস্ত্তত হয়ে গেলে এবং সলাতের সময় এসে উপস্থিত হলে আগে খাবার খাবেনতারপর সলাতে যাবেন। যাতে সলাতের একাগ্রতা নষ্ট না হয়।

মহানবী  (সাঃ)  বলেন, ‘‘নামাযের ইকামত হলে এবং রাতের খানা উপস্থিত হলেআগে খানা খেয়ে নাও।’’[1]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেনরসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-

إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ عَلَى الطَّعَامِ فَلاَ يَعْجَلَنَّ حَتَّى يَقْضِىَ حَاجَتَهُ مِنْهُ وَإِن أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ

যখন কেউ খেতে বসবে তখন খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত সে যেন তাড়াহুড়া না করেযদিও নামাযের ইকামত হয়ে যায় তবুও।’[2]
[1]. আহমাদবুখারীমুসলিমসহীহুল জা’মে হা/৩৭৪

সুনানুল বাইহাক্বী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫২৪২
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৫। খাবার শুরু করার আগে ও পরে উভয় হাতকে ধুয়ে নিন

অবশ্য এ কেবল আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য। নচেৎ খাবার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।[1]
অবশ্য খাবার পর হাত ধোয়ার ব্যাপারটাও প্রকৃতিগত রুচির ব্যাপার। তবুও ইসলামে এর নির্দেশ এসেছে। খোদ মহানবী (সাঃ) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত ধুয়েছেন।[2]
তিনি (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হাতে গোশতের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়অতঃপর কোন বিপদ ঘটেতাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে।’’[3] এখানে কোন বিপদ বলতেহাত না ধুয়ে শোওয়ার ফলে চর্বির গন্ধে আরশোলাইঁদুর বা অন্য কোন প্রাণী হাত বা আঙ্গুল কাটতে বা কামড়াতে পারে। তাছাড়া এতে কোন রোগ বা শয়তানী স্পর্শ হওয়ারও কারণ থাকতে পারে।
পক্ষান্তরে যদি আপনি নাপাক অবস্থায় গোসল করার আগে খাবার খেতে চানতাহলে আপনার জন্য ওযূ মুস্তাহাব। আল্লাহর নবী (সাঃ) নাপাক অবস্থায় কিছু খেতে অথবা ঘুমাতে চাইলে আগে ওযূ করে নিতেন।[4] অবশ্য কেবল হাত ধুয়ে খাওয়াও চলবে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেনআল্লাহর রসূল (সাঃ) নাপাকে থেকে যখন ঘুমাবার ইচ্ছা করতেনতখন ওযূ করে নিতেন এবং যখন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করতেনতখন দুই হাত ধুয়ে নিতেন।[5]
[1]. আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ ৩/২১৪
[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৭৪৮৬ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৪৯৩

[3]. আহমাদ ৭৫১৫আবূ দাঊদ হা/৩৮৫২তিরমিযী হা/১৮৬০ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৯৭দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৬৩

[4]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২৮৬মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৩০৫প্রমুখ

[5]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫৩নাসাঈ হা/ ২৫৬
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৬। খাবার শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন এবং শেষ করার পর আল্লাহর প্রশংসা করুন

এই আদব পালনে খাবার ঠিকমত দেহে কাজ করা এবং তার অপকারিতা দূর করার ব্যাপারে বড় প্রভাব রয়েছে। ইমাম আহমাদ বলেনখাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়খাবার আগে বিসমিল্লাহ’ বলাশেষে আল্লাহর প্রশংসা করা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া।[1]
আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরীক হওয়া থেকে বাঁচা যায়। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়।---’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নিজ বাড়ি প্রবেশ করার সময় এবং খাবার সময় বিসমিল্লাহ’ বলেতখন শয়তান (তার সঙ্গীদেরকে) বলে, ‘তোমাদের জন্য রাত্রিযাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই।’ যখন সে বাড়ি প্রবেশ করার সময় আল্লাহর নাম নেয় এবং রাতে খাবার সময় না নেয়তাহলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাতের খাবার পেলেকিন্তু রাত্রিযাপনের জায়গা নেই।’ আর যখন সে খাবার সময়েও আল্লাহর নাম না নেয়তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে।’’[3]
উল্লেখ্য যেখাবার শুরুতে কেবল বিসমিল্লাহ’ই বলবেন। তার সঙ্গে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করবেন না। যেহেতু তার কোন দলীল নেই।
 পক্ষান্তরে শুরুতে বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন খাবার খাবেতখন সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। প্রথমে কেউ তা বলতে ভুলে গেলে সে যেন (মনে পড়লে বা) শেষে বলে,

بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অআ-খিরাহ।’’
অর্থ: আল্লাহর নামে খাওয়ার শুরু ও শেষ করছি।[4]
খাবার সময় আরো মান্য আদব এই যেখাবার পর আল-হামদু লিল্লাহ’ বা নির্দিষ্ট দু‘আ পড়তে হয়। যেমনঃ (ক)

اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ

উচ্চারণঃ  আল্লা-হুম্মা  বা-রিক লানা ফীহি অআত্বইমনা খাইরাম মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম আহার দান কর।[5]  (খ) খাবার দুধ হলে বলুন,

اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক-লানা ফীহি অযিদনা মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর প্রাচুর্য দাও।[6]
(গ) এই দু‘আটি পাঠ করলে পূর্বেকার গোনাহ মাফ হয়ে যায়।[7]

اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةً

উচ্চারণঃ  আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী  অলা ক্বুউওয়াহ।
অর্থঃ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেনআমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই।[8]
অন্যান্য আরো দু‘আর বই-এ দেখুন। তবে সতর্কতার বিষয় যেখাওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে যে দু‘আ পড়বেনতার অর্থ যেন বুঝেন। নচেৎ আপনার মনে সেই প্রশংসা ও শুক্র স্থান না পেলে মুখে মন্ত্র আওড়িয়ে লাভ কি?
খাবার খেতে খেতে মাঝে মাঝে অথবা প্রত্যেক লোকমা খাওয়ার শেষে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলার স্পষ্ট দলীল নেই। অবশ্য অনেকে সেই হাদীসকে এর দলীল মনে করেনযাতে মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যেবান্দা খাবার খেয়ে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক এবং পানীয় পান করে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক।’’[9]
এখানে ‘খাবার ও পানীয়’ বলতে এক সময়ের খাবার বা পানীয়কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেনপ্রত্যেক লোকমাও বুঝা যেতে পারে।[10] অল্লাহু আ’লাম (আল্লাহ ভাল জানেন)।
[1]. যাদুল মাআদ ৪/২৩২
[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৭আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৬

[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৮আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৫

[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৭তিরমিযী হা/১৮৫৮

[5]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫

[6]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫

[7]. সহীহ তিরমিযী ৩/১৫৯

[8]. তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৮ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা:৩২৮৫

[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৭৩৪তিরমিযী হা/১৮১৬নাসাঈ

[10]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩৭
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৭। পানাহার করুন ডান হাতে। দুই হাতে খাবার ধরতে হলেও একটার পর একটা ডান হাতে নিয়েই খান। বাম হাতে খাবেন না

কেননা আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার বাম হাত দ্বারা অবশ্যই না খায় এবং পানও না করে। কারণশয়তান তার বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে।’’
বর্ণনাকারী বলেন, (ইবনে উমার (রাঃ) এর স্বাধীনকৃত দাস তাবেয়ী) নাফে’  (রাঃ) দুটি কথা আরো বেশী বলতেন, ‘‘কেউ যেন বাম হাত দ্বারা কিছু গ্রহণ না করে এবং অনুরূপ তার দ্বারা কিছু প্রদানও না করে।’’[1]
উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) বলেনআমি শিশুবেলায় আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর কোলে (বসে খাবার সময়) আমার হাত পাত্রের যেখানে-সেখানে পড়লে তিনি আমাকে বললেন,

« يَا غُلاَمُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ »

‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাওতোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের পাশ্বে থেকে খাও।’’[2]
একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট বাম হাত দিয়ে কিছু খাচ্ছিল। তিনি তা লক্ষ্য করে তাকে বললেন, ‘‘তুমি ডান হাত দিয়ে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারি না।’ রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘তুমি যেন না পার। অহংকারই ওকে (আদেশ পালনে বিরত রেখেছে)।’’ সালামাহ বলেন, ‘সুতরাং (এই বদ্দুআর ফলে) সে আর তার হাতকে মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’[3] কিন্তু যার ডান হাত নেই অথবা ব্যবহার করার ক্ষমতা নেই সে নিরুপায় হয়েই বাম হাত ব্যবহার করবে।
[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২০তিরমিযী হা/১৮০০মালেকআবূ দাউদ ৩৭৭৬

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৩৭৬মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৩৮৮৮মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৩৭৫

[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২১
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৮। খাবার (এক শ্রেণীর হলে) পাত্রের এক ধার থেকে খাননিজের পার্শ্ব থেকে খান। খাবার পাত্রের মাঝখান হতে খাওয়া উচিত নয়

কারণ  মহানবী (সাঃ) উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) কে বলেছিলেন, ‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাওতোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের তরফে একধার থেকে খাও।’’[1]
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়তখন সে যেন পাত্রের উপর (মাঝখান) থেকে না খায়। বরং পাত্রের নিচে (একধার) থেকে খায়। কারণ বরকত তার উপর (মাঝখান) অংশে নাযিল হয়।’’[2]
[1]. বুখারীমুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২২

মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

৯। সুন্নাত হল তিনটি আঙ্গুল (বৃদ্ধাতর্জনী ও মধ্যমা) দ্বারা (রুটিখেজুর প্রভৃতি) খাবার খাওয়া

আল্লাহর রসূল (সাঃ) তিনটে আঙ্গুল দিয়েই খাবার খেতেন।[1]
[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৬৬২৬মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৩২আবূ দাঊদ হা/৩৮৪৮দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৩৩
   ১০। খাবার শেষে আঙ্গুল ও প্লেট চেঁটে খান। তারপর মুছে অথবা ধুয়ে ফেলেন

মহানবী (সাঃ) এরূপই করতেন এবং এরূপ করতে অপরকে আদেশ করতেন। তিনি (সাঃ) বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় তখন সে যেন তার আঙ্গুল চেঁটে বা চাঁটিয়ে না নেওয়ার আগে তা না মুছে (বা না ধোয়)।’’[1]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘‘নবী (সাঃ) আঙ্গুল ও প্লেটকে চেঁটে খেতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন,

«إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي فِي أَيِّ طَعَامِهِ كَانَتِ الْبَرَكَةُ»

‘‘যখন তোমাদের খাবার খাবে আঙ্গুল চেঁটে না খেতে হাত মুছবেনা। কেননাতোমরা জান না যেকোন খাবারে বরকত আছে।’’[2]
এক বর্ণনায় আছে যেশেষের খাবারে বরকত নিহিত আছে।[3]
খাওয়ার শেষে আঙ্গুল চেঁটে খাওয়ার গুরুত্ব বিজ্ঞানও স্বীকার করেছে। কারণআঙ্গুলের মাথা হতে এক প্রকার পদার্থ নির্গত হয়যা খাদ্য হজম হওয়াতে সাহায্য করে। আর এ জন্যই তরকারীতে আঙ্গুল ডোবালে তরকারী খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যায়।
জ্ঞাতব্য যে, প্লেট চেঁটে খেলে প্লেট দু‘আ বা ইস্তিগফার করে এ ধারণা শুদ্ধ নয়। কারণ এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।[4]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৪৫৬মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৩১প্রমুখ

[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৩৮০৯মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৩৩ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৭০

[3]. আবূ আওয়ানাহনাসাঈইবনে হিববান ১৩৪৩ইরওয়াউল গালীল ৭/৩২

[4]. যয়ীফুল জা’মে হা/৫৪৭৮
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১১। খাদ্যাংশ নিচে পড়ে গেলে তা পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলা কর্তব্য

কারণতাতেই বরকত নিহিত থাকতে পারে। সুতরাং তা কুড়িয়ে না খেলে বরকত চলে যাবে। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের কারো খাবারের লোকমা হাত হতে (পাত্রের বাইরে) পড়ে গেলে (এবং তাতে ময়লা লেগে গেলে) তার ময়লা দূর করে সে যেন তা খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ছেড়ে না দেয়। খাবার শেষে সে যেন নিজের আঙ্গুলগুলো চেঁটে খায়। কারণ তোমরা জান না যেতোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’[1]
তদনুরূপ পানীয়তে (পানিশরবতজুস বা চায়ে) যদি মাছি পড়ে যায়তাহলে সেটিকে সরাসরি না তুলে পূর্ণরূপে তাতে ডুবিয়েঅতঃপর তা তুলে ফেলে পান করা কর্তব্য। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন,  ‘‘যখন তোমাদের কারো পানীয় দ্রব্যে মাছি পড়ে যাবেতখন তাকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেবে। তারপর তাকে বাইরে নিক্ষেপ করবে। কারণতার দুটি ডানার মধ্যে একটিতে রোগজীবাণু আছে আর অপরটিতে আছে রোগমুক্তি। (পানীয় বস্ত্ততে পড়ে যাওয়া অবস্থায়) মাছি যে ডানাতে রোগজীবাণু আছে সেটিকে ডুবিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। অতএব তা সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়ার পর নিক্ষেপ করা উচিত।’’[2]
[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৪২১৮মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৩৪

[2]. বুখারীআবু দাউদইবনে মাজাহ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১২। খাবার জিনিস গরম থাকলে খেতে শুরু না করে খাবার মত ঠাণ্ডা হলে খেতে শুরু করুন

কারণ বেশী গরম খাবার খেলে জিভ বা মুখে কষ্ট পেতে পারেনখাবারের আসল স্বাদ জিভে অনুভব করতে পারবেন নাবেশী গরম গিলে ফেললে আপনার পেটেরও কোন ক্ষতি হতে পারে। আর তখন আপনি ঐ খাবারের কোন বরকত পাবেন না।
এ জন্যই মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘(খাবারের বেশী গরমভাব দূর করে খেলে) তা বরকতে বেশী বড় হয়।’’[1]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘ভাপ না চলে যাওয়া পর্যন্ত কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়।’[2]
[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৬৪১৮দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৪৭সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৯২

[2]. বাইহাক্বীইরওয়াউল গালীল ১৯৭৮
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৩। খাদ্য ও পানীয়তে ফুঁ দিয়ে খাবেন না

গরম খাবার ঠাণ্ডা করার জন্য অথবা পানীয়তে কোন পোকা বা কুটা দূর করার জন্য ফুঁক দিবেন না। আহার্য বা পানপাত্রে নিঃশ্বাস ছাড়বেন না। যেহেতু তাতে খাদ্য ও পানীয়র সাথে আপনার ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিলিত হবে। সে দূষিত গ্যাস আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কিছু পান করবেতখন সে যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ছাড়ে অথবা ফুঁ না দেয়।’’[1]   তিনি খাদ্য ও পানীয়তে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।[2]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩০মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬৭আবূ দাঊদ হা/৩৭২৮তিরমিযী হা/১৮৮৮ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৪২৯

[2]. আহমাদসহীহুল জা’মে হা/৬৯১৩
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৪। খাবার যেমনই হোক তার কোন দোষ বর্ণনা করতে হয় না

খাদ্যের কোন প্রকার ত্রুটি বর্ণনা না করে তা ভালো লাগলে খাননা লাগলে ছেড়ে দিন। যেহেতু তাতে রাঁধুনীর মন ছোট হয়।
মহানবী (সাঃ) কখনো খাবারের ত্রুটি বর্ণনা করতেন না। কিছু খেতে ইচ্ছা হলে খেতেননা হলে তা বর্জন করতেন।[1]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৪০৯মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৬৪
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৫। পানি কখনই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পান করবেন নাবরং বসে বসে পান করবেন

কোন খাবার খাওয়ার সময়ও বসে বসে খাবেন দাঁড়িয়ে খাবেন না।
আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন,

« لاَ يَشْرَبَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ قَائِمًا فَمَنْ نَسِىَ فَلْيَسْتَقِئْ »

‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গিয়ে পান করে থাকলে সে যেন তা বমি করে ফেলে।’’[1]
আনাস (রাঃ) বলেননবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন যেকোন লোক যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। আনাস (রাঃ) কে দাঁড়িয়ে খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘এটা তো আরো খারাপ ও আরো নোংরা।’’[2]
কিন্তু বসার জায়গা না থাকলে অথবা অন্য কোন অসুবিধায় বা প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানাহার করা হারাম নয়। যেহেতু দাঁড়িয়ে পান বৈধ হওয়ার হাদীসও বর্ণিত হয়েছে।[3]
[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৩৯৮

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২৪

[3]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ১৬৩৭৫৬১৫মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২৭ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৩০১ প্রমুখ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৬। এক নিঃশ্বাসে পানি পান না করে অন্তত তিন নিঃশ্বাসে পান করবেন

আল্লাহর রসূল (সাঃ) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘‘এতে বেশী তৃপ্তি আসে বা পিপাসা নিবারণ হয়পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোন ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বেশী পরিমাণে বাঁচা যায় এবং হজমপরিপাক ও দেহের উপকার বেশী হয়।’’[1]
তবে তার মানে এই নয় যেএক নিঃশ্বাসে পানি পান করা বৈধ নয়। বরং উদ্দেশ্য হলএক নিঃশ্বাসে পান করার চাইতে তিন নিঃশ্বাসে পান করা উত্তম এবং তার উপকারিতার কথা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
[1]. বুখারীমুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২৮ প্রমুখ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৭। সরাসরি মশক বা কলসীর মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করবেন না

যেহেতু মহানবী (সাঃ) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন।[1]
বুঝতেই তো পারছেনএভাবে পানি পান করলে গোটা মশক বা কলসীর পানি নোংরা হয়ে যাবেমশক বা কলসীর ভিতরে কোন কুটা বা পোকা থাকলে তা আপনার পেটে চলে যেতে পারে এবং এইভাবে গোটা মশক বা কলসীর পানি এঁটো করলে সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু একাধিক মানুষের মাঝে সংক্রমণ করতে পারে।
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬২৭৫৬২৯মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৬০৯ প্রমুখ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৮। আপনি যদি অপরকে পানাহার করানতাহলে আদব ও মুস্তাহাব হল যেআপনি সবার শেষে খাবেন

আল্লাহর রসূল (সাঃ) এরূপ করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘যে লোকদেরকে পানি পান করায়সে যেন সবার শেষে পান করে।’’[1]
[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৬৮১ প্রমুখ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

১৯। খেতে খেতে কথা বলা নিষেধ নয়

কথা বলতে পারেনতবে খেয়াল রাখবেন যাতে গল্প বলতে বলতে আপনার ভাগ অন্যে না মেরে দেয়। আসলে ‘খেতে খেতে কথা বলতে নেই’ এ কথা মায়েরা শিশুদেরকে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বলে থাকেন। এটা কোন শরয়ী নির্দেশ নয়।
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২০। জামাআতবদ্ধভাবে এক পাত্রে খাওয়া মুস্তাহাব

খাবার কম থাকলেও তাতে বরকত হবে। মহানবী (সাঃ) বলেন,

طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِى الاِثْنَيْنِ وَطَعَامُ الاِثْنَيْنِ يَكْفِى الأَرْبَعَةَ وَطَعَامُ الأَرْبَعَةِ يَكْفِى الثَّمَانِيَةَ

‘‘একজনের খাবার ২ জনের জন্য২ জনের খাবার ৪ জনের জন্য এবং ৪ জনের খাবার  ৮ জনের জন্য যথেষ্ট।’’[1]
তিনি বলেন, ‘‘তোমরা এক সাথে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। যেহেতু জামাআতের সাথে (খাবারে) বরকত আছে।’’[2]
একদা সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা খাইকিন্তু পরিতৃপ্ত হই না। (তার কারণ কি?)’ তিনি বললেন, ‘‘সম্ভবতঃ তোমরা পৃথক পৃথক খাও।’’ তাঁরা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তোমরা খাবারে এক সাথে বস এবং আল্লাহর নাম নাওতাহলে তোমাদের খাবারে বরকত হবে।’’[3]
তিনি আরো বলেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হল সেই খাবারযার উপর অনেক হাত পড়ে।’’[4]
পক্ষান্তরে একাকী পৃথক পৃথকভাবে খাওয়াও বৈধ। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই।’’[5]
[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৪৮৯সহীহ আত-তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/১৮২০ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা/৩২৫৪ প্রমুখ।

[2]. ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৮৭সহীহুল জা’মে হা/৪৫০০

[3]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৫৬৪৮আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৪ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৮৬সহীহুল জা’মে হা/১৪২

[4]. সহীহুল জা’মে হা/১৭১

[5]. সূরা নূর-২৪:৬১
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২১। অপর মুসলিমের সাথে খেতে এঁটো খাওয়া দূষণীয় নয়

এতে কোন মুসলিমের অকারণে ঘৃণা হওয়াও উচিত নয়। কারণরসূল (সাঃ) সহ সাহাবীগণ একপাত্রেই পানাহার করেছেন। বিশেষ করে স্ত্রীর এঁটো খেতে অরুচি হওয়া উচিত নয় কোন স্বামীর। যেহেতু সকল মানুষের জন্য আদর্শ স্বামী রসূল (সাঃ) নিজ স্ত্রীর (মাসিক অবস্থাতেও) এঁটো খেয়েছেন। বরং মা আয়েশা পানপাত্রের যে জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেনতিনিও সেই জায়গায় মুখ লাগিয়ে পান করতেন। যে হাড় থেকে হযরত আয়েশা গোশত ছাড়িয়ে খেতেনসেই হাড় নিয়েই ঠিক সেই জায়গাতেই মুখ রেখে আল্লাহর নবী (সাঃ) গোশত ছাড়িয়ে খেতেন।[1]
[1]. আহমাদমুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৩০০,
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২২। এক পাত্রে একাধিক লোক খেলে খাবার সময় মনের ভিতর হিংসা রাখবেন না

সবার চেয়ে আপনি বেশী খাবেন---এ সংকল্প করবেন না। মনে মনে সবার চেয়ে আপনি কম খাবেন এ নিয়তইচ্ছা ও চেষ্টা যদি না-ই রাখতে পারেনতাহলে সকলের সমান খাবেন---এ নিয়ত যেন অবশ্যই রাখেন। খাবার সময় ভালো জিনিসটি আগে-ভাগে তুলে খাবেন না। বড় বড় লোকমা ধরবেন না। একটির জায়গায় দুটি এক সাথে কিছু তুলে খাবেন না। স্বাভাবিকতার সীমা লংঘন করে ঘন ঘন গ্রাস তুলবেন না।
যেহেতু রসূল (সাঃ) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া এক সঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।[1]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২৪৫৫মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৪৫প্রমুখ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৩। যদি আপনাকে কেউ খেতে ডাকে

এবং আপনার পেটে ক্ষুধা ও মনে খাবার ইচ্ছা থাকেতাহলে তা গোপন করে মিথ্যা ওযর পেশ করবেন না।[1]
[1]. আহমাদইবনে মাজাহসহীহুল জা’মে হা/৭২৩০
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৪। আপনার খানা যদি খাদেম প্রস্ত্তত করেতাহলে সেই খাবারে খাদেমকেও শরীক করুন

যেহেতু সে ঐ খাবারের পিছনে মেহনত করেছেতার সুগন্ধ তার পেটে গেছে এবং হয়তো বা তার মন ঐ খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এই জন্যই দয়ার রসূল (সাঃ) এর নির্দেশ হলতাকে বসিয়ে এক সাথে খান। আর তাকে বসানো যদি সম্ভব না হয় বা সে বসতে না চায়তাহলে সেই খাবার হতে কিছু অংশ তুলে তাকে দিয়ে খান।[1]
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৪৬০মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৬৬৩
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৫। এমন টেবিলদস্তরখান বা মজলিসে বসে খাবেন নাযে মজলিসে মদ বা অন্য কোন হারাম জিনিস খাওয়া হয়

সে ভোজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন নাযে ভোজ অনুষ্ঠানে কোন নোংরা জিনিস করা বা দেখানো হয়।
প্রিয় নবী (সাঃ)বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন কখনই সেই ভোজ-মজলিসে না বসে যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়।’’[1]
[1]. আহমাদতিরমিযীহাকেমআদাবুয যিফাফ ১৬৩-১৬৪ পৃঃ. মেহমান নেওয়াযীর আদব দ্রঃ
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৬। জামাআতে সবারই খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত খাবার হতে হাত না তোলা

উঠে না যাওয়া এবং বসে থেকে খাওয়ার ভান করার ব্যাপারে (ইবনে মাজাহর) হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল।[1] সুতরাং এ আদবকে সুন্নাত জ্ঞান করা ঠিক নয়।
[1]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ ২৩৮-২৩৯
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৭। জুতো পায়ে রেখে খাওয়া অবৈধ নয়

জুতো খুলে খাওয়ার হাদীস সহীহ নয়।[1]
[1]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/৯৮০
 ইসলামী জীবন-ধারা  পানাহারের আদব  আবদুল হামীদ ফাইযী

২৮। পেটুকদের মত ভরপেট এত খাওয়া খাবেন নাযাতে নড়তেই না পারেন

বেশী খেলে পেটের রোগ হতে পারেশরীর ভারী হতে পারে এবং তাতে ইবাদতে আলস্য সৃষ্টি হতে পারে। আর বেশী খেলে আপনার হৃদয়ও কঠোর হতে পারে। তাছাড়া বেশী বেশী খাওয়া আসলে কাফেরদের অভ্যাস। সুতরাং রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশমত খানতাহলে শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন,

الْكَافِرُ يَأْكُلُ فِى سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ وَالْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِى مِعًى وَاحِدٍ

‘‘মুসলিম একটি মাত্র অন্ত্রে খায়পক্ষান্তরে কাফের খায় সাত অন্ত্রে।’’[1] তিনি আরো বলেন, ‘‘উদর অপেক্ষা নিকৃষ্টতর কোন পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। আদম সমত্মানের জন্য ততটুকুই খাদ্য যথেষ্ট যতটুকুতে তার পিঠ সোজা করে রাখে। আর যদি এর চেয়ে বেশী খেতেই হয়তাহলে সে যেন তার পেটের এক তৃতীয়াংশ আহারের জন্যএক তৃতীয়াংশ পানের জন্য এবং অন্য আর এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ব্যবহার করে।’’[2]
পক্ষান্তরে এত কমও খাবেন নাযাতে শরীরই ভেঙ্গে যায়। যেহেতু স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়লে ইবাদতেও দুর্বলতা আসবে। সুতরাং পানাহারের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করুনভালো থাকবেন।
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৩৯৬মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৪৯৩ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা/৩২৫৭


[2]. তিরমিযী হা/২৩৮০ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৩৪৯ইবনে হিববানহাকেম ৪/১২১সহীহুল জা’মে হা/৫৬৭৪



আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)<> -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothecholi.in , comming soon my best world websaite



Post a Comment

0 Comments