▌বিদ‘আতীদের রদ করলে কি উম্মাহ’র ঐক্য বিনষ্ট হয়?
·
অনেক সুবিধাবাদী বিদ‘আতী যখন দেখে, সালাফীরা তাদের ভুয়া মতাদর্শকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দিয়ে খণ্ডন করছে, তখন তারা এক অভিনব ধোঁকা ও চাতুরির আশ্রয় নেয়। এই সময় তারা ‘ঐক্যের ফেরিওয়ালা’ বনে যায়। এসব বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে যে, সালাফীরা উম্মাহ’র ঐক্য নষ্ট করছে, উম্মাহ’র বিপর্যয়ের জন্য এরাই দায়ী! অথচ কুরআন, হাদীস ও সালাফদের মানহাজ থেকে নিজেরা বিচ্যুত হয়ে এবং মানুষকে বিচ্যুত করে তারাই উম্মাহ’র ঐক্য নষ্ট করেছে। তারা নিজেরাই উম্মাহ’র বিনাশ সাধন করে চলেছে, আর উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
দ্বীনে ইসলাম ঐক্যের নামে মোসাহেবি করতে শেখায়নি। দ্বীনে ইসলাম ঐক্যের নামে নিজের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে চাটুকারিতা করতে বলেনি। ইসলাম সমাধান বাতলে দিয়েছে। উম্মাহ’র মধ্যে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (পন্থা)।” [সূরাহ নিসা: ৫৯]
আর রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
অত্র আয়াত ও হাদীসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আদর্শ বর্জন করে মোসাহেবি করতে বলা হয়নি।
·
বিদ‘আতীদের রদ করলে যারা ঐক্য বিনষ্টের অভিযোগ উত্থাপন করে, তাদের ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: فضيلة الشيخ، وفقكم الله، هل صحيح ما يقوله بعضهم من أن الإنكار على أهل البدع من الصوفية أو غيرهم هو من أسباب تفرقة الناس وتفرقة الأمة؟
الجواب: نعم، نود أن نفارق عن المبتدعة والمشركين وعباد القبور، ما نود أن يجتمعوا معنا، لا يجتمع معنا إلا أهل التوحيد، هذا الذي نريده، هذا تفريق مقصود، الله فرق بين المؤمنين والكافرين، «أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا ۚ لَا يَسْتَوُونَ»، «أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ»، إنا نقصد هذا، نقصد التفريق بين من لا يقبل الحق أن يفارقَنا وأن نتبرأ منه برائة ظاهرة.
প্রশ্ন: “সম্মানিত শাইখ, আল্লাহ আপনাকে (সৎকর্মের) তাওফীক্ব দিন। এটা কি সঠিক, যা কিছুলোক বলে থাকে যে, বিদ‘আতীদের তথা সূফী সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের সমালোচনা করা লোকদের মধ্যে এবং উম্মাহ’র মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির কারণ?”
উত্তর: “হ্যাঁ। আমরা বিদ‘আতী, মুশরিক ও কবরপূজারীদের থেকে বিভক্ত হতে চাই। তারা আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হোক তা আমরা চাই না। তাওহীদের অনুসারীগণ ছাড়া কেউ আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবে না, এটাই আমরা চাই। এটি হলো ইচ্ছাকৃত বিভক্তি। আল্লাহ মু’মিন ও কাফিরদের মধ্যে বিভক্তিকরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “তাহলে যে ব্যক্তি মু’মিন, সে কি ফাসিক্ব ব্যক্তির মতো? তারা সমান নয়।” (সূরাহ সাজদাহ: ১৮) “যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? না কি আমি মুত্তাক্বীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?” (সূরাহ সদ: ২৮) আমরা এটা চাই। আমরা চাই, যারা হক গ্রহণ করে না তারা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাক, আর আমরা তাদের থেকে স্পষ্টভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। না‘আম।” [দ্র.: https://tinyurl.com/ y765o6nq (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের ভিডিয়ো পোস্ট, বাংলা সাবটাইটেল-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
·
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] ঐক্য প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি বাতলে দিয়ে বলেছেন,
وأما شمل الأمة، لا شك أنه واجب، كما قال عز وجل: «وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا» لكن، واجب على أي شيء؟ على هدي النبي ﷺ وأصحابه، لا على الأهواء، «اعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّه»، بدأ بِــالحَـبْـلِ قبل أن يقول «جَمِيعًا»، وحبل الله دينه وشريعته، وأما أن نتفق بالمداهنة، هذا غلط، لهذا نجد العلماء رحمهم الله يردون على المبتدعة، ويرون أن الواجب عليهم الرجوع إلى الحق.
“আর উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারটি হলো, নিঃসন্দেহে এটি ওয়াজিব। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা একযোগে আল্লাহ’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০৩) কিন্তু ঐক্য ওয়াজিব কীসের উপর? নাবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের আদর্শের উপর, প্রবৃত্তির উপর না। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো।’ তিনি “একযোগে” বলার পূর্বে “আল্লাহ’র রজ্জু” বলে শুরু করেছেন। আর আল্লাহ’র রজ্জু হলো তাঁর দ্বীন ও শরিয়ত। পক্ষান্তরে আপসের ভিত্তিতে ঐকমত্যে আসা ভুল। একারণে আমরা ‘আলিমদের দেখতে পাই যে, তাঁরা বিদ‘আতীদের রদ করতেন এবং তাদের জন্য হকের দিকে ফিরে আসা ওয়াজিব মনে করতেন।” [লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ; লিক্বা নং: ১৯৪; অডিয়ো লিংক: https://tinyurl.com/ y7el3r4l (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের ভিডিয়ো পোস্ট, বাংলা সাবটাইটেল-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
·
সালাফী মানহাজ বিরোধী বিদ‘আতী মানহাজগুলোই মূলত ঐক্য বিনষ্ট করে, সালাফী মানহাজ অনুযায়ী বিদ‘আতীদের সমালোচনা ঐক্য বিনষ্ট করে না। এ ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل التحذير من المناهج المخالفة ودعاتها يعتبر تفريقًا للمسلمين وشقًًّا لِصفِّهم؟
الجواب: التحذير من المناهج المخالفة لمنهج السلف يعتبر جمعًا لكلمة المسلمين لا تفريقًا لصفوفهم، لأن الذي يفرّق صفوف المسلمين هو المناهج المخالفة لمنهج السلف.
প্রশ্ন: “শরিয়ত বিরোধী মানহাজসমূহ এবং সেগুলোর দিকে আহ্বানকারী দা‘ঈদের থেকে সতর্কীকরণ কি মুসলিমদের বিভক্ত করে এবং মুসলিমদের ঐক্যের কাতারকে খণ্ডবিখণ্ড করে?”
উত্তর: “সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজসমূহ থেকে সতর্কীকরণ মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধকারী হিসেবে গণ্য, মুসলিমদের কাতারে ভাঙন সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য নয়। কেননা সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজসমূহই মূলত মুসলিমদের কাতারে বিভক্তি সৃষ্টি করে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ১৪৭; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]
·
প্রকৃতপক্ষে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করা এবং তাদেরকে খণ্ডন করাটাই উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে। এ ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: يقول السائل: هل الرد على المخالف يفرق الأمة؟
الجواب: الرد على المخالف يجمع الأمة، لأنه يبين الحق، والأمة لا تجتمع إلا على الحق، ما تجتمع على الباطل، الرد على المخالف، هذا واجب؛ الله رد على المخالفين، والرسول ﷺ رد على المخالفين، والعلماء ردوا على المخالفين، ولا يجوز السكوت عن المخطئين والمخالفين، لأن هذا غش للمسلمين وترويج للمخالفة والباطل.
প্রশ্নকর্তা: “প্রশ্নকারী বলছেন, শরিয়ত বিরোধীর খণ্ডন (রদ) কি উম্মাহকে বিভক্ত করে?”
শাইখ: “শরিয়তবিরোধীর খণ্ডন উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে। কেননা তা হক বর্ণনা করে। আর উম্মাহ হক ছাড়া অন্য কিছুর ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। উম্মাহ বাতিলের ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। শরিয়ত বিরোধীকে রদ করা ওয়াজিব। আল্লাহ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। রাসূল ﷺ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। ‘আলিমগণ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। ভুলকারী ও শরিয়ত বিরোধীদের ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। কেননা এটা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা এবং শরিয়ত বিরোধিতা ও বাতিলের প্রচার।” [দ্র.: https://m.youtube.com/ watch?v=K3v-9FCFgxo (ভিডিয়ো ক্লিপ)]
·বলাই বাহুল্য যে, একজন সুন্নাহপন্থি ব্যক্তি, যিনি বিদ‘আতী নন, তিনিও কোনো ব্যাপারে শরিয়তবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করার দরুন শরিয়তবিরোধী বিবেচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে সামর্থবান ব্যক্তি তাঁকে রদ করবেন। যেমনভাবে আহলুস সুন্নাহ’র অসংখ্য ‘আলিম বড়ো বড়ো সুন্নাহপন্থি ‘আলিমকে রদ করেছেন। আর এ কাজ করার কারণে ‘উলামায়ে সুন্নাহ কখনোই তাঁদেরকে ‘ঐক্য বিনষ্টকারী’ আখ্যা দেননি। আল্লাহ আমাদেরকে প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রচারণা থেকে পূর্ণরূপে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
সংকলক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/ SunniSalafiAthari
·
অনেক সুবিধাবাদী বিদ‘আতী যখন দেখে, সালাফীরা তাদের ভুয়া মতাদর্শকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দিয়ে খণ্ডন করছে, তখন তারা এক অভিনব ধোঁকা ও চাতুরির আশ্রয় নেয়। এই সময় তারা ‘ঐক্যের ফেরিওয়ালা’ বনে যায়। এসব বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে যে, সালাফীরা উম্মাহ’র ঐক্য নষ্ট করছে, উম্মাহ’র বিপর্যয়ের জন্য এরাই দায়ী! অথচ কুরআন, হাদীস ও সালাফদের মানহাজ থেকে নিজেরা বিচ্যুত হয়ে এবং মানুষকে বিচ্যুত করে তারাই উম্মাহ’র ঐক্য নষ্ট করেছে। তারা নিজেরাই উম্মাহ’র বিনাশ সাধন করে চলেছে, আর উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
দ্বীনে ইসলাম ঐক্যের নামে মোসাহেবি করতে শেখায়নি। দ্বীনে ইসলাম ঐক্যের নামে নিজের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে চাটুকারিতা করতে বলেনি। ইসলাম সমাধান বাতলে দিয়েছে। উম্মাহ’র মধ্যে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (পন্থা)।” [সূরাহ নিসা: ৫৯]
আর রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
অত্র আয়াত ও হাদীসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আদর্শ বর্জন করে মোসাহেবি করতে বলা হয়নি।
·
বিদ‘আতীদের রদ করলে যারা ঐক্য বিনষ্টের অভিযোগ উত্থাপন করে, তাদের ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: فضيلة الشيخ، وفقكم الله، هل صحيح ما يقوله بعضهم من أن الإنكار على أهل البدع من الصوفية أو غيرهم هو من أسباب تفرقة الناس وتفرقة الأمة؟
الجواب: نعم، نود أن نفارق عن المبتدعة والمشركين وعباد القبور، ما نود أن يجتمعوا معنا، لا يجتمع معنا إلا أهل التوحيد، هذا الذي نريده، هذا تفريق مقصود، الله فرق بين المؤمنين والكافرين، «أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا ۚ لَا يَسْتَوُونَ»، «أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ»، إنا نقصد هذا، نقصد التفريق بين من لا يقبل الحق أن يفارقَنا وأن نتبرأ منه برائة ظاهرة.
প্রশ্ন: “সম্মানিত শাইখ, আল্লাহ আপনাকে (সৎকর্মের) তাওফীক্ব দিন। এটা কি সঠিক, যা কিছুলোক বলে থাকে যে, বিদ‘আতীদের তথা সূফী সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের সমালোচনা করা লোকদের মধ্যে এবং উম্মাহ’র মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির কারণ?”
উত্তর: “হ্যাঁ। আমরা বিদ‘আতী, মুশরিক ও কবরপূজারীদের থেকে বিভক্ত হতে চাই। তারা আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হোক তা আমরা চাই না। তাওহীদের অনুসারীগণ ছাড়া কেউ আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবে না, এটাই আমরা চাই। এটি হলো ইচ্ছাকৃত বিভক্তি। আল্লাহ মু’মিন ও কাফিরদের মধ্যে বিভক্তিকরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “তাহলে যে ব্যক্তি মু’মিন, সে কি ফাসিক্ব ব্যক্তির মতো? তারা সমান নয়।” (সূরাহ সাজদাহ: ১৮) “যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? না কি আমি মুত্তাক্বীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?” (সূরাহ সদ: ২৮) আমরা এটা চাই। আমরা চাই, যারা হক গ্রহণ করে না তারা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাক, আর আমরা তাদের থেকে স্পষ্টভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। না‘আম।” [দ্র.: https://tinyurl.com/
·
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] ঐক্য প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি বাতলে দিয়ে বলেছেন,
وأما شمل الأمة، لا شك أنه واجب، كما قال عز وجل: «وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا» لكن، واجب على أي شيء؟ على هدي النبي ﷺ وأصحابه، لا على الأهواء، «اعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّه»، بدأ بِــالحَـبْـلِ قبل أن يقول «جَمِيعًا»، وحبل الله دينه وشريعته، وأما أن نتفق بالمداهنة، هذا غلط، لهذا نجد العلماء رحمهم الله يردون على المبتدعة، ويرون أن الواجب عليهم الرجوع إلى الحق.
“আর উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারটি হলো, নিঃসন্দেহে এটি ওয়াজিব। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমরা একযোগে আল্লাহ’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০৩) কিন্তু ঐক্য ওয়াজিব কীসের উপর? নাবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের আদর্শের উপর, প্রবৃত্তির উপর না। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো।’ তিনি “একযোগে” বলার পূর্বে “আল্লাহ’র রজ্জু” বলে শুরু করেছেন। আর আল্লাহ’র রজ্জু হলো তাঁর দ্বীন ও শরিয়ত। পক্ষান্তরে আপসের ভিত্তিতে ঐকমত্যে আসা ভুল। একারণে আমরা ‘আলিমদের দেখতে পাই যে, তাঁরা বিদ‘আতীদের রদ করতেন এবং তাদের জন্য হকের দিকে ফিরে আসা ওয়াজিব মনে করতেন।” [লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ; লিক্বা নং: ১৯৪; অডিয়ো লিংক: https://tinyurl.com/
·
সালাফী মানহাজ বিরোধী বিদ‘আতী মানহাজগুলোই মূলত ঐক্য বিনষ্ট করে, সালাফী মানহাজ অনুযায়ী বিদ‘আতীদের সমালোচনা ঐক্য বিনষ্ট করে না। এ ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل التحذير من المناهج المخالفة ودعاتها يعتبر تفريقًا للمسلمين وشقًًّا لِصفِّهم؟
الجواب: التحذير من المناهج المخالفة لمنهج السلف يعتبر جمعًا لكلمة المسلمين لا تفريقًا لصفوفهم، لأن الذي يفرّق صفوف المسلمين هو المناهج المخالفة لمنهج السلف.
প্রশ্ন: “শরিয়ত বিরোধী মানহাজসমূহ এবং সেগুলোর দিকে আহ্বানকারী দা‘ঈদের থেকে সতর্কীকরণ কি মুসলিমদের বিভক্ত করে এবং মুসলিমদের ঐক্যের কাতারকে খণ্ডবিখণ্ড করে?”
উত্তর: “সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজসমূহ থেকে সতর্কীকরণ মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধকারী হিসেবে গণ্য, মুসলিমদের কাতারে ভাঙন সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য নয়। কেননা সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজসমূহই মূলত মুসলিমদের কাতারে বিভক্তি সৃষ্টি করে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ১৪৭; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]
·
প্রকৃতপক্ষে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করা এবং তাদেরকে খণ্ডন করাটাই উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে। এ ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: يقول السائل: هل الرد على المخالف يفرق الأمة؟
الجواب: الرد على المخالف يجمع الأمة، لأنه يبين الحق، والأمة لا تجتمع إلا على الحق، ما تجتمع على الباطل، الرد على المخالف، هذا واجب؛ الله رد على المخالفين، والرسول ﷺ رد على المخالفين، والعلماء ردوا على المخالفين، ولا يجوز السكوت عن المخطئين والمخالفين، لأن هذا غش للمسلمين وترويج للمخالفة والباطل.
প্রশ্নকর্তা: “প্রশ্নকারী বলছেন, শরিয়ত বিরোধীর খণ্ডন (রদ) কি উম্মাহকে বিভক্ত করে?”
শাইখ: “শরিয়তবিরোধীর খণ্ডন উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে। কেননা তা হক বর্ণনা করে। আর উম্মাহ হক ছাড়া অন্য কিছুর ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। উম্মাহ বাতিলের ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। শরিয়ত বিরোধীকে রদ করা ওয়াজিব। আল্লাহ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। রাসূল ﷺ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। ‘আলিমগণ শরিয়ত বিরোধীদের রদ করেছেন। ভুলকারী ও শরিয়ত বিরোধীদের ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। কেননা এটা মুসলিমদের সাথে প্রতারণা এবং শরিয়ত বিরোধিতা ও বাতিলের প্রচার।” [দ্র.: https://m.youtube.com/
·বলাই বাহুল্য যে, একজন সুন্নাহপন্থি ব্যক্তি, যিনি বিদ‘আতী নন, তিনিও কোনো ব্যাপারে শরিয়তবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করার দরুন শরিয়তবিরোধী বিবেচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে সামর্থবান ব্যক্তি তাঁকে রদ করবেন। যেমনভাবে আহলুস সুন্নাহ’র অসংখ্য ‘আলিম বড়ো বড়ো সুন্নাহপন্থি ‘আলিমকে রদ করেছেন। আর এ কাজ করার কারণে ‘উলামায়ে সুন্নাহ কখনোই তাঁদেরকে ‘ঐক্য বিনষ্টকারী’ আখ্যা দেননি। আল্লাহ আমাদেরকে প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রচারণা থেকে পূর্ণরূপে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
সংকলক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/
0 Comments