Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান

▌বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান
·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

অনেক অজ্ঞ ও ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়েন এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনেন। আমি মনে করি, তাঁরা এই কাজের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেননি এবং এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেননি। কিছু ভাই আবার ইবলিসী ধোঁকায় পতিত হওয়ার কারণে মনে করেন—‘আমি তো আর বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে সব কথা গ্রহণ করছি না, আমি স্রেফ হকটাই নিচ্ছি, আর বাতিলটা বর্জন করছি!’ তাই এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফ ও খালাফদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বক্তব্য পেশ করা জরুরি মনে করছি। আর উপরিউক্ত ভ্রান্ত ধারণার ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ।

·
আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত যে, ‘ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আল্লাহ’র কিতাব, রাসূলের ﷺ সুন্নাহ এবং সালাফদের সমঝই যথেষ্ট। ১২শ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাবের সুযোগ্য পৌত্র ইমাম ‘আব্দুর রাহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৮৫ হি./১৮৬৯ খ্রি.] বলেছেন,

ومن له نهمة في طلب الأدلة على الحق، ففي كتاب الله، وسنّة رسوله، ما يكفي ويشفي؛ وهما سلاح كل موحد ومثبت، لكن كتب أهل السنّة تزيد الراغب وتعينه على الفهم وعندكم من مصنفات شيخنا -رحمه الله- ما يكفي مع التأمل؛ فيجب عليكم هجر أهل البدع، والإنكار عليهم.

“হকের দলিল অন্বেষণে যার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ’র কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহতেই যথেষ্ট ও সন্তোষজনক উপাদান রয়েছে। এই দুটি বস্তু (কিতাব ও সুন্নাহ) প্রত্যেক তাওহীদবাদী ও জ্ঞানীর অস্ত্র। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ’র গ্রন্থসমূহ আগ্রহী ব্যক্তিকে পাথেয় যোগায় এবং (কিতাব ও সুন্নাহ) বুঝতে সাহায্য করে। তোমাদের কাছে আমাদের শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র গ্রন্থসমূহ রয়েছে, যা গবেষণার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের জন্য বিদ‘আতীদের বর্জন করা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১১; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
স্বয়ং রাসূল ﷺ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, অথচ সেগুলো বিলকুল হকমুক্ত নয়। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَتى رَسُولَ اللهِ ﷺ بِنُسْخَةٍ مِنْ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنْ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يَقْرَأُ وَوَجْهُ رَسُولِ اللهِ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلى وَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ غَضَبِ اللهِ وَغَضَبِ رَسُولِه رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي.

“একদা ‘উমার ইবনুল খাত্বত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল! এটা হলো তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ থাকলেন। এরপর ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। (এদিকে রাগে) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হতে লাগল। আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘উমার, তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিবর্ণ মুখমণ্ডল দেখছ না? ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ করে) বললেন, ‘আমি আল্লাহ’র শাস্তি ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ‘রব’ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের ওপর এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ ﷺ এর ওপর সন্তুষ্ট আছি।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “আল্লাহ’র কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি (তাওরাতের নাবী স্বয়ং) মূসা (‘আলাইহিস সালাম) তোমাদের মধ্যে থাকতেন, আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে এবং আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা (‘আলাইহিস সালাম) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নুবুওয়্যাতের যুগ পেতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন।” [দারিমী, হা/৪৪৯; মিশকাত, হা/১৯৪; সনদ: হাসান]

·
এমনকি কতিপয় ইমাম বিদ‘আতীদের বইপুস্তক না পড়ার উপর ইজমা‘ নক্বল (বর্ণনা) করেছেন। তাঁরা বলেননি যে, তোমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের কথাবার্তা শুনে তা থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো।

ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩১১ হি.] কে আল্লাহ’র নাম ও গুণাবলির সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

بدعة ابتدعوها، لم يكن أئمة المسلمين وأرباب المذاهب وأئمة الدين، مثل مالك، وسفيان، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحـاق، ويحيى بن يحيى، وابن المبارك، ومحمد بن يحيى، وأبي حنيفة، ومحمد بن الحسن، وأبي يوسف: يتكلمون في ذلك، وينهون عن الخوض فيه، ويدلّون أصحابهم على الكتاب والسنّة، فإياك والخوض فيه والنظر في كتبهم بحال.

“এটি একটি নবআবিষ্কৃত বিষয় (বিদ‘আত), যা তারা আবিষ্কার করেছে। মুসলিমদের ইমামগণ, মাযহাবসমূহের প্রধানগণ ও দ্বীনের ইমামগণ যেমন: মালিক, সুফইয়ান, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারাক, মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া, আবূ হানীফাহ, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আবূ ইউসুফ প্রমুখ এই বিষয়ে সমালোচনা করেননি। তাঁরা এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা বলা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তাঁদের সাথীদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে পথনির্দেশ করেছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা থেকে দূরে থাক এবং সাথে সাথে তাদের বইপুস্তক পড়া থেকেও দূরে থাক।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইস্তিক্বামাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৮; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫-৬৬]

ইমাম আবূ মানসূর মা‘মার বিন আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪১৮ হি.] বলেছেন,

ثم من السنة: ترك الرأي والقياس في الدين، وترك الجدال والخصومات، وترك مفاتحة القدرية وأصحاب الكلام وترك النظر في كتب الكلام وكتب النجوم، فهذه السنة التي اجتمعت عليها الأمة.

“অতঃপর সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে দ্বীনের ক্ষেত্রে রায় ও ক্বিয়াস বর্জন করা, তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা, ক্বাদারিয়্যাহ ও যুক্তিবিদ সম্প্রদায়ের মতবাদের আলোচনার শুরু না করা এবং কালামশাস্ত্র (তর্কশাস্ত্র) ও জ্যোতিষশাস্ত্রের বইপুস্তক পাঠ বর্জন করা। এটি এমন সুন্নাহ, যে ব্যাপারে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।” [ইমাম আবুল ক্বাসিম আল-আসবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৬]

·
এতদ্ব্যতীত ইসলামের ইমামগণ বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথাবার্তা শোনা বর্জন করাকে সুন্নাহ’র মূলনীতি সাব্যস্ত করেছেন এবং এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নসিহত করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম মুওয়াফফাক্বুদ দীন ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم، وكل محدثة في الدين بدعة.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হল বিদ‘আত।” [ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪]

ইমাম ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৮৪ হি.] বলেছেন,

ذكر الشيخ موفق الدين –رحمه الله– في المنع من النظر في كتب المبتدعة، قال: كان السلف ينهون عن مجالسة أهل البدع، والنظر في كتبهم والإستماع لكلامهم.

“শাইখ মুওয়াফফাক্বুদ দীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পাঠের নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে বলেছেন, সালাফগণ বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করতে, তাদের বইপুস্তক পড়তে এবং তাদের কথাবার্তা শুনতে নিষেধ করতেন।” [আল-আদাবুশ শারী‘আহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৩২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] যখন এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন যে, “প্রত্যেক যে বিষয় আল্লাহ’র অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহ’র আনুগত্য থেকে নিষেধ করে, সেটাই আল্লাহ’র অবাধ্যতার শামিল”, তখন তিনি বলেছেন,

ومن هذا الباب سماع كلام أهل البدع، والنظر في كتبهم لمن يضره ذلك ويدعوه إلى سبيلهم وإلى معصية الله.

“এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ওই ব্যক্তি কর্তৃক বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শ্রবণ এবং তাদের বইপুস্তক পঠন, যা (শ্রবণ ও পঠন) তার ক্ষতি করে এবং তাকে তাদের (বিদ‘আতীদের) পথের দিকে ও আল্লাহ’র অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৩৩৬; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وكل محدثة في الدين بدعة، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم في أصول الدين وفروعه، كالرافضة والخوارج والجهمية والقدرية والمرجئة والكرامية والمعتزلة، فهذه فرق الضلالة وطرائق البدع.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা; আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদ‘আত। এছাড়াও বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে তাদের কথাবার্তা শোনা বাদ দেওয়া সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রাফিদ্বী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, জাহমী সম্প্রদায়, ক্বাদারী সম্প্রদায়, মুরজিয়া সম্প্রদায়, কাররামী সম্প্রদায়, মু‘তাযিলী সম্প্রদায়; এগুলো পথভ্রষ্ট ফিরক্বাহ এবং বিদ‘আতী ত্বরীক্বাহ।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান (রাহিমাহুল্লাহ), ক্বাতফুস সামার ফী ‘আক্বীদাতি আহলিল আসার; পৃষ্ঠা: ১৫৭; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]

·
বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে সালাফদের কঠোরতা:

ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। নিম্নোক্ত আসার তিনটি বিদ‘আতীদের ব্যাপারে তাঁদের কঠোর অবস্থান এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র শিথিল না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করবে, ইনশাআল্লাহ।

১. আসমা বিন ‘উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دخل رجلان من أصحاب الأهواء على ابن سيرين فقالا: يا أبا بكر نحدثك بحديث؟ قال: لا، قالا: فنقرأ عليك آية من كتاب الله؟ قال: لا، لتقومان عني أو لأقومن. قال: فخرجا، فقال بعض القوم: يا أبا بكر، ما كان عليك أن يقرآ عليك آية من كتاب الله تعالى؟ قال: إني خشيت أن يقرآ علي آية فيحرفانها، فيقر ذلك في قلبي.

“দুজন বিদ‘আতী ইবনু সীরীনের [মৃত: ১১০ হি.] নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবূ বাকার, আমরা আপনার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে চলে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন প্রস্থান করল। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আবূ বাকার, আপনার কী (ক্ষতি) হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ তিনি (ইবনু সীরীন) বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি যে, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি (তাহরীফ) সাধন করবে, ফলে তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে’।” [দারিমী, হা/৪১১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৯৮; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪২; আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ; আসার নং: ৬২]

২. ইমাম সাল্লাম বিন আবূ মুত্বী‘ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৩ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أن رجلا من أهل الأهواء قال لأيوب: يا أبا بكر، أسألك عن كلمة؟ قال: فولى وهو يشير بأصبعه ولا نصف كلمة. وأشار لنا سعيد بخنصره اليمنى.

“একজন বিদ‘আতী আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩১ হি.] কে বলল, হে আবূ বাকার, আমি আপনাকে একটি শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন করি? বর্ণনাকারী বলছেন, তখন তিনি দ্রুত প্রস্থান করলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁর আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলছিলেন, আধা শব্দও নয়। বর্ণনকারী সা‘ঈদ আমাদেরকে তাঁর ডান কনিষ্ঠা দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন।” [দারিমী, হা/৪১২; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০২; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৯১]

৩. শাইখুল ইসলাম ইমাম মা‘মার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৩ হি.] বলেছেন,

كان ابن طاوس جالسًا فجاء رجل من المعتزلة فجعل يتكلم، قال فأدخل ابن طاوس أصبعيه في أذنيه، قال: وقال لإبنه: أي بني، أدخل أصبعيك في أذنيك وتشدد، ولا تسمع من كلامه شيئًا. قال معمر: يعني أن القلب ضعيف.

“একদা ইবনু ত্বাউস [মৃত: ১৩২ হি.] উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক মু‘তাযিলী এসে কথা বলা শুরু করল। বর্ণনকারী বলছেন, তখন ইবনু ত্বাউস তাঁর দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করালেন এবং তাঁর ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি তোমার দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করাও এবং চেপে ধরে থাকো, তুমি তাঁর সামান্য কথাও শুনো না।” মা‘মার (তাঁর এই কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে) বলেছেন, ‘অর্থাৎ অন্তর খুবই দুর্বল (আমরা তার কথা শুনলে আমাদের অন্তরে তা গেঁথে যেতে পারে)’।” [ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০০; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪৮]

প্রিয় পাঠক, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। সালাফগণ বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের কথা শুনেননি। যারা ছিলেন উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁরাই বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন, তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? এরপরেও কি আমাদের এটা বলা সমীচীন হবে যে, আমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে শুধু হকটাই নিব, বাতিলটা নিব না?!

·
বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের ফাতাওয়া:

বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের অনেক ফাতওয়া রয়েছে। আমরা এখানে আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণের ৭ টি ফাতওয়া উপস্থাপন করলাম।

·
১. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

ومن هجر أهل البدع: ترك النظر في كتبهم خوفًا من الفتنة بها، أو ترويجها بين الناس، فالابتعاد عن مواطن الضلال واجب لقوله ﷺ، في الدجال: «مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ» رواه أبو داود قال الألباني: وأسناده صحيح.
لكن إن كان الغرض من النظر في كتبهم معرفة بدعهم للرد عليها فلا بأس بذلك إن كان عنده من العقيدة الصحيحة ما يتحصن به وكان قادرًا على الرد عليهم، بل ربما كان واجبًا؛ لأن رد البدعة واجب وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب.

“বিদ‘আতীদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাহগ্রস্ত হওয়া এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। ভ্রষ্টতার জায়গাসমূহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নাবী ﷺ দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহ’র কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে দাজ্জাল কর্তৃক তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তার (দাজ্জালের) অনুসরণ করবে।” আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেছেন, ‘হাদীসটির সনদ সাহীহ (বিশুদ্ধ)’।

কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদ‘আতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদ‘আতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
২. বিদ‘আতীদের দারসসমূহে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র সুস্পষ্ট ফাতওয়া—
السؤال: ما حكم حضور دروس أهل البدع؟
الجواب: إذا كان يحضر دروس أهل البدعة من أجل أن يناقشهم ويبين لهم الحق والصواب فهو واجب. وإذا كان يريد أن يتعلم منهم فلا يتعلم منهم، حتى لو كان في غير العقيدة، حتى لو كان يدرسهم في النحو أو البلاغة. لا تـقـربهم؛ لأنهـم قد يدسون السم في الدسم، وأيضاً إذا حضرتهم ربما يغتر بك أحد من الناس؛ يقول هؤلاء ليس في حضور دروسهم بأس.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের দারসে উপস্থিত হওয়ার বিধান কী?”

উত্তর: “কেউ যদি বিদ‘আতীদের সাথে (‘ইলমী) বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের কাছে হক ও সঠিক বিষয় তুলে ধরার জন্য তাদের দারসে উপস্থিত হয়, তবে তা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করতে চায়, তবে সে যেন তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন না করে। যদিও তা ‘আক্বীদাহ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান হয়। যদিও সে তাদের কাছে নাহূ (আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র) ও বালাগাত (অলংকারশাস্ত্র) অধ্যয়ন করে। তুমি তাদের নিকটবর্তী হবে না। কেননা তারা তেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। [অর্থাৎ, ক্ষতিকর বিষয় আকর্ষণীয় মোড়কে উপস্থাপন করে। – সংকলক।] অনুরূপভাবে তুমি যখন তাদের কাছে উপস্থিত হবে, তখন হয়তো তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি ধোঁকায় পতিত হবে। ফলে বলবে, তাদের দারসে উপস্থিত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), লিক্বাআতুল বাবিল মাফতূহ; ১৬২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত:www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=82749.]

·
৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: ما هو القول الحق في قراءة كتب المبتدعة، وسماع أشرطتهم؟
الجواب: لا يجوز قراءة كتب المبتدعة ولا سماع أشرطتهم إلا لمن يريد أن يرد علهم ويبين ضلالهم.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে হক কথা কী?”
উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
৪. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: هل يجوز طلب العلم من أهل البدعة وقراءة كتبهم لعدم وجود كتب أهل السنة في بلدي؟
الجواب: الحمد الله، أهل السنة موجودون وكتبهم موجودة، لكن يحتاج [كلام غير واضح] إلى طلب وحرص، ولا تعتمد على أهل البدع وكتب المبتدعة، لا تعتمد عليها، لأنها كالغذاء المسموم القاتل، نعم.

প্রশ্ন: “আমার দেশে আহলুস সুন্নাহ’র বইপুস্তক না থাকার কারণে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা এবং তাদের বইপুস্তক পড়া কি বৈধ হবে?”

উত্তর: “আল-হামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ বিদ্যমান রয়েছে এবং তাদের বইপুস্তকও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অন্বেষণ ও আগ্রহের প্রয়োজন আছে। তুমি বিদ‘আতীদের উপর এবং তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। তুমি তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। কেননা সেগুলো প্রাণঘাতী বিষমিশ্রিত খাদ্যের মতো।” [দ্র.:https://ar.alnahj.net/audio/1512.]

·
৫. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: كثير من طلاب العلم يقول: إن الحق يأخذ من كلام كل أحد حتى من المبتدع، فيجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم.
الجواب: ما يجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم، إلا لبيان ما عندهم من الضلال، حتى يحذر ذلك.

প্রশ্ন: “অসংখ্য ত্বালিবুল ‘ইলম বলছে, নিশ্চয় হক প্রত্যেকের কথা থেকে গ্রহণ করতে হবে, যদিও সে বিদ‘আতী হয়। সুতরাং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ।”

উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য জায়েজ, যাতে করে তা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক থাকা যায়।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=p5G4gb0oEJM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
৬. সৌদি আরবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আবূ মুহাম্মাদ যাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি.] বলেছেন,

وقد حذر سلفنا الصالح رضوان الله عليهم ـ من النظر في كتب المبتدعة لما يترتب على ذلك من المفاسد العظيمة فإن القلوب ضعيفة والشبه خطافة ومما يؤسف له أن كثيرا من الشباب اليوم يقرؤون في كتب أهل الأهواء والضلال ويربون أنفسهم عليها ثم يعودون حربا على السنة وأهلها وحربا على منهج السلف الحق ، فإنا لله وإنا إليه راجعون.

“আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, এর ফলে অপরিহার্যভাবে বড়ো বড়ো ক্ষতি ও অপকারিতা আসার কারণে। কেননা অন্তরসমূহ দুর্বল, আর সংশয়সমূহ (অন্তরস্থ ঈমানকে) লুণ্ঠনকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—বর্তমান যুগে অধিকাংশ যুবক পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ছে এবং সেসবের উপর ভিত্তি করে নিজেদের গড়ে তুলছে। তারপর তারা সুন্নাহ ও তার ধারকদের বিরুদ্ধে এবং সালাফদের হক মানহাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন।” [‘আল্লামাহ যাইদ আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফ ফিত তা‘আমুলি মা‘আ কুতুবি আহলিল বিদা‘”– গ্রন্থ দ্রষ্টব্য; গৃহীত:sahab.net]

·
৭. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] বিদ‘আতীদের কিতাব পড়ার তিনটি বিধান বর্ণনা করে বলেছেন,

ﺇﻥَّ ﺍﻟﻨَّﻈﺮ ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﺍﻻﻧﺤﺮﺍﻑ ﻟﻪ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﺣﻜﺎﻡ:
١ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺑﺪﻋﺔً ﺧﺎﻟﺼﺎً ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺍﻟﺴُﻨَّﺔ، ﻭﻣﺜﺎﻝ ﺫﻟﻚ: (ﺃﺻﻮﻝ ﺍﻟﻜﺎﻓﻲ) ﻟﻠﻜُﻠَﻴْﻤﻲّ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺮﺍﻓﻀﺔ، ﻓﻬﺬﺍ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻨﻈﺮ ﻓﻴﻪ ﻭﻣﻄﺎﻟﻌﺘﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣﺘﻤﻜﻦ ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮﺩَّ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ .
ﺳﻤﻌﺘﻢ؟ ﺷﺮﻃﻴﻦ: ١ - ﻋﺎﻟﻢ ﻣﺘﻤﻜﻦ ٢ - ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮَّﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ.
٢ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﻠﻴﻄﺎً ﻓﻴﻪ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻭﺑﺪﻋﺔ؛ ﻓﻬﺬﺍ ﻻ ﻳﺤﻞ ﺍﻟﻨﻈﺮُ ﻓﻴﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣُﺘﻤﻜﻦ ﻗﺎﺩﺭٌ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﺴﻘﻴﻢ ﻭﺍﻟﻐﺚ ﻭﺍﻟﺴﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻋﺔ؛ ﻭﻣﻦ ﺃﻣﺜﻠﺔ ﺫﻟﻚ: (ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ) ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﺰﻣﺨﺸﺮﻱ ﻣﻌﺘﺰﻟﻲ ﺟﻠﺪ، ﻣﺎﻛﺮٌ ﺩﺍﻫﻴﺔٌ، ﻳﺪُﺱُّ ﺍﻋﺘﺰﺍﻟﻴﺎﺗﻪ؛ ﻓﺎﻟﻤُﺘﻤﻜِّﻦُ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻳﺴﺘﻔﻴﺪُ ﻣﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻭﺍﻟﺒﻼﻏﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻳﻊ ﻭﺍﻟﻠﻐﺔ ﻭﺍﻟﻨﺤﻮ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﻋﻨﺪﻩ ﺍﻟﻘﺪﺭﺓُ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ .
٣ - ﺍﻟﺜﺎﻟﺚُ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﻟﻴﺎً ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ، ﺻﺎﺣﺒﻪُ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻣُﺆﻟﻔﻪ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻭﻟﻜﻦَّ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻳﺆﻟﻒُ ﻣﺜﻼً ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ، ﻓﻲ ﺍﻟﻄﻬﺎﺭﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻮﻉ، ﻭﻻ ﻳﺪﺱُّ، ﻳﻘﻮﻝ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﺷﺄﻥ، ﺃﻧﺎ ﺃﺅﻟﻒ ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﻤﻌﻴﺸﺔ، ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﺮﺯﻕ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺄﻟﻴﻒ، ﺃﻭ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﺜﻼً ﻛﺘﺎﺑﺎً ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻳﺮﺗﺒﻪ ﻭﻳﻨﻈﻢُ ﺃﺑﻮﺍﺑﻪُ ﻭﻳُﺮﻗﻤﻪ ﻓﻘﻂ، ﻭﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻦ ﺑﺪﻋﺘﻪ، ﻓﻬﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻴﻪ ﻋﺎﻟﻢٌ ﻣﺘﻤﻜﻦٌ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ، ﻭﻗﺎﻝ ﻟﻚ :ﺇﻥ ﻛﺘﺎﺏ ﻓُﻼﻥ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻃﺎﻟﻌﺘﻪُ ﻭﺧﺒَﺮﺗﻪُ، ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻔﻼﻧﻲ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺑِﺪَﻋِِﻪِ، ﻓﻼ ﻣﺎﻧﻊ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺀﺗﻪ.

“বিদ‘আতীদের বই পড়ার ৩ টি বিধান রয়েছে। যথা:

১. যে বই বিদ‘আতে পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো সুন্নাহ নেই, যেমন: কুলাইমীর “উসূলুল কাফি” এবং রাফিদ্বী শী‘আদের অন্যান্য বই। এমন বই পড়া হারাম। তবে কোনো সামর্থবান ‘আলিম যদি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের বই দিয়ে রদ করতে চান (তাহলে জায়েজ)। তোমরা কি শুনেছ? শর্ত হলো দুটি: ক. সামর্থবান ‘আলিম হতে হবে খ. আর তিনি তাদের বই দিয়ে তাদেরকে রদ করার ইচ্ছা করবেন।

২. যে বই সুন্নাহ ও বিদ‘আহ মিশ্রিত। এই বইও সামর্থবান ‘আলিম ছাড়া অন্য কারও জন্য পড়া জায়েজ নয়; এমন ‘আলিম যিনি সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এমন বইয়ের উদাহরণ হলো— যামাখশারীর “তাফসীরে কাশশাফ”। যামাখশারী ছিল কট্টর মু‘তাযিলী, আর ধূর্ত কূটকৌশলী, সে তার মু‘তাযিলী ‘আক্বীদাহ বইয়ে প্রবিষ্ট করত। ‘আলিমদের মধ্যে যারা সামর্থবান, তাঁরা এই বইয়ে উল্লিখিত শব্দার্থ, অলঙ্কারশাস্ত্র, আরবি ভাষার চমৎকার বাক্যবিন্যাস-শাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, নাহূশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন; যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা থাকে।

৩. যে বই বিদ‘আত থেকে মুক্ত। বইয়ের লেখক বিদ‘আতী, কিন্তু বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। যেমন কেউ ফিক্বহশাস্ত্রের বই লিখেছে, পবিত্রতা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বই লিখেছে এবং বইয়ে কোনো বিদ‘আত প্রবিষ্ট করেনি। সে বলে যে, “আমার (অন্য) কোনো ব্যাপার নেই, আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য বই লিখি, আমি এই বইয়ের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করি।” সে হয়তো কোনো হাদীসগ্রন্থের অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করে, হাদীসের নম্বর দেয় এবং তাতে কোনো বিদ‘আত প্রবেশ করায় না। যদি কোনো সামর্থবান ‘আলিম এই বই পড়ার পরামর্শ দেন, তাহলে আমিও তোমাকে তা অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিই। আর সেই ‘আলিম তোমাকে বলেন যে, “অমুক লোকের এই বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। সেটা আমি পড়েছি এবং নিরীক্ষা করেছি। অমুক বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই।” তাহলে এই বই পড়ায় কোনো আপত্তি নেই।” [দ্র.: www.ajurry.com/Kotob-Manhag.htm; গৃহীত: https://tinyurl.com/yb9qkdzx (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট থেকে)]
·
আমি (সংকলক) বলছি, শেষোক্ত ফাতওয়াটির মধ্যে বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ার ব্যাপারে তাফসীলী তথা সুবিস্তারিত হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি পাঠক মহোদয়কে উক্ত ফাতওয়ার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে অনুরোধ করছি।

আর বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়াকে বৈধ করার জন্য বিদ‘আতীরা বেশ কিছু সংশয় পেশ করে থাকে। পরবর্তী পোস্টে এ সংক্রান্ত সংশয়গুলোর প্রামাণ্য জবাব দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং অনুসন্ধিৎসু পাঠক মহোদয়কে আমি পরবর্তী নিবন্ধটিও পড়ার অনুরোধ করব। বারাকাল্লাহু ফীকুম।
·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari


Post a Comment

0 Comments