▌বিশুদ্ধ শব্দের তাকবীর কোনটি?
·আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
প্রশ্ন: “ইদের দিনে এবং তাশরীক্বের দিনগুলোতে পাঠকৃত তাকবীরের বিশুদ্ধ শব্দরূপ কোনটি? জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
উত্তর: “যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:
তাকবীরের শব্দরূপের ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ মারফূ‘ হাদীস [১] বর্ণিত হয়নি। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো—মুহাদ্দিস ‘আব্দুর রাযযাক্ব বর্ণিত হাদীস, যা তিনি বিশুদ্ধ সনদে সালমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, كَبِّرُوا اللهَ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا “তোমরা আল্লাহ’র বড়োত্ব ঘোষণা করে বলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবীরা’।” [২]
ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলতেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَللهِ الحَمْدُ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَجَلُّ، اللهُ أَكْبَرُ عَلَى مَا هَدَانَا “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ, আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল, আল্লাহু আকবার ‘আলা মা হাদানা।” [৩]
হাফিয ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, وقد أُحْدِث في هذا الزمانِ زيادةٌ في ذلك لا أصلَ لها “এই যুগে এক্ষেত্রে বাড়তি শব্দ তৈরি করা হয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।” [৪]
ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে তাকবীরের আরেকটি বিশুদ্ধ শব্দরূপ বর্ণিত হয়েছে। সেটা হলো, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَللهِ الحَمْدُ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।” [৫]
বস্তুত প্রকৃত ‘ইলম আল্লাহ’র নিকট রয়েছে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. যে হাদীসের সনদ রাসূল ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মারফূ‘ হাদীস বলে। আর যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাওকূফ হাদীস বলে।
[২]. মুহাদ্দিস ‘আব্দুর রাযযাক্বের সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বাইহাক্বী “ফাদ্বাইলুল আওক্বাত” গ্রন্থে (হা/২২৭)। হাফিয ইবনু হাজার “ফাতহুল বারী” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৪৬২) বলেছেন, “আব্দুর রাযযাক্ব হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।”
[৩]. ইমাম বাইহাক্বী “সুনানুল কুবরা” গ্রন্থে (হা/৬২৭০) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী “ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থে (খ. ৩; পৃ. ১২৬) হাদীসটিকে ‘সাহীহ’ বলেছেন।
[৪]. ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ), ফাতহুল বারী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৬২।
[৫]. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ত্বাবারানী “মু‘জামুল কাবীর” গ্রন্থে (হা/৯৫৩৮) এবং ইমাম ইবনু আবী শাইবাহ “মুসান্নাফ” গ্রন্থে (হা/৫৬৩৩)। ইমাম আলবানী “ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থে (হা/৬৫৪) উক্ত শব্দরূপ সংবলিত জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র মারফূ‘ হাদীসকে “দ্ব‘ঈফ (দুর্বল)” বলেছেন এবং ইবনু আবী শাইবাহ কর্তৃক ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত মাওকূফ হাদীসকে ‘সাহীহ’ বলেছেন।
·বি.দ্র.: প্রথম টীকা ছাড়া বাকি টীকাগুলো শাইখ ফারকূস কর্তৃক সংযোজিত, অনুবাদক কর্তৃক নয়।
·তথ্যসূত্র:
https://ferkous.com/home/
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/
0 Comments