▌ইলম : [ ক্বুরআন ও হাদিসের আলো ]
.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য
যিনি বলেছেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয় সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয় এবং উপদেশ তারাই গ্রহন করে যারা জ্ঞানী। --- [সুরাহ বাক্বারাহ, আয়াত : ২৬৯]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।
---- [ মুসনাদে আহমদ : ১৪/৬৬ ]
.
▪প্রারাম্ভিকা,
নিশ্চয়ই "ইলম" আল্লাহ্র অনেক বড় নেয়ামত।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই নেয়ামত থেকে আস্তে আস্তে মুসলামানরা বিশেষ করে আমাদের তরুণরা মাহরুম হয়ে যাচ্ছে। কারণ মুসলিম তরুণ সমাজের মধ্যে ইলম অর্জন ও এর প্রচার এবং প্রসারের আকাঙ্ক্ষা দিনকে দিন বিলুপ্ত হচ্ছে এবং ক্বুরআন ও হাদিস শুধু উলামাদের জন্য জরুরি মনে করা হচ্ছে। অথচ উলামারা হলেন ইলম এর পথচারী । যাদের কাজ হলো উম্মতের কাছে এই ইলমকে পৌঁছে দেয়া এবং তাদের মাধ্যমে সমাজকে অজ্ঞতা ও মূর্খতার হাত থেকে রক্ষা করা।
যাহোক, পরিতাপের বিষয় হলো - হাজারো দাঈ তৈরি হচ্ছে কিন্তু উম্মতের মধ্যে পরিবর্তন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ অনেকগুলো যা বিশদভাবে আলোচনার দাবি রাখে! তবে এর মধ্যে একটা কারণ হতে পারে সালাফদের পথ ছেড়ে দিয়ে, ভ্রান্ত পথ ও মতের অনুসরণ এবং যারতার কাছ থেকে ইলম হাসিল ও তদানুযায়ী বিতরণ।
.
আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষ হচ্ছে তিন প্রকার। যথা :
(১) আ’লিম (শিক্ষিত বা দ্বীনের ব্যপারে জ্ঞানী ব্যক্তি)
(২) মুতাআ’ল্লিম (দ্বীনের শিক্ষার্থী), এবং এ দুই প্রকারের লোকজনই হচ্ছে মুক্তির পথে।
(৩) নিম্নমানের এমন লোকজন, যারা যে কোন লোকের কথা অনুসরণ করে এবং তার ডাকে সাড়া দেয়।”
---- [উসুলুস সুন্নাহ (বাংলা), পৃষ্ঠা : ১০৭]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমল ব্যতীত ইলমের দিকে আহবান করে সে পথভ্রষ্ট। আর যে ব্যক্তি ইলমবিহীন আমলের দিকে আহবান করে সেও পথভ্রষ্ট। এদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট সে ব্যক্তি, যে বিদ‘আতীদের পথে ইলম অন্বেষণ করে। ফলে সে কুরআন ও সুন্নাত বহির্ভূত কর্মের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, ইহা ইলম; অথচ ইহা অজ্ঞতা। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিদ‘আতীদের পন্থায় ইবাদত করে সে ইসলামী শরী‘আত বহির্ভূত আমল করে এবং ধারণা করে যে, সে ইবাদত করছে; অথচ ইহা ভ্রষ্টতা’। --- [মাজমূ‘ ফাতাওয়া : ১১/২৭ ]
.
▪আসুন এবার জেনে নিই ইলম কি?
ইলম’ আরবী শব্দ ﺍﻟﻌﻠﻢ অর্থ বুঝা, উপলব্ধি করা। এটা এমন আলো, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর প্রিয় মানুষের অন্তরে ঢেলে দেন। আর আল্লাহ যাকে দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করেন তিনিই প্রকৃত নেয়ামাত ও তাওফীক্বপ্রাপ্ত। কেননা দ্বীনী বিষয়ে প্রাজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য আল্লাহর এক মহাদান।
এ প্রসঙ্গে মু'আবিয়্যাহ ইবন সুফিয়ান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ] থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দ্বীনের বিষয়ে গভীর ইলম দান করেন।’- [ সহীহ বুখারী: ৭৩১২ ]
ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নে’মত। যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে মহান বলেন,‘বলুন ! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ ---- [ সুরাহ যুমার, আয়াত : ৩৯/৯ ]
ইলমের আরেকটি অর্থ হল সেই জ্ঞান যা অজ্ঞতার বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে, ইলম দ্বারা যা উদ্দেশ্য তা সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম [ রাহিমাহুল্লাহ ]-র প্রদত্ত সংজ্ঞায়। তিনি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তাঁর রাসূল ﷺ- যা বলেছেন তা-ই ইলম।’
উস্তায আব্দুর রাক্বীব বুখারী [ হাফিয্বাহুল্লাহ ] বলেন, “কিতাব, সুন্নাহ এবং সালাফদের বর্ণনা ও বিশ্লেষণই হচ্ছে প্রকৃত ‘ইলম। এছাড়া কোনো কিছুর সম্পর্কে নিজ মন্তব্য বা নিজের বিবেক দ্বারা কিছু বলা আসলে 'ইলম নয়, তা হচ্ছে আপমর কথা, রায় ও মন্তব্য।
--- [ উস্তাযের টাইমলাইন থেকে সংগ্রহীত ]
.
▪ইলম অর্জনের গুরুত্ব :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বান্দাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর তাই ইবাদাত পালনের পূর্বে এ বিষয়ে ইলম হাসিল করা জরুরী।
তা নাহলে বিশুদ্ধভাবে ইবাদাত পালন করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ -- [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত :১৯]
ইমাম বুখারী [ রাহিমাহুল্লাহ ] তাঁর স্বহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের নামকরণ করেছেন এইভাবে, ‘আল ইলমু ক্বাবলাল ক্বাওলি ওয়াল আমাল’ অর্থ: কথা ও কাজের পূর্বে ইলম অর্জন করা জরুরি। ইলম অর্জন জান্নাতে যাওয়ার পথে সহায়ক। একজন মুসলিমের জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো জান্নাত পাওয়া। আর ইলম হাসিলের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়।
উম্মুল মুমিনীন আইশাহ [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
‘আল্লাহ আমার প্রতি ওহী করেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনে কোনো রাস্তা অবলম্বন করে, আমি তার জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেই।’
---- [ বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান: ৫৩৬৭ ]
প্রখ্যাত সাহাবী মু‘আয বিন জাবাল [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ] বলেছেন - "তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে।
--- [আল-আজুরী, আখলাকুল উলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫ ]
.
▪ইলমের ধারক ও বাহক :
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ
‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’।
সাহাবীগণ আরয করলেন,
وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟
হে আল্লাহর রাসূল ! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে!
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন এরপর বললেন,
ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ
তোমাদের মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনো উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান।
---- [মুসনাদে আহমদ : ৫/২৬৬; আদদারেমী :১/৮৬, হাদীস ২৪৫ ]
সুপ্রিয় সতীর্থবৃন্দ, লক্ষ করুন - হাদীসের শুরুতেই আল্লাহর রাসূল ﷺ- বলেছেন, "ইলম" গ্রহণ কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। এরপর "ইলম" বিদায় নেওয়ার’ অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ইলম বিদায় নেওয়ার অর্থ বাহকগণের প্রস্থান অর্থাৎ আলিমগণের বিদায় নেওয়া। তাহলে বুঝা গেল যে, এ হাদীসে আল্লাহর রাসূল ﷺ-
ইলমের বাহক তথা আলিমগণের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর শিক্ষার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই তাঁর সাহাবীগণের কণ্ঠে!
প্রখ্যাত সাহাবী আবু দারদা [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ] বলেন,
مَا لِي أَرَى عُلَمَاءَكُمْ يَذْهَبُونَ وَجُهَّالَكُمْ لَا يَتَعَلَّمُونَ؟ تعلَّموا قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، فَإِنَّ رَفْعَ الْعِلْمِ ذَهَابُ الْعُلَمَاءِ
হায়! তোমাদের আলিমগণ বিদায় নিচ্ছেন কিন্তু তোমাদের বে-ইলম শ্রেণি ইলম অর্জন করছে না!
ইলম উঠিয়ে নেওয়ার আগেই ইলম হাসিল কর!
ইলম উঠিয়ে নেওয়ার অর্থ আলিমদের প্রস্থান।
--- [ আদ দারেমী : ২৫১ ]
.▪আলিমদের মর্যাদা ও তাদের অনুসরণ :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বান্দাদের মধ্যে প্রিয় হচ্ছেন নবীগণ। একজন সত্যিকারের আলিম নবীদের উত্তরাধীকারী হিসেবে অন্যদের চাইতে বেশী মর্যাদা পাবার অধিকারী। এটি কতইনা সৌভাগ্যের বিষয়।
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ- আলিমের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দিনার ও দিরহাম রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিপুল অংশ লাভ করেছে।
--- [সুনান আবু দাউদ : ৩৬৪৩ ]
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ আল ফাওযান ﺣﻔﻈﮧ ﺍﻟﻠﮧ বলেন,
“যে কেউ চাইলেই কিছু বই কিনে পড়তে পারে। কিন্তু তা কোন উপকার করে না। এটা উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক, আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন, আপনি কি ফার্মেসীতে যান এবং ইচ্ছামতো ঔষধ নিয়ে নেন? নাকি আপনি অবশ্যই একজন ডাক্তারের কাছে যাবেন, যাতে সে আপনার রোগের ধরন নির্নয় করতে পারে এবং উপযুক্ত ঔষধ নির্ধারণ করতে পারে? যা কিছু করলেন (আগে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ইত্যাদি) তা এই আশংকায় যে আপনি হয়তবা কোন ক্ষতিকারক ঔষধ নিয়ে নিবেন যা ঠিক নয়, যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে। অনুরূপ 'ইলম, আপনাকে অবশ্যই এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে এবং তাদের কাছ থেকেই ('ইলম) অর্জন করতে হবে এবং শুধু বই'ই যথেষ্ট নয়, কারণ এতে গোমরাহ হওয়ার এবং এগুলোর মধ্যে সন্দেহজনক যা কিছু আছে তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ভয় আছে।”
---- [আল-খুতুবুল মানবারিয়্যাতু লিশ শাইখ আল ফাওযান : ১/২১৪ ]
.
শাইখ ড.মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ আল মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ বলেন, "ইলম" হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত যা আলিমদের অলংকার! সুতরাং আপনাকে ইলম হাসিল করতে হলে অবশ্যই আলিমদের দারস্থ হতে হবে! আলিমদের সাহচর্যে থাকলে দুটি ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারবেন,
১. দুনিয়ার ফিতনা!
২. দ্বীনের ফিতনা!
প্রথমত,দুনিয়ার যাবতীয় ফিতনা সম্পর্কে আলেমগনই সর্বাধিক অবগত! তাই তাদের সানিধ্যে থাকলে কেউ আপনাকে দুনিয়াবি কোন বিষয়ে মিসগাইড করতে পারবে না!
দ্বিতীয়ত, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় বা সংশয়ে নিপতিত ব্যক্তি শুধুমাত্র উলামাগনের গবেষণা লব্দ জ্ঞান দ্বারাই আলোকিত হতে পারে!
--- [ শাইখের ভিডিয়ো থেকে সংগ্রহীত]
.
▪ ইলমের অহংকার ও আত্মগৌরব :
ইমাম আয যাহাবী [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
"অহংকারের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার হ’ল ইলমের অহংকার ৷ কেননা তার ইলম তার কোন কাজে আসেনা ৷ যে ব্যক্তি আখেরাতের জন্য জ্ঞানার্জন করে, জ্ঞান তার অহংকারকে চূর্ণ করে দেয় এবং তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে ৷ যে নিজেকে হীন মনে করে এবং সর্বদা নিজের হিসাব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে ৷ একটু উদাসীন হ’লেই ভাবে এই বুঝি ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত হ’লাম ও ধবংস হয়ে গেলাম ৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইলম শিখে গর্ব করার জন্য ও নেতৃত্ব লাভের জন্য, সে অন্যের উপর অহংকার করে ও তাদেরকে হীন মনে করে ৷ আর এটিই হ’ল সবচেয়ে বড় অহংকার (ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻜﺒﺮ ) ৷ আর ঐ ব্যক্তি কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমান অহংকার রয়েছে ৷ লা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। "
--- [ আল-কাবায়ির বৈরুত : দারুন নাদওয়াতিল জাদীদাহ পৃঃ ৭৮ ]
.
ইমাম আল-গাজ্জালী [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
“ইলম ও জ্ঞানচর্চার দ্বারা যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে আত্মগৌরব ও বড়াই-অহংকার করা, সমকালীন লোকদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা, আপন প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ববাসীর নিকট প্রিয়পাত্র অথবা ভক্তিভাজন হওয়া, পার্থিব গৌরব অর্জন করা এবং রকমারী ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করা, তাহলে জেনে রাখো– এই জ্ঞান অর্জনের দ্বারা তুমি তোমার দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করছ, স্বীয় মূল্যবান জীবন বিনষ্ট করছ। নশ্বর এই পৃথিবীর বিনিময়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনকে বিক্রয় করে দিচ্ছ। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গর্হিত ও ক্ষতিকর কাজ। এই ব্যবসায় তোমার বৃহৎ লোকসান ছাড়া লাভের কিছু অবশিষ্ট থাকছে না।”
--- [ বিদায়াতুল হিদায়াহ : পৃ-১১ ]
.
পরিশেষে দোয়া করছি - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সকলকে ই’লমান নাফিআ’ন (উপকারী জ্ঞান) দান করুন এবং সেই ইলম (জ্ঞান) দ্বারা প্রথমে নিজেকে অত:পর অন্যকে আলোকিত করার তাওফীক্ব দিন। --- [ আ-মীন ]।
.
▪সংকলক :
আপনাদের দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য
যিনি বলেছেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয় সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয় এবং উপদেশ তারাই গ্রহন করে যারা জ্ঞানী। --- [সুরাহ বাক্বারাহ, আয়াত : ২৬৯]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।
---- [ মুসনাদে আহমদ : ১৪/৬৬ ]
.
▪প্রারাম্ভিকা,
নিশ্চয়ই "ইলম" আল্লাহ্র অনেক বড় নেয়ামত।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই নেয়ামত থেকে আস্তে আস্তে মুসলামানরা বিশেষ করে আমাদের তরুণরা মাহরুম হয়ে যাচ্ছে। কারণ মুসলিম তরুণ সমাজের মধ্যে ইলম অর্জন ও এর প্রচার এবং প্রসারের আকাঙ্ক্ষা দিনকে দিন বিলুপ্ত হচ্ছে এবং ক্বুরআন ও হাদিস শুধু উলামাদের জন্য জরুরি মনে করা হচ্ছে। অথচ উলামারা হলেন ইলম এর পথচারী । যাদের কাজ হলো উম্মতের কাছে এই ইলমকে পৌঁছে দেয়া এবং তাদের মাধ্যমে সমাজকে অজ্ঞতা ও মূর্খতার হাত থেকে রক্ষা করা।
যাহোক, পরিতাপের বিষয় হলো - হাজারো দাঈ তৈরি হচ্ছে কিন্তু উম্মতের মধ্যে পরিবর্তন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ অনেকগুলো যা বিশদভাবে আলোচনার দাবি রাখে! তবে এর মধ্যে একটা কারণ হতে পারে সালাফদের পথ ছেড়ে দিয়ে, ভ্রান্ত পথ ও মতের অনুসরণ এবং যারতার কাছ থেকে ইলম হাসিল ও তদানুযায়ী বিতরণ।
.
আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষ হচ্ছে তিন প্রকার। যথা :
(১) আ’লিম (শিক্ষিত বা দ্বীনের ব্যপারে জ্ঞানী ব্যক্তি)
(২) মুতাআ’ল্লিম (দ্বীনের শিক্ষার্থী), এবং এ দুই প্রকারের লোকজনই হচ্ছে মুক্তির পথে।
(৩) নিম্নমানের এমন লোকজন, যারা যে কোন লোকের কথা অনুসরণ করে এবং তার ডাকে সাড়া দেয়।”
---- [উসুলুস সুন্নাহ (বাংলা), পৃষ্ঠা : ১০৭]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমল ব্যতীত ইলমের দিকে আহবান করে সে পথভ্রষ্ট। আর যে ব্যক্তি ইলমবিহীন আমলের দিকে আহবান করে সেও পথভ্রষ্ট। এদের চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট সে ব্যক্তি, যে বিদ‘আতীদের পথে ইলম অন্বেষণ করে। ফলে সে কুরআন ও সুন্নাত বহির্ভূত কর্মের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, ইহা ইলম; অথচ ইহা অজ্ঞতা। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিদ‘আতীদের পন্থায় ইবাদত করে সে ইসলামী শরী‘আত বহির্ভূত আমল করে এবং ধারণা করে যে, সে ইবাদত করছে; অথচ ইহা ভ্রষ্টতা’। --- [মাজমূ‘ ফাতাওয়া : ১১/২৭ ]
.
▪আসুন এবার জেনে নিই ইলম কি?
ইলম’ আরবী শব্দ ﺍﻟﻌﻠﻢ অর্থ বুঝা, উপলব্ধি করা। এটা এমন আলো, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর প্রিয় মানুষের অন্তরে ঢেলে দেন। আর আল্লাহ যাকে দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করেন তিনিই প্রকৃত নেয়ামাত ও তাওফীক্বপ্রাপ্ত। কেননা দ্বীনী বিষয়ে প্রাজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য আল্লাহর এক মহাদান।
এ প্রসঙ্গে মু'আবিয়্যাহ ইবন সুফিয়ান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ] থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দ্বীনের বিষয়ে গভীর ইলম দান করেন।’- [ সহীহ বুখারী: ৭৩১২ ]
ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নে’মত। যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে মহান বলেন,‘বলুন ! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ ---- [ সুরাহ যুমার, আয়াত : ৩৯/৯ ]
ইলমের আরেকটি অর্থ হল সেই জ্ঞান যা অজ্ঞতার বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে, ইলম দ্বারা যা উদ্দেশ্য তা সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম [ রাহিমাহুল্লাহ ]-র প্রদত্ত সংজ্ঞায়। তিনি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তাঁর রাসূল ﷺ- যা বলেছেন তা-ই ইলম।’
উস্তায আব্দুর রাক্বীব বুখারী [ হাফিয্বাহুল্লাহ ] বলেন, “কিতাব, সুন্নাহ এবং সালাফদের বর্ণনা ও বিশ্লেষণই হচ্ছে প্রকৃত ‘ইলম। এছাড়া কোনো কিছুর সম্পর্কে নিজ মন্তব্য বা নিজের বিবেক দ্বারা কিছু বলা আসলে 'ইলম নয়, তা হচ্ছে আপমর কথা, রায় ও মন্তব্য।
--- [ উস্তাযের টাইমলাইন থেকে সংগ্রহীত ]
.
▪ইলম অর্জনের গুরুত্ব :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বান্দাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর তাই ইবাদাত পালনের পূর্বে এ বিষয়ে ইলম হাসিল করা জরুরী।
তা নাহলে বিশুদ্ধভাবে ইবাদাত পালন করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ -- [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত :১৯]
ইমাম বুখারী [ রাহিমাহুল্লাহ ] তাঁর স্বহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের নামকরণ করেছেন এইভাবে, ‘আল ইলমু ক্বাবলাল ক্বাওলি ওয়াল আমাল’ অর্থ: কথা ও কাজের পূর্বে ইলম অর্জন করা জরুরি। ইলম অর্জন জান্নাতে যাওয়ার পথে সহায়ক। একজন মুসলিমের জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো জান্নাত পাওয়া। আর ইলম হাসিলের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়।
উম্মুল মুমিনীন আইশাহ [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
‘আল্লাহ আমার প্রতি ওহী করেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনে কোনো রাস্তা অবলম্বন করে, আমি তার জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেই।’
---- [ বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান: ৫৩৬৭ ]
প্রখ্যাত সাহাবী মু‘আয বিন জাবাল [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ] বলেছেন - "তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে।
--- [আল-আজুরী, আখলাকুল উলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫ ]
.
▪ইলমের ধারক ও বাহক :
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন,
خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ
‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’।
সাহাবীগণ আরয করলেন,
وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟
হে আল্লাহর রাসূল ! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে!
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন এরপর বললেন,
ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ
তোমাদের মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনো উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান।
---- [মুসনাদে আহমদ : ৫/২৬৬; আদদারেমী :১/৮৬, হাদীস ২৪৫ ]
সুপ্রিয় সতীর্থবৃন্দ, লক্ষ করুন - হাদীসের শুরুতেই আল্লাহর রাসূল ﷺ- বলেছেন, "ইলম" গ্রহণ কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। এরপর "ইলম" বিদায় নেওয়ার’ অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ইলম বিদায় নেওয়ার অর্থ বাহকগণের প্রস্থান অর্থাৎ আলিমগণের বিদায় নেওয়া। তাহলে বুঝা গেল যে, এ হাদীসে আল্লাহর রাসূল ﷺ-
ইলমের বাহক তথা আলিমগণের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর শিক্ষার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই তাঁর সাহাবীগণের কণ্ঠে!
প্রখ্যাত সাহাবী আবু দারদা [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ] বলেন,
مَا لِي أَرَى عُلَمَاءَكُمْ يَذْهَبُونَ وَجُهَّالَكُمْ لَا يَتَعَلَّمُونَ؟ تعلَّموا قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، فَإِنَّ رَفْعَ الْعِلْمِ ذَهَابُ الْعُلَمَاءِ
হায়! তোমাদের আলিমগণ বিদায় নিচ্ছেন কিন্তু তোমাদের বে-ইলম শ্রেণি ইলম অর্জন করছে না!
ইলম উঠিয়ে নেওয়ার আগেই ইলম হাসিল কর!
ইলম উঠিয়ে নেওয়ার অর্থ আলিমদের প্রস্থান।
--- [ আদ দারেমী : ২৫১ ]
.▪আলিমদের মর্যাদা ও তাদের অনুসরণ :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বান্দাদের মধ্যে প্রিয় হচ্ছেন নবীগণ। একজন সত্যিকারের আলিম নবীদের উত্তরাধীকারী হিসেবে অন্যদের চাইতে বেশী মর্যাদা পাবার অধিকারী। এটি কতইনা সৌভাগ্যের বিষয়।
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসুলুল্লাহ ﷺ- আলিমের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দিনার ও দিরহাম রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিপুল অংশ লাভ করেছে।
--- [সুনান আবু দাউদ : ৩৬৪৩ ]
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ আল ফাওযান ﺣﻔﻈﮧ ﺍﻟﻠﮧ বলেন,
“যে কেউ চাইলেই কিছু বই কিনে পড়তে পারে। কিন্তু তা কোন উপকার করে না। এটা উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক, আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন, আপনি কি ফার্মেসীতে যান এবং ইচ্ছামতো ঔষধ নিয়ে নেন? নাকি আপনি অবশ্যই একজন ডাক্তারের কাছে যাবেন, যাতে সে আপনার রোগের ধরন নির্নয় করতে পারে এবং উপযুক্ত ঔষধ নির্ধারণ করতে পারে? যা কিছু করলেন (আগে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ইত্যাদি) তা এই আশংকায় যে আপনি হয়তবা কোন ক্ষতিকারক ঔষধ নিয়ে নিবেন যা ঠিক নয়, যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে। অনুরূপ 'ইলম, আপনাকে অবশ্যই এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে এবং তাদের কাছ থেকেই ('ইলম) অর্জন করতে হবে এবং শুধু বই'ই যথেষ্ট নয়, কারণ এতে গোমরাহ হওয়ার এবং এগুলোর মধ্যে সন্দেহজনক যা কিছু আছে তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ভয় আছে।”
---- [আল-খুতুবুল মানবারিয়্যাতু লিশ শাইখ আল ফাওযান : ১/২১৪ ]
.
শাইখ ড.মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ আল মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ বলেন, "ইলম" হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত যা আলিমদের অলংকার! সুতরাং আপনাকে ইলম হাসিল করতে হলে অবশ্যই আলিমদের দারস্থ হতে হবে! আলিমদের সাহচর্যে থাকলে দুটি ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারবেন,
১. দুনিয়ার ফিতনা!
২. দ্বীনের ফিতনা!
প্রথমত,দুনিয়ার যাবতীয় ফিতনা সম্পর্কে আলেমগনই সর্বাধিক অবগত! তাই তাদের সানিধ্যে থাকলে কেউ আপনাকে দুনিয়াবি কোন বিষয়ে মিসগাইড করতে পারবে না!
দ্বিতীয়ত, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় বা সংশয়ে নিপতিত ব্যক্তি শুধুমাত্র উলামাগনের গবেষণা লব্দ জ্ঞান দ্বারাই আলোকিত হতে পারে!
--- [ শাইখের ভিডিয়ো থেকে সংগ্রহীত]
.
▪ ইলমের অহংকার ও আত্মগৌরব :
ইমাম আয যাহাবী [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
"অহংকারের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার হ’ল ইলমের অহংকার ৷ কেননা তার ইলম তার কোন কাজে আসেনা ৷ যে ব্যক্তি আখেরাতের জন্য জ্ঞানার্জন করে, জ্ঞান তার অহংকারকে চূর্ণ করে দেয় এবং তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে ৷ যে নিজেকে হীন মনে করে এবং সর্বদা নিজের হিসাব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে ৷ একটু উদাসীন হ’লেই ভাবে এই বুঝি ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত হ’লাম ও ধবংস হয়ে গেলাম ৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইলম শিখে গর্ব করার জন্য ও নেতৃত্ব লাভের জন্য, সে অন্যের উপর অহংকার করে ও তাদেরকে হীন মনে করে ৷ আর এটিই হ’ল সবচেয়ে বড় অহংকার (ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻜﺒﺮ ) ৷ আর ঐ ব্যক্তি কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমান অহংকার রয়েছে ৷ লা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। "
--- [ আল-কাবায়ির বৈরুত : দারুন নাদওয়াতিল জাদীদাহ পৃঃ ৭৮ ]
.
ইমাম আল-গাজ্জালী [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলেন,
“ইলম ও জ্ঞানচর্চার দ্বারা যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে আত্মগৌরব ও বড়াই-অহংকার করা, সমকালীন লোকদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা, আপন প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ববাসীর নিকট প্রিয়পাত্র অথবা ভক্তিভাজন হওয়া, পার্থিব গৌরব অর্জন করা এবং রকমারী ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করা, তাহলে জেনে রাখো– এই জ্ঞান অর্জনের দ্বারা তুমি তোমার দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করছ, স্বীয় মূল্যবান জীবন বিনষ্ট করছ। নশ্বর এই পৃথিবীর বিনিময়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনকে বিক্রয় করে দিচ্ছ। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গর্হিত ও ক্ষতিকর কাজ। এই ব্যবসায় তোমার বৃহৎ লোকসান ছাড়া লাভের কিছু অবশিষ্ট থাকছে না।”
--- [ বিদায়াতুল হিদায়াহ : পৃ-১১ ]
.
পরিশেষে দোয়া করছি - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সকলকে ই’লমান নাফিআ’ন (উপকারী জ্ঞান) দান করুন এবং সেই ইলম (জ্ঞান) দ্বারা প্রথমে নিজেকে অত:পর অন্যকে আলোকিত করার তাওফীক্ব দিন। --- [ আ-মীন ]।
.
▪সংকলক :
আপনাদের দ্বীনীভাই,
আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
0 Comments