▌▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় সেশ পর্ব


_______________________________________
সংকলনঃ-ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।হাফিয্বাহুল্লাহ
সূত্রঃ-মাসিক আত-তাহরিক।
পোষ্টার ডিজাইনার-মুহাম্মাদ ফাহিম।
________________________________

২৮. মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দূরীভূত করা :
___________________________________
..
দুনিয়াতে মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা বা তার কোন কষ্ট লাঘব করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করার মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُّسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অভাব মোচনে সাহায্য করবেন।
.
.
যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদ সমূহের কোন একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’।[19]
.
.
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন।
.
.
যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।[20]
.
.
তিনি আরো বলেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবেন’।[21]
.
.
২৯. ছয়টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া :
__________________________________
.
.
ছয়টি এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কোন ব্যক্তি সেগুলির অধিকার হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন,
اضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، وَأَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ.
‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হ’তে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব।
.
.
(১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয় তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হ’তে) বিরত রাখবে’।[22]
.
.
৩০. মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা :
______________________________________
.
.
মুসলিম মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা জান্নাত লাভের মাধ্যম। হুছায়েন ইবনে মেহছান তার ফুফু আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তার ফুফু একদা তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলেন। রাসূল (ছাঃ) তার প্রয়োজন পূর্ণ করলেন।
.
.
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا أَلُوْهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أُنْظُرِيْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّهُ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ- ‘তোমার স্বামী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার কেমন স্ত্রী? সে বলল, আমি তার খিদমত করতে কম করি না, তবে যদি আমি তার ব্যাপারে অপারগ হই। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি যা বলছ, সে ব্যাপারে চিন্তা কর, তুমি তার থেকে কোথায় যাবে? নিশ্চয়ই সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।[23]
.
.
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ- ‘কোন মহিলা যখন তার প্রতি নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ও স্বামীর অনুগত থাকে, তখন সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’।[24]
.
.
৩১. ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেওয়া :
_____________________________
.
.
ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
.
.
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، وَكَانَ يَقُوْلُ لِفَتَاهُ: إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، لَعَلَّ اللهَ أنْ يَّتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ- ‘এক ব্যক্তি লোকদেরকে ঋণ দিত। সে তার কর্মচারীকে বলত, কোন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধে অক্ষম দেখলে তাকে ক্ষমা করে দিও। হয়তো এ কাজের বিনিময়ে আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট পৌঁছলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন’।[25]
.
.
অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ- ‘যে ব্যক্তি এ কামনা করে যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দেন, সে যেন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন করে কিংবা মাফ করে দেয়’।[26]
.
.
তিনি আরো বলেন,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ، أَنْجَاهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيامَةِ- ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণ ক্ষমা করে দিবে, আল্লাহ তাকে ক্বিযামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দিবেন’।[27]
.
.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا، أَوْ وَضَعَ عَنْ مُعْسِرٍ أَظَلَّهُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ- ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন রহমতের এক বিশেষ ছায়া দান করবেন’।[28]
.
.
৩২. গোলাম আযাদ করা :
_______________________
.
.
কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করলে তা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসাবে গণ্য হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, أَيُّمَا اِمْرِئٍ مُسْلِمٍ أَعْتَقَ اِمْرَأً مُسْلِمًا كَانَ فِكَاكُهُ مِنَ النَّارِ- ‘যে কোন মুসলমান দাসকে মুক্ত করবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে’।[29]
.
.
তিনি আরো বলেন,أَيُّمَا رَجُلٍ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا اسْتَنْقَذَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মুক্ত করবে, আযাদ ব্যক্তির প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন’।[30]
.
.
৩৩. তওবা করা :
_______________
.
.
যে ব্যক্তি অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায় সে আল্লাহর ভালবাসা লাভ করে। এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি তত খুশী হন না।
.
.
নবী করীম (ছাঃ) বলেন, كُلُّ بَنِيْ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ اَلْخَطَّائِيْنَ اَلتَّوَّابُوْنَ- ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধী। উত্তম অপরাধী তারাই যারা তওবা করে’।[31] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,
قَالَ يَا عِبَادِيْ إِنِّيْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِيْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوْا، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِيْ أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِيْ أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ-
‘হে আমার বান্দারা! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাও। আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও। আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’।[32]
.
.
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, والَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا، لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ، وَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ، فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهُ تَعَالَى، فَيَغْفِرُ لَهُمْ- ‘ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন’।[33]
.
.
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ- ‘যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন’।[34]
বান্দা পাপ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অতি খুশি হন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
اَللَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِيْ ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِهَا قَائِمَةٌ عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ-
‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তাঁর নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যার বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার নিকট হ’তে ছুটে পালায় যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। এতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রতিপালক! সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে’।[35]
.
.
অন্য হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন,
إِنَّ عَبْدًا أَصَاب ذَنْبًا، وَرُبَّمَا قَالَ، أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَبْتُ فَاغْفِرْ لِيْ فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا، أَوْ أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ، أَوْ أَصَبْتُ آَخَرَ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَابَ ذَنْبًا قَالَ: قَالَ رَبِّ أَصَبْتُ أَوْ أَذْنَبْتُ آخَرَ فَاغْفِرْهُ لِيْ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثَلاَثًا فَلْيَعْمَلْ مَا شَاءَ-
‘কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি, তুমি তা ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফেরেশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দিবেন? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দিবেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ চাইলেন। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আর এক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সে যা ইচ্ছা করুক’।[36]
.
.
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল তোমার এরূপ বলা-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لاَ إلهَ إلاَّ أنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وأبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ، فَإنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ. مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوْقِناً بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ، وَهُوَ مُوْقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হ’তে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহকে আমি স্বীকার করি এবং আমার অপরাধকে স্বীকার করি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি এ দো‘আর প্রতি বিশ্বাস রেখে দিনে বলবে আর সন্ধ্যার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে বিশ্বাস করে রাতে বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[37]
.
.
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ الله تَعَالَى يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ. يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً-
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’।[38]
.
.
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ لَزِمَ الاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجاً، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجاً، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ-
‘যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হ’তে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হ’তে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে অকল্পনীয় উৎস হ’তে রিযিক দান করেন’।[39]
.
.
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলল, أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُوْمُ وَأتُوْبُ إلَيْهِ، غُفِرَتْ ذُنُوْبُهُ، وإنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ- (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নিকট তওবাকারী।) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের মাঠ হ’তে পালিয়ে গিয়ে থাকে’।[40]
.
.
_____________________________________________
উপরে বর্ণিত আমলগুলি কোন মুমিন পূর্ণ একনিষ্ঠতা সহকারে যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে সে অবশ্যই জান্নাত লাভ করতে পারবে। আল্লাহর উপরে অবিচল আস্থা-বিশ্বাস ও তাঁর রহমত লাভের আশা নিয়ে এসব আমলের পাশাপাশি আরো যেসব আমলে আল্লাহ রাযী-খুশি ও সন্তুষ্ট হন সেগুলি সম্পাদন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য করণীয়।
.
আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতী আমলসমূহ সম্পাদন করে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
.
________________________________________
.[19]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৮।
[20]. মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৬।
[21]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।
[22]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৭০; ছহীহুল জামে‘ হা/১০১৮।
[23]. মিশকাত হা/৪৯৪১; সিলসিলা ছহীহা হা/২৬১২, ১৯৩৪।
[24]. আবু নু‘আইম, মিশকাত হা/৩২৫৪, হাদীছ ছহীহ।
[25]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০১।
[26]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০২।
[27]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০৩।
[28]. মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/২২৭৮।
[29]. ইবনু মাজাহ হা/২৫২২; তিরমিযী হা/১৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৮২৮।
[30]. বুখারী হা/২৫১৭; মুসলিম হা/১৫০৯।
[31]. আবু দাউদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৪০।
[32]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬।
[33]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৮।
[34]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০।
[35]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩২।
[36]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩।
[37]. বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫।
[38]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬।
[39]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৩৩৯।
[40]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৫৩।___________________

সকল পর্ব দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-১
_______________________________________
লিংক-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=105472634259012&id=104095204396755
.
.
▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-২
_______________________________________
লিংক -https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=106859554120320&id=104095204396755
.
.
▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৩
_______________________________________
লিংক -https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=107648247374784&id=104095204396755
.
.
▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৪
_______________________________________
লিংক-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=108359013970374&id=104095204396755
.
.
▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৫।
_______________________________________
লিংক-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=109880333818242&id=104095204396755

______________________________________
► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

► আমাদের পোস্টগুলি কপিরাইট মুক্ত! সুতরাং আপনি চাইলে পেজের কনটেন্টগুলো হুবহু কপি করে ফেসবুক বা যেকোন মাধ্যমে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে পারেন বিনা অনুমতিতে।
জায্বাকুমুল্লাহ।

►আলিমদের সাথে,সালাফদের পথে।
►বার্তা-The Massage Of Allah S.W.T
► https://www.facebook.com/Barta.4u

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments