▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় ১ম পর্ব।


▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় ১ম পর্ব।
_______________________________________
সংকলনঃ-ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।হাফিয্বাহুল্লাহ
সূত্রঃ-মাসিক আত-তাহরিক।
পোষ্টার ডিজাইনার-মুহাম্মাদ ফাহিম।
___________________________________
.
ভূমিকা : ইহকালীন জীবনে মানুষের কৃতকর্মের মাধ্যমে অর্জিত নেকী পরকালীন জীবনে পরিত্রাণ লাভের অসীলা হবে। তাই দুনিয়াতে অধিক নেক আমলের দ্বারা বেশী বেশী ছওয়াব লাভের চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু পার্থিব জীবনের মায়াময়তায় জড়িয়ে আমলে ছালেহ থেকে দূরে থাকলে পরকালীন জীবনে কষ্টভোগ করতে হবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, حُلْوَةُ الدُّنْيَا مُرَّةُ الآخِرَةِ وَمُرَّةُ الدُّنْيَا حُلْوَةُ الآخِرَةِ- ‘পৃথিবীর মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা। আর পৃথিবীর তিক্ততা পরকালের মিষ্টতা’।[1]
.
.
তাই পরকালীন জীবনে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে গোনাহ পরিহার করতে হবে এবং অফুরন্ত নে‘মত সমৃদ্ধ অমূল্য জান্নাত লাভে নেক আমল বেশী বেশী করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ خَافَ أَدْلَجَ وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الْجَنَّةُ ‘যে ব্যক্তি ভয় করেছে, সে পালিয়েছে। আর যে পালিয়েছে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছে। জেনে রাখ আল্লাহর সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান, জেনে রাখ আল্লাহর সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান’।[2]
.
.
জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশী ও জান্নাত লাভে আকাঙ্ক্ষী মুমিন সারারাত ঘুমিয়ে কাটাতে পারে না। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُ مِثْلَ النَّارِ نَامَ هَارِبُهَا وَلَا مِثْلَ الْجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا ‘আমি জাহান্নাম থেকে পলায়নকারী ব্যক্তিকে কখনো ঘুমাতে দেখিনি, আর জান্নাত অন্বেষণকারীকেও কখনো ঘুমাতে দেখিনি’।[3]
.
.
তাই জান্নাত লাভের জন্য নেকীর কাজ বেশী বেশী করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।
আর জান্নাত লাভের জন্য বহু নেক আমল রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় নেক আমল এখানে উদ্ধৃত হ’ল, যাতে পাঠক সেসব পালন করার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভে সচেষ্ট হ’তে পারেন।
.
.
১. তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব :

আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি প্রদান ও তদনুযায়ী আমল করা মানুষের জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের প্রথম শর্ত। মু‘আয (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ‘উফায়র’ নামক একটি গাধায় আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন,

يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِى حَقَّ اللهِ عَلَى عِبَادِهِ وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ. قُلْتُ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ قَالَ لاَ تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوْا-

‘হে মু‘আয! তুমি কি জান বান্দার উপরে আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর নিকটে বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, বান্দার উপরে আল্লাহর হক হ’ল সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর নিকটে বান্দার হক হচ্ছে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না, যে তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি মানুষকে এর সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন, না, তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাহ’লে তারা এর উপরেই নির্ভর করবে’।[4]
.
.
তিনি আরো বলেন, مَنْ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَابْنُ أَمَتِهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ وَأَنَّ النَّارَ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللهُ مِنْ أَىِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ شَاءَ. ‘যে ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; ঈসা তাঁর বান্দা ও তাঁর বান্দীর পুত্র, তাঁর কালিমা (বাক্য) যা তিনি মারিয়ামের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন ও তাঁর পক্ষ থেকে নির্দেশ (রূহ), জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। জান্নাতের আটটি দরজার যে কোনটি দিয়ে ইচ্ছা’।[5]
.
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنْ عَمَلٍ ‘আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই থাকুক’।[6]
.
.
২. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা :

আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা অত্যাবশ্যক। কেননা ঈমান ব্যতিরেকে মানুষের কোন নেক আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না। তেমনি কারো অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান থাকলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ ‘যারা ঈমান আনে ও নেককর্ম করে তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/৮২)। অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও নেককর্ম করেছে, জান্নাতুল ফিরদাউসে তাদের জন্য রয়েছে আপ্যায়ন’ (কাহফ ১৮/১০৭)।
.
.
তিনি আরো বলেন,تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ، يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, আর নিজের ধন-মাল ও আত্মার দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য অতীব উত্তম, যদি তোমরা জান। এতে আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে এবং চিরকাল বসবাসের জন্য জান্নাতে অতীব উত্তম ঘর দান করবেন। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’ (ছফ ৬১/১১-১২)। তিনি আরো বলেন,وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ‘যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং নেক আমল করে আল্লাহ তার পাপ মুছে ফেলেন এবং তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে। এরা সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’ (তাগাবূন ৬৪/৯)।
.
.
তিনি আরো বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيْرُ ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমান। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’ (বুরূজ ৮৫/১১)।
.
.
তিনি আরো বলেন, وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيْمٌ- ‘যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের প্রতি আল্লাহর ওয়াদা এই যে, আল্লাহ তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন এবং তাদের বড় প্রতিফল দিবেন’ (মায়েদাহ ৫/৯)।
.
.
৩. তাক্বওয়া অর্জন করা :

জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাক্বওয়াশীল হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ ‘আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান’ (আর-রহমান ৫৫/৪৬)।
.
.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ- ‘তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? তিনি বললেন, মুখমন্ডল ও লজ্জাস্থান’।[7]
.
.
তিনি আরো বলেন,لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তার জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব, দুধ যেমন গাভীর ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্রিত হবে না’।[8]
.
.
৪. রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা :
.
জান্নাত লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ ও আনুগত্য করা যরূরী। তাঁর অনুসরণ ব্যতীত যেমন কোন আমল কবুল হয় না, তেমনি তাঁর আনুগত্য ব্যতিরেকে জান্নাত লাভ করাও যায় না। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَالِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ، وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ- ‘যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মান্য করে চলে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৩-১৪)।
.
.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبى، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبى؟ قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى- ‘আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, একমাত্র তারা ব্যতীত, যারা (যেতে) অস্বীকার করে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কারা অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যারা আমার আনুগত্য করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যারা আমার অবাধ্যতা করবে তারাই অস্বীকার করে’।[9]
.
.
৫. ছালাত আদায় করা :

ছালাত আদায় করা ইসলামের রুকন, যা জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّراتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ- ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে অপর জুম‘আ পর্যন্ত, এক রামাযান হ’তে অপর রামাযান পর্যন্ত কাফফারা হয় সে সমস্ত গুনাহের, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত হয়। যখন সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’।[10]
.
.
তিনি আরো বলেন, مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ لاَ يَسْهُو فِيْهِمَا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ- ‘যে ব্যক্তি কোন ভুল না করে মনোযোগ সহকারে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন’।[11]
.
.
ফরয ছালাতের পাশাপাশি সুন্নাত-নফল ছালাতও জান্নাত লাভের উপায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ صَلَّى اِثْنَتَا عَشْرَةَ رَكْعَةً فِيْ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ اَلظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ اَلْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ-

‘যে ব্যক্তি দিন-রাতে বার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। চার রাক‘আত যোহরের পূর্বে, দুই রাক‘আত যোহরের পরে, দুই রাক‘আত মাগরিবের পরে, দুই রাক‘আত এশার পরে এবং দুই রাক‘আত ফজরের পূর্বে’।[12]
.
.
তিনি আরো বলেন, مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ اَلظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اَللهُ عَلَى اَلنَّارِ- ‘যে ব্যক্তি বরাবর যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত এবং যোহরের পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের প্রতি হারাম করে দিবেন’।[13]
.
.
৬. ছিয়াম পালন করা :

যে সকল আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়, ছিয়াম তন্মধ্যে সর্বোত্তম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ জাহান্নামকে তার নিকট হ’তে সত্তর বছরের পথ দূরে করে দিবেন’।[14] তিনি আরো বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بَاعَدَ اللهُ مِنْهُ جَهَنَّمَ مَسِيْرَةَ مِائَةِ عَامٍ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার নিকট হ’তে জাহান্নামকে একশত বছরের পথ দূরে করে দিবেন’।[15]
.
.
অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ جَعَلَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি গর্ত খনন করবেন, যার ব্যবধান হবে আসমান-যমীনের ব্যবধানের সমান’।[16]
.
.
ছিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فِي الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ، مِنْهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانُ لاَ يَدْخُلُهُ إِلاَّ الصَّائِمُوْنَ- ‘জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তার একটি দরজার নাম রাইয়ান। ছিয়ামপালনকারী ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না’।[17]
.
.
তিনি আরো বলেন,

إنَّ فِي الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوْا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ- وزاد وَمَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا-

‘জান্নাতে এমন একটি দরজা রয়েছে, যাকে ‘রাইয়্যান’ বলা হয়। ক্বিয়ামতের দিন ছিয়াম পালনকারীগণ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ তাতে প্রবেশ করবে না। ছিয়াম পালনকারীগণ প্রবেশ করলে, ঐ দরজা বন্ধ করা হবে। অন্য কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে, সে কখনো পিপাসিত হবে না’।[18]
.
.
ছিয়াম পালন করলে মানুষের কৃত গোনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-

‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় কদরের রাত্রি ইবাদাতে কাটায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’।[19]
.
.
এছাড়া ছিয়াম বান্দার জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষার মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنٌ حَصِيْنٌ مِنَ النَّار، ‘ছিয়াম হচ্ছে ঢাল স্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি স্থায়ী দুর্গ’।[20]
.
.

(চলবে...)

[1]. মুসনাদে আহমাদ, ছহীহাহ হা/১৮১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৫৫।

[2]. তিরমিযী হা/২৪৫০; ছহীহাহ হা/৯৫৪, ২৩৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬২২২।

[3]. তিরমিযী হা/২৬০১; ছহীহাহ হা/৯৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬২২।

[4]. বুখারী হা/২৮৫৬; মুসলিম হা/৩০; মিশকাত হা/২৪।

[5]. মুসলিম হা/২৮।

[6]. মুসলিম হা/২৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩২০।

[7]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ।

[8]. তিরমিযী হা/১৬৩৩; নাসাঈ হা/৩১০৮; ছহীহ তারগীব হা/১২৬৯, ৩৩২৪; মিশকাত হা/৩৮২৮।

[9]. বুখারী হা/৬৭৩৭, ‘কুরআন-সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়।

[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪।

[11]. আহমাদ, মিশকাত হা/৫৭৭, হাদীছ ছহীহ।

[12]. তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৫৯, হাদীছ ছহীহ।

[13]. আহমাদ, মিশকাত হা/১১৬৭, হাদীছ ছহীহ।

[14]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭, ২৫৬৫।

[15]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭,২৫৬৫।

[16]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৮।

[17]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৭।

[18]. আত-তারগীব হা/১৩৮০।

[19]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৮।

[20]. আত-তারগীব হা/১৩৮২।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

► আমাদের পোস্টগুলি কপিরাইট মুক্ত! সুতরাং আপনি চাইলে পেজের কনটেন্টগুলো হুবহু কপি করে ফেসবুক বা যেকোন মাধ্যমে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে পারেন বিনা অনুমতিতে।
জায্বাকুমুল্লাহ।

►আলিমদের সাথে,সালাফদের পথে।
►বার্তা-The Massage Of Allah S.W.T
► https://www.facebook.com/Barta.4u

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments