ঈমান বিশয়ক প্রশ্ন উত্তর-02
উত্তরঃ আকীদার ক্ষেত্রে অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়টি অন্যান্য ফিক্হী মাসআলার ন্যায় মতবিরোধপূর্ণ। ব্যক্তি বিশেষের উপর বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এই মতভেদ শাব্দিক হতে পারে। অর্থ্যাৎ বিদ্বানগণ একমত যে, কোন একটি কথা বা কাজ করা বা ছেড়ে দেয়াটা কুফরী। কিন্তু যে ব্যক্তি এ কুফরীতে লিপ্ত হল, নির্দিষ্টভাবে তার উপর কি কুফরীর বিধান প্রযোজ্য হবে? কেননা সেখানে কুফরীর শর্তসমূহ বিদ্যামান এবং কাফের না হওয়ার প্রতিবন্ধতা নেই। না কি কাফের হওয়ার দাবী অবর্তমান থাকায় বা কাফের হওয়ার কোন প্রতিবন্ধক থাকায় উক্ত ব্যক্তিকে কাফের বলা প্রযোজ্য হবে না? এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেসমস্ত কারণে মানুষ কাফের হয়ে যায় সেগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতা দু’ধরণের হতে পারে।
(১) এমন ব্যক্তি হতে কুফরী প্রকাশ পাওয়া, যে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অনুসারী অথবা সে কোন দ্বীনই বিশ্বাস করে না এবং সে এটা কোন সময় কল্পনাও করতে পারেনি যে, সে যে বিষয়ের উপর রয়েছে, তা ইসলাম বহির্ভুত। এই ব্যক্তির উপর দুনিয়াতে কাফেরের বিধান প্রয়োগ করা হবে। আখেরাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য মত হল, আল্লাহ পরকালে তাকে যেভাবে পরীক্ষা করবেন। তাদের আ‘মাল সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু আমরা এ কথা ভাল করেই জানি যে, বিনা অপরাধে কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ বলেন,
)وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا(
“আপনার প্রতিপালক কাউকে জুলুম করবেন না।” (সূরা কাহ্ফঃ ৪৯) দুনিয়াতে তার উপর কুফরীর বিধান প্রয়োগ হওয়ার কারণ এই যে, সে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করেনি। তাই তার উপর ইসলামের বিধান প্রয়োগ হবেনা। পক্ষান্তরে আখেরাতে তাকে পরীক্ষা করার ব্যাপারে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনুল কায়্যিম (রঃ) তাঁর রচিত “তরীকুল হিজরাতাইন” নামক বইয়ে মুশরিক শিশুদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীছগুলো উল্লেখ করেছেন।
(২) এমন লোক থেকে কুফরী প্রকাশ পাওয়া, যার ধর্ম ইসলাম, কিন্তু সে এই কুফরী আকীদা নিয়ে বসবাস করছে অথচ সে জানে না যে, এই আকীদা ইসলাম বিরোধী। কেউ তাকে সতর্কও করে নাই। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দুনিয়াতে ইসলামের বিধান প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাকে মুসলিম হিসাবে গণ্য করা হবে। পরকালের বিষয়টি আল্লাহর হাতে। কুরআন, সুন্নাহ এবং আলেমদের বাণী হতে এ মর্মে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا(
“রাসূল না পাঠিয়ে আমি কাউকে শাস্তি দেবনা।” (সূরা ইসরাঃ ১৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ
)وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَى حَتَّى يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولًا يَتْلُوا عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَى إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ(
“আপনার পালনকর্তা জনপদ সমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্তলে রাসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদ সমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে।” (সূরা কাসাস ৫৯) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِأَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ(
“সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি ওজুহাত বা যুক্তি খাড়া করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে।” (সূরা নিসাঃ ১৬৫) আল্লাহ বলেন
)وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ(
“আমি সব রাসূলকেই তাদের জাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিস্কারভাবে বোঝাতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা ইবরাহীমঃ ৪) আল্লাহ তাআ’লা সূরা তাওবায় এরশাদ করেনঃ
)وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا بَعْدَ إِذْ هَدَاهُمْ حَتَّى يُبَيِّنَ لَهُمْ مَا يَتَّقُونَ(
“আর আল্লাহ কোন জাতিকে হেদায়েত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দেন সে সব বিষয়, যা থেকে তাদের বেঁচে থাকা দরকার।” (সূরা তাওবাঃ ১১৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ
)وَهَذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ أَنْ تَقُولُوا إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَى طَائِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَإِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَى مِنْهُمْ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ(
“এটি এমন একটি বরকতময় গ্রন', যা আমি অবতীর্ণ করেছি। অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও এবং যাতে তোমরা এ কথা বলতে না পার যে, গ্রন' তো কেবল আমাদের পূর্ববর্তী দু’টি সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা সেগুলোর পাঠ ও পঠন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিংবা এ কথা বলতে না পার যে, যদি আমাদের প্রতি কোন গ্রন' অবতীর্ণ হত, আমরা তাদের চাইতে অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত হতাম। অবশ্যই তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়েত ও রহমত এসে গেছে।” (সূরা আন্আমঃ ১৫৫-৫৭) এমনি আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, মানুষের কাছে দ্বীনের শিক্ষা দান ও তা বর্ণনা করার পূর্বে হুজ্জত কায়েম হবে না।
ছহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা h হতে বর্ণিত আছে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
“ঐ সত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এই উম্মাতের কোন ইয়াহুদী বা নাসারা আমার কথা শুনে আমার আনিত বিষয় সমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন না করে মৃত্য বরণ করলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।”
আলেমগণ বলেন, কোন নও মুসলিম বা অমুসলিম দেশে বসবাসকারী বা মুসলিমদের এলাকা থেকে দূরবর্তী স্থানের অধিবাসী হওয়ার কারণে কেউ যদি কুফরী কাজে লিপ্ত হয়, তাকে কাফের হওয়ার ফতওয়া দেয়া যাবেনা। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, যারা আমাকে চেনে, তারা অবশ্যই জানে যে, নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফের বা ফাসেক বলা থেকে আমি কঠোরভাবে নিষেধ করে থাকি। তবে যে ব্যক্তি কাফের বা ফাসেক হওয়ার কারণসমূহ সম্পর্কে অবগত আছে, তার কথা ভিন্ন। আমি আবারও বলছি যে, এই উম্মতের কেউ ভুলক্রমে অন্যায় কাজে লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআ’লা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। চাই আকীদার মাসআলায় ভুল করুক কিংবা অন্য কোন মাসআলায়। সালাফে সালেহীন অনেক মাসআলায় মতভেদ করেছেন। তারপরও কেউ কাউকে কাফের বলেন নি। তাদের থেকে এও বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি এরূপ কথা বলবে, সে কাফের হয়ে যাবে, এটা ঠিক, কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কর্মের উপরে হুকুম লাগানো এবং ব্যক্তির উপরে হুকুম লাগানোর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। শায়খুল ইসলাম আরো বলেন, কাউকে কাফের বলা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়। করা হয়েছে। কারণ কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি এমন হতে পারে যে, সে নও মুসলিম অথবা সে আলেম-উলামা থেকে দূরের কোন জনপদে বসবাস করছে। যার কারণে ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারেনি। কাজেই এরূপ ক্ষেত্রে দ্বীনের কোন বিষয় অস্বীকার করলেই তাকে কাফের বলা যাবে না। যতক্ষণ না তার কাছে হুজ্জত (কুরআন্তসুন্নাহর দলীল সমূহ) পেশ করা হবে। এও হতে পারে যে, সে দলীল-প্রমাণ শুনেনি অথবা শুনেছে কিন্তু বিশুদ্ধ সূত্রে তার কাছে পৌঁছেনি। কখনো এও হতে পারে যে, সে একজন আলেম। তার কাছে দলীল রয়েছে বা দলীলের ব্যাখ্যা রয়েছে। যদিও তা সঠিক নয়।
শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব (রঃ) বলেনঃ আমি ঐ ব্যক্তিকে কাফের বলি, যে দ্বীনে মুহাম্মাদী সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তাকে গালি-গালাজ করল। শুধু তাই নয়; বরং মানুষকে আল্লাহর দ্বীন হতে বিরত রাখে এবং ধার্মিক লোকদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আমি এই শ্রেণীর লোকদেরকে কাফের বলে থাকি। তিনি আরো বলেন, যারা বলে আমরা ব্যাপকভাবে মানুষকে কাফের বলি এবং দ্বীন পালনে সক্ষম ব্যক্তিকেও আমাদের কাছে হিজরত করে চলে আসতে বলি, তারা অপবাদ প্রদানকারী মিথ্যুক। তারা মানুষকে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করতে বাঁধা দিয়ে থাকে। আবদুল কাদের জ্বিলানী এবং সায়্যেদ আহ্মাদ বাদভীর কবরের উপরে যে মূর্তি রয়েছে, তার উপাসকদেরকে যদি অজ্ঞতার কারণে এবং তাদেরকে কেউ সতর্ক না করার কারণে কাফের না বলি, তাহলে কিভাবে আমরা এমন নির্দোষ লোকদেরকে আমাদের দিকে হিজরত না করার কারণে কাফের বলব, যারা কখনো আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এবং আমাদেরকে কুফর প্রতিপন্ন করেনি ও আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করে নি?
আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং আলেমদের কথা অনুযায়ী দলীল-প্রমাণ পেশ করা ব্যতীত কাউকে কাফের বলা যাবে না। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের দাবীও তাই। তিনি অযুহাত পেশ করার সুযোগ দূর না করে কাউকে শাস্তি দিবেন না। বিবেক দ্বারা মানুষের উপরে আল্লাহর হক সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। যদি তাই হত, তাহলে রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে হুজ্জত পেশ করা যথেষ্ট হত না।
সুতরাং একজন মুসলিম ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম হিসাবেই পরিগণিত হবে, যতক্ষণ না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে তার ইসলাম ভঙ্গ হবে। কাজেই কাফের বলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ তা না হলে দু’টি বড় ধরণের ভয়ের কারণ রয়েছে।
(১) আল্লাহর উপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ। সাথে সাথে যার উপর হুকুম লাগানো হল তাকেও এমন দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হল, যা থেকে সে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহর উপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ এভাবে হয় যে, এমন ব্যক্তিকে কাফের বলা হয়েছে, যাকে আল্লাহ কাফের বলেন নি। এটি আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার শামিল। কেননা কাউকে কাফের বলা বা না বলা এটি কেবলমাত্র আল্লাহরই অধিকার। যেমনিভাবে কোন কিছু হারাম করা বা হালাল করার দায়িত্ব আল্লাহর উপরে।
(২) দ্বিতীয় সমস্যাটি হল মুসলিম ব্যক্তি যে অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত, তার বিপরীত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। কেননা যখন কোন মুসলিমকে লক্ষ্য করে কাফের বলবে, তখন সে যদি কাফের না হয়, তাহলে ফতোয়া দানকারী নিজেই কাফের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছহীহ মুসলিমে ইবনে উমার h হতে বর্ণিত আছে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِأَخِيهِ يَا كَافِرُ فَقَدْ بَاءَ بِهِ أَحَدُهُمَا
“যখন কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে কাফের বলবে, তখন তাদের দু’জনের একজন কাফেরে পরিণত হবে।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যাকে কাফের বলা হল, সে যদি কাফের হয়ে থাকে তাহলে কাফের হবে। অন্যথায় ফতোয়া দানকারী নিজেই কাফেরে পরিণত হবে। মুসলিম শরীফে আবু যার h হতে বর্ণিত আছে,
وَمَنْ دَعَا رَجُلًا بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلَّا حَارَ عَلَيْهِ
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কাফের বলবে অথবা আল্লাহর শত্রু বলবে, সে অনুরূপ না হয়ে থাকলে যে বলল সে নিজেই কাফের বা আল্লাহর শত্রু হিসাবে পরিণত হয়ে যাবে।” যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কাফের বলে, সে নিজের আ‘মাল নিয়ে অহংকার করে এবং অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকে। এ ধরণের ব্যক্তি দু’টি সমস্যার সম্মুখীন। নিজের আ‘মালকে খুব বড় মনে করলে আ‘মাল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার মধ্যে অহংকার আসার কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আবু হুরায়রা h হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেনঃ
قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ
“আল্লাহ বলেন, অহংকার আমার চাদর। বড়ত্ব আমার পোষাক। যে ব্যক্তি আমার এ দু’টির যে কোন একটি পোষাক নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” সুতরাং কাউকে কাফের বলার পূর্বে দু’টি বিষয় খেয়াল করতে হবেঃ
(১) আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নায় কাজটিকে কুফরী বলা হয়েছে কি না। যাতে করে আল্লাহর উপর মিথ্যাচারিতায় লিপ্ত না হয়।
(২) যার ভিতরে কাফের হওয়ার কারণ ও শর্তসমূহ বিদ্যমান এবং কাফের না হওয়ার যাবতীয় বাঁধামুক্ত। কেবলমাত্র তার উপরই কুফরীর বিধান প্রয়োগ করা। কাফের হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, জেন্তেশুনে শরীয়ত বিরোধী এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যা কুফরীকে আবশ্যক করে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)وَمَنْ يُشَاقِقْ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا(
“আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তন করাবো, যাতে সে প্রত্যাবর্তন করতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর ওটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।” (সূরা নিসাঃ ১১৫) উক্ত আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে, জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার শর্ত হল হেদায়েত সুস্পষ্ট হওয়ার পর রাসূলের (ﷺ) বিরোধিতা করা।
কাজটি করলে কাফের হয়ে যাবে, এটা জানা কি জরুরী? নাকি কাজটি শরীয়তে নিষেধ এতটুকু জানাই যথেষ্ট? যদিও কাজটির ফলাফল সম্পর্কে অবগত না থাকে।
উত্তর হল, কাজটি শরীয়তে নিষেধ একথা জেনে তাতে লিপ্ত হলেই হুকুম লাগানোর জন্য যথেষ্ট। কেননা নবী (ﷺ) রমাদ্বন মাসে দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করার কারণে এক লোকের উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব করেছিলেন। কারণ সে জানতো দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কিন্তু কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়ার কথা জানতো না। বিবাহিত পুরুষ ব্যভিচারকে হারাম জেনে তাতে লিপ্ত হলে তাকে রজম করতে হবে। যদিও সে বিবাহিত যেনাকারীর শাস্তি যে রজম, তা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।
জোর পূর্বক কাউকে কুফরী কাজে বাধ্য করা হলে, তাকে কাফের বলা যাবে না। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنْ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ(
“কেউ ঈমান আনার পরে আল্লাহর সাথে কুফরীতে লিপ্ত হলে এবং কুফরীর জন্য অন্তরকে খুলে দিলে তার উপর আপততি হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফরীর জন্যে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।” (সূরা নাহ্লঃ ১০৬)
অধিক আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বা চিন্তিত অবস্থায় অথবা রাগান্বিত হয়ে অথবা ভীত অবস্থায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফের হয়ে যাবে না। আল্লাহর বাণী,
)وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا(
“ভুলক্রমে কোন অপরাধ করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহ্যাবঃ ৫) ছহীহ মুসলিম শরীফে আনাস h হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
“গুনাহ করার পর বান্দা যখন তাওবা করে, তখন আল্লাহ তাআ’লা ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে একটি বাহনের উপর আরোহন করে মরুভূমির উপর দিয়ে পথ চলতে ছিল। এমন সময় বাহনটি তার খাদ্য-পানীয় সব নিয়ে পলায়ন করল। এতে লোকটি নিরাশ হয়ে একটি গাছের নিচে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ নিদ্রায় থাকার পর হঠাৎ উঠে দেখে বাহনটি তার সমস্ত আসবাব পত্রসহ মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আপনি আমার গোলাম, আমি আপনার রব। খুশীতে আত্মহারা হয়েই সে এ ধরণের ভুল করেছে।”
কাফের বলার পথে আরেকটি বাধা হল কাজটি কুফরী হওয়ার ব্যাপারে কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির কাছে তা’বীল বা ব্যাখ্যা থাকা। যে কারণে সে মনে করে যে, সে সত্যের উপরই আছে। কাজেই সে তার ধারণা মতে পাপ বা শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়নি। এমতাবস্থায় সে নিম্নোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে যেখানে আল্লাহ বলেনঃ
)وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا(
“ভুলক্রমে কোন অপরাধ করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাবঃ ৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ
)لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا(
“আল্লাহ কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)
ইমাম ইবনে কুদামা আলমাকদেসী বলেন, কোন প্রকার সন্দেহ বা ব্যাখ্যা ব্যাতীত কেউ যদি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হালাল ভেবে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাহলেও সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি তা’বীল করে কাফের ভেবে হত্যা করে এবং সম্পদ হালাল জেনে আত্মসাৎ করে, তবে তাদেরকে কাফের বলা হবে না। এ জন্যে খারেজীদেরকে অধিকাংশ আলেমগণ কাফের বলেন নি। অথচ তারা মুসলিমদের জান্তমাল হালাল মনে করে এবং এ কাজের দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে বলে মনে করে। তাদেরকে কাফের না বলার কারণ এই যে, তারা তা’বীল বা অপব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিল। তিনি আরো বলেনঃ খারেজীরা অনেক ছাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীদের রক্ত ও সম্পদ হালাল মনে করত। শুধু তাই নয় এ কাজকে তারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম মনে করত। তা সত্বেও আলেমগণ তাদেরকে কাফের বলেন নি। কারণ তাদের কাছে অপব্যাখ্যা ছিল।
ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন, কুরআনের বিরোধীতা করা খারেজীদের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং কুরআন বুঝতে গিয়ে ভুল করার কারণে তারা বিদ্আতে লিপ্ত হয়ে পাপী মুমিনদেরকে কাফের মনে করেছে। তিনি আরো বলেনঃ খারেজীরা কুরআনের বিরোধীতা করে মুমিনদেরকে কাফের বলেছে। অথচ কুরআনের ভাষায় মুমিনদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তারা বিনা ইলমে, সুন্নার অনুসরণ না করে এবং প্রকৃত জ্ঞানীদের কাছে না গিয়ে কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতগুলোর অপব্যাখ্যা করেছে। তিনি আরো বলেনঃ ইমামগণ ঐক্যবদ্ধভাবে খারেজীদেরকে নিন্দা করেছেন এবং গোমরাহ বলেছেন। তবে তাদেরকে কাফের বলার ক্ষেত্রে দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, আলী h বা অন্য কোন ছাহাবী তাদেরকে কাফের বলেন নি; বরং তাদেরকে জালেম এবং সীমা লংঘনকারী মুসলিম হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ও অন্যান্য ইমামগণ থেকেও এ ধরণের কথা বর্ণিত আছে। ইমাম ইবনে তাইমীয়া আরো বলেনঃ নবী (ﷺ) খারেজীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেছেন। চতুর্থ খলীফা আলী h তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। ছাহাবী ও পরবর্তী উত্তম যুগের ইমামগণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। আলী h, সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বা অন্য কোন সাহাবী খারেজীদেরকে কাফের বলেন নি; বরং তাদেরকে মুসলিম মনে করেছেন। তারা যখন অন্যায়ভাবে মানুষের রক্তপাত শুরু করল এবং মুসলিমদের ধন্তসম্পদের উপর আক্রমণ করল তখন আলী h তাদের এই যুলুম এবং বিদ্রোহ দমন করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাদেরকে কাফের মনে করে যুদ্ধ করেন নি। তাই তিনি তাদের মহিলাদেরকে দাসী হিসাবে বন্দী করেন নি এবং তাদের সম্পদকে গণীমত হিসাবে গ্রহণ করেন নি। তাদের গোমরাহী কুরআনের দলীল, মুসলিমদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন। তথাপিও আলেমগণ তাদেরকে কাফের বলেন নি। তাহলে কিভাবে এমন ফির্কার লোকদেরকে কাফের বলবেন, যাদের চেয়ে বড় আলেমগণ অনেক মাসআলায় ভুল করেছেন। সুতরাং এক দলের পক্ষে অপর দলকে কাফের বলা এবং জান্তমাল হালাল মনে করা জায়েয নেই। যদিও তাদের ভিতরে বিদ্আত বর্তমান রয়েছে। মূল কথা তারা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে তারা সকলেই অজ্ঞ। তিনি আরো বলেনঃ কোন মুসলিম যদি তা’বীল করে কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বা কাউকে কাফের বলে, তবে উক্ত মুসলিমকে কাফের বলা যাবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী থেকে যে হুকুম সাব্যস্ত হয়, দাওয়াত না পৌঁছিয়ে বান্দার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণের তিন ধরণের বক্তব্য রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্যই সঠিক। আল্লাহ বলেনঃ
)وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا(
“রাসূল না পাঠিয়ে আমি কাউকে শাস্তি দেবনা।” (সূরা ইসরাঃ ১৫)
)رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِأَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ(
“সুসংবাদ দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি ওযুহাত পেশ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে।” (সূরা নিসাঃ ১৬৫) বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, আল্লাহর চেয়ে অধিক ওযর-অযুহাত গ্রহণকারী আর কেউ নেই। এই জন্যই আল্লাহ তাআ’লা সুসংবাদ দাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে রাসূল প্রেরণ করেছেন।
মোট কথা অজ্ঞতার কারণে কেউ কুফরী করলে অথবা কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফের হবে না। এটাই আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং আলেমদের পথ।
উত্তরঃ আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছি যে, আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাতে আল্লাহর রুবূবীয়্যাত, পরিপূর্ণ রাজত্ব এবং পরিচালনা ক্ষমতার দাবী অনুযায়ী তাঁর হুকুম কার্যকর করার নামান্তর। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ(
“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলেম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা’বূদের ইবাদত করবে, যিনি ব্যতীত মা’বূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয়। তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র।” (সূরা তাওবাঃ ৩১) এখানে আল্লাহ তাআ’লা ইয়াহুদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসাবে নাম করণ করেছেন। কারণ তারাও আল্লাহর বিধানের মত বিধান রচনা করত। তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসাবে নাম দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে ঐ সব পাদ্রি ও আলেমদের কাছে নতি স্বীকার করত এবং তাদের অনুসরণ করত। আদী বিন হাতেমh রাসূল (ﷺ)কে বললেন, তারা তো তাদের ইবাদত করে না। নবী (ﷺ) বললেন, তারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে। এটার নামই ইবাদত।
আপনি জেনে নিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না; বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফেক) দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
)أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا أُوْلَئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا(
“আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তখন কেমন হবে? অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যে, কল্যাণ ও সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হল সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন, যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণের) আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবান রূপে পেত। অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে।” (সূরা নিসাঃ ৬০-৬৫)
এখানে আল্লাহ তাআ’লা ঈমানের দাবীদার মুনাফেকদের কয়েকটি বৈশিষ্ট তুলে ধরেছেনঃ
(১) মুনাফেকদের প্রথম বৈশিষ্ট হলো তারা তাগুতের নিকট বিচার-ফায়সালার জন্য গমণ করে থাকে। প্রত্যেক ঐ বিষয় বা ব্যক্তির নামই তাগুত, যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে। সমস্ত বিচার-ফায়সালা এবং হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ (
“জেনে রাখ তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৪)
(২) তাদেরকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় এবং রাসূল (ﷺ) এর দিকে আহবান করা হলে তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
(৩) তারা কোন বিপদে পড়লে অথবা তাদের কৃতকর্ম মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেলে শপথ করে বলে থাকে যে, সৎ উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা ব্যতীত আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমানে যারা ইসলামের বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাদের কথাও একই রকম। তারা বলে, আমাদের উদ্দেশ্য হল যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের উপকার সাধন করা।
আল্লাহ তাআ’লা উপরোক্ত চরিত্রের অধিকারী মুনাফেকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ তাআ’লা তাদের অন্তরের খবর জানেন এবং তাদেরকে নসীহত করার জন্য এবং কঠোর ভাষায় কথা বলার জন্য নবী (ﷺ)কে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য হল, যাতে শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুসরণ করা হয়। অন্য মানুষের অনুসরণ নয়। তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ যতই শক্তিশালী হোক না কেন। অতঃপর আল্লাহ তাআ’লা নিজের রুবূবীয়্যাতের শপথ করে তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত কারও ঈমান সংশোধন হবে না।
১) সকল প্রকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের দিকে ফিরে আসা।
২) রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য অন্তরকে প্রশস্ত করা।
৩) পরিপূর্ণভাবে রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নেয়া এবং কোন প্রকার শীথিলতা ব্যতীত তা বাস্তবে রূপদান করা।
দ্বিতীয় প্রকারের আয়াত সমূহে আল্লাহ বলেন,
)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْكَافِرُونَ(
“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফের।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৪)
)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ(
“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা জালেম।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৫)
)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الفَاسِقُوْنَ(
“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসেক।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৭) যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনিটি আয়াতে পরপর কাফের, জালেম এবং ফাসেক বলেছেন। তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল না, সে কাফের, ফাসেক এবং জালেমও বটে। কেননা আল্লাহ কাফেরদেরকে জালেম এবং ফাসেক হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন,
)وَالْكَافِرُونَ هُمْ الظَّالِمُونَ(
“বস্তুতঃ কাফেরেরাই প্রকৃত জালেম।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৪) আল্লাহ বলেন,
)إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُون(
“তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং ফাসেক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” (সূরা তাওবাঃ ৮৪) প্রত্যেক কাফেরই কি জালেম এবং ফাসেক? নাকি আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা না করার কারণে বিভিন্ন প্রকার মানুষের উপর অবস্থাভেদে এ সমস্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় মতটি আমার নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মানুষ কখনো কাফের হয়, কখনো জালেম হয় আবার অবস্থাভেদে কখনো ফাসেক হয়।
সুতরাং আমরা বলব যে, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ মনে করে এবং অন্য বিধানকে অধিক উপযোগী ও উপকারী মনে করে তার মাধ্যমে মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। এদের অন্তর্ভুক্ত ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের জন্য পথ হিসাবে ইসলাম বিরোধী বিধান রচনা করে। তারা তাদের রচিত বিধানকে মানুষের জন্য অধিক উত্তম ও উপযোগী মনে করেই তৈরী করে থাকে। এ কথা স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞাত হওয়া যায় যে, মানুষ এক পথ ছেড়ে দিয়ে যখন অন্য পথে চলে, তখন এটা মনে করেই চলে যে, প্রথম পথের চেয়ে দ্বিতীয় পথটি উত্তম।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বিচার-ফায়সালা করে কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না বরং সে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার কিংবা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এরূপ করে থাকে, তাহলে কাফের হবে না বরং জালেম হিসাবে গণ্য হবে।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধানের মাধ্যমে রাষ্টীয় বিচার-ফায়সালা করে কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না, বরং বিচার প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিংবা ঘুষ গ্রহণের জন্য কিংবা অন্য কোন পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য এরূপ করে থাকে, তা হলে কাফের হবে না; বরং ফাসেক হিসাবে গণ্য হবে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলেমদেরকে রব্ব (প্রভু) হিসাবে গ্রহণ করে, তারা দু’প্রকার।
(১) তারা জানে যে, তাদের গুরুরা আল্লাহর দ্বীন পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারপরও তারা তাদের অনুসরণ করে এবং তাদের হালাল করা বস্তকে হালাল ও হারামকে হারাম হিসাবে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে তাদের নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। তারা ভাল করেই জানে যে, তাদের নেতারা রাসূলদের আনীত দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। এটা নিঃসন্দেহে কুফরী। এটাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল শির্ক হিসাবে ব্যক্ত করেছেন।
(২) তারা কেবলমাত্র হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করার ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করে। তারা আল্লাহর নাফরমানীতে তাদের নেতাদের অনুসরণ করেছে। যেমনভাবে মুসলিমেরা হারাম জেনেও পাপকাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাদের হুকুম অন্যান্য পাপীদের মতই।
গাইরুল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য পশু কুরবানী করা বড় শির্ক।
প্রশ্নঃ (৬৯) গাইরুল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য পশু কুরবানী করার হুকুম কি? গাইরুল্লাহর নামে যবাই করা পশুর গোশত ভক্ষণ করা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ গাইরুল্লাহর নামে পশু যবাই করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কেননা যবাই করা একটি ইবাদত। আল্লাহ তাআ’লা এ মর্মে আদেশ দিয়ে বলেনঃ
)فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ(
“আপনার প্রভুর জন্য স্বলাত পড়ুন এবং কুরবানী করুন।” (সূরা কাউছারঃ ২)
)قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاي وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ(
“আপনি বলুন! আমার স্বলাত, আমার সমস্ত ইবাদত, আমার জীবন এবং আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এর জন্যে আদিষ্ট হয়েছি, আর আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই হলাম প্রথম।” (সূরা আনআ’মঃ ১৬২-১৬৩) সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে পশু যবাই করবে, চাই সে কোন ফেরেশতার উদ্দেশ্যে করুক বা নবী-রাসূলের উদ্দেশ্যে বা কোন অলী বা আলেমের উদ্দেশ্যে করুক, সবই শির্কে পরিণত হবে এবং এতে লিপ্ত ব্যক্তি মুশরিকে পরিণত হবে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ এ ধরণের শির্কে লিপ্ত না হওয়া। আল্লাহ বলেনঃ
)إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ (
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এরূপ অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী হবে না।” (সূরা মায়িদাঃ ৭২)
গাইরুল্লাহর জন্যে যবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
)حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ(
“তোমাদের জন্যে মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অপরের নামে উৎসর্গকৃত পশু, গলাটিপে মারা পশু, প্রহারে মৃত পশু, উপর থেকে পতিত হয়ে মারা যাওয়া পশু, অন্য পশুর শিংয়ের আঘাতে মৃত পশু এবং হিংস্র জন্তুর ভক্ষণ করা পশুর গোশত খাওয়া হারাম করা হয়েছে। তবে যা তোমরা যবাই দ্বারা পবিত্র করেছ, তা হালাল। আর যে সমস্ত পশুকে পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয়েছে, তাও তোমাদের জন্য হারাম।” (সূরা মায়িদাঃ ৩)
উত্তরঃ এই কাজটি অর্থাৎ আল্লাহ বা তাঁর রাসূল (ﷺ) অথবা কুরআন অথবা দ্বীন নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা কুফরী। যদিও তা মানুষকে হাসানোর নিয়তে হয়ে থাকে। নবী (ﷺ)এর যুগে এ রকম বিদ্রুপের ঘটনা ঘটেছিল। একদা মুনাফেকরা তাঁকে এবং সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলল, আমরা এ সমস্ত লোকদের চেয়ে অধিক পেট পূজারী, অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে এদের চেয়ে অধিক ভীতু আর কাউকে দেখিনি। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ
)وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ(
“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, উত্তরে তারা অবশ্যই বলবে যে, আমরা কেবল হাসি-তামাসা করছিলাম।” (সূরা তাওবাঃ ৬৫) নবী (ﷺ)এর কাছে যখন অভিযোগ আসল, তখন তারা বলল, পথের ক্লান্তি দূর করার জন্য যে সমস্ত কথা-বার্তা বলা হয়, আমরা শুধু তেমন কিছু কথাই বলছিলাম। নবী (ﷺ) তাদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে দিলেন।
) قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ(
“বলুন! তোমরা কি আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে হাসি-তামাসা করছিলে? তোমরা এখন ওযর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান প্রকাশের পর কুফরী করেছো।”(সূরা তাওবাঃ ৬৫-৬৬) কাজেই আল্লাহ তাআ’লা, রিস্বলাত, অহী এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত পবিত্র। এগুলোর কোন একটি নিয়ে ঠাট্টা করা বৈধ নয়। যে এরূপ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। কারণ তার কাজটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, কিতাব এবং শরীয়তকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রমাণ বহন করে। যারা এ ধরণের কাজ করবে, তাদের উচিৎ আল্লাহর দরবারে তাওবা করে এবং ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা। তাদের উচিৎ আল্লাহর প্রতি ভয় ও সম্মান দিয়ে অন্তরকে পরিপূর্ণ করা।
উত্তরঃ দু’আ করা দু’প্রকারঃ
(১) এবাদতের মাধ্যমে দু’আ। যেমনঃ স্বলাত, সওম এবং অন্যান্য ইবাদত। মানুষ যখন স্বলাত আদায় করে কিংবা সওম রাখে, তখন সে প্রভুর কাছে উক্ত এবাদতের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহর আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। আল্লাহর বাণী,
)وَقَالَ رَبُّكُمْ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِين(
“তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। যারা অহংকার করতঃ আমার ইবাদত হতে বিমুখ হবে, তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সূরা মুমিনঃ ৬০) আল্লাহ তাআ’লা দু’আকে ইবাদত হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এবাদতের কোন প্রকার আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে পেশ করবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফেরে পরিণত হবে। সুতরাং কেউ যদি কোন বস্তকে আল্লাহর মত সম্মানিত ভেবে তার সামনে রুকূ করে অথবা সেজদা করে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফেরে পরিণত হবে। এ কারণেই নবী (ﷺ) শির্কের দরজা বন্ধ করার জন্য পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় কারো সামনে মাথা নত করতে নিষেধ করেছেন। নবী (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন ব্যক্তি কি মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাতে মাথা নত করবে? উত্তরে তিনি তা করতে নিষেধ করেছেন। সালাম দেয়ার সময় অজ্ঞ লোকেরা যদি আপনার সামনে মাথা নত করে, তবে আপনার উপর আবশ্যক হল, তাদের কাছে বিষয়টি বর্ণনা করে দেয়া এবং তাকে নিষেধ করে দেয়া।
(২) কোন প্রয়োজনে কারো নিকট কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করা। এটি সকল ক্ষেত্রে শির্ক নয়।
প্রথমতঃ যার কাছে দু’আ করা হবে, সে যদি জীবিত হয়ে থাকে এবং প্রার্থিত বস্ত প্রদান করতে সক্ষম হয়ে থাকে, তাহলে শির্ক হবে না। যেমন আপনি কাউকে বললেন, আমাকে পানি পান করান, আমাকে দশটি টাকা দিন, ইত্যাদি। এ ধরণের কথা শির্ক নয়। নবী (ﷺ) বলেন, তোমাদেরকে যখন কেউ আহবান করে, তবে তোমরা তার আহবানে সাড়া দাও। আল্লাহ বলেন,
)وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُوْلُوا الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ(
“সম্পদ বন্টনের সময় আত্মীয়, ইয়াতীম এবং মিসকীন উপস্থিত হলে, তাদেরকে তা থেকে রিযিক হিসেবে কিছু দান কর।” (সূরা নিসাঃ ৮) সুতরাং ফকীর যদি হাত বাড়ায় এবং বলে আমাকে কিছু দান করুন, তাহলে তা জায়েয হবে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা তাদেরকে রিজিক রিযিক হিসেবে কিছু দাও।”
দ্বিতীয়তঃ যার কাছে দু’আ করা হল, সে যদি মৃত হয়, তাহলে শির্ক হবে এবং এতে লিপ্ত ব্যক্তি মুশরিকে পরিণত হবে।
বড়ই আফসোসের বিষয় যে, কিছু কিছু মুসলিম অধ্যষিত দেশে এমন অনেক মুসলিম রয়েছে, যারা বিশ্বাস করে যে, কবরে দাফনকৃত মাটির সাথে মিশে যাওয়া মৃত লোকটি উপকার বা অপকারের ক্ষমতা রাখে অথবা সন্তানহীনকে সন্তান দিতে সক্ষম। এটি বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। এ ধরণের শির্ককে সমর্থন করা মদ্য পান, ব্যভিচার এবং অন্যান্য পাপ কাজ সমর্থন করার চেয়েও জঘণ্য। আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন মুসলিমদের অবস্থা সংশোধন করে দেন।
প্রশ্নঃ (৭২) কাউকে আল্লাহর ওলী ভেবে তার কাছে বিপদে উদ্ধার কামনা করার জন্য ফরিয়াদ করা কি? আল্লাহর ওলী হওয়ার সঠিক আলামত কি?
উত্তরঃ আল্লাহ তাআ’লা ওলী হওয়ার গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ
)أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ(
“মনে রেখো যে, আল্লাহর ওলীদের না কোন আশঙ্কা আছে, আর না তারা বিষন্ন হবে। তারা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে ভয় করে চলে।” (সূরা ইউনুসঃ ৬২-৬৩) ঈমান এবং তাকওয়া আল্লাহর ওলী হওয়ার প্রধান আলামত। সুতরাং যে মুমিন হবে এবং আল্লাহকে ভয় করে চলবে, সেই আল্লাহর অলী বা বন্ধু। যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করবে, তারা আল্লাহর বন্ধু নয়; বরং তারা আল্লাহর শত্রু। আলাহ বলেনঃ
)مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَافِرِينَ(
“যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর ফেরেশতাগণের, জিবরীলের এবং মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ এরূপ কাফেরদের শত্রু।” (সূরা বাকারাঃ ৯৮) সুতরাং যে কোন মুসলিম গাইরুলাহর কাছে দু’আ করবে অথবা গাইরুলাহর কাছে এমন বিষয়ে ফরিয়াদ করবে, যে বিষয়ে তার কোন ক্ষমতা নেই, সে কাফের-মুশরিকে পরিণত হবে। সে কখনই আল্লাহর ওলী হতে পারে না। যদিও সে তা দাবী করে থাকে। বরং তাওহীদ, ঈমান এবং তাকওয়া বিহীন তার এ দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ হল, তারা যেন ভন্ড ওলীদের মাধ্যমে প্রতারিত না হয় এবং সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব এবং ছহীহ হাদীছের দ্বারস্ত হয়। তবেই তাদের আশা-ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপরই হবে এবং মানসিক প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ করবে। এতে ভন্ডদের হাত থেকে তাদের ধন্তসম্পদও হেফাজতে থাকবে। তেমনিভাবে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাতকে আকঁড়ে ধরার মধ্যে রয়েছে তাদেরকে ধোকার পথ হতে দূরে রাখার ব্যবস্থা। যারা কখনো নিজেদেরকে সায়্যেদ আবার কখনো ওলী হিসাবে দাবী করে, আপনি যদি তাদেরকে নিয়ে চিন্তা করেন, তবে দেখতে পাবেন যে, তারা আল্লাহর ওলী বা সায়্যেদ হওয়ার গুণাগুণ হতে সম্পূর্ণ দূরে। প্রকৃত পক্ষে যিনি আল্লাহর ওলী হবেন, তিনি নিজেকে ওলী হিসাবে প্রকাশ করা থেকে দূরে থাকবেন। আপনি তাকে পরহেজগার মুমিন হিসাবে দেখতে পাবেন। তিনি প্রকাশ করবেন না। তিনি মানুষের মাঝে ওলী হিসাবে প্রকাশিত হন বা মানুষ তার দিকে ধাবিত হোক, কোনটাই পছন্দ করবেন না। কোন মানুষ যদি এতটুকু কামনা করে যে, লোকেরা তাকে সম্মান করুক, তার কাছে এসে ভীড় করুক, তাহলে এটা হবে তাকওয়া এবং ওলী হওয়ার পরিপন্থী। যে ব্যক্তি মূর্খদের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলেমদের সাথে বিতর্ক করা কিংবা লোকদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইলম অর্জন করবে, তার জন্য নবী (ﷺ) থেকে কঠিন সতর্ক বাণী এসেছে। যারা নিজেদেরকে ওলী হিসাবে দাবী করে এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তারা প্রকৃত ওলীর গুণাগুণ হতে অনেক দূরে।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত হল, তারা যেন এ সমস্ত ভন্ডদের থেকে সাবধান থাকেন এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর দিকে ফিরে এসে আল্লাহকেই একমাত্র আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল হিসাবে গ্রহণ করেন।
উত্তরঃ আলেমগণ বলেন, যাদু বলা হয় প্রত্যেক এমন ক্রিয়া-কলাপকে, যার কারণ অস্পষ্ট ও গোপন থাকে, কিন্তু বাইরে তার প্রভাব দেখা যায়। গণক এবং জ্যোতিষের কার্যকলাপও যাদূর অন্তর্ভুক্ত। চাকচিক্যময় বক্তব্য ও ভাষার প্রভাবকেও যাদু বলা হয়। রাসূল (ﷺ) বলেন,
)إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ لَسِحْرًا(
“নিশ্চয়ই কিছু কিছু বক্তৃতার মধ্যে যাদু রয়েছে।” সুতরাং প্রতিটি বস্তর গোপন প্রভাবকে যাদু বলা হয়।
আর পরিভাষায় এমন কিছু গিরা এবং ঝাড়ফুঁকের নাম, যা মানুষের অন্তর, মস্তিষ্ক এবং শরীরের ভিতরে প্রভাব বিস্তার করতঃ কখনো জ্ঞান শুণ্য করে ফেলে, কখনো ভালবাসা বা ঘৃণা সৃষ্টি করে এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়। কখনো শরীর অসুস্থ করে দেয়। যাদু শিক্ষা করা হারাম। শুধু তাই নয়, বরং তা কখনো কুফরী এবং শির্কের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنْ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ(
“সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলায়মান (আঃ) অবিশ্বাসী হননি, কিন্তু শয়তানরাই অবিশ্বাস করছিল, তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিতো এবং উভয়ে কাউকে ওটা শিক্ষা দেয়ার পূর্বে তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষা ছাড়া কিছুই নই, অতএব তোমরা কুফরী করো না, অনন্তর যাতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তাই শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর আদেশ ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করত, যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত না হয়। নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে কেউ ওটা ক্রয় করবে, তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।” (সূরা বাকারাঃ ১০২) সুতরাং শয়তানকে শরীক বানানোর মাধ্যমে এ ধরণের যাদু শিক্ষা এবং ব্যবহার করা কুফরী এবং সীমা লংঘনের অন্তর্ভুক্ত। এই জন্যেই যাদুকরের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তার যাদূর সীমা যদি কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে তাকে কাফের এবং মুরতাদ হিসাবে হত্যা করতে হবে। আর তার যাদু যদি কুফরী পর্যন্ত না পৌঁছে, তাহলে মুসলিমদেরকে তার ক্ষতি হতে হেফাজত করার জন্য তাকে দন্ড প্রয়োগ করে করে হত্যা করতে হবে।
উত্তরঃ যাদুর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা তৈরী করা হারাম। অনুরূপভাবে যাদুর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করাও হারাম। কখনো কখনো শির্কে পরিণত হয়। আল্লাহ বলেনঃ
)وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنْ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ(
“এবং উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, এমনকি তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষা ছাড়া কিছুই নয়, অতএব তোমরা কুফরী করো না, অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তাই শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর আদেশ ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করত, যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত না হয়, এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। (সূরা বাকারাঃ ১০২)
উত্তরঃ গণক এমন লোককে বলা হয়, যে অনুমানের উপর নির্ভর করে ভিত্তিহীন বিষয়ের অনুসন্ধান করে থাকে। জাহেলী যামানার কিছু পেশাদার লোকের সাথে শয়তানের যোগাযোগ ছিল। শয়তানেরা চুরি করে আকাশের সংবাদ শ্রবণ করত এবং তাদের কাছে বলে দিত। আকাশ থেকে যা শ্রবণ করত, তার সাথে আরো অনেক মিথ্যা কথা সংযোগ করে মানুষের মধ্যে তা প্রকাশ করত। তারা যা বলত, তার একটি কথা সত্য হলে মানুষ ধোকায় পড়ে যেত এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্য ও ভবিষ্যতে কি হবে, তা জানতে গণকদের কাছে আসা শুরু করত। এই জন্যই আমরা বলি যে, গণক হচ্ছে সেই লোক, যে ভবিষ্যতের অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে থাকে। যারা গণকের কাছে আসে, তারা তিনভাগে বিভক্তঃ
(১) গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং তার কথায় বিশ্বাস না করা। এটা হারাম। এ ধরণের লোক সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলেছেন,
)مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً(
“যে ব্যক্তি গণকের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করল, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার স্বলাত কবূল হবে না।”
(২) গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং তার কথায় বিশ্বাস করা। এটা আল্লাহর সাথে কুফরী করার অন্তর্ভুক্ত। কারণ সে ইলমে গায়েবের দাবীতে গণককে বিশ্বাস করেছে। মানুষ ইলমে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করলে আল্লাহর কথাকে অবিশ্বাস করা হবে। আল্লাহ বলেনঃ
)قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ(
“বলুন, আকাশ এবং জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবের সংবাদ অন্য কেউ জানে না।” (সূরা নমলঃ ৬৫) ছহীহ হাদীছে এসেছে, নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ أَتَى كَاهِنًا فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গমণ করে তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ (ﷺ)এর উপর অবতীর্ণ বিষয় (কুরআন ও সুন্নাহ)র সাথে কুফরী করল।” এ ধরণের মানুষ তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করলে কুফরী অবস্থায় তার মৃত্যু হবে।
(৩) গণককে পরীক্ষার জন্য এবং মানুষের সামনে তার ধোঁকাবাজির কথা তুলে ধরার জন্য তার কাছে যেতে কোন অসুবিধা নেই। ইবনু সায়্যাদ নবী (ﷺ)এর কাছে আগমণ করলে তিনি মনের মধ্যে একটি কথা গোপন করে ইবনে সায়্যাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল তো আমি কি গোপন করেছি? ইবনে সায়্যাদ বলল, আদ্দুখ্অর্থাৎ আদ্দুখান (ধোঁয়া)। নবী (ﷺ) বললেন, অকল্যাণ হোক তোমার! তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
উত্তরঃ যে ইবাদত ‘রিয়া’ মিশ্রিত হয় তা তিনি প্রকারঃ
প্রথম প্রকারঃ ইবাদত মূলতঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যই করা হয়। যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ এবং মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য ‘স্বলাত’ আদায় করা। ইহা শিরক এবং এ প্রকার ইবাদত বাতিল।
দ্বিতীয় প্রকারঃ ইবাদত করার মধ্যবর্তী অবস্থায় ‘রিয়ায়’ পতিত হওয়া। অর্থাৎ যেমন ইবাদত শুরুর সময় একনিষ্ঠভাবে অরম্ভ করে কিন্তু ইবাদতের মধ্যবর্তী সময়ে ‘রিয়া’ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ইবাদত দু’অবস্থা হতে খালি নয়ঃ
প্রথম অবস্থাঃ যদি উক্ত ইবাদতের প্রথমাংশ শেষাংশের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে প্রথমাংশ শুদ্ধ হবে এবং দ্বিতীয় অংশ বাতিল হবে। এর উদাহরন হল, যেমন কোন ব্যাক্তি একশত টাকা দান করার ইচ্ছা পোষণ করল। এর মধ্যে ৫০ টাকা দান করল খালেস নিয়তে। বাকী ৫০টাকা দান করল লোক দেখানোর নিয়তে। পরের ৫০টাকা দান করার সময় রিয়া মিশ্রিত হওয়ার কারণে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ যদি ইবাদতটির শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল হয় তবে এর দুটি অবস্থা।
(ক) ইবাদতকারী ব্যাক্তি ‘রিয়াকে’ প্রতিহত করবে এবং ‘রিয়ার’ উপর স্থির হবে না। এমতাবস্থায় ‘রিয়া’ ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না, অথবা কোন ক্ষতিও করবে না। যেমন নবী (ﷺ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের মনের মধ্যে যেসমস- কথা উদিত হয় সেগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। যদি তা কাজে পরিণত না করে বা মুখে তা উচ্চারণ না করে।
(খ) অপর অবস্থাটি হলঃ ইবাদতকারী ‘রিয়ার’ প্রতি তুষ্ট থাকবে এবং ‘রিয়া’কে অন্তরে প্রতিহত করবে না। এমতাবস্থায় তাঁর পূর্ণ ইবাদতটি বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ইবাদতের শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল। যেমন কোন ব্যাক্তি ‘স্বলাতে’ দাঁড়াল ইখলাসের সাথে, অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে তাঁর অন্তরে ‘রিয়া’র উদয় হল এবং উক্ত ব্যাক্তি ‘রিয়া’র প্রতি তুষ্ট থাকল (অন্তরে ‘রিয়া’কে প্রতিহত করল না) এমতাবস্থায় পূর্ণ ‘স্বলাত’ বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ‘স্বলাতের’ শেষাংশের সাথে প্রথমাংশ সম্পৃক্ত রয়েছে।
তৃতীয় প্রকারঃ ইবাদত সমাপ্ত করার পর যদি ইবাদতকারীর অন্তরে ‘রিয়া’র উদ্ভব ঘটে, তবে তা ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না বা ইবাদতটি বাতিলও হবেনা। কারণ বিশুদ্ধভাবে তা সম্পাদিত হয়েছে। সম্পাদিত হওয়ার পর রিয়ার কারণে তা নষ্ট হবেনা।
প্রথম প্রকারঃ ইবাদত মূলতঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যই করা হয়। যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ এবং মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য ‘স্বলাত’ আদায় করা। ইহা শিরক এবং এ প্রকার ইবাদত বাতিল।
দ্বিতীয় প্রকারঃ ইবাদত করার মধ্যবর্তী অবস্থায় ‘রিয়ায়’ পতিত হওয়া। অর্থাৎ যেমন ইবাদত শুরুর সময় একনিষ্ঠভাবে অরম্ভ করে কিন্তু ইবাদতের মধ্যবর্তী সময়ে ‘রিয়া’ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ইবাদত দু’অবস্থা হতে খালি নয়ঃ
প্রথম অবস্থাঃ যদি উক্ত ইবাদতের প্রথমাংশ শেষাংশের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে প্রথমাংশ শুদ্ধ হবে এবং দ্বিতীয় অংশ বাতিল হবে। এর উদাহরন হল, যেমন কোন ব্যাক্তি একশত টাকা দান করার ইচ্ছা পোষণ করল। এর মধ্যে ৫০ টাকা দান করল খালেস নিয়তে। বাকী ৫০টাকা দান করল লোক দেখানোর নিয়তে। পরের ৫০টাকা দান করার সময় রিয়া মিশ্রিত হওয়ার কারণে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ যদি ইবাদতটির শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল হয় তবে এর দুটি অবস্থা।
(ক) ইবাদতকারী ব্যাক্তি ‘রিয়াকে’ প্রতিহত করবে এবং ‘রিয়ার’ উপর স্থির হবে না। এমতাবস্থায় ‘রিয়া’ ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না, অথবা কোন ক্ষতিও করবে না। যেমন নবী (ﷺ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের মনের মধ্যে যেসমস- কথা উদিত হয় সেগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। যদি তা কাজে পরিণত না করে বা মুখে তা উচ্চারণ না করে।
(খ) অপর অবস্থাটি হলঃ ইবাদতকারী ‘রিয়ার’ প্রতি তুষ্ট থাকবে এবং ‘রিয়া’কে অন্তরে প্রতিহত করবে না। এমতাবস্থায় তাঁর পূর্ণ ইবাদতটি বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ইবাদতের শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল। যেমন কোন ব্যাক্তি ‘স্বলাতে’ দাঁড়াল ইখলাসের সাথে, অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে তাঁর অন্তরে ‘রিয়া’র উদয় হল এবং উক্ত ব্যাক্তি ‘রিয়া’র প্রতি তুষ্ট থাকল (অন্তরে ‘রিয়া’কে প্রতিহত করল না) এমতাবস্থায় পূর্ণ ‘স্বলাত’ বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ‘স্বলাতের’ শেষাংশের সাথে প্রথমাংশ সম্পৃক্ত রয়েছে।
তৃতীয় প্রকারঃ ইবাদত সমাপ্ত করার পর যদি ইবাদতকারীর অন্তরে ‘রিয়া’র উদ্ভব ঘটে, তবে তা ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না বা ইবাদতটি বাতিলও হবেনা। কারণ বিশুদ্ধভাবে তা সম্পাদিত হয়েছে। সম্পাদিত হওয়ার পর রিয়ার কারণে তা নষ্ট হবেনা।
ইবাদত দেখে কেউ প্রশংসা করলে এবং তাতে ইবাদতকারী খুশী হলে তা রিয়ার অন্তর্গত হবেনা। কারণ এটি ইবাদত সমাপ্ত হওয়ার পর প্রকাশিত হয়েছে। আনুগত্যের কাজ করার পর মানুষ খুশী হবে, এটাই স্বাভাবিক। বরং এটি তার ঈমানের প্রমাণ বহন করে। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
مَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَذَلِكُمُ الْمُؤْمِنُ
“নেকীর কাজ করে যে খুশী হয় এবং পাপের কাজকে যে খারাপ মনে করে, সেই প্রকৃত মুমিন।” রাসুল (ﷺ)বলেনঃ
تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمؤْمِنِ ইহা মু’মিনের আগাম শুভ সংবাদ।
উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর একটু বিস্তারিতভাবে দেয়া প্রয়োজন। যখন একজন ব্যক্তি কোন বস্তর নামে শপথ করে, তখন উক্ত বস্তকে সম্মানিত মনে করেই করে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ বা তাঁর অন্য কোন নাম অথবা কোন সিফাত (গুণাবলী) ব্যতীত অন্য বস্তর নামে শপথ করা জায়েয নেই। যেমন কেউ বলল, আল্লাহর শপথ! আমি একাজটি অবশ্যই করব অথবা বলল কাবা ঘরের প্রভুর শপথ! আল্লাহর বড়ত্বের শপথ! ইত্যাদি।
কুরআন মাজীদ আল্লাহর কালাম (কথা)। আল্লাহর কথা তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত। কথা বলা আল্লাহর সত্বাগত সিফাত। তিনি সদাসর্বদা এ গুণে গুণান্বিত। যখন ইচ্ছা, তখনই তিনি কথা বলেন। কথা বলার শক্তি থাকা বা বাকশক্তি থাকা একটি পূর্ণতার গুণ। আল্লাহ তাআ’লা সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ। তাই কথা বলা আল্লাহর একটি সত্বাগত গুণ। যখন ইচ্ছা, তখনই তিনি কথা বলেন, এই দৃষ্টি কোন থেকে কথা বলা একটি কর্মগত গুণ। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ(
“তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন ওকে বলেনঃ হয়ে যাও, ফলে তা হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২) এখানে কথা বলাকে ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ যখন ইচ্ছা কথা বলেন। এব্যাপারে আরো অনেক দলীল রয়েছে। যারা বলে আল্লাহ সদাসর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত, কিন্তু আল্লাহর কথা তাঁর সত্বার সাথে সম্পৃক্ত, বাইরে এর কোন প্রভাব নেই বা কেউ তাঁর কথা শ্রবণ করতে পারে না, তাদের মতবাদ সম্পূর্ণ ভুল। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাদের মাযহাব বাতিল হওয়ার ব্যাপারে ৯০টি যুক্তি বর্ণনা করেছেন।
যেহেতু কুরআন মাজীদে আল্লাহর কালাম রয়েছে, আর আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত, তাই কুরআনের শপথ করা জায়েয আছে। হান্বলী মাযহাবের ফকীহগণ এটাকে বৈধ বলেছেন। শ্রোতাদের বুঝতে অসুবিধা হয় এমন শব্দ উচ্চারণ করে শপথ করা ঠিক নয়। সাধারণ লোকেরা যাতে বুঝতে পারে, এমন শব্দ দ্বারা শপথ করা উচিৎ। কেননা মানুষ বুঝতে পারে এবং তাদের অন্তরে স্বসি- অর্জিত হয়, এমন বক্তব্য মানুষের কাছে পেশ করাই উত্তম। শপথ যেহেতু আল্লাহ, তাঁর নাম এবং সিফাতের মাধ্যমেই করতে হবে, তাই গাইরুল্লাহর নামে, নবীর নামে, জিবরীল ফেরেশতার নামে, কাবার নামে বা অন্য কোন মাখলুকের নামে শপথ করা জায়েয নয়। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ لِيَصْمُتْ
“যে ব্যক্তি শপথ করতে চায় সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা যেন চুপ থাকে।” নবী (ﷺ) আরো বলেনঃ
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করল, সে কুফরী বা শির্ক করল।” কেউ যদি কোন মানুষকে নবী (ﷺ), তাঁর হায়াত কিংবা অন্য ব্যক্তির নামে শপথ করতে দেখে, তা হলে সে যেন তাকে নিষেধ করে এবং বলে দেয় যে, এটা হারাম। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, আদেশ বা নিষেধ যাতে নম্র ভাষায় হয়। যাতে করে সে সহজেই নসীহত কবূল করতে পারে। কেননা অনেক মানুষ রয়েছে, যারা রাগাম্বিত হয়ে মানুষকে আদেশ-নিষেধ করে থাকে। অনেক সময় তাদের চেহারা রক্তিম হয়ে যায়। মনে হয় সে যেন নিজের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এতে করে শয়তান সুযোগ পেয়ে যায়। মানুষ যদি পরস্পরকে সম্মান করতো, হিকমত এবং নম্রতার সাথে তাকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিতো, তা হলে তাদের কথা অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। নবী(ﷺ) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ
“নিশ্চয় আল্লাহ নম্রতার মাধ্যমে যা দান করেন, কঠোরতার মাধ্যমে তা দান করেন না।”
একদা জনৈক গ্রাম্যলোক মসজিদে নববীতে এসে পেশাব করে দিল। লোকেরা তাকে ধমকাতে শুরু করল। নবী (ﷺ) তাদেরকে ধমকাতে নিষেধ করলেন। লোকটি যখন পেশাব শেষ করল, নবী (ﷺ) তাকে কাছে ডেকে এনে বললেন, এ সকল মসজিদ আল্লাহর ঘর, পেশাব বা ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান নয়। তা কেবলমাত্র আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করা, তাসবীহ পাঠ করা এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জন্যই নির্দিষ্ট। অতঃপর তিনি ছাহাবীদেরকে পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দেয়ার আদেশ দিলেন। এতেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল এবং মসজিদ পবিত্র হয়ে গেল। সাথে সাথেগ্রাম্য লোকটিকে উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যও সফল হয়ে গেল। আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকেও এরূপ হওয়া উচিৎ। আমরা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য পন্থায় সত্যকে তুলে ধরব। আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দিন।
প্রশ্নঃ (৭৮) নবীর নামে, কাবার নামে এবং মানমর্যাদা ও জিম্মাদারীর নামে শপথ করার বিধান কি?
উত্তরঃ- নবী (ﷺ)এর নামে শপথ করা জায়েয নয়; বরং ইহা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে কাবার নামে শপথ করা শির্ক। নবী (ﷺ) এবং কাবা উভয়টিই মাখলুক। আর কোন মাখলুকের নামে শপথ করাই শির্ক। এমনিভাবে সম্মান এবং জিম্মাদারীর শপথ করাও শির্ক। নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَك
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করল, সে কুফরী বা শির্ক করল।” ইবনে উমার h থেকে বর্ণিতঃ
أَنَّهُ أَدْرَكَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فِي رَكْبٍ وَهُوَ يَحْلِفُ بِأَبِيهِ فَنَادَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا إِنَّ اللَّهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ فَمَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ وَإِلَّا فَلْيَصْمُتْ
“তিনি তাঁর পিতা উমার hকে পিতার নামে শপথ করতে শুনলেন। নবী (ﷺ) কাফেলার লোকজনকে ডেকে বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতার নামে শপথ করতে নিষেধ করছেন। যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।” কিন্তু “আমার জিম্মায়” একথাটি শপথ নয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল অঙ্গিকার।
প্রশ্নঃ (৭৯) যে ব্যক্তি কবরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করে, কবরবাসীর কাছে দু’আ করে এবং তাদের জন্য নযর-মানত পেশসহ অন্যান্য ইবাদত করে থাকে, তার হুকুম কি?
উত্তরঃ এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। বিস্তারিতভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া দরকার। তাই আমরা বলব যে, কবরবাসীগণ দু’প্রকারঃ
(১) যারা ইসলামের উপর মৃত্যু বরণ করেছে এবং মানুষ তাদের প্রশংসা করে থাকে, আশা করা যায় এদের পরিণতি ভাল হবে কিন্তু তারা মুসলিম ভাইয়ের দু’আর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ(
অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে আগ্রণী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।” (সূরা হাশরঃ ১০) মৃত ব্যক্তি নিজের অকল্যাণ দূর করতে বা কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম নয়। তা হলে কিভাবে সে অপরের কল্যাণ করতে পারবে অথবা অপরের পক্ষ হতে অকল্যাণ দূর করতে পারবে?
(২) যারা ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় শির্কের মত পাপ নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছে তারা দাবী করতো যে তারা আল্লাহর ওলী, তারা গায়েবের খবর রাখে। এমনকি রুগীর আরোগ্য দান, মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ সাধনের দাবীও করে থাকে। এরা কুফরী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। এদের জন্য দু’আ করা এবং আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রহমত কামনা করা জায়েয নেই।
)مَاكَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُوْلِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ (
“নবী ও মুমিনদের উচিৎ নয় মুশরেকদের জন্য মাগফেরাত কামনা করা। যদিও তারা নিকটাত্মীয় হোক- একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা দোযখী। আর ইবরাহীম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর কাছে এ কথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেন। নিঃসন্দেহে ইবরাহীম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল।” (সূরা তাওবাঃ ১১৩-১১৪) কবরবাসীগণ কারো ক্ষতি বা কল্যাণ করতে পারে না। তাই কবরবাসীদের কাছে এগুলো কামনা করা জায়েয নেই। যদিও কোন কোন কবর থেকে কারামাত প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন কবর থেকে আলো বের হওয়া, সুঘ্রাণ বের হওয়া ইত্যাদি। অথচ তারা শির্কের উপরে মৃত্যু বরণ করেছে। তাদের কবর থেকে যদি এরূপ কিছু বের হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, এটি ইবলীস শয়তানের ধোঁকা মাত্র।
মুসলিমদের উচিৎ শুধুমাত্র আল্লাহর উপর সকল প্রকার আশা-ভরসা করা। কেননা তাঁর হাতেই আকাশ-জমিনের একমাত্র রাজত্ব। তাঁর দিকেই সকলে প্রত্যাবর্তন করবে। তিনিই ফরিয়াদকারীর দু’আ কবূল করেন এবং মানুষের অকল্যাণ দূর করেন। আল্লাহতাআলা বলেনঃ
)وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْ اللَّهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمْ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ (
“তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতঃপর যখন তোমরা দুঃখ-কষ্টে পতিত হও, তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।” ( সূরা নাহ্লঃ ৫৩) মুসলিমদের জন্য আমার আরো নসীহত এই যে, তারা যেন দ্বিনী বিষয়ে কারো তাকলীদ না করে এবং একমাত্র রাসূল (ﷺ)এর নিঃশর্ত অনুসরণ করে। আল্লাহ বলেনঃ
)وَلَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُوْلِ اللَّهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ (
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে, পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহর সন'ষ্টি কামনা করে, তাদের জন্য রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাবঃ ২১) আল্লাহ বলেন,
)قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّه(ُ
“বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)
মুসলিমদের উপর আবশ্যক হল, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওলী হওয়ার দাবী করে, তারা যেন তার আ‘মালগুলোকে কুরআন্তসুন্নাহর কষ্টি পাথরে যাচাই করে দেখে। তার আ‘মালগুলো যদি আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক হয়, তাহলে আশা করা যায় যে, সে আল্লাহর ওলী। আর যদি তার ভিতরে কুরআন্তসুন্নাহ বিরোধী আ‘মাল পাওয়া যায়, তাহলে কোন ক্রমেই সে আল্লাহর ওলী হতে পারে না। আল্লাহ তাআ’লা তাঁর কিতাবে ওলী হওয়ার মানদন্ড বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
)أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ(
“জেনে রেখো, যারা আল্লাহর ওলী, তাদের না আছে কোন ভয়-ভীতি, না তারা চিন্তিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং তারা ভয় করে চলে।” (সূরা ইউনুসঃ ৬২-৬৩) সুতরাং যে মুমিন্তমুত্তাকী, সেই আল্লাহর ওলী। আর যে ব্যক্তির ভিতরে ঈমান এবং তাকওয়া নেই, সে আল্লাহর ওলী হতে পারে না। যার ভিতরে যতটুকু ঈমান ও আ‘মাল রয়েছে, তার ভিতরে ততটুকু আল্লাহর বন্ধুত্ব রয়েছে। তবে আমরা নির্দিষ্ট করে কাউকে আল্লাহর ওলী হিসাবে সার্টিফিকেট দিতে পারি না। আমরা বলতে পারি, যিনি মুমিন্তমুত্তাকী হবেন তিনি আল্লাহর ওলী হবেন।
কবরের ভক্তরা কবরবাসীর কাছে দু’আ করলে অথবা কবর থেকে মাটি নিলে যদিও কখনো কখনো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়, তথাপিও এটা বিশ্বাস করা যাবে না যে, কবরবাসীই উক্ত উদ্দেশ্য অর্জনের কারণ। এটি কবরবাসীর কাছে দু’আকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে ফিতনার কারণও হতে পারে। কারণ আমরা জানি যে, কবরবাসী কারও দু’আ কবূল করার ক্ষমতা রাখেন না কিংবা কবরের মাটি কল্যাণ আনয়ন করতে বা ক্ষতি দমন করতে সক্ষম নয়। আল্লাহ বলেনঃ
)وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِين(
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তকে আহবান করে, যে কেয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের আহবান সম্পর্কেও বেখবর। যখন মানুষকে হাশরে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রুতে পরিণত হবে এবং তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে।” (সূরা আহকাফঃ ৫-৬) আল্লাহ বলেন,
)وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ(
“এবং যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে ওরা তো কোন বস্তই সৃষ্টি করে না, বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত। তারা মৃত-প্রাণহীন এবং কবে তারা পুনরুত্থিত হবে, তাও জানে না।” (সূরা নাহলঃ ২০-২১)
এই মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ ছাড়া যাকেই ডাকা হোক না কেন, ডাকে সাড়া দিবে না এবং আহবানকারীর কোন উপকারও করতে পারবে না।
তবে কখনও কখনও আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু’আ করার সময় প্রার্থিত বস্ত অর্জিত হয়ে হয়ে থাকে। আল্লাহর পক্ষ হতে ইহা একটি পরীক্ষা মাত্র। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে পাপ কাজের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। যাতে তিনি জানতে পারেন কে আল্লাহর খাঁটি বান্দা আর কে প্রবৃত্তির অনুসারী।
আপনি জানেন না যে শনিবারের দিন আল্লাহ তা’আলা ইহুদীদের উপর মাছ শিকার করা হারাম করেছিলেন? ঐ দিকে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য শনিবারের দিন প্রচুর পরিমাণ মাছ সাগরের কিনারায় পাঠিয়ে দিলেন। শনিবার ছাড়া অন্য দিনে মাছগুলো লুকিয়ে থাকত। এভাবে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হল। ইহুদীরা বললঃ কিভাবে আমরা এ মাছগুলো থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখব? অতঃপর তারা চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে, আমরা জাল তৈরী করে শনিবার দিন তা সাগরে ফেলে রাখবে আর রবিবারের দিন মাছ শিকার করব। আল্লাহর হারামকৃত জিনিষকে হালাল করার জন্য তারা কৌশল অবলম্ভন করল। পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে বানরে পরিণত করে দিলেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
)وَاسْأَلْهُمْ عَنْ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ لَا تَأْتِيهِمْ كَذَلِكَ نَبْلُوهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ(
আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন যা ছিল সাগরের তীরে অবসি'ত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশের ব্যাপারে সীমাক্রিম করতে লাগল। যখন শনিবারের দিন মাছগুলো আসতে লাগল তাদের কাছে দলে দলে। আর যেদিন শনিবার হতনা সে দিন আসতনা। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ তারা ছিল নাফরমান। (সূরা আ’রাফঃ ১৬৩) লক্ষ করুন! যেদিন তাদের জন্য মাছ ধরা নিষেধ ছিল সেদিন কিভাবে আল্লাহ তাদের জন্য মাছগুলো তাদের আয়ত্তে এনে দিয়েছিল? কিন্তু তারা ধৈর্য ধারণ করতে পারেনি। তাই আল্লাহর হারামকৃত জিনিষকে হালাল করার জন্য তারা কৌশল অবলম্ভন করল।
আরো লক্ষ করুন নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)এর সাথীদের প্রতি। তারা ছিলেন ইহ্রাম অবস্থায়। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাদের নিকট এমন কিছু শিকারযোগ্য প্রাণী পাঠিয়ে পরীক্ষা করলেন যা ছিল তাদের জন্য হারাম। প্রাণীগুলো তাদের হাতের নাগালে ছিল। কিন্তু সাহাবীগণ কোন জন্তু শিকার করেন নি। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
)يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَيَبْلُوَنَّكُمْ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ الصَّيْدِ تَنَالُهُ أَيْدِيكُمْ وَرِمَاحُكُمْ لِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَخَافُهُ بِالْغَيْبِ فَمَنْ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ(
“হে মু’মিন আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন যে শিকার পর্যন্ত তোমাদের হাত ও বর্শা সহজেই পৌঁছতে পারবে- যাতে আল্লাহ বুঝতে পারেন যে, কে তাঁকে অদৃশ্যভাবে ভয় করে। অতএব যে ব্যক্তি এরপরও সীমা অতিক্রম করবে তার জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। (সূরা মায়িদাহঃ ৯৪)
সুতরাং শিকারগুলো ছিল তাদের হাতের নাগালে। মাটিতে চলাচলকারী প্রাণীগুলো হাতেই ধরা যেত। উড়ন্ত পাখিগুলো বর্শা দিয়েই শিকার করা যেত। শিকার ধরা ছিল অত্যন্ত সহজ। কিন্তু সাহাবীগণ আল্লাহকে ভয় করেছেন এবং কোন প্রাণীই শিকার করেন নি।
এমনিভাবে কোন মানুষের জন্য যখন হারাম কাজ করা সহজ হয়ে যাবে তখন আল্লাহকে ভয় করে উক্ত হারাম কাজ থেকে বিরত থাকবে। এবং এটা মনে রাখবে যে, কারো জন্য হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার পথ সহজ করে দেয়া তার জন্য একটি পরীক্ষা স্বরূপ। কাজেই ধৈর্য ধারণ করা উচিত। পরহেজগারদের জন্যই উত্তম পরিণতি।
প্রশ্নঃ (৮০) যে সমস্ত কবর পূজারী নবী (ﷺ)এর কবর মসজিদের ভিতরে হওয়াকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে, আমরা কিভাবে তাদের উত্তর দিব?
উত্তরঃ উক্ত প্রশ্নের উত্তর আমরা কয়েকভাবে দিতে পারিঃ-
১) মসজিদটি মূলতঃ কবরের উপর নির্মাণ করা হয়নি; বরং এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে নবী (ﷺ)এর জীবদ্দশায়।
২) নবী (ﷺ) কে মসজিদে দাফন করা হয়নি। কাজেই একথা বলার অবকাশ নেই যে ইহাও সৎ ব্যক্তিদেরকে মসজিদে দাফন করার কুপ্রথার অন্তর্ভুক্ত। বরং নবী (ﷺ)কে তাঁর নিজ ঘরে দাফন করা হয়েছে।
৩) রাসূল (ﷺ)এর ঘরগুলোকে মসজিদে প্রবেশ করানো ছাহাবীদের যৌথ সিদ্ধান্তে হয়নি বরং তাদের অধিকাংশের মৃত্যুর পর হয়েছে। তখন তাঁদের অল্প কয়েকজন মাত্র বেঁচে ছিলেন। উহা ঘটেছিল ৯৪ হিঃ সনে মসজিদ সম্প্রসারণ কালে। এই কাজটি ছাহাবীদের অনুমতি বা তাদের যৌথ সিদ্ধান্তে হয়নি। তাদের কেউ কেউ উহাতে বিরোধীতাও করেছিলেন। তাবেয়ীদের মধ্যে সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
৪) কবরটি মূলতঃ মসজিদের ভিতরে নয়। কারণ উহা মসজিদ হতে সমপূর্ণ পৃথক কক্ষে রয়েছে। আর মসজিদকে ওর উপর বানানো হয়নি। এজন্যই এই স্থানটিকে তিনটি প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষিত ও বেষ্টিত করা হয়েছে। আর উত্তর দিকের প্রাচীরটি ত্রিভুজের মত করে রাখা হয়েছে। এতে করে নবী (ﷺ)এর কবরটি সরাসরি মুছল্লীর সামনে পড়ে না। আশা করি কবর পূজারীদের দলীল খন্ডনে উপরোক্ত উত্তরগুলোই যথেষ্ট হবে।
উত্তরঃ কবরের উপর নির্মাণ কাজ করা হারাম। যেমন কবর পাকা করা, কবরের চার পাশে প্রাচীর নির্মাণ করা, গম্বুজ ইত্যাদি তৈরী করা ইত্যাদি। নবী (ﷺ) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এতে কবরবাসীকে অতিরিক্ত সম্মান করার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কবরবাসীদেরকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করারও ভয় রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ কবরের অবস্থাই তাই। অধিকাংশ মানুষই কবরবাসীদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে। আল্লাহর কাছে কিছু পাওয়ার আশায় কবরবাসীর উসীলায় দু’আ করে থাকে। কবরবাসীদের কাছে দু’আ করা এবং বিপদা-পদ দূর করার জন্য তাদের কাছে ফরিয়াদ করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
উত্তরঃ নবী (ﷺ) মসজিদে দাফন করতে এবং কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। নবী (ﷺ) মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তেও কবরকে মসজিদে পরিণতকারীদের উপর লা’নত করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, কবরকে মসজিদে পরিণত করা ইহুদী-খৃষ্টানাদের কাজ। কারণ মসজিদে দাফন করা এবং কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা শির্কের মাধ্যম ও বাহন। মসজিদে মৃত ব্যক্তিদেরকে দাফন করা হলে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, দাফনকৃত ব্যক্তি কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষমতা রাখে অথবা তার এমন বৈশিষ্ট রয়েছে, যা তার আনুগত্যকে আবশ্যক করে। মুসলিমদের অপরিহার্য কর্তব্য হবে এই ভয়াবহ খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। মসজিদগুলো যেন সকল প্রকার শির্ক থেকে মুক্ত হয়ে ছহীহ আকীদা এবং নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয় সে চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন,
)وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا(
“এবং মসজিদসমূহ আল্লাহ তাআ’লার জন্য। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” (সূরা জিনঃ ১৮) সুতরাং মসজিদসমূহ সকল প্রকার শির্কের চিহ্ন থেকে মুক্ত করতে হবে। তাতে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, যাঁর কোন শরীক নেই। এটাই মুসলিমদের উপর ওয়াজিব।
উত্তরঃ যে কোন কবর যিয়ারতের নিয়তে সফর করা জায়েয নয়। নবী (ﷺ) বলেনঃ
لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى “তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে ভ্রমণ করো না। মসজিদুল হারাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর মসজিদ এবং মাসজিদুল আকসা ” হাদীছের উদ্দেশ্য হল এবাদতের নিয়তে পৃথিবীর কোন স্থানের দিকে সফর করা যাবে না। কারণ এই তিনটি মসজিদের দিকেই এবাদতের নিয়তে সফর করা জায়েয। অন্য কোন মসজিদের দিকে ভ্রমণ করা জায়েয নেই। নবী (ﷺ)এর কবরের উদ্দেশ্যে নয়; বরং তাঁর মসজিদে এবাদতের নিয়তে সফর করতে হবে। মসজিদে পৌঁছে গেলে নবী (ﷺ)এর কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। তা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলাদের জন্য নবী (ﷺ)এর কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই।
কবরের মাধ্যমে বরকত কামনা এবং তার চার পার্শ্বে তাওয়াফ করা হারাম।
প্রশ্নঃ (৮৪) কবরের মাধ্যমে বরকত হাসিল করা বা উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কিংবা নৈকট্য হাসিলের জন্য কবরের চার পার্শ্বে তাওয়াফ করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করার হুকুম কি?
উত্তরঃ কবর থেকে বরকত কামনা করা হারাম এবং উহা শির্কের পর্যায়ে। কেননা এটা এমন এক বিশ্বাস, যার পক্ষে আল্লাহ তাআ’লা কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি। সালাফে সালেহীন থেকে কবরের বরকত গ্রহণ করার কথা প্রমাণিত নয়। এ দৃষ্টিকোন থেকে এটি বিদ্আতও বটে। যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, কবরবাসী অকল্যাণ প্রতিহত করা এবং কল্যাণ আনয়নের ক্ষমতা রাখে, তাহলে এটি বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনিভাবে রুকূ, সেজদাহ, নৈকট্য লাভ বা সম্মানের নিয়তে যদি কবরবাসীর জন্য কুরবানী করে তাও শির্কে পরিণত হবে। আল্লাহ বলেনঃ
)وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ(
“যে কেউ বিনা দলীলে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকে, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে। নিশ্চয় কাফেরেরা সফলকাম হবে না।” (সূরা মুমিনূনঃ ১১৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ
)فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا(
“যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীরক না করে।” (সূরা কাহ্ফঃ ১১০) যে ব্যক্তি বড় শির্কে লিপ্ত হবে সে কাফের হয়ে যাবে এবং চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেনঃ
)إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ(
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাঃ ৭২)
আল্লাহ ছাড়া যার নামে শপথ করা হল, তাকে যদি আল্লাহর সম পর্যায়ের সম্মানিত মনে করে, তাহলে বড় শির্কে পরিণত হবে। আর যদি শপথকারীর অন্তরে শপথকৃত বস্তর প্রতি সম্মান থাকে, কিন্তু সেই সম্মান আল্লাহর সম্মানের পর্যায়ে মনে না করে, তাহলে ছোট শির্কে পরিণত হবে। নবী (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করল, সে কুফরী অথবা শির্ক করল।”
যারা কবর থেকে বরকত হাসিল করে, কবরবাসীর কাছে দু’আ করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে, তাদের প্রতিবাদ করা ওয়াজিব। তাদের যুক্তি, “আমরা পূর্ব পুরুষদেরকে এই অবস্থায় পেয়েছি”। একথা আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারবে না। যে সমস্ত কাফের নবী-রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, তাদেরও যুক্তি এটিই ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ(
“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমি যখন কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে এই পথের পথিক পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছি।” (সূরা যুখরুফঃ ২৩) তাদের কাছে প্রেরিত রাসূল বললেনঃ
)َ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ(
“তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছ, আমি যদি তদাপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে? তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না।” (সূরা যখরুফঃ ২৪) আল্লাহ তাআলা বলেন,
)فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ (
“অতঃপর আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।” (সূরা যুখরুফঃ ২৫) অতএব দেখুন, মিথ্যাবাদীদের পরিণাম কিরূপ ভয়াবহ হয়েছে। ভুলের উপর থেকে কারও পক্ষে বাপ-দাদাদের অথবা দেশাচলের দোহাই দেয়া বৈধ নয়। এসব দোহাই তাদের কোন উপকারে আসবে না। বরং তাদের উচিৎ আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং সত্যের অনুসরণ করা। দেশাচল এবং মানুষের তিরস্কারের ভয় যেন তাদেরকে সত্যের অনুসরণের পথে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। সত্যিকারের মুমিন কোন প্রকার সমালোচনাকারীর সমালোচনার ভয় করে না এবং আল্লাহর দ্বীন হতে কোন কিছুই বাঁধা দিতে পারে না।
উত্তরঃ প্রাণী অথবা মানুষের ছবি বিশিষ্ট কাপড় পরিধান করা জায়েয নেই। নবী (ﷺ) বলেনঃ
إِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ الصُّورَةُ
“যে ঘরে ছবি রয়েছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” স্মৃতি স্বরূপ কারও ছবি যত্ন করে রেখে দেয়াও জায়েয নেই। কাজেই যার কাছে এ রকম ছবি রয়েছে, তার উচিৎ এগুলো নষ্ট করে দেয়া। চাই সেই ছবি দেয়ালে ঝুলন্ত থাকুক কিংবা এ্যালবামের ভিতরে সংরক্ষিত থাকুক অথবা অন্য কোন স্থানে থাকুক। কারণ ঘরের মধ্যে ছবি থাকলে ঘরের মালিক রহমতের ফেরেশতাদের প্রবেশ থেকে বঞ্চিত হবে।
উত্তরঃ ঘরের দেয়ালে ছবি ঝুলিয়ে রাখা সম্পূর্ণ হারাম। বিশেষ করে বড় ছবিগুলা। যদিও শুধু মাথা এবং শরীরের কিছু অংশ বিশেষ দেখা যায়। সম্মান প্রদর্শনের জন্যই মানুষেরা এরকম করে থাকে। এ ধরণের সম্মান থেকেই শির্কের সূচনা হয়েছে। ইবনে আব্বাস h হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূহ (আঃ)এর কাওমের লোকেরা প্রথমে কতিপয় সৎ লোকের ছবি উঠিয়ে রেখেছিল। উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে দেখে তাদের এবাদতের কথা স্মরণ করে আল্লাহর এবাদতে উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তারা স্বয়ং উক্ত সৎ ব্যক্তিদের ইবাদত শুরু করে দেয়।
উত্তরঃ ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ এ জন্য হাতে কোন প্রকার কাজ করতে হয়না। এভাবে ছবি উঠালে নিষেধের অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে প্রশ্ন এই যে, ছবি তোলার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য যদি হয় ছবিকে সম্মান করা, তা হলে হারাম হবে। কারণ নিষিদ্ধ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যম ও উপকরণ ব্যবহার করাও হারাম। তাই স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ছবি সংগ্রহ করা নিষেধ। নবী (ﷺ) বলেনঃ
)لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ صُورَة(
“যে ঘরে ছবি রয়েছে, সেই ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” এই হাদীছটি প্রমাণ করে যে, ঘরে ছবি রাখা অথবা দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা জায়েয নয়।
ইসলামে বিদআতের কোন স্থান নেই
প্রশ্নঃ (৮৮)(مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا) অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামের ভিতরে উত্তম কোন সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছে, এই হাদীছকে যে সমস্ত বিদ্আতী তাদের বিদ্আতের পক্ষে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে, আমরা কিভাবে তাদের উত্তর দিব?
উত্তরঃ তাদের জবাবে আমরা বলব, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا
“যে ব্যক্তি ইসলামের ভিতরে উত্তম কোন সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছে।” তিনি তো এও বলেছেন যে,
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَ كُلُّ ضَلَاةٍ فِى النَّارِ
“তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরে হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহর অনুরণ করবে এবং তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। আর তোমরা নতুন আবিস্কৃত বিষয় হতে সাবধান থাকবে। কারণ প্রতিটি নব আবিস্কৃত বিষয়ই বিদ্আত আর প্রতিটি বিদ্আতই গোমরাহী এবং প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।”
প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীছটিকে বিদ্আতীরা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, সেই হাদীছের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তা এই যে, মুযার গোত্রের কিছু অভাবী লোক নবী (ﷺ) এর কাছে আগমণ করলে তিনি সাদকা করার প্রতি উৎসাহ দিলেন। এক ব্যক্তি থলে ভর্তি রূপা নিয়ে এসে নবী (ﷺ)এর সামনে হাজির হল। তখন তিনি বললেন,
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَاوَ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَاوَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا إِلىَ يَوْمِ القِيَامَةِ
“যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে উত্তম কোন সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছে, এবং তার পরে কিয়ামত পর্যন্ত যারা সেই সুন্নাহর উপর আ‘মাল করবে, তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াব পাবে।” হাদীছের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, উত্তম সুন্নাত বলতে সুন্নাহর উপর নতুনভাবে আ‘মাল শুরু করাকে বুঝানো হয়েছে। নতুনভাবে কোন আ‘মাল তৈরী করার কথা বলা হয়নি। কেননা আল্লাহ এবং রাসূল (ﷺ) ব্যতীত অন্য কারো জন্য শরীয়তের কোন বিধান প্রবর্তন করা জায়েয নেই। কাজেই হাদীছের অর্থ এই যে, কোন ব্যক্তি যদি সুন্নাহর উপর আ‘মাল করে, তার আ‘মাল দেখে অন্যরাও যদি সেই সুন্নাহর উপর আ‘মাল করা শুরু করে, তাহলে প্রথম আ‘মালকারী ব্যক্তি নিজে আ‘মাল করার ছাওয়াব পাওয়ার সাথে সাথে তাকে দেখে আ‘মালকারীর অনুরূপ ছাওয়াব প্রাপ্ত হবে।
অথবা হাদীছের উদ্দেশ্য হল, শরীয়ত সম্মত কোন ইবাদত পালনের মাধ্যম বা উপকরণ যেমন ধর্মীয় কিতাব রচনা করা, ইলম প্রচার করা, মাদরাসা নির্মাণ করা ইত্যাদি। এমন নয় যে, নতুন ইবাদত তৈরী করা। মানুষের ইচ্ছামত যদি শরীয়ত প্রবর্তন করা জায়েয হয়, তাহলে অর্থ এই হয় যে, নবী (ﷺ)এর জীবদ্দশায় ইসলাম পরিপূর্ণ হয়নি। কোন বিদআত প্রবর্তন করে তাকে হাসানাহ বা উত্তম বলে ধারণা করা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এতে নবী (ﷺ)কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। যেহেতু তিনি বলেনঃ প্রতিটি বিদ্আতই গোমরাহী।
প্রশ্নঃ (৮৯) ঈদে মীলাদুন্নবী পালনের হুকুম কি?
উত্তরঃ প্রথমতঃ নবী (ﷺ)এর সঠিক জন্ম তারিখ অকাট্যভাবে জানা যায় নি। আধুনিক যুগের কতিপয় গবেষকের মতে নবী (ﷺ) রাবীউল আওয়াল মাসের ৯তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন। রাবীউল আওয়ালের ১২ তারিখ নয়। সুতরাং ১২ রবীউল আওয়াল ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে ভিত্তিহীন।
দ্বিতীয়তঃ শরীয়তের দিক থেকে যদি মীলাদ মাহফিল উদ্যাপন করা সঠিক হত, তবে নবী (ﷺ) তা করতেন অথবা তাঁর উম্মতকে করতে বলতেন। আর কুরআনে বা হাদীছে অবশ্যই তা সংরক্ষিত থাকতো। আল্লাহ বলেনঃ
)إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ(
“আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন' অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।” (সূরা হিজরঃ ৯) যেহেতু মীলাদের বিষয়টি সংরক্ষিত হয়নি, তাই বুঝা গেল যে, মীলাদ মাহফিল উদ্যাপন করা দ্বীনের কোন অংশ নয়। আর যা দ্বীনের অংশ নয়, তা দ্বারা আল্লাহর ইবাদত এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা বৈধ নয়। কিভাবে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারব, আল্লাহ তা বলে দিয়েছেন। তা হল নবী (ﷺ) কর্তৃক নিয়ে আসা দ্বীন। তাই আমাদের নিজেদের পক্ষ হতে নতুন কিছু প্রবর্তন করা জায়েয নেই। এ রকম করা বিরাট অপরাধ। আল্লাহর কালামকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করার শামিল। আল্লাহ বলেনঃ
)الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الْإِسْلَامَ دِينًا(
“আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদাঃ ৩) অতএব, আমরা বলব যে, এই মীলাদ মাহফিল যদি পরিপূর্ণ দ্বীনের অংশ হতো, তাহলে অবশ্যই নবী (ﷺ) মৃত্যুর পূর্বেই তা বলে যেতেন। আর যদি তাঁর দ্বীনের কোন অংশ না হয় তবে রাসূল (ﷺ)এর মৃত্যুর পর তা দ্বীনের অংশ হতে পারেনা। যারা বলে মীলাদ মাহফিল পরিপূর্ণ দ্বীনের অংশ, তবে বলতে হবে তা রাসূল (ﷺ)এর মৃত্যুর পরে শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাহলে এটা হবে আল্লাহর কথাকে মিথ্যা বলার শামিল।
কোন সন্দেহ নেই যে, যারা মীলাদ মাহফিল উদ্যাপন করে, তারা রাসূল (ﷺ)এর সম্মান এবং ভালবাসার জন্যই করে থাকে। রাসূলকে ভালবাসা, তাকে সম্মান করা সবই এবাদতের অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, কোন মানুষের কাছে যদি নবী (ﷺ) তার সন্তান, পিতামাতা এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষ হতে প্রিয় না হয়, তা হলে সে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। যেহেতু নবী (ﷺ)এর ভালবাসা এবাদতের অন্তর্ভুক্ত, তাই এর ভিতরে বিদ্আত তৈরী করা জায়েয নেই। তাছাড়া আমরা শুনতে পাই যে, এই মিলাদ মাহফিলে এমন বড় বড় অপছন্দনীয় কাজ হয়, যা শরীয়ত বা কোন সুস্থ বিবেকও সমর্থন করে না। এতে এমন এমন কবিতা পাঠ করা হয় যাতে রয়েছে নবী (ﷺ) এর প্রশংসায় খুবই বাড়াবাড়ি। অনেক সময় তাঁকে আল্লাহর চেয়েও বড় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়। আরো দেখা যায় মীলাদ অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উপস্থিত সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে যে মীলাদ মাহফিলে নবী (ﷺ)এর রূহ মোবারক এসে উপস্থিত হন। তাই তাঁকে সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়াতে হবে। এটি একটি চরম মুর্খতা। নবী (ﷺ) জীবিত থাকাবস্থায় তাঁর সম্মানের জন্য দাঁড়ানো পছন্দ করতেন না। ছাহাবীগণও দাঁড়াতেন না। অথচ তারা তাঁকে আমাদের চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসতেন এবং সম্মান করতেন। নবী (ﷺ) জীবিতাবস্থায় দাঁড়নো পছন্দ করতেন না। তাহলে কিভাবে তাঁর মৃত্যুর পর এ রকম করা যেতে পারে?
মীলাদ নামের বিদ্আতটি সম্মানিত তিন যুগ চলে যাওয়ার পর আবিস্কৃত হয়েছে। এতে রয়েছে এমন কিছু অন্যায় আ‘মাল, যা দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোতে আঘাত হানে। তাতে রয়েছে নারী-পুরুষের একত্রে মেলা-মেশাসহ অন্যান্য অপকর্ম।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite
0 Comments