প্রশ্নঃ
(৯০) মাতৃ দিবসের উৎসব পালন করার হুকুম কি?
উত্তরঃ ইসলামী শরীয়তে
যে ঈদ রয়েছে, তা ব্যতীত সকল প্রকার ঈদ বা উৎসব পালন করা বিদ্আত, যা সালাফে সালেহীনের যুগে ছিলনা। হতে পারে এটি অমুসলিমদের কাছ থেকে
আমদানী করা। তাই এতে অমুসলিমদের সাথে সদৃশ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুসলিমদের ঈদ
মাত্র দু’টি। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। তাছাড়া সপ্তাহিক
ঈদ হল শুক্রবার। এই তিনটি ঈদ ব্যতীত মুসলিমদের অন্য কোন ঈদ নেই। এছাড়া যত ঈদ রয়েছে,
ইসলামী শরীয়তে সবই বিদ্আত এবং প্রত্যাখ্যাত এবং বাতিল। রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ
)مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ(
“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় তৈরী করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”
তিনি আরো বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন কোন আ‘মাল করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”
সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত উৎসব পালন করা বৈধ নয়। এতে ঈদের মত আনন্দ
প্রকাশ এবং উপহার বিনিময় করাও বৈধ নয়। মুসলমাদের অবশ্য কর্তব্য তাদের দ্বীন নিয়ে
গর্ববোধ করা। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকা। আল্লাহ
তাআ’লা তাঁর বান্দাদের জন্য যে দ্বীন মনোনীত করেছেন,
কোন প্রকার বাড়ানো বা কমানো ছাড়াই তার অনুসরণ করা। প্রত্যেক
মতবাদ এবং আহবায়কের পিছনে ছুটে যাওয়া মুসলিমদের উচিৎ নয়। বরং তার উচিৎ আল্লাহর
দ্বীন মোতাবেক জীবন গঠন ও পরিচালনা করা। অন্য ধর্মের কাউকে অনুসরণ না করা; বরং মানুষই তার অনুসরণ করবে এবং সে হবে তাদের জন্য আদর্শ স্বরূপ। কারণ
ইসলামী শরীয়তকে সকল দিক থেকে পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
)الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الْإِسْلَامَ دِينًا(
“আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের
উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত
করলাম।” (সূরা মায়েদাঃ ৩) বছরে মাত্র একবার মাতৃ দিবস
পালন করাই যথেষ্ট নয়। বরং সন্তানের উপর মায়ের রয়েছে অনেক হক, যা আদায় করা একান্ত জরুরী।
আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে মায়ের আনুগত্য করতে হবে। এর জন্য কোন স্থান
বা সময় নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই।
উত্তলঃ
ঈদুল ফিতর, ঈদুল
আজহা এবং সপ্তাহের ঈদ শুক্রবার ব্যতীত ইসলামে কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। অনুরূপভাবে
আররাফা দিবসকে হাজীদের ঈদ হিসেবে নাম রাখা হয়েছে। ঈদুল আযহার পরের তিন দিনও ঈদ
হিসেবে পরিচিত কোন মানুষের জম্ম দিবস পালন করা বা তার সন্তানের জম্ম দিবস পালন করা
অথবা বিবাহ উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদ বা উৎসব পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বিদ্আতের নিটবর্তী বরং এসমস্ত কাজ বিধর্মী খৃষ্টানদের অনুসরণ ছাড়া
অন্য কিছু নয়।
প্রশ্নঃ
(৯২) জনৈক লোক একটি ঘরে বসবাস শুরু করার পর থেকেই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সেই সাথে
আক্রান্ত হয়েছে আরো বড় বড় কয়েকটি মুসিবতে, যার কারণে সে এই ঘরে বসবাস করাকে অমঙ্গলের কারণ হিসাবে
মনে করছে। তার জন্য কি ঘর ছেড়ে দেয়া জায়েয আছে?
উত্তরঃ কোন কোন ঘর, যানবাহন এবং স্ত্রী লোকের
ভিতরে আল্লাহ তাআ’লা বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে অমঙ্গল নির্ধারণ
করে থাকেন। হতে পারে ক্ষতির উদ্দেশ্যে কিংবা কল্যাণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বা
অন্য কোন উদ্দেশ্যে। তাই এই ঘর বিক্রি করে অন্য ঘরে চলে যাওয়াতে কোন দোষ নেই। হতে
পারে অন্য ঘরে চলে যাওয়াতেই তার জন্য কল্যাণ রয়েছে। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
]إِنَّمَا الشُّؤْمُ فِي ثَلَاثَةٍ فِي الْفَرَسِ وَالْمَرْأَةِ وَالدَّارِ[
“ তিনটি বস্তর মধ্যে অকল্যাণ রয়েছে। ঘোড়া, স্ত্রীলোক
এবং গৃহে।”
কোন যানবাহন অকল্যাণকর হতে পারে,
কোন কোন স্ত্রীলোকের মাঝে অকল্যাণ থাকতে পারে এবং কোন কোন ঘরেও
তা থাকতে পারে। মানুষ যখন এ জাতীয় কিছু দেখতে পেলে যেন মনে করে যে, এট আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত। কোন না কোন উদ্দেশ্যে আল্লাহ এ জাতীয়
অকল্যাণ নির্ধারণ করে থাকেন। যাতে করে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়
স্থানান্তরিত হয়।
উত্তরঃ প্রশ্নটি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিস্তারিতভাবে এর উত্তর দিতে চাই। উসীলার অর্থ হচ্ছে কোন
উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্যে মাধ্যম গ্রহণ করা। উসীলা দু’প্রকার।
(১) শরীয়ত সম্মত সঠিক উসীলা। তা
হল শরীয়ত সম্মত সঠিক পন্থায় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পৌঁছার চেষ্টা করা।
(২) শরীয়ত বহির্ভূত উসীলাঃ
প্রথম
প্রকারের উসীলা আবার কয়েক প্রকার।
(ক) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর
মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করাঃ এটি দু’ভাবে হতে পারে। সাধারণভাবে আল্লাহর নামগুলো উল্লেখ করে দু’আ করা।
(১) যেমন নবী (ﷺ) দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দু’আয় বলেছেনঃ
)اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي(
“হে আল্লাহ আমি আপনার বান্দা এবং আপনার এক বান্দা ও বান্দীর পুত্র।
আপনার হাতে আমার কর্তৃত্ব, আমার প্রতি আপনার নির্দেশ
প্রতিফলন যোগ্য। আমার প্রতি আপনার ফায়সালা ন্যায়নিষ্ঠ। আপনার সেই সমস্ত নামের
প্রত্যেকটির উসীলায় আমি প্রার্থনা জানাচ্ছি, যেগুলো আপনি
নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন, অথবা তা আপনার কোন সৃষ্টিকে
জানিয়েছেন, অথবা কুরআনে তা নাযিল করেছেন, অথবা আপনার অদৃশ্য জ্ঞানে তা সংরক্ষিত করে রেখেছেন। আপনি আমার জন্য
কুরআনকে হৃদয়ের উর্বরতা স্বরূপ করুন--------। এখানে আল্লাহর প্রতিটি নামের উসীলায়
আল্লাহর কাছে দু’আ করা হয়েছে।
(২) আল্লাহর নির্দিষ্ট নাম
উল্লেখ করে নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার জন্য তাঁর কাছে দু’আ করা। যেমন আবু বকর h নবী (ﷺ) এর কাছে স্বলাতের মধ্যে
পঠিতব্য দু’আ শিক্ষা দেয়ার আবেদন জানালে তিনি নিম্নের দু’আটি
শিক্ষা দিলেন,
)اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ(
“হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মার উপর অবিচার করেছি। আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা
করার কেউ নেই। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং রহম করুন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও
দয়াময়।” এখানে আল্লাহর দু’টি নাম
যথাঃ ‘গাফূর’ এবং ‘রাহীম’ এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত
কামনা করা হয়েছে।
(খ) আল্লাহর গুণাবলীর মাধ্যমে
উসীলা গ্রহণ করাঃ এটি দু’ভাবে হতে পারে।
(১) এভাবে বলবে যে, হে আল্লাহ! আপনার সুন্দর
নামগুলোর মাধ্যমে এবং উন্নত গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি। এরপর প্রত্যেকেই নিজ
নিজ প্রয়োজন উল্লেখ করবে।
(২) নির্দিষ্ট কোন গুণাবলীর
উসীলা দিয়ে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রার্থনা করা। যেমন হাদীছে এসেছে, নবী (ﷺ) বলেন
)اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ أَحْيِنِي مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِى(
“হে আল্লাহ! আপনার ইলম এবং মাখলুকের উপর আপনার ক্ষমতার উসীলা দিয়ে এই দু’আ করছি যে, আমার জীবিত থাকা যদি আমার জন্য
কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে জীবিত রাখুন। আর যদি জানেন যে,
আমার মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণর, তাহলে
আমাকে মৃত্যু দান করুন।” এখানে ইলম ও কুদ্রাত- এই দু’টি গুণের মাধ্যমে উসীলা দেয়া হয়েছে। আর এটি প্রার্থনার সাথে খুবই
সংগতিপূর্ণ।
(গ) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)এর প্রতি ঈমান আনয়নের
মাধ্যমে উসীলা দেয়াঃ এভাবে বলবে যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার উপর এবং আপনার রাসূলের উপর ঈমান
এনেছি। এই ঈমানের উসীলায় আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাআ’লা
ঈমানের উসীলা দিয়ে দু’আ করার নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ
)إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلْ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَار(
“নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন
রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও
শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে
(তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা
তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে
আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করলে তাকে অপমানিত করলে,
আর জালেমদের জন্যে তো কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের পালনকর্তা!
আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন, তাই আমরা
ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা কর এবং আমাদের সকল
দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের
সাথে।” (সূরা আল- ইমরানঃ ১৯০-১৯৩) এখানে গুনাহ মাফ, দোষ-ত্রুটি দূর করা এবং নেক
লোকদের সাথে যেন মৃত্যু হয় তার জন্য ঈমানের উসীলা দিয়ে দু’আ করা হয়েছে।
(ঘ) সৎ আ‘মালের উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে
দু’আ করাঃ এখানে তিন ব্যক্তির ঘটনাটি বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। তারা রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে একটি গুহার ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল। উপর
থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলে গুহা থেকে তাদের বের হওয়া
অসম্ভব হয়ে গেল। অতঃপর তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সৎ আ‘মাল
তুলে ধরে আল্লাহর কাছে দু’আ করেছিল। একজন পিতা-মাতার
প্রতি সদাচরণ করার উসীলা দিল, দ্বিতীয় ব্যক্তি অন্যায় কাজ
থেকে বিরত থাকার উসীলা দিল এবং তৃতীয়জন তার চাকরের বেতন পূর্ণভাবে প্রদান করার
উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করা আরম্ভ করল। তারা
প্রত্যেকেই দু’আয় বলেছিল, হে
আল্লাহ! আমি যদি এই আ‘মালটুকু আপনার সন'ষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আপনি আমাদেরকে এই
বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। এভাবে দু’আ করার পর পাথরটি সরে
গেল এবং তারা গুহা থেকে বের হয়ে আসল।
এই ঘটনাটিতে সৎ আ‘মালকে উসীলা ধরে দু’আ করার কথা প্রমাণিত হয়।
(ঙ) নিজের অবস্থা আল্লাহর কাছে
তুলে ধরে উসীলা দেয়াঃ অর্থাৎ দু’আকারী যে অবস্থায় রয়েছে, তা আল্লাহর কাছে তুলে
ধরবে। যেমন মূসা (আঃ) বলেছিলেনঃ
)رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ(
“হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।” (সূরা কাসাসঃ ২৪) যাকারিয়া (আঃ) নিজের
দুর্বলতাকে তুলে ধরে উসীলা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ
)قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُنْ بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا(
“তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার অসি'
বয়স্তভারাবনত হয়েছে, বার্ধক্যে মস্তক
সুশুভ্র হয়েছে, হে আমার পালনকর্তা আপনাকে ডেকে আমি কখনো
বিফল মনোরথ হইনি।”(মারইয়ামঃ ৪) উসীলার যে সমস্ত প্রকার উপরে বর্ণিত হয়েছে, তার সবই বৈধ।
(চ) সৎকর্মশীলদের দু’আর উসীলা দেয়াঃ ছাহাবীগণ নবী (ﷺ) এর কাছে দু’আ চাইতেন। বুখারী ও মুসলিম
শরীফে আনাস h হতে বর্ণিত হয়েছে, জুমআর দিনে নবী (ﷺ) খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি
মসজিদে প্রবেশ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন্তসম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে, পশুপাল পিপাসায় মারা
যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। নবী (ﷺ) উভয় হাত উঠালেন এবং তিনবার
বললেন, হে
আল্লাহ! আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করুন। অতঃপর নবী (ﷺ) মিম্বার থেকে নামার আগেই
বৃষ্টি বর্ষিত হল এবং তাঁর দাড়ি মুবারক বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরতে থাকল। এবং এক
সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকল। পরবর্তী জুমআয় সেই ব্যক্তি অথবা অন্য এক
ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! পানিতে সব কিছু ডুবে যাচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে,
আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দু’আ করুন। নবী (ﷺ) দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا) (أَلّلهُمَّ অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশের উঁচু ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষণ কর, আমাদের উপরে নয়। এই বলে নবী (ﷺ) আকাশের এক পাশের দিকে ইঙ্গিত
করার সাথে সাথে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল। মানুষেরা সূর্যের আলোতে বের হয়ে আসল।
আরো অনেক ক্ষেত্রে ছাহাবীগণ নবী (ﷺ)এর কাছে বিশেষভাবে দু’আ চেয়েছিলেন। নবী (ﷺ) একদা বললেন যে, তাঁর উম্মতের সত্তর হাজার লোক
বিনা হিসাবে এবং বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি এও বললেন যে, তারা ঐ সমস্ত লোক, যারা ঝাড়-ফুঁক করে না,
চিকিৎসার জন্য লোহা গরম করে দাগ দেয় না এবং পাখি উড়িয়ে নিজেদের
ভাগ্য পরীক্ষা করে না। বরং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। এ কথা শুনে উকাশা
ইবনে মিহসান h বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন,
আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূল (ﷺ) বললেনঃ তুমি তাদের
অন্তর্ভুক্ত। এটাও এক প্রকার উসীলা। দু’আ কবুল হওয়ার আশা করা যায় এমন কোন সৎ ব্যক্তির কাছে গিয়ে
তার কাছে দু’আ চাওয়া এবং তার দু’আর
উসীলা গ্রহণ করা জায়েয আছে। কোন মুসলিম যদি তার মুসলিম ভাইয়ের অনুপসি'তে তার জন্য দু’আ করে, তবে ফেরেশতাগণ আমীন বলতে থাকেন।
(২) অবৈধ উসীলাঃ
শরীয়ত সম্মত নয়, এমন জিনিষের মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা অবৈধ। কেননা এ সমস্ত বিষয়ের
মাধ্যমে উসীলা দেয়া বিবেক এবং শরীয়ত সম্মত নয়। যেমন মৃত ব্যক্তির কাছে দু’আ চাওয়ার মাধ্যমে উসীলা গ্রহণ করা। এধরণের উসীলা দেয়া জায়েয নেই। কারণ
মৃত ব্যক্তির কাছে দু’আ চাওয়া একটি জঘণ্য মুর্খতাপূর্ণ
কাজ। কেননা মানুষ যখন মারা যায়, তার আ‘মালের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষে কারও জন্য দু’আ করা সম্ভব নয়। নবী (ﷺ)এর পক্ষেও মৃত্যু বরণ করার
পর কারও জন্য দু’আ করা সম্ভব নয়। তাই ছাহাবীগণ নবী (ﷺ) এর মৃত্যুর পর তাঁর কাছে এসে
দু’আ চাননি।
উমার h এর আ‘মালে যখন অনাবৃষ্টি দেখা দেয়, তখন তিনি বললেনঃ
হে আল্লাহ! আপনার নবী (ﷺ) জীবিত থাকাকালে তাঁর উসীলা
দিয়ে আমরা আপনার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতাম। এবং আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি প্রদান
করতেন। এখন আমরা নবীর চাচার উসীলায় আপনার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। আমাদেরকে
বৃষ্টি প্রদান করুন। তারপর আব্বাস h দাঁড়ালেন এবং দু’আ করলেন। মৃতের কাছে দু’আ চাওয়া যদি বৈধ হতো, তা হলে কোন ক্রমেই তারা
নবী (ﷺ)কে বাদ দিয়ে আব্বাস h এর কাছে দু’আ চাওয়া বৈধ মনে করতেন না। কারণ আব্বাস h এর দু’আর চেয়ে নবী (ﷺ) এর দু’আ কবূল হওয়া অধিক উপযোগী।
মোটকথা মৃত ব্যক্তির উসীলা দিয়ে দু’আ করা জায়েয নেই।
অনুরূপভাবে নবী (ﷺ) এর সম্মানের উসীলা দেয়াও
জায়েয নেই। কারণ আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মান থাকা দু’আকারীর জন্য কোন উপকারে আসবে না। দু’আকারীর জন্য এমন বিষয়ের উসীলা দেয়া উচিৎ, যা
তার কাজে আসবে। সুতরাং এভাবে বলা উচিৎ যে, হে আল্লাহ!
আপনার প্রতি এবং আপনার রাসূলের প্রতি আমার ঈমান আনয়নের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করুন।
এ জাতীয় অন্যান্য শরীয়ত সম্মত বিষয়ের উসীলা দেয়া বৈধ।
উত্তরঃ আল্লাহ তাআ’লা যে সমস্ত ব্যক্তি বা বিষয়
হতে নিজেকে সম্পর্ক মুক্ত ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক
মুসলিমের উচিৎ তা থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করা। আল্লাহ বলেনঃ
)قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا(
“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার সংঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে।
তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা
আল্লাহ ব্যাতীত যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন
সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না
করলে তোমাদের আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” (সূরা মুমতাহানাহঃ ৪) আর এটা হবে মুশরিকদের সাথে।
আল্লাহ বলেনঃ
)وَأَذَانٌ مِنْ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِنْ الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ(
অর্থঃ
“আর মহান
হজ্জের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে,
আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও।” (সূরা তাওবাঃ ৩) সুতরাং প্রতিটি মুমিনের উপর
আবশ্যক হল কাফের-মুশরেকদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা। এমনিভাবে আল্লাহ ও
আল্লাহর রাসূলের অপছন্দনীয় সকল কাজ থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব।
যদিও তা কুফরীর পর্যায়ে না যায়। যেমন পাপাচারিতায় লিপ্ত হওয়া। আল্লাহ বলেনঃ
)وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمْ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمْ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمْ الرَّاشِدُونَ(
“কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন
এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার
ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।” (সূরা হুজুরাতঃ ৭)
যদি কোন মুমিনের কাছে ঈমানের
সাথে সাথে পাপাচারিতা থাকে, তাহলে আমরা মুমিন হওয়ার কারণে
তাকে ভালবাসব এবং পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে ঘৃণা করব। এধরণের সম্পর্ক রাখার
ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হল, যেমন আমরা অরুচীকর ঔষধ গ্রহণ করি,
অনিচ্ছা সত্বেও তা পান করি। কারণ তাতে আরোগ্যের আশা করা যায়।
কোন কোন মানুষ পাপী মুমিনকে
কাফের-মুশরেকের চেয়েও ঘৃণা করে। এটি খুবই আশ্চর্য্যের বিষয় এবং বাস্তবতার বিপরীত।
কাফের আল্লাহর শত্রু, রাসূলের শত্রু এবং সমস্ত মুমিনের
শত্রু। তাদেরকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা ওয়াজিব।
)يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنْ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيل(
“হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।
তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ
তোমাদের কাছে যে সত্য আগমণ করেছে, তারা তা অস্বীকার করছে।
তারা রাসূলকে এবং তোমাদেরকে বহিস্কার করে, এই অপরাধে যে,
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন'ষ্টি লাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি
খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরল পথ হতে
বিচ্যুত হয়ে যায়।” (সূরা মুমতাহানাহঃ ১) আল্লাহ বলেন,
)يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (
“হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও নাসাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না।
তারা পরস্পরে বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা মায়িদাহঃ ৫১) আল্লাহ বলেন,
)وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ (
“ইহুদী ও খৃষ্টানরা কখনই আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ না করবেন।” (সূরা বাকারাঃ ১২০) আল্লাহ আরো বলেন,
)وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا(
“আহ্লে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসা বশতঃ কামনা করে যে, মুসলিম হওয়ার পর তোমাদেরকে কাফের বানিয়ে দেয়।” (সূরা বাকারাঃ ১০৯)
এমনিভাবে প্রতিটি নিষিদ্ধ কাজ
হতে বিরত থাকা আবশ্যক। আমাদের জন্যে হারাম কাজের প্রতি ভালবাসা রাখা বৈধ নয়। আমরা
পাপী মুমিনের পাপকাজকে ঘৃণা করি এবং তা থেকে আমরা নিজেদেরকে দূরে রাখি। কিন্তু
আমরা তাকে ঈমানের কারণে ভালবাসি।
উত্তরঃ তিনটি শর্ত
সাপেক্ষে অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করা বৈধঃ
১) ভ্রমণকারীর কাছে প্রয়োজনীয়
ইল্ম বিদ্যমান থাকা, যার মাধ্যমে সকল সন্দেহ থেকে বিরত থাকা সম্ভব।
২) তার কাছে এমন দ্বীনদারী
বিদ্যমান থাকা, যার মাধ্যমে সে নফসের প্রবৃত্তি দমনে সক্ষম হবে।
৩) অমুসলিম দেশে ভ্রমণের
প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান থাকা।
উপরের শর্তগুলো পাওয়া না গেলে
অমুসলিম দেশে সফর করা বৈধ নয়। কেননা এতে ফিতনার ভয় রয়েছে। এতে প্রচুর সম্পদও
বিনষ্ট হয়ে থাকে। তবে যদি প্রয়োজন দেখা দেয় যেমন চিকিৎসার জন্য অথবা শিক্ষা
অর্জনের জন্য, যা অন্য কোন দেশে পাওয়া যায় না, তা হলে কোন অসুবিধা নেই।
পর্যটনের উদ্দেশ্যে অমুসলিম
দেশে ভ্রমণ করার কোন দরকার নেই; বরং এমন ইসলামী দেশে
যাওয়া যায় যেখানে ইসলামের বিধিবিধান পালন করা হয়। আমাদের ইসলামী দেশসমূহে আল্লাহর
মেহেরবাণীতে যথেষ্ট পর্যটনের স্থান রয়েছে। সেখানে পর্যটনের জন্য যাওয়া এবং সেখানে
গিয়ে ছুটি কাটানো সম্ভব।
উত্তরঃ যে মুসলিম ভাই
অমুসলিমদের সাথে চাকুরী করে, তার জন্য আমার উপদেশ হল, সে এমন একটি
কর্মক্ষেত্র তালাশ করবে, যা আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলদের
শত্রু হতে মুক্ত। যদি পেয়ে যায়, তাহলে কতইনা সুন্দর। আর
যদি না পায়, তাহলে কাফেরদের সাথে একই কর্মক্ষেত্রে চাকুরী
করতে কোন অসুবিধা নেই। তারা তাদের কাজ করবে এবং সেও আপন কর্মে লিপ্ত থাকবে। তবে
শর্ত থাকে যে, তার অন্তরে যেন কাফেরদের প্রতি কোনরূপ
ভালবাসা না থাকে। সালাম এবং তার উত্তর দেয়ার ব্যাপারে সে ইসলামী নীতিমালার অনুসরণ
করে চলবে। তাদের জানাযায় শরীক হবে না এবং তাদের অনুষ্ঠানাদিতে অংশ গ্রহণ করবে না।
বিশেষ করে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করবে। সাধ্যানুসারে
তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করবে।
প্রশ্নঃ (৯৭) কাফেরদের কাছে যে সমস্ত প্রযুক্তি রয়েছে, অবৈধতায় পতিত না হয়ে তা দ্বারা
কিভাবে আমরা উপকৃত হব?
উত্তরঃ আল্লাহর শত্রু
কাফেররা যে সমস্ত কাজ-কর্ম করে, তা তিন প্রকরঃ-
১) ইবাদত ২) অভ্যাস এবং ৩) কারিগরি ও শিল্পকলা। এবাদতের
ক্ষেত্রে কোন ক্রমেই কাফেরদের অনুসরণ করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি এবাদতের ক্ষেত্রে
তাদের অনুসরণ করবে, তার জন্য বিরাট ভয়ের কারণ রয়েছে। ইহা তাকে ইসলাম থেকে বেরও করে দিতে
পারে। লেবাস্তপোষাক, চাল-চলন ও রীতিনীতি ইত্যাদির কোন
ক্ষেত্রেই কাফেরদের অনুসরণ করা বৈধ নয়। নবী (ﷺ) বলেনঃ
)مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ(
“যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুসরণ করবে, সে উক্ত
জাতির অন্তর্ভুক্ত হবে।” তবে যাতে জনগণের উপকার রয়েছে,
তা কাফেরদের কাছ থেকে শিক্ষা করাতে কোন দোষ নেই। কারণ তা দ্বীনের
অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া এবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, তাতে
দলীল থাকতে হবে। আর অভ্যাস বা পার্থিব বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা সবই হালাল।
একমাত্র শরীয়ত সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু হারাম করলে সেটা ভিন্ন কথা।
উত্তরঃ অমসুলিসমদেরকে
আরব উপদ্বীপে প্রবেশ করানোতে নবী (ﷺ) এর বাণীর বিরোধীতা করার
আশঙ্কা রয়েছে। তিনি মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায় বলেনঃ
)أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ(
“তোমরা মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দাও।” সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ﷺ) বলেন,
)لَأُخْرِجَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ حَتَّى لَا أَدَعَ إِلَّا مُسْلِمًا(
“আমি অবশ্যই ইয়াহুদী-নাসারাদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দেব। তাতে
মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন মানুষকে থাকতে দেব না।”
তবে যদি কোন প্রয়োজন দেখা দেয়
এবং উক্ত প্রয়োজন পূরণ করার মত কোন মুসলিম পাওয়া না যায় তবে তাদেরকে আরব উপদ্বীপে
প্রবেশ করানোতে কোন দোষ নেই। তবে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
যেখানে শর্ত সাপেক্ষে জায়েয বলা হয়েছে, সেখানেও যদি
আকীদাহ কিংবা চরিত্রগত কোন ফাসাদের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে
তাদেরকে আরব উপদ্বীপে প্রবেশ করানো হারাম। কেননা জায়েয বস্ততে যদি ক্ষতির সম্ভাবনা
থাকে, তখন তা হারামে পরিণত হয়ে যায়। কাফেরদেরকে এখানে আনা
হলে যে সমস্ত ভয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তা হলো তাদেরকে
ভালবাসা, তাদের কুফরীতে সন্তুষ্ট থাকা এবং দ্বীনের প্রতি
দৃঢ়তা চলে যাওয়া ইত্যাদি। আল্লাহর অনুগ্রহে মুসলিম বিশ্বে যথেষ্ট পেশাদার লোক
রয়েছে। আমরা তাদেরকেই যথেষ্ট মনে করতে পারি।
প্রশ্নঃ
(৯৯) কিছু সংখ্যক মানুষ দাবী করে যে, দ্বীনের অনুসরণই মুসলিমদেরকে উন্নতি থেকে পিছিয়ে
রেখেছে। তাদের দলীল হলো পাশ্চাত্য দেশসমূহ সকল প্রকার দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করেই
বর্তমানে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছে। তারা এও বলে যে, পাশ্চাত্য বিশ্বেই বেশী করে বৃষ্টি ও ফসলাদি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ
ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।
উত্তরঃ দুর্বল ঈমানদার, ঈমানহীন এবং ইতিহাস সম্পর্কে
অজ্ঞ লোকেরাই কেবল এ ধরণের কথা বলতে পারে। মুসলিম জাতি ইসলামের প্রথম যুগে দ্বীনকে
আঁকড়ে ধরেই সম্মান্তমর্যাদা এবং শক্তি অর্জন করে পৃথিবীর সকল প্রান্তে তাদের
আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মুসলিমদের স্বর্ণ যুগের জ্ঞান্তবিজ্ঞান সংগ্রহ করেই
বর্তমান পাশ্চাত্য বিশ্ব এতো উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মুসলিম জাতি আজ
তাদের সঠিক দ্বীনকে ছেড়ে দিয়ে আকীদা ও আ‘মালের ক্ষেত্রে
বিভিন্ন বিদ্আতে লিপ্ত হওয়ার কারণেই সমস্ত জাতির পিছনে পড়ে আছে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস
রাখি যে, মুসলিমেরা যদি আবার তাদের দ্বীনের দিকে ফিরে যায়,
তা হলে আমারই সম্মানিত হবো এবং সমস্ত জাতির উপরে আমরা রাজত্ব
করতে সক্ষম হবো। আবু সুফিয়ান যখন রোমের বাদশা হিরাক্লিয়াসের সামনে নবী (ﷺ)এর দ্বীনের পরিচয় তুলে ধরল, তখন রোমের বাদশা মন্তব্য করে
বলল যে, তুমি যা বলছ, তা সত্য
হলে অচিরেই তাঁর রাজত্ব আমার পা রাখার স্থান পর্যন্ত চলে আসবে।
পাশ্চাত্য দেশসমূহে যে সমস্ত
উন্নতি সাধিত হয়েছে, আমাদের দ্বীন তা গ্রহণ করতে বাধা দেয়
না। আফসোসের কথা হলো মুসলিমেরা দ্বীন্তদুনিয়া উভয়টিকেই হারিয়ে ফেলেছে। পার্থিব
উন্নতি সাধন করতে ইসলাম কখনো বিরোধীতা করে না। আল্লাহ বলেনঃ
)وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُم(
“আর প্রস্তত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের
শক্তি সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়ার মধ্য থেকে। তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে
আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদেরকে।” (সূরা আনফালঃ ৬০) আল্লাহ বলেনঃ
)هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمْ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ(
“তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব, তোমরা তার দিক-দিগন্তে ও রাস্তা সমূহে চলাফেরা কর এবং তাঁর দেয়া রিজিক
আহার কর।” (সূরা মুলকঃ ১৫) তিনি আরো বলেনঃ
)هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا(
“তিনি তোমাদের জন্য ভূপৃষ্টের সকল বস্ত সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা বাকারাঃ ২৯) এ অর্থে আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যা মানুষকে পৃথিবীর সকল বস্ত
উপার্জন করে তা দ্বারা উপকৃত হওয়ার প্রতি উৎসাহ যোগায়। দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করার জন্য
নয়। বরং তা দ্বারা পার্থিব জীবনে উপকৃত হওয়ার জন্য। অমুসলিম রাষ্ট্রের লোকেরা
মৌলিক দিক থেকে কাফের। তারা যে দ্বীনের দাবী করে থাকে, তাও
বাতিল ধর্ম। আল্লাহ বলেনঃ
)وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ(
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন গ্রহণ করবে, তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না।” (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫) আহলে কিতাবরা যদিও অন্যান্য
কাফের-মুশরেকদের থেকে আলাদা, কিন্তু পরকালে কোন পার্থক্য হবে না। এজন্যই নবী (ﷺ) শপথ করে বলেছেন, এই উম্মতের কোন ইয়াহুদী-নাসারা
যদি তাঁর দাওয়াত শ্রবণ করার পরও ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করে, তবে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তারা নিজেদেরকে ইয়াহুদী বলে দাবী করুক
বা নাসারা হিসাবে দাবী করুক, সবই সমান।
অমুসলিমরা বৃষ্টিসহ অন্যান্য যে
ধরণের নেয়ামত প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তার কারণ হল এটা তাদের
জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তাদের ভাল কাজের বিনিময় দুনিয়াতে প্রদান করা হয়ে থাকে। উমার h নবী (ﷺ) এর পিঠে চাটাইয়ের দাগ পড়ে
গেছে দেখে বললেন, হে আল্লাহর নবী (ﷺ)! পারস্য এবং রোমের বাদশারা
অসংখ্য নেয়ামতের ভিতরে রয়েছে। আর আপনি এই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। উত্তরে তিনি
বললেন, হে উমার এদেরকে পার্থিব জীবনেই সমস্ত নেয়ামত দেয়া
হয়েছে। তুমি কি এতে রাজী নও যে, তাদের জন্য হবে দুনিয়া আর
আমাদের জন্য হবে আখেরাত।
তাছাড়া তুমি কি দেখ না যে,
তাদের মধ্যে হয়ে থাকে অনাবৃষ্টি, ঝড়,
ভূমিকম্পসহ নানা বিপদাপদ? যা প্রায়ই
পত্র-পত্রিকায় লেখা হয় এবং রেডিওতে শুনা যায়। উল্লেখিত প্রশ্নের মত যারা প্রশ্ন
করে, তারা অন্ধ। আল্লাহ তাদের অন্তরকেও অন্ধ করে দিয়েছেন।
যার ফলে তারা বাস্তব অবস্থা দেখতে পায় না। তাদের জন্য আমার নসীহত এই যে, তারা যেন মৃত্যু আসার পূর্বেই তাওবা করে এবং এটা বিশ্বাস করে যে,
ইসলামের দিকে ফিরে আসলেই আমাদের জন্য সম্মান, প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব অর্জিত হবে। উপরোক্ত সন্দেহ পোষণকারীর এটাও
বিশ্বাস করা জরুরী যে, পাশ্চাত্য বিশ্বের কাফেররা বাতিলের
উপর রয়েছে। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী তাদের ঠিকানা হবে
জাহান্নাম। পরকালে পূর্ণভাবে শাস্তি প্রদানের নিমিত্তেই তাদেরকে দুনিয়ার নেয়ামত
প্রদান করা হয়েছে। যখন তারা দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে, তখন
তাদের দুঃখ ও হতাশা বেড়ে যাবে। তাদেরকে নেয়ামত প্রদানের উদ্দেশ্য এটিই।
প্রশ্নঃ (১০০) কতক লোক বলে যে, অন্তর ঠিক থাকলে শব্দের উচ্চারণ ঠিক করার বেশী গুরুত্ব
নেই। এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন?
উত্তরঃ শব্দের উচ্চারণ
বলতে যদি তার উদ্দেশ্য হয় আরবী ভাষা, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। তার কারণ এই যে, আকীদা ঠিক থাকলে আরবী ভাষার সঠিক উচ্চারণ জরুরী নয়। অর্থ বোঝা গেলেই
চলবে। আর যদি শব্দের উচ্চারণ বলতে এটা উদ্দেশ্য হয় যে, অন্তরের
আকীদা যেহেতু ঠিক আছে, কাজেই মুখে যা ইচ্ছা তা উচ্চারণ
করাতে কোন অসুবিধা নেই। যদিও তা কুফরী বাক্য হয়ে থাকে। তবে এটি ঠিক নয়। আমরা বলব
যে, অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সাথে মুখের ভাষাও ঠিক করতে
হবে।
উত্তরঃ প্রশ্নে বর্ণিত
বাক্যটি বলা ঠিক নয়। বরং এটি দু’আর মধ্যে সীমালংঘন করার শামিল। কারণ আল্লাহ ব্যতীত কোন বস্তই চিরস্থায়ী
নয়। আল্লাহ বলেনঃ
)كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ(
“ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব
পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত।” (সূরা আর-রাহমানঃ ২৬-২৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ
)وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِيْنْ مِتَّ فَهُمْ الْخَالِدُونَ(
“আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু
হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?” (সূরা আম্বীয়াঃ ৩৪)
উত্তরঃ- আল্লাহর চেহারার দোহাই দিয়ে মানুষ দুনিয়ার কোন জিনিষ চাইবে, এ থেকে আল্লাহর চেহারা অনেক বড়। আল্লাহর চেহারার দোহাই দিয়ে (জান্নাত
ছাড়া অন্য) কোন কিছু চাওয়া বৈধ নয়।
উত্তরঃ সাধারণভাবে
একথাটি বলা ঠিক নয়। কারণ হায়াত দীর্ঘ হওয়া কখনো ভাল হয় আবার কখনো মন্দ হয়। ঐ
ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার বয়স বাড়ল, কিন্তু আ‘মাল মন্দ হলো। যদি বলে আল্লাহর আনুগত্যের উপর আপনার হায়াত দীর্ঘ হোক,
তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ
(১০৪) আমরা অনেক সময় দেখি যে, গাড়ী বা দেয়ালে এক দিকে (الله) এবং অন্য দিকে (محمد) লেখা থাকে, এমনিভাবে
কাপড়ের টুকরায়, বইয়ের উপর এবং কুরআন মযীদের গেলাফের উপরও
লেখা হয়ে থাকে। এরকমভাবে লেখা কি ঠিক?
উত্তরঃ এভাবে লেখা
জায়েয নেই। কেননা এধরণের লেখাতে নবী (ﷺ)কে আল্লাহর সমান করে দেয়া
হয়ে থাকে এবং অজ্ঞ লোকেরা এভাবে লেখা দেখে উভয় নামকে মর্যাদার দিক থেকে সমান মনে
করতে পারে। তাই প্রথমে নবী (ﷺ) এর নাম মুছে ফেলা উচিৎ। বাকী
থাকবে শুধু আল্লাহর নাম। সুফীরা শুধু আল্লাহু, আল্লাহু জিকির করে থাকে। এজন্য আল্লাহু শব্দটিকেও মুছে
ফেলতে হবে। সুতরাং গাড়ীতে বা দেয়ালে বা কাপড়ে বা অন্য কোথাও ‘আল্লাহু’ বা ‘মুহাম্মাদ’
কোনটিই লেখা যাবে না।
উত্তরঃ এই বাক্যটি
উচ্চারণ করা জায়েয নেই। কারণ এতে ধারণা করা হয় যে, আল্লাহ তার অবস্থা সম্পর্কে অবগত নয়, তাই তিনি প্রশ্ন করেন। এটি একটি বিরাট অপছন্দনীয় বাক্য। যদিও বক্তা
এধরণের উদ্দেশ্য করে না, কিন্তু বাক্যের মাধ্যমে উক্ত
অর্থ বুঝা যায়। তাই এভাবে বলা বর্জন করা উচিৎ।
প্রশ্নঃ
(১০৬) মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মরহুম বলা বা আল্লাহ তাকে রহমত দ্বারা ঢেকে নিয়েছেন
অথবা অমুক ব্যক্তি আল্লাহর রহমতের দিকে চলে গেছেন এধরণের কথা বলার হুকুম কি?
উত্তরঃ- উক্ত কথাগুলো বলাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ এতে কেবলমাত্র তার জন্য
কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। দৃঢ়তার সাথে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দেয়া হয়নি। কারণ তা
জায়েয নেই।
উত্তরঃ- বক্তার উদ্দেশ্য যদি হয় যে, সে দেশ ও জাতির
মুখপত্র হিসাবে কথা বলছে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। আর যদি
বরকতের আশায় অথবা সাহায্য চাওয়ার নিয়তে কথাটি উচ্চারণ করে, তাহলে শির্কে পরিণত হবে। বক্তার অন্তরে দেশ-জাতির সম্মান যদি আল্লাহর
সম্মানের মত হয় তাহলে বড় শির্কে পরিণত হতে পারি।
উত্তরঃ একথার দ্বারা
যদি উদ্দেশ্য হয় যে, আপনার আগমণের কারণে আমরা বরকত লাভ করলাম, তাহলে
অসুবিধা নেই। কারণ বরকতকে মানুষের দিকে সম্পৃক্ত করা জায়েয আছে। আয়েশা h এর গলার হার হারিয়ে যাওয়ার কারণে যখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল, উসাইদ ইবনে হুজায়ের h বললেন, হে আবু বকর পরিবারের নারী! এটিই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। বরকতের
অনুসন্ধান দু’ভাবে হতে পারে।
১) শরীয়ত সম্মত বলে কোন জিনিষ
থেকে বরকত হাসিল করাঃ যেমন আল-কুরআনুল কারীম। আল্লাহ বলেন,
)وَهَذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ(
অর্থঃ
এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। (সূরা আনআ’মঃ ৯২) কুরআনের বরকত হল, যে ব্যক্তি তাকে জীবন বিধান
হিসাবে গ্রহণ করবে এবং কুরআন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, তার জন্য বিজয় অনিবার্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ অনেক জাতিকে শির্ক থেকে
মুক্তি দিয়েছেন। কুরআনের অন্যতম বরকত হল, যে ব্যক্তি
কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে দশটি নেকী অর্জন করবে।
২) বাহ্যিক কোন জানা জিনিষ থেকে
বরকত হাসিল করাঃ যেমন দ্বীনি ইলম। কোন ব্যক্তির ইলম এবং কল্যাণের পথে দাওয়াত দেয়ার
মাধ্যমে বরকত হাসিল করা। উসায়েদ ইবনে হুজায়ের বলেন, হে আবু বকরের বংশধর! এটিই তোমাদের প্রথম বরকত নয়। কেননা
কোন কোন মানুষের হাতে এমন বরকত প্রকাশিত হয়, যা অন্যের
হাতে প্রকাশিত হয়নি।
মৃত ব্যক্তি বা মিথ্যুকদের
কল্পিত ওলী থেকে বরকত লাভের ধারণা করা সম্পূর্ণ বাতিল। এর কোন অস্তিত্ব নেই। কখনো
বরকতের নামে শয়তানের সহযোগীতায় ভন্ডরা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য কিছু কিছু অলৌকিক
কান্ড দেখিয়ে থাকে। সঠিক বরকত এবং ভন্ডামীর মধ্যে পার্থক্য করার মূলনীতি হল,
যার কাছ থেকে কারামাত প্রকাশিত হল, তার
ব্যক্তিত্বের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সে যদি আল্লাহর ওলীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে,
তাহলে অবশ্যই সুন্নাহর অনুসারী হবে এবং বিদ্আত হতে মুক্ত হবে,
আল্লাহ তাঁর হাতে এমন বরকত প্রকাশ করবেন, যা অন্যের হাতে প্রকাশ করবেন না। আর যদি কুরআন্তসুন্নাহর বিরোধীতাকারী
হয় অথবা বাতিলের দিকে আহবানকারী হয় এবং তা সত্বেও তার হাতে বাহ্যিকভাবে কোন ভাল
জিনিষ প্রকাশিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটি শয়তানের পক্ষ হতে
বাতিলের সহযোগিতা মাত্র।
প্রশ্নঃ (১০৯) মানুষ বলে থাকে “তাকদীরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং আল্লাহর অনুগ্রহের অনুপ্রবেশ
ঘটেছে” এধরণের কথা বলার বিধান কি?
উত্তরঃ তাকদীরের
অনুপ্রবেশ ঘটেছে- এধরণের কথা বলা ঠিক নয়। কারণ তাকদীর পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট। তাই
অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলা হবে কিভাবে? বরং বলা হবে তাকদীর আগমণ করেছে বা বিজয় লাভ করেছে। এমনিভাবে আল্লাহর
অনুগ্রহের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলাও ঠিক হবে না। বরং বলা হবে আল্লাহর অনুগ্রহ অবতীর্ণ
হয়েছে।
প্রশ্নঃ
(১১০) “চিন্তার
স্বাধীনতা” সম্পর্কে আমরা শুনে থাকি এবং পত্রিকায় পড়ে
থাকি। মূলতঃ এটি আকীদা গ্রহণের স্বাধীনতার দিকে আহবান মাত্র। এ সম্পর্কে আপনার
মতামত কি?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে
আমাদের কথা হল, যে ব্যক্তি আকীদার স্বাধীনতার দাবী করে এবং যে কোন দ্বীনে বিশ্বাসের
অধিকার রাখে বলে মনে করে, সে কাফের। কারণ যে ব্যক্তি
মুহাম্মাদ(ﷺ) এর দ্বীন ব্যতীত অন্য দ্বীন
গ্রহণ করা বৈধ মনে করে, সে কাফেরে পরিণত হবে। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। তাওবা না করলে তাকে
হত্যা করা ওয়াজিব।
দ্বীনের বিষয় চিন্তা প্রসূত
বিষয় বা কোন মতবাদ নয়। এটা আল্লাহর অহী, যা আল্লাহ তাঁর নবীদের উপর
নাযিল করেছেন যেন মানুষ তার অনুসরণ করতে পারে। ইসলাম একটি চিন্তাধারা, খৃষ্ট ধর্ম একটি চিন্তা ধারা এবং ইহুদীবাদ একটি চিন্তা ধারা এভাবে
ব্যাখ্যা করার অর্থ এই যে, আসমানী শরীয়তসমূহ নিছক মানবীয়
চিন্তা প্রসূত বিষয়। আসমানী দ্বীনসমূহ আল্লাহর পক্ষ হতে অহী স্বরূপ আগমণ করেছে। এর
মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করবে। সুতরাং এর ব্যাপারে চিন্তাধারা কথাটি ব্যবহার
করা জায়েয নেই।
মোট কথা, যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করবে যে, সে নিজের
খেয়াল-খুশী মত যে কোন দ্বীনে বিশ্বাস করতে পারে, তাহলে সে
কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
)وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ(
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন গ্রহণ করবে, তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না।” (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫) আল্লাহ বলেন,
)إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ(
“ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম।” (সূরা আল-ইমরানঃ ১৯) সুতরাং ইসলাম ছাড়া অন্য কোন
দ্বীন গ্রহণ করা জায়েয নেই। যে ব্যক্তি তা করবে আলেমগণ তাকে সুস্পষ্ট কাফের হিসাবে
ফতোয়া দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ (১১১) মুফতীর নিকট “এ বিষয়ে ইসলামের হুকুম কি বা ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি কি”
এই ধরণের বাক্য দিয়ে প্রশ্ন করার বিধান কি?
উত্তরঃ এভাবে বলা উচিৎ
নয়। হতে পারে সে ফতোয়া দিতে ভুল করবে। কাজেই তার ভুল ফতোয়া ইসলামের বিধান হতে পারে
না। তবে মাসআলাতে যদি সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়ার
ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? উত্তর হবে এ বিষয়ে ইসলামের
বিধান হল হারাম।
প্রশ্নঃ (১১২) “পরিস্থিতির ইচ্ছানুপাতে এ রকম হয়েছে” “তাকদীরের
ইচ্ছানুপাতে এ রকম হয়েছে” এধরণের কথা বলার হুকুম কি?
উত্তরঃ কথাগুলো
অপছন্দনীয় এবং শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ পরিস্থিতির কোন ইচ্ছা নেই। এমনিভাবে তাকদীরেরও
নিজস্ব কোন ইচ্ছা নেই। আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। যদি বলে ‘তাকদীরের লিখন এরকম ছিল’,
তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
উত্তরঃ কাউকে শহীদ বলা
দু’ভাবে হতে
পারে। (১) নির্দিষ্ট কোন কাজকে উল্লেখ
করে শহীদ বলা। এভাবে বলা, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হল সে শহীদ, নিজের
সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেলে শহীদ, প্লেগ রোগে মারা
গেলে শহীদ---। এভাবে বলা জায়েয আছে। কেননা এখানে আপনি নবী (ﷺ) এর হাদীছ অনুযায়ী সাক্ষ্য
প্রদান করছেন। (২) নবী(ﷺ) নির্দিষ্ট করে যাকে শহীদ
বলেছেন এবং সমস্ত মুসলিম যাকে শহীদ বলে ঘোষণা দিয়েছে, তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে
নির্দিষ্ট করে শহীদ বলা জায়েয নেই। ইমাম বুখারী এভাবে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন যে,
“একথা বলা যাবে না যে অমুক ব্যক্তি শহীদ”। ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন, অর্থাৎ
ওয়াহ্য়ীর মাধ্যমে অবগত হওয়া ব্যতীত অকাট্যভাবে কারও জন্য শাহাদাতের ফায়সালা দেয়া
যাবে না। তিনি সম্ভবত উমার h এর একটি ভাষণের দিকে ইংগিত
করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বলে থাক অমুক ব্যক্তি শহীদ, অমুক শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। খবরদার এভাবে বলো না। কারণ তার অন্য
উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তোমরা নবী (ﷺ) এর মত বল যে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায়
মৃত্যু বরণ করল অথবা জীবন দিল সে শহীদ”।
কোন বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে হলে সে
বিষয়ে ইলম থাকতে হবে। শহীদ হওয়ার শর্ত হলো আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার জন্য
জিহাদ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করা। আর এটি অন্তরের গোপন অবস্থা। তা জানার কোন উপায়
নেই। এজন্য নবী (ﷺ) বলেনঃ
مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِهِ
“আল্লাহর পথে জিহাদকারীর দৃষ্টান্ত হলো, আর
আল্লাহই ভাল জানেন কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” নবী (ﷺ) আরো বলেনঃ
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُكْلَمُ أَحَدٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُكْلَمُ فِي سَبِيلِهِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاللَّوْنُ لَوْنُ الدَّمِ وَالرِّيحُ رِيحُ الْمِسْكِ
“ঐ সত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যে
ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শরীরে জখম হবে, আর
আল্লাহই ভাল জানেন কে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে আহত হয়, সে কিয়ামতের দিন এমতাবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার
ক্ষত স্থান হতে রক্ত ঝরতে থাকবে, রং হবে রক্তের, কিন্তু তার গন্ধ হবে মিসকের সুঘ্রাণের ন্যায়।” যারা জিহাদ করে নিহত হয়, তাদের বাহ্যিক অবস্থা
ভাল। তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করি। কিন্তু তাদেরকে জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রদান
করি না। তাদের প্রতি খারাপ ধারণাও করি না। তবে দুনিয়াতে তাদের উপর শহীদের হুকুম
প্রযোজ্য হবে। জিহাদের ময়দানে নিহত ব্যক্তিকে তার পরিহিত কাপড়েই রক্ত সহকারে দাফন
করা হবে এবং তার জানাযা পড়া হবেনা। আর যদি অন্যভাবে শহীদ হয়ে থাকে, তবে তাকে গোসল দেয়া হবে, কাফন পরানো হবে এবং
জানাযার স্বলাত পড়া হবে।
কাউকে ‘শহীদ’ হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ তাকে
জান্নাতের সাক্ষ্য দেয়া। এটি আহলে সুন্নাহর মাযহাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলে
সু্ন্নাতের লোকেরা নবী (ﷺ) যাকে শহীদ বলেছেন, তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শহীদ
বলেন না। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে মুসলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে যাকে শহীদ বলা হয়েছে,
তাকে শহীদ বলা যাবে।
উত্তরঃ আমরা এতে
নাজায়েযের কিছু মনে করি না। মনে হয় এ ধরণের কিছু হাদীছ পাওয়া যায় যে, রাসূল (ﷺ) এর সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল।
রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে হঠাৎ দেখে ফেললেন।
তবে এই মূহুর্তে নির্দিষ্ট কোন হাদীছ আমার মনে আসছে না। মানুষ কোন কাজকে হঠাৎ মনে
করতে পারে। কারণ সে গায়েবের খবর জানে না। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে
না। কারণ তিনি সকল বিষয়ে অবগত আছেন। প্রতিটি বিষয় আল্লাহর কাছে পূর্ব থেকেই
নির্ধারিত। তাই হঠাৎ করে তাঁর কোন কাজ হতেই পারে না।
উত্তরঃ ইসলামী
চিন্তাধারা বা অনুরূপ শব্দ বলা যাবে না। ইসলামকে যদি চিন্তাধারা বলি, তাহলে অর্থ দাঁড়ায় যে, এটি চিন্তাপ্রসূত বিষয় যা গ্রহণ বা বর্জন করার সম্ভাবনা রাখে। এটি
অত্যন্ত নিকৃষ্ট বাক্য, যা ইসলামের শত্রুরা আমাদের ভিতরে
অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। অথচ আমরা জানি না।
কাউকে
ইসলামী চিন্তাবিদ বলাতে কোন অসুবিধা নেই। একজন মুসলিম চিন্তাবিদ হবে এতে কোন বাধা
নেই।
উত্তরঃ দ্বীনকে খোসা
এবং মূল হিসাবে দু’ভাগে বিভক্ত করা বৈধ নয়। দ্বীনের সবই মূল এবং মানব জাতির জন্য উপকারী।
তা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য দান করবে। পোষাক এবং বাহ্যিক বেশ-ভুশার ক্ষেত্রেও যদি
মানুষ আল্লাহর সন'ষ্টি এবং রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহর অনুসরণের নিয়ত
করে, তাহলে
তাতেও ছাওয়াব রয়েছে। খোসা এমন জিনিষকে বলা হয়, যা উপকারী
নয় বলে ফেলে দেয়া হয়। ইসলামের ভিতরে বর্জনীয় কোন কিছু নেই। সবই মানুষের জন্য
কল্যাণকর। যারা এধরণের কথার প্রচলন ঘটায়, তাদের ভালভাবে
ভেবে দেখা দরকার। যাতে করে তারা সত্যের সন্ধান পেতে পারে এবং তার অনুসরণ করতে
পারে। তাদের উচিৎ ইসলামের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া বর্জন করা। এ কথা ঠিক যে, ইসলামের মধ্যে কিছু জিনিষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ইসলামের রুকনসমূহ।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسَةٍ عَلَى أَنْ يُوَحَّدَ اللَّهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصِيَامِ رَمَضَانَ وَالْحَجِّ
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর, আর তা হলঃ
১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহব্যাতিত ইবাদত যোগ্য কোন
মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসুল,
২) স্বলাত প্রতিষ্ঠা করা,
৩) যাকাত প্রদান করা,
৪) রমাদ্বনের সিয়াম পালন করা
এবং
৫) কাবা ঘরের হজ্জ পালন করা।
দ্বীনের মধ্যে এমন জিনিষও রয়েছে, যা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত তাতে খোসার মত এমন কিছু নেই যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবেনা; তার সম্পূর্ণটাই উপকারী।
দ্বীনের মধ্যে এমন জিনিষও রয়েছে, যা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত তাতে খোসার মত এমন কিছু নেই যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবেনা; তার সম্পূর্ণটাই উপকারী।
দাড়ি
লম্বা করার ব্যাপারে কথা হল নিঃসন্দেহে তা একটি ইবাদত। নবী (ﷺ) তা লম্বা করার আদেশ দিয়েছেন।
তাঁর প্রতিটি আদেশ পালন করাই ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন'ষ্টি অর্জন করতে পারে। দাড়ি রাখা আমাদের নবী (ﷺ)সহ পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর
সুন্নাত। আল্লাহ তাআ’লা হারুন (আঃ) এর উক্তি বর্ণনা করে বলেনঃ
)يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي(
“হে আমার ভাই! আমার দাড়িতে ও
মাথায় ধরে টান দিবেন না।” (সূরা ত্বাহাঃ ৯৪) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, দাড়ি লম্বা করা স্বভাবগত
বিষয়ের অন্তর্গত। সুতরাং দাড়ি লম্বা করা একটি ইবাদত, অভ্যাস
নয় এবং তা খোসাও নয়। যেমনটি ধারণা করে থাকে কতিপয় লোক।
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তিকে
লক্ষ্য করে একথাটি বলা সম্পূর্ণ হারাম। যদি তুমি বল সে তার শেষ গন্তব্যে চলে গেছে, তার অর্থ হল কবরের পরে আর কিছু
নেই। এ ধরণের কথা পুনরুত্থান অস্বীকার করার শামিল। ইসলামী আকীদার অন্যতম দিক হল
কবরই শেষ নয়। যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারাই কেবল বলে
থাকে কবরই শেষ। তারপর আর কিছু নেই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)أَلْهَاكُمْ التَّكَاثُرُ حَتَّى زُرْتُمْ الْمَقَابِرَ(
অর্থঃ
“প্রাচুর্যের
লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে। এমনকি তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও।” (সূরা তাকাছুরঃ ১-২) জনৈক গ্রাম্য লোক আয়াতটি
শুনার পর বলল, আল্লাহর শপথ ভ্রমণকারী কখনো স্থায়ী বসবাসকারী হতে পারে না। মোটকথা
কবরকে শেষ নিবাস বলা যাবে না বরং কবর থেকে পুনরুত্থান হবে এবং কিয়মাতের দিন বিচার
ফয়সালা হওয়ার পর জান্নাত বা জাহান্নামই হবে শেষ নিবাস।
উত্তরঃ নবী (ﷺ) এর আগমণের পর, খৃষ্টানদেরকে মাসীহী বলা ঠিক
নয়। তারা যদি সত্যিকার অর্থে মাসীহী হত, তাহলে অবশ্যই নবী (ﷺ) এর প্রতি ঈমান আনয়ন করত।
কেননা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপরে ঈমান আনয়ন এবং ঈসা
(আঃ) এর উপর ঈমান আনয়ন একই কথা। আল্লাহ বলেনঃ
)وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَابَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ(
“স্মরণ কর সেই সময়ের কথা,
যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললেনঃ হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে
আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের
সত্যায়নকারী এবং আমি এমন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার
পরে আগমণ করবেন। তাঁর নাম হবে আহমাদ। অতঃপর যখন তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আগমণ
করেন, তখন তারা বলল, এ তো
প্রকাশ্য এক যাদু।” (সূরা আস্সাফঃ ৬) ঈসা (আঃ) মুহাম্মাদ (ﷺ) এর আগমণের সুসংবাদ এ জন্য
দিয়েছেন, যাতে
তারা তাঁর আনিত দ্বীন গ্রহণ করে। কেননা কোন বিষয়ের সুসংবাদ দেয়ার অর্থই হল তা
গ্রহণ করা। ঈসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে যার আগমণের সুসংবাদ দিয়েছেন, তিনি হলেন মুহাম্মাদ (ﷺ)। তিনি যখন দলীল-প্রমাণসহ আগমণ করলেন, তখন তারা তাঁর সাথে কুফরী করল এবং যাদুকর বলে উড়িয়ে
দিল। আর মুহাম্মাদ (ﷺ)এর সাথে কুফরী করার মাধ্যমে
তারা ঈসার সাথেও কুফরী করল। কারণ একজন নবীকে অস্বীকার করার অর্থ সকল নবীকে
অস্বীকার করা। তাই খৃষ্টানদের জন্য কখনো ঈসা (আঃ) এর অনুসারী হওয়ার দাবী করা বৈধ
নয়। তারা যদি সত্যিকার অর্থে ঈসা নবীর অনুসারী হত, তাহলে অবশ্যই তারা তাঁর প্রদত্ত সুসংবাদের প্রতি ঈমান
আনয়ন করত। ঈসাসহ সকল নবীর নিকট থেকে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আনয়নের অঙ্গীকার
নেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنْ الشَّاهِدِينَ(
“এবং আল্লাহ যখন নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যখন তোমাদেরকে কিতাব এবং জ্ঞান দান করব, অতঃপর
যদি তোমাদের কাছে এমন একজন রাসূল আগমণ করেন, যিনি তোমাদের
কিতাবকে সত্যায়ন করেন, তখন সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে
এবং তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার
করলে এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিলে? তখন তাঁরা
বললেন, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাক, আমিও তোমাদের সাথে
সাক্ষী থাকলাম।” (সূরা আল-ইমরানঃ ৮১) যিনি তাদের কিতাবকে
সত্যায়নকারী হিসেবে আগমণ করেছেন তিনি হলেন মুহাম্মাদ (ﷺ)।
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنْ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنْ الْحَقِّ
আর
আমি এ কিতাবকে নাযিল করেছি যা হকের সাথে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা
প্রমাণবহনকারী এবং ঐসব কিতাবের সংরক্ষক; অতএব, তুমি তাদের পারস্পরিক
বিষয়ে আল্লাহর অবতারিত এ কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা কর। তুমি যা প্রাপ্ত হয়েছ তা থেকে
বিরত হয়ে তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করোনা। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮) অত্র আয়াতে রাসূল বলতে
মুহাম্মাদ (ﷺ)কে বুঝানো হয়েছে।
মোটকথা খৃষ্টানদের জন্য ঈসা
(আঃ) এর উম্মত হওয়ার দাবী করা ঠিক নয়। কারণ তারা ঈসা (আঃ)এর সুসংবাদ মুহাম্মাদ (ﷺ)এর নবুওয়তকে অস্বীকার করেছে।
আর মুহাম্মাদ(ﷺ)কে অস্বীকার করার অর্থ ঈসা
(আঃ)কে অস্বীকার করা।
উত্তরঃ আমি এই কথাটি
বলা অপছন্দ করি। কথাটিতে আল্লাহর উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে মনে হয়।
আল্লাহর উপর কোন কিছুর বাধ্যবাধকতা নেই। নবী(ﷺ) বলেনঃ
)لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُ(
“তোমাদের কেউ যেন না বলে হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন,
আপনি চাইলে আমাকে রহম করুন। বরং দৃঢ়তার সাথে যেন দু’আ করে এবং কবূলের আশা নিয়ে দু’আ করে। আল্লাহকে
বাধ্যকারী কেউ নেই।” আল্লাহ না করুন এর স্থলে আল্লাহ
নির্ধারণ না করুন বলা অনেকটা সন্দেহ মুক্ত।
প্রশ্নঃ (১২০) মানুষ মারা গেলে يَاأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّة অর্থাৎ “হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তোমার প্রভুর দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও
সন্তোষভাজন হয়ে”- এই কথাটি বলা কি ঠিক?
উত্তরঃ এই ধরণের কথা
বলা জায়েয নেই। কে তাকে সংবাদ দিল যে, সন্তুষ্ট চিত্তে সে আল্লাহর দিকে ফেরত যাচ্ছে? কাউকে এভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা কারও পক্ষে বৈধ নয়।
كتاب الطهارة
0 Comments