পবিত্রতা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
মোজার উপর
মাসেহ করার সময় সীমা
উত্তরঃ এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা। এর সঠিক বিবরণ
মানুষের জানা দরকার। তাই বিস্তারিতভাবে আমি প্রশ্নটির জবাব দিব। ইন্শাআল্লাহ।
কুরআন ও সুন্নাহ্র দলীলের
ভিত্তিতে মোজার উপর মাসেহ করার বিষয়টি সুপ্রমাণিত। আল্লাহতাআলা বলেনঃ
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ[
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা
স্বলাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে أَرْجُلَكُمْ শব্দটিতে لام অক্ষরটিতে যবর
এবং যের দিয়ে উভয়ভাবে পড়া যায়। যবর দিয়ে পাঠ করলে তা وُجُوهَكُمْ শব্দের উপর ভিত্তি করবে। তখন মুখমন্ডল ধৌত করার মত পাও ধৌত করতে হবে। আর
যের দিয়ে পাঠ করলে তখন তার ভিত্তি হবে بِرُءُوسِكُمْ শব্দের উপর। তখন পা ও মাথা মাসেহের অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব পূর্বোল্লিখিত দু’ক্বিরাত অনুযায়ী পদ যুগল ধৌতও করা যায় এবং মাসেহও করা যায়। সুন্নাতে
নববীতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে যে, কখন ধৌত করতে হবে এবং
কখন মাসেহ করতে হবে? সুতরাং পা যখন অনাবৃত থাকবে তখন তা
ধৌত করতে হবে। আর মোজা প্রভৃতি দ্বারা আবৃত করা থাকলে তা মাসেহ করবে।
হাদীছে নবী (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির
সনদে মোজার উপর মাসেহ করা প্রমাণিত হয়েছে। যেমনটি জনৈক কবি বলেছেনঃ
মোতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ
সমূহ হচ্ছেঃ ১) নবীজীর উপর মিথ্যারোপ করা ২) আল্লাহর জন্য ঘর (মসজিদ) তৈরী করা। ৩) ক্বিয়ামত দিবসে
আল্লার দিদার লাভ। ৪) শাফাআতের বর্ণনা। ৫) হাওয কাওছার ৬) মোজার উপর মাসেহ করা।
মোজার উপর মাসেহ করার বর্ণনা
নবী (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির
সনদে বর্ণিত। তাই পবিত্র (ওযু) অবস্থায় কোন মানুষ মোজা পরিধান করে থাকলে- ওযু করার
সময় মোজা খুলে পা ধৌত করার চাইতে উক্ত মোজার উপর মাসেহ করা উত্তম। এই কারণে মুগীরা
বিন শো’বা h যখন নবী (ﷺ) এর ওযুর সময়
তাঁর পরিহিত মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি বললেন, “খুলতে হবে না। কেননা পবিত্র অবস্থায় আমি তা পরিধান করেছি।” তারপর তার উপর মাসেহ করলেন।
মোজার উপর মাসেহ করার কয়েকটি
শর্ত রয়েছেঃ
প্রথম শর্তঃ ছোট বড় সবধরণের নাপাকী থেকে পূর্ণরূপে পবিত্রতা
অর্জন করার পর মোজা পরিধান করবে। যদি পবিত্রতা অর্জন না করে মোজা পরিধান করে, তবে তাতে মাসেহ করা বিশুদ্ধ হবে না।
দ্বিতীয় শর্তঃ মাসেহ করার নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে মাসেহ করতে
হবে। এর বর্ণনা অচিরেই আসবে। ইনশাআল্লাহ।
তৃতীয় শর্তঃ ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন তথা ওযুর ক্ষেত্রে
মাসেহ হতে হবে। কিন্তু গোসল ফরদ্ব হলে মোজা অবশ্যই খুলতে হবে এবং সমস্ত শরীর ধৌত
করতে হবে। এ জন্য জানাবাত তথা স্ত্রী সহবাস জনিত কারণে অপবিত্র হলে মোজার উপর
মাসেহ করা যাবে না। যেমনটি ছাফওয়ান বিন আস্সাল h বর্ণিত হাদীছে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আমরা সফরে থাকলে নবী (ﷺ) আমাদেরকে আদেশ
করতেন, নাপাক না হলে আমরা যেন তিন দিন তিন রাত মোজা না খুলি।
মোজার উপর মাসেহ করার সময়
সীমাঃ মুক্বীম তথা গৃহে অবস্থানকারীর জন্য একদিন একরাত তথা ২৪ ঘন্টা। আর মুসাফিরের
জন্য তিন দিন তিন রাত তথা ৭২ ঘন্টা। স্বলাত কয় ওয়াক্ত হল সেটা বিষয় নয়, আসল কথা হচ্ছে নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময় গণনা কখন থেকে শুরু হবে? এই হিসাব শুরু
হবে প্রথম বার মাসেহ করার সময় থেকে। মোজা পরিধান বা ওযু ভঙ্গের সময় থেকে হিসাব
শুরু হবে না। কেননা হাদীছে ‘মাসেহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যখন এই কাজটি হবে তখনই শব্দটির ব্যবহার হবে। “মুক্বীম একদিন একরাত্র মাসেহ করবে এবং মুসাফির তিনদিন তিন রাত মাসেহ
করবে।” প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে হিসাব শুরু হবে। তখন
থেকে নিয়ে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হলেই মুক্বীমের নির্দিষ্ট সময় শেষ। আর ৭২ ঘন্টা পূর্ণ
হলে মুসাফিরের নির্দিষ্ট সময় শেষ। বিষয়টিকে অধিক সুস্পষ্ট করার জন্য একটি উদাহরণ
পেশ করা হচ্ছেঃ
জনৈক ব্যক্তি ফজরের সময়
পবিত্রতা অর্জন করে মোজা পরিধান করেছে। এরপর যোহর পর্যন্ত পবিত্র অবস্থায় থেকেছে।
এমনকি আছর পর্যন্ত তার ওযু নষ্ট হয়নি। তাই সে ঐ ওযুতে যোহর ও আছর স্বলাত সময়মত
আদায় করেছে। তারপর মাগরিবের পূর্বে বিকাল ৫টার সময় ওযু করেছে এবং মোজার উপর মাসেহ
করেছে। এই ৫টা থেকে তার সময়ের হিসাব শুরু হবে। সে পরবর্তী দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত
মোজার উপর মাসেহ করতে পারবে। যদি পরবর্তী দিন ৫টা বাজার পনর মিনিট আগে মোজাতে
মাসেহ করে এবং এশা পর্যন্ত তার ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে ঐ
মাসেহকৃত ওযু দ্বারা মাগরিব স্বলাত আদায় করতে পারবে কোন অসুবিধা নেই। অতএব এই লোক
প্রথমবার ওযু করার পর প্রথম দিন যোহর আছর মাগরিব এশা এবং দ্বিতীয় দিন ফজর যোহর আছর
মাগরিব ও এশা মোট নয়টি স্বলাত আদায় করতে পারছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে,
মাসেহের মাধ্যমে শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত আদায় করা যায়। অথচ
একথার কোন ভিত্তি নেই।
শরীয়তে মাসেহ করার যে
সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা শুরু হবে প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে। এই উদাহরণে
আপনি দেখলেন কতগুলো স্বলাত আদায় করা সম্ভব। উল্লেখিত উদাহরণে যে সময় দেখানো হয়েছে, তা যদি শেষ হয়ে যায় এবং তারপর মাসেহ করে, তবে
তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার ওযু হবে না। কিন্তু মাসেহের নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ
হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে মাসেহ করে যদি আর ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে
যতক্ষণ ওযু ভঙ্গ না হবে স্বলাত পড়তে পারবে- যদিও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
কেননা স্বলাত আদায় করার সময় সে তো পবিত্র অবস্থাতেই রয়েছে।
নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেই
মাসেহ ভঙ্গ হয়ে যাবে এমন কথা দলীল বিহীন। কেননা সময় অতিবাহিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আর মাসেহ করা যাবে না। এমন অর্থ নয় যে, সে আর
পবিত্র থাকবে না। যে সময় সীমা দেয়া হয়েছে তা মাসেহের জন্য প্রজোয্য পবিত্রতার জন্য
নয়। তাই সময় অতিবাহিত হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এর কোন দলীল নেই। অতএব আমরা বলব,
যখন কিনা এই ব্যক্তি বিশুদ্ধ শরঈ দলীলের ভিত্তিতে ওযু করে পবিত্র
হয়েছে, তখন তার ওযু নষ্ট হয়েছে একথার পক্ষেও বিশুদ্ধ শরঈ
দলীল দরকার। আর যেহেতু সময় অতিবাহিত হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে এরকম কোন দলীল নেই,
সেহেতু ওযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সে পবিত্র হিসেবেই অবশিষ্ট
থাকবে।
মুসাফিরের সময়সীমা তিনদিন
তিনরাত। অর্থাৎ ৭২ ঘন্টা। এই হিসেব শুরু হবে প্রথমবার মাসেহের সময় থেকে। এজন্য
হাম্বলী মাযহাবের ফিক্বাহবীদগণ উল্লেখ করেছেন, কোন লোক
যদি মুক্বীম অবস্থায় মোজা পরিধান করে অতঃপর নিজ শহরে থাকাবস্থাতেই তার ওযু ভঙ্গ হয়,
এরপর সফর করে এবং সফরের স্থানে গিয়ে ওযু করে মাসেহ করে, তবে তাঁরা বলেন, সে মুসাফিরের সময়সীমা পূর্ণ
করবে। এ দ্বারা বুঝা যায় যারা বলেন, মোজা পরিধান করে
প্রথমবার ওযু ভঙ্গ হওয়ার পর থেকে সময় গণনা শুরু হবে, তাদের
এই কথা দুর্বল।
কখন মোজার উপর মাসেহ বাতিল
হবে? ১) সময় অতিবাহিত হলে এবং ২) মোজা খুলে ফেললে। অর্থাৎ-
মোজা খুলে ফেললে আর মাসেহ করা যাবে না, কিন্তু সে পবিত্র
অবস্থাতেই থাকবে যতক্ষণ তার ওযু ভঙ্গ না হয়। একথার দলীল হচ্ছে ছাফ্ওয়ান বিন
আস্সালের পূর্ববর্তী হাদীছ। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) আমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন মোজা না খোলার।’ এ থেকে বুঝা যায়, মোজা খুলে ফেললে মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ- একবার মাসেহ করার পর
যদি মোজা খুলে ফেলে, তবে পুনরায় তা পরিধান করে তাতে মাসেহ
করতে পারবে না- যতক্ষণ না সে নতুন করে পূর্ণ ওযুর মাধ্যমে পা ধৌত করে মোজা পরিধান
করবে।
কিন্তু মোজা খুলে ফেললে
পবিত্রতা অবশিষ্ট থাকবে। কেননা মাসেহ করার মাধ্যমে যখন কোন ব্যক্তি ওযু করবে তখন
শরঈ দলীলের ভিত্তিতেই সে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে, সুতরাং তার এই পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা বলার জন্য শরঈ দীলল দরকার। আর
মাসেহ করে ওযু করার পর মোজা খুলে ফেললে ওযু বিনষ্ট হয়ে যাবে একথার পক্ষে কোন দলীল
নেই। কিন্তু একথার দলীল আছে যে, একবার মাসেহ করার পর মোজা
খুলে ফেললে পুনরায় পরিধান করে আবার তাতে মাসেহ করা যাবে না। যেমনটি পূর্বে উল্লেখ
করা হয়েছে। (আল্লাহতাওফীক্ব দাতা)
উত্তরঃ বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, ছেঁড়া মোজা এবং বাইরে থেকে চামড়া দেখা যায় এমন পাতলা মোজার উপর মাসেহ
করা জায়েয। যে অঙ্গের উপর মাসেহ হবে তাকে পরিপূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে এটা
উদ্দেশ্য নয়। কেননা পা তো আর সতর নয়। মাসেহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ওযুকারী ব্যক্তির
উপর সহজতা ও হাল্কা করা। অর্থাৎ- আমরা প্রত্যেক ওযুর সময় মোজা পরিধানকারীকে মোজা
খুলে পা ধৌত করতে বাধ্য করব না। বরং বলব, এর উপর মাসেহ
করাই আপনার জন্য যথেষ্ট। আর এই সহজতার উদ্দেশ্যেই মোজার উপর মাসেহ শরীয়ত সম্মত করা
হয়েছে। অতএব কোন পার্থক্য নেই চাই মোজা ছেঁড়া হোক বা ভাল হোক, পাতলা হোক বা মোটা হোক।
প্রশ্নঃ (১৪৬)
পট্টির উপর মাসেহ করার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রথমত আমাদের জানা উচিত যে, পট্টি কি?
পট্টি বা ব্যান্ডেজ হচ্ছে
এমন বস্ত যা ভাঙ্গা-মচকা জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ফিক্বাহবিদদের ভাষায়ঃ “বিশেষ প্রয়োজনে পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে কোন কিছু লাগিয়ে রাখা।” ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে বা ফোঁড়ার স্থানে বা পিঠের ব্যাথায় বা অন্য কোন
কারণে যে পট্টি বা ব্যান্ডেজ লাগানো হয় এখানে সেটাই উদ্দেশ্য। ধৌত করার পরিবর্তে
সেখানে মাসেহ করলেই যথেষ্ট হবে।
যেমন কোন লোকের হাতে ফোঁড়ার
কারণে যদি পট্টি বাধা থাকে, তখন ওযু করার সময় অন্যান্য
স্থান ধৌত করে পট্টির উপর শুধু মাসেহ করবে। তাহলেই তার পবিত্রতা পূর্ণ হয়ে যাবে।
যদি তার ওযু ভঙ্গ না হয়ে থাকে, তবে পট্টি বা ব্যান্ডেজ
খুলে ফেলার কারণে তার পবিত্রতা নষ্ট হবে না। কেননা শরঈ দীললের ভিত্তিতে সে
পবিত্রতা অর্জন করেছে, সুতরাং পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা
বলার জন্য শরঈ দলীল দরকার। আর পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললে ওযু বা পবিত্রতা নষ্ট
হয়েছে একথার পক্ষে কোন দীলল নেই।
পট্টির উপর মাসেহ করার
অনুমতি সংক্রান্ত হাদীছ সমূহ সবগুলোই ভেজালপূর্ণ। সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল। একদল
বিদ্বান বলেন, তবে সবগুলো হাদীছের সমম্বয়ে তা
দলীল হিসেবে যোগ্য হতে পারে।
আরেক দল বিদ্বান বলেন, হাদীছগুলো যঈফ হওয়ার কারণে তার উপর ভিত্তি করা চলবে না। এদের মধ্যে
মতভেদ আছে। কেউ বলেন, যেহেতু মাসেহ করার দলীল নেই তাই
পট্টি বা ব্যান্ডেজ বাধা স্থানের পবিত্রতা রহিত হয়ে যাবে। সেখানে কিছুই করতে হবে
না। কেননা সে অপারগ। আবার কেউ বলেন, উক্ত স্থানে মাসেহ
করবে না বরং তায়াম্মুম করবে।
কিন্তু হাদীছের প্রতি
দৃষ্টিপাত না করে শরঈ মূলনীতির ভিত্তিতে দেখা যায় নিকটতম মত হচ্ছে মাসেহ করা।
মাসেহ করলে তায়াম্মুমের কোন দরকার নেই। এই অবস্থায় আমরা বলবঃ ওযু গোসলের কোন অঙ্গে
যদি যখম বা ফোঁড়া বা এরকম কিছু থাকে, তবে তা
কয়েকটি স্তরে বিভক্তঃ
প্রথম স্তরঃ যখম বা ফোঁড়ার স্থানটি উম্মুক্ত। ধৌত করলে কোন
অসুবিধা হবে না। সুতরাং উহা ধৌত করা ওয়াজিব।
দ্বিতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত করলে ক্ষতির সম্ভাবনা
আছে। তখন সেখানে মাসেহ করা ওয়াজিব।
তৃতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত বা মাসেহ করলে ক্ষতির
সম্ভাবনা আছে। তখন সেখানে তায়াম্মুম করা ওয়াজিব।
চতুর্থ স্তরঃ স্থানটি পট্টি বা ব্যান্ডেজ জাতীয় বস্ত দ্বারা
ঢাকা আছে। তখন সেই বস্তর উপর মাসেহ করবে। ধৌত বা তায়ম্মুম করার দরকার হবে না।
উত্তরঃ না, একই সাথে
মাসেহ ও তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা একটি অঙ্গে পবিত্রতার দু’টি পদ্ধতি ব্যবহার করা শরঈ মূলনীতির পরিপন্থী। তাই আমরা বলবঃ পট্টি
সম্বলিত অঙ্গটির পবিত্রতা হয় মাসেহের মাধ্যমে অথবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জন
করবে। কিন্তু দু’রকম পদ্ধতি ব্যবহার করার আবশ্যকতা শরীয়ত
বহির্ভূত কাজ। তাছাড়া একটি ক্ষেত্রে বান্দাকে দু’টি
ইবাদতের ব্যাপারে বাধ্য করা যাবে না।
প্রশ্নঃ (১৪৮) ওযু
শেষে প্রথমে ডান পা ধৌত করে মোজা পরিধান করা তারপর বাম পা ধৌত করে মোজা পরিধান
করার বিধান কি? এভাবে মোজা পরলে কি তার উপর মাসেহ
করা যাবে?
উত্তরঃ মাসআলাটি বিদ্বানদের মাঝে মতবিরোধপূর্ণ। একদল
বিদ্বান বলেন, পবিত্রতা পূর্ণরূপে সম্পন্ন
করার পর মোজা পরিধান করবে। অন্যদল বলেন, যদি প্রথমে ডান
পা ধৌত করে তাতে মোজা পরিধান করে, তারপর বাম পা ধৌত করে
তাতে মোজা পরিধান করে, তবে তা জায়েয। কেননা ডান পা পবিত্র
করার পরই তো তা মোজাতে প্রবেশ করিয়েছে। অনুরূপভাবে বাম পা। অতএব সে তো পূর্ণ
পবিত্রতা অর্জন করেই মোজা দু’টি পরিধান করেছে। কিন্তু
একটি হাদীছ পাওয়া যায় দারাকুতনী ও হাকেম উহা বর্ণনা করেন। হাকেম তা ছহীহ্বলেন। নবী (ﷺ) বলেছেন, “যখন কেউ ওযু সম্পাদন করে এবং মোজা পরিধান করে।” এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, যে লোক এখনও বাম পা
ধৌত করেনি সে তো পূর্ণরূপে ওযু সম্পাদন করেনি। তাই প্রথম মতটিই অধিক উত্তম ও
বিশুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রশ্নঃ (১৪৯)
মুক্বীম অবস্থায় মোজার উপর মাসেহ করে সফর আরম্ভ করলে কি সফরের সময়সীমা অনুযায়ী আ‘মাল করতে হবে?
উত্তরঃ মুক্বীম অবস্থায় কোন লোক যদি মোজার উপর মাসেহ করে
এরপর সফর করে, তবে সে সফরের সময়সীমা অনুযায়ী
আ‘মাল করবে, এটাই বিশুদ্ধ মত।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ উল্লেখ করেছেন, মুক্বীম অবস্থায়
মাসেহ করে সফর করলে মুক্বীমের সময় সীমা অনুসরণ করবে। কিন্তু প্রথম কথাটিই বিশুদ্ধ।
কেননা সফর করার পূর্বে এই লোকের মাসেহ করার সময় সীমা তো অবশিষ্ট রয়েছে, তারপর সে সফর করেছে। অতএব সে মুসাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তিন দিন
তিন রাত মাসেহ করবে। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমাদ (রহঃ)
দ্বিতীয় মত পোষণ করে পরবর্তীতে প্রথম মত পোষণ করেছেন।
উত্তরঃ এ অবস্থায় নিশ্চিয়তার উপর নির্ভর করবে। যদি সন্দেহ
করে যে, যোহরের সময় মাসেহ করেছে না আছরের সময়। তখন সে আছরের
সময়টাকে প্রথম মাসেহ গণ্য করবে। কেননা মূল হচ্ছে মাসেহ না করা। এই মূলনীতির দলীল
হচ্ছে, ‘কোন বস্ত যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতে থাকাটাই তার
দাবী।’ তার বিপরীত না হওয়াটাই মূল। যখন জনৈক ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) এর নিকট অভিযোগ
করল, স্বলাত অবস্থায় তার যেন কিছু বের হয়ে যাচ্ছে। সে কি
করবে? তিনি বললেন, “স্বলাত ছাড়বে
না যে পর্যন্ত আওয়াজ না শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে।”
প্রশ্নঃ (১৫১) কোন
মানুষ যদি পায়ের লম্বা জুতায় (যা পায়ের টাখনু ঢেকে পরা হয়) মাসেহ করার পর তা খুলে
ফেলে এবং মোজার উপর মাসেহ করে, তবে তার মাসেহ বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে, কেউ যদি পরিহিত দু’টি মোজার কোন একটিতে মাসেহ
করে তবে সেটারই মাসেহ হবে দ্বিতীয়টির মাসেহ হবে না। কেউ কেউ বলেন, যদি নীচের মোজায় মাসেহ করা হয়, তবে সময়সীমা
বাকী থাকলে দ্বিতীয়টিতে মাসেহ করা জায়েয হবে। এটাই বিশুদ্ধ মত। অর্থাৎ- কেউ ওযু
করে মোজার উপর মাসেহ করল, এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মোজা,
বা জুতা পরিধান করল, অতঃপর উপরেরটির উপর
মাসেহ করল, তবে প্রাধান্যযোগ্য মতানুযায়ী সময়সীমা বাকী
থাকলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রথমটির উপর মাসেহ করার পর থেকে সময়সীমা হিসাব
করতে হবে, দ্বিতীয়টির উপর মাসেহের সময় থেকে নয়।
প্রশ্নঃ (১৫২) কোন
মানুষ যদি মোজা খুলে ফেলে, তারপর ওযু বিনষ্ট হওয়ার আগেই তা আবার
পরিধান করে নেয়, তবে তার উপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি না?
উত্তরঃ মোজা খোলার পর ওযু থাকাবস্থায় আবার তা পরিধান করার
দু’টি অবস্থাঃ
প্রথম অবস্থাঃ হয়তো এটা তার
প্রথম ওযু হবে। অর্থাৎ- প্রথমবার ওযু করার পর মোজা পরিধান করেছে কিন্তু সেই ওযু
ভঙ্গ হয়নি, তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই। মোজা খুলে আবার পরিধান করলে
তাতে প্রয়োজনের সময় মাসেহ করতে পারবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ মোজার উপর
একবার মাসেহ করার পর উহা খুলে ফেলেছে, তবে উহা
পুনরায় পরিধান করলে তাতে আবার মাসেহ করা জায়েয হবে না। কেননা মোজার উপর মাসেহ করার
শর্ত হচ্ছে পানি দ্বারা পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করার পর তা পরিধান করা। কিন্তু এই
লোক তো মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করেছে। বিদ্বানদের কথা থেকে এটাই জানা যায়।
কিন্তু কেউ যদি বলে যে, পবিত্র থাকাবস্থায় যদি পুনরায় মোজা পরিধান করে- যদিও মাসেহের মাধ্যমে
পবিত্রতা অর্জন করে থাকে- তবে তো সময় সীমা থাকলে মাসেহ করতে কোন বাধা থাকার কথা
নয়। এটা শক্তিশালী কথা। কিন্তু আমি জানি না কেউ এরকম মত প্রকাশ করেছেন। এ ধরণের
কথা কে বলেছেন এরকম কারো নাম না জানার কারণে আমি এ মত পোষণ করতে চাই না। বিদ্বানদের
মধ্যে কেউ যদি বলে থাকেন, তবে আমার মতে সেটাই বিশুদ্ধ।
কেননা মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন তো পরিপূর্ণ। এখানে কোন ত্রুটি নেই। সুতরাং
ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে যদি মাসেহ করা যায়, তবে
মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করেও তো তাতে মাসেহ জায়েয হওয়া উচিত। কিন্তু এ রকম
মত প্রকাশের পক্ষে আমি কোন আলেমে দ্বীনকে পাইনি।
মাসেহের
সময়-সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর তাতে মাসেহ করা।
প্রশ্নঃ (১৫৩)
মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ যদি তাতে মাসেহ করে স্বলাত আদায়
করে,
তবে তার স্বলাতের বিধান কি?
উত্তরঃ মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর যদি
ওযু ভঙ্গ হয় এবং তাতে মাসেহ করে স্বলাত আদায় করে, তবে পুনরায় পা ধৌতসহ ওযু করতে হবে এবং পুনরায় উক্ত স্বলাত আদায় করতে
হবে। কেননা সে পা ধৌত করেনি, ফলে অপূর্ণ ওযু দ্বারা
স্বলাত আদায় করেছে। কিন্তু যদি মাসেহ করার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর সে পবিত্র
অবস্থাতেই থাকে ওযু ভঙ্গ না হয় এবং স্বলাত আদায় করে, তবে
তার স্বলাত বিশুদ্ধ। কেননা মাসেহ করার সময় সীমা শেষ হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। যদিও
কতিপয় বিদ্বান বলেন, সময় সীমা শেষ হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে
যাবে। কিন্তু এটা বিনা দীললের কথা।
অতএব মাসেহের নির্দিষ্ট সীমা
শেষ হওয়ার পর কেউ যদি পবিত্র অবস্থাতেই থাকে- যদিও পূর্ণ এক দিন্ত তবে সে স্বলাত
পড়ে যাবে। কেননা শরঈ দীলেলের ভিত্তিতে তার পবিত্রতা বা ওযু প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং
তার ওযু ভঙ্গ হয়েছে, দীলল ছাড়া একথা বলা যাবে না।
আর মাসেহের সময়সীমা শেষ হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এমন কথা নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত
নেই। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
উত্তরঃ ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি সে সম্পর্কে
বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু বিনষ্টের কারণ হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা
প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা করবঃ
ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া।
চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা মযী বা অন্য কিছু হোক- বের
হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই।
কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা
যে, তখন গোসল ওয়াজিব হবে। কিন্তু মযী বের হলে অন্ডকোষসহ
পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে।
দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে, তবে
তা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এ
অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলে সাধারণতঃ অনুভব করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে নিদ্রা যাক বা
হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রা যাক। মোট কথা অন্তরের অনুভুতি উপস্থিত
থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন কিছু
বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয়; বরং এ সময়
ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব অনুভুতি থাকাবস্থায় যেহেতু ওযু ভঙ্গ হওয়ার
সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা
যে মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প
নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গ হত, তবে
নিদ্রা অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প হোক বেশী হোক ওযু
ভঙ্গ হবে।
তৃতীয়তঃ উটের মাংস ভক্ষণ করা। উটের গোস্ত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা জাবের বিন সামুরা h হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের মাংস খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন,
যদি চাও তো করতে পার। বলা হল, আমরা উটের
মাংস খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। নবী(ﷺ) যখন ছগালের মাংস
খেয়ে ওযু করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন, তখন বুঝা যায় উটের গোস্ত খেয়ে ওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা
স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে। অতএব উটের গোস্ত কাঁচা হোক বা পাকানো হোক কোন
পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য বর্ণ খেলেই ওযু
ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি, কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা
উটের যে কোন অংশ ভক্ষণ করলে ওযু ভঙ্গ হবে। কেননা রাসূল (ﷺ) এ ক্ষেত্রে কোন
পার্থক্য বর্ণনা করেননি। অথচ তিনি জানতেন মানুষ উটের সব অংশ থেকেই খেয়ে থাকে। উটের
কোন অংশ থেকে অপর অংশের বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকলে নবী (ﷺ) তা অবশ্যই
বর্ণনা করে দিতেন। যাতে করে মানুষ ধর্মের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তাছাড়া
ইসলামী শরীয়তে আমরা এমন কোন প্রাণীর বিধান সম্পর্কে অবগত নই যে, উহার মধ্যে বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদ কোন বিধান আছে। কেননা
প্রাণীকুল কোনটা হয় হালাল আবার কোনটা হয় হারাম। কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে কোনটা
খেলে ওযু আবশ্যক হবে না। কিন্তু একটি প্রাণীর মধ্যে এক অংশের এই বিধান আর অন্য
অংশের এই বিধান, এরকম পার্থক্য ইসলামী শরীয়তে নেই। যদিও
ইহুদীদের শরীয়তে এ রকম পার্থক্য পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহবলেন,
]وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنْ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوْ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ[
“ইহুদীদের জন্য প্রত্যেক
নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগল থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের
জন্য হারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বি, যা পৃষ্ঠে কিম্বা
অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে, (তা
বৈধ ছিল)।” (সূরা আনআম- ১৪৬) এ জন্য বিদ্বানগণ ঐকমত্য
হয়েছেন যে, শুকরের মাংস যেমন হারাম তেমনি শুকরের চর্বিও
হারাম। অথচ আল্লাহতা’আলা শুকরের ব্যাপারে তার মংশ হারাম
হওয়ার কথাই শুধু উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ
]حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ[
“তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে
মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস এবং
গাইরুল্লাহর জন্যে যবেহকৃত প্রাণী।” (সূরা মায়েদা- ৩) আমি
জানিনা শুকরের চর্বি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতভেদ আছে। তাই উটের
মাংস খেলে ওযু ভঙ্গ হবে সেই সাথে উটের চর্বি, নাড়ী-ভুঁড়ি
প্রভৃতি খেলেও ওযু ভঙ্গ হবে।
প্রশ্নঃ (১৫৫)
স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কখনোই ওযু ভঙ্গ হবে না। একথার দলীল হচ্ছে,
নবী (ﷺ) থেকে
বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, তিনি স্ত্রীকে চুম্বন করে
স্বলাত পড়তে বের হয়েছেন কিন্তু ওযু করেন নি। কেননা আসল হচ্ছে দলীল না থাকলে ওযু
ভঙ্গ না হওয়া। কেননা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে তার ওযু প্রমাণিত হয়েছে। আর যা শরঈ
দলীলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শরঈ দলীল ছাড়া নষ্ট
হবে না।
যদি বলা হয়, আল্লাহতো বলেছেন, أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ “অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর।”
উত্তরে বলা হবেঃ আয়াতে
স্ত্রীদের স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। যেমনটি ইবনু
আব্বাস h থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আয়াতের মধ্যে তাহারাত বা পবিত্রতাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ প্রকৃতরূপ ও বদলীরূপ এবং পবিত্রতাকেও দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ ছোট পবিত্রতা ও বড় পবিত্রতা। অনুরূপভাবে ছোট
পবিত্রতার কারণ ও বড় পবিত্রতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ[
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা
স্বলাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত ছোট পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে।
তারপর আল্লাহবলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।”
এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত বড় পবিত্রতা অর্জনের কথা আলোচনা করা
হয়েছে। তারপর আল্লাহআবার বলেন,
]وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا[
“তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে
থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে অথবা তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা তায়াম্মুম কর।”
এখানে (তায়াম্মুম কর) কথাটি পানি দ্বারা প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন
করার বদলীরূপ (পরিবর্তীত পদ্ধতি) আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ‘তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে’ একথা দ্বারা
অপবিত্রতার ছোট একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ‘স্ত্রীদের
স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা অপবিত্রতার বড় একটি কারণ উল্লেখ
করা হয়েছে। এখন যদি ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা সাধারণভাবে হাত দ্বারা স্পর্শ করার অর্থ করা হয়, তবে তো আল্লাহএই আয়াতে অপবিত্রতার দু’টিই ছোট
কারণ উল্লেখ করলেন এবং বড় কারণ উল্লেখ করা ছেড়ে দিলেন। অথচ তিনি এর আগে বলেছেন,
“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা
অর্জন কর।” এটা কুরআনের বালাগাতের বা উচ্চাঙ্গ সাহিত্যের
পরিপন্থী। তাই আয়াতে ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা। তাহলেই তো আয়াতে দু’টি তাহারাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। বড় কারণ এবং ছোট কারণ। ছোট পবিত্রতা
হচ্ছে, শরীরের চারটি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আর বড়
পবিত্রতা সমস্ত শরীরের সাথে সম্পর্কিত। আর বদলী পবিত্রতা তায়াম্মুম শুধুমাত্র দু’টি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত চাই তা বড় পবিত্রতার ক্ষেত্রে হোক বা ছোট
পবিত্রতার ক্ষেত্রে।
এই ভিত্তিতে আমরা বলব, স্ত্রীকে স্পর্শ করা কখনই ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই স্পর্শ উত্তেজনার
সাথে হোক বা উত্তেজনার সাথে না হোক। তবে স্পর্শ করার কারণে যদি কোন কিছু নির্গত হয়
তবে তার বিধান ভিন্ন। যদি বীর্য বের হয়, তবে গোসল করা
ফরদ্ব আর মযী নির্গত হলে অন্ডোকোষসহ লিঙ্গ ধৌত করে ওযু করা আবশ্যক।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite
0 Comments