পবিত্রতা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর ১২১ থেকে ১৪৩

পবিত্রতা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
পবিত্রতা বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
অধ্যায়ঃ পবিত্রতা 
كتاب الطهارة
 প্রশ্নঃ (১২১) অপবিত্রতা ও বাহ্যিক নাপাক বস্ত থেকে পবিত্রতা অর্জন করার প্রকৃত মাধ্যম কি?
উত্তরঃ যে কোন নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। পানি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। চাই উক্ত পানি পরিচ্ছন্ন হোক বা পবিত্র কোন বস্ত তাতে পড়ার কারণে তাতে কোন পরিবর্তন দেখা যাক। কেননা বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, পবিত্র কোন বস্তর কারণে যদি পানির মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়, তবে তাকে পানিই বলা হবে। এর পবিত্র করণের ক্ষমতা বিনষ্ট হবে না। এই পানি নিজে পবিত্র অন্যকেও পবিত্র করতে পারে।
পানি যদি না পাওয়া যায় বা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির আশংকা দেখা যায়, তবে তায়াম্মুমের দিকে অগ্রসর হবে। দুহাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমন্ডল মাসেহ করবে এবং উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে।
আর বাহ্যিক ও প্রকাশ্য নাপাক বস্ত থেকে পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি হচ্ছে, যে কোন প্রকারে উক্ত নাপাক বস্ত অপসারিত করা। চাই তা পানি দ্বারা হোক বা অন্য কোন বস্ত দ্বারা। কেননা বাহ্যিকভাবে দেখা যায় এমন নাপাক বস্তর পবিত্রতার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোন পবিত্র বস্ত দ্বারা তা অপসারিত করা। অতএব পানি বা পেট্রোল বা কোন তরল পদার্থ বা শুস্ক বস্ত দ্বারা যদি পরিপূর্ণরূপে উক্ত নাপাকী অপসারিত করা সম্ভব হয়, তবেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু কুকুরের নাপাকী (মুখ দেয়া উচ্ছিষ্ট পাত্র) পবিত্র করার জন্য অবশ্যই সাতবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং একবার মাটি দ্বারা মাজতে হবে। এ ভাবেই আমরা জানতে পারব প্রত্যক্ষ নাপাক বস্ত থেকে কিভাবে পবিত্র হতে হয় এবং কিভাবে আভ্যন্তরিন নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।

প্রশ্নঃ (১২২) বাহ্যিক অপবিত্র বস্ত পানি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পবিত্র করা যাবে কি? বাস্পের (Dry clean) মাধ্যমে কি কোট ইত্যাদি পবিত্র করা যায়?
উত্তরঃ বাহ্যিক নাপাক বস্ত অপসারিত করা উদ্দিষ্ট ইবাদত নয়। অর্থাৎ ইহা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত নাপাক বস্ত থেকে মুক্ত হওয়া। অতএব যে কোন বস্ত দ্বারা যদি তা অপসারিত করা সম্ভব হয় এবং তার চিহ্ন বিদূরিত করা যায়, তবে উক্ত বস্ত তাকে পবিত্রকারী হবে। চাই তা পানি হোক বা পেট্রোল অথবা যে কোন বস্ত হোক। এমনকি বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সূর্যের তাপ বা বাতাসের মাধ্যমেও যদি উক্ত বস্ত অপসারিত হয়, তবে সে স্থান পবিত্র হয়ে যাবে। একথাটি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)এর পসন্দ। কেননা অপবিত্র বস্তটি প্রত্যক্ষ থাকলেই উক্ত স্থানটি নাপাক থাকবে, যখনই উহা অপসারিত হয়ে যাবে তখনই উক্ত স্থান পবিত্র হবে। অবশ্য নাপাক বস্তটির রং যদি উঠানো সম্ভব না হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি ড্রাই ক্লিনের মাধ্যমে যদি কোট ইত্যাদি সাফ করা হয় এবং তা থেকে বাহ্যিক নাপাকী দূরীভূত হয়ে যায়, তবে তা পবিত্র হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ (১২৩) দীর্ঘকাল কোন স্থানে পানি জমে থাকার কারণে তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ পানির বিধান কি?
উত্তরঃ যদিও এ পানি পরিবর্তন হয়ে থাকে তবুও উহা পবিত্র। কেননা বাইরের কোন নাপাক বস্ত দ্বারা তার পরিবর্তন সৃষ্টি হয়নি। বরং দীর্ঘ সময় থাকার কারণে এই পরিবর্তন এসেছে। এ দ্বারা ওযু বা গোসল করলে তা বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি নিশ্চিত হয় যে, কোন অপবিত্র বস্ত পড়ার কারণে তাতে পরিবর্তন এসেছে তবে তা নাপাক বলে গণ্য হবে।

প্রশ্নঃ (১২৪) পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়ার হেকমত কি?
উত্তরঃ হে প্রশ্নকারী আপনি জেনে রাখুন! এবং যারাই এই প্রশ্নের উত্তর পাঠ করবে তাদেরও জেনে রাখা উচিত যে, প্রত্যেক মুমিনের জন্য ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান সমূহের হেকমত হচ্ছে, আল্লাহর নিম্ন লিখিত এই বাণীটিঃ
]وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ[
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। (সূরা আহযাব- ৩৬) কুরআন ও সুন্নাহ্থেকে প্রমাণিত কোন বিষয় ওয়াজিব বা হারাম সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন উঠালেই আমরা তাকে বলবঃ এটা আপনার স্রষ্টা আল্লাহতাআলার নির্দেশ কিংবা আপনার রাসূল মুহাম্মাদ ()এর নির্দেশ। বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য এটুকু কথাই একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ট। এই কারণে আয়েশা hকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘কি ব্যাপার, ঋতুবতী নারী সওমর কাদ্বা আদায় করবে, অথচ স্বলাতের কাদ্বা আদায় করবে না?’ তিনি জবাবে বললেন,
]كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلَا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلَاةِ[
আমরা ঋতুবতী হতাম, আমাদেরকে সওম কাদ্বা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হত, কিন্তু স্বলাত কাদ্বা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হত না।কুরআন ও সুন্নাহ্র উক্তি পাওয়া গেলে অন্য কোন হেকমত অনুসন্ধান করা উচিত নয়। বিনা দ্বিধায় মুমিন সেটা মেনে নিবে এবং আমাল করবে। কোন প্রশ্ন করবে না। অবশ্য উক্ত নির্দেশের হেতু ও হেকমত অনুসন্ধান করা নিষেধ নয়। কেননা তাতে ১) আন্তরিক প্রশান্তি বৃদ্ধি হয়, ২) বিষয়টির কারণ ও হিকমত জানা থাকলে ইসলামী শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্ব প্রস্ফুটিত হয়। ৩) তাছাড়া বিষয়টির কারণ জানা থাকলে, একই কারণ বিশিষ্ট অন্য কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন উক্তি না পাওয়া গেলে, সেখানে কেয়াস করা সম্ভব হবে। শরীয়তের বিষয়ে হেকমত জানা থাকলে উল্লেখিত তিনটি উপকার পাওয়া যায়।
উল্লেখিত ভূমিকার পর উপরে বর্ণিত প্রশ্নের জবাবে আমরা বলবঃ নবী () থেকে প্রমাণিত হয়েছে, পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম, নারীর জন্য হারাম নয়।
 এর কারণ হচ্ছে, মানুষের সৌন্দর্যের জন্য স্বর্ণ হচ্ছে সর্বাধিক মূল্যবান বস্ত। বস্তটি সৌন্দর্য ও গয়না হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আর পুরুষের এটা দরকার নেই। অর্থাৎ পুরুষ এমন মানুষ নয় যে, তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে। বরং তার পৌরুষত্বের কারণে সে নিজেই পরিপূর্ণ মানুষ। তাছাড়া নিজের দিকে অন্য মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষের সৌন্দর্য অবলম্বন করারও দরকার নেই। কিন্তু নারী এর বিপরীত। নারী অপূর্ণ, তার সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করা দরকার। একারণে সর্বোচ্চ মূল্যে গয়না দিয়ে তাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করার প্রয়োজন দেখা যায়। যাতে করে তার ঐ সৌন্দর্য স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সদ্ভাব সৃষ্টি করে, স্বামীর কাছে স্ত্রী হয়ে উঠে আবেগময়ী ও আকর্ষনীয়। আর একারণেই নারীর জন্য স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা বৈধ করা হয়েছে, পুরুষের জন্য নয়। আল্লাহ তাআলা নারী প্রকৃতির বিবরণ দিতে গিয়ে এরশাদ করেনঃ
]أَوَمَنْ يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ وَهُوَ فِي الْخِصَامِ غَيْرُ مُبِينٍ[
যে অলংকারে মন্ডিত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ?” (তাকে কি তোমরা আল্লাহর সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করবে?) (সূরা যুখরুফঃ ১৮) আর এভাবেই শরীয়তে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়ার হেকমত সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
যে সমস্ত পুরুষ স্বর্ণ ব্যবহারে অভ্যস্ত, এ উপলক্ষ্যে আমি তাদেরকে নসীহত করে বলতে চাইঃ তারা এ কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের নাফারমানী করেছে। নিজেদেরকে নারীদের কাতারে শামিল করেছে। নিজেদের হাতে বা গলায় জাহান্নামের আগুনের আঙ্গার পরিধান করেছে। যেমনটি নবী () থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তাআলার কাছে তওবা করা। তবে শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার বৈধ রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য পদার্থও ব্যবহার করা যাবে। যেমন আংটি বা ঘড়ি ইত্যাদিও ব্যবহারও করা যাবে। তবে কোন ক্রমেই যেন তা অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রশ্নঃ (১২৫) স্বর্ণের দাঁত লাগানোর বিধান কি?
উত্তরঃ একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে পুরুষের জন্য স্বর্ণের দাঁত লাগানো জায়েয নয়। কেননা পুরুষের জন্য স্বর্ণ পরিধাণ করা ও তা গয়না হিসেবে ব্যবহার করা হারাম। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে যদি সচরাচর স্বর্ণের দ্বারা দাঁত বাঁধানো প্রচলিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই, স্বর্ণের দাঁত ব্যবহার করতে পারে। কেননা নবী () বলেনঃ
]أُحِلَّ الذَّهَبُ وَالْحَرِيرُ لِإِنَاثِ أُمَّتِي وَحُرِّمَ عَلَى ذُكُورِهَا[
আমার উম্মতের নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার বৈধ করা হয়েছে। এবং পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে।অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে।
এ অবস্থায় নারী বা একান্ত প্রয়োজনে স্বর্ণের দাঁত ব্যবহারকারী পুরুষ যদি মৃত্যু বরণ করে তবে উক্ত স্বর্ণ খুলে নিতে হবে। কেননা স্বর্ণ একটি সম্পদ। যার অধিকারী হচ্ছে মৃতের উত্তরাধিকারীগণ। স্বর্ণসহ দাফন করে দিলে একটি সম্পদকে নষ্ট করা হল। কিন্তু যদি দাঁত খুলতে গিয়ে তার মাড়ি কাটা বা ভাঙ্গার দরকার পড়ে, তবে সে অবস্থায় স্বর্ণ বের করা যাবে না। কেননা মুসলিম জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থায় সম্মানিত।

প্রশ্নঃ (১২৬) ওযু করার স্থানে প্রস্রাব করার বিধান কি? বিশেষ করে যদি এতে লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তরঃ কোন মানুষের জন্য এমন কারো সামনে নিজের লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করা জায়েয নয় যার জন্য তার লজ্জাস্থান দেখা হালাল নয়। ওযুখানায় প্রস্রাব করার জন্য যদি লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করে, তবে নিঃসন্দেহে মানুষ উহা প্রত্যক্ষ করবে, ফলে সে এতে হবে গুনাহগার। ফিক্বাহবিদগণ উল্লেখ করেছেন, এ অবস্থায় তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে পানি ব্যবহারের পরিবর্তে কুলুখ ব্যবহার করা। মানুষের দৃষ্টির আড়ালে দূরে কোথাও গিয়ে হাজত পূরা করবে এবং পাথর বা ঢিলা বা টিসু প্রভৃতি দ্বারা কুলুখ নিবে। ঐ বস্ত দ্বারা তিনবার লজ্জাস্থান মুছবে। তারা বলেন, কেননা যদি ইস্তেঞ্জা (পানি ব্যবহার) করে তবে মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর এটা হারাম। আর যা না করলে হারাম কাজ থেকে বাঁচা যাবে না তা করা ওয়াজিব।
মোট কথা, কোন ক্রমেই মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ করা জায়েয নয়। বরং সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে এমন স্থানে যাওয়া যা হবে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে।

প্রশ্নঃ (১২৭) দন্ডায়মান অবস্থায় প্রস্রাব করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিম্ন লিখিত দুটি শর্তের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়ঃ
১)          প্রস্রাবের ছিটা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
২)          কেউ যেন তার লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত না করতে পারে।

প্রশ্নঃ (১২৮) কুরআন মাজীদ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, কুরআন মাজিদ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয নয়। কেননা একথা সর্বজন বিদিত যে, পবিত্র কুরআন এমন সম্মান ও মর্যাদাবান বস্ত যা সাথে নিয়ে টয়লেটের মত স্থানে প্রবেশ করা সমিচীন নয়।

প্রশ্নঃ (১২৯) আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?
উত্তরঃ আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ যদি বাইরে প্রকাশিত না থাকে বরং তা পকেটের মধ্যে থাকে বা গোপনে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে, তবে তা সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয। সাধারণত অনেক নাম তো এমন রয়েছে যা আল্লাহর নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন আবদুল্লাহ বা আবদুল আজীজ প্রভৃতি।

প্রশ্নঃ (১৩০) টয়লেটের মধ্যে ওযু করার দরকার হলে সে সময় কিভাবে বিসমিল্লাহ্বলবে?
উত্তরঃ টয়লেটের মধ্যে ওযু করলে মনে মনে বিসমিল্লাহ্বলবে, মুখে উচ্চারণ করে বলবে না। কেননা ওযু ও গোসলে বিসমিল্লাহ্ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি শক্তিশালী নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘ওযুতে বিসমিল্লাহ্বলার ব্যাপারে নবী () থেকে বিশুদ্ধ কোন হাদীছ নেই।এজন্যে মুগনী গ্রন্থের লিখক মুওয়াফ্ফাক বিন কুদামা মত প্রকাশ করেছেন যে, ওযুর সময় বিসমিল্লাহ্বলা ওয়াজিব নয়।

প্রশ্নঃ (১৩১) প্রস্রাব-পায়খানার সময় কিবলা সামনে বা পিছনে রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ এ মাসআলায় বিদ্বানদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়ঃ
একদল বিদ্বান বলেন, বন্ধ ঘর ছাড়া অন্য কোথাও কিবলা সামনে বা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা হারাম। তারা আবু আইয়্যুব আনসারী hএর হাদীছকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নবী () বলেনঃ
]إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا بِبَوْلٍ وَلَا غَائِطٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ[
তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময় কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।আবু আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কাবার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা তা ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম।
এ বিষয়টি ছিল খোলা মাঠে। কিন্তু বন্ধ ঘরের মধ্যে যদি হয়, তবে কিবলা সামনে বা পিছনে রাখাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু ওমার h বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি বলেনঃ
ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ
আমি একদা হাফসার বাড়ীর ছাদে উঠলাম। দেখলাম নবী () শামের দিকে মুখ করে কাবার দিকে পিছন ফিরে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করছেন।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ঘেরা স্থানে হোক বা খোলা স্থানে হোক কোন সময়ই কিবলা সম্মুখে বা পশ্চাতে রাখা যাবে না। তাদের দলীল হচ্ছে পূর্বেল্লিখিত আবু আইয়্যুব আনসারীর হাদীছ। আর ইবনু ওমরের হাদীছ সম্পর্কে তাদের জবাব হচ্ছেঃ
প্রথমতঃ ইবনু ওমারের হাদীছটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের।
দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণযোগ্য।
তৃতীয়তঃ আবু আইয়্যুব বর্ণিত হাদীছ নবী ()এর উক্তি। আর ইবনু ওমারের হাদীছ তাঁর কর্ম। রাসূল ()এর মৌখিক নির্দেশের হাদীছ কর্মের হাদীছের সাথে সংঘর্ষশীল হতে পারে না। কেননা কর্মে বিশেষত্ব ও ভুলের সম্ভাবনা থাকে বা অন্য কোন ওযরেরও সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এ মাসআলায় আমার মতে, প্রাধান্যযোগ্য কথা হচ্ছে,
খোলা ময়দানে ক্বিবলা সামনে বা পিছনে রেখে শৌচকার্য করা হারাম। চার দেয়ালে ঘেরা স্থানে কিবলাকে পিছনে রাখা জায়েয হবে সামনে রাখা জায়েয নয়। কেননা কিবলার সম্মুখবর্তী হওয়ার হাদীছ সংরক্ষিত। এখানে বিশেষত্বের কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পশ্চাতে রাখার নিষেধাজ্ঞাকে নবীজীর কর্ম দ্বারা বিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্মুখে রাখার চাইতে পশ্চাতে রাখার বিষয়টি সহজ, এই কারণে (আল্লাহ ভাল জানেন) ঘেরার মধ্যে থাকলে বিষয়টিকে হালকা করা হয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে কিবলাকে সম্মুখে বা পশ্চাতে না রাখা।

প্রশ্নঃ (১৩২) বায়ু নির্গত হলে কি ইস্তেনজা করা আবশ্যক?
উত্তরঃ পশ্চাদদেশ থেকে বায়ু নির্গত হলে ওযু বিনষ্ট হবে। কেননা নবী () বলেনঃ
لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا
স্বলাত থেকে বের হবে না যে পর্যন্ত বায়ু বের হওয়ার আওয়াজ না শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে।কিন্তু এতে ইস্তেঞ্জা করা ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ- লজ্জাস্থান ধৌত করা আবশ্যক নয়। কেননা এমন কিছু তো বের হয়নি যা ধৌত করার দরকার হবে।
তাই বায়ু নির্গত হলে ওযু নষ্ট হবে। এতে ওযু করে পবিত্র হওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ-কুলি, নাক ঝাড়াসহ মুখমন্ডল ধৌত করবে, কনুইসহ দুহাত ধৌত করবে, কানসহ মাথা মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত দুপা ধৌত করবে।
এখানে একটি মাসআলার ব্যাপারে আমি মানুষকে সতর্ক করতে চাইঃ কিছু লোক স্বলাতের সময় হওয়ার পূর্বে পেশাব-পায়খানা করলে ইস্তেঞ্জা করে। তারপর স্বলাতের সময় উপস্থিত হলে ওযু করার পূর্বে ধারণা করে যে, পুনরায় তাদেরকে ইস্তেঞ্জা করতে হবে- পুনরায় লজ্জাস্থান ধৌত করতে হবে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা কোন কিছু বের হওয়ার পর উক্ত স্থান ধৌত করে নিলেই তো তা পবিত্র হয়ে গেল। আর পবিত্র হয়ে গেলে পুনরায় তা ধৌত করার কোন অর্থ নেই। কেননা ইস্তেঞ্জা ও শর্ত মোতাবেক কুলুখের উদ্দেশ্য হচ্ছে পেশাব-পায়খানা বের হওয়ার স্থানকে পবিত্র করা। একবার পবিত্র হয়ে গেলে নতুন করে কোন কিছু বের না হলে আর তা নাপাক হবে না।

প্রশ্নঃ (১৩৩) কখন মেসওয়াক ব্যবহার করার গুরুত্ব বেশী? খুতবা চলাবস্থায় স্বলাতের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিম্ন লিখিত সময় মেসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে, গৃহে প্রবেশ করে, ওযুতে কুলি করার সময়, স্বলাতে দন্ডায়মান হওয়ার সময়।
স্বলাতের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু খুতবা চলাবস্থায় মেসওয়াক করবে না। কেননা এটা তাকে খুতবা শোনা থেকে ব্যস্ত করবে। কিন্তু তন্দ্রা কাটানোর প্রয়োজনে মেসওয়াক ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই।

প্রশ্নঃ (১৩৪) ওযুর প্রারম্ভে বিসমিল্লাহবলা কি ওয়াজিব?
উত্তরঃ ওযুর প্রারম্ভে বিসমিল্লাহবলা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত। কেননা এক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ বলার ক্ষেত্রে অনেকের আপত্তি রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি।বলার অপেক্ষা রাখে না এবং কারো অজানা নয় যে, ইমাম আহমাদ হাদীছ শাস্ত্রের ইমাম এবং হাফেয। তিনি যদি কোন ক্ষেত্রে বলেন, এ বিষয়ে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্ন থেকে যায়। অতএব যে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্() থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয় তা মানুষের উপর আবশ্যক করা উচিত নয়। এ জন্যে আমি মনে করি ওযুতে বিসমিল্লাহবলা সুন্নাত। কিন্তু কারো নিকট যদি এ ক্ষেত্রে হাদীছ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়, তবে বিসমিল্লাহওয়াজিব বলা তার জন্য আবশ্যক। কেননা হাদীছে বলা হয়েছে: لاَ وَضُوْءَ অর্থাৎ- ওযু বিশুদ্ধ হবে না। ওযু পূর্ণ হবে না এরূপ অর্থ করা ঠিক নয়।

প্রশ্নঃ (১৩৫) পুরুষ ও নারীর খাতনা করার বিধান কি?
উত্তরঃ খাতনার বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। নিকটবর্তী মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব আর নারীর জন্য সুন্নাত। এই পার্থক্যের কারণ হচ্ছে, পুরুষের খাতনার মাঝে একটি ইবাদত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে স্বলাতের পবিত্রতা। যদি খাতনা না করা হয়, তবে পেশাব বের হলে তার কিছু অংশ লিঙ্গের ঢাকনা চামড়ার ভিতরে জমা হয়ে থাকে, যা জ্বলনের কারণ হয় বা সেখানে ক্ষত (infection) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং সর্বনিম্ন অসুবিধা হচ্ছে, যখনই সে নড়াচড়া করবে, তখনই পেশাবের বিন্দু বের হবে এবং তার শরীর ও কাপড় নাপাক করে দিবে।
আর নারীর খাতনা করার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ও উপকারিতা হচ্ছে, তার যৌন উত্তেজনা হ্রাস করা। আর এটা হচ্ছে তার একটি পূর্ণতা। এখানে খারাপ অতিরিক্ত কোন বিষয়কে বিদূরীত করা হচ্ছে না। যেমন পুরুষের বেলায় হয়ে থাকে।
বিদ্বানগণ খাতনার ক্ষেত্রে শর্ত করেছেন, খাতনা করলে যদি অসুস্থতা বা প্রাণনাশের আশংকা থাকে, তবে সে অবস্থায় খাতনা করা ওয়াজিব নয়। কেননা ওয়াজিব বিষয় সমূহ অপারগতা, ধ্বংসের আশংকা ও ক্ষতির কারণে রহিত হয়ে যায়।
পুরুষের খাতনা ওয়াজিব হওয়ার দলীলঃ
প্রথমতঃ এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলাম গ্রহণ করলে নবী () খাতনা করার আদেশ করেছেন। আর নবীজীর নির্দেশ মানেই তা পালন করা ওয়াজিব।
দ্বিতয়তঃ খাতনা হচ্ছে মুসলিম ও খৃষ্টান বা হিন্দুদের মাঝে পার্থক্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট। এমনকি মুসলিমগণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে খাতনার মাধ্যমে নিজেদের নিহত ব্যক্তিদের খুঁজতেন। আর যা বৈশিষ্ট হিসেবে গণ্য তা হচ্ছে ওয়াজিব। কেননা মুসলিম ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য থাকা ওয়াজিব। এই কারণেই নবী () কাফেরদের সাথে সাদৃশাবলম্বন নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেনঃ
] مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ [
যে ব্যক্তি কোন জাতির সদৃশ অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।
তৃতীয়তঃ খাতনা হচ্ছে শরীর থেকে একটি জিনিস কর্তন করা। বিনা কারণে শরীরের কোন অংশ কর্তন করা হারাম। আর ওয়াজিব কারণ ছাড়া হারামকে হালাল করা বৈধ নয়। অতএব খাতনা করা ওয়াজিব।
চতুর্থতঃ খাতনা করলে অভিভাবকের পক্ষ থেকে ইয়াতীমের উপর ও তার সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়। কেননা এতে খাতনাকারীকে পারিশ্রমিক দেয়া আবশ্যক। বিষয়টি ওয়াজিব না হলে তার শরীরে ও সম্পদে হস্তক্ষেপ করা জায়েয হত না।
হাদীছের বাণী ও উল্লেখিত যুক্তি দ্বারা আমরা প্রমাণ করলাম যে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব।
কিন্তু নারীর খাতনা ওয়াজিব বলার ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েছে। যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব সঠিক মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব, নারীর নয়। একটি যঈফ হাদীছ রয়েছে। বলা হয়েছে,
]الْخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ مَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ[
খাতনা পুরুষের জন্য সুন্নাত ও নারীর জন্য সম্মান।হাদীছটি বিশুদ্ধ হলে সকল মতভেদের সমাধান হয়ে যেত।

প্রশ্নঃ (১৩৬) কৃত্রিম দাঁত থাকলে কুলি করার সময় কি উহা খুলে রাখা ওয়াজিব?
উত্তরঃ কারো মুখে যদি দাঁত বাধানো থাকে, তবে ওযুর সময় উহা খুলে রাখা আবশ্যক নয়। উহা হাতের আংটি বা ঘড়ি ব্যবহার করার মত। ওযুর সময় আংটি খোলা আবশ্যক নয়। বরং উত্তম হচ্ছে উহা নাড়িয়ে দেয়া, কিন্তু এই নাড়ানোও ওয়াজিব নয়। কেননা নবী () আংটি পরিধান করতেন কিন্তু এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তিনি ওযুর সময় উহা খুলে রাখতেন। অথচ মুখের মধ্যে বাঁধানো দাঁতের তুলনায় আংটিই পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে বাধার কারণ হতে পারে। তাছাড়া কোন কোন মানুষের দাঁত অনেক কষ্টে বাধাই করতে হয়- যা যখন তখন খোলা ও লাগানো সম্ভব হয় না।

প্রশ্নঃ (১৩৭) কান মাসেহ করার জন্য কি নতুন করে পানি নিতে হবে?
উত্তরঃ কান মাসেহ করার জন্য হাতে নতুন পানি নেয়া আবশ্যক নয়। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মুস্তাহাবও নয়। কেননা নবী () থেকে ওযুর পদ্ধতি বর্ণনাকারী ছাহাবীদের মধ্যে কেউ এমন কথা উল্লেখ করেন নি যে, তিনি কান মাসেহ করার জন্য নতুন করে পানি নিতেন। অতএব মাথা মাসেহ করার পর হাতের অবশিষ্ট ভিজা দিয়েই কান মাসেহ করতে হবে।

প্রশ্নঃ (১৩৮) ওযুতে ধারাবাহিকতার অর্থ কি? ওযুতে মুওয়ালাত বা অবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করার অর্থ কি? এদুটি কথার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযুর মধ্যে ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহযে ধারাবাহিকতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন সেভাবে ওযু করা। আল্লাহ প্রথমে মুখমন্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর দুহাত, তারপর মাথা মাসেহ করা এবং শেষে পা ধৌত করা। কোন মানুষ যদি উল্টাপাল্টা করে যেমন প্রথমে হাত তারপর পা তারপর মুখমন্ডল ধৌত করে তারপর মাথা মাসেহ করে, তবে তার ওযু হবে না। এই কারণে মুখমন্ডল ধৌত করার পূর্বে দুহাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব নয় সুন্নাত। অতএব আল্লাহ যে সিরিয়ালে ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন, তাকেই ধারাবাহিকতা বলে যা বজায় রাখা ওযুর অন্যতম ওয়াজিব। নবী () হজ্জে গিয়ে সাঈ করতে গিয়ে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহণ করে পাঠ করেন,
]إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ[
নিশ্চয় ছাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয় আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত। (সূরা বাক্বারা- ১৫৮) এবং তিনি বলেন, أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ আল্লাহ যেভাবে শুরু করেছেন সেভাবে শুরু করছি।এখানে তিনি বর্ণনা করে দিলেন, কেন তিনি মাওয়াতে যাওয়ার পূর্বে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহন করলেন। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ যার কথা প্রথমে উল্লেখ করেছেন সেখান থেকেই প্রথমে শুরু করা।
আর মুওয়ালাত বা অবিচ্ছিন্নত রক্ষা করার অর্থ হচ্ছে ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে বিরতি গ্রহণের মাধ্যমে একটিকে অন্যটি থেকে পৃথক না করা। এর উদাহরণ হচ্ছে, মুখমন্ডল ধৌত করার পর পরই হাত না ধুয়ে দেরী করা। এ অবস্থায় তার মুওয়ালাত নষ্ট হয়ে গেল, তাই তাকে নতুন করে ওযু আরম্ভ করতে হবে। কেননা নবী () দেখলেন জনৈক ব্যক্তি ওযু করেছে কিন্তু পায়ে তার নখ বরাবর একটি স্থান রয়েছে। তিনি তাকে বললেন, ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ তুমি ফিরে গিয়ে সুন্দরভাবে ওযু করে আস।আবু দাঊদের বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু করার নির্দেশ দিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, ওযুতে অবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করা ওয়াজিব। কেননা ওযু একটি ইবাদত। আর একটি ইবাদতের বিভিন্ন অংশের মাঝে বিচ্ছিন্ন করলে অবিচ্ছিন্নতার উপর ভিত্তি করা চলে না।
অতএব বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা ও অবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করা ওযুর দুটি ফরদ্ব।

প্রশ্নঃ (১৩৯) ওযুর সময় কেউ যদি কোন একটি অঙ্গ ধৌত করতে ভুলে যায়, তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযু করার সময় কেউ যদি একটি অঙ্গ ভুলে যায়, তবে যদি অচিরেই তা মনে পড়ে, তাহলে তা ধৌত করবে এবং তার পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করবে। যেমন কেউ ওযু করল, কিন্তু বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং শুধু ডান হাত ধৌত করে মাথা ও কান মাসেহ্করে ফেলল। দুপা ধৌত করার পর খেয়াল হল তার বাম হাত ধৌত করা হয়নি। তাকে আমরা বলব, আপনি বাম হাত ধৌত করুন, মাথা ও কান মাসেহ্করুন এবং দুপা ধৌত করুন। এই অঙ্গগুলো পুনরায় ধৌত করা এজন্যই ওয়াজিব যে, ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা ওযুর অঙ্গগুলো যেরূপ ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহউল্লেখ করেছেন, সেভাবেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে তা করতে হবে। আল্লাহবলেনঃ
]فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ[
তোমরা মুখমন্ডল ধৌত কর, দুহাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্কর এবং দুপা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় পর স্মরণ হয়, তবে পুনরায় ওযু করবে। যেমন কেউ ওযু করার সময় বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং এভাবেই ওযু শেষ করে ফেলল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্মরণ হল সে তো বাম হাত ধৌত করেনি। তখন তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পুনরায় প্রথম থেকে ওযু করা। কেননা ওযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা আবশ্যক। বরং ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
জেনে রাখা উচিত, যদি সে সন্দেহে থাকে অর্থাৎ- ওযু শেষ হওয়ার পর সন্দেহ হল, সে ডান হাত বা বাম হাত ধৌত করেছে কি না? কুলি করেছে কি না? নাক ঝেড়েছে কি না? তখন এ সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। বরং সামনে অগ্রসর হবে এবং স্বলাত আদায় করবে। কেননা ইবাদত শেষ হওয়ার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার কোন মূল্য নেই। এ ধরণের সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে মানুষের সামনে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসার দরজা উম্মুক্ত করা হয়। তখন প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ইবাদতে সন্দেহ করা শুরু করবে। অতএব আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। অবশ্য সন্দেহ যদি দৃঢ়তায় পরিণত হয়, তবে তার ব্যবস্থা নেয়া ওয়াজিব।
ওযু অবস্থায় পানি বন্ধ হয়ে গেল। তারপর আবার পানি পাওয়া গেল।

প্রশ্নঃ (১৪০) ওযু চলছে এমন সময় পানি বন্ধ হয়ে গেল। পানি যখন ফিরে এল তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শুকিয়ে গেছে। এখন ওযু কি নতুন করে করতে হবে নাকি বাকী অঙ্গ সমূহ ধৌত করলেই চলবে?
উত্তরঃ মাসআলাটির ভিত্তি হচ্ছে, ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা, ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত কি না? এতে বিদ্বানদের মধ্যে দুটি মত পাওয়া যায়।
একটি মত হচ্ছেঃ মুওয়ালাত বা ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ অবিচ্ছিন্নতা ধৌত করা অর্থাৎ- একটি না শুকাতে অপর অঙ্গ ধৌত করা ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। একটি অঙ্গ ধৌত করার পর অপর অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে যদি বিচ্ছিন্নতা হয়ে যায়, তবে ওযু বিশুদ্ধ হবে না। এটাই সঠিক মত। কেননা ওযু পূর্ণাঙ্গ একটি ইবাদত। এর একটি অংশের সাথে অপর অংশের সম্পর্ক থাকা জরূরী। অঙ্গ সমূহ পরস্পর ধৌত করার অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, এক অঙ্গ ধোয়ার পর সাধারণভাবে এতটা সময় বিরতি গ্রহণ না করা যাতে পরের অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে তা শুকিয়ে যায়। কিন্তু এই বিরতি গ্রহণ যদি পবিত্রতা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত হয় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন ওযু শুরু করেছে এমন সময় লক্ষ্য করে কোন এক অঙ্গে পেইন্ট বা এ জাতীয় কোন বস্ত লেগে আছে, তখন তা অপসারণ করতে গিয়ে যদি দীর্ঘ সময়ের দরকার পড়ে এবং আগের অঙ্গ শুস্ক হয়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা নেই, ওযু চালিয়ে যাবে, নতুন করে আবার শুরু করতে হবে না। কেননা এই দীর্ঘতা তো পবিত্রতার কাজের সাথেই সম্পর্কিত। তাছাড়া এখানে তো ওযুর কাজে বিরতি গ্রহণ করা হয়নি।
কিন্তু পানির জন্য যদি বিরতি হয়, যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেন, এ অবস্থায় পরস্পর ধৌত করার শর্ত ক্ষুন্ন হল। অতএব তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু শুরু করতে হবে। আবার কেউ বলেন, নতুন করে ওযু শুরু করার দরকার নেই। কেননা এখানে তো তার কোন এখতিয়ার নেই। সে তো ওযু পূর্ণ করারই অপেক্ষা করছে। তাই পানি আসলে ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে- যদিও ধৌতকৃত অঙ্গ শুকিয়ে যায়।
যে সমস্ত বিদ্বান পরস্পর ধৌত করা ওয়াজিব বলেন, তাদের কথা হচ্ছেঃ অঙ্গ শুস্ক হওয়া না হওয়ার সাথে পরস্পর ধৌত করার সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক হচ্ছে সামাজিক পরিচিতির সাথে। সামাজিকভাবে যদি বলা হয় এখানে ওযুর মাঝে বিচ্ছিন্ন হল বা বিরতি নেয়া হল, তবে তাতে পরস্পরতা নষ্ট হবে। যেমন পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যারা পানির অপেক্ষা করে তারা তো পানি নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত, সাধারণভাবে মানুষ এটাকে ওযুর প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশের মাঝে বিচ্ছিন্নতা বলে না। অতএব তারা পানি পাওয়ার পর ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে। আর এটাই উত্তম কথা। তবে যদি উক্ত বিরতি খুব বেশী দীর্ঘ হয়ে যায়, তবে নতুন করে শুরু করে নেয়াটাই ভাল। কেননা কাজটা খুবই সহজ।

প্রশ্নঃ (১৪১) নখ পালিশ ব্যবহার করে ওযু করার বিধান কি?
উত্তরঃ নখ পালিশ হচ্ছে এক প্রকার রং যা নারীরা তাদের নখে ব্যবহার করে থাকে। এটি গাঢ় হয়ে থাকে। নারী যদি স্বলাতী হয় তবে তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা এটা নখে থাকলে ওযুর পানি নখে পৌঁছবে না। আর কোন বস্তর কারণে যদি পানি পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা ওযু ও গোসলকারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত কর। (সূরা মায়েদা-৬) অতএব নারীর নখে যদি নখ পালিশ থাকে তবে তা তো পানি পৌঁছতে বাধা দিবে। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ওযু বা গোসল করলে তো তার একটি অঙ্গ শুস্কই রয়ে গেল এবং ওযু বা গোসলের একটি ফরদ্ব কাজ পরিত্যাগ করল।
কিন্তু নারী স্বলাতী না হলে, যেমন ঋতুবতী বা নেফাস বিশিষ্ট হলে, সে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ কাজ কাফের নারীদের বৈশিষ্টের অন্তর্গত। তাই উহা ব্যবহার না করাতেই কল্যাণ। কেননা এতে তাদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়।
আমি শুনেছি, কোন কোন মানুষ নাকি ফতোয়া দিয়েছে যে, এটা হাত মোজা পরিধান করার ন্যায়। সুতরাং গৃহে অবস্থান করলে নারী তা একদিন একরাত, আর সফরে থাকলে তিনদিন তিন রাত ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এটি ভুল ফতোয়া ও অজ্ঞতা। মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন প্রত্যেক বস্তকেই মোজার সাথে তুলনা করা উচিত নয়। ইসলামী শরীয়তে যে মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পায়ের মোজার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর তা প্রয়োজনের সময়। কেননা ঠান্ডার কারণে বা ময়লা-আবর্জনা থেকে সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য পায়ে মোজা পরিধাণ করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শরীয়ত মানুষের প্রতি সহজ করে এর উপর মাসেহ করা বৈধ করেছে।
অনেক সময় ওরা নখ পালিশ ব্যবহারকে পাগড়ীর উপর মাসেহ করার সাথে তুলনা করে। এটা আরেক অজ্ঞতা। কেননা পাগড়ীর স্থান হচ্ছে মাথা। আর মাথার ক্ষেত্রে আগে থেকেই সহজ করা রয়েছে। তা ধৌত করতে হবে না। সেখানে মাসেহ করতে হবে। কিন্তু হাত এর বিপরীত। হাতের ফরদ্ব হচ্ছে তা ধৌত করা। এ কারণে নবী () নারীদের হাত মোজাতে মাসেহ করা বৈধ করেননি। অথচ তা হাত ঢেকে রাখে। অতএব পানি পৌঁছতে বাধাদানকারী যে কোন পর্দা হলেই তাকে পাগড়ী বা মোজার সাথে তুলনা করা জায়েয নয়।
প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। এমন কোন ফতোয়া না দেয়া যার জন্য আল্লাহর সামনে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়ত, এখানে অনুমান ও ধারণা করে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। (আল্লাহতাওফীক দাতা ও সঠিক পথ প্রদর্শক।)

প্রশ্নঃ (১৪২) শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি দুভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগ হচ্ছে: ওয়াজিব পদ্ধতি। যা না করলে ওযুই হবে না। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিষয় সমূহ। আল্লাহবলেনঃ
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ[
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা স্বলাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দুটি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দুপা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) এর বর্ণনা হচ্ছে, মুখমন্ডল একবার ধৌত করতে হবে। কুলি করা ও নাক ঝাড়া মুখমন্ডল ধৌত করার অন্তর্গত। হাত ধৌত করার সীমানা হচ্ছে মধ্যমা আঙ্গুলের প্রান্ত সীমা থেকে কনুই পর্যন্ত একবার ধৌত করা। হাত ধৌত করার সময় কব্জি ধৌত করা হল কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক লোক অসতর্কতা বশত: শুধু হাতের উপর অংশ ধৌত করে এবং কব্জি ছেড়ে দেয়। এটা বিরাট ভুল। তারপর একবার মাথা মাসেহ করা। কান মাসেহ করা মাথা মাসেহের অন্তর্গত। শেষে দুপা টাখনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা। এটা হচ্ছে ওযুর সর্বনিম্ন ওয়াজিব পদ্ধতি।
দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছেঃ মুস্তাহাব পদ্ধতি। প্রথমে বিস্মিল্লাহ্বলে ওযু শুরু করবে। দুহাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। তারপর তিন চুল্লু পানি দ্বারা তিনবার কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে। এরপর দুহাত কনুইসহ তিন বার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। একবার মাথা মসেহ করবে। মাথা মাসেহের নিয়ম হচ্ছেঃ দুহাত পানিতে ভিজিয়ে, ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে, অতঃপর আবার তা সামনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর কান মাসেহ করবে। দুতর্জনী দুকানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ্করবে। সব শেষে দুপা টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা। ওযু শেষ হলে এই দুআটি পাঠ করবেঃ
(أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ)
আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্আলনী মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াজ্আলনী মিনাল মুতাতাহ্হেরীন।অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল কর।
যে ব্যক্তি ইহা পাঠ করবে তার জন্য বেহেসে-র আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবেই নবী () থেকে ছহীহ্সনদে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি
সম্মানিত শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রহঃ) বলেনঃ অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে ও স্বলাত আদায় করবে সে ব্যাপারে এটি একটি সংক্ষিপ্ত পত্র। অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থার বিচার করে তার জন্য ইসলামী শরীয়তে কিছু বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা আল্লাহতাআলা নবী মুহাম্মাদ ()কে ক্ষমাশীল সর্বোত্তম সঠিক ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেন, যা হচ্ছে সহজ ও সরলতার বৈশিষ্টে অনন্য। আল্লাহএরশাদ করেনঃ
]وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ[
তিনি তোমাদের জন্য ধর্মে কোন অসুবিধা রাখেননি। (সূরা হাজ্জ- ৭৮) তিনি আরো বলেনঃ
]يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ[
আল্লাহতোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমরা অসুবিধায় পড় তিনি তা চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫) আল্লাহআরো বলেনঃ
]فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا[
তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর কথা শোন ও আনুগত্য কর। (সূরা তাগাবুন্ত ১৬)
নবী () বলেন,إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ নিশ্চয় এই ধর্ম অতি সহজ।
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
আমি যখন কোন বিষয়ে তোমাদেরকে আদেশ করি, তখন সাধ্যানুযায়ী তা বাস্তবায়ন কর।
উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে ওযর বিশিষ্ট লোকদের জন্য আল্লাহ তাআলা ইবাদতকে সহজ ও হালকা করে দিয়েছেন। যাতে করে তারা কোন অসুবিধা ও কষ্ট ছাড়াই তাঁর ইবাদত সম্পাদন করতে পারে। (আল্হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন)
১) অসুস্থ ব্যাক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে প্রবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।

২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারনে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশঙ্কার কারনে বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে, তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।

৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করবে, অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।

৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যাক্তি তাকে ওজু বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।

৫) ওজু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি জখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয়, তবে তাঁর জন্য তায়াম্মুম করে নিবে।

৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারনে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তাঁর উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।

৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধুলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন কয়া থাকে যেমন রঙ বা পেইন্ট, তবে সেখানে তায়াম্মুম জায়েজ হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধুলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।

8) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধুলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।

৯) এক ওয়াক্তের স্বলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক ওয়াক্তের স্বলাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী স্বলাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই। কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভংকারী কোন কারনও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তাঁর জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।

১০) অসুস্থ ব্যাক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল পরকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই স্বলাত আদায় করবে। তাঁর উক্ত স্বলাত বিশুদ্ধ হবে এবং পুনরায় উক্ত স্বলাত আদায় করতে হবে না।

১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে স্বলাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যাক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কিন্তু এরুপ করাও যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই স্বলাত আদায় করবে। উক্ত স্বলাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর স্বলাত আদায় করাও রোগীর জন্য ওয়াজিব। যদি স্বলাতের স্থান নাপাক হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় স্বলাত আদায় করবে এবং তাঁর স্বলাত শুদ্ধ হবে। অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।

১৩) পবিত্রতা হাদিস করতে অপারগতার কারনে কোন রোগীর জন্য স্বলাত পরিত্যাগ করা বা কাজা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যনুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই স্বলাত আদায় করে নিবে- যদিও তখন তাঁর শরীরে বা কাপড়ে বা স্বলাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা আল্লাহতাআলা বলেনঃ فاَتَّقُوا اللهَ ماَ اسْتَطَعْتُمْ AbÑ: তোমরা সাধ্যনুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর। (সুরা তাগাবুন-১৬)

১৪। কোন মানুষ যদি বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে স্বলাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওজু না করে। যখন স্বলাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওজু করে স্বলাত আদায় করবে। এরুপ সে প্রত্যেক ফরজ স্বলাতের সময় করবে। এরুপ করা যদি তাঁর উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দুস্বলাতকে একত্রে পড়া তাঁর জন্য জায়েজ আছে। যোহর এবং আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরজ স্বলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওজুর দরকার নেই। তবে অন্য কোন নফল স্বলাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরজের নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।  
 প্রশ্নঃ (১৪৩) সতর্কতা বশতঃ প্রত্যেকবার ওযু করার সময় সুতার মোজা খোলার বিধান কি?
উত্তরঃ এটা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। এতে ভ্রান্ত মতবাদ শিয়া রাফেযীদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়। কেননা তারা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয মনে করে না। অথচ মুগীরা বিন শোবা h যখন নবী () এর মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি তাকে বললেনঃ
دَعْهُمَا فَإِنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا

খুলতে হবে না। কেননা পবিত্র অবস্থায় আমি ও দুটি পরিধান করেছি।তারপর তার উপর মাসেহ করলেন।

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments