Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কিত

 
জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কিত
প্রশ্নঃ হা-মীম যুক্ত সাতটি সূরা এগুলির পাঠকারীদের জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বক্তব্যটি কোন সত্যতা আছে কি?
🎤 ANSWER  উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছসমূহের কোনটি জাল, কোনটি যঈফ (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/২৪৭৯; যঈফাহ হা/৬১৮৩, ৩৫৩৭, ৩৫৩৮,৭০৮১; যঈফুল জামে‘ হা/২৮০২)।
প্রশ্নঃ মানুষের নেক আমলের ক্ষেত্রে বলা হয় যে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এটি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত? ছহীহ হ’লে সকল ফাঁসির আসামী কি জান্নাতবাসী হবে বলে আশা করা যায়?
🎤 ANSWER  এটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সর্বশেষ কর্মের উপর সকল আমল নির্ভরশীল’ (বুখারী হা/৬৪৯৩; মিশকাত হা/৮৩)। আর ফাঁসির আসামী হ’লেই যে তিনি জান্নাতী হবেন তা বলার কোন সুযোগ নেই। বান্দার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর কৃত তওবা আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন, আর ঐসব লোকদের তওবা কবুল হবে না, যারা মন্দ কর্ম করতেই থাকে, যতক্ষণ না তাদের কারু মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং বলে, আমি এখন তওবা করছি (নিসা ৪/১৮)। তবে যদি সত্যিকারের মুসলিম হন এবং খাঁটি হৃদয়ে তওবা করেন এবং আল্লাহ তা কবুল করেন, তাহ’লে তিনি জান্নাতী হবেন ইনশাআল্লাহ। বনু ইসরাঈলদের জনৈক ব্যক্তি একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন (বুখারী হা/৩৪৭০; মুসলিম হা/২৭৬৬; মিশকাত হা/২৩২৭)।
প্রশ্নঃ প্রতি হাযারে একজন জান্নাতে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।
🎤 ANSWER  হাদীছটির ব্যাখ্যা হাদীছের মধ্যেই রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন হে আদম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হ’তে জাহান্নামীদের বের করে দেন। আদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন।... এ বক্তব্য লোকদের জন্য খুবই কঠিন হ’ল। এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, দেখ ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় থেকে হবে ৯৯৯ জন। আর তোমাদের মধ্য থেকে হবে ১ জন। তারপর বললেন, মানুষের মধ্য হ’তে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে একটি সাদা গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি কালো পশম অথবা একটি কালো গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি সাদা পশমের মত।
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি আশা করি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একথা শুনে ‘আল্লাহ আকবার’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। আমরা আবারো ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের তিন ভাগ হবে। তখন আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম (বুখারী হা/৪৭৪১; মিশকাত হা/৫৫৪১ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ)। সুতরাং জাহান্নামীদের মধ্যে প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায়ের হবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদী জান্নাতের তিন চতুর্থাংশ হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন।
প্রশ্নঃ জান্নাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে বিবি মারিয়াম, মূসার বোন কুলছূম এবং ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়ার বিবাহ হবে। উক্ত কথার সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER  উক্ত মর্মে বর্ণিত কথাটি মিথ্যা (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮১২)।
প্রশ্নঃ   কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, আমি কিছু মানুষকে জান্নাতের জন্য এবং কিছু মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। এক্ষণে মানুষের কিছু করণীয় আছে কি?
🎤 ANSWER  এটি তাক্বদীরের বিষয়। যার জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে তাঁর বিধান মেনে সাধ্যমত সৎকর্ম করে যাওয়া। কারণ কোন মানুষই জানে না তার ভাগ্যে কি লেখা রয়েছে। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূল (ছাঃ) একটা ছড়ি দিয়ে মাটির উপর দাগ কাটছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই, যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লেখা হয়নি। একথা শুনে একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাহলে সকল আমল ত্যাগ করে আমাদের লিখিত ভাগ্যের উপর ভরসা করব না? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা সৎকর্ম করে যাও। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি কুরআন থেকে পাঠ করলেন, ‘অতঃপর যে ব্যক্তি দান করে ও আল্লাহভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে (তাওহীদকে) সত্য বলে বিশ্বাস করে, অচিরেই আমরা তাকে সরল পথের জন্য সহজ করে দেব। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, অচিরেই আমরা তাকে কঠিন পথের জন্য সহজ করে দেব (লায়েল ৯২/৫-৭, বুখারী হা/৪৯৪৯)।
প্রশ্নঃ ঈমানের ছয়টি মৌলিক বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিম কবরপূজা সহ বিভিন্ন প্রকার শিরকী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে অমুসলিমদের মত চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হবে কি?
🎤 ANSWER  কবরপূজা সহ শিরকে আকবর বা বড় শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৫/৭২)। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। তার ছালাত-ছিয়াম ইত্যাদি সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে তোমার সকল আমল অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)।
এক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাথে তাদের পার্থক্যকরণের কোন সুযোগ নেই। কারণ মক্কার কুরায়েশরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও অসীলা পূজার কারণে তাদের কোন আমলই গৃহীত হয়নি। তারা বলত আমরা মূর্তিকে এজন্য পূজা করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দিবে’ (যুমার ৩৯/৩)। তারা বলত যে, এগুলি আল্লাহর নিকটে আমাদের জন্য সুফারিশকারী’ (ইউনুস ১০/১৮)। যারা কবরপূজারী, তারা একই আক্বীদা পোষণ করে যে, মৃত পীর তাদের জন্য সুফারিশ করবে এবং তার অসীলায় তারা মুক্তি পাবে। তবে যদি মৃত্যুর পূর্বে কেউ শিরক থেকে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে, তাহ’লে সে অন্যান্য পাপের শাস্তি ভোগ করে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের মাধ্যমে একসময় জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (বুখারী হা/৭৪১০; মুসলিম হা/১৯১)। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্নঃ মসজিদে নববীতে একাধারে ৪০ ওয়াক্ত ছালাত আদায়কারী জাহান্নামের আগুন ও মুনাফিকের আলামত থেকে মুক্তি পাবে মর্মে কোন বিধান আছে কি?
🎤 ANSWER  এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। এর সনদে নাবীত্ব ইবনু ওমর নামে একজন অপরিচিত রাবী আছেন (আহমাদ হা/১২৬০৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬৪, সনদ যঈফ- আলবানী, আরনাঊত্ব)। অতএব উক্ত আমল অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর চাচা আবু ত্বালেব যে দুশমনদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এর বিনিময়ে কি তিনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন? তার অবস্থা কি হবে?
🎤 ANSWER  জান্নাতবাসী হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা আবু ত্বালেব এর মৃত্যু মুশরিক অবস্থায় হয়েছিল। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর কারণে জাহান্নামীদের মধ্যে তার শাস্তি সর্বাপেক্ষা সহজতর হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি হবে আবু ত্বালেবের। তাঁর দু’পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে’ (বুখারী হা/৬৫৬২, মুসলিম হা/২১২, মিশকাত হা/৫৬৬৮)। তিনি বলেন, যদি আমি না হ’তাম (অর্থাৎ শাফা‘আত না থাকত), তাহ’লে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন। অতঃপর আমি তাকে নিম্নস্তর থেকে টাখনু পর্যন্ত উঠিয়ে আনি’ (মুসলিম হা/২০৯)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৫)।
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জান্নাতে প্রবেশের জন্য সর্বপ্রথম দরজা খুলবেন। এ বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER   উক্ত বক্তব্য সঠিক। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব’ (মুসলিম হা/১৯৬, মিশকাত হা/৫৭৪২)। অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য বলব। তখন দাররক্ষী বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আপনার সম্পর্কে আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি’ (মুসলিম হা/১৯৭, মিশকাত হা/৫৭৪৩)।
প্রশ্নঃ একটি মিথ্যা বললে সাত হাযার বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে’- এ কথার কোন ভিত্তি আছে কি?
🎤 ANSWER   এ মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে মিথ্যা কথা বলা নিঃসন্দেহে কবীরা গুনাহ (হজ্জ ৩০; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০, ‘মুনাফিকের আলামত ও কবীরা গোনাহ সমূহ’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৩১, ৪৮২৪)। আল্লাহ মিথ্যুকের জন্য কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে মিথ্যুকের শাস্তি দেখানো হয়েছে যে, মিথ্যুকের এক চোয়াল থেকে আরেক চোয়াল পর্যন্ত মাথা বাঁকা লোহার অস্ত্র দিয়ে চিরে ফেলা হবে। অতঃপর তা ভাল হয়ে যাবে। আবার চেরা হবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি চলতে থাকবে (বুখারী হা/১৩৮৬; মিশকাত হা/৪৬২১)। অতএব মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক না করলে সে জান্নাতে যাবে, যদিও সে যেনা করে ও চুরি করে। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কি?
🎤 ANSWER  এর ব্যাখ্যা হ’ল, কবীরা গোনাহগার মুমিন কাফির-মুশরিকদের ন্যায় চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। বরং খালেছ তওবার কারণে আল্লাহ তাকে প্রথমেই ক্ষমা করবেন অথবা গুনাহের শাস্তি স্বরূপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর সে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। কারণ শিরকের গোনাহ ব্যতীত সকল গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন(নিসা ৪/৪৮)। আবার বিদ‘আতমুক্ত কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত প্রাপ্ত হয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। কেননা তাঁর শাফা‘আত হবে কবীরা গুনাহগারদের জন্য (আবুদাঊদ হা/৪৭৩৯, তিরমিযী হা/২৪৩৫, ইবনু মাজাহ হা/৪৩১০)। অত্র হাদীছে খারেজী ও মু‘তাযিলাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে। যারা বলেন, কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী, যদি সে তওবা না করে মারা যায় (মির‘আত হা/২৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্নঃ ‘একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গেল এবং আরেক ব্যক্তি জাহান্নামে গেল’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER   হাদীছটি মারফূ‘ হিসাবে যঈফ, তবে মওকূফ হিসাবে ছহীহ। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, সালমান ফারেসী (রাঃ) হ’তে মওকূফ সূত্রে এর সনদ ছহীহ (ইমাম আহমাদ, আয-যুহুদ ১/১৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৩৪৩, ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩০৩৮)। তবে তিনি বলেন যে, আমার মনে হয়েছে এটি ইসরাঈলী বর্ণনা। আলবানী বলেন, সালমান ফারেসী যখন খ্রিষ্টান ছিলেন, তখন তিনি তাদের কোন সরদার থেকে এটি শুনে থাকতে পারেন (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮২৯)।
ঘটনা এই যে, বিগত যুগে দু’জন মুসলমান একটি মূর্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সেখানকার খাদেমরা বলল, তোমরা একটা মাছি হ’লেও এখানে দান করে যাও। প্রথমজন দিল এবং তাকে ছেড়ে দেয়া হ’ল। কিন্তু দ্বিতীয়জন বলল, আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে দান করব না। তখন তাকে তারা হত্যা করল এবং লোকটি জান্নাতী হ’ল’। হাদীছটি সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, প্রথমজন দান করেছে জীবনের ভয়ে। অতএব সে জাহান্নামী হবে না। কেননা আল্লাহ বলেন, ঐ ব্যক্তির উপর শাস্তি নেই যে ব্যক্তিকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে। অথচ তার হৃদয় ঈমানের প্রতি অবিচল...’ (নাহল ১৬/১০৬)।
প্রশ্নঃ আমরা জানি জান্নাত আটটি ও জাহান্নাম সাতটি। বর্তমানে অনেকে বিষয়টি ভুল বলে আখ্যায়িত করছেন। কোনটি সঠিক?
🎤 ANSWER  জান্নাত ৮টি এবং জাহান্নাম ৭টি বলে সমাজে যে কথা প্রচলিত রয়েছে, তার কোন দলীল পাওয়া যায় না। ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী জান্নাতের দরজা আটটি আর জাহান্নামের দরজা সাতটি (আহমাদ, ছহীহাহ হা/১৮১২, বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৭)। এছাড়া জান্নাত ও জাহান্নামের অসংখ্য স্তর রয়েছে। যেমন একটি হাদীছে জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/২৫৩১)। অন্য হাদীছে মুজাহিদদের জন্য ১০০টি স্তরের কথা বলা হয়েছে (বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৮৭)। উল্লেখ্য যে, ‘জান্নাত’ শব্দটিকে পবিত্র কুরআনে বহুবচন ব্যবহার করে মূলতঃ অনেক বাগান বুঝানো হয়েছে (ফাতহুল ক্বাদীর ১/৫৪ পৃঃ)।
প্রশ্নঃ তাবলীগ জামা‘আতের একটি বইতে লেখা আছে, বেহেশতে আয়না নামক একটি হূর থাকবে, যার ৭০ হাযার সেবিকা, ৭০ হাযার পোষাক ও ৭০ হাযার সুগন্ধি থাকবে। এছাড়া তার আরো অনেক বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। এর কোন ভিত্তি আছে কি?
🎤 ANSWER   এ বর্ণনার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম কুরতুবী স্বীয় কিতাবে কোন সনদ ছাড়াই আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে এর কাছাকাছি একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (কুরতুবী, আত-তাযকেরাহ পৃঃ ৯৮৫)। তাছাড়া ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে এরূপ আরেকটি বর্ণনা বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থে এসেছে, যা মওযূ বা জাল (ইবনু খুযায়মা, যঈফ তারগীব হা/৫৯৬)। অতএব এসব বই পড়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিৎ।
প্রশ্নঃ জান্নাতে কৃষি খামার বা পশুপালন ইত্যাদি করা যাবে কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER  জান্নাতবাসীদের সকল ইচ্ছা পূরণ করা হবে। আল্লাহ বলেন, সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা দাবী করবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩১; যুখরুফ ৪৩/৭১, শূরা ২২)। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, একজন জান্নাতী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফরিয়াদ করবে জান্নাতে ক্ষেত-খামার করার জন্য। তখন তিনি একটি বীজ রোপন করবেন সেটা তখনই বড় হয়ে ফসল প্রস্ত্তত হয়ে যাবে (বুখারী হা/৭৫১৯, মিশকাত হা/৫৬৫৩)।
প্রশ্নঃ কোন মহিলা যদি জান্নাতে তার স্বামীর সাথে থাকার ইচ্ছা করে তার জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করা ঠিক হবে কি? নাপাক অবস্থায় দো‘আ-দরূদ সহ কুরআন পাঠ করা যাবে কি?
🎤 ANSWER  নিরাপদ ও ইসলামী জীবন যাপনের জন্য বিধবা মহিলাদের দ্বিতীয় বিবাহ করাই উত্তম। উপরন্তু কেউ জানে না কে জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে। বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল (মুসলিম হা/২৮১৬, মিশকাত হা/২৩৭২)। ‘স্ত্রী তার শেষ স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে’ মর্মে যে হাদীছ (ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, ছহীহাহ হা/১২৮১) বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ এটা নয় যে, দ্বিতীয় স্বামী জান্নাতী না হ’লে স্ত্রী জান্নাতী হবে না। বরং যে স্বামী জান্নাতী হবে, সেই স্বামীর সাথে স্ত্রী জান্নাতে থাকতে পারবে। উভয় স্বামী জান্নাতী হলে স্ত্রী যাকে চাইবে, তার সাথে থাকতে পারবে (হা-মীম সাজদাহ ৩১। আল্লাহ সেদিন বলবেন, তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীগণ জান্নাতে প্রবেশ কর খুশী মনে’ (যুখরুফ ৭০)।
নাপাক অবস্থায় দো‘আ দরূদ সহ স্পর্শ না করে কুরআন পাঠ করতে কোন বাধা নেই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৬)।
প্রশ্নঃ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী না হ’লে সে কি স্থায়ী না অস্থায়ী জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে?
🎤 ANSWER  ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানকে অগ্রাহ্য করলে অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। অনেক বিদ‘আতী আমল ও আক্বীদা আছে যেগুলো বড় শিরক এবং বড় কুফরীর পর্যায়ে পড়ে, ফলে কারো নিকট হক পৌঁছার পরেও সে ধরনের আক্বীদায় বিশ্বাসী হলে তার আমল বরবাদ হবে (মুহাম্মাদ ৩২)। এই ধরনের লোকেরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে (বাক্বারাহ ১৫৯-৬৩)। যেমন আল্লাহ্ নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান, রাসূল (ছাঃ) নূরের নবী, মাটি থেকে সৃষ্টি নন, সৃষ্টি স্রষ্টার অংশ, অলীরা গায়েব জানেন এরূপ বিশ্বাস রাখা ইত্যাদি। তবে আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকলে কবীরা গোনাহগার মুমিন অস্থায়ী জাহান্নামী হবে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত ক্রমে একসময় আল্লাহ্র রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করবে(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৫৯৮; বুখারী, মিশকাত হা/৫৫৮৪)।
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, যে ব্যক্তি লায়লাতুল ক্বদরে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করল, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে। বক্তব্যটির সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER  উক্ত মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না।
প্রশ্নঃ আগুনের সৃষ্টি জ্বিন জাতির দেহ জাহান্নামের আগুনে পুড়বে কি?
 🎤 ANSWER পাপিষ্ঠ জ্বিন অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে (আ‘রাফ ৭/১২-১৮, হিজর ১৫/৩২-৪৪, ছোয়াদ ৩৮/৮৪-৮৫, জিন ৭২/১৪-১৫)। এক্ষেত্রে তারা আগুনের সৃষ্টি বলে আগুনে পুড়বেনা কথাটি ঠিক নয়। যেমন মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি হলেও মাটির ঢেলা দিয়ে আঘাত করলে সে ব্যাথা পায়। তাছাড়া জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৭০ গুণ অধিক দাহিকাশক্তি সম্পন্ন (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৫৬৬৫)।
প্রশ্নঃ স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ না দেয় এবং সম্পর্ক না রাখে, সে ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? আর এ ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর অমতে বাইরে কাজ করে, তবে সে কি জাহান্নামী হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
 🎤 ANSWER স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে, এ কথা ঠিক নয়। কারণ স্বামী শরী‘আত বিরোধী কোন নির্দেশ দিলে স্ত্রী তা মানতে বাধ্য নয় (আহমাদ, মিশকাত হা/৩৬৯৬)।
স্বামীর উপর স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যবস্থা করা ফরয। যদি সে তার দায়িত্ব পালন না করে অবশ্যই সে গুনাহ্গার হবে। এ ক্ষেত্রে জীবিকার তাগিদে যদি স্ত্রীকে বাইরে কাজ করতে হয়, তাহলে শারঈ পর্দা রক্ষা করে সে তা করতে পারবে। তবে কাজ করার পূর্বে বিষয়টি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অবশ্যই সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে শরী‘আতের যাবতীয় বিধান মেনে দায়িত্বহীন স্বামীর অনুমতি ছাড়াই জীবিকার তাকীদে প্রয়োজনমত কাজ করতে পারবে।
প্রশ্নঃ স্বামীর কি কি অধিকার পালন করলে স্ত্রী জান্নাতে যেতে পারবে?
 🎤 ANSWER  ‘অধিকার’ বিষয়টি ব্যাপক। সেকারণ এ বিষয়ে ইসলামী শরী‘আতে মৌলিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যেকোন স্ত্রী (১) নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে (২) রামাযানের ছিয়াম পালন করে (৩) লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং (৪) স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। (আবু নঈম, মিশকাত হা/৩২৫৪, সনদ হাসান)। অন্যত্র তিনি বলেন, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে। ...স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের দায়িত্বশীল’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। তিনি বলেন, উত্তম স্ত্রী সেই, যার দিকে তাকিয়ে স্বামী আনন্দিত হয়। স্বামী কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং স্বামী যা অপসন্দ করেন, স্ত্রী তা করেনা’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২৭২)।
প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ এবং হালাল রুযি ভক্ষণ করে। কিন্তু সে যদি কুরআন-সুন্নাহ্র তাবলীগ না করে বা দ্বীনের দাওয়াত মানুষের মাঝে প্রচার না করে, তা হলে এর জন্য কি তাকে জাহান্নামে যেতে হবে?
 🎤 ANSWER  ইসলামের মূল দর্শন হল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাদান। মানব সমাজে আল্লাহর দ্বীনের বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কুরআন ও হাদীছে মুসলিম উম্মাহ্কে বহু বার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি যদি একটি আয়াতও কেউ জানে, তা প্রচার করার জন্য রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮)। সুতরাং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে কারো পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে ফিৎনার যে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে এবং সঠিক দ্বীন প্রচারকের সংখ্যাও যেহেতু খুবই কম, সে কারণে দ্বীনের দাওয়াত প্রদান করা এখন ‘ফরযে আইন’ হয়ে পড়েছে। সুতরাং কেউ যদি শরঈ ওযর ব্যতীত দৈনন্দিন ব্যস্ততার অজুহাতে বা অলসতাবশতঃ তাবলীগ বা দ্বীনের প্রচার না করে, তাহলে সে নিঃসন্দেহে গোনাহগার হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০, সনদ হাসান)।
প্রশ্নঃ আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নাম-এর ফয়সালা কিভাবে করবেন? মানুষের পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হলেই কি সে জান্নাতে যাবে? নাকি তার পাপের কারণে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করার পর পুণ্যের কারণে জান্নাতে যাবে?
 🎤 ANSWER  যদি কোন পাপী মুসলমান শিরক ও কুফর থেকে বিরত থেকে ঈমানের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (বাক্বারাহ ২১৭, মায়েদা ৭২) এবং বান্দার হক্ব নষ্ট না করে (বুখারী, মিশকাত হা/৫১২৬)। সাথে সাথে সে পাপ থেকে খালেছ নিয়তে তওবা করে, তবে আল্লাহর অনুগ্রহে সে নিষ্পাপ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে (ফুরক্বান ৭০)। আর যদি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তবে সেক্ষেত্রে ৩টি অবস্থা হতে পারে- হয় পাপের পাল্লা হালকা হওয়ার কারণে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সে পাপের শাস্তি ভোগ না করেই জান্নাতে প্রবেশ করবে (আ‘রাফ ৮) অথবা পাপ ও পুণ্য সমান হওয়ার কারণে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে আল্লাহর অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকবে (আ‘রাফ ৪৬-৪৯), নতুবা পাপের পাল্লা পুণ্যের চেয়ে ভারী হওয়ার কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং পাপ অনুযায়ী নির্ধারিত শাস্তি ভোগের পর রাসূল (ছাঃ), অন্যান্য নবী-রাসূল, ফেরেশতা এবং মুমিনগণের সুফারিশে জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭৯)। আর কুরআনের বর্ণনায় সুস্পষ্ট হয় যে, পুণ্যের পাল্লা ভারি হলে মানুষ তার পাপ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে এবং সরাসরি জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করবে (আ‘রাফ ৮, ক্বারি‘আহ ৬-৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দাকে তাঁর নিকটবর্তী করবেন এবং তার কৃত পাপসমূহ তার সামনে পেশ করবেন, যা তিনি দুনিয়াতে গোপন করে রেখেছিলেন। তারপর বলবেন, তুমি কি তোমার অমুক পাপটি চিনতে পারছ? অমুক পাপটি চিনতে পারছ? তখন সে একে একে সব অপরাধ স্বীকার করতে থাকবে এবং ধ্বংস হওয়ার আশংকায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার অপরাধ গোপন রেখেছিলাম, আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫১)।
প্রশ্নঃ জান্নাত ও জাহান্নাম কয়টি। সূরা হিজরের ৪৪নং আয়াতে বর্ণিত জাহান্নামের দরজা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে। ছহীহ প্রমাণের ভিত্তিতে জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER  জান্নাত একটি আর জাহান্নামও একটি। তবে জান্নাত এবং জাহান্নামের অনেকগুলি স্তর রয়েছে। জান্নাত শব্দটি কুরআনে এবং হাদীছে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ঐসব স্তরগুলির দৃষ্টিকোণ থেকে। যেমন বলা হয়েছে, জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে। প্রতি স্তরের মধ্যবর্তী দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের ন্যায়। সর্বোচ্চ হ’ল ফেরদৌস। তার উপরে হ’ল আল্লাহ্র আরশ। যেখান থেকে জান্নাতের নদীসমূহের উৎপত্তি হয়েছে। অতএব যখন তোমরা চাইবে, তখন ফেরদৌস চাইবে’ (বুখারী, ইবনু মাজাহ, হাকেম, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১২১)। সূরা হিজরের উক্ত আয়াতে জাহান্নামের সাত দরজা দ্বারা দরজাই বুঝানো হয়েছে। ছহীহ হাদীছে জান্নাতের আটটি দরজা আর জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা বর্ণিত হয়েছে (ছহীহুল জামে‘ হা/৩১১৯; ছহীহাহ হা/১৮১২)।
প্রশ্নঃ কিছু লোক যুক্তি দেখিয়ে বলে থাকে, মসজিদে যাওয়ার জন্য যেমন অনেকগুলো পথ থাকে, তেমনি বিভিন্ন ইসলামী দলের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া যাবে। উক্ত যুক্তি কি সঠিক?
 🎤 ANSWER  মসজিদে যাতায়াতের জন্য মসজিদ কমিটি বিভিন্ন পথ করে রেখেছে বলেই বিভিন্ন পথ দিয়ে মসজিদে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য জান্নাতের মালিক আল্লাহ তা‘আলা মাত্র একটি পথ খোলা রেখেছেন। উক্ত পথ ছাড়া অন্য কোন পথ দিয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ছাহাবীদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন এটা আল্লাহ্র পথ। অতঃপর তার ডানে ও বামে অনেকগুলো রেখা টেনে বললেন এগুলোও বিভিন্ন পথ। তবে এ সকল পথে শয়তান রয়েছে, সে তার দিকে আহবান করছে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন, ‘নিশ্চয় এটাই আমার সরল পথ। তোমরা এ পথের অনুসরণ করো। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। তাহ’লে ঐ পথগুলো তোমাদেরকে আল্লাহ্র পথ থেকে সরিয়ে নিবে (আন‘আম ১৫৩; মুস্তাদরাক হা/৩২৪১; আহমাদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/১৬৬, সনদ হাসান)।

উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যেকোন ইসলামী দলে থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে, উক্ত দাবী সঠিক নয়। বরং প্রকৃত ইসলামী দল সেটাই, যারা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের তরীকার উপরে চলে এবং সর্বদা রাসূল (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরণ করে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই দল থাকবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৭৬)। তাদের সংখ্যা কম হবে। কিন্তু তাদের জন্যই রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৯)। ঈমানদারগণের কর্তব্য হ’ল এই দলকে খুঁজে নেওয়া ও তাদের সাথে জামা‘আতবদ্ধ থাকা।
প্রশ্নঃ মানুষ যখন জান্নাতে বা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন তার কি দুনিয়ার কথা মনে থাকবে? জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে সৃষ্ট? ক্বিয়ামতের দিন কি তা নষ্ট হয়ে যাবে?
 🎤 ANSWER দুনিয়ার কথা তাদের মনে থাকবে (আ‘রাফ ৩৮; আহযাব ৬৬-৬৮)। জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টাবস্থায় রয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩২২)। ক্বিয়ামতের দিন সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও আল্লাহর চেহারা, জান্নাত ও জাহান্নাম ধ্বংস হবে না (রহমান ২৬-২৭; ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৫/৭৭ পৃঃ; ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ডক্টরেট থিসিস, পৃঃ ১০৭)।
প্রশ্নঃ চোর তওবা করার পূর্বে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে কি?
 🎤 ANSWERচুরি করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কেউ চুরি করার পর তওবা না করে মারা গেলে সে চুরির অপরাধে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। তবে সে যদি আন্তরিক বিশ্বাস নিয়ে কালেমা পড়ে থাকে, তাহ’লে কালেমায়ে শাহাদাতের বরকতে এবং শেষনবী মুহম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতে এক সময় জান্নাতে ফিরে আসবে (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭৩)।
প্রশ্নঃ ছহীহ হাদীছে আছে, যদি কোন সন্তান শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহলে ঐ সন্তান ক্বিয়ামতের দিন পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে(মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৫২)। প্রশ্ন হল, ঐ পিতা-মাতা যদি ছালাত আদায় না করে এবং শিরক-বিদ‘আতের সাথে জড়িত থাকে তাহলে সেই পিতা-মাতার কী হবে?
 🎤 ANSWER  আল্লাহ তা‘আলা অনেক বান্দাকে ক্বিয়ামতের দিন সুফারিশের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন (বুখারী হা/৬৫৬৫)। কিন্তু সে সুফারিশ তাদের জন্য হবে, যারা শিরক থেকে মুক্ত। সুতরাং মুশরিক, বিদ‘আতী, ছালাত আদায় করে না এমন পিতা-মাতার জন্য শিশু সন্তানের সুফারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না (আম্বিয়া ২৮; বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ ৭৪-৭৬ পৃঃ)।
প্রশ্নঃ ডাঃ যাকির নায়েকের লেকচারে শুনেছি, ‘গসপেল অব ম্যাথিউ’ গ্রন্থের ১৯ অধ্যায়ের ১৬ ও ১৭ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, একজন লোক এসে ঈসা (আঃ)-কে বলল, হে মহান শিক্ষক! জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমি কী কী কাজ করব? ঈসা (আঃ) বললেন, তুমি আমাকে মহান বলছ কেন? মহান একজন ছাড়া আর কেউই নন। তিনি হলেন আল্লাহ। প্রশ্ন হ’ল, আমরা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে মহান বলতে পারি কি? এছাড়া অনেকে বলে, মহান নেতা, মহান মে দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি। এগুলো বলা যাবে কি?
 🎤 ANSWER মহান বিশেষণটি সর্বাপেক্ষা বড় বুঝায়। তাই মহান সত্তা হিসাবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তবে বাংলায় এটি উদার ও বড় অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন মহান হৃদয়। সে হিসাবে মহান নেতা বলায় শিরক হবে না। মে দিবস বা স্বাধীনতা দিবসকে মহান বলার কোন যুক্তি নেই। কেননা এগুলি কোন ব্যক্তি বা সত্তা নয়।
প্রশ্নঃ যে সমস্ত পাপী মুমিন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে যাবে তারা কি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে?
🎤 ANSWER  যে ব্যক্তি জান্নাতী হবে সেই আল্লাহর দর্শন লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, যা আমি তোমাদেরকে অতিরিক্ত প্রদান করব? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? আপনি কি আমাদেরকে মুক্তি দেননি? তখন আল্লাহ তা‘আলা পর্দা তুলে ফেলবেন এবং তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৫৬ ‘আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ’ অধ্যায়)।
প্রশ্নঃ কোন্ মহিলা জান্নাতে মহিলাদের সরদার হবেন? ফাতেমা, না মারইয়াম (আঃ)? জান্নাতে কোন্ কোন্ মহিলা সর্বাধিক সম্মানিতা হবেন?
🎤 ANSWER রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে চারজন নারী শ্রেষ্ঠ- মারইয়াম বিনতে ইমরান, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ ও ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া (তিরমিযী হা/৩৮৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৬১৮১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উক্ত চারজন হ’লেন জান্নাতী মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (أفضل نساء أهل الجنة) (আহমাদ হা/২৬৬৮)। অতএব সবাই সমান সম্মানিত। তবে এঁদের মধ্যে সরদার হবেন ফাতেমা (রাঃ) (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬১২৯; আলোচনা দ্রষ্টব্য: তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৮৯৩)।
প্রশ্নঃ মুমিন হওয়া সত্ত্বেও ৭০ হাযার মানুষ জাহান্নামে যাবে। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
 🎤 ANSWER  উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি।
প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি ইসলামের পাঁচটি রুকনকে অস্বীকার করে, সে কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে? তার জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ আছে কি? জাহান্নামে থাকার সময়টা কত বছর হ’তে পারে?
🎤 ANSWER পাঁচটি নয় কোন ব্যক্তি ইসলামের কোন একটি রুকনকে অস্বীকার করলে সে আর মুসলিম থাকে না। আর অমুসলিম ব্যক্তি কাফের এবং সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে। কাফের, মুশরিক বা মুনাফিকদের জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অব্যাহতভাবে তারা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে (তওবাহ ৬৮; তাগাবুন ১০)।
প্রশ্নঃ কোন্ দুই ব্যক্তি রাসুল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়াই জান্নাতে যাবে? তারা দুনিয়াতে কী ধরনের আমল করতেন?
🎤 ANSWER উক্ত মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং দুই শ্রেণীর মানুষ তাঁর শাফা‘আত লাভ করতে সক্ষম হবে না মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অত্যাচারী শাসক এবং খিয়ানতকারী ব্যক্তি (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৯৮)।
প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। প্রশ্ন হ’ল, উম্মত বলতে মুসলিম, অমুসলিম সবাই না শুধু মুসলিম? যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের পরিচয় কি?
🎤 ANSWER হাদীছের বর্ণনামতে, মুসলমানরাই ৭৩ দলে বিভক্ত হবে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ হা/৩৯৯২)। যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ما أنا عليه اليوم وأصحابي ‘আজকের দিনে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে নীতির উপরে আছি, তার অনুসারী দল (হাকেম ১/১২৯)। ইমাম আহমাদ, ইবনুল মাদীনী, ইমাম বুখারী, আব্দুল কাদের জীলানী সকলেই বলেন যে, ঐ দলটির নাম ‘আহলুল হাদীছ’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২৮৩)। এঁদের বাহ্যিক পরিচয় হ’ল, (১) তারা সর্বদা হক-এর উপরে জামা‘আতবদ্ধ থাকবে (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৯২), (২) তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মিটে যাওয়া সুন্নাতগুলো জীবিত করবে (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭০), (৩) তারা নবী (ছাঃ) এবং তাঁর ছাহাবীগণের বৈশিষ্ট্যের উপর অটল থাকবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭১)।
প্রশ্নঃ রামাযান মাসে জান্নাতের দরজা খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়। তাহ’লে এ মাসে কেউ মারা গেলে সে কি জান্নাতে যাবে? সে যদি পাপী ব্যক্তি হয় তবুও কি জান্নাতে যাবে?
🎤 ANSWER মাহে রামাযানের সম্মানার্থে জান্নাতের দরজা খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়। উক্ত হাদীছ সম্পর্কে ক্বাযী ইয়ায বলেন, এর অর্থ হল: যেসব আমলের মাধ্যমে জান্নাত অর্জিত হয় আল্লাহ রামাযান মাসে সেসব আমলের পথ আরো বেশী উন্মুক্ত করে দেন এবং যেসব আমলের দরুণ জাহান্নামে অবধারিত হয়, সেসব আমলের প্রবণতা হ্রাস করে দেন’। সুতরাং জাহান্নাম দরজা বন্ধের অর্থ এই নয় যে, রামাযান মাসে কোন পাপী ব্যক্তি মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এ কথা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয় (মুসলিম হা/২৪৯২ ‘নববী’ পৃঃ ১৮৭)।
প্রশ্নঃ জাহান্নাম ভর্তি হবে না বলে আল্লাহ তার মধ্যে পা ঢুকিয়ে দিবেন। কিন্তু জান্নাত পূর্ণ হবে, না ফাঁকা থাকবে?
🎤 ANSWER জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর জান্নাত ফাঁকা থাকবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এক ধরনের সৃষ্টি দিয়ে জা
প্রশ্নঃ শুক্রবারে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং সেদিন কেউ মারা গেলে বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যায়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER উক্ত মর্মে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না। তবে কোন মুসলিম ব্যক্তি শুক্রবারে মারা গেলে সে কবরের ফিৎনা হ’তে বেঁচে যাবে মর্মে ছহীহ দলীল রয়েছে(আহমাদ, তিরমিযী হা/১০৯৫, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৩৬৭, ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ)। এখানে ‘ফিৎনা’ বলতে সওয়াল-জওয়াব ও কবরের আযাব বুঝানো হয়েছে। এটি ব্যতিক্রম বা খাছ বিষয়। এর মধ্যে যুক্তির কোন সুযোগ নেই। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্থান ও কালের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। (দ্রঃ মির‘আত ৪/৪৪০-৪১)।
প্রশ্নঃ জান্নাতের নীচে যে নহরসমূহ প্রবাহিত রয়েছে, সেসব কিসের?
🎤 ANSWER জান্নাতের নে‘মতসমূহের মধ্যে নহর অন্যতম। এ নদীগুলো কিসের হবে তা পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে, ‘মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হ’ল, সেখানে থাকবে নির্মল পানির নহরসমূহ, থাকবে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ হবে অপরিবর্তনীয় এবং পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ’ (মুহাম্মাদ ১৫)।
উক্ত নহরসমূহ প্রবাহিত হবে জান্নাতের তলদেশ দিয়ে (রা‘দ ৩৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জান্নাতে পরিভ্রমণরত ছিলাম এমতাবস্থায় এক নহরের নিকট পৌঁছলাম যার দু’পার্শ্বদেশ অগণিত তারকা সদৃশ বৃত্তাকার মুক্তায় মোড়ানো। আমি জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি? তিনি বললেন, এটাই হ’ল ‘কাওছার’ যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন। এই বলে জিবরীল তাতে আঘাত করলে আমি দেখলাম তার মাটি হ’ল মিসকে আযফার অর্থাৎ খুবই উচ্চমানের সুগন্ধিময় (বুখারী হা/৪৯৬৪; আহমাদ হা/১৩১৭৯)।
প্রশ্নঃ শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করলে কবর আযাব মাফ হয় কি? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিনে অথবা জুম‘আর রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হতে রক্ষা করেন’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬৭)। ইমাম সুয়ূত্বী বলেন, কেননা জুম‘আর দিন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় না। এর দরজা বন্ধ থাকে। জাহান্নামের দারোগার এদিন অন্য দিনের ন্যায় কাজ থাকে না। এ দিন আল্লাহ যদি কোন বান্দার মৃত্যু ঘটান, তাহ’লে ঐ বান্দা ঐ সুযোগ লাভে ধন্য হয় (মির‘আত ৪/৪৪১ পৃঃ)। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, মুশরিক ও মুনাফিকরা স্থায়ীভাবে কবর আযাব হ’তে মুক্তি পাবে।
প্রশ্নঃ পাথর নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তা জাহান্নামের ইন্ধন হবে কেন?
🎤 ANSWER মহান আল্লাহ যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে কাজে তাকে ব্যবহার করা তার জন্য শাস্তির বিষয় নয়। এছাড়া পাথরের উপরে শরী‘আতের কোন বিধান আরোপিত হয়নি যে, তার কুফরী বা অবাধ্যতার কারণে শাস্তি স্বরূপ তাকে জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হবে। কুরআনে ‘হিজারাহ’ বলে গন্ধকের এক প্রকার বিশেষ পাথরকে বুঝানো হয়েছে। যার রং অতি কালো, আকারে বৃহৎ এবং দুর্গন্ধময়। যার আগুনে তেজ অত্যধিক। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার সময় এ পাথরগুলি প্রথম আকাশে সৃষ্টি করা হয় (মুসনাদ ইবনে আবী হাতেম, হাকেম)। সুদ্দী (রহঃ) কয়েকজন ছাহাবী সূত্রে বলেন, জাহান্নামের মধ্যে এ কালো পাথরও থাকবে, যার কঠিন আগুন দ্বারা কাফেরদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। কারো মতে, জাহান্নামের ইন্ধন হবে মানুষ ও তাদের তৈরী পাথরের মূর্তিগুলি। যেসব মূর্তিকে তারা মা‘বূদ হিসাবে উপাসনা করত। যাতে তারা অবগত হয় যে, আল্লাহ দাবী করার ও উপাস্য হবার ব্যাপারে এদের অধিকার কতটুকু (ইবনে কাছীর ১/৫৯ পৃঃ)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যাদের পূজা কর সেগুলি জাহান্নামের ইন্ধন মাত্র’ (বাক্বারাহ ২৪)।
প্রশ্নঃ যাদের নেকী ও গুনাহ সমান হবে তারা জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে?
🎤 ANSWER তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি উঁচু জায়গায় অবস্থান করবে। তারাই হবে আ‘রাফবাসী (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২২৫ পৃঃ, সূরা আ‘রাফ ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতের আলোচনা দ্রঃ)।
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, ছয় শ্রেণীর লোক বিনা হিসাবে জাহান্নামী হবে। উক্ত ছয় শ্রেণীর লোক কারা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER ইমাম গাযালীর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে উক্ত বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু বর্ণনাটি যঈফ এবং রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত নয়’ (তাফসীর রাযী, তাফসীর নিযামুদ্দীন নাইসাপুরী, বাক্বারাহ ১০৯)। উক্ত ছয় প্রকার লোক হ’ল, অত্যাচারী শাসক, জাত্যাভিমানী আরব, অহংকারী নেতা, খিয়ানাতকারী ব্যবসায়ী, মূর্খ বস্তিবাসী, হিংসুক আলেম (ইবনুল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ হা/১৫৬৫; ফেরদৌস দায়লামী হা/৩৩০৯)।
প্রশ্নঃ বাল্য অবস্থায় যারা মারা যায় তারা জান্নাতে যাবে, না জাহান্নামে যাবে?
🎤 ANSWERশিশু অবস্থায় যারা মারা যায় তারা জান্নাতে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জান্নাত দেখার সময় অনেক ছেলেমেয়েকে ইবরাহীম (আঃ)-এর সামনে দেখলেন, যারা জনগণের সন্তান (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬২১)। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, জিবরীল (আঃ) বললেন, যারা তাওহীদের উপর মারা গেছে তারাই ইবরাহীম (আঃ)-এর সামনে আছে। তখন ছাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মুশরিকদের সন্তানেরাও? তিনি উত্তরে বললেন, মুশরিকদের ছেলেরাও (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬২৫ ‘স্বপ্ন’ অধ্যায়)। অন্য এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুশরিকের ছেলেরা জান্নাতের খাদেম হবে (ত্বাবারাণী আওসাত্ব, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৬৮)।
প্রশ্নঃ জান্নাত ও জাহান্নাম কয়টি ও কি কি? নাম সহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWERজান্নাত একটি। এর দরজা ৮টি (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯৫৭)। যেমন রাইয়ান, আদন, জান্নাতুল ফেরদাউস ইত্যাদি। জাহান্নাম এক
প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (ছা:) মি‘রাজ রজনীতে আসমানে গিয়ে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। তাহ’লে কি জাহান্নাম আসমানে? অনেকে বলেন, সাত সমুদ্র সাতটি জাহান্নাম। অনেকে বলেন, সপ্তম যমীনের নীচে জাহান্নাম অবস্থিত। কোনটি সঠিক?
 🎤 ANSWERজান্নাত ও জাহান্নাম সপ্তম আসমানের উপরে সৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আদম ও হাওয়াকে জান্নাত থেকে বের করে দুনিয়াতে নামিয়ে দেন’ (বাক্বারাহ ২/৩৬)। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জান্নাত আসমানের উপরে অবস্থিত। এছাড়া একাধিক ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছা:) মে‘রাজের সময়ে স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নামকে সপ্তম আসমানের উপরে সৃষ্ট অবস্থায় দেখেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬ ‘মে’রাজ’ অধ্যায়)।
প্রশ্নঃ জাহান্নামের কাজ-কর্মে ১৯ জন ফেরেশতা রয়েছেন। তাদের ৭০ হাযার ডান হাত ও ৭০ হাযার বাম হাত রয়েছে। প্রত্যেক হাতে ৭০ হাযার তালু আছে, প্রত্যেক তালুতে ৭০ হাযার আঙ্গুল আছে। প্রত্যেক আঙ্গুলের মাঝে ৭০ হাযার অজগর সাপ আছে। প্রত্যেক সাপের মুখে একটি করে দেশী সাপ আছে। আর দেশী সাপের দৈর্ঘ্য ৫০০ বছরের রাস্তা। প্রত্যেক সাপের মুখে ১টি করে বিচ্ছু আছে। ঐ বিচ্ছু একবার কামড় দিলে ৭০ বছর জ্ঞান থাকবে না। এ হাদীছটি কি ছহীহ?
🎤 ANSWER এটি কোন হাদীছ নয়
জাহান্নাম অ্যান্ড জান্নাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর সকল /jannat and jahannam article..

Post a Comment

0 Comments