স্বলাত বিষয়ক মাসলা-
মাসায়েল
সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ (২০৬) অজ্ঞতা বশতঃ সময় হওয়ার আগেই স্বলাত আদায়
করে নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ সময় হওয়ার আগে স্বলাত আদায় করলে তা বিশুদ্ধ হবে
না। কেননা আল্লাহবলেনঃ
]إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا[
“নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে স্বলাত আদায় করা
মু’মিনদের উপর ফরদ্ব করে দেয়া হয়েছে।” (সূরা নিসাঃ ১০৩) তাছাড়া
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) প্রত্যেক স্বলাতের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ “যোহরের সময় শুরু হবে- সূর্য যখন
পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়বে...।” এভাবে প্রত্যেক স্বলাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অতএব
যে ব্যক্তি সময় হওয়ার আগেই স্বলাত আদায় করে নিবে তা ফরদ্ব হিসেবে আদায় হবে
না। তবে তা নফল হয়ে যাবে। তাকে নফলের ছাওয়াব দেয়া হবে। অতএব সময় হওয়ার পর ঐ স্বলাত
তাকে পুনরায় পড়তে হবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
ক্বাযা
স্বলাতের তারতীব বা ধারাবাহিকতা।
প্রশ্নঃ (২০৭) ভুল এবং অজ্ঞতার কারণে ক্বাযা স্বলাত
সমূহের তারতীব বা ধারাবাহিকতা কি রহিত হয়ে যাবে?
উত্তরঃ মাসআলাটি মতভেদপূর্ণ। বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহতা‘আলা বলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি
ভুলে যাই বা ভুল করি, তবে আমাদেরকে পাকড়াও করিও না।” (সূরা
বাক্বারা- ২৮৬) নবী (ﷺ) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
“নিশ্চয় আল্লাহতা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন আমার উম্মতের
ভুলে যাওয়া ও ভুল ক্রমে করে ফেলা বিষয়ের পাপ এবং যে বিষয়ে তাকে জোর-জবরদসি- করা
হয়।”
প্রশ্নঃ (২০৮) এশা স্বলাতের জন্য মসজিদে প্রবেশ
করে মনে পড়ল, মাগরিব স্বলাত বাকী আছে, এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে যে, এশার স্বলাত দাঁড়িয়ে পড়েছে। তারপর মনে পড়ল যে, মাগরিব স্বলাত আদায় করে নি। তখন মাগরিব স্বলাতের নিয়ত করে এশার জামাআতে
শরীক হয়ে যাবে। ইমাম তৃতীয় রাকাআত শেষে চতুর্থ রাকাআতের জন্য দন্ডায়মান হলে- বসে
পড়বে এবং পূর্ণ তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে ইমামের অপেক্ষা করবে। তারপর ইমামের
সাথে সালাম ফিরাবে। অবশ্য একাকী সালাম ফিরিয়ে ইমামের অবশিষ্ট স্বলাতে এশার নিয়তে
শামিল হলেও কোন অসুবিধা নেই।
ইমামের সাথে নিয়তের ভিন্নতা হলে কোন অসুবিধা নেই।
বিদ্বানদের মধ্যে এব্যাপারে মতভেদ থাকলেও এটিই বিশুদ্ধ মত।
আর যদি একাকী মাগরিব স্বলাত আদায় করার পর এশার
জামাতে শামিল হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
একাধিক স্বলাত
ছুটে গেলে কাদ্বা আদায় করার নিয়ম কি?
প্রশ্নঃ (২০৯) নিদ্রা বা ভুলে যাওয়ার কারণে যদি আমার এক
বা ততোধিক ফরদ্ব স্বলাত ছুটে যায়, তবে তা কাদ্বা আদায় করার নিয়ম
কি? প্রথমে কি বর্তমান সময়ের স্বলাত আদায় করব তারপর
কাদ্বা স্বলাত আদায় করব? নাকি আগে কাদ্বা স্বলাত সমূহ
তারপর বর্তমান স্বলাত আদায় করব?
উত্তরঃ ছুটে যাওয়া কাদ্বা স্বলাত সমূহ প্রথমে আদায় করবে।
তারপর বর্তমান সময়ের স্বলাত আদায় করবে। দেরী করা ঠিক হবে না। মানুষের মধ্যে একটি
ধারণা প্রচলিত আছে যে, কারো যদি একাধিক ফরদ্ব স্বলাত
ছুটে গিয়ে থাকে, তবে ঐ স্বলাতের সময় উপস্থিত হলে তার কাদ্বা
আদায় করবে। যেমন, আজ কারো ফজর স্বলাত ছুটে গেছে। সে উক্ত
স্বলাত পরবর্তী দিন ফজরের সময়ে কাদ্বা আদায় করবে। এটা মারাত্মক ভুল এবং নবী (ﷺ)এর বাণী ও কর্মের বিরোধী।
নবী (ﷺ) এর বাণীঃ
مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا
“যে ব্যক্তি স্বলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায়, সে যেন ইহা আদায় করে যখনই স্মরণ হবে।” এখানে এরূপ বলা হয়নি, দ্বিতীয় দিন উহা আদায় করে নিবে।
খন্দক যুদ্ধের সময় নবী (ﷺ)এর কয়েকটি স্বলাত ছুটে যায়। তখন তিনি বর্তমান
সময়ের স্বলাতের আগেই উক্ত স্বলাতগুলোর কাদ্বা আদায় করেন।
অতএব ছুটে যাওয়া স্বলাতের ক্বাযা প্রথমে আদায় করবে
তারপর বর্তমান সময়ের স্বলাত আদায় করবে। কিন্তু যদি ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ ক্বাযা
স্বলাতের আগে বর্তমান সময়ের স্বলাত আদায় করে ফেলে তবে তা বিশুদ্ধ হবে। কেননা এটা
তার ওযর।
উল্লেখ্য যে, ক্বাযা
স্বলাত সমূহ তিন ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ দেরী করার ওযর দূর হয়ে গেলেই ক্বাযা আদায় করে
নিবে। তা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাতের ক্ষেত্রে। অনুরূপভাবে বিতর ও সুন্নাত স্বলাত
সমূহ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ যার পরিবর্তে অন্য স্বলাত ক্বাযা হিসেবে আদায়
করবে। তা হচ্ছে, জুমআর স্বলাত। এ স্বলাত ছুটে
গেলে তার পরিবর্তে যোহর স্বলাত আদায় করবে। কেউ যদি জুমআর দিন ইমামের দ্বিতীয়
রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর স্বলাতে শামিল হয়, তবে
সে যোহর স্বলাত আদায় করবে। ঐ অবস্থায় যোহরের নিয়ত করে ইমামের সাথে স্বলাতে শামিল
হবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ইমামের সালামের পর আসে তবে সেও যোহর পড়বে।
তবে কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাআতে ইমামের সাথে রুকূ পায়, তবে সে জুমআর স্বলাতই আদায় করবে। অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরালে এক রাকাআত
আদায় করবে। অনেক লোক ইমামের দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর জুমআর
স্বলাতে শামিল হয়। অতঃপর সালাম শেষে জুমআর স্বলাত হিসেবে দু‘রাকাআত স্বলাত আদায়
করে। এটা ভুল। বরং তার জন্য উচিত হচ্ছে ইমামের সালাম ফেরানোর পর যোহর হিসেবে চার
রাকাআত স্বলাত আদায় করা। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاةَ
“যে ব্যক্তি স্বলাতের এক রাকআত পেয়ে গেল, সে পূর্ণ স্বলাত পেয়ে গেল।” এদ্বারা বুঝা যায় কেউ যদি এর কম পায় সে স্বলাত পেল না।
তখন জুমআর কাদ্বা আদায় করবে যোহর স্বলাত আদায় করার মাধ্যমে। এই কারণে নারীরা
বাড়িতে, মসজিদে আসতে অপারগ অসুস্থ ব্যক্তিরা যোহর স্বলাত আদায়
করবে। তারা জুমআ আদায় করবে না। তারা যদি জুমআ আদায়ও করে, তাদের
স্বলাত প্রত্যাখ্যাত হবে- বাতিল বলে গণ্য হবে।
তৃতীয় প্রকারঃ এমন স্বলাত যা ছুটে যাওয়া সময়েই
কাদ্বা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে ঈদের স্বলাত। ঈদের দিন সম্পর্কে জানা গেল না।
কিন্তু সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়া পর জানা গেল যে আজকে ঈদের দিন ছিল। এক্ষেত্রে
বিদ্বানগণ বলেন, পরবর্তী দিন সকাল বেলা উক্ত
ঈদের স্বলাতের কাদ্বা আদায় করতে হবে। কেননা ঈদের স্বলাত আদায় করার সময় হচ্ছে সকাল
বেলা।
অধিক পাতলা
পোশাকে স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
প্রশ্নঃ (২১০) কোন কোন লোক এমন পাতলা পোশাকে স্বলাত আদায়
করে যে,
বাইরে থেকে তার শরীরের রং বুঝা যায়। নীচে রানের আধা-আধি পর্যন্ত
ছোট পায়জামা বা জাঙ্গিয়া পরিধান করে। পাতলা কাপড়ের কারণে রানের বাকী অর্ধেক অংশ
স্পষ্টই দেখা যায়। এদের স্বলাতের বিধান কি?
উত্তরঃ এদের স্বলাতের বিধান ঐ লোকদের স্বলাতের মত যারা
বিনা কাপড়ে শুধু খাট পায়জামা বা জাঙ্গিয়া পরিধান করে স্বলাত পড়ে। কেননা এমন পাতলা
পোশাক যা দ্বারা শরীরের সুষ্পষ্ট বিবরণ বুঝা যায়, সতরের স্থান সমূহ ঢেকে রাখে না তা পরিধান করা না করা উভয়ই সমান। তাই
তাদের স্বলাতও বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে উলামাদের দু’টি মত পাওয়া যায়। কিন্তু সঠিক
মতটি হচ্ছে, তাদের স্বলাতও বিশুদ্ধ হবে না। ইমাম আহমাদ
(রঃ)এর মাযহাবেও এ মতটি ব্যাপক প্রসিদ্ধ। কেননা স্বলাতে পুরুষের জন্য সর্ব নিম্ন
সতর হচ্ছে- নাভীমূল থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। এর মাধ্যমে আল্লাহর বাণীর
বাস্তবায়ন হয়। আল্লাহবলেনঃ
يَابَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
“হে আদম সন্তান! প্রত্যেক স্বলাতের সময় তোমরা সৌন্দর্য
গ্রহণ কর।” (সূরা আ’রাফঃ ৩১) অর্থাৎ পোশাক পরিধান কর। সুতরাং আবশ্যক হচ্ছে,
তারা এমন পোশাক পরিধান করবে যা দ্বারা নাভীমূল থেকে হাঁটু
পর্যন্ত ঢাকা যায়। অথবা ছোট পায়জামা বা জাঙ্গিয়ার উপরে এমন ধরণের মোটা কাপড় পরিধান
করবে, যাতে বাইরে থেকে শরীরের রং বুঝা না যায়।
প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি বিরাট ভুল ও ভয়ানক। এদের
উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তওবা করা।
স্বলাতে এমন পোশাক পরিধান করার চেষ্ট করা- যা আবশ্যক সতর ঢেকে রাখে। আল্লাহতা‘আলার
কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে ও মুসলিম ভাইদেরকে
সঠিক পথে পরিচালিত করুন। তাঁর পছন্দনীয় ও রেজামন্দীর পথে চলার তাওফীক দিন। নিশ্চয়
তিনি দানশীল ও সম্মানিত।
সামনে, পিছনে ও উভয় পার্শ্বে খোলা থাকে এমন পোশাক পরে নারীর
স্বলাত হবে কি?
প্রশ্নঃ (২১১) অনেক মহিলা পোশাক পরিধান করে। যার সামনে, পিছনে ও উভয় পার্শ্বে খোলা থাকে। ফলে পায়ের অনেকাংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়।
এদের কথা হচ্ছে, আমরা তো শুধু নারীদের সামনেই এরূপ পোশাক
পরিধান করি? এদের এই পোশাকের বিধান কি?
উত্তরঃ আমি যা সঠিক মনে করি তা হচ্ছে নারী এমন পোশাক
পরিধান করবে, যা তার শরীরের সর্বাঙ্গ ঢেকে
রাখবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) উল্লেখ করেছেন, নবী (ﷺ)এর যুগে নারীরা এমন ধরণের কামিছ পরিধান করতেন যা
পায়ের টাখনুদ্বয় এবং হাতের কব্জিদ্বয় পর্যন্ত প্রলম্বিত হত। অতএব নারীর উপর আবশ্যক
হচ্ছে নিজ সম্ভ্রমের প্রতি যত্নবান হওয়া। এমন পোশাক পরিধান করা যা তার শরীরকে
সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দিবে। যাতে করে সে নিম্ন লিখিত এই হাদীছের আওতাভুক্ত না হয়। নবী (ﷺ) বলেনঃ
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاتٌ مَائِلاتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلا يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
“দু’ধরণের জাহান্নামী লোক। এদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল,
যাদের হাতে গরুর লেজের ন্যায় লাঠি থাকবে। লোকদেরকে তারা প্রহার
করবে। দ্বিতীয় দল, এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করা সত্বেও
যেন উলঙ্গ থাকে। তারা লোকদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে, অহংকারের
সাথে হেলে-দুলে চলে। তাদের মাথাগুলো যেন হেলে যাওয়া উটের চুঁড়ার মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার সুঘ্রাণও পাবে না। নিশ্চয় জান্নাতের
সুঘ্রাণ এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়।”
প্রশ্নঃ (২১২) নিক্বাব ও হাত মোজা পরিধান করে কি
নারীর স্বলাত আদায় করা বৈধ?
উত্তরঃ নারী যদি নিজ গৃহে অথবা এমন স্থানে স্বলাত আদায়
করে, যেখানে পরপুরুষ আগমণ করবে না। তবে তার জন্য শরীয়ত সম্মত
হচ্ছে, মুখমন্ডল ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয় খোলা রাখা।
যাতে করে সিজদার সময় কপাল ও নাক এবং উভয় হাত মাটিতে রাখতে সক্ষম হয়।
কিন্তু সে যদি এমন স্থানে স্বলাত পড়ে যেখানে
বেগানা পরুষের আনাগোনা রয়েছে, তবে অবশ্যই মুখমন্ডল ঢেকে
রাখবে। কেননা গাইর মাহরাম (যার সাথে বিবাহ সিদ্ধ এমন পর পুরুষের) সামনে মুখমন্ডল
ঢেকে রাখা ওয়াজিব। তাদের সামনে মুখ খোলা জায়েয নয়। একথার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন
ও সুন্নাহ্এবং সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি। যা থেকে কোন মুমিন তো দূরে থাক সাধারণ বিবেকবানও
ভিন্নমত পোষণ করতে পারে না।
হাত মোজা পরিধান করা শরীয়ত সম্মত। মহিলা ছাহাবীরা
এরূপই করতেন। কেননা নবী (ﷺ) নারীদের ইহরাম বাঁধার নিয়মের মধ্যে উল্লেখ করেছেনঃوَلَا تَنْتَقِبِ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلَا تَلْبَسِ الْقُفَّازَيْنِ “ইহরামকারী নারী নিক্বাব পরবে না
হাত মোজাও পরিধান করবে না।” এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, তাদের
সাধারণ অভ্যাস ছিল হাত মোজা পরিধান করা। অতএব পরপুরুষের উপস্থিতিতে হাত মোজা
পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে দাঁড়ানো, বসা- সর্বাবস্থায়। তবে সিজদার সময় মুখমন্ডলের কাপড় সরিয়ে কপাল ও নাকের
উপর সিজদা করবে।
প্রশ্নঃ (২১৩) অজানা অবস্থায় কাপড়ে নাপাকি নিয়ে
স্বলাত আদায় করলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাত সম্পন্ন করার পর জানা গেল যে, কাপড়ে নাপাকি ছিল। অথবা কাপড়ে নাপাকি থাকার কথা আগে থেকেই জানতো কিন্তু
ভুলে গিয়েছে। স্বলাত শেষ হওয়ার পর সেকথা স্মরণ হল। এ অবস্থায় তাদের স্বলাত বিশুদ্ধ
হবে। পুনরায় স্বলাত ফিরিয়ে পড়ার দরকার নেই। কেননা সে তো এই নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত
হয়েছে না জেনে অথবা ভুলক্রমে। আর আল্লাহতা‘আলা এরশাদ করেছেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি
ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।” (সূরা
বাক্বারা- ২৮৬) “আল্লাহবলেন, আমি তাই করলাম।” অর্থাৎ-
পাকড়াও করলাম না।
একদা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) জুতা নিয়ে স্বলাত আদায় করছিলেন, কিন্তু
তাতে ছিল নাপাকি। তিনি তা জানতেন না। জিবরীল (আঃ) সে ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করলে
স্বলাত চলাবস্থায় তিনি তা খুলে ফেললেন। এক্ষেত্রে তিনি নতুন করে স্বলাত আদায়
করেননি। এথেকে প্রমাণিত হয়, স্বলাত অবস্থায় যদি নাপাকির
ব্যাপারে জানতে পারে, তবে স্বলাত অবস্থাতেই উহা বিদূরীত
করার চেষ্টা করবে- যদি উহা বিদূরীত করতে গিয়ে সতর ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা
না হয়। অনুরূপভাবে যদি ভুলে যায় আর স্বলাতরত অবস্থায় তা স্মরণ হয়, তবে সতরের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হলে স্বলাত না ভেঙ্গেই উক্ত কাপড়
খুলে ফেলবে।
কিন্তু যদি স্বলাত শেষ হওয়ার পর স্মরণ হয় বা
নাপাকি সম্পর্কে জানতে পারে, তবে স্বলাত বিশুদ্ধ হবে ফিরিয়ে
পড়ার দরকার হবে না।
তবে কেউ যদি ভুলক্রমে ওযু না করে স্বলাত আদায় করে।
তারপর স্বলাত শেষে স্মরণ হলো যে, সে বিনা ওযুতে স্বলাত আদায়
করেছে। তবে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, ওযু সম্পাদন করে স্বলাত
ফিরিয়ে পড়া। অনুরূপভাবে কেউ যদি অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলক্রমে শরীরে নাপাকি নিয়ে স্বলাত
আদায় করে, অতঃপর কাপড়ে বীর্য দেখে জানতে পারে বা নাপাকির
কথা স্মরণ হয়, তবে যতগুলো স্বলাত সে অপবিত্রাবস্থায় আদায়
করেছিল সবগুলোই ফিরিয়ে পড়বে।
উভয় মাসআলার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, প্রথম মাসআলাটি- অর্থাৎ কাপড়ে নাপাকী নিয়ে স্বলাত আদায় করা- হচ্ছে,
নিষিদ্ধ বিষয়কে পরিত্যাগ করা। আর দ্বিতীয়টি- অর্থাৎ- বিনা ওযুতে
বা শরীর নাপাক অবস্থায় স্বলাত আদায় করা- হচ্ছে, নির্দেশিত
বিষয় যা ওযু-গোসলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে হয়। আর নির্দেশিত বিষয় অবশ্যই
বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টির উপস্থিতি ব্যতিরেকে ইবাদত বিশুদ্ধ হবে না। কিন্তু
কাপড়ে নাপাকির বিষয়টি হচ্ছে না থাকা। অর্থাৎ- ওটার অনুপসি'তি ব্যতীত স্বলাত বিশুদ্ধ হবে না। অতএব অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলক্রমে যদি তা
উপস্থিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা স্বলাতের আবশ্যক কোন কিছু এখানে ছুটে
যায়নি।
টাখনুর নীচে
কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করার শাস্তি কি?
প্রশ্নঃ (২১৪) টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা যদি
অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি কি? কিন্তু
যদি অহংকার বশতঃ না হয় তবে তার শাস্তি কি? আবু বকরের
হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করে তাদের দাবীর কি জবাব?
উত্তরঃ লুঙ্গি, পায়জামা,
প্যান্ট ইত্যাদি কাপড় যদি পায়ের কিঞ্চিৎ নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা
হয় এবং তাঁর উদ্দেশ্য হয় অহংকার করা, তবে তাঁর শাস্তি হল
– কিয়ামত দিবসে আল্লাহতা’আলা তাঁর দিকে দৃষ্টি দিবেন না, তাঁর
সাথে কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য
রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর যদি অহংকারের সাথে নয় বরং সাধারণভাবে কাপড় ঝুলিয়ে
পরে, তবে তাঁর শাস্তি হল –তাঁর টাখনুদ্বয়কে জাহান্নামের
আগুনে পোড়ানো হবে। কেননা নবী (ﷺ)
বলেনঃ
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ ألِيْم: المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهُ بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ
“কিয়ামত দিবসে আল্লাহতা’আলা তিনি ব্যাক্তির সাথে কথা
বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
সেই তিনি ব্যাক্তি হল – ১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী, ২) দান করে খোটাদানকারী ৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী “ তিনি (ﷺ) আরো বলেনঃ
مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ الله إلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَـةِ
“যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত
দিবসে আল্লাহতাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না” এ বিধান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে অহংকার
বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে।
আর যে ব্যাক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা h বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেনঃ
আর যে ব্যাক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা h বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেনঃ
ماَ أسْفَلَ الكعبين مِـنَ الإزاَرِ فَفِيْ النّـارِ
“যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে
জ্বলবে” এ হাদিসে দোযখের আগুনে টাখনু জ্বলার ব্যাপারে অহঙ্কারের কথা উল্লেখ নেই।
আবূ সাঈদ খুদরী h থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
আবূ সাঈদ খুদরী h থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ وَلا حَرَجَ أَوْ لا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ ومَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَةِ
“মুমিম ব্যাক্তির কাপড় নেসফে সাক তথা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত,
এতে কোন অসুবিধা নেই” (হাঁটু থেকে পায়ের তোলার মধ্যভাগকে নেসফে
সাক বলা হয়) অন্য বর্ণনায় তিনি (ﷺ) এরুপ
বলেনঃ “পায়ের টাখনু এবং হাটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা
নেই। যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, এবং যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহতাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”।
অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যাক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।
অতএব অহকারের উদ্দেশ্য ব্যাতিত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকার যুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা হল – আল্লাহতাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যাক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।
অতএব অহকারের উদ্দেশ্য ব্যাতিত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকার যুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা হল – আল্লাহতাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আবু বকর h এর হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করতে চায় দু’দিক
থেকে তাদের যুক্তি খন্ডনঃ
প্রথম কথাঃ আবু বকর h বলেছেন, আমার
কাপড়ের এক পার্শ্ব (অনিচ্ছাকৃত) ঝুলে পড়ে কিন্তু আমি তা বারবার উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা
করি।” অতএব তিনি তো ইচ্ছাকৃত একাজ করতেন না। বরং তাঁর শরীর অধিক ক্ষীণ হওয়ার কারণে
অনিচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলে যেত। তাছাড়া তিনি তা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যারা
কাপড় ঝুলিয়ে পরে এবং ধারণা করে যে তারা অহংকার করে না, তারা
তো ইচ্ছাকৃত একাজ করে। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, অহংকারের
উদ্দেশ্য ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলিয়ে পরলে তার টাখনু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
যেমনটি আবু হুরায়রার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি
হচ্ছে, আল্লাহতাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না
এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
দ্বিতীয় কথাঃ নবী (ﷺ) নিজেই আবু বকর hকে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি সেই সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা
অহংকার বশতঃ একাজ করে থাকে। অতএব বর্তমানে এরা কি নবীজীর পক্ষ থেকে এরূপ
সচ্চরিত্রের সনদ ও তাঁর সাক্ষ্য লাভ করেছে? কিন্তু শয়তান
প্রবৃত্তির অনুসারী লোকদেরকে কুরআন্তসুন্নাহ্থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তি সমূহকে
খেয়াল-খুশির উপর ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধু করে। তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহযাকে
ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকেন।
ফরদ্ব গোসল না
করেই স্বলাত পড়ে ফেললে করণীয় কি?
প্রশ্নঃ (২১৫) এক ব্যক্তি স্বলাত সম্পন্ন করার পর জানল
যে,
সে ‘জুনুব’ অপবিত্র অবস্থায় ছিল, অর্থাৎ
তার উপর গোসল ফরদ্ব ছিল। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যে কোন মানুষ স্বলাত আদায় করার পর যদি জানতে পারে
যে, সে ছোট নাপাকী বা বড় নাপাকীতে লিপ্ত ছিল। তথা ওযু বা
গোসল ফরদ্ব ছিল। তবে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করে উক্ত স্বলাত পুনরায়
আদায় করা। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন,
لا تُقْبَلُ صَلاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ
“পবিত্রতা ব্যতীত কোন স্বলাত কবূল করা হবে না।”
প্রশ্নঃ (২১৬) স্বলাতরত অবস্থায় নাক থেকে রক্ত বের হলে কি করবে?
উত্তরঃ নাক থেকে রক্ত বের হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই
রক্ত কম বের হোক বা বেশী। অনুরূপভাবে দু’রাস্তা (পেশাব-পায়খানার রাস্তা) ছাড়া
শরীরের অন্য যে কোন স্থান থেকে কোন কিছু বের হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। যেমন বমী, পুঁজ প্রভৃতি। চাই তা কম হোক বা বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা
এগুলোর ব্যাপারে নবী(ﷺ) থেকে কোন হাদীছ ছহীহ্প্রমাণিত হয়নি।
আসল হচ্ছে পবিত্রতা। এই পবিত্রতা প্রমাণিত হয়েছে
শরঈ দলীলের ভিত্তিতে। আর যা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় তা খন্ডন করার জন্য
শরঈ দলীল প্রয়োজন। কিন্তু দু’টি রাস্তা ব্যতীত শরীরের অন্য স্থান থেকে কোন কিছু
বের হলে, ওযু ভঙ্গের কোন শরঈ দলীল নেই। অতএব নাক থেকে রক্ত বের
হলে বা বমী হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কম হোক বা বেশী হোক।
কিন্তু যেহেতু এ অবস্থায় বিনয়ের সাথে স্বলাত আদায়
করা দুস্কর হয়ে পড়ে, এজন্য স্বলাত থেকে বের হতে কোন
বাধা নেই। অনুরূপভাবে স্বলাত যদি মসজিদের মধ্যে হয় আর নাকের রক্ত বা বমি পড়ে
মসজিদের পরিচ্ছন্নতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে
মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব। কিন্তু অল্প রক্ত কাপড়ে পড়লে কাপড় নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ (২১৭) কোন মসিজদে কবর থাকলে সেখানে স্বলাত
আদায় করার হুকুম কি?
উত্তরঃ কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদে স্বলাত আদায় করা দু’ভাগে
বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ প্রথমে কবর ছিল। পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ
নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা; বরং মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা। যদি না করা হয় তবে মুসলিম শাসকের উপর আবশ্যক
হচ্ছে উক্ত মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সেখানে কোন
মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে, কবর খনন
করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন করে, মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করা। এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে স্বলাত আদায়
করা জায়েয। আর তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না
হয়। কেননা নবী (ﷺ) কবরের দিকে স্বলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, নবী (ﷺ)এর কবর তো মসজিদের মধ্যে? এর জবাব কি?
এর জবাব হচ্ছে, নবী (ﷺ)এর মৃত্যুর পূর্বেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। একথা
সবার জানা যে, তাঁকে মসজিদের মধ্যে দাফন করা
হয়নি; বরং মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থান, তাঁর নিজ গৃহে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ৮৮ হিঃ সনে
খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক তার অধিনস্ত মদীনার আমীর ওমর বিন আবদুল আযীযকে পত্র
মারফত নির্দেশ প্রদান করেন, মসজিদে নববী ভেঙ্গে
পূণঃনির্মাণ করার সময় যেন উম্মুল মু’মেনীন তথা নবী (ﷺ)এর স্ত্রীদের গৃহগুলোকে মসজিদের আওতার মধ্যে নিয়ে
আসা হয়। তখন ওমর বিন আবদুল আযীয মদীনার নেতৃস্থানীয় লোক এবং ফিক্বাহবিদদেরকে
একত্রিত করে তাঁদের সামনে খলীফার পত্র পড়ে শোনান। বিষয়টি তাদের কাছে খুবই কঠিন মনে
হয়। তাঁরা বললেন, কবর ও গৃহগুলোকে বর্তমান
অবস্থাতেই রেখে দেয়া উচিত। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য এটাই সর্বাধিক সঠিক উপায়। বর্ণিত
আছে যে, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব আয়েশা hএর গৃহ তথা নবী (ﷺ)এর কবর শরীফকে মসজিদের মধ্যে শামিল করার ব্যাপারে
দৃঢ়ভাবে বাধা প্রদান করেন। কেননা তিনি আশংকা করছিলেন যে, এই কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হতে পারে। যা হাদীছের ভাষায় নিষিদ্ধ।
বিষয়টি ওমর লিখে পাঠালেন খলীফা ওয়ালিদের কাছে। কিন্তু ওয়ালিদ তার নির্দেশই
বাস্তবায়ন করার আদেশে অটল রইলেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওমর খলীফার নির্দেশ মোতাবেক কবরকে
মসজিদের মধ্যে শামিল করে ফেললেন।
অতএব আপনি দেখলেন, নবী (ﷺ)এর কবর মূলতঃ মসজিদের মধ্যে দেয়া হয়নি। আর কবরের
উপর মসজিদও বানানো হয়নি। সুতরাং যারা মসজিদে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ তৈরীর
বৈধতার পক্ষে কথা বলে তাদের কোন দলীল নেই। নবী (ﷺ)থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন:
لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
“ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত),
তারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।”
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) মুমূর্ষু অবস্থায় ইহুদী খৃষ্টানদের কার্যকলাপ থেকে কঠিনভাবে সতর্ক করার
উদ্দেশ্যে উপরোক্ত বাণী পেশ করেন। উম্মে সালামা h হাবশায় হিজরত করে খৃষ্টানদের গীর্জা বা উপাসনালয়ে
স্থাপিত বহু মূর্তী দেখেছিলেন। বিষয়টি নবী (ﷺ)এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন:
أُولَئِكَ قَوْمٌ إِذَا مَاتَ فِيهِمُ الْعَبْدُ الصَّالِحُ أَوِ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ
“ওরা এমন জাতি, তাদের মধ্যে কোন
নেক বান্দা বা সৎলোক মৃত্যু বরণ করলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ তৈরী করত এবং ঐ
মূর্তিগুলো স্থাপন করত। ওরা আল্লাহর কাছে সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট।”
আবদুল্লাহ্বিন মাসঊদ h হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ)বলেন, “সর্বাধিক
নিকৃষ্ট লোক হচ্ছে তারা, যাদের জীবদ্দশায় ক্বিয়ামত
অনুষ্ঠিত হবে। আর যারা কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।” ইমাম আহমাদ উত্তম
সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন।
অতএব মু’মিন কখনই ইহুদী-খৃষ্টানদের পদাঙ্ক অনুসরণ
করে সন্তুষ্ট হবে না এবং সৃষ্টি কুলের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হবে না।
টয়লেটের ছাদের
উপর স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
প্রশ্নঃ (২১৮) টয়লেটের ছাদের উপর স্বলাত আদায় করার হুকুম
কি?
নাপাক উচ্ছিষ্ট একত্রিত করা হয় এমন ঘরের ছাদে স্বলাত আদায় করার
বিধান কি?
উত্তরঃ বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত টয়লেট সমূহের ছাদের
উপর স্বলাত আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আমাদের টয়লেট সমূহ বিশেষভাবে আলাদা
করে বানানো হয়না। এর ছাদ অন্যান্য ঘরের সাথে সংশ্লিষ্ট করেই বানানো হয়। অনুরূপভাবে
নাপাক উচ্ছিষ্ট একত্রিত করা হয় এ রকম ঘরের ছাদে স্বলাত আদায় করতেও কোন অসুবিধা
নেই। কেননা নবী (ﷺ) বলেন,
جُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا
“যমিনের সকল স্থান আমার জন্য মসজিদ তথা স্বলাত আদায়ের
স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করে দেয়া হয়েছে।”
প্রশ্নঃ (২১৯) মসজিদুল হারামের যমিনে (Floor) জুতা নিয়ে হাঁটার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদুল হারামের যমীনে (Floor) জুতা নিয়ে হাঁটা-হাঁটি করা উচিত নয়। কেননা যারা মসজিদের সম্মান বুঝে না
এতে তারা সুযোগ পাবে। ফলে জুতায় পানি বা ময়লা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং মসজিদের
পরিচ্ছন্নতা নষ্ট করে ফেলবে। বিদ্বানদের নিকট মূলনীতি হচ্ছেঃ “কল্যাণ ও ক্ষতির
সংঘর্ষ যদি বরাবর হয় অথবা ক্ষতির আশংকা বেশী হয়; তখন
কল্যাণের দিকে যাওয়ার চেয়ে ক্ষতিকর বিষয়কে প্রতিহত করা অধিক উত্তম।”
নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের পর কা’বা শরীফ ভেঙ্গে, ইবরাহীম
(আঃ)এর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু লোকেরা কুফরী ছেড়ে
ইসলামে নতুন প্রবেশ করার কারণে, তাদের মধ্যে বিরূপ
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তাই তিনি তা পরিত্যাগ
করেছেন। তিনি আয়েশা hকে বললেন,
لَوْلَا قَوْمُكِ حَدِيثٌ عَهْدُهُمْ بِكُفْرٍ لَنَقَضْتُ الْكَعْبَةَ فَجَعَلْتُ لَهَا بَابَيْنِ بَابٌ يَدْخُلُ النَّاسُ وَبَابٌ يَخْرُجُونَ
“তোমার স্বজাতির লোকেরা যদি কুফরী ছেড়ে ইসলামে নতুন
প্রবেশকারী না হতো, তবে আমি এই কা’বা ঘর ভেঙ্গে
(ইবরাহীমের ভিত্তির উপর) পূণঃনির্মাণ করতাম। ঘরের দু’টি দরজা রাখতাম, একটিতে লোকেরা প্রবেশ করতো অন্যটি দ্বারা বের হতো।”
প্রশ্নঃ (২২০) ক্বিবলা থেকে সামান্য সরে গিয়ে
স্বলাত আদায় করলে কি স্বলাত ফিরিয়ে পড়তে হবে?
উত্তরঃ ক্বিবলার দিক থেকে সামান্য সরে গেলে স্বলাতে কোন
ক্ষতি হবে না। এ হুকুম ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে মসজিদে হারামের বাইরে থাকে। কেননা
মসজিদে হারামেস্বলাত আদায়কারীর ক্বিবলা হচ্ছে মূল কা’বা। এজন্যই উলামাগণ বলেছেনঃ
কা’বা শরীফ অবলোকন করা যার জন্য সম্ভব হবে, তার জন্য
ওয়াজিব হচ্ছে মূল কা’বার সম্মুখবর্তী হওয়া। সুতরাং এধরণের ব্যক্তি যদি মূল কা’বার
সম্মুখবর্তী না হয়ে শুধু ক্বিবলার দিকে মুখ ফেরায় তবে তার স্বলাত বিশুদ্ধ হবে না।
আল্লাহবলেনঃ
]فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ[
“আপনার মুখমন্ডল মসজিদে হারামের দিকে ফেরান। তোমরা
যেখানেই থাকনা কেন সেদিকেই তোমাদের মুখমন্ডল ফেরাবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৪৪)
কিন্তু মানুষ দূরে থাকার কারণে যদি কা’বা দেখতে না
পায়- যদিও সে মক্কায় থাকে- তবে তার জন্য ওয়াজিব হচ্ছে ক্বিবলার দিকে মুখ ফেরানো। এ
ক্ষেত্রে মূল ক্বিবলা থেকে সামান্য সরে গেলে কোন অসুবিধা হবে না। এ কারণে নবী (ﷺ) মদীনাবাসীদের বলেন, مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ قِبْلَةٌ “পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী
স্থানে রয়েছে ক্বিবলা।” কেননা মদীনার অধিবাসীগণ দক্ষিণ দিকে মুখ করে স্বলাত আদায়
করেন। সুতরাং তা যদি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝামাঝি স্থানে হয়, তবেই ক্বিবলা ঠিক হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যারা পশ্চিম দিকে স্বলাত পড়ে,
তাদের ক্বিবলা হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণের মাঝামাঝি স্থানে।
প্রশ্নঃ (২২১) একদল লোক ক্বিবলামুখী না হয়েই স্বলাত আদায় করে
নিয়েছে। তাদের এই স্বলাতের কি হবে?
উত্তরঃ এ মাসআলাটির দু’টি অবস্থা হতে পারেঃ
প্রথম অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, যেখানে থেকে ক্বিবলা কোন দিকে জানা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যেমন
তারা সফরে ছিল এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ফলে ক্বিবলা কোন দিকে বুঝতে পারে না। এ
অবস্থায় অনুমান ও গবেষণা করে ক্বিবলা নির্ধারণ করবে। স্বলাত শেষে যদি জানা যায়
তাদের ক্বিবলা ঠিক ছিলনা, তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা
তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করেছে। আল্লাহবলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয়
কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) নবী(ﷺ) বলেন, إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ “আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ
করলে, সাধ্যানুযায়ী তোমরা তা বাস্তবায়ন করবে।” আল্লাহতা’আলা
বিশেষ করে এই মাসআলায় বলেন,
]وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ[
“পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহর অধিকারে। তোমরা যেদিকেই মুখ
ফেরাও সেদিকেই আল্লাহর মুখমন্ডল রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহসুপ্রশস্ত মহাজ্ঞানী।” (সূরা
বাক্বারাঃ ১১৫)
দ্বিতীয় অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, কাউকে ক্বিবলা বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সমাধান পেয়ে যেত। কিন্তু তারা
উদাসীনতা দিয়েছে। তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে এই স্বলাত ফিরিয়ে পড়া। এই ভুলের কথা
স্বলাতের সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে জানা যাক বা পরে। কেননা এক্ষেত্রে ক্বিবলা
নির্ধারণ করতে তাদের ভূল হয়ে গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা ক্বিবলা ছেড়ে দেয়নি। কিন্তু
তারা মানুষকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করে ভুল করেছে। অলসতা ও উদাসীনতার পরিচয়
দিয়েছে। তবে জানা উচিত ক্বিবলার দিক থেকে সামান্য সরে গেলে স্বলাতের কোন ক্ষতি হবে
না। ডান দিকে বা বাম দিকে সামান্য সরে গেলে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা নবী (ﷺ) মদীনার অধিবাসীদের বলেন,مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ قِبْلَةٌ “পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী
স্থানে রয়েছে ক্বিবলা।” অতএব যারা কা’বা থেকে উত্তর দিকে রয়েছে তাদেরকে আমরা বলবঃ
পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে ক্বিবলা। অনুরূপ তাদের ক্ষেত্রে যারা দক্ষীণ
দিকে থাকে। আর যারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে থাকে, তাদের
ক্বিবলা হচ্ছে উত্তর ও দক্ষীণ দিকের মধ্যবর্তী স্থানে। অতএব সামান্য বাঁকা হলে
স্বলাতে কোন প্রভাব পড়বে না বা ক্ষতি হবেনা।
উল্লেখ্য যে, মসজিদুল
হারামে যারা কা’বা ঘর প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম তাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মূল কা’বাকে
সামনে রাখা। কেননা মূল কা’বা থেকে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়ালে সে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালোনা।
দেখা যায় অনেক লোক মসজিদুল হারামে দীর্ঘ কাতারে দাঁড়িয়ে পড়ে, অথচ মূল কা’বার সম্মুখবর্তী হয় না। নিশ্চিতভাবে এদের অনেকেই মূল কা’বা
থেকে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। এটা বিরাট ধরণের ভুল। এব্যাপারে সতর্ক হওয়া ওয়াজিব। উদাসীন
হওয়া উচিত নয়। কেননা এভাবে স্বলাত আদায় করলে ক্বিবলা ছাড়া স্বলাত পড়া হবে। ফলে
স্বলাত বিশুদ্ধ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অনুপসি'ত রয়ে
যাবে।
প্রশ্নঃ (২২২) নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?
উত্তরঃ নবী (ﷺ) বলেনঃ إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى “কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর
নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
নিয়ত আরবী শব্দ যার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প। নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। তা
মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি যখন ওযু করবেন তখন এটাই একটা নিয়ত। একজন
বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্ক, বাধ্য
করা হয়নি এমন লোক কোন কাজ করবে আর সেখানে তার কোন নিয়ত বা ইচ্ছা থাকবে না এটা
সম্ভব নয়। এজন্য কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, (নিয়ত ছাড়া কোন
আ‘মাল করা যদি আল্লাহআমাদের প্রতি আবশ্যক করতেন, তবে তা
হতো সাধ্যাতিত কাজ চাপিয়ে দেয়ার অন্তর্গত।)
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত আছে ছাহাবায়ে কেরাম
থেকে। যারা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করে আপনি দেখবেন তারা হয় মূর্খ নতুবা কোন
আলেম বা মুরব্বীর অন্ধানুসারী। মুখে নিয়ত পাঠকারীদের যুক্তি হচ্ছে, অন্তরের ইচ্ছার সাথে মুখের কথা ও কাজের মিলের জন্য নিয়ত পাঠ করা উচিত।
কিন্তু তাদের এ যুক্তি অসাড়। একাজ শরীয়ত সম্মত হলে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর কথা বা কাজে উম্মতের সামনে তার বর্ণনা পাওয়া
যেত। (আল্লাহই তাওফীক দাতা)
প্রশ্নঃ (২২৩) নফল আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে ফরদ্ব
স্বলাত আদায় করার বিধান কি? যেমন তারাবীহ স্বলাতের ইমামের পিছনে
এশা স্বলাত
আদায় করা?
উত্তরঃ তারাবীহ স্বলাতের ইমামের পিছনে এশা স্বলাত আদায়
করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি সফরে থাকে আর তথাকার ইমামকে স্বলাতের প্রথম থেকেই পায়,
তবে তার সাথেই সালাম ফেরাবে। নতুবা ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট
স্বলাত পূর্ণ করবে।
মুসাফিরের
মুকীম ইমামের পিছনে স্বলাত পড়ার বিধান।
প্রশ্নঃ (২২৪) মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের শেষ দু’রাকাত
স্বলাতে শরীক হয়। তবে কছরের নিয়ত করে উক্ত দু’রাকাআত শেষে ইমামের সাথে সালাম
ফেরানো জায়েয হবে কি?
উত্তরঃ কোন মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের পিছনে স্বলাতে
দন্ডায়মান হয়, তবে কছরের নিয়ত করা জায়েয হবে
না। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন,مَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا “ইমামের সাথে তোমরা যেটুকু স্বলাত পাবে তা
আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা সালামের পর পূর্ণ করবে।” অতএব মুসাফির যদি স্থানীয়
ইমামের সাথে শেষ দু’রাকাআতে শামিল হয়, তবে
ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট দু’রাকআত পূর্ণ করা ওয়াজিব। (আল্লাহঅধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (২২৫) স্বলাতে শামিল হওয়ার জন্য দ্রুত
পায়ে হেঁটে আসার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাতে শামিল হওয়ার জন্য দ্রুত পায়ে হেঁটে আসা
নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
“যখন
স্বলাতের ইক্বামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে স্বলাতের দিকে আসবে না। বরং
হেঁটে হেঁটে ধীরস্থিরতা এবং শান্তভাবে আগমন করবে। অতঃপর স্বলাতের যতটুকু অংশ পাবে
আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।” অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন,
ইমাম যদি রুকূতে থাকে তখন রুকূ পাওয়ার জন্য সামান্য জোরে হেঁটে
যাওয়াতে কোন দোষ নেই। কিন্তু লোকেরা খুব জোরে হাঁটে বা দৌড় শুরু করে। এটাই
নিষিদ্ধ। কিন্তু হাদীছের প্রতি আ‘মাল করে ধীর-স্থির ও প্রশান্তির সাথে হেঁটে
যাওয়াই উত্তম- যদিও এক বা ততোধিক রাকাআত ছুটে যায়।
প্রশ্নঃ (২২৬) জামাআত চলাবস্থায় ইমামের সাথে
রাকাআত ধরার জন্য দ্রুত চলার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে আপনি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে
তাড়াহুড়া করে দ্রুত হেঁটে বা দৌড়িয়ে স্বলাতে শামিল হবেন না। কাতারে মিলিত না হয়ে
একাকীও স্বলাতে দাঁড়াবেন না। কেননা জনৈক ছাহাবী আবু বাকরা h একাকী স্বলাতে দাঁড়ানোতে নবী (ﷺ) তাকে বলেছিলেন, زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ “আল্লাহতোমার আগ্রহ বৃদ্ধি করে
দিন। তুমি এরূপ আর কখনো করিও না।”
প্রশ্নঃ (২২৭) মুছল্লীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে
এমনভাবে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে বসে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করলে যদি মুছল্লীদের
বা শিক্ষার্থীদের বা অন্য কুরআন পাঠকের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, তবে তা হারাম। কেননা এব্যাপারে নবী (ﷺ) থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল বায়াযী (ফারওয়া বিন আমর) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ﷺ) মসজিদে এসে দেখেন লোকেরা স্বলাত আদায় করছে কিন্তু কুরআন পাঠের কন্ঠ উঁচু
শোনা যাচ্ছিল। তখন তিনি বললেন,
]إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِي رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ بِمَا يُنَاجِي رَبَّهُ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقِرَاءَةِ[
“একজন মুছল্লী স্বলাতে আপন পালনকর্তার সাথে গোপনে কথা
বলে। অতএব সে যেন লক্ষ্য করে কি বলছে তার পালনকর্তাকে। আর পরস্পরে উঁচু স্বরে
কুরআন পাঠ করবে না।” অনুরূপভাবে হাদীছটি আবু সাঈদ খুদরী h থেকে আবু দাঊদও বর্ণনা করেন।
তাহিয়্যাতুল
মসজিদ স্বলাতের বিধান।
প্রশ্নঃ (২২৮) অনেক মানুষ ইক্বামতের পূর্বে মসজিদে
প্রবেশ করে স্বলাত শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত
আদায় করে না। এরূপ করার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাত শুরু হওয়ার সময় যদি অতি অল্প থাকে তবে
দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে কোন দোষ নেই। কিন্তু ইমাম কখন আসবেন তা যদি জানা না
থাকে তবে উত্তম হচ্ছে তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত শুরু করে দেয়া। তারপর ইমাম যদি এসে
পড়েন আর আপনি প্রথম রাকাআতে থাকেন তবে তা ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হবেন। আর
দ্বিতীয় রাকাআতে থাকলে হালকাভাবে তা পূর্ণ করে নিবেন।
মসজিদুল
হারামে নারী-পুরুষের কাতারের নিয়ম
প্রশ্নঃ (২২৯) মসজিদুল হারামে দেখা যায় অনেক পুরুষ ফরদ্ব
স্বলাতের জামাআতে নারীদের পিছনেই কাতার বন্দী হয়। তাদের স্বলাত কি বিশুদ্ধ হবে? তাদের জন্য আপনি কিছু নসীহত করবেন কি?
উত্তরঃ নারীদের কাতারের পিছনে পুরুষদের কাতার বেঁধে
স্বলাত আদায় করার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বলেন এতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তা
সুন্নাতের বিপরীত। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, নারীরা
পুরুষদের পিছনে দাঁড়াবে। তবে মসজিদুল হারামে বর্তমান সময়ে প্রচন্ড ভীড় দেখা যায়;
ফলে নারীরা কাতারবন্দী হওয়ার পর পুরুষেরা মসজিদে এসে যেখানে
জায়গা পায় সেখানেই কাতারবন্দী হয়। তখন অনেক সময় নারীদের কাতারের পিছনে বাধ্য হয়ে
তাদেরকে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু প্রতিটি মুছল্লীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে সাধ্যানুযায়ী
নারীদের পিছনে কাতারবন্দী হওয়া থেকে বিরত থাকা। কেননা এতে পুরুষদের জন্য ফিতনার
সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব পুরুষ নারীর পিছনে স্বলাত আদায় করা থেকে সতর্ক থাকবে। যদিও
ফিক্বাহ্বিদদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কাজ জায়েয। আর নারীদেরও উচিত দেখে শুনে
পুরুষদের দাঁড়ানোর স্থান থেকে দূরে অন্য কোথাও দাঁড়ানো।
প্রশ্নঃ (২৩০) কাতার থেকে শিশু-কিশোরদেরকে সরিয়ে
দেয়া জায়েয কি?
উত্তরঃ কিশোর বা বালক যদি স্বলাতের কাতারে দন্ডায়মান হয়, তবে তাকে কাতার থেকে সরিয়ে দেয়া জায়েয হবে না। ইবনু ওমর h থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন,لَا يُقِيمُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ مِنْ مَقْعَدِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيهِ “কোন লোক যেন অন্য লোককে তার
বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে না বসে।” তাছাড়া এতে বালকের অধিকার হরণ করা হয়,
তার অন্তরে দুঃখ দেয়া হয়, হতে পারে সে
স্বলাতকে ঘৃণা করবে বা তার অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে।
শিশুদেরকে যদি কাতারের শেষে দাঁড় করানো হয়, তবে তারা তো একস্থানে সমবেত হয়ে হাসাহাসি ও খেলাধুলায় মত্ত হয়ে পড়বে।
ফলে মুছল্লীদের স্বলাতের আরো ক্ষতি হবে। কিন্তু দু’জন বা ততোধিক যদি একই স্থানে
দন্ডায়মান হয় তবে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দু’জনের মাঝে বড়দের দাঁড়ানোতে কোন
অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (২৩১) দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে
স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ কাতারে জায়গা থাকলে দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে
স্বলাত আদায় করা জায়েয নয়। কেননা এ কারণে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু যদি
স্থানের সংকুলান না হয় জায়গা না পাওয়া যায়, তবে
দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে স্বলাত আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই।
নারীদের জন্য
উত্তম কাতার কোনটি?
প্রশ্নঃ (২৩২) নারীদের কাতারের বিধান কি? তাদের জন্য উত্তম কাতার শেষেরটি এবং অনুত্তোম কাতার প্রথমটি একথাটি কি
সর্বাবস্থায় নাকি একথা নারী-পুরুষের মধ্যবর্তী স্থানে কোন আড়াল না থাকলে?
উত্তরঃ নারী ও পুরুষ যদি একই স্থানে জামাআতবদ্ধ হয়ে
স্বলাতে দাঁড়ায় তবে সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য প্রথম কাতারের চেয়ে শেষের কাতার
উত্তম। যেমনটি নবী(ﷺ) বলেন,خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا “নারীদের জন্য উত্তম কাতার হচ্ছে
শেষেরগুলো আর অনুত্তোম কাতার হচ্ছে প্রথমগুলো।” এটা একারণেই যে, কাতার যত পিছন দিকে হবে ততই তা পুরুষদের থেকে দূরে হবে। আর যত আগের
দিকে হবে ততই পুরুষদের নিকটবর্তী হবে। তাই তাদের কাতার পুরুষদের থেকে যতদূরে হবে
ততই কল্যাণ জনক হবে। অবশ্য এটা একই মসজিদের ভিতরের কথা।
আর নারীদের স্বলাতের জন্য যদি স্বতন্ত্র স্থান
নির্ধারণ করা থাকে- যেমনটি বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদে দেখা যায়- তবে সেক্ষেত্রে
পুুরুষদের মত তাদের প্রথম কাতারই উত্তম।
প্রশ্নঃ (২৩৩) মসজিদের বাইরে সংশ্লিষ্ট রাস্তায়
স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে যদি মুছল্লীদের সংকুলান না হয়, তবে বাইরে মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় স্বলাত পড়লে কোন অসুবিধা
নেই। তবে ইমামের অনুসরণ করা ইমামের তাকবীর ধ্বনী শোনা আবশ্যক।
কাতারে মুছল্লীদের পরস্পর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের
সাথে পা মিলানোর বিধান কি?
প্রশ্নঃ (২৩৪) কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কথা
কি?
মুছল্লীদের পরস্পর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো কি
আবশ্যক?
উত্তরঃ কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে পায়ের
গোড়ালী সমূহ বরাবর করে নেয়া, পায়ের আঙ্গুল সমূহ বরাবর করা
আবশ্যক নয়। কেননা শরীরের ভিত্তি থাকে পায়ের গোড়ালীর উপর। আর পায়ের সাইজ অনুযায়ী
আঙ্গুলের বিভিন্নতা হয়ে থাকে। কোন পা দীর্ঘ থাকে কোনটা খাট। সুতরাং কাতার বরাবর ও
সোজা করা গোড়ালী মিলানো ছাড়া অন্য কোন ভাবে সম্ভব নয়।
আর পায়ের গোড়ালী সমূহ পরস্পরে মিলিত করা
নিঃসন্দেহে ছাহাবায়ে কেরাম h থেকে প্রমাণিত
রয়েছে। তাঁরা কাতার বন্দী হওয়ার সময় গোড়ালী সমূহ একজন অপরজনের সাথে মিলিত করে
দিতেন। অর্থাৎ- প্রকৃতভাবে কাতার সোজা ও বরাবর করার জন্য তাঁদের একজন পার্শ্ববর্তী
মুছল্লীর গোড়ালীর সাথে গোড়ালী মিলিত করে দাঁড়াতেন। কিন্তু কাতার বন্দীর ক্ষেত্রে
এটাই আসল উদ্দেশ্য নয়; বরং এ কাজ কাতার বরাবর সোজা
হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য করতে হয়। একারণে কাতারে দাঁড়ানোর পর উচিত হচ্ছে
প্রত্যেকে পার্শবর্তী মুছল্লীর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নিবে, যাতে নিশ্চিত হতে পারে যে, কাতার সোজা হয়েছে।
পূর্ণ স্বলাতে এভাবে পরস্পরের পাগুলোকে মিলিয়ে রাখা আবশ্যক নয়।
অনেকে বাড়াবাড়ি করে পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর পায়ের
সাথে গোড়ালী মিলাতে গিয়ে নিজের দু’পায়ের মাঝে অতিরিক্ত ফাঁক সৃষ্টি করে ফেলে। এটা
যেমন সুন্নাত বিরোধী হয় অনুরূপভাবে পরস্পরের কাঁধ থেকেও বহু দূরে চলে যায়।
উদ্দেশ্য হচ্ছে গোড়ালী ও কাঁধ সমূহ বরাবর থাকা।
স্বলাতে রফউল
ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলনের বিধান কি?
প্রশ্নঃ (২৩৫) স্বলাতে চারটি স্থান ব্যতীত অন্য কোন
স্থানে হাত উত্তোলনের কথা কি প্রমাণিত আছে? অনুরূপভাবে
জানাযা ও দু’ঈদের স্বলাতের তাকবীরের সময় হাত উত্তোলন করার কি বিধান? (স্বলাতে রফউল ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলনের বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাতে যে চার স্থানে রফউল ইয়াদাইন বা হাত
উত্তোলন করা সুন্নাত তা জেনে নেয়া আবশ্যক। ১) স্বলাতের প্রারম্ভে তাকবীর তাহরিমা
বলার সময় ২) রুকূতে যাওয়ার সময় ৩) রুকূ থেকে উঠার সময় ৪) প্রথম তাশাহুদ শেষ করে
তৃতীয় রাকাআতে উঠার সময়। এচারটি স্থানের বিষয়ে নবী (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা এসেছে। ইবনু ওমার h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا وَقَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِي السُّجُودِ
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’কাঁধ বরাবর হাত দু’টিকে উত্তোলন (রফউল ইয়াদাইন) করতেন্ত যখন স্বলাত শুরু
করতেন, যখন রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা
উঠাতেন তখনও এরূপ হাত দু’টিকে উঠাতেন এবং বলতেন ‘সামিয়াল্লাহুলিমান
হামীদাহ্রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু।’ তিনি বলেন, সিজদার সময়
তিনি এরূপ করতেন না।”
ইবনু ওমার h রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর ক্রিয়াকলাপ সমূহ অতি সুক্ষ্ণভাবে অনুসন্ধান
করতেন ও তার অনুসরণ করতেন। তিনি তাঁর স্বলাতের নিয়ম-কানুনগুলো অনুসন্ধান করে যা
দেখেছেন তা ছিল- তাকবীরে তাহরিমা, রুকূ করা, রুকূ থেকে উঠা এবং প্রথম তাশাহুদ থেকে উঠার সময় হাত উত্তোলন করা। আর
তিনি বলেছেন, নবী (ﷺ) এরূপ হাত উঠানো সিজদার সময় করতেন না। এরকম বলা ঠিক হবে না যে, হয়তো ইবনু ওমার সিজদার সময় হাত উঠানোর অবস্থাগুলো দেখেন নি বা সে সময়
সতর্ক ছিলেন না। কেননা তিনি কিছু কিছু স্থানের বর্ণনা দেয়ার পর বলেছেন্ত এরূপ তিনি
সিজদর সময় করতেন না। এদ্বারা বুঝা যায় তিনি নিশ্চিত হয়েই এ কথা বলেছেন্ত সন্দেহ বা
সংশয়ের উপর ভিত্তি করে নয়।
আর জানাযা ও দু’ঈদের প্রত্যেক তাকবীরে রফউল
ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলন করা শরীয়ত সম্মত।
প্রশ্নঃ (২৩৬) ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে কয়টি
তাকবীর দিতে হবে?
উত্তরঃ ইমামের রুকূ অবস্থায় কোন মানুষ যদি স্বলাতে শামিল
হয় তবে তাকবীরে তাহরিমা দিয়ে সরাসরি রুকূ করবে। এঅবস্থায় রুকূর জন্য তাকবীর প্রদান
করা সুন্নাত- ওয়াজিব নয়। তবে রুকূর জন্য আলাদা তাকবীর প্রদান করা উত্তম। তাকবীর না
দিলেও কোন অসুবিধা নেই। এখানে কয়েকটি অবস্থা লক্ষণীয়ঃ
প্রথম অবস্থাঃ ইমাম রুকূ থেকে উঠার আগে মুক্তাদী রুকূ করেছে
এব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। তাহলেই এটা রাক্আত বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় সূরা
ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ রুকূতে যাওয়ার আগেই ইমাম রুকূ হতে উঠে গেছেন
এব্যাপারে নিশ্চিত হবে। এঅবস্থায় তার ঐ রাকাআত ছুটে গেল। তাকে তা সালামের পর আদায়
করতে হবে।
তৃতীয় অবস্থাঃ মুক্তাদি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেয়েছে কি না বা সে
রুকূতে যাওয়ার আগেই ইমাম উঠে গিয়েছেন কি না এব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ বা সন্দেহে
থাকবে। তার ধারণা যদি প্রবল হয় যে সে রুকূ অবস্থাতেই ইমামকে পেয়েছে, তবে সে রাকাআত পেয়ে গেল। আর ধারণা যদি প্রবল হয় যে, ইমামকে রুকূ অবস্থায় পায়নি, তবে তার রাকাআত
ছুটে গেল। এ অবস্থায় যদি তার স্বলাতের কোন কিছু ছুটে যায় তবে সালামের পর সে সাহু
সিজদা করবে। আর যদি কোন কিছু না ছুটে থাকে- অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত রাকাআতটি প্রথম
রাকাআত হয়, কিন্তু তার প্রবল ধারণা যে, সে রুকূ পেয়েছে। এঅবস্থায় সাহু সিজদা রহিত হয়ে যাবে। কেননা তার স্বলাত
ইমামের স্বলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। তার স্বলাতের কোন অংশ যদি ছুটে না যায় তবে ইমাম
তার সাহু সিজদার ভার গ্রহণ করবে।
সন্দেহের আরেকটি অবস্থা রয়েছে। তা হচ্ছে, রুকূ পেল কি না সে ব্যাপারে মুক্তাদী সন্দেহে থাকবে- কোনো দিক তার কাছে
প্রাধান্য পাবে না। সে অবস্থায় নিশ্চিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করবে। অর্থাৎ- রুকূ
পায়নি। অতঃপর শেষে এই ছুটে যাওয়া রাকাআত আদায় করে সালাম ফেরানোর পূর্বে সাহু সিজদা
করবে।
এখানে আরেকটি মাসআলা উল্লেখ করা জরূরী মনে করছি।
ইমাম রুকূতে গেলে অনেক লোক (যারা পরে স্বলাতে শামিল হচ্ছে) জোরে জোরে গলা খোকরানী
দেয়, কেউ কেউ বলে (ইন্নাল্লাহা মা‘আছ্ছাবেরীন), কখনো জোরে জোরে পা ফেলে। যাতে করে ইমাম একটু দেরী করে রুকূ থেকে উঠেন।
এ সমস্ত কাজ সুন্নাতের খেলাফ। এতে ইমাম এবং মুক্তাদীদের স্বলাতে একাগ্রতা নষ্ট হয়।
আবার ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে অনেকে দ্রুত বরং খুব জোরে দৌড়িয়ে স্বলাতে আসে। অথচ
বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা নবী (ﷺ) বলেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
“যখন
স্বলাতের ইকামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে স্বলাতের দিকে আসবে না। বরং হেঁটে
হেঁটে ধীর-স্থিরতা এবং প্রশান্তির সাথে আগমণ করবে। অতঃপর স্বলাতের যতটুকু অংশ পাবে
আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
স্বলাতে কোথায়
হাত বাঁধতে হবে?
প্রশ্নঃ (২৩৭) ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে তা কি বুকের
উপর বা অন্তরের (Heart) উপর রাখবে নাকি নাভীর নীচে
রাখবে? হাত বাঁধার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে কোন
পার্থক্য আছে কি?
উত্তরঃ স্বলাতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা সুন্নাত। সাহাল
বিন সা’দ h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
লোকেরা নির্দেশিত হত যে, স্বলাতে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।” কিন্তু হাত
দু’টিকে কোন স্থানে রাখবে? বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে, হাত দু’টি বুকের উপর রাখবে। ওয়ায়েল বিন হুজ্র্h থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
]كَانَ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ[
“নবী (ﷺ) ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করতেন।” হাদীছটিতে সামান্য
দুর্বলতা থাকলেও এক্ষেত্রে বর্ণিত অন্যান্য হাদীছের তুলনায় এটিই সর্বাধিক
শক্তিশালী। আর বুকের বাম সাইডে অন্তরের উপর হাত বাঁধা একটি ভিত্তিহীন বিদআত। নাভীর
নীচে হাত বাঁধার ব্যাপারে আলী h থেকে একটি
বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা দুর্বল। ওয়ায়েল বিন হুজুর বর্ণিত হাদীছটি অধিক
শক্তিশালী।
স্বলাতের নিয়ম-পদ্ধতিতে নারী-পুরুষের মাঝে কোন
পার্থক্য নেই। সমস্ত বিধানে নারী-পুরুষ বরাবর। দলীল ছাড়া উভয়ের বিধি-নিষেধের
ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য করা বৈধ নয়। এই সুন্নাতের ক্ষেত্রে নারী বুকের উপর হাত
বাঁধবে বা তার বিপরীত কোন কাজ ছহীহ্সুন্নাত বা হাদীছ থেকে আমার জানা নেই।
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে, স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করা উচিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে নীরবে পাঠ
করা। কেননা ‘বিসমিল্লাহ্..’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়। কিন্তু কখনো যদি স্বশব্দে তা পাঠ
করে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ
বলেন, বরং কখনো স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করা উচিত।
কেননা নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি কখনো স্বশব্দে
‘বিসমিল্লাহ্..’ পাঠ করতেন।”
কিন্তু বিশুদ্ধভাবে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, “তিনি উহা স্বশব্দে পাঠ করতেন না।” আর এটাই উত্তম। তবে যদি কখনো
বিসমিল্লাহ্স্বশব্দে পাঠ করে এতে কোন অসুবিধা হবে না।
উত্তরঃ স্বলাত শুরুর ছানা ফরদ্ব-সুন্নাত সকল স্বলাতে পাঠ
করা সুন্নাত- ওয়াজিব নয়।
উচিত হচ্ছে মুছল্লী স্বলাত শুরুর দু’আ সমূহ থেকে
একবার এটা একবার ওটা পাঠ করবে। যাতে করে সকল সুন্নাতের উপর আ‘মাল করা সম্ভব হয়।
একটি দু’আ ছাড়া আর কিছু জানা না থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের দু’আ পাঠ করেছেন। যেমন, স্বলাতের শুরুতে, তাশাহুদে, স্বলাতের পরের যিকির। এধরণের বিভিন্নতার উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মতের জন্য
সহজ করা। এর দু’টি উপকারিতা আছেঃ
প্রথম উপকারিতাঃ মানুষ সর্বদা এক ধরণের দু’আ পাঠ
করবে না। কেননা একটা বিষয় সর্বদা করতে থাকলে সেটা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
ফলে অনেক সময় উদাসীনতা বা অলসতা থাকলেও অভ্যাস বশতঃ তা হয়ে যায়। তখন অন্তরের
উপস্থিতি সেখানে দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু দু’আগুলো থেকে যদি কখনো এটা কখনো ওটা পাঠ
করে তবে অন্তর উপস্থিত থাকে। যা বলে তা বুঝার দরকার পড়ে।
দ্বিতীয় উপকারিতাঃ উম্মতের জন্য সহজ করা। যার জন্য
যেটা সহজ হবে সেটাই পাঠ করবে। সময় ও প্রয়োজন মোতাবেক কখনো এটা কখনো ওটা পাঠ করবে।
0 Comments