:সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর:
___স্বলাত বিষয়ক মাসলা-
মাসায়েল---
অধ্যায়ঃ স্বলাত
كتاب الصلاة
প্রশ্নঃ (১৮৪) ইসলামে স্বলাতের বিধান কি? কার উপর স্বলাত ফরদ্ব?
উত্তরঃ স্বলাত ইসলামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রুকন; বরং এটা কালেমায়ে শাহাদাতের পর দ্বিতীয় রুকন। এটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
দ্বারা সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা ইসলামের মূল খুঁটি। যেমনটি নবী (ﷺ) বলেন, وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ “ইসলামের মূল খুঁটি হচ্ছে, স্বলাত।”
আল্লাহতা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)এর উপর স্বলাত ফরদ্ব করেন এমন উঁচু স্থানে যেখানে
মানুষের পক্ষে পৌঁছা অসম্ভব। কোন মাধ্যম ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি রাত মে’রাজের রাতে
আল্লাহতা‘আলা তাঁকে সপ্তাকাশের উপর আরশে নিয়ে এই স্বলাত ফরদ্ব করেন। প্রথমে
রাত-দিনে স্বলাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আল্লাহতা’আলা বান্দাদের
প্রতি দয়া করে এর সংখ্যা কমিয়ে নির্ধারণ করেন পাঁচ ওয়াক্ত। আর প্রতিদান ঘোষণা করেন
পঞ্চাশ ওয়াক্তের বরাবর। এ থেকে প্রমাণিত হয় স্বলাত কত গুরুত্বপূর্ণ। স্বলাতকে
আল্লাহকত ভালাবসেন। সুতরাং মানুষের জীবনের সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ সময় এই ক্ষেত্রে ব্যয়
করা অত্যন্ত জরুরী। স্বলাত ফরদ্ব হওয়ার ব্যাপারে দলীল হচ্ছে: কুরআন, সুন্নাহ্ও মুসলিমদের এজমা বা ঐকমত্য।
কুরআন থেকে দলীলঃ আল্লাহতাআলা বলেনঃ
]فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلاةَ إِنَّ الصَّلاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا[
অর্থঃ “যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন স্বলাত প্রতিষ্ঠা
কর; নিশ্চয় স্বলাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা
ফরদ্ব করা হয়েছে। (সূরা নিসা ১০৩)
নবী (ﷺ) যখন মু‘আয বিন জাবাল hকে ইয়ামান প্রেরণ করেন, তখন তাকে বলেনঃ
أَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ
“তুমি তাদেরকে শিক্ষা দিবে যে, নিশ্চয়
আল্লাহপ্রতিদিন (দিন্তেরাতে) তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ফরদ্ব
করেছেন।”
স্বলাত ফরদ্ব হওয়ার উপর সমস্ত মুসলিম ঐকমত্য
হয়েছে। এ জন্য উলামাগণ (রহ:) বলেন, কোন
মানুষ যদি পাঁচ ওয়াক্ত বা কোন এক ওয়াক্ত স্বলাত ফরদ্ব হওয়াকে অস্বীকার করে,
তবে সে কাফের মুরতাদ ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তার রক্ত ও সম্পদ
হালাল। কিন্তু যদি সে তওবা করে তার কথা ভিন্ন। অবশ্য উক্ত ব্যক্তি যদি নতুন মুসলিম
হয়- ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে এবং অনুরূপ কথা বলে তবে তার ওযর
গ্রহণযোগ্য হবে। তাকে উক্ত বিষয়ে জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে। তারপরও যদি সে স্বলাত
ফরদ্ব হওয়ার বিষয়টিকে অমান্য করে তবে সেও কাফের বলে গণ্য হবে।
নিম্নলিখিত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর স্বলাত ফরদ্বঃ
মুসলিম, বালেগ, আকেল, নারী বা পুরুষ।
মুসলিমের বিপরীত হচ্ছে কাফের। কাফেরের উপর স্বলাত
ফরদ্ব নয়। অর্থাৎ- কাফের অবস্থায় তার জন্য স্বলাত আদায় করা আবশ্যক নয়। ইসলাম গ্রহণ
করলেও আগের স্বলাত ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কিন্তু এ কারণে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে
শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহবলেন,
]إِلَّا أَصْحَابَ الْيَمِينِ، فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ، عَنْ الْمُجْرِمِينَ، مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ، وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ.[
“কিন্তু ডানদিকস্তরা, তারা থাকবে
জান্নাতে এবং পরস্পরে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বলবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করেছে? তারা
বলবে, আমরা স্বলাত পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে
আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।
আর আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।” (সূরা মুদ্দাস্সির- ৩৯-৪৬) ‘আমরা
স্বলাত পড়তাম না’ কথা থেকে বুঝা যায়, তারা কাফের ও
ক্বিয়ামত দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সত্বেও স্বলাত পরিত্যাগ
করার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
প্রাপ্ত বয়স্কঃ যার মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোন
একটি চিহ্ন প্রকাশ পাবে তাকেই বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক বলা হবে। উক্ত চিহ্ন পুরুষের
ক্ষেত্রে তিনটি আর নারীর ক্ষেত্রে চারটি।
ক) পনর বছর পূর্ণ হওয়া।
খ) উত্তেজনার সাথে নিদ্রা বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।
গ) নাভীমূল গজানো। অর্থাৎ- লজ্জাস্থানের আশে-পাশে শক্ত লোম দেখা দেয়া। এ তিনটি
চিহ্ন নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রজোয্য। নারীর ক্ষেত্রে চতুর্থ চিহ্নটি হচ্ছে, হায়েয বা ঋতুস্রাব হওয়া। কেননা তা বালেগ হওয়ার আলামত।
আকেল বা বুদ্ধিমান হচ্ছে বিবেকহীন পাগলের বিপরীত
শব্দ। কোন নারী বা পুরুষ যদি অতি বয়স্ক হওয়ার কারণে হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে সেও এ শ্রেণীর অন্তর্গত হবে। এ অবস্থায় বিবেকহীন হওয়ার কারণে তার
উপর স্বলাত ফরদ্ব হবে না।
ঋতুস্রাব বা নেফাস হলে স্বলাত ওয়াজিব নয়। কেননা
নবী ৎ বলেন,أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ “নারী কি এমন নয় যে, সে ঋতুবতী হলে স্বলাত পড়বে না, সওম রাখবে না?”
প্রশ্নঃ (১৮৫) বেহুঁশ এবং স্মৃতি শক্তিহীন
ব্যক্তির জন্য শরীয়তের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা কি আবশ্যক?
উত্তরঃ আল্লাহতা‘আলা মানুষের উপর আবশ্যক করেছেন যাবতীয়
ইবাদত বাস্তবায়ন করা- যদি তার মধ্যে সে যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকে। যেমন সে বিবেক
সম্পন্ন হবে। সবকিছু বুঝতে পারবে। কিন্তু যে লোক বিবেকশুণ্য, সে শরীয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য নয়। এ কারণে পাগল, শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকার উপর কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। এটা
আল্লাহর বিশেষ রহমত। অনুরূপ হচ্ছে আধাপাগল- যার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে কিন্তু
পুরোপুরি পাগল হয়নি এবং অতি বয়স্ক হওয়ার কারণে হিতাহীত জ্ঞানশুণ্য ব্যক্তির উপরও স্বলাত-সওম
আবশ্যক নয়। কেননা সে তো স্মৃতি শক্তিহীন মানুষ। সে ঐ শিশুর মত যার মধ্যে ভাল-মন্দ
পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং সমস্ত বিধি-বিধান তার উপর থেকে রহিত, কোন কিছুই তার উপর আবশ্যক নয়।
তবে সম্পদের যাকাত সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা তার উপর
বজায় থাকবে। কেননা যাকাতের সম্পর্ক সম্পদের সাথে। তখন ঐ ব্যক্তির অভিভাবক তার পক্ষ
থেকে যাকাতের অংশ বের করে দিবেন। কেননা যাকাত ওয়াজিব হয় সম্পদের উপর। এজন্য
আল্লাহবলেন,
]خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ[
“তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন। উহা তাদেরকে পবিত্র
ও পরিশুদ্ধ করবে।” (সূরা তওবা- ১০৩) এখানে আল্লাহপাক তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিতে
বলেছেন, ব্যক্তি থেকে যাকাত নিতে বলেননি। নবী (ﷺ) যখন মু‘আযকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন তাকে বলেন,
أَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
“তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহতাদের
সম্পদে ছাদকা বা যাকাত ফরদ্ব করেছেন। তা ধনীদের থেকে নিয়ে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা
হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) এ হাদীছের ভিত্তিতে সম্পদের আবশ্যকতা স্মৃতিহীন লোকের উপর
থেকে রহিত হবে না। কিন্তু শারীরিক ইবাদত যেমন স্বলাত, সওম, পবিত্রতা প্রভৃতি রহিত হয়ে যাবে। কেননা
সে বিবেকহীন।
কিন্তু অসুস্থতা প্রভৃতির করণে বেহুঁশ হলে অধিকাংশ
বিদ্যানের মতে তার উপর স্বলাত আবশ্যক হবে না। এ রকম অসুস্থ ব্যক্তি যদি একদিন বা
দু‘দিন বেহুঁশ থাকে তবে তাকে স্বলাত কাদ্বা আদায় করতে হবে না। কেননা বিবেকশুণ্য
বেহুঁশ মানুষকে ঘুমন্ত ব্যক্তির সাথে তুলনা করা চলবে না। যার সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলেনঃ
مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا
“যে ব্যক্তি স্বলাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা স্বলাত না পড়ে
ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফ্ফারা হচ্ছে যখনই স্মরণ
হবে, তখনই সে তা আদায় করে নিবে।” কেননা ঘুমন্ত ব্যক্তি
হুঁশ সম্পন্ন এ অর্থে যে, তাকে জাগানো হলে জাগ্রত হবে।
কিন্তু বেহুঁশকে জাগানো হলেও তার হুঁশ ফিরবে না। এ বিধান হচ্ছে ঐ অবস্থায়, যখন বেহুঁশী কোন কারণ ছাড়াই ঘটবে। কিন্তু কোন কারণ বশতঃ হলে যেমন
সংজ্ঞা লোপ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করে, তবে উক্ত বেহুঁশ
অবস্থার স্বলাত সমূহ তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে।
দীর্ঘকাল
সংজ্ঞাহীন থাকার কারণে স্বলাত-সওম আদায় করতে না পরলে তার হুকুম
প্রশ্নঃ (১৮৬) জনৈক ব্যক্তি দু‘মাস যাবত বেহুশ অবস্থায়
ছিল। কোন কিছুই অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে না স্বলাত আদায় করেছে না রমাদ্বনের সওম
পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ সংজ্ঞাহীন হওয়ার কারণে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক
নয়। আল্লাহযদি তার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন, তবে সে
রমাদ্বনের সওম ক্বাযা আদায় করবে। কিন্তু আল্লাহযদি তার মৃত্যুর ফায়সালা করেন,
তবে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। তবে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর যদি
সার্বক্ষণিক ওযর বিশিষ্ট হয়, যেমন অতি বয়স্ক প্রভৃতি,
তবে ফরদ্ব হচ্ছেঃ তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে
একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
তবে স্বলাত ক্বাযা আদায় করার ব্যাপারে ওলামাদের
মধ্যে দু’রকম মত পাওয়া যায়।
১) অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ইবনু ওমর h একদিন একরাত্রি বেহুঁশ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছুটে
যাওয়া স্বলাত ক্বাযা আদায় করেননি। (মালেক, হা/ ২৩)
২) তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে। এ মত পোষণ করেছেন
পরবর্তী যুগের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ। ইনছাফ গ্রন্থের লিখক বলেন, এটা মাযহাবের বিচ্ছিন্ন মতামত সমূহের অন্তর্গত। এ মতটি আম্মার বিন
ইয়াসির h থেকে বর্ণিত
হয়েছে। তিনি তিন দিন বেহুঁশ ছিলেন। তারপর ছুটে যাওয়া স্বলাত ক্বাযা আদায় করেছেন।
(মালেক, হা/ ২৩)
স্বলাতের শর্ত
পূর্ণ করতে গিয়ে সময় পার হয়ে গেলে কি করবে?
প্রশ্নঃ (১৮৭) স্বলাতের কোন একটি শর্ত (যেমন পানি
সংগ্রহ) পূর্ণ করতে গিয়ে যদি স্বলাতের সময় পার হয়ে যায় তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, কোনভাবেই স্বলাতের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করা বৈধ নয়। কোন লোক যদি সময়
পার হয়ে যাওয়ার ভয় করে, তবে যে অবস্থাতেই থাকুক স্বলাত
আদায় করে নিবে। যদিও একটু পর উক্ত শর্ত পূর্ণ করা সম্ভব হয়। কেননা আল্লাহবলেন, إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا “নিশ্চয় নিদিষ্ট সময়ে স্বলাত আদায় করা
মুমিনদের উপর ফরদ্ব করা হয়েছে।” (সূরা নিসা- ১০৩) অনুরূপভাবে নবী (ﷺ) প্রতিটি স্বলাতের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং ঐ সময়ে আদায় করাটাই
ওয়াজিব। কেননা শর্ত পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করা যদি বৈধ হত, তবে তায়াম্মুমের কোন প্রয়োজন ছিল না। সময় পার হওয়ার পর পানি সংগ্রহ করা
সম্ভব। সুতরাং দীর্ঘ সময়ের জন্য স্বলাতকে দেরী করা বা অল্প সময়ের জন্য দেরী করার
মাঝে কোন পার্থক্য নেই। উভয় অবস্থায় স্বলাতের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই যে
অবস্থাতেই থাক না কেন সময়ের মধ্যেই (তায়াম্মুম করে হলেও) স্বলাত আদায় করে নিবে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া এমত পোষণ করেছেন।
প্রশ্নঃ (১৮৮) রাত জাগার কারণে সূর্য উঠার পর
স্বলাত আদায় করলে কবূল হবে কি? অন্যান্য স্বলাত সে সময়মতই
আদায় করে। সেগুলোর বিধান কি?
উত্তরঃ ইচ্ছাকৃতভাবে সময় পার করে সূর্য উঠার পর ফজর
স্বলাত আদায় করলে তা কবূল হবে না। কেননা রাত না জেগে আগেভাগে নিদ্রা গেলে সময়মত
উক্ত স্বলাত আদায় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল। সুতরাং বিনা ওযরে সময় অতিবাহিত করে
স্বলাত আদায় করলে উক্ত স্বলাত কবূল হবে না। কেননা নবী (ﷺ) বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন আ‘মাল করল, যার
পক্ষে আমাদের কোন নির্দেশ নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।” আর
যে ব্যক্তি বিনা ওযরে সময় অতিবাহিত করে স্বলাত আদায় করে, সে তো এমন আ‘মাল করল, যার অনুমতি আল্লাহও তাঁর
রাসূল দেননি। সুতরাং উহা প্রত্যাখ্যাত।
কিন্তু সে বলতে পারে আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। আর
রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا
“যে ব্যক্তি স্বলাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা স্বলাত না পড়ে
ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফ্ফারা হচ্ছে যখনই স্মরণ
হবে তখনই সে উহা আদায় করে নিবে।”
আমরা তাকে বলব, যখন কিনা
তার জন্য সম্ভব ছিল যে, সময় মত জাগার জন্য আগেভাগে ঘুমিয়ে
পড়বে বা এলার্ম ঘড়ি প্রস্তত করবে বা কাউকে অনুরোধ করবে তাকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য।
তখন এগুলো না করে সময় অতিবাহিত করে ঘুমের ওজুহাত খাড়া করা, ইচ্ছাকৃতভাবে স্বলাত পরিত্যাগ করারই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। সুতরাং
পরবর্তীতে আদায় করলে উহা কবূল হবে না।
আর অন্যান্য স্বলাত সময়মত আদায় করা হলে তা
গ্রহণযোগ্য হবে।
এ উপলক্ষ্যে আমি কিছু নসীহত করতে চাইঃ মুসলিম
ব্যক্তির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা,
যেভাবে করলে তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। এ দুনিয়ায় তাকে তো
সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল মাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। কেউ জানেনা কখন তার মৃত্যু ঘন্টা
বেজে উঠবে। তাকে পাড়ি জমাতে হবে পরপারের জগতে। যেখানে হিসাব-নিকাশের সম্মুখিন হবে।
তখন আ‘মালই হবে একমাত্র তার সহযোগী। মৃত্যুর পর আ‘মাল করার আর কোন অবকাশ থাকবে না।
নবী (ﷺ) বলেন,
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে, তিনটি
আ‘মাল ব্যতীত তার সমস্ত আ‘মাল বন্ধ হয়ে যায়। ছাদকায়ে জারিয়া, উপকারী বিদ্যা, সৎ সন্তান যে তার জন্য দু‘আ
করবে।”
বিলম্ব করে
ফজরের স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
প্রশ্নঃ (১৮৯) যে ব্যক্তি ফজরের স্বলাত বিলম্ব করে আদায়
করে,
এমনকি তার সময় পার হয়ে যায়। তার বিধান কি?
উত্তরঃ যারা ফজর স্বলাত বিলম্ব করে আদায় করে এমনকি তার
সময় পার হয়ে যায়- যদি বিশ্বাস করে যে, এরূপ করা
বৈধ, তবে তা আল্লাহর সাথে কুফরী হল। কেননা বিনা কারণে
স্বলাতের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করা হালাল বা জায়েয, যে
ব্যক্তি একথা অন্তর থেকে বিশ্বাস করবে সে কাফের। এই কারণে যে, সে কুরআন, সুন্নাহ্ও মুসলিমদের ইজমার বিরোধীতা
করেছে।
কিন্তু যদি তা হালাল না ভেবে বিশ্বাস করে যে, দেরী করে স্বলাত আদায় করলে গোনাহ্গার হতে হবে। তারপরও প্রবৃত্তির
তাড়নায় বা ঘুমের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় পার করে দেয়। তবে সে সাধারণ পাপী বলে গণ্য
হবে। তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। অন্যায় থেকে বিরত হতে হবে। বড় বড় কাফেরের
জন্যও তওবার দরজা উন্মুক্ত। আল্লাহবলেন,
]قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ[
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা
নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ
হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহসমস্ত গোনাহ্ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, অতিব দয়ালু।” (সূরা যুমার- ৫৩)
এদের ব্যাপারে যারা জানবে তারা তাদেরকে নসীহত করবে, তাদেরকে কল্যাণের নির্দেশ দিবে। যদি তারা তওবা না করে, তবে তাদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করতে হবে। যাতে করে
তারা যিম্মামুক্ত হতে পারে। আর কর্তৃপক্ষও তাদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে
তাদেরকে সংশোধন করতে পারে।
বেস্বলাতী
যুবকের সাথে মেয়ের বিবাহ দেয়া কি বৈধ?
প্রশ্নঃ (১৯০) জনৈক যুবক এক ব্যক্তির মেয়েকে বিবাহ করার
জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, সে স্বলাত
আদায় করে না। কিন্তু বলা হচ্ছে, ‘ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহতাকে
হেদায়াত করবেন।’ এই যুবকের সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ বিবাহের প্রস্তাবকারী যদি জামাআতের সাথে স্বলাত
আদায় না করে, তবে সে আল্লাহও রাসূলের
নাফারমান্ত গোনাহ্গার। মুসলিমদের ইজমার বিরোধীতাকারী। কেননা জামাতবদ্ধ হয়ে স্বলাত
আদায় করা সর্বোত্তম ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, এব্যাপারে
মুসলিমগণ ঐকমত্য হয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) (মাজমু’ ফাতাওয়া ২৩/
২২২ গ্রন্থে) বলেন, ‘আলেমগণ একথার উপর ঐকমত্য হয়েছেন যে,
জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা অতিব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, শ্রেষ্ঠ আনুগত্য ও ইসলামের অন্যতম বড় নিদর্শন।’
কিন্তু তার এই ফাসেক্বী তাকে ইসলাম থেকে বের করে
দিবে না। এর সাথে মুসলিম মেয়ের বিবাহ দেয়া জায়েয। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে ইসলামের
উপর প্রতিষ্ঠিত সচ্চরিত্রবান যুবকের সাথে বিবাহ দেয়াই উত্তম। যদিও সে অর্থ-সম্পদ ও
বংশ-মর্যাদায় উন্নত না হয়। কেননা হাদীছে এসেছেঃ “তোমাদের কাছে যদি এমন ব্যক্তি
(বিবাহের প্রস্তাব দেয়) যার ধর্মীয় ও চারিত্রিক অবস্থা সন্তোষ জনক, তবে তার সাথে বিবাহ দাও। যদি এরূপ না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা হবে এবং
বিরাট ফাসাদ হবে। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি
এরূপ লোক না পাওয়া যায়? তিনি বললেন, যদি তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তি আসে (বিবাহের প্রস্তাব দেয়) যার ধর্মীয় ও
চারিত্রিক অবস্থা সন্তোষ জনক তবে তার সাথে বিবাহ দাও।” কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।
ছহীহ্বুখারী ও মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে প্রমাণিত হয়েছে, আবু
হুরায়রা h থেকে বর্ণিত।
নবী (ﷺ) বলেন,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك
“চারটি গুণাগুণ দেখে কোন নারীকে বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ,
বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও ধর্ম। ধর্মভীরু
নারীকে বিবাহ করে তুমি বিজয়ী হও। তোমার দু’হাত ধুলোলুন্ঠিত হোক।” এ দু’টি হাদীছ
থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যে
বিষয়টির গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক, তা হচ্ছে নারী-পুরুষ
উভয়ের ক্ষেত্রে- ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রবান হওয়া। আর আল্লাহভীরু ও দায়িত্ব সচেতন
অভিভাবকের জন্য আবশ্যক হচ্ছে নবী (ﷺ)এর নির্দেশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। কেননা
ক্বিয়ামত দিবসে এ বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহবলেন,
]وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمْ الْمُرْسَلِينَ[
“আর সেদিন আল্লাহতাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলগণের আহবানে কি সাড়া দিয়েছিলে?” (সূরা
ক্বাছাছ- ৬৫) তিনি আরো বলেন,
]فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ، فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ[
“অতএব আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, যাদের কাছে রাসূল প্রেরীত হয়েছিল এবং আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করব
রাসূলগণকে। তাদের উপর সব কিছুর বিজ্ঞচিতভাবে বর্ণনা প্রদান করব। আর আমি অনুপসি'ত ছিলাম না। ” (সূরা আ’রাফ- ৬-৭)
আর যদি বিবাহের প্রস্তাবক এমন ব্যক্তি হয়, যে না জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করে না বরং একাকী স্বলাত আদায় করে।
অর্থাৎ- মোটেও স্বলাত আদায় করে না। তবে সে কাফের ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তার তওবা
করা জরুরী। যদি খালেছভাবে তওবা নাসূহা করে স্বলাত আদায় শুরু করে, তবে আল্লাহতাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তওবা না করলে তাকে কাফের ও
মুরতাদ অবস্থায় হত্যা করতে হবে। গোসল না দিয়ে, কাফন না
পরিয়ে, জানাযা না পড়িয়ে, দাফন
করতে হবে। মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না। তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কুরআন
ও সুন্নাহ্র দলীল নিম্নে প্রদত্ব হলোঃ
কুরআনের দলীলঃ আল্লাহবলেন,
]فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا، إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ[
“অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা স্বলাত নষ্ট করল
এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু
তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।” (সূরা
মারইয়াম- ৫৯-৬০) এখানে ‘কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।’ একথা দ্বারা
বুঝা যায়, স্বলাত বিনষ্ট ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার সময় তারা ঈমানদার ছিল না।
আল্লাহআরো বলেন,
]فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ[
“যদি তারা তওবা করে ও স্বলাত আদায় করে
এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (সূরা-
তওবা- ১১) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, স্বলাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত
প্রদান না করলে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্ত হবে না। অবশ্য হাদীছের দলীল দ্বারা
প্রমাণিত যে, যাকাত পরিত্যাগকারী যদি তার আবশ্যকতা
স্বীকার করে, কিন্তু কৃপণতার কারণে তা আদায় না করে,
তবে সে কাফের হবে না। অতএব স্বলাত প্রতিষ্ঠা করা ঈমানী
ভ্রাতৃত্বের শর্ত হিসেবে অবশিষ্ট রইল। তাই এর দাবী হচ্ছে তা পরিত্যাগ করা কুফরী।
এই কারণে বেস্বলাতীর সাথে ঈমানী ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয়ে যায়। বেস্বলাতী ফাসেক নয় বা
ছোট কাফের নয়। কেননা ফাসেক্বী এবং ছোট কুফরী ঈমানী ভ্রাতৃত্ব থেকে বের করে দেয় না।
যেমনটি মু‘মিনদের পরস্পর দু’টি দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে, তাদের
সংশোধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহবলেন,
]إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ[
“মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পরস্পরের
মাঝে সংশোধন কর।” (সূরা হুজুরাত- ১০) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত দু’টি দল ঈমানের গন্ডি থেকে
বের হয়ে যায়নি। অথচ মু’মিনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি
ছহীহ্বুখারীতে আবদুল্লাহ্ইবনু মাসঊদ h থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেন,
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
“কোন মুসলিমকে গালিগালাজ করা ফাসেক্বী, আর তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফরী।”
হাদীছের দলীলঃ স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার ব্যাপারে
সুন্নাহ্থেকে দলীল সমূহ হচ্ছে নিম্নরূপঃ জাবের বিন আবদুল্লাহ্h থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী (ﷺ) বলেন, (بَيْنَ الرَّجُلِ والْكُفْرِ والشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ) “মুসলিম
বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল স্বলাত পরিত্যাগ
করা।” বুরায়দা বিন হুছাইবh থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী (ﷺ) বলেন,
]الْعَهْدُ الَّذِيْ بّيْنَناَ وَبَيْنَهُمْ الصّلاَةُ فَمَنْ تَرِكَهاَ فَقَدْ كَفَرَ[
“তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে স্বলাতের,
যে ব্যক্তি স্বলাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।”
উবাদাহ্বিন ছামেত h থেকে বর্ণিত। তাঁরা নবী (ﷺ)এর কাছে বাইআত করেছেন এই মর্মে যে, ‘‘তারা শাসকের সাথে বিরোধীতায় লিপ্ত হবে না। যতক্ষণ না তারা তাদের থেকে
সুস্পষ্ট কুফরী অবলোকন করে, যে ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ
থেকে তোমাদের কাছে প্রকাশ্য প্রমাণ বিদ্যমান আছে।” অর্থাৎ- শাসকদেরকে আল্লাহযে
দায়িত্ব দিয়েছেন, লোকেরা সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধাচরণ
করবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যে সুপ্রমাণিত কোন
কুফরী অবলোকন করে। আপনি যখন এটা বুঝলেন তখন এই হাদীছটি দেখুন সালামা h হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ
سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا
“অচিরেই তোমাদের মাঝে এমন কিছু আমীর বা শাসকের আগমণ ঘটবে,
যাদের মধ্যে ভাল বিষয় লক্ষ্য করবে খারাপ বিষয়ও লক্ষ্য করবে। যে
ব্যক্তি মন্দ বিষয়গুলো চিনলো (অন্য বর্ণনায়, অপসন্দ করল)
সে মুক্ত হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি সেগুলোর প্রতিবাদ করল সে নিরাপদ হলো। কিন্তু যে
সন্তুষ্ট হয় ও তাদের অনুসরণ করে। তাঁরা বললেন, আমরা কি
তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা স্বলাত
প্রতিষ্ঠা করে।” এ হাদীছ থেকে জানা গেল, তারা যদি
স্বলাত আদায় না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
পূর্বে ঊবাদার হাদীছটিতে বলা হয়েছে কোন ক্রমেই শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না।
অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে
সুপ্রমাণিত কোন কুফরী ছাড়া তাদের সাথে লড়াই করা যাবে না। সুতরাং এ দু’টি হাদীছ
দ্বারা জানা গেল, স্বলাত পরিত্যাগ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে
সুপ্রমাণিত সুস্পষ্ট কুফরী।
এগুলো হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) থেকে দলীল প্রমাণ। স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের। মিল্লাতে ইসলাম থেকে
বহিস্কৃত। যেমনটি অন্যান্য সুস্পষ্ট বর্ণনায় পাওয়া যায়। ইবনু আবী হাতেম সুনান
গ্রন্থে ঊবাদা বিন ছামেত h থেকে বর্ণনা
করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) আমাদেরকে নসীহত করেছেনঃ
]لا تشركوا بالله شيئاً، ولا تتركوا الصلاة عمداً فمن تركها عامداً متعمداً خرج من الملة[
“তোমরা কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করবে না।
ইচ্ছাকৃতভাবে স্বলাত পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত স্বলাত পরিত্যাগ করবে
সে মিল্লাতে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।”
এব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম h থেকে বর্ণিত উক্তি সমূহ নিম্নরূপঃ
ওমর বিন খাত্তাব h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,(لا إسلام لمن ترك الصلاة) “যে ব্যক্তি স্বলাত পরিত্যাগ
করে, ইসলামে তার কোন অংশ নেই।” আবদুল্লাহ্বিন শাক্বীক্বh থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
]لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ[
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ স্বলাত ব্যতীত
কোন আ‘মাল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।”
উল্লেখিত শ্রুতিগত উক্ত দলীল সমূহ ছাড়া সাধারণ
যুক্তিও প্রমাণ করে যে, স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের।
ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘স্বলাতে অলসতাকারী প্রত্যেক
ব্যক্তি মাত্রই তাকে অবজ্ঞাকারী। সুতরাং সে ইসলামের ব্যাপারে উদাসীন এবং
অবজ্ঞাকারী। স্বলাতে যাদের যতটুকু অংশ রয়েছে ইসলামে তাদের ততটুকু অংশ রয়েছে।
স্বলাতের প্রতি যার যতটুকু আগ্রহ রয়েছে ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ ততটুকু আছে।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) (কিতাবুছ স্বলাত পৃ:
৪০০) বলেন, হাদীছের সমষ্টি থেকে প্রমাণিত হয়ঃ “যে লোক বিশ্বাস করে
যে, আল্লাহতা‘আলা স্বলাতের নির্দেশ দিয়েছেন, তা ফরদ্ব করেছেন, সে কখনই স্বলাত পরিত্যাগ
করবে না। সে কখনই ধারাবাহিকভাবে সমস্ত স্বলাত থেকে বিরত থাকবে না। কারণ সাধারণ
বিবেক ও যুক্তিতে একথা কখনই সম্ভব নয় যে, একজন লোক অন্তর
থেকে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহতা‘আলা প্রতিদিন রাত ও দিনে
পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ফরদ্ব করেছেন, এর পরিত্যাগকারীকে তিনি
কঠিন শাস্তি দিবেন; অথচ তারপরও সে তা প্রত্যাখ্যান করবে
এবং সার্বক্ষণিক এ স্বলাতকে পরিত্যাগ করে চলবে। এটা নিঃসন্দেহে অবাস্তব কথা।
সুতরাং স্বলাতের ফরদ্বকে সত্যায়নকারী কখনই উহা পরিত্যাগ করে সন্তুষ্ট চিত্তে বসে
থাকতে পারে না। ঈমানের দাবী হচ্ছে স্বলাত আদায় করা। তার হৃদয় যদি তাকে স্বলাতের
নির্দেশ না দেয়, তবে তার অন্তরে যে ঈমানের লেশ মাত্র নেই
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তর সম্পর্কিত বিধি-বিধান ও তার আ‘মাল সম্পর্কে
যাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই তাদের কথায় কান দিবেন না।” ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম সত্য
বলেছেন। যে স্বলাতে রয়েছে অশেষ, অফুরন্ত ও অসংখ্য ছাওয়াব।
তা আদায় করাও অতি সহজ সাধ্য। স্বলাত পরিত্যাগ করাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। যার অন্তরে
সামান্যতম ঈমান রয়েছে সে কখনও উক্ত স্বলাত পরিত্যাগ করতে পারে না। এটা অসম্ভব
ব্যাপার।
যখন কিনা কুরআন্তসুন্নাহ্র দলীলাদী দ্বারা
প্রমাণিত হল যে, স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের,
ইসলাম থেকে বহিস্কৃত মুরতাদ- তখন তার সাথে কোন মুসলিম নারীর
বিবাহ সম্পাদন করা বৈধ নয়। আল্লাহকুরআনে বলেন,
]وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ[
“আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী
অপেক্ষা উত্তম। যদিও তাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে।” (সূরা
বাক্বারা- ২২১) আর আল্লাহমুহাজির নারীদের সম্পর্কে বলেন,
]فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ[
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার,
তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য
হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যও হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনা- ১০) এই দু’টি আয়াতের
ভিত্তিতে মুসলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কোন
মুসলিম নারীর সাথে কাফেরের বিবাহ বৈধ নয়। অতএব কোন অভিভাবক যদি নিজ মেয়ে বা
অধিনস্ত কোন মেয়ের বিবাহ বেস্বলাতী ব্যক্তির সাথে সম্পন্ন করে, তবে সে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। এই বিবাহের মাধ্যমে উক্ত নারী তার জন্য
বৈধ হবে না। কেননা এটা এমন সম্পর্ক যাতে আল্লাহও রাসূলের নির্দেশ নেই। নবী (ﷺ) থেকে আয়েশা h এর বরাতে
ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন আ‘মাল করবে, যাতে
আমাদের নির্দেশনা নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও
মুসলিম)
অতএব স্বামী যদি স্বলাত পরিত্যাগ করার পর তওবা করে স্বলাত আদায়ের
মাধ্যমে ইসলামে ফিরে না আসে, তবে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
তাই বেস্বলাতী বিবাহের প্রস্তাবদানকারীর সাথে বিবাহের আক্বদ করার কোন প্রশ্নই আসে
না।
সারকথা, বিবাহের
প্রস্তাবকারী এই ব্যক্তি যদি জামাতের সাথে স্বলাত আদায় না করে, তবে সে ফাসেক্ব- কাফের নয়। এর সাথে বিবাহ দেয়া যায়। তবে তাকে বাদ দিয়ে
স্বলাতে পাবন্দ চরিত্রবান যুবকের সাথে বিবাহ দেয়া বেশী উত্তম।
কিন্তু যদি সে মোটেও স্বলাত আদায় না করে- না
জামাতের সাথে না একাকী- তবে কাফের, ইসলাম
থেকে বহিস্কৃত মুরতাদ। কোনভাবেই তার সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ সম্পাদন করা জায়েয
নয়। তবে যদি সে সত্যিকারভাবে তওবা করে স্বলাত আদায় করে ইসলাম ধর্মের উপর
প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন বাধা নেই।
আর প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন যে, প্রস্তাবকারীর ব্যাপারে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি বলেছে ‘ঠিক হয়ে যাবে-
আল্লাহতাকে হেদায়াত করবেন।’ এটা তো ভবিষ্যতের কথা। সে সম্পর্কে একমাত্র আল্লাই ভাল
জানেন। অজানা ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করে কোন কিছু ভিত্তি করা চলে না। কেননা আমরা
শুধু বর্তমান অবস্থার উপর জিজ্ঞাসিত হব; ভবিষ্যতের উপর
নয়। আর এ ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা হচ্ছে কুফরী। সুতরাং এই কুফরী অবস্থায় কি করে
তার সাথে মুসলিম রমণীর বিবাহ সম্পন্ন করা যায়? আমরা
আল্লাহর কাছে তার হেদায়াত এবং ইসলামে ফিরে আসার জন্য দু‘আ করি। যাতে করে তার সাথে
মুসলিম নারীর বিবাহ সম্পন্ন করা সহজ ও সম্ভব হয়। আল্লাহই হেদায়াতের মালিক।
পরিবারের
বেস্বলাতী লোকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার হুকুম কি?
প্রশ্নঃ (১৯১) জনৈক ব্যক্তি পরিবারের লোকদের স্বলাতের
আদেশ করছেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনে না। এঅবস্থায় তিনি কি করবেন? তিনি কি তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করবেন, নাকি
বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন?
উত্তরঃ পরিবারের লোকেরা যদি একেবারেই স্বলাত আদায় না করে, তবে তারা কাফের ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদে পরিণত হবে। তাদের সাথে
মিলেমিশে বসবাস করা জায়েয নয়। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে দা‘ওয়াত দিবেন।
বারবার অনুরোধ করবেন। হতে পারে আল্লাহতাদেরকে হেদায়াত করবেন। কেননা স্বলাত
পরিত্যাগকারী কাফের- নাঊযুবিল্লাহ্। কুরআন, সুন্নাহ্,
ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এর দলীল।
যারা বেস্বলাতীকে কাফের বলার পক্ষপাতী নয়, তাদের দলীলগুলো চারটি অবস্থার বাইরে নয়। যথাঃ
ক) মূলতঃ উক্ত দলীল সমূহে তাদের মতের পক্ষে দলীল নেই।
খ) সেগুলা এমন গুণ সম্পন্ন যে তা বিদ্যমান থাকাবস্থায়, স্বলাত পরিত্যাগের বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
গ) অথবা এমন কিছু ওযর ও অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে, যে কারণে স্বলাত পরিত্যাগ করা মার্জনীয়।
ঘ) অথবা উক্ত দলীল
সমূহ আম বা ব্যাপক। স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার হাদীছগুলো দ্বারা তা খাছ বা
বিশিষ্ট করা হয়েছে।
বেস্বলাতী মু’মিন বা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে বা
সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে কুরআন্তসুন্নাহ্র উক্তি সমূহে এ রকম কথা উল্লেখ নেই।
সুতরাং ‘স্বলাত পরিত্যাগ করা কুফরী’ এব্যাপারে যে দলীল সমূহ উপস্থাপিত হয়েছে, তা নেয়া’মতের কুফরী বা ছোট কুফরী এরকম ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই।
যখন সুস্পষ্ট হলো, স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের মুরতাদ, তখন তার
ব্যাপারে নিম্নল্লিখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবেঃ
প্রথমতঃ মুসলিম নারীর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হবে
না। বিবাহের চুক্তি হয়ে গেলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য উক্ত স্ত্রী
হালাল হবে না। কেননা আল্লাহমুহাজির নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
]فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ[
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার,
তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য
হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
দ্বিতীয়তঃ বিবাহের বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বলাত পরিত্যাগ
শুরু করে তবে উক্ত বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে- স্ত্রী ব্যবহার তার জন্য হালাল হবে
না। পূর্বোল্লিখিত আয়াত এর দলীল।
তৃতীয়তঃ বেস্বলাতীর যবেহ্করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েয
হবে না। কেননা এটা হারাম। ইহুদী বা খৃষ্টানের যবেহ্করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া আমাদের
জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহতা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। (দেখুন সূরা মায়েদা- ৫ নং
আয়াত) অতএব বেস্বলাতীর যবেহ করা গোস্ত ইহুদী খৃষ্টানের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।
চতুর্থতঃ বেস্বলাতীর জন্য বৈধ নয় মক্কা বা তার হারাম
সীমানায় প্রবেশ করা। কেননা আল্লাহতা‘আলা বলেছেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا[
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ তো নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই
বছরের পর আর মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে।” (সূরা তওবাঃ ২৮)
পঞ্চমতঃ বেস্বলাতীর কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে সে তাদের
মীরাছ লাভ করবে না। যেমন কোন স্বলাতী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল, রেখে গেল একজন ছেলে এবং এক চাচাতো ভাই; কিন্তু
ছেলে বেস্বলাতী আর চাচাতো ভাই স্বলাতী। এ অবস্থায় দূরের সেই চাচাতো ভাই মীরাছ পাবে
ছেলে পাবে না। কেননা উসামা h থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী (ﷺ) বলেনঃ
لَا يَرِثُ الْمُؤْمِنُ الْكَافِرَ وَلَا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُؤْمِنَ
“কোন মুসলিম কাফেরের মীরাছ লাভ করতে পারবে না। কোন কাফেরও
কোন মুসলিমের মীরাছ লাভ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম) তিনি আরো বলেন:
أَلْحِقُوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا فَمَا بَقِيَ فَهُوَ لِأَوْلَى رَجُلٍ ذَكَرٍ
“ফারায়েয তথা মীরাছ সমূহ তার অধিকারীদের মাঝে বন্টন করে
দাও। কিছু অবশিষ্ট থাকলে মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুরুষের জন্য নির্ধারিত হবে।”
(বুখারী ও মুসলিম) এই উদাহরণ প্রজোয্য হবে সমস্ত ওয়ারীসদের ক্ষেত্রে।
ষষ্ঠতঃ বেস্বলাতী মৃত্যু বরণ করলে- তাকে গোসল দেয়া যাবে
না, কাফন পরানো যাবে না, জানাযা
স্বলাত পড়া যাবেনা, মুসলিমদের গোরস্থানে তাকে দাফন করা
যাবে না। তাকে কি করতে হবে? মাঠে- ময়দানে গর্ত খনন করে
পরিহিত কাপড়েই পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা তার কোনই মর্যাদা নেই।
এভিত্তিতে কোন লোক যদি মৃত্যু বরণ করে, আর তার সম্পর্কে জানা যায় যে সে বেস্বলাতী, তবে
জানাযা পড়ার জন্য লাশকে মুসলিমদের সামনে উপস্থিত করা বৈধ হবে না।
সপ্তমতঃ ক্বিয়ামত দিবসে বেস্বলাতীর হাশর-নশর হবে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে। এরা
হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাফের। তারা কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই
বেস্বলাতীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করাও জায়েয নয়।
কেননা কাফের কোন দু’আ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। আল্লাহবলেন,
]مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُوْلِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ[
“নবী ও ঈমানদারদের জন্য সমিচীন নয় যে তারা কোন মুশরিকের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হয় না কেন। যখন প্রমাণিত
হল যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।” (সূরা
তওবাঃ ১১৩)
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। কিন্তু আফসোস! মানুষ
বর্তমানে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেদের গৃহে এমন লোকদের
স্থান দিচ্ছে, যারাস্বলাত আদায় করে না। অথচ
এটা মোটেও ঠিক নয়। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
বেস্বলাতী
স্বামীর সাথে স্বলাতী স্ত্রীর বসবাস করার হুকুম
প্রশ্নঃ (১৯২) বেস্বলাতী স্বামীর সাথে মুসলিম স্বলাতী
স্ত্রীর বসবাস করার বিধান কি? তাদের কয়েকজন সন্তানও আছে।
বেস্বলাতীর সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ কোন নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে স্বলাত আদায় করে না, জামাআতের সাথেও না
বাড়ীতেও একাকি না। তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়। কেননা স্বলাত পরিত্যাগকারী কাফের। যেমনটি
আল্লাহর সম্মানিত কিতাব, পবিত্র সুন্নাত ও ছাহাবায়ে
কেরামের উক্তি সমূহ একথাটি প্রমাণ করে। আবদুল্লাহ্বিন শাক্বীক্ব বলেন,
]كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ[
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ স্বলাত ব্যতীত
কোন আ‘মাল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।” কাফেরের জন্য কোন
মুসলিম নারী বৈধ নয়। আল্লাহবলেন,
]فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ[
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার,
তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য
হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী স্বলাত পরিত্যাগ
করা শুরু করে তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কতক
বিদ্বান বলেছেন, বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের
সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে তবে নতুন
চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে। উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে
বেস্বলাতী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে
তওবা করে স্বলাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন
অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের।
এ উপলক্ষে আমি মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক করছি ও নসীহত
করছি, তারা যেন কোন বেস্বলাতীর সাথে মেয়েদের বিবাহ সম্পন্ন না
করেন। কেননা বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। এক্ষেত্রে তারা যেন নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে
কোন আপোষ না করেন। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত আছেন)
প্রশ্নঃ (১৯৩) তওবা করার পর কি ছেড়ে দেয়া স্বলাতের
কাদ্বা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ইচ্ছাকৃতভাবে স্বলাত পরিত্যাগ করার পর তওবা করে
আল্লাহর পথে ফিরে আসলে ছেড়ে দেয়া স্বলাত সমূহ কাদ্বা আদায় করতে হবে কিনা এব্যাপারে
বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। এক্ষেত্রে দু’টি মত পাওয়া যায়।
আমার কাছে প্রাধান্যযোগ মতটি হচ্ছে যা শায়খুল
ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া পছন্দ করেছেন। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে স্বলাত পরিত্যাগ
করে এমনকি সময় পার করে দেয়, তার কাদ্বা আদায় করাতে কোন
ফায়দা নেই। কেননা নির্দিষ্ট সময়ের ইবাদত অবশ্যই উক্ত নির্ধারিত সময়েই আদায় করতে
হবে। সময়ের আগে আদায় করলে যেমন হবে না, অনুরূপ সময় পার
হওয়ার পর আদায় করলেও তা বিশুদ্ধ হবেনা। আল্লাহর সীমারেখা সমূহ হেফাযত করা অত্যন্ত
জরূরী। শরীয়ত প্রণেতা আমাদের উপর স্বলাত ফরদ্ব করে তার সীমা নির্ধারণ করে
দিয়েছেন্ত এই সময় থেকে এই সময়ের মধ্যে স্বলাত আদায় করতে হবে। অতএব যে স্থানকে
স্বলাতের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়নি সেখানে যেমন স্বলাত বিশুদ্ধ হবে না।
তেমনি যে সময়কে স্বলাতের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়নি, সে
সময়ে স্বলাত আদায় করলেও তা বিশুদ্ধ হবে না।
অবশ্য যে ব্যক্তি স্বলাত পরিত্যাগ করেছে তার উপর
আবশ্যক হচ্ছে বেশী বেশী তওবা ইসে-গফার করা এবং বেশী বেশী নফল ইবাদত ও নেক কাজে
লিপ্ত হওয়া। আশা করা যায় এর মাধ্যমে আল্লাহতাকে মাফ করে দিবেন ও পরিত্যাক্ত স্বলাত
সমূহকে ক্ষমা করবেন।
প্রশ্নঃ (১৯৪) বেস্বলাতী সন্তানদের ব্যাপারে
পরিবারের কর্তার কর্তব্য কি?
উত্তরঃ পরিবারের কোন সন্তান যদি বেস্বলাতী হয়, তবে কর্তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে স্বলাতের ব্যাপারে বাধ্য করা।
তিনি তাদেরকে স্বলাতের নির্দেশ দিবেন, বুঝাবেন, প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করবেন। কেননা নবী (ﷺ) বলেন, وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا لِعَشْرِ سِنِينَ “দশ বছর বয়সে স্বলাত আদায় না
করলে তাদেরকে প্রহার করবে।”
এতে যদি কাজ না হয়, তবে (ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিযুক্ত) দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে
তাকে সোপর্দ করবেন। যাতে করে তাকে স্বলাত আদায় করতে বাধ্য করা হয়। এক্ষেত্রে চুপ
থাকা জায়েয হবে না। কেননা এতে অন্যায় কাজে সমর্থন হয়ে যায়। স্বলাত পরিত্যাগ করা
কুফরী। স্বলাত আদায় না করলে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। বেস্বলাতী কাফের
চিরকাল জাহান্নামী। তাই সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেয়া, জানাযা পড়া বা মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না।
প্রশ্নঃ (১৯৫) সফর অবস্থায় আযান দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ। সঠিক কথা হচ্ছে সফর অবস্থায়
আযান দেয়া ওয়াজিব। দলীলঃ নবী (ﷺ) মালেক বিন হুওয়াইরিছ ও তার সফর সঙ্গীদের বলেছিলেনঃفَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ “স্বলাতের সময় উপস্থিত হলে
তোমাদের মধ্যে যেন একজন আযান দেয়।” এরা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর নিকট ইসলামের তা’লীম নিতে এসেছিলেন। ফেরত
যাওয়ার সময় নবীজী তাদেরকে এ নির্দেশ প্রদান করেন। তাছাড়া নবী (ﷺ) সফর বা গৃহে যেখানেই থাকতেন কখনই আযান বা ইক্বামত পরিত্যাগ করেননি। সফরে
থাকাবস্থায় তিনি বেলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিতেন।
প্রশ্নঃ (১৯৬) একক ব্যক্তির জন্য আযান ও ইক্বামতের
বিধান কি?
উত্তরঃ একক ব্যক্তির জন্য আযান ও ইক্বামত সুন্নাত। ওয়াজিব
নয়। কেননা তার আশে-পাশে এমন লোক নেই যাদেরকে আযান দিয়ে ডাকা দরকার। যেহেতু আযানের
মধ্যে রয়েছে আল্লাহর যিকর ও তাঁর সম্মানের কথা উল্লেখ আছে এবং নিজেকে স্বলাত ও
মুক্তির দিকে আহ্বান করা হয়েছে, অনুরূপভাবে ইক্বামতেও তাই আযান
ও ইক্বামত উভয়টি সুন্নাত। আযান মুস্তাহাব বা সুন্নাত হওয়ার দীলল হচ্ছে, ঊকবা বিন আমের h হতে বর্ণিত
হাদীছ। তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বলেন,
يَعْجَبُ رَبُّكَ مِنْ رَاعِي غَنَمٍ فِي رَأْسِ شَظِيَّةِ الْجَبَلِ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّي فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ
“তোমার
পালনকর্তা আশ্চার্যাম্বিত হন এমন ছাগলের রাখালের কাজে। পাহাড়ের চুঁড়া থেকে স্বলাতের
জন্য আযান দেয়। আল্লাহবলেন, আমার এই বান্দাকে দেখ!
স্বলাতের জন্য সে আযান ও ইক্বামত দিচ্ছে। সে আমাকে ভয় করছে। আমি আমার বান্দাকে
ক্ষমা করে দিলাম ও জান্নাতে প্রবেশ করালাম।”
দু’স্বলাত
একত্রিত আদায় করলে কি আলাদা আলাদা ইক্বামত দিতে হবে?
প্রশ্নঃ (১৯৭) কোন ব্যক্তি যদি যোহর ও আছর স্বলাত
একত্রিত আদায় করে, তবে কি প্রত্যেক স্বলাতের জন্য
আলাদাভাবে ইক্বামত দিবে? নফল স্বলাতের জন্য ইক্বামত আছে
কি?
উত্তরঃ প্রত্যেক স্বলাতের জন্য আলাদাভাবে ইক্বামত দিতে
হবে। জাবের h নবী (ﷺ)এর বিদায় হজ্জের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি মুযদালিফায় (মাগরিব এশা) দু’স্বলাতকে একত্রিত করেছেন। ইক্বামত
দিয়ে প্রথমে মাগরিব স্বলাত আদায় করেন। তারপর ইক্বামত দিয়ে এশা স্বলাত আদায় করেন।
উভয় স্বলাতের মাঝে কোন সুন্নাত আদায় করেননি। নফল স্বলাতের জন্য কোন ইক্বামত নেই।
প্রশ্নঃ (১৯৮) (الصلاة خير من النوم) “আছ্স্বলাতু
খাইরুম্মিনান্নাওম” কথাটি কি ফজরের প্রথম আযানে বলতে হবে না দ্বিতীয় আযানে?
উত্তরঃ (الصلاة خير من النوم) “আছ্স্বলাতু
খাইরুম্মিনান্নাওম” কথাটি ফজরের প্রথম আযানে বলতে হবে। যেমনটি হাদীছে এসেছেঃ
“সকালের প্রথম আযান প্রদান করলে বলবে, (الصلاة خير من النوم) “আছ্স্বলাতু
খাইরুম্মিনান্নাওম” ঘুম থেকে স্বলাত উত্তম। এটা প্রথম আযানে দ্বিতীয় আযানে নয়।
কিন্তু জানা দরকার এ হাদীছে প্রথম আযান বলতে কি
বুঝানো হয়েছে? এটা হচ্ছে সেই আযান যা
স্বলাতের সময় হওয়ার পর প্রদান করা হয়। আর দ্বিতীয় আযান হচ্ছেঃ ইক্বামত। কেননা
ইক্বামতকেও ‘আযান’ বলা হয়েছে। নবী (ﷺ) বলেন, بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ “প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী
সময়ে স্বলাত রয়েছে।” এখানে দু’আযান বলতে ‘আযান ও ইক্বামত’ উদ্দেশ্য।
ছহীহ্বুখারীতে বলা হয়েছেঃ আমীরুল মু’মেনীন ঊছমান
বিন আফ্ফান h জুমআর জন্য
তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন।
অতএব, বেলালকে
প্রথম আযানে যে “আছ্স্বলাতু খাইরুম্মিনান্নাওম” বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা
দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ফজর স্বলাতের আযান।
ফজর উদিত হওয়ার আগে যে আযানের কথা পাওয়া যায় তা
ফজরের আযান নয়। লোকেরা শেষ রাতের ঐ আযানকে ফজর স্বলাতের প্রথম আযানরূপে আখ্যা দিয়ে
থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ফজর স্বলাতের জন্য নয়। কেননা নবী (ﷺ) বলেন,
إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ
“বেলাল রাতে আযান দিয়ে থাকে। যাতে করে ঘুমন্ত ব্যক্তি
জাগ্রত হয় এবং নফল স্বলাত আদায়কারী ফিরে যায়।” অর্থাৎ- ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হয়ে সাহূর খাবে
আর ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদ স্বলাত আদায়কারী স্বলাত শেষ করে সাহূর খাবে।
তাছাড়া নবী (ﷺ) মালেক বিন হুওয়াইরিছকে বলেছিলেনঃ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ “স্বলাতের সময় উপস্থিত হলে
তোমাদের মধ্যে একজন যেন আযান দেয়।” আর আমরা জানি যে, ফজর
উদিত না হলে স্বলাতের সময় উপস্থিত হবে না। অতএব ফজর হওয়ার আগের আযান ফজর স্বলাতের
জন্য নয়।
অতএব সাধারণভাবে মানুষ ফজরের আযানে যে “আছ্স্বলাতু
খাইরুম্মিনান্নাওম” বলে থাকে সেটাই সঠিক ও বিশুদ্ধ।
কিন্তু যারা ধারণা করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে ফজরের পূর্বের আযান উদ্দেশ্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক
নয়। তারা দলীল পেশ করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে সেই
আযানই উদ্দেশ্য যা শেষ রাতে নফল বা তাহাজ্জুদ স্বলাতের জন্য দেয়া হয় এবং সেজন্য
বলা হয়ঃ “আছ্স্বলাতু খাইরুম্মিনান্নাওম” অর্থাৎ- ঘুম থেকে স্বলাত উত্তম। এখানে
‘উত্তম’ শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় এ আহবানটি নফল স্বলাতের জন্যই।
আমরা জবাবে বলবঃ ‘উত্তম’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ
ওয়াজিব কাজের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ، تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ[
“হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান
দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে?
তা এই যে, তোমরা আল্লাহও তাঁর রাসূলের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন্তসম্পদ ও জীবন পন করে জেহাদ
করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম; যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে।”(সূরা ছফ্ফঃ ১০, ১১) আল্লাহজুমআর স্বলাত সম্পর্কে
বলেনঃ
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ[
“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিনে স্বলাতের জন্য আহবান করা
হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হও,
বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম।” (সূরা
জুমআঃ ৯) অতএব ‘উত্তম’ শব্দটি যেমন ফরদ্ব বিষয়ে ব্যবহার হয় তেমনি মুস্তাহাব ও নফলের
ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।
প্রশ্নঃ (১৯৯) টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে আযান দিলে
আযান হবে কি?
উত্তরঃ টেপ রেকর্ডারের
মাধ্যমে আযান দিলে বিশুদ্ধ হবে না। কেননা আযান একটি ইবাদত। আর ইবাদত করার আগে
নির্দিষ্ট নিয়ত করতে হবে।
প্রশ্নঃ (২০০) মসজিদে প্রবেশ করার সময় দেখলাম আযান
হচ্ছে। এসময় কোন কাজটি উত্তম?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে, আগে
আযানের জবাব দিবে। অতঃপর আযান শেষে দু’আ পাঠ করবে। তারপর তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা
সুন্নাত স্বলাত শুরু করবে। তবে বিদ্বানদের মধ্যে অনেকে জুমআর দিনের বিষয়টিকে
ব্যতিক্রম বলেছেন। অর্থাৎ- মসজিদে প্রবেশ করার সময় যদি দেখে যে, খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান শুরু হয়ে গেছে, তখন
আযানের জবাব না দিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত শুরু করে দিবে। যাতে করে খুতবা
শোনতে পারে। কারণ হচ্ছে, খুতবা শোনা ওয়াজিব, আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়। সুতরাং যা ওয়াজিব নয় তার চাইতে ওয়াজিবের
গুরুত্ব দেয়া উত্তম।
প্রশ্নঃ (২০১) আযানের জবাবে ‘রাযিতু বিল্লা-হি
রাব্বা,
ওয়াবিল ইসলামি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন
নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’ দু’আটি কখন বলতে হবে?
উত্তরঃ হাদীছের বাহ্যিক অর্থে বুঝা যায়, মুআয্যিন যখন ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্ বলবে তখন তার জবাব দিয়ে বলবে, ‘রাযীতু
বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলা-মি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন্নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’ কেননা হাদীছে এসেছেঃ
مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولا وَبِالإسْلامِ دِينًا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ
“যে
ব্যক্তি আযান শুনে বলবেঃ ‘আশহাদু আন লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্রাযীতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল
ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন্নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’
অন্য রেওয়াতে বলা হয়েছেঃ “যে বলবে, ‘আমিও সাক্ষ্য
দিচ্ছি’।” এই কথাটি প্রমাণ করে যে, উক্ত দু’আটি
মুআয্যিনের ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান
রাসূলুল্লাহ্’ বলার পর পরই বলবে।
প্রশ্নঃ (২০২) আযানের দু’আর শেষে “ইন্নাকা লা
তুখ্লিফুল মীআ’দ” বাক্যটি বৃদ্ধি করে পড়া কি ছহীহ্হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তরঃ হাদীছ শাস্ত্রের পন্ডিতদের মধ্যে এ বাক্যটি নিয়ে
মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ইহা ছহীহ্নয়। ইহা শায। কেননা
আযানের দু’আর ব্যাপারে যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাদের অধিকাংশই এবাক্যটি উল্লেখ
করেননি। বিশুদ্ধ হলে তো তা বাদ দেয়া বৈধ নয়। দু’আ ও প্রশংসার বাক্যে বা অনুরূপ
ক্ষেত্রে কোন শব্দ ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা এটা দ্বারা ইবাদত সম্পন্ন করা হয়।
বিদ্বানদের মধ্যে অন্যরা বলেছেনঃ এর সনদ ছহীহ্।
এটা বলা যায় এতে কোন বাধা নেই। শায়খ আবদুল আযীয বিন বায বলেছেন, হাদীছটির সনদ ছহীহ্। বায়হাক্বী ছহীহ্সনদে এটা বর্ণনা করেছেন।
প্রশ্নঃ (২০৩) ইক্বামতের শব্দগুলো কি
মুক্তাদীদেরকেও বলতে হবে?
উত্তরঃ ইক্বামত বলার সময় তার পিছে পিছে শব্দগুলো উচ্চারণ
করার ব্যাপারে একটি হাদীছ আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা যঈফ। যা গ্রহণের
অযোগ্য। অতএব তা না বলাই ভাল।
প্রশ্নঃ (২০৪) ইক্বামতে ‘ক্বাদক্বামাতিছ্স্বলাত’
বলার সময় ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলা কি ঠিক?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মুআয্যিন যখন ইক্বামতে ‘ক্বাদক্বামাতিছ
স্বলাত’ বলত, তখন তিনি বলতেন, ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’। কিন্তু হাদীছটি যঈফ হওয়ার কারণে দলীল
হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্নঃ (২০৫) স্বলাত আদায় করার জন্য উত্তম সময় কি? প্রথম সময়ই কি সর্বোত্তম?
উত্তরঃ শরীয়ত নির্ধারিত সময়ে স্বলাত আদায় করাই স্বলাতের
পূর্ণাঙ্গরূপ। এজন্য ‘আল্লাহর কাছে কোন্আ‘মালটি উত্তম?’ এ প্রশ্নের জবাবে নবী (ﷺ) বলেন, “সময়মত স্বলাত আদায় করা।”
হাদীছে একথা বলা হয়নি ‘স্বলাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।’ কেননা কিছু স্বলাত তো এমন
আছে যা সময়ের আগেই আদায় করা সুন্নাত। আর কিছু স্বলাত এমন আছে যা সময় হওয়ার পরও
দেরী করে আদায় করা সুন্নাত। যেমন এশা স্বলাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করে
আদায় করা সুন্নাত। অতএব কোন নারী যদি প্রশ্ন করে, গৃহে
অবস্থানের সময় যদি আমি এশা স্বলাতের আযান শুনি, তবে আমার
জন্য কোনটি উত্তম- আযানের পর পর এশা স্বলাত আদায় করে নেয়া নাকি রাতের এক তৃতীয়াংশ
পর্যন্ত দেরী করা?
জবাবে বলব, তার জন্য
উত্তম হচ্ছে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে এশা স্বলাত আদায় করা। কেননা নবী (ﷺ) একদা রাতে বের হতে দেরী করলেন। এমনকি লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নারী ও শিশুরা তো ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর তিনি বের হয়ে
স্বলাত আদায় করলেন এবং বললেন,إِنَّهُ لَوَقْتُهَا لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي “এটাই এ স্বলাতের সময়। আমার
উম্মতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম (তবে এশা স্বলাতের জন্য এ সময়টাকে নির্ধারণ
করে দিতাম।) অতএব নারী নিজ গৃহে অবস্থানের সময় তার জন্য উত্তম হচ্ছে দেরী করে এশা স্বলাত আদায়
করা।
অনুরূপভাবে একদল লোক যদি [সফরে] থাকে (যেখানে আশে
পাশে কোন মসজিদ নেই।) তারা যদি প্রশ্ন করে এশা স্বলাত কি আমরা দ্রুত পড়ে নিব নাকি
দেরী করব? জবাবে বলবঃ তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, দেরী করা। অবশ্য দেরী করলে যদি কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আগেভাগে পড়ে নেয়াই উত্তম।
অন্যান্য স্বলাতগুলোর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, আগেভাগে প্রথম ওয়াক্তেই স্বলাত আদায় করা। ফজর, যোহর, আছর ও মাগরিব স্বলাত সমূহ প্রথম ওয়াক্তে
আদায় করবে। কিন্তু যদি দেরী করার কোন কারণ থাকে, তবে দেরী
করাই উত্তম হবে।
দেরী করার কারণ যেমন, গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড তাপদাহ শুরু হয়, তখন
যোহর স্বলাত দেরী করে ঠান্ডা সময়ে আদায় করা উত্তম। অর্থাৎ- আছর স্বলাতের কিছুক্ষণ
আগে। কেননা আছরের ওয়াক্ত নিকটবর্তী হলে তাপমাত্রা কমে আসে। একথার দলীলঃ নবী (ﷺ) বলেনঃ
]إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ [
“তাপমাত্রা প্রচন্ড হলে, যোহর স্বলাতকে দেরী
করে ঠান্ডার সময়ে আদায় করবে। কেননা প্রচন্ড গরম জাহান্নামের কঠিন প্রখরতা থেকে
আসে।” নবী (ﷺ) সফরে থাকাবস্থায় স্বলাতের সময় হলে বেলাল আযান দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেন। তখন
তিনি তাকে বলতেন “ঠান্ডা কর”। কিছুক্ষণ পর আবার আযানের জন্য উঠতেন। তিনি বলতেন, “ঠান্ডা কর।” (অর্থাৎ- রোদের তাপ কম হওয়ার অপেক্ষা কর।) কিছুক্ষণ পর
বেলাল আযান দেয়ার জন্য দাঁড়াতেন। তখন তিনি তাকে আযান দেয়ার অনুমতি দিতেন।
দেরী করে স্বলাত আদায় করা উত্তম হওয়ার আরো কারণ
এমন হতে পারেঃ যেমন, প্রথম ওয়াক্তে স্বলাত আদায়
করলে জামাআত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেরী করে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায়
করাই উত্তম। যেমন একজন লোক মাঠে-ময়দানে কর্মরত অবস্থায় স্বলাতের সময় হয়ে গেছে। সে
জানে, লোকালয়ে গেলে শেষ সময়ে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায়
করতে পারবে। এর জন্য কোনটি উত্তম- সময় হওয়ার সাথে সাথে একাকি স্বলাত আদায় করে নেয়া,
নাকি দেরী করে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা?
জবাবে বলব, এর জন্য
উত্তম হচ্ছেঃ দেরী করে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা। বরং আমি বলি, জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করার জন্য দেরী করা ওয়াজিব।
0 Comments