Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর 240 to 277


স্বলাত বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ (২৪০) ‘আমীন’ বলা কি সুন্নাত?
উত্তরঃ হ্যাঁ। আমীন বলা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। বিশেষ করে ইমাম যখন আমীন বলেন। আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী () বলেছেনঃ
إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
ইমাম যখন আমীন বলেন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেস্তাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের গুনাহ্ক্ষমা করা হবে।”
ইমাম ও মুক্তাদীর আমীন বলা একই সময়ে হতে হবে। কেননা নবী () বলেছেন, “ইমাম যখন আমীন বলেন তোমরাও আমীন বলবে।”
 প্রশ্নঃ (২৪১) (ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন) পাঠ করার সময় ‘আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই’। এরূপ কথা বলার বিধান কি?
উত্তরঃ মুক্তাদীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে ইমামের পড়া চুপ করে শোনা। ইমাম যখন সূরা ফাতিহা শেষ করে আমীন বলবেন সেও আমীন বলবে। এই আমীন বলা ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় কোন দু’আ ইত্যাদি বলা থেকে যথেষ্ট হবে।
 প্রশ্নঃ (২৪২) স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে বিদ্বানদের থেকে নিম্নরূপ মত পাওয়া যায়।
প্রথম মতঃ স্বলাতে কখনই সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব নয়। স্বরব, নীরব কোন স্বলাতেই ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- কারো জন্য পাঠ করা ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হচ্ছে কুরআন থেকে সহজ যে কোন কিছু পাঠ করা। তাদের দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহবলেন, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْ الْقُرْآنِ অতএব তোমরা কুরআন থেকে সহজ কোন কিছু পাঠ কর।” (সূরা মুযাম্মিল- ২০) তাছাড়া নবী () স্বলাত শেখাতে গিয়ে গ্রাম্য লোকটিকে বলেছিলেন, “কুরআন থেকে তোমার জন্য সহজ হয় এমন কিছু পাঠ করবে।”
দ্বিতীয় মতঃ স্বরব, নীরব সকল স্বলাতে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা অবশ্য কর্তব্য। অনুরূপভাবে মাসবূক এবং স্বলাতের প্রথম থেকে জামাআতে শামিল ব্যক্তির জন্যও রুকন।
তৃতীয় মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু স্বরব বা নীরব কোন স্বলাতেই মুক্তাদীর জন্য ওয়াজিব নয়।
চতুর্থ মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য স্বরব বা নীরব স্বলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু মুক্তাদীর জন্য নীরবের স্বলাতে রুকন স্বরব স্বলাতে নয়।
আমার মতে প্রাধান্যযোগ্য মতটি হচ্ছেঃ স্বরব, নীরব সকল স্বলাতে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা ফরদ্ব। তবে মাসবূক যদি ইমামের রুকূর সময় স্বলাতে শামিল হয়, তবে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছে নবী () এর সাধারণ বাণীঃ তিনি বলেন,
لاصَلاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ 
যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার স্বলাত হবে না।”
তিনি আরো বলেন,
مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ ثَلَاثًا غَيْرُ تَمَامٍ
যে ব্যক্তি স্বলাত আদায় করবে অথচ তাতে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার স্বলাত অসম্পূর্ণ- রাসূলুল্লাহ্(ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বলেছেন।” অর্থাৎ- তার স্বলাত বাতিল।
উবাদা বিন ছামেত বর্ণিত হাদীছে নবী () একদা ফজরের স্বলাত শেষ করে ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ
]لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ قُلْنَا نَعَمْ هَذًّا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا[
তোমরা কি ইমামের পিছনে কোন কিছু পাঠ কর? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রুত পাঠ করে থাকি। তিনি বললেন, তোমরা এরূপ করো না। তবে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি উহা পাঠ করবে না তার স্বলাত হবে না।” স্বশব্দের স্বলাতের ক্ষেত্রে এটি সুস্পষ্ট দলীল যে, সূরা ফাতিহা ছাড়া স্বলাত হবে না।
কিন্তু মাসবূকের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছেঃ আবু বাকরা h এর হাদীছ। তিনি নবী ()কে রুকূ অবস্থায় পেলেন। তখন দ্রুতগতিতে কাতারে পৌঁছার আগেই তিনি রুকূ করলেন। এরপর ঐ অবস্থায় হেঁটে হেঁটে কাতারে প্রবেশ করলেন। নবী () স্বলাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ করেছে? আবু বাকরা বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল! নবী () বললেনঃ زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ আল্লাহতোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর কখনো করিও না।” এহাদীছে দেখা যায় আবু বাকরা যে রাকাআতটি ছুটে যাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়া করলেন, নবী () তাকে ঐ রাকাআতটি পুনরায় আদায় করার আদেশ করলেন না। এটা ওয়াজিব হলে নবী ()সে আদেশ করতেন। যেমনটি আদেশ করেছিলেন ঐ ব্যক্তিকে যে কিনা তাড়াহুড়া করে স্বলাত আদায় করেছিল, আর স্বলাতের রুকন্তওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করছিল না। তখন নবী () তাকে স্বলাত ফিরিয়ে পড়ার আদেশ করেছিলেন।
মাসবূকের সূরা ফাতিহা পাঠ রহিত হওয়ার যুক্তিগত দলীল হচ্ছেঃ এই মাসবূক তো কিরআত পাঠ করার জন্য দাঁড়ানোর সুযোগই পায়নি। অতএব সুযোগ না পেলে তার আবশ্যকতাও রহিত হয়ে যাবে। যেমন্ত হাত কাটা ব্যক্তি ওযু করার সময় তার হাতের কাটা অংশের পরিবর্তে বাহু ধৌত করবে না। বরং ধৌত করার স্থান উপস্থিত না থাকার কারণে এ ফরদ্ব রহিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেল তার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। কেননা ক্বিরআত পাঠ করার জন্য দন্ডায়মান হওয়ার সুযোগই সে পায়নি। আর ইমামের অনুসরণ করতে গিয়ে এখানে দন্ডায়মান হওয়াও রহিত হয়ে যাবে।
আমার দৃষ্টিতে এমতটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। পূর্বোল্লেখিত উবাদা বিন ছামেত h এর হাদীছটি- (ফজরের স্বলাতে ক্বিরআত পাঠ সংক্রান্ত হাদীছটি) যদি না থাকতো, তবে স্বরবে কিরাআত বিশিষ্ট স্বলাতে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক হতো না। আর সেটাই হতো প্রাধান্যযোগ্য মত। কেননা নীরবে শ্রবণকারী পাঠকের মতই ছাওয়াবের অধিকারী হয়। এজন্যই আল্লাহতা‘আলা মূসা (আঃ)কে বলেনঃ قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৯) অথচ সে সময় দু’আ শুধু মাত্র মূসা (আঃ) এককভাবে করেছিলেন। আল্লাহবলেনঃ
]وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوْا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ[
আর মূসা বললেন, হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আপনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের প্রদান করেছো দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্য, সৌন্দর্য ও সম্পদ। হে আমাদের পালনকর্তা! ওরা আপনার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন, তাদের হৃদয় কঠোর করে দিন, যাতে তারা ঈমান না আনে। যাতে করে তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করতে পারে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৮) এখানে কি আল্লাহহারূনের দু’আর কথা উল্লেখ করলেন? উত্তরঃ না। তারপরও আল্লাহবললেনঃ “তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” বিদ্বানগণ বলেনঃ এক ব্যক্তি দু’আ করা সত্বেও দ্বিবচন শব্দ এখানে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, মূসা (আঃ) দু’আ করছিলেন আর হারূন (আঃ) আমীন বলছিলেন।
আর আবু হুরায়রা h বর্ণিত হাদীছ: (من كان له إمام، فقراءة الإمام له قراءة) “যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের ক্বিরাতই তার ক্বিরাত (হিসেবে যথেষ্ট)।” কিন্তু হাদীছের সনদ যঈফ (দুর্বল)। কেননা তা মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাফেয ইবনু কাছীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন। আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীছটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই ছহীহ্নয়। তারপরও হাদীছটি দ্বারা যারা দলীল নিয়ে থাকে তারা সাধারণভাবে বলেন না যে, কোন অবস্থাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে না। বরং তাদের মধ্যে অনেকে বলেনঃ নীরবের স্বলাতে মুক্তাদীকে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইমাম যদি না থামেন (অর্থাৎ- ফাতিহা শেষ করার পর মুক্তাদীদের ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ দেয়ার জন্য কিছু সময় নিরব না থাকেন।) তবে মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে? উত্তর হচ্ছেঃ ইমামের পড়ার সময়ই মুক্তাদী পড়বে। কেননা ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্()এর পড়ার সাথে সাথেই পড়তেন। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ
(لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا)
তোমরা উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি তা পাঠ করবে না তার স্বলাত হবে না।”
 ইমামের পিছনে মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?
প্রশ্নঃ (২৪৩) মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে? ইমামের ফাতিহা পাঠ করার সময়? নাকি ইমাম সূরা ফাতিহা শেষ করে অন্য সূরা পাঠ শুরু করলে?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে ইমামের ফাতিহা পাঠ শেষ হওয়ার পর মুক্তাদী ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা ফরদ্ব ক্বিরআত পাঠ করার সময় নীরব থাকা রুকন। ইমামের পড়ার সময় যদি মুক্তাদীও পাঠ করে তবে রুকন আদায় করার সময় নীরব থাকা হল না। আর ফাতিহা পাঠ করার পর যখন ইমাম অন্য ক্বিরআত শুরু করবে, সে সময় তা শোনার জন্য নীরব থাকা  মুস্তাহাব। অতএব উত্তম হল, ফাতিহা পাঠ করার সময় নীরব থাকবে। স্বলাতের সুন্নাত ক্বিরআত পাঠের সময় নীরব থাকার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অন্যতম রুকন সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় নীরব থেকে তা শ্রবণ করা। তাছাড়া ইমামের ‘ওয়ালায্যওয়াল্লীন’ বলার সময় মুক্তাদীও (‘ওয়ালায্যওয়াল্লীন’) পাঠ করলে তাঁর সাথে ‘আমীন’ বলা সম্ভব হবে না।
 প্রশ্নঃ (২৪৪) স্বলাত বা কুরআন তেলাওয়াতের সময় কিভাবে অন্তর নরম করা যায়?
উত্তরঃ বিনয়-নম্রতা স্বলাতের অন্তঃসার ও আসল প্রাণ। এর অর্থ হচ্ছে, অন্তরের উপস্থিতি। ডান্তেবামে অন্তরকে নিয়ে ঘুরাফেরা না করা। বিনয়-নম্রতা বিরোধী কোন কিছু যদি মানুষের অন্তরে আসে তবে সে পাঠ করবে ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্শায়তানির রাজীম।’ যেমনটি নবী () আদেশ করেছিলেন। সন্দেহ নেই শয়তান মানুষের সমস্ত ইবাদত বিশেষ করে সর্বোত্তম ইবাদত স্বলাত বিনষ্ট করার জন্য সর্বাধিক আগ্রহী। স্বলাতরত ব্যক্তির কাছে শয়তান আগমণ করে বলে, উমুক কথা স্মরণ কর, উমুক কথা স্মরণ কর। তাকে এমন কিছুর খেয়ালে নিয়ে যায় যাতে কোন উপকার নেই। আবার স্বলাত শেষ হলে এসমস্ত খেয়াল শেষ হয়ে যায়।
অতএব মানুষের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, স্বলাতের মত গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত আদায় করার জন্য সবচেয়ে বেশী মনযোগী ও বিনয়ী হওয়া। কেননা সে তো মহান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান। তাঁর সাথে গোপনে কথা বলছে। মনে করবে সে যেন মহান আল্লাহকে দেখছে বা এতটুকু মনে করবে যে, আল্লাহতাকে দেখছেন। আর যখনই শয়তানের কুমন্ত্রনা ও বদখেয়াল মনের দুয়ারে উঁকি দিতে চাইবে তখনই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে। পাঠ করবেঃ ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্শায়তানির রাজীম।’
 প্রশ্নঃ (২৪৫) সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকার বিধান কি?
উত্তরঃ ফিক্বাহবিদদের মধ্যে থেকে কেউ মত প্রকাশ করেছেন যে, ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর অন্য সূরা শুরু করার পূর্বে কিছুক্ষণ নীরব থাকবেন, যাতে করে মুক্তাদী ফাতিহা পাঠ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এব্যাপারে নবী () থেকে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে তা হচ্ছে সামান্য বিরতী নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এবং এই ফাঁকে মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ করা আরম্ভ করে দিবে। এরপর ইমাম অন্য ক্বিরাত শুরু করে দিলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা সূরা ফাতিহা পাঠ করা মুক্তাদীর জন্য রুকন। কিন্তু ইমামের ক্বিরআত শ্রবণ করা তার জন্য মুস্তাহাব। মোটকথা নীরব থাকার মুহূর্তটি অতি সামান্য দীর্ঘ নয়।
 প্রশ্নঃ (২৪৬) ফজরের এক রাকাআত স্বলাত ছুটে গেলে বাকী রাকাআতটি কি স্বশব্দে না নীরবে পাঠ করবে?
উত্তরঃ বিষয়টি তার ইচ্ছাধীন। কিন্তু উত্তম হচ্ছে নীরব কন্ঠে পাঠ করা। কেননা জোর কন্ঠে পাঠ করলে হয়তো অন্য মুছল্লীদের স্বলাতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
 রুকূ থেকে উঠার পর আবার হাত বাঁধার মাসআলা
প্রশ্নঃ (২৪৭) রাসূলুল্লাহ্() এর স্বলাতের পদ্ধতির উপর লিখিত একটি পুস্তকে পড়লাম, রুকূ থেকে উঠার পর আবার হাত বাঁধা একটি বিভ্রান্তকর বিদআত। এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা কি? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন
উত্তরঃ যে বিষয়ে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে সে বিষয়ে কাউকে সুন্নাতের পরিপন্থী বিদআতী বলতে আমি সংকোচ বোধ করি। এটা উচিত নয়। যারা রুকূ থেকে উঠে আবার হাত বাঁধেন, তারা নিজেদের মতের পক্ষে সুন্নাত থেকে দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। এবিষয়টি কারো গবেষণার বিরোধী হলে তাকে সরাসরি বিদআতী বলা খুবই কঠিন বিষয়। এধরণের বিষয়ে বিদআত শব্দ উচ্চারণ করা করো পক্ষে উচিত নয়। কেননা যে সকল বিষয়ে গবেষণার অবকাশ থাকে এবং হতে পারে একথা সত্য অথবা ঐকথা সত্য, তাতে পরস্পরে বিদআতের অপবাদ দিতে শুরু করলে মুসলিম সমাজে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হবে, একে অপরে ঘৃণা ও বিদ্বেষের সূচনা হবে। ইসলামের শত্রুরা তা নিয়ে হাসাহাসি করবে।
আমার মতে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ রুকূ থেকে উঠার পর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকে স্থাপন করা একটি সুন্নাত। দলীলঃ সাহাল বিন সা’দ h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “লোকেরা নির্দেশিত হত যে, স্বলাতে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।”
গভীরভাবে লক্ষ্য করে ও অনুসন্ধান করে হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ করার যুক্তি সমূহ হচ্ছেঃ যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ সিজদার সময় হাত দু’টি কোথায় থাকবে? উত্তরঃ যমীনের উপর। প্রশ্নঃ রুকূ অবস্থায় হাত কোথায় থাকবে? উত্তরঃ হাঁটুদ্বয়ের উপর। প্রশ্নঃ বসাবস্থায় হাত দু’টি কোথায়? উত্তরঃ রানের উপর।
থাকল দাঁড়ানো অবস্থার কথা। রুকূর আগে ও পরে উভয় অবস্থা হচ্ছে দাঁড়ানো। আর তা এই বাণীর অন্তর্ভুক্ত হবেঃ “লোকেরা নির্দেশিত হত যে, স্বলাতে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।” অর্থাৎ- রুকূর আগে বা পরে যে কোন অবস্থার দাঁড়ানোতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখতে হবে। এটাই হচ্ছে সত্য, সুন্নাতে নববী () যার প্রমাণ বহণ করে।
মোটকথা উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর দু’টি পয়েন্টে বিভক্তঃ
প্রথমঃ কারো পক্ষে উচিত নয় বিদআত শব্দটি এমন কাজে ব্যবহার করা যেখানে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে।
দ্বিতীয়ঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে রুকূ থেকে উঠে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখাটা সুন্নাত, বিদআত নয়। উল্লেখিত সাহাল বিন সা’দের হাদীছ হচ্ছে এর দলীল। কিন্তু এ অবস্থার ব্যতিক্রম হচ্ছে রুকূ, সিজদা ও বসাবস্থা। কেননা এসকল স্থানে কিভাবে হাত রাখতে হবে হাদীছে তার বিশদ বিবরণ এসেছে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
 প্রশ্নঃ (২৪৮) ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’ বলার পর ‘ওয়াশ্শুক্রু’ শব্দ বৃদ্ধি করে বলার বিধান কি?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে শুধুমাত্র প্রমাণিত দু’আ ও যিকির সমূহ পাঠ করাই উত্তম। নিজের পক্ষ থেকে কোন শব্দ বৃদ্ধি না করা। রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর (সামিআল্লাহুলিমান হামীদাহ্বলে) পাঠ করবেঃ ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’। ‘ওয়াশ্শুক্রু’ শব্দ বৃদ্ধি করা জায়েয নয়। কেননা এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই।
উল্লেখ্য যে, এ সময় চার ধরণের শব্দ প্রমাণিত হয়েছেঃ
১)          রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’
২)          রাব্বানা লাকাল হামদু’
৩)          আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’
৪)          আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদু’
এগুলো সবটাই এক সাথে বলবে না; বরং কোন স্বলাতে এটা কোন স্বলাতে ওটা পাঠ করবে।
 প্রশ্নঃ (২৪৯) সিজদায় যাওয়ার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সিজদায় যাওয়ার জন্য প্রথমে হাঁটু রাখবে তারপর হাত রাখবে। কেননা নবী () নিষেধ করেছেন প্রথমে হাত রেখে সিজদায় যেতে। তিনি এরশাদ করেনঃ
]إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ[
তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সিজদা করবে, সে যেন উটের মত করে না বসে। সে যেন হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে।” হাদীছের বাক্য এরূপ।
কিন্তু হাদীছটি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। হাদীছের প্রথম বাক্যঃ ‘উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে।’ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে সিজদার পদ্ধতিতে। কেননা (الكاف) তাশবীহ্বা তুলনা বুঝানোর জন্য নেয়া হয়েছে। যে অঙ্গের উপর সিজদা করতে হবে তার নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্য করা হয়নি। এখানে যদি অঙ্গ উদ্দেশ্য হতো তবে এরূপ বলতে হতো, (উট যে অঙ্গের উপর বসে সেরূপ যেন না বসে।) তখন আমরা বলতে পারি, হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসবে না। কেননা উট হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে থাকে। কিন্তু নবী () একথা বলেননিঃ (উট যে অঙ্গের উপর বসে সেরূপ যেন না বসে।) কিন্তু তিনি বলেছেনঃ ‘উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে।’ অতএব এখানে বসার পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, অঙ্গের উপর নয়।
একারণে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, হাদীছের শেষাংশ বর্ণনাকারীর নিকট উল্টা হয়ে গেছে। শেষাংশটা এরূপ বলা হয়েছেঃوَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখবে।’ কিন্তু সঠিক বাক্য এরূপ হবেঃ وَلْيَضَعْ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।’ কেননা হাঁটুর আগে হাত রাখলেই উটের মত বসা হল। উট বসার সময় প্রথমে তার হাত দু’টো রাখে। উটের বসা প্রত্যক্ষ করলে এটাই প্রমাণিত হবে।
অতএব হাদীছের প্রথমাংশের সাথে শেষাংশের সামঞ্জস্য করতে চাইলে বলতে হবেঃ ‘হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।’
জনৈক বিদ্বান এব্যাপারে প্রবন্ধ রচনা করেছেন। নাম দিয়েছেনঃ (فتح المعبود في وضع الركبتين قبل اليدين في السجود) এতে তিনি খুব সুন্দরভাবে উপকারী কথা লিখেছেন।
সুতরাং সিজদায় যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্() নির্দেশিত সুন্নাত হচ্ছেঃ দু’হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।
 প্রশ্নঃ (২৫০) সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে সিজদা করার বিধান কি?
উত্তরঃ সিজদার সময় সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া সুন্নাতের পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ্()এর স্বলাতের বর্ণনা যারা করেছেন, তাদের কেউ একথা বলেননি যে, তিনি সিজদার সময় পৃষ্ঠদেশ অতিরিক্ত লম্বা করতেন। যেমনটি তিনি রুকূর সময় পিঠ অতিরিক্ত চওড়া করতেন। শরীয়ত সম্মত সুন্নাত হচ্ছে, সিজদার সময় দু’রান থেকে পেট আলাদা রাখবে এবং উঁচু করবে। কিন্তু সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে যাবে না। যেমনটি অনেকে করে থাকে।
 প্রশ্নঃ (২৫১) সিজদার কারণে কপালে দাগ পড়া কি নেক লোকের পরিচয়?
উত্তরঃ সিজদার কারণে কপালে দাগ পড়া নেক লোকের আলামত নয়। বরং তা হচ্ছে মুখমন্ডলের নূর, হৃদয়ের উন্মুক্ততা ও প্রশস্ততা, উত্তম চরিত্র প্রভৃতি। সিজদার কারণে কপালে যে দাগ পড়ে তা অনেক সময় চামড়া নরম হওয়ার কারণে- যারা শুধু মাত্র ফরদ্ব স্বলাত আদায় করে- তাদেরও হয়ে থাকে। অথচ অনেক লোক অধিকহারে এবং দীর্ঘ সিজদা করেও তাদের কপালে এ চিহ্ন দেখা যায় না।
 প্রশ্নঃ (২৫২) দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানোর বিধান কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ছহীহ্মুসলিমে একটি হাদীছ রয়েছে। ইবনু ওমার h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী () যখন স্বলাতে বসতেন... তিনি বলেন, তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন।” অন্য শব্দে বলা হয়েছেঃ “যখন তিনি তাশাহুদে বসতেন।” প্রথম বাক্যটি আ’ম বা ব্যাপক অর্থবোধক। আর দ্বিতীয় বাক্যটি খাছ বা বিশেষ অর্থবোধক। কায়েদা বা মূলনীতি হচ্ছে খাছ বিষয়কে যদি এমন ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় যা আ’মের অর্থ বহন করে, তখন আ’ম বিষয়কে আর খাছ করা হবে না। উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। আপনি জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, ছাত্রদের সম্মানিত করুন। এবং তাকে বললেন, মুহাম্মাদকে সম্মানিত করুন। মুহাম্মাদ ছাত্রদেরই অন্তর্ভুক্ত। এখানে একথা প্রমাণ হয় না যে, অন্যান্য ছাত্রদেরকে সম্মানিত করা হবে না। উছুলবিদ বিদ্বানগণ একথা বলেছেন। শায়খ শানক্বীতী (আযওয়াউল বায়ান) গ্রন্থে এ মূলনীতিটি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু যদি বলে থাকে ছাত্রদেরকে সম্মানিত কর। তারপর বলল, ক্লাস রূমে যারা ঘুমায় তাদের সম্মানিত করো না। এখানে খাছ বা বিশেষ করে দেয়া হল। কেননা আ’ম বা ব্যাপকের বিধানের বিপরীত বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া মাসআলাটির ব্যাপারে আলাদা হাদীছও পাওয়া যায়। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, ‘ফতহুর্রাব্বানী’ গ্রন্থের (১/১৪৭) লিখক তার সনদকে হাসান বলেন। যাদুল মা’আদের টিকা লিখকদের কেউ কেউ তার সনদ ছহীহ্বলেও মন্তব্য করেছেন। “রাসূলুল্লাহ্() দু’সিজদার মধ্যে বসলে আঙ্গুলসমূহ মুষ্টিবদ্ধ করতেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।”
আঙ্গুল নড়াতে হবে না এ ব্যাপারে যারা কথা বলেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তবে ডান হাত কি অবস্থায় থাকবে? যদি জবাবে বলা হয়, রানের উপর ছড়িয়ে রাখতে হবে। প্রশ্ন হবে, একথার দলীল কি? কোন হাদীছে তো একথা বলা হয়নি যে, তিনি () ডান হাতকে উরুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। এরূপ কোন হাদীছ থাকলে ছাহাবীগণ তার বর্ণনা দিতেন্ত যেমনটি বর্ণনা পাওয়া যায় বাম হাতকে উরুর উপর ছড়িয়ে রাখার ব্যাপারে।
 প্রশ্নঃ (২৫৩) জালসা ইস্তেরাহা করার বিধান কি?
উত্তরঃ এ মাসআলাটিতে বিদ্বানদের তিন ধরণের মতামত পাওয়া যায়।
প্রথমঃ জালসা ইস্তেরাহা করা সবসময় মুস্তাহাব।
দ্বিতীয়ঃ জালসা ইস্তেরাহা করা কখনই মুস্তাহাব নয়।
তৃতীয়ঃ উল্লেখিত দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত। সরাসরি দাঁড়াতে যাদের কষ্ট হয় তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে। আর যাদের কষ্ট হয় না তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে না।
মুগনী গ্রন্থে (১/৫২৯ দারুল মানার প্রকাশনী) বলা হয়েছেঃ “এই তৃতীয় মতটি দ্বারা হাদীছ সমূহের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত।” অতঃপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ ‘আলী h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফরদ্ব স্বলাতে সুন্নাত হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যখন প্রথম দু’রাকাআত শেষ করে উঠবে, তখন দু’হাত দিয়ে মাটিতে ভর করে যেন না উঠে। তবে যদি অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি অনুরূপ করতে সক্ষম না হয়, তবে সে হাত দ্বারা মাটিতে ভর করে উঠতে পারে। (হাদীছটি আছরাম বর্ণনা করেন।) এরপর মুগনী গ্রন'কার বলেন, মালেক বিন হুওয়াইরিছ h বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে,
إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ عَنِ السَّجْدَةِ الثَّانِيَةِ جَلَسَ وَاعْتَمَدَ عَلَى الْأَرْضِ ثُمَّ قَامَ
নবী () যখন দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, সোজা হয়ে বসতেন, তারপর যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।”
এ হাদীছটি হচ্ছে সেই সময়ের কথা যখন নবী () দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সরাসরি দাঁড়াতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। কেননা তিনি বলেন, “আমার শরীর ভারী হয়ে গেছে। তাই তোমরা রুকূ সিজদায় আমার আগ বেড়ে কিছু করো না।”
এই তৃতীয় মতকে আমি সমর্থন করি। কেননা মালেক বিন হুওয়াইরিছ h এমন সময় নবী ()এর নিকট আগমণ করেন যখন তিনি তাবুক যুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহণ করছিলেন। আর সে সময় নবী () বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর দুর্বলতা সুস্পষ্ট হচ্ছিল। ছহীহ্মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা h বলেন,لَمَّا بَدَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَثَقُلَ كَانَ أَكْثَرُ صَلَاتِهِ جَالِسًا নবী () এর শরীর মোবারক যখন মোটা ও ভারী হয়ে গিয়েছিল, তখন অধিকাংশ স্বলাত তিনি বসে বসে আদায় করতেন।’ আবদুল্লাহ্বিন শাক্বীক্ব h আয়েশা hকে প্রশ্ন করলেন, নবী () কি বসে বসে স্বলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, نَعَمْ بَعْدَ مَا حَطَمَهُ النَّاسُ হ্যাঁ, যখন তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।’ হাফছা h বলেন,
مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا حَتَّى كَانَ قَبْلَ وَفَاتِهِ بِعَامٍ فَكَانَ يُصَلِّي فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا
আমি রাসূলুল্লাহ্()কে কখনো বসে নফল স্বলাত আদায় করতে দেখিনি। তবে মৃত্যুর এক বছর পূর্বে থেকে তিনি বসে নফল স্বলাত আদায় করেছেন।” অপর বর্ণনায় ‘একবছর বা দু’বছর পূর্বে থেকে।’ এ বর্ণনাগুলো সবই ছহীহ্মুসলিমে রয়েছে। একথার সমর্থন পাওয়া যায় মালিক বিন হুওয়াইরিছ বর্ণিত হাদীছে, যাতে মাটিতে ভর করে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। আর সাধারণতঃ প্রয়োজন ছাড়া কোন বস্তর উপর নির্ভর করার প্রশ্নই উঠে না।
সম্ভবতঃ আমাদের সমর্থনে আবদুল্লাহ্বিন বুহায়না h বর্ণিত হাদীছটি পেশ করা যায়। তিনি বলেন, ‘নবী () একদা তাদেরকে নিয়ে যোহর স্বলাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি দু’রাকাআত পড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন, বসলেন না।’ এখানে ‘বসলেন না’ শব্দটি দ্বারা সবধরণের বসা বুঝা যায়। অর্থাৎ- জালাসা ইস্তেরাহাতেও বসলেন না। কিন্তু এর জবাবে বলা যায়, এখানে ‘বসলেন না’ বলতে তাশাহুদের জন্য বসা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)
 প্রশ্নঃ (২৫৪) তাশাহুদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তর্জনী আঙ্গুল নড়ানোর বিধান কি?
উত্তরঃ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দু’আর সময় হবে। পূরা তাশাহুদে নয়। যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছেঃ “তিনি উহা নাড়াতেন ও দু’আ করতেন।” এর কারণ হচ্ছেঃ দু’আ আল্লাহর কাছেই করা হয়। আর আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তা’আলা আসমানে আছেন। তাই তাঁকে আহবান করার সময় উপরে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে। আল্লাহবলেন,
]أَأَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ الأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ، أَمْ أَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ[
তোমরা কি নিরাপদে আছ সেই সত্বা থেকে যিনি আসমানে আছেন যে, তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না? তখন আকস্মিকভাবে যমীন থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা নাকি তোমরা নিরাপদ আছ সেই সত্বার ব্যাপারে যিনি আসমানের অধিপতি তোমাদের উপর কঙ্করবর্ষী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে, আমার সকর্ত করণ কিরূপ ছিল।” (সূরা মুলকঃ ১৬-১৭) নবী () বলেন, أَلَا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ তোমারা কি আমাকে আমানতদার মনে করো না? অথচ আমি যিনি আসমানে আছেন তার আমানতদার।” সুতরাং আল্লাহআসমানে তথা সবকিছুর উপরে আছেন। যখন আপনি দু’আ করবেন উপরের দিকে ইঙ্গিত করবেন। একারণে নবী () বিদায় হজ্জে খুতবা প্রদান করে বললেন, “আমি কি পৌঁছিয়েছি?” তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুল উঠালেন
 এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন বললেন, “হে আল্লাহতুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহতুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহতুমি সাক্ষী থেকো।” এদ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহতা’আলা সকল বস্তর উপরে অবস্থান করেন। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত ফিতরাতী ভাবে, বিবেক যুক্তি ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এই ভিত্তিতে যখনই আপনি আল্লাহতা’আলাকে ডাকবেন তাঁর কাছে দু’আ করবেন, তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন। আর অন্য অবস্থায় তা স্থির রাখবেন।
এখন আমরা অনুসন্ধান করি তাশাহুদে দু’আর স্থানগুলোঃ ১) আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ২) আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ্ছালিহীন। ৩) আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ ৪) আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ ৫) আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নাম ৬) ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি। ৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাত। ৮) ওয়ামিন ফিতনাতল মাসীহিদ্দাজ্জাল। এই আটটি স্থানে আঙ্গুল নাড়াবে এবং তা আকশের দিকে উত্থিত করবে। এগুলো ছাড়া অন্য কোন দু’আ পাঠ করলেও আঙ্গুল উপরে উঠাবে। কেননা দু’আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে।
 প্রশ্নঃ (২৫৫) প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহুদের শব্দগুলো পাঠ করবে? না কি দরূদও পাঠ করবে?
উত্তরঃ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট স্বলাতের প্রথম তাশাহুদে শুধুমাত্র পাঠ করবেঃ
التَّحِياَّتُ لِلَّهِ وَالصَّلَواَتُ وَالطَّيِّباَتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهاَ النَّبِيُّ وَرَحَمْةُ اللهِ وبركاته، السَّلاَمُ عَلَيْناَ وَعَلَى عِباَدِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أشْهَدُ أنْ لاَإلَهَ إلاَّ اللهُ وَأشْهَدُ أنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.
এটাই উত্তম। যদি এরপর দরূদ পাঠ করে তবেও কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। কিন্তু আমার মতে সুন্নাতের নিকটবর্তী কথা হচ্ছে দরূদের পূর্বের বাক্যটি পাঠ করা- দরূদ না পড়া। তবে ইমাম তাশাহুদ দীর্ঘ করলে দরূদ পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (২৫৬) স্বলাতে তাওয়ার্রুক করার বিধান কি? এ বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্যই?
উত্তরঃ যে সকল স্বলাতে দু’টি তাশাহুদ আছে তার শেষ তাশাহুদে তাওয়ার্রুক করা সুন্নাত। যেমন, মাগরিব, এশা, যোহর ও আছর স্বলাতে। কিন্তু যে স্বলাতে শুধু একটিই তাশাহুদ- যেমন ফজর স্বলাত- তাতে তাওয়াররুক করা সুন্নাত নয়।
আর এই সুন্নাত নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রমাণিত। কেননা ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে বরাবর। তবে দলীলের ভিত্তিতে যে পার্থক্য পাওয়া যায় তার কথা ভিন্ন। কিন্তু এমন কোন ছহীহ্দলীল নেই যা দ্বারা নারী-পুরুষের স্বলাতে পার্থক্য প্রমাণিত হয়। স্বলাতের পদ্ধতির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলেই সমান।
 প্রশ্নঃ (২৫৭) ইমাম যদি শুধুমাত্র ডান দিকে একবার সালাম ফেরায় তাহলে কি যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট মনে করেন। আর কেউ কেউ বলেছেন, অবশ্যই দু’দিকে সালাম দিতে হবে। আবার কেউ বলেন, এক সালাম নফল স্বলাতের ক্ষেত্রে জায়েয, ফরদ্বে নয়।
কিন্তু সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, দু’দিকে সালাম ফেরানো। কেননা এটাই নবী () থেকে অধিকহারে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম যদি একদিকে সালাম ফেরায় আর মুক্তাদী মনে করে একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট নয়, তবে সে দু’দিকেই সালাম ফেরাবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু ইমাম যদি দু’দিকে সালাম দেয়, আর মুক্তাদী মনে করে একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট, তবে সে ইমামের অনুসরণ করার স্বার্থে উভয় দিকে সালাম ফেরাবে।
 প্রশ্নঃ (২৫৮) স্বলাত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কি ইমাম উঠে চলে যেতে পারেন? নাকি কিছুটা অপেক্ষা করবেন?
উত্তরঃ ইমামের জন্য উত্তম হচ্ছে সালাম ফেরানোর পর সামান্য কিছু সময় ক্বিবলামুখী হয়ে বসে থাকবেন। উক্ত সময়ের মধ্যে তিনবার أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ আস্তাগফিরুল্লাহ্’ ও একবার اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلامُ تَبَارَكْتَ ياَ ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ আল্লাহুম্মা আন্তাস্সালাম ওয়া মিনকাস্সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ পাঠ করবেন। তারপর মুক্তাদীদের দিকে ফিরে বসবেন।
ইমাম উঠে চলে যেতে চাইলে যদি মুক্তাদীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় তবে তার জন্য উত্তম হচ্ছে কিছুক্ষণ বসে থেকে অপেক্ষা করবে। ভীড় কম থাকলে ফিরে যেতে কোন বাধা নেই।
মুক্তাদীর জন্যে উত্তম হচ্ছে ইমামের আগে ফিরে না যাওয়া। কেননা নবী () বলেন, “আমার আগেই তোমরা ফিরে যেও না।” কিন্তু ইমাম যদি ক্বিবলামুখী হয়ে সুন্নাতী সময়ের চাইতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে। তবে মুক্তাদীদের ফিরে যেতে কোন বাধা নেই।
 প্রশ্নঃ (২৫৯) স্বলাত শেষ করেই পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা ও ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু’ (আল্লাহকবূল করুন) বলা সম্পর্কে আপনার মত কি?
উত্তরঃ স্বলাত শেষ করেই পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা ও ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু’ (আল্লাহকবূল করুন) বলার কোন ভিত্তি নেই। এ সম্পর্কে নবী () ও তাঁর ছাহাবীদের থেকে কোন কিছু প্রমাণিত নেই।
 প্রশ্নঃ (২৬০) তাসবীহ্দানা দ্বারা তাসবীহ্পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ তাসবীহ্দানা ব্যবহার করা জায়েয। তবে উত্তম হচ্ছে, হাতের আঙ্গুল ও আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা নবী () বলেন,
اعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ
আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ্গণনা কর। কেননা (ক্বিয়ামত দিবসে) এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে এবং এগুলোকে কথা বলানো হবে।”
তাছাড়া তাসবীহ ছড়া হাতে নিয়ে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা তাসবীহ্ছড়া ব্যবহার করে সাধারণতঃ তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না। এদিক ওদিকে তাকায়। সুতরাং আঙ্গুল ব্যবহার করাই উত্তম ও সুন্নাত।
 প্রশ্নঃ (২৬১) স্বলাতের পর সুন্নাত সম্মত যিকির সমূহ কি কি?
উত্তরঃ স্বলাতের পর আল্লাহর যিকির করার ব্যাপারে আল্লাহতা’আলা আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ
]فَإِذَا قَضَيْتُمْ الصَّلاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ[
যখন তোমরা স্বলাত সমাধা করবে, তখন আল্লাহর যিকির করবে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায়।” (সূরা নিসা- ১০৩) আল্লাহর এই নির্দেশের বর্ণনা দিয়েছেন নবী() তাঁর কর্ম ও বাণীর মাধ্যমে। অতএব সালাম ফেরানোর পর নিম্ন লিখিত দু’আ সমূহ পাঠ করবেঃ
১)          তিনবার ইসে-গফার করবে। অর্থাৎ- আস্তাগফিরুল্লাহ্পাঠ করবে
২)          এবং বলবেঃ
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلامُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তস্সালাম ওয়ামিন কাস্সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
৩)          অতঃপর বলবেঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
আল্লাহুম্মা লা-মা-নেআ লিমা আত্বাইতা ওয়াল মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থঃ এক আল্লাহ ছাড়া কোন হক উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নাই। মালিকানা তাঁরই, সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য।
হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন তা প্রতিরোধকারী কেউ নেই। এবং আপনি যা রোধ করেন তা দানকারী কেউ নেই। আর কোন মর্যাদাবানের মর্যাদা আপনার নিকট থেকে কোন উপকার আদায় করে দিতে পারে না।
৪)          অতঃপর বলবেঃ
]لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ[
আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। তারই জন্য রাজত্ব, তারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি সকল বস্তর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত গুনাহ হতে বিরত থাকা ও আনুগত্য করার ক্ষমতা লাভ করা যায় না। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আর আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যের ইবাদত করি না। একমাত্র তাঁর অধিকারে সমস্ত নেয়ামত, তাঁরই জন্য সমস্ত সম্মান মর্যাদা, আর তাঁরই জন্য উত্তম স্ততি। আল্লাহ ব্যতীত কোন হক উপাস্য নেই। তার নিমিত্তে আমরা ধর্ম পালন করি একনিষ্ঠ ভাবে। যদিও কাফেররা তা মন্দ ভাবে।
৫)          তাসবীহ পাঠ করবে অর্থ্যাৎ ‘সুুবহানাল্লাহ’ বলবে ৩৩ বার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে ৩৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে ৩৩ বার। এবং একশ এর পূর্ণতা স্বরূপ এই দু‘আটি বলবে।
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ 
উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই তিনি এক তাঁর কোন শরীক নাই। মালিকানা তাঁরই সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য।
যে ব্যক্তি অত্র তাসবীহ্ও দু‘আটি বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশী পরিমাণ হয় না কেন।
পূর্বোল্লিখিত তাসবীহ্গুলো যে কোনটা দ্বারা শুরু করতে পারবে। আর সুুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার একসাথে ৩৩ বার বলবে অথবা প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ৩৩ বার করে বলবে কোন অসুবিধা নেই।
অনুরূপভাবে উক্ত তাসবীহ্সমূহ ৩৩ বারের পরিবর্তে ১০ বার করে বলতে পারবে।
৬)          সুবহানাল্লাহ্ওয়াল হামদুলিল্লাহ্ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার- এই চারটি তাসবীহ্২৫ বার পাঠ করবে। সর্বমোট ১০০ বার।
উল্লেখিত তাসবীহ্গুলোর যে কোন একটি প্রকার পাঠ করলেই হবে। কেননা ইসলামী মূলনীতি হচ্ছে, (কোন ইবাদত যদি কয়েকভাবে প্রমাণিত হয়, তবে তার প্রত্যেক প্রকার থেকে কখনো এটা কখনো ওটা বাস্তবায়ন করা সুন্নাত।) এই তাসবীহ সকল স্বলাতের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। তবে ফজর ও মাগরিব স্বলাত বাদ নিম্নলিখিত দু’আটি ১০ বার পাঠ করবেঃ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’ অনুরূপভাবে উক্ত দু’স্বলাতের পর সাত বার পাঠ করবে এই দু’আঃ (رَبِّ أجِرْنِيْ مِنَ الناَّرِ) ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর।’
৭)          অতঃপর আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করবে। যে ব্যক্তি প্রতেক ফরদ্ব স্বলাতান্তে অত্র আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হতে বাধা দানকারী একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
৮)          তারপর একবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করবে। তবে ফজর বা মাগরীব স্বলাত এর ব্যতিক্রম- এই দুই স্বলাতের পর অত্র তিনটি সূরা তিনবার করে পাঠ করবে। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
 প্রশ্নঃ (২৬২) স্বলাতের পর হাত উত্তোলন করে দু’আ করার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাত শেষে হাত তুলে দু’আ করা শরীয়ত সম্মত নয়। দু’আ করতে চাইলে স্বলাতের মধ্যে দু’আ করা উত্তম। একারণে ইবনে মাসঊদ বর্ণিত তাশাহুদ শিক্ষার হাদীছে নবী () নির্দেশ দিয়েছেনঃ ثُمَّ لْيَتَخَيَّرْ بَعْدُ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ তারপর ইচ্ছামত যে কোন দু’আ পাঠ করবে।”
সাধারণ মানুষ অনেকেই ফরদ্ব বা সুন্নাত যে কোন স্বলাত শেষ হলেই হাত তুলে দু’আ আরম্ভ করে। এমনকি এদের অধিকাংশ এ কাজ কখনই পরিত্যাগ করে না।
অনেক লোক এমন দেখবেন ফরদ্ব স্বলাত শুরু হয়ে যাচ্ছে আর সে সুন্নাত স্বলাতের তাশাহুদে বসে আছে। সালাম ফেরানো হলেই হাত উঠাবে কিছু বলল কি না আল্লাহই জানেন আবার হাত মুখে মুছে ফেলবে। মনে করে স্বলাত শেষ করে হাত দু’টো না উঠালে যেন স্বলাতটাই সুন্দর হল না।
 প্রশ্নঃ (২৬৩) ফরদ্ব স্বলাতান্তে সমস্বরে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাতান্তে সকলে মিলে সমস্বরে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী বা অন্যান্য যিকির করা বিদআত। কেননা নবী () এবং ছাহাবীদের h থেকে যেটা প্রমাণিত রয়েছে, তাঁরা ফরদ্ব স্বলাত শেষ করে কিছুটা উঁচু আওয়াযে যিকির পাঠ করতেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পাঠ করতেন। সমস্বরে নয়। অতএব ফরদ্ব স্বলাতান্তে উঁচু কন্ঠে যিকির করা ছহীহ্সুন্নাহ্দ্বারা প্রমাণিত। আবদুল্লাহ্বিন আব্বাস h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ الْمَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوا بِذَلِكَ إِذَا سَمِعْتُهُ
নবী () এর যুগে লোকেরা ফরদ্ব স্বলাত শেষ করলে উঁচু কন্ঠে যিকির পাঠ করতেন। ইবনু আব্বাস h বলেন, উঁচু কন্ঠের যিকির শুনলে আমি বুঝতাম লোকেরা স্বলাত শেষ করেছেন।”
কিন্তু স্বলাতের পর উঁচু কন্ঠে বা নীচু কন্ঠে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে নবী () হতে কোন হাদীছ আমি জানি না। তবে ছহীহ্হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে, আয়াতুল কুরসী ও মুআব্বেযাতাইন (সূরা ফালাক ও নাস) পাঠ করা।
 প্রশ্নঃ (২৬৪) টয়লেট সারতে গেলে জামাআত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে কি করবে?
উত্তরঃ প্রথমে টয়লেটের কাজ সম্পন্ন করবে। তারপর ওযু করে স্বলাতের দিকে অগ্রসর হবে। যদিও তার জামাআত ছুটে যায়। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটা তার ওযর। নবী () বলেন,
 لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ 
খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দু’টি নাপাক বস্তর চাপ থাকলে স্বলাত নেই।”
 প্রশ্নঃ (২৬৫) স্বলাত পড়ার সময় চোখ বন্ধ রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ স্বলাত অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখা মাকরূহ। কেননা এটা নবী ()এর সুন্নাত বিরোধী। তবে যদি কোন কারণ থাকে যেমন, সম্মুখের দেয়াল বা কার্পেট বা জায়নামাজে এমন কোন নকশা থাকে যার কারণে স্বলাতের একাগ্রতা নষ্ট হয় বা সম্মুখে শক্তিশালী আলো থাকে যাতে চোখের ক্ষতির আশংকা হয়, তবে চোখ বন্ধ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ কারণ বশতঃ হলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথা তা মাকরূহ। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ইমাম ইবনুল কাইয়্যেমের যাদুল মা’আদ গ্রন' অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
 প্রশ্নঃ (২৬৬) স্বলাতরত অবস্থায় ভুলক্রমে আঙ্গুল ফুটালে কি স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে?
উত্তরঃ আঙ্গুল ফুটালে স্বলাত বাতিল হয় না। কিন্তু এটি একটি অনর্থক কাজ। যা থেকে বিরত থাকা উচিত। জামাআতের সাথে থাকলে নিঃসন্দেহে এতে অন্যান্য মুছল্লীর স্বলাতে ব্যাঘাত ঘটবে। তখন তা আরো ক্ষতিকর।
এ উপলক্ষ্যে আমি বলতে চাইঃ স্বলাত অবস্থায় নড়াচড়া করা পাঁচভাগে বিভক্তঃ
১) ওয়াজিব ২) সুন্নাত ৩) মাকরূহ ৪) হারাম ৫) জায়েয।
ওয়াজিব নড়াচড়াঃ যেমনঃ স্বলাত শুরু করেছে এমন সময় স্মরণ হল, তার টুপিতে নাপাকি রয়েছে। তখন টুপি খুলে ফেলার জন্য নড়াচড়া করা ওয়াজিব। একথার দলীল হচ্ছেঃ একদা নবী () জুতা পরে স্বলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় জিবরীল (আঃ) এসে তাঁকে সংবাদ দিলেন, তাঁর জুতায় নাপাকী রয়েছে। তিনি স্বলাতরত অবস্থাতেই জুতা খুলে ফেললেন এবং স্বলাত চালিয়ে গেলেন।
সুন্নাত নড়াচড়াঃ স্বলাত পরিপূর্ণ করার জন্য নড়াচড়া করা। যেমনঃ কাতারের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করার জন্য স্বলাত অবস্থায় সামনের কাতারে চলে যাওয়া বা ডান্তেবামে পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর কাছে সরে যাওয়া। এসবগুলো করা সুন্নাত।
মাকরূহ নড়াচড়াঃ অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া। যার সাথে স্বলাতের কোনই সম্পর্ক নেই।
হারাম নড়াচড়াঃ লাগাতার অধিকহারে নড়াচড়া করা। যেমনঃ দাঁড়ানো অবস্থায় অনর্থক কাজ করা, রুকূ অবস্থায় অধিকহারে নড়াচড়া করা, সিজদা বা বসা অবস্থায় অনর্থক নড়াচড়া করতে থাকা এমনকি এভাবে স্বলাত শেষ করা। এধরণের নড়াচড়া হারাম। এর মাধ্যমে স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে।
জায়েয নড়াচড়াঃ যেমন শরীরের কোন স্থান চুলকানোর প্রয়োজন অনুভব করল। বা শরীর থেকে মশা-মাছি তাড়ানোর দরকার পড়ল.. ইত্যাদি ছোট-খাট বিষয় যা পরস্পর নয় এবং অধিকহারে নয় তা বৈধ।
 প্রশ্নঃ (২৬৭) সুতরার বিধান কি? এবং এর সীমা কতটুকু?
উত্তরঃ সুতরা গ্রহণ করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। তবে জামাতের সাথে স্বলাত পড়লে মুক্তাদীর জন্য সুতরার দরকার নেই। ইমামের সুতরা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট। এর সীমা সম্পর্কে নবী ()কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
 مِثْلَ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ 
উটের উপর হেলান দিয়ে বসার জন্য তার পিঠে যে কাঠ রাখা হয় তার উচ্চতার বরাবর।”
এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতা। এর চেয়ে কমও বৈধ আছে। কেননা হাদীছে এসেছেঃإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ لِصَلَاتِهِ وَلَوْ بِسَهْمٍ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন স্বলাত আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরা করে নেয়।”
হাসান সনদে আবু দাউদে বর্ণিত অন্য হাদীছে বলা হয়েছেঃ “কোন কিছু না পেলে যেন একটি দাগ টেনে নেয়।” হাফেয ইবনু হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে বলেনঃ যারা হাদীছটি মুযতারাব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা সঠিক কথা বলেন নি। সুতরাং হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করার তেমন কোন কারণ নেই।
 প্রশ্নঃ (২৬৮) মসজিদে হারামে মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার বিধান কি? স্বলাত ফরদ্ব হোক বা নফল। মুছল্লী মুক্তাদী হোক বা একাকী হোক।
উত্তরঃ মসজিদুল হারাম বা অন্য কোন স্থানে মুক্তাদী মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইবনু আব্বাস h মিনায় আগমণ করলেন। তখন নবী () লোকদের নিয়ে একটি দেয়াল সামনে রেখে স্বলাত আদায় করছিলেন। ইবনু আব্বাস কাতারের সম্মুখ দিয়ে একটি গাধার পিঠে চড়ে অতিক্রম করলেন। কেউ তার প্রতিবাদ করেনি।
মুছল্লী যদি ইমাম বা একক হয়, তবে তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়া জয়েয নেই। চাই তা মসজিদুল হারামে হোক বা অন্য কোন স্থানে। কেননা সাধারণভাবে হাদীছগুলো এ কথাই প্রমাণ করে। এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, মক্কা বা মসজিদে হারামে বা মদীনার মসজিদে মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করা যাবে কোন গুনাহ্হবে না।
 প্রশ্নঃ (২৬৯) স্বলাতের সময় মুছল্লীদের সম্মুখে বৈদ্যুতিক হিটার (শীতকালে ঠান্ডা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হিটার) রাখার বিধান কি? এক্ষেত্রে কি কোন শরঈ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে?
উত্তরঃ মুছল্লীদের সম্মুখভাগে ক্বিবলার দিকে হিটার রাখতে কোন অসুবিধা নেই। শরীয়তে এর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমার কোন কিছু জানা নেই।
 প্রশ্নঃ (২৭০) স্বলাতের ক্বিরাতে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা আসলে জান্নাতের প্রার্থনা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করা জায়েয কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, এটা জায়েয। এক্ষেত্রে ইমাম, মুক্তাদী বা একক ব্যক্তির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে মুক্তাদীর যেন ইমামের ক্বিরআত নীরব থেকে শোনার ব্যাপারে কোন ব্যাঘাত না ঘাটে।
 প্রশ্নঃ (২৭১) সাহু সিজদা করার কারণ সমূহ কি কি?
উত্তরঃ সাহু সিজদা সংবিধিবদ্ধ করার পিছনে রহস্য হল এই যে, এটা স্বলাতের মধ্যে যে ত্রুটি হয় তার পূর্ণতা দান করে।
তিনটি কারণে স্বলাতে সাহু সিজদা দিতে হয়ঃ
১) স্বলাত বৃদ্ধি হওয়া। যেমন, কোন রুকূ বা সিজদা বা বসা ইত্যাদি বৃদ্ধি হওয়া।
২) হ্রাস হওয়া। কোন রুকন বা ওয়াজিব কম হওয়া।
৩) সন্দেহ হওয়া। কত রাকাত পড়েছে তিন না চার এব্যাপারে সংশয় হওয়া।
প্রথমতঃ স্বলাতে বৃদ্ধি হওয়া:
মুছল্লী যদি স্বলাতের অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি করে যেমনঃ দাঁড়ানো, বসা, রুকূ‘, সিজদা ইত্যাদি- যেমন দু‘বার করে রুকূ করা, তিন বার সিজদা করা, অথবা যোহর পাঁচ রাকাত আদায় করা। তবে তার স্বলাত বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিপরীত আ‘মাল করেছে। নবী() বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ যে ব্যক্তি এমন আ‘মাল করবে, যার পক্ষে আমাদের নির্দেশনা নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।”
কিন্তু যদি ভুলবশতঃ তা করে এবং ঐভাবেই স্বলাত শেষ করে দেয়ার পর স্মরণ হয় যে, স্বলাতে বৃদ্ধি হয়ে গেছে, তবে শুধুমাত্র সাহু সিজদা করবে। তার স্বলাতও বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু স্বলাতরত অবস্থায় যদি উক্ত বৃদ্ধি স্মরণ হয়- যেমন চার রাকাআত শেষ করে পাঁচ রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে- তবে সে ফিরে আসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
উদাহরণ: জনৈক ব্যক্তি যোহরের স্বলাত পাঁচ রাকাআত আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু শেষ তাশাহুদে বসার সময় এবৃদ্ধির কথা তার স্মরণ হল, তাহলে সে তাশাহুদ পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরাবে। তারপর সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। আর যদি সালাম ফেরানোর পর তা স্মরণ হয়, তবে সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে।
আর যদি পঞ্চম রাকাআত চলা অবস্থায় স্মরণ হয় তবে তখনই বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে। তারপর সিজদায়ে সাহু করে আবার সালাম ফেরাবে।
দলীল:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ خَمْسًا فَقَالُوا أَزِيدَ فِي الصَّلَاةِ؟ قَالَ: وَمَا ذَاكَ؟ قَالُوا: صَلَّيْتَ خَمْسًا، فسجد سجدتين بعد ما سلم. وفي رواية:فَثَنَى رِجْلَيْهِ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثم سلم 
আবদুল্লাহ্বিন মাসঊদ h কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী () যোহরের স্বলাত পাঁচ রাক্আত পড়লেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, স্বলাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কিভাবে? তাঁরা বললেন, আপনি আজ পাঁচ রাকাআত পড়েছেন। তখন তিনি দু‘টি সিজদা করলেন। অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে, তখন তিনি পা গুটিয়ে ক্বিবলামুখি হলেন, দু‘টি সিজদা করলেন অত:পর সালাম ফেরালেন।
স্বলাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো:
স্বলাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো স্বলাতে বৃদ্ধি করার অন্তর্গত। কেননা স্বলাতরত অবস্থায় সে সালামকে বৃদ্ধি করেছে। একাজ যদি ইচ্ছাকৃত করে তবে স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে হয়, কিন্তু অনেক পরে তার এ ভুলের কথা মনে পড়ল তবে স্বলাত পুনরায় ফিরিয়ে পড়বে। আর যদি একটু পরেই (যেমন দু/এক মিনিট) তবে সে অবশিষ্ট স্বলাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরাবে। অতঃপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
দলীল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّه عَنْه أّنّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِهم الظُّهْرَ أو العصر فسَلَّمَ من رَكْعَتَيْنِ فَخَرَجَ سَرَعَانُ من أبواب الْمَسْجِدِ يقولون:قَصُرَتِ الصَّلاَةُ وَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى خَشَبَةٍ الْمَسْجِدِ فاتكأَ عَلَيْهَا كأنه غضبانَ، فقام رجل فَقَالَ يَا رسول الله:أَنَسِيتَ أَمْ قَصُرَتْ الصَّلاَةُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تَقْصُرْ، فقال الرجل: بَلي نَسِيتَ فقال النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ للصحابة: أَحقٌّ ما يقول؟ قَالُوا:نعم، فتقدم النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى ما بقي من صلاته، ثم سلم ثم سجد سجدتين ثم سلم 
আবু হুরায়রা h কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী () তাদেরকে নিয়ে যোহর অথবা আছরের স্বলাত আদায় করলেন। কিন্তু দু‘রাকাআত আদায় করেই সালাম ফিরিয়ে দিলেন। কিছু লোক দ্রুত মসিজদ থেকে একথা বলতে বলতে বের হয়ে গেল যে, স্বলাত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। নবীজিও () মসজিদের এক খুঁটির কাছে গিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। মনে হচ্ছিল তিনি যেন রাগন্বিত। জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি স্বলাত সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে? নবী () বললেন, আমি তো ভুলিনি, আর স্বলাতও সংক্ষিপ্ত করা হয়নি। লোকটি বলল, বরং আপনি ভুলেই গিয়েছেন। (কারণ আপনি দু‘রাকাআত স্বলাত আদায় করেছেন।) নবী () ছাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, একি সত্য বলছে? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী () আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং অবশিষ্ট দু‘রাকাআত আদায় করে তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরলেন। তারপর দু‘টি সিজদা করলেন অতঃপর সালাম ফেরালেন।
দ্বিতীয়ত: স্বলাতে হ্রাস হওয়া:
ক) রুকন হ্রাস হওয়া:
মুছল্লী যদি কোন রুকন কম করে ফেলে- উক্ত রুকন যদি তাকবীরে তাহরিমা (স্বলাত শুরু করার তাকবীর) হয়, তবে তার স্বলাতই হবে না। চাই উহা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিক বা ভুলক্রমে ছেড়ে দিক। কেননা তার স্বলাতই তো শুরু হয়নি।
আর উক্ত রুকন যদি তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত অন্য কিছু হয় আর তা ইচ্ছাকৃত হয় তবে তার স্বলাত বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে কোন রুকন ছুটে যায়- যেমন প্রথম রাকাআতে কোন রুকন ছুটে গেল, এখন যদি দ্বিতীয় রাকাআতে সেই ছুটে যাওয়া রুকনের নিকট পৌঁছে যায়- তবে এঅবস্থায় আগের রাকাআত বাতিল হয়ে যাবে এবং এটাকে প্রথম রাকাআত গণ্য করবে এবং বাকী অংশ পূরা করে সাহু সিজদা দিবে।
কিন্তু যদি দ্বিতীয় রাকাআতে ছুটে যাওয়া সেই রুকনে না পৌঁছে, তবে ছুটে যাওয়া রুকনটি আগে আদায় করবে তারপর বাকী অংশগুলো আদায় করবে এবং সাহু সিজদা দিবে।
উদাহরণ: জনৈক মুছল্লী প্রথম রাকাআতের দ্বিতীয় সিজদাটি ভুলে গেল। যখন সেকথা স্মরণ হল, তখন সে দ্বিতীয় রাকাআতের দু‘সিজদার মধ্যবর্তি স্থানে বসেছে। এঅবস্থায় আগের রাকাতটি বাতিল হয়ে যাবে এবং এটাকে প্রথম রাকাত গণ্য করে অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করে স্বলাত শেষে সাহু সিজদা করবে।
আর একটি উদাহরণ: জনৈক ব্যক্তি প্রথম রাকাআতে একটি মাত্র সিজদা করেছে। তারপর দ্বিতীয় সিজদা না করেই দাঁড়িয়ে পড়েছে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে রুকূ করার পর সেই ভুলের কথা স্মরণ হয়েছে, তবে সে বসে পড়বে এবং সেই ছুটে যাওয়া সিজদা দিবে এবং সেখান থেকে স্বলাতের বাকী অংশ পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। তারপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
খ) কোন ওয়াজিব হ্রাস হওয়া:
মুছল্লী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে তবে তার স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে হয় আর উক্ত স্থান ছেড়ে যাওয়ার আগেই যদি স্মরণ হয়ে যায় তবে তা আদায় করবে এতে কোন দোষ নেই- সাহু সিজদা দিতে হবে না। কিন্তু যদি উক্ত ওয়াজিব ছেড়ে পরবর্তী রুকন শুরু করার আগেই স্মরণ হয়ে যায় তবে ফিরে গিয়ে সেই ওয়াজিব আদায় করবে এবং শেষে সাহু সিজদা করবে। কিন্তু পরবর্তী রুকন শুরু করার পর যদি স্মরণ হয় তবে উক্ত ছুটে যাওয়া ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। অবশিষ্ট স্বলাত আদায় করে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করলেই স্বলাত পূর্ণ হয়ে যাবে।
উদাহরণ: একজন মুছল্লী দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে না বসে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছে। এমন সময় স্মরণ হল নিজ ভুলের কথা। তখন সে বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে স্বলাত পূর্ণ করবে। কোন সাহু সিজদা লাগবে না।
আর যদি কিছুটা দাঁড়ায় কিন্তু পরিপূর্ণরূপে দাঁড়ায়নি তবে সে বসে যাবে এবং তাশাহুদ পড়বে ও স্বলাত শেষে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে। কিন্তু যদি পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে পড়ে তবে আর বসবে না। তাশাহুদ রহিত হযে যাবে। ঐভাবেই স্বলাত পূর্ণ করবে এবং সলাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে।
দলীল:
عَنْ عَبْدِاللَّهِ ابْنِ بُحَيْنَةَ قَالَ صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ فَمَضَى فِي صَلَاتِهِ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ انْتَظَرَ النَّاسُ تَسْلِيمَهُ فَكَبَّرَ وَسَجَدَ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ كَبَّرَ وَسَجَدَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ وَسَلَّمَ
আবদুল্লাহ্বিন বুহাইনাহ্h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী () আমাদেরকে নিয়ে (যোহর) স্বলাত আদায় করলেন। কিন্তু দু‘রাকাত শেষে (তাশাহুদ না পড়েই) দাঁড়িয়ে পড়লেন। তিনি স্বলাত চালিয়ে যেতে থাকলেন। স্বলাত শেষে মানুষ সালামের অপেক্ষা করছে এমন সময় সালামের পূর্বে তিনি তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, মাথা উঠিয়ে আবার তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে সালাম ফেরালেন।
তৃতীয়ত: সন্দেহ হওয়া: স্বলাতের মধ্যে সন্দেহের দু‘টি অবস্থা: প্রথম অবস্থা: সন্দেহযুক্ত দু‘টি বিষয়ের মধ্যে যেটির প্রাধান্য পাবে সে অনুযায়ী কাজ করবে এবং স্বলাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। তারপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
উদাহরণ: একজন লোক যোহরের স্বলাত আদায় করছে। কিন্তু সন্দেহ হল এখন সে কি দ্বিতীয় রাকাতে না তৃতীয় রাকাতে? এ সময় সে অনুমান করে স্থির করবে কোনটা ঠিক। যদি অনুমান প্রাধান্য পায় যে এটা তৃতীয় রাকাত, তবে তা তৃতীয় রাকাত গণ্য করে স্বলাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরানোর পর সাহু সিজদা করবে।
দলীল: আবদুল্লাহ্বিন মাসঊদ h থেকে বর্ণিত। নবী () বলেন,
وَإِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَتَحَرَّ الصَّوَابَ فَلْيُتِمَّ عَلَيْهِ ثُمَّ لِيُسَلِّمْ ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ
তোমাদের কারো স্বলাতে যদি সন্দেহ হয় তবে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং সে ভিত্তিতে স্বলাত পূর্ণ করবে। তারপর সালাম ফিরিয়ে দু‘টি সাহু সিজদা করবে।”
দ্বিতীয় অবস্থা: সন্দেহযুক্ত দু‘টি দিকের কোনটাই প্রাধান্য পায় না। এ অবস্থায় নিশ্চিত দিকটির উপর ভিত্তি করবে। অর্থাৎ কম সংখ্যাটি নির্ধারণ করে বাকী স্বলাত পূর্ণ করবে। তারপর সালামের আগে সাহু সিজদা করে শেষে সালাম ফিরাবে।
উদাহরণঃ জনৈক ব্যক্তি আছরের স্বলাতে সন্দেহ করল- তিন রাকাত পড়েছে না দু‘রাকাত। কিন্তু অনুমান করে কোনটাই তার নিকট প্রাধান্য পেল না। এমতাবস্থায় সে তা দ্বিতীয় রাকাত ধরে প্রথম তাশাহুদ পাঠ করবে। তারপর বাকী দু‘রাকাত স্বলাত পূর্ণ করবে এবং শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে। দলীল: আবু সাঈদ খুদরী h থেকে বর্ণিত। নবী () বলেন,
إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاتِهِ فَلَمْ يَدْرِ كَمْ صَلَّى ثَلاثًا أَمْ أَرْبَعًا فَلْيَطْرَحِ الشَّكَّ وَلْيَبْنِ عَلَى مَا اسْتَيْقَنَ ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ فَإِنْ كَانَ صَلَّى خَمْسًا شَفَعْنَ لَهُ صَلَاتَهُ وَإِنْ كَانَ صَلَّى إِتْمَامًا لِأَرْبَعٍ كَانَتَا تَرْغِيمًا لِلشَّيْطَانِ
তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি স্বলাতে সন্দেহ করে যে, তিন রাকাত পড়েছে না চার রাকাত? তবে সে সন্দেহকে বর্জন করবে এবং নিশ্চিতের উপর ভিত্তি করবে। তারপর সালাম ফেরানোর পূর্বে দু‘টি সিজদা করবে। যদি পাঁচ রাকাত পড়ে থাকে তবে স্বলাত বেজোড় থেকে জোড় হয়ে যাবে। আর যদি চার রাকাতই পড়ে থাকে, তবে এসিজদা দু‘টি শয়তানকে অপমানের জন্য হবে।”
সারকথা: পূর্বেল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, সিজদায়ে সাহু কখনো সালামের আগে কখনো সালামের পর করতে হয়।
সালামের পূর্বে সাহু সিজদা দু‘ক্ষেত্রে করতে হয়:
প্রথম: স্বলাতে যদি কোন ওয়াজিব হ্রাস হয়। দ্বিতীয়: স্বলাতে যদি সন্দেহ হয় এবং দু‘টি দিকের কোনটিই প্রাধান্য না পায়, তবে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করবে।
সালামের পর দু‘ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হয়:
প্রথম: যদি স্বলাতে বৃদ্ধি হয়ে যায়।
দ্বিতীয়: যদি সন্দেহ হয় এবং যে কোন একটি দিক অনুমানের ভিত্তিতে প্রাধান্য লাভ করে, তবে সালামের পর সাহু সিজদা করবে।
 প্রশ্নঃ (২৭২) ইমাম ভুলক্রমে এক রাকাআত স্বলাত বৃদ্ধি করেছেন। আমি মাসবূক হিসেবে ইমামের অতিরিক্ত স্বলাত আমার স্বলাতের সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। আমার স্বলাত কি বিশুদ্ধ হয়েছে? আর যদি ঐ রাকাতের হিসাব না ধরি তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ সঠিক মত হচ্ছে আপনার স্বলাত বিশুদ্ধ হয়েছে। কেননা আপনি স্বলাত পূর্ণভাবে আদায় করেছেন। ইমাম যে ভুল করেছেন সে তার উপর বর্তাবে। ভুল হওয়ার কারণে তিনি মা‘যুর (অপারগ ও অক্ষম)। কিন্তু আপনি যদি ঐ রাকাআতের হিসাব না ধরেন এবং অতিরিক্ত রাকাআত আদায় করেন, তবে কোন ওযর ছাড়াই এক রাকাত বৃদ্ধি করলেন। যার কারণে আপনার স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে।
 প্রশ্নঃ (২৭৩) তাহাজ্জুদ স্বলাতে ভুলক্রমে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লে করণীয় কি?
উত্তরঃ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বসে পড়বে। অন্যথায় তার স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ইচ্ছাকৃতভাবে তার স্বলাত বৃদ্ধি হয়ে গেল। ইমাম আহমাদ বলেছেন, কোন লোক যদি রাতের নফল স্বলাতে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দন্ডায়মান হয়, তবে সে যেন ফজর স্বলাতে তৃতীয় রাকাতের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বৈধ করে নিল। এ অবস্থায় সে যদি না বসে যায় তবে তার স্বলাত বাতিল হয়ে যাবে। তবে বিতর স্বলাত এর বিপরীত। যদি নিয়ত করে (দু’সালামে) তিন রাকাত বিতর পড়বে। (অর্থাৎ- দু’রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে এক রাকাআত পড়বে) কিন্তু দু’রাকাত পড়ে না বসে ভুলক্রমে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় না বসে যদি স্বলাত চালিয়ে যায় এবং তিন রাকাত পূরা করে তবে তা বিতর হিসেবে যথেষ্ট হবে। কেননা একাধারে তিন রাকাত বিতর স্বলাত আদায় করা বৈধ।
 প্রশ্নঃ (২৭৪) প্রথম তাশাহুদ না পড়ে দাঁড়িয়ে পড়লে করণীয় কি? এক্ষেত্রে কখন সাহু সিজদা করতে হবে?
উত্তরঃ এ অবস্থায় ফিরে আসবেন না তথা বসে পড়বেন না; বরং স্বলাত চালিয়েই যাবেন। কেননা আপনি তাশাহুদ থেকে পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং পরবর্তী রুকনে চলে গিয়েছেন। এ অবস্থায় ফিরে আসা মাকরূহ, তবে যদি ফিরে এসে বসে পড়েন, তবে স্বলাত বাতিল হবে না। কেননা আপনি হারাম কিছু করেননি। তবে এ অবস্থায় সাহু সিজদা করতে হবে। আর তা সালামের পূর্বে।
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, স্বলাত চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব, আর ফিরে আসবেন না। আর ওয়াজিব তাশাহুদ ছুটে যাওয়ার কারণে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করবেন।
 প্রশ্নঃ (২৭৫) বিতর স্বলাতের বিধান কি? উহা কি শুধু রমাদ্বন মাসের জন্যই?
উত্তরঃ বিতর স্বলাত রমাদ্বন মাসে ও সকল মাসে সুন্নাতে মুআক্কাদা। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেছেনঃ ‘যে বিতর স্বলাত পরিত্যাগ করে সে খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।’ সুন্নাতে মুআক্কাদা এ ইবাদতটি রমাদ্বন বা যে কোন সময় পরিত্যাগ করা কোন মুমিনের জন্য উচিত নয়। বিতর হচ্ছে সর্বনিম্ন এক রাকাতের মাধ্যমে রাতের স্বলাতের সমাপ্তি করা। অনেকে মনে করে বিতর মানেই কুনূত। কিন্তু তা ঠিক নয়। কুনূত এক বিষয় বিতর অন্য বিষয়। তবে বিতর স্বলাতে দু’আ কুনূত পাঠ করা যায়। কিন্তু তা পাঠ করা আবশ্যক নয়। রাতের নফল স্বলাত শেষ করতে হয় এক রাকাত বা একাধারে তিন রাকাত বিতর স্বলাত আদায় করার মাধ্যমে।
মোটকথা বিতর স্বলাত সুন্নাতে মুআক্কাদা তা রমাদ্বন মাসে হোক বা অন্য সময়। আর উহা পরিত্যাগ করা কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয়।
 প্রশ্নঃ (২৭৬) দু’আ কুনূতের জন্য কি বিশেষ কোন দু’আ আছে? এ সময় দু’আ কি দীর্ঘ করা যায়?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে নবী () হাসান বিন আলী hকে যে দু’আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাকেই দু’আ কুনূত বলা হয়। দু’আটি নিম্নরূপঃ
]اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عاَدَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ[
হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়াত করেছো, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যাদেরকে নিরাপদে রেখেছো আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি যাদের অভিভাকত্ব গ্রহণ করেছো আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাকে যা দিয়েছো তাতে বরকত দাও, তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছো তা হতে আমাকে রক্ষা করো। কারণ তুমিই তো ভাগ্য নির্ধারণ করো, তোমার উপর তো কেহ ভাগ্য নির্ধারণ করার নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো সে কোনদিন অপমানিত হবে না। এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছো সে কোন দিন সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি বরকতপূর্ণ ও সুমহান।”
ইমাম এই দু’আ পাঠ করলে তিনি একবচনের স্তলে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবেন। কেননা তিনি নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্যও দু’আ করবেন। তিনি যদি উপযুক্ত অন্য কোন দু’আ নির্বাচন করেন তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মুছল্লীদের কষ্ট হয় এমন দীর্ঘ সময় ধরে দু’আ করবেন না। কেননা মু’আয বিন জাবাল h যখন স্বলাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইমামতি করেছেন, তখন নবী () রাগম্বিত হয়ে তাকে বলেছিলেন, “হে মুআ’য তুমি ফিতনাবাজ হতে চাও? ”
 প্রশ্নঃ (২৭৭) দু’আ কুনূত পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করা কি সুন্নাত? দলীলসহ জবাব চাই।
উত্তরঃ হ্যাঁ, সুন্নাত হচ্ছে দু’আ কুনূত পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করা। কেননা মুসলিমদের উপর কোন বিপদ এলে নবী () ফরদ্ব স্বলাতে কুনূত পাঠ করার সময় এরূপ করেছিলেন। অনুরূপভাবে ছহীহ্ভাবে প্রমাণিত হয়েছে আমীরুল মু’মেনীন উমার বিন খাত্তাব h বিতরের কুনূতে হাত উত্তোলন করেছেন। তিনি খোলাফা রাশেদার মধ্যে অন্যতম। যাদের অনুসরণ করার জন্য আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।
অতএব বিতর স্বলাতে কুনূতের সময় হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। চাই সে ইমাম হোক বা মুক্তাদী বা একাকী। যখনই কুনূত পড়বে হাত উত্তোলন করবে।

Post a Comment

0 Comments