স্বলাত বিষয়ক মাসলা-
মাসায়েল---278 to 317
সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ (২৭৮) ফরদ্ব স্বলাতে কুনূত পড়ার বিধান কি? যদি মুসলিমদের কোন বিপদ আসে তখন করণীয় কি?
উত্তরঃ ফরদ্ব স্বলাতে কুনূত পড়া শরীয়ত সম্মত নয়। তা উচিতও
নয়। কিন্তু ইমাম যদি কুনূত পড়েন তার অনুসরণ করতে হবে। কেননা ইমামের বিরোধীতায়
অকল্যাণ রয়েছে।
আর মুসলিমদের উপর যদি কোন বড় ধরণের বিপদ নেমে আসে
তখন আল্লাহর কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করার জন্য ফরদ্ব স্বলাতে কুনূত পাঠ করতে কোন
অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (২৭৯) তারাবীহ্স্বলাতের বিধান কি? এর রাকাত সংখ্যা কত?
উত্তরঃ তারাবীহ্স্বলাত রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর সুন্নাত। বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) রমাদ্বনের এক রাতে (তারাবীহ) স্বলাত আদায় করলেন। লোকেরাও তাঁর সাথে স্বলাত আদায়
করল। পরবর্তী রাতেও স্বলাত আদায় করলেন। এরাতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী হল। অতঃপর
তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাতেও তারা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) আর বের হলেন না। প্রভাত হলে তিনি বললেন,
]قَالَ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ[
“তোমরা যা করেছো আমি দেখেছি। কিন্তু তোমাদের কাছে আসতে
আমাকে কোন কিছুই বাধা দেয়নি। তবে আমি আশংকা করেছি যে, এ
স্বলাত তোমাদের উপর ফরদ্ব করে দেয়া হবে।” আর এটি ছিল রমাদ্বন মাসের ঘটনা।
তারাবীহ্এর রাকআত সংখ্যাঃ ১১ রাকাআত। বুখারী
মুসলিমে আয়েশা h হতে বর্ণিত।
মাহে রমাদ্বনে নবী (ﷺ)এর স্বলাত সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন,
]مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً[
“তিনি রমাদ্বন মাসে এবং অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী
স্বলাত পড়তেন না।”
তারাবীহ্স্বলাত যদি ১৩ (তের) রাকাআত আদায় করে, কোন অসুবিধা নেই। ইবনু আব্বাস h থেকে বর্ণিত। “নবী (ﷺ) এর স্বলাত ছিল ১৩ রাকাত।” অর্থাৎ রাতের স্বলাত। বুখারী।
ওমর বিন খাত্তাব h থেকে ১১ এগার রাকাতেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমনটি
মুআত্বা মালেকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
যদি এর চাইতে বেশী সংখ্যক রাকাআত আদায় করে তাতেও
কোন অসুবিধা নেই। কেননা নবী (ﷺ)কে রাতের স্বলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন,صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى “রাতের স্বলাত দু’ দু’ রাকাত
করে।” এখানে তিনি কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেননি।
সালাফে সালেহীন থেকে এ স্বলাতের বিভিন্ন ধরণের
রাকাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু শুধুমাত্র নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত সংখ্যার উপর আ‘মাল করা উত্তম। আর তা হচ্ছে এগার বা তের
রাকাআত।
নবী (ﷺ) বা তাঁর খলীফাদের h থেকে কোন হাদীছ
বা বর্ণনা প্রমাণিত হয়নি যে, তাঁদের কেউ ২৩ রাকাত
তারাবীহ্আদায় করেছেন। বরং ওমর h থেকে এগার রাকাতের কথাই প্রমাণিত হয়েছে। কেননা
তিনি উবাই বিন কা’ব এবং তামীম আদ্দারী hকে ১১ রাকাতের
দ্বারা লোকদেরকে নিয়ে ক্বিয়ামুল্লায়াল করার আদেশ করেছিলেন। ওমরের h মত ব্যক্তিত্বের জন্য এটাই শোভনীয় যে, তাঁর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী হবে ঠিক তেমনই, যেমনটি ছিল নবীকুল শিরমনী মুহাম্মাদ(ﷺ)এর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী।
আমাদের জানা নেই যে, ছাহাবীদের h মধ্যে কেউ তেইশ
রাকাত তারাবীহ্স্বলাত পড়েছিলেন। বরং বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। পূর্বে আয়েশা h এর বাণী উল্লেখ করা হয়েছেঃ “নবী (ﷺ) রমাদ্বন বা অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী রাতের স্বলাত আদায় করতেন না।”
নিঃসন্দেহে ছাহাবায়ে কেরামের h এজমা বা ঐকমত্য হচ্ছে একটি হুজ্জত বা বড় দলীল।
বিশেষ করে তাদের মধ্যে রয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদা। যাঁদের অনুসরণ করতে নবী (ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তাঁরা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
জেনে রাখুন! তারাবীহ্স্বলাতের রাকাত সংখ্যায়
বিভিন্নতা বিষয়টি এমন, যাতে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ
রয়েছে। বিষয়টি পারস্পরিক মতবিরোধ বা মুসলিমদের মধ্যে ফাটলের কারণ হওয়া উচিত নয়।
বিশেষ করে যখন কিনা এতে সালাফে ছালেহীন থেকেই মতবিরোধ পাওয়া যায়। এ মাসআলায় এমন
কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, এতে ইজতেহাদ বা গবেষণার কোন
সুযোগ নেই। কোন একটি ইজতেহাদী বিষয়ে বিরোধীতাকারীকে জনৈক বিদ্বান বলেছিলেন,
আমার বিরোধীতা করে আপনি আমার মতটিই প্রকাশ করেছেন। কেননা
ইজতেহাদী বিষয়ে প্রত্যেকে সেটারই অনুসরণ করবে যা সে সত্য মনে করে। আমরা সবার জন্য
আল্লাহর কাছে তাঁর পসন্দনীয় ও সন্তষ্টি মুলক কাজ কামনা করছি।
প্রশ্নঃ (২৮০) তারাবীহ্স্বলাতে কুরআন খতম করার
দু’আ পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ রমাদ্বন মাসে তারাবীহ্স্বলাতে কুরআন খতম করার দু’আ
পাঠ করার ব্যাপারে নবী (ﷺ)এর সুন্নাত বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন হাদীছ আমি
জানিনা। খুব বেশী যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, আনাস বিন
মালেক h বর্ণিত হাদীছ।
‘তিনি (আনাস) কুরআন খতম করলে পরিবারের লোকদের একত্রিত করে দু’আ করতেন।’ তবে এটা
স্বলাতের বাইরের কথা।
কুরআন খতমের দু’আ সুন্নাত থেকে তো প্রমাণিত নয়ই
তারপরও এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মসজিদে অতিরিক্ত ভীড় লক্ষ্য করা যায়। অতঃপর মসজিদ
থেকে বের হওয়ার সময় নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ব্যাপক আকারে দেখা যায়। কিন্তু
বিদ্বানদের কেউ বলেছেন কুরআন খতম করার পর এই দু’আ পাঠ করা মুস্তাহাব।
ইমাম যদি শেষ রাতের স্বলাত সমাপ্ত করে বিতর
স্বলাতে এই খতমে কুরআনের দু’আ পাঠ করে এবং কুনূত পাঠ করে তবে কোন অসুবিধা নেই।
কেননা বিতর স্বলাতে কুনূত শরীয়ত সম্মত।
প্রশ্নঃ (২৮১) প্রতি বছর কি লাইলাতুল কদর
নির্দিষ্ট এক রাতেরই হয়ে থাকে? না কি তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন
রাতে হয়ে থাকে?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর রমাদ্বন মাসে হয়ে থাকে।
আল্লাহবলেনঃ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“নিশ্চয় আমি উহা অবতীর্ণ করেছি কদরের রাত্রিতে।” (সূরা কদরঃ
১) অন্য আয়াতে পবিত্র কুরআন রমাদ্বন মাসে নাযিল হয় একথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহবলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
“রমাদ্বন সেই মাস যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।”
(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) নবী (ﷺ) লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য রমাদ্বনের প্রথম দশকে ই’তেকাফ করেছেন।
তারপর দ্বিতীয় দশকে এ’তেকাফ করেছেন। অতঃপর তা দেখেছেন রমাদ্বনের শেষ দশকে। এরপর
ছাহাবীদের h একটি দল স্বপ্নে
দেখেছেন লাইলাতুল কদর রমাদ্বনের শেষ সাত দিনে। তিনি (ﷺ) বলেন,
أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ
“আমি দেখছি তোমাদের সবার স্বপ্ন একরকম হয়েছে শেষ সাত
দিনে। অতএব কেউ যদি লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন শেষ সাত রাতে
অনুসন্ধান করে।” লায়লাতুল কদরের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে সর্বনিম্ন যা বলা হয়েছে
তা হচ্ছে এই।
লায়লাতুল কদরের ব্যাপারে প্রমাণিত দলীল সমূহ যদি
আমরা গভীরভাবে অনুসন্ধান করি, তবে দেখা যাবে যে, তা বিভিন্ন রাতে হয়ে থাকে। প্রতি বছর নির্দিষ্টভাবে এক রাতে নয়। নবী (ﷺ) একদা রাত্রে লায়লাতুল কদর স্বপ্নে দেখলেনঃ পানি ও ভিজা মাটিতে সিজদা করলেন।
সে রাতটি ছিল একুশে রাত। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বলেছেন,
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
“তোমরা রমাদ্বনের শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান কর।” এদ্বারা
বুঝা যায় উহা নির্দিষ্ট একটি রাতে নয়। এজন্য মু’মিন শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই
অনুসন্ধান করবে ও যে কোন রাতে তা পেয়ে যাওয়ার জন্য আশা করবে।
যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমানের সাথে ও ছাওয়াবের
আশায় ক্বিয়ামুল্লাইল করবে, সে নিশ্চিতভাবে তার প্রতিদান
লাভ করবে। চাই সে জানতে পারুক বা না পারুক। কেননা নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে
ক্বিয়াম করে, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করা হবে।” এরূপ বলা
হয়নি যে, কখন লায়লাতুল কদর হবে জানতে পারলে এই ছওয়াব
হাসিল হবে। অতএব ছাওয়াব পাওয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে কখন লায়লাতুল কদর হচ্ছে তা জানা
শর্ত নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি রমাদ্বনের শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই কিয়াম করবে,
সে নিশ্চিতভাবে লায়লাতুল কদর পাবে। চাই তা শেষ দশকের প্রথম দিকে
হোক বা মধ্যখানে বা শেষের দিকে হোক।
প্রশ্নঃ (২৮২) তারাবীহ্স্বলাতে কুরআন হাতে নিয়ে
ইমামের পড়ার অনুসরণ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের পড়ার অনুসরণ করবে এই উদ্দেশ্যে হাতে কুরআন
নিয়ে তারাবীহ্স্বলাত আদায় করা কয়েকটি কারণে সুন্নাতের পরিপন্থীঃ
১) একাজ করলে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখার সুন্নাতের উপর আ‘মাল করা যায় না।
২) এতে বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়ার দরকার পড়ে। যেমন, কুরআন খোলা, বন্ধ করা, বগলের নীচে বা পকেটে রাখা প্রভৃতি।
৩) নিঃসন্দেহে এই নড়াচড়ার কারণে স্বলাতে অন্যমনস্ক হবে।
৪) সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। কেননা সুন্নাত ও উত্তম
হচ্ছে, সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করা।
৫) এ কারণে হতে পারে স্বলাতে অন্তর উপস্থিত থাকবে না। ফলে মুছল্লী ভুলেই যাবে
সেকি স্বলাতে আছে না শুধু কুরআন তেলাওয়াত করছে। কিন্তু যদি বিনয়-নম্রতার সাথে
দন্ডায়মান হয়ে ডান হাতকে বাম হাতের উপর স্থাপন করে এবং মাথা ও দৃষ্টি অবনত রেখে
স্বলাত আদায় করে, তবে অন্তরের উপস্থিতি অনেক
বেশী অনুভব করবে এবং মনে থাকবে সে ইমামের পিছনে রয়েছে।
তারাবীহ
স্বলাতে কন্ঠস্বর সুন্দর করে কুরআন পাঠ
প্রশ্নঃ (২৮৩) কোন কোন ইমাম তারাবীহ্স্বলাতে কন্ঠস্বর
পরিবর্তন করে মানুষের অন্তর নরম ও তাদের মধ্যে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে। কোন কোন
মানুষ এটাকে অপছন্দ করে। আল্লাহআপনাকে হেফাযত করুন্ত এক্ষেত্রে আপনার মত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি, একাজ যদি
কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ছাড়াই শরীয়তের গন্ডির মধ্যে হয়, তবে
কোন অসুবিধা নেই। এ জন্যই আবু মূসা আল আশআরী h নবী(ﷺ)কে বলেছিলেন, “যদি
জানতাম আপনি আমার ক্বেরাত শুনছেন তবে আমি আপনার জন্য কন্ঠস্বর অতি সুন্দর করার
চেষ্টা করতাম।” অর্থাৎ- সুন্দর, সুললিত ও উৎকৃষ্ট করার
চেষ্টা করতাম। অতএব কেউ যদি কন্ঠস্বর সুন্দর করার চেষ্টা করে এবং এমনভাবে পাঠ করে
যা দ্বারা মানুষের অন্তর নরম করা সম্ভব হয় তবে তাতে কোন অসুবিধা আমি মনে করি না।
কিন্তু যদি বাড়াবাড়ি করে, যেমন সাধ্যাতিরিক্ত টানে বা
গানের সূরের সাথে মিলায় বা প্রতিটি শব্দকেই গানের মত করে উচ্চারণ করার চেষ্টা করে,
তবে তা উচিত নয়।
ফরদ্ব
স্বলাতের পূর্বাপর সুন্নাত স্বলাতের সময়
প্রশ্নঃ (২৮৪) কোন কোন বিদ্বান বলেন, ফরদ্ব স্বলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাত সমূহের সময় হচ্ছে ফরদ্ব
স্বলাতের সময় হওয়ার পর। ফরদ্বের সময় শেষ হলে সুন্নাতের সময়ও শেষ। আবার কেউ বলেন,
পূর্বের সুন্নাতগুলো ফরদ্ব শেষ হলেই শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সঠিক
কথা কি?
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে, ফরদ্বের পূর্বের সুন্নাত স্বলাতের সময় হল ফরদ্ব স্বলাতের ওয়াক্ত হওয়ার
পর থেকে নিয়ে ঐ স্বলাত শেষ হওয়া পর্যন্ত। যেমন, যোহরের
ফরদ্বের পূর্বের সুন্নাতের সময় শুরু হবে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর যোহরের আযান
হলে। আর শেষ হবে যোহর স্বলাত শেষ হলে। আর ফরদ্বের পরের সুন্নাতের সময় হচ্ছে,
ফরদ্ব স্বলাত শেষ হওয়ার পর থেকে স্বলাতের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়া
পর্যন্ত।
কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো যদি পূর্বের সুন্নাত
ছুটে যায়, তবে ফরদ্ব স্বলাত আদায়ের পর তা কাদ্বা আদায় করতে পারে।
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওযরে হলে পরে কাদ্বা আদায় করাতে কোন ফায়দা নেই। কেননা
বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত সমূহ যদি
বিনা ওযরে তার সময় পার করে দেয়; তবে পরে আদায় করলে তা
বিশুদ্ধও হবে না এবং কবূলও হবে না।
প্রশ্নঃ (২৮৫) ফজরের পূর্বের সুন্নাত ফরদ্বের পর
আদায় করা যাবে কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধমতে ফজর স্বলাত শেষ করে সুন্নাত স্বলাতের
কাদ্বা আদায় করাতে কোন অসুবিধা নেই। এটা ফজরের পর স্বলাত আদায় করার নিষিদ্ধতার
অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা কারণ বিহীন কোন স্বলাত উক্ত সময়ে আদায় করা নিষেধ।
কিন্তু যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তবে উহা
কাদ্বা আদায় করার জন্য সূর্য উঠার পর পর্যন্ত দেরী করা উত্তম।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করার পর কি পুনরায় কোন নফল
আদায় করা যায়?
প্রশ্নঃ (২৮৬) আযানের পূর্বে যদি মসজিদে প্রবেশ
করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত আদায় করে। তবে আযানের পর কি পুনরায় কোন নফল স্বলাত
আদায় করতে পারবে?
উত্তরঃ আযান যদি ফজর বা যোহর স্বলাতের হয়। তবে আযানের পর
ফজরের দু’রাকাত ও যোহরের চার রাকাত সুন্নাত স্বলাত আদায় করবে। আর যদি অন্য
স্বলাতের আযান হয় তবুও নফল আদায় করা শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেনঃ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ “প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী
সময়ে স্বলাত রয়েছে।”
প্রশ্নঃ (২৮৭) সুন্নাত স্বলাতের সময় অতিবাহিত হয়ে
গেলে তা কি কাদ্বা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ। নিদ্রা বা ভুলে যাওয়ার কারণে যদি সুন্নাত
স্বলাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে তার কাদ্বা আদায় করা যায়।
কেননা তা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) এর আ’ম বা ব্যাপক হাদীছের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন,
مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا
“যে ব্যক্তি স্বলাত পড়তে ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারা হচ্ছে স্মরণ হলেই তা আদায় করে নিবে।” উম্মু সালামা h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবী(ﷺ) যোহরের ফরদ্বের পর ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে দু’রাকাত সুন্নাত আদায় করতে না
পারলে, আছরের পর তার কাদ্বা আদায় করতেন।’ কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে
না পড়ে সময় অতিবাহিত করে দিলে, তার কাদ্বা আদায় করবে না।
কেননা সুন্নাত স্বলাত সময় সাপেক্ষ ইবাদত। আর সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদতসমূহ
ইচ্ছাকৃতভাবে তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করলে তা কবূল করা হবে না।
প্রশ্নঃ (২৮৮) ফরজ স্বলাত আদায় শেষে সুন্নাত আদায়
করার জন্য স্থান পরিবর্তন করার কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। মুআবিয়া h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَنَا بِذَلِكَ أَنْ لَا تُوصَلَ صَلَاةٌ بِصَلَاةٍ حَتَّى نَتَكَلَّمَ أَوْ نَخْرُجَ
“নবী (ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন এক স্বলাতের সাথে
অন্য স্বলাতকে মিলিয়ে না দেই যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই।” এথেকে
বিদ্বানগণ বলেন, ফরদ্ব এবং সুন্নাতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা
বলে বা স্থানান্তর হয়ে পার্থক্য করা উচিত।
প্রশ্নঃ (২৮৯) চাশতের স্বলাত ছুটে গেলে তার কি
কাদ্বা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ চাশতের সময় পার হয়ে গেলে তা আদায় করার স্থান ও সময়
ছুটে গেল। তাই তা কাদ্বা আদায় করার দরকার নেই। কেননা উহা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার
সাথে শর্তযুক্ত। কিন্তু সুন্নাত স্বলাত সমূহ ফরদ্ব স্বলাত সমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট
হওয়ার কারণে তা কাদ্বা আদায় করা যাবে। অনুরূপভাবে বিতর স্বলাতও কাদ্বা আদায় করা
যাবে। ছহীহ্সুন্নাতে প্রমাণিত হয়েছেঃ
كَانَ إِذَا غَلَبَهُ نَوْمٌ أَوْ وَجَعٌ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً
“নবী (ﷺ) ঘুমিয়ে পড়ার কারণে বা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে রাতে তাহাজ্জুদ স্বলাত আদায়
করতে অক্ষম হলে, দিনের বেলায় ১২ (বার) রাকাআত
স্বলাত আদায় করে নিতেন।” অতএব তিনি বিতরও কাদ্বা আদায় করতেন।
প্রশ্নঃ (২৯০) তিলাওয়াতের সিজদা দেয়ার জন্য
তাহারাত বা পবিত্রতা কি আবশ্যক? এই সিজদায় কি দু‘আ পাঠ করতে
হবে?
উত্তরঃ কুরআনুল কারীমে নির্দিষ্টভাবে যে সমস্ত সিজদার
আয়াত রয়েছে তা পাঠ করার সময় সিজদা প্রদান করা শরীয়ত সম্মত। সিজদার সময় হলে, তাকবীর দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদা প্রদান করবে। পাঠ করবেঃ (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা) (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي সুবহানাকা আল্লাহুম্মা
রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) (اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ فَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা
ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু, ফাছাউওয়ারাহু, ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাছারাহু ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালেক্বীন।)
(اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ আল্লাহুম্মাক্তুব লী বিহা
আজরা, ওয়া যা’ আন্নী বিহা ভিযরা, ওয়াজ্আলহা
লী ইনদাকা যুখরা, ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা
তাক্বাব্বালতাহা মিন আ’বদিকা দাঊদ) অর্থঃ হে আল্লাহএর বিনিময়ে আমার জন্য প্রতিদান
লিখে দাও। আমার গুনাহ্মোচন কর। আমার জন্য আপনার কাছে তাকে সঞ্চিত করে রাখ। আমার
নিকট থেকে তা কবূল করে নাও যেমনটি কবূল করেছো তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে। তারপর
সিজদা থেকে মাথা উঠাবে। তাকবির দিবে না সালামও ফেরাবে না। কিন্তু স্বলাত অবস্থায়
যদি সিজদার আয়াত পড়ে তবে আবশ্যক হচ্ছে সিজদা দেয়া এবং সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর
দেয়া। কেননা নবী (ﷺ) এর স্বলাতের বর্ণনা যারা দিয়েছেন, তারা
উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্রত্যেকবার মাথা নীচু করা ও মাথা
উঠানোর সময় তাকবীর দিতেন।
কিন্তু কিছু লোক স্বলাতের মধ্যে সিজদার আয়াত
তেলাওয়াত করলে, সিজদার সময় শুধু তাকবীর দেয়
উঠার সময় দেয় না। তাদের এ কাজের পক্ষে আমি সুন্নাহ্থেকে বা বিদ্বানদের উক্তি থেকে
কোন দলীল খুঁজে পাইনি।
তিলাওয়াতের সিজদার জন্য তাহারাত বা ওযু আবশ্যক কি
না? এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেনঃ
পবিত্রতা আবশ্যক। কেউ বলেছেনঃ এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ইবনু ওমার h বিনা পবিত্রতায় সিজদা করতেন। কিন্তু আমি যেটা মনে
করি, তা হচ্ছে জন্য বিনা ওযুতে এই সিজদা না দেয়া।
প্রশ্নঃ (২৯১) কখন আল্লাহর জন্য সিজদা শুক্র দিতে
হয়?
এর পদ্ধতি কি? এর জন্য ওযু করা কি
আবশ্যক?
উত্তরঃ সিজদায়ে শুক্র দিতে হয়- মানুষ যখন কোন বিপদ থেকে
উদ্ধার লাভ করে বা কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হয় বা আনন্দময় কোন কিছু লাভ করে। এ সিজদার
নিয়ম স্বলাতের বাইরে তেলাওয়াতের সিজদার মত। বিদ্বানদের কেউ কেউ এ সিজদার জন্য ওযু
এবং তাকবীর আবশ্যক মনে করেন। কেউ শুধু প্রথম তাকবীর দেয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ-
তাকবীর দিয়ে সিজদাবনত হবে, তারপর (সুবহানা রাব্বীয়্যাল
আ‘লা) বলার পর কিছু দু’আ করবে। এরপর তাকবীর না দিয়েই উঠে যাবে।
প্রশ্নঃ (২৯২) স্বলাতে ইস্তেখারার বিধান কি? তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত স্বলাত পড়ে কি ইস্তেখারার দু’আ পড়া যায়?
উত্তরঃ মানুষ যখন কোন কাজ বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা করে; কিন্তু স্থির করতে পারে না কাজটি বাস্তবায়ন করবে না ছেড়ে দিবে? তখন ইস্তেখারার স্বলাত আদায় করা সুন্নাত। তবে করা বা না করার কোন একটি
দিক যদি তার কাছে প্রাধান্য পায় এবং স্থির হয়ে যায় তবে সে সময় ইস্তেখারা করা
সুন্নাত নয়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) অনেক কাজই করতেন। কিন্তু দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করার পরেই তা করে ফেলতেন। তিনি এসব
প্রত্যেকটা কাজের জন্য ইস্তেখারা করেছেন এরকম বর্ণনা পাওয়া যায় না।
কোন মানুষ যদি ইচ্ছা করে- স্বলাত আদায় করবে বা
যাকাত প্রদান করবে বা কোন হারাম গর্হিত বিষয় পরিত্যাগ করবে বা খানা-পিনা করবে বা
ঘুমাবে তবে এ সমস্ত ক্ষেত্রে ইস্তেখারা শরীয়ত সম্মত নয়।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত স্বলাত পড়ে
ইস্তেখারার দু’আ পড়া যাবে না। কেননা হাদীছে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে ইস্তেখারার
নিয়তে দু’রাকাআত স্বলাত আদায় করার জন্য। সুতরাং অন্য নিয়তে স্বলাত আদায় করে
ইস্তেখারার দু’আ পড়লে হাদীছের নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে না।
কিন্তু যদি তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত স্বলাত
আদায় করার সময় ইস্তেখারার নিয়ত করে তারপর ইস্তেখারার দু’আ পাঠ করে, তবে হাদীছের প্রকাশ্য ভাষ্য অনুযায়ী তা যথেষ্ট হবে। হাদীছে বলা হয়েছেঃ
“তখন ফরদ্ব নয় এমন দু’রাকাআত স্বলাত যেন সে আদায় করে।” এখানে শুধু ফরদ্বকেই বাদ দেয়া
হয়েছে। তবে যথেষ্ট না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যখন কোন
কাজের ইচ্ছা করে তখন..।” এদ্বারা উক্ত দু’রাকাআতের উদ্দেশ্য ইস্তেখারা ছাড়া অন্য
কিছু নয়।
আমার মতে উত্তম হচ্ছে, এ দু’রাকাআত স্বলাত আলাদাভাবে শুধুমাত্র ইস্তেখারার নিয়তেই আদায় করা উচিত।
প্রশ্নঃ (২৯৩) স্বলাতু তাছবীহ্স্বলাত কি?
প্রশ্নঃ (২৯৩) স্বলাতু তাছবীহ্স্বলাত কি?
উত্তরঃ স্বলাতুত্তাছবীহ্স্বলাত নবী (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, এসম্পর্কিত হাদীছ ছহীহ্নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,
‘এসম্পর্কিত হাদীছ মিথ্যা। ইমাম আহমাদ এবং তাঁর অনুসারী ইমামগণ এ
স্বলাতকে মাকরূহ মনে করতেন। কোন ইমামই এ স্বলাতকে মুস্তাহাব বলেন নি। আর অন্যান্য
ইমামগণ আবু হানীফা, মালেক ও শাফেঈ এ সম্পর্কে কোন কিছু
শোনেন নি তাই কোন মন্তব্যও করেন নি।” শায়খুল ইসলামের এ কথা খুবই সত্য। কেননা এ
স্বলাত বিশুদ্ধ হলে নবী (ﷺ) থেকে উম্মতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে ছহীহ্সনদে বর্ণনা করা হত। কেননা তাতে
রয়েছে বিরাট প্রতিদান ও উপকার। তাছাড়া সাধারণ স্বলাতের পদ্ধতি থেকেও তা সম্পূর্ণ
আলাদা। বরং সমস্ত ইবাদত থেকে এটি মূলতঃ আলাদা ধরণের। কেননা এমন কোন ইবাদত আমরা
দেখিনা, যা আদায় করার জন্য এধরণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে- প্রতিদিন
আদায় করবে অথবা সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা বছরে একবার অথবা সারা জীবনে
হলেও একবার। তাছাড়া কোন বিষয় মৌলিকতা থেকে আলাদা হলে মানুষ তার প্রতি গুরুত্বারোপ
করতো, বিষয়টি অন্যরকম হওয়ার কারণে মানুষের মাঝে ব্যাপক
প্রচলিত থকাতো। এর কোনটিই না হওয়ার কারণে বুঝা যায়, এ
স্বলাত শরীয়ত সম্মত নয়। আর এ কারণেই কোন ইমাম একে মুস্তাহাব বলেননি। (আল্লাহই অধিক
জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (২৯৪) বিবাহের সময় দু’রাকাআত স্বলাত পড়ার
বিধান কি?
বিশেষ করে বাসর রাতে এ দু’রাকাআতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়?
উত্তরঃ বিবাহের সময় দু’রাকাআত স্বলাত পড়া সম্পর্কে কোন
হাদীছ নেই। তবে কোন কোন ছাহাবী বাসর রাতে দু’রাকাআত স্বলাত আদায় করেছেন, এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে কোন ছহীহ্হাদীছ জানা যায় না। অবশ্য বাসর রাতে শরীয়ত সম্মত কাজ হচ্ছে, নববধুর কপাল ধরে এই দু’আ পাঠ করবেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
“হে আল্লাহ! আপনার কাছে এর কল্যাণ এবং একে যে স্বভাবের
উপর সৃষ্টি করেছেন তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আশ্রয় কামনা করছি এর অকল্যাণ
থেকে এবং একে যে স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।”
এরকম করলে স্ত্রী ভীত হবে বা অপছন্দ করবে এমন
আশংকা থাকলে- তার নিকটবর্তী হওয়ার ভান করে আলতো করে কপালে হাত রাখবে এবং তাকে না
শুনিয়েই চুপে চুপে উক্ত দু‘আটি পাঠ করবে। কেননা ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার কারণে
কোন কোন নারী এরকম খেয়াল করতে পারে যে, আমার
মধ্যে কি অকল্যাণ আছে? এতে সে বিষয়টিকে অন্য খাতে নিতে
পারে। সুতরাং ঝামেলা এড়ানোর জন্য নীরবে ও না জানিয়ে দু’আ পাঠ করাই ভাল।
প্রশ্নঃ (২৯৫) স্বলাতের নিষিদ্ধ সময় সমূহ কি কি? মাগরিবের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত আযানের
পূর্বে না আযানের পর আদায় করবে?
উত্তরঃ নিষিদ্ধ সময় সমূহ হচ্ছেঃ
১) ফজর স্বলাতের পর থেকে তীর বরাবর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্য
উদিত হওয়ার পর ১৫/২০ মিনিটি পর্যন্ত।
২) ঠিক দুপুরের সময়। অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার ১০ মিঃ আগে থেকে যোহরের সময় হওয়া
পর্যন্ত।
৩) আছর স্বলাতের পর থেকে পরিপূর্ণরূপে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
তবে তাহিয়্যাতুল মসজিদ স্বলাত যে কোন সময় আদায় করা
শরীয়ত সম্মত। যখনই মসজিদে প্রবেশ করে বসতে যাবে তখনই দু’রাকাআত স্বলাত আদায় করবে।
যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ে হয়ে থাকে।
জানা উচিত, বিদ্বানদের
মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, কারণ বিশিষ্ট নফল
স্বলাত সমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় বলতে কোন কিছু নেই। নিষিদ্ধ সময়েও তা
আদায় করতে কোন বাধা নেই। সুতরাং ফজর স্বলাত বাদ বা আছর স্বলাত বাদ বা সূর্য
পশ্চিমাকাশে ঢলার সামান্য পূর্বে বা রাতে দিনে যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার আগে দু’রাকাআত স্বলাত আদায় করবেন। অনুরূপভাবে তাহিয়্যাতুল ওযু
স্বলাতও যে কোন সময় আদায় করা যায়।
প্রশ্নঃ (২৯৬) জামাআতে স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ উলামাগণ একথার উপর একমত হয়েছেন যে, জামাআতে স্বলাত আদায় করা শ্রেষ্ঠতম, গুরুত্বপূর্ণ
ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। বিষয়টি আল্লাহতা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং
এমনকি ভীতির সময় জামাআতবদ্ধভাবে স্বলাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহবলেনঃ
]وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُمْ مَيْلَةً وَاحِدَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنتُمْ مَرْضَى أَنْ تَضَعُوا أَسْلِحَتَكُمْ وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا[
“আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে (জামাআতের
সাথে) স্বলাত পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে স্বলাতে দাঁড়াবে এবং নিজেদের
অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে),
তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও স্বলাত
পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে স্বলাত (অবশিষ্ট এক রাকাআত) পড়ে নিবে। আর এরাও
আত্মরক্ষার সরঞ্জাম ও নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। কাফেরগণ এটাই চায় যে,
আপনারা যদি নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র ও দ্রব্যসম্ভার থেকে একটু
অসতর্ক হন, তবে অমনি তারা একযোগে আপনাদের উপর আক্রমণ
চালাবে। আর যদি বৃষ্টির দরুণ আপনাদের কষ্ট হয় অথবা আপনারা পীড়িত হন, তবে নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র খুলে রাখতে কোন পাপ হবে না। আর সতর্কতা
অবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে রাখবেন। নিশ্চয় আল্লাহকাফেরদের জন্য
লাঞ্ছনাময় শাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন।” (সূরা নিসাঃ ১০২)
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর সুন্নাতেও অসংখ্য হাদীছ রয়েছে, যা জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা ওয়াজিব প্রমাণিত করে। যেমন নবী (ﷺ) বলেন,
لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّارِ
“নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করছি, স্বলাতের
আদেশ দিব, স্বলাত কায়েম করা হবে। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ
দিব সে লোকদের নিয়ে স্বলাত আদায় করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি
বের হব এমন লোকদের উদ্দেশ্যে যারা স্বলাতের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ
তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।” নবী (ﷺ) আরো বলেন,
]مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ إِلَّا مِنْ عُذْرٍ[
“যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জবাবে সাড়া দিয়ে আসবে না,
ওযর ব্যতীত তার স্বলাত হবে না।” জনৈক অন্ধ ব্যক্তি নবী (ﷺ)এর দরবারে এসে জামাআতে না যাওয়ার অনুমতি চাইলে
তিনি তাকে বললেন, هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاةِ “তুমি কি আযানের ধ্বনি শুনে থাক?”
সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, فَأَجِبْ “তবে অবশ্যই স্বলাতে হাজির হবে।” আবদুল্লাহ্বিন মাসঊদ h বলেন,
لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ أو مريض، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ
‘আমরা দেখেছি সুস্পষ্ট মুনাফিক ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত
রাসূলুল্লাহ্র (ﷺ) ছাহাবীগণ জামাআতের স্বলাত থেকে পশ্চাতে থাকতেন না। আর অসুস্থ ব্যক্তিকে
দু’জন ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো।’
সুস্থ দৃষ্টি ভঙ্গিও জামাআতের সাথে স্বলাতকে
ওয়াজিব প্রমাণ করে। ইসলামী উম্মত এক দলভুক্ত জাতি। ইবাদতের একাত্মতা ব্যতীত অন্য
কোন মাধ্যমে একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। আর ইবাদত সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হচ্ছে স্বলাত। তাই
মুসলিম জাতির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এই ইবাদত আদায় করার সময় তারা
একতাবদ্ধ হবে।
বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতবদ্ধ স্বলাত শ্রেষ্ঠ, গুরুত্বপূর্ণ ও
সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছেন্ত স্বলাত বিশুদ্ধ হওয়ার
জন্য জামাআতবদ্ধ হওয়া কি শর্ত? নাকি একাকী স্বলাত পড়লে
স্বলাত হয়ে যাবে, কিন্তু জামাআতের সাথে না পড়ার কারণে সে
গুনাহগার হবে?
সঠিক কথা হচ্ছে- জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা
ওয়াজিব। স্বলাত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। তাই শরীয়ত সম্মত কোন কারণ বা ওযর ব্যতিরেকে
জামাআত পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হবে। একথার দলীল হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) একাকী স্বলাত পড়ার চাইতে জামাআতবদ্ধ স্বলাতকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ আখ্যা
দিয়েছেন। একথার অর্থ হচ্ছে একাকী স্বলাত আদায় করলে যদি বিশুদ্ধ না হতো, তবে তার চেয়ে জামাআতবদ্ধ স্বলাতকে প্রাধান্য দেয়া হতো না।
মোটকথা প্রত্যেক মুসলিম, বিবেকবান প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে
স্বলাতে হাজির হওয়া। চাই সে বাড়িতে অবস্থান করুক বা সফরে থাকুক।
বাসস্থানের
মধ্যে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা কি জায়েয?
প্রশ্নঃ (২৯৭) একদল লোক কোন স্থানে বসবাস করে। ঐ
বাসস্থানে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা কি তাদের জন্য জায়েয হবে? নাকি মসজিদে গমণ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ বাসস্থানে বসবাসকারী লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা। যাদের আশে পাশেই মসজিদ
পাওয়া যায়। মসজিদ নিকটে থাকা সত্বেও কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য গৃহে স্বলাত আদায়
করা জায়েয নেই। তবে মসজিদ যদি দূরে হয়, ফলে আযান শুনতে না
পায়, তবে বাড়িতে জামাআত করে স্বলাত পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
কিছু আলেমের কথার উপর ভিত্তি করে অনেক লোক এই
মাসআলাটিতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা বলে থাকেঃ জামাআতে স্বলাত পড়ার উদ্দেশ্য
হচ্ছে, স্বলাতের জন্য একদল লোকের একস্থানে সমবেত হওয়া। চাই তা
মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও। অতএব একদল লোক যদি নিজ বাড়িতেও জামাআতের সাথে স্বলাত
আদায় করে, তবে তো উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল- ওয়াজিব আদায়
হয়ে গেল। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কেননা মসজিদে জামাআত প্রতিষ্ঠিত করা
আবশ্যক। দলীলঃ নবী(ﷺ) বলেন,
لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّارِ
“নিশ্চয় আমার ইচ্ছা হয়, স্বলাতের
আদেশ দেই, স্বলাত কায়েম করা হোক। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ
দেই সে লোকদের নিয়ে স্বলাত কায়েম করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে
আমি বের হই, এমন লোকদের উদ্দেশ্যে, যারা স্বলাতের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর
জ্বালিয়ে দিব।” অথচ হতে পারে এই লোকেরা নিজ গৃহে স্বলাত আদায় করেছে।
তাছাড়া গুটিকতক লোক একস্থানে সমবেত হয়ে স্বলাত
আদায় করলেই যদি জামাআতের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়- মসজিদে যাওয়ার আবশ্যকতা না থাকে, তবে মসজিদ প্রতিষ্ঠারই বা দরকার কি!?
অতএব ঐ লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা। তবে যদি মসজিদ বেশী দূরে
হয়, সেখানে যেতে কষ্ট হয়, তবে
গৃহে স্বলাত আদায় করতে কোন দোষ নেই।
কর্মক্ষেত্রে
কর্মচারী কিভাবে আল্লাহর হক এবং বান্দার হক আদায় করবে?
প্রশ্নঃ (২৯৮) কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীর জন্য কোনটি উত্তম-
আযান শোনার সাথে সাথে স্বলাতে যাওয়া? নাকি
কিছুটা অপেক্ষা করে কিছু কাজ সম্পাদন করে স্বলাত আদায় করা। আর সুন্নাতে মুআক্কাদা
ছাড়া অন্যান্য নফল স্বলাত পড়ার ক্ষেত্রে তার বিধান কি?
উত্তরঃ সমস্ত মুসলিমের জন্য উত্তম হচ্ছে, আযান শোনার সাথে সাথে স্বলাতে যাওয়া। কেননা মুআয্যিন আহবান করেন,
‘হাইয়্যা আলাছ্ছালাহ’ এসো স্বলাতের দিকে। কোন ধরণের গড়িমসি বা
দেরী করলে হয়েতো স্বলাতটাই ছুটে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আযান শোনার সাথে সাথে
মসজিদের পানে ছুটে যাওয়া।
কিন্তু সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়া অন্যান্য নফল
স্বলাত পড়া উক্ত কর্মচারীর জন্য উচিত হবে না। কেননা চাকরীর চুক্তির ভিত্তিতে এই
সময়টুকুর পাওনাদার হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় করতে কোন অসুবিধা
নেই। কেননা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে সাধারণতঃ এর অনুমতি থেকেই থাকে।
ছুটে যাওয়া
রাকাআতের কাদ্বা আদায় করতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাবে কি?
প্রশ্নঃ (২৯৯) করো যদি প্রথম এক রাকাআত বা দু’রাকাআত
ছুটে যায়,
তবে ইমামের সালামের পর সে কি ছুটে যাওয়া রাকাআতের কাদ্বা আদায়
করার জন্য সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাবে? নাকি শুধু
সূরা ফাতিহা পাঠ করেই ক্ষ্যান্ত হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ইমামের সালামের পর মুক্তাদী যে স্বলাতটুকু পূরা করে থাকে, তা হচ্ছে তার নিজস্ব স্বলাতের শেষ অংশ। তাই সে শুধু সূরা ফাতিহাই পাঠ
করবে। এটা হচ্ছে- যদি চার রাকাআত বিশিষ্ট স্বলাতের ছুটে যাওয়া রাকাআতের সংখ্যা এক
বা দুই হয় বা মাগরিবের এক রাকাআত ছুটে থাকে। আর ফজরের কোন রাকাআত ছুটে গেলে
ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে।
প্রশ্নঃ (৩০০) মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে শেষ
তাশাহুদে পেলে কি স্বলাতে শামিল হবে? নাকি
দ্বিতীয় জামাআত কায়েম করার জন্য অপেক্ষা করবে?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে যে, ইমাম শেষ তাশাহুদে বসে আছেন, তখন যদি দ্বিতীয়
জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা থাকে, তবে স্বলাতে শরীক হবে না;
বরং অপেক্ষা করবে। কিন্তু দ্বিতীয় জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার
সম্ভাবনা না থাকলে তাশাহুদে বসে পড়বে। কেননা বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এক রাকাআত স্বলাত না
পেলে জামাআত পাওয়া হল না। নবী (ﷺ) এরশাদ করেনঃ
مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاةَ
“যে ব্যক্তি এক রাকাআত স্বলাত পেল, সে পূর্ণ স্বলাত পেয়ে গেল।” যেমনটি এক রাকাআত স্বলাত না পেলে জুমআর
স্বলাত পাওয়া হল না, তেমনি জামাআতের স্বলাত। সুতরাং
ইমামের শেষ তাশাহুদে স্বলাতে শরীক হলে জামাআত পাওয়া হল না। অতএব দ্বিতীয় জামাআতের
সম্ভাবনা থাকলে অপেক্ষা করাই ভাল। আর সম্ভাবনা না থাকলে ফিরে যাওয়ার চাইতে শেষ
স্বলাতের তাশাহুদে শামিল হওয়াই উত্তম।
প্রশ্নঃ (৩০১) নফল বা সুন্নাত স্বলাত শুরু করে
দিয়েছি। এমন সময় ফরদ্ব স্বলাতের ইক্বামত হয়ে গেল। এখন কি করব?
উত্তরঃ সুন্নাত বা নফল স্বলাত শুরু করার পর যদি ফরদ্ব
স্বলাতের ইক্বামত হয়ে যায়, তবে একদল বিদ্বান বলেন,
তখনই স্বলাত ছেড়ে দিতে হবে। যদিও শেষ তাশাহুদে বসে থাকে না কেন।
আরেক দল বিদ্বান বলেন, ইমামের সালাম ফেরানোর আগে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার সম্ভাবনা থাকা পর্যন্ত
স্বলাত ছাড়বে না।
মত দু’টি পরস্পর বিরোধী। প্রথমটি হচ্ছেঃ শেষ
তাশাহুদে বসে থাকলেও স্বলাত ছেড়ে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেঃ আপনি স্বলাত
চালাতে থাকেন। কিন্তু যদি আশংকা করেন যে, আপনার
স্বলাত শেষ করে ইমামের সাথে তাকবিরে তাহরিমা দেয়ার আগেই ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিবেন,
তবে স্বলাত ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে শামিল হবেন।
কিন্তু বিশুদ্ধ ও মধ্যপন্থী মত হচ্ছেঃ ইক্বামত
দেয়ার সময় আপনি যদি শেষ রাকাআতে থাকেন তবে হালকা করে সেই রাকাআত পূর্ণ করে নিন। আর
যদি প্রথম রাকাআতেই থাকেন তবে স্বলাত ছেড়ে দিন। কেননা নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত স্বলাত
পেল, সে স্বলাত পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম) যখন আপনি ইক্বামতের
পূর্বে এক রাকাত স্বলাত পড়েছেন, তখন নিষিদ্ধ সময়ের আগেই এক
রাকাত পড়ে নিয়েছেন। আর যে এক রাকাত স্বলাত পড়ে নিয়েছে সে পূর্ণ স্বলাতই পেয়েছে।
কিন্তু সে অবশিষ্ট রাকাত হালকাভাবে আদায় করবে। কেননা নফল স্বলাতের এক অংশ পাওয়ার
চাইতে ফরদ্ব স্বলাতের এক অংশ পাওয়া অনেক উত্তম। কিন্তু আপনি যদি প্রথম রাকাতেই
থাকেন তবে তো পূর্ণ স্বলাত পাওয়ার সময়ই পেলেন না। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত স্বলাত
পেল, সে স্বলাত পেয়ে গেল।” অতএব এ অবস্থায় আপনি স্বলাত
ছেড়ে দিবেন। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ “যখন কোন স্বলাতের ইক্বামত দেয়া
হয়; তখন উক্ত ফরদ্ব স্বলাত ছাড়া আর কোন স্বলাত নেই।”
প্রশ্নঃ (৩০২) মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার
পূর্বে ইমাম রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীর করণীয় কি?
উত্তরঃ মুক্তাদী যদি এমন সময় স্বলাতে শরীক হয় যখন ইমাম
রুকূর ইচ্ছা করছেন। আর মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে পারেন্তি যদি দু’এক আয়াত
বা অনুরূপ বাকী থাকে তবে তা পড়ে নিয়েই ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হবে। আর এটাই
উত্তম। কিন্তু যদি সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে অনেকাংশ অবশিষ্ট রয়ে যায়, আর তা পূর্ণ করতে গেলে ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হতে পারবে না আশংকা হয়,
তবে ফাতিহা ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে রুকূতে চলে যাবে।
সর্বাবস্থায়
ইমামের অনুসরণ করা মুক্তাদীর উপর আবশ্যক।
প্রশ্নঃ (৩০৩) মুক্তাদী যদি ইমামকে সিজদা অবস্থায় পায়, তবে কি ইমামের সিজদা থেকে উঠার অপেক্ষা করবে? নাকি
সিজদা অবস্থাতেই স্বলাতে শামিল হবে?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে ইমামকে যে অবস্থাতেই মুক্তাদী পাবে
স্বলাতে শামিল হবে, কোনরূপ অপেক্ষা করবে না। কেননা
নবী (ﷺ) বলেছেন, فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا “তোমরা (ইমামের সাথে) যা পাবে তা
আদায় করবে।”
প্রশ্নঃ (৩০৪) যেসমস্ত স্বলাতে নীরবে কিরাআত পাঠ
করা হয় সে সমস্ত স্বলাতে মুক্তাদীর ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের রুকূ করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মুক্তাদী
পড়তেই থাকবে। যদিও সে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করে থাকে। চুপ থাকবে না। এমনকি
প্রথম তাশাহুদের পর শেষের দু’রাকাতেও সূরা ফাতিহা পড়ার পর যদি দেখে ইমাম রুকূ
করেননি, তবে অন্য সূরা পড়া শুরু করবে। কেননা স্বলাতে শরীয়ত
অনুমদিত এমন কোন স্থান নেই যেখানে স্বলাতী চুপ করে থাকবে। তবে শুধু মাত্র ইমামের
উচ্চ কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াতের সময় মুক্তাদী নীরব থাকবে ও শুনবে।
প্রশ্নঃ (৩০৫) ইমামের আগে আগে কোন কাজ করার বিধান
কি?
উত্তরঃ ইমামের আগে বেড়ে কোন কাজ করা হারাম। কেননা নবী (ﷺ) বলেন,
أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ
“যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে,
আল্লাহতার মাথাটি গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দিবেন না? অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন না?” আরো প্রমাণিত হয়েছে। নবী (ﷺ) বলেনঃ
إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَلَا تُكَبِّرُوا حَتَّى يُكَبِّرَ وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَلَا تَرْكَعُوا حَتَّى يَرْكَعَ
“অনুসরণ করার জন্য ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি তাকবীর
দেয়ার পর তোমরা তাকবীর দিবে, তিনি তাকবীর দিয়ে শেষ না
করলে তোমরা তাকবীর দিবে না। তিনি রুকূ করলে তোমরা রুকূ করবে। তিনি রুকূতে না যাওয়া
পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”
উল্লেখ্য যে, ইমামের
সাথে মুক্তাদীর চারটি অবস্থা রয়েছেঃ
১) ইমামের আগে বেড়ে কোন কিছু করা।
২) ইমামের সাথে সাথে করা।
৩) ইমামের অনুসরণ করা।
৪) ইমামের পিছনে পিছনে করা।
ইমামের আগ বেড়ে কোন কিছু করাঃ অর্থাৎ ইমাম শুরু
করার আগেই তা করে নেয়া। এরূপ করা হারাম। একাজ যদি তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে হয়
তবে তার স্বলাতই হবে না। স্বলাত পুনরায় ফিরিয়ে পড়া ওয়াজিব।
ইমামের সাথে সাথে করাঃ অর্থাৎ ইমামের রুকূর সাথে
রুকূ করা, সিজদা করার সাথে সাথে সিজদা করা, উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ানো। প্রকাশ্য দলীল সমূহ অনুযায়ী এরূপ
করাও হারাম। তাছাড়া নবী (ﷺ) বলেছেন, “তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত
তোমরা রুকূ করবে না।”
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন এটা হারাম নয়; বরং মাকরূহ। তবে এটা যদি তাকবীরে তাহরীমার সময় হয়, তবে তার স্বলাতই হবে না। পুনরায় স্বলাত পড়া তার উপর ওয়াজিব।
ইমামের অনুসরণ করাঃ অর্থাৎ ইমামের পর পর দেরী না
করে তার অনুসরণ করা। এটাই হচ্ছে সুন্নাতী পদ্ধতি।
ইমামের পিছনে পিছনে করাঃ অর্থাৎ অতিরিক্ত দেরী করে
ইমামের অনুসরণ করা। ইহা সুন্নাত বহির্ভূত।
প্রশ্নঃ (৩০৬) গুনাহ্গার (ফাসেক) লোকের পিছনে
স্বলাত পড়া কি জায়েয?
উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি- যদিও সে কিছু কিছু
গুনাহ্র কাজে লিপ্ত থাকে- তার পিছনে স্বলাত আদায় করা জায়েয ও স্বলাত বিশুদ্ধ। এটাই
বিশুদ্ধ মত। কিন্তু নিঃসন্দেহে পরহেজগার ও বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ লোকের পিছনে
স্বলাত আদায় করা উত্তম। ঐ গুনাহ্গার ব্যক্তির পাপ সমূহ যদি এমন পর্যায়ের হয় যা
ইসলাম ভঙ্গকারী, তাহলে তার পিছে স্বলাত আদায়
করা বৈধ হবে না। কেননা তার নিজের স্বলাতই তো বিশুদ্ধ নয়। কেননা উক্ত পাপের কারণে
সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে গেছে। অতএব ইমামের স্বলাত যদি বিশুদ্ধ না হয়,
তবে তার কি অনুসরণ করা যায়? তখন তো ইমাম
ছাড়াই ইমামের অনুসরণের নিয়ত করা হল।
নফল আদায়কারীর
পিছনে কি ফরদ্ব আদায় করা যায়?
প্রশ্নঃ
(৩০৭) নফল আদায়কারীর পিছনে কি ফরদ্ব আদায় করা জায়েয হবে? অথবা
ফরদ্ব আদায় কারীর পিছনে কি নফল আদায় করা চলবে?
উত্তরঃ উভয়টিই বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে আছর স্বলাত আদায়কারীর
পিছনে যোহর আদায় করা জায়েয হবে এবং যোহর আদায়কারী ইমামের পিছনে আছর আদায় করা যাবে।
কেননা প্রত্যেকে নিয়ত অনুযায়ী আ‘মাল করবে। তার ফল পাবে। একারণে ইমাম আহমাদ (রহঃ)
বলেছেন, আপনি যদি মসজিদে গিয়ে দেখেন ইমাম তারাবীহ্স্বলাত আদায়
করছেন, আর আপনার এশা স্বলাত বাকী আছে, তবে তার সাথেই এশা স্বলাত আদায় করে নিন। উহা আপনার জন্য ফরদ্ব আদায় হবে
আর ইমামের হবে নফল।
সামনের কাতার
থেকে একজন লোক টেনে নিয়ে পিছনে কাতার বানানোর বিধান?
প্রশ্নঃ (৩০৮) একটি বিষয় নিয়ে মুছল্লীদের মাঝে মতবিরোধ
হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, জনৈক লোক স্বলাত কায়েম হওয়ার পর
মসজিদে প্রবেশ করে দেখে কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কাতারে কোন জায়গা নেই। সে কি
আগের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিয়ে তাকে নিয়ে নতুন কাতার করবে? না একাকী কাতারে দাঁড়াবে? না অন্য কিছু করবে?
উত্তরঃ স্বলাতে এসে যদি দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তবে তার তিনটি
অবস্থা রয়েছেঃ
১) কাতারের পিছনে একাকী স্বলাত আদায় করবে।
২) অথবা সামনের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিবে এবং তাকে নিয়ে নতুন কাতার
বানাবে।
৩) অথবা কাতার সমূহের আগে চলে গিয়ে ইমামের ডান দিকে দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করবে।
এ তিনটি অবস্থা হচ্ছে যদি সে স্বলাতে প্রবেশ করতে
চায়। চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে, এর কোনটিই করবে না। অর্থাৎ-
৪) এ জামাআতে শামিল হবে না, অপেক্ষা করবে।
এ চারটি অবস্থার মধ্যে কোনটি গ্রহণ করা বিশুদ্ধ?
আমরা বলব, এচারটি
অবস্থার মধ্যে বিশুদ্ধতম অবস্থাটি হচ্ছে, কাতারের পিছনে
একাকী দাঁড়াবে এবং ইমামের সাথে স্বলাত আদায় করবে। কেননা ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের
সাথে এবং কাতারে শামিল হয়ে স্বলাত আদায় করা। এই দু’টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি
বাস্তবায়ন করতে অপারগ হলে অন্যটি বাস্তবায়ন করবে। অতএব আমরা বলব, কাতারের পিছনে একাকী হলেও জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করবেন। যাতে তার
ফযীলত লাভ করতে পারেন। এ অবস্থায় কাতারে শামিল হওয়ার ওয়াজিব আপনার উপর থেকে রহিত
হয়ে যাবে। কেননা আপনি তাতে অপারগ। আর আল্লাহসাধ্যের বাইরে কোন কাজ বান্দার উপর
চাপিয়ে দেননি। তিনি বলেন,لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا “আল্লাহমানুষের সাধ্যাতিত কোন
কিছু তার উপর চাপিয়ে দেননি।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) তিনি আরো বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয়
কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) এমতের প্রমাণে বলা যায়, কোন নারী যদি কাউকে সাথী হিসেবে না পায় তবুও সে একাকী কাতারের পিছনে
দাঁড়াবে। কেননা পুরুষের কাতারে দাঁড়ানো তার অনুমতি নেই। যখন কিনা শরঈ নির্দেশের
কারণে পুরুষের কাতারে দাঁড়াতে সে অপারগ, তখন একাকী কাতারে
দাঁড়াবে এবং স্বলাত আদায় করবে।
অতএব যে ব্যক্তি কাতার পূর্ণ হওয়ার পর মসজিদে
প্রবেশ করবে এবং সে প্রকৃতপক্ষে কাতারে দাঁড়ানোর জন্য স্থান পাবে না, তখন তার এই ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। বাকী থাকবে জামাআতের সাথে স্বলাত
আদায় করা। তাই সে কাতারের পিছনে একাকীই দাঁড়াবে ও স্বলাত আদায় করবে। কিন্তু
সম্মুখের কাতার থেকে কোন লোককে টেনে নিয়ে আসলে তিনটি নিষিদ্ধ কাজ করা হয়ঃ
ক) আগের কাতারে একটি স্থান ফাঁকা করা হল, ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। যা নবী (ﷺ)এর নির্দেশের বিরোধী। তিনি কাতারকে বরাবর ও ফাঁকা
স্থান পূর্ণ করতে আদেশ করেছেন।
খ) টেনে নিয়ে আসা
লোকটিকে তার উত্তম স্থান থেকে কম ছাওয়াবের স্থানে সরিয়ে দেয়া হল। যা রীতিমত একটি
অপরাধ।
গ) লোকটির স্বলাতে ব্যাঘাত ঘটানো হল। কেননা তাকে
টানাটানি করলে তার অন্তরে একাগ্রতা কমে যাবে। এটিও একটি অপরাধ।
তৃতীয় অবস্থায় ইমামের ডান দিকে গিয়ে দাঁড়াতে বলা
হয়েছেঃ কিন্তু ইহা উচিত নয়। কেননা ইমামের স্থান অবশ্যই মুক্তাদীদের থেকে আলাদা
থাকতে হবে। যেমন করে ইমাম কথায় ও কাজে মুক্তাদীদের থেকে বিশেষ ও আলাদা থাকেন।
এটাই নবী (ﷺ)এর হেদায়াত। ইমাম মুক্তাদীদের থেকে আলাদা স্থানে
তাদের সম্মুখে এককভাবে অবস্থান করবেন। এটাই ইমামের বিশেষত্ব। এখন মুক্তাদীগণও যদি
তাঁর সাথে দন্ডায়মান হয়, তবে তো তার উক্ত বিশেষত্ব শেষ
হয়ে গেল।
আর চতুর্থ অবস্থায় জামাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা
বলা হয়েছেঃ এটা অযৌক্তিক বিষয়। কেননা জামাআতে শামিল হওয়া ওয়াজিব এবং কাতারে শামিল
হওয়াও ওয়াজিব। দু’ওয়াজিবের একটিতে অপারগ হলে তার কারণে অপরটিকে পরিত্যাগ করা জায়েয
হবে না।
প্রশ্নঃ (৩০৯) মসজিদের উপর তলার লোকেরা নীচের তলার
লোকদের দেখতে না পেলে স্বলাত বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ যখন মসজিদ একটিই, উপর তলার লোকেরা যদি ইমামের তাকবীর ধ্বনী শুনতে পায় তবে একে অপরকে
দেখার কোন শর্ত নেই। তাদের সকলের স্বলাত বিশুদ্ধ হবে।
উত্তরঃ টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে প্রচারিত স্বলাতে
ইমামের অনুসরণ করা কোন মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। কেননা স্বলাতের জন্য জামাআতের অর্থ
হচ্ছে একস্থানে সমবেত হওয়া। অতএব তাদেরকে একস্থানে একত্রিত হওয়া জরূরী। কাতার সমূহ
মিলিত করা আবশ্যক। ঐ দু’টি কারণে মিডিয়ার মাধ্যমে স্বলাত জায়েয হবে না। কেননা তা
দ্বারা উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। যদি এটা জায়েয হয়, তবে আর মসজিদের কোন প্রয়োজন থাকে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গৃহে পাঁচ
ওয়াক্ত স্বলাত ও জুমআর স্বলাত আদায় করে নিবে। নিঃসন্দেহে এটা জামাআত ও জুমআ
প্রতিষ্ঠিত করার শরীয়ত নির্দেশিত হিকমতের পরিপন্থী। অতএব নারী-পুরুষ কারো জন্য
রেডিও বা টেলিভিশনের অনুসরণ করে স্বলাত আদায় করা বৈধ নয়। (আল্লাহসবাইকে তাওফীক
দিন)
অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে স্বলাত আদায় করবে?
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল- ফরদ্ব স্বলাত
দাঁড়িয়েই আদায় করা। যদিও কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়াক বা কোন দেয়ালে হেলান দিয়ে বা
লাঠিতে ভর করে দাঁড়াক না কেন।
২) যদিও কোন ভাবেই দণ্ডায়মান হতে সক্ষম না হয় তবে বসে
স্বলাত আদায় করবে। উত্তম হল দাঁড়ানো ও রুকুর অবস্থার ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসবে।
৩) যদি বসেও স্বলাত আদায় করতে সক্ষম না হয় তবে কিবলা
মুখি হয়ে কাত হয়ে শুয়ে স্বলাত আদায় করবে। এক্ষেত্রে উত্তম হল ডান কাত হয়ে শোয়া।
যদি কিবলামুখি হতে সক্ষম না হয় তবে সে দিকে ইচ্ছা মুখ করে স্বলাত আদায় করবে। তাঁর
স্বলাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা ফিরিয়ে পরার দরকার হবে না।
৪) যদি ডান কাত হয়ে শুতে অক্ষম হয় তবে চিৎ হয়ে শুয়ে
স্বলাত আদায় করবে। সে সময় পা দুটি থাকবে কিবলার দিকে। উত্তম হল (বালিশ ইত্যাদি
দিয়ে) মাথা উপরের দিকে কিছুটা উঠাবে যাতে করে কিবলামুখি হতে পারে। যদি পা দুটিকে
কিবলামুখি করতে সক্ষম না হয়, তবে পা যে দিকেই থাক ঐভাবেই
স্বলাত আদায় করবে। স্বলাত বিশুদ্ধ হবে এবং পরে তা ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
৫) রুগির উপর ওয়াজিব হল স্বলাতে রুকু ও সিজদা করা।
যদি তা করতে সামর্থ্য না হয় তবে মাথা দিয়ে ইশারা করবে। এ সময় রুকুর চেয়ে সিজদার
জন্য মাথাটা একটু বেশি নীচু করবে। যদি শুধু রুকু করতে সক্ষম হয় এবং সিজদা করতে না
পারে তবে রুকু করবে এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। আর যদি সিজদা করতে সক্ষম হয়, রুকু না করতে পারে তবে সিজদার সময় সিজদা করবে আর রুকুর জন্য মাথা দিয়ে
ইশারা করবে।
৬) রুকু সিজদার সময় মাথা নীচু করে যদি ইশারা করতে
সক্ষম না হয়, তবে চোখ দিয়ে ইশারা করবে।
রুকুর সময় চোখ দুটোকে সামান্য বন্ধ করবে আর সিজদার জন্য বেশী করে বন্ধ করবে।
কিন্তু রুকু সিজদার জন্য আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা যেমন কোন কোন রুগী করে থাকে-
বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে কুরান-সুন্নাহ বা বিদ্বানদের থেকে কোন দলীল আমি পাই নি।
৭) যদি মাথা বা
চোখের মাধ্যমে ইশারা করতেও সক্ষম না হয়, তবে মনে
মনে স্বলাত আদায় করবে। মুখে তাকবীর বলে, কিরাআত পরবে এবং
দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা,
তাশাহহুদে বসা ইত্যাদির জন্য মনে মনে নিয়ত করবে। কেননা প্রত্যেক
ব্যক্তি তাই পাবে যার সে নিয়ত করে থাকে।
৮) রুগীর উপত ওয়াজিব হল প্রত্যেক স্বলাত সঠিক সময়ে
আদায় করা এবং সে সময়ে তাঁর উপর যা যা ওয়াজিব তাঁর সবই সাধ্যানুযায়ী আদায় করা। যদি
প্রত্যেক স্বলাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা তাঁর জন্য কষ্টকর হয় তবে দু স্বলাতকে
একত্রিত আদায় করা জায়েয আছে। যোহর ও আছর দু স্বলাত একত্রে যোহরের ওয়াক্তে বা দেরি
করে আসরের ওয়াক্তে আদায় করবে। এমনিভাবে মাগরীব ও এশা দু’স্বলাত মাগরীবের ওয়াক্তে
একত্রে বা দেরি করে এশার ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবে। মোটকথা যেভাবে তাঁর জন্য সহজ
হয় সেভাবেই আদায় করবে।
৯) অসুস্থ ব্যক্তি যদি অন্য কোন শহরে চিকিৎসার
জন্য সফর করে তবে সে (মুসাফির হিসেবে) চার রাকাআত বিশিষ্ট স্বলাতকে কসর কবে দু
রাকাআত আদায় করবে। অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশা দু রাকাআত করে আদায়
করবে। যতদিন নিজ শহরে ফিরে না আসে এরূপই করতে থাকবে। চাই সফরের সময় অল্প হোক বা
দীর্ঘায়িত হোক।
প্রশ্নঃ (৩১১) উড়োজাহাজে স্বলাত আদায় করার পদ্ধতি
কি?
উত্তরঃ সময় হলেই উড়োজাহাজের উপর স্বলাত আদায় করা ওয়াজিব।
কিন্তু স্বলাতের নির্দিষ্ট সময় বা দু’স্বলাত একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি
বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে
স্বলাত আদায় করতে হয়, সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়,
তবে সেখানে ফরদ্ব স্বলাত আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে
স্বলাত আদায় করবে। যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে বিমান উড্ডয়ন
করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব স্বলাত আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান
অবতরণ করার পর স্বলাত পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব
স্বলাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা স্বলাতের সাথে
মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব স্বলাতকে পিছিয়ে
দিয়ে এশার সাথে একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা
না থাকে এবং এশা স্বলাতেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তখন বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা স্বলাত একত্রিত
আদায় করে নিবে।
বিমানের উপর ফরদ্ব স্বলাত পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা
ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা
করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের
মাধ্যমে সিজদা করবে। স্বলাত শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী
হয়েই থাকবে।
আর নফল স্বলাতের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই স্বলাত আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা
করবে। সিজদার জন্য রুকূর চেয়ে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।
প্রশ্নঃ (৩১২) কতটুকু দূরত্বে গেলে মুসাফির স্বলাত
কসর করতে পারে? কসর না করেই কি দু’স্বলাতকে একত্রিত
করা যায়?
উত্তরঃ কোন কোন বিদ্বানের মতে ৮৩ (তিরাশী) কিলোমিটার
পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করলে স্বলাত কসর করবে। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিতে বা দেশীয় প্রথায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই
স্বলাত কসর করবে। যদিও তা ৮০ কিলোমিটার না হয়। আর মানুষ যদি তাকে সফর না বলে,
তবে তা সফর নয়; যদিও তা ১০০ কিঃ মিঃ হয়।
এটাই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)এর মত। কেননা আল্লাহতা’আলা নির্দিষ্টভাবে
সফরের কোন দুরত্ব নির্ধারণ করেননি। অনুরূপভাবে নবী (ﷺ) থেকেও সফরের দুরত্ব নির্ধারণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়
না। আনাস বিন মালেক h বলেন,
إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلَاثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلَاثَةِ فَرَاسِخَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ
“নবী (ﷺ) যদি তিন মাইল বা ফারসাখ পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করতেন, তবে স্বলাত কসর করতেন ও দু’রাকাত আদায় করতেন।” এজন্য শায়খুল ইসলাম ইমাম
ইবনু তাইমিয়ার মতই অধিক সঠিক।
প্রচলিত রীতিনীতিতে মতভেদ দেখা দিলে ইমামদের যে
কোন একটি মত গ্রহণ করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইমামগণ সবাই মুজতাহিদ বা গবেষক।
এক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রচলিত রীতিনীতি
যেহেতু সুনির্দিষ্ট তাই ইহা গ্রহণ করাই অধিক সঠিক।
আর স্বলাত কসর করা বৈধ হলেই কি জমা (বা দু’স্বলাত
একত্রিত) করা বৈধ? জবাবে বলব, একত্রিত করণের বিষয়টি শুধু কসরের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং তা প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব সফর বা গৃহে অবস্থান যে কোন সময়
যদি মানুষ একত্রিত করণের প্রয়োজন অনুভব করে, একত্রিত
করবে। অতএব বৃষ্টির কারণে যদি মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, তবে
দু’স্বলাতকে একত্রিত করবে। শীতকালে যদি কঠিন ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সে
কারণে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তবে দু’স্বলাতকে একত্রিত করবে। নিজের মূল্যবান
সম্পদের ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে দু’স্বলাতকে একত্রিত করবে। এছাড়া
এ ধরণের আরো কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হলে দু’স্বলাতকে একত্রিত করবে।
ছহীহ্মুসলিমে আবদুল্লাহ্বিন আব্বাস h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلَا مَطَرٍ
“নবী (ﷺ) মদীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা
স্বলাতকে একত্রে আদায় করেছেন।” ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি।
অর্থাৎ এধরণের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’স্বলাতকে
একত্রিত না করলে যে সংকট হওয়ার কথা তিনি তা চাননি।
এটাই হচ্ছে মূলনীতি। মানুষ যখনই দু’স্বলাতকে
একত্রিত না করলে সমস্যা বা সংকটের সম্মুখিন হবে তখনই একত্রিত করণ তার জন্য বৈধ হয়ে
যাবে। আর সমস্যা না হলে একত্রিত করবে না। কিন্তু যেহেতু সফর মানেই সমস্যা ও সংকট
তাই মুসাফিরের জন্য দু’স্বলাতকে একত্রিত করা জায়েয। চাই তার সফর চলমান হোক বা কোন
স্থানে অবস্থান করুক। তবে সফর চলমান থাকলে একত্রিত করা উত্তম। আর সফরে গিয়ে কোন
গৃহে বা হোটেলে অবস্থান করলে একত্রিত না করাই উত্তম।
কিন্তু মুসাফির যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে
স্বলাত জামাআতের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, তখন
জামাআতের সাথে স্বলাত আদায় করা ওয়াজিব। ঐ সময় স্বলাত কসরও করবে না একত্রিতও করবে
না। কিন্তু জামাআত ছুটে গেলে কসর করবে একত্রিত করবে না। অবশ্য একত্রিত করা জরূরী
হয়ে পড়লে করতে পারে।
প্রশ্নঃ (৩১৩) জনৈক ব্যক্তি লিখা-পড়ার জন্য জুমআর
দিন সন্ধ্যায় রিয়াদ গমণ করে ও সোমবার দিন প্রত্যাবর্তন করে। সে কি মুসাফিরের মত
স্বলাত কসর করে আদায় করবে?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি মুসাফির। কেননা লিখা-পড়ার
শহর তার স্থায়ী আবাসস্থল নয়। সেখানে থেকে যাওয়ার বা বসবাস করারও কোন নিয়ত সে
করেনি। বরং নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে কয়েকদিন তথায় অবস্থান করছে। কিন্তু সে যদি
এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে জামাআতের সাথে স্বলাত হয়, তবে স্বলাতের জামাআতে উপস্থিত হওয়া তার জন্য ওয়াজিব। সাধারণ মানুষের
মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মুসাফিরের জন্য জুমআ বা
জামাআতে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক নয়- একথার কোন ভিত্তি নেই, কোন
দলীল নেই। মুসাফির যদি যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ে থাকে তবুও তার জন্য জামাআতে স্বলাত
আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহবলেন,
]وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ[
“আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকবেন, তাদের
জন্য স্বলাত কায়েম করবেন, তখন তাদের মধ্যে থেকে একদল
আপনার সাথে স্বলাতে দন্ডায়মান হবে।” (সূরা নিসাঃ ১০২) আর যে ব্যক্তিই
আযান শুনবে তার জুমআর স্বলাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ[
“হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিন যখন আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর যিকিরের (স্বলাতের) দিকে আস।” (সূরা
জুমআঃ ৯)
প্রশ্নঃ (৩১৪) জুমআর সাথে আছরের স্বলাত একত্রিত
করার বিধান কি? যারা শহরের বাইরে থাকে তাদের জন্য কি
একত্রিত করা জায়েয?
উত্তরঃ জুমআর সাথে আছর স্বলাতকে একত্রিত করা জায়েয নয়।
কেননা এর পক্ষে হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। একে যোহরের স্বলাতের সাথে ক্বিয়াস
করা ঠিক নয়। কেননা জুমআ ও যোহরের মাঝে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তাছাড়া আসল হচ্ছে
প্রত্যেক স্বলাতকে নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করা। তবে শুধুমাত্র দলীলের ভিত্তিতেই এক
স্বলাতকে অন্য স্বলাতের সাথে একত্রিত করা যায়।
যারা শহরের বাইরে দু’ বা তিনদিন অবস্থান করবে
তাদের জন্য দু’স্বলাতকে একত্রিত করা জায়েয। কেননা তারা মুসাফির। কিন্তু তারা যদি
শহরের উপকন্ঠে অবস্থান করে- সাধারণভাবে যাদেরকে মুসাফির বলা হয় না- তারা দু’স্বলাত
একত্রিত করবে না। দু’স্বলাত একত্রিত করার অর্থ হচ্ছে: যোহর ও আছর দু’স্বলাত এবং
মাগরিব ও এশা দু’স্বলাতকে একত্রিত করা। কিন্তু জুমআ ও আছর কখনই একত্রিত করা জায়েয
নয়।
দু’স্বলাতকে
একত্রিত করার বিধানঃ
(৩১৪ক) প্রশ্নঃ
বিগত দিনগুলোতে ব্যাপক আকারে দু’স্বলাতকে একত্রিত করা এবং এক্ষেত্রে মানুষের
অতিরিক্ত শিথীলতা লক্ষ্য করা গেছে। অত্যধিক ঠান্ডাই কি এর কারণ? আপনি কি মনে করেন? আল্লাহআপনাকে উত্তম বিনিময়
প্রদান করুন।
উত্তরঃ অলসতা করে দু’স্বলাতকে একত্রিত করা কারো জন্য বৈধ নয়।
কেননা আল্লাহতাআলা স্বলাত সমূহকে নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করা আবশ্যক করেছেন।
আল্লাহবলেন,
]إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا[
“নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে স্বলাত আদায় করা মু’মিনদের উপর
ফরদ্ব করা হয়েছে।” (সূরা নিসাঃ ১০৩) তিনি আরো বলেন,
]أَقِمْ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا[
“সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত
স্বলাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের স্বলাত; ফজরের
স্বলাত পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে।” (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৭৮) স্বলাত যখন
নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরদ্ব, তখন প্রত্যেক স্বলাতকে তার
বেঁধে দেয়া সময়-সীমার মধ্যেই আদায় করতে হবে। উল্লেখিত আয়াতে “সূর্য হেলে পড়বার পর
হতে... স্বলাত কায়েম করবে।” কথাটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। বিস্তারিতভাবে নবী (ﷺ)এর সময়-সীমা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الْأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ
“সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর থেকে শুরু হয় যোহর স্বলাতের
সময় এবং কোন ব্যক্তির ছায়া তার সমপরিমাণ হলে তথা আসরের স্বলাতের সময় হওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত। সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত হচ্ছে আসর স্বলাতের সময়। সূর্যাসে-র পর
থেকে পশ্চিমাকাশে লাল রেখা অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময়। আর অর্ধরাত্রি
পর্যন্ত হচ্ছে এশা স্বলাতের সময়। রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর যদি এ
স্বলাত আদায় করা সম্ভব হয় তবে তা উত্তম। ফজর স্বলাতের সময় হচ্ছে সুবহে সাদেক
(পূর্বাকাশে সাদা রেখা) উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।”
নবী (ﷺ) যখন স্বলাতের সময় সমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন, তখন কোন স্বলাত নির্ধারিত সময়ের বাইরে আদায় করা আল্লাহর বেঁধে দেয়া
সীমারেখা লঙ্ঘনের শামিল। আর আল্লাহবলেন,
] وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ [
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই অত্যাচারী।” (সূরা বাক্বারাঃ ২২৯) অতএব জেনেশুনে
ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি সময় হওয়ার পূর্বে স্বলাত আদায় করবে, সে গুনাহগার হবে এবং পুনরায় তাকে স্বলাত পড়তে হবে। কিন্তু যদি অজ্ঞতা
বশতঃ অনিচ্ছাকৃতভাবে এরূপ করে থাকে, সে গুনাহগার হবে না
তবে স্বলাত তাকে পুনরায় পড়তে হবে। আর এটা হচ্ছে শরঈ কোন ওযর ছাড়াই বর্তমান
স্বলাতের সাথে পরবর্তী স্বলাতকে অগ্রীম আদায় করার ক্ষেত্রে। কেননা স্বলাত অগ্রীম
আদায় করলে তা বিশুদ্ধ হবে না। তাকে পুনরায় তা আদায় করতে হবে।
আর বিনা ওযরে জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি
নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করে স্বলাত আদায় করবে, সে
গুনাহগার হবে এবং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তার স্বলাত কবূল হবে না। আর এটা হচ্ছে শরঈ কোন
ওযর ছাড়াই বর্তমান স্বলাতের সাথে পূর্ববর্তী স্বলাতকে দেরী করে একত্রিত আদায় করার
ক্ষেত্রে। কেননা সময় পার করে দিয়ে স্বলাত আদায় করলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তার স্বলাত
কবূল হবে না।
অতএব মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহকে
ভয় করা আর এই গুরুত্বপূর্ণ বিরাট বিষয়টিতে কোন ধরণের শিথীলতা না করা। কিন্তু ছহীহ মুসলিমে
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস h থেকে বর্ণিত
হয়েছে। তিনি বলেন,
جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلَا مَطَرٍ
“নবী (ﷺ) মদীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা
স্বলাতকে একত্রে আদায় করেছেন।” এ হাদীছে দু’স্বলাতকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে
শিথীলতার কোন অবকাশ নেই। কেননা ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি (ﷺ) উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’স্বলাতকে একত্রিত
না করলে যে সংকট হওয়ার কাথা তিনি তা চাননি। সুতরাং দু’স্বলাতকে একত্রিত করে পড়া
বৈধ হওয়ার কারণ হচ্ছে প্রত্যেক স্বলাতকে সময়মত আদায় করলে অসুবিধা হওয়া। কোন লোক
যদি সময় মত স্বলাত আদায় করলে অসুবিধায় পড়ে তবে তার জন্য দু’স্বলাতকে একত্রিত আদায়
করা জায়েয বরং সুন্নাত। কোন অসুবিধা না থাকলে প্রত্যেক স্বলাতকে নির্দিষ্ট সময়ে
আদায় করাই ওয়াজিব।
এই ভিত্তিতে শুধুমাত্র ঠান্ডার কারণে দু’স্বলাতকে
একত্রিত করা বৈধ হবে না। কিন্তু ঠান্ডা যদি অতিরিক্ত হয় এবং সেই সাথে এমন বাতাস
প্রবাহিত হয় বা বরফ পড়ে যে, মসজিদে গমণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে
উঠে, তবে দু’স্বলাতকে একত্রিত করতে কোন বাধা নেই।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার বিশেষ নসীহত বিশেষ করে
ইমামদের প্রতি তারা যেন এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করেন এবং আল্লাহসন্তুষ্ট হন এমনভাবে
এই ফরদ্ব ইবাদতটি সম্পাদন করেন।
প্রশ্নঃ (৩১৫) সফর অবস্থায় কি কি বিষয়ে রুখসত বা
অবকাশ রয়েছে?
উত্তরঃ সফর অবস্থায় চারটি ক্ষেত্রে রুখসত বা অবকাশ রয়েছেঃ
১) চার রাকাআত
বিশিষ্ট স্বলাত দু’রাকাআত আদায় করা।
২) রমাদ্বনে সওম
ভঙ্গ করা। এবং পরবর্তীতে তার কাদ্বা আদায় করা।
৩) তিনদিন তিনরাত
মোজার উপর মাসেহ করা। প্রথমবার মাসেহ করার পর থেকে উক্ত সময়সীমা হিসাব করতে হবে।
৪) যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত আদায় করতে হবে না। তবে ফজরের সুন্নাত এবং
অন্যান্য নফল স্বলাত আদায় করা শরীয়ত সম্মত ও মুস্তাহাব।
অতএব মুসাফির সফর অবস্থায় নিম্নলিখিত স্বলাতগুলো
আদায় করতে পারেঃ রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর,
ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত স্বলাত। সুন্নাত হচ্ছে সফর থেকে ফেরত এসে
গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত স্বলাত আদায়
করা।
প্রশ্নঃ (৩১৬) শুক্রবার দিবসের প্রথম ওয়াক্ত কখন
থেকে শুরু হয়?
উত্তরঃ জুমআর দিবসের প্রহর সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ নবী (ﷺ) বলেনঃ
مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ غُسْلَ الْجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الْخَامِسَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً فَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ حَضَرَتِ الْمَلَائِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ
“যে ব্যক্তি জুমআর দিবসে নাপাকী থেকে গোসল করার মত গোসল
করবে, অতঃপর প্রথম প্রহরে মসজিদে গমণ করবে, সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় প্রহরে গমণ করবে সে
যেন একটি গরু কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি দুম্বা
কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি মুরগী উৎসর্গ করল। যে
ব্যক্তি পঞ্চম প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি ডিম উৎসর্গ করল (আল্লাহর পথে দান করল)।
অতঃপর ইমাম বের হয়ে এলে ফেরেস্তাগণ উপস্থিত হয়ে যিকির (খুতবা) শুনতে বসে পড়েন।”
এ হাদীছে সূর্য উদয় থেকে খুতবার জন্য ইমামের
মিম্বরে আরোহণ পর্যন্ত সময়কে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলোর প্রতিটিই
বর্তমান সময়ের এক ঘন্টা বরাবর হতে পারে। এর কম বা বেশীও হতে পারে। কেননা দিন
ছোট-বড় হয়। মোটকথা সূর্যোদয় থেকে ইমামের আগমণ পর্যন্ত প্রহর হচ্ছে পাঁচটি। কেউ কেউ
বলেন, এই প্রহরের গণনা ফজর উদিত হওয়া থেকে শুরু করতে হবে।
কিন্তু এটা ভুল। কেননা সূর্যদয়ের পূর্বের সময় তো ফজর স্বলাতেরই সময়। আল্লাহই অধিক
জ্ঞান রাখেন
প্রশ্নঃ (৩১৭) ইমামের কন্ঠস্বর শুনতে পেলে কি নিজ
গৃহে থেকে জুমআর স্বলাত আদায় করা জায়েয হবে?
উত্তরঃ মসজিদে এসে মুসলিমদের জামাআতে শামিল না হলে জুমআর
স্বলাত আদায় করা জায়েয হবে না। কিন্তু মসজিদ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে কাতার মিলিত হওয়ার
শর্তে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় স্বলাত আদায় করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু বাড়ীতে বা
দোকানে স্বলাত আদায় করা কোন মানুষের জন্য জায়েয বা বৈধ হবে না। কেননা জুমআ এবং
জামাআত অনুষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিমদের একস্থানে সমবেত হওয়া। তারা এক
ঐক্যবদ্ধ জাতি একথা প্রমাণ করা। যাতে করে তাদের পরস্পরের মাঝে মমতা ও সমপ্রীতি
সৃষ্টি হয়। অজ্ঞ ব্যক্তিরা আলেমদের নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা লাভ করতে পারে।
প্রত্যেক ব্যক্তিকে যদি এই অনুমতি দেয়া হয় যে, তারা নিজ
গৃহে থেকে রেডিওতে বা মাইক্রোফোনের আওয়াজ শুনে স্বলাত আদায় করবে, তবে মসজিদ নির্মাণ ও মুছল্লীদের উপস্থিত হওয়ার কোন দরকার নেই। তাছাড়া
এর মাধ্যমে জুমআ ও জামাআত পরিত্যাগ করার দরজা উম্মুক্ত করা হবে।
0 Comments