Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

স্বলাত বিষয়ক মাসলা-মাসায়েল 318 to 353


অধ্যায়ঃ স্বলাত
সালাত বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
كتاب الصلاة
জবাব জানতে প্রশ্নের উপর ক্লিক করুন
নং
স্বলাত বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
প্রশ্নঃ (৩১৮) জুমআর দিন মহিলারা কত রাকাআত স্বলাত আদায় করবে?
উত্তরঃ নারী যদি মসজিদে গিয়ে ইমামের সাথে জুমআ আদায় করে, তবে ইমামের অনুসরণ করে দু’রাকাতই আদায় করবে। কিন্তু সে যদি নিজ গৃহে স্বলাত আদায় করে, তবে চার রাকাত যোহর আদায় করবে।
 প্রশ্নঃ (৩১৯) যে ব্যক্তি জুমআর স্বলাত আদায় করবে সে কি যোহরও আদায় করবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি জুমআর স্বলাত আদায় করল সে যোহরের সময়ের ফরদ্বই আদায় করল। তাই সে আর যোহর আদায় করবে না। কিন্তু কিছু লোক জুমআর স্বলাত আদায় করার পর যোহর স্বলাত আদায় করে থাকে। সাধারণ পরিভাষায় এটাকে আখেরী যোহর বলা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা আল্লাহর কুরআন ও নবী () এর সুন্নাতে এর কোন প্রমাণ নেই। অতএব তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। এমনকি যদিও কয়েক স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত হয়, তবুও জুমআর স্বলাত আদায় করার পর কোন মানুষের জন্য যোহর স্বলাত আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং তা নিকৃষ্ট বিদআত। কেননা আল্লাহতা’আলা একটি সময়ে একের অধিক ইবাদত ফরদ্ব করেননি। আর তা হচ্ছে জুমআর স্বলাত। তা তো আদায় করা হয়েছে।
যারা জুমআ আদায় করার পর যোহর আদায় করতে বলেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, “এক শহরে একাধিক জুমআ আদায় করা জায়েয নয়। একাধিক জুমআ হলে যে মসজিদে প্রথমে স্বলাত অনুষ্ঠিত হবে সেটাই জুমআ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যগুলো বাতিল হবে। কিন্তু যেহেতু কোন্মসজিদে জুমআ প্রথমে হয় তা জানা নেই। তাই সমস্ত জুমআ বাতিল। ফলে তার বদলে পরবর্তীতে যোহর আদায় করতে হবে।”
তাদেরকে আমি বলবঃ এ দলীল ও যুক্তি আপনারা কোথায় পেলেন? এটার ভিত্তি কি কোন হাদীছে আছে? বা ইহা কি বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ও সঠিক যুক্তি সঙ্গত কথা? উত্তর অবশ্যই না। বরং আমরা বলি, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হয় তবে সবগুলোই বিশুদ্ধ। কেননা আল্লাহবলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) আর শহর প্রশস্ত হওয়ার কারণে অথবা মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে এই শহরের অধিবাসীগণ প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত করেছে, এতে তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করেছে। আর যে ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করেছে সে তার উপর নির্ধারিত ফরদ্ব বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং কিভাবে একথা বলা যায় যে তার আ‘মাল ফাসেদ বা বাতিল হয়ে গেছে, তাই জুমআর পরিবর্তে যোহর স্বলাত আদায় করতে হবে?
তবে বিনা প্রয়োজনে এক শহরে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত করা নিঃসন্দেহে সুন্নাহ্বিরোধী কাজ। নবী () ও খোলাফায়ে রাশেদার নীতি বিরোধী কাজ। তাই অধিকাংশ বিদ্বানের মত এরূপ করা হারাম। তারপরও আমরা বলতে পারি না যে তাদের ইবাদতই বিশুদ্ধ হবে না। কেননা এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কোন দায়দায়িত্ব নেই। এ দায়দায়িত্ব বহণ করবে প্রশাসন যাদের অনুমতিতে বিনা প্রয়োজনে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রশাসনের মধ্যে যারা মসজিদ তত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের কাছে আমরা আবেদন করি, প্রয়োজন দেখা না দিলে তারা যেন একাধিক জুমআর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হতে অনুমতি না দেন। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুপ্রশস্ত ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে একস্থানে সমবেত করে পরস্পরের মাঝে সমপ্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করা, অজ্ঞদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দান করা। এছাড়া আরো অনেক বড় বড় উপকারিতা রয়েছে। শরীয়ত সম্মত সমাবেশ সমূহ হচ্ছেঃ কোনটি সাপ্তাহিক, কোনটি বাৎসরিক, কোনটি দৈনিক। দৈনিক সমাবেশ সমূহ হচ্ছে প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত অনুষ্ঠিত করা। কেননা শরীয়ত প্রণেতা যদি মুসলিমদেরকে প্রতিদিন পাঁচবার শহরের একটি মাত্র স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ করতেন তবে নিঃসন্দেহে তা কষ্টকর হত। এজন্য তাদের প্রতি সহজতা কল্পে এই সমাবেশকে প্রত্যেক মহল্লার প্রত্যেক মসজিদে বৈধ করে দেয়া হয়েছে।
আর সপ্তাহিক সমাবেশ হচ্ছে জুমআর দিবসে। এলাকার সমস্ত লোক সপ্তাহে একবার একস্থানে সমবেত হবে। এজন্য সুন্নাত হচ্ছে তারা একটি মাত্র মসজিদেই একত্রিত হবে বিভিন্ন স্থানে নয়। কেননা সপ্তাহিক এই সমাবেশে আসা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে না বা বেশী কষ্টকর হবে না। তাছাড়া এতে রয়েছে বিশাল উপকারিতা। সমস্ত লোক একজন মাত্র ইমামের খুতবা শুনবে ও তার নেতৃত্বে ইবাদত আদায় করবে। তিনি তাদেরকে নসীহত করবেন নির্দেশনা প্রদান করবেন। তখন লোকেরা একদিকে নসীহত ও অন্যদিকে স্বলাত নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। তাই বিনা প্রয়োজনে জুমআর স্বলাত একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা জায়েয নয়।
আর বাৎসরিক সমাবেশ হচ্ছে, দু’ঈদের স্বলাত। সমস্ত শহরবাসীর জন্য বাৎসরিক দু’টি সমাবেশ। এজন্য একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে একাধিক ঈদগাহ্কায়েম করা জায়েয নয়।
 মুসাফিরের জন্য জুমআর স্বলাতের বিধান
প্রশ্নঃ (৩২০) আমরা সমুদ্রের মধ্যে (জাহাজে) কাজ করি। জুমআর স্বলাতের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু যোহরের আযানের সময় হওয়ার আধা ঘন্টা পর স্তলে এসে আযান দিয়ে জুমআর স্বলাত আদায় করা কি আমাদের জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ শহর বা গ্রামের মসজিদ ছাড়া কোথাও জুমআর স্বলাত অনুষ্ঠিত করা জায়েয হবে না। জলে বা স্তলে যারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাদের জুমআর স্বলাত বিশুদ্ধ হবে না। কেননা নবী ()এর হেদায়াত এরূপ ছিল না যে, তিনি শহর বা গ্রাম ছাড়া কোথাও জুমআর স্বলাত অনুষ্ঠিত করেছেন। তিনি কখনো কয়েকদিন ব্যাপি সফর করতেন, কিন্তু সফরে জুমআ অনুষ্ঠিত করতেন না।
অতএব আপনারা এখন সমুদ্রে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন। কখনো উত্তরে কখনো দক্ষিনে স্থানান্তর হতে থাকেন। কখনো নিজ দেশে কখনো অন্য শহরে প্রত্যাবর্তন করেন। অতএব আপনাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যোহরের স্বলাত আদায় করা, জুমআ নয়। যদি আপনারা সফরের দূরত্বে থাকেন তবে স্বলাত সমূহ কসর করে আদায় করবেন।
 প্রশ্নঃ (৩২১) জুমআর স্বলাতের শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে স্বলাতে শামিল হলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি জুমআর দিন শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে স্বলাতে শামিল হয় তবে তার জুমআ ছুটে গেল। সে ইমামের সাথে স্বলাতে শামিল হবে ঠিকই কিন্তু চার রাকাআত যোহর আদায় করবে। কেননা নবী () বলেনঃ
مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاةَ
যে ব্যক্তি স্বলাতের এক রাকাআত পেয়ে গেল, সে পূর্ণ স্বলাত পেয়ে গেল।” এ হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে ব্যক্তি এক রাকআতের কম স্বলাত পাবে সে স্বলাত পেল না। নবী () থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর স্বলাতের এক রাকাত পেল সে জুমআর স্বলাত পেয়ে গেল।” অর্থাৎ ইমামের সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় রাকআত আদায় করলে সে জুমআর স্বলাত পেয়ে গেল।
 প্রশ্নঃ (৩২২) জুমআর খুতবার শেষ প্রান্তে ইমাম যখন দু’আ করেন, তখন ‘আমীন’ বলা কি বিদআত?
উত্তরঃ না ইহা বিদআত নয়। ইমাম যদি খুতবায় মুসলিমদের জন্য দু’আ করেন, তবে তার দু’আয় আমীন বলা মুস্তাহাব। কিন্তু তা উঁচু আওয়াযে ও সমবেত কন্ঠে যেন না হয়। প্রত্যেকে আলাদাভাবে নীরবে নীচু কন্ঠে ‘আমীন’ বলবে। যাতে করে সেখানে অন্যের অসুবিধা এবং চেঁচামেচী না হয়।
 প্রশ্নঃ (৩২৩) জুমআর খুতবায় দু’আর সময় হাত উত্তোলন করার বিধান কি?
উত্তরঃ জুমআর খুতবায় ইমামের দু’আ করার সময় হাত উত্তোলন করা শরীয়ত সম্মত নয়। জুমআর খুতবায় দু’আ করার সময় খলীফা বিশ্র বিন মারওয়ান দু’হাত উত্তোলন করলে ছাহাবায়ে কেরাম তার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হচ্ছে ইস্তেস্কার দু’আ। এদু’আ পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করবে। কেননা নবী() থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি জুমআর খুতবায় বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আয় হাত উত্তোলন করেছেন। লোকেরাও তাঁর সাথে হাত উঠিয়েছেন। এছাড়া জুমআর খুতবায় অন্যান্য দু’আর ক্ষেত্রে হাত উত্তোলন করা উচিত নয়।
 প্রশ্নঃ (৩২৪) আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানের বিধান কি?
উত্তরঃ এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, উপস্থিত মুছল্লীগণ যে ভাষা বুঝে না সে ভাষায় জুমআর খুতবা প্রদান করা জায়েয নয়। যদি উপস্থিত মুছল্লীগণ আনারব হন্ত তারা আরবী না বুঝেন, তবে তাদের ভাষাতেই খুতবা প্রদান করবে। কেননা তাদেরকে বুঝানোর জন্য এ ভাষাই হচ্ছে বক্তৃতা করার মাধ্যম। আর জুমআর খুতবার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর বিধি-বিধান বর্ণনা করা, তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করা। তবে কুরআনের আয়াত সমূহ অবশ্যই আরবী ভাষায় পাঠ করতে হবে। অতঃপর মাতৃভাষায় তার তাফসীর করে দিবে। আর মাতৃভাষায় খুতবা প্রদানের দলীল হচ্ছে, আল্লাহবলেনঃ
]وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ[
আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর বিধান) বর্ণনা করে দেন।” (সূরা ইবরাহীমঃ ৪) এখানে আল্লাহতা’আলা বর্ণনা করে দিলেন যে, সম্প্রদায়ের লোকেরা যে ভাষা বুঝে সে ভাষাতেই তাদের সামনে বক্তৃতা করতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৩২৫) জুমআর দিবসে গোসল করার বিধান কি নারী ও পুরুষের সকলের জন্য? এ দিনের এক বা দু’দিন পূর্বে গোসল করার হুকুম কি?
উত্তরঃ জুমআর দিবসে গোসল ও সাজ-সজ্জার বিধান শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই। কেননা সেই জুমআর স্বলাতে উপস্থিত হবে। গোসল ও সৌন্দর্য গ্রহণ পুরুষকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। নারীদের জন্য এটা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে কোন মানুষ নিজের শরীরে বা অঙ্গে ময়লা-আবর্জনা দেখতে পেলেই তা পরিস্কার করবে। কেননা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়, এতে উদাসীনতা কারো জন্য উচিত নয়।
কিন্তু জুমআর একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করলে কোন উপকার নেই। কেননা এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহ শুধুমাত্র জুমআর দিবসকে কেন্দ্র করেই বলা হয়েছে। আর এ সময়টি হচ্ছে জুমআর দিবস ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে জুমআর স্বলাতের পূর্ব পর্যন্ত। এটাই হচ্ছে গোসল করার সময়। কিন্তু একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করা জুমআর দিবসের জন্য যথেষ্ট হবে না।
 প্রশ্নঃ (৩২৬) খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযানের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি জুমআর দিবসে মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে মুআয্যিন খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান প্রদান করছে। তখন সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ শুরু করবে, মুআয্যিনের আযানের জবাব দিতে ব্যস্ত হবে না। যাতে করে খুতবা শোনার জন্য প্রস্ততি নিতে পারে। কেননা খুতবা শোনা ওয়াজিব আর আযানের জবাব দেয়া সুন্নাত। অতএব সুন্নাতের উপর ওয়াজিবকে প্রাধান্য দিতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৩২৭) জুমআর মসজিদে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ খুতবা চলা অবস্থায় যদি কেউ মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যেতে চায়, তবে কোন কথা না বলেই তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বসে যাওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করবে বা তার কাপড় টেনে ধরবে। তবে উত্তম হচ্ছে খতীব নিজেই একাজ করবে এবং তাকে বসিয়ে দিবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্() করেছিলেন। তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল, তিনি তাকে বললেন, اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ বসে পড় তুমি মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।”
 প্রশ্নঃ (৩২৮) ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম প্রদান এবং সালামের জবাব দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের খুতবা চলাবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে শুধুমাত্র দু’রাকাত স্বলাত হালকা করে আদায় করবে। কাউকে সালাম দিবে না। কেননা এ অবস্থায় মানুষকে সালাম দেয়া হারাম। কেননা নবী () বলেনঃ
إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَنْصِتْ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ
তুমি যদি জুমআর দিন খুতবা চলাবস্থায় পার্শ্ববর্তী মুছল্লীকে বল ‘চুপ কর’, তবে অনর্থক কাজ করলে।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কঙ্কর স্পর্শ করবে সে অনর্থক কাজ করবে।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কাজ করে, হতে পারে তার এই কাজ জুমআর ছাওয়াব বিনষ্ট করে দিবে। এ কারণে অন্য হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করে তার জুমআ হবে না।” অতএব কেউ যদি আপনাকে সালাম প্রদান করে তবে ‘ওয়া আলাইকুম সালাম’ শব্দে তার জবাব দিবে না। কিন্তু মুখে কোন শব্দ উচ্চারণ না করে মুসাফাহা করতে কোন বাধা নেই। যদিও মুসাফাহা না করাই উত্তম।
অবশ্য বিদ্বানদের কেউ কেউ বলেন, সালামের জবাব দিতে পারে। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সে সালামের জবাব দিবে না। কেননা খুতবা শ্রবণের ওয়াজিবকে সালামের জবাব প্রদানের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তাছাড়া এ অবস্থায় সালাম দেয়াও কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয়। কেননা এতে মানুষের খুতবা শোনার ওয়াজিব কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়। অতএব সঠিক কথা হচ্ছেঃ ইমামের খুতবার সময় সালামও নেই, জবাবও নেই।
 প্রশ্নঃ (৩২৯) ঈদের দিন কি বলে একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে?
উত্তরঃ ঈদের জন্য অভিনন্দন জানানো জায়েয। তবে এর জন্য বিশেষ কোন বাক্য নেই। মানুষের সাধারণ সমাজে প্রচলিত যে কোন শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন কোন অশ্লীল শব্দ না হয় বা কাফেরদের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
 প্রশ্নঃ (৩৩০) ঈদের স্বলাতের বিধান কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি ঈদের স্বলাত ফরদ্বে আঈন তথা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরদ্ব। কোন পুরুষের জন্য এ স্বলাত পরিত্যাগ করা জায়েয নয়। কেননা নবী ()এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। বরং কুমারী পর্দানশীন নারীদেরকেও এ স্বলাতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে ঋতুবতী স্বলাত আদায় করবেনা। এ দ্বারা এ স্বলাতের অতিরিক্ত গুরুত্ব বুঝা যায়। এটাই প্রাধান্যযোগ্য মত এবং শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াও (রহঃ) অনুরূপ মত পোষণ করেছেন।
এ স্বলাতটি জুমআর স্বলাতের মত। কিন্তু ছুটে গেল কাদ্বা আদায় করা যাবে না। কেননা কাদ্বা আদায় করার পক্ষে কোন দলীল নেই। এর পরিবর্তে অন্য কোন স্বলাতও আদায় করবে না। অবশ্য জুমআর স্বলাত ছুটে গেলে তার পরিবর্তে যোহরের স্বলাত আদায় করবে। কেননা সময়টি যোহরের স্বলাতের সময়। কিন্তু ঈদের স্বলাত ছুটে গেলে তার কোন কাদ্বা নেই।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত হচ্ছে, তারা যেন আল্লাহতা’আলাকে ভয় করে এবং এই স্বলাতটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। যাতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও আল্লাহর কাছে দু’আ, লোকদের পরস্পর দেখা-সাক্ষ্যাৎ ও প্রীতি-ভালবাসার বিনিময়। দেখবেন মানুষকে যদি কোন খেলাধুলার আসরে আহবান জানানো হয়, তবে কত দ্রুত তারা সেখানে সমবেত হয়। তাদের জন্য কি উচিত নয় মুক্তি দূত বিশ্বনবীর আহবানে সাড়া দিয়ে এই স্বলাতের জন্য সুবিশাল সমাবেশের আয়োজন করা? যাতে রয়েছে আল্লাহর অফুরন্ত ছওয়াব এবং মাগফিরাত। কিন্তু নারীদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, এ স্বলাতে আসতে চাইলে তারা যেন পুরুষদের সাথে সংমিশ্রিত না হয়। তারা থাকবে মসজিদ বা ঈদগাহের একপ্রান্তে পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে। নারীরা যেন আতর-সুগন্ধি মেখে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়ে বেপর্দা হয়ে বের না হয়। এই কারণে নবী () যখন নারীদেরকে ঈদের স্বলাতের জন্য বের হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা প্রশ্ন করেছেন: إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ হে আল্লাহর রাসূল আমাদের তো কারো কারো চাদর নেই? তিনি বললেন, لِتُلْبِسْهَا أخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا তার অন্য বোন যেন নিজের চাদর তাকে পরতে দেয়।” আর পর্দার উপযুক্ত চাদর হচ্ছে বর্তমানের বোরকা। এদ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, নারী অবশ্যই পূর্ণ পর্দা করে গৃহ থেকে বের হবে। কেননা নারীর চাদর না থাকলে সে কি করবে নবী ()কে এপ্রশ্ন করলে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাধ্যানুযায়ী পর্দা করে বের হবে। বরং বলেছেন, “অন্য বোন বা নারী তার চাদর তাকে পরিয়ে দিবে।” আর ঈদের স্বলাতের ইমামের উচিত হচ্ছে, ঈদের খুতবার সময় পুরুষদেরকে নসীহত করার সময় বিশেষভাবে নারীদেরকেও নসীহত করবেন। তাদের সাথে বিশেষিত বিধি-বিধান সমূহ বর্ণনা করবেন। যেমনটি নবী () করেছিলেন। তিনি পুরুষদের নসীহত করার পর নারীদের দিকে আলাদাভাবে গিয়ে তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করেছেন।
 প্রশ্নঃ (৩৩১) এক শহরে একাধিক ঈদের স্বলাত অনুষ্ঠিত করার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি প্রয়োজন দেখা যায় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন প্রয়োজন দেখা দিলে জুমআর স্বলাত একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা যায়। কেননা আল্লাহতা’আলা বলেন,وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ দ্বীনের মাঝে আল্লাহতোমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।” (সূরা হাজ্জঃ ৭৮) একাধিক স্থানে স্বলাত অনুষ্ঠিত জায়েয না হলে নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষ জুমআ ও ঈদের স্বলাত থেকে বঞ্চিত হবে। ‘প্রয়োজন্তু বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেমন শহর অনেক বড়। শহরের সকল প্রান্ত থেকে লোকদের একস্থানে সমবেত হওয়া কষ্টকর, অথবা ঈদগাহে জায়গার সংকুলান না হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এধরণের কোন অসুবিধা না থাকলে একাধিক স্থানে জুমআ বা ঈদের স্বলাত অনুষ্ঠিত করা যাবে না।
 প্রশ্নঃ (৩৩২) দু’ঈদের স্বলাতের পদ্ধতি কিরূপ?
উত্তরঃ দু’ঈদের স্বলাতের পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রথমে ইমাম উপস্থিত লোকদের নিয়ে দু’রাকাত স্বলাত আদায় করবে। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দিবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরা ‘ক্বাফ’ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে এবং সূরা পাঠ শুরু করার পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচটি তাকবীর প্রদান করবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে সূরা ‘ক্বামার’ পাঠ করবে। নবী () দু’ঈদের স্বলাতে এ দু’টি সূরা পাঠ করতেন। অথবা ইচ্ছা করলে প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পাঠ করবে।
জেনে রাখুন, জুমআ ও ঈদের স্বলাত দু’টি সূরার ক্ষেত্রে একই, আর দু’টি সূরার ক্ষেত্রে পৃথক। যে দু’টি সূরা উভয় স্বলাতে পাঠ করতে হয় তা হচ্ছে: ‘সূরা আল আ‘লা’ ও ‘সূরা গাশিয়া’। আর যে দু’টি সূরার ক্ষেত্রে এ দু’স্বলাত পৃথক তা হচ্ছে: ঈদের স্বলাতে পাঠ করতে হয়, সূরা ‘ক্বাফ’ ও সূরা ‘ক্বামার’। আর জুমআর স্বলাতে পাঠ করতে হয় সূরা ‘জুমআ’ ও সূরা ‘মুনাফিকূন’। প্রত্যেক ইমামের জন্য উচিত হচ্ছে, এ স্বলাতগুলোতে উক্ত সূরা সমূহ পাঠ করার সুন্নাতকে পূনর্জীবিত করা। যাতে করে মুসলিমগণ তা জানতে পারে এবং কেউ তা পাঠ করলে যেন প্রতিবাদ না করে।
তারপর স্বলাত শেষ করে ইমাম খুতবা দিবেন। উচিত হচ্ছে খুতবায় নারীদেরকে বিশেষভাবে নসীহত করবে। তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশনা দিবে অসৎ কাজের ভয়াবহতা বর্ণনা করবে ও তা থেকে নিষেধ করবে।
 প্রশ্নঃ (৩৩৩) ঈদের স্বলাতের পূর্বে দলবদ্ধভাবে মাইক্রোফোনে তাকবীর প্রদান করার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা বৈধ নয়। কেননা এধরণের পদ্ধতি নবী () বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে আলাদাভাবে তাকবীর পাঠ করবে।
 প্রশ্নঃ (৩৩৪) ঈদের তাকবীর কখন থেকে পাঠ করতে হবে? তাকবীর পড়ার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ ঈদের তাকবীর শুরু হবে রমাদ্বনের শেষ দিন সূর্যাসে-র পর থেকে। শেষ হবে ঈদের স্বলাতে ইমাম উপস্থিত হলেই। তাকবীরের পদ্ধতিঃ
الله اكبر الله اكبر لا إله إلا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। অথবা পাঠ করবেঃ
الله اكبر الله اكبر الله اكبر لا إله إلا الله والله اكبر الله اكبر الله اكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থাৎ তাকবীরগুলো দু’বার করে পাঠ করবে অথবা তিনবার করে পাঠ করবে। সবগুলোই জায়েয। পুরুষদের জন্য উচিত হচ্ছে এই তাকবীর সমূহ সর্বস্থানে উঁচু কন্ঠে পাঠ করবে। হাটে-বাজারে, মসজিদে, গৃহে সবখানে। কিন্তু নারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে নীচু কন্ঠে তাকবীর পাঠ করা।
 প্রশ্নঃ (৩৩৫) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের স্বলাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ অধিকাংশ বিদ্বানের মতে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের স্বলাত সুন্নাতে মুআক্কাদা। ওয়াজিব নয়। নিঃসন্দেহে নবী () এ স্বলাতের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অতি গুরুত্বসহকারে অন্যান্য স্বলাত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি এ স্বলাত আদায় করেছেন।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এ স্বলাতকে ফরদ্বে আঈন বা ফরদ্বে কেফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে নবী () এ স্বলাতের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর নির্দেশ মানেই ফরদ্ব বা ওয়াজিব। তাছাড়া অন্যান্য নিদর্শন থেকেও এস্বলাতের অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া বান্দার ত্রুটির কারণেই এই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয়ে থাকে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি একটি সতর্কতা। তাই বান্দাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এই শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতী করা এবং স্বলাত আদায় করা।
নিঃসন্দেহে এমতের পক্ষের দলীল ও যুক্তি শক্তিশালী। সর্বনিম্ন বিষয়টি ফরদ্বে কেফায়া। আমিও এটাই মনে করি। জমহুর (অধিকাংশ) বিদ্বান যে মত পোষণ করেন্ত অর্থাৎ সুন্নাতে মুআক্কাদা- তাদের মতের পক্ষে ওয়াজিবকে প্রত্যাখ্যান করার কোন দলীল নেই। তবে নবী () এর এই হাদীছটি তাদের পক্ষে দলীল হতে পারে: গ্রাম্য ব্যক্তিকে নবী () যখন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর নির্দেশ দিলেন তখন সে প্রশ্ন করল, এই পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ছাড়া কি আমার উপর অন্য কিছু ফরদ্ব রয়েছে? তিনি বললেন, “না, তবে তুমি নফল আদায় করতে পার।” এ হাদীছের মাধ্যমে অন্যান্য স্বলাতের আবশ্যকতা বা ফরদ্ব হওয়া অস্বীকার করা যাবে না- যদি তার যথাপযোক্ত কারণ থাকে। নবী ()এর ‘না’ বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্নাত স্বলাত সমূহ যা দিন্তরাতে বার বার আদায় করতে হয় তা আবশ্যক নয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বলাত সমূহের আবশ্যকতা এখানে নিষেধ করা হয়নি।
মোটকথা, আমরা যা মনে করি তা হচ্ছে, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের স্বলাত ফরদ্বে আঈন বা ফরদ্বে কেফায়া।
 প্রশ্নঃ (৩৩৬) সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের স্বলাত ছুটে গেলে কিভাবে তা কাদ্বা আদায় করবে?
উত্তরঃ সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের স্বলাত থেকে কারো যদি এক রাকাত ছুটে যায়, তবে সে সম্পর্কে হাদীছে এরশাদ হয়েছে। নবী () বলেন,
إِذَا سَمِعْتُمُ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا 
 তোমরা যখন স্বলাতের ইকামত শুনবে তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থির এবং প্রশান্তির সাথে স্বলাতের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর স্বলাতের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।” অতএব যার এক রাকাত স্বলাত ছুটে যাবে সে উহা পূর্ণ করবে- ইমাম যেভাবে আদায় করেছিল সেভাবে। কেননা নবী ()এর বাণী (পূর্ণ করে নিবে) সাধারণভাবে এ অর্থই বহণ করে। এই প্রশ্নটি থেকে আরেকটি শাখা প্রশ্ন আরো জটিল আকারে দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে, কারো যদি প্রথম রুকূ ছুটে যায় তবে সি কি করবে? উত্তরঃ কারো প্রথম রুকূ ছুটে গেলে তার রাকাতটিই ছুটে গেল। ইমাম সালাম ফেরানোর পরিপূর্ণ রাকআতটি সে পুনরায় আদায় করবে। কেননা নবী ()এর সাধারণ বাণী একথাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, “আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
 ইস্তেস্কার (বৃষ্টি প্রার্থনার) স্বলাতে চাদর উল্টানোর বিধান।
প্রশ্নঃ (৩৩৭) ইস্তেস্কার স্বলাতে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি কখন করতে হবে? দু’আর সময় নাকি গৃহ থেকে বের হওয়ার সময়? আর এই চাদর উল্টানোর হিকমত কি?
উত্তরঃ বৃষ্টি প্রার্থনার স্বলাতে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি স্বলাত শেষ করে ইমামের খুতবার সময় করতে হবে। যেমনটি বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। একাজের হিকমত তিনটি উপকারিতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়ঃ
প্রথমতঃ নবী ()এর অনুসরণ।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কাছে এই আশাবাদ পোষণ করা যে, তিনি দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টিকে সাচ্ছন্দ ও উর্বরতায় পরিবর্তন করে দিবেন।
তৃতীয়তঃ মানুষকে এটি একটি ইঙ্গিত যে, নিজের অবস্থাকে আল্লাহবিমূখতা ও নাফরমানী থেকে পরিবর্তন করে আল্লাহর দিকে ধাবিত করা, তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি আভ্যন্তরীন পোষাক। আর চাদর বা কাপড় বাহ্যিক পোষাক। অতএব সে বাহ্যিক পোষাককে উল্টিয়ে নেয়ার সাথে সাথে যেন আভ্যন্তরীন পোষাকেরও অবস্থান ঠিক করে নেয়।
 প্রশ্নঃ (৩৩৮) কেউ কেউ বলে থাকে, “তোমরা ইস্তেস্কা তথা বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আ না করলেও বৃষ্টি হবে।” একথা সম্পর্কে আপনার মত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি এব্যক্তি ভয়ানক বিপজ্জনক ও অপরাধের কথা বলেছে। কেননা আল্লাহবলেন, وَقَالَ رَبُّكُمْ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ তোমাদের পালনকর্তা বলেন তোমরা আমাকে ডাক (দু’আ কর) আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০) আল্লাহতা’আলা মহাজ্ঞানী। নিজ অনুগ্রহ প্রদান করতে কখনো তিনি দেরী করেন, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে তারা তাঁর কাছে কত অভাবী, কত মুখাপেক্ষী, তিনি ছাড়া তাদের আর কোন রক্ষাকারী আশ্রয়দাতা নেই। তিনি অনেক সময় মানুষের দু’আর কারণে বৃষ্টি নাযিল করেন। কিন্তু অনেক সময় বৃষ্টি হয়ও না। নিঃসন্দেহে এতে আল্লাহর কোন হিকমত আছে এবং মানুষের কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। কেননা আল্লাহসর্বাধিক জ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মানুষ নিজের উপর যতটুকু দয়াশীল আল্লাহতাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়াশীল ও করুণাময়। অনেক সময় মানুষ দু’আ করে কিন্তু কবূল হয় না। কখনো দু’আ করে কাজ হয়, কখনো দু’আ করে কাজ হয় না। এ সম্পর্কে নবী () বলেন,
يُسْتَجَابُ لِأَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ يَقُولُ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي
তোমাদের দু’আ কবূল করা হবে যে পর্যন্ত তাড়াহুড়া না করবে। বলবে, দু’আ তো অনেক করলাম, কিন্তু কবূল হল না।”
তখন অনেক লোক হাহুতাশ করবে আক্ষেপ করবে এবং দু’আ করাই ছেড়ে দিবে। (আঊযুবিল্লাহ্) অথচ মানুষ দু’আ করলেই তাকে ছওয়াব দেয়া হবে। কেননা দু’আ একটি ইবাদত। তাই দু’আ যে ব্যক্তিই করুক না কেন সে-ই লাভবান। বরং হাদীছে এসেছে নবী () বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا 
যে কোন মুসলিম আল্লাহর কাছে দু’আ করবে- যে দু’আয় কোন গুনাহ্থাকবে না, কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা থাকবে না। তাহলে আল্লাহতাকে তিনটির যে কোন একটি দান করবেন ১) তার দু’আ দুনিয়াতেই কবূল করা হবে ২) আখেরাতে তার জন্য তা সঞ্চয় করে রাখা হবে। ৩) তার দু’আর অনুরূপ একটি অমঙ্গল তার থেকে দূরীভূত করা হবে।”
প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য যে ব্যক্তি ব্যবহার করেছে তাকে নসীহত করছি, আপনি আল্লাহর কাছে তওবা করুন। কেননা এটি একটি মহা অপরাধ মূলক কথা। আল্লাহর নির্দেশ বিরোধী কথা ও তাঁর সাথে চ্যালেঞ্জ করা।
 প্রশ্নঃ (৩৩৯) কোন ব্যক্তি নিজের দাফনের ব্যাপারে স্থান নির্ধারণ করে ওসীয়ত করলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রথমতঃ তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন সে এ স্থান নিজের জন্য চয়ন করল? যদি এরকম হয় যে, উক্ত স্থানে কোন ভন্ড মিথ্যুক ওলীর মাজার আছে। অথবা এমন মাজার আছে যেখানে অহরহ শির্কের চর্চা হয়। অথবা এরকম কোন কারণ আছে যা শরীয়ত বহির্ভূত। তবে এক্ষেত্রে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করা যাবে না। বরং সে মুসলিম হলে তাকে মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ উল্লেখিত কোন কারণ যদি না থাকে। বরং এমনিই নিজ এলাকায় লাশ স্থানান্তরের ওসীয়ত করেছে। তবে এই ওসীয়ত পূর্ণ করতে গেলে যদি আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা বাস্তবায়ন করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় যে, বিশাল আকারের অর্থ ব্যয় না করলে তার ওসীয়তকৃত স্থানে লাশ নেয়া যাবে না, তবে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করবে না। বরং মুসলিমদের যে কোন গোরস্থানে দাফন করে দিবে। কেননা আল্লাহর নিকট পৃথিবীর সকল স্থানের মর্যাদা একই রকম।
 প্রশ্নঃ (৩৪০) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার তালক্বীন দিতে হবে?
উত্তরঃ মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তালক্বীন দিতে হবে। যে ব্যক্তির রূহ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার কাছে বসে তাকে পাঠ করতে বলবে, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যেমনটি নবী () চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “চাচা! আপনি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন। এই কালেমা দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে আপনার মুক্তির জন্য সুপারিশ করব।” কিন্তু চাচা আবু তালেব উহা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং শির্কের উপর মৃত্যু বরণ করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ্)
কিন্তু মৃত্যুর পরবর্তী দাফনের পর তালক্বীন দেয়া একটি বিদআত। কেননা এব্যাপারে নবী () থেকে কোন হাদীছ প্রমাণিত নেই। তবে দাফনের পর যা করা উচিত সে সম্পর্কে আবূ দাঊদে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী () কোন মৃতকে দাফন শেষ করলে তার কবরের কাছে দাঁড়াতেন এবং বলতেন,
اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ
তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ়তা কামনা কর। কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।” কিন্তু কবরের কাছে কুরআন তেলাওয়াত বা সূরা পাঠ বা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন দেয়া ভিত্তিহীন বিদআত।
 প্রশ্নঃ (৩৪১) দূর-দুরান্ত থেকে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে বিলম্ব করার বিধান কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। কেননা নবী () বলেন,
]أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ[
তোমরা জানাযা বহণ করার সময় দ্রুত গতিতে চল। কেননা সে যদি নেক হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।”
 কোন কোন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে অল্প কিছু সময় দেরী করাতে কোন দোষ নেই। তারপরও দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করাই উত্তম। নিকটাত্মীয়গণ বিলম্বে পৌঁছলেও কোন অসুবিধা নেই। তারা মৃতের কবরের উপর জানাযা স্বলাত আদায় করতে পারবে। যেমনটি করেছিলেন নবী ()জনৈক মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়- দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে মৃত্যু বরণ করলে লোকেরা বিষয়টি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না জানিয়েই তাকে দাফন করে দেয়। তখন নবী () বলেন, “তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের উপর জানাযা স্বলাত আদায় করেন।”
 প্রশ্নঃ (৩৪২) জানাযার স্বলাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে সংবাদ দেয়া কি নিষিদ্ধ ‘নাঈ’ তথা ঘটা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচারের অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি তা বৈধ?
উত্তরঃ এধরণের সংবাদ প্রদান বৈধ। এজন্য নবী () নাজাশীর মৃত্যু দিনে তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। তাছাড়া মসজিদে নববীর ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটি মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। তখন তিনি ছাহাবীদেরকে বলেন, “কেন তোমরা আমাকে জানালে না?” অতএব মুছল্লী বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৃত্যু সংবাদ প্রদান করতে কোন দোষ নেই। কেননা এর উদাহরণ হাদীছে পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে জানাযা স্বলাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও শুভাকাংখীদেরকে সংবাদ দেয়াতেও কোন দোষ নেই।
 প্রশ্নঃ (৩৪৩) মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
  উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছেঃ গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আসে- করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নযর না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং স্বলাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে উভয় ঠোঁটের ভিতরের অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পূর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী (ছা:) তাঁর কন্যা যায়নাবের h শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তাঁকে প্রয়োজন মনে করলে তিনবার বা পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দিতে বলেছেন।
 প্রশ্নঃ (৩৪৪) দুর্ঘটনা কবলিত, আগুনে পুড়া প্রভৃতি কারণে শুধুমাত্র দু’একটি অঙ্গ পাওয়া গেলে তার জানাযা ও গোসলের নিয়ম কি?
উত্তরঃ মৃতের উপর জানাযা পাঠ করার পর যদি তার সামান্য কোন অঙ্গ পাওয়া যায়, তবে তার জানাযা আর পড়তে হবে না। যেমন, জনৈক মৃত ব্যক্তিকে জানাযা দিয়ে আমরা তাকে দাফন করলাম। কিন্তু একটি পা বা হাত কাটা ছিল। দাফন করার পর উহা পাওয়া গেল। এখন এই কর্তিত অংশের জানাযা পড়তে হবে না। কেননা মৃতের উপর তো জানাযা হয়েই গেছে।
কিন্তু যদি মৃতের শরীরের মূল অংশই না পাওয়া যায়। শুধু তার কোন অঙ্গ পাওয়া গেল যেমন মাথা বা পা বা হাত। তবে যা পাওয়া যায় তাই গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে তার জানাযা পড়বে তারপর দাফন করবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
 চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পর গর্ভপাত হলে জানাযা পড়তে হবে?
প্রশ্নঃ (৩৪৫) জনৈক মহিলার গর্ভস্ত সন্তানের বয়স ছয় মাস হলে তা পড়ে যায়। সে কিন্তু বিভিন্ন ধরণের কষ্টকর ও ক্লান্তিকর কাজ করতো এবং সেই সাথে রমাদ্বন মাসে সওমও পালন করতো। তার আশংকা হচ্ছে এই গর্ভপাতের কারণ সে নিজেই। কারণ গর্ভ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতো। তাছাড়া জানাযা না পড়েই উক্ত মৃত সন্তানকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তার জানাযা না পড়া কি ঠিক হয়েছে? আর এই মহিলাই বা কি করবে, যে কঠিন পরিশ্রম করার কারণে বাচ্চা মারা গেছে এই অনুশোচনায় ভুগছে।
উত্তরঃ চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর যদি গর্ভস্ত সন্তান পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও দাফন করা ওয়াজিব। কেননা চার মাস পূর্ণ হলে প্রত্যেক ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। যেমন আবদুল্লাহ্বিন মাসঊদ h বর্ণিত হাদীছে প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ
রাসূলুল্লাহ্() আমাদের নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন, তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িতঃ “তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে উহা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিনে উহা মাংশ পিন্ডে রুপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহতা’আলা একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” ইহা একশত বিশ দিন অর্থাৎ চার মাস। সে যদি এই সময়ের পর মাতৃগর্ভ থেকে পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দিতে হবে, কাফন পরাতে হবে এবং জানাযা পড়তে হবে। আর সে মানুষের সাথে ক্বিয়ামত দিবসে পূণঃরুত্থিত হবে।
কিন্তু চার মাসের কম বয়সে পড়ে গেলে তাকে গোসল দিতে হবে না, কাফন পরাতে হবে না এবং জানাযাও দিতে হবে না। কেননা ওটা গোশতের একটি টুকরা মানুষ নয়।
প্রশ্নে উল্লেখিত সন্তানের বয়স ছয় মাস হওয়ার পর গর্ভপাত হয়ে গেছে। ওয়াজিব হচ্ছে, তার গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও জানাযা পড়া। কিন্তু যেহেতু এর কোনটাই করা হয়নি, তাকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তবে কবর কোনটি জানা থাকলে তার কবরে গিয়ে জানাযা স্বলাত আদায় করতে হবে। আর জানা না থাকলে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করে নিবে। যে কোন ভাবে একবার জানাযা পড়ে নিলেই হল।
আর প্রশ্নে উল্লেখিত মহিলাটির যে আশংকা তার কোন ভিত্তি ও প্রভাব নেই। এনিয়ে অনুশোচনায় ভুগা উচিত নয়। অনেক ভ্রুণই এভাবে মাতৃগর্ভে কারণে-অকারণে মরে যায় এবং পড়ে যায়। এনিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। তাকে কোন কিছুই করতে হবে না। অতএব আবশ্যক হচ্ছে এই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা মন থেকে ঝেড়ে ফেলা এবং স্বভাবিক জীবন্তযাপন করা। (আল্লাই তাওফীক দাতা ও ক্ষমাকারী।)
 প্রশ্নঃ (৩৪৬) জানাযা স্বলাত আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ জানাযা পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ইমাম পুরুষের লাশের মাথা বরাবর, আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। অন্তরে নিয়ত করে দাঁড়াবে। (আরবীতে বা বাংলায় মুখে নিয়ত বলা বা শিখিয়ে দেয়া বিদআত।) প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্... বিসমিল্লাহ্... পাঠ করে সূরা ফাতিহা তারপর ছোট কোন সূরা পাঠ করবে। বিদ্বানদের অনেকে ছোট একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত বলেছেন। (তবে ছানা পাঠ করার কোন ছহীহ্হাদীছ নেই) দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম (যা স্বলাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোন দু’আ পাঠ করবে। এই দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে,
اللهمَّ اغْفِرْ لِحَيِّناَ وَمَيِّتِنَا وَشاَهِدِناَ وَغَائِبِناَ، وَصَغِيْرَناَ وَكَبِيْرِناَ، وَذَكَرِناَ وَأُنْثاَناَ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِناَّ فَأَحْيِهِ عَلَى الإسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِناَّ فَتَوَفَّهُ عَلىَ الإيْمَانِ، اللَّهُمَّ لاَتَحْرِمْناَ أجْرَهُ وَلاَتُضِلَّناَ بَعْدَهُ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপসি', ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।” এবং এই দু’আটিও পড়তে পারে,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعاَفِهِ واَعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْماَءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ، وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطاَياَ كَمَا يُنَقَّىالثَّوْبُ الأبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِّنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ، وَعَذاَبِ النَّارِ 
হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তাকে মাফ করে দিন। তার আতিথেয়তা সম্মান জনক করুন। তার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দিন। আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তাকে গুনাহ হতে এমন ভাবে পরিস্কার করুন যেমন করে সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। তাকে তার (দুনিয়ার) ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার দান করুন। আরো তাকে দান করুন দুনিয়ার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তাকে বেহেসে-প্রবেশ করিয়ে দিন, আর কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ দিন।”
এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” তারপর ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে। পঞ্চম তাকবীর প্রদান করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটাও নবী () থেকে প্রমাণিত। অতএব কখনো কখনো পঞ্চম তাকবীর দিয়ে জানাযা পড়াও সুন্নাত। আর যা নবী () থেকে ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের উচিত হচ্ছে সেগুলোর উপর আ‘মাল করা। কখনো এটা আ‘মাল করবে কখনো ওটা আ‘মাল করবে। যদিও চার তাকবীরে জানাযা পাঠ করার বিষয়টি বহুল প্রচলিত।
কয়েকটি লাশ একত্রিত হলে একসাথে জানাযা পড়া যাবে। তখন ইমামের নিকটবর্তী রাখবে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে, তারপর নাবালেগ পুরুষ, এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা, অতঃপর নাবালেগ মেয়েদেরকে রাখবে। এদেরকে সাাজনোর তারতীব হচ্ছে, মহিলাদের বুক বরাবর পুরুষদের মাথা রাখতে হবে। আর ইমাম দাঁড়াবে পুরুষদের মাথা বরাবর। যাতে করে প্রত্যেকটি লাশের সামনে ইমামের দাঁড়ানো শরীয়ত সম্মত হয়।
লক্ষনীয় একটি বিষয়, সাধারণ মানুষের অনেকে ধারণা করে যে, যারা জানাযা উপস্থাপন করবে তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, ইমামের ডানে বামে দাঁড়ানো। বরং কমপক্ষে একজন হলেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, ইমাম সম্মুখে একাকী দাঁড়াবেন। যদি তারা প্রথম কাতারে স্থান না পায় তবে ইমামের পিছনে প্রথম কাতারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়বে।
 বেস্বলাতীর জানাযা পড়া জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (৩৪৭) মৃত ব্যক্তি যদি বেস্বলাতী হয় বা বেস্বলাতী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে বা সে মূলতঃ স্বলাতী বা বেস্বলাতী তার বিষয়টি অজানা থাকে, তবে তার জানাযা পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি জানা যায় যে মৃত ব্যক্তি বেস্বলাতী ছিল, তবে তার জানাযা আদায় করা নাজায়েয। বেস্বলাতী মৃতের অভিভাবকদের জন্য বৈধ নয়; তার লাশকে মুসলিমদের সামনে জানাযার জন্য উপস্থিত করা। কেননা সে কাফের মুরতাদ। আবশ্যক হচ্ছে, তার জানাযা না পড়া এবং মুসলিমদের গোরস্থান ছাড়া অন্য যে কোন স্থানে গর্ত খনন করে তার লাশ সেখানে নিক্ষেপ করা। তার কোনই মর্যাদা নেই। কেননা ক্বিয়ামত দিবসে তার হাশর হবে ফিরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে।
কিন্তু যে ব্যক্তির অবস্থা অজ্ঞাত বা সন্দেহপূর্ণ তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা আসল হচ্ছে সে মুসলিম এবং স্বলাতী। যতক্ষণ না প্রমাণিত হবে যে সে মুসলিম নয়। তবে সন্দেহ হলে দু’আর ক্ষেত্রে শর্ত করা যায়। দু’আয় এরূপ বলবে: اللهم إن كان مؤمنا فاغفر له وارحمه হে আল্লাহ! লোকটি যদি মু’মিন হয় তবে তাকে ক্ষমা কর, দয়া কর...। আর দু’আয় শর্ত করা বৈধ আছে। লে’আনের মাসআলায় স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে ব্যাভিচারের দোষারোপ করে এবং তাদের মধ্যে কেউ চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তবে লে’আন করবে। পুরুষ পঞ্চমবারে বলবে, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে আমার উপর আল্লাহর লা’নত।” আর স্ত্রীও পঞ্চমবারে বলবে, “আমার উপর আল্লাহর লা’নত, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই।”
 জানাযার জন্য সময় এবং স্থান নির্ধারণ করা আবশ্যক নয়।
প্রশ্নঃ (৩৪৮) জানাযা স্বলাতের জন্য কোন সময় নির্ধারিত আছে কি? রাতে কি দাফন করা জায়েয। জানাযার উপস্থিতিতে লোক সংখ্যার কি কোন সীমারেখা আছে?
উত্তরঃ জানাযা স্বলাত আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এই কারণে যে, মৃত্যুর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই মানুষ মৃত্যু বরণ করবে তাকে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে তার জানাযা আদায় করবে। তা রাতে হোক বা দিনে। দাফন করবে রাতে হোক বা দিনে। তবে তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়:
১) সূর্য উদয় থেকে নিয়ে এক তীর পরিমাণ সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত।
২) মধ্য দুপুরে, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলা পর্যন্ত। অর্থাৎ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পূর্বে প্রায় দশ মিনিট।
৩) সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্বে। অর্থাৎ এক তীর পরিমাণ সূর্য থাকার পর থেকে সূর্যাসে-র পূর্ব পর্যন্ত।
  এই তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়। এ সময়গুলোতে দাফন করা নিষেধ অর্থাৎ দাফন করা হারাম। কেননা ঊক্ববা বিন আমের h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তিনটি সময়ে রাসূলুল্লাহ্() আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, স্বলাত আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে।”
জানাযা স্বলাতে সর্বনিম্ন কত লোক হতে হবে তার কোন সীমা নির্ধারণ করা নেই। বরং একজন লোকও যদি জানাযা পড়ে যথেষ্ট হবে।
গোরস্থানে গিয়ে জানাযা পড়া জায়েয। এজন্য বিদ্বানগণ গোরস্থানে স্বলাত আদায় করার নিষেধাজ্ঞা থেকে জানাযার বিষয়টিকে স্বতন্ত্র রেখেছেন। তাঁরা বলেন, গোরস্থানে জানাযা স্বলাত আদায় করা জায়েয। হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে, মসজিদে নববী ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটির জানাযা নবী () তার কবরে গিয়ে আদায় করেছিলেন। সে রাতে মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। অতঃপর নবী () তাদেরকে বললেন, “তার কবর কোথায় আমাকে দেখিয়ে দাও।” তারপর তিনি তার কবরে জানাযা আদায় করলেন।
 প্রশ্নঃ (৩৪৯) গায়েবানা জানাযার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে গায়েবানা জানাযা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে ব্যক্তির জানাযা হয়নি তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। যেমন জনৈক মুসলিম কোন কাফের ভুখন্ডে মৃত্যু বরণ করল অথবা সমুদ্র বা নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করল কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেল না। তখন তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু যার জানাযা পড়া হয়েছে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এব্যাপারে নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা ছাড়া হাদীছে আর কোন দীলল নেই। কিন্তু নাজাশীর জানাযা তার নিজ দেশে পড়া হয়নি। এজন্য নবী () মদীনায় তার গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
নবী ()এর যুগে অনেক নেতৃবৃন্দ ও গোত্রপ্রধান মৃত্যু বরণ করেন কিন্তু এরকম কোন বর্ণনা নেই যে, নবী () তাদের গায়েবানা জানাযা আদায় করেছেন। বিদ্বানদের মধ্যে আবার কেউ বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি এমন পর্যায়ের লোক হয় যার সম্পদ, কার্যক্রম ও জ্ঞান্তবিদ্যা দ্বারা ধর্মের উপকার ও কল্যাণ সাধিত হয়েছে তবে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়। আর এরূপ না হলে গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ বলেন, কোন শর্ত ছাড়াই সব ধরণের ব্যক্তির জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয। এটি সর্বাধিক দুর্বল মত।
 মৃত ব্যক্তিকে দাফনের বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
প্রশ্নঃ (৩৫০) কোন কোন দেশে মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে হাত দু‘টো পেটের উপর রেখে দাফন করা হয়। দাফনের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, মৃতকে ডান কাতে শুইয়ে কিবলামুখি রেখে দাফন করা। কেননা কা’বা শরীফ হচ্ছে সকল মুসলিমের জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থার কিবলা। যেমন করে ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য সুন্নাত হচ্ছে ডান কাতে শোয়া। তেমনি মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে রেখে দাফন করতে হবে। কেননা নিদ্রা ও মৃত্যুকে আল্লাহতা’আলা ওফাতরূপে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
]اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ[
আল্লাহই প্রাণ হরণ করেন জীব সমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে  চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা যুমারঃ ৪২) তিনি আরো বলেনঃ
]وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَى أَجَلٌ مُسَمًّى ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ[
আর সেই মহা প্রভুই রাত্রিকালে নিদ্রারূপে তোমাদের নিকট এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম করে থাক তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, তারপর পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের কৃত-কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।” (সূরা আনআমঃ ৬০)
প্রশ্নকারী যা দেখেছে তা হয়তো ঐ এলাকার লোকদের অজ্ঞতার ফল। অন্যথা আমি জানিনা বিদ্বানদের কেউ এমত পোষণ করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে তার হাত দু‘টোকে পেটের উপর রাখতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৩৫১) গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দু’আ করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবরে বা গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়া করা বিদআত। এ সম্পর্কে নবী () বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই। আর যে ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই তা আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে উদ্ভাবন করা জায়েয নয়। কেননা নবী () বলেনঃ
وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত কাজই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।” অতএব মুসলিমদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, পূর্ববর্তী নেক সম্প্রদায় ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। যাতে করে তারা কল্যাণ ও হেদায়াত লাভ করতে পারে। নবী () বলেনঃ
 إِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ 
নিশ্চয় সর্বত্তোম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, আর সর্বত্তোম হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ () এর হেদায়াত।”
কবরের কাছে গিয়ে মৃতের জন্য দু’আ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কবরের কাছে দন্ডায়মান হয়ে সাধ্যানুযায়ী মৃতের জন্য দু’আ করবে। যেমন এরূপ বলবে, “হে আল্লাহতাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহতাকে দয়া কর। হে আল্লাহতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। হে আল্লাহতার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। .. ইত্যাদি।
আর কবরের কাছে নিজের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে কেউ যদি সেখানে যায়, তবে তা বিদআত। কেননা শরীয়তের প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন স্থানকে দু’আর জন্য নির্ধারণ করা যাবে না। আর যে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই তা নিজেদের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা বিদআত।
 প্রশ্নঃ (৩৫২) কবর যিয়ারত করার নিয়ম কি? নারীদের কবর যিয়ারত করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার পর নবী () তার অনুমতি প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ
পূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা উহা যিয়ারত করতে পার। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করাবে।” অতএব মরণের কথা স্মরণ ও উপদেশ গ্রহণের জন্য কবর যিয়ারত করতে হবে। কেননা মানুষ যখন মৃত লোকদের কবর যিয়ারত করবে, যারা কিনা তাদের সাথে তাদের মতই পৃথিবীতে বিচরণ করত, খানা-পিনা করত, দুনিয়াদারী করত। আজ তারাই নিজেদের কর্মের হাতে বন্দী। কর্ম ভাল থাকলে তাদের পরিণাম ভাল। কর্ম মন্দ থাকলে পরিণাম মন্দ- তখন নিঃসন্দেহে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করবে তার অন্তর নরম হবে, সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে। তখন আল্লাহর নাফরমানী থেকে ফিরে আসবে তাঁর আনুগত্যের দিকে। কবর যিয়ারতের সময় সুন্নাত হচ্ছে নবী ()এর পঠিত দু‘আ পাঠ করা। কবরবাসীকে সালাম দিবেঃ
(السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وإناَّ إنْ شاَءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ ويَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ أسألُ اللهَ لَناَ وَلَكُمُ الْعاَفِيَةَ)
হে কবরের অধিবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! আপনাদের প্রতি শান্তির ধারা বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহআমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের উপর রহম করুন। আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।”
আর নবী () থেকে এমন কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি কবর যিয়ারতের সময় সূরা ফাতিহা, বা সূরা ইখলাছ বা দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। অতএব কবর যিয়ারতের সময় এগুলো পাঠ করা নবী ()এর শরীয়ত বহির্ভূত কাজ।
নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা নবী () কবর যিয়ারত কারীনীদেরকে লা‘নত করেছেন। আরো লা‘নত করেছেন কবরে বাতি জ্বালানো ও মসজিদ নির্মাণকারীদেরকে। অতএব নারীদের জন্য কবর যিয়ারত হালাল নয়। এই নিষিদ্ধতা যদি কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু কবর যিয়ারতের নিয়ত ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি ঘর থেকে বের হয়; তারপর চলার পথে কবর বা গোরস্থান পাওয়া যায়, তবে নবী ()এর শিখানো পদ্ধতিতে সালাম প্রদান করবে। অতএব ঘর থেকে শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা এর মাধ্যমে নিজেকে ফিৎনার সম্মুখিন করবে। কিন্তু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য না করে বের হয়ে চলতি পথে পাওয়া কবরে সালাম প্রদান করাতে কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৩৫৩) মৃতের বাড়ীতে কুরআন খানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোরানখানী মাহফিল করা একটি বিদআত। কেননা ইহা নবী () বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল না। কুরআন দ্বারা দুঃখ-চিন্তা হালকা হয়- যদি কোন ব্যক্তি উহা নীচু স্বরে তেলাওয়াত করে থাকে। জোরে চিৎকার করে বা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠ করলে এরূপ হয় না। কেননা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে সমস্ত মানুষ তা শুনে থাকে এমনকি খেলা-ধুলায় লিপ্ত লোকদের কানেও তা পৌঁছে কিন্তু তারা তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। এমনকি আপনি দেখবেন যারা গান্তবাদ্য শুনে তাদের কাছেও ঐ কুরআনের আওয়াজ পৌঁছে। তারা গানও শুনছে কুরআনও শুনছে। ফলে তারা যেন এই কুরআনকে ঠাট্টা ও তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করেছে। কুরআনের অবমাননা করছে।
আর শোক-সমবেদনা জানাতে ও আগত লোকদের স্বাগত জানানোর জন্য মৃতের পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া একটি বিদআত। অনুরূপভাবে মৃতের বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করাও একটি বিদআত। কেননা বিষয়টি নবী ()এর যুগে পরিচিত ছিল না। তবে চলতে ফিরতে, মসজিদে বাজারে মৃতের পরিবারকে শোক জানানোতে কোন অসুবিধা নেই। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে সমবেত লোকদের জন্য খাদ্য প্রস্তত করাকে ছাহাবায়ে কেরাম নিষিদ্ধ নিয়াহা বা ‘মৃতের জন্য বিলাপ’ এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী () বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ
উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত, তারা যেন এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে তাদের যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির। কেননা নবী () বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।” এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না। কেননা আল্লাহতা’আলা বলেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪) আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “সফর শাস্তির একটি অংশ।” অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।
সারকথা মুসলিম ভাইদেরকে আমি নসীহত করি, তারা যেন শরীয়ত বহির্ভূত এই কুসংস্কার পরিত্যাগ করে যা তাদেরকে আল্লাহথেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং মৃতদের শাস্তি বৃদ্ধি করবে।

Post a Comment

0 Comments