সওম বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
সওম বিষয়ক প্রশ্ন
উত্তর
অধ্যায়ঃ সওম
الصيـام
প্রশ্নঃ (৩৯২) সওম
ফরদ্ব হওয়ার হিকমত কি?
উত্তরঃ পবিত্র কুরআনের নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই আমরা জানতে পারি সওম ফরদ্ব
হওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা ও আল্লাহর ইবাদত করা।
আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সওম ফরদ্ব করা হয়েছে, যেমন ফরদ্ব করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর।
যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক
অর্থে তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় বাস্তবায়ন করা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা। নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
“যে ব্যক্তি (সওম রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যার কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার খানা-পিনা পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার
নেই।”
অতএব এ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, সায়িম যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবং
সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী
অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস
এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু আফসোসের বিষয় অধিকাংশ সায়িম রমাদ্বনের সাথে
অন্য মাসের কোন পার্থক্য করে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরদ্ব কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোন পার্থক্য নেই। তাকে দেখলে বুঝা
যাবে না তার মধ্যে সওমের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় সওমকে ভঙ্গ
করে দিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
সারাবিশ্বে একসাথে রমাদ্বনের সওম শুরু করা।
প্রশ্নঃ (৩৯৩) মুসলিম জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ
চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়। তারা বলে মক্কায় যখন রমাদ্বন
মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই সওম রাখবে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ বিষয়টি মহাকাশ গবেষণার দিক থেকে অসম্ভব। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, চন্দ্র উদয়ের স্থান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে
অভিজ্ঞ বিদ্বানগণ ঐকমত্য। আর এই বিভিন্নতার দাবী হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় ভিন্ন রকম বিধান
হবে। একথার স্বপক্ষে দলীল কুরআন হাদীছ ও সাধারণ যুক্তি।
আল্লাহতা’আলা বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন সওম পালন করে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) যদি পৃথিবীর শেষ সীমান্তে লোকেরা এ মাসে উপস্থিত
না হয় অর্থাৎ চাঁদ না দেখে আর মক্কার লোকেরা চাঁদ দেখে, তবে কিভাবে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে
যারা কিনা চাঁদই দেখেনি। আর নবী(ﷺ) বলেন,صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ “তোমরা চাঁদ দেখে সওম রাখ, চাঁদ দেখে সওম ভঙ্গ কর।” মক্কার অধিবাসীগণ যদি চাঁদ দেখে তবে পাকিস্তান এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার
অধিবাসীদের কিভাবে আমরা বাধ্য করতে পারি যে তারাও সওম পালন করবে? অথচ আমরা জানি যে, তাদের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। আর নবী (ﷺ) সওমের বিষয়টি
চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।
যুক্তিগত দলীল হচ্ছে, বিশুদ্ধ ক্বিয়াস যার বিরোধীতা করার অবকাশ নেই।
আমরা ভাল ভাবে অবগত যে, পশ্চিম এলাকার অধিবাসীদের আগেই পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের নিকট ফজর উদিত হয়।
এখন পূর্ব এলাকায় ফজর উদিত হলে কি আমরা পশ্চিম এলাকার লোকদের বাধ্য করব একই সাথে
খানা-পিনা থেকে বিরত হতে? অথচ তাদের ওখানে এখনও রাতের অনেক অংশ বাকী আছে? উত্তরঃ কখনই না। সূর্য যখন পূর্ব এলাকার
অধিবাসীদের আকাশে অস্তমিত হয়, তখন পশ্চিম এলাকার দিগন্তে তো সূর্য দেখাই যাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা ইফতার
করতে বাধ্য করব? উত্তরঃ অবশ্যই না। অতএব চন্দ্রও সম্পূর্ণরূপে সূর্যের মতই। চন্দ্রের হিসাব
মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর সূর্যের হিসাব দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহবলেছেন,
]أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ[
“সওমের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য বৈধ করা
হয়েছে; তারা তোমাদের
জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। তোমরা যে নিজেদের খিয়ানত করছিলে, আল্লাহতা পরিজ্ঞাত আছেন। এ জন্যে তিনি তোমাদেরকে
ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (সওমর রাত্রেও) তাদের সাথে
সহবাসে লিপ্ত হতে পার এবং আল্লাহতোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর।
এবং প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত
তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা সওম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ করার সময় (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করবে না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না। এভাবে আল্লাহমানব
মন্ডলীর জন্যে তাঁর নিদর্শন সমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।” (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সেই আল্লাহই বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন সওম পালন করে।” অতএব যুক্তি ও দলীলের নিরীখে সওম ও ইফতারের
ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা বিধান হবে। যার সম্পর্ক হবে বাহ্যিক আলামত
বা চিহ্ন দ্বারা যা আল্লাহতা’আলা কুরআনে এবং নবী (ﷺ) তাঁর সুন্নাতে
নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষ করা এবং সূর্য বা ফজর প্রত্যক্ষ
করা।
মানুষ যে এলাকায় থাকবে সে এলাকায় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে সওম ভঙ্গ করবে।
প্রশ্নঃ (৩৯৪) সায়িম যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে
স্থানান্তর হয়, কিন্তু
আগের দেশে ঈদের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেকি এখন সওম ভঙ্গ করবে? উল্লেখ্য
যে, দ্বিতীয়
দেশে ঈদের চাঁদ এখনও দেখা যায়নি।
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি এক ইসলামী রাষ্ট্র থেকে অপর ইসলামী রাষ্ট্রে গমণ করে আর উক্ত
রাষ্ট্রে সওম ভঙ্গের সময় না হয়ে থাকে, তবে সে তাদের সাথে সওম চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না তারা সওম ভঙ্গ করে। কেননা মানুষ যখন
সওম রাখে তখন সওম রাখতে হবে, মানুষ যখন সওম ভঙ্গ করে তখন সওম ভঙ্গ করতে হবে। মানুষ যেদিন কুরবানীর ঈদ
করে সেদিন কুরবানীর ঈদ করবে। যদিও তার একদিন বা দু’দিন বেশী হয়ে যায় তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমন কোন লোক সওম
রেখে পশ্চিম দিকের কোন দেশে ভ্রমণে শুরু করল। সেখানে সূর্য অস্ত যেতে দেরী হচ্ছে।
তখন সে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশ্যই দেরী করবে। যদিও সময় সাধারণ দিনের চেয়ে দু’ঘন্টা বা তিন ঘন্টা বা তার চাইতে বেশী হয়।
দ্বিতীয় শহরে সে যখন পৌঁছেছে তখন সেখানে ঈদের চাঁদ
দেখা যায়নি। অতএব সে অপেক্ষা করবে। কেননা নবী (ﷺ) আমাদেরকে চাঁদ
না দেখে সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ “তোমরা চাঁদ দেখে সওম রাখ, চাঁদ দেখে সওম ভঙ্গ কর।”
এর বিপরীত কেউ যদি এমন দেশে সফর করে যেখানে নিজের
দেশের পূর্বে চাঁদ দেখা গেছে (যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সঊদী আরব সফর করে) তবে সে ঐ
দেশের হিসাব অনুযায়ী সওম ভঙ্গ করবে এবং ঈদের স্বলাত পড়ে নিবে। আর যে কটা সওম বাকী থাকবে তা রমাদ্বন শেষে কাদ্বা আদায়
করে নিবে। চাই একদিন হোক বা দু‘দিন। কেননা আরবী মাস ২৯ দিনের
কম হবে না বা ৩০ দিনের বেশী হবে না। ২৯ দিন পূর্ণ না হলেও সওম ভঙ্গ করবে এজন্য যে, চাঁদ দেখা গেছে। আর চাঁদ দেখা গেলে তো সওম ভঙ্গ
করা আবশ্যক। কিন্তু যেহেতু একটি সওম কম হল তাই রমাদ্বন শেষে তা কাদ্বা করতে হবে।
কেননা মাস ২৮ দিনে হয় না।
কিন্তু পূর্বের মাসআলাটি এর বিপরীত। নতুন চাঁদ না
দেখা পর্যন্ত সওম ভঙ্গ করা জায়েয নয়। কেননা নতুন চাঁদ না উঠা পর্যন্ত রমাদ্বন মাস
বহাল। যদিও দু‘একদিন বেশী হয়ে যায় তাতে কোন
অসুবিধা নেই। সেটা এক দিনে কয়েক ঘন্টা বৃদ্ধি হওয়ার মত। (অতিরিক্ত সওম নফল হিসেবে
গণ্য হবে।)
কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে সওম ভঙ্গ করা জায়েয
নয়।
প্রশ্নঃ (৩৯৫) যে ব্যক্তি কষ্টকর কঠিন কাজ করার
কারণে সওম রাখতে অসুবিধা অনুভব করে তার কি সওম ভঙ্গ করা জায়েয?
উত্তরঃ আমি যেটা মনে করি, কাজ করার কারণে সওম ভঙ্গ করা জায়েয নয়, হারাম। সওম রেখে কাজ করা যদি সম্ভব না হয়, তবে রমাদ্বন মাসে ছুটি নিবে, অথবা কাজ কমিয়ে দিবে, যাতে করে রমাদ্বনের সওম পালন করা সম্ভব হয়। কেননা
রমাদ্বনের সওম ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। যার মধ্যে শিথীলতা করা জায়েয নয়।
ঋতুর দিনগুলোতে ছেড়ে দেয়া সওম কাদ্বা আদায় করা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ (৩৯৬) জনৈক বালিকা ছোট বয়সে ঋতুবতী হয়ে
গেছে। সে অজ্ঞতা বশতঃ ঋতুর দিনগুলোতে সওম পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, ঋতু অবস্থায় যে কয়দিনের সওম আদায় করেছে সেগুলোর কাদ্বা আদায় করা। কেননা ঋতু
অবস্থায় সওম পালন করলে বিশুদ্ধ হবে না এবং গ্রহণীয় হবে না। যদিও তা অজ্ঞতা বশতঃ
হয়ে থাকে। তাছাড়া পরবর্তীতে যে কোন সময় তা কাদ্বা করা সম্ভব। কাদ্বা আদায় করার
জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই।
এর বিপরীত আরেকটি মাসআলা হচ্ছে, অল্প বয়সে জনৈক বালিকা ঋতুবতী হয়ে গেছে। কিন্তু
লজ্জার কারণে বিষয়টি কারো সামনে প্রকাশ করেনি এবং তার সওমও পালন করেনি। এর উপর
ওয়াজিব হচ্ছে, উক্ত মাসের সওম কাদ্বা আদায় করা। কেননা নারী ঋতুবতী হয়ে গেলেই প্রাপ্ত
বয়স্ক হয়ে যায় এবং শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান পালন করা তার উপর ফরদ্ব হয়ে যায়।
উত্তরঃ যে ব্যক্তি রমাদ্বনের সওম পরিত্যাগ করে এই যুক্তিতে যে, সে নিজের এবং পরিবারের জীবিকা উপার্জনে ব্যস্ত। সে
যদি এই তা’বীল বা ব্যাখ্যা করে যে, অসুস্থ ব্যক্তি যেমন সওম ভঙ্গ না করলে বেঁচে থাকতে
অক্ষম তেমনি আমিও তো দরিদ্র অভাবী, জীবিকা উপার্জন করতে হলে আমাকে সওম ভঙ্গ করতে হবে, তবে এই যুক্তি খোঁড়া এবং নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি
মূর্খ। অতএব অজ্ঞতার কারণে এবং অপব্যাখ্যার কারণে সে উক্ত সময়ের কাদ্বা আদায় করবে যদি
সে জীবিত থাকে। জীবিত না থাকলে তার পরিবার তার পক্ষ থেকে কাদ্বা আদায় করে দিবে।
কেউ কাদ্বা আদায় না করলে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে
খাদ্য খাওয়াবে।
কিন্তু যদি কোন ধরণের ব্যাখ্যা না করে
ইচ্ছাকৃতভাবে সওম পরিত্যাগ করে থাকে, তবে বিদ্বানদের মতামত সমূহের মধ্যে থেকে বিশুদ্ধ
মত হচ্ছে, সময়ের সাথে
সংশ্লিষ্ট ইবাদত সমূহ বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় অতিবাহিত করে আদায় করলে তা কবূল
হবে না। তাই এ লোকের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তওবা করা, নেক আ‘মাল ও নফল
ইবাদত সমূহ বেশী বেশী সম্পাদন করা ও ইসে-গফার করা। এর দলীল হচ্ছে, নবী (ﷺ) বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন আ‘মাল করবে যাতে আমাদের
নির্দেশনা নেই। তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” সময়ের সাথে নির্দিষ্ট ইবাদত সমূহ যেমন সময়ের পূর্বে আদায় করলে কবূল হবে না।
অনুরূপভাবে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তা গ্রহণীয় হবে না। কিন্তু যদি অজ্ঞতা বা
ভুলের কোন ওযর থাকে, তবে ভুল সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলেনঃ
]مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أو نام عنها فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ[
“যে ব্যক্তি স্বলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলেই সে তা আদায় করবে। এটাই তার
কাফ্ফারা।”
প্রশ্নঃ (৩৯৮) সওম
ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ কি কি?
উত্তরঃ সওম ভঙ্গের কারণ সমূহ হচ্ছেঃ
১) অসুস্থতা, ২) সফর। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহবলেন, وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ “আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে (সে সওম ভঙ্গ করে) অন্য দিনে
তা কাদ্বা আদায় করে নিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
৩) গর্ভবতী নারীর নিজের বা শিশুর জীবনের আশংকা করলে সওম ভঙ্গ করবে।
৪) সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী নারী যদি সওম রাখলে নিজের বা সন্তানের জীবনের
আশংকা করে তবে সওম ভঙ্গ করবে।
৫) কোন বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে সওম ভঙ্গ করা: যেমন পানিতে ডুবন্ত
ব্যক্তিকে উদ্ধার, আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে দরকার হলে সওম ভঙ্গ করা।
৬) আল্লাহর পথে জিহাদে থাকার সময় শরীরে শক্তি বজায়
রাখার জন্য সওম ভঙ্গ করা। কেননা নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের
সময় ছাহাবীদেরকে বলেছিলেন,إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ فَأَفْطِرُوا “আগামীকাল তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করবে, সওম ভঙ্গ করলে তোমরা অধিক শক্তিশালী থাকবে, তাই তোমরা সওম ভঙ্গ কর।”
বৈধ কোন কারণে সওম ভঙ্গ করলে দিনের বাকী অংশ সওম
অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়। কেননা সে তো গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণেই সওম ভঙ্গ করেছে।
এজন্য এ মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ কোন রুগী যদি অসুস্থতার কারণে দিনে সওম ভঙ্গ
করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে যায়, তবে দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায় থাকার কোন
আবশ্যকতা নেই। কোন মুসাফির যদি সওম ভঙ্গ অবস্থায় দিন থাকতেই সফর থেকে ফিরে আসে
তারও দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায় থাকার আবশ্যকতা নেই। অনুরূপ বিধান ঋতুবতী নারীর।
কেননা এরা সবাই বৈধ কারণে সওম ভঙ্গ করেছে। তাই ঐ দিবস তাদের জন্যই। তাতে তাদের
প্রতি সওমের আবশ্যকতা নেই। কেননা শরীয়ত তাদেরকে সওম ভঙ্গের অনুমতি প্রদান করে আবার
তা আবশ্যক করবে না।
এর বিপরীত মাসআলা হচ্ছে, রমাদ্বন মাসের চাঁদ দেখা গেছে একথা যদি দিনের
বেলায় প্রমাণিত হয়, তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথে সওমর নিয়ত করে নিতে হবে এবং দিনের বাকী সময় সওম
অবস্থায় কাটাতে হবে। উভয় মাসআলায় পার্থক্য সুস্পষ্ট। কেননা যখন কিনা দিনের বেলায়
রমাদ্বন মাস শুরু হওয়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে, তখন তাদের উপর সে দিনের সওম পালন করা ওয়াজিব হয়ে
গেছে। কিন্তু না জানার কারণে তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য এবং তাদের সওম বিশুদ্ধ। এই
কারণে তারা যদি জানতে পারত যে আজ রমাদ্বন শুরু হয়েছে, তবে সওম রাখা তাদের জন্য আবশ্যক হত।
ফজর হওয়ার পর যদি জানতে পারে যে রমাদ্বন মাস শুরু হয়েছে, তখন কি করবে?
প্রশ্নঃ (৩৯৯) রমাদ্বন মাস শুরু হয়েছে কিনা এসংবাদ না
পেয়েই জনৈক ব্যক্তি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে সে সওমের নিয়ত করেনি ফজর হয়ে গেছে। ফজরের
সময় সে জানতে পারল আজ রমাদ্বনের প্রথম দিন। এ অবস্থায় তার করণীয় কি? উক্ত
দিনের সওম কি কাদ্বা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ যখন সে জানতে পারবে তখনই সওমর নিয়ত করে ফেলবে এবং সওম পালন করবে। অধিকাংশ
বিদ্বানের মতে এ দিনটির সওম পরে সে কাদ্বা আদায় করবে। তবে ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)
এতে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, জানার সাথে নিয়তের সম্পর্ক। এ লোক তো জানতেই পারেনি। অতএব তার ওযর
গ্রহণযোগ্য। সে জানতে পারলে রাতে কখনই সওমের নিয়ত করা ছাড়তো না। কিন্তু সে তো ছিল
অজ্ঞ। আর অজ্ঞ ব্যক্তির ওযর গ্রহণযোগ্য। অতএব জানার পর যদি সওমর নিয়ত করে ফেলে তবে
সওম বিশুদ্ধ। তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে না।
অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে উক্ত দিনের সওম রাখা আবশ্যক এবং তার কাদ্বা
আদায় করাও আবশ্যক। এর কারণ হিসেবে বলেন, এ লোকের দিনের একটি অংশ নিয়ত ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।
তাই তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে। আমি মনে করি, সতর্কতা বশতঃ উক্ত দিনের সওম কাদ্বা করে নেয়াই
উচিত।
প্রশ্নঃ (৪০০) কারণ বশতঃ কোন ব্যক্তি যদি সওম ভঙ্গ করে
আর দিন শেষ হওয়ার আগেই উক্ত ওযর দূর হয়ে যায়। সে কি দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায়
কাটাবে?
উত্তরঃ না, দিনের বাকী অংশ
সওম অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়। তবে রমাদ্বন শেষে উক্ত দিবসের কাদ্বা তাকে আদায় করতে
হবে। কেননা শরীয়ত অনুমদিত কারণেই সে সওম ভঙ্গ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ অসুস্থ
ব্যক্তির অপারগতার কারণে শরীয়ত তাকে ঔষুধ সেবনের অনুমতি দিয়েছে। ঔষুধ সেবন করা
মানেই সওম ভঙ্গ। অতএব পূর্ণ এই দিনটির সওম তার উপর আবশ্যক নয়। দিনের বাকী অংশ সওম
অবস্থায় থাকার অবশ্যকতায় শরীয়ত সম্মত কোন ফায়েদা নেই। যেখানে কোন উপকার নেই তা
আবশ্যক করাও চলে না।
উদাহরণ স্বরূপঃ জনৈক ব্যক্তি দেখল একজন লোক পানিতে
ডুবে যাচ্ছে। সে বলছে আমি যদি পানি পান করি তবে এই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারব।
পানি পান না করলে তাকে বাঁচানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় সে পানি পান
করবে এবং তাকে পানিতে ডুবা থেকে উদ্ধার করবে। অতঃপর দিনের অবশিষ্ট অংশ খানা-পিনা
করবে। এ দিনের সম্মান তার জন্য আর নেই। কেননা শরীয়তের দাবী অনুযায়ীই সওম ভঙ্গ করা
তার জন্য বৈধ হয়েছে। তাই দিনের বাকী অংশ সওম রাখা আবশ্যক নয়।
যদি কোন লোক অসুস্থ থাকে তাকে কি আমরা বলব, ক্ষুধার্ত না হলে খানা খাবে না? পিপাসিত না হলে পানি পান করবে না? অর্থাৎ- প্রয়োজন না হলে খানা-পিনা করবে না? না, এরূপ বলব না। কেননা এ লোককে তো সওম ভঙ্গের অনুমতি
দেয়া হয়েছে। অতএব শরঈ দলীলের ভিত্তিতে রমাদ্বনের সওম ভঙ্গকারী প্রত্যেক ব্যক্তির
দিনের অবশিষ্ট অংশ সওম অবস্থায় অতিবাহিত করা আবশ্যক নয়।
এর বিপরীত মাসআলায় বিপরীত সমাধান। অর্থাৎ- বিনা
ওযরে যদি সওম ভঙ্গ করে তবে তাকে দিনের অবশিষ্ট অংশ সওম অবস্থায় থাকতে হবে। কেননা
সওম ভঙ্গ করা তার জন্য বৈধ ছিল না। শরীয়তের অনুমতি ছাড়াই সে এদিনের সম্মান নষ্ট
করেছে। অতএব দিনের বাকী অংশ সওম পালন করা যেমন আবশ্যক তেমনি কাদ্বা আদায় করাও
যরূরী।
কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে সওম ভঙ্গ করে মিসকীন খাওয়াবে।
প্রশ্নঃ (৪০১) জনৈক মহিলা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার
কারণে ডাক্তারগণ তাকে সওম রাখতে নিষেধ করেছে। এর বিধান কি?
উত্তরঃ আল্লাহ বলেন,
]شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنْ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ[
“রমাদ্বন হচ্ছে সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথ যাত্রীদের
জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই
তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের সওম রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ অথবা
মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে। আল্লাহতোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য কঠিন কামনা করেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
মানুষ যদি এমন রোগে আক্রান্ত হয় যা থেকে সুস্থ
হওয়ার কোন আশা নেই। তবে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে।
খাদ্য দেয়ার পদ্ধতি হচ্ছে, মিসকীনকে পরিমাণমত চাউল প্রদান করা এবং সাথে মাংস ইত্যাদি তরকারী হিসেবে
দেয়া উত্তম। অথবা দুপুরে বা রাতে তাকে একবার খেতে দিবে। এটা হচ্ছে ঐ রুগীর
ক্ষেত্রে যার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। আর নারী এ ধরণের রোগে আক্রান্ত। তাই
আবশ্যক হচ্ছে সে প্রতিদিনের জন্য একজন করে মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
উত্তরঃ মুসাফির নিজ শহর থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত দু’দু রাকাত স্বলাত আদায় করবে। আয়েশা h বলেন,
أَوَّلَ مَا فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ وَأُتِمَّتْ صَلَاةُ الْحَضَرِ
“সর্বপ্রথম যে স্বলাত ফরদ্ব করা হয়েছিল তা হচ্ছে দু’রাকাত।
সফরের স্বলাতকে ঐভাবেই রাখা হয়েছে এবং গৃহে অবস্থানের সময় স্বলাতকে পূর্ণ (চার
রাকাত) করা হয়েছে।” অন্য বর্ণনায়
বলা হয়েছে, “গৃহে অবস্থানের সময় স্বলাত বৃদ্ধি করা হয়েছে।” আনাস বিন মালেক h বলেন, আমরা নবী (ﷺ)এর সাথে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলাম। তিনি মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত দু’দু রাকাত
করে স্বলাত আদায় করলেন।
কিন্তু মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের সাথে স্বলাত
আদায় করে তবে পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। চাই স্বলাতের প্রথম থেকে ইমামের সাথে থাকুক
বা পরে এসে অংশ গ্রহণ করুক। কেননা নবী (ﷺ)এর সাধারণ বাণী একথার দলীল।
إِذَا سَمِعْتُمُ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلَا تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
“যখন স্বলাতের ইকামত প্রদান করা হয় তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থির এবং প্রশান্তির
সাথে স্বলাতের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর স্বলাতের যতটুকু অংশ পাবে
আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে পূর্ণ করে নিবে।”
এ হাদীছটি স্থানীয় ইমামের পিছনে স্বলাত আদায়কারী
মুসাফিরদেরও শামিল করে। ইবনু আব্বাস hকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এটা কি কথা মুসাফির একাকী স্বলাত পড়লে দু’রাকাত পড়বে আর স্থানীয় ইমামের পিছনে পড়লে চার রাকাত পড়বে? তিনি বললেন, এটা সুন্নাত।
মুসাফিরের জন্য জামাআতের স্বলাত রহিত নয়। কেননা
আল্লাহবলেনঃ
]وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ[
“আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে জামাআতের সাথে স্বলাত পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে স্বলাতে দাঁড়াবে
এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত
পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও স্বলাত পড়েনি তারা
আসবে এবং আপনার সাথে স্বলাত পড়ে নিবে।” (সূরা
নিসাঃ ১০২)
অতএব মুসাফির যদি নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে অবস্থান
করে, তবে আযান শুনলেই
মসজিদে জামাআতের স্বলাতে উপস্থিত হবে। তবে যদি মসজিদ থেকে বেশী দূরে থাকে বা সফর
সঙ্গীদের ক্ষতির আশংকা করে তবে মসজিদে না গেলেও চলবে। কেননা সাধারণ দলীল সমূহ
একথাই প্রমাণ করে যে, আযান বা এক্বামত শুনলেই জামাআতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।
নফল বা সুন্নাত স্বলাতের ক্ষেত্রেঃ মুসাফির যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছাড়া সবধরণের নফল ও সুন্নাত
আদায় করবে। রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর, ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত স্বলাত আদায় করবে।
দু’স্বলাত
একত্রিত করার বিধান হচ্ছেঃ সফর যদি চলমান থাকে তবে উত্তম হচ্ছে দু’স্বলাতকে একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশা একত্রিত আদায় করবে।
প্রথম স্বলাতের সময়ই দু’স্বলাত একত্রিত আদায় করবে অথবা
দ্বিতীয় স্বলাতের সময় দু’স্বলাতকে একত্রিত করবে। যেভাবে
তার জন্য সুবিধা হয় সেভাবে করবে।
কিন্তু সফরে গিয়ে কোন জায়গায় যদি অবস্থান করে তবে
উত্তম হচ্ছে দু’স্বলাতকে একত্রিত না করা।
একত্রিত করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা উভয়টিই রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে প্রমাণিত
আছে।
সওমের ক্ষেত্রে মুসাফিরের জন্য উত্তম হচ্ছে সওম
পালন করা। সওম ভঙ্গ করলেও কোন অসুবিধা নেই। পরে উক্ত দিনগুলোর কাদ্বা আদায় করে
নিবে। তবে সওম ভঙ্গ করা যদি বেশী আরাম দায়ক হয় তাহলে সওম ভঙ্গ করাই উত্তম। কেননা
আল্লাহবান্দাকে যে ছুটি দিয়েছেন তা গ্রহণ করা তিনি পসন্দ করেন। সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
প্রশ্নঃ (৪০৩) সফর
অবস্থায় কষ্ট হলে সওম রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ সফর অবস্থায় যদি এমন কষ্ট হয় যা সহ্য করা সম্ভব, তবে সে সময় সওম রাখা মাকরূহ। কেননা একদা সফরে নবী (ﷺ) দেখলেন জনৈক
ব্যক্তির পাশে লোকজন ভীড় করছে এবং তাকে ছাঁয়া করছে। তিনি বললেন, এর কি হয়েছে? তারা বলল, লোকটি সায়িম। তখন তিনি বললেন, لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ “সফর অবস্থায় সওম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।”
কিন্তু সফরে সওম রাখা যদি অধিক কষ্টদায়ক হয় তবে
ওয়াজিব হচ্ছে সওম ভঙ্গ করা। কেননা সফর অবস্থায় লোকেরা যখন নবী (ﷺ)এর নিকট অভিযোগ করল যে তাদের কষ্ট হচ্ছে তখন তিনি
সওম ভঙ্গ করলেন। অতঃপর বলা হল, কিছু লোক এখনও সওম রেখেছে। তিনি বললেন, أُولَئِكَ الْعُصَاةُ أُولَئِكَ الْعُصَاةُ “ওরা নাফরমান, ওরা নাফরমান।”
কিন্তু সওম রাখতে যার কোন কষ্ট হবে না, তার জন্য উত্তম হচ্ছে নবী (ﷺ)এর অনুসরণ করে সওম পালন করা। কেননা সফর অবস্থায়
তিনি সওম রাখতেন। আবু দারদা h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ فِي حَرٍّ شَدِيدٍ وَمَا فِينَا صَائِمٌ إِلَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَبْدُ اللَّهِ ابْنُ رَوَاحَةَ
“একদা রমাদ্বন মাসে কঠিন গরমের সময় আমরা নবী (ﷺ)এর সাথে সফরে ছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) ও আবদুল্লাহ্বিন
রাওয়াহা ছাড়া আর কেউ সওম রাখেন নি।”
সফর আরাম দায়ক হলে সওম ভঙ্গ না করাই উত্তম।
প্রশ্নঃ (৪০৪) আধুনিক যুগের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ও
আরাম দায়ক হওয়ার কারণে সফর অবস্থায় সওম রাখা মুসাফিরের জন্য কষ্টকর নয়। এ অবস্থায়
সওম রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ মুসাফির সওম রাখা ও ভঙ্গ করার ব্যাপারে ইচ্ছাধীন। আল্লাহবলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ[
“আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) ছাহাবায়ে কেরাম নবী (ﷺ)এর সাথে সফরে থাকলে কেউ সওম রাখতেন কেউ সওম ভঙ্গ
করতেন। কোন সওম ভঙ্গকারী অপর সায়িমকে দোষারোপ করতেন না, সায়িমও সওম ভঙ্গকারীকে দোষারোপ করতেন না। নবী (ﷺ)ও সফর অবস্থায় সওম রেখেছেন। আবু দারদা h বলেন, “একদা
রমাদ্বন মাসে কঠিন গরমের সময় আমরা নবী (ﷺ)এর সাথে সফরে ছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে
রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) ও আবদুল্লাহ্বিন
রাওয়াহা ছাড়া আর কেউ সওম রাখে নি।”
মুসাফিরের জন্য মূলনীতি হচ্ছে, সে সওম রাখা ও ভঙ্গ করার ব্যাপারে ইচ্ছাধীন।
কিন্তু কষ্ট না হলে সওম রাখাই উত্তম। কেননা এতে তিনটি উপকারীতা রয়েছেঃ
প্রথমতঃ রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)এর অনুসরণ।
দ্বিতীয়তঃ সওম রাখতে সহজতা। কেননা সমস্ত মানুষ যখন সওম রাখে তখন সবার সাথে সওম রাখা
অনেক সহজ।
তৃতীয়তঃ দ্রুত নিজেকে যিম্মামুক্ত করা।
কিন্তু কষ্টকর হলে সওম রাখবে না। এ অবস্থায় সওম
রাখা পূণ্যেরও কাজ নয়। কেননা এক সফরে নবী (ﷺ) দেখলেন জনৈক
ব্যক্তির পাশে লোকজন ভীড় করছে এবং তাকে ছাঁয়া দিচ্ছে। তিনি বললেন, এর কি হয়েছে? তারা বলল, লোকটি সায়িম। তখন তিনি বললেন, لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ “সফর অবস্থায় সওম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।”
এভিত্তিতে আমরা বলব, বর্তমান যুগে সাধারণতঃ সফরে তেমন কোন কষ্ট হয় না।
তাই সওম পালন করাই উত্তম।
মুসাফির মক্কায় পৌঁছে সওম ছেড়ে দিয়ে প্রশান্তির সাথে ওমরা করতে পারে
প্রশ্নঃ (৪০৫) সওম অবস্থায় মুসাফির যদি মক্কায় পৌঁছে।
তবে ওমরা আদায় করতে শক্তি পাওয়ার জন্য সওম ভঙ্গ করা জায়েয হবে কি?
উত্তরঃ নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের
সময় রমাদ্বন মাসের বিশ তারিখে মক্কায় প্রবেশ করেন। সে সময় তিনি সওম ভঙ্গ অবস্থায়
ছিলেন। সেখানে দু’দু রাকআত করে স্বলাত কসর আদায় করেছেন। আর মক্কাবাসীদের বলেছেন, “হে মক্কাবাসীগণ! তোমরা স্বলাত পূর্ণ করে নাও। কেননা আমরা মুসাফির।” ছহীহ্বুখারীতে একথাও প্রমাণিত হয়েছে, তিনি (ﷺ) মাসের অবশিষ্ট
দিনগুলো সওম ভঙ্গ অবস্থাতেই অতিবাহিত করেছেন। কেননা তিনি ছিলেন মুসাফির।
তাই ওমরাকারী মক্কা পৌঁছলেই তার সফর শেষ হয়ে যায়
না। যদি সওম ভঙ্গ অবস্থায় মক্কা পৌঁছে থাকে, তবে দিনের বাকী অংশ পানাহার ত্যাগ করা আবশ্যক নয়।
কিন্তু বর্তমান যুগে যেহেতু সফর আরাম দায়ক তাই সওম রাখাও তেমন কষ্টকর নয়। সেহেতু
কেউ যদি সওম রেখে মক্কায় পৌঁছে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভব করে, তখন চিন্তা করে আমি কি সওম পূর্ণ করে ইফতারের পর
ওমরার কাজ শুরু করবো? নাকি সওম ভঙ্গ করব এবং সর্বপ্রথম ওমরা আদায় করে নিব?
এ অবস্থায় আমরা তাকে বলব, আপনার জন্য উত্তম হচ্ছে, সুস্থাবস্থায় ওমরা পালন করার জন্য সওম ভঙ্গ করা।
কেননা হজ্জ-ওমরা আদায়কারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, উক্ত উদ্দেশ্যে মক্কা আগমণ করলে, সেখানে পৌঁছার সাথে সাথেই হজ্জ-ওমরার কাজে
আত্মনিয়োগ করা। নবী (ﷺ) ইহরাম অবস্থায়
মক্কা আগমণ করলে দ্রুত মসজিদে হারামে গমণ করতেন। এমনকি আরোহীকে মসজিদের নিকটবর্তী
স্থানে বসাতেন।
অতএব ওমরাকারীর জন্য উত্তম হচ্ছে, দিনের বেলায় কর্মশক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে সওম ভঙ্গ
করে ওমরা পালন করা। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা না করা।
ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে, নবী (ﷺ) মক্কা বিজয়ের
জন্য যখন সফরে ছিলেন এবং তিনি সওম অবস্থায় ছিলেন, তখন কতিপয় লোক এসে অভিযোগ করল, সওম রাখতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি কি করছেন
এটা দেখার অপেক্ষায় আছে তারা। তখন সময়টি ছিল আছরের পর। নবী (ﷺ) পানি চাইলেন এবং
পান করলেন। লোকেরা সবাই দেখল। অতএব নবী(ﷺ) সফর অবস্থায়
দিনের শেষ প্রহরে সওম ভঙ্গ করলেন। একাজ যে জায়েয একথা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তিনি
এরূপ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, সফরে কষ্ট স্বীকার করে কিছু লোক যে সওম পালন করতেই
থাকে নিঃসন্দেহে তা সুন্নাহ্বিরোধী কাজ। তার ব্যাপারেই নবী (ﷺ) বলেছেনঃلَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ “সফর অবস্থায় সওম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।”
প্রশ্নঃ (৪০৬)
সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী কি সওম ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ
করলে কিভাবে কাদ্বা আদায় করবে? নাকি
সওমর বিনিময়ে খাদ্য দান করবে?
উত্তরঃ দুগ্ধদানকারীনী সওম রাখার কারণে যদি সন্তানের জীবনের আশংকা করে অর্থাৎ সওম
রাখলে স্তনে দুধ কমে যাবে ফলে শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে মায়ের সওম ভঙ্গ করা জায়েয। কিন্তু পরবর্তীতে
তার কাদ্বা আদায় করে নিবে। কেননা এ অবস্থায় সে অসুস্থ ব্যক্তির অনুরূপ। যার
সম্পর্কে আল্লাহবলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
“আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
অতএব সওম রাখার ব্যাপারে যখনই বাধা দূর হবে তখনই
কাদ্বা আদায় করবে। চাই তা শীতকালে অপেক্ষাকৃত ছোট দিনে হোক অথবা সম্ভব না হলে
পরবর্তী বছর হোক। কিন্তু ফিদ্ইয়া স্বরূপ মিসকীন খাওয়ানো জায়েয হবে না। তবে ওযর যদি
চলমান থাকে অর্থাৎ সার্বক্ষণিক সওম রাখায় বাধা দেখা যায় যা বাধা দূর হওয়ার সম্ভবনা
না থাকে, তখন প্রতিটি
সওমর বদলে একজন করে মিসকীনকে খাওয়াবে।
প্রশ্নঃ (৪০৭)
ক্ষুধা-পিপাসা ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে সওম পালন করলে সওমর বিশুদ্ধতায় কি কোন
প্রভাব পড়বে?
উত্তরঃ ক্ষুধা-পিপাসা ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে সওম পালন করলে সওমর বিশুদ্ধতায় এর
কোন প্রভাব পড়বে না। বরং এতে অতিরিক্ত ছওয়াব পাওয়া যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) আয়েশা hকে বলেছিলেন, “তোমার ক্লান্তি ও কষ্ট
অনুযায়ী তুমি ছওয়াব পাবে।” অতএব আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে মানুষের ক্লান্তি যত বেশী হবে ততই তার
প্রতিদান বেশী হবে। তবে সওমর ক্লান্তি দূর করার জন্য মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালা বা
ঠান্ডা শীতল স্থানে আরাম গ্রহণ করা যেতে পারে।
রমাদ্বনের পূরা মাসের সওমর নিয়ত একবার করে নিলেই চলবে
প্রশ্নঃ (৪০৮) রমাদ্বনের প্রত্যেক দিনের জন্য আলাদা
আলাদাভাবে কি নিয়ত করা আবশ্যক? নাকি
পূর্ণ মাসের নিয়ত একবার করে নিলেই হবে?
উত্তরঃ রমাদ্বনের প্রথমে পূর্ণ মাসের জন্য একবার নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। কেননা
সায়িম যদি প্রতিদিনের জন্য রাতে নিয়ত না করে, তবে তা রমাদ্বনের প্রথমের নিয়তের শামিল হয়ে তার
সওম বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সফর, অসুস্থতা প্রভৃতি দ্বারা যদি মাসের মধ্যখানে
বিচ্ছিন্নতা আসে, তবে নতুন করে আবার নিয়ত আবশ্যক। কেননা মাসের প্রথমে সে যে সওমের নিয়ত
করেছিল তা সফর বা অসুস্থতা প্রভৃতির মাধ্যমে ভঙ্গ করে ফেলেছে।
প্রশ্নঃ (৪০৯) সওম
ভঙ্গের জন্য অন্তরে দৃঢ় নিয়ত করলেই কি সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃ একথা সর্বজন বিদিত যে, সওম হচ্ছে নিয়ত এবং পরিত্যাগের সমষ্টির নাম। অর্থাৎ সওম বিনষ্টকারী যাবতীয়
বস্ত পরিত্যাগ করে সায়িম সওমর দ্বারা আল্লাহর সন'ষ্টি ও নৈকট্য লাভের নিয়ত করবে। কিন্তু সত্যিই যদি এটাকে সে ভঙ্গ করার
দৃঢ় সংকল্প করে ফেলে তবে তার সওম বাতিল হয়ে যাবে। আর এটা রমাদ্বন মাসে হলে দিনের
অবশিষ্ট অংশ তাকে পানাহার ছাড়াই কাটাতে হবে। কেননা বিনা ওযরে যে ব্যক্তি রমাদ্বনে
সওম ভঙ্গ করবে তাকে যেমন দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থাতেই কাটাতে হবে, অনুরূপভাবে তার কাদ্বাও আদায় করতে হবে।
কিন্তু যদি দৃঢ় সংকল্প না করে বরং দ্বিধা-দ্বন্দে
থাকে, তবে তার
ব্যাপারে বিদ্বানদের মতবিরোধ রয়েছে।
কেউ বলেছেন, তার সওম বাতিল হয়ে যাবে। কেননা দ্বিধা-দ্বন্দ
দৃঢ়তার বিপরীত।
কেউ বলেছেন, বাতিল হবে না। কেননা আসল হচ্ছে, নিয়তের দৃঢ়তা অবশিষ্ট থাকা, যে পর্যন্ত তা আরেকটি দৃঢ়তা দ্বারা বিচ্ছিন্ন না
করবে। আমার দৃষ্টিতে এমতই বিশুদ্ধ। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (৪১০)
সায়িম ভুলক্রমে পানাহার করলে তার সওমের বিধান কি? কেউ
এটা দেখলে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ রমাদ্বনের সওম রেখে কেউ যদি ভুলক্রমে খানা-পিনা করে তবে তার সওম বিশুদ্ধ।
তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বিরত হওয়া ওয়াজিব। এমনকি খাদ্য বা পানীয় যদি মুখের
মধ্যে থাকে এবং স্মরণ হয়, তবে তা ফেলে দেয়া ওয়াজিব। সওম বিশুদ্ধ হওয়ার দলীল হচ্ছে, আবু হুরায়রা h হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
“যে ব্যক্তি সওম রেখে ভুলক্রমে পানাহার করে, সে যেন তার সওম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহই তাকে
খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।” তাছাড়া ভুলক্রমে নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে তাকে পাকড়াও করা হবে না। আল্লাহবলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহবলেন, আমি তাই করলাম।
কেউ যদি দেখতে পায় যে ভুলক্রমে কোন মানুষ
খানা-পিনা করছে, তবে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, তাকে বাঁধা দেয়া এবং সওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। কেননা ইহা গর্হিত কাজে
বাধা দেয়ার অন্তর্গত। নবী (ﷺ) বলেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ
“যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ হতে দেখবে, সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রদান করে, যদি সম্ভব না হয় তবে যবান দ্বারা বাধা দিবে, যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তর দ্বারা তা ঘৃণা
করবে।” সন্দেহ নেই সওম
রেখে খানা-পিনা করা একটি গর্হিত কাজ। কিন্তু ভুল ক্রমে হওয়ার কারণে তাকে ক্ষমা করা
হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা দেখবে তার জন্য তাতে বাধা না দেয়ার কোন ওযর থাকতে পারে
না।
অধ্যায়ঃ সওম
الصيـام
যে প্রশ্নের উত্তর গুলি দেওয়া আছে--
নং
|
সওম বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
|
নং
|
সওম
বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
|
৩৯২
|
সওম ফরদ্ব
হওয়ার হিকমত কি?
|
৩৯৩
|
মুসলিম জাতির
একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়।
তারা বলে মক্কায় যখন রমাদ্বন মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই সওম রাখবে। এ ব্যাপারে
আপনার মতামত কি?
|
৩৯৪
|
সায়িম যদি এক
দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর হয়, কিন্তু আগের দেশে ঈদের চাঁদ
দেখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেকি এখন সওম ভঙ্গ করবে? উল্লেখ্য
যে, দ্বিতীয় দেশে ঈদের চাঁদ এখনও দেখা
যায়নি।
|
৩৯৫
|
যে ব্যক্তি
কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে সওম রাখতে অসুবিধা অনুভব করে তার কি সওম ভঙ্গ করা
জায়েয?
|
৩৯৬
|
জনৈক বালিকা
ছোট বয়সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। সে অজ্ঞতা বশতঃ ঋতুর দিনগুলোতে সওম পালন করেছে। এখন
তার করণীয় কি?
|
৩৯৭
|
জীবিকা
নির্বাহের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সওম ভঙ্গ করার বিধান কি?
|
৩৯৮
|
সওম ভঙ্গের
গ্রহণযোগ্য কারণ কি কি?
|
৩৯৯
|
রমাদ্বন মাস
শুরু হয়েছে কিনা এসংবাদ না পেয়েই জনৈক ব্যক্তি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে সে সওমের
নিয়ত করেনি ফজর হয়ে গেছে। ফজরের সময় সে জানতে পারল আজ রমাদ্বনের প্রথম দিন। এ
অবস্থায় তার করণীয় কি? উক্ত দিনের সওম কি কাদ্বা আদায় করতে হবে?
|
৪০০
|
কারণ বশতঃ কোন
ব্যক্তি যদি সওম ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই উক্ত ওযর দূর হয়ে যায়। সে কি
দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায় কাটাবে?
|
৪০১
|
জনৈক মহিলা
কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ডাক্তারগণ তাকে সওম রাখতে নিষেধ করেছে। এর বিধান
কি?
|
৪০২
|
কখন এবং কিভাবে
মুসাফির স্বলাত ও সওম আদায় করবে?
|
৪০৩
|
সফর অবস্থায়
কষ্ট হলে সওম রাখার বিধান কি?
|
৪০৪
|
আধুনিক যুগের
যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ও আরাম দায়ক হওয়ার কারণে সফর অবস্থায় সওম রাখা মুসাফিরের
জন্য কষ্টকর নয়। এ অবস্থায় সওম রাখার বিধান কি?
|
৪০৫
|
সওম অবস্থায়
মুসাফির যদি মক্কায় পৌঁছে। তবে ওমরা আদায় করতে শক্তি পাওয়ার জন্য সওম ভঙ্গ করা
জায়েয হবে কি?
|
৪০৬
|
সন্তানকে
দুগ্ধদানকারীনী কি সওম ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ করলে কিভাবে কাদ্বা
আদায় করবে? নাকি সওমর বিনিময়ে খাদ্য দান করবে?
|
৪০৭
|
ক্ষুধা-পিপাসা
ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে সওম পালন করলে সওমর বিশুদ্ধতায় কি কোন প্রভাব পড়বে?
|
৪০৮
|
রমাদ্বনের
প্রত্যেক দিনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কি নিয়ত করা আবশ্যক? নাকি পূর্ণ মাসের নিয়ত একবার করে নিলেই হবে?
|
৪০৯
|
সওম ভঙ্গের
জন্য অন্তরে দৃঢ় নিয়ত করলেই কি সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
|
৪১০
|
সায়িম
ভুলক্রমে পানাহার করলে তার সওমের বিধান কি? কেউ এটা দেখলে তার করণীয় কি?
|
৪১১
|
সওম রেখে
সুরমা ব্যবহার করার বিধান কি?
|
৪১২
|
সওম অবস্থায়
মেসওয়াক ও সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান কি?
|
৪১৩
|
সওম ভঙ্গকারী
বিষয় কি কি?
|
৪১৪
|
সওম অবস্থায়
শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে (spray) ব্যবহার করার বিধান কি?
এ দ্বারা কি সওম ভঙ্গ হবে?
|
৪১৫
|
বমি করলে কি
সওম ভঙ্গ হবে?
|
৪১৬
|
সায়িমের
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
|
৪১৭
|
ঋতুবতী যদি
ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার সওমর বিধান কি?
|
৪১৮
|
সওম অবস্থায়
দাঁত উঠানোর বিধান কি?
|
৪১৯
|
সওম রেখে রক্ত
পরীক্ষা (Blood Test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি?
এতে কি সওম নষ্ট হবে।
|
৪২০
|
সায়িম হস্ত
মৈথুন করলে কি সওম ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে
হবে?
|
৪২১
|
সায়িমের জন্য
আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
|
৪২২
|
নাকে ধোঁয়া
টানা এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
|
৪২৩
|
সায়িমের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
|
৪২৪
|
সওম অবস্থায়
স্বপ্নদোষ হলে কি সওম বিশুদ্ধ হবে?
|
৪২৫
|
সায়িমের
ঠান্ডা ব্যবহার করার বিধান কি?
|
৪২৬
|
সায়িম কুলি
করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার সওম ভঙ্গ হয়ে
যাবে?
|
৪২৭
|
সায়িমের আতরের
সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
|
৪২৮
|
নাক থেকে রক্ত
বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
|
৪২৯
|
রমাদ্বনের কোন
কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার
প্রায় দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে
নাকি এটা বিদআত?
|
৪৩০
|
এয়ারপোর্টে
থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু
বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখন কি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
|
৪৩১
|
সায়িমের কফ
অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
|
৪৩২
|
খাদ্যের স্বাদ
গ্রহণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
|
৪৩৩
|
সওম রেখে
হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
|
৪৩৪
|
মিথ্যা
স্বাক্ষী দেয়ার বিধান কি? ইহা কি সওম নষ্ট করে?
|
৪৩৫
|
সওমের আদব কি
কি?
|
৪৩৬
|
ইফতারের জন্য
কোন দু’আ কি প্রমাণিত আছে? সায়িম কি মুআয্যিনের
জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
|
৪৩৭
|
সওম কাদ্বা
থাকলে শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখার বিধান কি?
|
৪৩৮
|
জনৈক অসুস্থ
ব্যক্তি রমাদ্বনে সওম কাদ্বা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরু হওয়ার চারদিনের
মাথায় তার মৃত্যু হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাদ্বা সওমগুলো আদায় করতে হবে?
|
৪৩৯
|
রমাদ্বনের সওম
বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রমাদ্বন এসে গেলে কি করবে?
|
৪৪০
|
শাওয়ালের ছয়টি
সওম পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি কি?
|
৪৪১
|
শাওয়ালের ছয়টি
সওম রাখার জন্য কি ইচ্ছামত দিন নির্ধারণ করা জায়েয? নাকি তার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট করা আছে? এ
দিনগুলো সওম রাখলে কি উহা ফরদ্বের মত হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর
আবশ্যিকভাবে সওম পালন করতে হবে?
|
৪৪২
|
আশুরা সওমের
বিধান কি?
|
৪৪৩
|
শাবান মাসে
সওম রাখার বিধান কি?
|
৪৪৪
|
যার অভ্যাস
আছে একদিন সওম রাখা ও একদিন ছাড়া। সে কি শুক্রবারেও সওম রাখতে পারে?
|
৪৪৫
|
ছওমে বিছাল
কাকে বলে? এটা কি শরীয়ত সম্মত?
|
৪৪৬
|
বিশেষভাবে
জুমআর দিবস সওম নিষেধ। এর কারণ কি? কাদ্বা সওমও কি এদিন রাখা
নিষেধ?
|
৪৪৮
|
কোন মানুষ যদি
নফল সওম ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কি গুনাহগার হবে?
যদি সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে, তবে কি
কাফ্ফারা দিতে হবে?
|
৪৪৯
|
এ‘তেকাফ এবং এ‘তেকাফকারীর বিধান কি?
|
0 Comments