Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

হাজ্জ বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর 504 to 539


হাজ্জ বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ (৫০৪) ওমরা শেষ করার পর ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পেলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ ওমরার তওয়াফ ও সাঈ শেষ করার পর যদি ইহরামের কাপড়ে নাপাকী দেখতে পায়, তবে তার তওয়াফ বিশুদ্ধ, সাঈ বিশুদ্ধ তথা ওমরা বিশুদ্ধ। কেননা কারো কাপড়ে যদি তার অজানাতে কোন নাপাকী লেগে থাকে অথবা জানে কিন্তু তা পরিস্কার করতে ভুলে যায় এবং সেই কাপড়ে স্বলাত আদায় করে, তবে তার স্বলাত বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে ঐ কাপড়ে যদি তওয়াফ করে তবে তওয়াফও বিশুদ্ধ। একথার দলীল আল্লাহর বাণীঃ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) এটি একটি সাধারণ দলীল। ইহা ইসলামের বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এখানে একটি বিশেষ দলীল আছে, একদা রাসূলুল্লাহ্() ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জুতা পরিহিত অবস্থায় স্বলাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি জুতা খুলে ফেললেন। লোকেরাও জুতা খুলে ফেললেন। স্বলাত শেষ করে তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমাদের কি হয়েছে? কেন তোমরা জুতা খুলে ফেললে? তারা বললেন, আপনি জুতা খুলে ফেলেছেন, আপনার দেখাদেখি আমরাও জুতা খুলে ফেললাম। তিনি বললেন, “জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে সংবাদ দিলেন যে, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তাই আমি ইহা খুলে ফেলেছি।” কিন্তু নবী () নতুন করে আর স্বলাত আদায় করলেন না। অথচ তাঁর স্বলাতের প্রথম দিকের কিছু অংশ নাপাকী নিয়েই হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। অতএব ভুলক্রমে অথবা না জানার কারণে কেউ যদি কাপড়ে নাপাকী নিয়ে স্বলাত আদায় করে বা তওয়াফ করে তবে তা বিশুদ্ধ হবে।
একটি মাসআলাঃ কোন মানুষ যদি ছাগলের মাংস মনে করে উটের মাংস খায় এবং এ ভিত্তিতে ওযু না করেই স্বলাত আদায় করে। যখন বিষয়টি সে জানবে তখন তাকে কি স্বলাত পুনরায় পড়তে হবে? হ্যাঁ, ওযু করে তাকে স্বলাত পুনরায় পড়তে হবে।
কেউ যদি প্রশ্ন করে, এটা কেমন কথা অজ্ঞতা বশতঃ নাপাকী নিয়ে স্বলাত আদায় করলে তা দোহরাতে হবে না; কিন্তু অজ্ঞতা বশতঃ উটের মাংস খেয়ে ওযু না করে স্বলাত আদায় করলে তা দোহরাতে হবে?
এর জবাবঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হচ্ছে, [নির্দেশ মূলক বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয় না। কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয় অজ্ঞতা ও ভুলের কারণে রহিত হয়ে যায়।] এই মূলনীতির দলীল হচ্ছেঃ নবী () এর বাণীঃ তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি স্বলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলেই সে যেন উহা আদায় করে নেয়।” কোন এক সময় নবী () ভুলক্রমে দু’রাকাত স্বলাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলেন, বিষয়টি তাঁকে স্মরণ করানো হলো, তিনি তখন শুধুমাত্র ছুটে যাওয়া দু’রাকাতই আদায় করলেন। এথেকে বুঝা যায় নির্দেশিত বিষয় ভুলে যাওয়ার কারণে রহিত হয় না। কেননা নবী () আদেশ করেছেন স্বলাত ভুলে গেলে স্মরণ হলেই আদায় করে নিতে হবে। তা ছেড়ে দেয়া যাবে না।
অনুরূপভাবে অজ্ঞতার কারণে নির্দেশ মূলক রহিত হয় না তার দলীল হচ্ছে, জনৈক ব্যক্তি এসে খুব তাড়াহুড়া করে স্বলাত আদায় করলো, তারপর নবী ()এর নিকট এসে সালাম দিলো, তিনি তাকে বললেনঃ ফিরে যাও আবার স্বলাত আদায় করো, কেননা তুমি স্বলাতই আদায় করো নি। এভাবে তিন বার তাকে ফেরালেন। প্রতিবারই সে স্বলাত আদায় করে তাঁর কাছে আসলে তিনি তাকে বললেন, “ফিরে গিয়ে স্বলাত আদায় কর। কেননা তুমি স্বলাতই আদায় করো নি।” শেষ পর্যন্ত নবী () তাকে স্বলাত শিখিয়ে দিলেন, ফলে সে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে স্বলাত আদায় করল। এই লোকটি স্বলাতের গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ‘ধীরস্থিরতা’ অজ্ঞতার কারণে পরিত্যাগ করেছিল। সে বলেছিল, ‘শপথ সেই সত্বার যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চাইতে সুন্দর ভাবে স্বলাত আদায় করতে জানি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন।’ অজ্ঞতার কারণে যদি ওয়াজিব রহিত হয়ে যেত, তবে নবী () তার ওযর গ্রহণ করতেন এবং বারংবার তাকে স্বলাত পড়তে বলতেন না।
 প্রশ্নঃ (৫০৫) মাক্বামে ইবরাহীমে যে পদচিহ্ন দেখা যায়, তা কি প্রকৃতই ইবরাহীম (আঃ) এর পায়ের চিহ্ন?
উত্তরঃ সন্দেহ নেই মাক্বামে ইবরাহীম সুপ্রমাণিত। কাঁচে ঘেরা স্থানটিই মাক্বামে ইবরাহীম। কিন্তু এর মধ্যে যে গর্ত দেখা যায় তাতে পায়ের কোন চিহ্ন প্রকাশিত নয়। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, বহুকাল পর্যন্ত পাথরের উপর দু’পায়ের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। কিন্তু বর্তমানের এই গর্তটি শুধুমাত্র পরিচয়ের জন্য করা হয়েছে। একথা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে, এই গর্তই ইবরাহীম (আঃ) এর পদদ্বয়ের চিহ্ন।
এ উপলক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। অনেক ওমরাকারী ও হজ্জ পালনকারী মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে এসে এমন কিছু দু’আ পাঠ করে যা নবী () থেকে প্রমাণিত নয়। কখনো এরা উঁচু কন্ঠে দু’আ পাঠ করে এবং মুছল্লী বা তওয়াফকারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। মাক্বামে ইবরাহীমের জন্য নির্দিষ্ট কোন দু’আ নবী () থেকে প্রমাণিত নেই। মানুষ যা পাঠ করে তা মৌলবীদের তৈরীকৃত। সুন্নাত হচ্ছে তওয়াফ শেষ করে (মাক্বামে ইবরাহীমের) পিছনে এসে হালকা করে দু’রাকাত স্বলাত আদায় করা। (বেশী ভীড় থাকলে সেখানে স্বলাত না পড়ে আরো পিছনে বা যে কোন স্থানে স্বলাত পড়া যাবে।) তারপর স্বলাত হয়ে গেলেই সেখানে বসে থাকবে না; যারা স্বলাত পড়তে চায় তাদের জন্য জায়গা খালি করে দিবে।
 প্রশ্নঃ (৫০৬) কা’বা শরীফের গিলাফ ধরে দু’আ বা কান্নাকাটি করা জায়েয কি?
উত্তরঃ কা’বা শরীফের গিলাফ ধরে বরকত কামনা করা বা দু’আ বা কান্নাকাটি করা বিদআত। কেননা এ কাজ নবী () থেকে প্রমাণিত নেই। মুআবিয়া বিন আবু সুফিয়ান h তওয়াফ করার সময় যখন কা’বা ঘরের প্রতিটি কোণ স্পর্শ করছিলেন, তখন আবদুল্লাহ্বিন আব্বাস hএর প্রতিবাদ করেছেন। মুআবিয়া বললেন, ‘কা’বা ঘরের কোন অংশই ছাড়ার নয়।’ তখন ইবনু আব্বাস h জবাবে বললেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমি দেখেছি নবী() শুধু মাত্র দু’টি কর্ণার স্পর্শ করেছেন। অর্থাৎ- হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী। অতএব আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে কা’বা ঘরকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করার ব্যাপারে শুধুমাত্র সুন্নাত থেকে প্রমাণিত দলীলেরই অনুসরণ করব। কেননা এতেই আমরা রাসূল ()এর উত্তম আদর্শকে আঁকড়ে থাকতে পারব।
অবশ্য মুলতাযিম অর্থাৎ কা’বা ঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান স্পর্শ করে দু’আ করা, ছাহাবায়ে কেরাম h থেকে প্রমাণিত হয়েছে।
 প্রশ্নঃ (৫০৭) ওমরায় মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করার বিধান কি? এ দু’টির মধ্যে কোনটি উত্তম?
উত্তরঃ ওমরায় মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। কেননা নবী () বিদায় হজ্জে মক্কায় আগমণ করে তওয়াফ ও সাঈ করার পর যারা কুরবানী সাথে নিয়ে আসেনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায়। নবী ()এর এই আদেশ ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে। অতএব চুল ছোট করা আবশ্যক। তাছাড়া নবী () ৬ষ্ঠ হিজরীতে ওমরা করার জন্য গমণ করলে হুদায়বিয়া নামক স্থানে কাফেরদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন, তখন তিনি ছাহাবীদেরকে সেখানেই মাথা মুন্ডন করার নির্দেশ প্রদান করেন। তারা নির্দেশ পালনে দ্বিধায় ভোগলে তিনি তাদের উপর রাগন্বিত হন। আর মাথার চুল ছোট করার চাইতে মাথা মুন্ডন করা উত্তম। তবে তামাত্তুকারী যদি শেষ সময়ে মক্কায় পৌঁছে, তবে ওমরা করার পর চুল ছোট করাই ভাল, যাতে করে হজ্জের সময় মুন্ডন করার জন্য মাথায় চুল পাওয়া যায়।
 তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কিত একটি মাসআলা
প্রশ্নঃ (৫০৮) জনৈক হাজী তামাত্তু হজ্জ করতে এসে, ওমরার তওয়াফ ও সাঈ শেষ করে ইহরাম খুলে সাধারণ পোশাক পরিধান করে নিয়েছে। মাথা মুন্ডন করেনি বা চুল ছোট করেনি। হজ্জের যাবতীয় কাজ শেষ করার পর এ সম্পর্কে সে জানতে চেয়েছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ এ ব্যক্তি ওমরার একটি ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ করেছে। তা হচ্ছে, চুল খাটো করা বা মাথা মুন্ডন করা। বিদ্বানদের মতে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে ফিদ্ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করা। তা মক্কাতেই আদায় করতে হবে এবং সেখানকার ফকীরদের নিকট তার গোস্ত বিতরণ করতে হবে। তবেই তার তামাত্তু হজ্জ সম্পাদন হবে এবং ওমরা বিশুদ্ধ হবে।
 প্রশ্নঃ (৫০৯) যে ব্যক্তি তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বেঁধে ওমরা শেষ করে চুল কাটেনি বা মুন্ডনও করেনি। পরে হজ্জের সমস্ত কাজ শেষ করেছে তাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ এ ব্যক্তি ওমরায় চুল ছোট করা পরিত্যাগ করেছে। যা ওমরার একটি রুকন। বিদ্বানদের মতে ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে দম তথা কুরবানী ওয়াজিব হবে। তা মক্কায় যবেহ করে সেখানকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করতে হবে। আর এর মাধ্যমে হজ্জ ও ওমরা পূর্ণতা লাভ করবে। মক্কার বাইরে অবস্থান করলে যে কোন লোককে উক্ত ফিদ্ইয়া মক্কায় আদায় করার জন্য দায়িত্ব দিতে পারে। (আল্লাহতাওফীক দাতা)
 প্রশ্নঃ (৫১০) তামাত্তুকারী কুরবানী দিতে পারেনি। হজ্জে সে তিনটি সওম রেখেছে। কিন্তু হজ্জ থেকে ফিরে এসে সাতটি সওম রাখেনি। এভাবে তিন বছর কেটে গেছে। তার করণীয় কি?
উত্তরঃ তার উপর আবশ্যক হচ্ছে দশ দিনের মধ্যে থেকে অবশিষ্ট সাত দিনের সওম এখনই পালন করে নেয়া।

প্রশ্নঃ (৫১১) ওমরা করে জনৈক লোক নিজ দেশে গিয়ে মাথা মুন্ডন করেছে। তার ওমরার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, মাথা মুন্ডন করার জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। মক্কা বা মক্কা ছাড়া অন্য কোন স্থানে মুন্ডন করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মাথা মুন্ডন করার উপর ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া নির্ভর করছে। তাছাড়া মুন্ডন করার পর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। ওমরার কাজগুলোর ধারাবাহিকতা এরকমঃ ইহরাম, তওয়াফ, সাঈ, মাথা মুন্ডন বা ছোট করা এবং ওমরার কাজ শেষ করার পর মক্কায় অবস্থান করলে বিদায়ী তওয়াফ করা। কিন্তু ওমরার কাজ শেষ করে মক্কায় অবস্থান না করলে বিদায়ী তওয়াফের দরকার নেই। অতএব মক্কায় অবস্থান করতে চাইলে ওমরার কাজ শেষ করে মক্কাতেই তাকে মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করতে হবে। কারণ তাকে এরপর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। কিন্তু তওয়াফ-সাঈ শেষ করার সাথে সাথেই যদি মক্কা থেকে বের হয়ে থাকে, তবে নিজ দেশে বা শহরে গিয়ে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করতে পারে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত তাকে ইহরাম অবস্থাতেই থাকতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৫১২) তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বেঁধে ওমরা করে কোন কারণ বশতঃ হজ্জের ইচ্ছা পরিত্যাগ করেছে। তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ তাকে কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা তামাত্তুকারী ওমরার ইহরাম বাঁধার পর ওমরা পূর্ণ করে যদি হজ্জের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা দু’টি কাজ আলাদা আলাদা ইহরামে সম্পাদন করতে হয়। হ্যাঁ, সে যদি মানত করে থাকে যে এ বছরই হজ্জ করবে তবে মানত পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য।

প্রশ্নঃ (৫১৩) তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর ওমরা শেষ করে অজ্ঞতা বশতঃ হালাল হয়নি। এভাবে হজ্জের কাজ শেষ করে কুরবানী করেছে। তার করণীয় কি? তার হজ্জ কি বিশুদ্ধ?
উত্তরঃ জানা আবশ্যক যে, কোন মানুষ তামাত্তু হজ্জের ইহরাম বাঁধলে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, তওয়াফ, সাঈ শেষ করে মাথার চুল খাটো করে হালাল হয়ে যাওয়া। কিন্তু ওমরার তওয়াফ শুরু করার পূর্বে যদি হজ্জের নিয়ত করে ফেলে এবং ইহরাম খোলার ইচ্ছা না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তার হজ্জ কেরাণ হজ্জে পরিণত হবে। তার কুরবানীও হবে কেরাণ হজ্জের কুরবানী।
কিন্তু যদি ওমরার নিয়তেই থাকে এমনকি তওয়াফ-সাঈ শেষ করে ফেলে, তবে অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তার হজ্জের ইহরাম বিশুদ্ধ নয়। কেননা ওমরার তওয়াফ শুরু করার পর ওমরাকে হজ্জে প্রবেশ করানো বিশুদ্ধ নয়।
বিদ্বানদের মধ্যে অন্যদের মত হচ্ছে, এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে ছিল অজ্ঞ। আমি মনে করি তাকে কোন কিছু দিতে হবে না। তার হজ্জ বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ।
 প্রশ্নঃ (৫১৪) আরাফাত থেকে ফেরার পথে একদল লোক মুযদালিফার রাস্তা হারিয়ে ফেলে। রাত একটার দিকে তারা মাগরিব ও এশা স্বলাত আদায় করে। মুযদালিফা পৌঁছার সময় ফজরের আযান হয়ে যায়। সেখানে তারা ফজর স্বলাত আদায় করে। এখন তাদেরকে কি কোন জরিমানা দিতে হবে?
উত্তরঃ এদেরকে কোন ফিদ্ইয়া বা জরিমানা দিতে হবেনা। কেননা তারা ফজরের আযানের সময় মুযদালিফায় প্রবেশ করেছে এবং সেখানে অন্ধকার থাকতেই ফজর স্বলাত আদায় করেছে। নবী () থেকে প্রমাণিত আছে। তিনি বলেন,
مَنْ شَهِدَ صَلَاتَنَا هَذِهِ وَوَقَفَ مَعَنَا حَتَّى نَدْفَعَ وَقَدْ وَقَفَ بِعَرَفَةَ قَبْلَ ذَلِكَ لَيْلا أَوْ نَهَارًا فَقَدْ أَتَمَّ حَجَّهُ وَقَضَى تَفَثَهُ
যে ব্যক্তি আমাদের সাথে এই স্বলাতে উপস্থিত হয়েছে এবং প্রস্থান করা পর্যন্ত আমাদের সাথে অবস্থান করেছে। আর এর পূর্বে আরাফাতে রাতে বা দিনে অবস্থান করেছে, সে তার হজ্জ পূর্ণ করে নিয়েছে এবং ইবাদত আদায় করে নিয়েছে।”
কিন্তু এরা মধ্যরাত্রির পর মাগরিব-এশা স্বলাত আদায় করে ভুল করেছে। কেননা এশা স্বলাতের শেষ সময় মধ্যরাত্রি। যেমনটি ছহীহ মুসলিমে আবদুল্লাহ্বিন আমর বিন আ’ছh বর্ণিত হাদীছে প্রমাণিত আছে।
 সামর্থ থাকা সত্বেও অন্যকে কঙ্কর নিক্ষেপের দায়িত্ব প্রদান করা
প্রশ্নঃ (৫১৫) জনৈক নারী মুযদালিফা থেকে শেষ রাত্রে যাত্রা করেছে। এবং সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের ছেলেকে তার পক্ষ থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের দায়িত্ব প্রদান করেছে। এর বিধান কি?
উত্তরঃ হজ্জের কার্যাদির মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা নবী () একাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ ও জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।” এটি একটি ইবাদত। মানুষ এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করবে। তাঁর যিকিরকে প্রতিষ্ঠিত করবে। যেহেতু এটার ভিত্তি শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের উপর, তাই উচিত হচ্ছে, কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর জন্য ভীত হবে ও বিনয়াবনত হবে। তবে প্রথম সময়েই তাড়াহুড়া করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে যাবে না; বরং দেরী করে শেষ সময়ে নিক্ষেপ করবে। অবস্থাভেদে সিদ্ধান্ত নিবে। শেষ সময়ে যদি প্রশান্তি, ধীরস্থিরতা, বিনয় ও অন্তরের উপস্থিতির সাথে নিক্ষেপ করা যায়, তবে দেরী করাই উত্তম। কেননা এটা এমন বৈশিষ্ট যা ইবাদতের বিশুদ্ধতার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর যে বৈশিষ্ট ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট তা ইবাদতের সময় ও স্থানের উপর অগ্রগণ্য। এ কারণে নবী () বলেন,
لَا صَلاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلا هُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ
খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দু’টি নাপাক বস্তর (পেশাব-পায়খানার) চাপ থাকলে স্বলাত নেই।” অর্থাৎ- প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং মনের চাহিদা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য মানুষ স্বলাতকে প্রথম সময় থেকে বিলম্ব করে আদায় করবে। অতএব কঙ্কর মারার জন্য প্রথম সময়ে যদি ভীড়ের কারণে বেশী কষ্ট হয়, কঙ্কর মারার চাইতে নিজের জান বাঁচানোর দায় বেশী হয়, আর বিলম্বে কঙ্কর মারলে যদি প্রশান্তির সাথে অন্তর উপস্থিত রাখা যায়, বিনয় ও নম্রতার সাথে এই ইবাদত করা যায়, তবে বিলম্বে কঙ্কর মারাই উত্তম। এজন্য নবী () তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদেরকে শেষ রাতেই মুযদালিফা ছেড়ে চলে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন। যাতে করে তারা ভীড়ের মধ্যে পড়ে কষ্ট না পায়।
অতএব একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারী হোক বা পুরুষ হোক সামর্থবান হলে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেয়া জায়েয নয়। নিজেই কঙ্কর মারার ইবাদতটি পালন করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর।” এতে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। তবে কোন পুরুষ বা নারী অসুস্থ হয় বা নারী গর্ভবতী হয় এবং ভীড়ের মধ্যে গেলে গর্ভের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করে, তবে তারা যে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দিতে পারে।
প্রশ্নে উল্লেখিত যে নারী সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের ছেলেকে দিয়ে কঙ্কর মারিয়েছে- আমি মনে করি ওয়াজিব পরিত্যাগ করার কারণে সতর্কতা বশতঃ সে একটি কুরবানী করবে এবং তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে।
 কঙ্কর যদি হাওয বা গর্তের মধ্যে না পড়ে
প্রশ্নঃ (৫১৬) জনৈক হাজী পূর্ব দিক থেকে জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মেরেছে। কিন্তু তা হাওয বা গর্তের মধ্যে পড়েনি। ঘটনাটি ছিল ১৩ তারিখে। তাকে কি তিনটি জামরাতেই পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে?
উত্তরঃ সবগুলো স্থানে তাকে পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে না; বরং যে ক্ষেত্রে ভুল করেছে সেটাই শুধু পুনরায় মারবে। অতএব শুধুমাত্র জামরা আক্বাবায় পুনরায় কঙ্কর মারবে। সঠিক পদ্ধতিতে মারবে। পূর্ব দিক থেকে মারলে যদি হাওযে কঙ্কর না পড়ে তবে মারা জায়েয হবে না। কেননা কঙ্কর মারার স্থানই হচ্ছে হাওয। এই কারণে যদি ব্রীজের উপরে গিয়ে পূর্ব দিক থেকে কঙ্কর মারে এবং তা হাওযে পড়ে তবে তা জায়েয হবে।
 সাতটি কঙ্করের মধ্যে দু’একটি কঙ্কর হাওযে না পড়লে
প্রশ্নঃ (৫১৭) সাতটি কঙ্করের মধ্যে থেকে যদি একটি বা দু’টি কঙ্কর জামরায় না পড়ে এবং এ ভাবে এক বা দু’দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে কি তাকে সবগুলো জামরায় পুনরায় কঙ্কর মারতে হবে?
উত্তরঃ যদি কারো কোন জামরায় একটি বা দু’টি পাথর নিক্ষেপ বাকী থাকে, তবে ফিক্বাহবিদগণ বলেন, যদি এটা শেষ জামরায় হয়ে থাকে, তবে শুধু বাকীটা মেরে দিলেই হয়ে যাবে, পূর্বেরগুলো আর মারতে হবেনা। কিন্তু যদি প্রথম বা মধ্যবর্তী জামরার কোন একটিতে এক বা একাধিক পাথর মারা বাকী থাকে, তবে সেটা পূর্ণ করবে এবং তারপরের জামরাগুলোতে পাথর মারবে। কেননা পাথর মারার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব।
আমার মতে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাকী পাথরটাই মারবে। তারপরের জামরাতে আর পাথর মারতে হবে না। কেননা ভুল বা অজ্ঞতার কারণে ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে যাবে। এই লোক যখন মধ্যবর্তী জামরাতে পাথর মেরেছে, তার তো এই ধারণা নেই যে, এর পূর্বে কোন পাথর মারা তার বাকী আছে। সুতরাং বিষয়টি সে ভুলে গেছে অথবা তাতে সে অজ্ঞ। তাই তাকে আমরা বলব, যে ক’টা পাথর মারা বাকী রয়েছে তা মেরে দিন। এরপর আর কোনা পাথর মারতে হবে না।
এ জবাব শেষ করার আগে আমি সতর্ক করতে চাই যে, জামরা হচ্ছে পাথর একত্রিত হওয়ার স্থান বা পাথরের হাওয। যে লম্বা স্তম্ভ দেখা যায় সেটাই জামরা নয়। এটা শুধু চিহ্নের জন্য রাখা হয়েছে। অতএব যদি হাওযে বা গর্তের মধ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ করে এবং ঐ স্তম্ভে না লাগে তাতে কোন অসুবিধা নেই তার নিক্ষেপ বিশুদ্ধ।
 যে কঙ্কর একবার নিক্ষিপ্ত হয়েছে
প্রশ্নঃ (৫১৮) কেউ কেউ বলেন, যে কঙ্কর একবার নিক্ষিপ্ত হয়েছে তা নাকি আবার নিক্ষেপ করা যাবে না। এ কথাটি কি ঠিক? এর কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ একথা সঠিক নয়। কেননা যারা নিক্ষিপ্ত কঙ্কর পুনরায় নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেন তাদের যুক্তি হচ্ছেঃ
১)          নিক্ষিপ্ত কঙ্কর (মায়ে মুস্তা’মাল) তথা ব্যবহৃত পানির মত। ফরদ্ব পবিত্রতায় যদি কোন পানি ব্যবহার করা হয়, তবে ব্যবহৃত পানিটা পবিত্র থাকে কিন্তু সে পানি অন্যকে পবিত্র করতে পারে না।
২)          বিষয়টি ক্রীতদাসের মত। কাফ্ফারা প্রভৃতিতে যদি তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়, তবে তো তাকে আবার মুক্ত করা যাবে না।
৩)          এতে বুঝা যায় সমস্ত হাজীর জন্য একটি মাত্র পাথর মারাই জায়েয হবে। আপনি পাথরটি মারবেন, তারপর আবার সেটা নিবেন এবং মারবেন, তারপর আবার নিবেন এবং মারবেন এভাবে সাতবার পূর্ণ করবেন। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে সেই পাথরটি সাতবার নিয়ে সাতবার মারবে।
 তিনটি যুক্তি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় খুবই দুর্বলঃ
১) ব্যবহৃত পানির যে উদাহরণ দেয়া হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা কোন ওয়াজিব পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি ব্যবহার করা হলে পানি নিজে পবিত্র থাকবে কিন্তু অন্যকে পবিত্র করতে পারবে না এটি দলীল বিহীন একটি কথা। পানির যে প্রকৃত গুণ রয়েছে অর্থাৎ পবিত্রতা তা দলীল ছাড়া রহিত করা যাবে না। অতএব ওয়াজিব পবিত্রতা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত পানি নিজে পবিত্র অন্যকেও পবিত্র করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রথম যুক্তির খন্ডন হয়ে গেল। এবং কঙ্কর মারাকে তার সাথে তুলনা করা ভুল প্রমাণিত হল।
২) নিক্ষিপ্ত কঙ্করকে মুক্ত ক্রীতদাসের সাথে তুলনা করাও ঠিক নয়। কেননা উভয়ের মাঝে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। ক্রীতদাসকে মুক্ত করা হলে সে তো স্বাধীন হয়ে গেল। তাকে আবার মুক্ত করার সুযোগ থাকলো না। কিন্তু কঙ্কর মারা হয়ে গেলেও সেটা কঙ্করই রয়ে যায়। যে কারণে তা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সে কারণ তাতে অবশিষ্ট রয়েছে। এই কারণে ক্রীতদাস আবার যদি কখনো শরঈ দলীলের ভিত্তিতে দাসে পরিণত হয়, তবে পুনরায় তাকে মুক্ত করা যাবে।
৩) তৃতীয় যুক্তির জবাবে আমরা বলবঃ সমস্ত হাজীকে একটি মাত্র পাথর নিক্ষেপ আবশ্যক করা- যদি সম্ভব হয় তো হোক। কিন্তু তা অসম্ভব। অসংখ্য পাথর থাকতে কোন বুদ্ধিমান ঐ চিন্তা করতে পারে না।
সুতরাং কঙ্কর মারতে গিয়ে যদি আপনার হাত থেকে দু’একটি কঙ্কর পড়ে যায় তবে সম্মুখ থেকে সহজলভ্য কঙ্কর কুড়িয়ে নিয়ে তা মেরে দিন্ত চাই তা একবার মারা হয়েছে বা হয়নি তা দেখার বিষয় নয় এবং তাতে কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৫১৯) তওয়াফে এফাযার পূর্বে হজ্জের সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ হাজী সাহেব যদি ইফরাদ বা কেরাণকারী হয়, তবে তার জন্য তওয়াফে এফাযার পূর্বে হজ্জের সাঈ করা জায়েয আছে। তওয়াফে কুদুমের পর পরই উহা আদায় করে নিবে। যেমনটি নবী () এবং তাঁর ছাহাবীদের মধ্যে যারা কুরবানী সাথে নিয়ে এসেছিলেন তারা করেছিলেন।
কিন্তু তামাত্তুকারী হলে তাকে দু’বার সাঈ করতে হবে। প্রথমবার মক্কায় আগমণ করে ওমরার জন্য। প্রথমে তওয়াফ করবে, তারপর সাঈ করে চুল খাট করে হালাল হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয়বার সাঈ করবে (আরাফাত দিবসের পর) হজ্জের জন্য। উত্তম হচ্ছে তওয়াফে এফাযা আদায় করার পর এই সাঈ করা। কেননা সাঈ তওয়াফের পরের কাজ। অবশ্য যদি তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলে তবে বিশুদ্ধ মতে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা নবী ()কে জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ আমি তো তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলেছি। জবাবে তিনি বলেছেন, “কোন অসুবিধা নেই।”
হাজী সাহেব ঈদের দিন তথা দশই জিলহজ্জ পাঁচটি কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করবেঃ
১) জামরা আক্বাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা
২) তারপর কুরবানী
৩) তারপর মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করা।
৪) অতঃপর কা’বা ঘরের তওয়াফ করা
৫) সবশেষে ছাফা-মারওয়া সাঈ করা।
অবশ্য ইফরাদকারী ও ক্বেরাণকারী যদি তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ করে নিয়ে থাকে, তবে পুনরায় তাকে সাঈ করতে হবে না। উত্তম হচ্ছে উল্লেখিত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করা। কিন্তু যদি আগ-পিছ হয়ে যায় বা করে ফেলে- বিশেষ করে প্রয়োজন দেখা দিলে তবে কোন অসুবিধা নেই। এটা বান্দাদের প্রতি আল্লাহর করুণার একটি বড় প্রমাণ।
 প্রশ্নঃ (৫২০) কখন জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারলে আদায় হবে? এবং কখন মারলে কাদ্বা মারা হবে?
উত্তরঃ ঈদের দিন সর্বসাধারণের জন্য কঙ্কর মারার সময় হচ্ছে, সূর্য উঠার পর থেকে শুরু হবে। আর দুর্বলদের জন্য এ সময় শুরু হবে শেষ রাত থেকে। কঙ্কর মারার শেষ সময় হচ্ছে পরবর্তী দিন ১১ তারিখ ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু যদি উক্ত সময়ের মধ্যে মারা সম্ভব না হয়, তবে আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে (১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) যে সময় কঙ্কর মারা শুরু হবে সে সময়ই বিগত দিনের জামরা আক্বাবার কাদ্বা পাথর নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর থেকে পাথর মারা শুরু হবে। আর শেষ হবে পরবর্তী দিন ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। কিন্তু আইয়্যামে তাশরীকের শেষ দিন (১৩ তারিখ) হলে রাত্রে কঙ্কর মারা যাবে না। কেননা সেদিন সূর্য অস্ত হলেই আইয়ামে তাশরীক শেষ হয়ে গেল এবং ১৪ তারিখ শুরু হয়ে গেল। সর্বাবস্থায় দিনের বেলায় কঙ্কর নিক্ষেপ করাই উত্তম। কিন্তু এই সময়ে হাজীদের ভীড়ের প্রচন্ডতার কারণে, হাজীদের একে অপরের প্রতি বেপরওয়া হওয়ার কারণে যদি জানের ক্ষতির আশংকা করে বা কঠিন কষ্টকর হয়ে উঠে, তবে রাত্রে মারলে কোন অসুবিধা হবে না। অবশ্য কোন আশংকা না থাকলেও রাতে মারলে কোন অসুবিধা নেই। তবে এই মাসআলায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং একান্ত অসুবিধা না থাকলে রাতে কঙ্কর না মারা উচিত।
 প্রশ্নঃ (৫২১) বিশেষ করে ঈদের দিনের তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে ঈদের দিন বা অন্য দিনে কোন পার্থক্য নেই। সর্বাবস্থায় তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা জায়েয আছে। এমনকি ঈদের দিনের পরও যদি হয়। কেননা হাদীছের সাধারণ অর্থ একথাই প্রমাণ করে। জনৈক ব্যক্তি নবী ()কে প্রশ্ন করলেন, তওয়াফের পূর্বে আমি সাঈ করেছি। তিনি বললেনঃ “কোন অসুবিধা নেই।”
 তওয়াফের পর কি সরাসরি সাঈ করতে হবে? নাকি বিলম্ব করা যাবে?
প্রশ্নঃ (৫২২) সাঈ আবশ্যক ছিল কিন্তু তওয়াফ করার পর সরাসরি সাঈ না করে বাইরে বেরিয়ে গেছে। পরে তাকে বিষয়টি জানানো হলো, সে কি এখন শুধু সাঈ করবে? নাকি পুনরায় তওয়াফ করার পর সরাসরি সাঈ করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি তওয়াফ করে এই বিশ্বাসে যে তাকে সাঈ করতে হবে না। কিন্তু পরে তাকে জানানো হল যে, তাকে অবশ্যই সাঈ করতে হবে। তখন সে শুধুমাত্র সাঈ করলেই হয়ে যাবে। পুনরায় তাওয়াফ করার দরকার নেই। কেননা তাওয়াফের পর পরই সাঈ করতে এরকম কোন শর্ত নেই।
এমনকি কোন মানুষ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সাঈ করতে বিলম্ব করে- তবুও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু উত্তম হচ্ছে তওয়াফ শেষ করার পর পরই বিলম্ব না করে সাঈ করে নেয়া।
 প্রশ্নঃ (৫২৩) ওমরায় যে ব্যক্তি মাথার এদিক ওদিক থেকে অল্প করে চুল কাটে, তার সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি এ লোকের চুল খাটো করা সম্পন্ন হয়নি। তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে ইহরামের কাপড় পুনরায় পরিধান করে বিশুদ্ধভাবে মাথার সম্পূর্ণ অংশ থেকে চুল খাটো করা তারপর হালাল হওয়া।
এ উপলক্ষে আমি সতর্ক করতে চাই, কোন কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে সে সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ওয়াজিব। আল্লাহএবং তাঁর রাসূলের সীমারেখা জানা আবশ্যক। যাতে করে জেন্তেশুনে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। ইবাদতটি যেন অজ্ঞতার সাথে না হয়। এজন্য আল্লাহতা’আলা স্বীয় নবী মুহাম্মাদ ()কে বলেছেনঃ
) قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنْ اتَّبَعَنِي [
আপনি বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর দিকে আহবান করি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) কোন মানুষ যদি মক্কা থেকে মদীনা সফর করতে চায়, তবে রাস্তা সম্পর্কে অবশ্যই নির্দেশনা নিতে হবে। মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে। যাতে করে পথভ্রষ্ঠ হয়ে গন্তব্য হারিয়ে না যায়। বাহিরের পথের অবস্থা যদি এমন হয়, তবে আভ্যন্তরিণ পথ যা আল্লাহপর্যন্ত পৌঁছাবে সে সম্পর্কে কি জ্ঞানার্জন করতে হবেনা? সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে না?
মাথার চুল খাটো করার অর্থ হচ্ছে মাথার সমস্ত অংশ থেকে চুলের কিছু কিছু অংশ কেটে ফেলা। চুল খাটো করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে মেশিন ব্যবহার করা। কারণ এতে সমস্ত মাথা থেকেই চুল কাটা হয়। অবশ্য কেঁচি দ্বারা চুল কাটাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে মাথার চতুর্দিক থেকে চুল কাটতে হবে। যেমন করে মাথা মুন্ডন করলে সমস্ত মাথা মুন্ডন করতে হয়। যেমন ওযুর সময় সমস্ত মাথাকে মাসেহ্করতে হয়।
 প্রশ্নঃ (৫২৪) কঙ্কর মারার সময় কি?
উত্তরঃ জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারার সময় হচ্ছে ঈদের দিন। সামর্থবান লোকদের জন্য এ সময় শুরু হবে ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে। আর মানুষের ভীড় সহ্য করতে পারবে না এরকম দুর্বল, নারী, শিশু, প্রভৃতির জন্য সময় হচ্ছে ঈদের দিন শেষ রাত থেকে। আসমা বিনতে আবু বকর h ঈদের রাতে চাঁদ অস্ত যাওয়ার অপেক্ষা করতেন। চাঁদ অস্ত গেলেই মুযদালিফা ছেড়ে মিনা রওয়ানা হতেন এবং জামরা আক্বাবায় কঙ্কর মারতেন। আর এর শেষ সময় হচ্ছে ঈদের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কিন্তু যদি ভীড় প্রচন্ড থাকার কারণে বা জামরা থেকে দূরে অবস্থানের কারণে রাতে কঙ্কর মারে তবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু পরবর্তী দিন ১১ তারিখের ফজর পর্যন্ত যেন বিলম্ব না করে।
আইয়্যামে তাশরীক তথা ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপের সময় শুরু হবে মধ্য দিনে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর থেকে তথা যোহরের সময় থেকে এবং তা চলতে থাকবে রাত পর্যন্ত। আর কষ্ট ও ভীড়ের কারণে বিলম্ব করে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইহা নিক্ষেপ করা যাবে। এ তিন দিন যোহরের সময়ের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ জায়েয হবে না। কেননা নবী () সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পূর্বে নিক্ষেপ করেননি। আর লোকদের বলেছেনঃ “তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ-ওমরার বিধি-বিধান শিখে নাও।” সকালের দিকে ঠান্ডা এবং সহজ থাকা সত্বেও নবী () বিলম্ব করে কঠিন গরমে দুপুরের সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন্ত এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, এই সময়ের পূর্বে নিক্ষেপ করা জায়েয হবে না।
এ কথার পক্ষে আরো প্রমাণ হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ্() সূর্য ঢলার সাথে সাথে যোহরের স্বলাত আদায় না করে প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। যদি সূর্য ঢলার পূর্বে নিক্ষেপ করা জায়েয হতো, তবে প্রথমে কঙ্কর মেরে প্রথম ওয়াক্তে যোহরের স্বলাত আদায় করতেন। কেননা প্রথম ওয়াক্তে স্বলাত আদায় করা উত্তম। মোটকথা, আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে সূর্য ঢলার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়।
 প্রশ্নঃ (৫২৫) জনৈক হাজী আরাফাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মীনায় রাত কাটায়নি, কঙ্কর নিক্ষেপ করেনি এবং তাওয়াফে এফাযাও করেনি। তাকে এখন কি করতে হবে?
উত্তরঃ আরাফাতের ময়দানে যে লোকটি অসুস্থ হয়েছে, তার অসুখ যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, হজ্জের অবশিষ্ট কাজ পূর্ণ করা তার জন্য অসম্ভব, আর ইহরামের পূর্বে সে শর্ত করেছে (‘যদি আমি বাধাগ্রস্ত হই তবে যেখানে বাধাগ্রস্ত সেখানেই হালাল হয়ে যাব’ এরূপ কথা বলেছে।) তবে সে ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু এটা ফরদ্ব হজ্জ হলে পরবর্তী বছর পুনরায় তা আদায় করতে হবে। আর ইহরাম বাঁধার সময় যদি শর্ত না করে থাকে এবং হজ্জের কাজ পূর্ণ করতে সক্ষম না হয়, তবে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সে ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে কুরবানী যবেহ করতে হবে। আল্লাহবলেনঃ
] وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ কর। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজ সাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) এখানে বাধাগ্রস্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শত্রু দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বা অন্য যে কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। আর বাধাগ্রস্ত হওয়া মানে, কোন কারণ বশতঃ হজ্জ-ওমরার কাজ পূর্ণ করতে সক্ষম না হওয়া।
এই ভিত্তিতে সে হালাল হয়ে যাবে এবং কুরবানী যবেহ করবে। এছাড়া তার উপর অন্য কিছু আবশ্যক হবে না। কিন্তু যদি ফরদ্ব হজ্জ আদায় না করে থাকে তবে পরবর্তী বছর উহা আদায় করবে।
আর এই অসুস্থ ব্যক্তি যদি হজ্জের কাজ চালিয়ে যায়। আরাফাত থেকে ফিরে এসে মুযদালিফায় রাত কাটায় কিন্তু মিনায় রাত কাটাতে সক্ষম না হয় এবং কঙ্কর নিক্ষেপ করতে না পারে, তবে প্রত্যেকটি ওয়াজিবের জন্য একটি করে কুরবানী করবে। দু’টি কুরবানী করতে হবে। একটি কুরবানী মিনায় রাত না কাটানোর জন্য অন্যটি জামরা সমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ না করার জন্য।
কিন্তু সুস্থ হলে তওয়াফে এফাযা আদায় করবে। কেননা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তওয়াফে এফাযা জিল হজ্জের শেষ পর্যন্ত করা যাবে। কিন্তু বাধা যদি আরো বড় হয় তবে, বাধা দূর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারপর তওয়াফ করবে।
 প্রশ্নঃ (৫২৬) মুযদালিফার সীমা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বাইরে অবস্থান করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি দম দিতে হবে অর্থাৎ- একটি কুরবানী যবেহ করতে হবে এবং উহা মক্কার ফক্বীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। কেননা সে হজ্জের একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করেছে।
এ উপলক্ষে আমি সম্মানিত হাজী ভাইদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, হজ্জে এসে আরাফাত ও মুযদালিফার সীমনা সম্পর্কে আপনারা সতর্ক থাকবেন। দেখা যায়, অনেক হাজী আরাফাতের সীমানার বাইরে অবস্থান করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। তারপর আরাফাতের সীমানার মধ্যে প্রবেশ না করে সেখান থেকেই ফিরে আসেন। এদের হজ্জ বিশুদ্ধ হবে না। তারা হজ্জ না করেই ফিরে এলেন। এজন্য এ বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরূরী। আল্হামদু লিল্লাহ্এ সীমানা জানার জন্য আরাফাত ময়দানের চতুর্পাশ্বে বিশাল বিশাল বোর্ডের ব্যবস্থা আছে। তার প্রতি খেয়াল করলেই কোন সমস্যা থাকবে না।
 প্রশ্নঃ (৫২৭) এফরাদ হজ্জকারী যদি তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ করে নেয়, তবে তওয়াফে এফাযার পর তাকে কি আবার সাঈ করতে হবে?
উত্তরঃ তাওয়াফে এফাযার পর তাকে আর সাঈ করতে হবে না। কেননা তার ওমরা নেই। সুতরাং তওয়াফে কুদূমের সাথে সে যদি সাঈ করে থাকে, তবে এটাই হজ্জের সাঈ হিসেবে গণ্য হবে। পরে আর সাঈ করতে হবে না।
 প্রশ্নঃ (৫২৮) ক্বিরাণকারীর জন্য একটি তওয়াফ ও একটি সাঈ যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি ক্বিরাণ হজ্জ করতে চায়, তবে তার তওয়াফে এফাযা বা হজ্জের তওয়াফ ও হজ্জের সাঈ ওমরা ও হজ্জ উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। তখন তওয়াফে কুদূম তার জন্য সুন্নাত। সে ইচ্ছা করলে হজ্জের সাঈ তওয়াফে কুদূমের পরপরই আদায় করে নিতে পারে। যেমনটি নবী () করেছিলেন। ইচ্ছা করলে সাঈ বাকী রেখে তওয়াফে এফাযার পর করতে পারে। কিন্তু পূর্বেই করে নেয়া উত্তম। কেননা নবী () এরূপ করেছিলেন। অতঃপর ঈদের দিন শুধুমাত্র তওয়াফে এফাযা করবে। সাঈ করবে না। ক্বিরাণকারীর হজ্জ ও ওমরার জন্য একটি মাত্র তওয়াফ ও সাঈ যথেষ্ট হওয়ার দলীল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্()এর বাণী। তিনি আয়েশা hকে বলেন,طَوَافُكِ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ يَكْفِيكِ لِحَجَّتِكِ وَعُمْرَتِكِ আল্লাহর ঘরের তওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ তোমার হজ্জ ও ওমরার জন্য যথেষ্ট হবে।” আয়েশা h ছিলেন ক্বিরাণ হজ্জকারীনী। অতএব নবী () বর্ণনা করে দিলেন যে, ক্বেরাণকারীর তওয়াফ ও সাঈ হজ্জ ও ওমরা উভয়টির জন্য যথেষ্ট।
 প্রশ্নঃ (৫২৯) জনৈক ব্যক্তি রাত বরোটা পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে মক্কা চলে গেছে, ফজরের পূর্বে আর মিনায় ফেরত আসেনি। তার বিধান কি?
উত্তরঃ রাত বারোটা যদি মধ্য রাত্রি হয়, তবে তারপর মিনা থেকে বের হলে কোন অসুবিধা নেই। যদিও উত্তম হচ্ছে রাত ও দিনের পূর্ণ অংশ মিনাতেই অবস্থান করা। আর রাত বারোটা যদি মধ্য রাত্রি না হয় তবে বের হওয়া জায়েয হবে না। কেননা মিনায় অবস্থান করার শর্ত হচ্ছে রাতের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হওয়া। যেমনটি ফিক্বাহবিদগণ (রহঃ) উল্লেখ করেছেন।
 প্রশ্নঃ (৫৩০) ১২ তারিখে সূর্যাসে-র পূর্বে মিনা ত্যাগ করার পর কাজ থাকার কারণে কেউ যদি সূর্যাসে-র পর আবার মিনায় ফিরে আসে। এখন কি মিনায় রাত থাকা তার উপর আবশ্যক হয়ে যাবে?
উত্তরঃ না, মিনায় রাত থাকা তার উপর আবশ্যক হবে না। সে তাড়াহুড়াকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সে হজ্জের যাবতীয় কার্যাদী সম্পন্ন করে ফেলেছে। কাজের জন্য মিনায় ফিরে আসা তাড়াহুড়ার পরিপন্থী নয়। কেননা তার মিনায় ফিরে আসার নিয়ত নির্দিষ্ট কাজের জন্য হজ্জের জন্য নয়।
 ১৩ জিলহজ্জ সকালে কঙ্কর মারা জায়েয আছে কি?
প্রশ্নঃ (৫৩১) সঊদী আরবের বাইরে অবস্থান করে এমন জনৈক হাজী হজ্জের কাজ সম্পাদন করেছে। জিলহজ্জের ১৩ তারিখে আছর তথা বিকাল চারটার সময় তার সফরের সময় নির্দিষ্ট। কিন্তু ১২ তারিখ কঙ্কর মারার পর সে মিনা থেকে বের হয়নি। ১৩ তারিখের রাত সেখানেই অবস্থান করেছে। এখন ১৩ তারিখ সকালে কঙ্কর মেরে মিনা থেকে বের হওয়া তার জন্য জায়েয হবে কি? উল্লেখ্য যে, যোহরের পর কঙ্কর মেরে বের হলে নির্ঘাত তার সফর বাতিল হয়ে যাবে, ফলে সে বিরাট অসুবিধায় পড়বে।
এর উত্তর যদি না জায়েয হয়, তবে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার ব্যাপারে কি কোন মত পাওয়া যায় না?
উত্তরঃ কোন অবস্থাতেই যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। জরূরী অবস্থা হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করা রহিত হবে না। তবে তার সমাধান হচ্ছে এ অবস্থায় কঙ্কর না মেরেই সে চলে যাবে এবং তার ফিদিয়া প্রদান করবে। আর তা হচ্ছে মক্কা বা মিনায় একটি কুরবানী করবে অথবা কাউকে এর দায়িত্ব প্রদান করবে। এবং উক্ত কুরবানী সেখানকার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। এরপর বিদায়ী তওয়াফ করে মক্কা ত্যাগ করবে।
হ্যাঁ, যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার বৈধতার ব্যাপারে মত পাওয়া যায়, কিন্তু তা বিশুদ্ধ নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, ঈদের পর আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে কোন অবস্থাতেই যোহরের সময়ের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। কেননা নবী () বলেছেন, “তোমরা আমার নিকট থেকে ইবাদতের (হজ্জ-ওমরার) নিয়ম শিখে নাও।” আর তিনি এই দিনগুলোতে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারেন নি।
কেউ যদি বলে যে, যোহরের পর নবীজির কঙ্কর নিক্ষেপ তার সাধারণ একটি কর্ম। আর সাধারণ কর্ম দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।
জবাবে আমরা বলব, একথা সত্য যে এটি তাঁর সাধারণ কর্ম। তিনি যোহরের পর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। এরকম বাচনিক নির্দেশ প্রদান করেন নি যে, ‘কঙ্কর নিক্ষেপ যোহরের পরেই হতে হবে’। তাছাড়া এ সময়ের পূর্বে নিক্ষেপের ব্যাপারে কোন নিষেধও করেন নি। আর তাঁর কর্ম ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে না। নির্দেশ সূচক শব্দ ছাড়া কোন কাজ বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব হয় না বা নিষেধ সূচক শব্দ ছাড়া পরিত্যাগ করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না। কিন্তু আমি বলব, নবীজির উক্ত কর্ম যে ওয়াজিব তার পক্ষে কারণ আছে। আর তা হচ্ছে, কঙ্কর মারার ব্যাপারে যোহরের সময় পর্যন্ত নবী ()এর অপেক্ষা করাটাই প্রমাণ করে যে এটা ওয়াজিব। কেননা যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা যদি জায়েয হত, তবে নবী () সেটাই করতেন। কারণ উম্মতের জন্য এটাই সহজ। আর নবী ()কে যখন দু’টি বিষয়ের মাঝে স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি উভয়টির মধ্যে থেকে সহজটি গ্রহণ করতেন্ত যদি তাতে কোন পাপ না থাকত। সুতরাং এখানে যখন তিনি সহজ অবস্থাটি গ্রহণ করেন নি অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন নি, তখন বুঝা যায় এতে পাপ আছে। অতএব যোহরের সময় হওয়ার পরই কঙ্কর মারা ওয়াজিব।
এ কাজটি ওয়াজিব হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, নবী () সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার সাথে সাথে যোহরের স্বলাত আদায় করার পূর্বেই কঙ্কর মেরেছেন। যেন তিনি অধির আগ্রহে সূর্য ঢলার অপেক্ষা করছিলেন। যাতে করে দ্রুত কঙ্কর মারতে পারেন। আর একারণেই যোহর স্বলাত দেরী করে আদায় করেছেন। অথচ প্রথম সময়ে অর্থাৎ সময় হওয়ার সাথে সাথেই স্বলাত আদায় করা উত্তম। এথেকেই বুঝা যায় যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয হবে না।
 ১২ তারিখে কঙ্কর না মারলে এবং বিদায়ী তওয়াফ না করলে
প্রশ্নঃ (৫৩২) জনৈক ব্যক্তি ১২ তারিখে কঙ্কর না মেরেই মিনা ছেড়েছে এ ধারণায় যে, এটাই অনুমদিত তাড়াহুড়া। এবং বিদায়ী তওয়াফও করেনি। তার হজ্জের কি হবে?
উত্তরঃ তার হজ্জ বিশুদ্ধ। কেননা সে হজ্জের কোন রুকন পরিত্যাগ করেনি। কিন্তু সে তিনটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করেছে- যদি ১২ তারিখের রাত মিনায় না কাটিয়ে থাকে।
প্রথম ওয়াজিবঃ ১২ তারিখের রাত মিনায় কাটানো।
দ্বিতীয় ওয়াজিবঃ ১২ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
তৃতীয় ওয়াজিবঃ বিদায়ী তওয়াফ।
তার উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রতিটি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিবের বিনিময়ে একটি করে দম দেয়া। অর্থাৎ মোট তিনটি কুরবানী করে তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া। কেননা বিদ্বানদের মতে কেউ যদি হজ্জের কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে, তবে তার বিনিময়ে কুরবানী করে তা মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
এ উপলক্ষে আমি হাজী সাহেবানদের সতর্ক করতে চাই, প্রশ্নকারী যে রকম ভুল করেছে অধিকাংশ হাজী এরকমই বুঝে থাকে এবং অনুরূপ ভুল করে থাকে। আল্লাহর বাণীঃ “যে ব্যক্তি দু’দিন থেকে তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চায়, তার কোন গুনাহ্নেই।” তারা মনে করে এখানে দু’দিন বলতে ঈদের দিন ও ১১তম দিনকে বুঝানো হয়েছে। তাই তারা ১১ তারিখে কঙ্কর মেরেই মিনা ত্যাগ করে। কিন্তু বিষয়টি এরূপ নয়। এটা একটা মারাত্মক ভুল। কেননা আল্লাহ বলেন,
] وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ [
তোমরা নির্দিষ্ট কতিপয় দিনে আল্লাহর যিকির কর। অতঃপর যে ব্যক্তি দু’দিন থাকার পর তাড়াহুড়া করে চলে যেতে চায়, তার কোন গুনাহ্নেই।” (সূরা বাক্বারাঃ ২০৩) এ আয়াতে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন বলতে আইয়্যামে তাশরীকের দিন সমূহ (তথা জিলহজ্জের ১১, ১২ ও ১৩)কে বুঝানো হয়েছে। আর আইয়ামে তাশরীকের প্রথম দিন হচ্ছে ১১ তারিখ। অতএব উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি আইয়ামে তাশরীকের মধ্যে থেকে প্রথম দু’দিনে তাড়াহুড়া করে চলে আসবে তার কোন গুনাহ্নেই। আর উক্ত দু’দিনের দ্বিতীয় দিন হচ্ছে ১২তম দিন।
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত এ মাসআলাটি ভালভাবে অনুধাবন করা এবং ভুল সংশোধন করে নেয়া।
 রাতের বেলায় মিনায় স্থান না পেলে কি করবে?
প্রশ্নঃ (৫৩৩) মিনায় স্থান না পাওয়ার কারণে কোন লোক যদি সেখানে শুধুমাত্র রাতের বেলায় আগমণ করে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত অবস্থান করে। তারপর মক্কা চলে যায় এবং রাত ও দিনের অবশিষ্ট অংশ তথায় অবস্থান করে তবে কি হবে?
উত্তরঃ তার এই কাজ যথেষ্ট হবে। কিন্তু এর বিপরীত করাই উত্তম। উচিত হচ্ছে, হাজী সাহেব রাত ও দিনের পূরা সময় মিনাতেই অতিবাহিত করবে। ভালভাবে অনুসন্ধান করার পরও যদি কোন মতেই মিনার অভ্যন্তরে স্থান করতে না পারে, তবে সর্বশেষ (খীমা বা) তাঁবুর সংলগ্ন স্থানে তাঁবু করে সেখানে অবস্থান করবে যদিও তা মিনার বাইরে পড়ে। বর্তমান যুগের কোন কোন বিদ্বান মত প্রকাশ করেছেন যে, কোন মানুষ যদি মিনায় অবস্থান করার স্থান না পায়, তবে মিনায় রাত কাটানো রহিত হয়ে যাবে। তখন তার জন্য জায়েয হয়ে যাবে মক্কা বা অন্য কোন স্থানে রাত কাটানো। তাদের কিয়াস হচ্ছে, কোন মানুষের ওযুর কোন অঙ্গ যদি কাটা থাকে তখন সেটা ধৌত করা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু তাদের এই মত যুক্তি সংগত নয়। কেননা ওযুর অঙ্গের বিষয়টি ঐ ব্যক্তির পবিত্রতার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু মিনায় রাত কাটানোর বিষয়টির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমস্ত লোকের একস্থানে সমবেত থাকা। সকলে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে প্রকাশ ঘটানো। সুতরাং ওয়াজিব হচ্ছে, মিনার শেষ তাঁবুর পাশে তাঁবু বানিয়ে থাকা, যাতে করে সে হাজীদের সাথেই রাত কাটাতে পারে। এর উদাহরণ হচ্ছে, স্বলাতের জামাতে যদি মসজিদ পূর্ণ হয়ে যায়, আর লোকেরা মসজিদের আশে-পাশে বাইরে স্বলাতে দাঁড়ায়, তবে আবশ্যক হচ্ছে কাতার মিলিত হওয়া। যাতে করে তারা একই জামাতভুক্ত একথা প্রমাণ হয়। রাত কাটানোর বিষয়টি এর সাথে সামঞ্জস্যশীল, শরীরের কর্তিত অঙ্গের সাথে এর তুলনা করা উচিত নয়।
 বিদায়ী তওয়াফ করার পর মক্কায় অবস্থান করার বিধান
প্রশ্নঃ (৫৩৪) জনৈক ব্যক্তি সকালে বিদায়ী তওয়াফ করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং আছরের পর সফর করার ইচ্ছা করে। তাকে কি কিছু করতে হবে?
উত্তরঃ হজ্জ ও ওমরা উভয় ক্ষেত্রে তাকে পুনরায় বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। কেননা নবী () বলেনঃ
لا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ 
সর্বশেষ কাজ বায়তুল্লাহ্র তওয়াফ না করে কেউ যেন বের না হয়।” একথাটি নবীজি বিদায় হজ্জে বলেছেন। সুতরাং বিদায়ী তওয়াফের বিধান সেই সময় থেকে শুরু হয়েছে। একথা বলা ঠিক হবে না যে, নবী তো বিদায় হজ্জের পূর্বে ওমরা করেছেন কিন্তু বিদায়ী তওয়াফ তো করেননি। কেননা বিদায়ী তওয়াফের আবশ্যকতার নির্দেশ তো বিদায় হজ্জে পাওয়া গেছে। আর তিনি এরশাদ করেছেন:
وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجَّتِكَ
হজ্জের মধ্যে যেভাবে কাজ করে থাক ওমারাতেও সেভাবে করো।” এ নির্দেশটি ব্যাপক অর্থবোধক। কিন্তু তার মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে আরাফা, মুযদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ। কেননা সর্বসম্মতিক্রমে একাজগুলো হজ্জের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো ছাড়া বাকী কাজ উক্ত হাদীছের আওতাধীন থাকবে। কেননা নবী() ওমরাকে ছোট হজ্জ রূপে আখ্যা দিয়েছেন। যেমনটি আমর বিন হাযম কর্তৃক প্রসিদ্ধ দীর্ঘ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটি মুরসাল। কিন্তু উলামাগণ সাধারণভাবে হাদীছটি গ্রহণ করেছেন।
তাছাড়া আল্লাহতা’আলা বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর।” বিদায়ী তওয়াফ যদি হজ্জের পূর্ণতার অংশ হয়, তবে উহা ওমরারও পূর্ণতার অংশ হবে।
ওমরাকারী মসজিদে হারামের তাহিয়্যাত হিসেবে তওয়াফের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করেছে। সুতরাং কোন তাহিয়্যাত ছাড়া চলে যাওয়াও উচিত হবে না। তাই সে বিদায়ী তওয়াফ করবে।
অতএব এই ভিত্তিতে হজ্জের ন্যায় ওমরাতেও বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। তিরমিযীতে একটি হাদীছ পাওয়া যায়ঃ বলা হয়েছে, “কোন লোক যদি হজ্জ বা ওমরা করে, সে আল্লাহর ঘরের বিদায়ী তওয়াফ না করে যেন বের না হয়।” কিন্তু এই হাদীছটি যঈফ। কেননা এর সনদে হাজ্জাজ বিন আরত্বাত নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে দুর্বল। এ হাদীছটি দুর্বল না হলে এই মাসআলার সুস্পষ্ট দলীল হিসেবে বিবেচিত হত এবং সকল মতভেদ বিদূরীত হত। কিন্তু দুর্বল হওয়ার কারণে তা দ্বারা দলীল গ্রহণ করার কোন ভিত্তি নেই। তবে আমরা পূর্বে যে সমস্ত মূলনীতি, দলীল ও যুক্তি উপস্থাপন করেছি তার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, ওমরায় বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজিব।
তাছাড়া এই তওয়াফ সতর্কতা ও যিম্মা মুক্তি স্বরূপও হয়ে যায়। কেননা ওমরাতে আপনি বিদায়ী তওয়াফ করলে তো কেউ আপনাকে বলবে না যে আপনি ভুল করছেন। কিন্তু তা না করলে তো যারা তা ওয়াজিব মনে করে তারা বলবে, আপনি ভুল করলেন। এই কারণে তওয়াফ করাটাই সঠিক হবে। আর তওয়াফ না করলে আশংকা রয়ে যাবে এবং বিদ্বানদের কারো মতে তা ভুল হবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)
 প্রশ্নঃ (৫৩৫) ওমরাকারীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরাকারী মক্কা আগমণ করার সময় যদি নিয়ত করে যে, তওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুন্ডন তথা ওমরার কার্যাদী সম্পন্ন করার সাথে সাথে ফেরত চলে যাবে, তবে তাকে বিদায়ী তওয়াফ করতে হবেনা। কেননা তওয়াফে কুদূমই তার জন্য ওমরার তওয়াফ ও বিদায়ী তওয়াফ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু ওমরা সম্পন্ন করার পর যদি মক্কায় অবস্থান করে তবে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। একথার দীলল নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ নবী () এর ব্যাপক নির্দেশঃ
]لا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ[
 সর্বশেষ কাজ বায়তুল্লাহ্র তওয়াফ না করে কেউ যেন বের না হয়।” এখানে أَحَدٌ বা ‘কেউ ’ শব্দটি অস্পষ্ট। যে কেউ বরে হলেই তার জন্য উক্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। অর্থাৎ- তওয়াফ না করে বের হবে না। সে হজ্জকারী হোক বা ওমরাকারী।
দ্বিতীয়তঃ ওমরা হজ্জের মতই। কেননা নবী () ওমরাকে হজ্জ রূপে আখ্যা দিয়েছেন। আমর বিন হাযম কর্তৃক প্রসিদ্ধ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। নবী () বলেন, “ওমরা হচ্ছে ছোট হজ্জ।” হাদীছটি মুরসাল। কিন্তু উলামাগণ সাধারণভাবে হাদীছটি গ্রহণ করেছেন।
তৃতীয়তঃ নবী () বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত ওমরা হজ্জের মধ্যে শামিল হয়ে গেছে। অর্থাৎ- হজ্জ করলে ওমরাও আদায় হয়ে গেল।
চতুর্থতঃ নবী () ইয়ালা বিন উমাইয়াকে বলেন,
] وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجَّتِكَ[
হজ্জের মধ্যে যেভাবে কাজ করে থাক ওমারাতেও সেভাবে করো।” যদি তুমি হজ্জে বিদায়ী তওয়াফ করে থাক, তবে ওমরাতেও তা কর। তবে বিদ্বানদের ঐকমত্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উক্ত নির্দেশের বাইরে থাকবেঃ আরাফা, মুযদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ। এগুলো ওমরাতে শরীয়ত সম্মত নয়। তাছাড়া সতর্কতার জন্য এবং যিম্মা মুক্ত হওয়ার জন্য বিদায়ী তওয়াফ করে নেয়াই উচিত।
 ইহরাম বাঁধার পর হজ্জ সম্পন্ন করতে বাধাপ্রাপ্ত হলে করণীয় কি?
প্রশ্নঃ (৫৩৬) জনৈক ব্যক্তি মীক্বাত থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছে সে প্রশাসন (ডিউটি পুলিশ) কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। কেননা সে হজ্জের অনুমতি পত্র নেয়নি। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ এ অবস্থায় মক্কা প্রবেশ করতে না পারলে সে ‘মুহছার’ বা বাধাগ্রস্ত বলে বিবেচিত হবে। তখন বাধাপ্রাপ্ত স্থানে কুরবানী যবেহ করে সে ইহরাম খুলে ফেলবে। যদি ইহা তার প্রথম ফরদ্ব হজ্জ হয়ে থাকে তবে পরবর্তী বছর তা আদায় করবে। আর ফরদ্ব না হয়ে থাকলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী পরবর্তী বছর তা আদায় করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা নবী () হুদায়বিয়ার বছরে বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী বছর তা কাদ্বা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেননি। অতএব আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল()এর সুন্নাতে বাধাপ্রাপ্ত হজ্জ বা ওমরা কাদ্বা আদায় করার বাধ্যবাধকতা নেই। আল্লাহবলেন,
] فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) এখানে কুরবানী করা ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আর পরবর্তী বছর নবী ()এর উমরা আদায়কে কাদ্বা উমরা এজন্যই বলা হয়েছে যে, তিনি কুরায়শদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তী বছর ওমরা আদায় করবেন। এই কারণে নয় যে, ছুটে যাওয়া কাজের পূর্ণতার জন্য কাদ্বা আদায় করেছিলেন। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
 প্রশ্নঃ (৫৩৭) হজ্জের ইচ্ছা করার পর যদি তাকে নিষেধ করে দেয়া হয়, তবে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যদি সে ইহরাম না করে থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কোন কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কেননা কোন লোক ইহরামে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত ইচ্ছা করলে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারে, ইচ্ছা করলে নিজ ঠিকানায় ফেরত আসতে পারে। কিন্তু হজ্জ ফরদ্ব হলে, যতদ্রুত সম্ভব আদায় করে নেয়া ভাল।
আর ইহরামে প্রবেশ করার পর বাধাগ্রস্ত হলে যদি ইহরাম বাধার সময় শর্ত করে থাকে এই বলে, “আল্লাহুম্মা ইন্হাবাসানী হাবেস্, ফা মাহেল্লী হায়ছু হাবাস্তানী”, তবে বাধাপ্রাপ্ত স্থানে ইহরাম খুলে ফেলবে। কোন কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কিন্তু যদি শর্ত করার জন্য এরূপ দু’আ পাঠ না করে থাকে, তবে উক্ত বাধা অচিরেই বিদূরিত হওয়ার আশা থাকলে অপেক্ষা করবে এবং হজ্জ পূর্ণ করবে। আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে যদি বাধা মুক্ত হয়, তবে আরাফাতে অবস্থান করে হজ্জ পূর্ণ করবে। কিন্তু আরাফাতে অবস্থানের পর বাধা মুক্ত হলে, হজ্জ ছুটে গেল। তখন ওমরা আদায় করে ইহরাম খুলে ফেলবে। ফরদ্ব হজ্জ হয়ে থাকলে পরবর্তী বছর তা কাদ্বা আদায় করবে। কিন্তু অচিরেই বাধা মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এবং শর্ত না করে থাকলে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং কুরবানী করে দিবে। কেননা আল্লাহবলেন,
] وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ করবে। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬)
 প্রশ্নঃ (৫৩৮) হজ্জ করতে এসে পাপের কাজে লিপ্ত হলে কি হজ্জের ছওয়াব কমে যাবে?
উত্তরঃ সাধারণভাবে সবধরণের পাপকাজ হজ্জের ছওয়াব হ্রাস করে দেয়। কেননা আল্লাহবলেন,
]فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ[
যে ব্যক্তি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করবে, সে স্ত্রী সহবাস, গর্হিত কাজ ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে পারবে না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৭)
বরং বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেছেন, হজ্জ অবস্থায় পাপ কাজ করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্বানদের নিকট প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে: “হারাম কাজটি যদি ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়, তবে তার কারণে ইবাদত বাতিল হবে না।” সাধারণ পাপ সমূহ হজ্জের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কেননা তা হজ্জের সময় যেমন হারাম অন্য সময়ও হারাম। এটাই বিশুদ্ধ মত। এ সমস্ত পাপকাজ হজ্জকে বাতিল করে দিবে না। কিন্তু তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
 প্রশ্নঃ (৫৩৯) মিথ্যা পাসপোর্ট বানিয়ে হজ্জ করলে হজ্জ হবে কি?
উত্তরঃ তার হজ্জ হয়ে যাবে। হজ্জ বিশুদ্ধ হবে। কেননা পাসপোর্ট নকল করা হজ্জের কর্ম সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা হজ্জের বাইরের কাজ। কিন্তু একাজের কারণে সে গুনাহগার হবে। তাকে তওবা করা উচিত। কেননা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা প্রশাসনকে ধোঁকা দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ ও বড় গুনাহর কাজ।

জেনে রাখা উচিত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে দিবেন, তাকে ধারণাতীত রিযিক দান করবেন, তার সকল কাজ সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, সত্য কথা বলবে এবং সৎ পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহতার কর্ম সংশোধন করে দিবেন এবং তার গুনাহ্ক্ষমা করে দিবেন।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments