সওম বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর 411 থেকে 448

সওম বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
সওম বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর 392 থেকে 410
 প্রশ্নঃ (৪১১) সওম রেখে সুরমা ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ সায়িমের জন্য সুরমা ব্যবহার করায় কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে চোখে বা কানে ঔষুধ (ড্রপ) ব্যবহার করতেও কোন অসুবিধা নেই, যদিও এতে গলায় ড্রপের স্বাদ অনুভব করে। এতে সওম ভঙ্গ হবে না। কেননা ইহা খাদ্য বা পানীয় নয় বা খানা-পিনার বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত নয়। একথার দলীল হচ্ছে, সওমের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা তা হচ্ছে খানা-পিনা করা। সুতরাং যা খানা-পিনার অন্তর্ভুক্ত নয় তা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গণ্য হবে না। ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) একথাই বলেছেন। আর এটাই বিশুদ্ধ মত। কিন্তু যদি নাকে ড্রপ ব্যবহার করে এবং তা পেটে পৌঁছে, তবে সওম ভঙ্গ হবে- যদি সওম ভঙ্গের উদ্দেশ্য করে থাকে। কেননা নবী () বলেন,
وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
সওম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।
 প্রশ্নঃ (৪১২) সওম অবস্থায় মেসওয়াক ও সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগে যেমন শেষ ভাগেও তেমন মেসওয়াক করা সুন্নাত। কেননা নবী () বলেন,
السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ ومَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
মেসওয়াক হচ্ছে মুখের পবিত্রতা ও প্রভুর সন'ষ্টি অর্জনের মাধ্যম।তিনি আরো বলেন,
لَوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاةٍ 
আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করলে আমি প্রত্যেক স্বলাতের সময় তাদেরকে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।অনুরূপভাবে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করাও সায়িমের জন্য জায়েয। চাই তা দিনের প্রথম ভাগে হোক বা শেষ ভাগে। চাই উক্ত সুগন্ধি ভাপ হোক বা তৈল জাতীয় বা সেন্ট প্রভৃতি হোক। তবে ভাপের সুগন্ধি নাকে টেনে নেয়া জায়েয নয়। কেননা ধোঁয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ ও অনুভবযোগ্য কিছু অংশ আছে যা নাক দ্বারা গ্রহণ করলে নাকের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে পেটে পৌঁছায়। এজন্য নবী () লাক্বীত বিন ছাবুরা hকে বলেছেন, بَالِغْ فِي الاسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا সওম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।
 প্রশ্নঃ (৪১৩) সওম ভঙ্গকারী বিষয় কি কি?
উত্তরঃ সওম ভঙ্গকারী বিষয়গুলো হচ্ছে নিম্নরূপঃ
ক) স্ত্রী সহবাস।
খ) খাদ্য গ্রহণ।
গ) পানীয় গ্রহণ।
ঘ) উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত করা।
ঙ) খানা-পিনার অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু গ্রহণ করা। যেমন সেলাইন ইত্যাদি।
চ) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
ছ) শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করা।
জ) হায়েয বা নেফাসের রক্ত প্রবাহিত হওয়া।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর দলীল নিম্নরূপঃ
সহবাস ও খান্তপিনা সম্পর্কে আল্লাহবলেন,
]فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ[
অতএব এক্ষণে তোমরা (সওমর রাত্রেও) তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহতোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা সওম পূর্ণ কর। (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭)
উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত সওম ভঙ্গের কারণ। দলীল, হাদীছে কুদসীতে আল্লাহতাআলা সায়িমের উদ্দেশ্যে বলেন, “সে খানা-পিনা ও উত্তেজনা পরিত্যাগ করে আমারই কারণে।উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত করার ক্ষেত্রে নবী () বলেন,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرًا
স্ত্রী সঙ্গমেও তোমাদের জন্য সাদকার ছওয়াব রয়েছে। সাহাবীগণ (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের একজন তার উত্তেজনার চাহিদা মেটাবে, আর এতে ছওয়াবের হকদার হবে এটা কেমন কথা? তিনি জবাবে বললেনঃ তোমরা কি মনে কর, সে যদি এই কাজ কোন হারাম স্থানে করত তবে পাপের অধিকারী হত না? তেমনি হালাল স্থানে ব্যবহার করার কারণে অবশ্যই সে পুরস্কারের অধিকারী হবে।আর উত্তেজনার চাহিদা মেটানোর মাধ্যম হচ্ছে স্ববেগে বীর্য নির্গত হওয়া। এজন্য বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, মযী বের হলে সওম বিনষ্ট হবে না, যদিও তা উত্তেজনা, চুম্বন ও স্পর্শ করার কারণে হয়।
খানা-পিনার অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু গ্রহণ করা সওম ভঙ্গের কারণ। যেমন, খানা-পিনার অভাব পূর্ণ করবে এরকম সেলাইন গ্রহণ করা। কেননা ইহা যদিও সরাসরি খানা-পিনা নয় কিন্তু ইহা খানা-পিনার কাজ করে এবং তার প্রয়োজন মেটায়। একারণেই তো ইহা দ্বারা শরীরের গঠন প্রকৃতি ঠিক থাকে, খানা-পিনার অভাব অনুভব করে না।
কিন্তু খানা-পিনার কাজ করে না এরকম ইন্জেকশন গ্রহণ করলে সওম ভঙ্গ হবে না। চাই উহা শিরার মধ্যে প্রদান করা হোক বা পেশীতে বা শরীরের যে কোন স্থানে।
ইচ্ছাকৃত বমি করা। অর্থাৎ বমির মাধ্যমে পেটের মধ্যে যা আছে তা মুখ দিয়ে বাইরে বের করা। আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত। নবী () বলেন,
مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে সে যেন সওম কাদ্বা আদায় করে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত যার বমি হয় তার কোন কাদ্বা নেই।এর কারণ হচ্ছে, মানুষ বমি করলে তার পেট খাদ্যশুন্য হয়ে যায়। তখন তার এই শুন্যতা পূরণের প্রয়োজন পড়ে। এ কারণে আমরা বলব, সওম ফরদ্ব হলে কোন মানুষের বমি করা জায়েয নয়। কেননা বমি করলে তার ফরদ্ব সওম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তবে অসুস্থতার কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে সওম নষ্ট হবে না।
শিঙ্গা লাগানো। অর্থাৎ শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত বের করা। নবী () বলেন, أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
হায়েয বা নেফাসের রক্ত প্রবাহিত হওয়া। নবী () নারীদের সম্পর্কে বলেন, أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ সে কি এমন নয় যে, ঋতুবতী হলে স্বলাত পড়বে না ও সওম রাখবে না।
উল্লেখিত বিষয়গুলো নিম্ন লিখিত তিনটি শর্তের ভিত্তিতে সওম ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবেঃ
১)          জ্ঞান থাকা।
২)          স্মরণ থাকা।
৩)          ইচ্ছাকৃতভাবে করা।
প্রথম শর্তঃ জ্ঞান থাকা। অর্থাৎ উক্ত বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অথবা সওমের জন্য যে সময় নির্দিষ্ট সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা।
যদি শরীয়তের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তবে তার সওম বিশুদ্ধ হবে। কেননা আল্লাহবলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহবলেন, আমি তাই করলাম। আল্লাহআরো বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন। (সূরা আহযাবঃ ৫)
সুন্নাহ্থেকে সওমের ক্ষেত্রে বিশেষ দলীল হচ্ছে, ছহীহ্হাদীছে আদী বিন হাতেম h থেকে বর্ণিত। তিনি সওম রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে উট বাঁধার দুটো রশী বালিশের নীচে রেখে দিলেন। একটি কালো রঙের অন্যটির রং সাদা। এরপর খানা-পিনা করতে থাকলেন। যখন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে সাদা ও কালো রশী চিনতে পারলেন তখন খানা-পিনা বন্ধ করলেন। সকালে নবী ()এর দরবারে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি তাকে বললেন, কুরআনের আয়াতে সাদা ও কালো সুতা বলতে আমাদের পরিচিত সূতা বা রশী উদ্দেশ্য নয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাদা সুতা বলতে দিনের শ্রভ্রতা (সুবহে সাদেক বা ফজর হওয়া) আর কালো সূতা বলতে রাতের অন্ধকার উদ্দেশ্য। কিন্তু নবী () তাকে সওম কাদ্বা আদায় করার আদেশ করেন নি। কেননা বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ছিলেন অজ্ঞ। ভেবেছিলেন এটাই আয়াতের অর্থ।
আর সওমের জন্য যে সময় নির্দিষ্ট সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও তার সওম বিশুদ্ধ। দলীল: ছহীহ্বুখারীতে আসমা বিনতে আবু বকর h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমরা একদা নবী()এর যুগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে ইফতার করে নিয়েছিলাম। তার কিছুক্ষণ পর আবার সূর্য দেখা গিয়েছিল।কিন্তু নবী () তাদেরকে উক্ত সওমের কাদ্বা আদায় করার আদেশ করেন নি। কেননা কাদ্বা আদায় করা ওয়াজিব হলে তিনি অবশ্যই সে আদেশ প্রদান করতেন। আর সে আদেশ থাকলে আমাদের কাছেও তার বর্ণনা পৌঁছতো। কেননা আল্লাহবলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ নিশ্চয় আমি যিকির অবতীর্ণ করেছি আর আমিই তার সংরক্ষণকারী।” (সূরা হিজ্রঃ ৯) অতএব প্রয়োজন থাকা সত্বেও যখন এক্ষেত্রে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না, তাই বুঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে এর কাদ্বা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন নি। অতএব অজ্ঞতা বশতঃ দিন থাকতেই পানাহার করে ফেললে তার কাদ্বা আদায় করা ওয়াজিব নয়। জানার সাথে সাথে পানাহার থেকে বিরত থাকবে এবং দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায় অতিবাহিত করবে।
অনুরূপভাবে কোন লোক যদি খানা-পিনা করে এই ভেবে যে এখনও রাত আছে- ফজর হয়নি। কিন্তু পরে জানলো যে সে ফজর হওয়ার পরই পানাহার করেছে, তবে তার সওম বিশুদ্ধ হবে। তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে না। কেননা সে ছিল অজ্ঞ।
দ্বিতীয় শর্তঃ স্মরণ থাকা। অর্থাৎ সে যে সওম রেখেছে একথা ভুলে না যাওয়া। অতএব সওম রেখে ভুলক্রমে কোন মানুষ যদি খানা-পিনা করে ফেলে, তবে তার সওম বিশুদ্ধ এবং তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে না। কেননা আল্লাহবলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহবলেন, আমি তাই করলাম। আবু হুরায়রা h হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্() বলেন,
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
যে ব্যক্তি সওম রেখে ভুলক্রমে পানাহার করে, সে যেন তার সওম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।
তৃতীয় শর্তঃ ইচ্ছাকৃত করা। অর্থাৎ সায়িম নিজ ইচ্ছায় উক্ত সওম ভঙ্গের কাজে লিপ্ত হবে। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে তার সওম বিশুদ্ধ হবে চাই তাকে জোর জবরদস্তী করা হোক বা না হোক। কেননা বাধ্য করে কুফরীকারীকে আল্লাহবলেন,
]مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنْ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ[
যার উপর জবরদস্তী করা হয়েছে এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি। (সূরা নাহালঃ ১০৬) বাধ্য অবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পাপ যদি ক্ষমা করা হয়; তবে তার নিম্ন পর্যায়ের পাপে বাধ্য হয়ে লিপ্ত হলে ক্ষমা হওয়াটা অধিক যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া হাদীছে নবী () থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
নিশ্চয় আল্লাহতাআলা আমার উম্মতের ভুল ক্রমে করে ফেলা এবং আবশ্যিক বিষয় করতে ভুলে যাওয়া ও বাধ্য অবস্থায় করে ফেলা পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এভিত্তিতে কারো নাকে যদি ধুলা ঢুকে পড়ে এবং তার স্বাদ গলায় পৌঁছে ও পেটের ভিতর প্রবেশ করে, তবে তার সওম ভঙ্গ হবে না। কেননা সে এটার ইচ্ছা করেনি।
অনুরূপভাবে কাউকে যদি ইফতার করতে জবরদসি- করা হয় আর সে বাধ্য হয়ে ইফতার করে ফেলে, তবে তার সওম বিশুদ্ধ। কেননা সে অনিচ্ছাকৃতভাবে একাজ করেছে।
এমনিভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তির স্বপ্নদোষ হলে, তার সওমও বিশুদ্ধ। কেননা সে ছিল ঘুমন্ত, ইচ্ছাও ছিল না তার একাজে। কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে তার সাথে সহবাস করতে বাধ্য করে এবং স্ত্রী বাধ্যগত হয়ে সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে তার (স্ত্রীর) সওম বিশুদ্ধ। কেননা একাজে তার কোন এখতিয়ার ছিল না।
একটি মাসআলাঃ খুবই সতর্ক থাকা উচিত। কোন মানুষ যদি রমাদ্বনে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে নিম্ন লিখিত পাঁচটি বিধান তার ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবেঃ
১)          সে গুনাহগার হবে।
২)          দিনের বাকী অংশ তাকে সওম অবস্থায় কাটাতে হবে।
৩)          তার উক্ত সওম বিনষ্ট হবে।
৪)          তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে।
৫)          কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।
সহবাসে লিপ্ত হলে কি ধরণের কাফ্ফারা দিতে হবে এ সম্পর্কে জানা থাক বা নাজানা থাক কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি রমাদ্বনের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হল- সওমও তার উপর ফরদ্ব- কিন্তু তার এই জ্ঞান নেই যে, একাজ করলে তাকে এত কাফ্ফারা দিতে হবে, তবুও তার উপর উল্লেখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবে। কেননা সে ইচ্ছাকৃতভাবে সওম ভঙ্গ করেছে। আর ইচ্ছাকৃতভাবে সওম ভঙ্গের কাজে লিপ্ত হলে, তার উপর যাবতীয় বিধান প্রজোয্য হবে। আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নবী() এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেন, “কিসে তোমাকে ধ্বংস করল?” সে বলল, রমাদ্বনের সওম রেখে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। তখন নবী () তাকে কাফ্ফারা আদায় করার আদেশ করলেন। অথচ লোকটি জানতো না যে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে কি হবে না।
আমরা বলেছি, তার উপর সওম ফরদ্ব। অর্থাৎ সে মুসাফির নয় নিজ গৃহে মুক্বীম হিসেবে অবস্থান করছে। যদি সফরে থেকে কোন ব্যক্তি সওম ভঙ্গ করে এবং স্ত্রী সহবাস করে তবে কাফ্ফারা দিতে হবেনা। কেননা সফর অবস্থায় সওম রাখা ফরদ্ব নয়। সওম ভঙ্গ করা ও রাখার ব্যাপারে সে স্বাধীন। তবে ভঙ্গ করলে পরে কাদ্বা আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ (৪১৪) সওম অবস্থায় শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে (spray) ব্যবহার করার বিধান কি? এ দ্বারা কি সওম ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ এই স্প্রে নাকে প্রবেশ করে কিন্তু পেট পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই সওম রেখে ইহা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এতে সওম ভঙ্গও হবে না। কেননা এটা এমন বস্ত যা উড়ে বেড়ায় নাকে প্রবেশ করে এবং বিলীন হয়ে যায়, এর অংশ বিশেষ পেটের মধ্যে প্রবেশ করে না। তাই এদ্বারা সওম ভঙ্গ হবে না।
 প্রশ্নঃ (৪১৫) বমি করলে কি সওম ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ কোন লোক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তবে তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে সওম ভঙ্গ হবেনা। আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্() বলেন,
]مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ[
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করবে সে যেন সওম কাদ্বা আদায় করে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত যার বমি হয় তার কোন কাদ্বা নেই।
কিন্তু বমি যদি আপনাকে পরাজিত করে ফেলে- বমি বের হয়েই যায়, তবে সওম ভঙ্গ হবেনা। মানুষ যদি পেটের মধ্যে খিচুনী অনুভব করে, মনে হয় যেন ভিতর থেকে সব কিছু বের হয়ে আসবে, তখন তাতে বাধা দিবেনা। সাধারণভাবে থাকার চেষ্টা করবে। ইচ্ছা করে কোন কিছু বের করার চেষ্টা করবে না। নিজে নিজে বের হয়ে আসলে কোন ক্ষতি হবেনা এবং সওমও নষ্ট হবেনা।
 প্রশ্নঃ (৪১৬) সায়িমের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ দাঁত থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে সওমর উপর কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সাধ্যানুযায়ী রক্ত গিলে নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। অনুরূপভাবে নাক থেকে রক্ত বের হলেও সওম নষ্ট হবে না। কিন্তু রক্ত ভিতরে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। নাক বা দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া সওম ভঙ্গের কারণ নয়। অতএব কাদ্বা আদায় করার প্রশ্নই উঠে না।
 ঋতুবতী ফজরের পূর্বে পবিত্র হলে সওম রাখবে।
প্রশ্নঃ (৪১৭) ঋতুবতী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার সওমর বিধান কি?
উত্তরঃ ফজরের পূর্বে পবিত্র হয়েছে এব্যাপারে নিশ্চিত হলে, তার সওম বিশুদ্ধ হবে। কেননা নারীদের মধ্যে অনেকে এমন আছে, ধারণা করে যে পবিত্র হয়ে গেছে অথচ সে আসলে পবিত্র হয়নি। এই কারণে নারীরা আয়েশা h এর কাছে আসতেন তাদের লজ্জাস্থানে তুলা লাগিয়ে উক্ত তুলার চিহ্ন দেখানোর জন্য যে, তারা কি পবিত্র হয়েছেন? তখন তিনি বলতেন,لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ তোমরা তাড়াহুড়া করবে না যতক্ষণ না তোমরা কাছ্ছা বাইযা (বা সাদা পানি) না দেখ।অতএব নারী অবশ্যই ধীরস্থিরতার সাথে লক্ষ্য করবে এবং নিশ্চিত হবে পূর্ণরূপে পবিত্র হয়েছে কিনা। যদি পবিত্র হয়ে যায় তবে সওমের নিয়ত করে নিবে। ফজর হওয়ার পর গোসল করবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু স্বলাতের দিকে লক্ষ্য রেখে দ্রুত গোসল সেরে নেয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে সময়ের মধ্যেই ফজর স্বলাত আদায় সম্ভব হয়।
আমরা শুনতে পাই অনেক নারী ফজরের পূর্বে বা পরে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, কিন্তু তারা গোসল করতে দেরী করে স্বলাতের সময় পার করে দেয়। পরিপূর্ণ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হওয়ার যুক্তিতে সূর্য উঠার পর গোসল করে। কিন্তু এটা মারাত্মক ধরণের ভুল। চাই তা রমাদ্বন মাসে হোক বা অন্য মাসে। কেননা তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে সময়মত স্বলাত আদায় করার জন্য দ্রুত গোসল সেরে নেয়া। স্বলাতের স্বার্থে গোসলের ওয়াজিব কাজগুলো সারলেই যথেষ্ট হবে। তারপর দিনের বেলায় আবারো যদি পরিপূর্ণরূপে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করে, তবে কি অসুবিধা আছে?
ঋতুবতী নারীর মত অন্যান্য নাপাক ব্যক্তিগণ (যেমন স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্ন দোষের কারণে নাপাক) নাপাক অবস্থাতেই সওমের নিয়ত করতে পারবে। এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে স্বলাত আদায় করবে। কেননা নবী () কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের কারণে নাপাক অবস্থাতেই সওমের নিয়ত করতেন এবং ফজর হওয়ার পর স্বলাতের আগে গোসল করতেন। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
 প্রশ্নঃ (৪১৮) সওম অবস্থায় দাঁত উঠানোর বিধান কি?
উত্তরঃ সাধারণ দাঁত বা মাড়ির দাঁত উঠানোতে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাতে সওম ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে না। তাই সওমও ভঙ্গ হবে না।
 প্রশ্নঃ (৪১৯) সওম রেখে রক্ত পরীক্ষা (Blood Test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি? এতে কি সওম নষ্ট হবে।
উত্তরঃ ব্লাড টেষ্ট করার জন্য রক্ত বের করলে সওম ভঙ্গ হবে না। কেননা ডাক্তার অসুস্থ ব্যক্তির চেক আপ করার জন্য রক্ত নেয়ার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু এই রক্ত নেয়া অল্প হওয়ার কারণে শিঙ্গা লাগানোর মত এর কোন প্রভাব শরীরে দেখা যায় না, তাই এতে সওম ভঙ্গ হবেনা। আসল হচ্ছে সওম ভঙ্গ না হওয়া- যতক্ষণ পর্যন্ত সওম ভঙ্গের জন্য শরীয়ত সম্মত দলীল না পাওয়া যাবে। আর সামান্য রক্ত বের হলে সওম ভঙ্গ হবে এখানে এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না।
কিন্তু রোগীর শরীরে রক্ত প্রবেশ করার জন্য বেশী পরিমাণে রক্ত প্রদান করা সওম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। কেননা এর মাধ্যমে শিঙ্গা লাগানোর মত শরীরে প্রভাব পড়ে। অতএব সওম যদি ওয়াজিব হয়, তবে এভাবে বেশী পরিমাণে রক্ত দান করা জায়েয নয়। তবে রোগীর অবস্থা যদি আশংকা জনক হয়, মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তার প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে এবং ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত যে, এই সায়িমের রক্তই শুধু রোগীর উপকারে আসবে ও তার প্রাণ বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে, তবে এই অবস্থায় রক্ত দান করতে কোন অসুবিধা নেই। রক্ত দানের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করে পানাহার করবে। অতঃপর এই সওমর কাদ্বা আদায় করবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
 প্রশ্নঃ (৪২০) সায়িম হস্ত মৈথুন করলে কি সওম ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ সায়িম হস্ত মৈথুন করে যদি বীর্যপাত করে তবে তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। দিনের বাকী অংশ তাকে সওম অবস্থায় কাটাতে হবে। এ অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং উক্ত দিনের সওম কাদ্বা আদায় করতে হবে। কিন্তু কাফ্ফারা আবশ্যক হবে না। কেননা কাফ্ফারা শুধুমাত্র সহবাসের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করলে আবশ্যক হবে।
 প্রশ্নঃ (৪২১) সায়িমের জন্য আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ সায়িমের আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। চাই তৈল জাতীয় হোক বা ধোঁয়া জাতীয়। তবে ধোঁয়ার সুঘ্রাণ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকবে না। কেননা এতে একজাতীয় পদার্থ আছে যা পেট পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন পানি বা তদানুরূপ বস্ত। কিন্তু সাধারণ ভাবে তার সুঘ্রাণ নাকে ঢুকলে কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৪২২) নাকে ধোঁয়া টানা এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, নাকে ভাপের ধোঁয়া টানা নিজ ইচ্ছায় হয়ে থাকে। যাতে করে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ করে, তাই এতে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরং এতে উদ্দেশ্য হচ্ছে নাকে বা চোখে শুধু ড্রপ ব্যবহার করা।
 প্রশ্নঃ (৪২৩) সায়িমের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ নাকের ড্রপ যদি নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে তবে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা লাক্বীত বিন সাবুরা h থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী () তাঁকে বলেন,وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا সওম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে সায়িমের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু পেটে না পৌঁছলে কোন অসুবিধা নেই।
চোখে ড্রপ ব্যবহার করা সুরমা ব্যবহার করার ন্যায়। এতে সওম নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে কানে ড্রপ ব্যবহারেও সওম বিনষ্ট হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কোন দলীল নেই। এবং যে সব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এগুলো তারও অন্তর্ভুক্ত নয়। চোখ বা কান দ্বারা পানাহার করা যায় না। এগুলো শরীরের অন্যান্য চামড়ার লোমকুপের মত।
বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন, কোন লোকের পায়ের তলায় যদি তরল কোন পদার্থ লাগানো হয় এবং এর স্বাদ গলায় অনুভব করে, তবে সওমর কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা খানা-পিনা গ্রহণের স্থান নয়। অতএব সুরমা ব্যবহার করলে, চোখে বা কানে ড্রপ ব্যবহার করলে সওম নষ্ট হবে না- যদিও এগুলো ব্যবহার করলে গলায় স্বাদ অনুভব করে।
অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য অথবা অন্য কোন কারণে যদি কেউ তৈল ব্যবহার করে, তাতেও সওমর কোন ক্ষতি হবে না।
এমনিভাবে শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস্তপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতেও সওমর কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা পানাহারের অন্তর্ভুক্ত নয়।
 প্রশ্নঃ (৪২৪) সওম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি সওম বিশুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তার সওম বিশুদ্ধ হবে। কেননা স্বপ্নদোষ সওম বিনষ্ট করে না। স্বপ্নদোষ তো মানুষের অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। আর নিদ্রা অবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি সতর্কতাঃ বর্তমান যুগে অনেক মানুষ রমাদ্বনের রাতে জেগে থাকে। কখনো আজেবাজে কর্ম এবং কথায় রাত কাটিয়ে দেয়। তারপর গভীর নিদ্রায় সমস্ত দিন অতিবাহিত করে। বরং মানুষের উচিত হচ্ছে, সওমর সময়টাকে যিকির, কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি আনুগত্যপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্যদানকারী কাজে অতিবাহিত করা।
 প্রশ্নঃ (৪২৫) সায়িমের ঠান্ডা ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ ঠান্ডা-শীতল বস্ত অনুসন্ধান করা সায়িম ব্যক্তির জন্য জায়েয, কোন অসুবিধা নেই। রাসূল () সওম রেখে গরমের কারণে বা তৃষ্ণার কারণে মাথায় পানি ঢালতেন। ইবনু ওমরh সওম রেখে গরমের প্রচন্ডতা অথবা পিপাসা হ্রাস করার জন্য শরীরে কাপড় ভিজিয়ে রাখতেন। কাপড়ের এই সিক্ততার কোন প্রভাব নেই। কেননা উহা এমন পানি নয়, যা নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
 প্রশ্নঃ (৪২৬) সায়িম কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃ সায়িম কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছে যায়, তবে তার সওম ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহবলেনঃ
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫)
 প্রশ্নঃ (৪২৭) সায়িমের আতরের সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ ৪২১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
 প্রশ্নঃ (৪২৮) নাক থেকে রক্ত বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ নাক থেকে রক্ত বের হলে সওম নষ্ট হবে না- যদিও বেশী পরিমাণে বের হয়। কেননা এখানে ব্যক্তির কোন ইচ্ছা থাকেনা।
সতর্কতা বশতঃ ফজরের দশ/পনর মিনিট পূর্বে পানাহার বন্ধ করা।
 প্রশ্নঃ (৪২৯) রমাদ্বনের কোন কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার প্রায় দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে নাকি এটা বিদআত?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে ইহা বিদআত। সুন্নাতে নববীতে এর কোন প্রমাণ নেই। কেননা আল্লাহতাআলা সম্মানিত কিতাবে বলেন,
]وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ[
এবং প্রত্যুষে (রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা সওম পূর্ণ কর। (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭) নবী () বলেন,
أَنَّ بِلَالًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ لَا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
নিশ্চয় বেলাল রাত থাকতে আযান দেয়, তখন তোমরা খাও ও পান কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূমের আযান শোন। কেননা ফজর উদিত না হলে সে আযান দেয় না।ফজর না হতেই খানা-পিনা বন্ধ করার জন্য লোকেরা সময় নির্ধারণ করে যে ক্যালেন্ডার তৈরী করেছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নির্ধারিত ফরদ্বের উপর বাড়াবাড়ী। আর এটা হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনের মাঝে অতিরঞ্জন। নবী () বলেন,
 هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ
অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক।
 প্রশ্নঃ (৪৩০) এয়ারপোর্টে থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখন কি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃ খানা-পিনা বন্ধ করা অবশ্যক নয়। কেননা যমীনে থাকাবস্থায় ইফতারের সময় হয়ে গেছে সূর্যও ডুবে গেছে। সুতরাং ইফতার করতে বাধা কোথায়? রাসূলুল্লাহ্() বলেন,
إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ
এদিক থেকে যখন রাত আগমণ করবে এবং ঐদিক থেকে দিন শেষ হয়ে যাবে ও সূর্য অস্ত যাবে, তখন সায়িম ইফতার করে ফেলবে।
অতএব এয়ারপোর্টের যমীনে থাকাবস্থায় যখন সূর্য ডুবে গেছে, তখন তার দিনও শেষ হয়ে গেছে, তাই সে শরীয়তের দলীল মোতাবেক ইফতারও করে নিয়েছে। সুতরাং শরীয়তের দলীল ব্যতীরেকে আবার তাকে পানাহার বন্ধ করার আদেশ দেয়া যাবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৩১) সায়িমের কফ অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
উত্তরঃ কফ বা শ্লেষা যদি মুখে এসে একত্রিত না হয় গলা থেকেই ভিতরে চলে যায় তবে তার সওম নষ্ট হবে না। কিন্তু যদি গিলে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রে বিদ্বানদের দুটি মত রয়েছেঃ
১ম মতঃ তার সওম নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা উহা পানাহারের স্তলাভিষিক্ত।
২য় মতঃ সওম নষ্ট হবে না। কেননা উহা মুখের সাধারণ থুথুর অন্তর্গত। মুখের মধ্যে সাধারণ পানি যাকে থুথু বলা হয় তা দ্বারা সওম নষ্ট হয় না। এমনকি যদি থুথু মুখের মধ্যে একত্রিত করে গিলে ফেলে তাতেও সওমের কোন ক্ষতি হবে না।
আমরা জানি আলেমগণ মতবিরোধ করলে তার সমাধান কুরআন্তসুন্নাহ্থেকে খুঁজতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কুরআন্তসুন্নাতে সুস্পষ্ট কোন উক্তি নেই। এ বিষয়ে যখন সন্দেহ হয়ে গেল, তার ইবাদতটি নষ্ট হয়ে গেল না নষ্ট হল না। তখন আমাদেরকে মূলের দিকে ফিরে যেতে হবে। মূল হচ্ছে দলীল ছাড়া ইবাদত বিনষ্ট না হওয়া। অতএব কফ গিলে নিলে সওম নষ্ট হবে না।
মোটকথা কফ নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিবে। উহা গলার নীচে থেকে মুখে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে না। কিন্তু মুখে এসে পড়লে বাইরে ফেলে দিবে। চাই সায়িম হোক বা না হোক। কিন্তু গিলে ফেললে সওম নষ্ট হবে এর জন্য দলীল দরকার।
 প্রশ্নঃ (৪৩২) খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করে যদি তা গিলে না ফেলে, তবে সওম নষ্ট হবে না। কিন্তু একান্ত দরকার না পড়লে এরূপ করা উচিত নয়। এ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত যদি পেটে কিছু ঢুকে পড়ে তবে সওমের কোন ক্ষতি হবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৩৩) সওম রেখে হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ আমরা আল্লাহতাআলার নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই জানতে পারি সওম ফরদ্ব হওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সওম ফরদ্ব করা হয়েছে, যেমন ফরদ্ব করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থে তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় বাস্তাবায়ন করা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা। নবী () বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যে ব্যক্তি (সওম রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা অভ্যাস ও মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।অতএব এ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, সায়িম যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবং সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু আফসোসের বিষয় অধিকাংশ সায়িম রমাদ্বনের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্য করে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরদ্ব কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোন পার্থক্য নেই। গর্হিত ও অশ্লীল কথা কাজে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা, ধোঁকাবাজী প্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যে সওমের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় সওমকে ভঙ্গ করে দিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
 প্রশ্নঃ (৪৩৪) মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার বিধান কি? ইহা কি সওম নষ্ট করে?
উত্তরঃ মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়া অন্যতম কাবীরা গুনাহ্। আর তা হচ্ছে না জেনে কোন বিষয়ে স্বাক্ষ্য দেয়া অথবা জেনে শুনে বাস্তবতার বিপরীত সাক্ষ্য প্রদান করা। এতে সওম বিনষ্ট হবে না। কিন্তু সওমের ছওয়াব কমিয়ে দিবে।
 প্রশ্নঃ (৪৩৫) সওমের আদব কি কি?
উত্তরঃ সওমের গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, আল্লাহভীতি অর্জন করা তথা আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সওম ফরদ্ব করা হয়েছে, যেমন ফরদ্ব করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৩) নবী () বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যে ব্যক্তি (সওম রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা কাজ-কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।
সওমের আরো আদব হচ্ছে, বেশী বেশী দান খায়রাত করা, নেককাজ ও জনকল্যাণ মূলক কাজ বাস্তবায়ন করা। রাসূলুল্লাহ্() ছিলেন সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি। রমাদ্বন মাসে যখন জিবরীল (আঃ) তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন তখন তিনি আরো বেশী দান করতেন।
আরো আদব হচ্ছে, আল্লাহযা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। যাবতীয় মিথ্যাচার, গালিগালাজ, ধোকা, খিয়ানত, হারাম অশ্লীল বস্ত দেখা বা শোনা প্রভৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা প্রতিটি মানুষের উপর ওয়াজিব। বিশেষ করে সায়িমের জন্য তো অবশ্যই।
সওমর আদব হচ্ছে, সাহুর খাওয়া। এবং তা দেরী করে খাওয়া। কেননা নবী () বলেছেন, تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً তোমরা সাহুর খাও। কেননা সাহুরে রয়েছে বরকত।
সওমের আদব হচ্ছে, দ্রুত ইফতার করা। সূর্য অস্ত যাওয়া নিশ্চিত হলে বা অস্ত যাওয়ার অনুমান প্রবল হলেই সাথে সাথে দেরী না করে ইফতার করা। কেননা নবী () বলেন,لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ মানুষ কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।
ইফতারের আদব হচ্ছে, কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা, সম্ভব না হলে যে কোন খেজুর দ্বারা। খেজুর না পেলে পানি দ্বারাই ইফতার করবে।
 প্রশ্নঃ (৪৩৬) ইফতারের জন্য কোন দুআ কি প্রমাণিত আছে? সায়িম কি মুআয্যিনের জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
উত্তরঃ দুআ কবূল হওয়ার অন্যতম সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। কেননা সময়টি হচ্ছে ইবাদতের শেষ মূহুর্ত। তাছাড়া মানুষ সাধারণতঃ ইফতারের সময় অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর মানুষ যত দুর্বল হয় তার অন্তর তত নরম ও বিনয়ী হয়। তখন দুআ করলে মনোযোগ আসে বেশী এবং আল্লাহর দিকে অন্তর ধাবিত হয়। ইফতারের সময় দুআ হচ্ছেঃاللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ হে আল্লাহআপনার জন্য সওম রেখেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।নবী () ইফতারের সময় এই দুআ পাঠ করতেনঃذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ তৃষ্ণা বিদূরিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা তরতাজা হয়েছে এবং আল্লাহচাহে তো প্রতিদান সুনিশ্চিত হয়েছে।হাদীছ দুটিতে যদিও দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু কোন কোন বিদ্বান উহাকে হাসান বলেছেন। মোটকথা এগুলো দুআ বা অন্য কোন দুআ পাঠ করবে। ইফতারের সময় হচ্ছে দুআ কবূল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত। কেননা হাদীছে এরশাদ হয়েছে নবী () বলেন, إِنَّ لِلصَّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ সওম পালনকারীর ইফতারের সময়কার দুআ প্রত্যাখ্যান করা হয় না।
আর ইফতারের সময় মুআয্যিনের জবাব দেয়া শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী () বলেন, إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ মুআয্যিনের আযান শুনলে তার জবাবে সে যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বল।এ হাদীছটি প্রত্যেক অবস্থাকে শামিল করে। তবে দলীলের ভিত্তিতে কোন অবস্থা ব্যতিক্রম হলে ভিন্ন কথা।
 প্রশ্নঃ (৪৩৭) সওম কাদ্বা থাকলে শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ নবী () বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ
যে ব্যক্তি রমাদ্বনের সওম রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সওম রাখবে, সে সারা বছর সওম রাখার প্রতিদান লাভ করবে।কোন মানুষের যদি সওম কাদ্বা থাকে আর সে শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখে, সে কি রমাদ্বনের পূর্বে সওম রাখল না রমাদ্বনের পর।
উদাহরণঃ জনৈক লোক রমাদ্বনের ২৪টি সওম রাখল। বাকী রইল ছয়টি। এখন সে যদি কাদ্বা আদায় না করেই শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখে, তাকে কি বলা যাবে সে রমাদ্বনের সওম পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখল? কেননা সে তো রমাদ্বনের সওম পূর্ণই করেনি। অতএব রমাদ্বনের সওম কাদ্বা থাকলে শাওয়ালের ছয় সওমর প্রতিদান তার জন্য প্রমাণিত হবে না।
অবশ্য আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, কারো সওম কাদ্বা থাকলে তার জন্য নফল সওম জায়েয কি না? কিন্তু আমাদের এই মাসআলাটি এই মতবিরোধের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা শাওয়ালের ছয়টি সওম রমাদ্বনের সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যক্তি রমাদ্বনের সওম পূর্ণ করেনি তার জন্য উক্ত ছয় সওমর ছওয়াব সাব্যস্ত হবেনা।
 কাদ্বা সওম বাকী রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার বিধান।
প্রশ্নঃ (৪৩৮) জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি রমাদ্বনে সওম কাদ্বা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরু হওয়ার চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাদ্বা সওমগুলো আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ তার এই অসুখ যদি চলতেই থাকে সুস্থ না হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করে তবে তার পক্ষ থেকে কাদ্বা আদায় করতে হবেনা। কেননা আল্লাহবলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হচ্ছে, সুস্থ হলেই কাদ্বা সওমগুলো দ্রুত আদায় করে নেয়া। কিন্তু সওম রাখতে সমর্থ হওয়ার পূর্বেই যদি মৃত্যু বরণ করে, তবে সওমর আবশ্যকতা রহিত হয়ে যাবে। কেননা সে তো এমন কোন সময় পায়নি যাতে সে সওমগুলো কাদ্বা আদায় করতে পারে। যেমন একজন লোক রমাদ্বন আসার পূর্বেই শাবানে মৃত্যু বরণ করল। অতএব রমাদ্বনের সওম রাখা তার জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু অসুস্থতা যদি এমন হয় যা সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।
 প্রশ্নঃ (৪৩৯) রমাদ্বনের সওম বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রমাদ্বন এসে গেলে কি করবে?
উত্তরঃ একথা সবার জানা যে, আল্লাহতাআলা বলেছেন,
]فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের সওম রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব এ লোকটি যখন শরীয়ত সম্মত দলীলের ভিত্তিতে সওম ভঙ্গ করেছে, তখন আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নার্থে তা কাদ্বা আদায় করা উচিত। পরবর্তী রমাদ্বন আসার পূবেই উহা কাদ্বা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা আয়েশা h বলেন, ‘আমার রমাদ্বনের কিছু সওম বাকী রয়ে যেত। কিন্তু শাবান মাস না আসলে আমি উহা কাদ্বা আদায় করতে পারতাম না।আর তার কারণ ছিল রাসূলুল্লাহ্()এর সাথে তাঁর ব্যস্ততা। সুতরাং আয়েশা hএর উক্ত বাণী থেকে প্রমাণিত হয় যে, পরবর্তী রমাদ্বন আসার পূর্বে উহা অবশ্যই কাদ্বা আদায় করতে হবে।
কিন্তু সে যদি পরবর্তী রমাদ্বন পর্যন্ত দেরী করে এবং সওমটি রয়েই যায়, তবে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তওবা ইসে-গফার করা, এই শীথিলতার জন্য লজ্জিত অনুতপ্ত হওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব তা কাদ্বা আদায় করে নেয়া। কেননা দেরী করলে কাদ্বা আদায় করার আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায় না।
 প্রশ্নঃ (৪৪০) শাওয়ালের ছয়টি সওম পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ শাওয়ালের ছয়টি সওম পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ঈদের পর পরই উহা আদায় করা এবং পরস্পর আদায় করা। বিদ্বানগণ এভাবেই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কেননা এতে রমাদ্বনের অনুসরণ বাস্তবায়ন হয়। হাদীছে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি রমাদ্বনের পরে পরে শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখে..।তাছাড়া এতে নেক কাজ সম্পাদনে তাড়াহুড়া করা হল, যে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এতে বান্দার দৃঢ়তার প্রমাণ রয়েছে। দৃঢ়তা মানুষের পরিপূর্ণতার লক্ষণ। সচেতন বান্দা সুযোগ হাতছাড়া করে না। কেননা মানুষ জানে না পরবর্তীতে কি তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতএব বান্দা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইলে তাকে প্রতিটি নেক কর্মের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৪৪১) শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখার জন্য কি ইচ্ছামত দিন নির্ধারণ করা জায়েয? নাকি তার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট করা আছে? এ দিনগুলো সওম রাখলে কি উহা ফরদ্বের মত হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর আবশ্যিকভাবে সওম পালন করতে হবে?
উত্তরঃ নবী () থেকে ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْر
যে ব্যক্তি রমাদ্বনের সওম রাখার পর শওয়াল মাসে ছয়টি সওম রাখবে, সে সারা বছর সওম রাখার প্রতিদান লাভ করবে।এ ছয়টি সওমর জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করা নেই। মাসের যে কোন সময় সওমগুলো রাখা যায়। চাই মাসের প্রথম দিকে হোক বা মধ্যখানে বা শেষের দিকে। লাগাতার হোক বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে হোক- সবই জায়েয। বিষয়টি প্রশস্ত- সুযোগ সম্পন্ন (আল্হামদুল্লিাহ্)। তবে রমাদ্বন শেষ হওয়ার পর পরই মাসের প্রথম দিকে দ্রুত করে নেয়া বেশী উত্তম। কেননা এতে নেক কাজে প্রতিযোগিতা করা হল, যা কাম্য।
কোন বছর এ সওম পালন করবে কোন বছর করবে না তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ সওম নফল ফরদ্ব নয়।
 প্রশ্নঃ (৪৪২) আশুরা সওমের বিধান কি?
উত্তরঃ নবী () হিজরত করে মদীনা আগমণ করে দেখেন ইহুদীরা মুহার্রামের দশ তারিখে সওম পালন করছে। নবী () বললেনঃ
فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
আমরা মূসার অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে অধিক হকদার। তিনি নিজে সে দিনের সওম রাখলেন এবং ছাহাবীদেরকেও নির্দেশ দিলেন।বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ইবনু আব্বাসের হাদীছে বলা হয়েছে, নবী () আশুরা দিবসে সওম রেখেছেন এবং ছাহাবীদেরকে সওম রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সওমর ফযীলত সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে, নবী () বলেন, أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।কিন্তু ইহুদীদের বিরোধীতা করার জন্য তিনি এর একদিন পূর্বে ৯ তারিখ অথবা এক দিন পরে ১১ তারিখ সওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাং আশুরার সওমর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, মুহার্রমের দশ তারিখের সাথে ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখের সওম রাখা। অবশ্য ১১ তারিখের চেয়ে ৯ তারিখ সওম রাখা অধিক উত্তম।
 প্রশ্নঃ (৪৪৩) শাবান মাসে সওম রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ শাবান মাসে সওম রাখা এবং অধিক হারে রাখা সুন্নাত। আয়েশা h বলেন, مَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন সময় আমি নবী ()কে এত বেশী সওম রাখতে দেখিনি।এ হাদীছ অনুযায়ী শাবান মাসে অধিকহারে সওম রাখা উচিত।
বিদ্বানগণ বলেন, শাবান মাসে সওম রাখা সুন্নাতে মুআক্কাদা স্বলাতের অনুরূপ। এই সওম যেন রমাদ্বন মাসের ভুমিকা। অর্থাৎ রমাদ্বনের পূর্বের সুন্নাত সওম। অনুরূপভাবে শাওয়ালের সওম রমাদ্বনের পরের সুন্নাত স্বরূপ। যেমন ফরদ্ব স্বলাতের আগে ও পরে সুন্নাত রয়েছে।
তাছাড়া শাবান মাসে সওমর উপকারিতা হচ্ছে, নিজেকে রমাদ্বনের সওম রাখার ব্যাপারে প্রস্তত করা, সওময় অভ্যস্ত করে তোলা। যাতে করে ফরদ্ব সওম রাখা তার জন্য সহজসাধ্য হয়।
 প্রশ্নঃ (৪৪৪) যার অভ্যাস আছে একদিন সওম রাখা ও একদিন ছাড়া। সে কি শুক্রবারেও সওম রাখতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ। কোন মানুষ যদি এক দিন পর পর সওম রাখার অভ্যাস করে থাকে এবং তার সওমর দিন শুক্রবার হয় বা শনিবার বা রোববার হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। তবে সে দিন যেন এমন না হয় যখন সওম রাখা হারাম। যেমন দুঈদের দিন, আইয়্যামে তাশরীকের দিন (কুরবানী ঈদের পরের তিন দিনকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়)। তখন সওম পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। নারীদের ক্ষেত্রে ঋতু বা নেফাসের দিনগুলো সওম রাখা হারাম।
 প্রশ্নঃ (৪৪৫) ছওমে বিছাল কাকে বলে? এটা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তরঃ ছওমে বিসাল বা অবিচ্ছিন্ন সওম হচ্ছে, ইফতার না করে দুদিন একাধারে সওম রাখা। নবী () এরকম সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, কেউ যদি অবিচ্ছিন্ন করতে চায়, তবে শেষ রাতে সাহুরের সময় পর্যন্ত মিলিত করতে পারে।সাহুর পর্যন্ত সওমকে অবিচ্ছিন্ন করণ জায়েয, সুন্নাত নয়; কোন ফযীলতপূর্ণ কাজও নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্() সূর্যাসে-র সাথে সাথে ইফতার করাকে কল্যাণের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ
لا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْر
মানুষ ততদিন কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।কিন্তু সাহুরের সময় পর্যন্ত সওমকে চালিয়ে যাওয়া বৈধ করেছেন। লোকেরা যখন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো ইফতার না করেই সওম চালিয়ে যান? তিনি বললেন, “আমার অবস্থা তোমাদের মত নয়, আমাকে আমার পালনকর্তা খাওয়ান ও পান করান।
 প্রশ্নঃ (৪৪৬) বিশেষভাবে জুমআর দিবস সওম নিষেধ। এর কারণ কি? কাদ্বা সওমও কি এদিন রাখা নিষেধ?
উত্তরঃ নবী () থেকে ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, لا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ ولا ليلتها بقيام এককভাবে শুধুমাত্র শুক্রবারের দিনে সওম রাখবে না এবং রাতে ক্বিয়াম করবে না।সওম রাখার জন্য এককভাবে এ দিনকে বেছে নেয়া নিষেধের হিকমত হচ্ছে, জুমআর দিন সপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমআ ইসলামের তৃতীয় ঈদ হিসেবে গণ্য। প্রথম ঈদ হচ্ছে রমাদ্বন শেষে ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয়টি কুরবানীর ঈদ। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, সাপ্তাহিক ঈদ জুমআর দিন। একারণেই আলাদাভাবে এদিনে সওম রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
তাছাড়া এদিনে পুরুষদের জন্য উচিত হচ্ছে আগেভাগে জুমআর স্বলাতে যাওয়া, দুআ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতে মাশগুল হওয়া। এদিনটি আরাফার দিবসের অনুরূপ। আরাফার দিবসে হাজীগণ সওম রাখবেন না। কেননা এদিন তিনি দুআ ও যিকিরে মাশগুল থাকবেন। একটি মূলনীতি হচ্ছে: কয়েকটি ইবাদত যদি একত্রিত হয়, তখন যেটা পিছানো সম্ভব হবে না সেটা তাৎক্ষণিক আদায় করবে এবং যেটি পিছানো সম্ভব হবে তা পিছিয়ে দিয়ে পরে আদায় করবে।
যদি প্রশ্ন করা হয় যে, জুমআর দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন হওয়ার কারণে যদি সওম রাখা নিষেধ হয়ে থাকে, তবে তো অপর দুটি ঈদের মত এদিনে অন্যান্য সওম রাখাও হারাম হয়ে যায়?
উত্তরে আমরা বলবঃ এদিনটির বিধান অন্য দুঈদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা ইহা প্রতি মাসে চারবার আগমণ করে। একারণে এদিনে সওম রাখার নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে হারাম নয়। তাছাড়া দুঈদের মাঝে আরো বিশেষ যে বৈশিষ্ট রয়েছে তা জুমআর দিনে নেই।
কিন্তু যদি জুমআর পূর্বে একদিন ও পরে একদিন সওম পালন করে, তখন বুঝা যাবে যে, এককভাবে জুমআর দিবস সওম পালন করার উদ্দেশ্য ছিল না। আর এটা জায়েয।
এককভাবে জুমআর দিনে সওম রাখার নিষেধাজ্ঞা নফল এবং কাদ্বা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। কেননা হাদীছের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাধারণভাবে একথাই বুঝা যায়। তবে যদি কোন মানুষ এরকম ব্যস্ত থাকে যে, তার কাদ্বা সওম জুমআর দিবস ছাড়া অন্য সময় আদায় করা সম্ভব নয়, তখন তার জন্য এককভাবে সে দিন সওম পালন করা মাকরূহ নয়। কেননা তার ওযর রয়েছে।
 ইচ্ছাকৃতভাবে নফল সওম ভঙ্গ করে ফেলার বিধান।
প্রশ্নঃ (৪৪৭) কোন মানুষ যদি নফল সওম ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কি গুনাহগার হবে? যদি সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে, তবে কি কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ নফল সওম রেখে যদি পানাহার বা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কোন গুনাহ্নেই। নফল সওম শুরু করলেই তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়। তবে হজ্জ-ওমরার কাফ্ফারার সওম পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু নফল সওম শুরু করার পর পূর্ণ করাই উত্তম। তাই নফল সওম রেখে স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়।
কিন্তু সওম যদি ফরদ্ব হয় এবং স্ত্রী সহবাস করে তবে তা নাজায়েয। কেননা বিশেষ প্রয়োজন না দেখা দিলে ফরদ্ব সওম ভঙ্গ করা জায়েয নয়। তবে রমাদ্বনের সওম যদি তার উপর ফরদ্ব থাকে এবং দিনের বেলা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে কাফ্ফারা দিতে হবে। রমাদ্বনের সওম যদি তার উপর ফরদ্ব থাকেএকথার অর্থ হচ্ছে: যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই সফরে থাকে, দুজনেই সওম রাখে, তারপর সহবাসের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করে, তবে তারা গুনাহগার হবে না। তাদেরকে কাফ্ফারা দিতে হবেনা। অবশ্য তাদেরকে উক্ত দিনের সওম কাদ্বা আদায় করতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৪৪৮) এতেকাফ এবং এতেকাফকারীর বিধান কি?
উত্তরঃ তেকাফ হচ্ছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য মসজিদে অবস্থান করা। লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য এতেকাফ করা সুন্নাত। আল্লাহতাআলা পবিত্র কুরআনে এদিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেন,
 وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
মসজিদে এতেকাফ করা অবস্থায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭) ছহীহ্বুখারীতে প্রমাণিত আছে, নবী () তেকাফ করেছেন, তাঁর সাথে ছাহাবায়ে কেরামও এতেকাফ করেছেন। এতেকাফের এই বিধান শরীয়ত সম্মত। তা রহিত হয়ে যায়নি। ছহীহ্বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা h থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “নবী() রমাদ্বনের শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন, এমনকি আল্লাহতাকে মৃত্যু দান করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন।
ছহীহ্মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী () রমাদ্বনের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন,
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِي إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ
নিশ্চয় আমি রমাদ্বনের প্রথম দশকে এতেকাফ করে এই রাত্রি (লায়লাতুল কদর) অনুসন্ধান করেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগন'ক কর্তৃক আমাকে বলা হয়েছে, নিশ্চয় উহা শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এতেকাফ করতে চায়, সে যেন এতেকাফ করে।অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করেছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘তেকাফ করা যে সুন্নাত সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ আমার জানা নেই।
তাই কুরআন্তসুন্নাহ্ও ইজমার দলীলের ভিত্তিতে এতেকাফ করা সুন্নাত।
তেকাফ করার স্থান হচ্ছে, যে কোন শহরে অবসি'ত মসজিদ। যেখানে জামাতে স্বলাত অনুষ্ঠিত হয়। কেননা আল্লাহবলেছেনঃ মসজিদ সমূহে ইতেকাফ করা অবস্থায়..।উত্তম হচ্ছে জুমআর মসজিদে এতেকাফ করা। যাতে করে জুমআ আদায় করার জন্য বের হতে না হয়। অন্য মসজিদে এতেকাফ করলেও কোন অসুবিধা নেই, তবে জুমআর জন্য আগে ভাগে মসজিদে চলে যাবে।
তেকাফ কারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, নফল স্বলাত প্রভৃতিতে মাশগুল থাকা। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটা। মানুষের সামান্য কথাবার্তায় কোন অসুবিধা নেই বিশেষ করে কথা যদি উপকারী হয়।
তেকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস ও স্ত্রী সোহাগ বা শৃঙ্গার প্রভৃতি হারাম। মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ভাগে বিভক্তঃ
১)          জায়েয। শরীয়ত অনুমদিত ও অভ্যাসগত যরূরী কাজে বের হওয়া। যেমন জুমআর স্বলাতের জন্য বের হওয়া, পানাহার নিয়ে আসার কেউ না থাকলে সে উদ্দেশ্যে বের হওয়া। ওযু, ফরদ্ব গোসল, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া।
২)          ওয়াজিব নয় এমন নেকীর কাজে বের হওয়া। যেমন, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া। তবে এতেকাফ শুরু করার সময় এসমস্ত কাজের জন্য বের হওয়ার যদি শর্ত করে নেয়, তবে জায়েয হবে। অন্যথায় নয়।
৩)          তেকাফের বিরোধী কাজে বের হওয়া। যেমন বাড়ী যাওয়া বা কেনা-বেচার জন্য বের হওয়া। স্ত্রী সহবাস করা। এ সমস্ত কাজ কোনভাবেই এতেকাফকারীর জন্য জায়েয নয়।

অধ্যায়ঃ সওম
যে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে- 

নং
সওম বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল

অধ্যায়ঃ সওম
الصيـام
জবাব জানতে প্রশ্নের উপর ক্লিক করুন

নং
 সওম বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
৩৯২
  সওম ফরদ্ব হওয়ার হিকমত কি?
৩৯৩
  মুসলিম জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়। তারা বলে মক্কায় যখন রমাদ্বন মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই সওম রাখবে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
৩৯৪
  সায়িম যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর হয়, কিন্তু আগের দেশে ঈদের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেকি এখন সওম ভঙ্গ করবে? উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় দেশে ঈদের চাঁদ এখনও দেখা যায়নি।
৩৯৫
  যে ব্যক্তি কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে সওম রাখতে অসুবিধা অনুভব করে তার কি সওম ভঙ্গ করা জায়েয?
৩৯৬
  জনৈক বালিকা ছোট বয়সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। সে অজ্ঞতা বশতঃ ঋতুর দিনগুলোতে সওম পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
৩৯৭
  জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সওম ভঙ্গ করার বিধান কি? 
৩৯৮
  সওম ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ কি কি?
৩৯৯
  রমাদ্বন মাস শুরু হয়েছে কিনা এসংবাদ না পেয়েই জনৈক ব্যক্তি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে সে সওমের নিয়ত করেনি ফজর হয়ে গেছে। ফজরের সময় সে জানতে পারল আজ রমাদ্বনের প্রথম দিন। এ অবস্থায় তার করণীয় কি? উক্ত দিনের সওম কি কাদ্বা আদায় করতে হবে?
৪০০
  কারণ বশতঃ কোন ব্যক্তি যদি সওম ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই উক্ত ওযর দূর হয়ে যায়। সে কি দিনের বাকী অংশ সওম অবস্থায় কাটাবে?
৪০১
  জনৈক মহিলা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ডাক্তারগণ তাকে সওম রাখতে নিষেধ করেছে। এর বিধান কি?
৪০২
  কখন এবং কিভাবে মুসাফির স্বলাত ও সওম আদায় করবে?
৪০৩
  সফর অবস্থায় কষ্ট হলে সওম রাখার বিধান কি?
৪০৪
  আধুনিক যুগের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ও আরাম দায়ক হওয়ার কারণে সফর অবস্থায় সওম রাখা মুসাফিরের জন্য কষ্টকর নয়। এ অবস্থায় সওম রাখার বিধান কি?
৪০৫
  সওম অবস্থায় মুসাফির যদি মক্কায় পৌঁছে। তবে ওমরা আদায় করতে শক্তি পাওয়ার জন্য সওম ভঙ্গ করা জায়েয হবে কি?
৪০৬
  সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী কি সওম ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ করলে কিভাবে কাদ্বা আদায় করবে? নাকি সওমর বিনিময়ে খাদ্য দান করবে?
৪০৭
  ক্ষুধা-পিপাসা ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে সওম পালন করলে সওমর বিশুদ্ধতায় কি কোন প্রভাব পড়বে?
৪০৮
  রমাদ্বনের প্রত্যেক দিনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কি নিয়ত করা আবশ্যক? নাকি পূর্ণ মাসের নিয়ত একবার করে নিলেই হবে?
৪০৯
  সওম ভঙ্গের জন্য অন্তরে দৃঢ় নিয়ত করলেই কি সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
৪১০
  সায়িম ভুলক্রমে পানাহার করলে তার সওমের বিধান কি? কেউ এটা দেখলে তার করণীয় কি?
৪১১
  সওম রেখে সুরমা ব্যবহার করার বিধান কি?
৪১২
  সওম অবস্থায় মেসওয়াক ও সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান কি?
৪১৩
  সওম ভঙ্গকারী বিষয় কি কি?
৪১৪
  সওম অবস্থায় শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে (spray) ব্যবহার করার বিধান কি? এ দ্বারা কি সওম ভঙ্গ হবে?
৪১৫
  বমি করলে কি সওম ভঙ্গ হবে?
৪১৬
  সায়িমের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
৪১৭
  ঋতুবতী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার সওমর বিধান কি?
৪১৮
  সওম অবস্থায় দাঁত উঠানোর বিধান কি?
৪১৯
  সওম রেখে রক্ত পরীক্ষা (Blood Test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি? এতে কি সওম নষ্ট হবে।
৪২০
  সায়িম হস্ত মৈথুন করলে কি সওম ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে হবে?
৪২১
  সায়িমের জন্য আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
৪২২
  নাকে ধোঁয়া টানা এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
৪২৩
  সায়িমের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
৪২৪
  সওম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি সওম বিশুদ্ধ হবে?
৪২৫
  সায়িমের ঠান্ডা ব্যবহার করার বিধান কি?
৪২৬
  সায়িম কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
৪২৭
  সায়িমের আতরের সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
৪২৮
  নাক থেকে রক্ত বের হলে কি সওম নষ্ট হবে?
৪২৯
  রমাদ্বনের কোন কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার প্রায় দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে নাকি এটা বিদআত?
৪৩০
  এয়ারপোর্টে থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখন কি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
৪৩১
  সায়িমের কফ অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
৪৩২
  খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
৪৩৩
  সওম রেখে হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি সওম নষ্ট হবে?
৪৩৪
  মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার বিধান কি? ইহা কি সওম নষ্ট করে?
৪৩৫
  সওমের আদব কি কি?
৪৩৬
  ইফতারের জন্য কোন দুআ কি প্রমাণিত আছে? সায়িম কি মুআয্যিনের জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
৪৩৭
  সওম কাদ্বা থাকলে শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখার বিধান কি?
৪৩৮
  জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি রমাদ্বনে সওম কাদ্বা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরু হওয়ার চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাদ্বা সওমগুলো আদায় করতে হবে?
৪৩৯
  রমাদ্বনের সওম বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রমাদ্বন এসে গেলে কি করবে?
৪৪০
  শাওয়ালের ছয়টি সওম পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি কি?
৪৪১
  শাওয়ালের ছয়টি সওম রাখার জন্য কি ইচ্ছামত দিন নির্ধারণ করা জায়েয? নাকি তার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট করা আছে? এ দিনগুলো সওম রাখলে কি উহা ফরদ্বের মত হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর আবশ্যিকভাবে সওম পালন করতে হবে?
৪৪২
  আশুরা সওমের বিধান কি?
৪৪৩
  শাবান মাসে সওম রাখার বিধান কি?
৪৪৪
  যার অভ্যাস আছে একদিন সওম রাখা ও একদিন ছাড়া। সে কি শুক্রবারেও সওম রাখতে পারে?
৪৪৫
  ছওমে বিছাল কাকে বলে? এটা কি শরীয়ত সম্মত?
৪৪৬
  বিশেষভাবে জুমআর দিবস সওম নিষেধ। এর কারণ কি? কাদ্বা সওমও কি এদিন রাখা নিষেধ?
৪৪৮
  কোন মানুষ যদি নফল সওম ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কি গুনাহগার হবে? যদি সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে, তবে কি কাফ্ফারা দিতে হবে?
৪৪৯
  তেকাফ এবং এতেকাফকারীর বিধান কি? 


Post a Comment

0 Comments