হাজ্জ বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল 449 to 503


কিতাবুল হজ্জ হাজ্জ বিষয়ক মাসলা- মাসায়েল
كتاب الحج
প্রশ্নঃ (৪৪৯) বেনামাযীর হজ্জের বিধান কি? যদি এ ব্যক্তি তওবা করে, তবে সমস্ত ইবাদত কি কাদ্বা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ স্বলাত পরিত্যাগ করা কুফরী। স্বলাত ছেড়ে দিলে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। একথার দলীল হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ্ও ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি। অতএব যে লোক স্বলাত পড়ে না তার জন্য মক্কা শরীফে প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا[
হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে।” (সূরা তাওবাঃ ২৮)
যে ব্যক্তি স্বলাত পড়ে না, তার হজ্জ বিশুদ্ধ হবেনা এবং কবূলও হবেনা। কেননা কাফেরের কোন ইবাদতই সঠিক নয়। আল্লাহবলেন,
]وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ[
আর তাদের দান খায়রাত গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্যে যে, তারা আল্লাহর সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, তারা শৈথিল্যের সাথে ছাড়া স্বলাত আদায় করে না। আর তারা দান করে না, কিন্তু অনিচ্ছার সাথে করে।” (সূরা তাওবাঃ ৫৪)
যে সমস্ত আ‘মাল তারা পূর্বে পরিত্যাগ করেছে তা কাদ্বা আদায় করা আবশ্যক নয়। কেননা আল্লাহ বলেন,
]قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ[
“(হে নবী ব!) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন, তারা যদি অনাচার থেকে বিরত থাকে (এবং আল্লাহর দ্বীনে ফিরে আসে) তবে পূর্বে যা হয়েছে তা আল্লাহক্ষমা করবেন।”(সূরা আনফালঃ ৩৮)
সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ অন্যায় করেছে সে যেন আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করে। নেক কাজ চালিয়ে যায়। বেশী বেশী তওবা ইসে-গফার ও অধিকহারে ভাল কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। আল্লাহবলেন,
]قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ[
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহসমস্ত গুণাহ্ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমারঃ ৫৩)
যারা তওবা করতে চায় আল্লাহতাদের জন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন। সুতরাং বান্দা যে পাপই করে না কেন্ত যদি শির্কও হয় এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহতাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহই সরল সঠিক পথে হেদায়াতদানকারী।
 হজ্জ ফরদ্ব হয়ে গেলে আদায় করতে বিলম্ব করা উচিত নয়
প্রশ্নঃ (৪৫০) ব্যাপকভাবে দেখা যায় অনেক মুসলিম বিশেষ করে অনেক যুবক ফরদ্ব হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে শীথিলতা প্রদর্শন করে। এবছর নয় ঐ বছর এভাবে বিলম্ব করে। কখনো কর্ম ব্যস্ততার ওযর পেশ করে। এদেরকে আপনার নছীহত কি?
কখনো দেখা যায় কোন কোন পিতা যুবক ছেলেদেরকে ফরদ্ব হজ্জ আদায় করতে বাধা দেয় এই যুক্তিতে যে, এখনো তাদের বয়স হয়নি, হজ্জের ক্লান্তি সহ্য করতে পারবে না। অথচ হজ্জের পূর্ণ শর্ত তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। পিতার এ কাজের বিধান কি? এধরণের পিতার আনুগত্য করার বিধান কি?
উত্তরঃ একথা সর্বজন বিদিত যে, হজ্জ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন এবং বিরাট একটি ভিত্তি। হজ্জের শর্ত পাওয়া গেলে হজ্জ আদায় না করলে মানুষের ইসলাম পূর্ণ হয় না। হজ্জ ফরদ্ব হওয়ার পর বিলম্ব করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহও তাঁর রাসূলের নির্দেশ তাৎক্ষণিক আদায় করতে হবে। মানুষ জানে না ভবিষ্যতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। হতে পারে অর্থ শেষ হয়ে যাবে বা অসুস্থ হয়ে যাবে বা মৃত্যু বরণও করতে পারে।
হজ্জ আদায় করার শর্ত পূর্ণ হলে এবং হজ্জের সফরে ধর্মীয় ও চারিত্রিক দিক থেকে নির্ভরযোগ্য সাথী থাকলে, সন্তানদেরকে হজ্জ আদায় করতে বাধা দেয়া পিতা-মাতার জন্য জায়েয নয়।
হজ্জ ওয়াজিব হলে, হজ্জ ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নির্দেশ মান্য করা চলবে না। কেননা আল্লাহর নাফরমানী করে সৃষ্টিকুলের আনুগত্য করা যাবে না। তবে বাবা-মা যদি তাদেরকে নিষেধের ব্যাপারে কোন শরঈ কারণ উপস্থাপন করে, তখন তাদের আনুগত্য করা আবশ্যক।
 প্রশ্নঃ (৪৫১) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কি হজ্জ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ মানুষের উপর যদি এমন ঋণ থাকে যা পরিশোধ করার জন্য তার সমস্ত সম্পদ দরকার, তবে তার উপর হজ্জ ফরদ্ব নয়। কেননা আল্লাহতো শুধুমাত্র সামর্থবান মানুষের উপর হজ্জ ফরদ্ব করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা এর হজ্জ পালন করবে।” (সূরা আল ইমরানঃ ৯৭)
সুতরাং ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি তো সামর্থবান নয়। অতএব প্রথমে সে ঋণ পরিশোধ করবে তারপর সম্ভব হলে হজ্জ আদায় করবে।
কিন্তু ঋণ যদি কম হয় এবং ঋণ পরিশোধ করে হজ্জে গিয়ে প্রত্যাবর্তন করার সমান খরচ বিদ্যমান থাকে, তবে হজ্জ করবে। হজ্জ চাই ফরদ্ব হোক বা নফল। কিন্তু ফরদ্ব হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে বিলম্ব করা উচিত নয়। আর নফল হজ্জ তো ইচ্ছাধীন। মন চাইলে করবে মন চাইলে করবে না, কোন গুনাহ হবে না।
 বদলী হজ্জ
প্রশ্নঃ (৪৫২) মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করার জন্য জনৈক লোককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; কিন্তু পরে জানা গেল এ লোক আরো কয়েকজনের হজ্জ আদায় করার দায়িত্ব নিয়েছে। এ সময় করণীয় কি? এ লোকের বিধান কি?
উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষের উচিত হচ্ছে, যে কোন কাজ করার পূর্বে বিচার বিশ্লেষণ ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া। ধর্মীয় দিক থেকে নির্ভরযোগ্য না হলে তাকে কোন কাজের দায়িত্ব দিবে না। লোকটি বিশ্বস্ত কিনা, যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা, তার নিকট সে ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান আছে কিনা প্রভৃতি যাচাই বাছাই করবে।
হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই আপনার পিতা বা মাতার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করার জন্য এমন লোক নির্বাচন করবেন, যিনি জ্ঞান ও ধর্মীয় দিক থেকে বিশস্ত ও নির্ভরযোগ্য। কেননা অনেক মানুষ হজ্জের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ। যথাযোগ্য নিয়মে হজ্জ আদায় করে না। যদিও তারা নিজেদের ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত। কিন্তু তারা ধারণা করে এটুকুই তাদের উপর ওয়াজিব। অথচ তারা অনেক ভুল করে। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এধরণের মানুষের কাছে হজ্জের দায়িত্ব প্রদান করা উচিত নয়।
আবার অনেক লোক এমন আছে, যারা হয়তো হজ্জের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে কিন্তু তারা আমানতদার নয়। ফলে হজ্জের কার্যাদি আদায় করার ক্ষেত্রে কথা ও কাজে কোন গুরুত্বারোপ করে না। শুধুমাত্র দায়সারা গোছের কাজ করে। এ ধরণের লোকের কাছে হজ্জ পালনের আমানত অর্পন করা উচিত নয়। সুতরাং হজ্জের দায়িত্ব প্রদান করার জন্য দ্বীন ও আমানতদারীতে নির্ভর করা যায় এরকম লোক অনুসন্ধান করা জরূরী।
প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি যে কয়জনের হজ্জের দায়িত্ব নিয়েছে- হতে পারে সে অন্য লোকদের দ্বারা তাদের হজ্জগুলো আদায় করে দিবে। কিন্তু এরূপ করাও কি তার জন্য জায়েয হবে? অর্থাৎ- হজ্জ বা ওমরা আদায় করে দেয়ার জন্য কয়েক জনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর সরাসরি উহা নিজে আদায় না করে অন্য লোককে দায়িত্ব দেয়া কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ এটাও জায়েয বা বৈধ নয়। এটা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ। কেননা এটা হজ্জ-ওমরা নিয়ে ব্যবসা করা। মানুষের হজ্জ-ওমরা আদায় করে দেয়ার নাম করে তাদের নিকট থেকে পয়সা নেয়; অতঃপর কম মূল্যে অন্য লোককে নিয়োগ করে। এতে সে অন্যায়ভাবে কিছু সম্পদ কামাই করল। কেননা হতে পারে হজ্জের দায়িত্ব প্রদানকারী এই তৃতীয় ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা উচিত। মানুষের অর্থ নিজের পকেটে ঢুকানোর আগে চিন্তা করা উচিত এটা কি ঠিক হল না বেঠিক?
 ইহরাম বাঁধার পর হজ্জ-ওমরা আদায় করতে অক্ষম হলে
প্রশ্নঃ (৪৫৩) অতিবৃদ্ধ জনৈক ব্যক্তি ওমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছার পর ওমরা আদায় করতে অপারগ হয়ে গেছে এখন সে কি করবে?
উত্তরঃ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে, অতঃপর ওমরা আদায় করবে। কিন্তু যদি ইহরাম বাঁধার সময় শর্ত করে থাকে, তবে ইহরাম খুলে ফেলবে, তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। ওমরা পূর্ণ করতে হবে না বিদায়ী তওয়াফও করতে হবে না। ইহরামের সময় শর্ত করার নিয়ম হচ্ছেঃ এই দু’আ পাঠ করবেঃ [আল্লাহুম্মা ইন হাবাসানী হাবেস ফা মাহেল্লী হায়সু হাবাসতানী] “হে আল্লাহ! কোন কারণে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই (হজ্জ-ওমরার কাজ সমাধা করতে না পরি), তবে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হব, সেটাই আমার হালাল হওয়ার স্থান।”
কিন্তু যদি উক্ত শর্ত না করে আর ওমরা আদায় কোন ক্রমেই সম্ভব না হয়, তবে সে ইহরাম খুলে ফেলে হালাল হয়ে যাবে এবং ফিদ্ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করে দিবে যদি সামর্থ থাকে। কেননা আল্লাহবলেন,
]وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ[
তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ-ওমরা পূর্ণ কর। যদি বাধাগ্রস্ত হও তবে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী কর। আর কুরবানীর পশু তার জায়গায় না পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা মাথা মুন্ডন করবে না।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) নবী () ৬ষ্ঠ হিজরী সনে ওমরা পালন করতে গেলে হুদায়বিয়া নামক এলাকায় মক্কার কাফেরদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে সেখানেই কুরবানী যবেহ করেন এবং হালাল হয়ে যান।
 প্রশ্নঃ (৪৫৪) বদলী হজ্জ করার পর যদি কিছু অর্থ থেকে গেলে কি করবে?
উত্তরঃ বদলী হজ্জ করার জন্য যদি অর্থ নিয়ে থাকে, আর হজ্জ সম্পাদন করার পর কিছু অর্থ তার কাছে রয়ে যায়, তবে উহা ফেরত দেয়া আবশ্যক নয়। তবে অর্থ দাতা প্রদান করার সময় যদি এরূপ বলে যে, ‘এই অর্থ থেকে যা লাগে তা দিয়ে হজ্জ করবেন।’ তবে হজ্জ শেষে কোন কিছু বাকী থাকলে তা ফেরত দেয়া আবশ্যক। সে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তা ফেরত নাও নিতে পারে, ইচ্ছা করলে ফেরত নিতে পারে। কিন্তু অর্থ দেয়ার সময় যদি এরূপ বলে, ‘এই অর্থ দ্বারা আপনি হজ্জ করবেন।’ তাহলে যা বাকী থাকবে তা ফেরত দেয়া আবশ্যক নয়। অবশ্য এভাবে প্রদান করার সময় প্রদানকারী যদি না জানে যে হজ্জের খরচ কত লাগতে পারে তাই তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেয়, তখন তার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদনকারীর একথা বলা ওয়াজিব যে, আপনার অর্থ দ্বারা আমি হজ্জ সম্পাদন করেছি ঠিকই; কিন্তু তাতে এই পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। বাকীটা আমার কাছে রয়ে গেছে। এখন সে যদি তাকে উহা গ্রহণ করার অনুমতি দেয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথা তা ফেরত দিতে হবে।
 কারো পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা করলে নিজের জন্য দু’আ করা যাবে কি?
প্রশ্নঃ (৪৫৫) পুত্র যদি পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা সম্পাদন করে, তবে নিজের জন্য দু’আ করতে পারবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সে হজ্জ বা ওমরা অবস্থায় নিজের জন্য তার পিতার জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য দু’আ করতে পারবে। কেননা কারো পক্ষ থেকে হজ্জ-ওমরা আদায় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার পক্ষ থেকে নিয়ত করে বাহ্যিক ফরদ্ব, ওয়াজিব ও সুন্নাত কর্ম সমূহ আদায় করা। কিন্তু দু’আর বিষয়টি হজ্জ বা ওমরার কোন ফরদ্ব বা ওয়াজিব বা শর্ত নয়। তাই যার জন্য হজ্জ বা ওমরা করছে তার জন্য, নিজের জন্য, সমস্ত মুসলিমদের জন্য দু’আ করতে পারবে।
 প্রশ্নঃ (৪৫৬) হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করার বিধান কি?
উত্তরঃ বদলী হজ্জ বা ওমরা করার দু’টি অবস্থাঃ
প্রথম অবস্থাঃ তার পক্ষ থেকে ফরদ্ব হজ্জ বা ওমরা আদায় করবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ তার পক্ষ থেকে নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করবে।
ফরদ্ব হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। তবে কোন বাধার কারণে যদি মক্কা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না হয়- যেমন, কঠিন অসুখ যা ভাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই অথবা অতিবৃদ্ধ হয়ে গেছে ইত্যাদি, তাহলে তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করাবে। কিন্তু অসুস্থতা যদি এমন হয় যে তা থেকে আরোগ্য পাওয়ার আশা আছে, তবে অপেক্ষা করবে এবং সুস্থ হলে নিজেই নিজের হজ্জ-ওমরা সম্পাদন করবে। কেননা কোন বাধা না থাকলে হজ্জ বা ওমরার ব্যাপারে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। আল্লাহবলেনঃ
]وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا [
মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা ইহার হজ্জ পালন করবে।” (সূরা আল ইমরানঃ ৯৭)
ইবাদতের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ উহা নিজে বাস্তবায়ন করবে; যাতে করে আল্লাহর জন্য তার দাসত্ব-গোলামী ও বিনয়ের পূর্ণতা লাভ করে। আর নিঃসন্দেহে অন্যকে দায়িত্ব দিলে ইবাদতের এই মহান উদ্দেশ্য সঠিকভাবে আদায় হবে না।
কিন্তু সে যদি নিজের ফরদ্ব হজ্জ ও ওমরা আদায় করে থাকে, অতঃপর আবার তার পক্ষ থেকে নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করে, তবে জায়েয হবে কি না? এক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন। কেউ বলেছেন, জায়েয। কেউ বলেছেন, নাজায়েয। আমার মতে যেটা সঠিক মনে হয়, তা হচ্ছে নাজায়েয। অর্থাৎ- নফল হজ্জ আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা জায়েয নয়। কেননা ইবাদতের মূলনীতি হচ্ছে, ব্যক্তি নিজে তা আদায় করবে। যেমন করে নিজের পক্ষ থেকে সওম আদায় করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। অবশ্য ফরদ্ব সওম কাদ্বা রেখে যদি কেউ মৃত্যু বরণ করে, তবে তার পক্ষ থেকে পরিবারের যে কেউ তা আদায় করে দিবে। অনুরূপ হচ্ছে হজ্জ। এটি এমন একটি ইবাদত যা আদায় করার জন্য শারিরীক পরিশ্রম আবশ্যক। এটা শুধু আর্থিক ইবাদত নয়। আর ইবাদত যদি শারিরীক হয়, তবে উহা অন্যকে দিয়ে আদায় করলে বিশুদ্ধ হবে না। কিন্তু হাদীছের দলীলের ভিত্তিতে যেটুকু অনুমতি পাওয়া যায় তার কথা ভিন্ন। আর বদলী নফল হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। ইমাম আহমাদ থেকে এ ব্যাপারে দু’ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। তার একটি বর্ণনা আমাদের কথার সমর্থক। অর্থাৎ নফল হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। চাই তার সামর্থ থাক বা না থাক।
আমাদের এই মতানুযায়ী সম্পদশালী লোককে নিজেই নিজের হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কেননা অনেক মানুষ এমন আছে, বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে অথচ কখনো তারা মক্কা সফর করে নি। এই যুক্তিতে যে, সে তো প্রতি বছর তার পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা আদায় করার জন্য কাউকে না কাউকে প্রেরণ করে থাকে। অথচ তাদের জানা নেই যে, এ দ্বারা ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য আদায় হয় না।
 প্রশ্নঃ (৪৫৭) মৃতের পক্ষ থেকে ওমরা আদায় করা কি জায়েয?
উত্তরঃ মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ বা ওমরা আদায় করা জায়েয। অনুরূপভাবে তওয়াফ এবং যাবতীয় নেক আ‘মাল তার পক্ষ থেকে আদায় করা জায়েয। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, যে কোন নৈকট্যপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে যদি তার ছওয়াব জীবিত বা মৃতের জন্য দান করে দেয়, তবে সে উপকৃত হবে। কিন্তু ছওয়াব দান করার চাইতে মৃতের জন্য দু’আ করা বেশী উত্তম। দলীল হচ্ছে রাসূল ()এর বাণীঃ তিনি বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তিনটি আ‘মাল ছাড়া তার সমস্ত আ‘মাল বন্ধ হয়ে যায়। ১) সাদকায়ে জারিয়া ২) উপকারী ইসলামী বিদ্যা ৩) সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করবে।” এই হাদীছে নবী () এরূপ বলেন নিঃ সৎ সন্তান, যে তার জন্য ইবাদত করবে বা কুরআন পড়বে বা স্বলাত পড়বে বা ওমরা করবে বা সওম রাখবে ইত্যাদি। অথচ হাদীছটিতে প্রথমে দু’টি আ‘মালের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। যদি মৃতের জন্য আ‘মাল করা উদ্দেশ্য হত, তবে নবী () অবশ্যই বলতেন, “এবং সৎ সন্তান, যে তার জন্য আ‘মাল করবে।”
কিন্তু মানুষ যদি কোন নেক আ‘মাল করে তার ছওয়াব কারো জন্য দান করে দেয়, তবে তা জায়েয।
 মাহরাম ছাড়া নারীর হজ্জ সম্পাদন করার বিধান
প্রশ্নঃ (৪৫৮) মাহরাম ছাড়া কোন নারী যদি হজ্জ সম্পাদন করে, তবে কি উহা বিশুদ্ধ হবে? বুদ্ধিমান বালক কি মাহরাম হতে পারে? মাহরাম হওয়ার জন্য কি কি শর্ত আবশ্যক?
উত্তরঃ তার হজ্জ বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া সফর করা হারাম এবং রাসূলুল্লাহ্()এর নাফরমানী। কেননা তিনি এরশাদ করেন, “নারী কোন মাহরাম ছাড়া যেন সফর না করে।”
বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি এমন বালক মাহরাম হতে পারে না। কেননা তার নিজেরই তো অভিভাবক ও তত্বাবধান দরকার। অতএব এধরণের মানুষ কি করে অন্যের অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক হতে পারে?
মাহরাম ব্যক্তির জন্য শর্ত হচ্ছে, সে মুসলিম হবে, পুরুষ হবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং বিবেক সম্পন্ন হবে। এগুলো শর্তের কোন একটি না থাকলে সে মাহরাম হতে পারবে না।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, আফসোসের সাথে লক্ষ্য করা যায়, অনেক নারী মাহরাম ছাড়া একাকী উড়োজাহাজে সফর করে থাকে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মাহরাম পুরুষ তাদেরকে এয়ারপোর্টে বিমানে তুলে দেয় এবং পরবর্তী এয়ারপোর্টে আরেক মাহরাম তাদেরকে রিসিভ করে থাকে। আর সে তো উড়োজাহাজের মধ্যে নিরাপদেই থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যুক্তিটি অসাড়ঃ কেননা তার মাহরাম তো এরোপ্লেনে তাকে উঠিয়ে দিতে পারে না। খুব বেশী তাকে ওয়েটিং হল বা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত ছেড়ে আসতে পারে। কখনো প্লেন ছাড়তে দেরী হতে পারে। কখনো কারণ বশতঃ গন্তব্য এয়ারপোর্টে প্লেন অবতরণ করা সম্ভব হয় না। তখন এ নারীর কি অবস্থা হবে? কখনো হয়তো গন্তব্য এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করল ঠিকই কিন্তু মাহরাম ব্যক্তিটি তাকে রিসিভ করতে পারল না। হয়তো সে অসুস্থ হয়ে গেল, কোন সড়ক দুর্ঘটনা হল ইত্যাদি যে কোন কারণ ঘটতে পারে।
উল্লেখিত কারণগুলো কোনটিই হল না। ঠিকঠাক মত প্লেন উড়ল, গন্তব্য এয়ারপোর্টে মাহরাম তাকে রিসিভ করল। কিন্তু এমনও তো হতে পারে- প্লেনের মধ্যে তার সিটের পাশে এমন লোক বসেছে, যে আল্লাহকে ভয় করে না, ফলে সে নারীকে বিরক্ত করতে পারে বা নারীই তার প্রতি আসক্ত হতে পারে। তাহলেই তো নিষিদ্ধ ফেতনার বীয বপন হয়ে গেল- যেমনটি কারো অজানা নয়।
অতএব নারীর উপর ওয়াজিব হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা এবং কোন মাহরাম ছাড়া কখনো সফরে বের না হওয়া। অভিভাবক পুরুষদের উপরও ওয়াজিব হজ্জে তাদের নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা, নারীদের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় না দেয়া, নিজেদের আত্মসম্ভ্রম রক্ষা করা। প্রত্যেকে তার পরিবার সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। কেননা এদেরকে আল্লাহতাদের কাছে আমানত রেখেছেন। আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ[
হে ঈমানদরগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা কখনো আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না। তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।” (সূরা তাহরীমঃ ৬)
 সহদোর বোন, তার স্বামী ও মায়ের সাথে ওমরায় যাওয়া
প্রশ্নঃ (৪৫৯) জনৈক নারীর কথা হচ্ছে, আমি রামাযানে ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। কিন্তু আমার সাথে থাকছে আমার সহদোর বোন, তার স্বামী ও আমার মা। এই ওমরায় যাওয়া কি আমার জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ এদের সাথে ওমরায় যাওয়া আপনার জন্য জায়েয হবেনা। কেননা বোনের স্বামী আপনার মাহরাম নয়। ইবনু আব্বাস h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি নবী () খুতবায় বলেনঃ
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِي حَاجَّةً قَالَ اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ
কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে নির্জন না হয়। মাহরাম ছাড়া কোন নারী যেন সফর না করে।” তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমার স্ত্রী হজ্জ আদায় করার জন্য বের হয়ে গেছে। আর আমি উমুক উমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি? নবী () বললেন, “তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ পালন কর।” নবী() তার কাছে কোন ব্যাখ্যা চাইলেন না তোমার স্ত্রীর সাথে কি অন্য কোন নারী আছে না নেই? সে কি যুবতী না বৃদ্ধা? রাস্তায় সে কি নিরাপদ না নিরাপদ নয়?
প্রশ্নকারী এই নারী মাহরাম না থাকার কারণে যদি ওমরায় না যায়, তবে তার কোন গুনাহ্হবে না। যদিও ইতোপূর্বে সে কখনো ওমরা না করে থাকে। কেননা হজ্জ-ওমরা ফরদ্ব হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নারীর মাহরাম থাকা।
 প্রশ্নঃ (৪৬০) হজ্জের মাস কি কি?
উত্তরঃ হজ্জের সময় শুরু হয় শাওয়াল মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে এবং শেষ হয় যিলহজ্জের দশ তারিখে তথা ঈদের দিনে বা জিলহজ্জের শেষ তারিখে। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা আল্লাহবলেন, الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ হজ্জের মাস সমূহ সুনির্দিষ্ট জানা।” এখানে বহুবচন أشهر শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তা হাকীকী অর্থে ব্যবহার হবে। অর্থাৎ এই তিনটি মাসে হজ্জের কাজ চলবে। এ কথার অর্থ এটা নয় যে, এ তিন মাসের যে কোন দিনে হজ্জের কাজ করতে হবে। [অর্থাৎ- শাওয়ালের প্রথমেই কেউ যদি হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং তওয়াফ সাঈ করে, তবে তা হজ্জের জন্যই হল। কিন্তু আরাফাত এবং তৎপরবর্তী কাজের জন্য তো সময় নির্ধারণ করাই আছে।] আর যিলহজ্জের শেষ নাগাদ হজ্জের সময় প্রলম্বিত একথার অর্থ হচ্ছে, হজ্জের তওয়াফ এবং সাঈ যিলহজ্জের শেষ পর্যন্ত বিলম্বিত করা জায়েয আছে। এর পর আর বিলম্বিত করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি কোন ওযর থাকে সে কথা ভিন্ন। যেমন হজ্জের তওয়াফ করার পূর্বে কোন নারীর নেফাস শুরু হয়ে গেল। নেফাস অবস্থা শেষ হতে হতে যিলহজ্জ মাস পার হয়ে গেল। তার এই ওযর গ্রহণযোগ্য নেফাস শেষ হলেই সে তওয়াফ ও সাঈ সম্পাদন করবে।
ওমরার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট নেই। বছরের যে কোন সময় উহা সম্পাদন করা যায়। কিন্তু রামাযানে ওমরা করলে হজ্জের সমান ছাওয়াব লাভ করা যায়। হজ্জের মাস সমূহেই নবী () যাবতীয় ওমরা আদায় করেন। হুদায়বিয়ার ওমরা যিল-কা’দ মাসে। কাদ্বা ওমরা আদায় করেছেন যিল-কা’দ মাসে, জে’রানার ওমরাও ছিল যিল-কা’দ মাসে। আর বিদায় হজ্জের সাথের ওমরাও ছিল যিল-কা’দ মাসে। এতে বুঝা যায় হজ্জের মাস সমূহে ওমরা করার আলাদা বৈশিষ্ট ও ফযীলত রয়েছে। কেননা নবী() ওমরা আদায় করার জন্য এ মাসগুলোকেই নির্বাচন করেছেন।
 প্রশ্নঃ (৪৬১) হজ্জের মাস সমূহ আসার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধার বিধান কি?
উত্তরঃ হজ্জের মাস সমূহ আসার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন।
কেউ বলেন, এটা বিশুদ্ধ হবে এবং হজ্জের ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে। তবে হজ্জের মাস আগমণ করার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বাঁধা মাকরূহ।
দ্বিতীয় মতঃ তার এই ইহরাম হজ্জের ইহরাম হিসেবে গণ্য হবে না। তবে তা ওমরা হয়ে যাবে। কেননা নবী () বলেছেন, دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ ওমরা হজ্জের মধ্যে শামিল হয়ে গেছে।” তাছাড়া নবী () ওমরাকে ছোট হজ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন আমর বিন হাযমের বিখ্যাত মুরসাল হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। যা লোকেরা সাধারণভাবে গ্রহণ করেছে।
 প্রশ্নঃ (৫৬২) হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ কি কি?
উত্তরঃ হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।
১) যুল হুলায়ফাঃ যাকে বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। ইহা মদীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ)। মক্কা থেকে এটি সবচেয়ে দূরে অবসি'ত। এটি মদীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী অন্যান্যদের মীক্বাত।
২) জুহ্ফাঃ শাম তথা সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমণের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহ্ফা। সেখান থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কিঃ মিঃ)। এটা এখন আর গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম বাঁধে।
৩) ইয়ালামলামঃ ইয়ামানের লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম। বর্তমানে এস্থানকে সা’দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কিঃ মিঃ।)
৪) কারণে মানাযেলঃ নজদ তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কিঃ মিঃ।)
৫) যাতু ইরক্বঃ ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ।)
প্রথম চারটি মীক্বাত রাসূল () কর্তৃক নির্ধারিত। শেষেরটিও আয়েশা hএর বর্ণনা অনুযায়ী নবী () কর্তৃক নির্ধারণকৃত মীক্বাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যাতু ইরক্বের ব্যাপারে ছহীহ্সূত্রে ওমর h থেকে বর্ণিত আছে। তিনি উহা কূফা ও বস্রার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল মু‘মেনীন! নবী () নজদবাসীদের জন্য কারণে মানাযেলকে (তায়েফ) মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন ওমর h বললেন, তোমাদের পথে ঐ মীক্বাতের বরাবর কোন স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
মোটকথা, যদি নবী () থেকে ছহীহ্সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোন প্রশ্ন নেই। যদি প্রমাণিত না হয়, তবে উহা ওমর বিন খাত্তাব h এর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সুপথপ্রাপ্ত এবং তাঁদের অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওমরের সমর্থনে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীছটি যদি ছহীহ্হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী ()এর সমর্থন। তাছাড়া ওমরের নির্দেশ যুক্তি সংগত। কেননা কোন মানুষ যদি মীক্বাত থেকে ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের বরাবর কোন পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীক্বাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
ওমর hএর এই হাদীছে বর্তমান যুগে আমাদের জন্য বিরাট ধরণের উপকার বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ যদি বর্তমান যুগে এরোপ্লেনযোগে হজ্জ বা ওমরা করতে আসতে চায়, তবে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যে মীকাতের উপর দিয়ে যাবে তার বরাবর হলেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। বিলম্ব করা বৈধ হবে না এবং জেদ্দায় গিয়ে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না- যেমনটি অনেক লোক করে থাকে। কেননা স্থল পথে হোক, বা আকাশ পথে হোক বা সমুদ্র পথে হোক কোন পার্থক্য নেই- মীকাতের বরাবর হলেই ইহরাম বাঁধতে হবে। এজন্য হজ্জ যাত্রী যে দেশেরই হোক সমুদ্র পথে মক্কা আসতে চাইলে ইয়ালামলাম বা রাবেগের বরাবর হলে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৪৬৩) বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রমকারী দু’প্রকারের লোক হতে পারেঃ
১)          হজ্জ বা ওমরা আদায় করার ইচ্ছা করেছে। তাহলে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে হজ্জ বা উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে আসা। যদি এরূপ না করে তাহলে একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করার কারণে বিদ্বানদের মতে ফিদ্ইয়া বা জরিমানা দিতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া।
২)          হজ্জ বা ওমরার উদ্দেশ্য ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা। এ অবস্থায় তার কোন অসুবিধা নেই। চাই মক্কায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করুক বা স্বল্প সময়। কেননা এ অবস্থায় যদি ইহরাম আবশ্যক করা হয় তবে প্রতিবার আগমণে হজ্জ বা ওমরা তার উপর আবশ্যক হয়ে যায়। অথচ নবী () থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, জীবনে একবারের বেশী হজ্জ বা ওমরা আবশ্যক নয়। এর বেশী হলে সবই হবে নফল। বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রমের ব্যাপারে বিদ্বানদের বিভিন্ন মতামতের মধ্যে এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ।
 প্রশ্নঃ (৪৬৪) ‘লাব্বাইক্’ বলাটাই কি ইহরামে প্রবেশ করার নিয়ত?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরার কাজে প্রবেশ করার জন্য অন্তরে নিয়ত (ইচ্ছা বা সংকল্প) করে পাঠ করবেঃ ‘লাব্বাইকা ওমরাতান’ আর হজ্জের জন্য বলবে, ‘লাব্বাইকা হজ্জান্’। কিন্তু এরূপ বলা জায়েয নয়ঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল উমরাতা’ অথবা ‘উরীদুল হাজ্জা’। বা নাওয়াইতু আন আ‘তামিরা উমরাতান্। বা নাওয়াইতু আন আহুজ্জা হাজ্জান্। কেননা নবী () থেকে এগুলো প্রমাণিত নেই।
 প্রশ্নঃ (৪৬৫) আকাশপথে আগমণকারী কিভাবে ইহরাম বাঁধবে?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরার উদ্দেশ্যে আকাশ পথে আগমণকারী যে স্থানের উপর দিয়ে যাবে সে এলাকার মীকাতের বরাবর হলে ইহরাম বাঁধবে। তাই গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রথমে বাড়িতেই প্রস্ততি নিবে। তারপর মীক্বাত পৌঁছার পূর্বে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। মীকাতের বরাবর পৌঁছলেই অন্তরে নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে ফেলবে। দেরী করবে না। কেননা এরোপ্লেন দ্রুত চলে। মিনিটেই অনেক পথ এগিয়ে যায়। অনেক মানুষ এক্ষেত্রে ভুল করে। পূর্ব প্রস্ততি থাকে না। “আমরা মীকাতের বরাবর পৌঁছেছি” প্লেনের ক্রুর এ ঘোষণা শোনার পর তাড়াহুড়া শুরু করে। পরনের কাপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরিধান করে। এটি মারাত্মক ভুল।
অবশ্য প্লেনের দায়িত্বশীল অফিসারের উচিত হচ্ছে, মীকাতের বরাবর পৌঁছার কমপক্ষে ১৫ মিনিট পূর্বে ঘোষণা দেয়া। যাতে করে লোকেরা সতর্ক হয় এবং ভালভাবে প্রস্ততি নিতে পারে। তবে হাজী সাহেবগণ যদি প্লেনে উঠার পূর্বে ইহরামের কাপড় পরিধান করে নেন, তাহলে এটা তাদের জন্য অতি উত্তম হয়। মীকাতের বরাবর হলে সংকেত বা ঘোষণা পাওয়ার সাথে সাথেই তারা ইহরামের দু’আ পড়ে ইহরাম বেঁধে ফেলবেন।
 প্রশ্নঃ (৪৬৬) ওমরার উদ্দেশ্যে বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার বিধান কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে মীকাত অতিক্রম করতে চায় সে যেন ইহরাম ছাড়া অতিক্রম না করে। কেননা নবী () বলেছেন, “মদীনাবসীগণ ইহরাম বাঁধবে যুল হুলায়ফা থেকে..।” অর্থাৎ তাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম না করা। যদি করেই ফেলে তবে ওয়াজিব হচ্ছে মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমণ করা। এতে তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। কিন্তু যদি ফিরে না আসে এবং মীকাত অতিক্রম করার পর ইহরাম বাঁধে তবে বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্ইয়া দিতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া।
উড়োজাহাজে কিভাবে স্বলাত আদায় করবে এবং ইহরাম বাঁধবে?
উত্তরঃ প্রথমতঃ উড়োজাহাজে স্বলাত পড়ার পদ্ধতিঃ
১)          নফল স্বলাতের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই স্বলাত আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা করবে। সিজদার জন্য রুকূর চাইতে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।
২)          সময় হলেই উড়োজহাজের উপর স্বলাত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু স্বলাতের নির্দিষ্ট সময় বা দু’স্বলাত একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে স্বলাত আদায় করতে হয় সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়, (যেমন্ত কিবলামুখী হওয়া, রুকূ’, সিজদা, কওমা ও বসা প্রভৃতি করা যদি সম্ভব না হয়) তবে সেখানে ফরদ্ব স্বলাত আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে স্বলাত আদায় করবে।
যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাসে-র পূর্বে বিমান উড্ডয়ন করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব স্বলাত আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করার পর স্বলাত পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব স্বলাতের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা স্বলাতের সাথে মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব স্বলাতকে দেরী করে এশার সময় একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা না থাকে এবং এশা স্বলাতেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তবে বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা স্বলাত একত্রিত আদায় করে নিবে।
৩)          বিমানের উপর ফরদ্ব স্বলাত পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী দন্ডায়মান হয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। স্বলাত শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী হয়েই থাকবে। কিন্তু ক্বিবলা চিনতে না পারলে বা নির্ভরযোগ্য কেউ তাকে কিবলার সন্ধান দিতে না পারলে নিজ অনুমান ও গবেষণা অনুযায়ী স্বলাত আদায় করলে কোন অসুবিধা হবে না।
৪)          উড়োজাহাজে মুসাফির স্বলাত কসর করবে। চার রাকাত বিশিষ্ট স্বলাত দু’রাকাত করে আদায় করবে।
দ্বিতীয়তঃ উড়োজাহাজে হজ্জ বা ওমরার ইহরাম বাঁধার পদ্ধতিঃ
১)          এয়ারপোর্টে আসার আগেই গোসল, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করবে। এবং এয়ারপোর্টে এসে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে।
২)          প্লেন মীকাতের নিকটবর্তী হলে যদি ইহরামের কাপড় পরিধান না করে থাকে তবে পরিধান করবে।
৩)          মীকাতের বরাবর হলেই অন্তরে নিয়ত করে হজ্জ বা ওমরার জন্য তালবিয়া পড়ে ইহরামে প্রবেশ করবে।
৪)          মীকাতের বরাবর হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বেই যদি সতর্কতা বশতঃ বা খেয়াল থাকবে না এই ভয়ে ইহরাম বেঁধে নেয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৪৬৭) কোন ব্যক্তি যদি নিজ দেশ থেকে জেদ্দা সফর করে অতঃপর ওমরা আদায় করার ইচ্ছা করে। সে কি জেদ্দা থেকেই ইহরাম বাঁধবে?
উত্তরঃ এ মাসআলাটির দু’টি অবস্থাঃ
প্রথমঃ লোকটি ওমরার নিয়ত না করে অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা কাজে জেদ্দা সফর করেছে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর ওমরা করার ইচ্ছা হয়েছে, তবে সে জেদ্দা থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আবদুল্লাহ্বিন আব্বাস hএর হাদীছে মীক্বাতের আলোচনায় বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি এই মীক্বাত সমূহের মধ্যে অবস্থান করে, সে যেখানে আছে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।”
দ্বিতীয়ঃ দৃঢ়ভাবে ওমরার নিয়ত করেই জেদ্দা সফর করেছে। তাহলে যে মীক্বাতের নিকট দিয়ে গমণ করবে তাকে অবশ্যই সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না। কেননা জেদ্দার অবস্থান মীক্বাতের সীমানার মধ্যে। নবী () থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি মীক্বাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ এগুলো স্থান সেখানকার অধিবাসীদের জন্য এবং যারা এর বাইরে থাকে সেখান দিয়ে যেতে চায় তাদের জন্য ইহরাম বাঁধার মীক্বাত- যারা হজ্জ ও ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করে।”
যদি জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধে এবং মক্কা প্রবেশ করে, তবে বিদ্বানদের মতে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ মক্কায় একটি কুরবানী করতে হবে এবং তার গোস্ত মক্কার ফক্বীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। তাহলেই তার ওমরা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
জেদ্দা যাওয়ার আগে যদি ওমরার নিয়ত করে থাকে এবং বিনা ইহরামে জেদ্দা প্রবেশ করে, তবে নিকটবর্তী কোন মীকাতে ফেরত গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে। এতে কোন ফিদ্ইয়া লাগবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৬৮) ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর গোসল করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইহরামে প্রবেশ করার পর গোসল করতে কোন বাধা নেই। কেননা ইহা নবী () থেকে প্রমাণিত রয়েছে। চাই একবার গোসল করুক বা দু’বার। কিন্তু ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে জানাবাতের (নাপাকীর) গোসল করা ওয়াজিব। আর ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা সুন্নাত।
 প্রশ্নঃ (৪৬৯) মৃত দাদার পক্ষ থেকে হজ্জ করার বিধান কি? অবশ্য তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায়কারী নিজের হজ্জ সম্পাদন করেছে।
উত্তরঃ যে মৃত দাদা নিজের হজ্জ করেনি তার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পাদন করা জায়েয। কেননা সুন্নাতে নবী () থেকে এ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে।
 প্রশ্নঃ (৪৭০) ইহরামের জন্য বিশেষ কোন স্বলাত আছে কি?
উত্তরঃ ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্বলাত নেই। কিন্তু কোন লোক যদি এমন সময় মীক্বাতে পৌঁছে যখন ফরদ্ব স্বলাতের সময় উপস্থিত হয়েছে, তখন তার জন্য উত্তম হচ্ছে ফরদ্ব স্বলাত সম্পাদন করার পর ইহরাম বাঁধা।
ফরদ্ব স্বলাতের সময় নয় কিন্তু চাশতের স্বলাতের (স্বলাতে যুহা) সময়ে মিক্বাতে পৌঁছলো, তাহলে প্রথমে পরিপূর্ণরূপে গোসল করবে, সুগন্ধি মাখবে, ইহরামের কাপড় পরিধান করে চাশতের নিয়তে স্বলাত আদায় করবে তারপর ইহরামের নিয়ত করবে। চাশত স্বলাতের সময় না হলে তাহিয়্যাতুল ওযুর নিয়ত করে দু’রাকাত স্বলাত পড়ে ইহরামে প্রবেশ করা উত্তম। কিন্তু ইহরামের নিয়তে স্বলাত আদায় করার কোন দলীল নবী () থেকে প্রমাণিত নেই।
 প্রশ্নঃ (৪৭১) কোন ব্যক্তি যদি হজ্জের মাসে ওমরা আদায় করে মদীনা সফর করে, অতঃপর যুলহুলায়ফা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধে, তবে সে কি তামাত্তুকারীরূপে গণ্য হবে?
উত্তরঃ যখন কিনা এ ব্যক্তি হজ্জের মাসে ওমরা সম্পাদন করে এবছরেই হজ্জ আদায় করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেছে, তখন সে তামাত্তুকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ওমরা ও হজ্জের মধ্যবর্তী কোন সফর তামাত্তুকে বাতিল করবে না। তবে যদি ওমরা আদায় করার পর নিজ দেশে ফেরত যায় এবং সেখান থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে সফর করে, তবে তার তামাত্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা প্রত্যেকটি কাজ সে আলাদা আলাদা সফরে সম্পাদন করেছে। অতএব ওমরা সম্পাদন করার পর যে লোক মদীনা সফর করে যুলহুলায়ফা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধবে, সে তামাত্তু হজ্জকারী হিসেবে কুরবানী দিবে। কেননা আল্লাহবলেনঃ
] فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [
যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে ওমরা করার নিয়ত করবে, সে সাধ্যানুযায়ী কুরবানী দিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬)
 প্রশ্নঃ (৪৭২) কোন ব্যক্তি যদি শাওয়াল মাসে ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা পূর্ণ করে। কিন্তু সে সময় সে হজ্জের নিয়ত করেনি। কিন্তু হজ্জের সময় তার হজ্জ করার সুযোগ হল। সে কি তামাত্তুকারী গণ্য হবে?
উত্তরঃ না, সে তামাত্তুকারী গণ্য হবে না। অতএব তাকে কুরবানীও দিতে হবে না।
 তালবিয়ার সুন্নাতী নিয়ম
প্রশ্নঃ (৪৭৩) নবী () থেকে প্রমাণিত তালবিয়াটি কি? ওমরা এবং হজ্জের ক্ষেত্রে কখন তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃ নবী () থেকে প্রমাণিত তালবিয়াটি হচ্ছে নিম্নরূপঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক্, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক্, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারীকা লাক।” ইমাম আহমাদ একটু বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন, “লাব্বাইকা ইলাহাল হক্ব।” এর সনদ হাসান।
ওমরার ক্ষেত্রে তওয়াফ শুরুর পূর্বে তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করবে। আর হজ্জের ক্ষেত্রে দশ তারিখে ঈদের দিন জামরা আকাবায় পাথর মারার পূর্বে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে। তিরমিযীতে ইবনু আব্বাস h থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “নবী () ওমরাতে হাজরে আস্ওয়াদ স্পর্শ করার সময় তালবিয়া বলা বন্ধ করতেন।” ইমাম তিরমিযী হাদীছটিকে ছহীহ্বলেন। কিন্তু এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুর্রহমান বিন আবু লায়লা নামক জনৈক বর্ণনাকারী আছে। অধিকাংশ হাদীছ বিশারদ তাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু আব্বাস h আরো বলেন, নবী () আরাফা থেকে মুযদালিফা আসার পথে তাঁর আরোহীর পিছনে উসামা hকে বসিয়েছিলেন। মুযদালিফা থেকে মিনা যাওয়ার পথে ফায্ল বিন আব্বাস hকে পিছনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে (উসামা ও ফায্ল) বলেছেন, তিনি ব জামরা আকাবায় কঙ্কর মারার পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থেকেছেন।
ইমাম মালেকের মতে হারাম শরীফে পৌঁছার সাথে সাথে তালবিয়া বলা বন্ধ করবে। কেউ কেউ বলেছেন, বায়তুল্লাহ্র কাছে পৌঁছলে বা কাবা ঘর দেখলেই তালবিয়া বলা বন্ধ করবে।
লাব্বাইক বলার অর্থ হচ্ছেঃ আপনার আনুগত্যের কাজ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনার আহবানে সাড়া দিচ্ছি।
 প্রশ্নঃ (৪৭৪) ইহরাম বেঁধে কি মাথা আঁচড়ানো জায়েয আছে?
উত্তরঃ ইহরাম অবস্থায় মাথা আঁচড়ানো উচিত নয়। কেননা ইহরামকারীর উচিত হচ্ছে এলোকেশ ও ধুলোমলিন থাকা। তবে গোসল করতে কোন অসুবিধা নেই। তাছাড়া মাথা আঁচড়ালে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ইহরামকারী মাথা বা শরীর প্রভৃতি চুলকালে যদি কোন চুল পড়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে ইচ্ছাকৃত চুল উঠায়নি। জেনে রাখা উচিত যে, ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ ভুলক্রমে করে ফেলে, তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আল্লাহবলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا[
তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু সে ব্যাপারে তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম করুণাময়।” (সূরা আহযাবঃ ৫) আল্লাহআরো বলেন,
]رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا[
হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমাদের ভুল হয় বা ত্রুটি হয় তজ্জন্যে আমাদেরকে ধৃত করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬)
ইহরামের অন্যতম নিষিদ্ধ কাজ শিকার করা সম্পর্কে আল্লাহবলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنْ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ[
হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় বন্য শিকারকে হত্যা করো না; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক তাকে হত্যা করবে, তার উপর তখন জরিমানা ওয়াজিব হবে, যা মূল্যের দিক দিয়ে সেই জানোয়ারের সমতুল্য হয়, যাকে সে হত্যা করেছে। তার অনুমানিক মূল্যের মীমাংসা তোমাদের মধ্যে হতে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোক করে দেবে।” (সূরা মায়িদাঃ ৯৫) এই আয়াতে ‘ইচ্ছাপূর্বক’ শব্দ উল্লেখ করাতে বুঝা যায়- যদি অনিচ্ছাকৃত হত্যা করে ফেলে, তবে তাকে কোন জরিমানা দিতে হবে না। এ বিধানই ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা ইসলাম ধর্ম ক্ষমা ও সহজতার বৈশিষ্টে অনন্য।
অতএব কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলবশতঃ করে ফেলে, তবে তার বিরুদ্ধে কোন বিধান প্রজোয্য হবে না, কোন ফিদ্ইয়া আবশ্যক হবে না- এমনকি স্ত্রী সহবাস করে ফেললেও হজ্জ বিনষ্ট হবে না। উল্লেখিত শরীয়তের দলীলের দাবী অনুযায়ী এটাই বিশুদ্ধ কথা।
 প্রশ্নঃ (৪৭৫) অজ্ঞতা বশতঃ মাথা থেকে সামান্য চুল কেটে হালাল হয়ে গেলে তার উপর আবশ্যক কি?
উত্তরঃ অজ্ঞতা বশতঃ যে হাজী সাহেব মাথা থেকে সামান্য চুল কেটে হালাল হয়ে গেছে, তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। কেননা সে অজ্ঞ। তবে জানার পর তাকে পূর্ণ মাথা থেকে চুল কাটতে হবে।
এ উপলক্ষে আমি মুসলিম ভাইদেরকে নসীহত করতে চাই, কোন ইবাদত করতে চাইলে, তার সীমারেখা ও নিয়ম-নীতি না জেনে তাতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। যাতে করে অজ্ঞতা বশতঃ এমন কিছু না করে ফেলে যাতে ইবাদতটিই নষ্ট হয়ে যায়। কেননা আল্লাহ তা’আলা নবী ()কে লক্ষ্য করে বলেন,
]قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنْ اتَّبَعَنِي وسبحان الله وما أنا من المشركين[
আপনি বলে দিন, এটাই আমার পথ আল্লাহর দিকে বুঝে-শুনে দা’ওয়াত দেই- আমি এবং আমার অনুসারীগণ। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) আল্লাহ আরো বলেন,
]قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ[
আপনি বলুন, যারা জানে এবং জানে না তারা কি এক বরাবর? বুদ্ধিমানরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা যুমারঃ ৯)
অতএব একজন লোক বুঝে-সুঝে আল্লাহর সীমারেখা জেন্তেশুনে তাঁর ইবাদত করবে এটা খুবই উত্তম। অজ্ঞতার সাথে বা মানুষের অন্ধানুসরণ করে আল্লাহর ইবাদত করা উচিত নয়। কেননা না জেনে ইবাদত করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন বেশী তেমনি যাদের অনুসরণ করবে তাদের মধ্যে জ্ঞান থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে।
 প্রশ্নঃ (৪৭৬) প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করে মক্কায় পৌঁছে ইহরাম বাঁধলে হজ্জ বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ তার হজ্জ তো বিশুদ্ধ হয়ে যাবে কিন্তু মুসলিম শাসককে ফাঁকি দেয়ার জন্য সে হারাম কাজ করেছে। এটা হারাম হয়েছে দু’কারণেঃ
প্রথমতঃ আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করেছে।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহআমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুসলিম শাসকের আনুগত্য করার। অবশ্য আল্লাহর নাফরমানীর কাজে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। অতএব তার উপর আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহর কাছে তওবা করা। আর ফিদ্ইয়া প্রদান করা অর্থাৎ- একটি কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে। কেননা সে মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধেনি। বিদ্বানদের মতে হজ্জ বা ওমরার কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে তার জন্য ফিদ্ইয়া প্রদান করা আবশ্যক।
 প্রশ্নঃ (৪৭৭) তামাত্তুকারী যদি নিজ দেশে ফেরত গিয়ে আবার হজ্জের জন্য সফর করে, তবে কি ইফরাদকারী হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তামাত্তুকারী ওমরা আদায় করার পর নিজ দেশে ফেরত গিয়ে আবার সেই বছর হজ্জের জন্য মক্কা সফর করলে সে ইফরাদকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা নিজ পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে হজ্জ ও ওমরার মাঝে বিচ্ছিন্নতা করেছে। আবার সফর শুরু করার অর্থ হচ্ছে সে হজ্জের জন্য নতুনভাবে সফর করছে। তখন তার এই হজ্জ ইফরাদ হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় তামাত্তুকারীর মত কুরবানী করা তার জন্য ওয়াজিব হবে না। কিন্তু নিজ দেশে ফিরে যাওয়াটা যদি তার কুরবানী রহিত করার বাহানা হয়, তবে কুরবানী রহিত হবে না। কেননা কোন ওয়াজিব রহিত করার বাহানা করলে উহা রহিত হবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৭৮) ইহরাম অবস্থায় ছাতা ব্যবহার করার বিধান কি? অনুরূপভাবে সিলাইকৃত বেল্ট ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তরঃ সূর্যের তাপ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নেই। কোন ক্ষতি নেই। একাজ হাদীছে পুরুষের মাথা ঢাকার নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটা মাথা ঢাকা নয়; বরং তা রৌদ্র প্রভৃতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছায়া গ্রহণ করা। ছহীহ্মুসলিমে প্রমাণিত হয়েছে, বিদায় হজ্জে নবী ()এর সাথে উসামা বিন যায়েদ ও বেলাল h ছিলেন। তাদের একজন নবী ()এর উটনির লাগাম ধরে ছিলেন। অপরজন একটি কাপড় উপরে উঠিয়ে তাঁকে ছাঁয়া করছিলেন, এভাবে চলতে চলতে তিনি জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এ হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যায় যে, নবী () ইহরাম অবস্থায় হালাল হওয়ার পূর্বে কাপড় দিয়ে ছাঁয়া গ্রহণ করেছেন।
  লুঙ্গি বাঁধার জন্য যে কোন ধরণের বেল্ট ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নেই। আর ‘সেলাইকৃত বেল্ট’ প্রশ্নকারীর এই কথাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভুল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তাদের ধারণা, যে কোন প্রকারের সিলাই থাকলেই তা আর পরিধান করা যাবে না। কিন্তু কথাটি ভুল। ‘সিলাইকৃত কাপড় পরিধান করা যাবে না’ একথা দ্বারা বিদ্বানগণ বুঝিয়েছেন এমন সব কাপড় পরিধান করা যা শরীরের মাপে বানানো হয়েছে। সাধারণভাবে পোষাক হিসেবে যা পরিধান করা হয়। যেমন, জামা, পায়জামা, গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া প্রভৃতি। একারণে কোন মানুষ যদি এমন চাদর বা লুঙ্গি পরিধান করে যা জোড়া-তালি দেয়া, তবে কোন অসুবিধা নেই- এমনকি যদি তার উভয় প্রান্ত সেলাই করা থাকে তাতেও কোন ক্ষতি হবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৭৯) শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিভাবে ইহরাম করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি ইহরামের কাপড় পরিধান করতে সক্ষম না হয়, তবে যে ধরণের কাপড় পরতে সক্ষম হবে তাই পরিধান করবে। তখন বিদ্বানদের মতেঃ
ক) তাকে ফিদ্ইয়া হিসেবে একটি কুরবানী করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
খ) অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করতে হবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ তথা সোয়া কেজি পরিমাণ খাদ্য দিবে।
গ)  অথবা তিনদিন সওম পালন করবে।
রোগের কারণে মাথা মুন্ডন করতে বাধ্য হলে যে বিধান প্রজোয্য হয়, তার উপর কিয়াস করে বিদ্বানগণ উক্ত সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহবলেন,
 ]فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ [
কোন লোক যদি পীড়িত হয় বা তার মাথা যন্ত্রনাগ্রস্ত হয়, তবে সে সওম কিংবা সাদকা অথবা কুরবানী দ্বারা তার বিনিময় (ফিদ্ইয়া) আদায় করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬) আর সওম ও সাদকার বিষয়টি পূর্বে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবেই নবী () ব্যাখ্যা করেছেন।
 প্রশ্নঃ (৪৮০) ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম এ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে কেউ যদি স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার হজ্জের বিধান কি?
উত্তরঃ একথা সুবিদিত যে, স্ত্রী সহবাস ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে অন্যতম; বরং তা ইহরামের সর্বাধিক কঠিন ও বড় নিষেধাজ্ঞা। আল্লাহবলেন,
]الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلا رَفَثَ وَلا فُسُوقَ وَلا جِدَالَ فِي الْحَجِّ[
হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ করার ইচ্ছা করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া জায়েয নয়। জায়েয নয় কোন অশোভন কাজ করা, না কোন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৭)
الرفث এর অর্থ হচ্ছে, সহবাস ও তার পূর্বের কাজ সমূহ। অতএব ইহরামের সর্বাধিক কঠিন নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। হজ্জের ইহরামে থেকে কোন লোক যদি স্ত্রী সহবাস করে, তবে হয় তা প্রথম হালালের পূর্বে হবে অথবা প্রথম হালালের পর হবে। যদি প্রথম হালালের পূর্বে সহবাস হয়, তবে তার উপর নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ
প্রথমতঃ তার ঐ হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। চাই উহা ফরদ্ব হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক।
দ্বিতীয়তঃ সে গুনাহগার হবে।
তৃতীয়তঃ হজ্জের অবশিষ্ট কাজ তাকে পূর্ণ করতে হবে। অর্থাৎ- হজ্জ নষ্ট হওয়া সত্বেও হজ্জের অবশিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করতে হবে।
চতুর্থতঃ পরবর্তী বছর অবশ্যই তাকে উক্ত হজ্জের কাদ্বা আদায় করতে হবে। চাই তা ফরদ্ব হজ্জ হোক বা নফল হজ্জ হোক। হজ্জ ফরদ্ব হলে তো কাদ্বা আদায় করার বিষয়টি সুস্পষ্ট। কেননা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে সে হজ্জের ফরদ্বিয়াতের যিম্মা মুক্ত হতে পারে নি।
কিন্তু নফল হজ্জ হলেও তাকে কাদ্বা আদায় করতে হবে। কেননা হজ্জ আরম্ভ করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। আল্লাহবলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরাকে পূর্ণ কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) তাছাড়া হজ্জের কাজ শুরু করলে তা ফরদ্ব হয়ে যায়। যেমনটি পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন। “হজ্জের মাস সমূহ নির্দিষ্ট সুবিদিত। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জ ফরদ্ব করবে...।” এই জন্য আমরা বলব, হজ্জ নফল হোক বা ফরদ্ব হোক, যে কোন কারণে তা বিনষ্ট করে ফেললে তা কাদ্বা আদায় করতে হবে।
পঞ্চমতঃ কাফ্ফারা স্বরূপ তাকে জরিমানা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে একটি উট যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দেয়া। উটের পরিবর্তে যদি সাতটি ছাগল যবেহ করে তাও জায়েয আছে।
এই বিধান হচ্ছে প্রথম হালালের পূর্বে হলে। (অর্থাৎ- ১০ তারিখে বড় জামরায় কংকর মেরে মাথা মুন্ডন করার পূর্বে) কিন্তু প্রথম হালালের পর সহবাস করলে তার উপর নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আবশ্যক হবেঃ
প্রথমতঃ সে গুনাহগার হবে।
দ্বিতীয়তঃ ইহরাম বিনষ্ট হয়ে যাবে।
তৃতীয়তঃ কাফ্ফারা হিসেবে নিম্ন লিখিত তিনটি বিষয়ের কোন একটি করবেঃ
ক) একটি ছাগল যবেহ করে হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে। অথবা
খ) ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ পরিমাণ খাদ্য দিবে। অথবা
গ) তিন দিন সওম রাখবে।
এ তিনটির যে কোন একটি জরিমানা স্বরূপ আদায় করবে।
চতুর্থতঃ নতুন করে ইহরামে প্রবেশ করবে। মক্কার হারাম সীমানার বাইরে নিকটতম কোন স্থানে গমণ করে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে আসবে এরপর তওয়াফে এফাযা বা হজ্জের তওয়াফ সম্পন্ন করবে। এভাবেই ফিকাহবিদগণ বলেছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ প্রথম হালাল হওয়ার অর্থ কি?
জবাবঃ হাজী সাহেব যখন ঈদের দিন (যিল্হজ্জের দশ তারিখে) বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করে তখন সে প্রথম হালাল হয়ে যায়। তখন স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যায়। আয়েশা h বলেন, ‘নবী ()এর ইহরাম বাঁধার পূর্বে, এবং হালাল হওয়ার পর বায়তুল্লাহর তওয়াফের পূর্বে আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।’ এই হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, হালাল হওয়ার পরেই আছে বায়তুল্লাহর তওয়াফ। যেমনটি পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ঈদের দিন বড় জামরায় কঙ্কর মারার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করার মাধ্যমে প্রথম হালাল হবে। এই হালালের পূর্বে সহবাস হলে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় আবশ্যক হবে। আর এই হালালের পর সহবাস হলে, উল্লেখিত চারটি বিষয় আবশ্যক হবে।
কোন লোক যদি মূর্খতা বশতঃ এই কাজ করে অর্থাৎ- ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম একথা তার জানা নেই, তবে তার কোন ক্ষতি হবে না। কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না। চাই প্রথম হালালের পূর্বে হোক বা পরে হোক। কেননা আল্লাহবলেন, رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি অথবা ভুলে যাই তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহআরো বলেনঃ
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫)
যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা হারাম এ লোক যদি একথা জানে কিন্তু এটা জানে না যে, সহবাস করলে এত কিছু আবশ্যক হবে বা এই জরিমানা দিতে হবে, জানলে হয়তো সে একাজে লিপ্ত হতো না। তবে এর বিধান কি? তার এই অজ্ঞতার ওযর কি গ্রহণযোগ্য হবে?
জবাবঃ তার এই ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ওযর হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে সম্পর্ণরূপে অজ্ঞ থাকা। বিষয়টি যে হারাম সে ব্যাপারে তার কোনই জ্ঞান না থাকা। কিন্তু বিষয়টি হালাল না হারাম এই বিধান জানার পর, করলে কি লাভ বা না করলে কি ক্ষতি তা জানা আবশ্যক নয়। এই নাজানা ওযর হিসেবে গণ্য হবে না।
যেমন, জনৈক বিবাহিত ব্যক্তি যদি জ্ঞান রাখে যে, ব্যভিচার হারাম। সে বিবেকবান ও প্রাপ্তবয়স্ক। সে যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে। সে যদি বলে যে, ব্যভিচার করলে যে রজমের শাস্তি আছে আমি তা জানতাম না। জানলে এ অন্যায় আমি করতাম না, তার এই কথা গ্রহণ করা হবে না। তাকে রজম করতেই হবে।
এই কারণে জনৈক ব্যক্তি রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করে নবী ()এর নিকট এসে তার করণীয় কি জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে কাফ্ফারা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন। অথচ সহবাস করার সময় সে কাফ্ফারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। এথেকে বুঝা যায়, কোন মানুষ যদি অন্যায়ে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ সীমা লঙ্ঘন করে, তখন উক্ত অপরাধের শাস্তি তাকে পেতে হবে। যদিও এর শাস্তি সম্পর্কে সে অজ্ঞ থাকে।
 প্রশ্নঃ (৪৮১) ইহরাম অবস্থায় নারী কিভাবে পর্দা করবে? পর্দা মুখ স্পর্শ করতে পারবে না এরকম কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ ইহরাম অবস্থায় নারী যদি মাহরাম নয় এমন কোন পুরুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে বা তার নিকট কোন পুরুষ অতিক্রম করে, তবে অবশ্যই স্বীয় মুখমন্ডল ঢেকে নিবে। যেমনটি মহিলা ছাহাবীগণ h করতেন। একারণে তাকে কোন ফিদ্ইয়া দিতে হবে না। কেননা পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডল ঢাকা আল্লাহর নির্দেশ। আর নির্দেশ কখনো নিষেধ হতে পারে না।
পর্দা মুখমন্ডল স্পর্শ করতে পারবে না এরকম কোন শর্ত নেই। এতে কোন অসুবিধা নেই। পরপুরুষের সামনে এলেই তাকে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে। কিন্তু যদি খিমা বা তাঁবুতে অবস্থান করে এবং সেখানে কোন পরপুরুষ না থাকে, তবে মুখমন্ডল খোলা রাখবে। কেননা ইহরাম অবস্থায় নারীর জন্য শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে মুখ খোলা রাখা।
 প্রশ্নঃ (৪৮২) নারী বিদায়ী তওয়াফ করার পূর্বে ঋতুবতী হয়ে পড়লে করণীয় কি?
উত্তরঃ যদি সে তওয়াফে এফাযাসহ হজ্জের যাবতীয় কাজ পূর্ণ করে থাকে এবং শুধুমাত্র বিদায়ী তওয়াফ বাকী থাকে, তারপর ঋতুবতী হয় তবে বিদায়ী তওয়াফ রহিত হয়ে যাবে। ইবনু আব্বাস h থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
]أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلَّا أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْحَائِضِ[
 লোকদের আদেশ দেয়া হয়েছে, কাবা ঘরের তওয়াফ যেন তাদের সর্বশেষ কাজ হয়। তবে বিষয়টি ঋতুবতীদের জন্য হালকা করে দেয়া হয়েছে।’ যখন নবী ()কে বলা হল যে, উম্মুল মু‘মেনীন ছাফিয়া বিনতে হুওয়াই h ঋতুবতী হয়ে গেছেন। অবশ্য তিনি তওয়াফে ইফাযা বা হজ্জের তওয়াফ করে নিয়েছেন। তখন নবী () বললেন, “তাহলে তোমরা বের হয়ে যাও।” তিনি তার জন্য বিদায়ী তওয়াফকে রহিত করে দিলেন।
কিন্তু তওয়াফে ইফাযা বা হজ্জের তওয়াফ ঋতুবতীর জন্য রহিত হবে না। ঋতুবতী হয় মক্কায় থেকে অপেক্ষা করবে এবং পবিত্র হলে তওয়াফে এফাযা করবে। অথবা সে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে কিন্তু ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে এবং পবিত্র হলে মক্কায় ফিরে এসে শুধুমাত্র হজ্জের তওয়াফ করবে। যদি নিজ দেশে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসে, তবে সুন্দর হয়- প্রথমে ওমরা করে নিবে (তওয়াফ করবে, সাঈ করবে এবং চুল খাট করবে) তারপর হজ্জের তওয়াফ করবে।
উল্লেখিত পন্থার কোনটিই যদি সম্ভব না হয়, তবে লজ্জাস্থানে প্যাড বা এজাতীয় কোন কিছু দিয়ে বেঁধে দিবে যাতে করে স্রাবের রক্ত মসজিদে না পড়ে, তারপর হজ্জের তওয়াফ করে নিবে। কেননা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এটা একান্ত জরূরী অবস্থা।
 ঋতুবতী নারী পবিত্রতায় সন্দেহ হলে দ্বিতীয়বার ওমরা করে নিবে।
প্রশ্নঃ (৪৮৩) জনৈক নারী স্বামীর সাথে ঋতু অবস্থাতেই ইহরাম বাঁধে। কিন্তু পবিত্র হওয়ার পর কোন মাহরাম ছাড়াই সে ওমরার কাজ সমাধা করে। কাজ শেষ হলে আবার রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়। এর বিধান কি?
উত্তরঃ প্রশ্নের ধরণে বুঝা যায় এ নারী মাহরামের সাথে মক্কায় আগমণ করেছে। কিন্তু ঋতু অবস্থাতেই সে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধে। ঋতু অবস্থায় তার এই ইহরাম বিশুদ্ধ। কেননা নবী () বিদায় হজ্জে যুলহুলায়ফার মীকাতে আগমণ করলে আসমা বিনতে ঊমাইস h প্রশ্ন করেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ঋতুবতী হয়ে গেছি। তিনি বললেন, اغْتَسِلِي وَاسْتَثْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي গোসল করে তোমার লজ্জাস্থানে কাপড় বা নেকড়া বেঁধে দাও এবং ইহরাম বাঁধ।”
মক্কায় আসার পর পবিত্র হয়ে মাহরাম ছাড়া যদি ওমরার কাজ সম্পাদন করে থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে শহরের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ওমরা সম্পাদন করার পর সে যে আবার রক্ত দেখেছে তাতে তার পবিত্রতার ব্যাপারে একটি প্রশ্ন দাঁড় করায়। আমরা বলব, যদি সে নিশ্চিতভাবে পবিত্রতা দেখে থাকে তবে তার ওমরা বিশুদ্ধ। কিন্তু এই পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সন্দেহের মধ্যে থাকলে নতুন করে ওমরা করে নিবে। অবশ্য এর জন্য নতুন করে ইহরাম বাঁধার জন্য মীকাত যেতে হবে না। শুধুমাত্র তওয়াফ, সাঈ ও চুল খাট করার কাজগুলো নতুন করে সম্পাদন করবে।
 তাওয়াফে এফাযার পূর্বে নারী ঋতুবতী হয়ে পড়লে কি করবে?
প্রশ্নঃ (৪৮৪) জনৈক নারী তওয়াফে এফাযা করেনি। ইতোমধ্যে সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। তার ঠিকানা সঊদী আরবের বাইরে। হজ্জ কাফেলাও চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, তাই দেরী করা সম্ভব হবে না। এবং পরবর্তীতে মক্কা ফিরে আসাটাও তার জন্য দুরহ ব্যাপার। এখন সে কি করবে?
উত্তরঃ বিষয়টি যদি এরূপই হয় যেমন প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজ্জের তওয়াফ না করেই নারী ঋতুবতী হয়ে গেছে। পবিত্র হয়ে তওয়াফ করার জন্য মক্কায় থেকে যাওয়াটাও তার জন্য দুঃসাধ্য অথবা চলে গেলে আবার মক্কা ফেরত আসাটাও অসম্ভব, তবে এ অবস্থায় নিম্ন লিখিত দু’টি সমাধানের যে কোন একটি সে গ্রহণ করতে পারেঃ
১)          ঋতু বন্ধ করার জন্য ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করবে- যদি তাতে ক্ষতির আশংকা না থাকে- তারপর তওয়াফ করবে।
২)          লজ্জাস্থানে প্যাড বা কাপড় বেঁধে দিবে যাতে করে মসজিদে রক্ত না পড়ে। তারপর তওয়াফ করবে। এটাই বিশুদ্ধ মত যা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) পসন্দ করেছেন।
         এর বিপরীত সমাধান হচ্ছে, নিম্ন লিখিত দু’টির যে কোন একটিঃ
১)          ইহরামের অবশিষ্ট যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা থেকে বিরত থেকে ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। অর্থাৎ- স্বামী সহবাসে লিপ্ত হবে না। অবিবাহিতা হলে কোন বিবাহের আকদ করবে না। তারপর পবিত্র হলে তওয়াফ করবে।
২)          অথবা নিজেকে হজ্জের কর্ম সমূহ সম্পন্ন করতে বাধাপ্রাপ্ত মনে করবে, এবং হালাল হওয়া যাবে এবং ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী করবে। কিন্তু এ অবস্থায় তার এই হজ্জটি হজ্জ হিসেবে গণ্য হবে না।
সন্দেহ নেই যে, উল্লেখিত এই দু’টি বিষয়ের উভয়টিই কঠিন। কারণ ইহরাম অবস্থায় থেকে যাওয়াটা যেমন কঠিন ব্যাপার, তেমনি হজ্জ বাতিল করে দেয়াটা আরো কঠিন। এ কারণে জরূরী অবস্থা হিসেবে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এর মতটিই এখানে সঠিক। আর আল্লাহবলেন,
]وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ [
আল্লাহতোমাদের জন্য দ্বীনের মাঝে কোন অসুবিধা রাখেননি।” (সূরা হজ্জঃ ৭৮) তিনি আরো বলেন,
] يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ [
আল্লাহতোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমাদের জন্য কঠিন কিছু তিনি চান না।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)
কিন্তু এ নারীর জন্যে যদি সম্ভব হয় চলে গিয়ে পবিত্র হলে আবার ফেরত এসে হজ্জের তওয়াফ করা, তবে কোন অসুবিধা নেই। তবে এই সময়ের মধ্যে স্বামী সহবাস জায়েয হবে না। কেননা তওয়াফ না করলে হাজী সাহেব দ্বিতীয় হালাল বা পূর্ণ হালাল হয় না।
 প্রশ্নঃ (৪৮৫) ঋতু এসে যাওয়ার কারণে জনৈক নারী ওমরা না করেই মক্কা থেকে ফেরত চলে গেছে। তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরার ইহরাম বাঁধার পর যদি নারীর ঋতু এসে যায়, তবে ইহরাম বাতিল হবে না। ওমরার ইহরাম বাঁধার পর ঋতুর কারণে তওয়াফ-সাঈ না করেই মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে, সে ইহরাম অবস্থাতেই রয়েছে। তার উপর আবশ্যক হচ্ছে মক্কা প্রত্যাবর্তন করে তওয়াফ, সাঈ ও চুল ছোট করে হালাল হওয়া। তার উপর আবশ্যক হচ্ছে ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। চুল বা নখ কাটবে না, স্বামী থাকলে তার সাথে সহবাস করবে না।
তবে ইহরাম বাঁধার সময় যদি ঋতুর আশংকায় শর্ত আরোপ করে নেয় যে, যেখানেই বাধাগ্রস্ত হবে সেখানেই সে হালাল হয়ে যাবে। তবে ঋতু আসার পর ইহরাম খুলে ফেললে তাকে কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না।
 নারীর জন্য কি ইহরামের বিশেষ কোন পোষাক আছে?
প্রশ্নঃ (৪৮৬) ইহরাম অবস্থায় নারী কি স্বীয় কাপড় বদল করতে পারবে? নারীর জন্য কি ইহরামের বিশেষ কোন পোষাক আছে?
উত্তরঃ নারী যে কাপড়ে ইহরাম করেছে তা পরিবর্তন করে অন্য কাপড় পরিধান করতে পারে। পরিবর্তন করার দরকার থাক বা না থাক কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যে কাপড় পরবে তাতে যেন বেপর্দা হওয়ার আশংকা না থাকে বা পরপুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ না ঘটে।
নারীর জন্য ইহরামের বিশেষ কোন পোষাক নেই। তার ইচ্ছামত যে কোন পোষাক পরিধান করতে পারে। তবে নেকাব পরবে না এবং হাতমোজা পরিধান করবে না। নেকাব হচ্ছে এমন পর্দা মুখমন্ডলে ব্যবহার করা যাতে চোখের জন্য ছিদ্র করা থাকে।
আর পুরুষের ইহরামের জন্য বিশেষ পোষাক আছে। তা হচ্ছে একটি চাদর অন্যটি লুংঙ্গি। তাই সে জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া, গেঞ্জি, পাগড়ী, টুপি, মোজা প্রভৃতি পরবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৮৭) ইহরামকারী নারীর হাত মোজা এবং পা মোজা পরার বিধান কি?
উত্তরঃ হাতমোজা ব্যবহার করা জায়েয নেই। পায়ের মোজা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই।
হাত মোজার ব্যাপারে নবী () এরশাদ করেন, وَلَا تَلْبَسِ الْقُفَّازَيْنِ নারী হাত মোজা পরিধান করবে না।”
ঋতুবতী নারী বিলম্ব করে পবিত্র হওয়ার পর ওমরা আদায় করবে।
 প্রশ্নঃ (৪৮৮) জনৈক নারী ঋতু অবস্থায় মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধেছে। মক্কায় আগমণ করে বিলম্ব করে পবিত্র হওয়ার পর ওমরা আদায় করেছে। তার এই ওমরার বিধান কি?
উত্তরঃ তার ওমরা বিশুদ্ধ। যদিও একদিন বা দু’দিন বা ততোধিক দিন বিলম্ব করে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে ঋতু থেকে পূর্ণ পবিত্র হওয়ার পরই ওমরা আদায় করবে। কেননা ঋতুবতী নারীর জন্য আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা জায়েয নয়। এজন্য আয়েশা h ওমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় আগমণ করলে ঋতুবতী হয়ে পড়েন, তখন নবী () তাকে বলেনঃ
افْعَلِي كَمَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي
হাজীগণ যা করে তুমিও তাই করে যাও, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ঘর তওয়াফ করো না।”
যখন সাফিয়া h ঋতুবতী হয়ে গেলন, তখন নবী () বললেন, সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে নাকি? তিনি ভেবেছিলেন ছুফিয়া তওয়াফে এফাযা করেন নি। তারা বলল, তিনি তো তওয়াফে এফাযা করে নিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমরা বের হয়ে পড়’।
অতএব ঋতুবতী নারীর জন্য আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা বৈধ নয়। মক্কায় এসে ঋতুবতী হয়ে পড়লে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ওয়াজিব। কিন্তু আল্লাহর ঘর তওয়াফ শেষ করে সাঈ করার পূর্বে যদি ঋতু এসে যায়, তবে ওমরা পূর্ণ করবে। এতে কোন অসুবিধা নেই। আর সাঈ শেষ করার পর ঋতু আসলে তখন বিদায়ী তওয়াফের আবশ্যকতা নেই। কেননা ঋতুবতীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ রহিত।
 ঋতুবতী নারী ইহরামের পর পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তন করতে পারে।
প্রশ্নঃ (৪৮৯) মীকাত থেকে ঋতুবতী অবস্থায় জনৈক নারী ইহরাম বাঁধে। মক্কায় এসে পবিত্র হওয়ার পর পরিধেয় ইহরাম বস্ত্র সে খুলে ফেলে। এর বিধান কি?
উত্তরঃ ঋতুবতী অবস্থায় নারী যদি মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধে, তারপর মক্কায় এসে পবিত্র হওয়ার পর পরিধেয় ইহরাম বস্ত্র খুলে ফেলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ কাপড় পরিবর্তন করে ইচ্ছামত যে কোন বৈধ পোষাক পরিধান করা জায়েয। অনুরূপভাবে পুরুষও পরিধেয় ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করে অনুরূপ ইহরামের কাপড় পরিধান করতে পারে। কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৪৯০) হজ্জের সময় নিকাব দিয়ে নারীর মুখ ঢাকার বিধান কি? আমি একটি হাদীছ পড়েছি যার অর্থ হচ্ছেঃ “ইহরামকারী নারী নেকাব পরবে না এবং হাত মোজা পরিধান করবে না।” আয়েশা hএর অন্য একটি কথা পড়েছি। তিনি বলেন, “আমাদের সামনে কোন পুরুষ এলে আমরা মুখের উপর কাপড় ঝুলিয়ে দিতাম। যখন আমরা ওদের সামনে চলে যেতাম, তখন মুখমন্ডল খুলে রাখতাম” সে সময় তারা হজ্জে ছিলেন। দু’টি হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য কি?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, হাদীছের মর্ম অনুযায়ী নারী ইহরাম অবস্থায় নেকাব পরবে না। পুরুষ তার সম্মুখে আসুক বা না আসুক কোন অবস্থাতেই তার জন্য নেকাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। সে হজ্জে থাক বা ওমরায় । নেকাব নারী সমাজে পরিচিত। আর তা হচ্ছে একটি পর্দা দিয়ে মুখন্ডল ঢেকে নেয়া যাতে দু‘চোখের জন্য আলাদা আলাদা দু’টি ছিদ্র থাকে। কিন্তু আয়েশা h এর হাদীছ নেকাব নিষিদ্ধের হাদীছের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ নয়। কেননা আয়েশার হাদীছে একথা বলা হয়নি যে তারা নেকাব পরতেন। বরং নেকাব না পরে মুখ ঢেকে ফেলতেন। আর পরপুরুষ সামনে এলে নারীদের মুখ ঢেকে ফেলা ওয়াজিব। কেননা মাহরাম নয় এমন পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডল ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
অতএব ইহরামের ক্ষেত্রে সবসময় নেকাব পরিধান করা হারাম। আর পরপুরুষ সামনে না এলে মুখমন্ডল খোলা রাখা ওয়াজিব। কিন্তু সামনে এলে ঢেকে ফেলা ওয়াজিব। তবে নেকাব ছাড়া অন্য কাপড় ঝুলিয়ে দিতে হবে।
 প্রশ্নঃ (৪৯১) ভুল ক্রমে অথবা অজ্ঞতা বশতঃ ইহরামের নিষিদ্ধ কোন কাজ করে ফেললে, তার বিধান কি?
উত্তরঃ ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর অন্তরে দৃঢ় ইচ্ছা করে ইহরাম না বেঁধে থাকে আর নিষিদ্ধ কোন কাজ করে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা নিয়ত করে ইহরামে প্রবেশ করাটাই ধর্তব্য। ইহরামের কাপড় পরিধান করা মানেই ইহরাম বাঁধা নয়।
কিন্তু সঠিকভাবে নিয়ত করে ইহরামে প্রবেশ করার পর যদি ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে, তবে কোন কিছু দিতে হবে না। তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বা শিখিয়ে দেয়ার সাথে সাথে অজ্ঞ ব্যক্তি উক্ত নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত হবে।
উদাহরণঃ ইহরাম করার পর ভুলক্রমে জামা পরে নিয়েছে, তার কোন গুনাহ নেই। তবে মনে পড়ার সাথে সাথে তাকে উক্ত জামা খুলে ফেলতে হবে। অনুরূপভাবে ভুলক্রমে সে পায়জামা খুলে নি। নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করার পর মনে পড়েছে যে, পায়জামা তো খুলা হয় নি। তখন সাথে সাথে সে তা খুলে ফেলবে।
কোন লোক সেলাই ছাড়া শুধু গিরা দিয়ে তৈরীকৃত একটি গেঞ্জি পরিধান করে যদি মনে করে যে, ইহরামকারীর জন্য শুধু সেলাইকৃত কাপড় পরা নিষেধ। তাই আমি ইহা পরিধান করেছি, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। কেননা সে অজ্ঞ। কিন্তু যখন তাকে জানানো হবে যে, শরীরের মাপে তৈরীকৃত যাবতীয় পোষাক পরিধান করা নিষিদ্ধ তখন তা খুলে ফেলা তার জন্য আবশ্যক হবে।
এক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ যাবতীয় কাজ যদি কোন মানুষ ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ বা বাধ্যগত অবস্থায় করে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। কেননা আল্লাহবলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহবলেন, আমি তাই করলাম। আল্লাহআরো বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আহযাবঃ ৫) ইহরাম অবস্থায় বিশেষভাবে নিষিদ্ধকৃত পশু শিকার করা সম্পর্কে আল্লাহবলেন, وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে উহা (শিকার) হত্যা করে।” (সূরা মায়েদাঃ ৯৫)
ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সকল ক্ষেত্রে বিধান একই। যেমন, পোষাক পরিধান করা, সুগন্ধি লাগানো প্রভৃতি অথবা শিকার হত্যা করা, চুল কেটে ফেলা প্রভৃতি। আলেমদের মধ্যে কেউ পার্থক্য করে থাকেন। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এই নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ভুল বা অজ্ঞতা বা বাধ্যগত কারণে মানুষ মা’যুর বা তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য।
 হজ্জে ভুল হলে তার ফিদ্ইয়া কোথায় আদায় করতে হবে?
প্রশ্নঃ (৪৯২) জনৈক ব্যক্তি হজ্জ আদায় করার ক্ষেত্রে ভুলে লিপ্ত হয়েছে। ভুলের কাফ্ফারা দেয়ার জন্য তার কাছে তেমন কিছু ছিল না। সে দেশে ফেরত চলে গেছে। উক্ত কাফ্ফারা কি নিজ দেশে আদায় করা জায়েয হবে? নাকি মক্কাতেই পাঠাতে হবে? যদি মক্কাতেই পাঠাতে হয়, তবে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ হজ্জ পালনকারী কি ভুল করেছেন তা নির্দিষ্টভাবে অবশ্যই জানতে হবে। যদি কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে থাকে, তবে ফিদ্ইয়া হিসেবে মক্কাতে একটি কুরবানী করতে হবে। মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও প্রদান করলে জায়েয হবে না। কেননা তা হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত।
কিন্তু যদি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কোন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে, তবে নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন করতে পারেঃ ক) একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার হারাম এলাকার ফকীরদের মাঝে বন্টন করে দিবে। অথবা খ) ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য দিবে। প্রত্যেককে অর্ধ ছা’ (প্রায় সোয়া কেজী) পরিমাণ খাদ্য দিবে। আর তা মক্কায় হতে হবে অথবা যে স্থানে ঐ নিষিদ্ধ কাজ করা হয়েছে সেখানে। অথবা গ) তিন দিন সওম রাখবে। এই তিনটি সওম মক্কা বা যে কোন স্থানে রাখতে পারে তবে নিষিদ্ধ কাজটি যদি হজ্জের প্রথম হালালের আগে স্ত্রী সহবাস হয়, তবে ওয়াজিব হচ্ছেঃ নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার স্থানে অথবা মক্কায় একটি উট যবেহ করবে এবং ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দিবে।
অথবা নিষিদ্ধ কাজটি যদি কোন প্রাণী শিকার করা হয়, তবে ওয়াজিব হচ্ছেঃ তার অনুরূপ প্রাণী যবেহ করা অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা বা তিনটি সওম পালন করা। সওম পালন যে কোন স্থানে করা যায়। কিন্তু খাদ্য দান বা কুরবানী যবেহ করা অবশ্যই মক্কার হারাম এলাকার মধ্যে হতে হবে। কেননা আল্লাহবলেন, “কুরবানী কা’বা ঘর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে।” (সূরা মায়েদাঃ ৯৫)
অন্য মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে উক্ত কাফ্ফারা আদায় করা জায়েয আছে। কেননা নবী () তাঁর অবশিষ্ট কুরবানীগুলো যবেহ করার জন্য আলী hকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
 প্রশ্নঃ (৪৯৩) তওয়াফের পূর্বে সাঈ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ তওয়াফে এফাযার পূর্বে সাঈ করা জায়েয। কেননা নবী () কুরবানীর দিন একস্থানে দন্ডায়মান হলেন, লোকেরা তাকে প্রশ্ন করতে লাগল। কেউ প্রশ্ন করল,سَعَيْتُ قَبْلَ أَنْ أَطُوفَ তওয়াফ করার পূর্বে আমি সাঈ করে নিয়েছি।’ তিনি বললেন, لاحَرَجَ কোন অসুবিধা নেই।” তামাত্তুকারী যদি তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে এবং ইফরাদকারী বা ক্বেরাণকারী তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ না করে থাকলে হজ্জের তওয়াফের পূর্বে যদি সাঈ করে, তবে কোন অসুবিধা নেই।
 প্রশ্নঃ (৪৯৪) রামাযানে বারবার ওমরা করার বিধান কি? এরকম কোন সময় কি নির্দিষ্ট আছে যে, এতদিন পরপর ওমরা করতে হবে? 
উত্তরঃ রামাযানে বারবার ওমরা করা বিদআত। কেননা এক মাসের মধ্যে বারবার ওমরা করা সালাফে সালেহীন তথা ছাহাবায়ে কেরামের নীতির বিপরীত। এমনকি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) তাঁর ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন, সালাফে সালেহীনের ঐকমত্যে বারবার বেশী পরিমাণে ওমরা করা মাকরূহ। বিশেষ করে যদি ইহা রামাযানে হয়। বিষয়টি যদি পছন্দনীয় হত, তবে তাঁরা তো এব্যাপারে অধিক অগ্রগামী হতেন এবং বারবার ওমরা করতেন। দেখুন না নবী () আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করতেন। নেক কাজকে সর্বাধিক ভালবাসতেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় উনিশ দিন সেখানে অবস্থান করেছেন স্বলাত আদায় করেছেন। কিন্তু কোন ওমরা আদায় করেননি।
আয়েশা h যখন ওমরা করার ব্যাপারে পিড়াপিড়ী করছিলেন, তখন নবী () তাঁর ভ্রাতা আবদুর রহমানকে বললেন, একে তানঈম নিয়ে গিয়ে ইহরাম করিয়ে নিয়ে আস। যাতে করে তিনি ওমরা আদায় করতে পারেন। কিন্তু আবদুর রহমানকে একথা বললেন না, তুমিও তাঁর সাথে ওমরা করে নিও। যদি বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হতো তবে নবী () তাঁকে সে নির্দেশনা দিতেন। ছাহাবায়ে কেরামের নিকট বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হলে আবদুর রহমান তা করতেন। কেননা তিনি তো হারাম এলাকার বাইরে গিয়েছিলেন।
দু’ওমরার মাঝে কত ব্যবধান হওয়া উচিত এসম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন, দেখবে যে পর্যন্ত মাথা পোড়া কাঠের মত কালো না হয়। অর্থাৎ- মাথা ভর্তি চুল না হয়।
 প্রশ্নঃ (৪৯৫) তওয়াফ চলাবস্থায় যদি স্বলাতের ইকামত হয়ে যায়, তবে কি করবে? তওয়াফ কি পুনরায় শুরু করবে? পুনরায় শুরু না করলে কোথা থেকে তওয়াফ পূর্ণ করবে?
উত্তরঃ মানুষ যদি ওমরা বা হজ্জ বা বিদায়ী তওয়াফ বা নফল তওয়াফে লিপ্ত থাকে, আর ফরদ্ব স্বলাতের ইকামত হয়ে যায়, তবে তওয়াফ ছেড়ে দিয়ে স্বলাতের কাতারে শামিল হয়ে যাবে। স্বলাত শেষ হলে যেখান থেকে তওয়াফ ছেড়েছিল সেখান থেকে তওয়াফ পূর্ণ করবে। নতুনভাবে তওয়াফ শুরু করার দরকার নেই এবং ঐ চক্করও নতুনভাবে শুরু করবে না। কেননা সে তো শরীয়ত সম্মত বিশুদ্ধ ভিত্তির উপরই বাকী কাজ আদায় করছে। সুতরাং শরীয়তের দলীল ছাড়া তার আগের কাজকে বাতিল বলা যাবে না।
 প্রশ্নঃ (৪৯৬) ওমরায় তওয়াফের পূর্বে সাঈ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ওমরাকারী তওয়াফের পূর্বে যদি সাঈ করার পর তওয়াফ করে থাকে তবে তাকে পুনরায় সাঈ করতে হবে। কেননা দু’টি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। প্রথমে তওয়াফ তারপর সাঈ। নবী () এরকম সিরিয়ালেই উহা আদায় করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ-ওমরার নিয়ম শিখে নাও।” আমরা নবীজীর শিখানো পদ্ধতি গ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে আমাদেরকে তওয়াফ শুরু করতে হবে। তারপর সাঈ। কিন্তু যদি বলে যে, আমি প্রথমবার সাঈ করাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমরা তাকে বলব, তুমি কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সাঈ কর। কিন্তু ভুলের উপর অটল থাকা চলবে না।
তাবেঈদের মধ্যে কেউ এবং কতিপয় বিদ্বান মত পোষণ করেন যে, ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ কেউ যদি ওমরাতে তওয়াফের পূর্বে সাঈ করে ফেলে, তবে তাকে কোন কিছু দিতে হবে না। যেমনটি হজ্জের বেলায় হয়ে থাকে।
 প্রশ্নঃ (৪৯৭) ইয্তেবা’ কাকে বলে? এ কাজ কোন সময় সুন্নাত?
উত্তরঃ ইয্তেবা’ হচ্ছে গায়ের চাদরকে ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে তার উভয় দিক বাম কাঁধের উপর রাখা এবং ডান কাঁধ খোলা রাখা।
তওয়াফে কুদূম তথা মক্কায় আগমণের পর প্রথম তওয়াফের সময় এ কাজ সুন্নাত। অন্য সময় ইয্তেবা’ করা জায়েয নয়।
 প্রশ্নঃ (৪৯৮) নফল সাঈ করা কি জায়েয আছে?
উত্তরঃ নফল সাঈ করা জায়েয নয়। কেননা সাঈ শুধুমাত্র হজ্জ-ওমরার সময় শরীয়ত সম্মত। কেননা আল্লাহবলেন,
]إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوْ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ[
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত। অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের হজ্জ বা ওমরা করবে তার জন্য এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দূষণীয় নয়। আর কোন ব্যক্তি সেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী সর্বজ্ঞাত।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
 প্রশ্নঃ (৪৯৯) অজ্ঞতা বশতঃ তওয়াফে এফাযা ছেড়ে দিলে করণীয় কি?
উত্তরঃ তওয়াফে এফাযা (হজ্জের তওয়াফ) হজ্জের অন্যতম রুকন। ইহা আদায় না করলে হজ্জ সম্পন্ন হবে না। কোন মানুষ ইহা ছেড়ে দিলে তার হজ্জ পূর্ণ হল না। ইহা অবশ্যই আদায় করতে হবে- যদিও এজন্য তাকে নিজ দেশে ফিরে আসতে হয়। এই অবস্থায় যেহেতু সে হজ্জের তওয়াফ করে নি, তাই তার জন্য স্ত্রী সহবাস বৈধ নয়। কেননা সে এখনো পূর্ণ হালাল হয়নি। তওয়াফে এফাযার সাথে যদি সাঈও ছেড়ে থাকে, তবে তামাত্তুকারীকে তওয়াফে এফাযা এবং সাঈ করতে হবে এবং কেরাণ ও ইফরাদকারী তওয়াফে কুদূমের সাথে সাঈ না করে থাকলে, তাদেরকেও তওয়াফে এফাযার সাথে সাঈ করতে হবে, তবেই তারা পূর্ণ হালাল হবে এবং হজ্জ বিশুদ্ধ হবে।
 তওয়াফের সময় হজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা আবশ্যক নয়
প্রশ্নঃ (৫০০) অনেক তওয়াফকারীকে দেখা যায় ভীড়ের মধ্যে ঠেলে ঠেলে তাদের নারীদেরকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার জন্য পাঠায়। তাদের জন্য কোনটি উত্তম হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা? নাকি পুরুষদের ভীড় থেকে দূরে অবস্থান করা।
উত্তরঃ প্রশ্নকারী যখন এই আশ্চর্য বিষয় দেখেছে, আমি এর চাইতে অধিক আশ্চর্য জনক বিষয় দেখেছি। আমি দেখেছি কিছু লোক ফরদ্ব নামাযান্তে এক দিকে সালাম ফেরানো হলে দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর পূর্বে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার জন্য দৌড় দেয়। এতে তো তার ফরদ্ব স্বলাতই বাতিল হয়ে গেল। যে স্বলাত কিনা ইসলামের অন্যতম প্রধান রুকন। অথচ সে এমন একটি কাজ করতে ছুটেছে যা ওয়াজিব নয়। এমনকি তওয়াফ অবস্থায় না থাকলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা শরীয়ত সম্মতও নয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরাট ধরণের দুঃখ জনক অজ্ঞতা। তওয়াফ ছাড়া হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা সুন্নাত নয়। এব্যাপারে আমার কোন দলীল জানা নেই। আমি এই স্থান থেকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আমার জ্ঞানের বাইরে যদি কারো কাছে এমন কোন দীলল জানা থাকে যে, তওয়াফ না করলেও হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা শরীয়ত সম্মত, তবে সে যেন আমাদের কাছে তা পৌঁছিয়ে দেয়। আল্লাহতাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
অতএব হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা তওয়াফের সুন্নাতের অন্তর্গত। তাছাড়া এটা তখনই সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে যখন উহা চুম্বন করতে গিয়ে তওয়াফকারী কষ্ট পাবে না বা অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া হবে না। যদি তওয়াফকারীর কষ্ট হয় বা অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া হয়, তবে দ্বিতীয় পদক্ষেপ অবলম্বন করবে এবং তা হাত দ্বারা স্পর্শ করে হাতকে চুম্বন করবে। যেমনটি নবী () আমাদেরকে শিখিয়েছেন। যদি একাজও কষ্ট করা ও কষ্ট দেয়া ছাড়া আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে আমরা তৃতীয় স্তরে উপনীত হয়ে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদকে এক হাত দ্বারা ইশারা করব। কিন্তু সে হাতকে চুম্বন করব না। এটাই হচ্ছে নবী ()এর হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার সুন্নাতী পদ্ধতি।
হাজরে আসওয়াদকে চুম্বনের বিষয়টি আরো জটিল ও কঠিন হবে- যেমনটি প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন্ত নারীদেরকে পাথর চুম্বন করার জন্য ঠেলে দেয়া, হতে পারে সে নারী গর্ভবতী বা বৃদ্ধা বা দুর্বল যুবতী অথবা শিশুকে উপরে উঠিয়ে চুম্বনের জন্য এগিয়ে দেয়া, তবে এসব কাজ গর্হিত ও নাজায়েয। কেননা এতে দুবর্ল লোকদেরকে ভয়ঙ্কর এক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যেখানে আছে সংকীর্ণতা ও পুরুষদের ভীড়ের প্রচন্ডতা। তাই বিষয়টি মাকরূহ অথবা হারামের অন্তর্গত। আল্লাহর রহমতে অন্য ব্যবস্থা থাকতে কোন মানুষের পক্ষে এদিকে অগ্রসর হওয়া উচিত নয়। আপনি যদি কঠিনভাবে ইসলামের বিধান পালন করতে চান, তবে পরাজিত হবেন।
 পূর্ণ সাত চক্কর তওয়াফ না করলে ওমরা হবে না।
প্রশ্নঃ (৫০১) জনৈক নারী স্বামীর সাথে তামাত্তু হজ্জ করতে এসেছে। তারা ওমরার তওয়াফ করার সময় ৬ষ্ঠ চক্করে স্বামী বললেন, এটাই ৭ম চক্কর। এবং তিনি নিজ মতের উপর অটল ছিলেন। এখন স্ত্রীর করণীয় কি?
উত্তরঃ উক্ত নারী যদি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে সে ৬ চক্কর দিয়েছে এবং তওয়াফ পূর্ণ করে নি। তবে এখন পর্যন্ত তার উক্ত ওমরা পূর্ণ হয়নি। কেননা ওমরার অন্যতম রুকন হচ্ছে পূর্ণ সাত চক্কর তওয়াফ করা। এরপর যদি হজ্জের ইহরাম করে থাকে, তখন সে কেরাণকারী হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ওমরা শেষ করার আগেই সে ওমরাকে হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করে নিয়েছে।
কিন্তু স্বামীর অটলতা দেখে যদি স্ত্রী সন্দেহের মধ্যে পড়ে যায়, তবে কোন অসুবিধা নেই। তখন তার ওমরা পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা তার সন্দেহ, আর স্বামীর নিশ্চয়তা এ অবস্থায় স্বামীর কথায় ফিরে আসবে এবং সেটাকেই প্রাধান্য দিবে।
 হজ্জ-ওমরায় নিজের ভাষায় দু’আ করাই উত্তম
প্রশ্নঃ (৫০২) ওমরা বা হজ্জকারী যদি দু’আ না জানে, তবে তওয়াফ, সাঈ প্রভৃতির সময় কি কোন বই হাতে নিয়ে দেখে দেখে দু’আ পাঠ করা জায়েয হবে?
উত্তরঃ হজ্জ বা ওমরাকারী যে সমস্ত দু’আ জানে এগুলোই তার জন্যে যথেষ্ট। কেননা সাধারণতঃ সে যা জানে তা সে বুঝে। আর বুঝে-শুনেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। কিন্তু যদি কোন বই হাতে নিয়ে দু’আ পড়ে বা কাউকে ভাড়া নিয়ে তার শিখিয়ে দেয়া দু’আ পড়ে- যার কিছুই সে বুঝে না, তবে তাতে কোনই উপকার হবে না। তাছাড়া বাজারের এই বইগুলোতে তওয়াফ-সাঈর জন্য যে দু’আ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তা বিদআত এবং বিভ্রান্তি। কোন মুসলিমের জন্য এগুলো পাঠ করা জায়েয নয়। কেননা নবী () উম্মতকে প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা ও বিশেষ কোন দু’আ শিক্ষা দেননি। ছাহাবায়ে কেরাম থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। নবী () বলেনঃ
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ ও জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।”
তাই সকল মু‘মিনের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এধরণের বই-পুস্তক থেকে সতর্ক থাকা। আর নিজের দরকারের কথা আল্লাহর কাছে এমন ভাষায় পেশ করা যার অর্থ সে নিজে অনুধাবন করে। সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর যিকির করা। অর্থ বুঝে না এমন শব্দ ব্যবহার করার চাইতে এটাই তার জন্য উত্তম। অনেকে এমনও আছে যে অর্থ বুঝা তো দূরের কথা বইয়ের শব্দ বা বাক্যগুলোই ভালভাবে পড়তে পারে না।
 প্রশ্নঃ (৫০৩) তওয়াফ-সাঈতে কি বিশেষ কোন দু’আ আছে?
উত্তরঃ হজ্জ-ওমরার জন্য নির্দিষ্ট কোন দু’আ নেই। মানুষ জানা যে কোন দু’আ পাঠ করতে পারবে। কিন্তু নবী () থেকে প্রমাণিত দু’আ সমূহ পাঠ করা উত্তম। বিশেষ করে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এই দু’আ পাঠ করা সুন্নাতঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্, ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” অনুরূপভাবে সাফা-মারওয়ায় ও আরাফার দিবসের প্রমাণিত দু’আ পাঠ করতে পারে। সুন্নাত থেকে প্রমাণিত যে সমস্ত দু’আ জানা আছে তাই পাঠ করা উচিত। কিন্তু জানা না থাকলে তার মাথায় যে দু’আই আসে তাই পাঠ করা যাবে। কেননা এই দু’আ পাঠ করা ওয়াজিবের  অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং উহা মুস্তাহাব।
এ উপলক্ষে আমি বলতে চাইঃ হজ্জ-ওমরার জন্য ছোট ছোট পুসি-কা হাজীদের হাতে দেখা যায়। তাতে তওয়াফ-সাঈর প্রত্যেক চক্করের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দু’আ নির্দিষ্ট করা থাকে। এটা বিদআত। এতে নিশ্চিতভাবে অনেক ধরণের বিপদ আছে। যেমন,
১) যারা এটা পাঠ করে ধারণা করে যে, বইয়ের দু’আগুলো নবী () থেকে প্রমাণিত।
২)  তারা এই দু’আর প্রত্যেকটি শব্দ পাঠ করা ইবাদত মনে করে।
৩)  কোন মর্ম বা অর্থ না বুঝেই তা পাঠ করে।
৪)  প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা আলাদা দু’আ নির্দিষ্ট করে।
৫) ভীড়ের কারণে চক্কর পূর্ণ হওয়ার আগেই দু’আ পড়া শেষ হয়ে গেলে চুপ করে থাকে।
৬)  আর দু’আ শেষ হওয়ার আগে চক্কর শেষ হয়ে গেলে দু’আ পড়া ছেড়ে দেয়। এই বিদআতী আ‘মালের কারণে এতগুলো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
অনুরূপভাবে মাক্বামে ইবরাহীমের কাছে পাঠ করার জন্য ঐ বইয়ে যে দু’আ পাওয়া যায়, তাও বিদআত। কেননা উহা নবী () থেকে প্রমাণিত নয়। বরং তিনি সেখানে গিয়ে পাঠ করেছেন, وَاتَّخِذُوا مِنْ مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى তোমরা মাক্বামে ইবরাহীমকে স্বলাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” (সূরা বাক্বারাঃ ১২৫) এবং তিনি এর পিছনে দু’রাকাত স্বলাত আদায় করেছেন। অতএব যারা এখানে এসে অতিরিক্ত দু’আ পাঠ করে এবং অন্যান্য মুছল্লী ও তওয়াফকারীদের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তাদের এই কাজ দু’টি কারণে গর্হিত ও বিদ্আতঃ ক) এ সমস্ত দু’আ নবী () থেকে প্রমাণিত না হওয়ার কারণে তা বিদআত। খ) যারা মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে স্বলাত আদায় করে তাদের স্বলাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

Post a Comment

0 Comments