কথোপ কথনের
বৈধা বৈধ প্রশ্নোত্তর 627-650
✔ ৬২৭ প্রশ্নঃ মৃত
ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘স্বর্গীয়’, ‘বেহেশতী’,
বা ‘জান্নাতী’ লেখা বা বলা বৈধ to কি?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট
কোন ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়।
(ইবনে উসাইমিন) যেহেতু তা গায়বী খবর, আর তা আল্লাহ ছাড়া
অন্য কেউ জানে না। অবশ্য যার শরীয়ত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত, তাঁদের
কথা স্বতন্ত্র।
উত্তরঃ নির্দিষ্ট কোন
ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। ওই
ক্ষেত্রে নাম উল্লেখের পরে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বা ‘গাফারাল্লাহু লাহ’ বলা
বা লিখা বিধেয়। (ইবনে বাজ)
উত্তরঃ নির্দিষ্ট কোন
ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। (ইবনে
উসাইমিন) যেহেতু তা গায়েবী খবর, আর
তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। অবশ্য যার শরীয়ত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত, তাঁদের কথা স্বাতন্ত্র।
উত্তরঃ এই পৃথিবীর কোন
মানুষই সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। প্রত্যেকেই কোন না কোন পরাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য।
ব্যক্তি স্বাধীনতা, চিন্তা স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি
লাগামহীন নয়। প্রত্যেক মুসলিম মহান আল্লাহর পরাধীন গোলাম। তার আদেশ নিষেধ পালন
করার ব্যাপারে কেউই স্বাধীন নয়। তাঁদের যখন কেউ আল্লাহর গোলামী থেকে ছাড়া পেতে চায়,
তখন সে শায়ত্বন অথবা প্রবৃত্তির খেয়ালখুশির গোলামে পরিণত হয়ে
যায়। (ইবনে উসাইমিন)
উত্তরঃ তাঁদের জন্য এমন
আশাবাদীর কথা বলে পাপ নির্বিচল থাকা অবশ্যই বৈধ নয়। যেহেতু তাঁদের জানা দরকার যে, মহান আল্লাহর যেমন মহা ক্ষমাশীল, তেমন তিনি
কঠোর শাস্তিদাতা। তিনি বলেন,
“আমরা বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার
শাস্তিই হল অতি মর্মম্ভেদ শাস্তি।’ ( হিজরঃ ৪৯-৫০)
“ তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।” (মায়িদাহঃ ৯৮)
সুতরাং তার একটা গুণবাচক দিকে ধরে থেকে অন্য
দিকটা ভুলে যাওয়া আদৌ উচিত নয়। আশার সাথে
ভয়ও থাকা উচিত। (ইবনে উসাইমিন)
উত্তরঃ যারা গৌণবাদী অথবা
নকলবাদী তারাই সঠিক ইমানদারকে ‘মৌলবাদী’ বলে কটাক্ষ করে। তবে এ কটাক্ষতে মু’মিনদের
গর্ব হওয়া উচিত। যেহেতু মৌলিক বিষয়সমুহ পালন না করলে কেউ মুক্তি পেতে পারবে না।
(ইবনে উসাইমিন)
উত্তরঃ আল্লাহ ও তদীয় রাসুলের আজ্ঞাবহ ধর্মভীরু মুসলিমকে ধর্মের যথার্থ
অনুগত হওয়ার কারণে বিদ্রূপ করা হারাম এবং তা মানুষের জন্য বড় বিপদজনক আচরণ। কারণ এ
কথার আশংকা থাকে যে, ধর্মভীরুদেরকে তাঁর ঐ
অবজ্ঞা তাঁদের আল্লাহর দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকাকে অবজ্ঞা করার ফল হতে পারে।
তখন তাদেরকে ঠাট্টা ব্যঙ্গ করার অর্থই হবে, তাঁদের সেই পথ
ও তরিকাকে ঠাট্টা ব্যঙ্গ করা, যার উপর তারা প্রতিষ্ঠিত।
যাতে তারা ঐ লোকেদের অনুরূপ হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ
বলেন,
“এবং তুমি ওদেরকে প্রশ্ন করলে ওরা নিশ্চয়
বলবে, আমরা তো আলাপ আলোচনা ও ক্রীড়া কৌতুক করেছিলাম। বল,
‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও
রাসুলকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন?’ দোষ স্খালনের চেষ্টা করো
না, তোমরা তোমাদের ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গেছে।” (সূরা
তাওবাহ ৬৫-৬৬ আয়াত)
উক্ত আয়াতটি মুনাফিকদের একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ করে অবতীর্ণ
হয়। যারা রাসুল (ﷺ) এবং তাঁর
সাহাবাবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘আমরা
আমাদের ঐ কারিদলের মত আর কাউকে অধিক পেটুক , মিথ্যুক এবং
রণভীরু দেখিনি।’ তখন আল্লাহ তাআলা তাঁদের জওয়াবে েই আয়াত কয়টি অবতীর্ণ করেছিলেন।
সুতরাং তাদেরকে সাবধান হওয়া উচিত, যারা হকপন্থীদেরকে নিয়ে- তারা ধর্মভীরু বলে- ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে থাকে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,
“দুষ্কৃতিকারীরা মুমিনদের উপহাস করত এবং
যখন তাঁদের নিকট দিয়ে যেত, তখন বক্রদৃষ্টিতে ইশারা করত।
ওরা যখন ওদের আপনজনের নিকট ফিরে আসত তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরত এবং যখন ওদের দেখত,
তখন বলত, ‘নিশ্চয় ওরাই পথভ্রষ্ট ।’ ওদেরকে
তো তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি। আজ বিশ্বাসী (মুমিন) গন উপহাস করেছে সত্য
প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) দলকে, সুসজ্জিত আসন হতে ওদেরকে
অবলোকন করে। কাফেররা তাঁদের অকৃতকার্যের প্রতিফল পেল তো?” (সূরা মুত্বাফফিফিন/ ২৯-৩৬ আয়াত)
✔ ৬৩৪ প্রশ্নঃ এক মহিলার অভ্যাস যে, সে তাঁর সন্তানদেরকে অভিশাপ ও গালিমন্দ করে থাকে। কখনো বা তাদেরকে
প্রত্যেক ছোট বড় দোষে কথা দ্বারা, কখনো বা প্রহার করে
কষ্ট দেয়। এই অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে আমি তাকে একাধিকবার উপদেশ দিয়েছি। কিন্তু সে
উত্তরে বলেছে, ‘তুমিই ওদের স্পর্ধা বাড়ালে অথচ ওরা কত দুষ্ট।’
শেষ ফল এই দাঁড়াল যে, ছেলেরা তাকে অবজ্ঞা করে তাঁর কথা
নেহাতই অগ্র্যাহ্য করতে লাগল। তাঁর বুঝে নীল যে, শেষ
পরিণাম তো গালি ও প্রহার।
এই স্ত্রীর ব্যাপারে আমার ভূমিকা কি হতে পারে? এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে দ্বীনের নির্দেশ কি? যাতে
সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দুরে শরে যাব এবং সন্তানরা তাঁর
সঙ্গে থাকবে? অথবা আমি কি করব?
উত্তরঃ ছেলে মেয়েদেরকে
অভিসম্পাত করা অন্যতম কবিরাহ গোনাহ; অনুরূপ
অন্যান্যদেরকেও অভিশাপ করা, যারা এর উপযুক্ত নয়। নবী (ﷺ) হতে
সুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে, তিনি বলেন,
“মুমিনকে অভিশাপ করা তাকে হত্যা করার সমান।”
তিনি আরও বলেন, “অভিসম্পাতকারীরা
কিয়ামতের দ্বীন সাক্ষী ও সুপারিশকারি হতে পারবে না।”
সুতরাং ঐ মহিলার তওবা করা ওয়াজেব এবং ছেলে
মেয়েদেরকে গালি মন্দ করা থেকে তাঁর জিভকে হিফাজত করা আবশ্যিক। তাঁদের জন্য সৎপথ
প্রাপ্তি ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে অধিক দুয়া করা তাঁর পক্ষে বিধেয়।
আর হে গৃহস্বামী! তোমার জন্য বিধেয়, স্ত্রীকে সর্বদা নসিহত করা ও সন্তারদেরকে অভিশাপ করা থেকে তাকে সাবধান
করা। যদি নসিহত লাভদায়ক না হয়, তবে বিচ্ছিন্নতা (কথা না
বলা, শয্যাত্যাগ করা
ইত্যাদি) অবলম্বন করবে--- সেই বিচ্ছিন্নতা বড় ধৈর্যের সাথে ও সওয়াবের আশা রেখে
অবলম্বন করবে; যা তাতে ফলদায়ক বলে বিশ্বাস করবে। আর তালাক
দেওয়াতে অবশ্যই তাড়াহুড়া করবে না। (ইবনে বাজ)
✔ ৬৩৫ প্রশ্নঃ কাউকে
পাপকাজে বাধা দিতে গেলে তার কি ‘নিজের চরকায় তেল দাও’ বলা বৈধ?
উত্তরঃ কাউকে
পাপকাজে বাধা দিতে গেলে বা তার অন্যায়ে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রতিবাদকারীদের ‘নিজের
চরকায় তেল দাও’, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার’ ইত্যাদি
বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। যেহেতু তার জবাবে বলা যায় যে, ‘আমরা
পরের চরকায় তেল দিতেও আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে
বাধা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এটা আমাদেরও ব্যক্তিগত ব্যাপারে।’ (ইবনে
উসাইমিন)
✔ ৬৩৬ প্রশ্নঃ ‘পোড়া
কপাল’, ‘কপালে লেখা’, ‘কপালে
ছিল’, বা ‘কপাল খারাপ’ ইত্যাদি বলা বৈধ কি?
উত্তরঃ প্রত্যেকের ভাগ্য
লেখা আছে ‘লাওহে মাহফুজ’- এ। সেটাই হল মুল ভাগ্যলিপি। মহান আল্লাহ বলেন,
“পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের
উপর যে বিপর্যয় আসে, আমার তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা
লিপিবদ্ধ থাকে, নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ।
(হাদিদঃ২২)
কিন্তু জীবনের তফসীলী ভাগ্য লেখা হয় মায়ের
পেটে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের জন্য এক জন্যের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন যাবত
বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপ ভাবে চল্লিশ দিনে জমাটবদ্ধ রক্তপিণ্ডের রূপ
নেয়। পুনরায় তদ্রূপ চল্লিশ দিনে গোশতের টুকরায় রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর তার নিকট
ফিরিশতা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে রূহ স্থাপন করা হয় চারটি কথা লেখার আদেশ দেয়া
হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ঠ না পূর্ণবান হবে, তা লেখা হয়।
সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই!
(জন্মের পর) তোমাদের এক ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের মত কাজ কর্ম করতে থাকে এবং তার ও
জান্নাতের মাঝে এক হাত মত তফাত থেকে যায়। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে
এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে; ফলে সে
জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে জাহান্নামীদের মত আমল
করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে এক হাত মত তফাত থাকে। এমতবস্থায় তার ভাগ্যের লিখন
এগিয়ে আসে এবং সে জান্নাতিদের মত ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করে; পরিণতিতে
সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” (বুখারি-মুসলিম)
কিন্তু লিখা হয় কোথায়? সে কথা অন্য বর্ণনায় পরিষ্কার করা হয়েছে। মহানবী (ﷺ) বলেছেন,
“আল্লাহ যখন কোন মানব প্রাণ সৃষ্টি করার
ইচ্ছা করেন, তখন মাতৃগর্ভে নিযুক্ত ফিরিশতা আরজ করেন,
“হে প্রভু
! দুর্ভাগ্যবান, না সৌভাগ্যবান?’ সুতরাং আল্লাহ নিজ ফয়সালা বহাল করেন। অতঃপর তার দুই চোখের মাঝখানে তা
লিখে দেন, যার সে সম্মুখীন হবে, এমনকি
সেই মুসীবতও লিখে দেওয়া হয়, যা তাকে ক্লিষ্ট করবে।” (ইবনে
হিব্বান ৬১৭৮, আবু য়্যা’লা ৫৭৭৫ নং, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৭/ ১১২)
বলা বাহুল্য, দুই
চোখের মাঝখানে বা কপালে ভাগ্য লেখার কথা হাদিসে রয়েছে। তাই ‘কপালে ছিল’, ‘কপালের লেখা’ বা ‘কপাল খারাপ’ ইত্যাদি বলা দূষণীয় নয়। তবে ভাগ্য বা
কপালকে গালি দেওয়া বৈধ নয়। যেমন ‘পোড়া কপাল’, ‘নিষ্ঠুর
নিয়তি’ ইত্যাদি বলা বৈধ নয়।
✔ ৬৩৭ প্রশ্নঃ মহান
আল্লাহর কোন ফয়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা কোন শ্রেণীর পাপ?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ ইচ্ছাময়
বাদশা। তিনি যা ইচ্ছা ফয়সালা করেন। বান্দার জন্য যে ফয়সালা করেন, তা তার জন্য মঙ্গলময়। তার কোন ফয়সালাতে জুলুম বা অন্যায় থাকে না। তিনি
আমাকে গরীব আর আপনাকে ধনী বানিয়েছেন- এটা তার বেইনসাফি নয়। তিনি আপনার ছেলেকে
সুস্থ সবল রেখেছেন এবং আমার ছেলেকে বিকলাঙ্গ বানিয়েছেন--- এটা তার ফয়সালার অন্যায়
নয়। কারণ তার কাছে আমাদের কোন অধিকার নেই , কোন প্রাপ্য
নেই --- যা না পাওয়ার ফলে আমরা তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনতে পারি। তিনি ইচ্ছা
করলে আপনাকে নর্দমার কীট ও বানাতে পারতেন, তাতে কি আপনার
কোন প্রতিবাদ চলত? কক্ষন না। সুতরাং তার কোন ফয়সালার
বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে যে তা ‘অন্যায়’ বলে
অভিহিত করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। (ইবনে উসাইমিন)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“আল্লাহ আদেশ করেন। তাঁর আদেশের সমালোচনা
(পুনবিবেচনা) কারার কেউ নেই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর। (রা’দঃ ৪১০)
তিনি আরও বলেছেন, “তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হবে
না; বরং ওদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।” (আম্বিয়াঃ ২৩)
✔ ৬৩৮ প্রশ্নঃ দাড়ি
রাখতে বললে বা অন্য সৎকাজের উপদেশ দিলে অনেকে বলে, ‘তাকওয়া
বুকে’ । এ কথা বলে সৎকাজ থেকে পিছল কাটা কি ঠিক?
উত্তরঃ অবশ্যই ঠিক নয়।
মহানবী (ﷺ) নিজে
বুকের প্রতি ইঙ্গিত করে অবশ্যই বলেছেন ‘তাকওয়া এখানে’। কিন্তু তা এ কথার দলিল নয়
যে, বাহ্যিক আমল জরুরী নয়। তাছাড়া হৃদয়ে তাকওয়া থাকলে বাহ্যিক দেহ ও আমলে
তাঁর বহিঃপ্রকাশ অবশ্যই ঘটবে। যেহেতু রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “দেহের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে, যখন তা
সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহটাই সুস্থ হয়ে থাকে। আর যখন তা
খারাপ হয়ে যায়, তখন গোটা দেহটাই খারাপ হয়ে যায়। শোন! তা
হল হৃদপিণ্ড (অন্তর)” (বুখারি ও মুসলিম)
✔ ৬৩৯ প্রশ্নঃ বন্ধু
বান্ধবের সাথে মজাক ঠাট্টা করা বৈধ কি?
উত্তরঃ রসিকতা যদি বাস্তব বা
সত্য কথার মধ্যে হয় এবং তাতে অশ্লিলতা না থাকে, তাহলে
দূষণীয় নয়। যেহেতু মহানবী (ﷺ) এমন
রসিকতা করেছেন। যেমন, আবু উমাইর নামক এক শিশুর
খেলনা পাখী (নুগাইর) মারা গেলে সে দুঃখিত হয়। তা দেখে তিনি তাকে খোস করার জন্য
মস্কারা করে বললেন, “এই যে উমাইর, কি করেছে নুগাইর?” (বুখারি,
মুসলিম, মিশকাত ৪৮৮৪ নং)
একদা এক ব্যক্তি তাঁর নিকট সওয়ারি উট চাইলে
তিনি বললেন, “ তোমাকে একটি উটিনীর
বাচ্চা দেব।” লোকটি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল ! বাচ্চা নিয়ে
কি করব?’ তিনি বললেন, “ উটনি
ছাড়া উট কি আর কেও জন্ম দেয়?” (অর্থাৎ সব উটই তো তাঁর
মায়ের বাচ্চা)। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত ৪৮৮৬ নং)
একদা এক বৃদ্ধা এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি দুয়া করে দিন যাতে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে
প্রবেশ করান।’ তিনি মস্কারা করে বললেন, “বৃদ্ধারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে প্রস্থান করলেন। তিনি
সাহাবাদের বললেন, “ওকে বলে দাও যে, বৃদ্ধাবস্থায় ও জান্নাতে যাবে না।” (বরং যুবতী হয়ে যাবে)
পক্ষান্তরে মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে হাস্য
রসিকতা করা হারাম। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “সর্বনাশ সেই ব্যক্তির , যে লোককে হাসাবার
উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলে। তাঁর জন্য সর্বনাশ, তাঁর জন্য
সর্বনাশ।” (সহিহুল জ’মে ৭০১৩ নং)
✔ ৬৪০ প্রশ্নঃ উপহাসছলে
মিথ্যা বলা কি বৈধ?
উত্তরঃ মিথ্যা বলা বৈধ নয়।
মিথ্যা বললে কবিরাহ গোনাহ হয়। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পথ
নির্দেশনা করে। আর মানুষ সত্য কথা বলতে থাকে, সেস পর্যন্ত
আল্লাহর নিকট তাকে “ মহাসত্যবাদী” রূপে
লিপিবদ্ধ করা হয়। আর নিরসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাপাচার এর দিকে নিয়ে
যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে, সেস পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে ‘মহামিথ্যাবাদি” রুপে লিপিবদ্ধ করা হয়।
(বুখারি ও মুসলিম)
উপহাস ছলেও মিথ্যা বলা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “আমি সেই ব্যক্তির জন্য একটু জান্নাতের পার্শ্বদেশ , একটু জান্নাতের মধ্যভাগ এবং অপর আর একটি জান্নাতের উপরিভাগে গৃহের জমিন
হচ্ছি, যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও তর্ক পরিহার
করে, উপহাসছলে হলেও মিথ্যা কথা বর্জন করে, আর নিজ চরিত্রকে সুন্দর করে।” (বাযযার, ত্বাবারানী,
সহিহ তারগিব ১৩৪ নং )
কাউকে হাসাবার উদেশ্যেও কৌতুক করে মিথ্যা বলা
বৈধ নয়। মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “সর্বনাশ সেই ব্যক্তির, যে লোককে হাসাবার
উদেশ্যে মিথ্যা বলে। তাঁর জন্য সর্বনাশ, তাঁর জন্য
সর্বনাশ।” (সহিহুল জ’মে ৭০১৩ নং)
শিশুদের ভোলাবার জন্য মিথ্যা বলা বৈধ নয়।
আব্দুল্লাহ বিন আমের (রঃ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) একদা
আমাদের বাড়িতে এলেন, আমি তখন শিশু ছিলাম।
এমতবস্থায় আমি খেলার জন্য বাড়ির বাইরে বের হতে যাচ্ছিলাম। তা দেখে আমার মা আমার
উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আব্দুল্লাহ (বাইরে যেও না , আমার নিকট) এস, তোমাকে একটি মজা দেব।’ এ কথা
শুনে নবী (ﷺ) বললেন, ‘তুমি ওকে কি দেবে ইচ্ছা করেছ?’ মা বললেন,
‘খেজুর’। তখন
রাসুল (ﷺ) বললেন, ‘জেনে রাখ, যদি তুমি ওকে কিছু না দাও, তাহলে তোমার ওপর একটি মিথ্যা লেখা হবে।’ (আবু দাউদ ৪৯৯১, সিলসিলাহ সহিহাহ ৭৪৮ নং)
তবে তিন ক্ষেত্রে প্রয়জনে মিথ্যা বলা বৈধ।
উম্মে কুলসুম বিনতে উকবাহ (রঃ ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে
শুনেছি, “ওই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সৎভাব স্থাপনের জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে দেয় অথবা
ভাল কথা বলে।” (বুখারি ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় বর্ধিত আকারে আছে, উম্মে কুলসুম (রঃ) বলেন, “আমি নবী (ﷺ) কে কেবল
মাত্র তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছিঃ যুদ্ধের ব্যাপারে, লোকের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করার সময় এবং স্বামী স্ত্রী পরস্পরের (প্রেম)
আলাপ আলোচনায়।’
✔ ৬৪১ প্রশ্নঃ অনেকে বলে, ‘যার পীর নেই, তার পীর শায়ত্বন।’ এ কথা কি ঠিক?
উত্তরঃ কথাটি ঠিক। কারণ নিজ
নিজ সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করলে ভ্রষ্টতাই স্বাভাবিক। তবে পীর মানে ওস্তাদ। পীর
মানে বিদআতি মুর্শিদ নয়, প্রচলিত তরীকার কোন
সূফীপন্থী নয়। যেমন ওস্তাদ কেবল একটা ধারাই বাঞ্ছনীয় নয়। শিক্ষার্থী মুসলিমের উচিত,
যাকে হকপন্থী অভিজ্ঞ আলেম দেখবে, তাকেই
ওস্তাদ বলে গণ্য করবে। যেহেতু মুসলিম কন ব্যক্তি দেখে হক চেনে না, বরং হক দেখে ব্যক্তি চেনে। সুতরাং যে পীর বা ওস্তাদ পিরানে পীর অ
উস্তাজুল আসাতিজাহ নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর
অনুসারী নয়, তাকে নিজের পীর বা ওস্তাদ
বানানো বৈধ নয়। পক্ষান্তরে যিনিই কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর অনুসারী, তিনিই মুসলিমের ওস্তাদ হওয়ার যোগ্য। অতএব প্রত্যেক হক পন্থী আলেমই
মুসলিমের ওস্তাদ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।” ( নাহলঃ ৪৩, আম্বিয়াঃ
৭)
“হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রাসুল ও
তোমাদের নেত্রীবর্গ (ও উলামা) দের অনুগত হও। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ
ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও।
এটিই হল উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর । (নিসাঃ ৫৯)
লক্ষণীয় যে, মহান
আল্লাহ আমাদেরকে কোন নির্দিষ্ট পীর বা ওস্তাদ ধরতে নির্দেশ দেননি। বলা বাহুল্য,
বিদাতিদের উক্ত কথা বলে তথাকথিত ‘পীর ধরা’র কাজে মানুষকে
উদ্বুদ্ধ করা বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। (ইবনে বায )
✔ ৬৪২ প্রশ্নঃ যে বলে, ‘ইসলাম নারীর প্রতি অন্যায় হয়েছে, তার যথার্থ
হক প্রদান করেনি’ তার বিধান কি?
উত্তরঃ যে এ কথা বলে সেই
অবিবেচক জালেম। যেহেতু ইসলাম সর্বক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমানাধিকার দান না করলেও
তাকে তার যথার্থ অধিকার প্রদান করেছেন। সুতরাং প্রত্যেকের নিজ নিজ অধিকার নিয়ে
সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ যা দিয়ে
আল্লাহ তোমাদের কাউকেও কারোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা
তার লালসা করো না। পুরুষগণ যা অর্জন করে, তা তাদের
প্রাপ্য অংশ এবং নারীগণ যা অর্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য
অংশ। তোমরা আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে
সর্বজ্ঞ। “ (নিসাঃ৩২)
“নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন জুলুম
করেন না, পরন্ত মানুষ নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে।” (ইউনুসঃ ৪৪)
সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির প্রতি কোন অন্যায় করেন
না। ইসলাম কারো প্রতি অবিচার করে না। অবশ্য কোন কোন বেআমল মুসলিম সে অন্যায় করতে
পারে। আর কোন মুসলিমের অন্যায় ইসলামের অন্যায় নয়। বলা বাহুল্য, উক্ত কথা কোন মুসলিম বললে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
✔ ৬৪৩ প্রশ্নঃ জারা বলে
‘ব্যভিচারী পাথর ছুড়ে মারলে, চোরের
হাত কাটলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়।’ তাদের এমন বক্তব্য কি ঠিক ?
উত্তরঃ অবশ্যই ঠিক নয়। এমন
অপরাধী মানবকে কে অধিকার দিয়ে রেখেছে? যারা
এ কথা বলে, তারা কি মানুষ খুন করে না? তারা কি কারো ফাঁসি দেয় না? আসলে তাদের কাছে
ওই শ্রেণির অপরাধ বড় নয়, বরং তাদের কাছে ব্যভিচার কোন
অপরাধই নয়। আর আল্লাহর বিধান তো তারা মানেই না।
মানবের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। কিছু অপরাধের
ফলে তিনিই তাদের মানবাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার বিধান দিয়েছেন। যেহেতু
তারাই অপরাধ করে প্রথমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। নিশ্চয় মহান আল্লাহ জালেম নন।
“ আমি ওদের প্রতি অন্যায় করি নি, কিন্তু ওরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে।” (জুখরুফঃ
৭৬)
যে সৎকাজ করে, সে
নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফলন সে নিজেই ভোগ
করবে। আর তোমার প্রতিপালক তার দাসদের প্রতি কোন জুলুম করেন না। ( হা- মীম সাজদাহঃ
৪৬)
উক্ত কথা কোন মুসলিম
বললে সে ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ে যাবে।
✔ ৬৪৪ প্রশ্নঃ কাউকে
‘আল্লাহর খলিফা’ বলা জায়েজ কি?
উত্তরঃ কাউকে আল্লাহর খলীফা
বলা জায়েজ না। মানুষ আল্লাহর খলীফা হতে পারে না। বরং আল্লাহই মানুষের ‘খলীফা’ হওতে
পারেন; যেমন সফরের দুয়াতে আমরা বলে থাকি,
‘আন্তাস সাহিবু ফিসসাফার আলখালিফাতু ফিল আহলে।’ একদা আবু বকর
সিদ্দিকি (রঃ) কে ‘আল্লাহর খলীফা বলা হলে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি
আল্লাহর খলীফা নই। বরং আমি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এর
খলীফা।’ ( বানী সিঃ যযীফাহ ৮৫ নং)
✔ ৬৪৫ প্রশ্নঃ অনেকে বলে, ‘স্বলাত পড়ে কি হবে? স্বলাত পড়ে কে বড়লোক হয়েছে?’
এ কথা কি ঠিক?
উত্তরঃ এ কথা দুনিয়াদারী
দৃষ্টিভঙ্গির ফলশ্রুতি। যেহেতু স্বলাত পড়ে ইহলোকে বড়লোকে হওয়া জায় না। বরং স্বলাত
পড়ে পরলোক বড়লোক হওয়া যায়। স্বলাত ইহকালে মানুষেকে অশ্লীলতা ও নোংরামি থেকে দূরে
রেখে মানুষকে মানুষ করে রাখে, সঠিক
মুসলিম বানায়। আর পরকালে তাকে ইচ্ছা সুখের বাসস্থান
দান করে। পরন্ত স্বলাত পড়লে ইহকালের সুখ নয়, বরং পরকালের
সুখ লাভের জন্যই পড়া উচিত।
উত্তরঃ এ কথাটি ঠিক নয়।
তাছাড়া এ কথা অর্থহীন ও বতে। কারণ, দেশ
প্রেম মানুষের প্রকৃতিগত ব্যপার, ঈমানের ব্যাপার নয়। যেহেতু
ঐ প্রেম কাফেরেরও থাকে। (বানী, সিযঃ ৩৬)
✔ ৬৪৭ প্রশ্নঃ কোন
সন্মানিত ব্যক্তিকে বা শ্বশুরকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করা বৈধ কি?
উত্তরঃ কোন সন্মানিত
ব্যক্তিকে বা শ্বশুরকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করায় কোন দোষ নেই। যেমন দোষ নেই নিজের
ছেলে ছাড়া অন্য কোন স্নেহভাজনকে ‘বেটা’ বলে সম্বোধন করা। এ সম্বোধনের উদ্দেশ্য
থাকে পিতার মত শ্রদ্ধা এবং পুত্রের মতো স্নেহ প্রকাশ। পিতৃতুল্যকে ‘পিতা’ বলা এবং
পুত্রতুল্যকে ‘বেটা’ বলা, তদনুরূপ
মাতৃতুল্যকে ‘মাতা’ বা ‘মা’ বলা এবং কন্যতুল্যকে ‘বেটি’ বলায় কোন বংশীয় সম্বন্ধ
উদ্দিষ্ট থাকে না।
আল কোরআনে জন্মদাত্রী মা ছাড়া অন্য মহিলাকে
‘মা’ বলার কথা এসেছে। মহানবী (ﷺ) এর
স্ত্রীদেরকে মুমিনদের মা বলা হয়েছে।
নবী, বিশ্বাসীদের
নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয় এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা। (আহযাবঃ ৬)
অতঃপর তারা জখন ইউসুফের নিকট উপস্থিত হল, তখন সে তার পিতা মাতাকে নিজের কাছে স্থান দান করল এবং বলল, ‘আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায়
নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন।’ (ইউসুফঃ ৯৯)
ইউসুফ তার পিতামাতাকে সিংহাসনে বসাল। (ইউসুফঃ
১০০ )
উক্ত আয়াতে ইউসুফ (রঃ) এর পিতামাতা বলে তার
পিতা ও খালাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তার মায়ের ইন্তিকাল পূর্বেই হয়ে গিয়েছিল।
নিজ জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলার কথাও
এসেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ইয়াকুবের নিকট জখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা
কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে জখন নিজ পুত্র গণকে জিজ্ঞাসা
করেছিল, ‘আমার (মৃত্যুর) পর তোমরা কিসের উপাসনা করবে?’
তারা তখন বলেছিল, ‘আমরা আপনার উপাস্য ও
আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের উপাস্য,
সেই অদ্বিতীয় উপাস্যের উপাসনা করব। আর আমরা তার কাছে
আত্মসমর্পণকারী।’ (বাকারাহঃ ১৩৩)
এখানে পিতৃব্য, পিতামহ
-প্রপিতামহকেও ‘পিতা’ বলেই আখ্যায়ন করা হয়েছে। আর বিদিত যে, ইসমাইল (আঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর চাচা ছিলেন।
সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে যেভাবে সংগ্রাম করা
উচিত; তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি
দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনটা আরোপ করেননি; এটা
তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি
পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এই গ্রন্থেও ; যাতে রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী সরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষী সরূপ হও মানব
জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা জামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর
এবং আল্লাহকে অবলম্বন কর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি! (হাজ্জঃ ৭৮)
এখানে ইব্রাহিম (আঃ) কে মুসলিমদের ‘পিতা’ বলে
উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি উম্মাহর নিকট পিতৃতুল্য।
যেমন আমাদের নবী (ﷺ) ও বলেছেন,
“আমি তো তোমাদের পিতৃতুল্য, তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি...।” (আবু দাউদ)
সুতরাং তিনি আমাদের পিতৃতুল্। তবে তিনি কারো
পিতা নন অর্থাৎ জনক নন। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের
পিতা নন, বরং সে আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী। আল্লাহ
সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” ( আহযাবঃ ৪০)
যেমন তার স্ত্রীগণ তোমাদের জননী না হয়েও
‘তোমাদের মাতা’। অনুরূপ তিনি তোমাদের
জনক না হয়েও সন্মানে তোমাদের ‘পিতা’। কোন
কোন কিরাতে এসেছে ,
“নবী বিশ্বাসীদের নিকট তাদের প্রাণ
অপেক্ষাও অধিক প্রিয় এবং এবং তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা স্বরূপ। আর সে তাদের পিতা
স্বরূপ। (আজহাবঃ ৬, ইবনে কাসিরাঃ ৬/৩৮১, ফাতহুল কাদির ৪/৩৭২)
আনাস (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তাকে মহানবী (ﷺ) বেটা বলে
সম্বোধন করতেন। (মুসলিম ২১৫১) বরং
ইমাম নওয়াবি স্নেহাস্পদদেরকে বেটা বলে সম্বোধন করা মুস্তাহাব বলেছেন।
মত কথা, পরস্পরের
সম্বোধনে এই শ্রেণীর শ্রদ্ধা ও স্নেহ সূচক শব্দ ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই।
পক্ষান্তরে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “সবচেয়ে বড় মিথ্যারোপ হল সেই ব্যক্তির কাজ, যে
পরের বাপকে নিজ বাপ বলে দাবি করে অথবা তার চক্ষুকে তা দেখায়, যা সে (বাস্তবে) দেখেনি। (অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার মিথ্যা দাবি করে) অথবা
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) যা বলেননি, তা তার প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপ করে।” (বুখারি)
“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে,
অথচ সে জানে যে, সে তার বাপ নয়, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম।” (বুখারি
৬৭৬৬, ৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩ নং,
আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ )
“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে
দাবী করে সে জানাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধই ৫০০ বছরের দূরবর্তী স্থান
থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ ২/১৭১, ইবনে মাজাহ ২৬১১,
সহিহুল জামে ৫৯৮৮ নং)
“যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে
দাবী করে অথবা তার (স্বাধীনকারী) প্রভু ছাড়া অন্য প্রভুর প্রতি সম্বন্ধ জুড়ে,
সে ব্যক্তির উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অবিরাম অভিশাপ।” (আবু
দাউদ, সহিহুল জামে ৫৯৮৭ নং)
এ সবের অর্থ সম্বোধনে বাপ বলা নয়। এ সবের অর্থ
হল, নিজের বাপকে অস্বীকার করা এবং কোন
স্বার্থে অন্য কোন পুরুষকে নিজের বাপ বলে দাবী করা। নিজের বংশকে অস্বীকার করে অন্য
বংশের সূত্র জুড়ে নেওয়া। এই জন্য হাদিসে এসেছে, নবী (ﷺ) বলেছেন, “অজ্ঞাত বংশের সম্বন্ধ দাবী করা অথবা ছোট বা নিচু হলে তা অস্বীকার করা মানুষের
জন্য কুফুরি।” (আহমাদ প্রমুখ, সহিহুল জামে ৪৪৮৬ নং)
✔ ৬৪৮ প্রশ্নঃ অনেক
লোককে কোন কাজে নিষেধ করতে গেলে বলে, ‘সবাই
তো এটা করে !’ কেউ বলে, ‘লোকে তো করছে !’ কেউ বলে,
‘এত লোক করছে, তারা কি ভুল পথে আছে নাকি?’
ইত্যাদি। তাদের এমন বলা বৈধ কি?
উত্তরঃ লোকের দোহাই দিয়ে কোন
কাজ করা বা বর্জন করা কোন মুসলিমের উচিত নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বর্তমানে সরকার গঠন
করতে পারে, সত্য গঠন করতে পারে না।
মহান আল্লাহ বলেন,
“আর যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের
কথামত চল, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে
দেবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে এবং তারা কেবল অনুমানভিত্তিক কথাবার্তাই
বলে থাকে।” (আনআমঃ ১১৬)
“তুমি যতই আগ্রহী হও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়।” (ইউসুফঃ ১০৩)
“তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে,
কিন্তু তার অংশী স্থাপন করে।” (ইউসুফঃ ১০৬)
সুতরাং দ্বীনের কাজে মুসলিমের দলীল হল আল্লাহর
কিতাব ও তার রাসুল (ﷺ) এর হাদিস
এবং সলফদের আমল। মান্যকারী লোকের সংখ্যা কম হলেও সত্যই সর্বদা বরণীয়। লোকের দোহাই
দিয়ে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া মুসলিমের জন্য শোভনীয় নয়। (ইবনে
উসাইমিন)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“যখন বিশ্বাসীদেরকে তাদের মধ্যে মীমাংসা
করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তার রাসুলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা তো কেবল ওই কথাই বলে, ‘আমরা
শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম।’ আর ওরাই হল সফলকাম।” (নূরঃ ৫১)
✔ ৬৪৯ প্রশ্নঃ অনেক
মানুষকে সত্যের দিশা দিতে গেলে বাপ দাদার দোহাই দেয়। অনেকে কোন বড় আলেম বা নেতার
দোহাই দেয়। এমন দোহাই দিয়ে কি সত্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত?
উত্তরঃ অবশ্যই না।
প্রত্যেকের বাপ দাদা তার নিজের কাছে শ্রদ্ধেয়। কিন্তু প্রত্যেকের বাপ দাদা যে
হকপন্থী, তার নিশ্চয়তা কোথায়? হকের মাপকাঠি কোন ব্যক্তিত্ব নয়, হকের মাপকাঠি
হল কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ। বাপ দাদার দোহাই দিয়ে হক প্রত্যাখ্যান করার রোগ অনেক
পুরাতন। কুরআন মজিদের বহু জায়গায় সে কথা উল্লেখিত রয়াছে। মহান আল্লাহ দাদুপন্থিদের
ব্যাপারে বলেছেন,
“আর যখন তাদের বলা হয়, ‘আল্লাহ জা অবতীর্ণ করেছেন, তার তোমরা অনুসরণ
কর।’ তারা বলে, ‘(না-না) বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের
যাতে (মতামত ও ধর্মাদর্শে ) পেয়েছি, তার অনুসরণ করব।’
যদিও তাদের পিতৃপুরুষগণ কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎ পথেও ছিল না। (বাকারাহঃ ১৭০)
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ জা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে ও রাসুলের দিকে এসো,’ তখন তারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের
যাতে পেয়েছি, তাই আমাদের জন্যও যথেষ্ট ।’ যদিও তাদের
পূর্বপুরুষগণ কিছুই জানত না এবং সৎপথপ্রাপ্ত ও ছিলেন না, তবুও?
(মায়িদাহঃ ১০৪)
যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ জা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার অনুসরণ কর’, তখন তারা বলে, ‘আমাদের বাপ দাদাকে যাতে পেয়েছি,
আমরা তো তাই মেনে চলব।’ যদিও শায়ত্বন তাদেরকে দোজখ যন্ত্রণার
দিকে আহবান করে (তবুও কি তারা বাপ দাদারই অনুসরণ করবে) ? (লুকমানঃ ২১)
“বরং ওরা বলে, আমরা
তো আমাদের পূর্বপুরুষদের এক মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি এবং আমতা তাদেরই পদাঙ্ক
অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত। এভাবে, তোমার পূর্বে কোন জনপদে
যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তাদের মধ্যে যারা
বিত্তশালী ছিল তারা বলত, ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষকে এক
মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।’ (প্রত্যেক
সতর্ককারী) বলত, ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষকে যার অনুসারী
পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট
পথনির্দেশ আনায়ন করি, তবুও কি তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ
ক্রব্যে? (প্রত্যুত্তরে) তারা বলত, ‘তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা
প্রত্যাখ্যান করি।’ সুতরাং আমি ওদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম। অতএব দেখ,
মিথ্যাচারীদের পরিণাম কি হয়েছে? (জুখরুফঃ
২২-২৫)
✔ ৬৫০ প্রশ্নঃ অনেকে
কাবা গৃহের তওয়াফ ও হাজারে আসওয়াদের চুম্বনকে পৌত্তলিকতার সাথে তুলনা করে, তা কি ঠিক?
উত্তরঃ আদৌ ঠিক না। কারণ
তওয়াফে কাবাগৃহে পূজার উদ্দেশ্য হয় না, যেমন
মূর্তিপূজা বা কবরপূজা হয়। আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করে তার আদেশ পালন করা হয় এবং তাতে
তারই সন্তুষ্টি কামনা করা হয়। অনুরূপ হাজারে আসওয়াদের চুম্বনও দেওয়া হয়, যেহেতু তা একটি ইবাদত। তাতে মহানবী (ﷺ) এর অনুসরণ
করা হয় এবং তাতে সওয়াব হয়। আমরা জান্নাতকে ভালবাসি বলে, জান্নাতের পাথরে চুমা দিই। পাথর থেকে কোন বরকতের আশায় নয়। পাথর
চুম্বকের মত চুম্বনকারীর পাপ শোষণ করে না। বরং আল্লাহর নবী (ﷺ) এর
অনুসরণে তাকে চুম্বন দিলে পাপ ক্ষয় হয়। উমার (রঃ) পাথর চুম্বন দেওয়ার সময় বলেছিলেন,
‘(হে পাথর!) আমি জানি তুমি একটা পাথর। তুমি কোন উপকার করতে পার
না, অপকারও না। যদি আমি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে তোমাকে
চুম্বন দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে
চুম্বন দিতাম না। ‘ (বুখারি, মুসলিম, আবুদ দাউদ, তিরমিজি, নাসাই)
0 Comments