আখলাক ও ব্যবহার বিষয়ে প্রশ্নোত্তর


606-626 আখলাক ও ব্যবহার  বিষয়ে প্রশ্নোত্তর
আখলাক ও ব্যবহার
  ✔ ৬০৪ প্রশ্নঃ  কিয়াম’ বৈধ কি ?
উত্তরঃ  কিয়াম’  কয়েক প্রকারের। 
(ক)  কারো তা’যীমের উদ্দেশ্যে কিয়াম করা, যেমন রাজা-বাদশাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হয়। এমন কিয়াম বৈধ নয়। যেহেতু প্রিয় রাসুল () বলেন, “ যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, লক তার জন্য দণ্ডায়মান হক সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে করে নেয়।” (মুনসাদে আহমাদ)
(খ) আগুন্তকের সন্মানার্থে উঠে দাঁড়ানো। তাকে আগে বেড়ে আনার জন্য নয়, তাকে ধরে বসাবার জন্য নয়, তার সাথে মুসাফাহা মুআনাক্বা করার জন্য নয়। সে প্রবেশ করলে অথবা প্রস্থান করলে তার তা’যীমের উদ্দেশ্যে খাড়া হওয়া অতঃপর বসে যাওয়া। এই শ্রেণির ‘কিয়াম’ ও হারাম না হলে মাকরূহ তো বটেই। যেহেতু আনাস (রঃ) বলেন, ‘তাঁদের (সাহাবাদের) নিকট রাসুল () অপেক্ষা অন্য কেউই প্রিয়তম ছিল না। তা সত্বেও তাঁরা যখন দেখতেন, তখন তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। যেহেতু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা অপসন্দ করেন । (তিরমিজি)
(গ) আগুন্তককে আগে বেড়ে আনার জন্য, তাকে ধরে বসাবার জন্য, তার সাথে মুসাফাহা মুআনাক্বা করার জন্য উঠে দাঁড়ানো সুন্নত।
রাসুল () এর কন্যা তার নিকট এলে তিনি তার প্রতি উঠে গিয়ে তার হাত ধরতেন ( মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে তাকে বসাতেন। (আবু দাউদ ৫২১৭, তিরমিজি  ৩৮৭২ নং)
(খন্দকের যুদ্ধ শেষে) সাদ (রঃ) আহত ছিলেন।  ইয়াহুদিদের ব্যপারে  বিচার করার উদেশ্যে রাসুল () তাকে আহূত করেন। তাই তিনি এক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করে জখন তার নিকট পৌঁছলেন তখন রাসুল () আনসারকে লক্ষ করে বললেন, “ তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ এবং ওঁকে নামাও।” সুতরাং (কিছু) সাহাবা উঠে গিয় তাকে গাধার পিঠ থেকে নামালেন। (আহমাদ, আবু দাউদ প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৭ নং)
আর এক প্রকার কিয়াম আছে, যা  মিলাদিরা মিলাদ শেষে করে থাকে। তা বিদআত।
 ✔ ৬০৫ প্রশ্নঃ ক্লাসরুমে শিক্ষক প্রবেশ করলে ছাত্রদের দাঁড়িয়ে সন্মান প্রদর্শন করা বৈধ কি?
উত্তরঃ না, এমন শ্রদ্ধা কিয়ামে বৈধ নয়। যেহেতু আনাস (রঃ) বলেন, ‘ তাঁদের ( সাহাবাদের) নিকট রাসুল () অপেক্ষা অন্য কেউই প্রিয়তম ছিলেন না। তা তা সত্বেও তাঁরা যখন দেখতেন, তখন তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। যেহেতু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা অপসন্দ করেন । (তিরমিজি)
শিক্ষকের জন্য এমন শ্রদ্ধা নেওয়া বৈধ নয়, বৈধ নয় ছাত্রদের জন্য সেই শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আদেশ পালন করা। ( লাজনাহ দায়েমাহ )
 ✔ ৬০৬ প্রশ্নঃ রহিম যদি করিমকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মনে করে অথচ করিম তার বিপরীত হয়, তাহলে রহিমকে সতর্ক করা কি জরুরি? নাকি তা গীবতের পর্যায়ভুক্ত হবে?
উত্তরঃ উদ্দেশ্য যদি রহিমের হিতাকাংক্ষা হয়, তাহলে তা গীবতের পর্যায়ভুক্ত নয়। যেহেতু তামীর দারী (রঃ) বলেন, “ দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করার নাম।” আমরা বললাম, ‘ কার জন্য ?’ তিনি বললেন, “ আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসুলের জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য।” (মুসলিম)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ ()এর  নিকট নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলমানদের জন্য হিত কামনা করার উপর বায়আত করেছি। (বুখারি ও মুসলিম)
 ✔ ৬০৭ প্রশ্নঃ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা কি আদৌ বৈধ নয়?
উত্তরঃ প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়। যদি কাপড়ে তার ছিটা লাগার ভয় না থাকে। নবী () দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। ( বুখারি ২২২৪, মুসলিম ২৭৩ নং) তবে বসে প্রস্রাব করাই উত্তম। যাতে সাবধান হওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল () বলেন, “ তোমরা প্রস্রাব থেকে সাবধানতা অবলম্বন কর। কারণ, অধিকাংশ কবরের আযাব এই প্রস্রাব (থেকে সাবধান না হওয়ার) ফলেই হয়ে থাকে। ( দারাকুত্বনী, সহিহ তারগিব ১৫১ নং)
 ✔ ৬০৮ প্রশ্নঃ  খবরের কাগজ বিছিয়ে খাওয়া, তা দিয়ে প্রস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করা, তার উপ বসা বা পা দেওয়া বৈধ কি?
উত্তরঃ যে কোন কাগজে আল্লাহর নাম অথবা আল্লাহর নামযুক্ত কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম থাকলে অথবা কুরানের আয়াত থাকলে বিছিয়ে খাওয়া, তা দিয়ে প্রস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করা, তার উপর বসা বা পা দেওয়া বৈধ নয়। আমন কুরানের পাতা, বই পুস্তক বা পত্র পত্রিকা পবিত্র জায়গায় দাফন করা অথবা পুড়িয়ে ফেলা বিধেয়। যাতে আল্লাহর নাম বা কুরানের আয়াতের কোন অমর্যাদা না হয়। ( ইবনে বাজ)
 ✔ ৬০৯ প্রশ্নঃ হাতের ইশারায় সালাম দেয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ কেবল হাতের ইশারা করা এবং মুখে সালাম উচ্চারণ না করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তির কাছে আওয়াজ পৌছবে না, সে ব্যক্তিকে সালাম জানাতে হাতের ইশারার সাথে মুখে সালাম দিতে হবে। যেহেতু কেবল হাতের ইশারায় সালাম আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের) সালাম। (সহীহ তিরমিযী ২১৬৮ নং, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৮ নং) অবশ্য নামাজররত ব্যক্তি সালামের জবাব দেবে কেবল হাত বা আঙ্গুলের ইশারায়।(মুসলিম ৫৪০, আবু দাউদ ৯২৫ নং)
 ✔ ৬১০ প্রশ্নঃ অনেকে শ্রদ্ধাভাজনের পা ছুঁয়ে সালাম করে, তা কি বৈধ?
উত্তরঃ পা ছুঁয়ে সালাম করা অমুসলিমদের। আর তা সালাম না তা আসলে প্রণাম। সুতরাং তা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। বৈধ নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য আর জন্য মাথা নত করা।
 ✔ ৬১১ প্রশ্নঃ অনেকে সালাম করার সময় মাথা নত করে, তা কি বৈধ?
উত্তরঃ সালাম ও মুসাফাহাহ করার সময় মাথা নত করা বৈধ নয়। বৈধ নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য আর জন্য মাথা নত করা।(ইবনে উসাইমিন)  
 ✔ ৬১২ প্রশ্নঃ সালামের পর কি শ্রদ্ধাভাজনের হাতে বা কপালে চুমু কি জায়েয?
উত্তরঃ দুই চোখের মাঝে কপাল চুম্বন দেওয়া বৈধ। জাফর হাবসা থেকে ফিরে এলে মহানবী () তার সাথে মুয়ানাকা করে তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) চুম্বন দিয়েছিলেন।( সিলসিলাহ সহিহাহ ৬/১/ ৩৩৮ )
কিছু শর্তের সাথে আলেম (পিতা মাতা বা গুরুজন) দের হাতে বুসা দেওয়া বৈধ।
(ক) শ্রদ্ধাস্পদ যেন গর্বভরে হাত প্রসারিত না করে।
(খ) শ্রদ্ধাকারির মনে যেন তাবাররুক বা বরকত নেওয়ার খেয়াল না থাকে।
(গ) বুসা দেওয়া ও নেওয়াটা যেন কোন প্রথা বা অভ্যাসে পরিণত না হয়।
(ঘ) ওর স্থলে যেন মুসাফাহ পরিত্যক্ত না হয়। ( সিলসিলাহ সহিহাহ ১/৩০২  )
(ঙ) বুসার সময় হাতকে নিয়ে কপালে যেন স্পর্শ না করা হয়।

✔ ৬১৩ প্রশ্নঃ অবৈধ কাজে কি পিতামাতার অনুগত্য করা জায়েয ?
উত্তরঃ পিতামাতার অনুগত্য করা ওয়াজিব। কিন্তু অবৈধ কাজে তাদের অনুগত্য করা বৈধ নয়। পিতামাতা যদি হারাম উপার্জন করতে বলে, পর্দা করতে নিষেধ করে, পণ বা যৌতুক নিতে বলে, শিরক ও বিদআত করতে বলে, তাহলে সে সব কাজে তাদের অনুগত্য করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সৎব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে অংশী করতে বাধ্য করে , জার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না । আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন , অতঃ পর তোমরা যা কিছু করেছ আমি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। ( আনকাবুতঃ ৮)
তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে আমার অংশী করতে পীড়াপীড়ি  করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না, তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সৎভাবে বসবাস করো এবং যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর, অতঃ পর  আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন  এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করব। (লুকমানঃ ১৫)
আর  মহানদী () বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।”  (মুসনাদে আহমদ) 
 ✔ ৬১৪ প্রশ্নঃ পিতামাতা যদি জিহাদে যেতে বাধা দেয় তবে তাদের কথা মানা কি বৈধও?
উত্তরঃ জিহাদ ফার্যে আইন হলে তাদের কথা মেনে ঘরে বসে থাকা বৈধ নয়। ফার্যে কিফায়াহ বা নফল হলে তাদের কথা মেনে তাদের খিদমত করা বেশি জরুরি।  আব্দুল্লাহ ইবনে আমার ইবনুল আস (রঃ) বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর নবীর নিকট এসে বলল, ‘ আমি আপনার সাথে আল্লাহ তাআলার কাছে নেকি পাওয়ার উদেশ্যে হিজরত এবং জিহাদের বায়আত করছি।’ নবী () বললেন, “তোমার পিতা মাতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছে ?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ, বরং দুজনই জীবিত রয়েছে।’ রাসুল () বললেন, “তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে নেকি পেতে চাও?” সে বলল, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি তোমার পিতা মাতার নিকট ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে তাদের খিদমত কর।” ( বুখারি, আর শব্দগুলো মুসলিমের)
উভয়ের জন্য এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি তার নিকট এসে জিহাদ করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, “তোমার পিতা মাতা কি জীবিত আছে?” সে বলল, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “অতএব তুমি তাদের (সেবা) করার মাধ্যমে জিহাদ কর।”

৬১৫ প্রশ্নঃ পিতামাতা মারা যাওয়ার পর তাদের আত্মার কল্যাণের জন্য কি কি করা যায়?
উত্তরঃ তাদের জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো করা যায়ঃ-
(১) তাদের জন্য দুয়া করা যায়। রাসুলুল্লাহ () বলেছেন, “যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিশ নয়;  (ক) সাদকাহ জারিয়াহ,  (খ) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (গ) নেক সন্তান, যে তার জন্য দুয়া করে।” (মুসলিম)
(২) দান খয়রাত করা। এক ব্যক্তি নবী () কে বলল, ‘আমার মা হটাৎ মারা গেছে। আমার ধারনা যে, সে কথা বলার সুযোগ পেলে সাদকাহ করত। সুতরাং আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি, তাহলে কি সে নেকি পাবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।”  (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহর রাসুল () বলেছেন, “মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল ও পুন্যকর্মসমুহ হতে নিশ্চিতভাবে যা এসে তার সাথে মিলিত হয়, তা হল; সেই ইলম, যা সে শিক্ষা করে প্রচার করেছে অথবা নেক সন্তান, যাকে রেখে সে মারা গেছে, অথবা কুরআন মাজিদ, যা সে মিরাসরূপে ছেড়ে গেছে, অথবা মসজিদ, যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে, অথবা মুসাফিরখানা, যা সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে, অথবা পানির নালা যা সে (সেচ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে) প্রবাহিত করে গেছে, অথবা সাদকাহ, যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে। এসব কর্মের সওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার সাথে এসে মিলিত হবে।” (ইবনে মাজাহ, বাইহাকি, ইবনে খুজাইমাহ ভিন্ন শব্দে, সহিহ তারগিব ১০৭ নং)
(৩) হজ্জ উমরাহ করা। আব্দুল্লাহ বইন আমর বলেন, আস বিন ওয়াইল সাহমী তার তরফ হতে ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার অসিয়ত করে মারা যায়। সুতরাং তার ছোট ছেলে হিসাম ৫০ টি দাস মুক্ত করে। অতঃপর তার বড় ছেলে আমর বাকি ৫০ টি দাস মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বললেন, ‘(বাপ তো কাফের অবস্থায় মারা গেছে) তাই আমি এ কাজ আল্লাহর রাসুল () কে জিজ্ঞাসা না করে করব না।’ সুতরাং তিনি নবী () এর নিকট এসে ঘটনা খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি বাকি ৫০ টি দাস তার তরফ থেকে মুক্ত করব?” উত্তরে আল্লাহর রাসুল () বললেন, “ সে যদি মুসলিম হত এবং তোমরা তার তরফ থেকে দাস মুক্ত করতে, অথবা সাদকাহ করতে অথবা হাজ্জ করতে তাহলে তার সওয়াব তার নিকট পৌঁছত।” আবু দাউদ ২৮৮৩নং, বাইহাকি ৬/২৭৯, আহমাদ ৬৭০৪ নং)
(৪) তাদের কোন অসিয়ত থাকলে তা পালন করুন।
(৫) তাদের কোন বন্ধু থাকলে তার খাতির করুন।
(৬) তাদের সম্পর্কের জোরে সকল আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখুন।
আর কোন বিদআতি কাজ করবেন না বা বিদআতি অসিয়াত পালন করবেন না। যেমন- চালসে চাহারাম, ফাতিহা খানি, কুল খানি, মৌলুদ পাঠ ইত্যাদি করবেন না। কোন ভোজবাজি বা দুয়ার অনুষ্ঠান করবেন না। জেনে রাখবেন, যা আপনি তাদের আত্মার কামনার উদেশ্যে আল্লাহর জন্য করবেন, তাই তাদের উপকারে আসবে। পক্ষান্তরে যা নিজের স্বার্থের জন্য করবেন, সুনাম নেওয়ার জন্য করবেন অথবা বদনাম থেকে বাঁচবার জন্য করবেন, তা কোন উপকার দেবে না। সবচেয়ে বেশি উপকারী হিসেবে আপনি প্রত্যেহ প্রত্যেক ফরয নামাজের শেষাংশে তাদের জন্য দুয়া করুন। তাহলে তাদের হক আদায় করতে পারবেন।
 ✔ ৬১৬ প্রশ্নঃ সাহাবাগনের চরিত্র অভিনয় করা বৈধ কি?
উত্তরঃ সাহাবাদের যে মর্যাদা আছে, অভিনয়ের ফলে তা ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে অভিনেতা যদি ফাসেক বা কাফের হয়, তাহলে অবৈধতার মাত্রা বেশি। বলা বাহুল্য, অভিনেতা সচ্চরিত্রবান মুসলিম হলে তাদের চরিত্রের অভিনয় বৈধ নয়। (ইবনে উসাইমিন)
 ✔ ৬১৭ প্রশ্নঃ কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে হাত তালি দেয়া বৈধ কি?
উত্তরঃ কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে অথবা কোন মুগ্ধকারী বিষয় দেখে তকবির বা তসবিহ বলাই বিধয়। তবে জামায়াতিভাবে নয়, একাকী। তবে তবে হাততালি দেওয়া যে হারাম, তা বলতে পারব না। মুশরিকরা স্বলাতে স্বলাতে সিটি বাজাতো ও হাততালি দিতো। সে ছিল ইবাদতে। মহিলাদের জন্য হাততালিও হারাম। আর আলোচ্য হাততালি হল লেকচারের। সুতরাং ইবাদতে হাততালি নিষিদ্ধ অথবা মহিলাদের বলে লেকচারে তা করা যাবে না, তা নয়। তবুও বলব তা মাকরুহ, তা না করাই ভাল। (ইবনে উসাইমিন)
 ✔ ৬১৮ প্রশ্নঃ অমুসলিম আয়া রেখে তার উপর সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব দেওয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ অমুসলিম আয়া রেখে শিশু লালন পালনের দায়িত্ব তার উপর দিলে তার আকিদা ও চরিত্রে শিশু প্রতিপালিত হবে। সুতরাং তা বৈধ নয়। অনুরূপ নামে মাত্র মুসলিম আয়া রেখে সন্তানের আকিদা ও চরিত্র বিনাশ করা উচিত নয় মা বাপের। আল্লাহর রাসুল () বলেন, “ সুসঙ্গির ও কুসঙ্গীর উপমা তো আতরওয়ালা  ও কামারের মত। আতরওয়ালা (এর পাশে বসলে) হয় সে তোমার দেহে (বিনামূল্যে) আতর লাগিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার নিকট থেকে তা ক্রয় করবে। তা না হলেও (অন্ততপক্ষে)  তার নিকট থেকে এমনি সুবাস পেতে থাকবে। পক্ষান্তরে কামার (এর পাশে বসলে) হয় সে (তার এগুণের ফিনকি দ্বারা) তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলবে, না হয় তার নিকট থেকে বিকট দুর্গন্ধ পাবে।” (বুখারি ২১০১, মুসলিম ২৬২৮ নং)
 ✔ ৬১৯ প্রশ্নঃ ট্রাফিক আইন মেনে চলা কি জরুরি। বিশেষ করে সিগনালের বাতি যখন লাল থাকে এবং অপর দিকে কোন গাড়ি না থাকে, তখনও কি তা মানা জরুরি?
উত্তরঃ এই আইন সকলের নিরাপত্তার জন্য, এমনকি খোদ চালকেরও নিরাপত্তার জন্য। সুতরাং তা মান্য করা জরুরি। গাড়ি নেই দেখে হটাৎ এসেও যেতে পারে। সুতরাং নিজের দিকের সিগন্যাল বাতি সবুজ না হওয়া পর্যন্ত পার হওয়া বৈধ নয়। শরিয়তের একটি ব্যাপক নিতি হল,
কারো জন্য ওপরের কোন প্রকার ক্ষতি করা বৈধ নয়। কোন দুজনের জন্য প্রতিশোধমূলক পরস্পরকে ক্ষতিগ্রস্ত করাও বৈধ নয়।” (আহমাদ, মালেক, ইবনে মাজাহ ২৩৪০, ২৩৪১ নং)
 ✔ ৬২০ প্রশ্নঃ ধূমপান নিষেধ’ লেখা সত্বেও অনেকে তা পালন করে না। সরকারীভাবে তা নিষেধ করা হলে সে নির্দেশ অমান্য করার জন্য ধূমপায়ী কি গোনাহগার হবে না?
উত্তরঃ সে দুইভাবে পাপী হবে। শরয়ী আইন অমান্য করে ধূমপান করার জন্য। আর সরকারী আইন ও নির্দেশ অমান্য করার জন্য। (ইবনে বায )
  ৬২১ প্রশ্নঃ নিজের জায়গা ছেড়ে কোন সন্মানিতকে বসতে দেওয়া কি ইসলামে আদবের পর্যায়ভুক্ত?
উত্তরঃ নিজের জায়গা ছেড়ে কোন সন্মানিতকে বসতে দেওয়া ইসলামী আদবের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং আদব হল নড়ে সরে বসে পাশে জায়গা করে দেওয়া। আর যার জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে, তার উচিত হল, সে জায়গায় না বসা। ইবনে উমার এইরূপ করতেন। (আলবানি)
 ✔ ৬২২ প্রশ্নঃ কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ জানি, কিন্তু সে দিকে থুথু ফেলাও কি নিষেধ? কিবলার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারটা কি স্বলাতের মধ্যে সীমিত নয়?
উত্তরঃ আনাস (রঃ) বলেন, নবী () কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন। এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারার সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘসে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, “তোমাদের কেউ যখন স্বলাতে দাঁড়ায়, তখন সে তাঁর প্রতিপালক এর সাথে (কানেকানে ফিসফিস করে) কথা বলে।  আর তাঁর প্রতিপালক তাঁর ও তাঁর কিবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে; বরং তাঁর বামে ও পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তাঁর এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ কর।” (বুখারি-মুসলিম)
এ নিষেধ হল স্বলাতের ব্যাপারে। কিন্তু আমভাবেও কিবলার দিকে থুথু ছুড়ে ফেলতে নিষেধ এসেছে। কিবলার প্রতি আদব প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল () বলেছেন, “কিবলার দিকে যে কফ ফেলে, তাঁর চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে।” (বাযযার, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, সহিহ তারগিব ২৮১ নং)
 ✔ ৬২৩ প্রশ্নঃ যে নামে আত্নপ্রশংসা হয়, সে নাম রাখা বৈধ নয়। তাহলে ‘ইযযুদ্দীন, মুহিউদ্দিন, নাসিরুদ্দিন ইত্যাদি নাম রাখা বৈধ কি?
উত্তরঃ না, উক্ত সকল নাম তথা ঐ শ্রেণীর কোন নাম রাখা বৈধ নয়, যাতে আত্নপ্রশংসা হয়। মহানবী () এই শ্রেণীর নাম শুনলে তা পরিবর্তন করে দিতেন। (বানী, দ্রঃ সিঃ সহিহাহ হাদিস নং ২০৭- ২১৬)
 ✔ ৬২৪ প্রশ্নঃ লোকের ভয়ে সত্য গোপন করা অথবা সত্যের আপলাপ করা বৈধ কি?
উত্তরঃ লোকে কষ্ট দেবে--- এই ভয়ে, গালি দেবে, মারবে অথবা রুযী বন্ধ করে দেবে--- এই ভয়ে, চাকরী চলে যাবার ভয়ে অথবা সন্মান ও পজিশন চলে যাওয়ার ভয়ে সত্য গোপন করা অথবা সত্যের আপলাপ করা বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী () বলেছেন,
লোকের ভয় যেন কোন ব্যক্তিকে এমন কোন ‘হক’ বলতে বাধাগ্রস্ত না করে, যা সে জেনেছে, দেখেছে অথবা শুনেছে।” (সিঃ সহিহাহ ১৬৮ নং)
উবাদাহ ইবনে শ্বামেত (রঃ) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ () এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তার পূর্ণ অনুগত্য করব। রাষ্টনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরি দেখ, ষে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলিল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ (বুখারি-মুসলিম)
 ✔ ৬২৫ প্রশ্নঃ শোনা যায়, জুম্মার দিন সফর করতে নেই। --- এ কথা কি ঠিক?
উত্তরঃ জুম্মার দিন সফর নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন সহিহ দলিল নেই। বরং একদা উমার (রঃ) একটি লোককে বলতে শুনলেন, ‘আজ জুম্মার দিন না হলে আমি সফরে বের হতাম।’ তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি বের হও। কারণ জুমআহ সফরে বাঁধা দেয় না।’ (বাইহাকি, সিঃ যয়ীফাহ ২১৯ নং) অবশ্য অনেকে বলেছেন, জুম্মার আজান হয়ে গেলে জরুরি ছাড়া সফর করা বৈধ নয়।
 ✔ ৬২৬ প্রশ্নঃ দেশ প্রেম ইমানের অংশ কথাটি কি ঠিক?

উত্তরঃ  মোটেই না। যেহেতু দেশ প্রেম আত্নপ্রেম ও ধন প্রেমের মতোই মানুষের প্রকৃতিগত আচরণ। সুতরাং ষে প্রেম দ্বারা কেউ প্রশংসিত হতে পারে না এবং তা ঈমানের কোন জরুরী জিনিসও নয়। বলা বাহুল্য, দেশপ্রেম মু’মিন কাফের সকলেই সমান। (সিঃ যায়ীফাহ )
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in ffgewffzzDXoon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments