Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

সুরা আল বাকারা ১৭৪ থেকে ২০৭ পর্যন্ত

তাফসীরঃ ফাতহুল মাজীদ
ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এই. ই. আর. এফ)
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সংকলিত।ও সম্পাদিত
সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ-আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
 সম্পাদনা পরিষদঃ-
প্রফেসর এ.কে.এম শামসুল আলম
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুযযাম্মিল আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ লাকমান হুসেন
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী |
অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আল-মাদানী
শায়খ মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন সালাফী
শায়খ ড. হাফিয় রফিকুল আল-মাদানী
শায়খ মাসউদুল আলম উমরী
শায়খ মুফায়যাল হুসাইন আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ঈসা মিয়া আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ইরফান আলী আব্বাস আল-মাদানী
শায়খ হাবিবুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী |
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
পরিবেশনায়ঃ আল খাইর পাবলিকেশন্ম, নাজির বাজার, | ঢাকা।
সাম্প্রতিককালে সংকলিত অন্যতম কিছু তাফসীরের মধ্যে তাফসীর ফাতহুল মাজীদ উল্লেখযোগ্য। এই তাফসীরটি শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর তত্ত্বাবধানে সংকলন করা হয়েছে।
খণ্ড সংখ্যাঃ ৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৯৮ (৮২৪ + ৯৬০ + ৮১৪)
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫০ (৯০০ + ৮৫০ + ৮০০)
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
০১. আরবী আয়াতের পাশাপাশি অতি সহজ - সরল বাংলা অনুবাদ।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারীস্বহীহ মুসলিমসুনান আবূ দাউদসুনান তিরমিযিসুনান নাসাঈসুনান ইবনে মাজাহমুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণমজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
2:1
الٓـمّٓ ۚ﴿۱
 সুরার নাম- বাকারা,(বকনা- \বাছুর)

2:174
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ یَشۡتَرُوۡنَ بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ۙ اُولٰٓئِکَ مَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ اِلَّا النَّارَ وَ لَا یُکَلِّمُہُمُ اللّٰہُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ لَا یُزَکِّیۡہِمۡ ۚۖ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۷۴
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৪ থেকে ১৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
১৫৯ নং আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যারা জেনেশুনে সত্য ও রাসূলের গুণাবলী গোপন করে এবং স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
১. তারা যে অর্থ ভোগ করে তা জাহান্নামের আগুন।
২. আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে কথা বলবেন না।
৩. তাদেরকে পবিত্র করবেন না।
৪. তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

এসব লোকেরাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতাকে, ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তিকে বদল করে নিয়েছে।

তারা উপরোক্ত শাস্তি ভোগ করবে এ কারণে যে, আল্লাহ তা‘আলা যে সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে।
যারা কিতাবের ব্যাপারে মতানৈক্য করে কিছু অংশের ওপর ঈমান আনে আর কিছু অংশের সাথে কুফরী করে তারা সত্য হতে বিচ্যুত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জেনেশুনে সত্য গোপন করা হারাম।
২. আহলে কিতাবের আলিমগণ যে পথ অবলম্বন করে সে পথ অবলম্বন করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
৩. কুরআন নিয়ে মতানৈক্য করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
2:175
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اشۡتَرَوُا الضَّلٰلَۃَ بِالۡہُدٰی وَ الۡعَذَابَ بِالۡمَغۡفِرَۃِ ۚ فَمَاۤ اَصۡبَرَہُمۡ عَلَی النَّارِ ﴿۱۷۵
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৪ থেকে ১৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
১৫৯ নং আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যারা জেনেশুনে সত্য ও রাসূলের গুণাবলী গোপন করে এবং স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
১. তারা যে অর্থ ভোগ করে তা জাহান্নামের আগুন।
২. আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে কথা বলবেন না।
৩. তাদেরকে পবিত্র করবেন না।
৪. তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
এসব লোকেরাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতাকে, ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তিকে বদল করে নিয়েছে।

তারা উপরোক্ত শাস্তি ভোগ করবে এ কারণে যে, আল্লাহ তা‘আলা যে সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে।

যারা কিতাবের ব্যাপারে মতানৈক্য করে কিছু অংশের ওপর ঈমান আনে আর কিছু অংশের সাথে কুফরী করে তারা সত্য হতে বিচ্যুত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জেনেশুনে সত্য গোপন করা হারাম।
২. আহলে কিতাবের আলিমগণ যে পথ অবলম্বন করে সে পথ অবলম্বন করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
৩. কুরআন নিয়ে মতানৈক্য করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
2:176
ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰہَ نَزَّلَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ ؕ وَ اِنَّ الَّذِیۡنَ اخۡتَلَفُوۡا فِی الۡکِتٰبِ لَفِیۡ شِقَاقٍۭ بَعِیۡدٍ ﴿۱۷۶﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৪ থেকে ১৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
১৫৯ নং আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যারা জেনেশুনে সত্য ও রাসূলের গুণাবলী গোপন করে এবং স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
১. তারা যে অর্থ ভোগ করে তা জাহান্নামের আগুন।
২. আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাথে কথা বলবেন না।
৩. তাদেরকে পবিত্র করবেন না।
৪. তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।


এসব লোকেরাই হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতাকে, ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তিকে বদল করে নিয়েছে।
তারা উপরোক্ত শাস্তি ভোগ করবে এ কারণে যে, আল্লাহ তা‘আলা যে সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে।

যারা কিতাবের ব্যাপারে মতানৈক্য করে কিছু অংশের ওপর ঈমান আনে আর কিছু অংশের সাথে কুফরী করে তারা সত্য হতে বিচ্যুত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জেনেশুনে সত্য গোপন করা হারাম।
২. আহলে কিতাবের আলিমগণ যে পথ অবলম্বন করে সে পথ অবলম্বন করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
৩. কুরআন নিয়ে মতানৈক্য করতে সতর্ক করা হচ্ছে।
2:177
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّہٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَہۡدِہِمۡ اِذَا عٰہَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৭ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াত কেবলা সংক্রান্ত ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। একদিকে ইয়াহূদীরা নিজেদের কেবলার (বাইতুল মুকাদ্দাসের পশ্চিম দিক) অন্যদিকে খ্রিস্টানরা তাদের কেবলার (বাইতুল মুকাদ্দাসের পূর্বদিক)-কে খুব গুরুত্ব দিচ্ছিল এবং তা নিয়ে গর্বও করছিল। আর অপরদিকে মুসলিমদের কেবলার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করছিল। যার কারণে অনেক মুসলিমও অনেক সময় আন্তরিক দুঃখবোধ করত। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন: প্রকৃতপক্ষে পশ্চিম ও পূর্ব দিকে মুখ করাটাই নেকীর কাজ নয়- যদি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ও শরীয়ত অনুপাতে না হয়।

মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করেন কে তাঁর আনুগত্য করতঃ আদেশ বাস্তবায়ন করে, তিনি যেদিকেই মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করতে বলেন সেদিকেই মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করে এবং তিনি যা শরীয়ত সিদ্ধ করে দেন তার একান্ত অনুগত হয়। আর এটাই হল সৎ কাজ, তাকওয়া ও পরিপূর্ণ ঈমান। তারপর আল্লাহ তা‘আলা মৌলিক আকীদা ও আমলের বর্ণনা দিয়েছেন। আর তা হলো:

আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনা অর্থাৎ তাঁর রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যার এককত্বে বিশ্বাস রাখা ও সেই অনুপাতে আমল করা এবং কুরআন ও সহীহ সুন্নাহয় বর্ণিত নাম ও গুণাবলীর কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বিকৃতি করা হতে মুক্ত থেকে বিশ্বাস রাখা। পরকাল তথা মৃত্যু, পুনরুত্থান, হাশর, হিসাব, জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস করা, ফেরেশতারা আল্লাহ তা‘আলার মাখলুক ও তারা আল্লাহ তা‘আলার আদেশ বাস্তবায়নে সর্বদা রত বিশ্বাস রাখা। সকল আসমানী কিতাবের ওপর ঈমান আনা। নাবীদের মধ্যে কোন পার্থক্য না করে সকলের প্রতি ঈমান আনা। সম্পদের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও ব্যয় করা।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল কোন্ দান উত্তম? তিনি বললেন:

أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ تَخْشَي الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَي
সর্বোত্তম দান হল- তুমি সুস্থ ও মালের প্রতি আসক্ত অবস্থায় দান করবে। যখন তুমি ধনী হবার আশা কর এবং দরিদ্র হবার আশঙ্কা কর। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১৯)

ইয়াতীম হল- প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পূর্বে যার পিতা মারা গেছে। মা মারা গেলে শরীয়ত তাকে ইয়াতীম বলে না।

الْبَأْسَآءِ দ্বারা দরিদ্র এবং অতিব অভাবী বুঝানো হয়েছে। الضَرآءَ দ্বারা ক্ষতি ও রোগ আর البأس দ্বারা যুদ্ধ ও তার কাঠিন্যতাকে বুঝানো হয়েছে। এ তিন অবস্থায় ধৈর্য ধরা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার বিধানাবলীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা বড় কঠিন কাজ, তাই এ তিনটি অবস্থাকে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিজে যা নেকী বা গুনাহর কাজ মনে করব তাই নেকী বা গুনাহর কাজ এমনটা নয়। বরং নেকী ও গুনাহর কাজ কোন্টি তা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে সাব্যস্ত হবে।
২. ঈমানের রুকনের পরিচয় জানতে পারলাম।
৩. সালাত ও যাকাতের গুরুত্বের বর্ণনা জানলাম।
৪. অঙ্গীকার পূরণের গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. তাক্বওয়া হল ইবাদতের মূল।
2:178
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِصَاصُ فِی الۡقَتۡلٰی ؕ اَلۡحُرُّ بِالۡحُرِّ وَ الۡعَبۡدُ بِالۡعَبۡدِ وَ الۡاُنۡثٰی بِالۡاُنۡثٰی ؕ فَمَنۡ عُفِیَ لَہٗ مِنۡ اَخِیۡہِ شَیۡءٌ فَاتِّبَاعٌۢ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ اَدَآءٌ اِلَیۡہِ بِاِحۡسَانٍ ؕ ذٰلِکَ تَخۡفِیۡفٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی بَعۡدَ ذٰلِکَ فَلَہٗ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۷۸
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৮ ও ১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় আরবের দু’টি গোত্রকে কেন্দ্র করে। যার একটিকে অপেক্ষাকৃত বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানি মনে করা হত। যার কারণে সম্মানের দাবিদার গোত্রের কোন কৃতদাস হত্যা করলে অপর গোত্রের স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত, কোন মহিলাকে হত্যা করলে তার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত।

এরূপ হতাহতের ঘটনা দু’টি মুসলিম গোত্রে ঘটে গেল যা জাহেলী যুগ থেকে চালু ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ জানালো। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ে জাহিলী প্রথা বাতিল করে দেয়। (আয়সারুত তাফাসীর, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২৯)

জাহিলী যুগ যেখানে ছিল না কোন সুষ্ঠু আইন-কানুন, ছিল না কোন মানবতা। ছিল শুধু অন্যায় অবিচার, তাদের বিধান ছিল ‘জোর যার মুল্লুক তার’। তাদের এক প্রকার জুলুম ছিল এ রকম যে, যদি সবল ও সম্মানিত গোত্রের কোন পুরুষ লোক হত্যা করা হত, তাহলে কেবল হত্যাকারীকেই তারা হত্যা করত না, কখনো কখনো পুরো পরিবার ধ্বংশ করে দিত। মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে, কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত।

আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম সমাজকে এহেন অবস্থা থেকে মুক্ত করে ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার বিধান দিলেন ‘কিসাস’-এর মাধ্যমে। হত্যাকারী পুরুষ, মহিলা, স্বাধীন ও ক্রীতদাস যেই হোক, নিহত ব্যক্তির কিসাসস্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ
মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান। (আবূ দাঊদ হা: ২৭৫১, মুসনাদ আহমাদ হা: ৬৭১৭, হাদীসটি সহীহ)।
আয়াতের সরল অনুবাদে বলা হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী হত্যা করা হবে। এমতাবস্থায় যদি স্বাধীন ব্যক্তি ক্রীতদাসকে হত্যা করে বা পুরুষ মহিলাকে হত্যা করে তাহলে কি ক্রীতদাসের বদলে স্বাধীন ব্যক্তিকে আর মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা হবে না? উত্তর আয়াতটির এ শব্দগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাজানোর কারণ হল- অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট। অর্থাৎ জাহিলী যুগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেমন কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত বা মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত এমন করা যাবে না। বরং কিসাসে হত্যাকারীকেই হত্যা করা হবে। তাতে সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক, সবল হোক আর দুর্বল হোক, উঁচু বংশের হোক আর নীচু বংশের হোক। এটাই হলো মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
وَکَتَبْنَا عَلَیْھِمْ فِیْھَآ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِﺫ وَالْعَیْنَ بِالْعَیْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّﺫ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌ)
আমি তাদের জন্য তাতে ফরয করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম।”(সূরা মায়িদা ৫:৪৫)
(فَمَنْ عُفِیَ لَھ۫) ক্ষমা করে দেয়া দু’ভাবে হতে পারে:
১. বিনিময় ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ক্ষমা করা।
২. কিসাসের পরিবর্তে রক্তপণ গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালভাবে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(
أَخِيْهِ) “তার ভাই” অর্থাৎ হত্যাকারী কাফির হবে না। কারণ এখানে ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীনি ভাই। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ অপরাধ করলে একজন মুসলিম কাফির হতে পারে না, যদি সে ঐ অপরাধ করা বৈধ মনে না করে।
(
ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদর প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করে তাদের উপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। আর তা হলোঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।
(
فَاتِّبَاعٌۭ بِالْمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ)
অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধি মেনে চলবে এবং নিষ্ঠার সাথে দিয়াত আদায় করে দেবে। তোমাদের পূর্বের লোকেদের ওপর আরোপিত কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৯৮)

তবে কিসাস আদায় করা, দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়া নিহত পরিবারের ইখতিয়ারাধীন, তাদেরকে কোনটাতে বাধ্য করা যাবেনা। এতে হত্যাকারী সন্তুষ্ট থাকুক আর নাই থাকুক।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কোন ব্যক্তির (অধীনস্থ) কাউকে হত্যা করা হয়ে থাকলে তার দু’টি অবকাশ রয়েছে: এক. সে ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করতে পারবে। দুই. ইচ্ছা করলে কিসাস আদায় করতে পারবে। (সহীহ বুখারী হা: ১১২, ২৪৩৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৫৫)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে: তাকে ক্ষমা করেও দিতে পারবে এ অধিকার রয়েছে। (ইরওয়া হা: ২২২০)

আর একজন ব্যক্তিকে হত্যার কারণে আক্রোশমূলক একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। তবে একাধিক ব্যক্তি একজনকে হত্যা করার কাজে সম্পৃক্ত থাকলে তাদের সবাইকে হত্যা করা যাবে। (ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীর দিয়াত অধ্যায়ে সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন: উমার (রাঃ) একজন সানআ ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে সাতজনকে হত্যা করেছেন)। অনুরূপ পিতা সন্তানকে হত্যা করলে সন্তানের বদলে পিতাকে হত্যা করা যাবেনা। কারণ পিতা মূল আর সন্তান হল শাখা। (তিরমিযী হা: ১৪০০, ইবনু মাযাহ হা: ২৬৪৬, সহীহ) আবার কোন কাফিরকে মুসলিম হত্যা করলে তার বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (সহীহ বুখারী হা: ১১১)

(
ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান’অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।

দিয়াত বা রক্তপণ গ্রহণ করার পর অথবা ক্ষমা করার পরও যদি কেউ হত্যাকারীকে হত্যা করে তাহলে তা সীমালংঘন হবে। তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এ কিসাসে তোমাদের জীবন রয়েছে। অর্থাৎ যখন হত্যাকারীর এ ভয় থাকবে যে, হত্যা করলে তাকেও হত্যা করা হবে তখন সে অবশ্যই হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। তাই যে সমাজে কিসাস বলবত থাকবে, সে সমাজ হত্যা, খুন-খারাবী ও অন্যায় থেকে মুক্ত থাকবে। ফলে সমাজে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। এটাই হল কিসাসের মাঝে জীবন এর ব্যাখ্যা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সমাজে কুরআন-সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যায় অবিচার, হত্যার ছড়াছড়ি ও অশ্লীলতা বেহায়াপনা থেকে মুক্ত থাকবে।
২. ইসলাম নারী-পুরুষ, স্বাধীন ও ক্রীতদাস, ধনী-গরীব সকলের জীবনের সমান মূল্যায়ণ করেছে।
৩. শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম।
2:179
وَ لَکُمۡ فِی الۡقِصَاصِ حَیٰوۃٌ یّٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۹
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৭৮ ও ১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:

এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় আরবের দু’টি গোত্রকে কেন্দ্র করে। যার একটিকে অপেক্ষাকৃত বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানি মনে করা হত। যার কারণে সম্মানের দাবিদার গোত্রের কোন কৃতদাস হত্যা করলে অপর গোত্রের স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত, কোন মহিলাকে হত্যা করলে তার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত।

এরূপ হতাহতের ঘটনা দু’টি মুসলিম গোত্রে ঘটে গেল যা জাহেলী যুগ থেকে চালু ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ জানালো। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ে জাহিলী প্রথা বাতিল করে দেয়। (আয়সারুত তাফাসীর, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২৯)

জাহিলী যুগ যেখানে ছিল না কোন সুষ্ঠু আইন-কানুন, ছিল না কোন মানবতা। ছিল শুধু অন্যায় অবিচার, তাদের বিধান ছিল ‘জোর যার মুল্লুক তার’। তাদের এক প্রকার জুলুম ছিল এ রকম যে, যদি সবল ও সম্মানিত গোত্রের কোন পুরুষ লোক হত্যা করা হত, তাহলে কেবল হত্যাকারীকেই তারা হত্যা করত না, কখনো কখনো পুরো পরিবার ধ্বংশ করে দিত। মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে, কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত।

আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম সমাজকে এহেন অবস্থা থেকে মুক্ত করে ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার বিধান দিলেন ‘কিসাস’-এর মাধ্যমে। হত্যাকারী পুরুষ, মহিলা, স্বাধীন ও ক্রীতদাস যেই হোক, নিহত ব্যক্তির কিসাসস্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْمُسْلِمُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ
মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান। (আবূ দাঊদ হা: ২৭৫১, মুসনাদ আহমাদ হা: ৬৭১৭, হাদীসটি সহীহ)।

আয়াতের সরল অনুবাদে বলা হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী হত্যা করা হবে। এমতাবস্থায় যদি স্বাধীন ব্যক্তি ক্রীতদাসকে হত্যা করে বা পুরুষ মহিলাকে হত্যা করে তাহলে কি ক্রীতদাসের বদলে স্বাধীন ব্যক্তিকে আর মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করা হবে না? উত্তর আয়াতটির এ শব্দগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাজানোর কারণ হল- অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট। অর্থাৎ জাহিলী যুগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেমন কৃতদাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করত বা মহিলার পরিবর্তে পুরুষকে হত্যা করত এমন করা যাবে না। বরং কিসাসে হত্যাকারীকেই হত্যা করা হবে। তাতে সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক, সবল হোক আর দুর্বল হোক, উঁচু বংশের হোক আর নীচু বংশের হোক। এটাই হলো মুসলিমরা রক্তে সবাই সমান।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
وَکَتَبْنَا عَلَیْھِمْ فِیْھَآ اَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِﺫ وَالْعَیْنَ بِالْعَیْنِ وَالْاَنْفَ بِالْاَنْفِ وَالْاُذُنَ بِالْاُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّﺫ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌ)
আমি তাদের জন্য তাতে ফরয করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম।”(সূরা মায়িদা ৫:৪৫)
(
فَمَنْ عُفِیَ لَھ۫) ক্ষমা করে দেয়া দু’ভাবে হতে পারে:
১. বিনিময় ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ক্ষমা করা।
২. কিসাসের পরিবর্তে রক্তপণ গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালভাবে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(
أَخِيْهِ) “তার ভাই” অর্থাৎ হত্যাকারী কাফির হবে না। কারণ এখানে ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীনি ভাই। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ অপরাধ করলে একজন মুসলিম কাফির হতে পারে না, যদি সে ঐ অপরাধ করা বৈধ মনে না করে।
(
ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদর প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করে তাদের উপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। আর তা হলোঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।

(
فَاتِّبَاعٌۭ بِالْمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ)
অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধি মেনে চলবে এবং নিষ্ঠার সাথে দিয়াত আদায় করে দেবে। তোমাদের পূর্বের লোকেদের ওপর আরোপিত কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৯৮)

তবে কিসাস আদায় করা, দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়া নিহত পরিবারের ইখতিয়ারাধীন, তাদেরকে কোনটাতে বাধ্য করা যাবেনা। এতে হত্যাকারী সন্তুষ্ট থাকুক আর নাই থাকুক।

মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কোন ব্যক্তির (অধীনস্থ) কাউকে হত্যা করা হয়ে থাকলে তার দু’টি অবকাশ রয়েছে: এক. সে ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করতে পারবে। দুই. ইচ্ছা করলে কিসাস আদায় করতে পারবে। (সহীহ বুখারী হা: ১১২, ২৪৩৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৫৫)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে: তাকে ক্ষমা করেও দিতে পারবে এ অধিকার রয়েছে। (ইরওয়া হা: ২২২০)

আর একজন ব্যক্তিকে হত্যার কারণে আক্রোশমূলক একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। তবে একাধিক ব্যক্তি একজনকে হত্যা করার কাজে সম্পৃক্ত থাকলে তাদের সবাইকে হত্যা করা যাবে। (ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীর দিয়াত অধ্যায়ে সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন: উমার (রাঃ) একজন সানআ ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে সাতজনকে হত্যা করেছেন)। অনুরূপ পিতা সন্তানকে হত্যা করলে সন্তানের বদলে পিতাকে হত্যা করা যাবেনা। কারণ পিতা মূল আর সন্তান হল শাখা। (তিরমিযী হা: ১৪০০, ইবনু মাযাহ হা: ২৬৪৬, সহীহ) আবার কোন কাফিরকে মুসলিম হত্যা করলে তার বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (সহীহ বুখারী হা: ১১১)
(
ذٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُم)
এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে হালকা বিধান’অর্থাৎ কিসাস না আদায় করে দিয়াত গ্রহণ করা অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দেয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি শাস্তি হ্রাস ও বিশেষ অনুগ্রহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্র্ণিত, তিনি বলেন: বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিসাস প্রথা চালু ছিল, কিন্তু দিয়াত তাদের মধ্যে চালু ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস বা খুনের বদলে খুন তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন মানুষের বদলে স্বাধীন মানুষ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোকের কিসাস নেয়া হবে। হ্যাঁ, কোন হত্যাকারীর সঙ্গে তার কোন (মুসলিম) ভাই নম্রতা দেখাতে চাইলে উল্লিখিত আয়াতে ক্ষমা এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেয়া।

দিয়াত বা রক্তপণ গ্রহণ করার পর অথবা ক্ষমা করার পরও যদি কেউ হত্যাকারীকে হত্যা করে তাহলে তা সীমালংঘন হবে। তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এ কিসাসে তোমাদের জীবন রয়েছে। অর্থাৎ যখন হত্যাকারীর এ ভয় থাকবে যে, হত্যা করলে তাকেও হত্যা করা হবে তখন সে অবশ্যই হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। তাই যে সমাজে কিসাস বলবত থাকবে, সে সমাজ হত্যা, খুন-খারাবী ও অন্যায় থেকে মুক্ত থাকবে। ফলে সমাজে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। এটাই হল কিসাসের মাঝে জীবন এর ব্যাখ্যা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সমাজে কুরআন-সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যায় অবিচার, হত্যার ছড়াছড়ি ও অশ্লীলতা বেহায়াপনা থেকে মুক্ত থাকবে।
২. ইসলাম নারী-পুরুষ, স্বাধীন ও ক্রীতদাস, ধনী-গরীব সকলের জীবনের সমান মূল্যায়ণ করেছে।
৩. শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম।
2:180
کُتِبَ عَلَیۡکُمۡ اِذَا حَضَرَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ اِنۡ تَرَکَ خَیۡرَۨا ۚۖ الۡوَصِیَّۃُ لِلۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۚ حَقًّا عَلَی الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۸۰﴾ؕ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮০ থেকে ১৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
১৮০ নং আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। তবে রহিতকারী আয়াত কোনটি এ নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী- পৃঃ ১৯)

তবে সঠিক কথা হল- তার রহিতকারী আয়াতটি হলো সূরা নিসার ১১ নং আয়াত। যাতে সম্পদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, ৪৫১, আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, ১৩১)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ اللّٰهَ أَعْطَي كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ وَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক অধিকারীর অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং কোন উত্তরাধিকারীকে ওসিয়ত করা যাবে না। (তিরমিযী হা: ২১২১, আবূ দাঊদ হা: ২৮৭০, আহমাদ হা: ১৭২১২, সহীহ)

(
فَمَنْ خَافَ مِنْ مُّوصٍ جَنَفًا)
আর যদি কেউ অসিয়তকারীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশঙ্কা করে”ইবনু আব্বাস, আবূ আলিয়া, মুজাহিদ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন:
جنف অর্থ হল الخطأ বা ভুল।

এতে সকল ভুল শামিল, আর
اثم হলো স্বেচ্ছায় ভুল। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় কোন আত্মীয়কে বেশি সম্পদ দিয়ে দিলে বা ভুল করেই দিয়ে দিলে সেখানে একটা সুষ্ঠু সমাধান করা গুনাহের কাজ নয়। আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ওয়ারিস এর জন্য অসীয়ত করা নাজায়েয।
২. অন্যায়ভাবে অসীয়ত করা হারাম।
৩. কল্যাণকর কাজে অসীয়ত করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
2:181
فَمَنۡۢ بَدَّلَہٗ بَعۡدَ مَا سَمِعَہٗ فَاِنَّمَاۤ اِثۡمُہٗ عَلَی الَّذِیۡنَ یُبَدِّلُوۡنَہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۸۱﴾ؕ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮০ থেকে ১৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
১৮০ নং আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। তবে রহিতকারী আয়াত কোনটি এ নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী- পৃঃ ১৯)

তবে সঠিক কথা হল- তার রহিতকারী আয়াতটি হলো সূরা নিসার ১১ নং আয়াত। যাতে সম্পদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, ৪৫১, আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, ১৩১)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ اللّٰهَ أَعْطَي كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ وَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক অধিকারীর অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং কোন উত্তরাধিকারীকে ওসিয়ত করা যাবে না। (তিরমিযী হা: ২১২১, আবূ দাঊদ হা: ২৮৭০, আহমাদ হা: ১৭২১২, সহীহ)

(
فَمَنْ خَافَ مِنْ مُّوصٍ جَنَفًا)
আর যদি কেউ অসিয়তকারীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশঙ্কা করে”ইবনু আব্বাস, আবূ আলিয়া, মুজাহিদ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন:
جنف অর্থ হল الخطأ বা ভুল।

এতে সকল ভুল শামিল, আর
اثم হলো স্বেচ্ছায় ভুল। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় কোন আত্মীয়কে বেশি সম্পদ দিয়ে দিলে বা ভুল করেই দিয়ে দিলে সেখানে একটা সুষ্ঠু সমাধান করা গুনাহের কাজ নয়। আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ওয়ারিস এর জন্য অসীয়ত করা নাজায়েয।
২. অন্যায়ভাবে অসীয়ত করা হারাম।
৩. কল্যাণকর কাজে অসীয়ত করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
2:182
فَمَنۡ خَافَ مِنۡ مُّوۡصٍ جَنَفًا اَوۡ اِثۡمًا فَاَصۡلَحَ بَیۡنَہُمۡ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۸۲﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮০ থেকে ১৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
১৮০ নং আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। তবে রহিতকারী আয়াত কোনটি এ নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী- পৃঃ ১৯)

তবে সঠিক কথা হল- তার রহিতকারী আয়াতটি হলো সূরা নিসার ১১ নং আয়াত। যাতে সম্পদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, ৪৫১, আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, ১৩১)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ اللّٰهَ أَعْطَي كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ وَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক অধিকারীর অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং কোন উত্তরাধিকারীকে ওসিয়ত করা যাবে না। (তিরমিযী হা: ২১২১, আবূ দাঊদ হা: ২৮৭০, আহমাদ হা: ১৭২১২, সহীহ)

(
فَمَنْ خَافَ مِنْ مُّوصٍ جَنَفًا)
আর যদি কেউ অসিয়তকারীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশঙ্কা করে”ইবনু আব্বাস, আবূ আলিয়া, মুজাহিদ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন:
جنف অর্থ হল الخطأ বা ভুল।

এতে সকল ভুল শামিল, আর
اثم হলো স্বেচ্ছায় ভুল। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় কোন আত্মীয়কে বেশি সম্পদ দিয়ে দিলে বা ভুল করেই দিয়ে দিলে সেখানে একটা সুষ্ঠু সমাধান করা গুনাহের কাজ নয়। আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ওয়ারিস এর জন্য অসীয়ত করা নাজায়েয।
২. অন্যায়ভাবে অসীয়ত করা হারাম।
৩. কল্যাণকর কাজে অসীয়ত করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
2:183
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۙ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৩ ও ১৮৪ নং আয়াতের তাফসীর:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর শরীয়তের বিধি-বিধান পালনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে তখন শরীয়তের বিধি-বিধান ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ হতে লাগল।

পূর্বের আয়াতগুলোতে কিসাস, অসিয়ত ইত্যাদি বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অত্র আয়াতে মু’মিনদের তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হিজরী দ্বিতীয় সনে সিয়াম (রোযা) ফরয হয়। এ সিয়াম পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরয ছিল কিন্তু তা ছিল ভিন্নভাবে।

আয়াতের শেষাংশে সিয়াম ফরযের কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হল তাকওয়াবান হওয়া। তাকওয়ার পরিচয় মুত্তাকীর গুণাবলী ও ফলাফল অত্র সূরার ২ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদতের নিয়্যতে রমযান মাসে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন মিলন হতে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অবশ্য এ সংজ্ঞায় মিথ্যা, অশ্লীল ও বেহায়াপনাপূণ্য কথা-কাজ থেকে বিরত থাকাও শামিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ বর্জন করল না তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহ তা‘আলার কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯২৭, সহীহ মুসলিম হা: ১১৫১) অন্যত্র তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই (প্রকৃত) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালিগালাজ করে অথবা তোমার প্রতি মূর্খতা প্রদর্শন করে, তাহলে তুমি (তার প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বল যে, আমি সিয়াম পালন করছি। (সহীহুল জামে আস সাগীর হা: ৫৩৭৬)

(
أَيَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ)
‘(সিয়াম) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য’সে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন হলো রমাযান মাস।

যারা রমযান মাসে অসুস্থ বা সফরে থাকবে তাদের জন্য ছাড় রয়েছে। অসুস্থ বা সফরে থাকার কারণে ছুটে যাওয়া সিয়ামগুলো অন্য মাসে পালন করে নেবে। আর মহিলাগণ তাদের ঋতুকালীন দিনগুলোতে সিয়াম রাখবে না, অন্য মাসে পালন করবে। তবে এক্ষেত্রে বিলম্ব না করাই উত্তম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পালন করে নেবে।

(
وَعَلَي الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَه۫)
আর যারা সিয়াম রাখতে সক্ষম (কিন্তু রাখতে চায় না)’সিয়ামের তিনটি পরিবর্তন হয়েছে যেমন সালাতের তিনটি পরিবর্তন হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৫৮)

তার মধ্যে এটি একটি পরিবর্তন: ইসলামের প্রাথমিক যুগে সুস্থ-সবল মানুষ রোযা না রাখতে চাইলে মিসকীনকে খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদিয়া দিয়ে দিত। অতঃপর তা ১৮৫ নং আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রত্যেক সুস্থ-সবল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে অবস্থান করে তাহলে তাকে অবশ্যই সিয়াম পালন করতে হবে।

(
فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْکِیْنٍ)
তারা মিসকিন খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদইয়া দেবে” অর্থাৎ অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা সিয়াম পালন করতে সক্ষম নয় তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫০৫)

খাদ্য দানের দু’টি নিয়ম: প্রথম হলো: এক দিন খাবার তৈরি করে সিয়াম সংখ্যা হিসেবে মিসকিন ডেকে খাওয়াবে। আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ অবস্থায় এরূপ করতেন। তিনি এক অথবা দু’বছর সিয়াম রাখতে না পারায় প্রত্যেক মিসকিনকে গোশত-রুটি খাওয়াতেন। (সহীহ বুখারী হা: ৯২৮-৯২৯)

দ্বিতীয় হলো: দেশের প্রধান খাদ্য থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকিনকে সোয়া এক কেজি করে খাদ্য দান করবে। যেহেতু কাব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন: তোমার মাথা মুণ্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকিনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’(প্রায় সোয়া এক কেজি) করে ছয়জন মিসকিনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগল কুরবানী কর। (সহীহ বুখারী হা: ১৮১৬, সহীহ মুসলিম হা: ১২০১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রমাযান মাসে প্রত্যেক সক্ষম মুকিম মুসলিমের জন্য সিয়াম পালন করা ফরয।
২. সিয়াম মু’মিনের তাকওয়ার বিকাশ ঘটায়।
৩. রমাযানের সিয়াম মু’মিনের সকল সগীরাহ গুনাহ মোচন করে দেয়।
৪. মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির রমযানের সিয়াম পালনে ছাড় রয়েছে। তবে অবশ্যই পরে তা আদায় করতে হবে।
৫. অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণী মা সিয়াম ছাড়তে পারবে এবং প্রতি সিয়ামের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাওয়াবে।
2:184
اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَہٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَہُوَ خَیۡرٌ لَّہٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۴
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৩ ও ১৮৪ নং আয়াতের তাফসীর:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর শরীয়তের বিধি-বিধান পালনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে তখন শরীয়তের বিধি-বিধান ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ হতে লাগল।

পূর্বের আয়াতগুলোতে কিসাস, অসিয়ত ইত্যাদি বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অত্র আয়াতে মু’মিনদের তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হিজরী দ্বিতীয় সনে সিয়াম (রোযা) ফরয হয়। এ সিয়াম পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরয ছিল কিন্তু তা ছিল ভিন্নভাবে।

আয়াতের শেষাংশে সিয়াম ফরযের কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হল তাকওয়াবান হওয়া। তাকওয়ার পরিচয় মুত্তাকীর গুণাবলী ও ফলাফল অত্র সূরার ২ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদতের নিয়্যতে রমযান মাসে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন মিলন হতে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অবশ্য এ সংজ্ঞায় মিথ্যা, অশ্লীল ও বেহায়াপনাপূণ্য কথা-কাজ থেকে বিরত থাকাও শামিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ বর্জন করল না তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহ তা‘আলার কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯২৭, সহীহ মুসলিম হা: ১১৫১) অন্যত্র তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই (প্রকৃত) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালিগালাজ করে অথবা তোমার প্রতি মূর্খতা প্রদর্শন করে, তাহলে তুমি (তার প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বল যে, আমি সিয়াম পালন করছি। (সহীহুল জামে আস সাগীর হা: ৫৩৭৬)

(
أَيَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ)
‘(সিয়াম) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য’সে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন হলো রমাযান মাস।

যারা রমযান মাসে অসুস্থ বা সফরে থাকবে তাদের জন্য ছাড় রয়েছে। অসুস্থ বা সফরে থাকার কারণে ছুটে যাওয়া সিয়ামগুলো অন্য মাসে পালন করে নেবে। আর মহিলাগণ তাদের ঋতুকালীন দিনগুলোতে সিয়াম রাখবে না, অন্য মাসে পালন করবে। তবে এক্ষেত্রে বিলম্ব না করাই উত্তম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পালন করে নেবে।

(
وَعَلَي الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَه۫)
আর যারা সিয়াম রাখতে সক্ষম (কিন্তু রাখতে চায় না)’সিয়ামের তিনটি পরিবর্তন হয়েছে যেমন সালাতের তিনটি পরিবর্তন হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৫৮)

তার মধ্যে এটি একটি পরিবর্তন: ইসলামের প্রাথমিক যুগে সুস্থ-সবল মানুষ রোযা না রাখতে চাইলে মিসকীনকে খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদিয়া দিয়ে দিত। অতঃপর তা ১৮৫ নং আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রত্যেক সুস্থ-সবল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে অবস্থান করে তাহলে তাকে অবশ্যই সিয়াম পালন করতে হবে।

(
فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْکِیْنٍ)
তারা মিসকিন খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদইয়া দেবে” অর্থাৎ অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা সিয়াম পালন করতে সক্ষম নয় তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫০৫)

খাদ্য দানের দু’টি নিয়ম: প্রথম হলো: এক দিন খাবার তৈরি করে সিয়াম সংখ্যা হিসেবে মিসকিন ডেকে খাওয়াবে। আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ অবস্থায় এরূপ করতেন। তিনি এক অথবা দু’বছর সিয়াম রাখতে না পারায় প্রত্যেক মিসকিনকে গোশত-রুটি খাওয়াতেন। (সহীহ বুখারী হা: ৯২৮-৯২৯)

দ্বিতীয় হলো: দেশের প্রধান খাদ্য থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকিনকে সোয়া এক কেজি করে খাদ্য দান করবে। যেহেতু কাব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন: তোমার মাথা মুণ্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকিনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’(প্রায় সোয়া এক কেজি) করে ছয়জন মিসকিনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগল কুরবানী কর। (সহীহ বুখারী হা: ১৮১৬, সহীহ মুসলিম হা: ১২০১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রমাযান মাসে প্রত্যেক সক্ষম মুকিম মুসলিমের জন্য সিয়াম পালন করা ফরয।
২. সিয়াম মু’মিনের তাকওয়ার বিকাশ ঘটায়।
৩. রমাযানের সিয়াম মু’মিনের সকল সগীরাহ গুনাহ মোচন করে দেয়।
৪. মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির রমযানের সিয়াম পালনে ছাড় রয়েছে। তবে অবশ্যই পরে তা আদায় করতে হবে।
৫. অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণী মা সিয়াম ছাড়তে পারবে এবং প্রতি সিয়ামের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাওয়াবে।
2:185
شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৫ নং আয়াতের তাফসীর:
রমাযান মাসের ফযীলত বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এ রমাযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে, পূর্ণ কুরআন কোন এক রমাযান মাসে পৃথিবীতে নাযিল করা হয়েছে। বরং এর অর্থ হল রমাযান মাসের কদরের রাতে পূর্ণ কুরআন লাওহে মাহফুয হতে প্রথম আসমানে অবস্থিত ‘বাইতুল ইজ্জতে” অবতীর্ণ করা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
إِنَّآ أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ)
আমি একে (কুরআনকে) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কদর ৯৭:১)

অন্যত্র বলেন:
(
إِنَّآ أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ)
আমি একে (কুরআনকে) বরকতপূর্ণ রাতে অর্থাৎ কদরের রাতে নাযিল করেছি। (সূরা দুখান ৪৪:৩)

তারপর “বাইতুল ইজ্জত” থেকে ২৩ বছর নবুওয়াতী জীবনে প্রয়োজন অনুপাতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়। অতএব কুরআন কোন্ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে, কোন্ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে তা সুস্পট হয়ে গেল। তাই যারা বলে থাকেন ১৫ই শাবান বা তাদের ভাষায় শবে বরাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শরীয়ত গর্হিত আচার-অনুষ্ঠান করে থাকেন তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যাত ও ভিত্তিহীন।

কুরআন কেন অবতীর্ণ করেছেন তার কারণ এ আয়াতের শেষাংশে বলে দিয়েছেন। সূরার শুরুতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

(
فَمَنْ شَھِدَ مِنْکُمُ)
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে’। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে সালাতের ন্যায় সিয়ামের তিনটি পরিবর্তন হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করার পর প্রত্যেক মাসে তিনটি এবং আশুরার সিয়াম পালন করতেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সিয়াম ফরয করে এ আয়াতটি

(
يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَام)
নাযিল করেন।
আল্লাহ তা‘আলা চান তোমাদের জন্য সহজ করতে, কঠিন নয়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
هُوَ اجْتَبٰكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ)
তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।” (সূরা হজ্জ ২২:৭৮)

অনুরূপ হাদীসে এসেছে-
إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ
দীন সহজ। দীনের ব্যাপারে যে কঠোরতা করবে দীন তার ওপর কঠোরতা প্রদানে জয়ী হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৯)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রমাযান মাস ও কুরআনের ফযীলত জানতে পারলাম।
২. যে রমাযানে সিয়াম রাখতে সক্ষম হবে না অন্য সময় তার পক্ষে কাযা আদায় করা ওয়াজিব।
৩. দীনের বিধি-বিধান সহজ।
৪. ঈদের দিন ও রাতে তাকবীর পাঠ শরীয়তসিদ্ধ।
৫. কুরআন সঠিক পথের দিক নির্দেশক ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী।
৬. কুরআন শবে কদরের রাতে নাযিল হয়েছে, শবে বরাতে নয়।
2:186
وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّہُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ ﴿۱۸۶
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
রবকতময় রমাযান মাসের বিধি-বিধান আলোচনা করার পর দু‘আ বিষয়ক আলোচনা স্থান পেয়েছে, কারণ রমাযান মাসে দু‘আর অনেক ফযীলত রয়েছে। তাই এ মাসে বেশি বেশি দু‘আর প্রতি যত
œবান হওয়া উচিত।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, আমার বান্দারা যদি আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তাহলে বলে দাও আমি তাদের নিকটেই রয়েছি। যখন তারা আমাকে ডাকে আমি তাদের ডাকে সাড়া দেই। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ)

আমি তার ঘাড়ের শাহ রগ অপেক্ষাও নিকটতর।”(সূরা কাফ ৫০:১৬)

আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেন: আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আমরা প্রত্যেক উঁচু স্থানে ওঠার সময় এবং উপত্যকায় অবতরণের সময়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর ধ্বনি দিতে দিতে যাচ্ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন- হে জনমণ্ডলী! নিজেদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর। তোমরা শ্রবণশক্তিহীন ও দূরে অবস্থানকারী কাউকে (মা‘বূদকে) ডাকছ না। তোমরা ডাকছ একজন শ্রবণকারী ও সর্বদ্রষ্টাকে। নিশ্চয় তিনি তোমাদের বাহনের স্কন্ধ অপেক্ষা নিকটে রয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৯৯২) এরূপ অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীস রয়েছে যাতে বলা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের খুবই নিকটে রয়েছেন। কিন্তু স্ব-স্বত্ত্বায় নন বরং শ্রবণ, দর্শন, ক্ষমতা ও জ্ঞানের দিক থেকে তিনি আমাদের অতি নিকটে রয়েছেন, আর স্ব-স্বত্ত্বায় আরশের ওপর রয়েছেন।

তাফসীরে সা‘দীতে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার নিকটবর্তী হওয়াটা দু’প্রকার। যথা:
১. আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান, দর্শন, শ্রবণ ও বেষ্টন করার দিক দিয়ে সকল বান্দার নিকটে রয়েছেন।

২. বান্দার দু‘আ কবূল ও সাড়া দেয়ার দিক দিয়ে নিকট রয়েছে। তাই একজন বান্দা যখন একাগ্রচিত্তে শরয়ী পন্থায় দু‘আ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার ডাকে সাড়া দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর থেকেই তাঁর বান্দার অতি নিকটে। তিনি সবকিছু জানেন, দেখেন ও শোনেন।
২. উচ্চৈঃস্বরে শরীয়তসিদ্ধ ইবাদত ব্যতীত অন্যান্য ইবাদত নিরবে করাই উত্তম।
৩. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে মুক্তি নিহিত।
৪. আল্লাহ তা‘আলার কাছে অবশ্যই দু‘আ করতে হবে, তবে শরীয়তসম্মত পদ্ধতি অনুযায়ী।
৫. উক্ত হাদীস থেকে এটাও জানতে পারলাম যে, উচ্চ আওয়াজে প্রচলিত হালকায়ে যিকির করা শরীয়তসম্মত নয়।
2:187
اُحِلَّ لَکُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِکُمۡ ؕ ہُنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّہُنَّ ؕ عَلِمَ اللّٰہُ اَنَّکُمۡ کُنۡتُمۡ تَخۡتَانُوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ وَ عَفَا عَنۡکُمۡ ۚ فَالۡـٰٔنَ بَاشِرُوۡہُنَّ وَ ابۡتَغُوۡا مَا کَتَبَ اللّٰہُ لَکُمۡ ۪ وَ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَکُمُ الۡخَیۡطُ الۡاَبۡیَضُ مِنَ الۡخَیۡطِ الۡاَسۡوَدِ مِنَ الۡفَجۡرِ۪ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیۡلِ ۚ وَ لَا تُبَاشِرُوۡہُنَّ وَ اَنۡتُمۡ عٰکِفُوۡنَ ۙ فِی الۡمَسٰجِدِ ؕ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ فَلَا تَقۡرَبُوۡہَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۷
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৭ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:

বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মধ্যে থেকে যদি কোন ব্যক্তি সিয়াম পালন করত আর ইফতারের সময় ইফতার না করে ঘুমিয়ে যেত তাহলে পরদিন ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হত। একদিন কায়েস বিন সিরমা (রাঃ) সিয়াম অবস্থায় সারাদিন ক্ষেত-খামারে কাজ করে সন্ধ্যার সময় বাড়িতে ফিরে আসেন। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন- খাবার কিছু আছে কি? স্ত্রী বলল, কিছুই নেই। তবে আমি যাচ্ছি এবং কোথাও হতে কিছু নিয়ে আসছি এ কথা বলে তাঁর স্ত্রী গেলে তিনি ঘুমিয়ে যান। স্ত্রী ফিরে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে দুঃখ প্রকাশ করে বলল, এখন এ রাত্রি এবং পরবর্তী সারাদিন কিভাবে কাটবে? দিনের অর্ধভাগ অতিবাহিত হলে কায়েস (রাঃ) ক্ষুধার জ্বালায় চেতনা হারিয়ে ফেলেন।


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা জানানো হলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১৯১৫)

উক্ত আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের কষ্টকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেন এবং ইফতারের সময় থেকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করার অনুমতি দান করেন।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: যখন রমাযানের সওমের হুকুম অবতীর্ণ হল তখন মুসলিমরা গোটা রমাযান মাস স্ত্রীদের নিকটে যেতেন না। আর কিছু সংখ্যক লোক এ ব্যাপারে নিজেদের ওপর (স্ত্রী-সম্ভোগ করে) অবিচার করে বসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন,

(
عَلِمَ اللہُ اَنَّکُمْ کُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَکُمْ فَتَابَ عَلَیْکُمْ وَعَفَا عَنْکُمْﺆ)
(সহীহ বুখারী হা: ৫৪০৯, সহীহ মুসলিম হা:১০৯০)

اِلٰی نِسَا۬ئِکُمْ) (الرَّفَثُ
এখানে
الرَّفَثُ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল স্ত্রী সহবাস করা। (مَا کَتَبَ اللہُ لَکُمْ) ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন’এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সন্তান। অর্থাৎ রমযানের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে দৈহিক মিলন করতে পারো এবং সে মিলনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য যে সন্তান নির্ধারণ করে রেখেছেন তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাও।

সাহাল বিন সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

(
وَکُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَکُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ مِنَ الْخَیْطِ الْاَسْوَدِ)
আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয় তখন (
مِنَ الْفَجْرِ) অংশটুকু অবতীর্ণ হয়নি। এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি সিয়াম পালন করার ইচ্ছা করত তখন সাদা সুতো ও কালো সুতো তার পায়ে বেঁধে নিত। সাদা সুতো ও কালো সুতো সুস্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত খেতেই থাকত। তখন (مِنَ الْفَجْرِ) অংশটুকু অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১৯১৭, ৪৫১১, সহীহ মুসলিম হা: ১০৯১)

সুবহে সাদেক পর্যন্ত পানাহার শেষ করে রাত পর্যন্ত সিয়াম পালন করতে হবে। সূর্যাস্তের মাধ্যমে রাত শুরু হয়। তাই সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসেও এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

(
لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ)
মানুষ সর্বদা কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ (সূর্যাস্তের পর) তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। (সহীহ বুখারী হা: ১৮৫৬, সহীহ মুসলিম হা: ১০৯৮) সূর্যাস্তের পর বিলম্ব করে অন্ধকার হবার পর ইফতার করা ইয়াহূদী ও শিয়াদের বৈশিষ্ট্য, সুতরাং তা অবশ্যই বর্জনীয়।

(
وَاَنْتُمْ عٰکِفُوْنَﺫ فِی الْمَسٰجِدِ)
আর তোমরা মাসজিদে ই‘তেকাফ করা অবস্থায়’অর্থাৎ ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস ও তার সাথে কোন প্রকার যৌনাচার করার অনুমতি নেই। হ্যাঁ, দেখা-সাক্ষাত ও সাধারণ কথাবর্তা জায়েয।
الْمَسٰجِدُ দ্বারা বুঝা যায় ইতিকাফ মাসজিদে করতে হবে। পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণও মাসজিদে ইতিকাফ করতেন (সহীহ বুখারী হা: ২০৩৩)। তাই মহিলাগণও মাসজিদে ইতিকাফ করবে তবে মহিলাদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রমাযানের রাতে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার করা ও স্ত্রী সহবাস বৈধ।
২. সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত আর বিলম্ব করে ইফতার করা ইয়াহূদীদের স্বভাব।
৩. পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য মাসজিদে ইতিকাফ বৈধ। তবে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. স্ত্রী সহবাসের অন্যতম উদ্দেশ্য হবে সন্তান নেয়া।
2:188
وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِہَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۸﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে মানুষের স
¤পদে স্বতন্ত্র অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একজন মানুষ অন্যায়ভাবে যেমন মিথ্যা শপথ, ডাকাতি, চুরি, ঘুষ নিয়ে ও সুদ খেয়ে অন্যের সম্পদ হরণ করবে তা হারাম।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত, সম্পদ সব কিছু হারাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮, সহীহ মুসলিম হা:১৬৭৯)

হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: এখানে ঐ সব ব্যক্তিদের আলোচনা করা হচ্ছে, যাদের কাছে অপরের কোন প্রাপ্য থাকে কিন্তু প্রাপকের নিকট তার প্রাপ্য অধিকারের কোন প্রমাণ থাকে না, ফলে এ দুবর্লতার সুযোগ গ্রহণ করে সে আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিচারকের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ফায়সালা করিয়ে নেয় এবং এভাবে সে প্রাপকের অধিকার হরণ করে। এটা জুলুম ও হারাম। আদালতের ফায়সালা জুলুম ও হারামকে বৈধ ও হালাল করে দিতে পারে না। আদালত কেবল বাহ্যিক দিক অবলোকন করে বিচার করে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি একজন মানুষ। লোকজন আমার নিকট বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয়ে থাকে। স্বভাবত একজন অপরজন অপেক্ষা বেশি যুক্তিতর্কে পারদর্শী হয়ে থাকে। তার যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে আমি হয়তো তারই পক্ষে ফায়সালা দিয়ে থাকি (অথচ প্রকৃত ঘটনা এর বিপরীত)। তবে জেনে রেখ: যে ব্যক্তির পক্ষে এরূপ ফায়সালা দেয়ার ফলে কোন মুসলিমের হক আমি তাকে দিয়ে দেই, ওটা হবে তার জন্য জাহান্নামের আগুনের টুকরা। অতএব সেটা সে গ্রহণ করবে বা ছেড়ে দেবে। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৮০)

কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: হে আদম সন্তান! জেনে রেখ, বিচারকের মীমাংসা তোমার জন্য হারামকে হালাল এবং অন্যায়কে ন্যায় করে দিতে পারে না। বিচারক সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুসারে বাহ্যিক অবস্থা দেখে বিচার করে। তাছাড়া তিনি মানুষ, তার দ্বারা ভুল হওয়াও সম্ভব। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়তের তাফসীর)

অতএব এরূপ ধোঁকাবাজী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ ভোগ করলে এর বিনিময়ে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অন্যায়ভাবে মুসলিম ভাইয়ের সম্পদ হরণ করা হারাম।
২. বিচার-ফায়সালায় অন্যায়ভাবে রায় প্রকাশে ঘুষ দেয়া ও নেয়া উভয়ই হারাম।
৩. বিচারক অজান্তে কারো জিনিস অন্যকে দিয়ে দিলেই হালাল হয়ে যাবে না।
৪. কোন মানুষ এমন কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মানুষের অন্তরের খবর জানেন না। বরং প্রকৃতপক্ষে শুধু আল্লাহ তা‘আলাই সকলের অন্তরের খবর জানেন।
2:189
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡاَہِلَّۃِ ؕ قُلۡ ہِیَ مَوَاقِیۡتُ لِلنَّاسِ وَ الۡحَجِّ ؕ وَ لَیۡسَ الۡبِرُّ بِاَنۡ تَاۡتُوا الۡبُیُوۡتَ مِنۡ ظُہُوۡرِہَا وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنِ اتَّقٰیۚ وَ اۡتُوا الۡبُیُوۡتَ مِنۡ اَبۡوَابِہَا ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۸۹
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা জবাব শিখিয়ে দেন- বল, তা মানুষের ও হজ্জের সময় নির্ধারক। এর দ্বারা মানুষ ইবাদত, মুয়ামালাত, গর্ভধারণ ও ইদ্দত ইত্যাদির সময়সীমা নির্ধারণ করবে। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(
لِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ)
যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসেব জানতে পার।” (সূরা ইউনুস ১০:৫)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ চাঁদকে সৃষ্টি করেছেন সময় নির্ধারক হিসেবে। এটা দেখে সওম রাখ ও এটা দেখেই সওম ছাড়। যদি মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ত্রিশ দিন গণনা পূর্ণ কর। (সহীহ ইবনু খুযায়মা হা: ১৯০৭, সহীহ)

এবং এ চাঁদ হজ্জের সময় নির্ধারক।” যেমন শাওয়াল, যুলকাদা ও যুলহজ্জ এ তিনটি হজ্জের মাস যা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল।

(
وَلَیْسَ الْبِرُّ بِاَنْ تَاْتُوا الْبُیُوْتَ)
আয়াতের শানে নুযূল:
আবূ ইসহাক (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা (রাঃ)-কে বলতে শনেছি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হজ্জ করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফিরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেয়া হয়। তখনই নাযিল হল: ঘরের পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাক্বওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর। (সহীহ বুখারী হা: ১৮০৩, মুসিলম হা: ৩০২৬)

বিশিষ্ট তাবেঈ হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: জাহিলী যুগে বহু সম্প্রদায়ের মধ্যে এ প্রথা চালু ছিল যে, যখন তারা সফরের উদ্দেশ্যে বের হত তখন যদি কোন কারণবশত সফর থেকে পূর্বনির্ধারিত সময় সংক্ষিপ্ত করে অর্ধ-সমাপ্ত অবস্থায় ছেড়ে ফিরে আসতো, তবে তারা সামনের দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ করত না বরং পিছনের দিক দিয়ে আসতো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, দেয়াল টপকিয়ে আসতো। এ আয়াত তাদের এ প্রথা বাতিল করে দেয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, ৪৮৯)

তাই ভাল কাজ মনে করে বাড়ির পিছন দিক থেকে আগমন করা আসলে নেকীর কাজ নয়। বরং নেকীর কাজ হল- আল্লাহ তা‘আলার আদেশ ও নিষেধ মান্য করে তাঁকে ভয় করা।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলামের অনেক বিধান চান্দ্র মাসের সাথে সম্পৃক্ত।
২. ইসলামে ইবাদতের নামে বিদআত তৈরি করা হারাম। যদিও তা নিজেদের কাছে খুব পছন্দনীয় হয়।
৩. সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা-কে ভয় করলে সফলতা অর্জন সম্ভব।
2:190
وَ قَاتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ وَ لَا تَعۡتَدُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ﴿۱۹۰
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯০ থেকে ১৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:
১৯০ নং আয়াতের বিষয়ে দু’টি মতামত পাওয়া যায়। যেমন:

১. আয়াতটি সূরা তাওবার
(
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً)
(তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর) আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

২. আয়াতটি রহিত হয়নি। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী পৃঃ ৩৯)

হাফিয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: রহিত হবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন: মদীনায় অবতীর্ণ এটাই সর্বপ্রথম যুদ্ধের আয়াত। এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর যারা যুদ্ধ করেনি সূরা তাওবাহ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি।

وَلَا تَعْتَدُوْاবাড়াবাড়ি কর না’- দু’ভাবে এর অর্থ হতে পারে:
১. যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না।

২. মহিলা, বাচ্চা, পাদরী বা গীর্জার লোকেদের হত্যা কর না, অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে।

জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) প্রথম অর্থকে বেশি মজবুত মনে করেছেন। (নাসেখ মানুসখ, পৃঃ ৩৯)

তবে অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ দ্বিতীয় অর্থ সমর্থন করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, নাক-কান ইত্যাদি অঙ্গহানী করবে না, শিশু ও সংসার বিরাগীদেরকে হত্যা করবে না যারা উপাসনা গৃহে পড়ে থাকে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২৬১৩)

আল্লাহ তা‘আলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা কর এবং তোমাদেরকে যারা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে তাদেরকেও মক্কা থেকে বের করে দাও। কারণ জমিনে কুফরী, শির্ক করা ও ইসলাম থেকে বাধা দেয়া ইত্যাদি বিপর্যয় সৃষ্টি করা তাদেরকে হত্যা করার চেয়ে জঘণ্যতম অপরাধ।

কুরআনে
فتنة শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-

ফেতনা অর্থ শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন:
(
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ)
আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (শির্ক) গুরুতর অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:১৯১)

ফেতনা অর্থ বিভ্রান্ত করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَھَ مِنْھُ ابْتِغَا۬ئَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَا۬ئَ تَاْوِیْلِھ۪)
সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা (বিভ্রান্ত করার জন্য) এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে।”(সূরা আলি ইমরান ৩:৭)

ফেতনা অর্থ হত্যা করা:
(
أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
যদি তোমাদের আশঙ্কা হয়, কাফিররা তোমাদের জন্য ফেতনা সৃষ্টি (হত্যা) করবে।”(সূরা নিসা ৪:১০১) অর্থাৎ হত্যা করবে। এছাড়াও ফেতনা শব্দটি বাধা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ, পরীক্ষা ও শাস্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

মাসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধ-বিগ্রহ করা নিষেধ। কিন্তু যদি কাফির-মুশরিকগণ যুদ্ধ শুরু করে তাহলে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধ করা যাবে। (তাফসীরে সাদী পৃঃ ৭৩)

যদি তারা যুদ্ধ বর্জন করতঃ ইসলামে প্রবেশ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।

১৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে মুশরিক ও সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে শির্ক দূরীভূত হয়ে তাওহীদের দীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে না।

যারা কুফরী ও সীমালঙ্ঘনের ওপর বহাল থাকবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। তবে জিহাদের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত: তাঁর কাছে দু’ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে সৃষ্ট ফেতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমার (রাঃ)-এর পুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন: আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটেছে এবং দীনও আল্লাহ তা‘আলার জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ ফেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য দীন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের ওয়াজিব।
২. শত্র“দের পক্ষে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা যাবে না। তবে যদি তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে হত্যা করা যাবে।
৩. মাসজিদে হারামে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম, তবে শত্র“রা শুরু করলে তাদেরকে দমন করার জন্য করা যাবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের ভালবাসেন না।
৫. গাফুর ও রাহীম- এ দু’টি আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও পবিত্র গুণ।
2:191
وَ اقۡتُلُوۡہُمۡ حَیۡثُ ثَقِفۡتُمُوۡہُمۡ وَ اَخۡرِجُوۡہُمۡ مِّنۡ حَیۡثُ اَخۡرَجُوۡکُمۡ وَ الۡفِتۡنَۃُ اَشَدُّ مِنَ الۡقَتۡلِ ۚ وَ لَا تُقٰتِلُوۡہُمۡ عِنۡدَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ حَتّٰی یُقٰتِلُوۡکُمۡ فِیۡہِ ۚ فَاِنۡ قٰتَلُوۡکُمۡ فَاقۡتُلُوۡہُمۡ ؕ کَذٰلِکَ جَزَآءُ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۱۹۱
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯০ থেকে ১৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:
১৯০ নং আয়াতের বিষয়ে দু’টি মতামত পাওয়া যায়। যেমন:
১. আয়াতটি সূরা তাওবার
(
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً)
(তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর) আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

২. আয়াতটি রহিত হয়নি। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী পৃঃ ৩৯)

হাফিয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: রহিত হবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন: মদীনায় অবতীর্ণ এটাই সর্বপ্রথম যুদ্ধের আয়াত। এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর যারা যুদ্ধ করেনি সূরা তাওবাহ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি।

وَلَا تَعْتَدُوْاবাড়াবাড়ি কর না’- দু’ভাবে এর অর্থ হতে পারে:

১. যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না।

২. মহিলা, বাচ্চা, পাদরী বা গীর্জার লোকেদের হত্যা কর না, অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে।

জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) প্রথম অর্থকে বেশি মজবুত মনে করেছেন। (নাসেখ মানুসখ, পৃঃ ৩৯)

তবে অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ দ্বিতীয় অর্থ সমর্থন করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, নাক-কান ইত্যাদি অঙ্গহানী করবে না, শিশু ও সংসার বিরাগীদেরকে হত্যা করবে না যারা উপাসনা গৃহে পড়ে থাকে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২৬১৩)

আল্লাহ তা‘আলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা কর এবং তোমাদেরকে যারা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে তাদেরকেও মক্কা থেকে বের করে দাও। কারণ জমিনে কুফরী, শির্ক করা ও ইসলাম থেকে বাধা দেয়া ইত্যাদি বিপর্যয় সৃষ্টি করা তাদেরকে হত্যা করার চেয়ে জঘণ্যতম অপরাধ।

কুরআনে
فتنة শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
ফেতনা অর্থ শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন:
(
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ)
আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (শির্ক) গুরুতর অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:১৯১)

ফেতনা অর্থ বিভ্রান্ত করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَھَ مِنْھُ ابْتِغَا۬ئَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَا۬ئَ تَاْوِیْلِھ۪)
সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা (বিভ্রান্ত করার জন্য) এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে।”(সূরা আলি ইমরান ৩:৭)

ফেতনা অর্থ হত্যা করা:

(
أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
যদি তোমাদের আশঙ্কা হয়, কাফিররা তোমাদের জন্য ফেতনা সৃষ্টি (হত্যা) করবে।”(সূরা নিসা ৪:১০১) অর্থাৎ হত্যা করবে। এছাড়াও ফেতনা শব্দটি বাধা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ, পরীক্ষা ও শাস্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

মাসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধ-বিগ্রহ করা নিষেধ। কিন্তু যদি কাফির-মুশরিকগণ যুদ্ধ শুরু করে তাহলে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধ করা যাবে। (তাফসীরে সাদী পৃঃ ৭৩)

যদি তারা যুদ্ধ বর্জন করতঃ ইসলামে প্রবেশ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।

১৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে মুশরিক ও সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে শির্ক দূরীভূত হয়ে তাওহীদের দীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে না।

যারা কুফরী ও সীমালঙ্ঘনের ওপর বহাল থাকবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। তবে জিহাদের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত: তাঁর কাছে দু’ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে সৃষ্ট ফেতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমার (রাঃ)-এর পুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন: আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটেছে এবং দীনও আল্লাহ তা‘আলার জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ ফেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য দীন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের ওয়াজিব।
২. শত্র“দের পক্ষে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা যাবে না। তবে যদি তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে হত্যা করা যাবে।
৩. মাসজিদে হারামে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম, তবে শত্র“রা শুরু করলে তাদেরকে দমন করার জন্য করা যাবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের ভালবাসেন না।
৫. গাফুর ও রাহীম- এ দু’টি আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও পবিত্র গুণ।
2:192
فَاِنِ انۡتَہَوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۹۲
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯০ থেকে ১৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:
১৯০ নং আয়াতের বিষয়ে দু’টি মতামত পাওয়া যায়। যেমন:
১. আয়াতটি সূরা তাওবার
(
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً)
(তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর) আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

২. আয়াতটি রহিত হয়নি। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী পৃঃ ৩৯)

হাফিয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: রহিত হবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন: মদীনায় অবতীর্ণ এটাই সর্বপ্রথম যুদ্ধের আয়াত। এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর যারা যুদ্ধ করেনি সূরা তাওবাহ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি।

وَلَا تَعْتَدُوْاবাড়াবাড়ি কর না’- দু’ভাবে এর অর্থ হতে পারে:
১. যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না।
২. মহিলা, বাচ্চা, পাদরী বা গীর্জার লোকেদের হত্যা কর না, অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে।

জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) প্রথম অর্থকে বেশি মজবুত মনে করেছেন। (নাসেখ মানুসখ, পৃঃ ৩৯)

তবে অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ দ্বিতীয় অর্থ সমর্থন করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, নাক-কান ইত্যাদি অঙ্গহানী করবে না, শিশু ও সংসার বিরাগীদেরকে হত্যা করবে না যারা উপাসনা গৃহে পড়ে থাকে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২৬১৩)

আল্লাহ তা‘আলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা কর এবং তোমাদেরকে যারা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে তাদেরকেও মক্কা থেকে বের করে দাও। কারণ জমিনে কুফরী, শির্ক করা ও ইসলাম থেকে বাধা দেয়া ইত্যাদি বিপর্যয় সৃষ্টি করা তাদেরকে হত্যা করার চেয়ে জঘণ্যতম অপরাধ।

কুরআনে
فتنة শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-

ফেতনা অর্থ শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন:
(
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ)
আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (শির্ক) গুরুতর অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:১৯১)

ফেতনা অর্থ বিভ্রান্ত করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَھَ مِنْھُ ابْتِغَا۬ئَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَا۬ئَ تَاْوِیْلِھ۪)
সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা (বিভ্রান্ত করার জন্য) এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে।”(সূরা আলি ইমরান ৩:৭)

ফেতনা অর্থ হত্যা করা:
(
أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
যদি তোমাদের আশঙ্কা হয়, কাফিররা তোমাদের জন্য ফেতনা সৃষ্টি (হত্যা) করবে।”(সূরা নিসা ৪:১০১) অর্থাৎ হত্যা করবে। এছাড়াও ফেতনা শব্দটি বাধা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ, পরীক্ষা ও শাস্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

মাসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধ-বিগ্রহ করা নিষেধ। কিন্তু যদি কাফির-মুশরিকগণ যুদ্ধ শুরু করে তাহলে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধ করা যাবে। (তাফসীরে সাদী পৃঃ ৭৩)

যদি তারা যুদ্ধ বর্জন করতঃ ইসলামে প্রবেশ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।

১৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে মুশরিক ও সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে শির্ক দূরীভূত হয়ে তাওহীদের দীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে না।

যারা কুফরী ও সীমালঙ্ঘনের ওপর বহাল থাকবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। তবে জিহাদের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত: তাঁর কাছে দু’ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে সৃষ্ট ফেতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমার (রাঃ)-এর পুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন: আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটেছে এবং দীনও আল্লাহ তা‘আলার জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ ফেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য দীন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের ওয়াজিব।
২. শত্র“দের পক্ষে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা যাবে না। তবে যদি তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে হত্যা করা যাবে।
৩. মাসজিদে হারামে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম, তবে শত্র“রা শুরু করলে তাদেরকে দমন করার জন্য করা যাবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের ভালবাসেন না।
৫. গাফুর ও রাহীম- এ দু’টি আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও পবিত্র গুণ।
2:193
وَ قٰتِلُوۡہُمۡ حَتّٰی لَا تَکُوۡنَ فِتۡنَۃٌ وَّ یَکُوۡنَ الدِّیۡنُ لِلّٰہِ ؕ فَاِنِ انۡتَہَوۡا فَلَا عُدۡوَانَ اِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۹۳
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯০ থেকে ১৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:

১৯০ নং আয়াতের বিষয়ে দু’টি মতামত পাওয়া যায়। যেমন:
১. আয়াতটি সূরা তাওবার
(
وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً)
(তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর) আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

২. আয়াতটি রহিত হয়নি। (নাসেখ মানসূখ, ইবনুল আরাবী পৃঃ ৩৯)

হাফিয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: রহিত হবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) আবুল আলিয়া (রহঃ) বলেন: মদীনায় অবতীর্ণ এটাই সর্বপ্রথম যুদ্ধের আয়াত। এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর যারা যুদ্ধ করেনি সূরা তাওবাহ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি।

وَلَا تَعْتَدُوْاবাড়াবাড়ি কর না’- দু’ভাবে এর অর্থ হতে পারে:

১. যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না।
২. মহিলা, বাচ্চা, পাদরী বা গীর্জার লোকেদের হত্যা কর না, অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে।

জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) প্রথম অর্থকে বেশি মজবুত মনে করেছেন। (নাসেখ মানুসখ, পৃঃ ৩৯)

তবে অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ দ্বিতীয় অর্থ সমর্থন করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, নাক-কান ইত্যাদি অঙ্গহানী করবে না, শিশু ও সংসার বিরাগীদেরকে হত্যা করবে না যারা উপাসনা গৃহে পড়ে থাকে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২৬১৩)

আল্লাহ তা‘আলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না। মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা কর এবং তোমাদেরকে যারা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে তাদেরকেও মক্কা থেকে বের করে দাও। কারণ জমিনে কুফরী, শির্ক করা ও ইসলাম থেকে বাধা দেয়া ইত্যাদি বিপর্যয় সৃষ্টি করা তাদেরকে হত্যা করার চেয়ে জঘণ্যতম অপরাধ।

কুরআনে
فتنة শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-

ফেতনা অর্থ শির্ক: মহান আল্লাহ বলেন:
(
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ)
আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (শির্ক) গুরুতর অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:১৯১)
ফেতনা অর্থ বিভ্রান্ত করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِھِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَھَ مِنْھُ ابْتِغَا۬ئَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَا۬ئَ تَاْوِیْلِھ۪)
সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফেতনা (বিভ্রান্ত করার জন্য) এবং ব্যাখ্যা তালাশের উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে।”(সূরা আলি ইমরান ৩:৭)

ফেতনা অর্থ হত্যা করা:
(
أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
যদি তোমাদের আশঙ্কা হয়, কাফিররা তোমাদের জন্য ফেতনা সৃষ্টি (হত্যা) করবে।”(সূরা নিসা ৪:১০১) অর্থাৎ হত্যা করবে। এছাড়াও ফেতনা শব্দটি বাধা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ, পরীক্ষা ও শাস্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

মাসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধ-বিগ্রহ করা নিষেধ। কিন্তু যদি কাফির-মুশরিকগণ যুদ্ধ শুরু করে তাহলে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধ করা যাবে। (তাফসীরে সাদী পৃঃ ৭৩)

যদি তারা যুদ্ধ বর্জন করতঃ ইসলামে প্রবেশ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।

১৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে মুশরিক ও সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে শির্ক দূরীভূত হয়ে তাওহীদের দীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে না।

যারা কুফরী ও সীমালঙ্ঘনের ওপর বহাল থাকবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। তবে জিহাদের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত: তাঁর কাছে দু’ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে সৃষ্ট ফেতনার সময় আগমন করল এবং বলল, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমার (রাঃ)-এর পুত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন: আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন। তারা দু’জন বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি যতক্ষণ না ফেতনার অবসান ঘটেছে এবং দীনও আল্লাহ তা‘আলার জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছ ফেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য দীন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের ওয়াজিব।
২. শত্র“দের পক্ষে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা যাবে না। তবে যদি তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাহলে হত্যা করা যাবে।
৩. মাসজিদে হারামে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম, তবে শত্র“রা শুরু করলে তাদেরকে দমন করার জন্য করা যাবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের ভালবাসেন না।
৫. গাফুর ও রাহীম- এ দু’টি আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও পবিত্র গুণ।
2:194
اَلشَّہۡرُ الۡحَرَامُ بِالشَّہۡرِ الۡحَرَامِ وَ الۡحُرُمٰتُ قِصَاصٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ فَاعۡتَدُوۡا عَلَیۡہِ بِمِثۡلِ مَا اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۹۴
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:

ইবনু জারীর আত-তাবারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৬ষ্ঠ হিজরীতে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে রওয়ানা করেন। সাথে ১৪০০ সাহাবী। হুদায়বিয়া নামক স্থানে মুশরিকরা মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এটা ছিল জুলকাদা মাস তথা যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস। আপোসে ফায়সালা হল, আগামী বছর মুসলিমরা তিন দিনের জন্য উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে। পরের বছর চুক্তি অনুযায়ী মুসলিমরা যখন জুলকাদা মাসে উমরা করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন, তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ফাতহুল কাদীর ১/২৬৮)

এ আয়াতে নির্দেশ করা হচ্ছে যদি এবারও মক্কার কাফিররা এ হারাম মাসের সম্মান রক্ষা না করে গত বছরের ন্যায় তোমাদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়, তাহলে তোমরাও এর মর্যাদা খেয়াল না করে তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ উদ্যমে মোকাবেলা কর।

সকল নিষিদ্ধ (পবিত্র) জিনিসের জন্য এরূপ কিসাস বা বিনিময়। অর্থাৎ তারা যদি নিষিদ্ধ মাসের সম্মান রক্ষা করে, তাহলে তোমরাও তার সম্মান রক্ষা কর, আর যদি সম্মান নষ্ট করে তাহলে কাফিরদেরকে উপদেশমূলক উপরোক্ত শিক্ষা দাও। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ১/৪৯৪)

তারপর সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে যেন বাড়াবাড়ি না হয় সে দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তারা যেমন সীমালঙ্ঘন করবে তোমরাও তদ্র
ƒপ পরিমাণ করবে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলছেন,

(
وَاِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوْا بِمِثْلِ مَا عُوْقِبْتُمْ بِھ۪)
যদি তোমরা শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দেবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।”(সূরা নাহল ১৬:১২৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(
وَجَزٰٓؤُا سَیِّئَةٍ سَیِّئَةٌ مِّثْلُھَا)
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।” (সূরা শুআরা ৪২:৪০) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে স্বীয় প্রভুর ব্যাপারে ভয় করে চলার নির্দেশ দিয়ে বলেন: তিনি মুক্তাকীদের (ভয়কারীদের) সাথে (সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে) সর্বদা রয়েছেন।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হারাম মাসসহ সকল পবিত্র বস্তুর সম্মান রক্ষা করা মুসলিমদের কর্তব্য।
২. শত্র“রা হামলা করলে মোকাবেলা করার জন্য হারামে যুদ্ধ করা জায়েয।
৩. যেখানে শত্র“দের সাথে সীমালঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ সেখানে মুসলিমদের সাথে সীমালঙ্ঘন করা আরো বেশি গুরুতর অপরাধ।
৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা দ্বারা সর্বদা সৎ বান্দাদের সাথে থাকেন।
2:195
وَ اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّہۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَ اَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۹۵
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল: ১

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন: এ আয়াতটি ব্যয় করার ব্যাপারে নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৬) ২. আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। যখন ইসলামের শক্তি সামর্থ্য ও সাহায্যকারী বেড়ে গেল তখন আমাদের কতক ব্যক্তি কতক ব্যক্তির নিকট গোপনে বলতে লাগল যে, আল্লাহ তা‘আলা তো ইসলামকে সম্মানিত ও শক্তিশালী করেছেন আর ইতোপূর্বে আমাদের অনেক সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি আমরা আমাদের সম্পদের পরিচর্যা করে বৃদ্ধি করে নিই। তখন তাদের প্রতিবাদস্বরূপ এ আয়াত নাযিল হয়। (তিরমিযী হা: ২৯৭২, আবূ দাঊদ হা: ২৫১২, সহীহ)

এছাড়া আরো দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায় (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ৪২)

(
وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَي التَّهْلُكَةِ)
এবং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ কর না”
১. আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) বলেন: নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করার অর্থ হলো জিহাদ ছেড়ে দিয়ে পরিবার ও সম্পদের কাছে অবস্থান করা।

২. হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এখানে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হল, কৃপণতা করা।

৩. নুমান বিন বাশির বলেন: এটা হল, ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে গুনাহ করেছে অতঃপর এ বিশ্বাস করে যে, তাকে ক্ষমা করা হবে না, তখন সে আরো বেশি বেশি গুনাহ করে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

এ আয়াত প্রমাণ করে, এমন কিছু খাওয়া ও পান করা যা নিজের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয় তা হারাম। যেমন ধূমপান করা ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।

وَأَحْسِنُوْاতোমরা এহসান কর’এখানে সকল প্রকার ইহসান অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটা বিশেষ কোন বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়নি। অতএব সম্পদের ক্ষেত্রে ইহসান, সম্মানের ক্ষেত্রে ইহসান ও শাফায়াতের ক্ষেত্রে ইহসান সবই শামিল। (তাফসীর সা‘দী, পৃঃ ৭৪)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যথাসাধ্য ইসলামী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা উচিত। বিশেষ করে যখন শত্র“দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে তখন ব্যয় করা আবশ্যক।
২. যেকোন পন্থায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হারাম। তার মধ্যে অন্যতম হল নেশা জাতীয় বস্তু খাওয়া বা পান করা।
৩. ইহসানের ফযীলত জানলাম।
2:196
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰہِ ؕ فَاِنۡ اُحۡصِرۡتُمۡ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡہَدۡیِ ۚ وَ لَا تَحۡلِقُوۡا رُءُوۡسَکُمۡ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡہَدۡیُ مَحِلَّہٗ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ بِہٖۤ اَذًی مِّنۡ رَّاۡسِہٖ فَفِدۡیَۃٌ مِّنۡ صِیَامٍ اَوۡ صَدَقَۃٍ اَوۡ نُسُکٍ ۚ فَاِذَاۤ اَمِنۡتُمۡ ٝ فَمَنۡ تَمَتَّعَ بِالۡعُمۡرَۃِ اِلَی الۡحَجِّ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡہَدۡیِ ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ فِی الۡحَجِّ وَ سَبۡعَۃٍ اِذَا رَجَعۡتُمۡ ؕ تِلۡکَ عَشَرَۃٌ کَامِلَۃٌ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ لَّمۡ یَکُنۡ اَہۡلُہٗ حَاضِرِی الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۱۹۶﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সিয়াম ও জিহাদের বিধি-বিধান আলোচনা করার পর হজ্জের বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছেন। তিনি হজ্জ ও উমরা উভয়টি পরিপূর্ণভাবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শানে নুযূল:
সফওয়ান বিন উমাইয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি জাফরান রঙ্গে রঞ্জিত জুুব্বা পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কিভাবে উমরা করার নির্দেশ দিচ্ছেন তখন এ আয়াত নাযিল হয়:

(
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّٰهِ....)
তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেন, এইতো আমি। তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, তোমার পোশাক খুলে ফেল। অতঃপর গোসল করে যথাসম্ভব অপবিত্রতা পরিস্কার কর। তারপর তোমার হজ্জ সম্পাদনে যা কর উমরা সম্পদানে তাই কর। (সহীহ মুসলিম হা: ১১৮০)

আবদুল্লাহ বিন ‘মাকাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা কুফার মাসজিদে কাব বিন উজরার পাশে বসেছিলাম। তাঁকে আমি

(
فَفِدْیَةٌ مِّنْ صِیَامٍ)
এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন- আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল তখন আমার মুখের ওপর দিয়ে উকুন বয়ে পড়ছিল। আমাকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- তোমার অবস্থা এতদূর পৌঁছে যাবে আমি তা ধারণাই করতে পারিনি। তুমি কি একটি ছাগল কুরবানী দিতে সক্ষম হবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, যাও মাথা মুণ্ডন কর এবং তিনটি রোযা রাখ অথবা ছয়জন মিসকিনকে অর্ধ সা‘ করে খাদ্য দিয়ে দাও। আয়াতটি বিশেষ করে আমার ব্যাপারে অবতীর্ণ হলেও সকলের জন্য প্রযোজ্য। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৭)

এছাড়া অত্র আয়াত অবতীর্ণের বিষয়ে আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫০৪-৫)

(
وَاَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلہِ)
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা সম্পূর্ণ কর’এ আয়াত দ্বারা অনেকে বলে থাকেন হজ্জের মত উমরা করাও ফরয। তবে সঠিক কথা হলো হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়ার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব, যদিও তা (হজ্জ ও উমরা) নফল হয়।

اِحْصَارٌ - এর দু’টি অর্থ: ১. ইহরাম অবস্থায় শত্র“ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। ২. অসুস্থ ও এরূপ সমস্যায় বাধাগ্রস্ত হওয়া।

আল্লামা শানকীতি (রহঃ) বলেন, পূর্বকার আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে শত্র“ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া উদ্দেশ্য। তবে অধিকাংশ আলেমগণ বলেন: শত্র“ ও অসুস্থতাসহ সকল সমস্যা এখানে শামিল। আর এটাই সঠিক মত। (আযওয়াউল বায়ান ১ম খণ্ড, পৃঃ ১১৫)

যদি কেউ মক্কায় গিয়ে হজ্জ বা উমরা সম্পাদন করতে শত্র“ বা অসুস্থতার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবে সেখানেই সে গরু বা ছাগল বা ভেড়া বা উট যা তার জন্য সহজ হবে তা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিলের জন্য জবেহ করবে।

অতঃপর ইহরামের পোশাক খুলে মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম মুক্ত হয়ে যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার বছর শত্র“ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেখানে মাথা মুণ্ডন করে হালাল হয়ে ছিলেন। যদি কারো নিকট হাদী বা কুরবানীর জন্তু না থাকে তাহলে ১০ দিন রোযা রাখবে যেমন হজ্জে তামাত্তুর ক্ষেত্রে করা হয়।

(
حَتّٰی یَبْلُغَ الْھَدْیُ مَحِلَّھ۫)
কুরবানীর জন্তুগুলো যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত’অর্থাৎ যদি কেউ কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বস্থানে কুরবানীর হাদী জবেহ না করা পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করবে না। জবেহ করে পরে মাথা মুণ্ডন করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন হুদায়বিয়ার বছর করেছেন।

যদি বাধাপ্রাপ্ত না হয় তাহলে মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও জবেহ করতে পারবে না। অবশ্য তা জবেহ করতে হবে ঈদের দিন ১০ই জুলহজ্জে ও তার পরবর্তী আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোর কোন একদিন।

(
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيْضًا)
তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয়’অর্থাৎ যদি কেউ ইহরাম অবস্থায় অসুস্থ হয় বা কষ্টে পতিত হয় যার কারণে মাথা মুণ্ডন করতে বাধ্য হয়। তাহলে সে মাথা মুণ্ডন করে নেবে। আর তার ফিদইয়া বা বিনিময়স্বরূপ-

১. তিন দিন সিয়াম পালন করবে অথবা ২. ছয়জন মিসকীনকে খাওয়াবে অথবা ৩. হারামের ফকিরদের জন্য ১টি ছাগল জবেহ করে দেবে। যেমন এ আয়াতের শানে নুযূলে আলোচনা করা হয়েছে।

এ তিনটির যেকোন একটি আদায় করলেই চলবে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫০৬)

(
فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَی الْحَجِّ)
যে ব্যক্তি হজ্জ্বের সাথে উমরাও করতে চায়’যদি শত্র“দের বাধা বা অসুস্থতার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হয়ে হজ্জ আদায় করতে সক্ষম হয় আর হজ্জে তামাত্তু আদায় করতে চায় তাহলে যথাসাধ্য একটি পশু কুরবানী করবে।

উল্লেখ্য: হজ্জ তিন প্রকার:

১. হজ্জে ইফরাদ- বল হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধা ও হজ্জ সম্পন্ন করা।
২. হজ্জে কিরান: হজ্জ ও উমরার এক সাথে নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা ও মাঝে হালাল না হয়ে হজ্জ ও ওমরা সম্পন্ন করা।
এ উভয় অবস্থায় হজ্জের কার্যাবলী সুসম্পন্ন না করে ইহরাম খোলা বৈধ নয়।
৩. হজ্জে তামাত্তু: এতেও হজ্জ ও উমরার নিয়ত করবে তবে প্রথমে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে উমরার কাজ সম্পূর্ণ করে ইহরাম খুলে ফেলবে। তারপর ৮ই যুলহজ্জ দ্বিতীয় বার হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধে হজ্জ সম্পাদন করবে। তিন প্রকারের মধ্যে এটা উত্তম ও সহজ।


হজ্জে কিরান ও তামাত্তুর জন্য একটি হাদী (অর্থাৎ ছাগল বা ভেড়া বা উট বা গরু) একাকী বা উট ও গরুতে অংশীদারে কুরবানী করলেই হবে। যদি কেউ কুরবানী না করতে পারে তাহলে সে হজ্জের দিনগুলোতে তিনটি এবং বাড়ি ফিরে সাতটি রোযা রাখবে। হজ্জের দিনগুলোতে যে রোযা রাখবে তা অবশ্যই ৯ই যুলহজ্জের আগে অথবা আইয়ামে তাশরীকের পরে হতে হবে।

(
ذٰلِکَ لِمَنْ لَّمْ یَکُنْ اَھْلُھ۫ حَاضِرِی الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
এটা তারই জন্য যে মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়’হজ্জে তামাত্তু কাদের জন্য এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক কথা হল, কেবল তাদের জন্য যাদের পরিবার মাসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

সবশেষে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করার নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি শাস্তি দানে কঠোর। অতএব তার বিধান পালনে যেন কোন গাফলতি প্রকাশ না পায়।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হজ্জ ও উমরার নিয়ত করলে তা আদায় ওয়াজিব।
২. হজ্জ আদায় করতে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হলে কী করতে হবে তা জানা গেল।
৩. হজ্জে কোন নিষিদ্ধ কাজে জড়িত হলে কি কাফফারা দিতে হবে তা জানলাম।
৪. তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে তামাত্তু উত্তম।
2:197
اَلۡحَجُّ اَشۡہُرٌ مَّعۡلُوۡمٰتٌ ۚ فَمَنۡ فَرَضَ فِیۡہِنَّ الۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوۡقَ ۙ وَ لَا جِدَالَ فِی الۡحَجِّ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡہُ اللّٰہُ ؕؔ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ ﴿۱۹۷
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৭ নং আয়াতের তাফসীর:
হজ্জের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে। তা হল শাওয়াল, যুলকা‘দাহ ও যুলহিজ্জা-এর প্রথম ১০ দিন। (এটাই সঠিক মত) (তাফসীর সা‘দী পৃঃ ৭৫)

তাই এ মাসগুলোতেই হজ্জের ইহরাম বেঁধে কাজ সম্পূর্ণ করা আবশ্যক। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কোন ব্যক্তির উচিত নয়, হজ্জের মাস ছাড়া অন্য মাসে হজ্জের ইহরাম বাঁধা।

অন্য বর্ণনায় তিনি (রাঃ) বলেন, সুন্নাত হল কেবল হজ্জের মাসেই ইহরাম বাঁধা।

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কোন ব্যক্তির উচিত নয় হজ্জের মাস ছাড়া অন্য মাসে হজ্জের ইহরাম বাঁধা। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

যে ব্যক্তি ইহরাম বেঁধে নিজের ওপর হজ্জ ফরয করে নেবে তার জন্য স্ত্রী সহবাস ও অনুরূপ কাজ এবং পাপ কাজ ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম।

হজ্জের ফযীলত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

مَنْ حَجَّ للّٰه فَلَمْ يَرْفُثْ ، وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে হজ্জ করল এবং স্ত্রী সহবাস ও কোন পাপ কাজ করল না সে এমনভাবে ফিরে আসল যেন তার মা আজই তাকে ভূমিষ্ট করেছে। (সহীহ বুখারী হা: ১৮১৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৫০)

(
وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ.... )
অংশের শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসী হজ্জ করতে আসত কিন্তু কোন পাথেয় সাথে আনত না। তারা বলত: আমরা আল্লাহ তা‘আলার ওপর নির্ভরশীল। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১৫২৩)

এছাড়াও এ আয়াত নাযিলের কতকগুলো প্রেক্ষাপট পাওয়া যায়। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

অতএব হে মু’মিনগণ! তোমরা নামকা ওয়াস্তে ভরসা না করে সফরের পাথেয়স্বরূপ খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু সঙ্গে নাও। তবে জেনে রেখ, সর্বোত্তম পাথেয় হল তাক্বওয়া।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস ও পাপ কাজ করা সম্পূর্ণ হারাম। যদিও অন্যান্য সময় পাপ কাজ হারাম কিন্তু এ সময় আরো বেশি অপরাধ।
২. উপযুক্ত পন্থা অবলম্বন না করে শুধু আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করার নাম প্রকৃত ভরসা নয়। বরং যে কোন কাজের যথাযথ বৈধ ব্যবস্থা গ্রহণ করত আল্লাহ তা‘আলার ওপর নির্ভর করার নাম ভরসা।
2:198
لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّکُمۡ ؕ فَاِذَاۤ اَفَضۡتُمۡ مِّنۡ عَرَفٰتٍ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ عِنۡدَ الۡمَشۡعَرِ الۡحَرَامِ ۪ وَ اذۡکُرُوۡہُ کَمَا ہَدٰىکُمۡ ۚ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلِہٖ لَمِنَ الضَّآلِّیۡنَ ﴿۱۹۸
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে উকায, মুজিন্না এবং যুল-মাজায নামে বাজার ছিল। (ইসলাম গ্রহণের পর হজ্জের সময়) এসব বাজারে ব্যবসা করা সাহাবীগণ পাপের কাজ মনে করল। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তারা জিজ্ঞাসা করল। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫১৯)

এছাড়াও এ আয়াতের কয়েকটি শানে নুযূল পাওয়া যায়। এটি সবচয়ে বেশি সহীহ। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫২০)

আয়াতে
فضل ‘অনুগ্রহ’অর্থ ব্যবসায় বাণিজ্য। যেমন সূরা জুমু‘আর ১০ নং আয়াতে এসেছে। হজ্জের মওসুমে ব্যবসা-বাণিজ্য করা বৈধ। তবে অবশ্যই যেন শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যে হজ্জে গমন করা না হয়। বরং এটা হল অতিরিক্ত কাজ। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা হজ্জের অন্যতম একটি রুকনের কথা তুলে ধরেছেন। তা হল ৯ই যুলহজ্জ সূর্যাস্তের পর হাজীগণ আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালিফায় চলে আসবে এবং তথায় তাসবীহ তাহলীল ও দু‘আ করবে।

এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আরাফায় অবস্থানই হল মূল হজ্জ। যে ব্যক্তি ফজর হবার পূর্বেই আরাফায় অবস্থান পেল সে হজ্জ পেল। (সহীহ ইবুন খুযাইমা হা: ২৮২২, তিরমিযী হা: ৮৮৯, সহীহ) আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত হবে কিন্তু মাগরিবের সালাত পড়া যাবে না, বরং মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিবের তিন রাকাত ও এশার দু‘ রাকাত (কসর) এক সাথে এক আযানে ও দু’ইকামাতে পড়বে। মুযদালিফাকে ‘মাশআরে হারাম’বলা হয়। কেননা এটা হারামের অন্তর্ভুক্ত। এখানে হাজীদেরকে আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে যিকিরে ব্যস্ত থাকবে, অতঃপর ফর্সা হলে সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনা অভিমুখে যাত্রা করবে।

হাজীগণ আরাফার দিন রোযা রাখবে না, যারা হজ্জ করতে যাবে না তারা রোযা রাখবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আরাফার দিন রোযা রাখলে আল্লাহ তা‘আলা পূর্বের ও পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম হা: ১১৬২) অন্য হাদীসে এসেছে: সর্বোত্তম দু‘আ আরাফার দু‘আ, আর সর্বোত্তম কথা আমি যা বলেছি ও আমার পূর্বের নাবীরা যা বলেছেন:

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰي كُلِّ شَئءٍ قَدِيرٌ
আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য রাজত্ব, তাঁর জন্য সকল প্রশংসা এবং তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সহীহ মুসলিম হা: ১১৬২)

অতএব আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ কর যেমন তিনি তোমাদের স্মরণ করতে বলেছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুযদালিফায় অবস্থান/রাত্রিযাপন ওয়াজিব।
২. হজ্জ আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের প্রতি খেয়াল রাখা আবশ্যক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও যিকিরের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
৪. হজ্জ করতে গিয়ে ব্যবসা করা বৈধ তবে শুধু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যেই যাওয়া যাবেনা।
2:199
ثُمَّ اَفِیۡضُوۡا مِنۡ حَیۡثُ اَفَاضَ النَّاسُ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۹۹
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৯ থেকে ২০২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা জাহিলী যুগের একটি কু-প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কুরাইশদের মত আরাফা না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে ফিরে এসো না বরং লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, তোমরা সেখান থেকেই অর্থাৎ আরাফা থেকে মুযদালিফায় ফিরে এসো। এ নির্দেশ দেয়ার কারণ হল- আরাফা হারামের বাইরে। তাই মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, বরং মুযদালিফা থেকেই ফিরে আসতো। তাই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুরাইশগণ এবং যারা তাদের দীনের অনুসারী ছিল তারা (হজ্জের সময়) মুযদালিফাতে অবস্থান করত। কুরাইশগণ নিজেদেরকে ধর্মে অটল বলে দাবি করত। আর অন্য আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের (অবস্থান করার) এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন।

(
أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ)
আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২০)

(
ثُمَّ أَفِيْضُوْا)
প্রত্যাবর্তন কর” এখানে ইফাযা বা প্রত্যাবর্তন বলতে মুযদালিফা হতে মিনার দিকে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য প্রত্যাবর্তন করা। আর ‘মানুষেরা’দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইবরাহীম (আঃ)। (তাফসীর ইবনে কাসীর১/৫২৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করে মিনায় কংকর নিক্ষেপের সময় তাঁকে বেশি বেশি স্মরণ করার কথা বলেছেন।

(
كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ)
যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ কর সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ কর;” এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, শিশুরা যেমন সর্বদা আব্বা-আম্মা করে, সেরূপ বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলা-কে স্মরণ কর। আবার বলা হয়- আরবের লোকেরা হজ্জ সমাপ্ত করে মিনায় মেলা বসাতো এবং পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব স্মরণ করত। মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে- ১০ই যুলহজ্জ কঙ্কর মেরে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাবা তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করে হজ্জ সমাপ্ত করে নেয়ার পর তোমরা তিন দিন মিনায় অবস্থান করবে, সে দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির কর। যেমন জাহিলী যুগে তোমরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে।

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا)
হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালেই দান করুন” এখানে আল্লাহ তা‘আলা দু’শ্রেণির মানুষের সংবাদ দিচ্ছেন। এক শ্রেণী যারা কেবল দুনিয়া নিয়েই খুশি। তারা কেবল দুনিয়াই চায়, পরকালের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদের জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কতক গ্রামবাসী মুযদালিফা অবস্থান করে বলত- হে আল্লাহ! এ বছর ভালভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করুন যেন ফসল ভাল হয় এবং ভাল সন্তান দান করুন ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মু’মিনরা উভয় জগতের জন্য দু‘আ করত। তাই তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। এ প্রার্থনার মধ্যে ইহজগত ও পরজগতের সমুদয় মঙ্গল একত্রিত করা হয়েছে এবং সকল অমঙ্গল হতে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
দু‘আটি বেশি বেশি পড়তেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২২) এটাই হল মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হজ্জের সব বিধি-বিধান পালনে সবাই সমান।
২. মিনায় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বেশি পরিমাণে যিকির বা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ করা কর্তব্য।
৩. মু’মিনগণ উভয় জগতের জন্যই দু‘আ করবে।


৪. (
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً)
এর ফযীলত জানলাম।
2:200
فَاِذَا قَضَیۡتُمۡ مَّنَاسِکَکُمۡ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَذِکۡرِکُمۡ اٰبَآءَکُمۡ اَوۡ اَشَدَّ ذِکۡرًا ؕ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا وَ مَا لَہٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنۡ خَلَاقٍ ﴿۲۰۰
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৯ থেকে ২০২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা জাহিলী যুগের একটি কু-প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কুরাইশদের মত আরাফা না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে ফিরে এসো না বরং লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, তোমরা সেখান থেকেই অর্থাৎ আরাফা থেকে মুযদালিফায় ফিরে এসো। এ নির্দেশ দেয়ার কারণ হল- আরাফা হারামের বাইরে। তাই মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, বরং মুযদালিফা থেকেই ফিরে আসতো। তাই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুরাইশগণ এবং যারা তাদের দীনের অনুসারী ছিল তারা (হজ্জের সময়) মুযদালিফাতে অবস্থান করত। কুরাইশগণ নিজেদেরকে ধর্মে অটল বলে দাবি করত। আর অন্য আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের (অবস্থান করার) এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন।

(
أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ)
আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২০)

(
ثُمَّ أَفِيْضُوْا)
প্রত্যাবর্তন কর” এখানে ইফাযা বা প্রত্যাবর্তন বলতে মুযদালিফা হতে মিনার দিকে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য প্রত্যাবর্তন করা। আর ‘মানুষেরা’দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইবরাহীম (আঃ)। (তাফসীর ইবনে কাসীর১/৫২৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করে মিনায় কংকর নিক্ষেপের সময় তাঁকে বেশি বেশি স্মরণ করার কথা বলেছেন।

(
كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ)
যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ কর সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ কর;” এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, শিশুরা যেমন সর্বদা আব্বা-আম্মা করে, সেরূপ বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলা-কে স্মরণ কর। আবার বলা হয়- আরবের লোকেরা হজ্জ সমাপ্ত করে মিনায় মেলা বসাতো এবং পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব স্মরণ করত। মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে- ১০ই যুলহজ্জ কঙ্কর মেরে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাবা তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করে হজ্জ সমাপ্ত করে নেয়ার পর তোমরা তিন দিন মিনায় অবস্থান করবে, সে দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির কর। যেমন জাহিলী যুগে তোমরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে।

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا)

হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালেই দান করুন” এখানে আল্লাহ তা‘আলা দু’শ্রেণির মানুষের সংবাদ দিচ্ছেন। এক শ্রেণী যারা কেবল দুনিয়া নিয়েই খুশি। তারা কেবল দুনিয়াই চায়, পরকালের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদের জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কতক গ্রামবাসী মুযদালিফা অবস্থান করে বলত- হে আল্লাহ! এ বছর ভালভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করুন যেন ফসল ভাল হয় এবং ভাল সন্তান দান করুন ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মু’মিনরা উভয় জগতের জন্য দু‘আ করত। তাই তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। এ প্রার্থনার মধ্যে ইহজগত ও পরজগতের সমুদয় মঙ্গল একত্রিত করা হয়েছে এবং সকল অমঙ্গল হতে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
দু‘আটি বেশি বেশি পড়তেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২২) এটাই হল মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হজ্জের সব বিধি-বিধান পালনে সবাই সমান।
২. মিনায় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বেশি পরিমাণে যিকির বা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ করা কর্তব্য।
৩. মু’মিনগণ উভয় জগতের জন্যই দু‘আ করবে।

৪. (
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً)
এর ফযীলত জানলাম।
2:201
وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿۲۰۱
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৯ থেকে ২০২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা জাহিলী যুগের একটি কু-প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কুরাইশদের মত আরাফা না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে ফিরে এসো না বরং লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, তোমরা সেখান থেকেই অর্থাৎ আরাফা থেকে মুযদালিফায় ফিরে এসো। এ নির্দেশ দেয়ার কারণ হল- আরাফা হারামের বাইরে। তাই মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, বরং মুযদালিফা থেকেই ফিরে আসতো। তাই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুরাইশগণ এবং যারা তাদের দীনের অনুসারী ছিল তারা (হজ্জের সময়) মুযদালিফাতে অবস্থান করত। কুরাইশগণ নিজেদেরকে ধর্মে অটল বলে দাবি করত। আর অন্য আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের (অবস্থান করার) এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন।

(
أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ)
আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২০)
(
ثُمَّ أَفِيْضُوْا)
প্রত্যাবর্তন কর” এখানে ইফাযা বা প্রত্যাবর্তন বলতে মুযদালিফা হতে মিনার দিকে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য প্রত্যাবর্তন করা। আর ‘মানুষেরা’দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইবরাহীম (আঃ)। (তাফসীর ইবনে কাসীর১/৫২৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করে মিনায় কংকর নিক্ষেপের সময় তাঁকে বেশি বেশি স্মরণ করার কথা বলেছেন।
(
كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ)
যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ কর সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ কর;” এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, শিশুরা যেমন সর্বদা আব্বা-আম্মা করে, সেরূপ বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলা-কে স্মরণ কর। আবার বলা হয়- আরবের লোকেরা হজ্জ সমাপ্ত করে মিনায় মেলা বসাতো এবং পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব স্মরণ করত। মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে- ১০ই যুলহজ্জ কঙ্কর মেরে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাবা তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করে হজ্জ সমাপ্ত করে নেয়ার পর তোমরা তিন দিন মিনায় অবস্থান করবে, সে দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির কর। যেমন জাহিলী যুগে তোমরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে।

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا)
হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালেই দান করুন” এখানে আল্লাহ তা‘আলা দু’শ্রেণির মানুষের সংবাদ দিচ্ছেন। এক শ্রেণী যারা কেবল দুনিয়া নিয়েই খুশি। তারা কেবল দুনিয়াই চায়, পরকালের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদের জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কতক গ্রামবাসী মুযদালিফা অবস্থান করে বলত- হে আল্লাহ! এ বছর ভালভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করুন যেন ফসল ভাল হয় এবং ভাল সন্তান দান করুন ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মু’মিনরা উভয় জগতের জন্য দু‘আ করত। তাই তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। এ প্রার্থনার মধ্যে ইহজগত ও পরজগতের সমুদয় মঙ্গল একত্রিত করা হয়েছে এবং সকল অমঙ্গল হতে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
দু‘আটি বেশি বেশি পড়তেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২২) এটাই হল মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হজ্জের সব বিধি-বিধান পালনে সবাই সমান।
২. মিনায় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বেশি পরিমাণে যিকির বা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ করা কর্তব্য।
৩. মু’মিনগণ উভয় জগতের জন্যই দু‘আ করবে।


৪. (
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً)
এর ফযীলত জানলাম।
2:202
اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ نَصِیۡبٌ مِّمَّا کَسَبُوۡا ؕ وَ اللّٰہُ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ ﴿۲۰۲
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১৯৯ থেকে ২০২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা জাহিলী যুগের একটি কু-প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কুরাইশদের মত আরাফা না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে ফিরে এসো না বরং লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, তোমরা সেখান থেকেই অর্থাৎ আরাফা থেকে মুযদালিফায় ফিরে এসো। এ নির্দেশ দেয়ার কারণ হল- আরাফা হারামের বাইরে। তাই মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, বরং মুযদালিফা থেকেই ফিরে আসতো। তাই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুরাইশগণ এবং যারা তাদের দীনের অনুসারী ছিল তারা (হজ্জের সময়) মুযদালিফাতে অবস্থান করত। কুরাইশগণ নিজেদেরকে ধর্মে অটল বলে দাবি করত। আর অন্য আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফাতে আসার, সেখানে ওকুফের (অবস্থান করার) এবং এরপর সেখান থেকে ফেরার নির্দেশ দিলেন।

(
أَفِيْضُوْا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ)
আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২০)
(
ثُمَّ أَفِيْضُوْا)
প্রত্যাবর্তন কর” এখানে ইফাযা বা প্রত্যাবর্তন বলতে মুযদালিফা হতে মিনার দিকে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য প্রত্যাবর্তন করা। আর ‘মানুষেরা’দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইবরাহীম (আঃ)। (তাফসীর ইবনে কাসীর১/৫২৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করে মিনায় কংকর নিক্ষেপের সময় তাঁকে বেশি বেশি স্মরণ করার কথা বলেছেন।

(
كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ)
যেভাবে তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ কর সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ কর;” এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, শিশুরা যেমন সর্বদা আব্বা-আম্মা করে, সেরূপ বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলা-কে স্মরণ কর। আবার বলা হয়- আরবের লোকেরা হজ্জ সমাপ্ত করে মিনায় মেলা বসাতো এবং পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব স্মরণ করত। মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে- ১০ই যুলহজ্জ কঙ্কর মেরে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাবা তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করে হজ্জ সমাপ্ত করে নেয়ার পর তোমরা তিন দিন মিনায় অবস্থান করবে, সে দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির কর। যেমন জাহিলী যুগে তোমরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে।

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا)

হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালেই দান করুন” এখানে আল্লাহ তা‘আলা দু’শ্রেণির মানুষের সংবাদ দিচ্ছেন। এক শ্রেণী যারা কেবল দুনিয়া নিয়েই খুশি। তারা কেবল দুনিয়াই চায়, পরকালের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদের জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: কতক গ্রামবাসী মুযদালিফা অবস্থান করে বলত- হে আল্লাহ! এ বছর ভালভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করুন যেন ফসল ভাল হয় এবং ভাল সন্তান দান করুন ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মু’মিনরা উভয় জগতের জন্য দু‘আ করত। তাই তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। এ প্রার্থনার মধ্যে ইহজগত ও পরজগতের সমুদয় মঙ্গল একত্রিত করা হয়েছে এবং সকল অমঙ্গল হতে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

(
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
দু‘আটি বেশি বেশি পড়তেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫২২) এটাই হল মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হজ্জের সব বিধি-বিধান পালনে সবাই সমান।
২. মিনায় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বেশি পরিমাণে যিকির বা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ করা কর্তব্য।
৩. মু’মিনগণ উভয় জগতের জন্যই দু‘আ করবে।


৪. (
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً)
এর ফযীলত জানলাম।
2:203
وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ تَعَجَّلَ فِیۡ یَوۡمَیۡنِ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ۚ وَ مَنۡ تَاَخَّرَ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ۙ لِمَنِ اتَّقٰی ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ اِلَیۡہِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۲۰۳
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২০৩ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে হজ্জের আরেকটি রুকন বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন- নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন অর্থাৎ আইয়ামে তাশরীক ১১, ১২, ১৩ই যুলহজ্জ তাসবীহ ও তাকবীর পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা-কে স্মরণ কর। যদি কেউ ১২ই যুলহজ্জ মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা থেকে বের হয়ে যেতে চায় তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি বিলম্ব করতঃ ১৩ তারিখে কঙ্কর মারে তাহলেও অপরাধ হবে না।

আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর পড়া সুন্নাত। কেবল ফরয সালাতের পরই পড়া হবে তা নয়। বরং সব সময় এ তাকবীর “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার অলিল্লাহিল হামদ” পড়া বাঞ্ছণীয়। কঙ্কর নিক্ষেপের সময় “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত। (নায়নুল আওতার ৫/৪৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীন সহজ। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এমন কিছু চাপিয়ে দেননি যা পালন করা সাধ্যাতীত।
২. মিনায় রাত যাপন ওয়াজিব।
৩. সকলকে আল্লাহ তা‘আলার কাছেই ফিরে যেতে হবে।
2:204
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّعۡجِبُکَ قَوۡلُہٗ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ یُشۡہِدُ اللّٰہَ عَلٰی مَا فِیۡ قَلۡبِہٖ ۙ وَ ہُوَ اَلَدُّ الۡخِصَامِ ﴿۲۰۴
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২০৪ থেকে ২০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতের কয়েকটি শানে নুযূল পাওয়া যায় তবে সবই দুর্বল।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের ব্যাপারে অবগত করছেন যে, কিছু মুনাফিক রয়েছে যারা এমন মধুময়, সুন্দর সাবলিল ভাষায় নরম কণ্ঠে কথা বলবে ফলে তাদের কথা তোমাকে আশ্চর্যান্বিত করবে। এর উদ্দেশ্য দুনিয়া অর্জন, আখিরাত নয়। কথায় কথায় তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে, আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের অন্তরের কথা জানেন, অবশ্যই আমরা মু’মিন, আপনাকে ভালবাসি, আমি এরূপ এরূপ .... ইত্যাদি। (আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৩)

(
وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ)
সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি’রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে বেশি ক্রোধভাজন ঐ ব্যক্তি যে বেশি ঝগড়াটে।

কিন্তু যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে চলে যায় তখন জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, মানুষের শস্য নষ্ট করে ও জীব-জন্তু হত্যা করে।

আল্লাহ তা‘আলা এসব ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। যখন এ ফাসাদকারী মুনাফিকদেরকে বলা হয় তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, তাঁর শাস্তিকে ভয় কর, জমিনে ফাসাদ কর না। তারা এরূপ নসিহত গ্রহণ করে না বরং অহঙ্কার ও জাহিলয়াতের গোঁড়ামি ও পাপ কাজে অটল থাকে। এদের জন্য জাহান্নাম।

(
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ.... )
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস, ইকরিমা, সাঈদ বিন মুসাইয়েব ও আবূ উসমান আন নাহদীসহ প্রমুখ বর্ণনা করেন, আয়াতটি সুহাইব বিন সিনান আর-রুমীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন হিজরত করার ইচ্ছা করলেন তখন মানুষেরা বাধা দিল যাতে সে সম্পদ নিতে না পারে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে মুশরিকরা তাকে ইসলাম ছাড়তে বাধ্য করল। তারা বলল, সে যদি সম্পদ রেখে হিজরত করতে চায় তাহলে করুক। তিনি তাই করলেন; তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, সুহাইব যখন মক্কা থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন, কুরাইশরা বলল, হে সুহাইব! তুমি আমাদের নিকট এসেছিলে এমন অবস্থায় যে, তোমার কোন সম্পদ ছিল না এখন তুমি সম্পদ নিয়ে চলে যেতে চাও। আল্লাহ তা‘আলার শপথ তুমি তা করতে পারবে না। সুহাইব বললেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমি যদি তোমাদেরকে সম্পদ ফিরিয়ে দেই তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন আমি তাদের কাছে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেই। মদীনায় আগমন করার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি বললেন: সুহাইব সফলকাম হয়েছে, সুহাইব সফলকাম হয়েছে। (হাদীসটি হাসান, হাকিম ৩/৩৯৮)

অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বলেন: এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ সকল মুজাহিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
اِنَّ اللہَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَھُمْ وَاَمْوَالَھُمْ بِاَنَّ لَھُمُ الْجَنَّةَﺚ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ فَیَقْتُلُوْنَ وَیُقْتَلُوْنَﺤ وَعْدًا عَلَیْھِ حَقًّا فِی التَّوْرٰٿةِ وَالْاِنْجِیْلِ وَالْقُرْاٰنِﺚ وَمَنْ اَوْفٰی بِعَھْدِھ۪ مِنَ اللہِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِھ۪ﺚ وَذٰلِکَ ھُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়।

তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্র“তি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকদের মনোমুগ্ধকর কথা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
২. যারা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা মানুষের মধ্যে খারাপ জাতি।
৩. কথায় কথায় আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করা মু’মিনদের কাজ নয়।
৪. জিহাদের প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া হয়েছে।
2:205
وَ اِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الۡاَرۡضِ لِیُفۡسِدَ فِیۡہَا وَ یُہۡلِکَ الۡحَرۡثَ وَ النَّسۡلَ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ الۡفَسَادَ ﴿۲۰۵
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২০৪ থেকে ২০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতের কয়েকটি শানে নুযূল পাওয়া যায় তবে সবই দুর্বল।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের ব্যাপারে অবগত করছেন যে, কিছু মুনাফিক রয়েছে যারা এমন মধুময়, সুন্দর সাবলিল ভাষায় নরম কণ্ঠে কথা বলবে ফলে তাদের কথা তোমাকে আশ্চর্যান্বিত করবে। এর উদ্দেশ্য দুনিয়া অর্জন, আখিরাত নয়। কথায় কথায় তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে, আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের অন্তরের কথা জানেন, অবশ্যই আমরা মু’মিন, আপনাকে ভালবাসি, আমি এরূপ এরূপ .... ইত্যাদি। (আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৩)
(
وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ)
সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি’রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে বেশি ক্রোধভাজন ঐ ব্যক্তি যে বেশি ঝগড়াটে।

কিন্তু যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে চলে যায় তখন জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, মানুষের শস্য নষ্ট করে ও জীব-জন্তু হত্যা করে।

আল্লাহ তা‘আলা এসব ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। যখন এ ফাসাদকারী মুনাফিকদেরকে বলা হয় তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, তাঁর শাস্তিকে ভয় কর, জমিনে ফাসাদ কর না। তারা এরূপ নসিহত গ্রহণ করে না বরং অহঙ্কার ও জাহিলয়াতের গোঁড়ামি ও পাপ কাজে অটল থাকে। এদের জন্য জাহান্নাম।
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ.... )
শানে নুযূল:

ইবনু আব্বাস, ইকরিমা, সাঈদ বিন মুসাইয়েব ও আবূ উসমান আন নাহদীসহ প্রমুখ বর্ণনা করেন, আয়াতটি সুহাইব বিন সিনান আর-রুমীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন হিজরত করার ইচ্ছা করলেন তখন মানুষেরা বাধা দিল যাতে সে সম্পদ নিতে না পারে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে মুশরিকরা তাকে ইসলাম ছাড়তে বাধ্য করল। তারা বলল, সে যদি সম্পদ রেখে হিজরত করতে চায় তাহলে করুক। তিনি তাই করলেন; তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, সুহাইব যখন মক্কা থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন, কুরাইশরা বলল, হে সুহাইব! তুমি আমাদের নিকট এসেছিলে এমন অবস্থায় যে, তোমার কোন সম্পদ ছিল না এখন তুমি সম্পদ নিয়ে চলে যেতে চাও। আল্লাহ তা‘আলার শপথ তুমি তা করতে পারবে না। সুহাইব বললেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমি যদি তোমাদেরকে সম্পদ ফিরিয়ে দেই তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন আমি তাদের কাছে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেই। মদীনায় আগমন করার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি বললেন: সুহাইব সফলকাম হয়েছে, সুহাইব সফলকাম হয়েছে। (হাদীসটি হাসান, হাকিম ৩/৩৯৮)

অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বলেন: এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ সকল মুজাহিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
اِنَّ اللہَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَھُمْ وَاَمْوَالَھُمْ بِاَنَّ لَھُمُ الْجَنَّةَﺚ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ فَیَقْتُلُوْنَ وَیُقْتَلُوْنَﺤ وَعْدًا عَلَیْھِ حَقًّا فِی التَّوْرٰٿةِ وَالْاِنْجِیْلِ وَالْقُرْاٰنِﺚ وَمَنْ اَوْفٰی بِعَھْدِھ۪ مِنَ اللہِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِھ۪ﺚ وَذٰلِکَ ھُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়।

তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্র“তি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকদের মনোমুগ্ধকর কথা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
২. যারা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা মানুষের মধ্যে খারাপ জাতি।
৩. কথায় কথায় আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করা মু’মিনদের কাজ নয়।
৪. জিহাদের প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া হয়েছে।
2:206
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُ اتَّقِ اللّٰہَ اَخَذَتۡہُ الۡعِزَّۃُ بِالۡاِثۡمِ فَحَسۡبُہٗ جَہَنَّمُ ؕ وَ لَبِئۡسَ الۡمِہَادُ ﴿۲۰۶
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২০৪ থেকে ২০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতের কয়েকটি শানে নুযূল পাওয়া যায় তবে সবই দুর্বল।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের ব্যাপারে অবগত করছেন যে, কিছু মুনাফিক রয়েছে যারা এমন মধুময়, সুন্দর সাবলিল ভাষায় নরম কণ্ঠে কথা বলবে ফলে তাদের কথা তোমাকে আশ্চর্যান্বিত করবে। এর উদ্দেশ্য দুনিয়া অর্জন, আখিরাত নয়। কথায় কথায় তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে, আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের অন্তরের কথা জানেন, অবশ্যই আমরা মু’মিন, আপনাকে ভালবাসি, আমি এরূপ এরূপ .... ইত্যাদি। (আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৩)

(
وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ)
সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি’রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে বেশি ক্রোধভাজন ঐ ব্যক্তি যে বেশি ঝগড়াটে।

কিন্তু যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে চলে যায় তখন জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, মানুষের শস্য নষ্ট করে ও জীব-জন্তু হত্যা করে।

আল্লাহ তা‘আলা এসব ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। যখন এ ফাসাদকারী মুনাফিকদেরকে বলা হয় তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, তাঁর শাস্তিকে ভয় কর, জমিনে ফাসাদ কর না। তারা এরূপ নসিহত গ্রহণ করে না বরং অহঙ্কার ও জাহিলয়াতের গোঁড়ামি ও পাপ কাজে অটল থাকে। এদের জন্য জাহান্নাম।

(
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ.... )
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস, ইকরিমা, সাঈদ বিন মুসাইয়েব ও আবূ উসমান আন নাহদীসহ প্রমুখ বর্ণনা করেন, আয়াতটি সুহাইব বিন সিনান আর-রুমীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন হিজরত করার ইচ্ছা করলেন তখন মানুষেরা বাধা দিল যাতে সে সম্পদ নিতে না পারে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে মুশরিকরা তাকে ইসলাম ছাড়তে বাধ্য করল। তারা বলল, সে যদি সম্পদ রেখে হিজরত করতে চায় তাহলে করুক। তিনি তাই করলেন; তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, সুহাইব যখন মক্কা থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন, কুরাইশরা বলল, হে সুহাইব! তুমি আমাদের নিকট এসেছিলে এমন অবস্থায় যে, তোমার কোন সম্পদ ছিল না এখন তুমি সম্পদ নিয়ে চলে যেতে চাও। আল্লাহ তা‘আলার শপথ তুমি তা করতে পারবে না। সুহাইব বললেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমি যদি তোমাদেরকে সম্পদ ফিরিয়ে দেই তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন আমি তাদের কাছে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেই। মদীনায় আগমন করার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি বললেন: সুহাইব সফলকাম হয়েছে, সুহাইব সফলকাম হয়েছে। (হাদীসটি হাসান, হাকিম ৩/৩৯৮)

অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বলেন: এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ সকল মুজাহিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(
اِنَّ اللہَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَھُمْ وَاَمْوَالَھُمْ بِاَنَّ لَھُمُ الْجَنَّةَﺚ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ فَیَقْتُلُوْنَ وَیُقْتَلُوْنَﺤ وَعْدًا عَلَیْھِ حَقًّا فِی التَّوْرٰٿةِ وَالْاِنْجِیْلِ وَالْقُرْاٰنِﺚ وَمَنْ اَوْفٰی بِعَھْدِھ۪ مِنَ اللہِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِھ۪ﺚ وَذٰلِکَ ھُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়।

তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্র“তি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকদের মনোমুগ্ধকর কথা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
২. যারা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা মানুষের মধ্যে খারাপ জাতি।
৩. কথায় কথায় আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করা মু’মিনদের কাজ নয়।
৪. জিহাদের প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া হয়েছে।
2:207
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡرِیۡ نَفۡسَہُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ رَءُوۡفٌۢ بِالۡعِبَادِ ﴿۲۰۷
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২০৪ থেকে ২০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতের কয়েকটি শানে নুযূল পাওয়া যায় তবে সবই দুর্বল।
   এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের ব্যাপারে অবগত করছেন যে, কিছু মুনাফিক রয়েছে যারা এমন মধুময়, সুন্দর সাবলিল ভাষায় নরম কণ্ঠে কথা বলবে ফলে তাদের কথা তোমাকে আশ্চর্যান্বিত করবে। এর উদ্দেশ্য দুনিয়া অর্জন, আখিরাত নয়। কথায় কথায় তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে, আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের অন্তরের কথা জানেন, অবশ্যই আমরা মু’মিন, আপনাকে ভালবাসি, আমি এরূপ এরূপ .... ইত্যাদি। (আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৩)
(
وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ)
সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি’রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে বেশি ক্রোধভাজন ঐ ব্যক্তি যে বেশি ঝগড়াটে।

কিন্তু যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে চলে যায় তখন জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, মানুষের শস্য নষ্ট করে ও জীব-জন্তু হত্যা করে।

আল্লাহ তা‘আলা এসব ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। যখন এ ফাসাদকারী মুনাফিকদেরকে বলা হয় তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, তাঁর শাস্তিকে ভয় কর, জমিনে ফাসাদ কর না। তারা এরূপ নসিহত গ্রহণ করে না বরং অহঙ্কার ও জাহিলয়াতের গোঁড়ামি ও পাপ কাজে অটল থাকে। এদের জন্য জাহান্নাম।
(
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ.... )
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস, ইকরিমা, সাঈদ বিন মুসাইয়েব ও আবূ উসমান আন নাহদীসহ প্রমুখ বর্ণনা করেন, আয়াতটি সুহাইব বিন সিনান আর-রুমীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন হিজরত করার ইচ্ছা করলেন তখন মানুষেরা বাধা দিল যাতে সে সম্পদ নিতে না পারে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে মুশরিকরা তাকে ইসলাম ছাড়তে বাধ্য করল। তারা বলল, সে যদি সম্পদ রেখে হিজরত করতে চায় তাহলে করুক। তিনি তাই করলেন; তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, সুহাইব যখন মক্কা থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন, কুরাইশরা বলল, হে সুহাইব! তুমি আমাদের নিকট এসেছিলে এমন অবস্থায় যে, তোমার কোন সম্পদ ছিল না এখন তুমি সম্পদ নিয়ে চলে যেতে চাও। আল্লাহ তা‘আলার শপথ তুমি তা করতে পারবে না। সুহাইব বললেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমি যদি তোমাদেরকে সম্পদ ফিরিয়ে দেই তাহলে আমাকে ছেড়ে দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন আমি তাদের কাছে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেই। মদীনায় আগমন করার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি বললেন: সুহাইব সফলকাম হয়েছে, সুহাইব সফলকাম হয়েছে। (হাদীসটি হাসান, হাকিম ৩/৩৯৮)

অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বলেন: এ আয়াতটি প্রত্যেক ঐ সকল মুজাহিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(
اِنَّ اللہَ اشْتَرٰی مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ اَنْفُسَھُمْ وَاَمْوَالَھُمْ بِاَنَّ لَھُمُ الْجَنَّةَﺚ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ فَیَقْتُلُوْنَ وَیُقْتَلُوْنَﺤ وَعْدًا عَلَیْھِ حَقًّا فِی التَّوْرٰٿةِ وَالْاِنْجِیْلِ وَالْقُرْاٰنِﺚ وَمَنْ اَوْفٰی بِعَھْدِھ۪ مِنَ اللہِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَیْعِکُمُ الَّذِیْ بَایَعْتُمْ بِھ۪ﺚ وَذٰلِکَ ھُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়।

তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্র“তি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই তো মহাসাফল্য।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুনাফিকদের মনোমুগ্ধকর কথা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
২. যারা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা মানুষের মধ্যে খারাপ জাতি।
৩. কথায় কথায় আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করা মু’মিনদের কাজ নয়।
৪. জিহাদের প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া হয়েছে।

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments