মহিলাদের স্রাব ও প্রসূতি অবস্থার বিধিবিধান সংক্রান্ত
৬০টি প্রশ্ন
সংকলন : আল্লামা শাইখ মুহাম্মাদ ইব্ ন সালেহ্ আল-উসাইমীন
অনুবাদক : আব্দুল আলীম বিন কাওসার
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলামহাউজ
بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরূদ এবং সালাম
বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ), তাঁর পরিবার-পরিজন, ছাহাবীবর্গ এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পথের পথিকদের উপর।
হে মুসলিম বোন! ইবাদতের ক্ষেত্রে মহিলাদের
ঋতুস্রাবের বিধিবিধান সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশ্ন আলেম সমাজের নিকট উপস্থাপিত হয়।
বিধায় আমরা এ সংক্রান্ত বারংবার পেশকৃত প্রশ্নাবলী একত্রিত করার কথা ভেবেছি। আর
সংক্ষিপ্ত করার মানসে প্রশ্নগুলোকে বেশী বিস্তারিত করা হয়নি।
মুসলিম বোন! ইসলামী শরীআতে ফিক্বহ-এর অপরিসীম
গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রশ্নগুলোকে আমরা একত্রিত করেছি, যাতে সেগুলো সর্বদা আপনার হাতের নাগালে থাকে এবং জাগ্রত জ্ঞান সহকারে
আপনি আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন।
দৃষ্টি আকর্ষণঃ বইটা যিনি
প্রথমবারের মত পড়বেন, তার কাছে কিছু কিছু প্রশ্ন
পুনরাবৃত্ত মনে হতে পারে। কিন্তু ভাল করে পর্যবেক্ষণের পর তিনি দেখবেন যে, পুনরাবৃত্ত একটি প্রশ্নে যে বাড়তি জ্ঞানের কথা রয়েছে, তা ঐ একই ধরনের অন্য প্রশ্নে নেই। সেজন্য আমরা সেগুলো ছাড়িনি।
আল্লাহ তা‘আলা
আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল
ছাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন!
নামায ও রোযার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধিবিধান
প্রশ্ন ১: ফজরের পরপরই যদি কোন ঋতুবতী মহিলা
ঋতুস্রাব মুক্ত হয়, তাহলে কি সে খানাপিনা ত্যাগ
করতঃ ঐ দিনের সওম রাখবে? তার ঐ দিনের সওম কি আদায় হয়ে
যাবে নাকি পরে ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ফজরের পরে কোন মহিলা ঋতুস্রাবমুক্ত[1] হলে ঐ
দিনে তার সওম রাখার ক্ষেত্রে আলেমগণের দুটো অভিমত রয়েছেঃ
প্রথম অভিমতঃ ঐ দিনের বাকী অংশে তাকে খানা-পিনা, যৌনসঙ্গম ইত্যাকার কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তবে তা ঐ দিনের সওম
হিসাবে পরিগণিত হবে না; বরং তাকে পরে ক্বাযা আদায় করতে
হবে। এটা হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমতঃ ঐ দিনের বাকী অংশে তাকে খানাপিনা
ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে না। কেননা সে ঐ দিনের শুরুতে ঋতুবতী থাকার কারণে
সেদিনের সওম তার জন্য শুদ্ধ নয়। আর সওম যেহেতু শুদ্ধ নয়, সেহেতু খানাপিনা থেকে বিরত থাকারও কোন অর্থ নেই। এই দিনটা তার জন্য
সম্মানীয় কোন সময় নয়। কেননা ঐ দিনের শুরুতে তাকে সওম ভাঙ্গার আদেশ করা হয়েছে;
বরং ঐ দিনের শুরুতে সওম রাখা তার জন্য হারাম। আর রোযার সংজ্ঞায়
বলা হয়েছে, “ফজর উদয় হওয়া থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সওম ভঙ্গকারী যাবতীয় বিষয় থেকে বিরত থাকার নাম
রোযা।”
এই অভিমতটা আগের খানাপিনা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক
মর্মের অভিমতের চেয়ে বেশী প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। যাহোক [ঐ দিনের বাকী অংশে সে
খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাক বা না থাক] উভয় অভিমতের আলোকে বলা যায়, তাকে পরবর্তীতে ঐ দিনের ক্বাযা আদায় করতেই হবে।
প্রশ্ন ২:
প্রশ্নকারী বলছেন, ঋতুবর্তী যদি [ফজরের আগে]
ঋতুস্রাব মুক্ত হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে নামায আদায় করতঃ ঐ দিনের সওম পূর্ণ করে,
তাহলে কি তাকে আবার ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ঋতুবর্তী ফজরের এক মিনিট আগে হলেও যদি নিশ্চিত ঋতুস্রাব মুক্ত হয়, তাহলে রমযান মাস হলে তাকে ঐ দিনের সওম আদায় করতে হবে এবং তার ঐ দিনের
সওম শুদ্ধ সওম হিসাবে পরিগণিত হবে। তাকে আর ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা সে
পবিত্র অবস্থায় সওম রেখেছে। আর ফজরের পরে ছাড়া গোসল করার সুযোগ না পেলেও কোন
সমস্যা নেই। যেমনিভাবে কোন পুরুষ সহবাস জনিত কারণে অথবা স্বপ্নদোষের কারণে যদি
অপবিত্র থাকে এবং ঐ অবস্থায় সাহরী করে নেয়, তাহলে ফজরের
আগে গোসল না করলেও তার সওম শুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে আমি মহিলাদের একটি বিষয়ে দৃষ্টি
আকর্ষণ করতে চাই, সওম অবস্থায় ঋতুস্রাব আসলে কোন কোন
মহিলা মনে করে যে, ইফতারের পরে ঋতুস্রাব আসলে ঐ দিনের সওম
নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ইফতার তো দূরের কথা সূর্যাস্তের পরপরই যদি তার ঋতুস্রাব আসে,
তথাপিও তার সেদিনের সওম পূর্ণ এবং শুদ্ধ হবে।
প্রশ্ন ৩:
সদ্য সন্তান প্রসবকারিণী নারী যদি চল্লিশ দিনের আগে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে কি তার উপরে সওম রাখা এবং নামায আদায় করা ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সদ্য সন্তান প্রসবকারিণী নারী
চল্লিশ দিনের আগে যখনই পবিত্র হবে, তখনই তার উপর সওম রাখা
অপরিহার্য হয়ে যাবে- যদি তখন রমযান মাস চলে। অনুরূপভাবে তার উপরে নামায আদায়ও
ওয়াজিব হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করাও বৈধ হবে। কেননা সে একজন
পবিত্র নারী হিসাবে বিবেচিত হবে। যার মধ্যে নামায-রোযা ও সহবাসের বৈধতায়
বাধাদানকারী কোন কিছু অবশিষ্ট নেই।
প্রশ্ন ৪: কোন মহিলার ঋতুস্রাবের সময়সীমা যদি
প্রত্যেক মাসে আট অথবা
সাতদিন হয়; কিন্তু দেখা গেল, মাঝেমধ্যে
অভ্যাস ভঙ্গ করে ২/১ দিন বেশী সময় ধরে ঋতুস্রাব চলে, তাহলে
সেক্ষেত্রে বিধান কি?
উত্তরঃ যদি উক্ত মহিলার মাসিক ঋতুস্রাবের সময়সীমা ছয় বা সাত দিন হয় কিন্তু
মাঝে-মধ্যে এ সময়সীমা বৃদ্ধি হয়ে আট, নয়, দশ অথবা এগারো দিনে গড়ায়, তাহলে পবিত্র না
হওয়া পর্যন্ত তাকে নামায আদায় করতে হবে না। কেননা নবী (ﷺ) ঋতুস্রাবের কোন
নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেননি। আর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন,
“তারা তোমাকে মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে; তুমি বলে দাও, সেটা হচ্ছে কষ্টদায়ক বস্তু”[2]। সুতরাং এই রক্ত থাকাকালীন সময়ে মহিলারা আপন অবস্থায় থাকবে, তারপর ভাল হয়ে গেলে গোসল করে নামায আদায় করবে।
অনুরূপভাবে পরবর্তী মাসে যদি গত মাসের তুলনায় কম
দিনে ঋতু বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে গোসল করে নিবে [এবং
নামায-রোযা শুরু করবে]। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এই যে, মহিলার ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে সে নামায আদায় করবে না- চাই ঋতুস্রাব
গত মাসের মত একই সময় পর্যন্ত চলুক অথবা কিছু দিন বেশি বা কম চলুক। আর যখনই
ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই নামায আদায় করবে।
প্রশ্ন ৫:
সদ্য প্রসবকারিণী নারী কি স্বলাত-ছিয়াম (নামায-রোযা) পরিত্যাগ করে চল্লিশ দিন
পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নাকি রক্ত বন্ধ হওয়া না হওয়াই হলো মূল বিষয়? অর্থা যখনই রক্ত
বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই কি পবিত্র হয়ে যাবে এবং নামায শুরু
করবে? আর পবিত্র হওয়ার সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা আছে কি?
উত্তরঃ প্রসূতি মহিলার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই; বরং যতদিন রক্ত থাকবে, ততদিন অপেক্ষা করবে।
এমতাবস্থায় নামায পড়বে না, সওম রাখবে না এবং তার স্বামী তার
সাথে সহবাসও করবে না। পক্ষান্তরে যখনই সে পবিত্র হয়ে যাবে-যদিও তা চল্লিশ দিনের
আগে হয়; এমনকি দশ বা পাঁচ দিনেও যদি সে পবিত্র হয়- তাহলে
সে নামায পড়বে, সওম রাখবে এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও
করবে। এতে কোন সমস্যা নেই। মূলকথাঃ প্রসূতি অবস্থা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটা বিষয়- যা
থাকা আর না থাকার সাথে এ সম্পর্কীয় বিধিবিধান সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যখনই সেটা
বিদ্যমান থাকবে, তখনই তার বিধিবিধান বলব থাকবে। আর যখনই কোন মহিলা তা
থেকে মুক্ত থাকবে, তখনই সে উহার বিধিবিধান থেকে মুক্ত
থাকবে। কিন্তু যদি তার রক্ত ষাট দিনের বেশী সময় ধরে চলে, তাহলে
বুঝতে হবে সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলা[3]। এক্ষেত্রে সে
শুধুমাত্র অন্যান্য মাসের ঋতুস্রাবের দিনগুলো সমপরিমাণ অপেক্ষা করবে এবং এরপরে
বাকী দিনগুলোতে গোসল করে নামায পড়বে।
প্রশ্ন ৬: যদি
রমযান মাসে দিনের বেলায় কোন মহিলার সামান্য রক্তের ফোটা পড়ে এবং সারা রমযান এই
রক্ত চালু থাকা অবস্থায় সে সওম রাখে, তাহলে কি
তার সওম শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তার সওম শুদ্ধ হবে। আর এই রক্ত
তেমন কোন বিষয় না। কারণ এটা শিরা থেকে আসে। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “এই রক্তবিন্দুগুলো নাক দিয়ে
রক্ত পড়ার মত, এগুলো ঋতুস্রাব নয়”। এমন বক্তব্যই তাঁর পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্ন ৭:
ঋতুবর্তী অথবা প্রসূতি নারী যদি ফজরের পূর্বে রক্তমুক্ত হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে, তাহলে কি তার সওম শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ঋতুবর্তী যদি ফজরের পূর্বে
পবিত্র হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে, তাহলে তার সওম শুদ্ধ
হবে। অনুরূপ বিধান প্রসূতি নারীর ক্ষেত্রেও। কেননা তারা তখন সওম রাখার উপযুক্ত
প্রমাণিত হবে। তাদের বিধান ঐ ব্যক্তির বিধানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যে ফজরের সময় সহবাস জনিত কারণে অপবিত্র রয়েছে। কেননা তার রোযাও শুদ্ধ
হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাতেও)
নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু দান করেছেন,
তা অনুসন্ধান কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের
শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়”[4]। এখানে আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত সহবাস করার অনুমতি দিয়েছেন, সেহেতু ফজরের পরে গোসল করাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। অনুরূপভাবে আয়েশা
(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, “রাসূল (ﷺ) সহবাসজনিত কারণে
অপবিত্র অবস্থায় সকাল করতেন অথচ তিনি সওম থাকতেন”[5]। অর্থা তিনি ফজর
উদিত হওয়ার পর গোসল করতেন।
প্রশ্ন ৮: কোন
মহিলা যদি রক্ত আসার ভাব অনুভব করে অথবা তার অভ্যাস অনুযায়ী ব্যথা অনুভব করে অথচ
সূর্যাস্তের পূর্বে রক্ত বের না হয়, তাহলে
তার ঐ দিনের সওম কি শুদ্ধ হবে নাকি তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ কোন মহিলা যদি সওম অবস্থায় ঋতুস্রাব আসার আলামত টের পায় অথবা ব্যথা অনুভব
করে অথচ সূর্যাস্তের পরে ছাড়া রক্ত বের না হয়, তাহলে
তার ঐ দিনের সওম শুদ্ধ হয়ে যাবে। ফরয সওম হলে তাকে আবার আদায় করতে হবে না এবং নফল
সওম হলে তার নেকী নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন ৯: কোন
মহিলা যদি রক্ত দেখতে পায় কিন্তু সে নিশ্চিত নয় যে, সেটা ঋতুস্রাবের রক্ত, তাহলে ঐদিন তার রোযার
বিধান কি?
উত্তরঃ তার ঐদিনের সওম শুদ্ধ হবে। কেননা [নারীর] আসল অবস্থা হলো, ঋতু না থাকা। তবে ঋতুর বিষয়টা স্পষ্ট হলে সেটা ভিন্ন কথা।
প্রশ্ন ১০:
কোন কোন সময় মহিলারা রক্তের সামান্য আলামত দেখতে পায় অথবা সারাদিনে বিচ্ছিন্নভাবে
খুব অল্প কয়েক ফোটা রক্ত দেখতে পায়। আর এটা সে কখনও প্রত্যেক মাসের ঋতুস্রাবের
নির্ধারিত সময়ে কিন্তু ঋতু না আসা অবস্থায় দেখতে পায়, আবার কখনও অন্য সময়ে দেখতে পায়। এক্ষণে উভয় অবস্থায় উক্ত মহিলার রোযার
বিধান কি?
উত্তরঃ ইতিপূর্বে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর গত হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে একটা বিষয় হলো, এই রক্তবিন্দুগুলো যদি মাসের নির্ধারিত সময়ে হয় এবং সে উহাকে তার পূর্ব
পরিচিত ঋতুস্রাব জ্ঞান করে, তাহলে তা ঋতুস্রাব হিসাবেই
গণ্য হবে।
উত্তরঃ হ্যাঁ, তারা রমযানের দিবসে পানাহার
করবে। তবে উত্তম হলো, যদি তাদের নিকটে কোন বাচ্চাকাচ্চা
থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে খানাপিনা গোপনে করা উচিত। কেননা
প্রকাশ্যে খেলে বিষয়টা তাদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করবে।
প্রশ্ন ১২:
ঋতুবতী অথবা প্রসূতি নারী আছরের সময় পবিত্র হলে তাকে কি আছরের সাথে যোহরের নামাযও
আদায় করতে হবে নাকি শুধু আছর পড়লেই চলবে?
উত্তরঃ এই মাস্আলায় অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে
কেবল আছরের স্বলাত আদায় করতে হবে। কেননা তার উপর যোহরের নামায ওয়াজিব হওয়ার দলীল
নেই। আর মানুষের আসল হলো, সে দায়মুক্ত। তদুপরি রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকআত পেল, সে পুরো আছরের নামায পেল।”[6] এখানে রাসূল (ﷺ) বলেননি যে, সে যোহরের নামাযও পেল। আর যোহরের নামায যদি তার উপর ওয়াজিবই হত,
তাহলে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তা বলে দিতেন।
অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি যোহরের নামাযের সময় শুরু
হওয়ার পরে ঋতুবতী হয়, তাহলে [ঋতুমুক্ত হওয়ার পর]
তাকে কেবল যোহরের নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে, আছরের
নয়। অথচ যোহরের নামায আছরের নামাযের সাথে জমা করে পড়া হয় [সফরের ক্ষেত্রে]। এই
অবস্থা এবং প্রশ্নকৃত অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতএব, অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, দলীল এবং ক্বিয়াসের
উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তাকে কেবল আছরের নামায আদায় করতে
হবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ এশার সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে কেবল এশার নামায আদায় করতে হবে, মাগরিবের
নামায নয়।
প্রশ্ন ১৩:
কিছু কিছু মহিলার অকাল গর্ভপাত ঘটে। এর দুটো অবস্থা হতে পারেঃ- হয় গর্ভস্থ সন্তান আকৃতি ধারণের
আগে তাকে গর্ভপাত করে, না হয় আকৃতি ধারণের পরে গর্ভপাত
করে। এক্ষণে উক্ত মহিলার গর্ভপাত ঘটার দিন এবং পরবর্তী যে দিনগুলোতে রক্ত আসবে,
সেগুলোতে তার সওম রাখার বিধান কি হবে?
উত্তরঃ যদি গর্ভস্থ সন্তান আকৃতি ধারণ না করে, তাহলে সে
ক্ষেত্রে তার এই রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে না। অতএব তাকে সওম
রাখতে হবে, নামায পড়তে হবে এবং তার সওম শুদ্ধ সওম হিসাবে
পরিগণিত হবে। পক্ষান্তরে যদি সন্তান আকৃতি ধারণ করে, তাহলে
উক্ত মহিলার রক্ত প্রসূতির রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। অতএব, নামায
পড়া, সওম রাখা তার জন্য বৈধ হবে না। এই মাসআলায় নিয়ম হলো
এই যে, যদি সন্তান আকৃতি লাভ করে, তাহলে রক্ত হবে প্রসূতি অবস্থার রক্ত। আর যদি আকৃতি লাভ না করে,
তাহলে তার রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত নয়। অতএব, যখন রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হবে, তখন তার
উপর ঐ সমস্ত বিষয় হারাম হবে, যেগুলো একজন প্রসূতি মহিলার
উপর হারাম হয়। পক্ষান্তরে যদি রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত না হয়, তাহলে তার উপর সেগুলো হারাম হবে না।
উত্তরঃ কোন মহিলা সওম থাকা অবস্থায় যদি তার ঋতুর রক্ত আসে, তাহলে তার সওম নষ্ট হয়ে যাবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, “মহিলার বিষয়টা কি এমন নয় যে, যখন সে ঋতুবতী হয়,
তখন সে নামায আদায় করে না এবং রোযাও রাখে না?”।[7] এজন্য ঋতুস্রাবকে আমরা সওম ভঙ্গকারী
বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করি। অনুরূপভাবে প্রসূতি অবস্থার রক্তও।
অতএব, রামাযানের
দিবসে বের হওয়া গর্ভবতীর রক্ত যদি ঋতুস্রাব হয়, তাহলে তা
সাধারণ মহিলার ঋতুস্রাবের মতই। অর্থা উহা তার রোযায় প্রভাব ফেলবে। [অর্থা সওম ভঙ্গ হবে, পরবর্তীতে কাযা করতে হবে] পক্ষান্তরে যদি ঋতুস্রাব না হয়, তাহলে প্রভাব ফেলবে না। [অর্থা সওম ভঙ্গ হবে না, সওম রাখা জায়েয হবে] আর
গর্ভবতীর যে ঋতুস্রাব আসতে পারে, সেটা হলো ধারাবাহিক
ঋতুস্রাব- যা গর্ভধারণের পর থেকে চলছে। এমনকি তা প্রত্যেক মাসের নির্ধারিত সময়েও
আসতে পারে। অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে ইহা ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে এবং সাধারণ
ঋতুস্রাবের বিধিবিধান তার ক্ষেত্রেও বলব থাকবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, কিছুদিন রক্ত
বন্ধ থাকার পর উক্ত মহিলা আবার রক্ত দেখতে পেল- যা ঋতুস্রাবের রক্ত নয়, তাহলে তা তার রোযায় কোন প্রভাব ফেলবে না। [রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে] কেননা
তা ঋতুস্রাব নয়।
প্রশ্ন ১৫:
যদি কোন মহিলা তার মাসিক ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময়ে একদিন রক্ত দেখতে পায় কিন্তু
পরেরদিন সারাদিনে রক্ত দেখতে না পায়, তাহলে
সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ স্বাভাবিকভাবে মনে হয়, ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে তার
ক্ষণিকের এই পবিত্রতা ঋতুর অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে, সেটাকে
পবিত্রতা গণ্য করা হবে না। অতএব, সাধারণ ঋতুবতী যেগুলো
থেকে বিরত থাকে, উক্ত মহিলাও সেগুলো থেকে বিরত থাকবে।
অবশ্য কোন কোন আলেম বলেছেন, যদি কোন মহিলা একদিন রক্ত এবং
আরেক দিন স্বচ্ছতা দেখতে পায়, তাহলে ঐ রক্ত ঋতুস্রাব
হিসাবে এবং ঐ স্বচ্ছতা পবিত্রতা হিসাবে গণ্য হবে। পনের দিন পর্যন্ত এই হুকুম বলব থাকবে। পনের দিন অতিক্রম করলে ঐ
রক্ত ইস্তেহাযার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। এটা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল
(রাহিমাহুল্লাহ)-এর মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত।
প্রশ্ন ১৬: ঋতুর শেষ দিনগুলোতে পবিত্র হওয়ার
পূর্বে মহিলারা সাধারণতঃ রক্তের চিহ্ন দেখতে পায় না। এক্ষণে সাদা জাতীয় পদার্থ*
[যা ঋতুর শেষের দিকে কোন কোন মহিলার হয়ে থাকে] না দেখা সত্ত্বেও কি সে ঐ দিনগুলোতে
সওম রাখবে, না কি করবে?
উত্তরঃ যদি তার অভ্যাস এমন হয় যে, [নিশ্চিত পবিত্র হওয়ার আলামত
হিসাবে] সে সাদা জাতীয় পদার্থ দেখতে পায় না-যেমনটি কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে হয়ে
থাকে, তাহলে সে সওম রাখবে। পক্ষান্তরে সাদা জাতীয় পদার্থ
দেখা যদি তার অভ্যাস হয়ে থাকে, তাহলে সে তা না দেখা
পর্যন্ত সওম রাখবে না।
প্রশ্ন ১৭:
জরূরী প্রয়োজনে ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলার দেখে ও মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াতের বিধান
কি-যেমন যদি সে ছাত্রী অথবা শিক্ষিকা হয়?
উত্তরঃ ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলার [জরূরী] প্রয়োজনেঃ যেমন শিক্ষিকা ও ছাত্রীর
ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াত করাতে কোন দোষ নেই। তবে শুধুমাত্র ছওয়াবের উদ্দেশ্যে
তেলাওয়াত না করাই উত্তম। কেননা অধিকাংশ আলেম মনে করেন যে, ঋতুবতীর জন্য কুরআন তেলাওয়াত ঠিক নয়।
প্রশ্ন ১৮: ঋতুবতীর ঋতু বন্ধ হওয়ার পর তার পোষাকে
রক্ত বা অপবিত্র কোন কিছু লাগেনি জেনেও কি তাকে পোষাক বদলাতে হবে?
উত্তরঃ এটা তার জন্য যরূরী নয়। কেননা ঋতুস্রাব পুরো শরীরকে অপবিত্র করে না; বরং শরীরের যে অংশে লাগে, কেবল সে অংশকেই
অপবিত্র করে। আর এ কারণে রাসূল(ﷺ) মহিলাদের
পোষাকের যে অংশে ঋতুস্রাব লাগে, তা ধুয়ে ফেলে ঐ পোষাকে নামায
পড়ার বিধান করেছেন।
প্রশ্ন ১৯: প্রশ্নকারী বলেন, একজন মহিলা
প্রসূতি থাকা অবস্থায় সাতদিন সওম ভেঙ্গেছে এবং স্তন্যদানকারিণী থাকা অবস্থায়
পরবর্তী রমযানের সাতদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে-তথাপিও অসুস্থতার অজুহাতে সে রোযার
ক্বাযা আদায় করেনি। এমনকি তৃতীয় রমযানও আসার উপক্রম হয়েছে! এক্ষণে তার করণীয় কি?
জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
উত্তরঃ উক্ত মহিলার বক্তব্য অনুযায়ী যদি সে সত্যিই অসুস্থ হয়ে থাকে এবং ক্বাযা
আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে যখনই সক্ষম হবে তখনই
ক্বাযা আদায় করবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী রমযান এসে গেলেও সমস্যা নেই। কেননা সে
ওযরগ্রস্ত। কিন্তু যদি তার ওযর না থাকে; বরং অহেতুক
অজুহাত দেখায় এবং বিষয়টা তুচ্ছ জ্ঞান করে, তাহলে তার জন্য
এক রমযানের ক্বাযা সওম অন্য রমযান পর্যন্ত বিলম্বিত করা বৈধ নয়। আয়েশা
(রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “আমার উপর সওম ক্বাযা থাকত এবং আমি তা শাবান মাসে ছাড়া ক্বাযা আদায় করতে
পারতাম না।”[8] অতএব, ঐ মহিলাকে
নিজের প্রতি খেয়াল করতে হবে; আসলেই যদি তার ওযর না থাকে,
তাহলে সে গোনাহগার হবে এবং তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। আর
তার যিম্মায় যে সওম বাকী রয়েছে, তা দ্রুত ক্বাযা আদায়
করতে হবে। পক্ষান্তরে, যদি সে ওযরগ্রস্ত হয়, তাহলে এক বা দুই বছর পিছিয়ে দিলেও তার কোন গোনাহ হবে না।
প্রশ্ন ২০:
কতিপয় মহিলা পরবর্তী রমযানে পদার্পণ করেছে অথচ বিগত রমযানের কয়েক দিনের সওম তারা
রাখে নি! এক্ষণে তাদের করণীয় কি?
উত্তরঃ তাদের করণীয় হলো, এহেন কাজ থেকে ফিরে এসে
আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। কেননা বিনা ওযরে কারো জন্য এক রমযানের সওম অন্য
রমযানে ঠেলে নিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। এ মর্মে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
“আমার উপর রমযানের সওম বাকী থাকত এবং আমি তা শাবান মাসে ছাড়া
আদায়ে সক্ষম হতাম না।” এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, এক রমযানের সওম
পরবর্তী রমযানের পর পর্যন্ত বিলম্বিত করা সম্ভব [বৈধ] নয়। সুতরাং তাকে তার
কৃতকর্মের দরুন তওবা করতে হবে এবং দ্বিতীয় রমযানের পর ছেড়ে দেওয়া রোযাগুলোর ক্বাযা
আদায় করতে হবে।
প্রশ্ন ২১:
কোন মহিলা বেলা ১টার সময় ঋতুবতী হলো [অর্থা নামাযের সময় হওয়ার পরে তার ঋতুস্রাব আসল] কিন্তু তখনও সে যোহরের নামায
আদায় করেনি, তাহলে ঋতু বন্ধ হওয়ার পরে কি তাকে ঐ নামাযের
ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ এই মাসআলায় আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা সে অবহেলা করে ছেড়ে
দেয়নি। অনুরূপভাবে সে পাপীও হবে না। কেননা নামাযের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত নামাযকে
বিলম্বিত করা তার জন্য জায়েয রয়েছে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেল, সে পুরো
নামায পেল।”[9] আর সাবধানতাহেতু তার ক্বাযা আদায় করাই
ভাল। কেননা এক ওয়াক্ত নামায আদায় করতে তার কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্ন ২২:
গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায়, তাহলে এই কারণে কি সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে না কি করবে?
উত্তরঃ গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায় এবং তার সাথে
প্রসব বেদনা থাকে, তাহলে উহা প্রসূতি অবস্থার
রক্ত। এই কারণে সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে। কিন্তু যদি তার সাথে প্রসব বেদনা না
থাকে, তাহলে উহা কূ-রক্ত। এটাকে কোন কিছু গণ্য করা হবে না
এবং ঐ রক্ত তাকে নামায-রোযা থেকেও বিরত রাখবে না।
প্রশ্ন ২৩:
মানুষের সাথে রোযাব্রত পালনের স্বার্থে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধের পিল সেবনের বিষয়ে
আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ আমি এ থেকে সাবধান করছি! কারণ এই বড়িগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে- যা
ডাক্তারগণের মাধ্যমে আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্য মহিলাদেরকে বলব, এটা আদম সন্তানের নারীকূলের উপর আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
সুতরাং আল্লাহর নির্ধারণকৃত বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাক এবং কোন বাধা না থাকলে সওম
রাখ আর বাধা থাকলে আল্লাহর তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থেকে সওম পরিত্যাগ কর।
প্রশ্ন ২৪: প্রশ্নকারী বলছেন, একজন মহিলা প্রসূতি অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার দুই মাস পরে রক্তের ছোট
ছোট কিছু বিন্দু দেখতে পেয়েছে। এক্ষণে সে কি নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে না কি করবে?
উত্তরঃ ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থার ক্ষেত্রে মহিলাদের সমস্যাগুলো কিনারা বিহীন
সাগরের মত। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, জন্মবিরতিকরণ
এবং ঋতুস্রাব প্রতিরোধক পিল ব্যবহার। আগে মানুষ এ জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে তেমন অবগত
ছিল না। তবে একথা ঠিক যে, মুহাম্মদ (ﷺ)-এর রাসূল হিসাবে আবির্ভাবের পর
থেকে শুধু নয়; বরং মহিলাদের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তাদের
সমস্যা ছিল। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, তাদের সমস্যাগুলো
ইদানিং এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সেগুলোর সমাধান করতে
গিয়ে মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ছে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে,
মহিলা যখন ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থা থেকে নিশ্চিতভাবে পবিত্র
হযে যাবে অর্থা ঋতুস্রাবের
ক্ষেত্রে সাদা জাতীয় পদার্থ (القصة البيضاء)
দেখতে পাবে- যা মহিলারা চিনে* এবং এরপর ঘোলা বা হলুদ রঙের যা বের হবে অথবা ২/১
ফোটা যে রক্ত আসবে অথবা সামান্য যে সিক্ততা অনুভূত হবে, সেগুলো আসলে ঋতুস্রাব নয়। সে কারণে এগুলো তাকে নামায-রোযা থেকে বিরত
রাখবে না এবং স্বামীকে স্ত্রী সহবাস থেকেও বাধা দিবে না। উম্মে আত্বিয়্যা
(রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “ঘোলা বা হলুদ রঙের যা বের হয়,
তাকে আমরা কিছুই গণ্য করতাম না।”(বুখারী)[10]। ইমাম আবু দাঊদ কিছু শব্দ বেশী উল্লেখ করে হাদীছটা বর্ণনা করেছেন, “পবিত্র হওয়ার পরে”[অর্থা পবিত্র হওয়ার পরে ঘোলা বা হলুদ
রঙের যা বের হয়, তাকে আমরা কিছুই গণ্য করতাম না।]। তাঁর
সনদও ছহীহ।[11] সেজন্য আমরা বলি, নিশ্চিত পবিত্রতা অর্জনের পরে উল্লেখিত যা কিছু ঘটবে, তাতে মহিলার কোন সমস্যা হবে না এবং তাকে তা নামায-রোযা ও সহবাস থেকেও
বিরত রাখবে না। কিন্তু পবিত্রতা অর্জনের পূর্বে বিষয়গুলো নিয়ে তাড়াহুড় না করা
আবশ্যক। কেননা কতিপয় মহিলা রক্ত শুকিয়ে গেলে নিশ্চিত পবিত্রতা অর্জনের আগেই
তাড়াহুড়া করে গোসল করে নেয়। এই কারণে মহিলা ছাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট রক্তযুক্ত তুলা পাঠাতেন আর তখন
তিনি বলতেন, “সাদা জাতীয় পদার্থ না দেখা পর্যন্ত তোমরা
তাড়াহুড়া করে কিছু করবে না।”[12]
প্রশ্ন ২৫:
কিছু কিছু মহিলার ঋতুস্রাব চলতে থাকে এবং মাঝে মাঝে ২/১ দিনের বিরতি দিয়ে আবার
শুরু হয়। এমতাবস্থায় নামায-রোযা সহ অন্যান্য ইবাদতের হুকুম কি?
উত্তরঃ বেশীর ভাগ আলেমগণের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হলো, যদি উক্ত মহিলার নির্দিষ্ট কোন দিনে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পূর্বাভ্যাস
থাকে এবং সেই নির্দিষ্ট দিন শেষ হয়ে যায়, তাহলে সে গোসল
করে নামায-রোযা করবে। আর এর ২/৩ দিন পর যা বের হতে দেখবে, তা মূলত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা তাদের নিকট একজন মহিলার
পবিত্র থাকার সর্বনিম্ন সময় হচ্ছে ১৩ দিন [অর্থা দুই হায়েযের মাঝখানে ১৩ দিনের
কম সময় বিরতি থেকে রক্ত দেখা দিলে তাকে পবিত্র গণ্য করা হবে। আর ১৩ দিনের বেশী
বিরতির পর রক্ত দেখা গেলে তাকে ঋতুবতী হিসাবে গণ্য করা হবে]।
আবার কেউ কেউ বলেন, যখনই সে রক্ত দেখবে, তখনই তা ঋতুস্রাব হিসাবে
গণ্য হবে আর যখনই রক্ত বন্ধ হতে দেখবে, তখনই সে পবিত্র
হিসাবে বিবেচিত হবে। যদিও দুই ঋতুর মাঝখানে ১৩ দিন না হয়।
প্রশ্ন ২৬:
রমযানের রাত্রিগুলোতে মহিলাদের বাড়ীতে নামায পড়া উত্তম নাকি মসজিদে- বিশেষ করে
মসজিদে যদি ওয়ায-নছীহতের ব্যবস্থা থাকে? যেসব
মহিলা মসজিদে নামায পড়ে, তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
উত্তরঃ মহিলাদের বাড়ীতে নামায পড়াই উত্তম। এমর্মে রাসূল (ﷺ)-এর সাধারণ ঘোষণা হচ্ছে,
“তাদের জন্য তাদের বাড়ীই উত্তম”[13]।
তাছাড়া মহিলাদের বাড়ীর বাইরে হওয়ার বিষয়টা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফে নামুক্ত নয়। সে
দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদে যাওয়ার চেয়ে বাড়ীতে অবস্থান করাই তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর।
ওয়ায-নছীহত ক্যাসেটের মাধ্যমে তারা বাড়ীতেই শোনার ব্যবস্থা করতে পারবে।
আর যারা মসজিদে নামায পড়তে যায়, তাদের
ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো, তারা কোন প্রকার সৌন্দর্য্য
প্রদর্শন এবং সুঘ্রাণ ব্যবহার ছাড়াই মসজিদে যাবে।
উত্তরঃ প্রয়োজনে স্বাদ চেখে দেখলে কোন অসুবিধা নেই। তবে সে যেন স্বাদ চেখে দেখার
পর মুখ থেকে ঐ জিনিষটা ফেলে দেয়।
প্রশ্ন ২৮:
গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থায় থাকা একজন মহিলা দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অতঃপর
প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের পর তার গর্ভপাত ঘটে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলার জন্য কি সওম ছেড়ে
দেওয়া জায়েয নাকি সে সওম চালিয়ে যাবে? আর সওম
ভাঙলে কি তার কোন গোনাহ হবে?
উত্তরঃ আমাদের বক্তব্য হলো, গর্ভবতীর সাধারণতঃ ঋতুস্রাব
আসে না, যেমনটি ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মহিলারা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা টের পায়।” আর আলেম সমাজের বক্তব্য অনুযায়ী, আল্লাহপাক এই
ঋতুস্রাবকে অন্তর্নিহিত এক তাৎপর্যকে লক্ষ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাহলো এই যে,
গর্ভজাত সন্তানের জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করা। সেজন্য যখন পেটে
সন্তান আসে, তখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু
মহিলার গর্ভধারণের আগের মতই ঋতুস্রাব চলতে দেখা যায়। এই ঋতুস্রাবও প্রকৃত ঋতুস্রাব
হিসাবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভাবস্থার কারণে তার ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব পড়ে নি।
সুতরাং সাধারণ মহিলার ঋতুস্রাব যা থেকে বিরত রাখবে, গর্ভবতীর
ঋতুস্রাবও তা থেকে বিরত রাখবে এবং উহা যা আবশ্যক করবে ইহাও তা আবশ্যক করবে।
অনুরূপভাবে উহা যা থেকে দায়মুক্ত করবে ইহাও তা থেকে দায়মুক্ত করবে। মূলকথা হচ্ছে,
গর্ভধারিণীর রক্ত দুই ধরনেরঃ এক ধরনের রক্ত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য
হবে। আর তা হচ্ছে, যেটা এখনও চলছে, যেমনিভাবে গর্ভধারণের পূর্বেও চলছিল। অর্থা গর্ভধারণ এই ঋতুস্রাবের উপর কোন
প্রভাব ফেলেনি। বিধায় ইহা ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে। আরেক ধরনের রক্ত গর্ভধারিণীর
নিকট হঠা আসে-
দুর্ঘটনাজনিত কারণে হোক বা কোন কিছু বহনের কারণে হোক অথবা কোন কিছু থেকে পড়ে গিয়ে
হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। এই ধরনের রক্তকে ঋতুস্রাব গণ্য করা হবে না; বরং তা শিরা থেকে আসা সাধারণ রক্ত। সুতরাং এই রক্ত তাকে নামায-রোযা
থেকে বিরত রাখবে না; বরং সে পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে।
কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে যদি গর্ভপাত ঘটেই যায়, তাহলে
আলেমগণের বক্তব্য অনুযায়ী তার দুটো অবস্হাঃ
এক. গর্ভজাত সন্তান আকৃতি ধারণের পর বের হলে বের হওয়ার পরবর্তী রক্ত প্রসূতি
অবস্থার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। ফলে সে নামায-রোযা ত্যাগ করবে এবং পবিত্র না হওয়া
পর্যন্ত তার সাথে তার স্বামী সহবাস করা থেকে বিরত থাকবে।
দুই. গর্ভজাত সন্তান
আকৃতি ধারণের পূর্বে বের হলে সেই রক্তকে প্রসূতি অবস্থার রক্ত গণ্য করা হবে না; বরং সেটা কূ-রক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে এবং উহা তাকে নামায-রোযা ইত্যাদি
ইবাদত থেকেও বিরত রাখবে না।
বিশেষজ্ঞ মহল বলেন, বাচ্চা আকৃতি ধারণের সর্বনিম্ন সময় হচ্ছে ৮১ দিন। এ প্রসঙ্গে
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বর্ণনা করেন-
যিনি হচ্ছেন সর্বজনবিদিত সত্যবাদী- “তোমাদের
যে কাউকে চল্লিশ দিন ধরে তার মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়, তারপর
অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে জমাটবদ্ধ রক্ত হয় এবং তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে
মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর চারটি বিষয়ের নির্দেশনা দিয়ে তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো
হয়। অতঃপর তার রিযিক্ব, দুনিয়াতে তার অবস্থানকাল, তার আমলনামা এবং সে দুর্ভাগা হবে না সৌভাগ্যবান হবে তা তিনি নির্ধারণ
করে দেন।”[14] এই হাদীছের আলোকে ৮১ দিনের আগে আকৃতি লাভ
সম্ভব নয়। আর বিশেষজ্ঞগণের মতে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ৯০
দিনের আগে আকৃতি প্রকাশিত হয় না।
প্রশ্ন ২৯: গত বছর গর্ভধারণের তৃতীয় মাসে আমার
গর্ভপাত ঘটে এবং পবিত্র হওয়ার আগে আমি নামায আদায় করিনি। তখন আমাকে বলা হয়েছিল, তোমার নামায পড়া উচিৎ ছিল। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি? উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্টভাবে সেই দিনগুলোর
সংখ্যা আমার জানা নেই।
উত্তরঃ আলেমগণের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হলো, তিন মাসে
কোন মহিলার গর্ভপাত ঘটলে সে নামায পড়বে না। কেননা কোন মহিলার যখন গর্ভপাত হয়,
তখন গর্ভস্থ সন্তানের যদি আকৃতি প্রকাশ পায়, তাহলে উক্ত মহিলার ঐ রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে।
ফলে সে নামায আদায় করবে না।
বিদ্বানগণ বলেন, ৮১ দিন পূর্ণ হলে গর্ভস্থ বাচ্চার আকৃতি প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। আর এটা
তিন মাসেরও কম সময়। সুতরাং উক্ত মহিলা যদি নিশ্চিত হয় যে, তিন মাসেই তার গর্ভপাত ঘটেছে, তাহলে তার রক্ত
প্রসূতি অবস্থার রক্ত* হিসাবে পরিগণিত হবে। কিন্তু যদি ৮০ দিনের আগে গর্ভপাত ঘটে,
তাহলে তার ঐ রক্ত কূ-রক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে। ফলে সে নামায
পরিত্যাগ করবে না। এক্ষণে উক্ত প্রশ্নকারিণীকে মনে মনে [নামাযের ওয়াক্তের সংখ্যা]
স্মরণ করার চেষ্টা করতে হবে। যদি ৮০ দিনের আগে গর্ভপাত ঘটে, তাহলে সে [ছুটে যাওয়া] নামাযের ক্বাযা আদায় করবে। আর কত ওয়াক্ত নামায
ছুটে গেছে তা যদি সে স্মরণ করতে না পারে, তাহলে একটা
অনুমানের আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং সেই অনুমানের ভিত্তিতে সে ক্বাযা আদায় করবে।
প্রশ্ন ৩০: একজন মহিলা বলছে, সে তার উপর রমযানের সওম ফরয হওয়ার
পর থেকে সওম রাখে কিন্তু মাসিক ঋতুস্রাবের কারণে ভাঙ্গা রোযাগুলোর ক্বাযা সে আদায়
করে না । আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ঐদিনগুলোর হিসাব তার
কাছে থাকে না। এক্ষণে সে তার করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়।
উত্তরঃ মুমিন নারীদের এমন ঘটনা আমাদেরকে কষ্ট দেয়। কেননা ফরয রোযার ক্বাযা অনাদায়-
হয় না জানার কারণে, না হয় অবহেলা করার কারণে হয়ে
থাকে। আর এদুটোই মছীবত। কারণ মূর্খতার ঔষধ হলো জানা এবং জিজ্ঞেস করা। আর অবহেলার
ঔষধ হলো আল্লাহভীতি, তাঁর নযরদারীর কথা চিন্তা করা,
তাঁর শাস্তির ভয় পাওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টির কাজে দ্রুত অগ্রসর
হওয়া। অতএব, উক্ত মহিলাকে তার কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর
নিকট তওবা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অতঃপর পরিত্যাগকৃত রোযাগুলোর একটা হিসাব
করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সেগুলোর ক্বাযা আদায় করতে হবে। এভাবে সে দায়মুক্ত হওয়ার
চেষ্টা করবে। আল্লাহ তার তওবা কবুল করুন- আমরা সেই কামনা করি।
প্রশ্ন ৩১: একজন প্রশ্নকারিণী বলছেন, নামাযের সময় শুরু হওয়ার পরে কোন মহিলা ঋতুবতী হলে তার হুকুম কি?
পবিত্র হওয়ার পরে কি ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব
হবে? নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হলেও কি
অনুরূপ বিধান?
উত্তরঃ প্রথমতঃ নামাযের সময় শুরু হওয়ার পরে কেউ ঋতুবতী হলে পবিত্র হওয়ার পর ঐ নামাযের
ক্বাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব- যদি ঋতুস্রাব আসার আগে সে ঐ নামায আদায় না করে
থাকে। এ মর্মে রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেল, সে পুরো
নামাযই পেল।”[15] অতএব, এক রাক‘আত নামায পড়ার মত সময় যদি সে পায় অতঃপর সেই নামায পড়ার আগে তার
ঋতুস্রাব আসে, তাহলে পবিত্র হওয়ার পরে ঐ নামাযের ক্বাযা
আদায় করা তার জন্য জরূরী।
দ্বিতীয়তঃ যদি সে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে
পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে।
অতএব, যদি সে সূর্যোদয়ের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময়
বাকী থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে ফজরের নামাযের ক্বাযা আদায়
করা তার উপর আবশ্যক হবে। যদি সে সূর্যাস্তের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময় বাকী
থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে তার উপর আছরের নামায পড়া আবশ্যক
হবে। অনুরূপভাবে যদি সে মধ্যরাতের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে
পবিত্র হয, তাহলে তার উপর এশার নামাযের ক্বাযা আদায় করা
আবশ্যক হবে। কিন্তু যদি সে মধ্যরাতের পরে পবিত্র হয়, তাহলে
তাকে এশার নামায আদায় করতে হবে না। তবে ফজরের নামাযের সময় হলে তা তাকে আদায় করতে
হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হও,
তখন তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয়ই নামায বিশ্বাসীগণের উপর
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত” (আন-নিসা ১০৩)। অর্থা এমন কিছু নির্দিষ্ট সময়ে তা ফরয
করা হয়েছে- যা থেকে নামাযকে অন্য সময়ে বিলম্বিত করা এবং উক্ত সময় শুরু হওয়ার আগে
তা আদায় করা কারো জন্য জায়েয নয়।
প্রশ্ন ৩২:
নামাযরত অবস্থায় আমার ঋতুস্রাব এসেছে। এখন আমার করণীয় কি? আমি কি ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করব?
উত্তরঃ নামাযের সময় হওয়ার পর যদি ঋতুস্রাব আসে-যেমন সূর্য ঢলে যাওয়ার আধঘণ্টা পর
কারো ঋতুস্রাব আসল, তাহলে সে ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত
হওয়ার পর ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করবে- যার ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময় সে পবিত্র ছিল। এ
মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই নামায বিশ্বাসীগণের উপর
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত” (নিসা ১০৩)। উক্ত মহিলা
যে নামাযে তার ঋতু এসেছিল, সে নামাযের ক্বাযা আদায় করবে
না। রাসূল (ﷺ) দীর্ঘ এক হাদীছে
এ মর্মে বলেন, “মহিলার বিষয়টা কি এমন নয় যে,
যখন তার ঋতুস্রাব আসে, তখন সে নামায পড়ে
না এবং রোযাও রাখে না?”[16] অনুরূপভাবে আলেম সমাজ এমর্মে
ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ঋতুকালীন সময়ে ছুটে যাওয়া নামায
তাকে আদায় করতে হবে না। কিন্তু এক বা একাধিক রাকআত পরিমাণ নামায পড়ার মত সময় বাকী
থাকতে যদি সে পবিত্র হয়, তাহলে সে ঐ ওয়াক্তের নামাযের
ক্বাযা আদায় করবে। এ মর্মে রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকআত পেল, সে পুরো আছরের নামায পেল।”[17] অতএব, যদি আছরের সময় পবিত্র হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত পরিমাণ নামায
পড়ার সময় থাকে, তাহলে তাকে আছরের নামায পড়তে হবে।
অনুরূপভাবে যদি সে সূর্যোদয়ের পূর্বে এক রাকআত পরিমাণ নামায পড়ার মত সময় বাকী
থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে ফজরের নামায পড়তে হবে।
প্রশ্ন ৩৩: এক ব্যক্তি বলছেন, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমার মায়ের
বয়স ৬৫ বছর। ১৯ বছর ধরে তিনি কোন সন্তান প্রসব করেননি। বিগত তিন বছর ধরে তার
রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এক্ষণে রমযানের আগমন উপলক্ষে তাঁকে নছীহতদানে বাধিত করবেন। এ
জাতীয় মহিলারা কিভাবে চলবেন?
উত্তরঃ এ জাতীয় মহিলা- যার রক্তক্ষরণ হয়, সে এই
ঘটনার আগের মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো হিসাব করে তদনুযায়ী প্রত্যেক মাসে নামায-রোযা
পরিত্যাগ করবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি আগে প্রত্যেক
মাসের শুরুতে ছয় দিন ধরে ঋতুস্রাব চলা তার অভ্যাস থাকে, তাহলে
এখনও সে প্রত্যেক মাসের শুরুতে ছয় দিন অপেক্ষা করবে- নামায পড়বে না, রোযাও রাখবে না। অতঃপর ছয় দিন শেষ হয়ে গেলে গোসল করে নামায-রোযা আদায়
করবে।
উক্ত মহিলার এবং তার মত রোগগ্রস্ত মহিলার নামাযের
পদ্ধতি হলো, সে তার লজ্জাস্থানকে
পরিপূর্ণভাবে ধুয়ে পট্টি বাঁধবে এবং তারপর অযু করবে। আর ফরয নামাযের ক্ষেত্রে
নামাযের সময় শুরু হলে এমনটা করবে। অনুরূপভাবে ফরয নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় নফল
নামায পড়তে চাইলে তখনও তা-ই করবে। বিষয়টা কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে যোহরের নামাযকে
আছরের সাথে এবং মাগরিবের নামাযকে এশার সাথে জমা করে পড়া তার জন্য জায়েয রয়েছে।
যাতে করে তার কষ্টসাধ্য এই কাজটা ৫ বারের পরিবর্তে ৩ বার করলেই যথেষ্ট হয়ঃ যোহর ও
আছরের জন্য একবার, মাগরিব ও এশার জন্য একবার এবং ফজরের
জন্য একবার।
আমি আবারও বলছি, যখন সে পবিত্রতা অর্জন করতে চাইবে, তখন সে তার
লজ্জাস্থান ভাল করে ধুয়ে ন্যাকড়া বা অনুরূপ কোন কিছু দিয়ে উহাতে পট্টি বাঁধবে-
যাতে রক্তক্ষরণের পরিমাণটা কমে। অতঃপর অযু করে নামায পড়বে। যোহরের চার রাকআত,
আছরের চার রাক‘আত, মাগরিবের তিন রাক‘আত, এশার চার রাক‘আত এবং ফজরের দুই রাক‘আত পড়বে। অর্থা সে কছর করবে না- যেমনটি কিছু কিছু মানুষ মনে করে থাকে। তবে যোহর ও
আছরকে এবং মাগরিব ও এশাকে জমা করে পড়া তার জন্য জায়েয রয়েছে- কছর করে নয়। যোহরকে
আছরের ওয়াক্তে বিলম্বিত করে অথবা আছরকে যোহরের ওয়াক্তে এগিয়ে নিয়ে এসে জমা করে পড়া
যায়। অনুরূপভাবে মাগরিবকে এশার ওয়াক্তে বিলম্বিত করে অথবা এশাকে মাগরিবের ওয়াক্তে
এগিয়ে নিয়ে এসে জমা করে পড়া যায়। আর যদি সে এই অযুতে নফল নামায পড়তে চায়, তাহলে পড়তে পারে- কোন অসুবিধা নেই।
উত্তরঃ কাবা ঘর অথবা অন্য কোন মসজিদে ঋতুবতীর অবস্থান জায়েয নয়। তবে প্রয়োজনে
মসজিদের ভেতর দিয়ে যেতে পারে এবং প্রয়োজন মিটাতে পারে। রাসূল(ﷺ) আয়েশা
(রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে “খুমরা”[18] আনতে বললে তিনি বলেন, ওটা তো মসজিদে আছে,
আর আমি ঋতুগ্রস্ত। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, “তোমার ঋতুস্রাব তো তোমার হাতে লেগে নেই।”[19] সুতরাং
মসজিদে রক্তবিন্দু পড়বে না মর্মে আশংকামুক্ত থাকা অবস্থায় ঋতুবতী মসজিদ দিয়ে গেলে
কোন সমস্যা নেই। তবে যদি সে মসজিদে ঢুকে বসতে চায়, তাহলে
তা জায়েয হবে না। কেননা রাসূল (ﷺ) মহিলাদের -তরুণী, কুমারী এবং ঋতুবতীদের- ঈদগাহে যেতে বলেছেন। তবে তিনি ঋতুবতীদেরকে
নামাযের স্থান ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন।[20] এ হাদীছ
প্রমাণ করে যে, কুরআন-হাদীছ বা বক্তব্য শোনার জন্য মসজিদে
অবস্থান করা ঋতুবতীর জন্য জায়েয নয়।
নামাযের ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের বিধিবিধান
প্রশ্ন ৩৫: মহিলাদের সাদা বা হলদে যে পদার্থ বের
হয়, সেটা কি পবিত্র নাকি অপবিত্র? উহা
অবিরামভাবে বের হওয়া সত্ত্বেও কি অযু করা আবশ্যক হবে? আর
বিচ্ছিন্নভাবে বের হলেই বা তার হুকুম কি? কেননা বেশীরভাগ
মহিলা -তম্মধ্যে শিক্ষিত মহল উল্লেখযোগ্য- মনে করে যে, এটা
স্বাভাবিক সিক্ততা, যাতে অযু করা জরূরী নয়?
উত্তরঃ গবেষণার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, মহিলাদের
এই তরল পদার্থ যদি মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে তা পবিত্র। তবে পবিত্র হলেও তা অযু ভঙ্গ করবে। কেননা অযু
ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য অপবিত্র হওয়া শর্ত নয়। যেমন এই যে বায়ূ- যা পশ্চাদভাগ দিয়ে
বের হয়, তার তো কোন দোষ নেই; অথচ
তা অযু ভঙ্গ করে। অতএব, অযু অবস্থায় যদি মহিলার এরূপ তরল
পদার্থ বের হয়, তাহলে তা অযু ভঙ্গ করবে এবং তাকে নতুনভাবে
অযু করতে হবে।
তবে যদি তা অবিরামভাবে চলে, তাহলে অযু ভঙ্গ করবে না। কিন্তু নামাযের সময় হলে সে নামাযের জন্য অযু
করবে এবং ঐ অযুতে ঐ ওয়াক্তের ফরয ও নফল নামাযসমূহ আদায় করবে। অনুরূপভাবে কুরআন
তেলাওয়াত করতে পারে এবং তার জন্য বৈধ সব কাজ সে করতে পারে। যেমনিভাবে মূত্রবেগ
ধারণে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিদ্বানগণ এ বক্তব্যই পেশ করেছেন। এটাই হলো তরল ঐ
পদার্থের বিধান। অর্থা পবিত্রতার দিক বিবেচনায় সেটা পবিত্র। কিন্তু অযু ভঙ্গের দিক বিবেচনায়
সেটা অযু ভঙ্গকারী- যদি না সেটা অবিরাম বের হয়। আর অবিরাম বের হলে অযু ভঙ্গ করবে
না; তবে মহিলাকে নামাযের সময় হলে নামাযের জন্য অযু করতে
হবে- নামাযের সময়ের আগে নয় এবং অযু ধরে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে যদি তা অবিরাম না চলে
এবং নামাযের সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া তার অভ্যাস হয়, তাহলে যে
সময়ে বন্ধ থাকে নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় না থাকলে নামাযকে সেই সময় পর্যন্ত
বিলম্বিত করবে। আর নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় থাকলে অযু করে নামায আদায় করে নিবে।
এক্ষেত্রে কম-বেশীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এর সবই একই রাস্তা দিয়ে বের হয়।
সুতরাং কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে। তবে যা শরীরের
অন্যান্য অঙ্গ দিয়ে বের হয়- যেমন রক্ত, বমি, তা কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে না।
এদিকে এগুলো অযু ভঙ্গ করবে না মর্মে কতিপয় মহিলার
যে বিশ্বাস, ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর
অভিমত ছাড়া তার কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তিনি বলেন, “ইহা
অযু ভঙ্গ করে না।” কিন্তু তিনি এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ
পেশ করেননি। যদি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বা ছাহাবীগণের কথা থেকে এর পক্ষে কোন দলীল
থাকত, তাহলে তা দলীল হিসাবেই গৃহীত হত।
যাহোক, মহিলাদের
উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং নিজেদের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা
অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়লে তা গৃহীত হবে না- যদিও তারা একশত বার নামায পড়ে। এমনকি
কতিপয় আলেম বলেছেন, যে অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়ে,
সে কুফরী করে। কেননা ইহা আল্লাহর সাথে ঠাট্টার শামিল।
প্রশ্ন ৩৬: যে
মহিলার অবিরাম তরল পদার্থ বের হয়, সে যদি যে কোন এক ফরয নামাযের
জন্য অযু করে, তাহলে ঐ ফরয নামাযের অযু দিয়ে পরবর্তী ফরয
নামায পর্যন্ত সময়ে ইচ্ছামত নফল নামায পড়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করা তার জন্য ঠিক
হবে কি?
উত্তরঃ যদি সে কোন ফরয নামাযের জন্য সেই নামাযের প্রথম ওয়াক্তে অযু করে, তাহলে পরবর্তী নামাযের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত সময়ে সে ইচ্ছামত ফরয ও নফল
নামাযসমূহ পড়তে পারবে এবং কুরআন তেলাওয়াতও করতে পারবে।
উত্তরঃ না, পড়তে পারবে না। কেননা চাশতের নামাযের সময় নির্দিষ্ট।
সেজন্য এই নামাযের সময় হলে তাকে আবার অবশ্যই অযু করতে হবে। তাছাড়া ঐ মহিলা
ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলার মত। আর ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলাকে রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক
নামাযের জন্য অযু করতে বলেছেন।
✔ যোহরের ওয়াক্তঃ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে আছর পর্যন্ত।
✔ আছরের ওয়াক্তঃ যোহরের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর থেকে সূর্য হলদে হওয়া পর্যন্ত।
আর যরূরী প্রয়োজনে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
✔ মাগরিবের ওয়াক্তঃ সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিম দিগন্তের সান্ধ্য লালিমা
অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
✔ এশার ওয়াক্তঃ পশ্চিম দিগন্তের সান্ধ্য লালিমা দূর হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত
পর্যন্ত।
উত্তরঃ [কেউ কেউ বলেন,] এশার অযুতে তাহাজ্জুদ নামায
পড়লে শুদ্ধ হবে না। মধ্যরাত শেষ হওয়ার পর তার উপর নতুনভাবে অযু করা ওয়াজিব। আবার
কেউ বলেন, নতুনভাবে অযু করা তার জন্য যরূরী নয়। আর এ
দ্বিতীয়টাই অগ্রাধিকার যোগ্য অভিমত।
উত্তরঃ এশার শেষ ওয়াক্ত হলো অর্ধরাত্রি। আর উহা জানার উপায় হলো, সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত সময়টাকে দুইভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগে
এশার ওয়াক্ত শেষ হবে এবং দ্বিতীয় ভাগটা এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী একটা সময় হিসাবে
বিবেচিত হবে, কোন ফরয নামাযের সময় হিসাবে নয়।
প্রশ্ন ৪০:
তরল ঐ পদার্থ যার বিচ্ছিন্নভাবে আসে, সে অযু
করলে এবং অযুর পরে ও নামাযের আগে আবার তা বের হলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যার বিচ্ছিন্নভাবে তরল পদার্থ আসে, সে উহা
বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কিন্তু যদি তার এমন কোন অভ্যাস না থাকে;
বরং এই হচ্ছে এই নাই এমন অবস্থা হয়, তাহলে
সে নামাযের সময় হলে অযু করে নামায পড়বে। এতে তার কোন সমস্যা নেই।
উত্তরঃ যদি তা পবিত্র হয়, তাহলে কিছুই করতে হবে না। আর
অপবিত্র হলে অর্থা মূত্রাশয়
থেকে বের হলে, তা অবশ্যই ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন ৪২: এই
তরল পদার্থের কারণে যে অযু করতে হয়, তাতে কি
শুধু অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধুলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ এই তরল পদার্থ যদি পবিত্র হয় অর্থা মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে
শুধু অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধুলেই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন ৪৩: এই
তরল পদার্থের কারণে অযু ভঙ্গের পক্ষে রাসূল (ﷺ) থেকে কোন
হাদীছ বর্ণিত না হওয়ার কারণ কি- অথচ মহিলা ছাহাবীগণ তাঁদের দ্বীনের বিষয়াদি নিয়ে
ফতওয়া জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন?
উত্তরঃ তরল এই পদার্থ সব মহিলার না আসার কারণে।
উত্তরঃ তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে এবং এ বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন আলেমকে জিজ্ঞেস
করতে হবে।
প্রশ্ন ৪৫: “এই তরল পদার্থের কারণে অযু করতে হবে না” মর্মের
অভিমত কেউ কেউ আপনার দিকে সম্বন্ধিত করে থাকে-[আপনি তাদেরকে কি বলবেন]?
উত্তরঃ যে এই অভিমত আমার দিকে সম্বন্ধিত করে, সে
সত্যবাদী নয়। তবে আমার মনে হয়, “উহা পবিত্র” মর্মে আমার যে অভিমত, তা থেকে সে বুঝেছে যে,
উহা অযু ভঙ্গ করবে না।
প্রশ্ন ৪৬:
ঋতুস্রাবের এক বা একাধিক দিন অথবা একদিনেরও কম সময় আগে মেয়েদের মেটে রঙ্গের ঘোলা
ঘোলা যে পদার্থ বের হয়, তার হুকুম কি? এটা কখনও চিকন কালো সূতার আকৃতিতে বা গোটা গোটা হয়ে অথবা এ জাতীয় কোন
আকৃতিতে বের হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে ইহা ঋতুস্রাবের পরে আসলে তার হুকুমই বা কি?
উত্তরঃ ঋতুস্রাবের ভূমিকাস্বরূপ এটা হলে তাকে ঋতুস্রাব গণ্য করা হবে। এটা চেনার
উপায় হলো, ঋতুবতীর স্বাভাবিক ব্যথা অথবা পেট ব্যথা অনুভূত হওয়া।
আর ঋতুস্রাবের পরে ঘোলা ঘোলা যে পদার্থ বের হয়, তা দূর হওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে। কেননা ঋতুস্রাবের সাথে সংশ্লিষ্ট
ঘোলা এই তরল পদার্থ ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে। এ মর্মে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)
বলেন, “সাদা জাতীয় পদার্থ না দেখা পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়া
করো না।”[21]
হজ্জ
ও ওমরার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধিবিধান
প্রশ্ন ৪৭:
ঋতুবতী মহিলা ইহ্ রামের দুই রাকআত নামায কিভাবে আদায় করবে? ঋতুবতীর জন্য কুরআনের আয়াতসমূহ মনে মনে পাঠ করা কি জায়েয?
উত্তরঃ প্রথমতঃ আমাদের একটা জিনিস জানা উচিৎ যে, ইহ্
রামের কোন নামায নেই। কেননা রাসূল (ﷺ) ইহ্ রামের
উদ্দেশ্যে তাঁর উম্মতের জন্য আদেশের মাধ্যমে হোক বা নিজে আদায়ের মাধ্যমে হোক অথবা
সম্মতির মাধ্যমে হোক কোন নামাযের বিধান করে গেছেন মর্মে কিছুই বর্ণিত হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ ইহরামের আগে ঋতুগ্রস্ত হওয়া এই ঋতুবতী
ঋতুগ্রস্ত থাকা অবস্থায় ইহরাম বাঁধতে পারবে। কেননা রাসূল (ﷺ) আবু বকর
(রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখন যুল হুলায়ফাতে
[মদীনাবাসীদের মীক্বাত] প্রসূতি হয়েছিলেন, তখন তাকে গোসল
করতঃ একটা কাপড় বেঁধে ইহরাম বাঁধার আদেশ করেছিলেন।[22] আর
ঋতুবতীও এরূপ করবে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত ইহ্ রাম অবস্থায় থাকবে। অতঃপর [পবিত্র
হলে] কাবা ঘর তওয়াফ ও ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করবে।
প্রশ্নে কুরআন পাঠের বিষয়ে বলা হয়েছে, সে কি কুরআন পড়তে পারবে? হ্যাঁ, জরূরী প্রয়োজনে [যেমন অন্যকে শিক্ষা দেওয়া বা পরীক্ষার জন্য নিজে পড়া
ইত্যাদি] ঋতুবতী কুরআন পড়তে পারবে। তবে বিনা প্রয়োজনে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার জন্য কুরআন না পড়াই ভাল হবে।
প্রশ্ন ৪৮:
একজন মহিলা হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে এবং সফরে বের হওয়ার পর পাঁচ দিন ধরে তার
ঋতুস্রাব চলছে। সে মীক্বাতে পৌঁছে গোসল করে ইহরাম বেঁধেছে- অথচ সে তখনও পবিত্র
হয়নি। এরপর মক্কায় পৌঁছে হারাম শরীফের বাইরে অবস্থান করেছে এবং হজ্জ বা ওমরার কোন
কাজই সে করেনি। এরপর মিনাতে দুই দিন অবস্থানের পর পবিত্র হলে গোসল করতঃ পবিত্র
অবস্থায় ওমরার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছে। অতঃপর তওয়াফে ইফাযার সময় তার আবার রক্ত
দেখা দিয়েছে। কিন্তু সে লজ্জায় তার অভিভাবককে কিছু না বলে হজ্জের কার্যাবলী
সম্পন্ন করেছে। এরপর দেশে পৌঁছে তার অভিভাবককে বিষয়টা বলেছে। এক্ষণে এর হুকুম কি?
উত্তরঃ তওয়াফে ইফাযার সময় তার যে রক্ত এসেছিল, তা যদি
ঋতুর রক্ত হয়- যা সে রক্তের বৈশিষ্ট্য দেখে বা ব্যথা অনুভবের মাধ্যমে চিনতে পারবে-
তাহলে তার ঔ তওয়াফ শুদ্ধ হয়নি। সেজন্য তওয়াফে ইফাযার উদ্দেশ্যে তাকে আবার মক্কায়
ফিরে আসতে হবে। অতঃপর সে মীক্বাত থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে তওয়াফ, সাঈ ও চুল ছেঁটে ওমরা সম্পন্ন করতঃ তওয়াফে ইফাযা করবে।
কিন্তু তার এই রক্ত যদি ঋতুর রক্ত না হয়ে ভীড়ের
প্রচণ্ডতায় বা ভীতির কারণে অথবা অনুরূপ অন্য কোন কারণে বের হওয়া রক্ত হয়, তাহলে যাদের নিকট তওয়াফের জন্য পবিত্রতা* অর্জন শর্ত নয়, তাদের নিকট তার তওয়াফ শুদ্ধ হবে।
প্রথম মাসআলায় [ঋতুর রক্তের ক্ষেত্রে] যদি দেশ
দূরে হওয়ার কারণে তার ফিরে আসা সম্ভব না হয়, তাহলে
তার হজ্জ শুদ্ধ হবে। কেননা সে যতটুকু করেছে, তার চেয়ে
বেশী করা এখন তার পক্ষে সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৪৯: ওমরার জন্য ইহরামরত এক মহিলা মক্কায়
গমন করল এবং মক্কায় পৌঁছার পর সে ঋতুগ্রস্ত হলো। এদিকে তার মাহরাম পুরুষ [যার সাথে
স্থায়ীভাবে বিয়ে বৈধ নয়] ত ক্ষণাত বাড়ী ফিরে যেতে বাধ্য হলো এবং মক্কায় তার আর কেউ
রইল না। তাহলে উক্ত মহিলার হুকুম কি?
উত্তরঃ যদি সে সঊদী আরবের হয়, তাহলে সে তার মাহ্ রাম পুরুষের
সাথে চলে যেয়ে ইহ্ রাম অবস্থায় থাকবে। অতঃপর পবিত্র হলে আবার মক্কায় ফিরে আসবে।
কেননা তার জন্য ফিরে আসা সহজ এবং তার তেমন কোন পরিশ্রমও হবে না আবার পাসপোর্টেরও
প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যদি সে ভিনদেশী হয় এবং আবার ফিরে আসা তার জন্য কষ্টসাধ্য
হয়, তাহলে সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে পট্টি বেঁধে তওয়াফ ও
সাঈ করে নিবে। অতঃপর ঐ একই সফরে চুল ছেঁটে ওমরার কাজ শেষ করবে। কেননা ঐ অবস্থায়
তার তওয়াফ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। আর আবশ্যকতা নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে।
প্রশ্ন ৫০:
হজ্জের দিনগুলোতে কোন মুসলিম মহিলা ঋতুগ্রস্ত হলে তার বিধান কি? তার ঐ হজ্জ কি তার জন্য যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ ঋতুগ্রস্ত হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ না জানা পর্যন্ত এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া
সম্ভব নয়। কেননা হজ্জের কিছু কিছু কাজে ঋতুস্রাব প্রতিবন্ধক হয় না আবার কিছু
কিছুতে তা প্রতিবন্ধক হয়। যেমন পবিত্র অবস্থায় ছাড়া তার পক্ষে তওয়াফ করা সম্ভব নয়, কিন্তু এতদ্ব্যতীত হজ্জের অন্যান্য কাজ ঋতুগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও করা
সম্ভব।
প্রশ্ন ৫১: একজন মহিলা বলছেন, আমি গত বছর হজ্জব্রত পালন করেছি এবং শারঈ ওযর থাকার কারণে আমি তওয়াফে
ইফাযা ও বিদায়ী তওয়াফ ব্যতীত হজ্জের বাকী সব কাজ সম্পন্ন করেছি। যে কোন একদিন
তওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তওয়াফ করার জন্য মক্কায় যাব ভেবে আমি আমার বাড়ী মদীনায় ফিরে
গেছি। দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইতিমধ্যে আমি সবকিছু থেকে হালাল হয়ে
গেছি এবং ইহ্ রাম অবস্থায় যা কিছু করা হারাম থাকে, তার
সবগুলোই করে ফেলেছি। তওয়াফের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাকে
বলা হয়েছে যে, তোমার জন্য তওয়াফ করা ঠিক হবে না; বরং তুমি তোমার হজ্জ নষ্ট করে ফেলেছ। সেজন্য তোমাকে আগামী বছর আবার
হজ্জ করতে হবে এবং সেই সাথে গরু বা উট কুরবানী করতে হবে। এক্ষণে প্রশ্ন হলো,
একথা কি ঠিক? এর কি অন্য কোন সমাধান আছে?
আমার হজ্জ কি নষ্ট হয়েছে? আমাকে কি
পুনরায় হজ্জ করতে হবে? এ মুহূর্তে আমার করণীয় সম্পর্কে
জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন।
উত্তরঃ না জেনে ফতওয়া দেওয়ার এটা একটা মুছীবত। এই অবস্থায় আপনাকে মক্কায় ফিরে যেতে
হবে এবং কেবলমাত্র তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করতে হবে। মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় আপনি
ঋতুগ্রস্ত থাকায় আপনাকে আর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না। কেননা ঋতুবতীর জন্য বিদায়ী
তওয়াফ যরূরী নয়। এ মর্মে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, “রাসূল (ﷺ) মানুষদেরকে এ
মর্মে আদেশ করেছেন যে, তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয়
কাবায় [অর্থা বিদায়ী
তওয়াফ]। তবে তিনি ঋতুবতীর ক্ষেত্রে এ হুকুম লাঘব করেছেন।”[23] আবূ দাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তাদের
সর্বশেষ কাজ যেন হয় কাবা ঘরের তওয়াফ।”[24] অনুরূপভাবে
রাসূল (ﷺ)-কে যখন খবর দেওয়া হলো, ছফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করে ফেলেছেন,
তখন তিনি বললেন, “তাহলে এখন সে চলে যাক।”[25]
এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, ঋতুবতীর বেলায়
বিদায়ী তওয়াফ যরূরী নয়। তবে অবশ্যই আপনাকে তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করতে হবে। আর আপনি
যেহেতু অজ্ঞতাবশতঃ সবকিছু থেকে হালাল হয়েছিলেন, সেহেতু এটা
আপনাকে কোন ক্ষতি করবে না। কেননা কেউ না জেনে ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের কোন কিছু
করে ফেললে তার কোন সমস্যা হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, “হে
আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা ভুল করি, তাহলে
আপনি আমাদের ধরবেন না” (আল-বাক্বারাহ ২৮৬)। তখন আল্লাহ
বলেন, “ঠিক আছে, আমি ধরব না।”[26]
মহান আল্লাহ অন্যত্রে বলেন, “তোমরা কোন
ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে”
(আহযাব ৫)। সুতরাং ইহরামরত ব্যক্তির উপর আল্লাহকর্তৃক নিষিদ্ধ
সমস্ত বিষয় যদি সে না জেনে বা ভুলে অথবা বাধ্য হয়ে করে ফেলে, তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। তবে যখনই তার ওযর চলে যাবে,
তখনই কৃত বিষয় থেকে বিরত থাকা তার উপর ওয়াজিব হবে।
প্রশ্ন ৫২:
একজন মহিলার যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে প্রসূতি অবস্থা শুরু হলো এবং তওয়াফ ও সাঈ
ব্যতীত হজ্জের যাবতীয় রুকন সে সম্পন্ন করল। তবে দশ দিন পরে সে লক্ষ্য করল যে, প্রাথমিকভাবে সে পবিত্র হয়ে গেছে। এখন কি সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে
এবং গোসল করে হজ্জের অবশিষ্ট রুকন তওয়াফে ইফাযা [হজ্জের তওয়াফ] সম্পন্ন করবে?
উত্তরঃ সে নিশ্চিতভাবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত গোসল করতঃ তওয়াফ করা তার জন্য জায়েয
নয়। প্রশ্নে তার কথা “প্রাথমিকভাবে” থেকে বুঝা যায় যে, সে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র
হয়নি। তাই তাকে পূর্ণ পবিত্র হতেই হবে। এরপর যখন সে পূর্ণ পবিত্র হবে, তখন গোসল করে তওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করবে। তওয়াফের আগে সাঈ করে ফেললেও
কোন সমস্যা নেই। কেননা তওয়াফের আগে সাঈ করে ফেলেছেন- এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে
রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
“কোন অসুবিধা নেই।”[27]
প্রশ্ন ৫৩:
একজন মহিলা ঋতুগ্রস্ত অবস্থায় “আস-সায়ল” [নাজদ ও ত্বায়েফবাসীদের মীক্বাত ক্বারনুল মানাযিল] থেকে ইহরাম বাঁধল।
মক্কায় পৌঁছার পর সে তার কোন প্রয়োজনে জেদ্দায় গেল এবং জেদ্দাতে সে পবিত্র হলো।
এরপর গোসল করে চুল আঁচড়িয়ে তার হজ্জ সম্পন্ন করল। এক্ষণে তার এই হজ্জ কি শুদ্ধ হবে?
তার উপর কি কোন কিছু ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ তার হজ্জ শুদ্ধ হয়েছে এবং তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন ৫৪: প্রশ্নকারিণী বলছেন, আমি ওমরায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ঋতুগ্রস্ত থাকার কারণে মীক্বাত অতিক্রম
করা সত্ত্বেও ইহরাম বাঁধিনি এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করেছি। এরপর
পবিত্র হয়ে মক্কা থেকেই ইহ্ রাম বেঁধেছি। এক্ষণে আমার এই কাজ কি জায়েয হয়েছে?
আমার উপর কি ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ এই কাজ জায়েয হয়নি। যে মহিলা ওমরা করতে চায়, ঋতুগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করা তার জন্য
জায়েয নয়। সেজন্য সে ঋতুগ্রস্ত অবস্থায় ইহরাম বাঁধবে এবং তার ইহরাম সম্পন্ন ও
শুদ্ধ হবে। এর পক্ষে দলীল হচ্ছে- আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী আসমা
বিনতে উমাইস (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সন্তান প্রসব করলেন। নবী করীম (ﷺ) তখন বিদায়
হজ্জের উদ্দেশ্যে যুল হুলায়ফাতে অবতরণ করেছেন। এমতাবস্থায় তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট খবর পাঠালেন যে,
আমি এখন কি করব? রাসূল (ﷺ) বললেন, “তুমি গোসল কর এবং ওখানে একটা ন্যাকড়া বেঁধে ইহরাম বাঁধ।”[28] আর ঋতুর রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্তের মতই। সেজন্য ঋতুবতী ওমরা বা
হজ্জের উদ্দেশ্যে মীক্বাত অতিক্রম করলে আমরা তাকে বলি, তুমি
গোসল করে এবং একটা ন্যাকড়া বেঁধে ইহরাম বাঁধ। হাদীছে উল্লেখিত (الاستثفار) শব্দের অর্থ হলো, “সে তার
লজ্জাস্থানে একটা ন্যাকড়া বাঁধবে”। অতঃপর হজ্জ বা ওমরার
ইহরাম বাঁধবে। তবে সে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কাবা ঘরে
আসবে না এবং তওয়াফও করবে না। এজন্য ওমরার মাঝামাঝি সময়ে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)
ঋতুগ্রস্ত হলে রাসূল (ﷺ) তাঁর উদ্দেশ্যে
বলেন, “হজ্জ পালনকারী যা করে, তুমিও
তাই কর। তবে পবিত্র না হয়ে তুমি কাবা ঘর তওয়াফ করো না।”[29] এটি হচ্ছে বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা। ছহীহ বুখারীতে এসেছে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) উল্লেখ করেন, তিনি
পবিত্র হয়ে কাবা ঘর তওয়াফ করেছেন এবং ছাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন।[30] এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, মহিলা যদি ঋতুগ্রস্ত
অবস্থায় হজ্জ বা ওমরার ইহরাম বাঁধে অথবা তওয়াফের পূর্ব মুহূর্তে তার ঋতুস্রাব আসে,
তাহলে সে পবিত্র না হয়ে এবং গোসল না করে তওয়াফ বা সাঈ কোনটাই
করবে না।
তবে যদি সে পবিত্র অবস্থায় তওয়াফ করে এবং তওয়াফ
শেষে তার ঋতুস্রাব আসে, তাহলে সে হজ্জ বা ওমরার কাজ
অব্যাহত রাখবে এবং সাঈও করবে- যদিও তার শরীরে ঋতুস্রাব থাকে। এরপর চুল ছেঁটে ওমরার
কাজ শেষ করবে। কেননা ছাফা-মারওয়াতে সাঈর জন্য পবিত্র থাকা শর্ত নয়।
প্রশ্ন ৫৫:
প্রশ্নকারী বলেন, আমি সস্ত্রীক ওমরার জন্য
ইয়াম্বু [সঊদী আরবের একটি প্রসিদ্ধ শহর] থেকে আগমন করি। কিন্তু জেদ্দায় পৌঁছার পর
আমার স্ত্রী ঋতুগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলে আমার স্ত্রী ছাড়া আমি একাকী ওমরা সম্পন্ন করি।
এখন আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে হুকুম কি হবে?
উত্তরঃ আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে হুকুম হচ্ছে, সে
পবিত্র হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করবে। অতঃপর ওমরা সম্পন্ন করবে। কেননা যখন
ছফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ঋতুগ্রস্ত হলেন, তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, “সে কি আমাদেরকে আটকে দিল”? ছাহাবীগণ
(রাযিয়াল্লাহু আনহুম) বললেন, তিনি তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন
করে ফেলেছেন। তখন রাসূল(ﷺ) বললেন, “তাহলে এখন সে চলে যাক।”[31] এই হাদীছে রাসূল (ﷺ)-এর উক্তি, “সে আমাদেরকে কি আটকে দিল?” প্রমাণ করে যে,
তওয়াফে ইফাযার আগে কোন মহিলা ঋতুগ্রস্ত হয়ে গেলে পবিত্র হওয়া
পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা অতঃপর পবিত্র হলে তওয়াফ করা তার উপর আবশ্যক। আর ওমরার
তওয়াফ তওয়াফে ইফাযার মতই। কেননা উহা ওমরার একটা রুকন। সুতরাং ওমরাকারিণী তওয়াফের
পূর্বে ঋতুগ্রস্ত হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে তওয়াফ করা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে।
প্রশ্ন ৫৬: “ সাঈ করার স্থান” কি হারামের [কাবার] অন্তর্ভুক্ত? ঋতুবতী কি
সেখানে যেতে পারে? হারামের সাঈ করার স্থানে যে যাবে,
তার উপর কি তাহিয়্যাতুল মাসজিদ [মসজিদে প্রবেশের দুই রাকআত
নামায] পড়া ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ “সাঈর স্থান” মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এ
কারণেই কর্তৃপক্ষ এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী দেওয়াল দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু
দেওয়ালটা বেশ নীচু। “সাঈর স্থান” মসজিদুল হারামের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য
কল্যাণকর। কেননা যদি এ স্থানকে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করা হত, তাহলে কোন মহিলা তওয়াফ ও সাঈর মাঝামাঝি সময়ে ঋতুবতী হলে সাঈ করা তার
জন্য নিষিদ্ধ হত। সেজন্য আমাদের ফাতাওয়া হলো, কোন মহিলা
তওয়াফের পরে এবং সাঈর আগে ঋতুগ্রস্ত হলে সে সাঈ করে নিবে। কেননা সাঈর স্থানটা
মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর তাহিয়্যাতুল মাসজিদ প্রসঙ্গে বলা হবে, কেউ যদি তওয়াফের পরে সাঈ করে এবং আবার মসজিদে ফিরে আসে, তাহলে সে উহা আদায় করবে। তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ছেড়ে দিলে কোন সমস্যা নেই।
তবে উত্তম হলো, মানুষ সুযোগ গ্রহণ করতঃ দুই রাকআত নামায
আদায় করে নিবে। কেননা এ মসজিদে নামায আদায়ের বিরাট ফযীলত রয়েছে।
প্রশ্ন ৫৭:
প্রশ্নকারিণী বলেন, আমি হজ্জ করেছি। তবে তখন আমার
মাসিক ঋতুস্রাব এসেছিল। কিন্তু লজ্জায় আমি কাউকে কিছু না বলে হারামে প্রবেশ
করেছিলাম। অতঃপর নামায পড়েছিলাম এবং তওয়াফ ও সাঈ করেছিলাম। এখন আমার করণীয় কি?
উল্লেখ্য যে, প্রসূতি অবস্থার পরে আমার
সেই ঋতুস্রাব এসেছিল।
উত্তরঃ ঋতুগ্রস্ত বা প্রসূতি অবস্থায় পতিত হলে কোন মহিলার জন্য মক্কায় হোক বা তার
দেশে হোক অথবা অন্য কোথাও হোক নামায আদায় করা জায়েয নয়। কেননা রাসূল(ﷺ) মহিলা সম্পর্কে
বলেছেন, “মহিলার বিষয়টা কি এমন নয় যে, যখন
সে ঋতুগ্রস্ত হয়, তখন নামায-রোযা আদায় করে না?”[32]
তাছাড়া মুসলিমগণ একমত হয়েছেন যে, কোন
ঋতুবতীর জন্য নামায-রোযা আদায় করা বৈধ নয়। সেকারণে এ মহিলাকে তার কৃতকর্মের জন্য
আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
আর ঋতু অবস্থায় তার তওয়াফ শুদ্ধ হয়নি, তবে সাঈ শুদ্ধ হয়েছে। কেননা অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, হজ্জে তওয়াফের আগে সাঈ করা জায়েয। সেজন্য ঐ মহিলাকে অবশ্যই আবার তওয়াফ
করতে হবে। কারণ তওয়াফে ইফাযা হজ্জের অন্যতম একটি রুকন। তাই দ্বিতীয় হালাল [বড়
হালাল] হওয়ার বিষয়টা এই তওয়াফ ছাড়া পূর্ণ হবে না। সেজন্য ঐ মহিলা বিবাহিতা হলে
তওয়াফ না করা পর্যন্ত তার স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে না। আর অবিবাহিতা হলে
তার বিবাহ দেওয়াও জায়েয হবে না। আল্লাহই ভালো জানেন।
উত্তরঃ আরাফার দিনে কোন মহিলা ঋতুগ্রস্ত হয়ে গেলে সে হজ্জের কাজ অব্যাহত রাখবে এবং
অন্যান্যরা যা করছে, সেও তাই করবে। তবে পবিত্র না
হয়ে কাবা ঘর তওয়াফ করবে না।
প্রশ্ন ৫৯:
জামরায়ে আক্বাবাতে পাথর নিক্ষেপের পর এবং তওয়াফে ইফাযার আগে যদি কোন মহিলা
ঋতুগ্রস্ত হয়, তাহলে তার করণীয় কি? উল্লেখ্য যে, সে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং
তার স্বামী সফরসঙ্গীদের সাথে রয়েছে। আর সফর করলে তার পক্ষে আবার ফিরে আসা সম্ভব
নয়।
উত্তরঃ যদি তার পুনরায় ফিরে আসা সম্ভব না হয়, তাহলে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে পট্টি বেঁধে জরূরী অবস্থার কারণে সে তওয়াফ করে নিবে এবং
তার উপর কিছুই বর্তাবে না। অনুরূপভাবে হজ্জের বাকী কাজগুলোও পূর্ণ করবে।
প্রশ্ন ৬০: যদি প্রসূতি মহিলা চল্লিশ দিনের আগে
পবিত্র হয়, তাহলে তার হজ্জ কি শুদ্ধ হবে? আর
যদি পবিত্র না হয়, তাহলে সে কি করবে? জানা আবশ্যক যে, সে ইতিমধ্যে হজ্জের নিয়্যত করে ফেলেছে?
উত্তরঃ যদি প্রসূতি মহিলা চল্লিশ দিনের আগে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে গোসল করে নামায পড়বে এবং পবিত্র মহিলারা যা করে, সেও তাই করবে। এমনকি তওয়াফও করবে। কেননা প্রসূতি অবস্থার সর্বনিম্ন কোন
সময় নেই।
অবশ্য পবিত্র না হলেও তার হজ্জ শুদ্ধ হবে। তবে
পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তওয়াফ করবে না। কেননা নবী করীম (ﷺ) ঋতুবতীকে কাবা
ঘর তওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন।[33] আর এক্ষেত্রে প্রসূতি
অবস্থাও ঋতুস্রাবের অবস্থার মত।
টীকা ::
[1] ঋতুমুক্ত হওয়ার কয়েকটা নিদর্শন
রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
1. রক্ত বন্ধ হওয়ার বিষয়টা অনুভূত হওয়া।
2. শুষ্কতা অনুভব করা।
3. সাদা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া (এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
২৪নং প্রশ্নের পাদটীকায় আলোচনা করা হয়েছে)।
4. সম্পূর্ণভাবে রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া (আল-আহকাম
আল-ফিক্বহিইয়াহ আল-মুখতাছারাহ ফী আহকামি আহলিল আ‘যার)।
[অনুবাদক]
[2] সূরা আল-বাকারাহ: ২২২।
[3] ইস্তেহাযা এমন রক্ত-যা ঋতুস্রাব ও প্রসূতির সময় ছাড়া
অন্য সময়ে বের হয় অথবা এতদুভয়ের পরপরই বের হয়। সে কারণে কোন মহিলার হায়েয ও
নিফাসের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে যদি ঐ সময়সীমা অতিক্রম করে তার রক্ত চলে, তাহলে তাকে ইস্তেহাযা বলে। এটি মূলতঃ এক ধরনের রোগ। হায়েয ও ইস্তেহাযার
মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ইস্তেহাযা লাল রঙের হয়। পক্ষান্তরে হায়েয হয়
কালো রঙের অথবা গাঢ় লাল (প্রায় কালো) রঙের।
২. ইস্তেহাযার দুর্গন্ধ থাকে না। পক্ষান্তরে
হায়যের দুর্গন্ধ থাকে।
৩. ইস্তেহাযার রক্ত বের হওয়ার পর জমাটবদ্ধ হয়ে
যায়। কিন্তু হায়েয কখনও জমাটবদ্ধ হয় না।
৪. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয প্রচুর পরিমাণে বের হয়।
কিন্তু ইস্তেহাযা কম পরিমাণ বের হয়।
৫. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয বেদনা সৃষ্টি করে।
কিন্তু ইস্তেহাযা তা করে না।
৬. হায়েয খুব গাঢ় হয়। কিন্তু ইস্তেহাযা পাতলা হয়
ইত্যাদি। (আল-আহকাম আল-ফিক্বহিইয়াহ আল-মুখতাছারাহ ফী আহকামি আহলিল আ‘যার)।–অনুবাদক।
[4] সূরা আল-বাকারাহ:১৮৭।
[5] বুখারী, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘সা‘য়িমের
গোসল’ অনুচ্ছেদ হা/১৯৩১; মুসলিম,
‘রোযা’ অধ্যায়, ‘অপবিত্র অবস্থায় যার ফজর হয়েছে, তার সওম শুদ্ধ’
অনুচ্ছেদ, হা/৭৫,১১০৯।
[6] বুখারী,
'নামাযের সময় সমূহ' অধ্যায়, 'যে ব্যক্তি ফজরের এক রাক 'আত পেল' অনুচ্ছেদ হা/৫৭৯; মুসলিম, 'মসজিদ এবং নামাযের স্থান সমূহ' অধ্যায়,
'যে ব্যক্তি কোন নামাযের এক রাক'আত পেল,
সে ঐ নামাযের পুরোটাই পেল' অনুচ্ছেদ
হা/১৬৩, ৬০৮।
[7] বুখারী, 'রোযা' অধ্যায়, 'ঋতুবতী নামায ও সওম পরিত্যাগ করবে'
অনুচ্ছেদ হা/১৯৫১।
* সাদা জাতীয় পদার্থের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ২৪নং প্রশ্নের
পাদটীকায় আলোচনা করা হয়েছে।-অনুবাদক।
[8] বুখারী, 'রোযা' অধ্যায়, 'রমযানের ক্বাযা সওম কখন আদায় করবে?'
অনুচ্ছেদ হা/১৯৫০; মুসলিম, 'রোযা' অধ্যায়, 'রমযানের
ক্বাযা সওম দেরীতে আদায় করা জায়েয' অনুচ্ছেদ হা/১৫১,
১১৪৬।
[9] ১২নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
* ইমাম যায়লাঈ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, القصة (আল-ক্বাছ্ছাহ) হলো সাদা সূতার মত- যা মহিলাদের ঋতুস্রাবের শেষের দিকে
তাদের পবিত্র হওয়ার আলামত হিসাবে সম্মুখ ভাগ দিয়ে বের হয়। আবার কেউ কেউ বলেন,
القصة (আল-ক্বাছ্ছাহ) হলো সাদা জাতীয় পানি- যা হায়েয বন্ধ হওয়ার সময় গর্ভাশয়
থেকে বের হয় (আল-মাওসূআতুল ফিক্বহিইয়াহ আল-কুয়েতিইয়াহ ৩৩/২৭৯)।–অনুবাদক।
[10] 'ঋতুস্রাব' অধ্যায়,
'ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট দিনের বাইরে হলুদ বর্ণের এবং ঘোলা পদার্থ
[বের হওয়া]' অনুচ্ছেদ হা/৩২৬।
[11] 'পবিত্রতা' অধ্যায়,
'পবিত্র হওয়ার পরে যে মহিলা হলুদ ও ঘোলা বর্ণের পদার্থ দেখতে পায়'
অনুচ্ছেদ হা/৩০৭।
[12] ইমাম বুখারী হাদীছটাকে 'মুআল্লাক্ব'
হিসাবে বর্ণনা করেছেন, 'ঋতুস্রাব'
অধ্যায়, 'ঋতুস্রাব আসা এবং চলে যাওয়া'
অনুচ্ছেদ।
[13] আবু দাঊদ, 'নামায' অধ্যায়, 'মহিলাদের মসজিদে যাওয়া' অনুচ্ছেদ হা/৫৬৭।
[14] বুখারী, 'নবীগণের কাহিনী'
অধ্যায়, 'আদম ও তার সন্তানাদি সৃষ্টি'
অনুচ্ছেদ হা/৩৩৩২; মুসলিম, 'ভাগ্য' অধ্যায়, 'আদম
সন্তানের তার মায়ের পেটে সৃষ্টির ধরন' অনুচ্ছেদ হা/১,
২৬৪৩।
* বইটার ছুরাইয়া প্রকাশনীর ছাপায় একটু ভুল রয়েছে। প্রথমতঃ
তিন মাসে গর্ভপাত ঘটলে মহিলার যে রক্ত আসে, তাকে “প্রসূতি অবস্থার রক্ত” না বলে “কূ-রক্ত” বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ "৮০দিনের
আগে যদি গর্ভপাত ঘটে, তাহলে উক্ত মহিলার রক্ত কূ-রক্ত
হিসাবে পরিগণিত হবে” বাক্যটা সম্পূর্ণ বাদ পড়েছে। আমরা
মাননীয় লেখকের “ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম (পৃষ্ঠাঃ ২৬১-২৬২,
প্রশ্ন নং-১৮২)” বই থেকে ভুল সংশোধন
করেছি। কারণ সংশোধন না করলে সঠিক অর্থ প্রকাশ পায় না।
[15] ১২ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[16] ১৪ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[17] ১২ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[18] ‘খুমরা’ হচ্ছে জায়নামায-যার
উপর মুছল্লী সেজদা করে থাকে। আর এটাকে খুমরা (আচ্ছাদন) বলা হয় এই কারণে যে,
উহা সেজদার সময় চেহারা ঢেকে রাখে।
[19] মুসলিম, 'ঋতুস্রাব' অধ্যায়, 'ঋতুবতী তার স্বামীর মাথা ধুয়ে দিতে
পারে এবং চিরুনি করে দিতে পারে' অনুচ্ছেদ হা/১১, ২৯৮।
[20] বুখারী, 'ঈদায়েন' অধ্যায়, 'সাধারণ এবং ঋতুবতী মহিলাদের ঈদগাহে
যাওয়া' অনুচ্ছেদ, হা/৯৭৪. মুসলিম,
'ঈদায়েন' অধ্যায়, 'দুই ঈদে মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া' অনুচ্ছেদ,
হা/১০, ৮৯০।
[21] ২৪ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[22] মুসলিম, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)-এর হজ্জ' অনুচ্ছেদ, হা/২১৩৭।
*এখানে পবিত্রতা বলতে ছোট অপবিত্রতা (الحدث
الأصغر) থেকে পবিত্রতা অর্জনের কথা বুঝানো হয়েছে; বড় অপবিত্রতা (الحدث الأكبر) থেকে
পবিত্রতা অর্জনের কথা বলা হয়নি। কেননা বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র না হলে কারো জন্য
কাবা ঘর তওয়াফ করা বৈধ নয় সে বিষয়ে সকলেই ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কিন্তু ছোট
অপবিত্রতা থেকে পবিত্র না হয়ে কাবা ঘর তওয়াফ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
কেউ বলেছেন, যাবে। আবার কেউ বলেছেন,
যাবে না। তবে এই দ্বিতীয় মতটাই অগ্রাধিকার যোগ্য। উল্লেখ্য,
যে অপবিত্রতা অযু আবশ্যক করে, তাকে ছোট
অপবিত্রতা (الحدث الأصغر) বলে।
যেমনঃ পেশাব, পায়খানা, বায়ূ নিঃসরণ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে অপবিত্রতা গোসল আবশ্যক করে,
তাকে বড় অপবিত্রতা (الحدث الأكبر) বলে।
যেমনঃ স্ত্রী সহবাস জনিত অপবিত্রতা, হায়েয ও
নিফাস জনিত অপবিত্রতা।
[23] বুখারী, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/১৭৫৫; মুসলিম, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী
তওয়াফ আবশ্যক এবং ঋতুবতীর ক্ষেত্রে ছাড়' অনুচ্ছেদ হা/৩৮০,
১৩২৮।
[24] আবু দাঊদ, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/২০০২।
[25] বুখারী, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'তওয়াফে ইফাযার পরে যে মহিলা ঋতুগ্রস্ত
হয়' অনুচ্ছেদ হা/৩২৮; মুসলিম,
'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/৩৮২, ১২১১।
[26] মুসলিম, 'ঈমান' অধ্যায়, 'আল্লাহপাক মানুষের মনের পরিকল্পনা
(বাস্তবায়ন না করলে) ক্ষমা করে দেন' অনুচ্ছেদ হা/২০০,
১২৬।
[27] আবু দাঊদ, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'হজ্জে যে ব্যক্তি কিছু কাজ কিছু
কাজের আগে করে ফেলেছে' অনুচ্ছেদ হা/২০১৫।
[28] ৪৭ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[29] বুখারী, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'ঋতুবতী কা'বা
ঘরের তওয়াফ ছাড়া হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে' অনুচ্ছেদ
হা/১৬৫০; মুসলিম, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'ইহরামের বিভিন্ন ধরন বা পদ্ধতির
বিবরণ' অনুচ্ছেদ হা/১২০, ১২১১।
[30] বুখারী, 'ওমরা' অধ্যায়, 'তান'ঈম থেকে
ওমরা' অনুচ্ছেদ হা/১৭৮৫।
[31] ৫১ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[32] ১৪ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
[33] ৫৪ নং প্রশ্নের টীকা দ্রষ্টব্য।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite
0 Comments