ডঃ জাকির নায়েক এর প্রশ্ন - উত্তর পর্ব সমগ্র::
লেকচার অনুবাদ: শাহরিয়ার আজম
১ . প্রশ্নঃ মুসলিমরা কেন অমুসলিমদের কাফের বলে?
✔ জবাব:-
কাফের মানে যে প্রত্যাখ্যান করে-
কাফের শব্দটি মূল শব্দ ‘কুফর’ থেকে উৎপন্ন। যার মানে গোপন করা, আড়াল করা, অথবা প্রত্যাখ্যান করা। ইসলামী পরিভাষায় কাফের বলা হয় সেই লোককে যে ইসলামের মহাসত্যকে গোপন করে, আড়াল করে বা প্রত্যাখ্যান করে এবং এমন এক ব্যক্তি, যে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে বাংলায় অমুসলিম এবং ইংরেজীতে ‘ননমুসলিম’ বলা হয়।
যদি কোনো অমুসলিম তাকে অমুসলিম অথবা কাফের বলাকে গালি মনে করেন তা হলে ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণা ছাড়া এটাকে আর কিছুই বলা যায় না। ইসলাম ও ইসলামী পরিভাষা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবার জন্য তাকে ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস থেকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তখন তিনি বুঝতে পারবেন এটা গালি তো নয়ই বরং যথাযোগ্য পারিভাষা ব্যবহারে জন্য ইসলামকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারবেন না।
✔ জবাব:-
১.ক. অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য-
মুলত প্রতিটি ধর্মই মানুষকে মন্দ দূর করে ভাল হবার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইসলামের পরিধি আরো ব্যাপক। ইসলাম আমাদেরকে ন্যায়-পরায়নতা অর্জনের প্রকৃতিসম্মত পথ ও পদ্ধতি দেখিয়ে দেয় কিভাবে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে যাবতীয় মন্দ নির্মূল করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাব প্রকৃতি ও সমাজের চিন্তা ভাবনা ও রুচি অভিরুচিকে বিবেচনায় রাখে। ইসলাম খোদ সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার দেয়া মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতির দিক নির্দেশিকা। এ কারণে ইসলামকে ‘দ্বীনুল ফিৎরাহ’ বা মানুষের প্রকৃতি সম্মত জীবন ব্যবস্থাও বলা হয়।
খ. যেমন ইসলামে আমাদেরকে চুরি, ডাকাতি পরিহার করতে বলার সাথে সাথে সে এ ও বলে দেয় যে, কেমন করে সমাজ থেকে এ প্রবনতা নির্মূল করা যাবে-
১. বড় বড় সব ধর্মই শিক্ষা দেয় চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে অন্য ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্য কোথায়? পার্থক্যটা হলো চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ এ শিক্ষার সাথে সাথে ইসলাম এমন একটি সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের বাস্তব পদ্ধতি নির্দেশ করে যে সমাজে চুরি ডাকাতির প্রয়োজনই পড়বে না।
২. মানুষের অভাব দুর করতে ইসলাম যাকতের বিধান দিয়েছে-
ইসলাম বিধান দিয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য যাকাতি বাধ্যতাম্যলক যার নিসাব পরিমান উদ্ধৃত্ত তাকে। অর্থাৎ বাৎসরিক আয় ব্যায়ের পরে ৮৫ গ্রাম সোনা বা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা অন্যান্য মাল পত্র উদ্ধৃত্ত থাকবে। ২.৫% বা শতকারা আড়াই টাকা প্রতি চন্দ্র বৎসরের শেষে তাকে (অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দিতে হবে)। পৃথিবীর প্রতিটি সম্পদশালী ব্যক্তি যদি সত্যি সত্যিই এই যাকাত আদায় করে তাহলে দারিদ্রতা বলতে পৃথিবীতে কিছু থাকবে না। তখন ভিক্ষা দিতেও একজন ভিখারী খুজে পাওয়া যাবে না। (এই হলো ইসলামী অর্থনীতির মাত্র একটি কার্যক্রম। শুধুমাত্র এই যাকাত ব্যাবস্থাটুকু কার্যকর হলে হাত পাতার লোক খুঁজতে হবে।)
৩. চুরি ডাকাতির শাস্তি হাত কেটে ফেলা-
চোর ডাকাত প্রমাণিত হলে তার হাত কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছে ইসলাম। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ-
”চোর অথবা চোরনী, তোমরা তাদের হাত কেটে দাও এটাই শাস্তি যে কর্ম তারা করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক (দেয়া) আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহ মহা শক্তিমান জ্ঞানপূর্ন। ” (সূরা মায়েদাহঃ ৩৮)
৪. ইসলামী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠিত হলে তার কল্যান ফলাফল হাতে হাতে পাওয়া যায়-
আমেরিকা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে উন্নততম। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে তার আছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এহেন আমেরিকায় যদি ইসলামের পূর্নাঙ্গ বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়- একদিকে প্রতিটি সার্মথ্যবান ব্যক্তি রীতিমতো যাকাত আদায় করছে অপর দিকে নারী বা পুরুষ চোর প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হাত কেটে ফেলা। তাহলে আমেরিকায় চুরি, ডাকাতির বর্তমান প্রবণতা বাড়বে, না একই রকম থাকবে, নাকি একেবারে কমে যাবে? সঙ্গত ভাবেই তা কমে যাবে।তদুপরি এই ধরনের কঠিন আইন থাকলে অনেক স্বভাবের চোরও নিজেকে এই ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে। অর্থাৎ চুরি ডাকাতি প্রায় বিলুপ্ত।
একথা মানে হতে পারে যে, পৃথিবীব্যাপী চুরি ডাকাতির বর্তমান যে হার তাতে হাত কাটা আইন চালু হলে লক্ষ লক্ষ লোক এমন দেখা যাবে যাদের হাত কাটা। বিষয়টা হলো যে মুহুর্তে এই আইন ঘোষনা করা হবে তার পরের মুহুর্ত থেকেই এ প্রবণতা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কমে আসতে থাকবে। পেশাদারী চোরও এ পথে পা ফেলার আগে একবার ভেবে নেবে ধরা পড়লে তার পরিনতি কি হবে। শাস্তির ভয়াবহতাই চোরের ইচ্ছাকে দমন করার জন্য যথেষ্ট। তখন নিতান্ত দুরাত্মা ও দুর্ভাগা ছাড়া এ কাজ আর কেউ করবে না সামান্য কয়েকটি লোকের হয়তো হাত কাটা যাবে কিন্তু কোটি কোটি মানুষ লাভ করবে নিরাপত্তা, শান্তি এবং সর্বস্ব হারাবার ভয় থেকে মুক্তি।
ইসলামী বিধান এই রকম বাস্তবধর্মী এবং প্রত্যক্ষভাবে ফলদায়ক-
গ. যেমন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন। সাথে সাথে কার্যকর করতে বলেছে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উভয়ের কঠোরভাবে পালনীয় হিজাব বা পর্দা এবং সাব্যস্ত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড-
১. ধর্ষণ ও উৎপীড়নের শেকড় শুদ্ধ নির্মূল করার পরামর্শ দিয়েছে-
বড় বড় সকল ধর্ম নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন জঘন্য অপরাধবলে ঘোষণা করে। ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে কি পার্থক্য ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের? পার্থক্যের বিষয়টা হলে ইসলাম শুধুমাত্র নারী মর্যাদার ওয়াজই করেনা বা ধর্ষণ ও উৎপীড়ণকে ঘৃনার সাথে জঘন্য অপরাধ হিসেবে পরিত্যাগ করতেই বলে না। সাথে সাথে সুস্পস্ট নির্দেশনাও দেয় কিভাবে সমাজ থেকে এই অপরাধ সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
২.পুরুষের পর্দা-
হিজাব বা পর্দা ইসলামের একটি বিধান। জ্যোতির্ময় কুরআন প্রথম উল্লেখ করেছে পুরুষের পর্দা। তারপরে তা নারীর জন্য-
“(হে রাসূল!) মোমেন পুরুষদের বলোঃ তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে। এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাজত তরে। এটা তাদের আরো পবিত্র হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। (তাদের চরিত্র নির্মাণের জন্য) যা কিছুই তারা করে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহ সে সব কিছু সম্পর্কেই খবর রাখবেন। ” (সূরা নূরঃ ৩০)
যে মুহুর্তে একটি পুরুষ একজন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলো যদি কোনো ধরনের অশ্লিল চিন্তা মাথায় এসে যায় এই ভয়ে সাথে সাথে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেবে।
৩. নারীর পর্দা-
কুরআন নারীর পর্দা সম্পর্কে বলছেঃ-
“আর (হে নবী) মোমেন স্ত্রীলোকদের বলুন! তারা যেন নিজেদের চোখ অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ করে। আর যেন প্রদর্শনী না করে তাদের রুপ-সৌন্দর্য ও অলংকারের। তবে এ সবের মধ্যে যা অনিবার্যভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তারা যেন ঝুলিয়ে দেয় তাদের ওড়না তাদের বুকের ওপর। আর তারা প্রকাশ করবে না তাদের রুপ-সৌন্দর্য তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা অথবা তাদের স্বামীদের পিতা (শ্বশুর) অথবা তাদের পুত্র। ”(সূরা নূরঃ ৩১)
নারীর জন্য হিজাবের পরিধি তার সম্পূর্ণ দেহ আর্বত থাকতে হবে ঢিলেঢালা কাপড়ে। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত এবং মুখ মন্ডল খোলা থাকতে পারে যদি তারা চায়, তা না হলে তাও ঢেকে নিতে পারে। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ মুখমন্ডল ঢাকারও পরামর্শ দেন।
৪. হিজাব উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে-
নারীকে কেন আল্লাহ হিজাব ধারণ করতে বরেছেন কুরআনে তা বলা হয়েছে-
”হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ এবং ঈমান গ্রহণকারী নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন ঝুলিয়ে দেয়া তাদের নিজেদের ওপর তাদের বড় চাদর জাতীয় কিছু (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির জন্য ন্যুনতম (পোষাক) তাহলে তারা আর উৎপীড়িত হবে না। আর আল্লাহ তো আছেনই ক্ষমা দানকারী দয়াময়।” (সূরা আহযাবঃ ৫৯)
কুরআন বলে, নারীকে এই কারণে হিজাব পড়তে বলা হয়েছে যেন তারা রুচিশীলা মহিলা হিসাবে পরিচিত হয়। এটা তাদেরকে উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করবে।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ রেকর্ড -
আমেরিকায় ১৯৯০ সালে এফ, বি, আই এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১,০২,৫৫৫ টি ধর্ষনের ঘটনা ঘঠেছে। মন্তব্যে বলা হয়েছে আনুমানিক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ঘটনার অভিযোগ করা হয়। তাহলে সত্যিকারের পরিমাণ বের করতে হলে ৬.২৫ দিয়ে গুন করতে হবে দাঁড়ালো ৬,৪০,৯৬৮ এ সংখ্যাকে ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করলে প্রতিদিন ১৭৫৬ টি ধর্ষণের ঘটনা আমেরিকায় ঘটছে।
আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জ্যাস্টিস এর ন্যাশানাল ক্রাইম ভিকটিমাইজেশন সারভে ব্যুরো অব জাস্টিস এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে ৩,০৭,০০০ ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে সংঘটিত ঘটনার সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাহলে ৩,০৭,০০০ * ৩,২২৬ =৯,৯০,৩২২ টি ধর্ষনের ঘটনা ১৯৯৬ সালে ঘটেছে। প্রতিদিন ২৭১৩ অর্থাৎ প্রতি ৩২ সেকেন্ড পৃথিবীর সভ্যতম দেশে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ এর এই পার্থক্য লক্ষ্য করার মতো। মনে হয় আমেরিকার ধর্ষকরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
এফ , বি, আই এর রিপের্টে বলা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ ঘটনার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সংঘটিত ঘটনার মাত্র ১.৬% ভাগ। এদিকে অভিযুক্তদের ৫০ শতাংশ বিচারের আগেই বেরিয়ে যায়। তার মানে ০.৮% ভাগ ধর্ষক বিচারের সম্মুখীন হয়। অন্য কথায় কোনো ধর্ষক ১২৫ জন নারীকে ধর্ষণ করলে এর মধ্যে তার ধরা পড়া শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার। অনেক ধর্ষণকারী পুরুষ এটাকে একটা নিশ্চিন্ত বাজী ও জুয়ার মতো ধরে নিতে পারে। কেননা ১২৫ বারে ধরা পড়ে শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার।
রিপোর্টে আরো বলা হয় ০.৮ শতাংশের যারা বিচারের সম্মুখীন হয় তাদরে ৫০% শতাংশেই এক বছরের কম, কারা ভোগ করে। যদিও আমেরিকার আইনে তার বিধান আছে ৭ বছরের। ধর্ষনের দায়ে প্রতিবার ধরা পড়লে বিচারকরা তাদের প্রতি কোমল দন্ডের রায় দেন। ভেবে দেখার মতো বিষয় বটে! অতএব হিসেব অনুযায়ী একজন ধর্ষক ১২৫ বার ধর্ষণ করলে, ধরা পড়র সম্ভাবনা মাত্র একবার। আর ধরা পড়লে শাস্তির সম্ভাবনা মাত্র কয়েক মাস।
ঘ. মানবীয় সমস্যায় ইসলামের সমাধান বাস্তব মুখী-
ইসলাম মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্তযাপন পদ্ধতি। কেননা এর শিক্ষা অকার্যকর তত্ত্বাগত বাগাড়ম্বর নয় বরং মানুষের যাবতীয় সমস্যার নগদ ও বাস্তব সমাধান। স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও সমাজিক সমস্যা, উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামে প্রত্যক্ষ ফলাফর অর্জন করে। ইসলাম একারণেও শ্রেষ্ঠতম জীবন পদ্ধতি যে, এটা বাস্তব সম্মত বিশ্বজনীন ধর্ম। কোনো জাতি অথবা জাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
✔ জবাব:-
ক. প্রচার মাধ্যম -
১. ইসলাম শ্রেষ্ঠতম ধর্ম এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু প্রচার মাধ্যমগুলো সব পশ্চিমাদের হাতে- যারা ইসলামকে ভয় পায়। বিরামহীন ভাবে ওদের প্রচার যন্ত্রগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার করে যাচ্ছে এবং ছেপে যাচ্ছে। হয় তারা ভুল তথ্য দিচ্ছে অথবা ভুল তত্ত্ব নিচ্ছে অথবা ইসলামের আংশিক সত্যকে বিরাট করে তুলে ধরছে।
২. পৃথিবীর কোথাও কোনো বোমা ফাটলে কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এর দায় মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। এটাই হবে সংবাদের শিরোনাম। পরবর্তীতে যদি খুঁজে পাওয়া যায় যে, কোনো অমুসলিম এর জন্য দায়ি-তখন সে সংবাদটা আর উল্লেখ করার মতো খবর থাকবে না। এবং তা উল্লেখ করা হয় ছোট আকারে পেছনের পাতায়।
৩. পঞ্চাশ বছর বয়সী কোনো মুসলিম যদি ১৫ বছরের এক যুবতীকে তার সম্মতিক্রমেও বিবাহ করে তা চলে আসবে পত্রিকার প্রথম পাতায়। অথচ পঞ্চাশ বছরের কোনো অমুসলিম যদি ছয় বছরের কোনো ধর্ষণও করে তাহলে সেটা হয় যাবে ভেতরের পাতার অনুল্লেখযোগ্য কোনো খবরের মতো। আমেরিকায় প্রতিদিন ২৭১৩ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, কিন্তু প্রচার মাধ্যমের জন্য এটা আদৌ কোনো খবর নয়। যে কোনো সময় যে কোনো নারী কোনো দুর্বৃত্তের দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে- এটা বোধ হয় আমেরিকান নারীদের জন্য একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
খ. সব ধর্মেই পাপী আছে-
এটা আমাদের ভালো করেই জানা আছে যে, কিছু মুসলিম অসৎ, চরিত্রহীন, প্রতারক ইত্যাদি। কিন্তু প্রচার মাধ্যম তা এমনভাবে প্রচার করে যে, এ ধরনের কাজ শুধু মুসলিমরাই করে। সমাজের কলঙ্ক সব সমাজেই আছে। অন্য ধর্মের অপরাধীর কথা মিডিয়া এতো ফলাও করে প্রচার করেনা যেটা করে “মুসলিম” পাপীদের বেলায়।
গ. সামগ্রীকভাবে মুসলিমরাই শ্রেষ্ঠ-
মুসলিম সমাজে হাতে গোনা কলঙ্কিত লোকজন থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর বুকে মুসলিমরাই শ্রেষ্ঠ সমাজের অধিকারী। সামগ্রীকভাবে আমরাই “নেশামুক্ত” বৃহত্তর সমাজ। যৌথভাবে আমরা এমন একটি সমাজ যারা পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি দান-দক্ষীনা করে থাকি। সামগ্রীকভাবে পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজ নেই যেটা মুসলিমদের সাথে একটু তুলনা করে দেখাতে পারে, যেখানে মানবীয় মর্যদাবোধ, সংযম, সহনশীলতা, মূল্যবোদ এবং নীতি-নৈতিকতা ও স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদির প্রশ্ন ওঠে।
ঘ . একটি গাড়িকে তার ড্রাইভার দিয়ে বিচার করবেন না-
‘মার্সিডিস্’ কোম্পানীর নতুন বেরিয়ে আসা লেটেস্ট মডেলের একটি গাড়ী যদি আপনি দেখে নিতে চান এবং চালকের আসনে এমন একজন লোককে বসিয়ে দিলেন যে ভালো ড্রাইভিং জানেনা। সে যদি ওটাকে নিয়ে দুম করে কোথাও লাগিয়ে দেয় তাহলে আপনি কাকে দোষ দেবেন- গাড়ীটিকে না ড্রাইভারকে!
গাড়িটি সম্পর্কে জানার জন্য আপনার উচিৎ ছিল ওটার ক্যাটালগ ও ম্যানুয়েল নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সামনে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জেনে নেয়া। চলার ধরন, গতি, জ্বালানী খরচ, দুর্ঘটনা কবলিত হলে তা থেকে সুরক্ষার জন্য কি কি ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ীর আসল মূল্যমান যাচাই করা যায় না। টাকার জোরে অনেক কোটিপতির ছেলে বিশ্বসেরা কোম্পানীর গাড়ি কিনে দু’দিনেই বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেয়।
একইভাবে জন্মগতভাবে পাওয়া ইসলাম নিয়ে আজকের মুসলিমরা যা করছে তাতে তার বাহ্যিক অবয়ব দুমড়ে মুচড়ে এমন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে যা দেখে নতুন কোনো ক্রেতা দু’পা এগোলে দশ পা পিছিয়ে যায়-একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে যিনি জীবনের পথটা সুন্দরভাবে পাড়ি দিয়ে সঠিক গন্তব্যে নির্বিঘ্ন পৌঁছাপতে চান তাকে তো সর্বোত্তম গাড়িটি খুঁজে বের করতেই হবে এবং গ্রহণ করতে হবে গাড়ি চেনার সঠিক পদ্ধতি, অর্থাৎ তার ম্যানুয়াল ও ক্যাটালগ ধরে বিশেষজ্ঞের কাছে থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
খোদ সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালা রচিত মানব-জীবন ম্যানুয়েল, ‘আল-কুরআন’ এবং তাঁরই নির্বাচিত শ্রেষ্টতম নমুনা-মানুষ মুহাম্মদ (صلى الله عليه و سلم) নির্মিত ক্যাটালগ বিশুদ্ধ হাদীস সমূহ ইসলামকে চেনা ও জানার একামত্র মাধ্যম।
ঙ. ইসলামকে বিচার করতে হবে তার বাস্ত- বায়নকারী মুহাম্মাদ (صلى الله عليه و سلم)- এর মাধ্যমে। বিশ্ববরণ্য মুসলিম ঐতিহাসিকগণের পাশাপাশি কিছু অমুসলিম ঐতিহাসিক রয়েছেন যারা কোনো প্রভাবে প্রভাবিত না হযে নিতান্ত সততার সাথে মানবেতিহাসের সেবা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মাইকেল এইচ হার্ট তার রচিত ‘দি হানড্রেড’ গ্রন্থে মানবেতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষ হিসেবে এক নম্বর দিয়ে প্রথমেই যার নামটি লিখেছেন, তিনি মুহাম্মদ (صلى الله عليه و سلم) । থমাস কার্লাইল এবং লা-মর্টিন এর মতো ব্যক্তিত্বগণও তাদের রচনায় ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (صلى الله عليه و سلم)-এর প্রতি প্রভুত সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
৪ . প্রশ্নঃ মুসলিমের যেখানে একই কুরআনের অনুসারী তাহলে তাদের মধ্যে এত বিভক্তি এবং চিন্তাধারার ভিন্নতা কেন?
৪ . প্রশ্নঃ মুসলিমের যেখানে একই কুরআনের অনুসারী তাহলে তাদের মধ্যে এত বিভক্তি এবং চিন্তাধারার ভিন্নতা কেন?
✔ জবাব:-
ক. মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিৎ-
এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আজকের মুসলিম নিজেদের মধ্যেই অসংখ্য ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। আর তার চাইতেও দুঃখজনক হলো এই বিভক্তি খোদ ইসলামের দ্বারা আদৌ স্বীকৃত নয়। ইসলাম বিশ্বাস করে তার অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য এবং একতার লালন করতে। জ্যোতির্ময়ী কুরআন বলছেঃ-
”তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ ” (সূরা আল-ইমরান-৪: ১০৩)
এ আয়াতে যে রজ্জুর কাথা বলা হয়েছে সে রজ্জু কি বা কোন রজ্জু? জ্যোতীর্ময় কুরআন, মহাবিজ্ঞান আল কুরআনই সেই আল্লাহর রজ্জু যা সকল মুসলিমের সম্মিলিতভাবে ধরে রাখা উচিত। ঐক্যের ব্যাপারে দ্বিগুন গুরুত্ব দেয় হয়েছে। অর্থাৎ সবাই মিলে শক্ত করে ধরো বলার সাথে সাথেই বলা হয়েছে বিভক্ত হয়ো না। কুরআন আরো বলছেঃ-
”আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের। ” (সূরা আল-ইমরান-৪: ৫৯)
সকল মুসলিমের কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদূসসমূহ অনুসরণ করা কর্তব্য এবং নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হওয়া উচিত নয়।
খ. ফের্কাবাজী ও বিভক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ-
কুরআন-মাজিদ বলছেঃ -
“যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তাদের সাথে তোমার এতটুকু সম্পর্ক নেই। তাদের এসব ব্যাপার আল্লাহ কাছে ন্যাস্ত। অবশেষে তাদেরকে তিনি বলে দেবেন সেই সব সম্পর্কে যেসব কাজ তারা করছিল। ” (সূরা আনআমঃ ১৫৯)
এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু কেউ যখন কোনো মুসলিমকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? সাধারণ উত্তর হলো, আমি একজন সুন্নি অধবা আমি শিয়া। অনেকেই নিজেদেরকে হানাফী অথবা শা’ফী অথবা মালেকী অথবা হাম্বলী ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হতে গর্ববোধ করেন। কেউ আবার দেওবন্দী। কেউ ব্রেলোভী।
গ. আমাদের রাসূল ছিলেন একজন ‘মুসলিম’-
এ ধরনের একজন মুসলিমকে কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের প্রিয় নবী (صلى الله عليه و سلم) কি ছিলেন? তিনি কি একজন হানাফী অথবা শাফী অথাবা হাম্বলী ছিলেন? না! তিনি ছিলেন একজন মুসলিম। তাঁর পূর্বে আগত আল্লাহর সকল নবী ও রাসূলগণের মতো।
যেমন সূরা নিসা ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-ঈসা (আ) ছিলেন একজন মুসলিম। ৬৭ আয়াতে বলা হয়েছে-
”ইব্রাহীম না ইহুদী ছিল না খ্রীষ্টান, সে ছিল একজন মুসলিম।” সূরা নিসা ৫২ : ৬৭
ঘ. কুরআন বলছে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দাও-
কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তার বলা উচিত আমি একজন মুসলিম-না হানাফী না শাফী-
”আর কে হতে পারে বক্তব্যে তার চাইতে উত্তম? যে (মানুষকে) আল্লাহর পথে আহ্বান করে আর যাবতীয় জীবন কর্ম যেভাবে আল্লাহ করতে বলেছেন সেভাবে করে এবং বলে আমি তো আল্লাহতে সমর্পিতদের একজন। (মুসলিম)” (সুরা ফুসিলাত-৪১: ৩৩)
কুরআন বলে আমি তাদেরই একজন যারা আল্লাহতে সমর্পিত। অন্য কথায় বলো, আমি একজন মুসলিম।
২. রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই সব চিঠিতে তিনি সুরা আলে ইমরানের এই আয়াত উল্লেখ করেছিলেন-
“তাহলে বলে দিন ওদেরকে তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা আত্মসর্ম্পনকারী ‘মুসলিম’।” (সূরা আল-ইমরান-৩: ৬৪)
ঙ. ইসলামের মহান ইমামগণের প্রতি শ্রদ্দা ও সম্মান-
ইসলামের ইতিহাসে মহান ইমাম ও আলেমগনের প্রতি আমাদের সম্মানবোধ আন্তরিক হতে হবে। তাঁদের জীবন নিংড়ানো জ্ঞান সাধনা মুসলিম জাতিকে জ্ঞান সম্পদে সম্পদশালী করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে তাঁরা পুরুষকৃত হবেন। সাধারণের মধ্যে কিউ যদি বিশেষ কোনো ইমামের রীতি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, সেটা অবশ্যই দোষের কিছু নয়। কিন্তু পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের কারো নাম জড়িয়ে পরিচয় দেয়া এক ধরনের সংকীর্ণতার প্রকাশ। যেমনটা করতে তাঁরা কেউ বলে যাননি। নবী রাসূলগনের মতো তাঁরাও ছিলেন শুধুমাত্র আল্লাহতে সমর্পিত মুসলিম। কাজেই তাঁদের কারো অনুসারী হলেই পরিচয় বদলে যায় না। মুসলিমদের পরিচয় একটাই তারা মুসলিম।
অনেকেই হয়তো তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংকীর্ণ মানসিকতাকে চাপা দেবার জন্য সুনানে আবু দাউদে বর্নিত ৪৫৭৯ নং হাদীসখানি নিয়ে তর্কে লাফিয়ে পড়বেন। যা রাসূল (صلى الله عليه و سلم) বলেছেন, ”আমার উম্মত ৭৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে।”
কিন্তু এ হাদীসখানি রাসূল (صلى الله عليه و سلم) তাঁর উম্মতের অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যেসব বিকৃতি দেখা দেবে তারই অন্যতম একটি আগাম বার্তা বহন করছে। তিনি তো একথা বলেননি। যে মুসলিমরা এভাবে ফের্কায় ফের্কায় ভাগ হয়ে যেতে হবে।কুরআন যেখানে আমাদেরকে আদেশ করছে কোনো বিভক্তির সৃষ্টি করা যাবে না। অতএব যারা কুরআন ও শুদ্ধ হাদিস সমূহের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতার না কারণ হয় না কাউকে উৎসাহিত করে তারাই সঠিক পথে রয়েছেন।তিরমিযির ১৭১ নং হাদীসে বলা হয়েছে রাসূল (صلى الله عليه و سلم) বলেছেনঃ-
”আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর মধ্যে শুধু একটি ছাড়া বাদ বাকি সব জাহান্নামী হবে। সাহবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সেই শুদ্ধ দল কোনটি হবে? রাসূল (صلى الله عليه و سلم) বললেন, “যাদের কাছে আমি এবং আমার সঙ্গী সাথীরা অনুসরণীয় হবো।”
”আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের”
কুরআনের বহু জায়গায় এই একটি কথা মুসলিমদের মনের মধ্যে স্থায়ী ভাবে বসিয়ে দেবার জন্য নানান ভাবে বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই একজন মুসলিমের অনুস্মরনীয় আদর্শ হচ্ছে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। তারপর এ দুয়ের নির্দেশনা সমূহকে অনুশীলনীর পদ্ধতি হিসেবে সে যদি কোনো বিশেষ আলেমকে অনুসরণ করতে চায় তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তা যদি আবার কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে খোদ কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তা যত বড় বিশেষজ্ঞ আলেমই হোকনা কেন দুই কড়ি মূল্য রাখেন না।
প্রতিটি মুসলিম যদি তার সামর্থ অনুযায়ী কুরআন বুঝে পড়ার অনুশীলনী করে এবং সেখান থেকে পাওয়া মূলনীতিসমূহ খোদ রাসূল (صلى الله عليه و سلم) এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন এই বিভক্তি দূর হয়ে যাবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী এক ‘উম্মাহ’ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে সমক্ষ হবো।
৫ . প্রশ্নঃ কিভাবে প্রমাণ করবেন, পরকালের অস্তিত্ব অর্থাৎ ‘মরনের পরে আবার একটি স্থায়ী জীবন আছে’?
৫ . প্রশ্নঃ কিভাবে প্রমাণ করবেন, পরকালের অস্তিত্ব অর্থাৎ ‘মরনের পরে আবার একটি স্থায়ী জীবন আছে’?
✔ জবাব:-
ক. পরকালে আস্থা অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়-
অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যান, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসম্মত প্রকৃতির কোনো মানুষ কিভাবে পরকাল বা মৃত্যু পরে আর একটি জীবনের ওপরে আস্থা রাখতে পারে? তারা ধারণা করেন যে, যারা পরকালে আস্থাশীল তাদের আস্থা একটি অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
খ. ‘পরকাল’ একটি যৌক্তিক বিশ্বাস-
বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি নিয়ে জ্যোতির্ময় কুরআন অন্তত হাজারের ওপরে আয়াত ধারণ করে আছে (এ প্রসঙ্গে বই কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান সুসঙ্গত অথবা অসঙ্গত) বিগত কয়েক শতাব্দীতে কুরআন বর্ণিত বিজ্ঞানের অসংখ্য বিষয় সত্যায়িত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এখনও সে পর্যায়ে গিয়ে পৌছঁয়নি যাতে কুরআন বর্নিত প্রতিটি বিষয়কে সত্যায়ীত করতে পারে।
যদি কুরআন বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহের ৮০% ইতিমধ্যে শতকরা একশ ভাগ সত্যতা নিয়ে প্রমাণিত হয়ে থাকে। বাকি থাকলো মাত্র ২০% ভাগ, যে সব সম্পর্কে বিজ্ঞানের কাছে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। যেখানে বিজ্ঞানই এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে পৌছায়নি যাতে কুরআনের এসব বর্ণনাকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করতে পারে। কাজেই আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে আমরা নিশ্চিত করে ঐ ২০% ভাগ অনুদঘাটিত এমন কি একটি আয়াতও ভুল একথা বলতে পারিনা। তাই কুরআনের ৮০% ভাগ যেখানে চূড়ান্তভাবে সত্য বলে প্রমাণিত এবং বাকি ২০% ভাগ শুধু প্রমাণের অপেক্ষায়। সেখানে যৌক্তিতা এটাই বলবে যে, ঐ ২০% ভাগও সময়ে সত্য বলেই প্রমাণিত হবে। কুরআনে বর্নিত পরকালীন স্থায়ী জীবনের বিষয়টি ঐ ২০% ভাগের অন্তর্ভূক্ত, অনুদ্ঘাটিত একটি সত্য। যৌক্তিতা এখানে তার সত্যতার দিকেই মত দেবে।
গ. ‘পরকাল দর্শণ’ ছাড়া শাস্তি ও মানবিক মূল্যবোধসমূহ সম্পূর্ণ অর্থহীন-
ডাকাতি করা ভাল না মন্দ কাজ? ভারসাম্যপূর্ণ সাধারন একজন মানুষও বলবেন, এটা জঘন্য কাজ পরকালের ভালো-মন্দ যে বিশ্বাস করে না সে কেমন করে একজন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী অপরাধীকে বোঝাবে যে, ডাকাতি একটি জঘন্য অপরাধ? ধরা যাক, পৃথিবীতে আমি একজন শক্তিশালী অপরাধী , একই সাথে আমি একজন বুদ্ধিমান ও যুক্তিবাদী মানুষ। আমি বলব ডাকাতি একটি ভালো কাজ কেননা এটা আমাকে বিলাস বহুল জীবন যাপন করার সহায়তা করছে- তাই ডাকাতি আমার জন্য ভালো। যদি কেউ আমার সামনে উপযুক্ত একটি যুক্তিও দাঁড় করিয়ে দেখাতে পারে যে, ডাকাতি আমার জন্য মন্দ কেন? তাহলে সাথে সাথে একাজ আমি ছেড়ে দেব। মানুষ সাধারণত যে সব যুক্তি সামনে রাখে।
১. কেউ হয়তো বলবে যার সর্বস্ব ডাকাতি হয়ে গেছে সে সে সমস্যায় পড়বে-
আমি অবশ্যই তারা সাথে একমত যে, যার ওপর ডাকাতি চালানো হয়েছে তার জন্য এটা মন্দ। কিন্তু এটা আমার জন্য তো ভালো। আমি যদি হাজার ডলার ডাকাতি করে থাকি তাহলে অত্যন্ত আনন্দের সাথে কোনো পাঁচতারা হোটেলে দু’চারবেলা খাবার খেতে পারবো।
২. আপনার ওপরেও কেউ ডাকাতি চালাতে পারে-
কেউ হয়তো বলবেন একদিন আমার সর্বস্বও ডাকাতি হয়ে যেতে পারে। আমার কাছে থেকে কেউ কিছু কেড়ে নিতে পারবে না। কারন আমি নিজেই অনেক শক্তিশলী।অন্তত শ’খানেক বডিগার্ড আছে আমার । ডাকাতি আমি করি আমার ঘরে কে ডাকাতি করবে?
একজন সাধারণ মানুষের জন্য ডাকাতি একটা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হতে পারে কিন্তু আমার মতো প্রভাবশালী মানুষের জন্য নয়।
৩. পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে-
কেউ হয়তো বলবেন পুলিশ তোমাকে একদিন ধরে ফেলবে। পুলিশ আমাকে ধরবে না। কারণ পুলিশকে আমি রীতিমতো টাকা দেই। এমনকি শক্তিশালী এক মন্ত্রীকেও আমি বড় বড় চাঁদা দেই। হাঁ এ ব্যাপারে আমি একমত যে, একজন সাধারন মানুষ ডাকাতি করলে সে ধরা পড়ে যেতে পারে এবং তার জন্য সে অবস্থা অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তো এধরণের কোনো ভয়ই নেই। ধরা পড়লেও সাথে সাথে আমি মুক্ত হয়ে যাবে এ গ্যারান্টি আমার আছে। যুত্তিপূর্ন একটা কারণ কেউ আমাকে দেখাক-কেন এটা আমার জন্য মন্দ এবং কেনই বা এ পেশা আমি ছেড়ে দেব।
৪. কেউ হয়তো বলবেন এটা ফাঁকা পয়সা, কষ্টার্জিত নয়-
আমি তার সাথে সম্পুর্ন একমত- এটা খুব সহজে উপার্জিত টাকা। মূলত এটাই তো আসল কারণ যে জন্য আমে ডাকাতি করি। যদি কোনো মানুষের সামনে উপার্জনের দু’টো পথ খোলা থাকে-একটা সহজ আর একটা কঠিন-বুদ্ধিমান যে কোনো মানুষ সহজ পথটাকেই তো বেছে নেবে।
৫. এটা মানবতা বিরোধী -
কেউ হয়তো বলবেন এটা মানবতা বিরোধী মানুষের জন্য মানুষের ভাবা উচিৎ। আমি তাদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন করব। মানবতার এ বিধান কে লিখেছে? কেন আমি তা মানতে যাব? এ আইন হতে পারে আবেগ প্রবন অনুভুতিশীল মানুষের জন্য ভালো। কিন্তু আমি সঙ্গত যুক্তি ছাড়া কিছুই মানতে রাজি না- মানুষের ভাবনা আমি ভাবতে যাবো কোন দুঃখে?
৬. এটা চরম স্বার্থপরতা-
কেউ হয়তো বলবেন ডাকাতি একটি চরম স্বার্থপরতা। হাঁ একথা মানি, ডাকাতি একটা স্বার্থপর কাজ । তাহলে আমি কি এমার স্বার্থ দেখব না? এটাতো আমাকে আমার জীবন ভোগের উপায় করে দিয়েছে!
১.যুক্তি দিয়ে ডাকাতিকে মন্দ প্রমাণ করা যাবে না-
অতঃপর ডাকাতিকে মন্দ কাজ হিসেবে প্রমাণ করার সকল যুক্তি উপস্থাপন ব্যর্থ ও অকার্যকর প্রমানিত হলো। এসব যুক্তির কথা একজন সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে কিন্তু আমার মতো একজন সবল প্রভাবশালী অপরাধীকে নয়। কোনো বিতর্কই শুধুমাত্র যুত্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। কাজেই পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য অপরাধীর জয়জয়কারে অবাক হবারও কিছু নেই।
একইভাবে প্রতারণা, নারীধর্ষণ ইত্যাদি আমার মতো ব্যক্তির জন্য ভালো হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং যৌক্তিতার দিক দিয়ে এমন কোনো কারণ নেই যা আমাকে বোঝাতে পারে যে, এসব কাজ মন্দ।
২. একজন শক্তিধর প্রভাবশালী অপারাধীকে একজন মুসলিম বুঝিয়ে নমনীয় করতে পারে-
এবার একটু অন্যভাবে দেখা যাক। ধরুন আপনি এ পৃথিবীর একজন শক্তিশালী প্রভাবশালী অপরাধী। পুলিশ আপনার করতলে। এমনকি দু’চারজন মন্ত্রী-মিনিষ্টারও হাতের মুঠোয়। বহু চেলা-চামুন্ডা রয়েছে আপনাকে পাহারা দেবার জন্য আর আমি একজন মুসলিম যে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবো- ডাকাতি ধর্ষণ, প্রতারণা ইত্যাদি জঘন্য কাজ।
এখন আমি যদি একই যুক্তিতর্ক তার সামনে রাখি একইভাবে সে উত্তর দেবে যেমনটা আগে সে দিয়েছে। একথা সত্যি যে, অপরাধী অত্যন্ত যুক্তিবাদী এবং তার সকল যুক্তি সঠিক। কিন্তু তা কেবল কতখানি সত্য ও সঠিক যখন সে একজন শক্তি ও প্রভাবশালী অপরাধী।
৩. প্রতিটি মানুষ ন্যায় ও সুবিচারের আকাঙ্ক্ষি-
এমনকি এ সুবিচার যদি সে অপরের জন্য না চায়-নিজের জন্য তা অবশ্যই আশা করে। শক্তি ও প্রভাবের কারণে অনেকে নেশা করে আর অন্যদের দুঃখ কষ্টের কারণ হয়। এই একই মানুষ ফোঁস করে উঠবে যদি তাদের প্রতি কোনো অবিচার হয়। এধরনের মানুষের অণ্যের দুঃখ-কষ্টের প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকার কারণে তারা ক্ষমতা ও প্রভাবের পূজা করে। এই ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য তারা যে শুধু অন্যের ওপরে অবিচার করতে পারছে তা-ই নয় বরং অন্যে যাতে তাদের প্রতি এই একই আচারণ না করতে পারে তার প্রতিরোধও করছে।
৪. আল্লাহ মহাশক্তিমান এবং ন্যায়পরায়ণ-
একজন মুসলিম হিসেবে আমি অপরাধিকে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে সম্মত করাব যে, এই আল্লাহ তোমার চাইতে অনেক অনেক বেশি শক্তির অধিকারী এবং একই সাথে তিনি ন্যায়পরায়ণও। জ্যেতির্ময় কুরআণ বলছেঃ
”নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিচার করেন না (কারো প্রতি) বিন্দু পরিমাণ।” (নিসা ৪ : ৪০)
৫. আল্লাহ আমাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না? -
অপরাধী, যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানমনস্ক হবার কারণে কুরআনের বিজ্ঞান ও উত্তমতম ও যুক্তিসঙ্গত দলিল প্রমাণ উপস্থাপনের পরে আল্লাহর অস্তিত্ত্বের ব্যাপারে তার কোন আপত্তি থাকল না। এখন সে হয়তো প্রমাণ করে বসবে যে, আল্লাহ শক্তিমান এবং সুবিচারক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না।
৬. যারা অবিচার করে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার-
প্রতিটি মানুষ, যে কোনো অবিচারের শিকার হয়েছে- তা আর্থিক দিক থেকেই হোক অধবা সামাজিক দিক থেকে- ভূক্তভোগী প্রতিটি মানুষ চাইবে জালিমের শাস্তি হোক। প্রতিটি সাধারণ মানুষের আন্তরিক কামনা, ডাকাত-ধর্ষককে উচিত শিক্ষা দেয়া হোক। যদিও অসংখ্য অপরাধি ধরাও পড়ছে, শাস্তিও পাচ্ছে কিন্তু তার চাইতে আরো অনেক বেশি পরিমাণ মুক্ত থেকে সমাজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজের ফূর্তিময় বিলাসপূর্ন জীবন যাপন করছে। যদি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির ওপর অবিচার আপতিত হয় এমন একজনের দ্বারা যে তার চাইতেও বেশি শক্তিধর। তখন এই অপরাধিও চাইবে যে, তার প্রতি অবিচারকারীর চরম শাস্তি হোক।
৭. এই জীবন পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য পরীক্ষার অবকাশ মাত্র-
পরকালের অনন্ত জীবনে কৃতকার্যতার সাথে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য জীবনটা একটা পরীক্ষা। কুরআন কারীম বলছেঃ-
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যেন তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাজে-কর্মে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম। তিনি তো মহাশক্তিমান ক্ষমা দানকারী। ” (সূরা আল-মুলকঃ ২)
৮. চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ বিচার দিনে -
”প্রতিটি প্রানকেই মৃত্যুর যাতনা ভোগ করতে হবে এবং অবশ্যই পুরোপুরি ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে তাদের পাওনা কেয়ামতের দিন। তখন যে রক্ষা পেলো আগুন থেকে এবং প্রবেশ করতে দেয়া হলো জান্নাতে নিশ্চিতভাবে সে-ই লাভ করলো চূড়ান্ত সফলতা। আর কিছুই নয় এই পৃথিবীর জীবন, শুধু (ক্ষনিকের ) মায়া ও মোহময় আয়োজন। ” (সূরা আল ইমরানঃ ১৮৫)
ভালো মন্দের সবকিছু পরিমাপ করে দেখানো হবে শেষ বিচার দিনে। একজন মানুষের মৃত্যুর পরে তাকে পুনরায় জীবিত করা হবে সর্বকালের সকল মানুষের সাথে শেষ বিচার দিনে। এটা খুবই সম্ভব যে, একজন মানুষ তার প্রাপ্য শান্তির কিছু অংশ এই পৃথিবীতে পেলো। আর চূড়ান্ত শাস্তি অথবা পুরস্কার সে পাবে পরকালে।বিধাতা প্রতিপালক একজন ডাকাত বা একজন ধর্ষককে পৃথিবীতেই কোনো শাস্তি নাও দিতে পারেন, কিন্তু শেষ বিচার দিনে তাকে অবশ্যই সব কৃতকার্যের হিসেব দিতে হবে এবং সেই স্থায়ী পরকালে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে যে জীবন সেই জীবনে।
৯. মানুষের আইন হিটলারকে কি শাস্তি দিতে পারে? -
হিটলার তার ভয়ঙ্কর ত্রাসের শাসনামলে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখন পুলিশ যদি তাকে গ্রেফতার করতো তাহলে মানুষের আইন ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাকে কি শাস্তি দিত? সর্বোচ্চ শাস্তি তারা তাকে যা দিতে পারত তাহলো সেই গ্যাস চেম্বারে খোদ হিটলারকে ঢুকিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তাতে তো শুধুমাত্র একজন ইহুদী হত্যার প্রতিশোধ হতো! বাকি যে ৫৯ লক্ষ ৯৯হাজার ৯শ ৯৯জন ইহুদী -তাদের হত্যার প্রতিশোধ কিভাবে হবে?
১০. শুধুমাত্র আল্লাহ পারেন হিটলারকে জাহান্নামে ফেলে ষাট লক্ষ বারের চাইতেও বেশি বার জ্বালাতে-
আল-কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ-
”যারা আমাদের আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে খুব শিঘ্রই আমরা তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়া যখন পুড়ে গলে যাবে তখন তার বদলে আমরা তাদেরকে নতুন চামড়া দিয়ে দিব যেন তারা আযাবের স্বাদ বুঝতে পারে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহা শক্তিমান মহাজ্ঞানী। ” (৪: ৫৬)
পরকালের অনন্ত জীবনে হিটলারকে একমাত্র আল্লাহই পারেন ষাট লক্ষ বার পুড়ে মরার স্বাদ কেমন তা বুঝিয়ে দিতে।
১১. মানবীয় মূল্যবোধ অথবা ভালো ও মন্দের ধারনা-পরকালের নিশ্চিত আস্থা ছাড়া আদৌ কোনো মূল্য রাখে না।-
যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করা সত্য এই যে, পরকালে যার দৃঢ় আস্থা নেই, মানবীয় মূল্যবোধ এবং ভালো ও মন্দ কাজের পরিণতি এমন ব্যাক্তির কাছে প্রমাণ করা সম্পূর্ন অসম্ভব-এখানে যে অবিচার , জুলুম অত্যাচার করেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যদি সে ক্ষমতাবান হয়।
৬ . প্রশ্নঃ ইসলামী আইনে উত্তরাধীকারী সম্পদে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?
৬ . প্রশ্নঃ ইসলামী আইনে উত্তরাধীকারী সম্পদে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?
✔ জবাব:-
ক. কুরআনে উত্তরাধিকার -
যথাযোগ্য প্রাপকের মধ্যে উত্তরাধিকারী সম্পদ বন্টনের সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত নির্দেশনা জ্যোতীর্ময় কুরআনে বিধৃত আছে।
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুরআনে আয়াত সমূহঃ-
✔ সূরা বাকারাঃ ১৮০
✔সূরা বাকারাঃ ২৪০
✔সূরা নিসাঃ ৭-৯
✔সূরা নিসাঃ ১৯
✔সূরা নিসাঃ ৩৩
✔সূরা মায়েদাহঃ ১০৬-১০৮
✔সূরা বাকারাঃ ২৪০
✔সূরা নিসাঃ ৭-৯
✔সূরা নিসাঃ ১৯
✔সূরা নিসাঃ ৩৩
✔সূরা মায়েদাহঃ ১০৬-১০৮
খ. আত্মীয় স্বজনের জন্য উত্তরাধিকারের সুনির্দিষ্ট অংশ
কুরআনের তিনখানি আয়াতে বিস্তারিতভাবে নিকটাত্মীয়দের অংশ বর্ননা করা হয়েছে-
"তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেনঃ পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে। (উত্তরাধিকারী) যদি দুই জনের বেশি নারী হয় তাহলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে মোট সম্পদে অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেক ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। আর সে যদি নিঃসন্তান হয় পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের এক ভাগ। মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগই পাবে। এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে।"
"তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী, তোমাদের জানা নাই এদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্ঠতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরয করে দেয়া হয়েছে (তোমাদের জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং মহামহীম জ্ঞানের আধার। আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তারা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যাক্ত সম্পত্তির চারভাগের এক ভাগ- তাদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা সব আদায়ের পরে। আর (তোমরা মরে গেলে) তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তারা পাবে চার ভাগের একভাগ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তারা পাবে আট ভাগের একভাগ। তা-ও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর।"
”আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক (সম্পদ রেখে মারা যায়) যার না আছে কোনো সন্তান আর না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাদের প্রত্যেক (কোনো পার্থক্য ছাড়া) পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয় তাহলে তারা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে। তা-ও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পরে। কোনো ভাবেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশমালা। আর আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল। ” (সূরা নিসাঃ ১১-১২)
"তারা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন- নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে। যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যার কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন। তাহলে সে (বোন) পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি (এরকম কোনো) বোন মারা যায় তাহলে ভাই পুরো সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। মৃতের উত্তরাধীকারী যদি দুই বোন হয় তাহলে ত্যাক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগের দুই ভাগ তারা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই বোন হয় তাহলে পুরুষের অংশ নারীর অংশের দু’জনার সমান।"আল্লাহ (এই সব জটিল বিষয়গুলো খুলে) স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত। ” (সূরা নিসাঃ ১৭৬)
গ. প্রতিপক্ষ পুরুষের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী সমান অথবা বেশির অধিকারী হয়
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী অধিকারী হয় প্রতিপক্ষ পুরুষের অর্ধেক। যাই হোক এটা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয়। মৃত ব্যক্তি এমন, যার পিতা-মাতও নেই, পুত্র কন্যাও নেই। আছে বৈপিত্রীয় ভাই ও বোন। এদের প্রত্যেকে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে। মৃতের পুত্র কন্যা থাকলে মাত-পিতা উভয়ে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে। ক্ষেত্র বিশেষে নারী উত্তরাধিকার হয় পুরুষে দ্বিগুন। মৃত যদি একজন নারী হয় যার না কোনো সন্তান আছে ভাই বোন, আছে স্বামী এবং মা ও বাবা। এখানে মৃত্যের স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পদ এবং পাবে এক তৃতীয়াংশ বাবা পাবে এক ষষ্টমাংশ। বিশেষ এই ক্ষেত্রটিতে বাবার তুলনায় মা দ্বিগুন পাচ্ছে।
ঘ. নারী সাধারণত পুরুষের অর্ধেক অংশের উত্তরাধিকারী হয়
১. পুত্র যতটুকু উত্তরাধিকারী হয় কন্যা তার অর্ধেক।
২.মৃতের কোনো সন্তান না-থাকলে স্বামী চারের এক অংশ এবং স্ত্রী আটের এক অংশ।
৩.মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী দুইয়ের এক অংশ স্ত্রী চারের এক অংশ।
৪.যদি মৃতের পিতা-মাতা অথবা সন্তান না থাকে তাহলে ভাই যা পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক।
২.মৃতের কোনো সন্তান না-থাকলে স্বামী চারের এক অংশ এবং স্ত্রী আটের এক অংশ।
৩.মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী দুইয়ের এক অংশ স্ত্রী চারের এক অংশ।
৪.যদি মৃতের পিতা-মাতা অথবা সন্তান না থাকে তাহলে ভাই যা পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক।
ঙ. পুরুষ নারীর চাইতে দ্বিগুন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, কারণ সে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা।
ইসলামে নারীর ওপরে কোনো আর্থিক বাধ্যবাধকতা এবং অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব নেই যা পুরুষের কাঁধে ন্যাস্ত আছে। যে কোনো মেয়ের বিয়ের আগে পর্যন্ত থাকা, খাওয়া, কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা তার বাবা অথবা ভাই। বিবাহের পরে এসব দায়িত্ব স্বামীর অথবা পুত্রের। ইসলাম পুরুষের ওপরই তার পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দ্বিগুণ অংশ দেয়া হয়েছে।
উদাহরণ স্বরুপ এক পুত্র ও এক কন্যা এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে এক লোক মারা গেল। এখন উত্তরাধিকার বণ্টনে পুত্র মালিক হলো পূর্ণ এক লক্ষ টাকার আর কন্যা পেলো মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু পরিবারে যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায় এখন পুত্রের ঘাড়ে। সে সব প্রয়োজন পূরণে পুত্রকে প্রায় সব টাকাই ব্যায় করে ফেলতে হচেছ। অথবা ধরা যাক প্রায় আশি হাজার টাকা ব্যায় করে এখন তার কাছে আছে মাত্র বিশ হাজার টাকা। অপরদিকে কন্যা যে পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা তা থেকে কারো জন্য একটি পয়সা খরচ করার কোনো দায়-দায়িত্ব তার ওপরে নেই এবং সে বাধ্যও নয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকাটাই তার কাছে গচ্ছিত আছে। এখন আশি-নব্বই এমন কি পুরোটাই প্রয়োজনে ব্যয় করতে হতে পারে এমন ঝুকির মুখে, এক লক্ষ টাকা আর একটি পয়সারও কোনো দায়-দায়িত্ব নেই এমনভাবে সংরক্ষিত পঞ্চাশ হাজার টাকা-কে কোনটা নিতে চাইবেন?
✔ জবাব:-
ক. একজন পুরুষ সাক্ষির বিকল্প দুজন নারীর সাক্ষী সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সাক্ষী প্রদান প্রসঙ্গে কুরআনের কমপক্ষে তিনখানি আয়াত রয়েছে যেখানে পুরুষ ও নারীর পার্থক্য করা হয়নি।
১. উত্তরাধিকারের ওসীয়ত করার সময় সাক্ষী হিসেবে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে-
“হে ঈমানধারনকারীরা! তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুর দুয়ারে পৌছায় তখন অসীয়ত করতে হলে তোমাদের মধ্য থেকে সাক্ষী রেখো। তোমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যাক্তি অথবা বাইরের, যখন তোমরা এপৃথিবীর বুকে (কোথাও) সফরে আছো, আর এমন সময় মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছে। ” (সূরা মায়েদাঃ ১০৬)
২. তালাকের ক্ষেত্রে দু’জন ন্যায়পরায়ন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে-
”এবং সাক্ষীর জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে নাও। আর প্রতিষ্ঠিত করো এসাক্ষী শুধু আল্লাহর জন্য। ” (সূরা তালাকঃ ২)
২. নারীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগে চারজন সাক্ষী দাড় করাতে হবে-
”আর যারা পবিত্র চরিত্রের নারীদের সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ আনবে। তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারবেনা (অভিযোগ প্রমানের জন্য) তাহলে তাদেরকে আশিবার বেত্রঘাত করো। আর কোনো দিন তাদের কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। আর এসব লোক তারাই যারা ফাসেক। “ (সূরা নূরঃ ৪)
খ. টাকা পয়সা লেন-দেনের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষীর প্রয়োজন
একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষীসর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য একথা সত্য নয় এর সত্যতা শুধু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে । সাক্ষী প্রসঙ্গে কুরআনে পাঁচ খানি আয়াত আছে যেখানে নারী কিংবা পুরুষ আলাদা করে উল্লেখ করা হয়ণি। আর একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষির কথা মাত্র একখানি আয়াতে বলা হয়েছে সূরা বাকারা ২৮২ আয়াত। আয়াত খানির বিশেষ বৈশিষ্ট হলো কুরআনের দীর্ঘতম আয়াত এবং তা ব্যাবসা ও টাকা পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত-
”হে ঈমানদারগন যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে লেন-দেন করো। তাহলে তা লিখে নিও—অতঃপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন পুরুষকে সাক্ষী বানাও। তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা যায়, তাহলে একজন পুরুষ ও যাদের সাক্ষীর ব্যাপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেছে নাও যে একজন ভুল করলে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। ” (সূরা বাকারাঃ ২৮২)
এসব ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তির আদেশ করা হয়েছে এবং সেখানে দুজন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে। আর সে দুজনই পুরুষ হতে হবে। কিন্তু যদি সে রকম আস্থভাজন দুজন পুরুষ মানুষের ব্যবস্থা না করা যায় কেবল তখন, অন্ততঃ একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা থাকতেই হবে। এখানে একটা উদাহন প্রণিধানযোগ্য। ধরা যাক কেউ একজন তার একটি বিশেষ রোগের জন্য অপারেশন করতে মনস্থ করেছে। মোটামুটি নিশ্চিত হবার জন্য সে সমমানের দুজন শল্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিবে। কোনো কারণে যদি দুজন সার্জনের ব্যবস্থা করতে সে ব্যর্থ হয় তখন বিকল্প হিসেবে একজন সার্জন এবং দুজন সাধারণ এম বি বি এস-এর পরামর্শ গ্রহণ করল।
একইভাবে ব্যবসা ও ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখতে বলা হয়েছে। ইসলাম চায় পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য উপার্জনের দায়ভার পুরুষই করুক। অর্ধনৈতিক দায়-দায়িত্ব যেখানে পুরুষের কাঁধে ন্যাস্ত। পৃথিবীতে প্রচলিত সাধারণ বাস্তবতাও তাই। কাজেই অর্থনৈতিক লেন-দেনে নারীর তুলনায় পুরুষই সুদক্ষ। বিকল্প হিসেবে যে, একজন পুরুষ ও দু’জন নারীর কথা বলা হয়েছে। তার কারণও স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, একজন যদি কোনো ভুল করে তাহলে আর একজন যেন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। কুরআন এখানে শব্দ ব্যবহার করেছে ‘তা’দিল’ যার মানে দালগোল পাকিয়ে ফেলা। অথবা ভুল করা। অনেকেই শব্দটির তরজমা করেছেন ‘ভুলে যাওয়া’ এটা শুদ্ধ নয়। যা হোক আর্থিক লেনদেনই একমাত্র বিষয় যেখানে সাক্ষী হিসাবে একজন পুরুষের বিকল্প দু’জন নারী।
গ. হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও সাক্ষী হিসেবে একজন পুরুষের বিকল্প দু’জন নারী
কিছু ইসলামী আইন-শাস্ত্রবীদগণের মতে, হত্যা মামলার সাক্ষী দানের ক্ষেত্রে নারীসুলভ অভিব্যক্তি প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এধরনের পরিস্থিতিতে একজন পুরুষের তুলনায় একজন নারী বেশি মাত্রায় ঘাবড়ে যেতে পারে। তার নারী সুলভ ভাবাবেগ তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিতে পারে। এ কারনেই কিছু বিশেষজ্ঞ আলেম খুনের মামলায় একজন পুরুষের বিকল্প হিসেবে দু’জন নারীর সাক্ষী এই রায় দিয়েছেন। অন্য সব ব্যাপারেই একজন নারীর সাক্ষী এক জন পুরুষের সাক্ষীর সমান মূল্যমানের।
ঘ. কুরআন সুস্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে-একজন নারীর সাক্ষী একজন পুরুষের সমান
কিছু বিশেষজ্ঞ আলেম যদিও এ ব্যাপারে জোরালো মতামত দিয়েছেন যে একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প দু’জন নারীর সাক্ষী বিষয়টা সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু নির্দ্বিধায় একথা মেনে নেয়া যায় না। কেননা খোদ কুরআনেই তা সমান করে দিয়েছে-
“আর যারা তাদের স্ত্রীদের সম্পর্কে অভিযোগ তুলবে অথচ তাদের কাছে তাদের নিজেদের ছাড়া অন্যকোনো সাক্ষদাতা নেই। তাহলে তাদের একজনের সাক্ষ্যই চার বার (আল্লাহর নামে শপথ করে বললে) গ্রহণ যোগ্য হবে। ” (সূরা নূর : ৬)
ঙ. হযরত আয়শা h-এর একক সাক্ষী হাদীসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য
মুসলিমদের কাছে কুরআনের পরেই নির্দেশনার জন্য মূল্যবান যে উৎস সেই হাদীস সমূহের মধ্যে হযরত আয়শা h বর্ণিত ২২২০ খানা হাদিস শুধু মাত্র তাঁর একক সাক্ষীর ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ন। কাজেই ক্ষেত্র অনুযায়ী একজন নারীর সাক্ষীই যে গ্রহণ ও যোগ্য, এর জন্য আর কোনো দলিলের প্রয়োজন পড়েনা। ইসলামী আইন-শাস্ত্রবীদগণের অনেকেই এব্যাপারে একমত যে চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজন “মো’মেনা” নারীর সাক্ষই যথেষ্ট। বিষয়টা অবশ্যই ভেবে দেখার মতো। ইসলামের একটি স্তম্ভ ‘রোযা’র কার্যকরিতার ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠি একজন মাত্র নারীর সাক্ষী দানের ওপরেই নির্ভর করতে পারে। কোন কোন ইসলামী পন্ডিত বলেছেন, রমযানের চাঁদ দেখার জন্য একজন সাক্ষী এবং রমযানের শেষের চাঁদ অর্থাৎ ঈদের চাঁদ দেখার জন্য দু’জন সাক্ষীর প্রয়োজন। সাক্ষীগণের পুরুষ বা নারী হওয়ার ব্যাপারে কোন শর্ত নেই।
চ. কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলার সাক্ষী অগ্রগন্য
কোন কোন ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীর সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য, সেখানে পুরুষের কোনো ভূমিকাই নেই। যেমন কেনো মহিলার মৃতদেহের গোসল করানোর সাক্ষী একজন নারীর পক্ষেই হওয়া সম্ভব।
দৃশ্যতঃ সাক্ষীদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় তা আদৌ লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য নয়। তা বরং ইসলামের বিবেচনায় সমাজে নারী ও পুরুষের প্রকৃতি ও ভূমিকার পার্থক্যের কারণে।
✔ জবাব:-
স্মরণাতীত কাল থেকে বিশ্বমানবতার জন্য ‘এলকোহল’ তীব্র যন্ত্রনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। মদ অসংখ্য অগুনতী মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ এবং বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মানুষের ভয়ঙ্কর দুর্দশার কারণ। মানুষের সমাজে অসংখ্য সমস্যার নেপথ্যে আসল হেতু এই ‘এলকোহল’ বা মদ। অপরাধ প্রবনতার তীব্র উর্ধগতী, ক্রমবর্ধমান মানসিক বিপর্যয় এবং কোটি কোটি ভাঙা সংসার জীবন্ত প্রমাণ বহন করছে বিশ্ব জুড়ে এলকোহলের নিরব ধ্বংসযজ্ঞের তান্ডবলীলা কি ভাবে চলছে।
ক. কুরআনে মদ্যপানে নিষিদ্ধতা-
”হে ঈমান গ্রহণকারী লোকেরা! মদ ও জুয়া, পাশা খেলা, তীর ছুঁড়ে ভাগ্য জানা এগুলো শয়তানের নিকৃষ্ট ধরনের জঘন্য কারসাজি। এসব পরিহার করো যেন তোমরা উন্নত (মানবতার) পথে এগিয়ে আসতে পারো। ” (সুরা মায়েদা- ৫: ৯০)
খ. বাইবেলে মদের নিষিদ্ধতা -
১. “মদ্য একটি প্রতারক, কঠিন পানীয়, কুৎসীত কাজের উৎসাহক এবং যে এতে অভ্যস্ত হলো সে মুর্খতায় নিমজ্জিত হলো। ” (বাইবেলের নীতিবাক্য, মূল গ্রন্থঃ ২০-১)
২. আর মদ্য পানে মাতাল হয়ো না। (এফিসিয়ানেসঃ৫:১৪)
গ. এলকোহল বিবেককে বাধাগ্রস্ত করে
মানুষের মগজে একটি বিবেচনা কেন্দ্র আছে। এ বিবেচনা কেন্দ্র মানুষকে সেই সব কাজ করতে বাধাগ্রস্থ করে, যেসব কাজ সে মন্দ বলে জ্ঞান করে। যেমন কোনো লোক সাধারণত তার পিতা-মাতা এবং গুরুজনের কথা বলার সময় অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করে । তাকে যদি কখনো প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয় (পায়খানা পেশাব) তার বিবেচনা কেন্দ্র তাকে বাধা দেবে জনসমক্ষে এ কাজ করতে। এ জন্য সে গোপন জায়গা ব্যবহার করে।
মানুষ যখন মদ পান করে, তখন তার মগজের এই বিবেচনা কেন্দ্র স্থবীর হয়ে পড়ে (অর্থাৎ নিজেই কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হয় )। মদ্য পানে মাতাল ব্যক্তিকে যে অস্বাভাবিক আচার আচরণ করতে দেখা যায়। তার সুনির্দিষ্ট কারণ এটাই। যেমন মাতাল লোককে অসন্মানজনক কথা বলতে দেখা যায়, এমনকি সে যদি তার পিতা-মাতার সাথেও কথা বলতে থাকে। কেননা তখন তার এই ভুলকে উপলদ্ধি করতেই সক্ষম হয় না। মাতাল হয়ে অনেকেই পেশাব করে দেয় তাদের কাপড়ে। না তখন সে ঠিক মতো কথা বলতে পারে, না পারে সোজা পায়ে হাঁটতে।
ঘ. ব্যভিচার, ধর্ষণ, নিসিদ্ধ আত্মিয়ার সাথে জোরপূর্বক যৌনতা এই সবকিছু মদ্যপায়ীদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়।
আমেরিকার ন্যাশনাল ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর ন্যাশনাল ভিকটিমাইযেশান সারভে ব্যুরো অব জাষ্টিস-এর পরিসংখ্যানে শুধু মাত্র ১৯৯৬ সালে প্রতিদিন গড়ে ২৭১৩ ধর্ষণের ঘটনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, রিপোর্টের মন্তব্য বলা হয়েছে ধর্ষকদের অধিকাংশই ঘটনার সময় মাতাল ছিল, নারী উৎপীড়নের ক্ষেত্রেও এদেরকেই বেশি পাওয়া যায়।
একই পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৮% আমেরিকান- মা-বোন, অথবা কন্যার সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত। অর্থাৎ প্রতি বারো বা তেরে জনের একজন আমেরিকান এই কর্মে অভ্যস্ত এবং দু’জনের একজন অথবা উভয়ে এসময় মাতাল থাকে। এইড্স বিস্তারের ক্ষেত্রে মাদকের ভুমিকা কান ও মাথার মতো (অর্থাৎ কান টানলে মাথা আসে) তাই মাদকাসক্তিই মারাত্মক ও প্রাণঘাতি ব্যাধি।
ঙ. প্রতিটি মাদকাসক্তিই লোকই প্রাথমিক পর্যায়ে সৌখীন পানকারী থাকে
অনেকেই মদের পক্ষ অবলম্বন করে বলবেন, ভাই পার্টি-পরিবেশে একটু আধটু হলে ভালোই লাগে। আমাদের দৌড় ঐ পর্যন্তই। এক কি দুপেগ। আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখি, আমরা মাতাল হইনা কখোনো ইত্যাদি ইত্যাদি।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের ফলাফল এই যে, প্রত্যেকটি মদ্যপ মাতালই প্রাথমীক পর্যায়ে সৌখীন পানকারী ছিল। এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি যে মদ্যপ বা মাতাল হয়ে যাবার জন্য মদ পান শুরু করেছিল। অপরদিকে কোনো সৌখীন মদ পানকারীই একথা বলতে পারবেনা যে, দীর্ঘ দীর্ঘ দিন যাবত এভাবেই দু’এক পেগ করেই খেয়ে এসেছি। কোনো দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাইনি। আর মাতাল হলে কেমন লাগে সে স্বাদও পাইনি।
চ. জীবনে একবারও যদি কেউ মাতাল হয়ে লজ্জাকর কোনো কাজ করে থাকে সে স্মৃতি তাকে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত ভোগাবে।
ধরুন, কোনো সৌখীন সামাজিক মদপানকারী, জীবনে মাত্র একবার নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মাতাল হয়েছিল। আর সেই দিনই তার দ্বারা ধর্ষণ বা আপনজন কারো ওপরে যৌন অত্যাচার মূলক কোনো দুর্ঘটনা গিয়েছিল। পরবর্তীকালে যদি সে, সেই কাজের জন্য দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ক্ষমা পেয়েও গিয়ে থাকে তবু সুস্থ ও স্বাভাবিক একজন মানুষকে সারাজীবন সেই স্মৃতির কুৎসীৎ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে- যে করেছে সে এবং যার ওপর তা সংঘটিত হয়েছে সে -উভয়কেই এই অপুরণীয় ও অপরিবর্তনীয় ক্ষতির ভোগান্তি পোহাতে হবে।
ছ. হাদীসে মদের নিষিদ্ধতা
রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) বলেছেনঃ-
১. ”মদ সকল মন্দ ও অশ্লীলতার মা (উৎস) এবং যাবতীয় মন্দের মধ্যে ওটা সবচাইতে লজ্জাকর। ”-সুনানে ইবনে মাজাহ্ অধ্যায় ৩০ । হাদীস নং ৩৩৭১।
২. এমন সকল, যা নেশাগ্রস্ত করে অনেক পরিমাণে তা নিষেধ (হারাম)। এমনকি তা অল্প পরিমাণ গ্রহণ করা হলেও। তাই এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। তা এক ঢোক অথবা এক ড্রাম।
৩. ”হযরত আয়শা h থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) বলেছেন, মদের সাথে জড়িত এমন দশ শ্রেণীর লোকদের ওপরে আল্লাহর অভিশাপ। (১) যারা তা তৈরী করে (২) যাদের জন্য তা বানানো হয় (৩) যারা তা পান করে। (৪) যারা তা বহন করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যায় (৫) যাদের জন্য তা নিয়ে আসা হয় (৬) যারা তা পরিবেশন করে। (৭) যারা তা বিক্রি করে (৮) যারা তা বিক্রি লব্ধ টাকা ব্যবহার করে (৯) যারা তা কেনে এবং (১০) যারা তা কেনে অন্য আর একজনের জন্য।”
ছ. মদ্যপায়ীরা যে সব রোগে আক্রান্ত হয়
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সামনে এমন বেশ কিছু রোগের উৎপত্তি স্পষ্ট হয়ে গেছে যেসব রোগে সাধারনত মদ্যপায়ীরাই আক্রান্ত হয়। মদ এমন একটি কারণ, যে কারণে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু মদ পানের কারণে পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। সাধারণত মদ্যপায়ীরাই আক্রান্ত হয় এমন অতি পরিচিত কিছু রোগের একটি ছোট্ট তালিকা দেয়া হলোঃ
১. যকৃৎ বা কলিজা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া। যা লিভার সিরোসিস নামে পরিচিত।
২. অম্লনালীর ক্যান্সার এবং মাথা, গলা, কলিজা ও মল নালীর ক্যান্সার।
৩. অগ্ন্যাশয় ও যকৃতের প্রদাহ।
৪. হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বা হৃদয় স্পন্দন সংক্রান্ত যাবতীয় রোগ, হাইপার টেনশান।
৫. হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালেন নালী সমূহের যাবতীয় রোগ, গলনালী প্রদাহ এবং হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৬. পক্ষাঘাত, সন্যাস রোগ এরকম আরো অন্যান্য প্যারালাইসিস।
৭. স্নায়ু ও মস্তিষ্কের যাবতীয় রোগ।
এরকম আরো অসংখ্য- বাংলা ভাষায় যেসবের নামকরণ বেশ কষ্টসাধ্য একারণে তালিকাও এখানেই ইতি টানা হলো।
জ. মাদকাসক্তিই একটি রোগ
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মদ্যপায়ীদের ব্যাপারে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছেছেন। তারা এটাকে এখন আর নেশা বলেন না, বলেন এটা নিজেই একটা রোগ। ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ একটা পোষ্টার বের করেছে, তাতে বলা হয়েছে যদি ‘মদই’ রোগ হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীতে এটাই একমাত্র রোগ যা-
✔ সুন্দর সুন্দর বোতলে ভরে বিক্রি হয়: পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশনের মতো প্রচার মাধ্যেমে তার বিজ্ঞাপন করা হয়।
✔ সরকারের জন্য রাজস্ব আমদানী করে।
✔ নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্য রাজপথে নিয়ে আসে।
✔ পারিবারিক জীবন ধ্বংস ও অপরাধ প্রবণতার আসল হোতা।
✔ নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্য রাজপথে নিয়ে আসে।
✔ পারিবারিক জীবন ধ্বংস ও অপরাধ প্রবণতার আসল হোতা।
মদ শুধু একটি রোগই নয় – শয়তানের কারসাজি এটা
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মানুষের জন্য তাঁর সর্বোত্তম অনুগ্রহ আল-কুরআনে শয়তানের পাতা এই লোভনীয় ফাঁদ সম্পর্কে আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন। তাই কুরআনে বিদ্ধৃত জীবন যাপন পদ্ধতিকে ‘দ্বীনুল ফিৎরাহ’ বা মানুষের প্রকৃতিসম্মত জীবনব্যবস্থা ‘ইসলাম’ বলা হয়। এর সকল বিধি-নিষেধের আসল উদ্দেশ্য মানব প্রকৃতিকে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা। মদ মানুষকে তার প্রকৃতগত স্বভাবের ওপর দাঁড়াতে দেয় না। একথা স্বতন্ত্র কোনো ব্যক্তির বেলায় যেমন সত্য তেমনি বৃহত্তর কোনো সমাজের ক্ষেত্রেও । এটা মানুষকে নিচে নামিয়ে পশুর পর্যায়ে নিয়ে আসে অথচ মানুষ দাবি করে যে, সে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠতম। সর্বোপরি ইসলামে মদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ “হারাম”।
✔ জবাব:-
এটা সর্বজন বিদিত যে, শুকুর মাংস ভক্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে।
ক. কুরআনে শুকুর মাংস নিষিদ্ধতা
শুকুরের মাংস খাওয়া নিষেধ অন্তত চারটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, এবং ১৬:১১৫-
“নিষিদ্ধ করা হলো তোমাদের জন্য (খাদ্য- হিসেবে) মৃত জন্তুর মাংস, প্রবাহিত রক্ত, শুকুরের মাংস "
কেন নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কুরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।
খ. বাইবেল শুকুর মাংস ভক্ষণের নিষিদ্ধতা
একজন খ্রীস্টান তার ধর্মগ্রন্থ সমূহের উল্লেখ দেখে সন্তুষ্ট হলে দেখতে পাবে যে, বাইবেল লেবীয় অধ্যায়ে শুকুরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছেঃ-
”এবং শুকুর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কি সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা। (তবু) ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য”।
একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছেঃ-
”ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেরহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।”
বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘দ্বিতীয় বিবরনী’ তেও শুকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছেঃ-
“আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (দ্বিতীয় বিবরনীঃ ১৪:৮)
বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও একই নিষিদ্ধতা রয়েছে।
গ. শুকর মাংস ভক্ষণ বেশ কিছু মারাত্নক রোগের কারণ
অন্যান্য অমুসলিম ও নাস্তিকরা হয়তো উপযুক্ত কারণ ও বিজ্ঞানের যুক্তি প্রমাণের মেনে নিতে পারে- শুকুর মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তুরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে।
প্রথমতঃ আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ফিতা ক্রিমি’ বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে, যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদ-যন্ত্রের মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ , কলিজীতে ঢুকতে পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এরপরও আছে আরো ভয়ঙ্কর ‘ত্রীচুরা টিচুরাসীস্থ। এ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা হলো ভালো করে রান্না করলে এর ডিম্ব মারা যায়। এর ওপরে আমেরিকায় গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফল ভালো করে রান্না করার পরও প্রতি ২৪ জনের ২২ জন এই ‘ত্রীচুরাসীস্থ দ্বারা আক্রান্ত। প্রমাণিত হলো সাধারণ রান্নায় এ ডিম্ব ধ্বংস হয় না।
ঘ. শুকর মাংসে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর
শুকর মাংসে পেশী তৈরীর উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়- যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হবার কিছু নেই যে ৫০% ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।
ঙ. পৃথিবীর বুকে শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী
এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহ তা‘আলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টি কূলের ধাঙর, মেথর বা ময়লা পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন আজ থেকে পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগেও যখন সেনিটারী পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের পায়খানার ধরন ছিল, পেছন থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।
অনেকেই হয়তো এখন বিতর্কে নেমে পড়বেন উন্নত বিশ্বে এখন শুকরের পরিচ্ছন্ন খামার করা হয়েছে যেখানে ওগুলো লালিত পালিত হয়। তাদের এই অনেক উন্নত, স্বাস্থ্যকর খামারেও ওগুলো নোংরা। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই ওরা ওদের নিজেদের ও সঙ্গিদের বিষ্ঠা নিয়ে ওদের চোখা নাক দিয়ে নাড়া চড়া করে আর উৎসবের খাদ্য হিসেবেই খায়।
চ. শুকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু
ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংষ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকর মাংস। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টি গুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনার তুঙ্গে উঠে একে অপরের সাথে ‘সোয়া’র জন্য বউ বদল করে নেয়। অনেকেই আবার জীবন্ত নীল ছবি চোখে দেখার জন্য স্ত্রীর সাথে সংগম করতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। তারপর এক নারী নিয়ে চলে অনেক পুরুষের সম্মিলিত লীলাখেলা। ’ধন্য’ উন্নত বিশ্ব, ’ধন্য’ তার সর্বোন্নত সংস্কৃতি।
✔ জবাব:-
একথা সত্য যে, আইনত মক্কা ও মদীনায় অমুসলিমদের প্রবেশানুমতি নেই। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার নৈপথ্য কারণগুলো উদঘাটনে সহায়ক হবে।
ক. সেনানিবাস এলাকায় সকল নাগরিক প্রবেশানুমতি পায় না
আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। তা সত্ত্বেও এদেশের এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে আমার অবাধে প্রশোনুমতী নেই। যেমন সেনানিবাস। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশই সাধারণ নাগরিক প্রবেশ করতে পারবে না এমন সব এলাকা রয়েছে। শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর সদস্য এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সে সব এলাকায় প্রবেশানুমতি পায়।
আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। তা সত্ত্বেও এদেশের এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে আমার অবাধে প্রশোনুমতী নেই। যেমন সেনানিবাস। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশই সাধারণ নাগরিক প্রবেশ করতে পারবে না এমন সব এলাকা রয়েছে। শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর সদস্য এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সে সব এলাকায় প্রবেশানুমতি পায়।
একইভাবে ইসলাম সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একটি বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। মক্কা ও মদীনা এ দুটি পবিত্র নাগরিকে ইসলামের ক্যান্টনমেন্ট ধরা যেতে পারে। এখানে শুধু যারা তার অনুসারী এবং এর প্রতিরক্ষার সাথে জড়িত তারাই প্রবেশাধিকার পায় অর্থাৎ মুসলিমরা। সেনানিবাস এলাকায় সাধারণ নাগরিকের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা যে কোনো বিবেকবান মানুষের কাছেই অযৌক্তিক বলে গন্য হবে। একই ভাবে কোনো অমুসলিমের মক্কা-মদীনায় প্রশোধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা সঙ্গত বলে বিবেচিত নয়।
খ.মক্কা ও মদীনায় প্রবেশের “ভীসা”
১. যখনি কেউ অন্য কোনো দেশে ভ্রমন করতে চায়। প্রথমে তাকে সেদেশের ভিসা পাবার জন্য আবেদন করতে হয়। অর্থাৎ সে দেশে প্রবেশের অনুমতি। প্রতিটি দেশের এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ আইন নীতিমালা এবং কিছু শর্ত রয়েছে। এসব কিছু পূরণ না হলে তারা ভিসা দেবে না।
২. ভিসা দেবার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিনভাবে রক্ষণশীল দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আমেরিকা। বিশেষ ভাবে তৃতীয় বিশ্বের কোণো নাগরিককে ভিসা দেবার জন্য তাদের আছে অসংখ্য নিয়ম কানুন। আরো আছে দুর্লভ ও দুরুহ শর্তসমুহ যা সাধারণের আয়ত্বাধীন নয় কোনো ভাবেই।
৩. আমি সিঙ্গাপুর ভ্রমনে গিয়েছিলাম। তাদের অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন ফর্মে উল্লেখ ছিল মাদক দ্রব্য বহনকারীর জন্য “মৃত্যুদন্ড”। এখন সিঙ্গাপুরে প্রবেশানুমতি চাইলে আমাকে তাদের যে আইন তা মেনেই নিতে হবে। আমি তো আর বলতে পারি না মৃত্যুদন্ড মধ্যযুগীয় নৃশংস বর্বরদের শাস্তি। তাদের সব নিয়ম-কানুন এবং শর্তগুলোকে যদি আমি মেনে নেই কেবলমাত্র তখনই আমার পক্ষে সে দেশের প্রবেশানুমতি পাওয়া সম্ভব।
৪. ভিসা-পৃথিবীর যে কোনো মানুষের জন্য মক্কা ও মদীনায় প্রবেশের অনুমতি পেতে হলে সর্ব প্রথম যে শর্তটি পুরণ করতে হবে তা হলো তার মুখে বলতে হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ মানা যায় এমন কেউ নেই কিছু নেই আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তার প্রেরিত রাসূল।
১১ . প্রশ্নঃ ইসলাম আকার বা মূর্তি পূজাকে প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু তারা নিজেরাই কেন প্রার্থনায় কাবার প্রতি নত হয়ে তার উপাসনা করে?
✔ জবাব:-
কা’বা মুসলিমদের ‘কেবলা’। মুসলিমরা তাদের প্রার্থনায় দিক নির্দেশক হিসেবে গণ্য করে। এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, মুসলিমরা তাদের প্রার্থনায় কা’বার দিকে মুখ করে বটে তবে তারা কাবা ঘরের উপাসনা করে না। উপাসনা করে সেই ঘরের মালিক অদৃশ্য আল্লাহ তা‘আলার। জ্যোতীর্ময় কুরআনে বলা হয়েছেঃ-
কা’বা মুসলিমদের ‘কেবলা’। মুসলিমরা তাদের প্রার্থনায় দিক নির্দেশক হিসেবে গণ্য করে। এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, মুসলিমরা তাদের প্রার্থনায় কা’বার দিকে মুখ করে বটে তবে তারা কাবা ঘরের উপাসনা করে না। উপাসনা করে সেই ঘরের মালিক অদৃশ্য আল্লাহ তা‘আলার। জ্যোতীর্ময় কুরআনে বলা হয়েছেঃ-
“তোমার (নির্দেশনার জন্য) বার বার আকাশের দিকে করে তাকানো আমরা দেখেছি। এখন আমরা কি তোমাকে ঘুরিয়ে দেব সেই কেবলার দিকে যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে? তাহলে ঘুরিয়ে নাও তোমরা থাকনা কেন (নামাযে) তার দিকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।”
ক. ইসলাম চূড়ান্ত ঐক্যকে উৎসাহিত করে
যেমন, মুসলিমরা যদি নামায আদায় করতে চায় তাহলে এমনটা হতেই পারে যে, কারো ইচ্ছা হবে উত্তর দিকে ফিরে নামায পড়তে, কারো ইচ্ছা হবে দক্ষিণ দিকে দিকে ফিরতে। তাই উপাসনার ক্ষেত্রেও মুসলিমদের চূড়ান্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেখানেই তারা থাকনা কেন এক আল্লাহর প্রতি এক মুখী হয়ে তাদের নামায আদায় করতে বলা হয়েছে। ‘কাবা’ সেই একটি দিকের দিক-নির্দেশক, অন্য কিছুই নয়। কাবার পশ্চিমাঞ্চলে যে মুসলিমরা বাস করে তারা মুখ করবে পূর্ব দিকে আর তার পূর্বাঞ্চলে যারা বাস করে তারা মুখ করবে পশ্চিম দিকে। একইভাবে উত্তরাঞ্চলের লোকেরা দক্ষিণ দিকে আর দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা উত্তর দিকে।
যেমন, মুসলিমরা যদি নামায আদায় করতে চায় তাহলে এমনটা হতেই পারে যে, কারো ইচ্ছা হবে উত্তর দিকে ফিরে নামায পড়তে, কারো ইচ্ছা হবে দক্ষিণ দিকে দিকে ফিরতে। তাই উপাসনার ক্ষেত্রেও মুসলিমদের চূড়ান্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেখানেই তারা থাকনা কেন এক আল্লাহর প্রতি এক মুখী হয়ে তাদের নামায আদায় করতে বলা হয়েছে। ‘কাবা’ সেই একটি দিকের দিক-নির্দেশক, অন্য কিছুই নয়। কাবার পশ্চিমাঞ্চলে যে মুসলিমরা বাস করে তারা মুখ করবে পূর্ব দিকে আর তার পূর্বাঞ্চলে যারা বাস করে তারা মুখ করবে পশ্চিম দিকে। একইভাবে উত্তরাঞ্চলের লোকেরা দক্ষিণ দিকে আর দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা উত্তর দিকে।
খ. পৃথিবী গোলকের কেন্দ্রবিন্দু কা‘বা
মুসলিমরাই প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল। তাদের চিত্রে দক্ষিণ ছিল ওপর দিকে আর উত্তর ছিল নিচের দিকে। তখন কা‘বা ছিল কেন্দ্র বিন্দুতে। পরবর্তিকালে পশ্চিমা মানচিত্রকররা পৃথিবীর যে মানচিত্র আঁকলো তাতে ওপর দিকটা নিচে আর নিচের দিকটা ওপরে অর্থাৎ উত্তর হলো ওপরের দিকে আর দক্ষিণ হলো নিচের দিকে। আলহামদুলিল্লাহ এ ক্ষেত্রেও “কাবাই মানচিত্রের কেন্দ্রবিন্দু থেকে গেল”।
মুসলিমরাই প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল। তাদের চিত্রে দক্ষিণ ছিল ওপর দিকে আর উত্তর ছিল নিচের দিকে। তখন কা‘বা ছিল কেন্দ্র বিন্দুতে। পরবর্তিকালে পশ্চিমা মানচিত্রকররা পৃথিবীর যে মানচিত্র আঁকলো তাতে ওপর দিকটা নিচে আর নিচের দিকটা ওপরে অর্থাৎ উত্তর হলো ওপরের দিকে আর দক্ষিণ হলো নিচের দিকে। আলহামদুলিল্লাহ এ ক্ষেত্রেও “কাবাই মানচিত্রের কেন্দ্রবিন্দু থেকে গেল”।
গ. কা‘বাকে ঘিরে তওয়াফ করা আল্লাহর একত্বের নির্দেশক
মুসলিমরা কা’বা যেয়ারতে মক্কায় গেলে ‘তাওয়াফ’ করে। অর্থাৎ কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। কাজটি এক আল্লাহ বিশ্বাস ও উপাসনার নিদর্শন। প্রতিটি বৃত্ত গোলাকার এবং তার একটিই কেন্দ্র বিন্দু থাকে। কাজেই উপাসনার যোগ্য আল্লাহ-মাত্র একজনই, এটা তারই অন্যতম নিদর্শণ।
মুসলিমরা কা’বা যেয়ারতে মক্কায় গেলে ‘তাওয়াফ’ করে। অর্থাৎ কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। কাজটি এক আল্লাহ বিশ্বাস ও উপাসনার নিদর্শন। প্রতিটি বৃত্ত গোলাকার এবং তার একটিই কেন্দ্র বিন্দু থাকে। কাজেই উপাসনার যোগ্য আল্লাহ-মাত্র একজনই, এটা তারই অন্যতম নিদর্শণ।
ঘ. হযরত উমর h এর হাদীস
হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর সম্পর্কিত হযরত উমর h এর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। হাদীসে শাস্ত্র অনুযায়ী যাকে ‘আছার’ বা ঐতিহ্য বলা যায়। বুখারী শরীফের হজ্জ সম্পর্কিত ৩৫৬ অধ্যায়ে ৬৭৫ নং হাদীসে, উমর h বলেছেন-
হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর সম্পর্কিত হযরত উমর h এর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। হাদীসে শাস্ত্র অনুযায়ী যাকে ‘আছার’ বা ঐতিহ্য বলা যায়। বুখারী শরীফের হজ্জ সম্পর্কিত ৩৫৬ অধ্যায়ে ৬৭৫ নং হাদীসে, উমর h বলেছেন-
“আমি জানি তুমি একটি পাথরখন্ড মাত্র এবং না কোনো উপকার করতে সক্ষম না কোনো ক্ষতি। আমি যদি না দেখতাম খোদ আল্লাহর রাসূল (صلى الله عليه و سلم) তোমাকে স্পর্শ করেছেন তা হলে কস্মিন কালেও আমি তোমাকে স্পর্শ করতাম না।”
ঙ. মানুষ কা’বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিয়েছিল
রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) এর সময়ে লোকেরা কা’বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিত। মুসলিমরা কা’বা ঘরের উপাসনা করে বলে যারা মনে করেন তাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, কোন মুর্তি-পূজারী, যে মুর্তি সে পূজা করে, তার মাথার ওপরে উঠে দাঁড়ায়?
রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) এর সময়ে লোকেরা কা’বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিত। মুসলিমরা কা’বা ঘরের উপাসনা করে বলে যারা মনে করেন তাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, কোন মুর্তি-পূজারী, যে মুর্তি সে পূজা করে, তার মাথার ওপরে উঠে দাঁড়ায়?
১২ . প্রশ্নঃ বিজ্ঞান আমাদের বলে, যে যা খায় তার আচরণে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। তাহলে ইসলাম কেন মুসলিমদেরকে আমিষ খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দেয়। যেখানে পশুর মাংস ব্যক্তিকে হিংস্র ও দুঃসাহসী করে তুলতে পারে?
✔ জবাব:-
ক. পশুর মধ্যে শুধু তৃনভোজী পশু খাওয়া অনুমোদিত
ক. পশুর মধ্যে শুধু তৃনভোজী পশু খাওয়া অনুমোদিত
এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত যে, ব্যক্তি যা আহার করে তার প্রতিক্রিয়া তার আচরণে প্রকাশ পায়। বাঘ, সিংহ, নেকড়ে ইত্যাদি হিংস্র মাংসাশী প্রাণী খাওয়া ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে- এটা তার অন্যতম একটি কারণ। এ ধরনের হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। সে কারণে ইসলাম শুধু মাত্র গরু, মহিশ, ছাগল, ভেড়ার মতো শান্ত ও খুব সহজে পোষমানা প্রাণীর মাংস খেতে অনুমতি দেয়। বস্তুত এ কারণেই মুসলিমরা শান্তিকামী- শান্তিপ্রিয়।
খ. জ্যোতির্ময় কুরআন বলছে- যা কিছু মন্দ রাসূল তা নিষিদ্ধ করেছেন-
”রাসূল তাদেরকে ভালো কাজ করতে আদেশ করেন। আর নিষেধ করেন যাবতীয় মন্দ থেকে এবং তিনি তাদের জন্য হালাল করেছেন যা কিছূ ভাল, পবিত্র, পরিচ্ছন্ন। আর হারাম করেছেন যা কিছু মন্দ অপরিচ্ছন্ন অপবিত্র। ” (সুরা আরাফ-৭: ১৫৭)
”রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তা তোমরা গ্রহণ করো। আর যে সব থেকে নিষেধ করেন সে সব থেকে বিরত থাকো। ” (সুরা হাশর-৫৯ : ৭)
একজন মুসলিমের জন্য তাদের রাসূলের এই বার্তার যথেষ্ট যে, আল্লাহ চান না মানুষ এমন কোনো ধরনের মাংস খায়- যেখানে অন্য কিছু ধরনকে (শান্ত-শিষ্ট পশুকে আহারের) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গ. মাংসাশী প্রাণী খাবার ব্যাপারে রাসূল (صلى الله عليه و سلم)-এর বাণী
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বেশ কিছু সর্বসম্মত শুদ্ধ হাদীসের মধ্যে ইবনে আব্বাস h বর্ণিত মুলিম শরীফের ‘শিকার ও জবাই’ অধ্যায়ের ৪৭৫ নং হাদীসে, সুনানে ইবনে মাজাহর ১৩ অধ্যায়ের ৩২৩২ থেকে ৩২৩৪ হাদীস সমূহ উল্লেখযোগ্য। রাসূল (صلى الله عليه و سلم) খেতে নিষেধ করেছেনঃ
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বেশ কিছু সর্বসম্মত শুদ্ধ হাদীসের মধ্যে ইবনে আব্বাস h বর্ণিত মুলিম শরীফের ‘শিকার ও জবাই’ অধ্যায়ের ৪৭৫ নং হাদীসে, সুনানে ইবনে মাজাহর ১৩ অধ্যায়ের ৩২৩২ থেকে ৩২৩৪ হাদীস সমূহ উল্লেখযোগ্য। রাসূল (صلى الله عليه و سلم) খেতে নিষেধ করেছেনঃ
১.তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁতওয়ালা হিংস্র জন্তু। অর্থাৎ মাংসাশী বন্য পশু প্রধানত বেড়াল ও কুকুর জাতীয় বাঘ, সিংহ, বেড়াল এবং শেয়াল, কুকুর, নেকড়ে, হায়না ইত্যাদি।
২. তীক্ষ্ণ দন্ডের অন্যান্য প্রাণী যেমন ইঁদুর, ন্যাংটি ইদুর, ছুঁচো ও ধারালো নখওয়ালা খরগোশ ইত্যাদি।
৩. সরিশ্রীপ জাতীয় অন্যান্য প্রাণী যেমন সাপ কুমীর ইত্যাদি।
৪. ধারালো ঠোঁট ও নখরওয়ালা শিকারী পাখি যেমন চিল, শুকুন, কাক, পেচাঁ ইত্যাদি। সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানীক দলিল নেই যে, আমিষ খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ উগ্র ও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে।
✔ জবাব:-
একটি বিরাট সংখ্যাক সমালোচনার বিষয় পশু জবাইয়ের ইসলামী পদ্ধতি। মুক্ত মনে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে প্রমাণ হয়ে যাবে জবাই পদ্ধতিটি শুধু মানবিকই নয় বৈজ্ঞানিকও বটে।
একটি বিরাট সংখ্যাক সমালোচনার বিষয় পশু জবাইয়ের ইসলামী পদ্ধতি। মুক্ত মনে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে প্রমাণ হয়ে যাবে জবাই পদ্ধতিটি শুধু মানবিকই নয় বৈজ্ঞানিকও বটে।
ক. পশু জবাই করার ইসলামী পদ্ধতি
‘যাক্কায়াতুম’ একটি ক্রিয়া, উৎপন্ন হয়েছে মূল শব্দ ‘যাকাহ’ থেকে (পবিত্র করতে)। এর ক্রিয়া ভাব প্রকাশক ‘তায্কীয়াহ’। অর্থাৎ পবিত্রকরণ। ইসলামী পদ্ধতিতে একটি পশু জবাই করতে হলে নিম্নোদ্ধৃত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
‘যাক্কায়াতুম’ একটি ক্রিয়া, উৎপন্ন হয়েছে মূল শব্দ ‘যাকাহ’ থেকে (পবিত্র করতে)। এর ক্রিয়া ভাব প্রকাশক ‘তায্কীয়াহ’। অর্থাৎ পবিত্রকরণ। ইসলামী পদ্ধতিতে একটি পশু জবাই করতে হলে নিম্নোদ্ধৃত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
১. সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে
অত্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে দ্রুততার সাথে পশুটি জবাই করতে হবে যেন ওটা ব্যাথা কম পায়।
অত্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে দ্রুততার সাথে পশুটি জবাই করতে হবে যেন ওটা ব্যাথা কম পায়।
২. গলনালী, শ্বাশ নালী ও রক্তবাহী ঘাড়ের রগ কেটে ফেলতে হবে
‘যাবীহাহ্’ একটি আরবী শব্দ যার মানে ‘জবাই করা হয়েছে’। যবাই করতে হবে গলা, শ্বাসনালী ও ঘাড়ের রক্তবাহী রগগুলো কেটে। মেরুদন্ডের তন্ত্রী (স্পাইনাল কড) কাটা যাবে না।
‘যাবীহাহ্’ একটি আরবী শব্দ যার মানে ‘জবাই করা হয়েছে’। যবাই করতে হবে গলা, শ্বাসনালী ও ঘাড়ের রক্তবাহী রগগুলো কেটে। মেরুদন্ডের তন্ত্রী (স্পাইনাল কড) কাটা যাবে না।
৩. শরীরের রক্ত প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।
দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার আগে দেহের সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। অধিকাংশ রক্ত বের করে দিতে হবে এই জন্য যে, তা ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু ইত্যাদির নিরাপদ নিবাস ও বংশ বিস্তারের ক্ষেত্র কাজেই মেরুদন্ডের তন্ত্রী কিছুতেই কাটা যাবে না। কেননা হৃদযন্ত্রের দিকে যেসব স্নায়ু তন্তু রয়েছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে এসময়। যা হৃদপিন্ডের স্পন্দন থামিয়ে দেবার কারণ হবে। ফলে রক্ত নালীসমূহে রক্ত আটকা পড়ে যাবে।
দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার আগে দেহের সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। অধিকাংশ রক্ত বের করে দিতে হবে এই জন্য যে, তা ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু ইত্যাদির নিরাপদ নিবাস ও বংশ বিস্তারের ক্ষেত্র কাজেই মেরুদন্ডের তন্ত্রী কিছুতেই কাটা যাবে না। কেননা হৃদযন্ত্রের দিকে যেসব স্নায়ু তন্তু রয়েছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে এসময়। যা হৃদপিন্ডের স্পন্দন থামিয়ে দেবার কারণ হবে। ফলে রক্ত নালীসমূহে রক্ত আটকা পড়ে যাবে।
খ. রক্ত, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়ার সহজ বাহন
জৈব-বিষ ব্যাকটেরিয়া ও রোগ-জীবানু ইত্যাদির সর্বোত্তম বাহক রক্ত। সুতরাং ইসলামী জবাই পদ্ধতি সাস্থ্যবিধি সম্মত। কেননা রক্ত, যার মধ্যে জৈব-বিষ, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বেধেঁ থাকে। যা অসংখ্য রোগ ব্যাধির কারণ হয়।
জৈব-বিষ ব্যাকটেরিয়া ও রোগ-জীবানু ইত্যাদির সর্বোত্তম বাহক রক্ত। সুতরাং ইসলামী জবাই পদ্ধতি সাস্থ্যবিধি সম্মত। কেননা রক্ত, যার মধ্যে জৈব-বিষ, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বেধেঁ থাকে। যা অসংখ্য রোগ ব্যাধির কারণ হয়।
গ. গোস্ত বেশি দিন ভাল থাকে
পৃথিবীতে প্রচলিত খাদ্যের জন্য পশু হত্যার মধ্যে ইসলামী পদ্ধতীতে জবাই করা পশুর মাংস বেশিদিন ভালো থাকে। কেননা তাতে রক্তের পরিমাণ থাকে নাম মাত্র।
পৃথিবীতে প্রচলিত খাদ্যের জন্য পশু হত্যার মধ্যে ইসলামী পদ্ধতীতে জবাই করা পশুর মাংস বেশিদিন ভালো থাকে। কেননা তাতে রক্তের পরিমাণ থাকে নাম মাত্র।
ঘ. পশু ব্যাথা অনুভব করে না
ক্ষীপ্রতার সাথে গলনালীগুলো কেটে ফেললে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে রক্ত প্রবাহ ব্যাথা বোধের কারণ। একারণে পশু ব্যাথা বোধ করে উঠতে পারে না। মৃত্যুর সময় ওটা যে ছটফট করে তা ব্যাথার জন্য নয় বরং রক্তের ঘাটতি পড়ে যাওয়ায় মাংসপেশির শৈথিল্য ও সংকোচনের জন্য এবং দ্রুত গতিতে দেহের বাইরে যাবার কারণে
ক্ষীপ্রতার সাথে গলনালীগুলো কেটে ফেললে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে রক্ত প্রবাহ ব্যাথা বোধের কারণ। একারণে পশু ব্যাথা বোধ করে উঠতে পারে না। মৃত্যুর সময় ওটা যে ছটফট করে তা ব্যাথার জন্য নয় বরং রক্তের ঘাটতি পড়ে যাওয়ায় মাংসপেশির শৈথিল্য ও সংকোচনের জন্য এবং দ্রুত গতিতে দেহের বাইরে যাবার কারণে
১৪- প্রশ্নঃ একটি পশুকে হত্যা করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ। তাহলে মুসলিমরা কেন এতো পশু হত্যা করে?
✔ জবাব:-
‘নিরামিষবাদ” বিশ্বব্যাপী এখন একটা বিফল আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এমনকি এটাকে যুক্ত করেছে ‘পশু অধিকারের’ সাথে। সন্দেহ নেই জনগণের একটি বিশাল অংশ মনে করেন মাংস ভক্ষণ এবং অন্যান্য উৎপাদিত আমিষ দ্রব্যসামগ্রী ‘পশু অধিকার’ কে হরণ করে।
‘নিরামিষবাদ” বিশ্বব্যাপী এখন একটা বিফল আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এমনকি এটাকে যুক্ত করেছে ‘পশু অধিকারের’ সাথে। সন্দেহ নেই জনগণের একটি বিশাল অংশ মনে করেন মাংস ভক্ষণ এবং অন্যান্য উৎপাদিত আমিষ দ্রব্যসামগ্রী ‘পশু অধিকার’ কে হরণ করে।
ইসলাম আদেশ করে সকল সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া ও অনুকম্পার নীতি গ্রহণ করতে। একই সাথে ইসলাম এ বিশ্বাসও লালন করে যে, এ পৃথিবীর যাবতীয় ফুল-ফল তথা উদ্ভিদ ও পশুপাখি এবং জলজপ্রাণী, সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের সেবার জন্য। এর পরের দায়িত্ব মানুষের, এসব সম্পদ ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত ভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর এই নেয়ামত (বিশেষ অনুগ্রহ) ও আমানত সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ তাদেরই দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত।
এ বিতর্কের সম্ভাব্য আরো কিছু দিক পর্যালোচনা করে নেয়া যাক।
ক. একজন মুসলিম সম্পূর্ণ নিরামিষভোজীও হতে পারে
একজন মুসলিম সম্পূর্ন নিরামিষভোজী হয়েও প্রথম শ্রেণীর মুসলিম থাকতে পারেন। এটা বাধ্যতামূলক কিছু নয় যে, একজন মুসলিমকে আমিষ খাদ্য খেতেই হবে।
একজন মুসলিম সম্পূর্ন নিরামিষভোজী হয়েও প্রথম শ্রেণীর মুসলিম থাকতে পারেন। এটা বাধ্যতামূলক কিছু নয় যে, একজন মুসলিমকে আমিষ খাদ্য খেতেই হবে।
খ. জ্যোতির্ময় কুরআন মুসলিমদেরকে আমিষ খাবারের অনুমতি দেয়
মুসলিমদের পথ প্রদর্শক আল-কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত সমূহ তার প্রমান। বলা হচ্ছেঃ-
মুসলিমদের পথ প্রদর্শক আল-কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত সমূহ তার প্রমান। বলা হচ্ছেঃ-
”হে ঈমান ধারণকারীরা! পূরণ করো তোমাদের প্রতি সকল অর্পিত দায়িত্ব। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে (খাবার জন্য) সকল চতুষ্পদ জন্তু-অন্য কারো নামে তা জবাই করা না হয়ে থাকলে। ” (সুরা মায়েদা-৫:১)
”আর গৃহপালিত পশু তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য ওগুলো থেকে তোমরা উষ্ণতা পাও (গরমের পোশাক) এবং আরো অসংখ্য উপকারী জিনিষ। আর সেগুলো(গোস্ত) তোমরা খাও। ” (সুরা নাহল- ১৬:৫)
“আর গৃহপালিত পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শেখার মতো উদাহরণ। ওগুলো দেহ-অভ্যন্তর থেকে আমরা এমন কিছু উৎপাদন করি (দুধ) যা তোমরা পান করো। ওগুলোর মধ্যে অসংখ্য উপকার আছে তোমাদের জন্য আর ওগুলো (গোস্ত) তোমরা খাও। ” (সুরা মূমিনুন- ২৩:২১)
গ. মাংস পুষ্টিকর এবং আমিষে ভরপুর
আমিষ খাদ্য প্রোটিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস। জৈবীক ভাবেই তা প্রোটিন সমৃদ্ধ। আটটি অতি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড যা দেহের দ্বারা সমন্বিত হয় না। তাই খাদ্যের মাধ্যেমে তা সরবরাহ করতে হয়। মাংসের মধ্যে আরো আছে লৌহ, ভিটামিন বি-১ এবং নিয়াসিন।
আমিষ খাদ্য প্রোটিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস। জৈবীক ভাবেই তা প্রোটিন সমৃদ্ধ। আটটি অতি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড যা দেহের দ্বারা সমন্বিত হয় না। তাই খাদ্যের মাধ্যেমে তা সরবরাহ করতে হয়। মাংসের মধ্যে আরো আছে লৌহ, ভিটামিন বি-১ এবং নিয়াসিন।
ঘ. মানুষের দাঁত সব রকম খাদ্য গ্রহনে সক্ষম করে বিন্যস্ত
আপনি যদি পর্যবেক্ষণ করেন তৃণভোজী প্রাণীর দাঁতের বিন্যাষ-যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদি। আপনি দেখে আশ্চর্য হবেন যে, তা সব একই রকম। এসব পশুর দাঁত ভোঁতা (সমতল) যা তৃণ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের জন্য উপযোগী। আপনি যদি লক্ষ্য করেন মাংসাশী পশুদের দন্ত বিন্যাস অর্থাৎ বাঘ, সিংহ, লিউপার্ড, শৃগাল, হায়েনা ইত্যাদি-এগুলোর দাঁত ধারালো যা মাংসের জন্য উপযোগী। মানুষের দাঁত লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যাবে সমতলের ভোঁতা দাঁত যেমন আছে তেমনি ধারালো এবং চোখা দাঁতও আছে। অর্থাৎ মানুষের দাঁত মাংস ও তৃণ উভয় ধরনের খাদ্য গ্রহনের জন্য উপযোগী। এক কথায় ‘সর্বভূক’।
আপনি যদি পর্যবেক্ষণ করেন তৃণভোজী প্রাণীর দাঁতের বিন্যাষ-যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদি। আপনি দেখে আশ্চর্য হবেন যে, তা সব একই রকম। এসব পশুর দাঁত ভোঁতা (সমতল) যা তৃণ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের জন্য উপযোগী। আপনি যদি লক্ষ্য করেন মাংসাশী পশুদের দন্ত বিন্যাস অর্থাৎ বাঘ, সিংহ, লিউপার্ড, শৃগাল, হায়েনা ইত্যাদি-এগুলোর দাঁত ধারালো যা মাংসের জন্য উপযোগী। মানুষের দাঁত লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যাবে সমতলের ভোঁতা দাঁত যেমন আছে তেমনি ধারালো এবং চোখা দাঁতও আছে। অর্থাৎ মানুষের দাঁত মাংস ও তৃণ উভয় ধরনের খাদ্য গ্রহনের জন্য উপযোগী। এক কথায় ‘সর্বভূক’।
কেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি চাইতেন মানুষ শুধু তরিতরকারী খাবে তাহলে আমাদের মুখে ধারালো দাঁত ক’টি দিলেন কেন? এর দ্বারা এটাই কি প্রমাণিত হয়না যে, খোদ সৃষ্টিকর্তাই চান যে, মানুষ সব ধরনের খাবার গ্রহণ করুক।
ঙ. আমিষ ও নিরামিষ দুই ধরণের খাদ্যই মানুষ হজম করতে পারে।
তৃণভোজী প্রাণির হজম প্রক্রিয়া শুধু তৃণ জাতীয় খাদ্যই হজম করতে পারে। মাংসাশী প্রাণীর হজম প্রক্রিয়া পারে শুধু মাংস হজম করতে। কিন্তু মানুষের হজম প্রক্রিয়া তৃণ ও মাংস উভয় ধরনের খাদ্যই হজম করতে সক্ষম।
তৃণভোজী প্রাণির হজম প্রক্রিয়া শুধু তৃণ জাতীয় খাদ্যই হজম করতে পারে। মাংসাশী প্রাণীর হজম প্রক্রিয়া পারে শুধু মাংস হজম করতে। কিন্তু মানুষের হজম প্রক্রিয়া তৃণ ও মাংস উভয় ধরনের খাদ্যই হজম করতে সক্ষম।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি চাইতেন আমরা শুধু নিরামিষ ভক্ষণ করি তাহলে তিনি আমাদেরকে এমন হজম শক্তি দিলেন কেন যা দিয়ে তৃণ ও মাংস উভয় ধরনের খাদ্যই হজম করা যায়?
চ. হিন্দু ধর্ম-গ্রন্থ আমিষ খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দেয়
১. অসংখ্য হিন্দু রয়েছে যারা নিষ্ঠাবান নিরামিষ ভোজি। তারা আমিষ খাদ্যকে তাদের ধর্ম বিরোধী মনে করে। অথচ আসল সত্য হলো, হিন্দু শাস্ত্রই মাংস খাবার অনুমতি দিয়েছে। গ্রন্থসমূহ উল্লেখ করেছে- পরম বিজ্ঞ সাধু-সন্তরা আমিষ খাবার গ্রহণ করতেন।
১. অসংখ্য হিন্দু রয়েছে যারা নিষ্ঠাবান নিরামিষ ভোজি। তারা আমিষ খাদ্যকে তাদের ধর্ম বিরোধী মনে করে। অথচ আসল সত্য হলো, হিন্দু শাস্ত্রই মাংস খাবার অনুমতি দিয়েছে। গ্রন্থসমূহ উল্লেখ করেছে- পরম বিজ্ঞ সাধু-সন্তরা আমিষ খাবার গ্রহণ করতেন।
২. হিন্দুদের আইনের গ্রন্থ মনুশ্রুতি পঞ্চম অধ্যায় শ্লোক ৩০এ আছে-
”খাদ্য গ্রহণকারী যে খাবার খায়, সেই সব পশুর যা খাওয়া যায়,মন্দ কিছু করে না।এমনকি সে যদি তা করে দিনের পর দিন। ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন কিছু ভক্ষিত হবে আর কিছু ভক্ষণ করবে।”
৩. মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩১শ্লোকে আবার বলা হয়েছে-
”যা মাংস ভক্ষণ শুদ্ধ উৎসের জন্য। ঈশ্বরের বিধান হিসেবে বংশ পরম্পরায় তা জানা আছে।”
৪. এরপরে মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩৯ এবং ৪০ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ
”ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন উৎসর্গের পশু উৎসর্গের জন্যই। সুতরাং উৎসর্গের জন্য হত্যা নয়।”
৫. মহাভারত অনুশীলন পর্ব ৮৮ অধ্যায় বর্ণনা করছে-
”ধর্মরাজ যুধিষ্টির ও পিতামহ ভীষ্ম, এদের, এদের মধ্যে কথোপকথন কেউ যদি শ্রাদ্ধ করতে চায় তাহলে সে অনুষ্ঠানে কি ধরনের খাবার খাওয়ালে স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষ (এবং মাতাগণ) সন্তুষ্ট হবেন। যুধিষ্টির বলল, হে মহাশক্তির মহাপ্রভু! কি সেই সব বস্তু সামগ্রী যাহা-যদি উৎসর্গ করা হয় তাহলে তারা প্রশান্তি লাভ করবে ? কি সেই বস্তু সামগ্রী যা (উৎসর্গ করলে) স্থায়ী হবে? কি সেই বস্তু যা (উৎসর্গ করলে) চিরস্থায়ী হবে?ভীষ্ম বলেছেন, তাহলে শোন হে যুধিষ্টীর! কী সেই সব সামগ্রী। যারা গভীর জ্ঞান রাখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পর্কে- যা উপযোগী শ্রাদ্ধের জন্য। আর কি সেই ফল-ফলাদি যা তার সঙ্গে যাবে। সীম বিচীর সাথে চাল, বার্লী এবং মাশা এবং পানি আর বৃক্ষমূল (আদা, আলু বা মূলা জাতীয়) তার সাথে ফলাহার। যদি স্বর্গীয় পিতৃদেবদের শ্রাদ্ধে দেয়া হয়। হে রাজা! তা হলে তারা এক মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে।”
”শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মৎস সহকারে আপ্যায়ন করলে স্বর্গীয় পিতৃকুল দুই মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে। ভেড়ার মাংস সহকারে- তিন মাস। খরগোশ সহকারে চারমাস। ছাগ-মাংস সহকারে ৫ মাস। শুকর-মাংস সহকারে ছয় মাস। পাখীর মাংস দিয়ে আপ্যায়িত করলে সাত মাস। হরিণের মধ্যে ‘প্রিসাতা’ হরিণ শিকার করে খাওয়ালে আট মাস এবং ‘রুরু’ হরিণ দিলে নয় মাস। আর গাভীর মাংস দিলে দশমাস। মহিসের মাংশ দিলে তাদের সন্তুষ্টি এগারো মাস বজায় থাকে।শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে, বিশেষ করে বলা হয়েছে তাদের সন্তুষ্টি থাকে পুরো এক বছর। ঘি মিশ্রিত পায়েশ, স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের কাছে গরুর মাংসের মতোই প্রিয়। ভদ্রিনাসার (বড় ষাড়) মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে পিতৃপুরুষ বার বছর সন্তুষ্ট থাকেন। পিতৃপুরুষের মৃত্যু বার্ষিকি গুলোর যে দিনটিতে সে মারা গেছে সেই রকম একটি দিন দিন যদি শুক্ল পক্ষের হয় আর তখন যদি গন্ডারের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করা যায়- স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষম হয়ে যায়। ‘কালাসকা’ কাঞ্চন ফুলের পাপড়ি আর লাল ছাগলের মাংস যদি দিতে পারো তাহলেও তাদের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাবে।”
অতএব আপনি যদি চান আপনার স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাক তাহলে লাল ছাগলের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করতে হবে।
ছ.হিন্দু ধর্ম অন্যান্য ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ তার অনুসারীদের আমিষ খাদ্য গ্রহনের অনুমতি দেয়। তথাপি অনেক হিন্দু নিরামিষ ভোজনকে সংযোজন করে নিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা এসেছে ‘জৈন’ ধর্ম থেকে।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ তার অনুসারীদের আমিষ খাদ্য গ্রহনের অনুমতি দেয়। তথাপি অনেক হিন্দু নিরামিষ ভোজনকে সংযোজন করে নিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা এসেছে ‘জৈন’ ধর্ম থেকে।
জ. উদ্ভীদেরও জীবন আছে
বিশেষ কিছু ধর্ম খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। কারণ তারা জীব হত্যার সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি কেউ কোনো সৃষ্ট জীবকে হত্যা না করে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমি হবো প্রথম ব্যক্তি যে এধরনের জীবন যাপন পদ্ধতিকে বেছে নেবে।
বিশেষ কিছু ধর্ম খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। কারণ তারা জীব হত্যার সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি কেউ কোনো সৃষ্ট জীবকে হত্যা না করে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমি হবো প্রথম ব্যক্তি যে এধরনের জীবন যাপন পদ্ধতিকে বেছে নেবে।
অতীত কালের মানুষ মনে করত উদ্ভিদের প্রাণ নেই। অথচ আজ তা বিশ্ববাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, উদ্ভীদেরও প্রাণ আছে। কাজেই সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজী হয়েও জীব হত্যা না করার শর্ত পূরণ হচ্ছে না।
ঝ. উদ্ভীদ ব্যাথাও অনুভব করতে পারে
এর পরেও হয়তো নিরামিষ ভোজীরা বলবেন, প্রাণ থাকলে কি হবে উদ্ভীদ ব্যাথা অনুভব করতে পারে না। তাই পশু হত্যার চাইতে এটা তাদের কম অপরাধ। আজকের বিজ্ঞান পরিষ্কার করে দিয়েছে উদ্ভিদও ব্যাথা অনুভব করে কিন্তু তাদের সে আর্ত চিৎকার মানুষই শোনার ক্ষমতা রাখে না ২০ Hertz থেকে ২০০০ Hertz এর ওপরে বা নীচের কোনো শব্দ মানুষের শ্রুতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। একটি কুকুর কিন্তু শুনতে পারে ৪০,০০০ Herts পর্যন্ত। এজন্য কুকুরের জন্য নিরব ‘হুইসেল’ বানানো হয়েছে যার ফ্রীকোয়েন্সী ২০,০০০ Hertz এর বেশী এবং ৪০,০০০ Hertz এর মধ্যে। এসব হুইসেল শুধু কুকুর শুনতে পারে, মানুষ পারে না। কুকুর এ হুইসেল শুনে তার মালিককে চিনে নিতে পারে এবং সে চলে আসে তার প্রভুর কাছে।
এর পরেও হয়তো নিরামিষ ভোজীরা বলবেন, প্রাণ থাকলে কি হবে উদ্ভীদ ব্যাথা অনুভব করতে পারে না। তাই পশু হত্যার চাইতে এটা তাদের কম অপরাধ। আজকের বিজ্ঞান পরিষ্কার করে দিয়েছে উদ্ভিদও ব্যাথা অনুভব করে কিন্তু তাদের সে আর্ত চিৎকার মানুষই শোনার ক্ষমতা রাখে না ২০ Hertz থেকে ২০০০ Hertz এর ওপরে বা নীচের কোনো শব্দ মানুষের শ্রুতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। একটি কুকুর কিন্তু শুনতে পারে ৪০,০০০ Herts পর্যন্ত। এজন্য কুকুরের জন্য নিরব ‘হুইসেল’ বানানো হয়েছে যার ফ্রীকোয়েন্সী ২০,০০০ Hertz এর বেশী এবং ৪০,০০০ Hertz এর মধ্যে। এসব হুইসেল শুধু কুকুর শুনতে পারে, মানুষ পারে না। কুকুর এ হুইসেল শুনে তার মালিককে চিনে নিতে পারে এবং সে চলে আসে তার প্রভুর কাছে।
আমেরিকার এক খামারের মালিক অনেক গবেষণার পর একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যা দিয়ে উদ্ভীদের কান্না মানুষের শ্রুতিযোগ্য করে তোলা যায়। সে বিজ্ঞানী বুঝে নিতে পারত, উদ্ভীদ কখন পানির জন্য চিৎকার করত। একেবারে এখনকার গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, উদ্ভীদ সুখ ও দুঃখ অনুভব করতে পারে এবং পারে চিৎকার করে কাঁদতেও।
ঞ. দু’টি ইন্দ্রীয়ানুভূতী কম সম্পন্ন প্রাণীকে হত্যা করা কম অপরাধ নয়
এবার নিরামিষ ভোজীরা তর্কে অবতীর্ণ হবেন যে, উদ্ভীদের মাত্র দু’টি অথবা তিনটি অনুভূতির ইন্দ্রীয় আছে আর পশুর আছে পাঁচটি। কাজেই পশু হত্যার চাইতে উদ্ভীদ হত্যা অপরাধের দিক থেকে কম।
এবার নিরামিষ ভোজীরা তর্কে অবতীর্ণ হবেন যে, উদ্ভীদের মাত্র দু’টি অথবা তিনটি অনুভূতির ইন্দ্রীয় আছে আর পশুর আছে পাঁচটি। কাজেই পশু হত্যার চাইতে উদ্ভীদ হত্যা অপরাধের দিক থেকে কম।
ধরুন এক ভাই জন্মগত ভাবেই অন্ধ ও কালো। চোখে দেখেনা কানেও শোনেনা। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় দুটি ইন্দ্রীয় তার কম। সে যখন পূর্ণ যৌবনে এসে প্বৌছাল তখন এক লোক নির্দয়ভাবে তাকে খুন করল। খুনী ধরা পড়ার পর- বিচারালয়ে দাঁড়িয়ে আপনি কি বিচারপতিকে বলবেন, মহামান্য আদালত খুনিকে আপনি পাঁচ ভাগের তিন ভাগ শাস্তি দিন?
জ্যোতীর্ময় কুরআন বলেছেঃ-
”হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা থেকে পবিত্র ও উত্তম (জিনিসগুলো) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করো।”
ট. গৃহপালিত পশুর সংখ্যাধিক্য
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি ফল-মূল তরিতরকারী ও শাক শব্জীকেই খাবার হিসাবে বেছে নেয় তা হলে গবাদী পশুর জন্য ভু-পৃষ্ঠ ছেড়ে দিয়ে মানুষকে অন্য কোনো গ্রহে গিয়ে বাস করতে হবে। আর খাল বিল নদী নালা ও সাগর মহাসাগর পানি শূন্য হয়ে যাবে মাছ ও অন্যান্য জ্বলজ প্রাণীর আধিক্য। কেননা উভয় শ্রেণীর জন্মের হার ও প্রবৃদ্ধি এত বেশি যে, এক শতাব্দী লাগবে না এ পৃথিবী তাদের দখলে চলে যেতে।
সুতরাং সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালা খুব ভালো করে জানেন এবং বোঝেন। তাঁর সৃষ্টিকুলের ভারসাম্য তিনি কিভাবে রক্ষা করবেন। কাজেই এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে, তিনি কি কারণে আমাদেরকে মাছ মাংস খাবার অনুমতি দিয়েছেন।
✔ জবাব:-
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অথবা ধর্ম সম্পর্কিত কোনো আলোচনা উঠলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ প্রশ্নটি মুসলিমদের দিকে ছুঁড়ে মারা হয়। সুপরিকল্পিত এ প্রচার, বিরামহীনভাবে প্রচারের প্রতিটি মাধ্যম থেকে আরো অসংখ্য মিথ্যা ও ভুল তথ্য সহকারে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে। কার্যত এই ধরনের ভুল তথ্য ও মিথ্যা রটনা মুসলিমদেরকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যই করা হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অথবা ধর্ম সম্পর্কিত কোনো আলোচনা উঠলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ প্রশ্নটি মুসলিমদের দিকে ছুঁড়ে মারা হয়। সুপরিকল্পিত এ প্রচার, বিরামহীনভাবে প্রচারের প্রতিটি মাধ্যম থেকে আরো অসংখ্য মিথ্যা ও ভুল তথ্য সহকারে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে। কার্যত এই ধরনের ভুল তথ্য ও মিথ্যা রটনা মুসলিমদেরকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যই করা হয়।
ওকলাহোমায় বোমা বিষ্ফোরনের পরে আমেরিকান প্রচার মাধ্যমের মুসলিম বিরোধী প্রচারণার একটি প্রকৃষ্ট নমুনা পাওয়া যায় গেছে। যেখানে এই আক্রমনের নেপথ্যে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ষড়যন্ত্র’ কাজ করেছে বলে সংবাদ মাধ্যম গুলোর ঘোষনা করে দিতে এতটুকু দেরী হয়নি। অথচ মূল অপরাধী হিসেবে পরবর্তীকালে যাকে সনাক্ত করা হয়েছে সে ছিল ‘আমেরিকান সশস্ত্র বাহিনীরই একজন সৈনিক’। আসুন এবার সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের অভিযোগ দুটি পর্যালোচনা করে দেখি।
ক. মৌলবাদী শব্দটির সংজ্ঞা
মৌলবাদী এমন এক ব্যক্তি যে অনুসরণ ও আনুগত্য করে তার চিন্তা বিশ্বাসের মৌলনীতি ও শিক্ষা সমূহকে। কেই যদি ভালো ডাক্তার হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং কঠোর অনুশীলনী চালাতে হবে ঔষধের মূল কার্যকারীতার ওপর। অন্য কথায় তাকে হতে হবে ঔষধী জগতের একনিষ্ঠ মৌলবাদী। একইভাবে কেই যদি গণিতবেত্তা বা গণিতবীদ হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে পারতে হবে এবং একাগ্র মনোযোগে অনুশীলনী চালাতে হবে গণিতের মূল সূত্রের ওপরে। অর্থাৎ তাকে হতে হবে গণিত শাস্ত্রের মৌলবাদী। একইভাবে কেই যদি বিজ্ঞানী হতে চায় তাহলে তাকে জেনে নিতে হবে, বুঝতে হবে এবং গভীর গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে অনুশীলনী চালাতে হবে বিজ্ঞানের মৌলতত্ত্ব ও মূল সূত্রগুলোর ওপর। অর্থাৎ তাকে হতে হবে বিজ্ঞান জগতের মৌলবাদী।
মৌলবাদী এমন এক ব্যক্তি যে অনুসরণ ও আনুগত্য করে তার চিন্তা বিশ্বাসের মৌলনীতি ও শিক্ষা সমূহকে। কেই যদি ভালো ডাক্তার হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং কঠোর অনুশীলনী চালাতে হবে ঔষধের মূল কার্যকারীতার ওপর। অন্য কথায় তাকে হতে হবে ঔষধী জগতের একনিষ্ঠ মৌলবাদী। একইভাবে কেই যদি গণিতবেত্তা বা গণিতবীদ হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে পারতে হবে এবং একাগ্র মনোযোগে অনুশীলনী চালাতে হবে গণিতের মূল সূত্রের ওপরে। অর্থাৎ তাকে হতে হবে গণিত শাস্ত্রের মৌলবাদী। একইভাবে কেই যদি বিজ্ঞানী হতে চায় তাহলে তাকে জেনে নিতে হবে, বুঝতে হবে এবং গভীর গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে অনুশীলনী চালাতে হবে বিজ্ঞানের মৌলতত্ত্ব ও মূল সূত্রগুলোর ওপর। অর্থাৎ তাকে হতে হবে বিজ্ঞান জগতের মৌলবাদী।
খ. সব মৌলবাদী একরকম নয়
সব মৌলবাদীর চিত্র যেমন একই তুলি দিয়ে আঁকা যাবে না। তেমনি ভালো কি মন্দ, হুট করে এরকম কোনো মন্তব্যও করা যাবে না। যে কোনো মৌলবাদীর শ্রেণী বিন্যাস নির্ভর করে তার কাজ ও সে কর্মে জগত নিয়ে। একটি মৌলবাদী ডাকাত বা চোর সমাজের জন্য ক্ষতিকর সুতরাং সে অনাকাঙ্খিত। অপরদিকে একজন মৌলবাদী চিকিৎসক সমাজের জন্য কল্যাণকর এবং শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র।
সব মৌলবাদীর চিত্র যেমন একই তুলি দিয়ে আঁকা যাবে না। তেমনি ভালো কি মন্দ, হুট করে এরকম কোনো মন্তব্যও করা যাবে না। যে কোনো মৌলবাদীর শ্রেণী বিন্যাস নির্ভর করে তার কাজ ও সে কর্মে জগত নিয়ে। একটি মৌলবাদী ডাকাত বা চোর সমাজের জন্য ক্ষতিকর সুতরাং সে অনাকাঙ্খিত। অপরদিকে একজন মৌলবাদী চিকিৎসক সমাজের জন্য কল্যাণকর এবং শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র।
গ. একজন মৌলবাদী মুসলিম হতে পেরে আমি গর্বিত
আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম। আল্লাহর অসীম কৃপায়-জানি, বুঝি এবং চেষ্টা করি ইসলামের মুলনীতি সমূহকে অনুশীলন করতে। আল্লাহতে সমর্পিত কোনো একজন মৌলবাদী মুসলিম আখ্যায়িত হতে আদৌ লজ্জিত হবে না। একজন মৌলবাদী মুসলিম হতে পেরে আমি গর্বিত এবং নিজেকে ধন্য মনে করি কারণ আমি জানি ইসলামের মৌলনীতি সমূহ বিশ্বমানবতার জন্য শুধুই কল্যাণকর। পৃথিবীর জন্য তা আশির্বাদ স্বরুপ। ইসলামের এমন একটি মূলনীতি খূঁজে পাওয়া যাবে না যা বিশ্বমানবতার জন্য ক্ষতিকর অথবা সামগ্রীকভাবে মানুষের স্বার্থের প্রতিকূলে।
আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম। আল্লাহর অসীম কৃপায়-জানি, বুঝি এবং চেষ্টা করি ইসলামের মুলনীতি সমূহকে অনুশীলন করতে। আল্লাহতে সমর্পিত কোনো একজন মৌলবাদী মুসলিম আখ্যায়িত হতে আদৌ লজ্জিত হবে না। একজন মৌলবাদী মুসলিম হতে পেরে আমি গর্বিত এবং নিজেকে ধন্য মনে করি কারণ আমি জানি ইসলামের মৌলনীতি সমূহ বিশ্বমানবতার জন্য শুধুই কল্যাণকর। পৃথিবীর জন্য তা আশির্বাদ স্বরুপ। ইসলামের এমন একটি মূলনীতি খূঁজে পাওয়া যাবে না যা বিশ্বমানবতার জন্য ক্ষতিকর অথবা সামগ্রীকভাবে মানুষের স্বার্থের প্রতিকূলে।
অনেক মানুষই ইসলাম সম্পর্কে তাদের মনে অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে এবং ইসলামের কিছু কিছু শিক্ষাকে অযৌক্তিক ও অবিচারমূলক বলে আখ্যায়ীত করে। এটা ইসলাম সম্পর্কে তাদের অশূদ্ধ ও অপ্রতুল জ্ঞানের কারণে।
কেই যদি মুক্তবুদ্ধি মুক্তমন ও ন্যায়পরায়ন মনোবৃত্তি নিয়ে ইসলামের শিক্ষা সমূহকে সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেন, তাহলে তারপক্ষে একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় থাকবে না যে, ইসলাম ব্যক্তির স্বতন্ত্র পর্যায়ে অথবা সমাজের সামগ্রীক পর্যায়ে -মানবতার জন্য অফুরন্ত কল্যাণের এক অমিয় ঝর্ণাধারা।
ঘ. মৌলবাদ শব্দটির আভিধানিক অর্থ
ওয়েবেষ্টারস ডিকশনারী অনুযায়ী “ফান্ডামেন্টালিজম” ছিল একটি আন্দোলনের নাম। যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমেরিকার প্রোটেস্ট্যানবাদীরা গড়ে তুলেছিল। এটা ছিল আধুনিকতাবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং বাইবেলের নির্ভুল হওয়ার স্বপক্ষে কঠিন চাপ প্রয়োগ। তা শুধু বিশ্বাস ও শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়- সাহিত্য ও ঐতিহাসিক তথ্যাদির ক্ষেত্রেও। বাইবেলের ভাষা, আক্ষরিক অর্থেই তাদের গড় এর-এভাবে ‘মৌলবাদ’ এমনই একটি শব্দ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়েছিল খ্রীস্টানদের একটি দলের জন্য যারা বিশ্বাস করতো ‘বাইবেল’ কোনো ধরনের ভুল ভ্রান্তিহীন, আক্ষরিক ভাবেই আল্লাহর কথা।
ওয়েবেষ্টারস ডিকশনারী অনুযায়ী “ফান্ডামেন্টালিজম” ছিল একটি আন্দোলনের নাম। যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমেরিকার প্রোটেস্ট্যানবাদীরা গড়ে তুলেছিল। এটা ছিল আধুনিকতাবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং বাইবেলের নির্ভুল হওয়ার স্বপক্ষে কঠিন চাপ প্রয়োগ। তা শুধু বিশ্বাস ও শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়- সাহিত্য ও ঐতিহাসিক তথ্যাদির ক্ষেত্রেও। বাইবেলের ভাষা, আক্ষরিক অর্থেই তাদের গড় এর-এভাবে ‘মৌলবাদ’ এমনই একটি শব্দ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়েছিল খ্রীস্টানদের একটি দলের জন্য যারা বিশ্বাস করতো ‘বাইবেল’ কোনো ধরনের ভুল ভ্রান্তিহীন, আক্ষরিক ভাবেই আল্লাহর কথা।
অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে বর্ণিত ‘ফান্ডামেন্টালিজম’-এর অর্থ- যে কোনো ধর্মের মৌলিক শিক্ষাসমূহকে কোনো শৈথীল্য বরদাস্ত না করে কঠোর অনুশীলন, লালন ও পালন করা, বিশেষ করে-- ইসলামের।
আজ যখনই কেউ ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে তার ভাবনায় চলে আসে এমন একজন মুসলিম যে সন্ত্রাসী।
ঙ. প্রত্যেক মুসলিমের সন্ত্রাসী হওয়া কাম্য
প্রত্যেক মুসলিমের সন্ত্রাসী একজন সন্ত্রাসী তো হওয়া উচিত। সন্ত্রাসী তো তাকেই বলে যে ত্রাস বা আতঙ্কের সৃষ্টি করে। যখনই কোনো ডাকাত একজন পুলিশকে দেখে- সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ একজন পুলিশ ডাকাতের জন্য ‘সন্ত্রাসী’। এভাবেই চোর-ডাকাত, ধর্ষণকারী, বদমাশ তথা সমাজ বিরোধী সকল দুষ্কৃতকারীর জন্য একজন মুসলিমকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী হতে হবে। যখনই সমাজ বিরোধী কোনো বদমাশ একজন মুসলিমকে দেখবে সে যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
প্রত্যেক মুসলিমের সন্ত্রাসী একজন সন্ত্রাসী তো হওয়া উচিত। সন্ত্রাসী তো তাকেই বলে যে ত্রাস বা আতঙ্কের সৃষ্টি করে। যখনই কোনো ডাকাত একজন পুলিশকে দেখে- সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ একজন পুলিশ ডাকাতের জন্য ‘সন্ত্রাসী’। এভাবেই চোর-ডাকাত, ধর্ষণকারী, বদমাশ তথা সমাজ বিরোধী সকল দুষ্কৃতকারীর জন্য একজন মুসলিমকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী হতে হবে। যখনই সমাজ বিরোধী কোনো বদমাশ একজন মুসলিমকে দেখবে সে যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় এমন এক লোকের জন্য যে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। কাজেই একজন সত্যিকারের মুসলিম সন্ত্রাসী হবে অপরাধীদের জন্য-নিরীহ সাধারণ জগণের নয়। বস্তুত একজন মুসলিমকে হয়ে উঠতে হবে নিরীহ জনসাধারনের সামনে শান্তি ও নিরাপত্তার অবলম্বন।
চ. একই ব্যক্তিকে একই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে- সন্ত্রাসী এবং দেশ প্রেমিক
ইংরেজদের গোলামী থেকে ভারত যখন স্বাধীনতা অর্জন করল তখন ভারত-মুক্তির অসংখ্য যোদ্ধা যারা গান্ধীবাদী অহিংসার পথকে সমর্থন করেনি। ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই একই ব্যক্তিত্বদের ভারতীয়রা সম্মানিত করেছে। আর সেই একই কর্মকান্ডের কজন আখ্যা দিয়েছে ‘দেশ প্রেমিক’।
ইংরেজদের গোলামী থেকে ভারত যখন স্বাধীনতা অর্জন করল তখন ভারত-মুক্তির অসংখ্য যোদ্ধা যারা গান্ধীবাদী অহিংসার পথকে সমর্থন করেনি। ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই একই ব্যক্তিত্বদের ভারতীয়রা সম্মানিত করেছে। আর সেই একই কর্মকান্ডের কজন আখ্যা দিয়েছে ‘দেশ প্রেমিক’।
এভাবেই দুটি ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছিল একই লোকদেরকে একই কর্মকান্ডের জন্য। এক শ্রেণী যেখানে তাকে বলেছে একজন ‘সন্ত্রাসী। সেখানে অন্য শ্রেণী তাকে বলেছে ‘দেশ প্রেমিক’। যারা বিশ্বাস করত ইংরেজদের অধিকার ছিল ভারত শাসন করার তারা তাদেরকে সন্ত্রাসী বলত। আর যারা বিশ্বাস করত ইংরেজদের কোনো অধিকার নেই ভারত শাসন করার, তারা তাদেরকে বলত ‘দেশপ্রেমীক’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধা’। কাজেই বিষয়টা হালকা করে গুরুত্বহীনভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। কারো ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করার আগে ভালো করে শুনে নিতে হবে উভয় পক্ষের যাবতীয় বক্তব্য। অবস্থা ও প্রেক্ষিতের পর্যালোচনা করতে হবে। ব্যক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারপর বিচার করা যেতে পারে। এবং তারপর প্রশ্ন আসবে চূড়ান্ত মন্তব্যের।
ছ. ইসলাম মানে শান্তি
ইসলাম শব্দের উৎপত্তি ‘সালাম’ থেকে। এর অর্থ শান্তি। একটা শান্তির জীবন ব্যবস্থা। যার মৌলিক নীতি সমূহ তার অনুসারীদের শিক্ষা দেয় গোটা পৃথিবীতে শান্তির শ্লোগান উচ্চকিত করতে এবং তা অর্জিত হলে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।
ইসলাম শব্দের উৎপত্তি ‘সালাম’ থেকে। এর অর্থ শান্তি। একটা শান্তির জীবন ব্যবস্থা। যার মৌলিক নীতি সমূহ তার অনুসারীদের শিক্ষা দেয় গোটা পৃথিবীতে শান্তির শ্লোগান উচ্চকিত করতে এবং তা অর্জিত হলে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।
প্রতিটি মুসলিম মৌলবাদী হবে। তাকে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করতে হবে শান্তির জীবন বিধান ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সমূহের। তাকে মূর্তিমান আতঙ্ক ও সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে হবে সমাজ বিরোধী দুষকৃতিকারীদের সামনে। যাতে সমাজে ন্যায়পরায়ণা, সুবিচার ও শান্তি-শৃঙ্খলা দিন দিন বৃদ্ধি পায়- বজায় থাকে।
১৬:- প্রশ্নঃ ইসলামকে কিভাবে শান্তির ধর্ম বলা যাবে যেখানে তা প্রচার ও প্রসার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যেমে?
১৬:- প্রশ্নঃ ইসলামকে কিভাবে শান্তির ধর্ম বলা যাবে যেখানে তা প্রচার ও প্রসার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যেমে?
✔ জবাব:-
কিছু অমুসলিম এটা একটা সাধারণ অভিযোগ যে, সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম এত কোটি কোটি অনুগামী পেতে পারতো না, যদি না তা- শক্তি প্রয়োগে প্রসারিত হতো। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেবে, যা তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারের অভিযোগ থেকে অনেক দূরে। এটা ছিল সত্যের সহজাত শক্তি, সঙ্গত কারণ ও মানব প্রকৃতি সম্মত যৌক্তিকতা যা এক দ্রুত ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাহন হয়েছে-
কিছু অমুসলিম এটা একটা সাধারণ অভিযোগ যে, সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম এত কোটি কোটি অনুগামী পেতে পারতো না, যদি না তা- শক্তি প্রয়োগে প্রসারিত হতো। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেবে, যা তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারের অভিযোগ থেকে অনেক দূরে। এটা ছিল সত্যের সহজাত শক্তি, সঙ্গত কারণ ও মানব প্রকৃতি সম্মত যৌক্তিকতা যা এক দ্রুত ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাহন হয়েছে-
ক. ইসলাম মানে শান্তি
ইসলাম এসেছে মূল শব্দ ‘সালাম’ থেকে। যার অর্থ শান্তি। এর আরো একটি অর্থ হলো নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছা-শক্তিকে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত করা। এভাবে ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা অর্জন করা যায় সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে সমর্পিত করে দিলে।
ইসলাম এসেছে মূল শব্দ ‘সালাম’ থেকে। যার অর্থ শান্তি। এর আরো একটি অর্থ হলো নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছা-শক্তিকে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত করা। এভাবে ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা অর্জন করা যায় সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে সমর্পিত করে দিলে।
খ. শান্তি বজায় রাখতে কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগ করতে হয়
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুকুলে নয়। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা তাদের নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এর বিগ্ন ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে অপরাধী ও সমাজ বিরোধদের দমন করার জন্য সুনর্দিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সুসজ্জিত বাহিনী আছে। যাদের আমরা ‘পুলিশ’ বলি। ইসলাম শান্তির প্রবর্তক। একই সাথে তার অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করে জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোনো কোনো সময় শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইসলাম কেবল মাত্র মানুষের সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেয়।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুকুলে নয়। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা তাদের নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এর বিগ্ন ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে অপরাধী ও সমাজ বিরোধদের দমন করার জন্য সুনর্দিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সুসজ্জিত বাহিনী আছে। যাদের আমরা ‘পুলিশ’ বলি। ইসলাম শান্তির প্রবর্তক। একই সাথে তার অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করে জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোনো কোনো সময় শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইসলাম কেবল মাত্র মানুষের সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেয়।
গ. ঐতিহাসিক ডি-ল্যাসি-ওলেরীর মন্তব্য
বিশ্ববরণ্য ঐতিহাসিক ডি ল্যাসী ওলেরী’ লিখিত “ইসলাম আট দা ক্রস রোড” গ্রন্থের অষ্টম পৃষ্ঠায় যে মন্তব্য তিনি করেছেন তাতে “তরবারীর সাহায্যে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে” এই ভ্রান্ত ধারণায় যারা নিমজ্জিত-তাদের জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব-
বিশ্ববরণ্য ঐতিহাসিক ডি ল্যাসী ওলেরী’ লিখিত “ইসলাম আট দা ক্রস রোড” গ্রন্থের অষ্টম পৃষ্ঠায় যে মন্তব্য তিনি করেছেন তাতে “তরবারীর সাহায্যে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে” এই ভ্রান্ত ধারণায় যারা নিমজ্জিত-তাদের জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব-
“অবশেষে ইতিহাসই একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করল যে, ধর্মান্ধ মুসলিমদের কাহিনী হলো পৃথিবীর এক প্রান্ত পর্যন্ত তারা ঝেঁটিয়ে বেরিয়েছে আর বিজিত জাতিগুলোকে তরবারীর অগ্রভাগে রেখে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছে, এটা অনেক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কল্পনা প্রসূত, উদ্ভট ও অবাস্তব কাহিনী-যা ঐতিহাসিকরা খুব বেশি পুনরাবৃত্তি করেছে”।
ঘ. মুসলিমরা আটশত বছর স্পেন শাসন করেছে
প্রায় আট’শ বছর স্পেন শাসন করেছে মুসলিমরা। সেখানে মানুষকে ‘তরবারীর শক্তি প্রয়োগ করে ধর্মান্তরিত করেছে’ -এমন কথা চরম শত্রুও বলতে লজ্জা পাবে। আর খ্রীস্টান ক্রুসেডাররা স্পেনে এসে সেই মুসলিমদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অবশেষে এমন একজন মুসলিম স্পেনে ছিল না যে তার নামাযের জন্য প্রকাশ্যে আযান দিতে পারত।
প্রায় আট’শ বছর স্পেন শাসন করেছে মুসলিমরা। সেখানে মানুষকে ‘তরবারীর শক্তি প্রয়োগ করে ধর্মান্তরিত করেছে’ -এমন কথা চরম শত্রুও বলতে লজ্জা পাবে। আর খ্রীস্টান ক্রুসেডাররা স্পেনে এসে সেই মুসলিমদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অবশেষে এমন একজন মুসলিম স্পেনে ছিল না যে তার নামাযের জন্য প্রকাশ্যে আযান দিতে পারত।
ঙ. ১৪ মিলিয়ন আরব মিশরীয় খ্রীস্টান
সমগ্র আরব ভুখন্ডে এক হাজার চারশ বছর মুসলিমরাই ছিল মালিক, মনিক, শাসক। এর মধ্যে সামান্য কিছু বছর ব্রিটিশ এবং আর কিছু বছর ফরাসীরা দখলদারিত্ব করেছিল। সর্বোপরি মুসলিমরা যদি তরবারী ব্যবহার করত তাহলে একজন খ্রীস্টানও কি সেখানে এখন খুঁজে পাওয়ার কথা ?
সমগ্র আরব ভুখন্ডে এক হাজার চারশ বছর মুসলিমরাই ছিল মালিক, মনিক, শাসক। এর মধ্যে সামান্য কিছু বছর ব্রিটিশ এবং আর কিছু বছর ফরাসীরা দখলদারিত্ব করেছিল। সর্বোপরি মুসলিমরা যদি তরবারী ব্যবহার করত তাহলে একজন খ্রীস্টানও কি সেখানে এখন খুঁজে পাওয়ার কথা ?
চ. ভারতে ৮০% এর বেশি অমুসলিম
মুসলিমরা ভারত শাসন করেছে প্রায় হাজার বছর। যদি তারা চাইতো তাহলে তাদের সেই রাজ-শক্তি ও ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে ভারতের প্রতিটি অমুসলিমকে ধর্মান্তরিত করে নিতে পারতো। অথচ শতকরা আশি ভাগেরও বেশি অমুসলিম আজো ভারতেই আছে। এদের প্রতিটি অমুসলিম আজ সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে যে, “ইসলাম তরবারীর সাহায্যে প্রসারিত হয়নি।”
মুসলিমরা ভারত শাসন করেছে প্রায় হাজার বছর। যদি তারা চাইতো তাহলে তাদের সেই রাজ-শক্তি ও ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে ভারতের প্রতিটি অমুসলিমকে ধর্মান্তরিত করে নিতে পারতো। অথচ শতকরা আশি ভাগেরও বেশি অমুসলিম আজো ভারতেই আছে। এদের প্রতিটি অমুসলিম আজ সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে যে, “ইসলাম তরবারীর সাহায্যে প্রসারিত হয়নি।”
ছ. ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া
ইন্দোনেশিয়া একটি দেশ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ-সংখ্যক মুসলিম সেখানে বাস করে। মালয়েশিয়ায় জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম। কেউ একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন মুসলিম সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল?
ইন্দোনেশিয়া একটি দেশ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ-সংখ্যক মুসলিম সেখানে বাস করে। মালয়েশিয়ায় জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম। কেউ একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন মুসলিম সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল?
জ. আফ্রিকার পূর্বপ্রান্ত
একই ভাবে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আফ্রিকার পূর্বতীরে বিকাশ লাভ করে। কেউ একজন আবারো প্রশ্ন করতে পারে, ইসলাম যদি তরবারীর অগ্রভাগ দিয়েই প্রসারিত হয়ে থাকে তাহলে আফ্রিকার পূর্বতীরে কোন মুসলিম বাহিনী তরবারী নিয়ে গিয়েছিল?
একই ভাবে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আফ্রিকার পূর্বতীরে বিকাশ লাভ করে। কেউ একজন আবারো প্রশ্ন করতে পারে, ইসলাম যদি তরবারীর অগ্রভাগ দিয়েই প্রসারিত হয়ে থাকে তাহলে আফ্রিকার পূর্বতীরে কোন মুসলিম বাহিনী তরবারী নিয়ে গিয়েছিল?
ঝ. থমাছ কারলাইল
বিশ্ববরেণ্য ঐতিহাসিক থমাস কারলাইল তার রচনা ‘হিরোয এন্ড হিরো ওরশিপ’ গ্রন্থে ইসলামের বিকশিত হওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সেই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-“তরবারী, কিন্তু কোথায় পাবে তুমি তোমার তরবারী? প্রত্যকটি নতুন ‘মত’ তার শুরুতে সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হয়- এক জনের সংখ্যালঘুত্বে। মাত্র একজন মানুষের মাথায়। সেখানেই তা থাকে। সারা পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষ তা বিশ্বাস করে, অর্থাৎ সকল মানুষের বিপক্ষে মাত্র একজন মানুষ। একখানা তরবারী সে নিল এবং তা দিয়ে তা (তার চিন্তা) প্রচার করতে চেষ্টা করল। তাতে তার কোনো কাজ হবে কি? তোমার তরবারী তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে! মোট কথা একটি জিনিস নিজে নিজেই প্রচারিত হবে যেমনটা তার ক্ষমতা আছে।”
বিশ্ববরেণ্য ঐতিহাসিক থমাস কারলাইল তার রচনা ‘হিরোয এন্ড হিরো ওরশিপ’ গ্রন্থে ইসলামের বিকশিত হওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সেই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-“তরবারী, কিন্তু কোথায় পাবে তুমি তোমার তরবারী? প্রত্যকটি নতুন ‘মত’ তার শুরুতে সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হয়- এক জনের সংখ্যালঘুত্বে। মাত্র একজন মানুষের মাথায়। সেখানেই তা থাকে। সারা পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষ তা বিশ্বাস করে, অর্থাৎ সকল মানুষের বিপক্ষে মাত্র একজন মানুষ। একখানা তরবারী সে নিল এবং তা দিয়ে তা (তার চিন্তা) প্রচার করতে চেষ্টা করল। তাতে তার কোনো কাজ হবে কি? তোমার তরবারী তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে! মোট কথা একটি জিনিস নিজে নিজেই প্রচারিত হবে যেমনটা তার ক্ষমতা আছে।”
ঞ. দ্বীন নিয়ে কোন জবরদস্তী নেই।
কোন তরবারী দিয়ে ইসলাম বিকশিত হয়েছে? এমনকি সে তরবারী যদি মুসলিমদের হাতেও থাকতো তাহলেও তারা তা ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে পারত না কারণ তাদের হৃদয় স্পন্দন আল কুরআন বলেছেঃ-
কোন তরবারী দিয়ে ইসলাম বিকশিত হয়েছে? এমনকি সে তরবারী যদি মুসলিমদের হাতেও থাকতো তাহলেও তারা তা ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে পারত না কারণ তাদের হৃদয় স্পন্দন আল কুরআন বলেছেঃ-
” নিয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। সকল ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে সরল-শুদ্ধ সত্য-পথ স্পষ্ট করে দেয়া আছে।”
ট. জ্ঞান ও প্রজ্ঞার তরবারী
তা ছিল চেতনা ও জ্ঞানের তরবারী, যে তরবারী মানুষের হৃদয় ও মন অন্তরকে জয় করেছে। জ্যোতীর্ময় কুরআনের সূরা নাহলে বলা আছেঃ-
তা ছিল চেতনা ও জ্ঞানের তরবারী, যে তরবারী মানুষের হৃদয় ও মন অন্তরকে জয় করেছে। জ্যোতীর্ময় কুরআনের সূরা নাহলে বলা আছেঃ-
”আহবান করো সকলকে তোমার বিধাতা প্রতিপালকের পথে- পান্ডিত্যপূর্ণ সুন্দরতম বাগ্মীতার সাথে। আর যুক্তি প্রমাণ দিয়ে আলোচনা করো তাদের সাথে এমনভাবে, যা সর্বোত্তম (এবং সে আহবান হতে হবে এমন হৃদ্যতাপূর্ণ যেন কোন পাষাণ হৃদয়ের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হয়)। ” (১৬:১২৫)
ঠ. ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত পৃথিবীতে ধর্ম বর্ধিষ্ণুতার
১৯৮৬ সালের রীডার্স ডাইজেস্টের ‘এলমানাক’ সংখ্যার একটি তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধে- পূর্বের অর্ধ শতাব্দীতে প্রধান প্রধান ধর্মসমূহের বর্ধিষ্ণুতার হার সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। প্রবন্ধটি “প্লেইন ট্রুথ” মাগ্যাজিনেও প্রকাশিত হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ইসলাম-যা বেড়েছে ২৩৫% হারে। এখানে একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন যুদ্ধ অবস্থান নিয়েছিল এ শতাব্দীতে যা কোটি কোটি মানুষকে ধর্মান্তরীত করে মুসলিম বানিয়েছিল?
১৯৮৬ সালের রীডার্স ডাইজেস্টের ‘এলমানাক’ সংখ্যার একটি তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধে- পূর্বের অর্ধ শতাব্দীতে প্রধান প্রধান ধর্মসমূহের বর্ধিষ্ণুতার হার সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। প্রবন্ধটি “প্লেইন ট্রুথ” মাগ্যাজিনেও প্রকাশিত হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ইসলাম-যা বেড়েছে ২৩৫% হারে। এখানে একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন যুদ্ধ অবস্থান নিয়েছিল এ শতাব্দীতে যা কোটি কোটি মানুষকে ধর্মান্তরীত করে মুসলিম বানিয়েছিল?
ঢ. আমেরিকা ও ইউরোপে ‘ইসলাম’ দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম
আজকের দিনে আমেরিকায় দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম ‘ইসলাম’। মুসলিমের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে ইউরোপেও। শক্তি ও বিকশিত সভ্যতার অহংকারে চীৎ হয়ে থাকা পাশ্চাত্য সভ্যতার এই সব সু-সভ্য মানুষকে এত বিরাট সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করতে কোন তরবারী বাধ্য করছে?
আজকের দিনে আমেরিকায় দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম ‘ইসলাম’। মুসলিমের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে ইউরোপেও। শক্তি ও বিকশিত সভ্যতার অহংকারে চীৎ হয়ে থাকা পাশ্চাত্য সভ্যতার এই সব সু-সভ্য মানুষকে এত বিরাট সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করতে কোন তরবারী বাধ্য করছে?
ড. ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন
ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন যথার্থই বলেছেন, যারা আশঙ্কা করছে আনবিক বোমা কোনো একদিন আরবদের হাতে এসে পড়বে। তারা উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ইসলামী বোমা ইতিমধ্যেই ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা পড়েছে সেদিন যেদিন মুহাম্মদ (صلى الله عليه و سلم) জন্ম নিয়েছিলেন।
ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন যথার্থই বলেছেন, যারা আশঙ্কা করছে আনবিক বোমা কোনো একদিন আরবদের হাতে এসে পড়বে। তারা উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ইসলামী বোমা ইতিমধ্যেই ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা পড়েছে সেদিন যেদিন মুহাম্মদ (صلى الله عليه و سلم) জন্ম নিয়েছিলেন।
0 Comments