বিবাহ-সম্পর্কিত আর্টিকল
❓প্রশ্নঃ কোন হিন্দু মেয়েকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে বিবাহ করা যাবে কি?
ANSWER
🎤 যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে’ (বাক্বারাহ ২২১)। তবে তার অভিভাবক অমুসলিম হওয়ার কারণে যেহেতু অলী হ’তে পারবে না, তাই সরকারের মুসলিম প্রতিনিধি বা সমাজ নেতা উক্ত মেয়ের অলীর দায়িত্ব পালন করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যার অলী নেই তার অলী হবে দেশের শাসক’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩১ ‘বিবাহের অভিভাবক’ অনুচ্ছেদ)। আবু সুফিয়ান অমুসলিম থাকাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে তার কন্যা উম্মে হাবীবার বিয়েতে বাদশাহ নাজাশী অলীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন (ইরওয়াউল গালীল ৬/৩৫৩, হা/১৮৫০ ‘অলী’ অনুচ্ছেদ)।
❓প্রশ্নঃ মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় স্ত্রী স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে যে, মোহরানাসহ তোমার যা কিছু আছে সব ফেরত নিয়ে আমাকে তালাক দাও। অন্যথায় এখনই আমি আত্মহত্যা করব বলে সে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়। এমতাবস্থায় স্বামী নিরুপায় হয়ে একত্রে তিন তালাক প্রদান করে। অতঃপর ঘন্টাখানেক পর স্ত্রী স্বাভাবিক হ’লে তারা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে একত্রে বসবাস করতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে তিনবার এরূপ ঘটনা ঘটে। এক্ষণে করণীয় কি?
ANSWER
🎤 প্রশ্নে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তার পক্ষ থেকে ‘খোলা’ প্রার্থনা এবং স্বামী কর্তৃক জীবন বাঁচানোর স্বার্থে এভাবে তালাক প্রদান শরী‘আতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির উপর হ’তে শরী‘আতের বিধান উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একজন হ’ল মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি (তিরমিযী হা/১৪২৩; মিশকাত হা/৩২৮৭)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক মেয়েকে বিবাহ করব বলে কসম করার পর পরিবারের বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষণে এতে কোন ক্ষতির আশংকা আছে কি? উক্ত কসমের জন্য কাফফারা দিতে হবে কি?
ANSWER
🎤 পরিবারের সিদ্ধান্ত ছাড়া কাউকে বিবাহ করার ব্যাপারে এভাবে কসম করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। তা হ’ল- দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম শ্রেণীর খাদ্য প্রদান করা অথবা তাদেরকে বস্ত্র প্রদান করা অথবা একজন দাস বা দাসী মুক্ত করা। আর যদি কেউ এর সামর্থ্য না রাখে, তাহলে তিন দিন ছিয়াম পালন করবে’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)। তবে এরূপ কসম পুরা না করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব নাযিল হবে বলে আশংকা করা ঠিক নয়। কারণ এ মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না।
❓প্রশ্নঃ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল সম্পন্ন পাত্র না পেয়ে জেনে-শুনে শিরক-বিদ‘আতে লিপ্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দিলে অভিভাবককে গুনাহগার হতে হবে কি?
ANSWER
🎤 জেনে-শুনে শিরক-বিদ‘আতে লিপ্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দিলে এবং ফলশ্রুতিতে মেয়ের উপর দ্বীনী ক্ষতি নেমে আসলে অভিভাবক অবশ্যই গুনাহগার হবেন। রাসূল (ছাঃ) বিবাহের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী হা/৫০৯০; মিশকাত হা/৩০৮২; তিরমিযী হা/১০৮৪; মিশকাত হা/৩০৯০)। আল্লাহ তা‘আলা মুশরিক নারী বা পুরুষকে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন যদিও তারা মুমিনদের চেয়ে আকর্ষণীয় হয় (বাক্বারাহ ২/২২১)। অতএব অভিভাবকের দায়িত্ব হ’ল- মেয়েকে ছহীহ আক্বীদা সম্পন্ন দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দেওয়া।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের মোহর নির্ধারণের শরী‘আতের নির্দেশনা কি? সমাজে ‘মোহরে ফাতেমী’ নামে একটি পরিভাষা চালু আছে। এটা কি সুন্নাত?
ANSWER
🎤 বিবাহ মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অন্যতম প্রধান নে‘মত। আল্লাহ বলেন, তাঁর নে‘মতসমূহের অন্যতম হ’ল তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পার’ (রূম ২১)। সেকারণ বিবাহ সহজে সম্পন্ন হওয়া যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সর্বোত্তম বিবাহ হ’ল যা সহজভাবে সম্পন্ন হয় (ইবনু হিববান, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩০০)। আর বিবাহের প্রধান শর্ত হ‘ল মোহর আদায় করা (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৪৩)। এর পরিমাণ শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নয়। তবে পরিমাণে তা যত কম হয়, ততই উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, শ্রেষ্ঠ মোহর যা সহজে পরিশোধযোগ্য (বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭৯)। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘মেয়েদের মোহর সীমাহীন করো না। কেননা সীমাহীন মোহর নির্ধারণ যদি দুনিয়ায় সম্মান অথবা আখেরাতে তাক্বওয়া অর্জনের কারণ হ’ত, তবে এরূপ মোহর প্রদানে আল্লাহর নবী আগ্রহী হ’তেন। কিন্তু তিনি তার কোন স্ত্রী বা কন্যার মোহর বারো উক্বিয়া বা ৪৮০ দিরহামের অধিক নির্ধারণ করেননি’ (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ প্রভৃতি মিশকাত ‘মোহর’ অধ্যায় হা/৩২০৪)। রাসূল (ছাঃ) কুরআন শিক্ষা প্রদান, লোহার আংটি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২), এমনকি ইসলাম গ্রহণের শর্তেও বিবাহ প্রদান করেছেন (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২০৯)।
তবে স্বেচ্ছায় স্ত্রীকে মোহর বেশীও প্রদান করা যায়। জনৈক ছাহাবী তার স্ত্রীকে সে যুগে এক লক্ষ দিরহাম সমমূল্যের জমি প্রদান করেছিলেন (হাকেম, আবুদাঊদ, ইরওয়া হা/১৯২৪ ও ৪০)। বাদশাহ নাজাশী রাসূল (ছাঃ)-এর এক স্ত্রী উম্মে হাবীবাহর মোহর প্রদান করেছিলেন। যার পরিমাণ ছিল সেযুগের চার হাযার দিরহাম (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২০৮)।
‘মোহরে ফাতেমী’ বলে ইসলামে কোন পরিভাষা নেই। মোহরে ফাতেমী তথা বিশেষ ফযীলতের আশায় ফাতেমা (রাঃ)-কে প্রদত্ত মোহর অনুসরণ করা শী‘আদের আবিষ্কৃত রীতি। রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে তার প্রশস্ত ও ভারী ঢালটিকে মোহর হিসাবে ফাতিমা (রাঃ)-কে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন (নাসাঈ হা/৩৩৭৫)। তাই বলে এটা অনুসরণে বিশেষ কোন ফযীলত রয়েছে, এমনটি নয়।
তবে স্বেচ্ছায় স্ত্রীকে মোহর বেশীও প্রদান করা যায়। জনৈক ছাহাবী তার স্ত্রীকে সে যুগে এক লক্ষ দিরহাম সমমূল্যের জমি প্রদান করেছিলেন (হাকেম, আবুদাঊদ, ইরওয়া হা/১৯২৪ ও ৪০)। বাদশাহ নাজাশী রাসূল (ছাঃ)-এর এক স্ত্রী উম্মে হাবীবাহর মোহর প্রদান করেছিলেন। যার পরিমাণ ছিল সেযুগের চার হাযার দিরহাম (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২০৮)।
‘মোহরে ফাতেমী’ বলে ইসলামে কোন পরিভাষা নেই। মোহরে ফাতেমী তথা বিশেষ ফযীলতের আশায় ফাতেমা (রাঃ)-কে প্রদত্ত মোহর অনুসরণ করা শী‘আদের আবিষ্কৃত রীতি। রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে তার প্রশস্ত ও ভারী ঢালটিকে মোহর হিসাবে ফাতিমা (রাঃ)-কে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন (নাসাঈ হা/৩৩৭৫)। তাই বলে এটা অনুসরণে বিশেষ কোন ফযীলত রয়েছে, এমনটি নয়।
❓প্রশ্নঃ কোন মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ইমপ্লান্ট বা অন্য কোন মাধ্যম গ্রহণ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে জাহান্নামী হবে। একথার শারঈ ভিত্তি আছে কি?
ANSWER
🎤 দরিদ্রতার ভয়ে কোন কিছুর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ করা হারাম (ইসরা ১৭/৩১, বুখারী হা/৪৭৬১; মুসলিম হা/৮৬; মিশকাত হা/৪৯ ‘কাবীরা গোনাহ’ অনুচ্ছেদ)। এগুলি কবীরা গোনাহ। অন্যদিকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ইমপ্লান্টের ন্যায় জন্মনিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন অস্থায়ী পদ্ধতি ‘আযল’ করা জায়েয (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১৮৪)। তবে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণরত অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামী হবে একথা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শিরক ব্যতীত সকল গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন (নিসা ৪৮)।
❓প্রশ্নঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্ত্রীর মধ্যে কি কি গুণ থাকা আবশ্যক?
ANSWER
🎤 স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্ত্রীর মধ্যে প্রধানতঃ যে গুণগুলি থাকা আবশ্যক তা হ’ল (১) স্বামীর সাথে সর্বদা হাসি মুখে কথা বলা (২) স্বামীর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। যদি তা শরী‘আতের পরিপন্থী না হয় (৩) নিজের ইয্যত রক্ষা করা (৪) স্বামীর ধন-সম্পদ হেফাযত করা (৫) অল্পে তুষ্ট থাকা। আল্লাহ বলেন, সতী-সাধ্বী স্ত্রীগণ হয় (স্বামীর) অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে’ (নিসা ৩৪)। রাসূল (ছাঃ) সর্বোত্তম স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, উত্তম স্ত্রী সেই, যার দিকে তাকিয়ে স্বামী আনন্দিত হয়। স্বামী কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং নিজের ক্ষেত্রে ও নিজ সম্পদের ক্ষেত্রে স্বামী যা অপসন্দ করেন, সে তা করেনা’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২৭২)।
❓প্রশ্নঃ দরিদ্রতার কারণে স্ত্রীর কাছে মোহরানার টাকা মাফ চাইলে এবং স্ত্রী সন্তুষ্টচিত্তে তা মাফ করে দিলে দায়মুক্ত হওয়া যাবে কি?
ANSWER
🎤 নিরূপায় অবস্থায় স্বামী মোহর পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়লে এবং স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু ছাড় দিলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে ফরয মোহরানা প্রদান কর। তবে যদি তারা সেখান থেকে স্বেচ্ছায় তোমাদের কিছু প্রদান করে, তাহ’লে তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ কর(নিসা ৪)।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য ওয়ালীমা করা সুন্নাত। এক্ষণে মেয়ের বাড়ীতে যে ভোজের আয়োজন করা হয়, তা কি শরী‘আত সম্মত?
ANSWER
🎤 ছেলেপক্ষ বিয়ে করতে যায় এবং মোহরানা দিয়ে বিয়ে করে। সেখানে মেয়েপক্ষের কোনরূপ খরচ করার কথা নয়। এরপরেও যেটা করা হয় সেটা স্রেফ সৌজন্যমূলক আপ্যায়ন মাত্র। যা শরী‘আতসম্মত (বুখারী হা/৬০১৮)। বিয়ের পর বাসর যাপন শেষে ছেলের পক্ষ থেকে ওয়ালীমা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ওয়ালীমা কর। একটি বকরী দিয়ে হ’লেও’ (বুখারী হা/২০৪৮, মিশকাত হা/৩২১০)। অথচ বর্তমান যুগে ওয়ালীমার এই সুন্নাত বর্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে গুনাহের শামিল।
❓প্রশ্নঃ জনৈক প্রবাসীর গৃহে পাঠদানের সুবাদে গৃহকত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরী হয়। পরবর্তীতে তার মেয়ের সাথে আমার সামাজিকভাবে বিবাহ হয়। বিবাহের পরও পূর্বের ন্যায় অনৈতিক সম্পর্ক চলতে থাকে। বর্তমানে আমি দুই সন্তানের পিতা। ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ করার পর সব বুঝতে পেরে গত আড়াই বছর যাবৎ নিজ স্ত্রী থেকে দূরে রয়েছি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
ANSWER
🎤 স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখতে কোন বাধা নেই। কারণ হারাম সম্পর্ক কোন হালালকে হারাম করতে পারে না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যেনা বৈবাহিক বন্ধনকে হারাম করে না‘ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৮৮১, ৬/২৮৭ পৃঃ)। অতএব আপনি নিজের কৃত মহাপাপের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহ্র নিকটে তওবা করুন এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে শ্বাশুড়ী থেকে দূরে অবস্থান করুন।
❓প্রশ্নঃ নিজের বোনের নাতনীকে বিবাহ করা যাবে কি?
ANSWER
🎤 নিজ বোনের নাতনীকে বিবাহ করা হারাম (নিসা ২৩)। তাছাড়া এ সম্পর্ক যত নীচেই যাক, সবই হারাম (ফাৎহুলবারী ৯/১৫৪-৫৫, হা/৫১০৪-এর পরে ‘যে সকল মহিলা হালাল ও হারাম’ অনুচ্ছেদ)।
❓প্রশ্নঃ আমি ৩ বছর যাবৎ লিবিয়ায় আছি। প্রায় দিন স্ত্রীর সাথে আমার যোগাযোগ হয়। কিন্তু একজন ইমাম ছাহেব আমাকে বলেছেন যে, ১ বছরের বেশী এরূপ পৃথক থাকলে দেশে যাওয়ার পর পুনরায় বিবাহ করে সংসার করতে হবে। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
ANSWER
🎤 প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক না দেয় এবং স্ত্রীও যদি ‘খোলা’ না করে, তাহ’লে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমনকি উভয়ের সম্মতিক্রমে ৩ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হ’লেও তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হবে না’ (হাইআতু কিবারিল ওলামা; আত-ত্বালাকুস সুন্নাহ ওয়াল বিদ‘আহ, পৃঃ ৬২)।
❓প্রশ্নঃ বিবাহ রেজিষ্ট্রী হওয়ার পর কবুল বলার পূর্বে সহবাস করা জায়েয হবে কি?
ANSWER
🎤 বিবাহের দু’টি রুকন হ’ল ঈজাব ও কবুল (নিসা ১৯)। আর শর্ত হ’ল মেয়ের ওলী থাকা (তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০) এবং দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮)। উক্ত শর্তাদি পূরণের পর রেজিষ্ট্রি হয়ে থাকলে সহবাস বৈধ হবে।
❓প্রশ্নঃ বর-কনে বাসর ঘরে জামা‘আতে ২ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে কি? করতে হ’লে এর নিয়ম কি?
ANSWER
🎤 আদায় করতে পারে। ছাহাবীগণের কারু কারু আমল দ্বারা এটি প্রমাণিত। উসাইদের দাস আবু সাঈদ বলেন, আমি বিয়ে করলে আবু যার গিফারী, ইবনু মাসউদ ও হুযায়ফা (রাঃ) আমাকে বললেন, তোমার ঘরে যখন তোমার স্ত্রী প্রবেশ করবে, তখন তুমি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে এবং তার কল্যাণের জন্য দো‘আ করবে ও অকল্যাণ হ’তে আশ্রয় প্রার্থনা করবে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭১৫৩; ইরওয়া হা/৫২৩; আলবানী, আদাবুয যিফাফ পৃ:২২, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বাসরের পূর্বে স্ত্রীকে তার পিছনে দাঁড় করিয়ে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত আদায়ের পরামর্শ দেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৪৪১; আদাবুয যিফাফ ২২ পৃঃ, সনদ ছহীহ)।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের সময় পাজামা-পাঞ্জাবী ও টুপী পরা কি যরূরী? কনের বাড়ীতে গিয়ে বর গলায় মালা ও হাতে ফুল উপহার নিতে পারে কি?
ANSWER
🎤 তাক্বওয়াপূর্ণ পোশাক হিসাবে পাজামা-পাঞ্জাবী ও টুপী পরা উত্তম। কারণ অমুসলিমদের পোষাকের বিপরীতে এগুলি উপমহাদেশে দ্বীনদার মুসলমানদের পোষাক হিসাবে গৃহীত। বরের গলায় মালা দেওয়া, তার হাতে ফুল দেওয়া ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় সামাজিক প্রথা মাত্র। যা থেকে দূরে থাকাই উত্তম। এতদ্ব্যতীত বিবাহকালে প্রচলিত যাবতীয় শরী‘আত বিরোধী রেওয়াজ ও নারী-পুরুষের পর্দাহীন চলাফেরা বন্ধ করা আবশ্যক।
❓প্রশ্নঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে কাযী অফিসের মাধ্যমে একত্রে ৩ তালাকের মাধ্যমে ছাড়াছাড়ির ৮ মাস পর তারা পুনরায় একত্রিত হতে পারবে কি?
ANSWER
🎤 উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্বামী তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে। কেননা এক মজলিসে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে। আবদু ইয়াযীদ তার স্ত্রী উম্মে রুকানাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি উত্তরে বলেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ওটা এক তালাক হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও’ (আবুদাঊদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮৭; আওনুল মা‘বূদ ৬/২৭৯; যাদুল মা‘আদ ৫/২২৯; সনদ হাসান)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের প্রথম দু’বছর একত্রিত তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হ’ত (মুসলিম হা/১৪৭২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/২৯৯)। অতএব আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে কোন বাধা নেই।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের মোহর নির্ধারণ হয়েছে অনেক বেশী। যা আমার সামর্থ্যের বাইরে। এমতাবস্থায় করণীয় কি?
ANSWER
🎤 এমতাবস্থায় বিষয়টি স্ত্রীর নিকটে পেশ করবে। স্ত্রী যদি সন্তুষ্ট চিত্তে তাকে কিছু ছাড় দেয়, সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৪)। বস্ত্ততঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা এবং পরে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া ধোঁকার শামিল। কারণ মোহর আদায় না করলে দুনিয়া ও আখেরাতে স্ত্রীর নিকটে ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকতে হবে।
❓প্রশ্নঃ প্রবাসী স্বামীর দেশে থাকা স্ত্রীর সাথে তার শ্বশুরের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠলে বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ে। তখন পিতা ছেলের নিকটে ক্ষমা চাইলেও পরবর্তীতে একই সমস্যা একাধিক বার দেখা দেওয়ায় এক্ষণে উক্ত স্বামীর জন্য করণীয় কি?
ANSWER
🎤 বর্ণনা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে বুঝা যায়, উভয়ের সম্মতিতে এ কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হ’ল উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করা। এক্ষণে রাষ্ট্রে ইসলামী আইন জারি না থাকায় তা সম্ভব নয়। অতএব এক্ষেত্রে স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। নইলে স্বামী ‘দাইয়ূছ’ হিসাবে গণ্য হবে। যার জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/১৪১)।
❓প্রশ্নঃ আমাদের দেশে তৃতীয় পক্ষ থেকে উকীল নিয়োগ করে উক্ত ‘উকীল বাবা’র মাধ্যমে বিবাহ পড়ানো হয়। এটা কতটুকু শরী‘আত সম্মত?
ANSWER
🎤 এটি শরী‘আত সম্মত নয়। পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ উকীল হ’তে পারে না। পিতার অনুপস্থিতিতে দাদা, অতঃপর তুলনামূলক নিকটবর্তী আত্মীয়রা উকীল হবে (মুগনী ৯/৩৫৫)। যেমন মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার (রাঃ) তার বোনকে বিবাহ দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৫১৩০)।
❓প্রশ্নঃ স্বামী স্ত্রীকে মোহরানা পরিশোধ না করে থাকলে সন্তান কি পিতার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দিতে পারবে?
ANSWER
🎤 স্বামীর জন্য ফরয কর্তব্য হ’ল মোহর পরিশোধ করা (নিসা ৪, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৪৩)। জীবিত অবস্থায় মোহর পরিশোধ না করলে মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ হতে মোহর পরিশোধ করে তারপর বাকী অংশ ওয়ারিছদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। আর সম্পদ না থাকলে সন্তান বা অন্য যে কেউ তা পরিশোধ করতে পারে (বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৯; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩২০৮)।
0 Comments