বিবাহ-সম্পর্কিত আর্টিকল
বিবাহ- সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর ❓ অধ্যায় ০৩
❓প্রশ্নঃ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী নাকফুল, কানের দুল, রঙিন শাড়ী ইত্যাদি খুলে ফেলে। এগুলি করা শরী‘আত সম্মত কি?
ANSWER
🎤এগুলি কুসংস্কার মাত্র। ইদ্দত
কালে তথা চার মাস দশ দিন স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করবে। একান্ত যরূরী
প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবে না। রঙ্গিন বা অধিক সৌন্দর্য প্রকাশক কোন পোষাক পরিধান
করবে না। অলঙ্কার ব্যবহার করবে না। বিশেষ কারণ ব্যতীত সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদীও ব্যবহার করবে না
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৩১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৩৩২-৩৪)। মৃত্যুর সাথে
সাথে স্ত্রীর নাকফুল, কানের দুল, পরিহিত শাড়ী খুলে রাখার রেওয়াজ
বাড়াবাড়ি বৈ কিছুই নয়। অন্যদিকে সদ্য বিধবা স্ত্রীকে নতুন শাড়ী উপহার দেওয়াও
কুসংস্কার মাত্র।
প্রশ্নঃ যেসব বিবাহে যৌতুক আদান-প্রদান হয়, সেসব বিবাহ অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে কি?
ANSWER
🎤এধরনের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ না করাই
উত্তম। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন,
‘ঐসব
লোকদের পরিত্যাগ কর যারা তাদের ধর্মকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব
জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে (আন‘আম ৬/৭০)। তবে এতে যেন পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট
না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ দাওয়াতের ব্যাপারটি মুসলমানদের পারস্পরিক
হক-এর অন্তর্ভুক্ত (নাসাঈ হা/১৯৩৮; মিশকাত হা/৪৬৩০)। তাছাড়া এর ফলে উপদেশ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
তবে যেসব বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি প্রকাশ্য শরী‘আত বিরোধী
কর্মকান্ড হয়, যার কারণে
দাওয়াতপ্রাপ্তদের গুনাহ হয়, সেসব অনুষ্ঠান পরিত্যাগ
করতে হবে (আবুদাঊদ হা/৪৯২৪)। যদিও তাতে সম্পর্ক বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
(মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৯৬)।
❓প্রশ্নঃ মামা বা চাচা মারা গেলে অথবা মামী বা চাচীকে তালাক দিলে ঐ মামী বা চাচীকে
তার ভাগ্নে বা ভাতিজা বিবাহ করতে পারবে কি?
ANSWER
🎤পারবে। কেননা মামী বা চাচী ভাগ্নে
বা ভাতিজার জন্য মুহাররামাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ যে ১
❓প্রশ্নঃ আমাদের দেশে বিবাহ পড়ানোর সময় একই গ্লাসে একই শরবত বর ও কনেকে খাওয়ানো হয়।
এগুলি জায়েয হবে কি?
ANSWER
🎤এভাবে খাওয়ানোর মাধ্যমে আল্লাহ
বর-কনের মধ্যে অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন বলে যদি কোন আক্বীদা থাকে, তবে তা জায়েয নয়। বরং কুসংস্কার
মাত্র। তবে সাধারণভাবে এরূপ খাওয়ায় কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) একই
পাত্রের
❓প্রশ্নঃ মাসিক অবস্থায় ভুল বা অজ্ঞতাবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেললে করণীয় কি?
ANSWER
🎤এরূপ অবস্থায় কোন গুনাহ হবে না বা
কোন কাফফারাও ওয়াজিব হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের
ভুলবশতঃ ও বাধ্যগত অবস্থায় কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৫, মিশকাত হা/৬২৮৪)। তবে নিজেকে সংযত
রাখতে না পেরে এরূপ করলে তওবা করতে হবে এবং এক দীনার বা অর্ধ দীনার ছাদাক্বা করতে
হবে (আবুদাঊদ হা/২৬৪; মিশকাত হা/৫৫৩)।
❓প্রশ্নঃ আমি ২০১৩ সালে স্ত্রীকে মৌখিকভাবে এক তালাক দেই। অতঃপর ৩দিন পর তাকে ফিরিয়ে
নিয়ে সংসার করতে থাকি। কিন্তু ২০১৪ সালে কোর্টের মাধ্যমে পুনরায় তালাক প্রদান করি
এবং তালাকনামার কপি ডাকের মাধ্যমে স্ত্রীর পিতার বরাবরে প্রেরণ করি। সে গ্রহণ না
করলেও জানতে পেরেছে। অতঃপর ৩ মাস পর ঐ তালাকের জাবেদা কপি পুনরায় স্ত্রীর পিতার
বাড়ীতে প্রেরণ করি। উল্লেখ্য, ২য় তালাক দেওয়ার পর থেকেই স্ত্রীর সাথে
আমার সম্পর্ক নেই। এক্ষণে এটা কি তিন তালাক হিসাবে গণ্য হবে?
ANSWER
🎤প্রশ্নে উল্লেখিত বিবরণ
অনুযায়ী ২য় তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতকাল তথা তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না
নেওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে (বাক্বারাহ ২/২২৯)। এমতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী
পরস্পরে সম্মত হ’লে নতুন বিবাহের মাধ্যমে পুনরায় ঘর-সংসার করতে পারে (বাক্বারাহ
২/২৩২; তালাক ৩৫/১; বুখারী হা/৫১৩০)।
তবে তিন তুহরে তিন তালাক প্রদান করলে এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিবাহ করে ও সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে তালাকপ্রাপ্তা হয় (বাক্বারাহ ২/২৩০)। উল্লেখ্য, প্রশ্নকারী দ্বিতীয় তালাকের ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর ৩য় তালাক প্রদান করায় তা গণ্য হবে না। কারণ তালাক দিতে হয় ইদ্দতকালের মধ্যে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদেরকে তালাক দাও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা কর’ (তালাক ৬৫/১)। আবদুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীকে ঋতু অবস্থায় তালাক দিলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ফিরিয়ে নিয়ে ইদ্দতের মধ্যে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেন (বুখারী হা/৫২৫১, মুসলিম হা/১৪৭১)। কেননা ঋতু অবস্থায় তালাক দেওয়া জায়েয নয় (বিস্তারিত দ্রঃ ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/১৪৭, ফৎওয়া নং ৮২৫)।
তবে তিন তুহরে তিন তালাক প্রদান করলে এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিবাহ করে ও সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে তালাকপ্রাপ্তা হয় (বাক্বারাহ ২/২৩০)। উল্লেখ্য, প্রশ্নকারী দ্বিতীয় তালাকের ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর ৩য় তালাক প্রদান করায় তা গণ্য হবে না। কারণ তালাক দিতে হয় ইদ্দতকালের মধ্যে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদেরকে তালাক দাও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা কর’ (তালাক ৬৫/১)। আবদুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীকে ঋতু অবস্থায় তালাক দিলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ফিরিয়ে নিয়ে ইদ্দতের মধ্যে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেন (বুখারী হা/৫২৫১, মুসলিম হা/১৪৭১)। কেননা ঋতু অবস্থায় তালাক দেওয়া জায়েয নয় (বিস্তারিত দ্রঃ ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/১৪৭, ফৎওয়া নং ৮২৫)।
❓প্রশ্নঃ স্ত্রীর চাকুরী অথবা ব্যবসার আয়ের অর্থের উপর স্বামীর হক আছে কি? স্বামী স্ত্রীর অর্থের হিসাব রাখতে পারবে কি? এছাড়া স্ত্রী স্বামীকে না জানিয়ে তার পিতার বাড়িতে কোন খরচ করতে পারবে কি?
ANSWER
🎤স্ত্রীর সম্পদের উপর স্বামীর কোন
হক নেই। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন। স্বামী
স্ত্রীর অর্থের হিসাব রাখতে পারেন, কেবল দ্বীনী দায়িত্ব হিসাবে। স্ত্রী তার স্বামীকে না বলে তার পিতার
বাড়ীতে খরচ করতে পারে। তবে স্বামীর পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে ব্যয় করা উচিৎ। কেননা
আল্লাহ তা‘আলা পরস্পরে পরামর্শ সাপেক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন (আলে ইমরান
৩/১৫৯)।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের পর স্ত্রীর জন্য শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, না নিজ পিতা-মাতার সেবা করা অধিক যরূরী? এছাড়া স্বামী এবং নিজ পিতা-মাতার আদেশ-নিষেধের মাঝে বৈপরীত্য দেখা দিলে কার
আদেশ-নিষেধ অগ্রাধিকার পাবে?
ANSWER
🎤প্রত্যেক সন্তানের জন্য তার
পিতা-মাতার সেবাযত্ন করাই সর্বাগ্রে যরূরী (ইসরা ১৭/২৩)। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে
তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর খেদমতে বাধ্য করা উচিৎ নয়। তবে অবশ্যই তাদের সাথে সদাচরণ করা
কর্তব্য। স্বামী এবং পিতা-মাতা উভয়ের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব।
তাই সাধ্যমত উভয়কে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবে। এরপরেও যদি উভয়ের আদেশ-নিষেধের
মাঝে বৈপরীত্য দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে বৈষয়িক
বিষয়ে স্বামীর আদেশকে অগ্রগণ্য করতে হবে। কেননা বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত নারীরা
পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে। কিন্তু বিবাহের পর তারা স্বামীর নিয়ন্ত্রণে চলে
যায়। সুতরাং সেসময় স্বামীর আদেশ-নিষেধ মান্য করাই তার জন্য অগ্রগণ্য হবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, আমি যদি কাউকে কোন
মানুষের সিজদা করার আদেশ দিতাম,
তাহ’লে
স্ত্রীকে তার স্বামীর সামনে সিজদা করতে বলতাম (আবুদাউদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৫৫)। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক শাস্তি
প্রাপ্ত হবে দু’ধরনের মানুষ। তাদের একজন হ’ল, অবাধ্য স্ত্রী (তিরমিযী হা/৩৫৯, সনদ ছহীহ)। তবে উভয়ে উভয়ের অধিকারের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের উত্তম সেই
ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকটে
উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের নিকটে উত্তম’ (তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩২৫২)।
❓প্রশ্নঃ স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর সন্তানের অধিকারী হবেন কে?
ANSWER
🎤সন্তান মূলতঃ পিতার।
তবে শৈশবে তার লালন-পালনের অধিকারী হ’লেন মা। কিন্তু মা অন্যত্র বিবাহ করলে তার এ
অধিকার আর থাকে না। তখন সন্তান পিতার পূর্ণ দায়িত্বে থাকবে। আমর তাঁর পিতা শু‘আইব
হ’তে, তিনি তাঁর পিতা
আব্দুল্লাহ এবং তিনি তার পিতা আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জনৈক স্ত্রীলোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটি আমার ছেলে।
আমার পেট ছিল তার পাত্র, আমার স্তন ছিল তার মশক
এবং আমার কোল ছিল তার দোলনা। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। সে এখন আমার ছেলে নিয়ে
টানাটানি করছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যতক্ষণ তুমি অন্যত্র বিবাহ না করবে, ততক্ষণ তুমিই তার অধিক হকদার’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৩৩৭৮)।
তবে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর সন্তান যার নিকটে ইচ্ছা থাকতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ছেলে আমার উপকার করে। সে আমাকে কূয়া থেকে পানি এনে দেয়। এসময় তার পিতা এলে নবী করীম (ছাঃ) ছেলেকে বললেন, ইনি তোমার পিতা আর ইনি তোমার মাতা- যাকে ইচ্ছা তুমি তার হাত ধর। ছেলে তার মায়ের হাত ধরল। অতঃপর মা তাকে নিয়ে চলে গেল’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৩৮০, সনদ ছহীহ)।
ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছেলে হৌক বা মেয়ে হৌক, সন্তানের ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মতভেদ করেন, তাহ’লে সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়াই শরী‘আত সম্মত’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬০ পৃঃ, ‘সন্তান পালনের অধিক হকদার কে?’ অনুচ্ছেদ)।
তবে মা কাফির হয়ে গেলে, মুসলিম সন্তানের উপরে তার কোন হক থাকবে না। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কাফিরদের জন্য মুমিনদের উপরে কোন অধিকার রাখেননি’ (নিসা ৪/১৪১)। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়ার পূর্বে তার অধিকতর কল্যাণ বিবেচনা করা কর্তব্য। কেননা আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬)। তিনি তাঁর উস্তাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক সন্তান তার পিতার নিকটে যেতে চাইলে তার কারণ হিসাবে বলে যে, মা আমাকে মাদরাসায় পাঠায়, আর উস্তাদ আমাকে মারেন। কিন্তু আববা আমাকে খেলতে দেন। একথা শুনে বিচারক তাকে তার মায়ের কাছে পাঠাবার নির্দেশ দেন’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬২)।
তবে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর সন্তান যার নিকটে ইচ্ছা থাকতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ছেলে আমার উপকার করে। সে আমাকে কূয়া থেকে পানি এনে দেয়। এসময় তার পিতা এলে নবী করীম (ছাঃ) ছেলেকে বললেন, ইনি তোমার পিতা আর ইনি তোমার মাতা- যাকে ইচ্ছা তুমি তার হাত ধর। ছেলে তার মায়ের হাত ধরল। অতঃপর মা তাকে নিয়ে চলে গেল’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ; মিশকাত হা/৩৩৮০, সনদ ছহীহ)।
ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছেলে হৌক বা মেয়ে হৌক, সন্তানের ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মতভেদ করেন, তাহ’লে সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়াই শরী‘আত সম্মত’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬০ পৃঃ, ‘সন্তান পালনের অধিক হকদার কে?’ অনুচ্ছেদ)।
তবে মা কাফির হয়ে গেলে, মুসলিম সন্তানের উপরে তার কোন হক থাকবে না। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কাফিরদের জন্য মুমিনদের উপরে কোন অধিকার রাখেননি’ (নিসা ৪/১৪১)। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়ার পূর্বে তার অধিকতর কল্যাণ বিবেচনা করা কর্তব্য। কেননা আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬)। তিনি তাঁর উস্তাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক সন্তান তার পিতার নিকটে যেতে চাইলে তার কারণ হিসাবে বলে যে, মা আমাকে মাদরাসায় পাঠায়, আর উস্তাদ আমাকে মারেন। কিন্তু আববা আমাকে খেলতে দেন। একথা শুনে বিচারক তাকে তার মায়ের কাছে পাঠাবার নির্দেশ দেন’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬২)।
❓প্রশ্নঃ জনৈকা মহিলা তার বর্তমান স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে পূর্বের প্রেমিককে বিবাহ করতে
চায়। এক্ষণে বর্তমান স্বামীকে ত্যাগ করে নতুন বিবাহের ক্ষেত্রে শরী‘আতের নির্দেশনা
কি?
ANSWER
🎤যথাযোগ্য শারঈ কারণ ব্যতীত
স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া হারাম। কোন স্ত্রী এরূপ করলে তার জন্য জান্নাতের
সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে (আবুদাউদ হা/২২২৬; ইবনু মাজাহ হা/২০৫৫; তিরমিযী হা/১১৮৭;
মিশকাত
হা/৩২৭৯)। এক্ষণে কোন শরী‘আতসম্মত কারণ থাকলে উক্ত মহিলা সমাজের দায়িত্বশীল বা
আদালতের মাধ্যমে বর্তমান স্বামীকে মোহর ফেরত দিয়ে ‘খোলা’ করতে পারে (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৭৪)। অতঃপর
একমাসের ইদ্দত গণনা শেষে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে (বুখারী হা/৫২৭৩, মিশকাত হা/৩২৭৪, আবুদাঊদ হা/২২২৯-৩০)। স্মর্তব্য
যে, বৈধ অভিভাবকের অনুমতি
ব্যতীত কোন মহিলা এরূপ বিবাহ করলে, তা বাতিল বলে গণ্য হবে (আবুদাঊদ হা/২০৮৩, ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৯, মিশকাত হা/৩১৩১)।
❓প্রশ্নঃ স্ত্রী স্বামীকে এরূপ বলেছে যে, ‘তুমি যদি আমাকে স্পর্শ কর, তবে তা তোমার মৃত মায়ের সাথে যেনার সদৃশ হবে’। এক্ষণে এর কাফফারা কি হবে?
ANSWER
🎤এগুলি বাজে কথার অন্তর্ভুক্ত। যা
মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহ বলেন, সফলকাম মুমিন তারাই, যারা ছালাতে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করে’ ‘এবং যারা অনর্থক কাজ এড়িয়ে
চলে’ (মুমিনূন ২৩/১-৩)। উল্লেখ্য,
স্ত্রীর
পক্ষ থেকে যিহার হয় না (ফাতাওয়া মারআতুল মুসলিমাহ ২/৮০৩ পৃঃ; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব-১৯)।
❓প্রশ্নঃ ৪৫ বছরের অধিক বয়সী মহিলা শারীরিক অক্ষমতার কারণে স্বামীর চাহিদা মিটাতে
অপারগতা প্রকাশ করলে গোনাহগার হবেন কি?
ANSWER
🎤আল্লাহ তা‘আলা কাউকে তার
সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। তবে তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী
চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টায় ঘাটতি হ’লে গুনাহগার হবে (তাগাবুন ৬৪/১৬)। আবু হুরায়রা
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে তার
বিছানায় ডাকে সে তার বিছানায় যেতে অস্বীকার করে এবং অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রি যাপন
করে, তখন ফেরেশতাগণ তার
প্রতি সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪৬)।
❓প্রশ্নঃ আমার ছোট বোন জনৈক লম্পট ছেলেকে পিতার সম্মতি ছাড়াই বিবাহ করে বাড়ি ছেড়েছে।
এক্ষণে আমাদের করণীয় কি? তার দৈনিক খরচ নির্বাহের জন্য প্রদত্ত
অর্থ এবং পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে কি? অথচ তা প্রদান করলেও উক্ত লম্পট ছেলেটি তা হারাম কাজে ব্যবহার করবে। এক্ষণে
আমাদের করণীয় কি?
ANSWER
🎤ধর্মত্যাগ ও হত্যাকারী ব্যতীত
সন্তানকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার কোন বিধান শরী‘আতে নেই (বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ মিশকাত হা/৩০৪৩, ৩৫০০)। পিতা-মাতা একাজ করলে
সন্তানের হক নষ্ট করা হবে, যা পরকালে নিজের নেকী
থেকে তাকে পরিশোধ করতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১২৭)। এক্ষণে পিতার জন্য করণীয় হ’ল, দ্রুত সমাঝোতা করে নতুনভাবে
বিবাহের ব্যবস্থা করা অথবা মেয়েকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনা। কারণ অভিভাবকের অনুমতি
ব্যতীত নারীদের বিবাহ জায়েয নয় (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১)। অথবা মেয়ে স্বামীর সাথে ‘খোলা’ করে ফিরে আসবে।
কারণ এভাবে একত্রে অবস্থান করা যেনার শামিল।
❓প্রশ্নঃ জনৈক ধার্মিক ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ
সম্পদের মালিক হয়ে পরবর্তীতে মারা গেছেন। তার মেয়েরাও ধার্মিক। এক্ষণে তার কোন
মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে কি?
ANSWER
🎤এরূপ মেয়েদের বিবাহ করায় কোন দোষ
নেই। বরং ধার্মিক মনে করলে তাদেরকেই বিবাহ করতে হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০)। অবৈধ সম্পদ
উপার্জনের জন্য পিতা দায়ী হবেন,
সন্তানরা
নয় (আন‘আম ৬/১৬৪)।
❓প্রশ্নঃ শিরকী আক্বীদা ও আমলে লিপ্ত পিতা-মাতার যুবতী কন্যা ছহীহ আক্বীদা-আমল গ্রহণ
করার পর আহলেহাদীছ পরিবারে বিবাহের ব্যাপারে পিতা-মাতার অমতের কারণে তাদের উপেক্ষা
করে অন্য কোন নিকটাত্মীয়ের অভিভাবকত্বে বিবাহ করতে পারবে কি?
ANSWER
🎤মেয়ের বিবাহের ক্ষেত্রে অলী বা
অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। তবে স্রেফ আক্বীদাগত কারণেই যদি পিতা বাধা হয়ে
দাঁড়ান, সেক্ষেত্রে পরিবারের
অন্য সদস্য বা সমাজের মুসলিম ধর্মীয় নেতা অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে বিবাহ দিবেন।
কেননা আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা (পিতা-মাতা)
তোমাকে শিরক করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে, তখন তুমি তাদের আনুগত্য করো না। তবে পার্থিব বিষয়ে তাদের সাথে
সদাচরণ করো’ (লোকমান ৩১/১৫)।
❓প্রশ্নঃ জিনের সাথে মানুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ব্যাপারে শরী‘আতের
নির্দেশনা কি?
ANSWER
🎤মানুষের সাথে জিনের বৈবাহিক
সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পসন্দমত দুই, তিন বা চারজন নারীকে বিবাহ কর’ (নিসা ৪/৩)। তিনি বলেন, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের
মধ্য হ’তেই জোড়া (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া (স্ত্রী) হ’তে তোমাদের
জন্য সন্তান ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন (নাহল ১৬/৭২)। অত্র আয়াতগুলো দ্বারা
স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে মানুষের স্ত্রী মানুষই হবে, জিন বা অন্য কোন প্রাণী নয়।
❓প্রশ্নঃ স্ত্রী বিদেশে অবস্থানরত তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চায়, কিন্তু স্বামী তাতে ইচ্ছুক নয়। এক্ষেত্রে উক্ত স্ত্রীর করণীয় কি?
ANSWER
🎤স্ত্রী যদি বৈধ কারণে ডিভোর্স
দিতে চায় এবং স্বামী তাতে অসম্মত হয়, তবে স্ত্রীকে আদালতের অথবা ধর্মীয় নেতাদের সাহায্য নিতে হবে। তারা
স্ত্রীকে প্রদত্ত স্বামীর দেনমোহর ফেরত প্রদানের মাধ্যমে উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে
দিবেন। ছাবিত বিন ক্বায়েস-এর স্ত্রীকে এভাবে ‘খোলা’-র মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৫২৭৩; নাসাঈ হা/৩৫১০;
মিশকাত
হা/৩২৭৪)।
❓প্রশ্নঃ হানাফী মাযহাবের অনুসারী স্বামী ছহীহ হাদীছের আলোকে আমল করাতে বাধা দিচ্ছেন।
এক্ষণে স্ত্রী হিসাবে আমার করণীয় কি?
ANSWER
🎤স্বামী ছহীহ হাদীছের উপর আমল করতে
বাধা দিলে স্বামী গোনাহগার হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রীর করণীয় হ’ল স্বামীকে সদুপদেশ
দেয়া এবং ছহীহ হাদীছের উপর আমল করতে উৎসাহিত করা। আর এক্ষেত্রে রাগান্বিত না হয়ে
সাধ্যমত সদাচরণের মাধ্যমে তাকে বুঝানো এবং তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহরর নিকট বেশী
বেশী দো‘আ করা। এরপরেও না বুঝলে স্বামী স্ত্রীর তার ধর্মীয় কাজে বাধা দেওয়ার
অধিকার রাখে না। কারণ সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’
(শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৩৬৯৬)।
❓প্রশ্নঃ ঋতু অবস্থায় সহবাস করলে শিশু বিকলাঙ্গ হয়- একথা কোন শারঈ ভিত্তি আছে কি?
ANSWER
🎤এর কোন শারঈ ভিত্তি নেই। ইহূদীরা
বলত, স্ত্রীর পিছন থেকে বা
সামনে থেকে সঙ্গম করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়। এর প্রতিবাদে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন
‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে
ইচ্ছা গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩;
বুখারী
হা/৪৫২৮; মুসলিম হা/১৪৩৫; মিশকাত হা/৩১৮৩)। অর্থাৎ যেভাবেই
মিলিত হও তাতে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে ঋতু অবস্থায় স্ত্রী মিলন
করা নিষিদ্ধ (তিরমিযী হা/১৩৫;
মিশকাত
হা/৫৫১)।
❓প্রশ্নঃ শরী‘আতের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান যুগে ছেলে বা মেয়েকে কত বছর বয়সে বিবাহ
দেওয়া উচিত?
ANSWER
🎤ইসলামী শরী‘আতে এরূপ কোন বয়সসীমা
নেই। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা
বিবাহহীন আছে, তাদের বিবাহ সম্পাদন
করে দাও ... তারা যদি নিঃস্ব হয়,
তবে
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দিবেন’ (নূর ২৪/৩২)। ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক
হ’লে বিয়ে দেয়া উচিত। এদেশে সাধারণত ১৫ বছর বয়স হ’লে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায়। তাই
সন্তান অসৎকর্মে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে যথাসম্ভব দ্রুত বিবাহ দেওয়া উচিত। আর
এরূপ সম্ভাবনা না থাকলে বিশেষত ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে পরিবার পরিচালনায় আর্থিক
সক্ষমতা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা বিবাহে সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে
পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন... (নূর ২৪/৩৩)।
❓প্রশ্নঃ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে স্ত্রীকে তালাক
প্রদান করা কি আবশ্যক হয়ে যায়? বার
বার সতর্ক করার পরও এরূপ করলে সে ব্যাপারে স্বামীর করণীয় কি?
ANSWER
🎤ব্যভিচার কাবীরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন, তোমরা
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (ইসরা ১৭/ ৩২)। উক্ত
অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে (নিসা ৪/১৯-২০)। আর যদি স্ত্রী তার
কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করে, তাহ’লে
❓প্রশ্নঃ ইসলাম গ্রহণ করায় জনৈকা মহিলা স্বীয়
খৃষ্টান পিতা-মাতাসহ গোটা পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত। খৃষ্টান রাষ্ট্র হওয়ায় সরকারী
অলীও নেই। এক্ষণে অভিভাবকবিহীন উক্ত মহিলাকে বিবাহ করতে চাইলে করণীয় কি?
ANSWER
🎤অমুসলিম পিতা-মাতা, কিংবা ভাই ও চাচারা অভিভাবক
হওয়ার যোগ্য নয়। এমতাবস্থায় স্থানীয় মুসলিম নেতা বা মসজিদের ইমাম তার অভিভাবক
হবেন। শরী‘আতে মুসলিম অভিভাবকের অবর্তমানে মুসলিম শাসকের কথা এসেছে (ইবনু মাজাহ
হা/১৮৮০, মিশকাত হা/৩১৩১)। এর মধ্যে সকল পর্যায়ের মুসলিম নেতৃবৃন্দ
অন্তর্ভুক্ত। ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন, কোন কাফের কোন মুসলিম নারীর অলী
হতে পারবে না। এক্ষণে যদি কোন মুসলিম শাসক বা নেতা পাওয়া না যায়, তবে
কোন ন্যায়পরায়ণ মুমিন ব্যক্তি উক্ত মহিলার সম্মতিক্রমে তাকে বিবাহ দিবে (মুগনী
৭/২৭, ১৮)।
❓প্রশ্নঃ অভিভাবকের অনুমতি না নিয়ে প্রচলিত
কোর্ট ম্যারেজ কি শরী‘আতসম্মত? যদি
শরী‘আতসম্মত না হয় তবে পরবর্তীতে করণীয় কি?
ANSWER
🎤রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,‘অলী ছাড়া বিবাহ সিদ্ধ
নয়’(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। তিনি বলেন, ‘কোন
নারী অলী ছাড়া বিবাহ করলে তা বাতিল, বাতিল, বাতিল’(আবুদাঊদ, মিশকাত
হা/৩১৩১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোন নারী অপর নারীকে বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী
নিজে নিজে বিবাহও করতে পারে না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত
হা/৩১৩৭)। অতএব এভাবে বিবাহ করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবেএবং তাদেরকে পুনরায় বৈধভাবে
বিয়ে করতে হবে। দ্বিতীয় বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বর-কনের একত্রে বসবাস অবৈধ ও
ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত হবে। সঠিক পন্থায় বিবাহ সম্পাদনের পর তাদের এই ঘৃণ্য
অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে খালেছ অন্তরে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা
করতে হবে। বৈধ বিবাহের জন্য মেয়ে ও অলী উভয়ের সম্মতি আবশ্যক। সাবালিকা ও বিধবা
নারীগণ বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অলীর চাইতে বেশী হকদার (মুসলিম, মিশকাত
হা/৩১২৭)। কিন্তু তারা অলীকে বাদ দিয়ে বিবাহ করবে না। যা উপরের হাদীছে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোন নারী ও পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে, তাই-ই এদেশে কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত। এরূপ কোন বিবাহের একমাসের মধ্যে যদি তা কাজী অফিসে রেজিস্ট্রী করা না হয়, তাহ’লে তার কোন আইনগত ভিত্তি থাকে না। এছাড়া এরূপ কোর্ট ম্যারেজের পর রেজিস্ট্রীর ক্ষেত্রে সাধারণতঃ পসন্দমত সাক্ষী মানা হয়। সুতরাং প্রচলিত এরূপ প্রতারণাপূর্ণ বিবাহ কখনোই বৈধ নয়।
উল্লেখ্য, কোন নারী ও পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে, তাই-ই এদেশে কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত। এরূপ কোন বিবাহের একমাসের মধ্যে যদি তা কাজী অফিসে রেজিস্ট্রী করা না হয়, তাহ’লে তার কোন আইনগত ভিত্তি থাকে না। এছাড়া এরূপ কোর্ট ম্যারেজের পর রেজিস্ট্রীর ক্ষেত্রে সাধারণতঃ পসন্দমত সাক্ষী মানা হয়। সুতরাং প্রচলিত এরূপ প্রতারণাপূর্ণ বিবাহ কখনোই বৈধ নয়।
❓প্রশ্নঃ চাকুরী পাওয়ার শর্তে কোন মেয়েকে বিবাহ
করা যাবে কি?
ANSWER
🎤উপরোক্ত শর্তানুযায়ী বিবাহ করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ এটি
যৌতুক হিসাবে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে ফরয মোহরানা
প্রদান কর’(নিসা ৪/৪, ২৪-২৫)। এর সরাসরি বিপরীত হ’ল স্ত্রীর নিকট হ’তে
যৌতুক নেওয়া। যা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
❓প্রশ্নঃ পিতৃ-পরিচয়হীন ও অভিভাবকহীন কোন মেয়েকে
বিবাহ করা যাবে কি?
ANSWER
🎤এ ব্যাপারে শরী‘আতে কোন বাধা
নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার
সাথে বিবাহ দাও’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০)। কারণ সে এজন্য দোষী নয়; বরং
দোষী তার পিতা-মাতা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা গামেদী মহিলার অবৈধ সন্তানের
ভরণ-পোষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন(মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৫৬২ ‘হুদুদ’ অধ্যায়)। আয়েশা (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার
গোনাহের কারণে জারজ সন্তান গোনাহগার হবে না’। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘কেউ
অপরের বোঝা বহন করবে না’ (হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৮৬, আন‘আম
১৬৪)। এমন মহিলার অলী হবেন দেশের নেতা বা সমাজের নেতা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার
কোন অভিভাবক নেই, শাসক তার অভিভাবক হবেন’(আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/৩১৩১)।
ANSWER
🎤অত্র আয়াতে স্বামী-স্ত্রীকে একে
অপরের জন্য পোষাক দ্বারা একে অপরের ইয্যতের হেফাযতকারী, পরস্পরের
আশ্রয়স্থল এবং পরস্পরের হৃদয়ের প্রশান্তি বুঝানো হয়েছে। যেমন পোষাক পরিধানে দেহে
স্বস্তি ও প্রশান্তি আসে। ‘পোষাক’ শব্দ ব্যবহারে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীর
সম্পর্ক হবে অতীব নিবিড় ও দৃঢ় বন্ধনযুক্ত, যা ছিন্ন করার নয়। যেমন পোষাক
মানুষের অতীব প্রিয় যা থেকে সে কখনোই বিচ্ছিন্ন হ’তে চায় না। অতএব স্বামী-স্ত্রী
যদি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করে এবং পরস্পরকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে, তাহ’লে
উভয়ে আল্লাহর কঠিন লা‘নতের শিকার হবে। কারণ উভয়ের মাধ্যমেই আল্লাহ মানুষের বংশ
রক্ষা করে থাকেন। ফলে উভয়ের বিচ্ছিন্নতা কিংবা বিরূপ সম্পর্ক সন্তানদের মধ্যে
বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যা সার্বিকভাবে মানব সমাজে অশান্তির কারণ ঘটায়। যা
আল্লাহ কখনোই কামনা করেন না। এছাড়া পোষাক যেমন মানুষকে নানাবিধ ক্ষতি থেকে বাঁচায়, স্বামী-স্ত্রীর
এই পবিত্র বন্ধনও তেমনি উভয়কে বহুবিধ গুনাহ থেকে রক্ষা করে।
❓প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, বিবাহ না করলে মানুষ অর্ধেক দ্বীন থেকে
খালি থাকে। একথার সত্যতা ও ব্যাখ্যা জানতে চাই।
ANSWER
🎤উল্লিখিত বক্তব্য সঠিক। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করল, তখন
সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল, বাকী অর্ধাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’(বায়হাক্বী, মিশকাত
হা/৩০৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩০, ৬১৪৮, সনদ
হাসান)। মানুষ দ্বীনের ক্ষেত্রে ফিৎনায় পতিত হয় মূলতঃ লজ্জাস্থান ও পেটের কারণে।
বিবাহের মাধ্যমে তার একটা নিয়ন্ত্রিত হয়। কেননা এর দ্বারা শয়তান থেকে নিরাপদে থাকা
যায়, কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তিকে দমন করা যায়, দৃষ্টি
অবনমিত হয় এবং লজ্জাস্থান হেফাযত করা যায়(মিরক্বাত হা/৩০৯৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
❓প্রশ্নঃ স্ত্রী থাকা অবস্থায় তার বোনের মেয়েকে
বিবাহ করা শরী‘আতসম্মত হবে কি?
ANSWER
🎤হবে না। কেননা স্ত্রী উক্ত
মেয়েটির খালা হচ্ছেন। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ
করেন, ‘কোন নারীকে তার ফুফুর সথে (বিবাহ বন্ধনে) একত্র করা যাবে
না। আর না কোন নারীকে তার খালার সাথে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/৩১৬০; বাংলা মিশকাত হা/৩০২৫ ‘যাদেরকে বিবাহ করা হারাম’ অনুচ্ছেদ)।
❓প্রশ্নঃ বিবাহের রাত্রে বর ও কনেকে
জামা‘আতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করতে হবে কি?
ANSWER
🎤এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে
কোন আমল বা নির্দেশনা পাওয়া যায়না। তবে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ, আবু
যর, হুযাইফা (রাঃ) সহ একদল ছাহাবা হতে মওকূফ সূত্রে এরূপ
নির্দেশনা পাওয়া যায় (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৪৩৮, ১৭৪৪১; আলবানী, আদাবুয
যিফাফ পৃঃ ৯৪, সনদ ছহীহ)। অতএব উক্ত ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এটি স্ত্রী
যখন বাসর ঘরে স্বামীর নিকটে যাবে, তখন পড়বে। স্বামী সম্মুখে এবং স্ত্রী তার পিছনে
দাঁড়িয়ে জামা‘আত করবে। এসময় তারা ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনের অকল্যাণ থেকে আল্লাহর
নিকটে পানাহ চাইবে।
❓প্রশ্নঃ পিতা-মাতা কর্তৃক ছেলে বা মেয়েকে
জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া শরী‘আতসম্মত হবে কি? এরূপ
বিবাহের পর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটালে উক্ত ছেলে বা মেয়ে গুনাহগার হবে কি?
ANSWER
🎤এভাবে বিবাহ প্রদান শরী‘আতসম্মত
নয়। বিবাহ দেওয়ার জন্য সাবালক ছেলে-মেয়ের অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক। জনৈক সাবালিকা
মেয়েকে তার পিতা তার অসম্মতিতে বিবাহ দিলে রাসূল (ছাঃ) মেয়ের আপত্তির কারণে উক্ত
বিবাহ বাতিল করে দেন (বুখারী, মিশকাত হা/৩১২৮, ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৩)। একইভাবে
কোন সাবালিকা মেয়ে তার পিতা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করলে উক্ত বিবাহ
বাতিল হবে’ (আবুদাঊদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১)। অতএব পিতা ও মেয়ে উভয়ের পারস্পরিক
সম্মতি ও অনুমতির মাধ্যমে বিয়ে হ’তে হবে। তবে সাবালক ছেলে স্বাধীনভাবে বিয়ে করতে
পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তাকে পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট রেখে বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পিতা-মাতার
অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’ (বায়হাক্বী শু‘আব হা/৭৮২৯, তিরমিযী
হা/১৮৯৯, মিশকাত হা/৪৯২৭)।
জোরপূর্বক বিবাহ দিলে ছেলে বা মেয়ের তা ভেঙ্গে দেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এতে তারা গুনাহগার হবে না। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ছেলের অসম্মতিতে তাকে কারো সাথে বিবাহ দেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার নেই। আর অসম্মতি জানানোর কারণে সে অবাধ্য (عَاقٌّ) হিসাবেও গণ্য হবে না’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩০)।
জোরপূর্বক বিবাহ দিলে ছেলে বা মেয়ের তা ভেঙ্গে দেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এতে তারা গুনাহগার হবে না। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ছেলের অসম্মতিতে তাকে কারো সাথে বিবাহ দেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার নেই। আর অসম্মতি জানানোর কারণে সে অবাধ্য (عَاقٌّ) হিসাবেও গণ্য হবে না’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩০)।
0 Comments