তাফসীরঃ ফাতহুল মাজীদ
2:93
ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এই. ই. আর. এফ)
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সংকলিত।ও সম্পাদিত
সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ-আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
সম্পাদনা পরিষদঃ-
প্রফেসর এ.কে.এম শামসুল আলম
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুযযাম্মিল আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ লাকমান হুসেন
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী |
অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আল-মাদানী
শায়খ মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন সালাফী
শায়খ ড. হাফিয় রফিকুল আল-মাদানী
শায়খ মাসউদুল আলম উমরী
শায়খ মুফায়যাল হুসাইন আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ঈসা মিয়া আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ইরফান আলী আব্বাস আল-মাদানী
শায়খ হাবিবুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী |
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
পরিবেশনায়ঃ আল খাইর
পাবলিকেশন্ম, নাজির বাজার, | ঢাকা।
সাম্প্রতিককালে সংকলিত অন্যতম কিছু তাফসীরের মধ্যে তাফসীর ফাতহুল মাজীদ
উল্লেখযোগ্য। এই তাফসীরটি শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর তত্ত্বাবধানে
সংকলন করা হয়েছে।
খণ্ড সংখ্যাঃ ৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৯৮ (৮২৪ + ৯৬০ + ৮১৪)
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫০ (৯০০ + ৮৫০ + ৮০০)
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
০১. আরবী আয়াতের পাশাপাশি অতি সহজ - সরল বাংলা অনুবাদ।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
2:1
الٓـمّٓ ۚ﴿۱﴾
সুরার নাম- বাকারা,(বকনা- \বাছুর)
وَإِذْ أَخَذْنَا
مِيثٰقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَآ ءَاتَيْنٰكُم بِقُوَّةٍ
وَاسْمَعُوا ۖ قَالُوا سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَأُشْرِبُوا فِى قُلُوبِهِمُ
الْعِجْلَ بِكُفْرِهِمْ ۚ قُلْ بِئْسَمَا يَأْمُرُكُم بِهِۦٓ إِيمٰنُكُمْ إِن
كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৩-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
2:94
قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ
الدَّارُ الْءَاخِرَةُ عِندَ اللَّهِ خَالِصَةً مِّن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا
الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৩-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
2:95
وَلَن يَتَمَنَّوْهُ
أَبَدًۢا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌۢ بِالظّٰلِمِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৩-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
2:96
وَلَتَجِدَنَّهُمْ
أَحْرَصَ النَّاسِ عَلٰى حَيٰوةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ۚ يَوَدُّ
أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِۦ مِنَ
الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৩-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
যখন তাদেরকে তাওরাত শক্তভাবে ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল তখন তারা বলল: আমরা তোমার কথা শ্রবণ করলাম এবং তা অমান্য করলাম। মূলত গো-বৎসের ভালবাসা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে বলেই তাদের জবাব এরূপ ছিল।
এ আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব ইয়াহূদীদেরকে বলেন: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এস, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দু’দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। এরূপ সত্য প্রমাণে ধ্বংসের দু‘আ করাকে মুবাহালা বলা হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। অবশেষে তা-ই হলো। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসল না। কারণ তারা আন্তরিকভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ও কুরআন মাজীদকে সত্য বলে জানত। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মোবাহালায় আসত তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহূদীও অবশিষ্ট থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি ইয়াহূদীরা মুবাহালায় আসত এবং মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করত তবে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত এবং তারা জাহান্নামে নিজ নিজ জায়গা দেখে নিত। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৪৮, মুসনাদ আবূ ইয়ালা ৪/৪৭,১ বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
অনুরূপভাবে যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল, তারা যদি মুবাহালার জন্য প্রস্তুত হত তবে তারা ফিরে গিয়ে তাদের পরিবারবর্গ এবং ধন-সম্পদের নাম-নিশানাও দেখতে পেত না। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২২২৫, সনদ সহীহ)
ইয়াহূদীদের বিশেষ দাবি ছিল যে, তারা বলত:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّاؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮) তারা আরো বলত:
(لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارٰي)
“যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বাস্তবে যদি তাই হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে মৃত্যু কামনা কর। কিন্তু তারা কখনো তাদের কৃতকর্মের জন্য মৃত্যু কামনা করবে না।
এরূপ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ ھَادُوْٓا اِنْ زَعَمْتُمْ اَنَّکُمْ اَوْلِیَا۬ئُ لِلہِ مِنْ دُوْنِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَﭕ وَلَا یَتَمَنَّوْنَھ۫ٓ اَبَدًۭا بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْھِمْﺚ وَاللہُ عَلِیْمٌۭ بِالظّٰلِمِیْنَ)
“বলঃ হে ইয়াহূদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানুষ নয়; তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও। কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা পূর্বে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।”(সূরা জুমু‘আহ ৬২: ৬-৭) সুতরাং তারাই আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র, একমাত্র তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এসব তাদের মুখের দাবিমাত্র, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা চায় দুনিয়াতে হাজার হাজার বছর বা বহুদিন জীবিত থাকতে। কিন্তু তাদের এ দীর্ঘায়ু আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে একদিন ফিরে যেতে হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল, একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।
৩. পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু লিপ্সু হচ্ছে ইয়াহূদী জাতি।
2:97
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا
لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُۥ نَزَّلَهُۥ عَلٰى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا
لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرٰى لِلْمُؤْمِنِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৭ ও ৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব যা নাবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল কিয়ামাতের প্রথম আলামত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে জিবরীল (আঃ) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, জিবরীল? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ বিন সালাম বললেন: সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্র“। তখন নাবী এ আয়াত পাঠ করলেন,
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ... )
অতঃপর তিনি বলেন: কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ হল এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে জমা করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। যখন পুুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮০)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: এ বিষয়ে বিদ্বানগণ একমত যে, এ আয়াতটি বানী ইসরাঈদের মধ্যে যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যপারে নাযিল হয়েছে। ইয়াহূদীরা জিবরীল (আঃ)-কে শত্র“ ও মিকাঈল (আঃ)-কে বন্ধু হিসেবে মনে করত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সেজন্য ফেরেশতাদেরকে উল্লেখ করার পরেও বিশেষভাবে জিবরীল ও মিকাঈল (আঃ)-কে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিবরীলসহ সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যশীল মাখলুক। তাদের সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল। কেবল কাফিররাই তাদের সাথে শত্র“তা রাখে যা অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَنْ عَادَ لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ
(রাঃ) যে ব্যক্তি আমার বন্ধুদের সাথে শত্র“তা পোষণ করে তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫০২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সত্যসহ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত তার প্রমাণ পেলাম।
২. ঈমানের অন্যতম রুকন হল ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা, এক্ষেত্রে সকল ফেরেশতাদের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনতে হবে; কোন ফেরেশতার প্রতি হিংসা পোষণ করলে ঈমান থাকবে না।
৩. প্রত্যেক ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ওলী, তার সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব যা নাবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল কিয়ামাতের প্রথম আলামত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে জিবরীল (আঃ) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, জিবরীল? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ বিন সালাম বললেন: সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্র“। তখন নাবী এ আয়াত পাঠ করলেন,
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ... )
অতঃপর তিনি বলেন: কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ হল এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে জমা করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। যখন পুুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮০)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: এ বিষয়ে বিদ্বানগণ একমত যে, এ আয়াতটি বানী ইসরাঈদের মধ্যে যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যপারে নাযিল হয়েছে। ইয়াহূদীরা জিবরীল (আঃ)-কে শত্র“ ও মিকাঈল (আঃ)-কে বন্ধু হিসেবে মনে করত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সেজন্য ফেরেশতাদেরকে উল্লেখ করার পরেও বিশেষভাবে জিবরীল ও মিকাঈল (আঃ)-কে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিবরীলসহ সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যশীল মাখলুক। তাদের সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল। কেবল কাফিররাই তাদের সাথে শত্র“তা রাখে যা অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَنْ عَادَ لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ
(রাঃ) যে ব্যক্তি আমার বন্ধুদের সাথে শত্র“তা পোষণ করে তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫০২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সত্যসহ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত তার প্রমাণ পেলাম।
২. ঈমানের অন্যতম রুকন হল ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা, এক্ষেত্রে সকল ফেরেশতাদের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনতে হবে; কোন ফেরেশতার প্রতি হিংসা পোষণ করলে ঈমান থাকবে না।
৩. প্রত্যেক ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ওলী, তার সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল।
2:98
مَن كَانَ عَدُوًّا
لِّلَّهِ وَمَلٰٓئِكَتِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَجِبْرِيلَ وَمِيكٰىلَ فَإِنَّ اللَّهَ
عَدُوٌّ لِّلْكٰفِرِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৭ ও ৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব যা নাবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল কিয়ামাতের প্রথম আলামত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে জিবরীল (আঃ) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, জিবরীল? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ বিন সালাম বললেন: সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্র“। তখন নাবী এ আয়াত পাঠ করলেন,
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ... )
অতঃপর তিনি বলেন: কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ হল এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে জমা করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮০)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: এ বিষয়ে বিদ্বানগণ একমত যে, এ আয়াতটি বানী ইসরাঈদের মধ্যে যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যপারে নাযিল হয়েছে। ইয়াহূদীরা জিবরীল (আঃ)-কে শত্র“ ও মিকাঈল (আঃ)-কে বন্ধু হিসেবে মনে করত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সেজন্য ফেরেশতাদেরকে উল্লেখ করার পরেও বিশেষভাবে জিবরীল ও মিকাঈল (আঃ)-কে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিবরীলসহ সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যশীল মাখলুক। তাদের সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল। কেবল কাফিররাই তাদের সাথে শত্র“তা রাখে যা অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَنْ عَادَ لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ
(রাঃ) যে ব্যক্তি আমার বন্ধুদের সাথে শত্র“তা পোষণ করে তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫০২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সত্যসহ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত তার প্রমাণ পেলাম।
২. ঈমানের অন্যতম রুকন হল ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা, এক্ষেত্রে সকল ফেরেশতাদের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনতে হবে; কোন ফেরেশতার প্রতি হিংসা পোষণ করলে ঈমান থাকবে না।
৩. প্রত্যেক ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ওলী, তার সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শুভাগমনের খবর পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) বাগানে ফল সংগ্রহ করছিলেন। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব যা নাবী ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তা হল কিয়ামাতের প্রথম আলামত কী? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কী হবে? এবং সন্তান কখন পিতার মত হয় আর কখন মাতার মত হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে জিবরীল (আঃ) এখনই এসব ব্যাপারে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, জিবরীল? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ বিন সালাম বললেন: সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্র“। তখন নাবী এ আয়াত পাঠ করলেন,
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ... )
অতঃপর তিনি বলেন: কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ হল এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে জমা করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮০)
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: এ বিষয়ে বিদ্বানগণ একমত যে, এ আয়াতটি বানী ইসরাঈদের মধ্যে যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যপারে নাযিল হয়েছে। ইয়াহূদীরা জিবরীল (আঃ)-কে শত্র“ ও মিকাঈল (আঃ)-কে বন্ধু হিসেবে মনে করত। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সেজন্য ফেরেশতাদেরকে উল্লেখ করার পরেও বিশেষভাবে জিবরীল ও মিকাঈল (আঃ)-কে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিবরীলসহ সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যশীল মাখলুক। তাদের সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল। কেবল কাফিররাই তাদের সাথে শত্র“তা রাখে যা অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَنْ عَادَ لِيْ وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ
(রাঃ) যে ব্যক্তি আমার বন্ধুদের সাথে শত্র“তা পোষণ করে তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫০২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সত্যসহ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত তার প্রমাণ পেলাম।
২. ঈমানের অন্যতম রুকন হল ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা, এক্ষেত্রে সকল ফেরেশতাদের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনতে হবে; কোন ফেরেশতার প্রতি হিংসা পোষণ করলে ঈমান থাকবে না।
৩. প্রত্যেক ঈমানদার মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ওলী, তার সাথে শত্র“তা রাখা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শত্র“তা রাখার শামিল।
2:99
وَلَقَدْ أَنزَلْنَآ
إِلَيْكَ ءَايٰتٍۭ بَيِّنٰتٍ ۖ وَمَا يَكْفُرُ بِهَآ إِلَّا الْفٰسِقُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৯ থেকে ১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
2:100
أَوَكُلَّمَا عٰهَدُوا
عَهْدًا نَّبَذَهُۥ فَرِيقٌ مِّنْهُم ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৯ থেকে ১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
2:101
وَلَمَّا جَآءَهُمْ
رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ
الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتٰبَ كِتٰبَ اللَّهِ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا
يَعْلَمُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
৯৯ থেকে ১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
(أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوْا عَهْدًا)
‘যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করে’অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের একটি চিরাচরিত স্বভাবের কথা বলা হচ্ছে। তা হল, যখনই তারা কোন বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই এ সকল ইয়াহূদীদের সাথে অঙ্গীকার করতেন তখন তারা তা ভঙ্গ করার পাঁয়তারা করত।
যারা দাম্ভিক ও অহংকারী কেবল তারাই হক জানার পরে বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللہِ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا فَھُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَﮆﺊاَلَّذِیْنَ عٰھَدْتَّ مِنْھُمْ ثُمَّ یَنْقُضُوْنَ عَھْدَھُمْ فِیْ کُلِّ مَرَّةٍ وَّھُمْ لَا یَتَّقُوْنَ)
“আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না। তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।”(সূরা আনফাল ৮:৫৫-৫৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা হল প্রকৃতপক্ষেই খিয়ানতকারী:
(لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰي خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ)
“সর্বদা তুমি তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে, সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা মায়িদাহ ৫:১৩, আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)
এর মূল কারণ হল, তারা ঈমানদার নয় বরং মুনাফিক। যদি ঈমান আনত তাহলে তাদের মত হত যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَيْهِ)
“মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩) আর মুনাফিকের স্বভাবই তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمْ رَسُوْلٌ)
‘রাসূল তাদের নিকট আগমন করল’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে আগমন করলেন- যে কুরআন তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করল এবং তাদের নিকট যে কিতাব ছিল তার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পিছনে ছুঁড়ে মারল।
এর মূল কারণ তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনলে এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর হত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَوْ اٰمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ)
“আর যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো তাহলে তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে ঈমানদার এবং অধিকাংশই ফাসিক।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পাপ কাজ মানুষকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে পাপ কাজ করতে থাকে তখন পাপ কাজ তাকে হালাল হারাম অস্বীকার করার দিকে ধাবিত করে।
২. ইয়াহূদীদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি বা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী জাতি।
2:102
وَاتَّبَعُوا مَا
تَتْلُوا الشَّيٰطِينُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمٰنَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمٰنُ
وَلٰكِنَّ الشَّيٰطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَآ أُنزِلَ عَلَى
الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هٰرُوتَ وَمٰرُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ
حَتّٰى يَقُولَآ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ
مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِۦ ۚ وَمَا هُم
بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا
يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرٰىهُ مَا لَهُۥ
فِى الْءَاخِرَةِ مِنْ خَلٰقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِۦٓ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ
كَانُوا يَعْلَمُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০২ ও ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, শয়তানদের হাতে যেসব জাদু ছিল সুলাইমান (আঃ) সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের থেকে নিয়ে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখতেন। শয়তানরা সেখানে যেতে সমর্থ হত না। মানুষের নিকট এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে। তখন শয়তান বলল: তোমরা কি জান, সুলাইমান কিসের দ্বারা এ রাজ্য পরিচালনা করে? তারা বলল হ্যাঁ, তা হল যা তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মানুষ তা বের করল এবং তার ওপর আমল শুরু করল। হিজাজবাসী বলল: সুলাইমান এ জাদুর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করত। তখন সুলাইমান (আঃ)-কে জাদুর অপবাদ থেকে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত নাযিল করেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যয় মুজাহিদ বলেন, শয়তানরা আকাশে ওয়াহী শুনত। যদি একটা ওয়াহী শুনত তাহলে তার সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে দিত। সুলাইমান (আঃ) বাহিনী প্রেরণ করলেন তাদের নিকট যা আছে নিয়ে আসার জন্য। তা নিয়ে আসলে সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন। সুলাইমান (আঃ) মারা গেলে শয়তানরা তা বের করে মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাদু সুলাইমান (আঃ)-এর পূর্ব থেকেই ছিল। কেননা মূসা (আঃ)-এর যুগে অনেক জাদুকর ছিল। আর মূসা (আঃ) সুলাইমানের পূর্বের ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالُوْٓا اَرْجِھْ وَاَخَاھُ وَاَرْسِلْ فِی الْمَدَا۬ئِنِ حٰشِرِیْنَ﮾ﺫ یَاْتُوْکَ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیْمٍ﮿ وَجَا۬ئَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْٓا اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ کُنَّا نَحْنُ الْغٰلِبِیْنَ)
“তারা বলল: ‘তাঁকে ও তাঁর ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে (জাদুকর) সংগ্রাহকারীদেরকে পাঠাও, ‘যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’জাদুকরেরা ফির‘আউনের নিকট এসে বলল: ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৬, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অর্থাৎ ঐ ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুসরণ করে তারা জাদুর ওপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবিও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নাবী ছিলেন না, তিনি একজন জাদুকর ছিলেন। জাদুর মাধ্যমে তিনি রাজত্ব্ করতেন। মহান আল্লাহ বলেন: সুলাইমান (আঃ) জাদুর মত নিকৃষ্ট কার্যকলাপ করতেন না। কারণ তা কুফরী কাজ, বরং শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরী করেছে।
জাদুর শাব্দিক অর্থ হলো: যা গোপন থাকে এবং যার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। পরিভাষায় জাদু বলা হয়: এমন সব মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, পরিষেধক ও ধোঁয়া সেবনের সমষ্টি যার কু-প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়, নিহত হয় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। জাদুকে সিহ্র (السحر) বলে নামকরণের কারণ হলো জাদুকর অত্যন্ত গোপন ও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন মন্ত্র ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে অথবা এমন বন্ধন দেয় যা সূক্ষ্মভাবে অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। কখনো এই আছর (প্রভাব) অসুস্থ করে ফেলে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে।
জাদুর অন্তর্ভুক্ত হলো الصرف অর্থাৎ স্ত্রীকে স্বামী বিমুখ করা ও স্বামীকে তার স্ত্রী বিমুখ করা। জাদুর মাধ্যমে স্বামীর কাছে স্ত্রীকে এমনকে তুলে ধরা যে, যখনই স্বামী স্ত্রীর কাছে আসে তখনই তাকে খারাপ আকৃতিতে দেখে ফলে স্ত্রী থেকে দূরে সরে যায়।
আর العطف হলো الصرف এর বিপরীত। অর্থাৎ কোন মেয়ের প্রতি কোন পুরুষকে আসক্ত করাতে এমনভাবে জাদু করা যে, সে পুরুষ ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার কাছে খুব রূপবতী মনে হয়, যদিও সে মেয়ে কুৎসিত কদাকার হয়। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলাকে এমন জাদুগ্রস্ত করা হয় যে, সে তার স্বামীকে উত্তম ও সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে যদিও সে স্বামী অপছন্দনীয় হয়। জাদুর অন্তর্ভুক্ত আরো হলো التولة (তাওলা)। তাওলা বলা হয় এমন কিছুকে যা জাদুকরেরা তৈরি করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে প্রদান করে- এ বিশ্বাস করে যে, এটা সাথে থাকার কারণে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।
জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া জাদুর কোন প্রভাব পড়বে না।
জাদু শির্কে আকবার ও তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এর বাস্তবতাকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানের নৈকট্য লাভ করতে হয়। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন জাদুকরই জাদু বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি জাদু করবে, অথবা জাদু বিদ্যা শিখবে বা অন্যকে শেখাবে অথবা এ সকল কাজ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে বা সন্তুষ্ট থাকবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা কুফরী কাজে সন্তুষ্ট থাকা আর কাজ করা উভয়ই সমান। এসব ইয়াহূদীগণ জেনে-শুনেই তা গ্রহণ করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিদ্যা অর্জন করতঃ সে অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য কিয়ামাতের দিন জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ)
“নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে ব্যক্তি এ কাজ অবলম্বন করবে, তার জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই।”(সূরা বাকারাহ ২:১০২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " قِيلَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ ؟ قَالَ: " الشِّرْكُ بِاللّٰهِ وَالسِّحْرُ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে দূরে থাক। (সাহাবীগণ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
অতএব জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। জাদুকরের শাস্তি হল- তরবারী দ্বারা গর্দান উড়িয়ে দেয়া। (তিরমিযী হা: ১৪৬ আলবানী দুর্বল বলেছেন)
উমার (রাঃ) তাঁর গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন:
اقتلوا كل ساحر وساحرة
প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬)
এসব ইয়াহূদী যদি জাদু না শিখে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে ঈমান আনত তাহলে এটাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
(بِبَابِلَ ھَارُوْتَ وَمَارُوْتَ)
‘বাবেল শহরে হারূত-মারূত’অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সুলাইমান (আঃ)-কে নাবীদের মধ্যে শামিল ও প্রশংসা করায় ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আশ্চর্যের কথা; মুহাম্মাদ সুলাইমানকে নাবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ করছে। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। কেননা স্বাভাবিকভাবে মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।
এক্ষণে সুলাইমান (আঃ) যে সত্য নাবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং নাবীগণের মু‘জিযাহ ও শয়তানের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন। ‘বাবেল’হল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশস্তাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলাইমানের নবুওয়াতের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন।
বস্তুতঃ সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াতের সমর্থনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়েকে বাবেল শহরে পাঠিয়েছিলেন।
সুলাইমান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর ওপরে একচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্ট লোকেরা সর্বদা এটাকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং য্ুিক্তবাদের ধূম্রজালে পড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নাবী সুলাইমান (আঃ) সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরাও তার নবুওয়াতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন নাবী জাদু শেখেননি এবং শিক্ষাও দেননি।
২. জাদুবিদ্যা শিক্ষা ও জাদু করা শয়তানী ও কুফরী কাজ।
৩. জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাস্তব প্রমাণ।
৪. জাদুর পরিচয় ও তার অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় জানা গেল।
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, শয়তানদের হাতে যেসব জাদু ছিল সুলাইমান (আঃ) সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের থেকে নিয়ে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখতেন। শয়তানরা সেখানে যেতে সমর্থ হত না। মানুষের নিকট এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে। তখন শয়তান বলল: তোমরা কি জান, সুলাইমান কিসের দ্বারা এ রাজ্য পরিচালনা করে? তারা বলল হ্যাঁ, তা হল যা তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মানুষ তা বের করল এবং তার ওপর আমল শুরু করল। হিজাজবাসী বলল: সুলাইমান এ জাদুর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করত। তখন সুলাইমান (আঃ)-কে জাদুর অপবাদ থেকে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত নাযিল করেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যয় মুজাহিদ বলেন, শয়তানরা আকাশে ওয়াহী শুনত। যদি একটা ওয়াহী শুনত তাহলে তার সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে দিত। সুলাইমান (আঃ) বাহিনী প্রেরণ করলেন তাদের নিকট যা আছে নিয়ে আসার জন্য। তা নিয়ে আসলে সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন। সুলাইমান (আঃ) মারা গেলে শয়তানরা তা বের করে মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাদু সুলাইমান (আঃ)-এর পূর্ব থেকেই ছিল। কেননা মূসা (আঃ)-এর যুগে অনেক জাদুকর ছিল। আর মূসা (আঃ) সুলাইমানের পূর্বের ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالُوْٓا اَرْجِھْ وَاَخَاھُ وَاَرْسِلْ فِی الْمَدَا۬ئِنِ حٰشِرِیْنَ﮾ﺫ یَاْتُوْکَ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیْمٍ﮿ وَجَا۬ئَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْٓا اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ کُنَّا نَحْنُ الْغٰلِبِیْنَ)
“তারা বলল: ‘তাঁকে ও তাঁর ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে (জাদুকর) সংগ্রাহকারীদেরকে পাঠাও, ‘যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’জাদুকরেরা ফির‘আউনের নিকট এসে বলল: ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৬, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অর্থাৎ ঐ ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুসরণ করে তারা জাদুর ওপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবিও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নাবী ছিলেন না, তিনি একজন জাদুকর ছিলেন। জাদুর মাধ্যমে তিনি রাজত্ব্ করতেন। মহান আল্লাহ বলেন: সুলাইমান (আঃ) জাদুর মত নিকৃষ্ট কার্যকলাপ করতেন না। কারণ তা কুফরী কাজ, বরং শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরী করেছে।
জাদুর শাব্দিক অর্থ হলো: যা গোপন থাকে এবং যার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। পরিভাষায় জাদু বলা হয়: এমন সব মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, পরিষেধক ও ধোঁয়া সেবনের সমষ্টি যার কু-প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়, নিহত হয় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। জাদুকে সিহ্র (السحر) বলে নামকরণের কারণ হলো জাদুকর অত্যন্ত গোপন ও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন মন্ত্র ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে অথবা এমন বন্ধন দেয় যা সূক্ষ্মভাবে অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। কখনো এই আছর (প্রভাব) অসুস্থ করে ফেলে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে।
জাদুর অন্তর্ভুক্ত হলো الصرف অর্থাৎ স্ত্রীকে স্বামী বিমুখ করা ও স্বামীকে তার স্ত্রী বিমুখ করা। জাদুর মাধ্যমে স্বামীর কাছে স্ত্রীকে এমনকে তুলে ধরা যে, যখনই স্বামী স্ত্রীর কাছে আসে তখনই তাকে খারাপ আকৃতিতে দেখে ফলে স্ত্রী থেকে দূরে সরে যায়।
আর العطف হলো الصرف এর বিপরীত। অর্থাৎ কোন মেয়ের প্রতি কোন পুরুষকে আসক্ত করাতে এমনভাবে জাদু করা যে, সে পুরুষ ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার কাছে খুব রূপবতী মনে হয়, যদিও সে মেয়ে কুৎসিত কদাকার হয়। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলাকে এমন জাদুগ্রস্ত করা হয় যে, সে তার স্বামীকে উত্তম ও সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে যদিও সে স্বামী অপছন্দনীয় হয়। জাদুর অন্তর্ভুক্ত আরো হলো التولة (তাওলা)। তাওলা বলা হয় এমন কিছুকে যা জাদুকরেরা তৈরি করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে প্রদান করে- এ বিশ্বাস করে যে, এটা সাথে থাকার কারণে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।
জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া জাদুর কোন প্রভাব পড়বে না।
জাদু শির্কে আকবার ও তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এর বাস্তবতাকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানের নৈকট্য লাভ করতে হয়। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন জাদুকরই জাদু বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি জাদু করবে, অথবা জাদু বিদ্যা শিখবে বা অন্যকে শেখাবে অথবা এ সকল কাজ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে বা সন্তুষ্ট থাকবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা কুফরী কাজে সন্তুষ্ট থাকা আর কাজ করা উভয়ই সমান। এসব ইয়াহূদীগণ জেনে-শুনেই তা গ্রহণ করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিদ্যা অর্জন করতঃ সে অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য কিয়ামাতের দিন জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ)
“নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে ব্যক্তি এ কাজ অবলম্বন করবে, তার জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই।”(সূরা বাকারাহ ২:১০২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " قِيلَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ ؟ قَالَ: " الشِّرْكُ بِاللّٰهِ وَالسِّحْرُ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে দূরে থাক। (সাহাবীগণ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
অতএব জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। জাদুকরের শাস্তি হল- তরবারী দ্বারা গর্দান উড়িয়ে দেয়া। (তিরমিযী হা: ১৪৬ আলবানী দুর্বল বলেছেন)
উমার (রাঃ) তাঁর গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন:
اقتلوا كل ساحر وساحرة
প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬)
এসব ইয়াহূদী যদি জাদু না শিখে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে ঈমান আনত তাহলে এটাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
(بِبَابِلَ ھَارُوْتَ وَمَارُوْتَ)
‘বাবেল শহরে হারূত-মারূত’অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সুলাইমান (আঃ)-কে নাবীদের মধ্যে শামিল ও প্রশংসা করায় ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আশ্চর্যের কথা; মুহাম্মাদ সুলাইমানকে নাবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ করছে। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। কেননা স্বাভাবিকভাবে মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।
এক্ষণে সুলাইমান (আঃ) যে সত্য নাবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং নাবীগণের মু‘জিযাহ ও শয়তানের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন। ‘বাবেল’হল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশস্তাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলাইমানের নবুওয়াতের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন।
বস্তুতঃ সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াতের সমর্থনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়েকে বাবেল শহরে পাঠিয়েছিলেন।
সুলাইমান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর ওপরে একচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্ট লোকেরা সর্বদা এটাকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং য্ুিক্তবাদের ধূম্রজালে পড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নাবী সুলাইমান (আঃ) সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরাও তার নবুওয়াতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন নাবী জাদু শেখেননি এবং শিক্ষাও দেননি।
২. জাদুবিদ্যা শিক্ষা ও জাদু করা শয়তানী ও কুফরী কাজ।
৩. জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাস্তব প্রমাণ।
৪. জাদুর পরিচয় ও তার অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় জানা গেল।
2:103
وَلَوْ أَنَّهُمْ
ءَامَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ خَيْرٌ ۖ لَّوْ كَانُوا
يَعْلَمُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০২ ও ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, শয়তানদের হাতে যেসব জাদু ছিল সুলাইমান (আঃ) সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের থেকে নিয়ে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখতেন। শয়তানরা সেখানে যেতে সমর্থ হত না। মানুষের নিকট এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে। তখন শয়তান বলল: তোমরা কি জান, সুলাইমান কিসের দ্বারা এ রাজ্য পরিচালনা করে? তারা বলল হ্যাঁ, তা হল যা তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মানুষ তা বের করল এবং তার ওপর আমল শুরু করল। হিজাজবাসী বলল: সুলাইমান এ জাদুর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করত। তখন সুলাইমান (আঃ)-কে জাদুর অপবাদ থেকে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত নাযিল করেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যয় মুজাহিদ বলেন, শয়তানরা আকাশে ওয়াহী শুনত। যদি একটা ওয়াহী শুনত তাহলে তার সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে দিত। সুলাইমান (আঃ) বাহিনী প্রেরণ করলেন তাদের নিকট যা আছে নিয়ে আসার জন্য। তা নিয়ে আসলে সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন। সুলাইমান (আঃ) মারা গেলে শয়তানরা তা বের করে মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাদু সুলাইমান (আঃ)-এর পূর্ব থেকেই ছিল। কেননা মূসা (আঃ)-এর যুগে অনেক জাদুকর ছিল। আর মূসা (আঃ) সুলাইমানের পূর্বের ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالُوْٓا اَرْجِھْ وَاَخَاھُ وَاَرْسِلْ فِی الْمَدَا۬ئِنِ حٰشِرِیْنَ﮾ﺫ یَاْتُوْکَ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیْمٍ﮿ وَجَا۬ئَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْٓا اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ کُنَّا نَحْنُ الْغٰلِبِیْنَ)
“তারা বলল: ‘তাঁকে ও তাঁর ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে (জাদুকর) সংগ্রাহকারীদেরকে পাঠাও, ‘যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’জাদুকরেরা ফির‘আউনের নিকট এসে বলল: ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৬, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অর্থাৎ ঐ ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুসরণ করে তারা জাদুর ওপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবিও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নাবী ছিলেন না, তিনি একজন জাদুকর ছিলেন। জাদুর মাধ্যমে তিনি রাজত্ব্ করতেন। মহান আল্লাহ বলেন: সুলাইমান (আঃ) জাদুর মত নিকৃষ্ট কার্যকলাপ করতেন না। কারণ তা কুফরী কাজ, বরং শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরী করেছে।
জাদুর শাব্দিক অর্থ হলো: যা গোপন থাকে এবং যার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। পরিভাষায় জাদু বলা হয়: এমন সব মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, পরিষেধক ও ধোঁয়া সেবনের সমষ্টি যার কু-প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়, নিহত হয় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। জাদুকে সিহ্র (السحر) বলে নামকরণের কারণ হলো জাদুকর অত্যন্ত গোপন ও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন মন্ত্র ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে অথবা এমন বন্ধন দেয় যা সূক্ষ্মভাবে অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। কখনো এই আছর (প্রভাব) অসুস্থ করে ফেলে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে।
জাদুর অন্তর্ভুক্ত হলো الصرف অর্থাৎ স্ত্রীকে স্বামী বিমুখ করা ও স্বামীকে তার স্ত্রী বিমুখ করা। জাদুর মাধ্যমে স্বামীর কাছে স্ত্রীকে এমনকে তুলে ধরা যে, যখনই স্বামী স্ত্রীর কাছে আসে তখনই তাকে খারাপ আকৃতিতে দেখে ফলে স্ত্রী থেকে দূরে সরে যায়।
আর العطف হলো الصرف এর বিপরীত। অর্থাৎ কোন মেয়ের প্রতি কোন পুরুষকে আসক্ত করাতে এমনভাবে জাদু করা যে, সে পুরুষ ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার কাছে খুব রূপবতী মনে হয়, যদিও সে মেয়ে কুৎসিত কদাকার হয়। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলাকে এমন জাদুগ্রস্ত করা হয় যে, সে তার স্বামীকে উত্তম ও সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে যদিও সে স্বামী অপছন্দনীয় হয়। জাদুর অন্তর্ভুক্ত আরো হলো التولة (তাওলা)। তাওলা বলা হয় এমন কিছুকে যা জাদুকরেরা তৈরি করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে প্রদান করে- এ বিশ্বাস করে যে, এটা সাথে থাকার কারণে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।
জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া জাদুর কোন প্রভাব পড়বে না।
জাদু শির্কে আকবার ও তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এর বাস্তবতাকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানের নৈকট্য লাভ করতে হয়। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন জাদুকরই জাদু বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি জাদু করবে, অথবা জাদু বিদ্যা শিখবে বা অন্যকে শেখাবে অথবা এ সকল কাজ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে বা সন্তুষ্ট থাকবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা কুফরী কাজে সন্তুষ্ট থাকা আর কাজ করা উভয়ই সমান। এসব ইয়াহূদীগণ জেনে-শুনেই তা গ্রহণ করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিদ্যা অর্জন করতঃ সে অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য কিয়ামাতের দিন জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ)
“নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে ব্যক্তি এ কাজ অবলম্বন করবে, তার জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই।”(সূরা বাকারাহ ২:১০২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " قِيلَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ ؟ قَالَ: " الشِّرْكُ بِاللّٰهِ وَالسِّحْرُ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে দূরে থাক। (সাহাবীগণ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
অতএব জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। জাদুকরের শাস্তি হল- তরবারী দ্বারা গর্দান উড়িয়ে দেয়া। (তিরমিযী হা: ১৪৬ আলবানী দুর্বল বলেছেন)
উমার (রাঃ) তাঁর গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন:
اقتلوا كل ساحر وساحرة
প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬)
এসব ইয়াহূদী যদি জাদু না শিখে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে ঈমান আনত তাহলে এটাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
(بِبَابِلَ ھَارُوْتَ وَمَارُوْتَ)
‘বাবেল শহরে হারূত-মারূত’অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সুলাইমান (আঃ)-কে নাবীদের মধ্যে শামিল ও প্রশংসা করায় ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আশ্চর্যের কথা; মুহাম্মাদ সুলাইমানকে নাবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ করছে। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। কেননা স্বাভাবিকভাবে মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।
এক্ষণে সুলাইমান (আঃ) যে সত্য নাবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং নাবীগণের মু‘জিযাহ ও শয়তানের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন। ‘বাবেল’হল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশস্তাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলাইমানের নবুওয়াতের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন।
বস্তুতঃ সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াতের সমর্থনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়েকে বাবেল শহরে পাঠিয়েছিলেন।
সুলাইমান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর ওপরে একচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্ট লোকেরা সর্বদা এটাকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং য্ুিক্তবাদের ধূম্রজালে পড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নাবী সুলাইমান (আঃ) সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরাও তার নবুওয়াতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন নাবী জাদু শেখেননি এবং শিক্ষাও দেননি।
২. জাদুবিদ্যা শিক্ষা ও জাদু করা শয়তানী ও কুফরী কাজ।
৩. জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাস্তব প্রমাণ।
৪. জাদুর পরিচয় ও তার অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় জানা গেল।
শানে নুযূল:
সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, শয়তানদের হাতে যেসব জাদু ছিল সুলাইমান (আঃ) সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের থেকে নিয়ে তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখতেন। শয়তানরা সেখানে যেতে সমর্থ হত না। মানুষের নিকট এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে। তখন শয়তান বলল: তোমরা কি জান, সুলাইমান কিসের দ্বারা এ রাজ্য পরিচালনা করে? তারা বলল হ্যাঁ, তা হল যা তার সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মানুষ তা বের করল এবং তার ওপর আমল শুরু করল। হিজাজবাসী বলল: সুলাইমান এ জাদুর দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করত। তখন সুলাইমান (আঃ)-কে জাদুর অপবাদ থেকে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াত নাযিল করেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যয় মুজাহিদ বলেন, শয়তানরা আকাশে ওয়াহী শুনত। যদি একটা ওয়াহী শুনত তাহলে তার সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা মিশ্রিত করে দিত। সুলাইমান (আঃ) বাহিনী প্রেরণ করলেন তাদের নিকট যা আছে নিয়ে আসার জন্য। তা নিয়ে আসলে সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনের নিচে পুঁতে রাখেন। সুলাইমান (আঃ) মারা গেলে শয়তানরা তা বের করে মানুষকে জাদু শিক্ষা দেয়।
হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জাদু সুলাইমান (আঃ)-এর পূর্ব থেকেই ছিল। কেননা মূসা (আঃ)-এর যুগে অনেক জাদুকর ছিল। আর মূসা (আঃ) সুলাইমানের পূর্বের ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالُوْٓا اَرْجِھْ وَاَخَاھُ وَاَرْسِلْ فِی الْمَدَا۬ئِنِ حٰشِرِیْنَ﮾ﺫ یَاْتُوْکَ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیْمٍ﮿ وَجَا۬ئَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوْٓا اِنَّ لَنَا لَاَجْرًا اِنْ کُنَّا نَحْنُ الْغٰلِبِیْنَ)
“তারা বলল: ‘তাঁকে ও তাঁর ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে (জাদুকর) সংগ্রাহকারীদেরকে পাঠাও, ‘যেন তারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’জাদুকরেরা ফির‘আউনের নিকট এসে বলল: ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” (সূরা বাকারাহ ২:২৪৬, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অর্থাৎ ঐ ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুসরণ করে তারা জাদুর ওপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবিও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নাবী ছিলেন না, তিনি একজন জাদুকর ছিলেন। জাদুর মাধ্যমে তিনি রাজত্ব্ করতেন। মহান আল্লাহ বলেন: সুলাইমান (আঃ) জাদুর মত নিকৃষ্ট কার্যকলাপ করতেন না। কারণ তা কুফরী কাজ, বরং শয়তান মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরী করেছে।
জাদুর শাব্দিক অর্থ হলো: যা গোপন থাকে এবং যার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। পরিভাষায় জাদু বলা হয়: এমন সব মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, পরিষেধক ও ধোঁয়া সেবনের সমষ্টি যার কু-প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়, নিহত হয় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। জাদুকে সিহ্র (السحر) বলে নামকরণের কারণ হলো জাদুকর অত্যন্ত গোপন ও সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন মন্ত্র ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে অথবা এমন বন্ধন দেয় যা সূক্ষ্মভাবে অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। কখনো এই আছর (প্রভাব) অসুস্থ করে ফেলে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে।
জাদুর অন্তর্ভুক্ত হলো الصرف অর্থাৎ স্ত্রীকে স্বামী বিমুখ করা ও স্বামীকে তার স্ত্রী বিমুখ করা। জাদুর মাধ্যমে স্বামীর কাছে স্ত্রীকে এমনকে তুলে ধরা যে, যখনই স্বামী স্ত্রীর কাছে আসে তখনই তাকে খারাপ আকৃতিতে দেখে ফলে স্ত্রী থেকে দূরে সরে যায়।
আর العطف হলো الصرف এর বিপরীত। অর্থাৎ কোন মেয়ের প্রতি কোন পুরুষকে আসক্ত করাতে এমনভাবে জাদু করা যে, সে পুরুষ ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার কাছে খুব রূপবতী মনে হয়, যদিও সে মেয়ে কুৎসিত কদাকার হয়। অনুরূপভাবে যদি কোন মহিলাকে এমন জাদুগ্রস্ত করা হয় যে, সে তার স্বামীকে উত্তম ও সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে যদিও সে স্বামী অপছন্দনীয় হয়। জাদুর অন্তর্ভুক্ত আরো হলো التولة (তাওলা)। তাওলা বলা হয় এমন কিছুকে যা জাদুকরেরা তৈরি করে স্বামী অথবা স্ত্রীকে প্রদান করে- এ বিশ্বাস করে যে, এটা সাথে থাকার কারণে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আর স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।
জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া জাদুর কোন প্রভাব পড়বে না।
জাদু শির্কে আকবার ও তাওহীদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এর বাস্তবতাকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানের নৈকট্য লাভ করতে হয়। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন জাদুকরই জাদু বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি জাদু করবে, অথবা জাদু বিদ্যা শিখবে বা অন্যকে শেখাবে অথবা এ সকল কাজ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে বা সন্তুষ্ট থাকবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা কুফরী কাজে সন্তুষ্ট থাকা আর কাজ করা উভয়ই সমান। এসব ইয়াহূদীগণ জেনে-শুনেই তা গ্রহণ করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিদ্যা অর্জন করতঃ সে অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য কিয়ামাতের দিন জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَه۫ فِي الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ)
“নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, যে ব্যক্তি এ কাজ অবলম্বন করবে, তার জন্য পরকালে কল্যাণের কোন অংশ নেই।”(সূরা বাকারাহ ২:১০২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " قِيلَ: وَمَا هِيَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ ؟ قَالَ: " الشِّرْكُ بِاللّٰهِ وَالسِّحْرُ
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তু থেকে দূরে থাক। (সাহাবীগণ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
অতএব জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। জাদুকরের শাস্তি হল- তরবারী দ্বারা গর্দান উড়িয়ে দেয়া। (তিরমিযী হা: ১৪৬ আলবানী দুর্বল বলেছেন)
উমার (রাঃ) তাঁর গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন:
اقتلوا كل ساحر وساحرة
প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৫৬)
এসব ইয়াহূদী যদি জাদু না শিখে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে ঈমান আনত তাহলে এটাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
(بِبَابِلَ ھَارُوْتَ وَمَارُوْتَ)
‘বাবেল শহরে হারূত-মারূত’অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সুলাইমান (আঃ)-কে নাবীদের মধ্যে শামিল ও প্রশংসা করায় ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আশ্চর্যের কথা; মুহাম্মাদ সুলাইমানকে নাবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ করছে। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। কেননা স্বাভাবিকভাবে মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনু জারীর)।
এক্ষণে সুলাইমান (আঃ) যে সত্য নাবী, তিনি যে জাদুকর নন, জনগণকে তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং নাবীগণের মু‘জিযাহ ও শয়তানের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন। ‘বাবেল’হল ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী, যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিল। ফেরেশস্তাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সুলাইমানের নবুওয়াতের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন।
বস্তুতঃ সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াতের সমর্থনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়েকে বাবেল শহরে পাঠিয়েছিলেন।
সুলাইমান (আঃ)-কে জিন, বায়ু, পক্ষীকুল ও জীবজন্তুর ওপরে একচ্ছত্র ক্ষমতা দান করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এক মহা পরীক্ষা। শয়তান ও তাদের অনুসারী দুষ্ট লোকেরা সর্বদা এটাকে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে দেখেছে এবং য্ুিক্তবাদের ধূম্রজালে পড়ে পথ হারিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নাবী সুলাইমান (আঃ) সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমরাও তার নবুওয়াতের প্রতি দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন নাবী জাদু শেখেননি এবং শিক্ষাও দেননি।
২. জাদুবিদ্যা শিক্ষা ও জাদু করা শয়তানী ও কুফরী কাজ।
৩. জাদুর বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাস্তব প্রমাণ।
৪. জাদুর পরিচয় ও তার অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয় জানা গেল।
2:104
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ
ءَامَنُوا لَا تَقُولُوا رٰعِنَا وَقُولُوا انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ۗ
وَلِلْكٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৪-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বিশিষ্ট তাবেঈ সুদ্দী (রহঃ) বলেন, ইয়াহূদীদের মধ্যে দু’জন লোক ছিল। একজন মালেক বিন সাইফ অন্যজন রিফায়াহ বিন সাঈদ। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলার সময় ‘‘راعنا‘‘ ‘আমাদের রাখাল’বলে সম্বোধন করত। সাহাবীগণ মনে করলেন, হয়তো আহলে কিতাবগণ এ কথার দ্বারা নাবীদেরকে সম্মান করে থাকে। তাই সাহাবাগণও এরূপ কথা বলতে লাগলেন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযুল পৃঃ ২৫)
আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সতর্ক করে বললেন: হে মু’মিনগণ! এ অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী যে আদেশ বা নিষেধ করছেন তা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল কর। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: যখন তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে বলতে শুনবে হে মু’মিনগণ! তাহলে তুমি তা খুব খেয়াল করে শুনবে। কারণ হয়তো কোন কল্যাণের নির্দেশ দিবেন অথবা কোন অকল্যাণ থেকে নিষেধ করবেন। সুতরাং আমাদের যথাযথ সতর্ক হওয়া উচিত।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: সাহাবাগণ যখন দীনের কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করতেন তখন বলতেন راعنا অর্থাৎ আমাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন, আমাদের অবস্থা একটু লক্ষ করুন। কিন্তু ইয়াহূদীরা এ সুযোগে উক্ত শব্দকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে লাগল এবং বলতে লাগল راعنا হে আমাদের রাখাল। এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদেরকে এ শব্দ পরিহার করতে নির্দেশ দিলেন এবং انطرنا অর্থাৎ আমাদের দিকে লক্ষ করুন! এ কথা বলার নির্দেশ দিয়ে এ আয়াত নাযিল করেন। কেননা راعنا শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক; এ শব্দটি আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন অর্থে ব্যবহার হয় এবং আমাদের রাখাল অর্থেও ব্যবহার হয়। এর মূল উৎস হল رِعَايَةٌ যার অর্থ হল দেখাশোনা করা।
এ আয়াত প্রমাণ করে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ করা যাবে না। আরো জানা গেল এমন শব্দ যা দ্ব্যর্থবোধক, ভাল-মন্দ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, আদব ও সম্মানার্থে এবং (বেআদবীর) ছিদ্রপথ বন্ধ করতে তার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কেননা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, তারা তাদেরই শামিল।
পরবর্তী আয়াতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদী ও মুশরিকদের হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিমদের প্রতি তাদের এতই বিদ্বেষ ও আক্রোশ যে, মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে কোন কল্যাণ নাযিল হোক তা তারা চায় না। তাদের জেনে রাখা উচিত, সবকিছুর প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত প্রদান করেন। তাদের বিদ্বেষ ও আক্রোশে মুসলিদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ রুদ্ধ হয়ে যাবে না। তবে মুসলিমদের সর্বদা তাদের চক্রান্ত ও বিদ্বেষের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শানে অশালীন শব্দ ব্যবহার ও আচরণ করা যাবে না।
৩. কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ বর্জন করা আবশ্যক।
৪. কাফির-মুশরিকরা কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ চায় না, বাহ্যিক যতই হিতাকাক্সক্ষী প্রকাশ করুক।
শানে নুযূল:
বিশিষ্ট তাবেঈ সুদ্দী (রহঃ) বলেন, ইয়াহূদীদের মধ্যে দু’জন লোক ছিল। একজন মালেক বিন সাইফ অন্যজন রিফায়াহ বিন সাঈদ। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলার সময় ‘‘راعنا‘‘ ‘আমাদের রাখাল’বলে সম্বোধন করত। সাহাবীগণ মনে করলেন, হয়তো আহলে কিতাবগণ এ কথার দ্বারা নাবীদেরকে সম্মান করে থাকে। তাই সাহাবাগণও এরূপ কথা বলতে লাগলেন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযুল পৃঃ ২৫)
আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সতর্ক করে বললেন: হে মু’মিনগণ! এ অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী যে আদেশ বা নিষেধ করছেন তা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল কর। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: যখন তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে বলতে শুনবে হে মু’মিনগণ! তাহলে তুমি তা খুব খেয়াল করে শুনবে। কারণ হয়তো কোন কল্যাণের নির্দেশ দিবেন অথবা কোন অকল্যাণ থেকে নিষেধ করবেন। সুতরাং আমাদের যথাযথ সতর্ক হওয়া উচিত।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: সাহাবাগণ যখন দীনের কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করতেন তখন বলতেন راعنا অর্থাৎ আমাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন, আমাদের অবস্থা একটু লক্ষ করুন। কিন্তু ইয়াহূদীরা এ সুযোগে উক্ত শব্দকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে লাগল এবং বলতে লাগল راعنا হে আমাদের রাখাল। এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদেরকে এ শব্দ পরিহার করতে নির্দেশ দিলেন এবং انطرنا অর্থাৎ আমাদের দিকে লক্ষ করুন! এ কথা বলার নির্দেশ দিয়ে এ আয়াত নাযিল করেন। কেননা راعنا শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক; এ শব্দটি আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন অর্থে ব্যবহার হয় এবং আমাদের রাখাল অর্থেও ব্যবহার হয়। এর মূল উৎস হল رِعَايَةٌ যার অর্থ হল দেখাশোনা করা।
এ আয়াত প্রমাণ করে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ করা যাবে না। আরো জানা গেল এমন শব্দ যা দ্ব্যর্থবোধক, ভাল-মন্দ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, আদব ও সম্মানার্থে এবং (বেআদবীর) ছিদ্রপথ বন্ধ করতে তার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কেননা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, তারা তাদেরই শামিল।
পরবর্তী আয়াতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদী ও মুশরিকদের হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিমদের প্রতি তাদের এতই বিদ্বেষ ও আক্রোশ যে, মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে কোন কল্যাণ নাযিল হোক তা তারা চায় না। তাদের জেনে রাখা উচিত, সবকিছুর প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত প্রদান করেন। তাদের বিদ্বেষ ও আক্রোশে মুসলিদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ রুদ্ধ হয়ে যাবে না। তবে মুসলিমদের সর্বদা তাদের চক্রান্ত ও বিদ্বেষের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শানে অশালীন শব্দ ব্যবহার ও আচরণ করা যাবে না।
৩. কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ বর্জন করা আবশ্যক।
৪. কাফির-মুশরিকরা কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ চায় না, বাহ্যিক যতই হিতাকাক্সক্ষী প্রকাশ করুক।
2:105
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ
كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم
مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِۦ مَن يَشَآءُ ۚ
وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৪-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বিশিষ্ট তাবেঈ সুদ্দী (রহঃ) বলেন, ইয়াহূদীদের মধ্যে দু’জন লোক ছিল। একজন মালেক বিন সাইফ অন্যজন রিফায়াহ বিন সাঈদ। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলার সময় ‘‘راعنا‘‘ ‘আমাদের রাখাল’বলে সম্বোধন করত। সাহাবীগণ মনে করলেন, হয়তো আহলে কিতাবগণ এ কথার দ্বারা নাবীদেরকে সম্মান করে থাকে। তাই সাহাবাগণও এরূপ কথা বলতে লাগলেন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযুল পৃঃ ২৫)
আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সতর্ক করে বললেন: হে মু’মিনগণ! এ অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী যে আদেশ বা নিষেধ করছেন তা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল কর। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: যখন তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে বলতে শুনবে হে মু’মিনগণ! তাহলে তুমি তা খুব খেয়াল করে শুনবে। কারণ হয়তো কোন কল্যাণের নির্দেশ দিবেন অথবা কোন অকল্যাণ থেকে নিষেধ করবেন। সুতরাং আমাদের যথাযথ সতর্ক হওয়া উচিত।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: সাহাবাগণ যখন দীনের কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করতেন তখন বলতেন راعنا অর্থাৎ আমাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন, আমাদের অবস্থা একটু লক্ষ করুন। কিন্তু ইয়াহূদীরা এ সুযোগে উক্ত শব্দকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে লাগল এবং বলতে লাগল راعنا হে আমাদের রাখাল। এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদেরকে এ শব্দ পরিহার করতে নির্দেশ দিলেন এবং انطرنا অর্থাৎ আমাদের দিকে লক্ষ করুন! এ কথা বলার নির্দেশ দিয়ে এ আয়াত নাযিল করেন। কেননা راعنا শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক; এ শব্দটি আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন অর্থে ব্যবহার হয় এবং আমাদের রাখাল অর্থেও ব্যবহার হয়। এর মূল উৎস হল رِعَايَةٌ যার অর্থ হল দেখাশোনা করা।
এ আয়াত প্রমাণ করে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ করা যাবে না। আরো জানা গেল এমন শব্দ যা দ্ব্যর্থবোধক, ভাল-মন্দ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, আদব ও সম্মানার্থে এবং (বেআদবীর) ছিদ্রপথ বন্ধ করতে তার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কেননা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, তারা তাদেরই শামিল।
পরবর্তী আয়াতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদী ও মুশরিকদের হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিমদের প্রতি তাদের এতই বিদ্বেষ ও আক্রোশ যে, মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে কোন কল্যাণ নাযিল হোক তা তারা চায় না। তাদের জেনে রাখা উচিত, সবকিছুর প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত প্রদান করেন। তাদের বিদ্বেষ ও আক্রোশে মুসলিদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ রুদ্ধ হয়ে যাবে না। তবে মুসলিমদের সর্বদা তাদের চক্রান্ত ও বিদ্বেষের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শানে অশালীন শব্দ ব্যবহার ও আচরণ করা যাবে না।
৩. কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ বর্জন করা আবশ্যক।
৪. কাফির-মুশরিকরা কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ চায় না, বাহ্যিক যতই হিতাকাক্সক্ষী প্রকাশ করুক।
শানে নুযূল:
বিশিষ্ট তাবেঈ সুদ্দী (রহঃ) বলেন, ইয়াহূদীদের মধ্যে দু’জন লোক ছিল। একজন মালেক বিন সাইফ অন্যজন রিফায়াহ বিন সাঈদ। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলার সময় ‘‘راعنا‘‘ ‘আমাদের রাখাল’বলে সম্বোধন করত। সাহাবীগণ মনে করলেন, হয়তো আহলে কিতাবগণ এ কথার দ্বারা নাবীদেরকে সম্মান করে থাকে। তাই সাহাবাগণও এরূপ কথা বলতে লাগলেন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযুল পৃঃ ২৫)
আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সতর্ক করে বললেন: হে মু’মিনগণ! এ অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী যে আদেশ বা নিষেধ করছেন তা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল কর। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন: যখন তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে বলতে শুনবে হে মু’মিনগণ! তাহলে তুমি তা খুব খেয়াল করে শুনবে। কারণ হয়তো কোন কল্যাণের নির্দেশ দিবেন অথবা কোন অকল্যাণ থেকে নিষেধ করবেন। সুতরাং আমাদের যথাযথ সতর্ক হওয়া উচিত।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: সাহাবাগণ যখন দীনের কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করতেন তখন বলতেন راعنا অর্থাৎ আমাদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন, আমাদের অবস্থা একটু লক্ষ করুন। কিন্তু ইয়াহূদীরা এ সুযোগে উক্ত শব্দকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে লাগল এবং বলতে লাগল راعنا হে আমাদের রাখাল। এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদেরকে এ শব্দ পরিহার করতে নির্দেশ দিলেন এবং انطرنا অর্থাৎ আমাদের দিকে লক্ষ করুন! এ কথা বলার নির্দেশ দিয়ে এ আয়াত নাযিল করেন। কেননা راعنا শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক; এ শব্দটি আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন অর্থে ব্যবহার হয় এবং আমাদের রাখাল অর্থেও ব্যবহার হয়। এর মূল উৎস হল رِعَايَةٌ যার অর্থ হল দেখাশোনা করা।
এ আয়াত প্রমাণ করে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ করা যাবে না। আরো জানা গেল এমন শব্দ যা দ্ব্যর্থবোধক, ভাল-মন্দ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, আদব ও সম্মানার্থে এবং (বেআদবীর) ছিদ্রপথ বন্ধ করতে তার ব্যবহার করা ঠিক নয়। কেননা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, তারা তাদেরই শামিল।
পরবর্তী আয়াতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদী ও মুশরিকদের হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিমদের প্রতি তাদের এতই বিদ্বেষ ও আক্রোশ যে, মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে কোন কল্যাণ নাযিল হোক তা তারা চায় না। তাদের জেনে রাখা উচিত, সবকিছুর প্রকৃত মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত প্রদান করেন। তাদের বিদ্বেষ ও আক্রোশে মুসলিদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ রুদ্ধ হয়ে যাবে না। তবে মুসলিমদের সর্বদা তাদের চক্রান্ত ও বিদ্বেষের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শানে অশালীন শব্দ ব্যবহার ও আচরণ করা যাবে না।
৩. কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য হয় এমন কথা ও কাজ বর্জন করা আবশ্যক।
৪. কাফির-মুশরিকরা কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণ চায় না, বাহ্যিক যতই হিতাকাক্সক্ষী প্রকাশ করুক।
2:106
مَا نَنسَخْ مِنْ ءَايَةٍ
أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَآ أَوْ مِثْلِهَآ ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ
اللَّهَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৬ ও ১০৭ আয়াতের তাফসীর:
النسخ এর শাব্দিক অর্থ: দূরিভূত করা, শরীয়তের পরিভাষায়: চলমান কোন শরঈ বিধানকে পরবর্তী বিধান দ্বারা রহিত করাকে النسخ বলা হয়। কুরআনের এক আয়াত বা অংশ দ্বারা অন্য আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে সকল আলেম একমত। তবে সুন্নাত দ্বারা কুরআনের কোন আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে:
১. কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা মানসূখ হতে পারে। এ বিষয়ে তিন ইমাম (ইমাম মালেক, আবূ হানিফা ও আহমাদ) একমত। কেননা উভয়টাই ওয়াহী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং তিনি প্রবৃত্তি হতেও কথা বলেন না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।”(সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
২. মুতাওয়াতির নয় এমন হাদীস (খবরে আহাদ) দ্বারা কুরআনকে মানসূখ করার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম না-যায়েজ বলেছেন। কেননা কুরআন দ্বারা ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয় কিন্তু হাদীস দ্বারা তা হয় না।
কুরআনে নাসখ বা রহিতকরণ তিন প্রকার রয়েছে:
(ক) কোন আয়াত বিধানসহ রহিত করে তার স্থলে অন্য নতুন আয়াত ও বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে।
(খ) তেলাওয়াত বহাল রেখে আয়াতের বিধান রহিত করা হয়েছে।
(গ) কেবল তেলাওয়াত রহিত করা হয়েছে বিধান বহাল আছে। যেমন:
(والشيخ و الشيخة اذا زنيا فارجموهما البنة)
“বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা কর।”(মুআত্তা ইমাম মালেক)
ইয়াহূদীগণ আয়াত রহিতকরণ হওয়াকে অস্বীকার করে। তাদের দাবি যদি কোন আয়াত রহিত করে নতুন আয়াত দেয়া হয় তাহলে এটা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বে জানতেন না এ আয়াত বান্দাদের জন্য উপযোগী নয়। তাই পরিবর্তন করে নতুন আয়াত প্রদান করা প্রয়োজন দেখা দেয়। অতএব আয়াত রহিতকরণ বলতে কিছু নেই। ইয়াহূদীদের এ সব কথা ভ্রান্ত, কেননা আল্লাহ তা‘আলা, কোন বিধান রহিত করেন কয়েকটি কারণে:
১. বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্য হতে ঈমানের ওপর বহাল থাকে আর কে থাকে না।
২. বান্দাদের জন্য সহজ করার জন্য, অর্থাৎ পূর্বের বিধানের চেয়ে পরবর্তী বিধান সহজ। কেননা তিনিই বলছেন- আয়াতকে রহিত করে উত্তম কিছু নিয়ে আসেন।
৩. সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মালিক, তাঁর মালিকত্বে সবকিছু করার অধিকার রয়েছে, এর জন্য তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।”(সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বললেন: উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী, আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮১) অর্থাৎ কুরআনের অনেক মানসূখ বিধান রয়েছে যার প্রতি আমল করা রহিত করা হয়েছে। তাই উবাই (রাঃ) এর কথা এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নয়।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিচ্ছেন, আকাশ ও জমিনের রাজত্বের একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি কোন আয়াতকে রহিতও করতে পারেন। অতএব আমাদের ঈমান রাখতে হবে, কুরআনে নাসেখ মানসূখ উভয়ই রয়েছে, এসব আল্লাহ তা‘আলার হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তের পূর্ববর্তী বিধানকে পরবর্তী বিধান রহিত করতে পারে। তবে কিয়াস ও ইজমা শরীয়তের কোন বিধানকে রহিত করতে পারে না।
২. কোন বিধানকে রহিত করা মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ও তাঁর সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ।
النسخ এর শাব্দিক অর্থ: দূরিভূত করা, শরীয়তের পরিভাষায়: চলমান কোন শরঈ বিধানকে পরবর্তী বিধান দ্বারা রহিত করাকে النسخ বলা হয়। কুরআনের এক আয়াত বা অংশ দ্বারা অন্য আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে সকল আলেম একমত। তবে সুন্নাত দ্বারা কুরআনের কোন আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে:
১. কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা মানসূখ হতে পারে। এ বিষয়ে তিন ইমাম (ইমাম মালেক, আবূ হানিফা ও আহমাদ) একমত। কেননা উভয়টাই ওয়াহী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং তিনি প্রবৃত্তি হতেও কথা বলেন না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।”(সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
২. মুতাওয়াতির নয় এমন হাদীস (খবরে আহাদ) দ্বারা কুরআনকে মানসূখ করার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম না-যায়েজ বলেছেন। কেননা কুরআন দ্বারা ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয় কিন্তু হাদীস দ্বারা তা হয় না।
কুরআনে নাসখ বা রহিতকরণ তিন প্রকার রয়েছে:
(ক) কোন আয়াত বিধানসহ রহিত করে তার স্থলে অন্য নতুন আয়াত ও বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে।
(খ) তেলাওয়াত বহাল রেখে আয়াতের বিধান রহিত করা হয়েছে।
(গ) কেবল তেলাওয়াত রহিত করা হয়েছে বিধান বহাল আছে। যেমন:
(والشيخ و الشيخة اذا زنيا فارجموهما البنة)
“বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা কর।”(মুআত্তা ইমাম মালেক)
ইয়াহূদীগণ আয়াত রহিতকরণ হওয়াকে অস্বীকার করে। তাদের দাবি যদি কোন আয়াত রহিত করে নতুন আয়াত দেয়া হয় তাহলে এটা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বে জানতেন না এ আয়াত বান্দাদের জন্য উপযোগী নয়। তাই পরিবর্তন করে নতুন আয়াত প্রদান করা প্রয়োজন দেখা দেয়। অতএব আয়াত রহিতকরণ বলতে কিছু নেই। ইয়াহূদীদের এ সব কথা ভ্রান্ত, কেননা আল্লাহ তা‘আলা, কোন বিধান রহিত করেন কয়েকটি কারণে:
১. বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্য হতে ঈমানের ওপর বহাল থাকে আর কে থাকে না।
২. বান্দাদের জন্য সহজ করার জন্য, অর্থাৎ পূর্বের বিধানের চেয়ে পরবর্তী বিধান সহজ। কেননা তিনিই বলছেন- আয়াতকে রহিত করে উত্তম কিছু নিয়ে আসেন।
৩. সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মালিক, তাঁর মালিকত্বে সবকিছু করার অধিকার রয়েছে, এর জন্য তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।”(সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বললেন: উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী, আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮১) অর্থাৎ কুরআনের অনেক মানসূখ বিধান রয়েছে যার প্রতি আমল করা রহিত করা হয়েছে। তাই উবাই (রাঃ) এর কথা এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নয়।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিচ্ছেন, আকাশ ও জমিনের রাজত্বের একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি কোন আয়াতকে রহিতও করতে পারেন। অতএব আমাদের ঈমান রাখতে হবে, কুরআনে নাসেখ মানসূখ উভয়ই রয়েছে, এসব আল্লাহ তা‘আলার হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তের পূর্ববর্তী বিধানকে পরবর্তী বিধান রহিত করতে পারে। তবে কিয়াস ও ইজমা শরীয়তের কোন বিধানকে রহিত করতে পারে না।
২. কোন বিধানকে রহিত করা মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ও তাঁর সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ।
2:107
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ
اللَّهَ لَهُۥ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ
مِن وَلِىٍّ وَلَا نَصِيرٍ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৬ ও ১০৭ আয়াতের
তাফসীর:
النسخ এর শাব্দিক অর্থ: দূরিভূত করা, শরীয়তের পরিভাষায়: চলমান কোন শরঈ বিধানকে পরবর্তী বিধান দ্বারা রহিত করাকে النسخ বলা হয়। কুরআনের এক আয়াত বা অংশ দ্বারা অন্য আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে সকল আলেম একমত। তবে সুন্নাত দ্বারা কুরআনের কোন আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে:
১. কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা মানসূখ হতে পারে। এ বিষয়ে তিন ইমাম (ইমাম মালেক, আবূ হানিফা ও আহমাদ) একমত। কেননা উভয়টাই ওয়াহী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং তিনি প্রবৃত্তি হতেও কথা বলেন না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।”(সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
২. মুতাওয়াতির নয় এমন হাদীস (খবরে আহাদ) দ্বারা কুরআনকে মানসূখ করার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম না-যায়েজ বলেছেন। কেননা কুরআন দ্বারা ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয় কিন্তু হাদীস দ্বারা তা হয় না।
কুরআনে নাসখ বা রহিতকরণ তিন প্রকার রয়েছে:
(ক) কোন আয়াত বিধানসহ রহিত করে তার স্থলে অন্য নতুন আয়াত ও বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে।
(খ) তেলাওয়াত বহাল রেখে আয়াতের বিধান রহিত করা হয়েছে।
(গ) কেবল তেলাওয়াত রহিত করা হয়েছে বিধান বহাল আছে। যেমন:
(والشيخ و الشيخة اذا زنيا فارجموهما البنة)
“বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা কর।”(মুআত্তা ইমাম মালেক)
ইয়াহূদীগণ আয়াত রহিতকরণ হওয়াকে অস্বীকার করে। তাদের দাবি যদি কোন আয়াত রহিত করে নতুন আয়াত দেয়া হয় তাহলে এটা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বে জানতেন না এ আয়াত বান্দাদের জন্য উপযোগী নয়। তাই পরিবর্তন করে নতুন আয়াত প্রদান করা প্রয়োজন দেখা দেয়। অতএব আয়াত রহিতকরণ বলতে কিছু নেই। ইয়াহূদীদের এ সব কথা ভ্রান্ত, কেননা আল্লাহ তা‘আলা, কোন বিধান রহিত করেন কয়েকটি কারণে:
১. বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্য হতে ঈমানের ওপর বহাল থাকে আর কে থাকে না।
২. বান্দাদের জন্য সহজ করার জন্য, অর্থাৎ পূর্বের বিধানের চেয়ে পরবর্তী বিধান সহজ। কেননা তিনিই বলছেন- আয়াতকে রহিত করে উত্তম কিছু নিয়ে আসেন।
৩. সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মালিক, তাঁর মালিকত্বে সবকিছু করার অধিকার রয়েছে, এর জন্য তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।”(সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বললেন: উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী, আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮১) অর্থাৎ কুরআনের অনেক মানসূখ বিধান রয়েছে যার প্রতি আমল করা রহিত করা হয়েছে। তাই উবাই (রাঃ) এর কথা এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নয়।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিচ্ছেন, আকাশ ও জমিনের রাজত্বের একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি কোন আয়াতকে রহিতও করতে পারেন। অতএব আমাদের ঈমান রাখতে হবে, কুরআনে নাসেখ মানসূখ উভয়ই রয়েছে, এসব আল্লাহ তা‘আলার হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তের পূর্ববর্তী বিধানকে পরবর্তী বিধান রহিত করতে পারে। তবে কিয়াস ও ইজমা শরীয়তের কোন বিধানকে রহিত করতে পারে না।
২. কোন বিধানকে রহিত করা মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ও তাঁর সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ।
النسخ এর শাব্দিক অর্থ: দূরিভূত করা, শরীয়তের পরিভাষায়: চলমান কোন শরঈ বিধানকে পরবর্তী বিধান দ্বারা রহিত করাকে النسخ বলা হয়। কুরআনের এক আয়াত বা অংশ দ্বারা অন্য আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে সকল আলেম একমত। তবে সুন্নাত দ্বারা কুরআনের কোন আয়াত বা অংশকে রহিত করার ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে:
১. কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা মানসূখ হতে পারে। এ বিষয়ে তিন ইমাম (ইমাম মালেক, আবূ হানিফা ও আহমাদ) একমত। কেননা উভয়টাই ওয়াহী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং তিনি প্রবৃত্তি হতেও কথা বলেন না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।”(সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
২. মুতাওয়াতির নয় এমন হাদীস (খবরে আহাদ) দ্বারা কুরআনকে মানসূখ করার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম না-যায়েজ বলেছেন। কেননা কুরআন দ্বারা ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয় কিন্তু হাদীস দ্বারা তা হয় না।
কুরআনে নাসখ বা রহিতকরণ তিন প্রকার রয়েছে:
(ক) কোন আয়াত বিধানসহ রহিত করে তার স্থলে অন্য নতুন আয়াত ও বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে।
(খ) তেলাওয়াত বহাল রেখে আয়াতের বিধান রহিত করা হয়েছে।
(গ) কেবল তেলাওয়াত রহিত করা হয়েছে বিধান বহাল আছে। যেমন:
(والشيخ و الشيخة اذا زنيا فارجموهما البنة)
“বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা কর।”(মুআত্তা ইমাম মালেক)
ইয়াহূদীগণ আয়াত রহিতকরণ হওয়াকে অস্বীকার করে। তাদের দাবি যদি কোন আয়াত রহিত করে নতুন আয়াত দেয়া হয় তাহলে এটা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা পূর্বে জানতেন না এ আয়াত বান্দাদের জন্য উপযোগী নয়। তাই পরিবর্তন করে নতুন আয়াত প্রদান করা প্রয়োজন দেখা দেয়। অতএব আয়াত রহিতকরণ বলতে কিছু নেই। ইয়াহূদীদের এ সব কথা ভ্রান্ত, কেননা আল্লাহ তা‘আলা, কোন বিধান রহিত করেন কয়েকটি কারণে:
১. বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্য হতে ঈমানের ওপর বহাল থাকে আর কে থাকে না।
২. বান্দাদের জন্য সহজ করার জন্য, অর্থাৎ পূর্বের বিধানের চেয়ে পরবর্তী বিধান সহজ। কেননা তিনিই বলছেন- আয়াতকে রহিত করে উত্তম কিছু নিয়ে আসেন।
৩. সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মালিক, তাঁর মালিকত্বে সবকিছু করার অধিকার রয়েছে, এর জন্য তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।”(সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বললেন: উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী, আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর কিছু কথা বাদ দেই। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তার কিছুই ছাড়ব না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা ভুলিয়ে দেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮১) অর্থাৎ কুরআনের অনেক মানসূখ বিধান রয়েছে যার প্রতি আমল করা রহিত করা হয়েছে। তাই উবাই (রাঃ) এর কথা এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নয়।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিচ্ছেন, আকাশ ও জমিনের রাজত্বের একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি কোন আয়াতকে রহিতও করতে পারেন। অতএব আমাদের ঈমান রাখতে হবে, কুরআনে নাসেখ মানসূখ উভয়ই রয়েছে, এসব আল্লাহ তা‘আলার হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তের পূর্ববর্তী বিধানকে পরবর্তী বিধান রহিত করতে পারে। তবে কিয়াস ও ইজমা শরীয়তের কোন বিধানকে রহিত করতে পারে না।
২. কোন বিধানকে রহিত করা মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ও তাঁর সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ।
2:108
أَمْ تُرِيدُونَ أَن
تَسْـَٔلُوا رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسٰى مِن قَبْلُ ۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ
الْكُفْرَ بِالْإِيمٰنِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيلِ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৮ থেকে ১১০ নং আয়াতের তাসফীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
2:109
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ
أَهْلِ الْكِتٰبِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعْدِ إِيمٰنِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا
مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ۖ فَاعْفُوا
وَاصْفَحُوا حَتّٰى يَأْتِىَ اللَّهُ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلٰى كُلِّ
شَىْءٍ قَدِيرٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৮ থেকে ১১০ নং আয়াতের তাসফীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
2:110
وَأَقِيمُوا الصَّلٰوةَ
وَءَاتُوا الزَّكٰوةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ
عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১০৮ থেকে ১১০ নং আয়াতের তাসফীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাফি বিন হুরাইমালা অথবা ওহাব বিন জায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আকাশ থেকে অবতীর্ণ আমাদের জন্য একটি কিতাব নিয়ে এস যা আমরা পড়ব। অথবা আমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত কর, যার দরুন আমরা তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব এবং তোমার আনুগত্য করব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৩, লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬)
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসা দু’উদ্দেশ্যে হতে পারে:
১. জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিকে সমস্যায় ফেলা এবং তাকে অমান্য করার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْئَلُوْا عَنْ اَشْیَا۬ئَ اِنْ تُبْدَ لَکُمْ تَسُؤْکُمْ)
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। (সূরা মায়িদাহ ৫:১০১) এরূপ প্রশ্ন করেছিল মূসা (আঃ)-কে বানী ইসরাঈলরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَسْئَلُکَ اَھْلُ الْکِتٰبِ اَنْ تُنَزِّلَ عَلَیْھِمْ کِتٰبًا مِّنَ السَّمَا۬ئِ فَقَدْ سَاَلُوْا مُوْسٰٓی اَکْبَرَ مِنْ ذٰلِکَ فَقَالُوْٓا اَرِنَا اللہَ جَھْرَةً)
“কিতাবীগণ তোমাকে তাদের জন্য আসমান হতে কিতাব অবতীর্ণ করতে বলে; অথচ তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।”(সূরা নিসা ৪:১৫৩) হাদীসেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮)
২. কিছু জানার জন্য ও সঠিক পথ পাবার জন্য প্রশ্ন করা। এরূপ প্রশ্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং তা প্রশংসনীয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوآ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ )
“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা করো।”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)
জানার জন্য জিজ্ঞাসা করার প্রতি হাদীসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে অজানা রোগের চিকিৎসা হল জিজ্ঞাসা করা। (আবূ দাঊদ হা: ৩৩৬, ৩৩৭, হাসান) সুতরাং আমাদের উচিত কিছু জানার জন্য আলেমদের জিজ্ঞাসা করা, তাদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য নয়।
(وَدَّ كَثِيْرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: হুহাই বিন আখতাব ও ইয়াসিন বিন আখতাব মুসলিমদের প্রতি সর্বাপেক্ষা বেশি হিংসা পোষণ করত। তারা জনগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখত। তাদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কা‘ব বিন আশরাফ ইয়াহূদীও এ কাজে লিপ্ত থাকত। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
হিংসা সাধারণত দু’প্রকার: প্রথম প্রকার: বৈধ ও প্রশংসণীয়। যেমন হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’টি কাজ ছাড়া কোন কাজে হিংসা করা বৈধ নয়। ১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে তেলাওয়াত করে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়। ২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন ফলে সে দিনে-রাতে ভাল কাজে সম্পদ ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ৮১৫)
এ প্রকারকে আরবি ভাষায় حسد শব্দ ব্যবহার হলেও তা غبطة প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়। যার অর্থ হলো ঈর্ষা করা অর্থাৎ অন্যের কোন ক্ষতি কামনা ছাড়াই তার মত হবার ইচ্ছা পোষণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার: অবৈধ ও নিন্দনীয় কোন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা। অথবা তার কোন অকল্যাণ হোক তা কামনা করা এবং নিজে ঐ নেয়ামত বা কল্যাণের মালিক হবার আশা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ يَحْسُدُوْنَ النَّاسَ عَلٰي مَآ اٰتَاهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه۪)
“অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের সাথে হিংসা করে?” (সূরা নিসা ৪:৫৪)
আয়াতে দ্বিতীয় প্রকার হিংসার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুআতের সত্যতা জানার পরেও মেনে নেয়নি বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে সাহাবীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের হিংসা-বিদ্বেষের সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা মুসলিমদের সাথে কিরূপ হিংসা করে। হিংসা তাদেরকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে যে, তারা চায় তোমরা যদি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যেতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ اٰمِنُوْا بِالَّذِیْٓ اُنْزِلَ عَلَی الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَجْھَ النَّھَارِ وَاکْفُرُوْٓا اٰخِرَھ۫ لَعَلَّھُمْ یَرْجِعُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল বলে, ঈমানদারদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর যাতে করে তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসে।”(সূরা আলি-ইমরান ৭২)
এসব তাদের হিংসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের হিংসার মোকাবেলা করতে বলেছেন, যাতে সবাই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে ফিরে আসতে পারে। যদি তারা তাদের স্বীয় অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তো আছেন যিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের হিংসার কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَدَّتْ طَّا۬ئِفَةٌ مِّنْ اَھْلِ الْکِتٰبِ لَوْ یُضِلُّوْنَکُمْﺚ وَمَا یُضِلُّوْنَ اِلَّآ اَنْفُسَھُمْ وَمَا یَشْعُرُوْنَ)
“আহলে কিতাবদের একদল তোমাদেরকে গোমরাহ বানাতে চায় কিন্তু তারা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করে না। অথচ তা অনুভব করে না।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৬৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
(فَاعْفُوْا وَاصْفَحُوْا حَتّٰي... ) এ আয়াতটি
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوْهُمْ)
আয়াত (সূরা তাওবাহ ৯:৫) দ্বারা রহিত হয়ে যায়।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠার, যাকাত প্রদানের ও কল্যাণকর কাজের নির্দেশ প্রদান করছেন। মু’মিনগণ যত ভাল কাজ করুক না কেন সবকিছুর ফলাফল আল্লাহ তা‘আলার নিকট পাবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অনর্থক প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। তবে জানার এবং মানার জন্য প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়।
২. কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রাপ্ত নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া অথবা তার কোন অকল্যাণ কামনা করা হারাম।
৩. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা জানে মুসলিমরা সত্য ও সঠিক ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই হিংসার বশবর্তী হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, কিভাবে এদেরকে সঠিক দীন থেকে সরিয়ে কাফির বানানো যায়।
৪. অন্যায়কে যথাসম্ভব ক্ষমা ও ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, তা দ্বারা সম্ভব না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
2:111
وَقَالُوا لَن يَدْخُلَ
الْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصٰرٰى ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ ۗ قُلْ
هَاتُوا بُرْهٰنَكُمْ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১১ ও ১১২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো তাদের প্রমাণবিহীন দাবি যে, কেবল তারাই জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের কথা হল:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّا۬ؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮)
তারা আরো বলে-
(نَحْنُ أَوْلِيَا۬ءُ اللّٰهِ)
আমরা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর” অর্থাৎ এটা কেবল তাদের মুখের দাবি, কোন প্রমাণ নেই। যদি তাই হত তাহলে কেন কিয়ামতের দিন তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেবেন।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন দাবি-দাওয়া নয়, যে ব্যক্তি দু’টি শর্তে আমল করবে তার কোন চিন্তা নেই এবং কোন ভয়ও নেই।
১. (مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَه۫ لِلّٰهِ)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে’যে ব্যক্তি তার দীন ও আমলকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বচ্ছ করল তাঁর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করল না।
২. (وَهُوَ مُحْسِنٌ)
‘সৎকর্মশীল হয়েছে’অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে তার জন্য এ সুসংবাদ।
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমল করল কিন্তু রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক করল না অথবা সুন্নাহ মোতাবেক করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালেসভাবে করল না, তার আমলও প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاه۫ هَبَا۬ءً مَّنثُورًا)
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।”(সূরা ফুরকান ২৫:২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَنْ کَانَ یَرْجُوْا لِقَا۬ئَ رَبِّھ۪ فَلْیَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشْرِکْ بِعِبَادَةِ رَبِّھ۪ٓ اَحَدًا)
“সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَنَا أَغْنَي الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আমি শির্ককারীদের শির্ক থেকে অমুখাপেক্ষী, যে ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শির্ককে বর্জন করব। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৮৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
منْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا ، فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের নির্দেশ বহির্ভূত তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯১৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)
সুতরাং কোন ভ্রান্ত দাবি নয় বরং এক আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমলের মাধ্যমেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন প্রকার ভ্রান্ত দাবি আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তাওহীদভিত্তিক ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া তরীকানুযায়ী আমলের মাধ্যমে জান্নাতের আশা করা উচিত।
২. কাউকে আমল পিছনে ফেলে দিলে বংশ মর্যাদা সামনে নিয়ে যেতে পারে না।
এখানে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো তাদের প্রমাণবিহীন দাবি যে, কেবল তারাই জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের কথা হল:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّا۬ؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮)
তারা আরো বলে-
(نَحْنُ أَوْلِيَا۬ءُ اللّٰهِ)
আমরা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর” অর্থাৎ এটা কেবল তাদের মুখের দাবি, কোন প্রমাণ নেই। যদি তাই হত তাহলে কেন কিয়ামতের দিন তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেবেন।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন দাবি-দাওয়া নয়, যে ব্যক্তি দু’টি শর্তে আমল করবে তার কোন চিন্তা নেই এবং কোন ভয়ও নেই।
১. (مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَه۫ لِلّٰهِ)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে’যে ব্যক্তি তার দীন ও আমলকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বচ্ছ করল তাঁর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করল না।
২. (وَهُوَ مُحْسِنٌ)
‘সৎকর্মশীল হয়েছে’অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে তার জন্য এ সুসংবাদ।
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমল করল কিন্তু রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক করল না অথবা সুন্নাহ মোতাবেক করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালেসভাবে করল না, তার আমলও প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاه۫ هَبَا۬ءً مَّنثُورًا)
আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।”(সূরা ফুরকান ২৫:২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَنْ کَانَ یَرْجُوْا لِقَا۬ئَ رَبِّھ۪ فَلْیَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشْرِکْ بِعِبَادَةِ رَبِّھ۪ٓ اَحَدًا)
“সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَنَا أَغْنَي الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আমি শির্ককারীদের শির্ক থেকে অমুখাপেক্ষী, যে ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শির্ককে বর্জন করব। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৮৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
منْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا ، فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের নির্দেশ বহির্ভূত তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯১৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)
সুতরাং কোন ভ্রান্ত দাবি নয় বরং এক আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমলের মাধ্যমেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন প্রকার ভ্রান্ত দাবি আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তাওহীদভিত্তিক ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া তরীকানুযায়ী আমলের মাধ্যমে জান্নাতের আশা করা উচিত।
২. কাউকে আমল পিছনে ফেলে দিলে বংশ মর্যাদা সামনে নিয়ে যেতে পারে না।
2:112
بَلٰى مَنْ أَسْلَمَ
وَجْهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُۥٓ أَجْرُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ وَلَا
خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১১ ও ১১২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো তাদের প্রমাণবিহীন দাবি যে, কেবল তারাই জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের কথা হল:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّا۬ؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮)
তারা আরো বলে-
(نَحْنُ أَوْلِيَا۬ءُ اللّٰهِ)
আমরা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর” অর্থাৎ এটা কেবল তাদের মুখের দাবি, কোন প্রমাণ নেই। যদি তাই হত তাহলে কেন কিয়ামতের দিন তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেবেন।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন দাবি-দাওয়া নয়, যে ব্যক্তি দু’টি শর্তে আমল করবে তার কোন চিন্তা নেই এবং কোন ভয়ও নেই।
১. (مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَه۫ لِلّٰهِ)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে’যে ব্যক্তি তার দীন ও আমলকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বচ্ছ করল তাঁর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করল না।
২. (وَهُوَ مُحْسِنٌ)
‘সৎকর্মশীল হয়েছে’অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে তার জন্য এ সুসংবাদ।
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমল করল কিন্তু রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক করল না অথবা সুন্নাহ মোতাবেক করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালেসভাবে করল না, তার আমলও প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاه۫ هَبَا۬ءً مَّنثُورًا)
“আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।”(সূরা ফুরকান ২৫:২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَنْ کَانَ یَرْجُوْا لِقَا۬ئَ رَبِّھ۪ فَلْیَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشْرِکْ بِعِبَادَةِ رَبِّھ۪ٓ اَحَدًا)
“সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَنَا أَغْنَي الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আমি শির্ককারীদের শির্ক থেকে অমুখাপেক্ষী, যে ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শির্ককে বর্জন করব। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৮৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
منْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا ، فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের নির্দেশ বহির্ভূত তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯১৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)
সুতরাং কোন ভ্রান্ত দাবি নয় বরং এক আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমলের মাধ্যমেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন প্রকার ভ্রান্ত দাবি আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তাওহীদভিত্তিক ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া তরীকানুযায়ী আমলের মাধ্যমে জান্নাতের আশা করা উচিত।
২. কাউকে আমল পিছনে ফেলে দিলে বংশ মর্যাদা সামনে নিয়ে যেতে পারে না।
এখানে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো তাদের প্রমাণবিহীন দাবি যে, কেবল তারাই জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের কথা হল:
(نَحْنُ أَبْنَا۬ءُ اللّٰهِ وَأَحِبَّا۬ؤُه۫)
‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়পাত্র।’(সূরা মায়িদাহ ৫:১৮)
তারা আরো বলে-
(نَحْنُ أَوْلِيَا۬ءُ اللّٰهِ)
আমরা আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর” অর্থাৎ এটা কেবল তাদের মুখের দাবি, কোন প্রমাণ নেই। যদি তাই হত তাহলে কেন কিয়ামতের দিন তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেবেন।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন দাবি-দাওয়া নয়, যে ব্যক্তি দু’টি শর্তে আমল করবে তার কোন চিন্তা নেই এবং কোন ভয়ও নেই।
১. (مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَه۫ لِلّٰهِ)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে’যে ব্যক্তি তার দীন ও আমলকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বচ্ছ করল তাঁর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করল না।
২. (وَهُوَ مُحْسِنٌ)
‘সৎকর্মশীল হয়েছে’অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে তার জন্য এ সুসংবাদ।
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমল করল কিন্তু রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক করল না অথবা সুন্নাহ মোতাবেক করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালেসভাবে করল না, তার আমলও প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاه۫ هَبَا۬ءً مَّنثُورًا)
“আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।”(সূরা ফুরকান ২৫:২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَنْ کَانَ یَرْجُوْا لِقَا۬ئَ رَبِّھ۪ فَلْیَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشْرِکْ بِعِبَادَةِ رَبِّھ۪ٓ اَحَدًا)
“সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَنَا أَغْنَي الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
আমি শির্ককারীদের শির্ক থেকে অমুখাপেক্ষী, যে ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শির্ককে বর্জন করব। (সহীহ মুসলিম হা: ২৯৮৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
منْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا ، فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের নির্দেশ বহির্ভূত তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯১৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)
সুতরাং কোন ভ্রান্ত দাবি নয় বরং এক আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমলের মাধ্যমেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন প্রকার ভ্রান্ত দাবি আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তাওহীদভিত্তিক ঈমান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া তরীকানুযায়ী আমলের মাধ্যমে জান্নাতের আশা করা উচিত।
২. কাউকে আমল পিছনে ফেলে দিলে বংশ মর্যাদা সামনে নিয়ে যেতে পারে না।
2:113
وَقَالَتِ الْيَهُودُ
لَيْسَتِ النَّصٰرٰى عَلٰى شَىْءٍ وَقَالَتِ النَّصٰرٰى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلٰى
شَىْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتٰبَ ۗ كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
مِثْلَ قَوْلِهِمْ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ فِيمَا كَانُوا
فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১৩ ও ১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আবি হাতিম ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করল তখন ইয়াহূদী পণ্ডিতগণ এসে তাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে গেল। তখন রাফে বিন হুরাইমালা বলল- তোমরা কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা ঈসা ও ইঞ্জিলের সাথে কুফরী করেছ। তখন একজন নাজরানবাসী ইয়াহূদীদেরকে বলল- তোমরাও কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা মূসা (আঃ)-এর নবুওয়াত ও তাওরাতকে অস্বীকার করেছ। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৮, লুবাবন নুকূল ফি আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৭)
অর্থাৎ ইয়াহূদীরা তাওরাত পড়ত। তাতে মূসা (আঃ)-এর জবানে ঈসা (আঃ)-এর সত্যায়ন বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ) কে অস্বীকার করে। খ্রিস্টানদের কাছে ইনজিল বিদ্যমান, তাতে মূসা (আঃ) এবং তাওরাত যে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আগত সে কথার সত্যায়ন রয়েছে, তা সত্ত্বেও এরা ইয়াহূদীদেরকে কাফির মনে করে। এ হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি হিংসার বহিঃপ্রকাশ, যার কারণে তারা একে অপরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে।
(كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ)
‘এভাবে যারা জানে না, তারাও ওদের কথার মত কথা বলে থাকে’অর্থাৎ আহলে কিতাবদের মোকাবেলায় আরবের মুশরিকরা নিরক্ষর (অশিক্ষিত) ছিল। আর এ জন্যই তাদেরকে ‘অজ্ঞ’বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত এ মিথ্যা ধারণায় মত্ত ছিল যে, তারাই নাকি হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাবেয়ী বা বেদীন বলত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কারা সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আর কারা প্রতিষ্ঠিত নয় তা নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া করার প্রয়োজন নেই বরং তিনি কিয়ামতের দিন এ বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। যেমন অন্যত্র বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِیْنَ ھَادُوْا وَالصَّابِئِیْنَ وَالنَّصٰرٰی وَالْمَجُوْسَ وَالَّذِیْنَ اَشْرَکُوْٓاﺣ اِنَّ اللہَ یَفْصِلُ بَیْنَھُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ شَھِیْدٌ)
“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।”(সূরা হজ্জ ২২:১৭)
(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ)
‘‘আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে আছে’’আয়াতের শানে নুযূল: এর শানে নুযূলের ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। যথা:
১. ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উমরা করতে যান তখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে বাধা প্রদান করেছিল, সে ব্যাপারে নাযিল হয়। এর প্রমাণ বহন করে এ বাণী:
(هُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
“এরাই তো ঐ লোক, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে”(সূরা ফাতহ ৪৮:২৫)
এ অর্থে মাসজিদ ধ্বংস করার অর্থ হলো: মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া।
২. বখতে নসর ও অন্যান্যরা যে বাইতুল মাকদাসকে নষ্ট ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছিল সে ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। এর প্রমাণ বহন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَاِذَا جَا۬ئَ وَعْدُ الْاٰخِرَةِ لِیَسُوْ۬ءۭا وُجُوْھَکُمْ وَلِیَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ کَمَا دَخَلُوْھُ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّلِیُتَبِّرُوْا مَا عَلَوْا تَتْبِیْرًا)
“অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মাসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।”(সূরা ইসরা ১৭:৭) (আযওয়াউল বায়ান ১/৮৯)
প্রথম বর্ণনাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আর এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাসীরেও এ বর্ণনা আছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
যারা মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয় ও মাসজিদ ধ্বংস করে তারা কারা? এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়: তবে সঠিক হল তারা আরবের মুশরিকগণ। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তারা যারাই হোক তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান আর আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।
(أُولٰ۬ئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَآ إِلَّا خَا۬ ئِفِيْنَ)
এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে ভীত অবস্থায়ই তাতে প্রবেশ করা উচিত” এখানে শব্দগুলো সংবাদমূলক হলেও উদ্দেশ্য হল আদেশ। অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয় দান করবেন তখন তোমরা মুশরিকদেরকে সেখানে সন্ধি ও জিযিয়া-কর ছাড়া প্রবেশ বা অবস্থান করার অনুমতি দেবে না।
তাই ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেন, আগামী বছর থেকে কোন মুশরিক কাবায় হজ্জ ও উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৭৯) তবে যার সাথে চুক্তি আছে সে চুক্তির সময় পর্যন্ত এখানে থাকার অনুমতি পাবে।
কেউ বলেছেন: এটা একটা সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী যে, অতি সত্বর মুসলিমরা জয়লাভ করবে এবং মুশরিকরা এ ভেবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে যে, আমরা মুসলিমদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছি তার বদলায় হয়তো তারা আমাদেরকে শাস্তি দিতে ও হত্যাও করতে পারে। বলা বাহুল্য অতি সত্বর এ সুসংবাদ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীন তিন স্তরের (ঈমান, ইসলাম ও ইহসান) ওপর প্রতিষ্ঠিত, এটাই জাহান্নাম হতে নাজাত ও জান্নাত লাভের একমাত্র মাধ্যম।
২. মাসজিদ ধ্বংস করা অথবা ইবাদতে বাধা দেয়া বড় ধরণের অপরাধ।
৩. কাফির-মুশরিকদের থেকে মাসজিদ রক্ষা করা ওয়াজিব।
৪. মুসলিমদের অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব জানলাম।
শানে নুযূল:
ইবনু আবি হাতিম ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করল তখন ইয়াহূদী পণ্ডিতগণ এসে তাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে গেল। তখন রাফে বিন হুরাইমালা বলল- তোমরা কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা ঈসা ও ইঞ্জিলের সাথে কুফরী করেছ। তখন একজন নাজরানবাসী ইয়াহূদীদেরকে বলল- তোমরাও কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা মূসা (আঃ)-এর নবুওয়াত ও তাওরাতকে অস্বীকার করেছ। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৮, লুবাবন নুকূল ফি আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৭)
অর্থাৎ ইয়াহূদীরা তাওরাত পড়ত। তাতে মূসা (আঃ)-এর জবানে ঈসা (আঃ)-এর সত্যায়ন বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ) কে অস্বীকার করে। খ্রিস্টানদের কাছে ইনজিল বিদ্যমান, তাতে মূসা (আঃ) এবং তাওরাত যে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আগত সে কথার সত্যায়ন রয়েছে, তা সত্ত্বেও এরা ইয়াহূদীদেরকে কাফির মনে করে। এ হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি হিংসার বহিঃপ্রকাশ, যার কারণে তারা একে অপরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে।
(كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ)
‘এভাবে যারা জানে না, তারাও ওদের কথার মত কথা বলে থাকে’অর্থাৎ আহলে কিতাবদের মোকাবেলায় আরবের মুশরিকরা নিরক্ষর (অশিক্ষিত) ছিল। আর এ জন্যই তাদেরকে ‘অজ্ঞ’বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত এ মিথ্যা ধারণায় মত্ত ছিল যে, তারাই নাকি হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাবেয়ী বা বেদীন বলত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কারা সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আর কারা প্রতিষ্ঠিত নয় তা নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া করার প্রয়োজন নেই বরং তিনি কিয়ামতের দিন এ বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। যেমন অন্যত্র বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِیْنَ ھَادُوْا وَالصَّابِئِیْنَ وَالنَّصٰرٰی وَالْمَجُوْسَ وَالَّذِیْنَ اَشْرَکُوْٓاﺣ اِنَّ اللہَ یَفْصِلُ بَیْنَھُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ شَھِیْدٌ)
“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।”(সূরা হজ্জ ২২:১৭)
(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ)
‘‘আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে আছে’’আয়াতের শানে নুযূল: এর শানে নুযূলের ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। যথা:
১. ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উমরা করতে যান তখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে বাধা প্রদান করেছিল, সে ব্যাপারে নাযিল হয়। এর প্রমাণ বহন করে এ বাণী:
(هُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
“এরাই তো ঐ লোক, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে”(সূরা ফাতহ ৪৮:২৫)
এ অর্থে মাসজিদ ধ্বংস করার অর্থ হলো: মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া।
২. বখতে নসর ও অন্যান্যরা যে বাইতুল মাকদাসকে নষ্ট ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছিল সে ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। এর প্রমাণ বহন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَاِذَا جَا۬ئَ وَعْدُ الْاٰخِرَةِ لِیَسُوْ۬ءۭا وُجُوْھَکُمْ وَلِیَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ کَمَا دَخَلُوْھُ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّلِیُتَبِّرُوْا مَا عَلَوْا تَتْبِیْرًا)
“অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মাসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।”(সূরা ইসরা ১৭:৭) (আযওয়াউল বায়ান ১/৮৯)
প্রথম বর্ণনাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আর এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাসীরেও এ বর্ণনা আছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
যারা মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয় ও মাসজিদ ধ্বংস করে তারা কারা? এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়: তবে সঠিক হল তারা আরবের মুশরিকগণ। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তারা যারাই হোক তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান আর আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।
(أُولٰ۬ئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَآ إِلَّا خَا۬ ئِفِيْنَ)
এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে ভীত অবস্থায়ই তাতে প্রবেশ করা উচিত” এখানে শব্দগুলো সংবাদমূলক হলেও উদ্দেশ্য হল আদেশ। অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয় দান করবেন তখন তোমরা মুশরিকদেরকে সেখানে সন্ধি ও জিযিয়া-কর ছাড়া প্রবেশ বা অবস্থান করার অনুমতি দেবে না।
তাই ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেন, আগামী বছর থেকে কোন মুশরিক কাবায় হজ্জ ও উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৭৯) তবে যার সাথে চুক্তি আছে সে চুক্তির সময় পর্যন্ত এখানে থাকার অনুমতি পাবে।
কেউ বলেছেন: এটা একটা সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী যে, অতি সত্বর মুসলিমরা জয়লাভ করবে এবং মুশরিকরা এ ভেবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে যে, আমরা মুসলিমদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছি তার বদলায় হয়তো তারা আমাদেরকে শাস্তি দিতে ও হত্যাও করতে পারে। বলা বাহুল্য অতি সত্বর এ সুসংবাদ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীন তিন স্তরের (ঈমান, ইসলাম ও ইহসান) ওপর প্রতিষ্ঠিত, এটাই জাহান্নাম হতে নাজাত ও জান্নাত লাভের একমাত্র মাধ্যম।
২. মাসজিদ ধ্বংস করা অথবা ইবাদতে বাধা দেয়া বড় ধরণের অপরাধ।
৩. কাফির-মুশরিকদের থেকে মাসজিদ রক্ষা করা ওয়াজিব।
৪. মুসলিমদের অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব জানলাম।
2:114
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن
مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُۥ وَسَعٰى فِى خَرَابِهَآ ۚ
أُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَآ إِلَّا خَآئِفِينَ ۚ لَهُمْ فِى
الدُّنْيَا خِزْىٌ وَلَهُمْ فِى الْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১৩ ও ১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আবি হাতিম ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করল তখন ইয়াহূদী পণ্ডিতগণ এসে তাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে গেল। তখন রাফে বিন হুরাইমালা বলল- তোমরা কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা ঈসা ও ইঞ্জিলের সাথে কুফরী করেছ। তখন একজন নাজরানবাসী ইয়াহূদীদেরকে বলল- তোমরাও কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা মূসা (আঃ)-এর নবুওয়াত ও তাওরাতকে অস্বীকার করেছ। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৮, লুবাবন নুকূল ফি আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৭)
অর্থাৎ ইয়াহূদীরা তাওরাত পড়ত। তাতে মূসা (আঃ)-এর জবানে ঈসা (আঃ)-এর সত্যায়ন বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ) কে অস্বীকার করে। খ্রিস্টানদের কাছে ইনজিল বিদ্যমান, তাতে মূসা (আঃ) এবং তাওরাত যে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আগত সে কথার সত্যায়ন রয়েছে, তা সত্ত্বেও এরা ইয়াহূদীদেরকে কাফির মনে করে। এ হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি হিংসার বহিঃপ্রকাশ, যার কারণে তারা একে অপরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে।
(كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ)
এভাবে যারা জানে না, তারাও ওদের কথার মত কথা বলে থাকে’অর্থাৎ আহলে কিতাবদের মোকাবেলায় আরবের মুশরিকরা নিরক্ষর (অশিক্ষিত) ছিল। আর এ জন্যই তাদেরকে ‘অজ্ঞ’বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত এ মিথ্যা ধারণায় মত্ত ছিল যে, তারাই নাকি হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাবেয়ী বা বেদীন বলত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কারা সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আর কারা প্রতিষ্ঠিত নয় তা নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া করার প্রয়োজন নেই বরং তিনি কিয়ামতের দিন এ বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। যেমন অন্যত্র বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِیْنَ ھَادُوْا وَالصَّابِئِیْنَ وَالنَّصٰرٰی وَالْمَجُوْسَ وَالَّذِیْنَ اَشْرَکُوْٓاﺣ اِنَّ اللہَ یَفْصِلُ بَیْنَھُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ شَھِیْدٌ)
“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।”(সূরা হজ্জ ২২:১৭)
(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ)
‘‘আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে আছে’’আয়াতের শানে নুযূল: এর শানে নুযূলের ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। যথা:
১. ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উমরা করতে যান তখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে বাধা প্রদান করেছিল, সে ব্যাপারে নাযিল হয়। এর প্রমাণ বহন করে এ বাণী:
(هُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
“এরাই তো ঐ লোক, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে”(সূরা ফাতহ ৪৮:২৫)
এ অর্থে মাসজিদ ধ্বংস করার অর্থ হলো: মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া।
২. বখতে নসর ও অন্যান্যরা যে বাইতুল মাকদাসকে নষ্ট ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছিল সে ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। এর প্রমাণ বহন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَاِذَا جَا۬ئَ وَعْدُ الْاٰخِرَةِ لِیَسُوْ۬ءۭا وُجُوْھَکُمْ وَلِیَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ کَمَا دَخَلُوْھُ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّلِیُتَبِّرُوْا مَا عَلَوْا تَتْبِیْرًا)
“অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মাসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।”(সূরা ইসরা ১৭:৭) (আযওয়াউল বায়ান ১/৮৯)
প্রথম বর্ণনাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আর এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাসীরেও এ বর্ণনা আছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
যারা মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয় ও মাসজিদ ধ্বংস করে তারা কারা? এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়: তবে সঠিক হল তারা আরবের মুশরিকগণ। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তারা যারাই হোক তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান আর আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।
(أُولٰ۬ئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَآ إِلَّا خَا۬ ئِفِيْنَ)
এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে ভীত অবস্থায়ই তাতে প্রবেশ করা উচিত” এখানে শব্দগুলো সংবাদমূলক হলেও উদ্দেশ্য হল আদেশ। অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয় দান করবেন তখন তোমরা মুশরিকদেরকে সেখানে সন্ধি ও জিযিয়া-কর ছাড়া প্রবেশ বা অবস্থান করার অনুমতি দেবে না।
তাই ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেন, আগামী বছর থেকে কোন মুশরিক কাবায় হজ্জ ও উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৭৯) তবে যার সাথে চুক্তি আছে সে চুক্তির সময় পর্যন্ত এখানে থাকার অনুমতি পাবে।
কেউ বলেছেন: এটা একটা সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী যে, অতি সত্বর মুসলিমরা জয়লাভ করবে এবং মুশরিকরা এ ভেবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে যে, আমরা মুসলিমদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছি তার বদলায় হয়তো তারা আমাদেরকে শাস্তি দিতে ও হত্যাও করতে পারে। বলা বাহুল্য অতি সত্বর এ সুসংবাদ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীন তিন স্তরের (ঈমান, ইসলাম ও ইহসান) ওপর প্রতিষ্ঠিত, এটাই জাহান্নাম হতে নাজাত ও জান্নাত লাভের একমাত্র মাধ্যম।
২. মাসজিদ ধ্বংস করা অথবা ইবাদতে বাধা দেয়া বড় ধরণের অপরাধ।
৩. কাফির-মুশরিকদের থেকে মাসজিদ রক্ষা করা ওয়াজিব।
৪. মুসলিমদের অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব জানলাম।
শানে নুযূল:
ইবনু আবি হাতিম ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করল তখন ইয়াহূদী পণ্ডিতগণ এসে তাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে গেল। তখন রাফে বিন হুরাইমালা বলল- তোমরা কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা ঈসা ও ইঞ্জিলের সাথে কুফরী করেছ। তখন একজন নাজরানবাসী ইয়াহূদীদেরকে বলল- তোমরাও কোন ধর্মের ওপরই নও। কেননা তোমরা মূসা (আঃ)-এর নবুওয়াত ও তাওরাতকে অস্বীকার করেছ। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৩৮, লুবাবন নুকূল ফি আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৭)
অর্থাৎ ইয়াহূদীরা তাওরাত পড়ত। তাতে মূসা (আঃ)-এর জবানে ঈসা (আঃ)-এর সত্যায়ন বিদ্যমান, তা সত্ত্বেও ইয়াহূদীরা ঈসা (আঃ) কে অস্বীকার করে। খ্রিস্টানদের কাছে ইনজিল বিদ্যমান, তাতে মূসা (আঃ) এবং তাওরাত যে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আগত সে কথার সত্যায়ন রয়েছে, তা সত্ত্বেও এরা ইয়াহূদীদেরকে কাফির মনে করে। এ হল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি হিংসার বহিঃপ্রকাশ, যার কারণে তারা একে অপরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে।
(كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ)
এভাবে যারা জানে না, তারাও ওদের কথার মত কথা বলে থাকে’অর্থাৎ আহলে কিতাবদের মোকাবেলায় আরবের মুশরিকরা নিরক্ষর (অশিক্ষিত) ছিল। আর এ জন্যই তাদেরকে ‘অজ্ঞ’বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত এ মিথ্যা ধারণায় মত্ত ছিল যে, তারাই নাকি হক্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাবেয়ী বা বেদীন বলত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কারা সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আর কারা প্রতিষ্ঠিত নয় তা নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া করার প্রয়োজন নেই বরং তিনি কিয়ামতের দিন এ বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। যেমন অন্যত্র বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِیْنَ ھَادُوْا وَالصَّابِئِیْنَ وَالنَّصٰرٰی وَالْمَجُوْسَ وَالَّذِیْنَ اَشْرَکُوْٓاﺣ اِنَّ اللہَ یَفْصِلُ بَیْنَھُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ شَھِیْدٌ)
“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।”(সূরা হজ্জ ২২:১৭)
(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ)
‘‘আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে আছে’’আয়াতের শানে নুযূল: এর শানে নুযূলের ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। যথা:
১. ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উমরা করতে যান তখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে বাধা প্রদান করেছিল, সে ব্যাপারে নাযিল হয়। এর প্রমাণ বহন করে এ বাণী:
(هُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
“এরাই তো ঐ লোক, যারা কুফরী করেছে ও তোমাদেরকে মাসজিদুল হারাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছে”(সূরা ফাতহ ৪৮:২৫)
এ অর্থে মাসজিদ ধ্বংস করার অর্থ হলো: মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া।
২. বখতে নসর ও অন্যান্যরা যে বাইতুল মাকদাসকে নষ্ট ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছিল সে ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। এর প্রমাণ বহন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَاِذَا جَا۬ئَ وَعْدُ الْاٰخِرَةِ لِیَسُوْ۬ءۭا وُجُوْھَکُمْ وَلِیَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ کَمَا دَخَلُوْھُ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّلِیُتَبِّرُوْا مَا عَلَوْا تَتْبِیْرًا)
“অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মাসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।”(সূরা ইসরা ১৭:৭) (আযওয়াউল বায়ান ১/৮৯)
প্রথম বর্ণনাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আর এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন। ইবনু কাসীরেও এ বর্ণনা আছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
যারা মাসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয় ও মাসজিদ ধ্বংস করে তারা কারা? এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়: তবে সঠিক হল তারা আরবের মুশরিকগণ। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
তারা যারাই হোক তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান আর আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।
(أُولٰ۬ئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَآ إِلَّا خَا۬ ئِفِيْنَ)
এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে ভীত অবস্থায়ই তাতে প্রবেশ করা উচিত” এখানে শব্দগুলো সংবাদমূলক হলেও উদ্দেশ্য হল আদেশ। অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয় দান করবেন তখন তোমরা মুশরিকদেরকে সেখানে সন্ধি ও জিযিয়া-কর ছাড়া প্রবেশ বা অবস্থান করার অনুমতি দেবে না।
তাই ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেন, আগামী বছর থেকে কোন মুশরিক কাবায় হজ্জ ও উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৭৯) তবে যার সাথে চুক্তি আছে সে চুক্তির সময় পর্যন্ত এখানে থাকার অনুমতি পাবে।
কেউ বলেছেন: এটা একটা সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী যে, অতি সত্বর মুসলিমরা জয়লাভ করবে এবং মুশরিকরা এ ভেবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে যে, আমরা মুসলিমদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছি তার বদলায় হয়তো তারা আমাদেরকে শাস্তি দিতে ও হত্যাও করতে পারে। বলা বাহুল্য অতি সত্বর এ সুসংবাদ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীন তিন স্তরের (ঈমান, ইসলাম ও ইহসান) ওপর প্রতিষ্ঠিত, এটাই জাহান্নাম হতে নাজাত ও জান্নাত লাভের একমাত্র মাধ্যম।
২. মাসজিদ ধ্বংস করা অথবা ইবাদতে বাধা দেয়া বড় ধরণের অপরাধ।
৩. কাফির-মুশরিকদের থেকে মাসজিদ রক্ষা করা ওয়াজিব।
৪. মুসলিমদের অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব জানলাম।
2:115
وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ
وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ
وٰسِعٌ عَلِيمٌ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইবনু কাসীর, তাবারী, কুরতুবীতে এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা বিদ্যমান।
সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য বর্ণনা হল- ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা থেকে মদীনায় আগমন করে বাহনের ওপর নফল সালাত আদায় করছিলেন। আর বাহন তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে মুখ ঘুরে চলছিল। অতঃপর ইবনু উমার (রাঃ)
(وَلِلّٰهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ....)
অত্র আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন এ ব্যাপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪৪-৪৫, ১৬৫০)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিককে নির্দিষ্ট করে উল্লখ করেছেন যা উদয় ও অস্তাচল। তিনি এ দু’দিকসহ সকল দিকের মালিক। অতএব সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যেদিকেই তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় সেদিকেই আল্লাহ তা‘আলা রয়েছেন। তাতে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাবে না। তাই কেউ যদি আদিষ্ট কেবলা অনুসন্ধান করে না পায়, তাহলে তার কাছে যেটা কেবলার দিক বলে মনে হবে সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করবে, তারপর যদি জানা যায় কেবলা নির্ণয়ে ভুল হয়েছে তাহলে সালাত পুনরায় আদায়ের প্রয়োজন নেই।
(فَثَمَّ وَجْهُ اللّٰهِ)
‘সে দিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে’আয়াতের এ অংশ প্রমাণ করছে আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে। তাঁর জন্য যেমন উপযোগী তেমন তাঁর চেহারা, কোন কিছুর সাথে তাঁর চেহারার সাদৃশ্য নেই। অন্যত্র তিনি বলেন:
(وَّيَبْقٰي وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ)
“এবং অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার প্রতিপালকের চেহারা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব।”
সুতরাং আমাদের ঈমান রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সকল নাম ও সিফাত উল্লেখ করেছেন তা সত্য। তাঁর সিফাতের সাথে মাখলুকের সিফাতের কোন সাদৃশ্য নেই। তাই আমরা শাব্দিক ও আর্থিক কোন প্রকার পরিবর্তন করব না। বরং যেভাবে কুরআন ও সুন্নাহয় এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পূর্ব-পশ্চিমসহ সারা জাহানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আরোহী অবস্থায় নফল সালাত আদায় করা যাবে, তাতে কেবলামুখী না হতে পারলে সমস্যা নেই। তবে ফরয সালাত কেবলামুখী হয়ে আদায় করা আবশ্যক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে, কোন ধরণ-গঠন জিজ্ঞাসা এবং বিকৃতি ও অস্বীকৃতি ছাড়াই এর ওপর ঈমান আনব।
শানে নুযূল:
এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইবনু কাসীর, তাবারী, কুরতুবীতে এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা বিদ্যমান।
সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য বর্ণনা হল- ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা থেকে মদীনায় আগমন করে বাহনের ওপর নফল সালাত আদায় করছিলেন। আর বাহন তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে মুখ ঘুরে চলছিল। অতঃপর ইবনু উমার (রাঃ)
(وَلِلّٰهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ....)
অত্র আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন এ ব্যাপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪৪-৪৫, ১৬৫০)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিককে নির্দিষ্ট করে উল্লখ করেছেন যা উদয় ও অস্তাচল। তিনি এ দু’দিকসহ সকল দিকের মালিক। অতএব সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যেদিকেই তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় সেদিকেই আল্লাহ তা‘আলা রয়েছেন। তাতে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাবে না। তাই কেউ যদি আদিষ্ট কেবলা অনুসন্ধান করে না পায়, তাহলে তার কাছে যেটা কেবলার দিক বলে মনে হবে সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করবে, তারপর যদি জানা যায় কেবলা নির্ণয়ে ভুল হয়েছে তাহলে সালাত পুনরায় আদায়ের প্রয়োজন নেই।
(فَثَمَّ وَجْهُ اللّٰهِ)
‘সে দিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে’আয়াতের এ অংশ প্রমাণ করছে আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে। তাঁর জন্য যেমন উপযোগী তেমন তাঁর চেহারা, কোন কিছুর সাথে তাঁর চেহারার সাদৃশ্য নেই। অন্যত্র তিনি বলেন:
(وَّيَبْقٰي وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ)
“এবং অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার প্রতিপালকের চেহারা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব।”
সুতরাং আমাদের ঈমান রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সকল নাম ও সিফাত উল্লেখ করেছেন তা সত্য। তাঁর সিফাতের সাথে মাখলুকের সিফাতের কোন সাদৃশ্য নেই। তাই আমরা শাব্দিক ও আর্থিক কোন প্রকার পরিবর্তন করব না। বরং যেভাবে কুরআন ও সুন্নাহয় এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করব।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পূর্ব-পশ্চিমসহ সারা জাহানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আরোহী অবস্থায় নফল সালাত আদায় করা যাবে, তাতে কেবলামুখী না হতে পারলে সমস্যা নেই। তবে ফরয সালাত কেবলামুখী হয়ে আদায় করা আবশ্যক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে, কোন ধরণ-গঠন জিজ্ঞাসা এবং বিকৃতি ও অস্বীকৃতি ছাড়াই এর ওপর ঈমান আনব।
2:116
وَقَالُوا اتَّخَذَ
اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحٰنَهُۥ ۖ بَل لَّهُۥ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ۖ
كُلٌّ لَّهُۥ قٰنِتُونَ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১৬ ও ১১৭ নং আয়াতের তাসফীর:
এ আয়াত দ্বারা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও মুশরিকদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান আছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা তুলে ধরেছেন-
(وَقَالَتِ الْیَھُوْدُ عُزَیْرُ اۨبْنُ اللہِ وَقَالَتِ النَّصٰرَی الْمَسِیْحُ ابْنُ اللہِﺚ ذٰلِکَ قَوْلُھُمْ بِاَفْوَاھِھِمْﺆ یُضَاھِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا مِنْ قَبْلُﺚ قٰتَلَھُمُ اللہُﺇ اَنّٰی یُؤْفَکُوْنَ)
“ইয়াহূদীগণ বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’, এবং খ্রিস্টানগণ বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র।’সেটা তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মতো কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। আর কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে!” (সূরা তাওবাহ ৯:৩০)
তিনি আরো বলেন:
(وَيَجْعَلُونَ لِلّٰهِ الْبَنَاتِ)
“তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান।” (সূরা নাহ্ল ১৬:৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী ইত্যাদি। সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তা‘আলার সমতুল্য কেউ নেই, কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই কিভাবে তাঁর সন্তান বা স্ত্রী থাকতে পারে?
এদের প্রতিবাদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(بَلْ لَّه۫ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ)
“বরং আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর জন্য।” (সূরা বাকারাহ ২:১১৬)
তিনি আরো বলেন:
(وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚاِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًا)
“আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।”(সূরা মারইয়াম ১৯:৯২-৯৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা তার উচিত নয়। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়, অথচ তা উচিত নয়। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হল- তাদের বিশ্বাস তারা যেমন ছিল সেরূপ ফিরিয়ে আনতে আমি সক্ষম নই, আর আমাকে গালি দেয়া হল- তারা বলে আমার সন্তান আছে। আমি পবিত্র কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮২)
তাই কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান নয়, স্ত্রী নয় বরং সবাই তাঁর বান্দা, সবাই তাঁর কাছে আনুগত্যশীল, বিনয়ী-নম্র। আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন শুধু বলেন: “হয়ে যাও”সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
অনুরূপ সূরা ইয়াসীনের ৮২ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরানের ৫৯ নং আয়াতেও বলা হয়েছে। ==
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করা থেকে পুত-পবিত্র। তিনি একক, তাঁর কোন দ্বিতীয় নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যা কিছু আছে সবই তাঁর বান্দা ও মাখলুক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক নির্ধারণ করা তাঁকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ত‘আলার মহত্ব ও বড়ত্ব জানলাম। তিনি কোন ফায়সালা করার ইচ্ছা করলে শুধু ‘হও’বললেই তা হয়ে যায়।
এ আয়াত দ্বারা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও মুশরিকদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান আছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা তুলে ধরেছেন-
(وَقَالَتِ الْیَھُوْدُ عُزَیْرُ اۨبْنُ اللہِ وَقَالَتِ النَّصٰرَی الْمَسِیْحُ ابْنُ اللہِﺚ ذٰلِکَ قَوْلُھُمْ بِاَفْوَاھِھِمْﺆ یُضَاھِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا مِنْ قَبْلُﺚ قٰتَلَھُمُ اللہُﺇ اَنّٰی یُؤْفَکُوْنَ)
“ইয়াহূদীগণ বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’, এবং খ্রিস্টানগণ বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র।’সেটা তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মতো কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। আর কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে!” (সূরা তাওবাহ ৯:৩০)
তিনি আরো বলেন:
(وَيَجْعَلُونَ لِلّٰهِ الْبَنَاتِ)
“তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান।” (সূরা নাহ্ল ১৬:৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী ইত্যাদি। সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তা‘আলার সমতুল্য কেউ নেই, কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই কিভাবে তাঁর সন্তান বা স্ত্রী থাকতে পারে?
এদের প্রতিবাদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(بَلْ لَّه۫ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ)
“বরং আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর জন্য।” (সূরা বাকারাহ ২:১১৬)
তিনি আরো বলেন:
(وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚاِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًا)
“আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।”(সূরা মারইয়াম ১৯:৯২-৯৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা তার উচিত নয়। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়, অথচ তা উচিত নয়। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হল- তাদের বিশ্বাস তারা যেমন ছিল সেরূপ ফিরিয়ে আনতে আমি সক্ষম নই, আর আমাকে গালি দেয়া হল- তারা বলে আমার সন্তান আছে। আমি পবিত্র কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮২)
তাই কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান নয়, স্ত্রী নয় বরং সবাই তাঁর বান্দা, সবাই তাঁর কাছে আনুগত্যশীল, বিনয়ী-নম্র। আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন শুধু বলেন: “হয়ে যাও”সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
অনুরূপ সূরা ইয়াসীনের ৮২ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরানের ৫৯ নং আয়াতেও বলা হয়েছে। ==
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করা থেকে পুত-পবিত্র। তিনি একক, তাঁর কোন দ্বিতীয় নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যা কিছু আছে সবই তাঁর বান্দা ও মাখলুক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক নির্ধারণ করা তাঁকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ত‘আলার মহত্ব ও বড়ত্ব জানলাম। তিনি কোন ফায়সালা করার ইচ্ছা করলে শুধু ‘হও’বললেই তা হয়ে যায়।
2:117
بَدِيعُ السَّمٰوٰتِ
وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضٰىٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
১১৬ ও ১১৭ নং আয়াতের তাসফীর:
এ আয়াত দ্বারা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও মুশরিকদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান আছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা তুলে ধরেছেন-
(وَقَالَتِ الْیَھُوْدُ عُزَیْرُ اۨبْنُ اللہِ وَقَالَتِ النَّصٰرَی الْمَسِیْحُ ابْنُ اللہِﺚ ذٰلِکَ قَوْلُھُمْ بِاَفْوَاھِھِمْﺆ یُضَاھِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا مِنْ قَبْلُﺚ قٰتَلَھُمُ اللہُﺇ اَنّٰی یُؤْفَکُوْنَ)
“ইয়াহূদীগণ বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’, এবং খ্রিস্টানগণ বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র।’সেটা তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মতো কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। আর কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে!” (সূরা তাওবাহ ৯:৩০)
তিনি আরো বলেন:
(وَيَجْعَلُونَ لِلّٰهِ الْبَنَاتِ)
“তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান।” (সূরা নাহ্ল ১৬:৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী ইত্যাদি। সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তা‘আলার সমতুল্য কেউ নেই, কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই কিভাবে তাঁর সন্তান বা স্ত্রী থাকতে পারে?
এদের প্রতিবাদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(بَلْ لَّه۫ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ)
“বরং আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর জন্য।” (সূরা বাকারাহ ২:১১৬)
তিনি আরো বলেন:
(وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚاِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًا)
“আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।”(সূরা মারইয়াম ১৯:৯২-৯৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা তার উচিত নয়। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়, অথচ তা উচিত নয়। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হল- তাদের বিশ্বাস তারা যেমন ছিল সেরূপ ফিরিয়ে আনতে আমি সক্ষম নই, আর আমাকে গালি দেয়া হল- তারা বলে আমার সন্তান আছে। আমি পবিত্র কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮২)
তাই কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান নয়, স্ত্রী নয় বরং সবাই তাঁর বান্দা, সবাই তাঁর কাছে আনুগত্যশীল, বিনয়ী-নম্র। আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন শুধু বলেন: “হয়ে যাও”সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
অনুরূপ সূরা ইয়াসীনের ৮২ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরানের ৫৯ নং আয়াতেও বলা হয়েছে। ==
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করা থেকে পুত-পবিত্র। তিনি একক, তাঁর কোন দ্বিতীয় নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যা কিছু আছে সবই তাঁর বান্দা ও মাখলুক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক নির্ধারণ করা তাঁকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ত‘আলার মহত্ব ও বড়ত্ব জানলাম। তিনি কোন ফায়সালা করার ইচ্ছা করলে শুধু ‘হও’বললেই তা হয়ে যায়।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaiteএ আয়াত দ্বারা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও মুশরিকদের কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান আছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা তুলে ধরেছেন-
(وَقَالَتِ الْیَھُوْدُ عُزَیْرُ اۨبْنُ اللہِ وَقَالَتِ النَّصٰرَی الْمَسِیْحُ ابْنُ اللہِﺚ ذٰلِکَ قَوْلُھُمْ بِاَفْوَاھِھِمْﺆ یُضَاھِئُوْنَ قَوْلَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا مِنْ قَبْلُﺚ قٰتَلَھُمُ اللہُﺇ اَنّٰی یُؤْفَکُوْنَ)
“ইয়াহূদীগণ বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’, এবং খ্রিস্টানগণ বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র।’সেটা তাদের মুখের কথা। পূর্বে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মতো কথা বলে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। আর কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে!” (সূরা তাওবাহ ৯:৩০)
তিনি আরো বলেন:
(وَيَجْعَلُونَ لِلّٰهِ الْبَنَاتِ)
“তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান।” (সূরা নাহ্ল ১৬:৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী ইত্যাদি। সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তা‘আলার সমতুল্য কেউ নেই, কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই কিভাবে তাঁর সন্তান বা স্ত্রী থাকতে পারে?
এদের প্রতিবাদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(بَلْ لَّه۫ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ)
“বরং আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর জন্য।” (সূরা বাকারাহ ২:১১৬)
তিনি আরো বলেন:
(وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚاِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًا)
“আর সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।”(সূরা মারইয়াম ১৯:৯২-৯৩)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা তার উচিত নয়। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়, অথচ তা উচিত নয়। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হল- তাদের বিশ্বাস তারা যেমন ছিল সেরূপ ফিরিয়ে আনতে আমি সক্ষম নই, আর আমাকে গালি দেয়া হল- তারা বলে আমার সন্তান আছে। আমি পবিত্র কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮২)
তাই কেউ আল্লাহ তা‘আলার সন্তান নয়, স্ত্রী নয় বরং সবাই তাঁর বান্দা, সবাই তাঁর কাছে আনুগত্যশীল, বিনয়ী-নম্র। আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন শুধু বলেন: “হয়ে যাও”সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
অনুরূপ সূরা ইয়াসীনের ৮২ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরানের ৫৯ নং আয়াতেও বলা হয়েছে। ==
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করা থেকে পুত-পবিত্র। তিনি একক, তাঁর কোন দ্বিতীয় নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যা কিছু আছে সবই তাঁর বান্দা ও মাখলুক।
৩. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক নির্ধারণ করা তাঁকে কষ্ট দেয়ার শামিল।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ত‘আলার মহত্ব ও বড়ত্ব জানলাম। তিনি কোন ফায়সালা করার ইচ্ছা করলে শুধু ‘হও’বললেই তা হয়ে যায়।
0 Comments