সওম বা রোযা--
উত্তরঃ মেঘ বা অন্য কোন কারণে চাঁদ যথাসময়ে না দেখা গেলে মাসের তারিখে ৩০ পূর্ণ
করে নিতে হবে। অবশ্য ঈদের চাঁদ প্রমাণ করার জন্য ২ জন মুসলিমের সাক্ষ্য প্রয়োজন।
যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা
ছাড়। যদি চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে মাস ৩০ পূর্ণ করে নাও।
কিন্তু যদি দুই জন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তোমরা রোযা
রাখ ও রোযা ছাড়।”
✔২৪১ (আহমাদ ৪/৩২১, নাসাঈ, দারাকুত্বনী, ইগঃ
৯০৯ নং)
পক্ষান্তরে সওমর মাসের রোযা শুরু হওয়ার কথা প্রমাণ
করার জন্য এ কথা প্রমাণীত যে, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) একজন লোকের
সাক্ষী নিয়ে রোযা রেখেছেন।
✔২৪২ (আবূ দাঊদ ২৩৪২, দারেমী,
দারাকুত্বনী, বাইহাক্বি ৪/২১২, ইরওয়াউল গালীল ৯০৮ নং)
উত্তরঃ ঈদের চাঁদ কেউ একা দেখলে সে কিন্তু একা একা ঈদ করতে পারে না। বরং চাঁদ দেখা
সত্ত্বেও তাঁর জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কেননা, শাওয়ালের
চাঁদ দুই জন মুসলিম দেখার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রম হয় না।
তা ছাড়া মহানবী (ﷺ) বলেন, “ঈদ সেদিন, যেদিন লোকেরা ঈদ করে। কুরবানী সেদিন,
যেদিন লোকেরা কুরবানী করে।”
✔২৪৩ (সহীহ
তিরমিযী ৬৪৩, ইরওয়াউল গালীল ৯০৫ নং)
মতান্তরে যে ব্যক্তি একা চাঁদ দেখবে সে পরের দিন
রোযা রাখবে না। যেহেতু মহানবী (ﷺ)অয়াস বলেন, “তোমরা
চাঁদ দেখে রোযা রাখো, চাঁদ দেখে রোযা ছাড়।” তবে প্রকাশ্যে নয়, বরং গোপনে ইফতার করবে না।
যাতে সে জামাআত বিরোধী না হয়ে যায়। অথবা তাকে কেউ অসঙ্গত অপবাদ না দিয়ে বসে। আর
আল্লহই অধিক জানেন।
✔২৪৪ (মুমতে ৬/৩২৯)
উত্তরঃ ২৮ দিন রোযা রাখার পর শাওয়ালের চাঁদ শরয়ী সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হলে
জানতে হবে যে, রমযান মাসের প্রথম দিন অবশ্যই
ছুটে গেছে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে ঐ দিন ঈদের পরে ক্বাযা করতে হবে। কারণ, চান্দ্র মাস ২৮ দিনের হতেই পারে না। হয় ৩০ দিনে মাস হবে, নচেৎ ২৯ দিনে।
✔২৪৫ (ফাতাওয়াস সওম, মুসনিদ ১৫
পৃঃ)
✔ ১৯১ প্রশ্নঃ যে দেশের রোযা ২/১ দিন পিছনে, শেষ রমযানে সে দেশে সফর করলে অথবা সে দেশ থেকে ফিরে এলে করণীয় কি?
উত্তরঃ পূর্ব দিককার (প্র্যাচের) দেশগুলিতে চাঁদ এক অথবা দুই দিন পর দেখা যায়। এখন
২৯শে রমযান চাঁদ দেখার অথবা ৩০শে রমযান ঐ দিককার কোন দেশে সফর করলে সেখানে গিয়ে
দেখবে তাঁর পরের দিনও রোযা। শে ক্ষেত্রে তাকে ঐ দেশের মুসলিমদের সাথে রোযা রাখতে
হবে। অতঃপর তাঁরা ঈদ করলে তাঁদের সাথে সেও ঈদ করবে; যদিও তাঁর রোযা ৩১টি হয়ে যায়। কারণ, মহান
আল্লাহ বলেন, “অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে শে
যেন এ মাসে রোযা রাখে।” ✔(সূরাহ বাক্বারাহ ২/১৮৫)
আর মহানবী (ﷺ) বলেন, “রোযা সেদিন, যেদিন লোকেরা রোযা রাখে। ঈদ সেদিন,
যেদিন লোকেরা ঈদ করে।”
✔২৪৬ (তিরমিযী,
ইরওয়াউল গালীল ৯০৫, সিঃ সহীহাহ ২২৪ নং)
কিন্তু যদি কেউ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ২৮শে রমযান
সফর করে, অতঃপর তাঁর পর দিনই সেখানে ঈদ হয়, তাহলে সেও রোযা ভেঙ্গে লকেদের সাথে ঈদ করবে। অবশ্য তাঁর পরে সে একটি
রোযা কাযা রাখবে। কারণ, মাস ২৯ দিনের কম হয়না। পক্ষান্তরে
যদি ২৯ শে রমযান সফর করে তাঁর পরের দিন ঈদ হয়, তাহলে
তাঁদের সাথে ঈদ করার পর তাকে র কোনও রোযা কাযা করতে হবে না। কারণ, তাঁর ২৯ টি রোযা হয়ে গেছে এবং মাস ২৯ দিনেও হয়।
✔২৪৭ (ইবা, ফাতাওয়াস সওম, মুসনিদ ১৬ পৃঃ)
অনুরূপ ৩০ শের সকালে রোযা অবস্থায় সফর করে নিজ
দেশে ফিরে ঈদ দেখলে, তাঁদের সাথে ঈদ করবে। ২৪৮
(লাজনাহ, দায়েমাহ)
পরন্ত যদি কেউ ঈদের দিনে ঈদ করে প্রাচ্যের দেশে
সফর করে এবং সেখানে গিয়ে দেখে সেখানকার লোকেদের রোযা চলছে, তাহলে শে ক্ষেত্রে তাকে পানাহার বন্ধ করতে হবে না এবং রোযা কাযাও করতে
হবে না। কেননা, সে শরয়ী নিয়ম মতে রোযা ভেঙ্গেছে। অতএব এ
দিন তাঁর জন্য পানাহার বৈধ হওয়ার দিন।
✔২৪৯ (আসইলাহ অআজবিবাহ ফী স্বালাতিল ঈদাইন ২৮
পৃঃ)
উত্তরঃ মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ
মাসে উপনীত হবে, সে যেন রোযা রাখে।” (বাক্বারাহঃ ১৮৫) আর মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখলে রোযা রাখো।”
✔২৫০ (বুখারী ১৯০০,
মুসলিম ১০৮০ নং)
এই নির্দেশ থেকে অনেকে বুঝেছেন যে, সাড়া বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম চাঁদ দেখলেই সকল মুসলিমদের জন্য রোযা বা ঈদ
করা জরুরী।
কিন্তু সাহাবাগণ এরূপ বুঝেননি। তাঁরা উদয়স্থলের
পার্থক্য মেনে নিয়ে শাম দেশের চাঁদের খবর নিয়ে মদিনায় ঈদ করেননি।
কুরাইব বলেন, একদা
উম্মুল ফাযল বিন্ত্তল হারেষ আমাকে শাম দেশে মুআবিয়ার নিকট পাঠালেন। আমি শাম
(সিরিয়া) পৌঁছে তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করলাম। অতঃপর আমার শামে থাকা কালেই রমযান শুরু
হল। (বৃহস্পতিবার দিবাগত) জুমআর রাত্রে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর মাসের শেষ দিকে মদিনায়
এলাম। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) আমাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?” আমি বললাম, “আমরা জুমআর রাত্রে দেখেছি।” তিনি বললেন,
“তুমি নিজে দেখেছ?” আমি বললাম, “জি হ্যাঁ। আর লোকেরাও দেখে রোযা রেখেছে এবং মুআবিয়াও রোযা রেখেছেন।”
ইবনে আব্বাস (রঃ) বললেন, “কিন্তু আমরা
তো (শুক্রবার দিবাগত) শনিবার রাত্রে চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা ৩০ পূর্ণ না হওয়া
পর্যন্ত অথবা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখতে থাকবে।” আমি বললাম, “মুআবিয়ার দর্শন ও তাঁর রোযার খবর
কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?” তিনি বললেন, “না। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে এ রকমই
আদেশ দিয়েছেন।”
✔২৫১ (মুসলিম ১০৭৮ নং)
আমরা মনে করি, আমরা সালাফী। অতএব সালাফীদের বুঝ নিয়েই আমাদের উচিত কুরআন-হাদীস বুঝা
এবং উদয়স্থলের ভিন্নতা গণ্য করে নেওয়া।
তাছাড়া আমভাবে শরীয়তের সকল নির্দেশ একই রকম সময়ে
মান্য কয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভভ নয়।
যেমনঃ- মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা পানাহার কর; যতক্ষণ কালো সুতা (রাতের
কালো রেখা) হতে ঊষার সাদা সুতা (সাদা রেখা) স্পষ্টরূপে
তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর।” (বাক্বারাহঃ ১৮৭)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “রাত যখন এদিকে (পূর্ব গগন) থেকে আগত হবে, দিন
যখন এদিকে (পশ্চিম গগন) থেকে বিদায় নেবে এবং সূর্য যখন অস্ত যাবে, তখন সায়িম ইফতার করবে।”
✔২৫২ (বুখারী ১৯৪১,
১৯৫৪, মুসলিম ১১০০, ১১০১ আবূ দাঊদ ২৩৫১, ২৩৫২, তিরমিযী)
উক্ত নির্দেশ দুটি সাড়া বিশ্বের সকল মুসলিমদের
জন্য একই সাথে মান্য করা সম্ভভ নয়। এ ক্ষেত্রে কেউ বলেন না যে, নির্দেশ ব্যাপক। অতঃএব সারা বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম ফজর উদয় দেখলেই সকল
মুসলিমদের জন্য পানাহার বন্ধ করা জরুরী। অথবা সাড়া বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম
সূর্যাস্ত দেখলেই সকল মুসলিমদের জন্য ইফতার করা জরুরী। বরং বিশ্বের প্রতীচ্যের লোক
যখন ইফতার করে, প্রাচ্যের লোক ইফতার করে তাঁদের থেকে
প্রায় ১২-১৫ ঘণ্টা পরে।
সুতরাং ঈদ সারা বিশ্বে একদিনে একই সময়ে হওয়া সম্ভভ
নয়। আর নাই-বা হল একই দিনে ঈদ। কি এমন ঐক্য আছে এতে? কত শত বিষয়ে মতভেদ ও মতানৈক্য। হৃদয়ে-হৃদয়ে, বিশ্বাসে
ও আচরণে কত ভিন্নতা। কেবল ঈদের দিনের অভিন্নতা নিয়ে কোন ফল ফলবে? তবুও বলবে, এ বিষয়ে উলামাদের ‘ইজমা’ হলে দোষ নেই।
প্রকাশ থাকে যে, যারা উক্ত হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে সঊদী আরবের সাথে রোযা ঈদ করে
থাকেন, তাঁরাও কিন্তু অনেক সময় ভুল করেন। কারণ সউদী আরব অন্য দেশের চাঁদ দেখে ঈদ
করে না। তাঁর পশ্চিমে আফ্রিকার কোন দেশের চাঁদ দেখে সঊদীরা রোযা ঈদ করেন না। তাহলে
উপমহাদেশ থেকে চোখ বুজে সাঊদিয়ার অনুকরণ করলে উক্ত হাদীসের উপর তাঁদের আমল হয় না,
যে হাদীস পেশ করে তাঁরা মনে করেন যে, সারা
বিশ্বের মুসলিমগণকে একই সাথে রোযা ঈদ করতে হবে।
উত্তরঃ অবশ্যই। রোযার নিয়তে রোযা রেখে গ্রাম বা শহর ছেড়ে বের হয়ে গিয়ে তারপর রোযা
ভাঙ্গা চলবে। দুপুরে সফর করবে বলে সকাল থেকে বাড়িতে বসে রোযা বন্ধ করা বৈধ নয়।
✔ ১৯৪ প্রশ্নঃ এগারো মাসে স্বলাত পড়ে না। রমযান এলে রোযা রাখে ও
স্বলাত পড়ে। এমন লোকের রোযা কবুল হবে কি? রোযার
উপর স্বলাতের প্রভাব আছে কি? তাঁরা রোযা রেখে (জান্নাতের)
‘রাইয়ান’ গেটে প্রবেশকারীদের
সঙ্গে প্রবেশ করবে না কি? ‘এক রমযান থেকে ওপর রমযান
মধ্যবর্তী সকল গোনাহকে মোচন করে দেয়।’---এ কথা ঠিক নয় কি?
উত্তরঃ বেস্বলাতীর রোযা কবুল হবে না। যেহেতু স্বলাত ইসলামের খুঁটি, যা ব্যতিরেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। পরন্ত বেস্বলাতী কাফের ও
ইসলামের মিল্লত থেকে বহির্ভূত।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মানুষ ও কুফুরীর মধ্যে (পর্দা) হল, স্বলাত
ত্যাগ করা।” ✔২৫৩ (মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাঁদের (কাফেরদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে স্বলাত (পরা)। অতএব যে স্বলাত ত্যাগ করবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে।” ✔২৫৪ (তিরমিযী)
শাক্বীক ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁবেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেন, “মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সহচরবৃন্দ
স্বলাত ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করতেন না।”
✔২৫৫ (তিরমিযী)(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৮৭)
আর কাফেরের নিকট থেকে আল্লাহ রোযা, সাদকা, হজ্জ এবং অন্যান্য কোনও নেক আমল কবুল
করেন না। যেহেতু আল্লাহ পাক বলেন, “ওদের অর্থ সাহায্য
গৃহীত হতে কোন বাধা ছিল না। তবে বাধা এই ছিল যে, ওরা
আল্লাহ ও তাদীয় রাসুলকে অস্বীকার (কুফরী) করে এবং স্বলাতে আলস্যের সঙ্গে উপস্থিত
হয়। আর অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থদান করে।” ✔(সূরা তাওবা ৫৪
আয়াত)
সুতরাং যদি কেউ রোযা রাখে এবং স্বলাত পড়ে, তাহলে তাঁর রোযা বাতিল ও অশুদ্ধ। আল্লাহর নিকট তা কোন উপকারে আসবে না
এবং তা তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য দান করেতেও পারবে না।
সুতরাং যদি কেউ রোযা রাখে এবং স্বলাত পড়ে, তাহলে তাঁর রোযা বাতিল ও অশুদ্ধ। আল্লাহর নিকট তা কোন উপকারে আসবে না
এবং তা তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য দান করেতেও পারবে না।
আর আর তাঁর অমূলক ধারনা যে, “এক রমযান থেকে অপর রমযান মধ্যবর্তী
পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত, জুমআহ থেকে জুমআহ এবং রমযান থেকে রমযান; এর মধ্যবর্তী সকল গোনাহকে মোচন করে দেয়--- যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকা হয়।” ২৫৬ (মুসলিম, মিশকাত ৫৬৪ নং) সুতরাং রমযান থেকে রমযানের মধ্যবর্তী পাপসমূহ মোচন হওয়ার জন্য মহানবী (ﷺ) শর্তারোপ করেছেন যে, কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু সে তো স্বলাতই পড়ে না, আর রোযা রাখে। যাতে সে কাবীরা গোনাহ থেকে দূরে থাকতে পারে না। যেহেতু স্বলাত ত্যাগ করার চেয়ে অধিক বড় কাবীরা গোনাহর কাজ আর কি আছে? বরং স্বলাত ত্যাগ করা তো কুফরী। তাহলে কি করে সম্ভভ যে, রোযা তাঁর পাপ মোচন করবে?
পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত, জুমআহ থেকে জুমআহ এবং রমযান থেকে রমযান; এর মধ্যবর্তী সকল গোনাহকে মোচন করে দেয়--- যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকা হয়।” ২৫৬ (মুসলিম, মিশকাত ৫৬৪ নং) সুতরাং রমযান থেকে রমযানের মধ্যবর্তী পাপসমূহ মোচন হওয়ার জন্য মহানবী (ﷺ) শর্তারোপ করেছেন যে, কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু সে তো স্বলাতই পড়ে না, আর রোযা রাখে। যাতে সে কাবীরা গোনাহ থেকে দূরে থাকতে পারে না। যেহেতু স্বলাত ত্যাগ করার চেয়ে অধিক বড় কাবীরা গোনাহর কাজ আর কি আছে? বরং স্বলাত ত্যাগ করা তো কুফরী। তাহলে কি করে সম্ভভ যে, রোযা তাঁর পাপ মোচন করবে?
সুতরাং নিজ প্রভুর কাছে তাঁর জন্য তওবা (অনুশোচনার
সাথে প্রত্যাবর্তন)করা ওয়াজেব। আল্লাহ যে তাঁর উপর স্বলাত ফরয করেছেন, তা পালন করে তারপর রোযা রাখা উচিত। যেহেতু নবী (ﷺ) মুআয (রঃ) কে
ইয়ামান প্রেরণকালে বলেছিলেন, “ওদেরকে তোমার প্রথম দাওয়াত
যেন ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর
রাসুল’- এই সাক্ষ্যদানের প্রতি হয়। যদি ওরা তা তোমার নিকট
থেকে গ্রহণ করে, তবে তাঁদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ ওদের উপর প্রত্যেক দিবা রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ফরয করেছেন।”
অতএব দুই সাক্ষ্যদানের পর স্বলাত, অতঃপর যাকাত দিয়ে (দাওয়াত) শুরু করেছেন।
✔২৫৭ (ইবনে উষাইমীন)
নিকৃষ্ট মানুষ সে, যে নিজ প্রভুকে কেবল রমযানে চেনে ও স্মরণ করে, বাকী এগারো মাস ভুলে থাকে! অথচ সে এক মাসের চেনা তাঁদের কোন কাজে লাগবে
না। ✔২৫৮ (লাজনাহ দায়েমাহ)
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য এমন দেশে সফর করে রোযা রাখা বৈধ, যেখানকার দিন ঠাণ্ডা ও ছোট।
✔ ১৯৬ প্রশ্নঃ আমার কিডনীর সমস্যা আছে। রোযা রাখলেই সমস্যা বাড়ে।
ডাক্তার রোযা রাখতে নিষেধও করেছে। আমার এখন কী করা উচিত?
উত্তরঃ এ সমস্যা যদি চির সমস্যা হয়, অর্থাৎ
পড়ে কাযাও করতে না পারা যায়, তাহলে প্রত্যেক রোযার
বিনিময়ে একটি করে মিসকীন খাওয়াতে হবে। মহান আল্লাহ, “ (রোযা)
নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে
অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেব। আর যার রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা
রাখতে চায় না (যারা রোযা রাখতে অক্ষম), তাঁরা এর পরিবর্তে
একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।”✔ (বাক্বারাহঃ ১৮৪)
উত্তরঃ এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, যা সহীহ
নয়।
✔২৬০ (সিঃ যয়ীফাহ ৪৩ নং)
✔ ১৯৮ প্রশ্নঃ পরিজনের সাথে এক সঙ্গে রোযা রাখার উদেশ্যে মহিলারা
ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখতে পারে কি?
উত্তরঃ মহান আল্লাহর দেওয়া এ প্রাকৃতিকে রোধ করলে তাঁর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা
দিতে পারে। মাসিক নিবারক ট্যাবলেট ব্যবহারে মহিলার গর্ভাশয়েরও নানান ক্ষতির আশঙ্কা
রয়েছে; যেমন সে কথা ডাক্তারগণ উল্লেখ করে থাকেন। সুতরাং ঔষধ
ঐভাবে মাসিক বন্ধ রেখে এবং পবিত্রতা থেকে রোযা রাখে, তাহলে
সে রোযা শুদ্ধ ও যথেষ্ট হয়ে যাবে। ✔২৬১ (ইবনে উষাইমীন)
উত্তরঃ একটানা হওয়া জরুরী নয়। কেটে কেটেও রাখা যায়। তবে উত্তম হল একটানা রাখা।
✔২৬২
(ইবনে জিবরীন)
✔ ২০০ প্রশ্নঃ কেউ রোযা রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে, নাকি ওয়ারেসকে রোযা রেখে দিতে হবে?
উত্তরঃ রমযানের রোযা কাযা রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে। আর
নযরের রোযা না রেখে মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে ওয়ারেসকে রোযাই রাখতে হবে।
আমার মা রমযানের রোযা বাকি রেখে ইন্তিকাল করলে
তিনি মা আয়েশা (রঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি
আমার মায়ের তরফ থেকে কাযা করে দেব কি?” আয়েশা (রঃ) বললেন,
“না। বরং তাঁর তরফ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে এক একটি
মিসকীনকে অর্ধ সা’ (প্রায় ১ কিলো ২৫০ গ্রাম খাদ্য) সদকাহ
করে দাও।”
✔২৬৩ (ত্বহাবী ৩/১৪২, মুহাল্লা
৭/৮, আহকামুল জানাইয, টীকা ১৭০
পৃঃ)
ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “কোন ব্যক্তি রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং তারপর রোযা না রাখা
অবস্থায় মারা গেলে তাঁর তরফ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে; তাঁর
কাযা নেই। পক্ষান্তরে নযরের রোযা বাকী রেখে গেলে তাঁর তরফ থেকে তাঁর অভিভাবক (বা
ওয়ারেস) রোযা রাখবে।”
✔২৬৪ (আবূ দাউদ ২৪০১ প্রমুখ)
উত্তরঃ নিয়ত প্রত্যেক ইবাদত তথা রোযার অন্যতম রুকন। আর সারা দিন সে নিয়ত নিরবচ্ছিন্নভাবে
মনে জাগ্রত রাখতে হবে; যাতে সায়িম রোযা না রাখার বা
রোযা বাতিল করার কোন প্রকার দৃঢ় সংকল্প না করে বসে। বলা বাহুল্য, রোযা না রাখার নিয়ত করলে এবং তাঁর নিয়ত বাতিল করে দিলে সারাদিন পানাহার
আদি না করে উপবাস করলেও রোযা বাতিল গণ্য হবে। ২৬৫ (দ্রঃ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১২,
মুমতে ৬/৩৭৬)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কিছু খাওয়া অথবা পান করার
প্রাথমিক ইচ্ছা পোষণ করার পর ধৈর্য ধরে পানাহার করার ঐ ইচ্ছা বাতিল করে পানাহার
করে না, সে ব্যক্তির কেবল রোযা ভাঙ্গার ইচ্ছা পোষণ করার ফলে
রোযা নষ্ট হবে না; যতক্ষণ না সে সত্যসত্যই পানাহার করে
নেবে। আর এর উদাহরণ সেই ব্যক্তির মত, যে স্বলাতে কথা বলার
ইচ্ছা পোষণ করার পর এক কথা না বলে অথবা স্বলাত পড়তে পড়তে হাওয়া ছাড়ার ইচ্ছা করার
পর তা সামলে নিতে পারে। এমন ব্যক্তির যেমন স্বলাত ও ওযু বাতিল নয়, ঠিক তেমনি ঐ সায়িমের রোযা। ✔২৬৬ (ইবনে উষাইমীন)
উত্তরঃ আযান দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় হল ফজর উদয়ের সময়। যেমন সময়ের ঘড়িও মজবুত
হওয়া প্রয়োজন। নচেৎ মুআযযিন আগে আযান দিলে অথবা ঘড়ি মজবুত ফাস্ট থাকলে যেমন খাওয়া
বন্ধ করা বিধেয় নয়, তেমনি মুআযযিন দেরি করে আযান
দিলে অথবা ঘড়ি স্লো থাকলে খেয়ে যেতেই থাকা বৈধ নয়। বলা বাহুল্য, এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য। ✔২৬৭(ইবনে বায)
✔ ২০৩ প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে সেহেরী খেল। অতঃপর জানতে
পারল যে, তাঁর খাওয়াটা ফজরের আযানের পর হয়েছে। সুতরাং তাঁর রোযা
কি শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ আযান সঠিক সময়ে হয়ে থাকলে এবং সে আযান হয়ে গেছে---এ কথা না জানলে তাঁর রোযা
শুদ্ধ। কারণ অজান্তে বা ভুলে অনিচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেললে রোযার ক্ষতি হয় না।
মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “যে সায়িম ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেলে, সে যেন
তাঁর রোযা পূর্ণ করে নেয়। এ পানাহার তাকে আল্লাহ্ই করিয়েছেন।”
✔২৬৮ (বুখারি ১৯৩৩, মুসলিম ১১৫৫, আবূ দাঊদ ২৩৯৮, তিরমিযী, দারেমী, ইবনে মাজাহ ১৬৭৩, দারাকুত্বনী, বাইহাক্বী ৪/২২৯, আহমাদ ২/৩৯৫, ৪২৫, ৪৯১,
৫১৩ )
আসমা বিন্তে আবী বাকর (রঃ) বলেন, “নবী (ﷺ) এর যুগে একদা
আমরা মেঘলা দিনে ইফতার করলাম। তারপর সূর্য দেখা গেল।”
✔২৬৯ (বুখারী ১৯৫৯, আবূ দাঊদ ২৩৫৯, ইবনে মাজাহ ১৬৭৪ নং)
এই অবস্থায় রোযা
কারা করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁর মানে রোযা শুদ্ধ।
উত্তরঃ চোখ বা কানে ঔষধ দিলে রোযা ভাঙ্গে না। কারণ চোখ ও কান খাদ্যনালী নয় এবং সে
ঔষধও কোন খাবারের কাজ করে না। তবে সন্দেহ হলে তা রাতে ব্যবহার করার
পূর্বসতর্কতামূলক কর্ম।
✔২৭০ (লাহনাহ দায়েমাহ)
উত্তরঃ ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “রোযা অবস্থায় যে ব্যক্তি বমনকে দমন করতে সক্ষম হয় না, তাঁর জন্য কাযা নেই। পক্ষান্তরে যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, সে যেন ঐ রোযা কাযা করে।”
✔২৭১ (আহমাদ ২/৪৯৮,
আবূ দাঊদ ২৩৮০, তিরমিযী ৭১৬, ইবনে মাজাহ ১৬৭৬, সঃ জামে ৬২৪৩ নং)
✔ ২০৬ প্রশ্নঃ সায়িম কি দাঁতন
করতে পারে? তাঁর ফলে আল্লাহর নিকট কস্তরি অপেক্ষা বেশি সুগন্ধময়
গন্ধ কি দূর হয়ে যায় না?
উত্তরঃ সায়িম দিনের প্রথম ও শেষভাগে যে কোন সময় দাঁতন করতে পারে। সায়িমের মুখের
গন্ধ আল্লাহর কাছে প্রিয় বলে তা ইচ্ছাকৃত ছেড়ে রাখা বিধেয় নয়। তাছাড়া দাঁতন করলে
মুখের গন্ধ যায় না। কারণ তা আসে পেট খাদ্যশূন্য হওয়ার কারণে। ✔২৭২ (ইবনে জিবরীন)
উত্তরঃ রোযার দিনে দাঁতের মাজন (টুথ-পেস্ট বা পাউডার) ব্যবহার না করাই উত্তম। বরং
তা রাত্রে এবং ফজরের আগে ব্যবহার করাই উচিত। কারণ, মাজনের এমন প্রতিক্রিয়া ও সঞ্চার ক্ষমতা আছে, যার
ফলে তা গলা ও পাকস্থলীতে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনুরূপ আশঙ্কার ফলেই মহানবী (ﷺ) লাকিত্ব বিন
সাবরাহকে বলেছিলেন, “(ওযূ করার সময়) তুমি নাকে খুব
অতিরঞ্জিতভাবে পানি টেনে নিয়ো না। কিন্তু তোমরা তোমরা রোযা থাকলে নয়।”
✔২৭৩ (আহমাদ ৪/৩৩, আবূ দাঊদ ১৪২, তিরমিযী, নাসাঈ, সঃ
ইবনে মাজাহ ৩২৮ নং)
পক্ষান্তরে নেশাদার ও দেহে অবসন্ন আনায়নকারী মাজন; যেমন, গুল-গুড়াকু প্রভৃতি; যা ব্যবহারের ফলে মাথা ঘোরে অথবা ব্যবহারকারী জ্ঞ্যানশূন্য হয়ে যায়,
তা ব্যবহার করা বৈধ নয়; না রোযা অবস্থায়
এবং না অন্য সময়। কারণ, তা মহানবী (ﷺ) এর এই বানীর
আওতাভুক্ত হতে পারে, যাতে তিনি বলেন, “প্রত্যেক মাদকতা আনায়নকারী দ্রব্য হারাম।” ২৭৪
(বুখারী, মুসলিম, সুনানে আরবাআহ,
সঃ জামে ৪৫৫০ নং)
উত্তরঃ রান্না করতে করতে প্রয়োজনে খাবারের লবন বা মিষ্টি সঠিক হয়েছে কি না, তা চেখে দেখা সায়িমের জন্য বৈধ। তদনুরূপ কোন কিছু কেনার সময় চেখে
পরীক্ষা করার দরকার হলে তা করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “কোন খাদ্য, সির্কা এবং কোন কিছু কিনতে হলে তা
চেখে দেখতে কোন দোষ নেই।”
✔২৭৫ (দ্রঃ বুখারী ৩৮০ পৃঃ,
ইবনে আবী শাইবাহ ২/৩০৫, বাইহাক্বী ৪/২৬১,
ইরওয়াউল গালীল ৯৩৭ নং)
তদনুরুপভাবে অতি প্রয়োজনে মা তাঁর শিশুর জন্য কোন
শক্ত খাবার চিবিয়ে নরম করে দিতে পারে, ধান
শুকিয়েছে কি না এবং মুড়ির চাল হয়েছে কি না তা চিবিয়ে দেখতে পারে। অবশ্য এ সকল
ক্ষেত্রে শর্ত হল, যেন চর্বিত কোন অংশ সায়িমের পেটে না
চলে যায়। বরং অতি সাবধানতার সাথে কেবল দাঁতে চিবিয়ে এবং জিভে তাঁর স্বাদ চেখে
সঙ্গে সঙ্গে বাইরে ফেল জরুরী।
✔২৭৬ (ফাতাওয়া, ইসলামিয়্যাহ
২/১২৮)
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য সাঁতার কাটতে কোন বাধা নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পানি পেটে চলে না যায়।২৭৭ (ইবনে উষাইমীন)
উত্তরঃ কেটে-ফেটে গিয়ে অথবা ঘা টিপতে গিয়ে অথবা দাঁত তুলতে গিয়ে অথবা দাঁতন করতে
গিয়ে রক্ত পড়লে অথবা রক্ত পরীক্ষার জন্য দিলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। মুখের রক্ত
গেলা যাবে না।
✔২৭৮ (ইবনে উষাইমীন)
উত্তরঃ থুথু অ গয়ের থেকে বাঁচা দুঃসাধ্য। কারণ, তা মুখে
বা গলার গোঁড়ায় জমা হয়ে নিচে এমনটিতেই চলে যায়। অতএব এতে রোযা নষ্ট হবে না এবং
বরাবর থুথু ফেলারও দরকার হবে না।
অবশ্য যে কফ, গয়ের
খাঁকার বা শ্লেষ্মা বেশী মোটা এবং যা কখনো মানুষের বুকে (শ্বাসযন্ত্র) থেকে,
আবার কখনো মাথা (পৈসজটে)থেকে বের হয়ে আসে, তা গলা ঝেড়ে বের করে বাইরে ফেলা অয়াজেব এবং তা গিলে ফেল বৈধ নয়। যেহেতু
তা ঘৃণিত; সম্ভবতঃ তাতে শরীর থেকে বেরিয়ে আসা কোন
রোগজীবাণুও থাকতে পারে। সুতরাং তা গিলে ফেলাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হতে পারে। তবে
যদি কেউ ফেলতে না পেরে গিলেই ফেলে, তাহলে তাতে রোযা নষ্ট
হবে না।
পক্ষান্তরে মুখের ভিতরকার স্বাভাবিক লালা গিলতে
কোন ক্ষতি নেই। রোযাতেও কোন প্রভাব পড়ে না।
✔২৭৯ (মুমতে ৬/৪২৮-৪২৯, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১২৫, ফাতাওয়াস সওম ৩৮
পৃঃ)
উত্তরঃ রাস্তার ধূলা সায়িমদের নিঃশ্বাসদের সাথে পেটে গেলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
তদনুরূপ যে ব্যক্তি আটাচাকিতে কাজ করে অথবা তাঁর কাছে যায় সে ব্যক্তির পেটে আটার
গুঁড়ো গেলেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, এ সব থেকে বাঁচার উপায় নেই। অবশ্য মুখে মুখোশ ব্যবহার করে বা কাপড়
বেঁধে কাজ করাই উত্তম।✔২৮০ (ইবনে জিবরীন)
উত্তরঃ রোযা অবস্থায় সুরমা লাগানো এবং চোখে ও কানে ঔষধ ব্যবহার বৈধ। কিন্তু
ব্যবহার করার পর যদি গলার সুরমা বা ঔষধের স্বাদ অনুভূত হয়, তাহলে (কিছু উলামার নিকট রোযা ভেঙ্গে যাবে এবনফ সে রোযা) কাযা রেখে
নেওয়াই হল পূর্বসতর্কতামূলক কর্ম। ২৮১ (ইবনে বায) কারণ, চোখ
ও কান খাদ্য ও পানীয় পেটে যাওয়ার পথ নয় এবং সুরমা বা ঔষধ লাগানোর খাওয়া বা পান
করাও বলা যায় না; না সাধারণ প্রচলিত কথায় এবং না-ই শরয়ী
পরিভাষায়। অবশ্য সায়িম যদি চোখে বা কানে ঔষধ দিনে ব্যবহার না করে রাতে করে,
তাহলে সেটাই হবে পূর্বসাবধানতামূলক কর্ম।
হযরত আনাস (রঃ) রোযা থাকা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার
করতেন। ২৮৩ (সহীহ আবূ দাঊদ ২০৮২ নং)
পক্ষান্তরে রোযা থাকা অবস্থায় নাকে ঔষধ ব্যবহার
বৈধ নয়। কারণ, নাকের মাধ্যমে পানাহার পেটে
পৌঁছে থাকে। আর এ জন্যই মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “(ওযূ করার সময়) তুমি নাকে খুব অতিরঞ্জিতভাবে পানি টেনে নিও। কিন্তু
তোমার রোযা থাকলে নয়।”
বলা বাহুল্য, উক্ত
হাদীস এবং অনুরূপ অর্থের অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতেই নাকে ঔষধ ব্যবহার করার পর যদি
গলাতে তাঁর স্বাদ অনুভূত হয়, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে
এবং রোযা কাযা করতে হবে।
উত্তরঃ সায়িমের জ্বর হলে তাঁর জন্য পায়খানা-দ্বারে ঔষধ (সাপোজিটরি) রাখা যায়।
তদনুরূপ জ্বর মাপা বা অন্য কোন পরীক্ষার জন্য মল-দ্বারে কোন যন্ত্র ব্যবহার করা
দোষাবহ বা রোযার পক্ষে ক্ষতিকর নয়। কারণ, এ কাজকে
খাওয়া বা পান করা কিছুই বলা হয় না। (এবং পায়খানা-দ্বার পানাহারের পথও নয়।)
উত্তরঃ পেটের ভিতরে কোন পরীক্ষার জন্য (এন্ডোসকপি মেশিন) নল বা স্টমাক টিউব
সঞ্চালন করার ফলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তবে হ্যাঁ, যদি পাইপের সাথে কোন (তৈলাক্ত) পদার্থ থাকে এবং তা তাঁর সাথে পেটে গিয়ে
পৌঁছে, তাহলে তাতে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব একান্ত
প্রয়োজন ছাড়া এ কাজ ফরয বা ওয়াজেব সওময় করা বৈধ নয়।
উত্তরঃ বাহ্যিক শরীরের চামড়ায় পাউডার বা মলম ব্যবহার করা সায়িমদের জন্য বৈধ। কারন, তা পেটে পৌছায় না।
তদনুরূপ প্রয়োজনে ত্বককে নরম রাখার জন্য কোন তেল, ভ্যাসলিন বা ক্রিম ব্যবহার করাও রোযা অবস্থায় বৈধ। কারণ, ঐ সব কিছু কেবল চামড়ার বাহিরের অংশ নরম করে থাকে এবং শরীরের ভিতরে
প্রবেশ করেনা। পরন্ত যদিও লোমকূপে তা প্রবেশ হওয়ার কথা ধরেই নেওয়া যায়, তবুও তাতে রোযা নষ্ট হবে না। ✔২৮৭ (ইবনে জিবরীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১২৭)
তদানুরুপ রোযা অবস্থায় মহিলাদের জন্য হাতে মেহেদী, পায়ে আলতা অথবা চুলে (কালো ছাড়া অন্য রঙের) কলফ ব্যবহার বৈধ। এ সবে
রোযা বা সায়িমের উপর কোন
(মন্দ) প্রভাব ফেলে না। ২৮৮ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১২৭)
উত্তরঃ যে সায়িম স্বামী-স্ত্রী মিলনে ধৈর্য রাখতে পারে; অর্থাৎ সঙ্গম বা বীর্যপাত ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা না করে, তাঁদের জন্য আপোসে চুম্বন ও প্রেমকেলি বা কোলাকুলি করা বৈধ এবং তা
তাঁদের জন্য মাকরূহ নয়। কারণ, মহানবী (ﷺ) রোযা রাখা
অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করতেন এবং রোযা রোযা অবস্থায় প্রেমকেলিও করতেন। আর তিনি
ছিলেন যৌন ব্যাপারে বড় সংযমী।
অন্য এক
বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) স্ত্রী-চুম্বন
করতেন রমযানে রোযা রাখা অবস্থায়।
আর এক বর্ণনায় আছে, মা আয়েশা (রঃ) বলেন, “আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাকে চুম্বন
দিতেন। আর সে সময় আমরা উভয়ে রোযা অবস্থায় থাকতাম।”
উমার (রঃ) বলেন, একদা স্ত্রীকে খুশী করতে গিয়ে রোযা অবস্থায় আমি তাকে চুম্বন দিয়ে
ফেললাম। অতঃপর নবী (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত
হয়ে বললাম, “আজ আমি একটি বিরাট ভুল করে ফেলেছি; রোযা অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করে ফেলেছি।” আল্লাহর
রাসূল (ﷺ) বললেন, “যদি রোযা রেখে পানি দ্বারা কুল্লি করতে, তাহলে
তাতে তোমার অভিমত কি?” আমি বললাম, “তাতে কোন ক্ষতি নেই।” মহানবী (ﷺ) বললেন, “তাহলে ভুল কিসের?”
পক্ষান্তরে সায়িম যদি আশঙ্কা করে যে, প্রেমকেলি বা চুম্বনের ফলে তাঁর বীর্যপাত ঘটে যেতে পারে অথবা
(স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের উত্তেজনার ফলে সহসায় মিলন ঘটে যেতে পারে, কারণ সে সময় সে হয়ত তাঁদের উদগ্র কাম-লালসাকে সংযত করতে পারবে না,
তাহলে সে কাজ তাঁদের জন্য হারাম। আর তা হারাম এই জন্য যে,
যাতে পাপের ছিদ্রপথ বন্ধ থাকে এবং তাঁদের রোযা নষ্ট হওয়া থেকে
রক্ষা পায়।
উত্তরঃ এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ও যুবকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই; যদি উভয়ের কামশক্তি এক পর্যায়ের হয়। সুতরাং দেখার বিষয় হল, কাম উত্তেজনা সৃষ্টি এবং বীর্যস্খলনের আশঙ্কা। অতএব সে কাজ যদি যুবক
বা কামশক্তিসম্পন্ন বৃদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাহলে
তা উভয়ের জন্য মাকরূহ। আর যদি তা না করে তাহলে তা বৃদ্ধ, যৌন-দুর্বল
এবং সংযমী যুবকের জন্য মাকরূহ নয়। পক্ষান্তরে উভয়ের মাঝে পার্থক্য করার ব্যাপারে
যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে ✔২৯৪ (সআদাঃ ২০৯০ নং) তা আসলে কামশক্তি বেশী থাকা ও না থাকার
কারণে। যেহেতু সাধারনতঃ বৃদ্ধ যৌন ব্যাপারে শান্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যুবক তাঁর
বিপরীত।
ফলকথা, সকল
শ্রেণীর দম্পতির জন্য উত্তম হল রোযা রেখে প্রেমকেলি, কোলাকুলি
ও চুম্বন বিনিময়ে প্রভৃতি যৌনাচারের ভূমিকা পরিহার করা। কারণ, যে গরু সবুজ ফসল-জমির আশেপাশে চরে, আশঙ্কা
থাকে যে, সে কিছু পরে ফশল খেতে শুরু করে দেবে। সুতরাং
স্বামী যদি ইফতার করা অবধি ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে সেটাই
হল সর্বোত্তম। আর রাত্রি তো অতি নিকটে এবং তাতো যথেষ্ট লম্বা। আল-হামদু-লিল্লাহ। মহান আল্লাহ বলেন,
“ রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।” ✔(বাক্বারাহঃ ১৮৭)
✔ ২১৯ প্রশ্নঃ চুম্বন ছাড়া অন্য শৃঙ্গারাচারের ব্যাপারে বিধান কি? এ সময় মযী বের হয়ে গেলে রোযার ক্ষতি হবে কি?
উত্তরঃ চুম্বনের ক্ষেত্রে চুম্বন গালে হোক অথবা ঠোঁটে উভয় অবস্থাই সমান। তদনুরূপ
সঙ্গমের সকল প্রকার ভূমিকা ও শৃঙ্গারাচার; সকাম
স্পর্শ, ঘর্ষণ, দংশন, মর্দন, প্রচাপন, আলিঙ্গন
প্রভৃতির মানেও চুম্বনের মতোই। এ সবের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর এ সব করতে গিয়ে
যদি কারো মাযী (বা উত্তেজনার সময় আঠালো তরল পানি) নিঃসৃত হয়, তাহলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
উত্তরঃ জিভ চোষার ফলে একে অন্যের জিহ্বারস গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেমন
স্তনবৃন্ত চোষণের ফলে মুখে দুগ্ধ এসে গলায় নেমে গেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।
উত্তরঃ স্ত্রীর দেহাঙ্গের যে কোন অংশ দেখা সায়িম স্বামীর জন্যও বৈধ। অবশ্য একবার
দেখার ফলেই চরম উত্তেজিত হয়ে কারো মাযী বা বীর্যপাত ঘটলে কোন
ক্ষতি হবে না। ✔২৯৬ (বুখারী ১৯২৭ নং দ্রঃ)কারণ, অবৈধ নজরবাজীর ব্যাপারে মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রথম দৃষ্টি তোমাদের জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি বৈধ নয়।”
✔২৯৭ (আবূ দাঊদ ২১৪৯, তিরমিযী ২৭৭৮,
সহীহ আবূ দাঊদ ১৮৮১ নং)তাছাড়া দ্রুতপতনগ্রস্ত এমন দুর্বল স্বামীর
এমন ওজর গ্রহণযোগ্য।
পক্ষান্তরে কেউ বরাবর দেখার ফলে মাযী নির্গত করলে
রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু বারবার দেখার ফলে বীর্যপাত করে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে
যাবে।
উত্তরঃ স্ত্রীর-দেহ নিয়ে কল্পনা করার ফলে কারো মাযী বা বীর্যপাত হলে রোযা নষ্ট হয়
না। যেহেতু অহানবি (ﷺ) এর ব্যাপক
নির্দেশ এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের মনের কল্পনা
উপেক্ষা করেন, যতক্ষণ কেউ তা কাজে পরিণত অথবা কথায় প্রকাশ
না করে।”
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য দাঁত (স্টোন ইত্যাদি থেকে) পরিষ্কার করা, ডাক্তারি ভরণ (ইনলেই)ব্যাবহার করা এবং যন্ত্রণায় দাঁত তুলে ফেলা বৈধ।
তবে এ সব ক্ষেত্রে তাকে একান্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে কোন প্রকার ঔষধ বা রক্ত গিলা না যায়।
উত্তরঃ সায়িমদের কিডনি অচল হলে রোযা অবস্থায় প্রয়োজন দেহের রক্ত পরিষ্কার ওশোধন
করা বৈধ। পরিশুদ্ধ করার পর পুনরায় দেহে ফিরিয়ে দিতে যদিও রক্ত দেহ থেকে বের হয়, তবুও তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। ✔৩০০ (ইবনে উষাইমইন)
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেই ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা বৈধ। যা
পানাহারের কাজ করে না। যেমন, পেনিসিলিন বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন
অথবা অ্যান্টিবায়োটিক বা টনিক কিংবা ভিটামিন ইঞ্জেকশন অথবা ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশন
প্রভৃতি হাতে, কোমরে বা অন্য জায়গায়, দেহের পেশি অথবা শিরায় ব্যবহার করলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবুও নিতান্ত
জরুরী না হলে তা দিনে ব্যবহার না করে রাত্রে ব্যবহার করাই উত্তম ও
পূর্বসাবধানতামূলক কর্ম। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, “ যে বিষয়ে সন্দেহ আছে, সে বিষয় বর্জন করে তাই
কর, যাতে সন্দেহ নেই।” ✔৩০১
(আহমাদ, তিরমিযী ২৫১৮, নাসাঈ,
ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানী প্রমুখ,
সহীহুল জামে ৩৩৭৭, ৩৩৭৮ নং)
“সুতরাং যে সন্দিহান বিষয়াবলী থেকে দূরে থাকবে, সে তাঁর দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে।”
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য নিজ দেহের ক্ষতস্থানে ঔষধ দিয়ে ব্যান্ডেজ ইত্যাদি দূষণীয় নয়।
তাতে সে ক্ষত গভীর হোক বা অগভীর। কারণ, এ কাজকে
না কিছু খাওয়া বলা যাবে, আর না পান করা। তা ছাড়া
ক্ষতস্থান স্বাভাবিক পানাহারের পথ নয়। ✔৩০৩ (আহকামুস সাওমি অল-ই’তিকাফ ১৪০ পৃঃ)
উত্তরঃ সায়িমদের জন্য নিজ মাথার চুল বা নাভির নিচের লোম ইত্যাদি চাঁছা বৈধ। তাতে
যদি কোন স্থানে কেটে রক্ত পড়লেও রোযার কোন ক্ষতি হয়না। পক্ষান্তরে দাড়ি চাঁছা সব
সময়কার জন্য হারাম; রোযা অবস্থায় অথবা অন্য কোন
অবস্থায়। ✔৩০৪ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/ ১৬৫)
উত্তরঃ রোযা রাখা অবস্থায় আতর বা অন্য প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং সর্বপ্রকার
সুঘ্রাণ নাকে নেওয়া সায়িমদের জন্য বৈধ। তবে ধুঁয়া জাতীয় সুগন্ধি যেমন (আগরবাতি, ছন্দন-ধুঁয়া প্রভৃতি)ইচ্ছাকৃত নাকে নেওয়া বৈধ নয়। কারণ, এই শ্রেণীর সুগন্ধির ঘনত্ব আছে; যা পাকস্থলীতে
গিয়ে পৌঁছে।
বলা বাহুল্য, রান্নাশালেরযে
ধুঁয়া অনিচ্ছা শত সত্ত্বেও নাকে এসে প্রবেশ করে, তাতে
রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, তা থেকে বাঁচার উপায় নেই।
৩০৬ (ইবনে উষাইমীন, মাজমূ ফাতাওয়া ১/৫০৮)
প্রকাশ থাকে যে নস্যি ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে
যাবে। কারণ, তারও ঘনত্ব আছে এবং তাঁর গুড়া
পেটের ভিতরে পৌঁছে থাকে। তা ছাড়া তা মাদকদ্রব্যের শ্রেণীভুক্ত হলে ব্যবহার করা যে
কোন সময় এমনিতেই হারাম।
উত্তরঃ স্প্রে দুই প্রকার; প্রথম প্রকার হল ক্যাপসুল
স্প্রে পাউডার জাতীয়। যা পিস্তলের মত কোন পাত্রে রেখে পুশ করে স্প্রে করা হয় এবং
ধুলার মত উড়ে গিয়ে গলার পৌছলে রোগী তা গিলতে থাকে। এই প্রকার স্প্রেতে রোযা নষ্ট
হয়ে যাবে। সায়িমকে যদি এমন স্প্রে বছরের সব মাসে এবং দিনেও ব্যবহার করতেই হয়,
তাহলে তাকে এমন রোগী গণ্য করা হবে, যার
রোগ সারার কোন আশা নেই। সুতরাং সে রোযা না রেখে প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে একটি করে
মিসকীন খাইয়ে দেবে।
দ্বিতীয় প্রকার স্প্রে হল বাষ্প জাতীয়। এই প্রকার
স্প্রেতে রোযা ভাঙ্গবে না। কেননা, তা পাকস্থলীতে পৌঁছে না। ✔৩০৭
((ইবনে উষাইমীন, ক্যাসেটঃ আহকামুন মিনাস সওম)
কারণ,
তা হল এক প্রকার কমপ্রেসড গ্যাস; যার
ডিব্বায় প্রেশার পড়লে উড়ে গিয়ে (নিঃশ্বাসের বাতাসের সাথে) ফুসফুসে পৌঁছে এবং
শ্বাসকষ্ট দূর হয়। এমন গ্যাস কোন প্রকার খাদ্য নয়। আর রমযানে অরমযানে এবং দিনে
রাত্রে সব সময়ে (বিশেষ করে শ্বাসরোধ বা শ্বাসকষ্ট জাতীয় যেমন হাঁফানির রোগী)এর
মুখাপেক্ষী থাকে।
অনুরূপভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে
ব্যবহার্য স্প্রে সায়িমদের জন্য ব্যবহার করা দোষাবহ নয়। তবে শর্ত হল, সে স্প্রে পবিত্র ও হালাল হতে হবে।
উত্তরঃ সেহেরীর শেষ সময় পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস করা সায়িমদের জন্য বৈধ।
কিন্তু ফজর উদয় (সময় বা আযান) হওয়ার সাথে সাথে মুখের খাবার উগলে ফেলা ওয়াজেব। (এ
ব্যাপারে মতভেদ পূর্বে আলোচিত হয়েছে।) অনুরূপ সহবাস করতে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে স্বামী
স্ত্রী পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরী। এরূপ করলে রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে সেহেরীর
সময় শেষ হয়ে গেছে বা ফজরের আযান শুরু হয়ে গেছে জেনে বা শুনেও যদি কেউ পানাহার বা
স্ত্রী সঙ্গমে মত্ত থাকে, তাহলে তাঁর রোযা হবে না।
মহানবী(ﷺ) বলেন, “বিলাল রাতে আযান দেয়। সুতরাং তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার করতে থাক,
যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়।”
উত্তরঃ স্ত্রী সঙ্গমে অথবা স্বপ্নদোষে হওয়ার পরেও সময় অভাবে গোসল না করে নাপাক
অবস্থাতেই সায়িম রোযার নিয়ত করতে এবং সেহেরী খেতে পারে। এমন কি সেহেরীর সময় শেষ
হয়ে গেলেও আযানের পর গোসল করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোযার গুরুত্ব কিছু অংশ নাপাকে
অতিবাহিত হলেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না। অবশ্য স্বলাতের জন্য গোসল জরুরী।
মা আয়েশা ও উম্মে সালামাহ (রঃ) বলেন, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর (কখনো কখনো)
স্ত্রী মিলন করে অপবিত্র অবস্থায় ফজর হয়ে যেত। তারপর তিনি গোসল করতেন এবং রোযা
রাখতেন।”
তাছাড়া মহান আল্লাহ ফজর উদয় হওয়ার সময় পর্যন্ত
স্ত্রী মিলনের অনুমতি দিয়েছেন এবং তাঁর পর থেকে রোযা রাখার আদেশ দিয়েছেন। আর তাঁর
মানেই হল যে, সায়িমদের জন্য (ফজর উদয়ের
পূর্বে) মিলনের পর (ফজর উদয়ের পর) নাপাকীর গোসল করা বৈধ।
তদনুরূপ নিফাস ও ঋতুমতী মহিলার রাত্রে খুন বন্ধ
হলে (রোযার নিয়তে করে এবং সেহেরী খেয়ে) ফজরের পর রোযায় থেকে পরে গোসল করে স্বলাত
পড়তে পারে। উপর্যুক্ত নাপাক পুরুষ ও মহিলার জন্য নাপাকীর গোসলকে সকাল বা দুপুরের
সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করা বৈধ নয়। বরং সূর্য উদয়ের পূর্বেই গোসল করে যথাসময়ে
স্বলাত আদায় করা তাঁদের জন্য ওয়াজেব। যেমন পুরুষের জন্য ওয়াজেব এমন সময়ের ভিতরে
সত্বর গোসল করা, যাতে ফজরের স্বলাত জামাআত
সহকারে মসজিদে আদায় করতে সক্ষম হয়। ✔৩১৩ (ফীক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১১, ইবনে বায, ফাতাওয়াস সওম ৫১ পৃঃ)
জ্ঞ্যাতব্য যে, রমযানের
দিনের বেলায় সায়িমের স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে তাঁর রোযা বাতিল নয়। কেননা, তা তাঁর ইখতিয়ারকৃত নয়। অতএব তাঁর জন্য জরুরী হল, নাপাকীর গোসল করা। অবশ্য ফজরের স্বলাত পড়ার পর ঘুমতে গিয়ে স্বপ্নদোষ
হলে, সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করে যদি যোহরের আগে পর্যন্ত
বিলম্ব করে গোসল করে, তাহলে তাতে দোষ হবে না। ৩৪১ অবশ্য
উত্তম হল, নাপাকে না থেকে সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে
বিভিন্নভাবে আল্লাহর যিকর করা।
উত্তরঃ সায়িমের জন্য দিনে ঘুমানো বৈধ। কিন্তু সকল স্বলাত তাঁর যথা সময়ে জামায়াত
সহকারে আদায় করতে অবহেলা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। যেমন, বিভিন্ন ইবাদতের কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। বরং উচিত হল,
ঘুমিয়ে সময় নষ্ট না করে রমযানের সেই মাহাত্ম্যপূর্ণ সময়কে নফল
স্বলাত, যিকর-আযকার ও কুরআন কারীম তেলাওয়াত দ্বারা আবাদ
করা। যাতে তাঁর রোযার ভিতরে নানা প্রকার ইবাদতের সমাবেশ ঘটে।
✔৩১৫ (ইবনে উষাইমীন,
ফাতাওয়াস সওম ৩১-৩২ পৃঃ)
✔ ২৩৩ প্রশ্নঃ সেহেরীর সময় আমি
মাসিক থেকে পবিত্রতা লক্ষ্য করলাম। সুতরাং সেহেরী খেয়ে রোযার নিয়ত করলাম। সূর্য
ওঠার আগেও দেখলাম, অপবিত্রতার কোন চিহ্ন ফিরে
আসেনি। অতএব গোসল করে ফজরের স্বলাত পড়লাম। আমার এ দিনের রোযা কি শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ খুন বন্ধ হওয়ার পর গোসল না করে সেহেরী খেয়ে এবং ফজরের সময় হওয়ার পর সূর্য
উঠার আগে গোসল করে ফজরের স্বলাত পড়লে রোযা হয়ে যাবে। ✔৩১৬ ()
✔ ২৩৪ প্রশ্নঃ সেহরীর সময় উঠে
দেখি, তখনও অপবিত্রতার চিহ্ন রয়ে গেছে। সুতরাং রোযা রাখলাম না,
কিন্তু সকালে উঠে দেখি, আমি পবিত্র হয়ে
গেছি। তখন আমার করণীয় কি?
উত্তরঃ আপনি সারা দিন কিছু পানাহার করবেন না। গোসল করে যোহরের স্বলাত পড়বেন, তবে ঐ দিনকার রোযা আপনার হবে না, কাযা করতে
হবে।
✔ ২৩৫ প্রশ্নঃ সারাদিন রোযা
থাকার পর ইফতারের পাঁচ মিনিট আগে মাসিক দেখা দিল, সেদিনের রোযাটা বরবাদ যাবে কি?
উত্তরঃ ফজর উদয়ের পর হতে সূর্য ডোবার আগে পর্যন্ত সময়ে মাসিক শুরু হলে রোযা নষ্ট
হয়ে যাবে।
উত্তরঃ ঋতু থাকা অবস্থায় পারে। সেহেরী খেয়ে সকালে খুন দেখলে সারাদিন সে পানাহার করতে পারে। কিন্তু ঋতু বন্ধ হয়ে
গেল আর পানাহার করতে পারে না। যেমন সেহেরীর সময় খুন দেখে সকালে পবিত্রতা লক্ষ্য
করলে সারাদিন পানাহার করতে পারে না।
✔ ২৩৭. প্রশ্নঃ রমযানের দিনের
বেলায় যদি কোন সায়িম প্রথমে কিছু খেয়ে রোযা নষ্ট করার পর স্ত্রী সহবাস করে, তাহলে কি তার কাফফারা লাগবে না?
উত্তরঃ যদি মুসাফির হয়, তাহলে তাঁর জন্য বৈধ। তাকে
কাফফারা লাগবে না। কিন্তু বাড়িতে থাকা অবস্থায় এমন ছল-বাহানা করে স্ত্রী-সহবাস
করলে কাফফারা থেকে রেহাই পাবে না। বরং এমন মানুষের গোনাহ বেশী।
উত্তরঃ রমযানের কাযা রোযা, কোন সুন্নত বা নফল রোযা,
নযর বা কাসমের কাফফারার রোযা রাখা অবস্থায় সহবাস হয়ে গেলে কোন
কাফফারা আদায় করতে হয় না।
✔ ২৩৯. প্রশ্নঃ স্বামী-স্ত্রী
সফরে ছিল। সেহেরী খেয়ে রমযানের রোযাও রেখেছিল। কিন্তু দুপুরে মিলন ঘটে যায়। এতে কি
কাফফারা ওয়াজেব?
উত্তরঃ যে সফরে রোযা কাযা করা চলে, সে সফরে
রোযা অবস্থায় মিলন ঘটে গেলে কাফফারা লাগবে না। যেমন সফরে তাঁর জন্য পানাহার বৈধ,
তেমনি স্ত্রী-মিলনও বৈধ।
✔৩১৭ (ইবনে জিবরীন)
best world websaite
0 Comments