হাদিস-সম্পর্কিত পার্ট ০১

হাদিস বিষয়ক 
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক না করলে সে জান্নাতে যাবে, যদিও সে যেনা করে ও চুরি করে। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কি?
ANSWER
🎤 এর ব্যাখ্যা হ’ল, কবীরা গোনাহগার মুমিন কাফির-মুশরিকদের ন্যায় চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। বরং খালেছ তওবার কারণে আল্লাহ তাকে প্রথমেই ক্ষমা করবেন অথবা গুনাহের শাস্তি স্বরূপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর সে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। কারণ শিরকের গোনাহ ব্যতীত সকল গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন(নিসা ৪/৪৮)। আবার বিদ‘আতমুক্ত কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত প্রাপ্ত হয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। কেননা তাঁর শাফা‘আত হবে কবীরা গুনাহগারদের জন্য (আবুদাঊদ হা/৪৭৩৯, তিরমিযী হা/২৪৩৫, ইবনু মাজাহ হা/৪৩১০)। অত্র হাদীছে খারেজী ও মু‘তাযিলাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে। যারা বলেন, কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী, যদি সে তওবা না করে মারা যায় (মির‘আত হা/২৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্নঃ ছহীহ মুসলিমে এসেছে, চিরদিন আমার উম্মতের একটি দল হক-এর উপর কিতাল করবে…। এর অর্থ কি তারা সর্বদা যুদ্ধ করতে থাকবে? অথচ রাসূল (ছাঃ) জীবনের বহু সময় কিতাল বিহীন অবস্থায় অতিবাহিত করেছেন!
ANSWER
🎤 উক্ত হাদীছের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, বিজয়ী দলটি সর্বদা কেবল সশস্ত্র যুদ্ধেই লিপ্ত থাকবে। বরং এর উদ্দেশ্য হ’ল বিজয়ী দল কখনোই জিহাদকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করবে না। বরং তারা তাদের স্বীয় বিজয়ী বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হকের উপর আপোষহীন থাকবে এবং প্রয়োজনে কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করবে। যে প্রয়োজন কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে (আলবানী)।

ইমাম নববী এই দলটির পরিচয় সম্পর্কে বলেছেন- তাদের মাঝে রয়েছেন মুজাহিদ, ফকীহ, মুহাদ্দিছ, দুনিয়াবিমুখ, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধকারীসহ অন্যান্য উত্তম কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ (নববী, শরহ মুসলিম হা/১২৪-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।

উক্ত দলটির বৈশিষ্ট্য হবে এই যে, তারা আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত রাখার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের তরীকা মতে সকল প্রকার বাতিলের বিরুদ্ধে সকল যুগে সর্বাত্মকভাবে আপোষহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে এই দলটি কারা সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তারা যদি আহলুল হাদীছ না হয়, তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা(তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২৮৩ -এর ব্যাখ্যা)। ইমাম বুখারী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ একই মন্তব্য করেছেন (ফৎহুল বারী হা/৭৩১৭-এর ব্যাখ্যা)।
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তির ঘরে কৃষি যন্ত্রপাতি দেখে মন্তব্য করেন ‘যে ব্যক্তির ঘরে এসব প্রবেশ করে আল্লাহ সেখানে লাঞ্ছনাও প্রবেশ করান’। উক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যা কি?
ANSWER
🎤 রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী- ‘যে ব্যক্তির ঘরে এসব (চাষাবাদের যন্ত্রপাতি) প্রবেশ করে আল্লাহ সেখানে লাঞ্ছনাও প্রবেশ করান’ (বুখারী হা/২৩২১), এর দ্বারা সেই ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে ব্যক্তি জিহাদ ত্যাগ করে শুধুমাত্র কৃষিকর্মকেই বেছে নিয়েছে। যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা টাকা-পয়সা অাঁকড়ে ধরবে, ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে, গরুর লেজ ধরবে (অর্থাৎ শরী‘আতের হুকুম-আহকাম অনুসরণ না করে, দুনিয়াবী বিষয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করবে), চাষাবাদেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ ছেড়ে দিবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। যতক্ষণ তোমরা দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে, ততক্ষণ না তোমাদের উপর থেকে লাঞ্ছনা উঠিয়ে নেবেন না’ (আবুদাউদ হা/৩৪৬২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১, ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৭)। পক্ষান্তরে গাছ লাগানো এবং চাষাবাদ করার মত ভালো কাজের প্রতি হাদীছে উৎসাহিত করা হয়েছে (বুখারী হা/২৩২০, মুসলিম হা/৩৮৯৫, মিশকাত হা/১৯০০)।
প্রশ্নঃ মুসলমানগণ যে বিষয়কে উত্তম মনে করে আল্লাহর নিকটেও তা উত্তম’- উক্ত হাদীছটির সত্যতা ও ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 মারফূ‘ সূত্রে হাদীছটির কোন ভিত্তি না থাকায় দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়াও তা রাসূল (ছাঃ)-এর অকাট্য বাণী- فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ ‘নিশ্চয়ই সকল প্রকার বিদ‘আত ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম হা/৮৬৭; মিশকাত হা/১৪১)-এর স্পষ্ট বিরোধী।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা নয়। হাদীছ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরাই এটিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সম্পৃক্ত করেছে (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফুরূসিইয়াহ ৬১ পৃঃ)।

শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, মারফূ‘ সূত্রে এর কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে ‘মওকূফ’ সূত্রে বর্ণিত (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৩)।

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, উক্ত আছারটি দ্বারা খেলাফতের ক্ষেত্রে আবুবকর (রাঃ)-কে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের ইজমার কথা বুঝানো হয়েছে(আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১০/৩২৮ পৃঃ)।

এছাড়াও উল্লিখিত আছারে বর্ণিত اَلْمُسْلِمُوْن এর اَلْ দ্বারা ‘ইজমায়ে ছাহাবা’ তথা যার উপর ছাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন, সেটা বুঝানো হয়েছে। এর অর্থ এটা নয় যে, অধিকাংশ মুসলমান কোন বিদ‘আতকে উত্তম বললে সেটা আল্লাহর নিকটেও উত্তম। এরূপ অর্থ করা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
প্রশ্নঃ সূরা তাকাছুর একবার পড়লে এক হাযার আয়াত পড়ার সমান ছওয়াব হয় এবং উক্ত সূরা পাঠকারীকে আল্লাহর রাজত্বে শুকরিয়া আদায়কারী হিসাবে গণ্য করা হয়। হাদীছটি কি ছহীহ?

ANSWER
🎤 উক্ত বর্ণনার প্রথমাংশ বায়হাক্বীর শু‘আবুল ঈমানে আর দ্বিতীয়াংশ দায়লামীর মুসনাদুল ফেরদাউসে বর্ণিত হয়েছে। উভয় বর্ণনাই যঈফ (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৮৯১; মিশকাত হা/২১৮৪; যঈফুল জামে‘ হা/৪০৩৮)।
প্রশ্নঃ মুসলিমের (মুসলিম হা/১৮২৭) একটি হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহর উভয় হাতই ডান। অন্য হাদীছে (মুসলিম হা/২৭৮৮) তাঁর বাম হাতের কথা এসেছে। উভয় হাদীছের বৈপরিত্যের সমাধান কি?
ANSWER
🎤 আল্লাহর হস্তদ্বয় মানুষের হাতের মত নয়। বরং তাঁর উভয় হাতই ডান, যা বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। মুসলিমের একটিমাত্র বর্ণনায় (মুসলিম হা/২৭৮৮) তাঁর বাম হাতের কথা এসেছে, যা অন্য বর্ণনায় ‘বাম হাতে’র বদলে ‘অন্য হাত’ বলা হয়েছে(আবুদাঊদ হা/৪৭৩২)। এটি স্রেফ মানুষকে বুঝানোর জন্য। অতএব এর অর্থ হবে ‘অন্য হাত’ (আলবানী, মাজাল্লা ইছালা, ৪র্থ সংখ্যা ৬৮ পৃঃ)। এছাড়া বান্দার ক্ষেত্রে ডান হাতের চেয়ে বাম হাতের মর্যাদা কম। যা আল্লাহর ক্ষেত্রে শোভা পায় না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ২৫/১২৬)।
প্রশ্নঃ সিলসিলা ছহীহাহ ও যঈফাহ গ্রন্থদ্বয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER

🎤 গ্রন্থ দু’টি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী(১৯১৪-১৯৯৯ইং) কর্তৃক সংকলিত ছহীহ ও যঈফ হাদীছের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন। সিলসিলা ছহীহার মধ্যে ৪০৩৫টি হাদীছ স্থান পেয়েছে। যা তিনি বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থ হ’তে সংকলন করে সনদের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করেছেন। এ গ্রন্থে ছহীহ, হাসান ও জাইয়িদ পর্যায়ের হাদীছসমূহ উল্লেখিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একই বিষয়ে অন্যান্য হাদীছ উল্ল্রেখ করেছেন। অনুরূপভাবে সিলসিলা যঈফার মধ্যে ৭১৬২টি হাদীছ স্থান পেয়েছে। যা উছূলে হাদীছের মানদন্ডে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের আলোচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যঈফ হওয়ার হুকুম প্রদান করেছেন। এতে যঈফ, মুনকার, বাতিল ও জাল হাদীছগুলো উল্লেখিত হয়েছে। তবে উভয় গ্রন্থে ফিক্বহুল হাদীছ বা হাদীছের তাৎপর্য সম্পর্কেও কিছু আলোচনা স্থান পেয়েছে।
প্রশ্নঃ জিন ও মানুষ ব্যতীত অন্য কোন উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে কিছু পাওয়া যায় কি?
ANSWER
🎤 কুরআন ও হাদীছে জিন, মানুষ আর ফেরেশতা ছাড়া অন্য কোন উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন সৃষ্টি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় না। যদি থেকেও থাকে তাহ’লে তা গায়েবী বিষয়। সে সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের জন্য মসজিদে গেলে তার প্রতি কদমে এক বৎসরের নফল ছালাত ও ছিয়ামের সমান নেকী হবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 হাদীছটি ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন ভালভাবে গোসল করে। অতঃপর সকাল সকাল মসজিদে যায় পায়ে হেঁটে, গাড়ীতে নয় এবং আগে ভাগে নফল ছালাত শেষে ইমামের কাছাকাছি বসে ও মনোযোগ দিয়ে খুৎবার শুরু থেকে শুনে এবং অনর্থক কিছু করে না, তার প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের ছিয়াম ও ক্বিয়ামের অর্থাৎ দিনের ছিয়াম ও রাতের বেলায় নফল ছালাতের সমান নেকী হয়’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ হা/৩৪৫, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৮৮)।
প্রশ্নঃ আরশ সম্পর্কে উমাইয়া বিন আবী সালতের যে কবিতা রাসূল (ছাঃ) সত্যায়ন করেছেন (رجل وثور ….إلا معذبة وإلا تجلد) বলে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (আহমাদ হা/২৩১৪, আবু ইয়া‘লা হা/২৪৮২)। হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 হাদীছটি যঈফ (আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৫৭৯, শু‘আইব আরনাঊত্ব, আহমাদ হা/২৩১৪)।
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা দেওয়ার অনুমতি দিলে মাকে সিজদার অনুমতি দিতাম। উক্ত বক্তব্য সঠিক কি?
ANSWER
🎤 কথাটি ভিত্তিহীন। সঠিক বক্তব্য হ’ল, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি যদি কাউকে কারু জন্য সিজদা করার হুকুম দিতাম’ তাহ’লে স্ত্রীকে বলতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য’ (আবুদাউদ হা/২১৪২, তিরমিযী হা/১১৫৯; মিশকাত হা/৩২৫৫)।
প্রশ্নঃ উপরে উঠতে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতে হবে’ বিষয়টি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?

ANSWER
🎤 বিষয়টি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/২৯৯৩; মিশকাত হা/২৪৫৩)।
প্রশ্নঃ জনৈক ছাহাবী শরীরে তীরবিদ্ধ হলেও কুরআন পাঠ বন্ধ করলেন না এবং জনৈক ছাহাবীর পায়ে বর্শা ঢুকে গেলে তিনি ছালাতে দাঁড়ালেন, অতঃপর বর্শা টেনে বের করা হল। কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। ঘটনা দু’টির সত্যতা আছে কি?
ANSWER
🎤 ৪র্থ হিজরীতে সংঘটিত যাতুর রিক্বা‘ যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে রাতে বিশ্রামকালে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে পাহারারত আনছার ছাহাবী ‘আববাদ বিন বিশ্র (রাঃ) গভীর মনোযোগে ছালাত আদায়কালে শত্রু কর্তৃক পরপর তিনটি তীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বে্ও ছালাত পরিত্যাগ না করার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এমন একটি সূরা তেলাওয়াত করছিলাম, যা পরিত্যাগ করতে আমার মন চাচ্ছিল না(‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৯৫-এর ব্যাখ্যা; আবুদাঊদ হা/১৯৮, সনদ হাসান)। ছালাতের মাঝে হযরত আলী (রাঃ)-এর পা থেকে তীর টেনে বের করা হয়েছিল বলে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু এর কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়া উরওয়া ইবনু যুবায়ের (রাঃ) সম্পর্কে এরূপ একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, তাঁর পা কেটে ফেলার প্রয়োজন হলে তিনি ছালাতে দন্ডায়মান হন। অতঃপর তা কাটা হয়। কিন্তু তিনি কিছুই অনুভব করতে পারেননি (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৯/১০২)।
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, আবুদাঊদ হা/৪৭৫৩ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেক মানুষের কবরে উপস্থিত হবেন এবং তিনি মীলাদের মজলিসেও হাযির হন। এর সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 উক্ত হাদীছ দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যের কবরে উপস্থিত হওয়া প্রমাণিত হয় না। বরং সেখানে ফেরেশতাগণ রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কবরবাসীকে জিজ্ঞেস করবেন সেটা বুঝানো হয়েছে। এছাড়া এর ভিত্তিতে রাসূল (ছাঃ)-এর মীলাদের মজলিসে আগমন করার দলীল গ্রহণ করা হাস্যকর বৈ কিছুই নয়। কেননা মৃত্যুর পরে অন্য মানুষের মত রাসূল (ছাঃ)-ও বারযাখী জগতে আছেন (মুমিনূন ১০০)। সেখান থেকে বেরিয়ে অন্যের কবরে বা মীলাদ অনুষ্ঠানে হাযির হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে, যারা রাসূল (ছাঃ)-কে ‘মানুষ’ মনে করেন না বরং ‘নূর’ বলে থাকেন এবং যারা আহমাদ ও আহাদ একই সত্তা বলে দাবী করেন, এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদার লোকেরাই কেবল রাসূল (ছাঃ)-কে কবরে ও মীলাদ অনুষ্ঠানে সর্বত্র একই সাথে হাযির হওয়ার উদ্ভট কল্পনা করে থাকেন। এইসব অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা স্রেফ কুফরী আক্বীদা মাত্র। এসব থেকে তওবা করা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ নমরূদ মশার কামড়ে মারা গিয়েছিল বলে সমাজে যে ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য?
ANSWER
🎤 কুরআন ও হাদীছে নমরূদ কিভাবে মারা গেছে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তবে তাফসীর ও ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় যে, মশা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল (কুরতুবী, ইবনু কাছীর, বাক্বারাহ ২৫৯-এর তাফসীর দ্রঃ)। তবে এ সবই ইসরাঈলী বর্ণনা। যার সত্য বা মিথ্যা কোনটাই প্রমাণ করা যায় না (বুখারী, মিশকাত হা/১৫৫)।
প্রশ্নঃ একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গেল এবং আরেক ব্যক্তি জাহান্নামে গেল’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 হাদীছটি মারফূ‘ হিসাবে যঈফ, তবে মওকূফ হিসাবে ছহীহ। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, সালমান ফারেসী (রাঃ) হ’তে মওকূফ সূত্রে এর সনদ ছহীহ (ইমাম আহমাদ, আয-যুহুদ ১/১৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৩৪৩, ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩০৩৮)। তবে তিনি বলেন যে, আমার মনে হয়েছে এটি ইসরাঈলী বর্ণনা। আলবানী বলেন, সালমান ফারেসী যখন খ্রিষ্টান ছিলেন, তখন তিনি তাদের কোন সরদার থেকে এটি শুনে থাকতে পারেন (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮২৯)।

ঘটনা এই যে, বিগত যুগে দু’জন মুসলমান একটি মূর্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সেখানকার খাদেমরা বলল, তোমরা একটা মাছি হ’লেও এখানে দান করে যাও। প্রথমজন দিল এবং তাকে ছেড়ে দেয়া হ’ল। কিন্তু দ্বিতীয়জন বলল, আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে দান করব না। তখন তাকে তারা হত্যা করল এবং লোকটি জান্নাতী হ’ল’। হাদীছটি সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, প্রথমজন দান করেছে জীবনের ভয়ে। অতএব সে জাহান্নামী হবে না। কেননা আল্লাহ বলেন, ঐ ব্যক্তির উপর শাস্তি নেই যে ব্যক্তিকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে। অথচ তার হৃদয় ঈমানের প্রতি অবিচল...’ (নাহল ১৬/১০৬)।
প্রশ্নঃ একটি হাদীছে বলা হয়েছে, ইজতিহাদ সঠিক হ’লে দ্বিগুণ নেকী এবং বেঠিক হলে একটি নেকী’। এ হাদীছটি কি ছহীহ? ছহীহ হলে কোন কোন ক্ষেত্রে এ হাদীছটি প্রযোজ্য? যে কেউ কি ইজতিহাদ করতে পারে?
ANSWER
🎤 হাদীছটি ছহীহ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৩২)। হাদীছটি ইসলামী আদালতের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হ’লেও এটি বিজ্ঞ আলেম ও ফকীহগণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা ছহীহ দলীল ভিত্তিক ফৎওয়া দিয়ে থাকেন। তবে ইজতিহাদকারীর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন (ক) যে বিষয়ে ইজতিহাদ করবেন সে বিষয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা। (খ) ছহীহ, যঈফ ও মওযূ‘ হাদীছ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা। (গ) নাসেখ ও মানসূখ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা। (ঘ) আরবী ভাষা ও উছূলে ফিক্বহের জ্ঞান থাকা। যেমন আম-খাছ, মুতলাক-মুকাইয়াদ, মুজমাল-মুবাইয়ান ইত্যাদি। (ঙ) কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে মাস‘আলা ইস্তিম্বাত করার যোগ্যতা থাকা (মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, আল- উছূলু মিন ইলমিল উছূল ১/৮৫)। অতএব তাক্বওয়া ও যোগ্যতা ব্যতীত যে কেউ শরী‘আতের বিষয়ে ইজতিহাদ করতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ জনৈক বক্তা বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরের একপার্শ্বে দাফন করা হয়। আর তিনি আরেক পাশে বসাবস করতে থাকেন। এর সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 রাসূল (ছাঃ)-কে আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে দাফন করা হয়েছিল তা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (তিরমিযী হা/১০১৪; মিশকাত হা/৫৯৬২)। তবে তাঁর গৃহে দুটি অংশ ছিল। একটিতে তিনি বসবাস করতেন। অপরটিতে কবর ছিল। উভয়ের মাঝে দেওয়াল ছিল(ইবনে সা‘দ, তাবাকাতুল কুবরা ২/২২৪; উমদাতুল ক্বারী ৮/২২৭)।
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ)-এর মোট কতবার বক্ষবিদারণ হয়েছিল? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

ANSWER
🎤 দু’বার রাসূল (ছাঃ)-এর বক্ষবিদারণের ঘটনা ঘটে। (১) দুধমা হালীমার নিকটে ৪ বা ৫ বছর বয়সে (মুসলিম হা/১৬২, আনাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/৫৮৫২)। (২) হিজরতের পূর্বে মেরাজে গমনকালে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬৪)। এছাড়া আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে, যেগুলির সূত্র দুর্বল (আকরাম যিয়া উমরী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১০৩)।
প্রশ্নঃ বুখারী ৫৬১০ নং হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) মদ, মধু ও দুধের মধ্যে দুধ পান করেছিলেন। এ হাদীছের ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন?
ANSWER
🎤 মি‘রাজের সফরে রাসূল (ছাঃ) পিপাসিত হন। ফলে তাঁকে দু’বার পানীয় পেশ করা হয়। একবার বায়তুল মুক্বাদ্দাসে মি‘রাজের প্রাক্কালে। দ্বিতীয়বার সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে। প্রথমটিতে মদ ও দুধ এবং দ্বিতীয়টিতে মদ, মধু ও দুধের কথা এসেছে। দু’টিতেই তিনি দুধ গ্রহণ করেছেন এবং দু’টিতেই জিব্রীল একই জবাব দিয়েছেন, اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَতুমি স্বভাবধর্মকে পসন্দ করেছ’। এর কারণ হিসাবে ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, দুধে পিপাসা মিটে। তাতে খাদ্য ও পানীয় দু’টিই থাকে। যা মদ ও মধুতে থাকে না। আর এটাই হ’ল আসল কারণ’ (ফাৎহুল বারী হা/৫৬১০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্নঃ রাসূল (ছাঃ)-কে সৃষ্টি করা না হ’লে, এ পৃথিবী সৃষ্টি করা হ’ত না। এ হাদীছটির কোন ভিত্তি আছে কি? ছহীহ না হ’লে তার কারণ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 হাদীছটি মওযূ বা জাল। হাদীছটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নামে মুহাদ্দিছ হাসান বিন মুহাম্মাদ ছাগানী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ) স্বীয় ‘মওযূ‘আত’ গ্রন্থে (হা/৭৮)উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ফেরদৌস দায়লামী (হা/৮০৯৫) ও ইবনুল জাওযী স্বীয় মওযূ‘আত গ্রন্থে এবং সৈয়ূতী স্বীয় ‘লাআলী আল-মাছনূ‘ গ্রন্থে এনেছেন। সবাই এটিকে মওযূ বা জাল বলেছেন এবং তার কারণ সমূহ নির্দেশ করেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮২)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, এরূপ কোন হাদীছ ছহীহ বা যঈফ কোন সূত্রেই রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়নি। কোন ছাহাবীও এরূপ কোন হাদীছ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এর বর্ণনাকারী সম্পর্কেও জানা যায় না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮৬-৯৬)। সকল যুগের বিদ্বানগণ এ বর্ণনাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেছেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/৩১২)।
প্রশ্নঃ হযরত আদম (আঃ)-কে মোহর ব্যতীত বিবি হাওয়াকে স্পর্শ করতে দেওয়া হয়নি। নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠই ছিল তাঁর জন্য মোহরস্বরূপ। এ বক্তব্যের কোন ভিত্তি আছে কি?
ANSWER
🎤 বক্তব্যটি ভিত্তিহীন এবং বানাওয়াট। এ মর্মে সূত্র বিহীন একটি গল্প বর্ণিত হয়েছে জামালুদ্দীন বাগদাদী লিখিত ‘বুসতানুল ওয়ায়েযীন’ বইয়ের ২৯৭ পৃষ্ঠায়। এছাড়া আরো আছে তাবলীগী নেছাবের ‘ফাযায়েলে দরূদ শরীফ’ গল্প নং ১৪ পৃঃ ৮৫-তে (দ্রঃ হাদীছের প্রামাণিকতা ২য় সংস্করণ পৃঃ ৫৯)।
প্রশ্নঃ হাদীছে জিবরীলে বলা হয়েছে ‘ইবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ’। এর ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 এই বাক্য দ্বারা ইবাদতের সর্বোচ্চ খুশূ-খুযূ‘ অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আয়নী বলেন, ‘ইহসান’ বলতে তোমার ঐ ইবাদতকে বুঝায়, যে ইবাদতরত অবস্থায় তুমি যেন তোমার প্রভুকে দেখতে পাচ্ছ’। যদি এতটা উঁচু স্তরে না উঠতে পার, তবে এ বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ তোমার সবকিছু দেখছেন এবং তুমি সর্বদা তোমার প্রভুর চোখের সম্মুখে রয়েছ। ঠিক যেমন মনিবের সম্মুখে গোলাম সদা সন্ত্রস্ত ও সতর্কভাবে এবং গভীর মনোযোগ সহকারে কাজ করে থাকে’। এর অর্থ এটা নয় যে, মা‘রেফাতের নামে ছূফীদের আবিষ্কৃত ১০ লতীফায় যিকর করে ‘ফানা ফিল্লাহ’ হয়ে যেতে হবে। অতঃপর আল্লাহর ভালবাসার নামে আব্দ ও মা‘বূদের পার্থক্য ঘুচিয়ে ‘আল্লাহ তা‘আলার আকৃতিমুক্ত সঙ্গ লাভ করে’ তাঁর অস্তিত্বে বিলীন হয়ে যেতে হবে। হুলূল ও ইত্তেহাদের এই অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী দর্শন সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এ থেকে অবশ্যই তওবা করতে হবে।
প্রশ্নঃ জনৈক বক্তা বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আবূবকর ও ওমর (রাঃ) আমার জন্য মূসা ও হারূন (আঃ)-এর ন্যায়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
ANSWER
🎤 হারূণ মূসা-এর জন্য যেরূপ ছিলেন, আবূবকর ও ওমর (রাঃ) আমার জন্য সেরূপ’ মর্মের রেওয়ায়াতটি মিথ্যা (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৭৩৪)। কাছাকাছি মর্মে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা দু’জন ইসলামের জন্য মানুষের চোখ ও কানের ন্যায়’। এ বর্ণনাটিও জাল(সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২৬৯)। অবশ্য আলী (রাঃ) সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হারূণ মূসা-এর জন্য যেরূপ ছিলেন, তুমি আমার জন্য সেরূপ। তবে আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬০৭৮)।
প্রশ্নঃ মাই টিভির ইসলামী অনুষ্ঠানে জনৈক মাওলানা বললেন, একদা আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর গৃহে একগ্লাস পানি পেয়ে তা খেয়ে ফেললে রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটি তো আমার প্রস্রাব। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি জীবনে যত শরবত খেয়েছি, এটি তার মধ্যে সবচেয়ে মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত।’ এ বক্তব্যের সত্যতা আছে কি?
ANSWER
🎤 উক্ত বক্তব্যটি বানোয়াট। তবে কাছাকাছি মর্মে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যা যঈফ। এ বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আযাদকৃত দাসী উম্মে আয়মন বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদিন রাতে গৃহকোণে রাখা একটি মাটির পাত্রে পেশাব করেছিলেন। পিপাসার কারণে আমি অজান্তে পেশাবটি পান করে নেই। পরের দিন সকালে তিনি আমাকে উক্ত পেশাব ফেলে দিতে বললে আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তো সেটা পান করে নিয়েছি। একথা শুনে তিনি হেসে ফেললেন এবং বললেন, যাও তুমি আর কখনো পিপাসিত হবে না (ত্বাবারাণী, হাকেম ৪/৭০, হা/৬৯১২)।

উক্ত হাদীছটি দু’টি কারণে যঈফ : (১) উম্মে আয়মন ও তাঁর থেকে বর্ণনাকারী নুবায়েহ আল-উনাযীর মাঝে সাক্ষাত না হওয়া (২) সনদে আবু মালিক আন-নাখঈ নামক বর্ণনাকারী নিতান্ত যঈফ। ইমাম নাসাঈ, আবু হাতেম, ইবনু হাজার সহ সকলেই তাকে যঈফ বলেছেন (তালখীছুল হাবীর ১/১৭১)। এরূপ আরেকটি ঘটনা ত্বাবারাণী কাবীর ও বায়হাক্বী সুনানুল কুবরায় বর্ণিত হয়েছে, সেটিও যঈফ।
প্রশ্নঃ ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়ানো সম্পর্কে বুখারীতে সা‘দ বিন মু‘আয সম্পর্কিত যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে, তার প্রকৃত ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 যারা সম্মানার্থে দাঁড়ানোর পক্ষে মতামত পেশ করেন, তারা সা‘দ ইবনু মু‘আযের উক্ত হাদীছটি দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন। তারা উক্ত হাদীছের শেষ অংশ قُوْمُوْا إِلَى سَيِّدِكُمْ -এর অর্থ করেন, ‘তোমরা তোমাদের নেতার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও’উক্ত ব্যাখ্যা বেশ কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথমতঃ উক্ত হাদীছটি মুসনাদে আহমাদে ছহীহ সূত্রে বর্ধিত আকারে এসেছে। قُوْمُوْا إِلَى سَيِّدِكم فَأَنْزِلُوْه ‘তোমরা তোমাদের নেতার দিকে এগিয়ে যাও এবং তাঁকে (গাধা হ’তে) নামিয়ে নাও’ (আহমাদ হা/২৫১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭)। এতে বুঝা যায় যে, অসুস্থ সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-কে গাধার পিঠ থেকে নামতে সাহায্য করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্যই হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বর্ধিত অংশটুকু উল্লেখ করে বলেন, هَذِهِ الزِّيَادَةُ تَخْدِشُ فِى الْاِسْتِدْلاَلِ بِقِصَّةِ سَعْدٍ عَلَى مَشْرُوْعِيَّةِ الْقِيَامِ الْمُتَنَازَعِ فِيْهِ অর্থাৎ ‘এই বর্ধিত বর্ণনাটুকু সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) সংশ্লিষ্ট বিবরণ দ্বারা বিতর্কিত ক্বিয়াম বা সম্মানার্থে দন্ডায়মান হওয়াকে শরী‘আতের দলীল সাব্যস্ত করার দাবীকে নাকচ করে দিয়েছে’ (ফাৎহুল বারী ১১/৬০-৬১ পৃঃ, হা/৬২৬২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

দ্বিতীয়তঃ তিনি অসুস্থ ছিলেন। ইহুদী গোত্র বনু কুরায়যার সাথে যুদ্ধের সময় তিনি তীরের আঘাত পেয়েছিলেন। আর যখমী অবস্থায় তিনি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে নামতে সাহায্য করার নির্দেশ দেন।

তৃতীয়তঃ ব্যাকরণগত দিক থেকেও তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যদি সম্মানার্থে দাঁড়াতে বলতেন তাহ’লে বলতেন, قُوْمُوْا لِسَيِّدِكُمْতোমরা তোমাদের নেতার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও’। কারণ আরবী ব্যাকরণ মতে, قيام শব্দের صله বা সম্বন্ধ যখন إلى আসে, তখন তা সহযোগিতা অর্থে আসে। আর যখন ل আসে, তখন তা সম্মান অর্থে আসে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর নির্দেশে إلى সম্বন্ধপদ প্রয়োগ করেছেন। অতএব এর অর্থ হবে, ‘তোমরা তোমাদের নেতার সাহায্যার্থে দন্ডায়মান হও’ (মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৯/৮৩ পৃঃ)। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন সিলসিলা ছাহীহাহ হা/৬৭-এর ব্যাখ্যা)।

ইসলামী শরী‘আতে কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো বা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা নাজায়েয। এটি একটি জাহেলী প্রথা, যা বর্জন করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নিল’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৯৯ সনদ ছহীহ, ‘ক্বিয়াম’ অনুচ্ছেদ)। অন্য হাদীছে এসেছে, হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ছাহাবায়ে কেরামের নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলেন না। অথচ তারা কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখে দাঁড়াতেন না (তিরমিযী হা/২৭৫৪; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৬৯৮)।
প্রশ্নঃ সীরাতে ইবনে ইসহাকে রয়েছে, ‘রাসূল (ছাঃ) মক্কাবিজয়ের সময় কা‘বাগৃহে প্রবেশ করে ৩৬০টি মূর্তি ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। কিন্ত একটিতে মারিয়াম (আঃ)-এর ছবি অঙ্কিত ছিল। তাই তা মুছতে নিষেধ করেন। এ কাহিনীর সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 আযরূকী তার ‘আখবারু মাক্কাহ’ গ্রন্থে (১/১৩০) এ মর্মে চারটি ‘আছার’ বর্ণনা করেছেন, যার সবগুলিই মুনকার, যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী। ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) যখন বায়তুল্লাহর মধ্যে ছবি দেখলেন তখন তিনি সেগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। তা না মোছা পর্যন্ত তিনি প্রবেশ করেননি (বুখারী হা/৩৩৫২)।
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি বলেন, একদল আলেম ক্বিয়ামতের দিন তাদের নাড়িভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে, যারা জনগণকে যা উপদেশ দিত নিজেরা তা মেনে চলত না। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা আছে কি?
 ANSWER
🎤 উক্ত বক্তব্য সঠিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আগুনে তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যাবে। তখন সে ঐ নাড়িভুঁড়ির চতুষ্পার্শ্বে ঘুরতে থাকবে। যেমনভাবে গাধা ঘানির চতুষ্পার্শ্বে ঘুরে থাকে। এহেন অবস্থাদৃষ্টে জাহান্নামবাসীরা তার চারপাশে একত্রিত হবে ও তাকে লক্ষ্য করে বলবে, হে অমুক! তোমার এ কী দশা? তুমি না সর্বদা আমাদেরকে ভাল কাজের উপদেশ দিতে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে? তখন লোকটি বলবে, আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের উপদেশ দিতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম না। আমি তোমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজে সে কাজ করতাম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯ ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্নঃ বুখারী হা/৬৪৯৪ অনুযায়ী বর্তমান যুগের চতুর্মুখী ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে ইবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটানোই কি জান্নাত লাভের সর্বোত্তম পন্থা বলে গণ্য হবে না?
ANSWER
🎤 মুসলিম ব্যক্তি চতুর্মুখী ফেতনার মধ্য থেকে তার ঈমান ও দ্বীনকে রক্ষা করতে সক্ষম না হলে এবং নিরুপায় হয়ে মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে ইবাদাত-বন্দেগীতে সময় কাটিয়ে মারা গেলে রাসূল (ছাঃ)-এর ঘোষণা অনুযায়ী অবশ্যই তিনি জান্নাত লাভে ধন্য হবেন। কিন্তু সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন না করে মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করলে কিয়ামতের দিন তাকে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে। জনৈক ব্যক্তি এরূপ করতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) তাকে নিষেধ করে বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা গৃহে বসে ৭০ বছর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৮৩০)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট দো‘আ করবে কিন্তু তা কবুল করা হবে না’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০)।
প্রশ্নঃ হযরত আলী (রাঃ) স্বীয় খেলাফতকালে ইলাহ দাবী করায় কয়েকজন যিনদীক্বকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন মর্মে বক্তব্যটির কোন ভিত্তি আছে কি? যদি সত্য হয়, তবে বর্তমানে এরূপ করা কি শরী‘আতসম্মত?
 ANSWER

🎤 উক্ত বক্তব্য সঠিক (বুখারী হা/৩০১৭, ৬৯২২ তিরমিযী হা/১৪৫৮)। তারা ছিল ইহুদী থেকে আগত রাফেযী শী‘আ সাবাঈ গোষ্ঠীভুক্ত। তারা গোপনে মূর্তিপূজা করত। আলী (রাঃ) তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আপনি আমাদের রব, খালেক ও রাযেক (পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা ও রূযিদাতা)। তিনি তাদেরকে সাধ্যমত বুঝান, ধমকান ও হত্যা করার হুমকি দেন। এভাবে চতুর্থবারেও তারা তাদের ঘোষণায় অটল থাকলে এবং তওবা না করলে তিনি তাদেরকে ‘মুরতাদ’ হিসাবে এক বর্ণনায় এসেছে তাদেরকে প্রথমে হত্যা করেন ও পরে গর্তে ফেলে পুড়িয়ে দেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সরাসরি জীবন্ত গর্তে ফেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন (ফাৎহুল বারী দ্রঃ হা/৬৯২২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ ১২/২৮২)।
মুরতাদকে পুড়িয়ে হত্যা করার ব্যাপারে ওলামায়ে সালাফের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হযরত ওমর ও ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ পুড়িয়ে মারার বিপক্ষে মত প্রকাশ করেন। চাই সেটা কুফরীর কারণে হৌক কিংবা যুদ্ধ বা হত্যার বদলা হিসাবে হৌক। মুহাল্লাব বলেন, হাদীছে পুড়িয়ে মারার যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তা হ’ল করুণা বশে। অতঃপর পক্ষের দলীল হিসাবে রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক উরানীদের উত্তপ্ত লৌহ শলাকা দিয়ে চোখ পুড়িয়ে দেওয়া, হযরত আবুবকর (রাঃ) কর্তৃক ছাহাবীগণের সম্মুখে বিদ্রোহীদের আগুনে পুড়িয়ে মারা, খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) কর্তৃক একদল মুরতাদকে পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি ঘটনা পেশ করা হয় (ফাৎহুল বারী হা/৩০১৭-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ ৬/১৭৪)।
উপরোক্ত আলোচনায় দু’টি বিষয় প্রতিভাত হয় : (১) এধরনের যেকোন শাস্তি দায়িত্বশীল সরকার আদালতের মাধ্যমে দিতে পারে। অন্য কোন ব্যক্তি বা দল নয়। (২) পাপের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। ইসলামী দন্ডবিধি সকল যুগের জন্য প্রযোজ্য এবং কল্যাণকর। এটি মুমিনের জন্য পাপমোচনকারী এবং আখেরাতে উপকারী (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮)। সর্বোপরি এগুলি সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অন্যতম প্রধান উপায়।

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

হাদিস বিষয়ক

Post a Comment

0 Comments