▌করোনা ভাইরাস
.[এটি একটি আরবি নিবন্ধের অনুবাদ। নিবন্ধটির প্রণেতা সম্মানিত শাইখ ‘আল্লামাহ ড. ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায়, আমরা সম্পূর্ণ নিবন্ধের সরল বঙ্গানুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। – অনুবাদক]
সম্প্রতি লোকদের মজলিসে একটি রোগ নিয়ে খুব আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে, যে রোগকে লোকেরা ভয় পাচ্ছে, আর তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার এবং তাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে। যারা এসব নিয়ে আলোচনা করছে, তাদের কেউ কেউ ঠাট্টা ও রসিকতা করছে, আবার কেউ কেউ লোকদেরকে হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বিষয়টি বর্ণনা করছে। অনুরূপ আরও উদ্দেশ্য রয়েছে, যার ফলে এই ব্যাধিকে ঘিরে চলছে নানাবিধ আলোচনা। প্রকৃতপ্রস্তাবে সর্বক্ষণ ও সর্বাবস্থায় এবং প্রতিটি দুর্যোগ ও বিপদে মুসলিমের ওপর আবশ্যিক দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহকে আঁকড়ে ধরা। পাশাপাশি ওই দুর্যোগ সম্পর্কে আলোচনা, কিংবা তার চিকিৎসা-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে শার‘ঈ নীতিমালা, সংরক্ষিত মৌলনীতি এবং মহান আল্লাহর প্রতি ভীতি ও শঙ্কার ওপর ভিত্তি করে পথ চলা অত্যাবশ্যক।
অধুনা যে বিষয়টি মানবজীবনে অভাবনীয় গুরুত্বের রূপ পরিগ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কে এখানে ছয়টি পয়েন্টে আলোচনা করা হলো।
প্রথম পয়েন্ট:
সকল মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সে তাঁর মহান প্রতিপালককে আঁকড়ে ধরবে, তাঁর ওপর ভরসা করবে এবং এই বিশ্বাস রাখবে যে, সকল কিছু তাঁর ওপরই ন্যস্ত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ “আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন।” [সূরাহ তাগাবূন: ১১]
সকল বিষয় আল্লাহর হাতে রয়েছে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অধীনে রয়েছে। ফলে আল্লাহ যা চান, তাই সংঘটিত হয়। তিনি যা চান না, তা সংঘটিত হয় না। আর আল্লাহ ছাড়া রক্ষাকারীও কেউ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ مَن ذَا الَّذِي يَعْصِمُكُم مِّنَ اللَّهِ إِنْ أَرَادَ بِكُمْ سُوءًا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةً “বল, কে তোমাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন কিংবা তোমাদেরকে অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন?” [সূরাহ আহযাব: ১৭] মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ “আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তারা (আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকা হয়) কি সেই অনিষ্টতা দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে?” [সূরাহ যুমার: ৩৮]
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ “আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ উন্মুক্ত করলে কেউ তা রোধ করতে পারে না এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে কেউ তা উম্মুক্ত করতে পারে না।” [সূরাহ ফাত্বির: ২]
হাদীসে এসেছে, নাবী বলেছেন,وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ “জেনে রাখ যে, যদি সমস্ত উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (ভাগ্যলিপি) শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযী, হা/২৫১৬; সনদ: সাহীহ]
নাবীজী আরও বলেছেন, كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ “আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টিজগতের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৩; তাক্বদীর অধ্যায় (৪৭); পরিচ্ছেদ- ২] তিনি আরও বলেছেন, إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ: اكْتُبْ. قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ؟ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَىْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَة “নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। অতঃপর তাকে বলেন, ‘লিখ’। কলম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, ‘কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের (ঘটিতব্য) ভাগ্য লিখ।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৭০২; তিরমিযী, হা/২১৫৫; সনদ: সাহীহ]
প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো, আশা, ভরসা ও নির্ভর করে স্বীয় বিষয়কে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করা। সে স্বীয় প্রতিপালক ব্যতীত অন্য কারও কাছে নিজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করবে না। বিভিন্ন দুর্যোগ ও বিপর্যয় তার জন্য কেবল আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা ও তাঁকে আকড়ে ধরার মনোবলই বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ يَعْتَصِمْ بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ “আর যে আল্লাহকে আঁকড়ে ধরে, অবশ্যই সে সরল পথ প্রদর্শিত হবে।” [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০১]
দ্বিতীয় পয়েন্ট:
নিশ্চয় আল্লাহর নির্দেশসমূহ পালন করে এবং তাঁর নিষেধসমূহ বর্জন করে তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে আল্লাহকে হেফাজত করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। নাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে অসিয়ত করতে গিয়ে বলেছেন, “তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) হেফাজত কর, তাহলে আল্লাহও তোমাকে হেফাজত করবেন।” [তিরমিযী, হা/২৫১৬; সনদ: সাহীহ]
অতএব আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং তাঁর নিষেধ বর্জন করে আল্লাহর বিধানাবলিকে হেফাজত করা বান্দার নিরাপত্তা এবং আল্লাহ কর্তৃক দুনিয়া ও আখেরাতে বান্দার রক্ষণাবেক্ষণের একটি অন্যতম মাধ্যম। যদি সে কোনো দুর্যোগে পতিত হয় কিংবা তার ওপর বিপর্যয় আপতিত হয়, তাহলে সে তা আল্লাহর কাছেই সোপর্দ করবে। এ ব্যাপারে আমাদের নাবী বলেছেন, عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ ، وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَه “মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগোজার করে, আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৯; যুহদ ও রাক্বায়েক্ব অধ্যায় (৫৫); পরিচ্ছেদ- ১৩]
সুতরাং মুমিন তার সুখে-দুঃখে এবং সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততায় কল্যাণপ্রাপ্ত হয় এবং কল্যাণের দিকে ধাবিত হয়। বিষয়টি তেমনই, যেমনটি আমাদের নাবী বলেছেন, “মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না।” [প্রাগুক্ত]
·
তৃতীয় পয়েন্ট:
নিশ্চয় ইসলামী শরিয়ত মাধ্যম অবলম্বন করা এবং চিকিৎসার দিকে আহ্বান করাকে সমর্থন করে। চিকিৎসা করা ও সুস্থ হতে চাওয়া আল্লাহর ওপর ভরসা করার পরিপন্থি নয়। ইসলামী শরিয়ত যে চিকিৎসা ব্যবস্থা সমর্থন করে, তা দুই ধরনের চিকিৎসাকে শামিল করে। একটি প্রতিষেধক চিকিৎসা, যেটা রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই গ্রহণ করার হয়, আরেকটা সুস্থতা আনয়নকারী চিকিৎসা, যেটা রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে গ্রহণ করা হয়। দুটো ব্যবস্থার কথাই শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে। আর শরিয়তে চিকিৎসার সেসব নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে, যা মুসলিমের দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্য নিরাপত্তা ও সুস্থতা কার্যকর করবে। যে ব্যক্তি আল্লামাহ ইবনুল ক্বাইয়্যিম বিরচিত ‘আত্ব-ত্বিব্বুন নাবাউয়ী’ পড়বে, সে এ ব্যাপারে আশ্চর্যজনক কিছু বিষয় পেয়ে যাবে, যেগুলো ইসলামী শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে এবং রাসূলে কারীম থেকে বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিষেধক চিকিৎসার ব্যাপারেই আমাদের নাবী বলেছেন, مَنِ اصْطَبَحَ بِسَبْعِ تَمَرَاتٍ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سُمٌّ وَلاَ سِحْرٌ “যে ব্যক্তি ভোরবেলা সাতটি আজ্ওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, সে দিন বিষ কিংবা যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫৭৭৯]
নাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি উসমান বিন আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হাদীসে এসেছে, নাবী বলেছেন, مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُولُ فِى صَبَاحِ كُلِّ يَوْمٍ وَمَسَاءِ كُلِّ لَيْلَةٍ : بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ـ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ـ فَيَضُرُّهُ شَىْءٌ “প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দু‘আটি তিনবার করে পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না: “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুররু মা‘আসমিহি শাইয়ুন ফিল আরযি, ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।” (অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।)” [তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬৯; সনদ: হাসান সাহীহ]
নাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, مَنْ قَرَأَ بِالآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِى لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ “যদি কেউ সূরাহ বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫০৫১] অর্থাৎ, যাবতীয় বিপদ, আপদ ও অনিষ্ট থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে।
‘আব্দুল্লাহ বিন খুবাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, তিনি ﷺ বলেছেন, خَرَجْنَا فِى لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى لَنَا - قَالَ - فَأَدْرَكْتُهُ فَقَالَ : قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ : قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا. قَالَ : قُلْ. قُلْتُ مَا أَقُولُ قَالَ : قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِى وَتُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ “এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামাজ আদায় করানোর জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তার দেখা পেলে তিনি বললেন, বল। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুনরায় বললেন, বল। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বল। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি প্রতি দিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরাহ কুল হুআল্লাহু আহাদ (সূরাহ ইখলাস) ও আল-মু‘আওবিযাতাইন (সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস) পাঠ করবে, আর তা প্রত্যেকটি ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।” [তিরমিযী, হা/৩৫৭৫; সনদ: হাসান]
নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র হাদীসে এসেছে, أنّه كان لا يدع هـؤلاء الدّعوات حين يصبح وحين يمسي: اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِى دِينِى وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِى وَمَالِى ، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِى، وَآمِنْ رَوْعَاتِى ، اللَّهُمَّ احْفَظْنِى مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي “রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু‘আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হেফাযাত করুন আমার সম্মুখ থেকে, আমার পিছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপর দিক থেকে। হে আল্লাহ, আমি আপনার মর্যাদার ওয়াসিলায় মাটিতে ধ্বসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।” [আবূ দাঊদ, হা/৫০৭৪; সনদ: সাহীহ]
এই দু‘আয় রয়েছে বান্দার জন্য চতুর্দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা এবং পরিপূর্ণ হেফাজত।
আর সুস্থতা আনয়নকারী চিকিৎসাক্ষেত্রে নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে মহান দিকনির্দেশনা এবং নানাবিধ আরোগ্য। যেগুলো তাঁর ﷺ সুন্নাতে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো উল্লেখ করলে কিংবা সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলে কলেবর বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পেতে ইবনুল ক্বাইয়্যিম বিরচিত যাদুল মা‘আদ গ্রন্থ দেখা যেতে পারে।
চতুর্থ পয়েন্ট:
নিশ্চয় মিথ্যা রটনার সাথে চালিত না হওয়া সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। কেননা এক্ষেত্রে কতিপয় মানুষ কখনো কখনো এমন কিছু বিষয় ছড়িয়ে বেড়ায়, যেগুলোর কোনো শুদ্ধতা ও বাস্তবতা নেই। ফলে লোকদের মাঝে এমন বিষয়ে ডর, ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি ও বিদ্যমানতা নেই। তাই বিভিন্ন মিথ্যা রটনার সাথে চালিত হওয়া কোনো মুসলিমের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা তার এরূপ কর্ম পরিপূর্ণ ইমান, পূর্ণাঙ্গ ইয়াক্বীন (আস্থা) এবং স্বীয় প্রভুর ওপর যথার্থ ভরসার মতো বিষয়াদিকে ত্রুটিপূর্ণ করে।
·পঞ্চম পয়েন্ট:
যেসব দুর্যোগ মুসলিমের ওপর আপতিত হয়—চাই তা তার সুস্থতার ক্ষেত্রে হোক, বা তার পরিবার ও সন্তানসন্ততির ক্ষেত্রে হোক, অথবা তার ধনসম্পদ ও ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে হোক—সে যদি ধৈর্যের সাথে এবং সওয়াবের আশায় সেগুলোকে গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই তা মহান আল্লাহর নিকট তার জন্য মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ. الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ. أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ “আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরীক্ষা করব; এবং সেসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো। যাদের ওপর কোনো বিপদ আপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের ওপর তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী।” [সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৫-১৫৭]
বস্তুত মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করেন, যাতে করে সে তার অনুযোগ, বিনয়, প্রার্থনা, ধৈর্য এবং আল্লাহর ফায়সালার ওপর নিজের তুষ্টি জানান দিতে পারে। বান্দার ওপর যখন (তাকে) পরীক্ষাকারী দুর্যোগ আপতিত হয়, তখন মহান আল্লাহ বান্দাকে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি তো বান্দার চোখের চোরাচাহনি এবং অন্তরে লুকায়িত বিষয় সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। ফলে তিনি প্রত্যেক বান্দার নিয়ত ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেন। একারণে সে যদি কোনো ব্যাধি বা দুর্যোগ বা সম্পদহানি প্রভৃতির মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত হয়, তাহলে তার কর্তব্য হলো—এর জন্য আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা এবং ধৈর্য ও তুষ্টি নিয়ে বিপদের মুখোমুখি হওয়া, যাতে করে সে ধৈর্যশীলদের প্রতিদান নিয়ে সফলকাম হতে পারে। পক্ষান্তরে যাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা হয়, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, যাতে করে সে কৃতজ্ঞদের প্রতিদান নিয়ে সফলকাম হতে পারে।
ষষ্ঠ পয়েন্ট:
নিশ্চয় সবেচেয়ে বড়ো দুর্যোগ হলো দ্বীনের ব্যাপারে আপতিত দুর্যোগ। এই দুর্যোগ দুনিয়া ও আখেরাতের সবচেয়ে বড়ো দুর্যোগ। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্ষতি, যাতে সামান্য লাভও নেই, এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ের বঞ্চনা, যাতে কোনো আশা নেই। সুতরাং মুসলিম তার স্বাস্থ্য কিংবা সম্পদের ক্ষেত্রে দুর্যোগে পতিত হলে যখন এই বিষয়টি স্মরণ করে, তখন সে স্বীয় দ্বীনের নিরাপত্তার দরুন আল্লাহর স্তুতি বর্ণনা করে।
বাইহাক্বী শু‘আবুল ঈমান গ্রন্থে (হা/৯৫০৭) ক্বাদ্বী শুরাইহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ক্বাদ্বী শুরাইহ) বলেছেন, إني لأصاب بالمصيبة فأحمد الله عليها أربع مرات: أحمده إذ لم تكن أعظم مما هي , وأحمده إذ رزقني الصبر عليها , وأحمده إذ وفقني للاسترجاع لما أرجو فيه من الثواب , وأحمده إذ لم يجعلها في ديني “যখন আমি দুর্যোগে আক্রান্ত হই, তখন চারবার আল্লাহর প্রশংসা করি। এরচেয়ে বড়ো দুর্যোগে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য তাঁর প্রশংসা করি। তিনি যখন আমাকে উক্ত দুর্যোগের ওপর ধৈর্যধারণের তৌফিক দেন, তখন তাঁর প্রশংসা করি। তিনি যখন আমাকে এই বিপদ থেকে উত্তরণ কামনার তৌফিক দেন, তখন তাঁর প্রশংসা করি, যেহেতু আমি এতে সওয়াব প্রত্যাশা করি। আর যখন দেখি, তিনি এই দুর্যোগ আমার দ্বীনের ব্যাপারে দেননি, তখন আমি তাঁর প্রশংসা করি।”
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সবাইকে তাঁর বিধিবিধান সংরক্ষণ করার তৌফিক দেন, আর আমাদের দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার-পরিজন ও সম্পদে ক্ষমা ও নিরাপত্তার প্রদানের মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, বান্দার নিকটবর্তী এবং বান্দার ডাকে সাড়াদানকারী।
তথ্যসূত্র:
https://al-badr.net/ detail/Ox1b6tLIBZ7c।
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/ SunniSalafiAthari
.[এটি একটি আরবি নিবন্ধের অনুবাদ। নিবন্ধটির প্রণেতা সম্মানিত শাইখ ‘আল্লামাহ ড. ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায়, আমরা সম্পূর্ণ নিবন্ধের সরল বঙ্গানুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। – অনুবাদক]
সম্প্রতি লোকদের মজলিসে একটি রোগ নিয়ে খুব আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে, যে রোগকে লোকেরা ভয় পাচ্ছে, আর তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার এবং তাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে। যারা এসব নিয়ে আলোচনা করছে, তাদের কেউ কেউ ঠাট্টা ও রসিকতা করছে, আবার কেউ কেউ লোকদেরকে হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বিষয়টি বর্ণনা করছে। অনুরূপ আরও উদ্দেশ্য রয়েছে, যার ফলে এই ব্যাধিকে ঘিরে চলছে নানাবিধ আলোচনা। প্রকৃতপ্রস্তাবে সর্বক্ষণ ও সর্বাবস্থায় এবং প্রতিটি দুর্যোগ ও বিপদে মুসলিমের ওপর আবশ্যিক দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহকে আঁকড়ে ধরা। পাশাপাশি ওই দুর্যোগ সম্পর্কে আলোচনা, কিংবা তার চিকিৎসা-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে শার‘ঈ নীতিমালা, সংরক্ষিত মৌলনীতি এবং মহান আল্লাহর প্রতি ভীতি ও শঙ্কার ওপর ভিত্তি করে পথ চলা অত্যাবশ্যক।
অধুনা যে বিষয়টি মানবজীবনে অভাবনীয় গুরুত্বের রূপ পরিগ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কে এখানে ছয়টি পয়েন্টে আলোচনা করা হলো।
প্রথম পয়েন্ট:
সকল মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সে তাঁর মহান প্রতিপালককে আঁকড়ে ধরবে, তাঁর ওপর ভরসা করবে এবং এই বিশ্বাস রাখবে যে, সকল কিছু তাঁর ওপরই ন্যস্ত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ “আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন।” [সূরাহ তাগাবূন: ১১]
সকল বিষয় আল্লাহর হাতে রয়েছে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অধীনে রয়েছে। ফলে আল্লাহ যা চান, তাই সংঘটিত হয়। তিনি যা চান না, তা সংঘটিত হয় না। আর আল্লাহ ছাড়া রক্ষাকারীও কেউ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُلْ مَن ذَا الَّذِي يَعْصِمُكُم مِّنَ اللَّهِ إِنْ أَرَادَ بِكُمْ سُوءًا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةً “বল, কে তোমাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন কিংবা তোমাদেরকে অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন?” [সূরাহ আহযাব: ১৭] মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ “আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তারা (আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকা হয়) কি সেই অনিষ্টতা দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে?” [সূরাহ যুমার: ৩৮]
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ “আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ উন্মুক্ত করলে কেউ তা রোধ করতে পারে না এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে কেউ তা উম্মুক্ত করতে পারে না।” [সূরাহ ফাত্বির: ২]
হাদীসে এসেছে, নাবী বলেছেন,وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ “জেনে রাখ যে, যদি সমস্ত উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (ভাগ্যলিপি) শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযী, হা/২৫১৬; সনদ: সাহীহ]
নাবীজী আরও বলেছেন, كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ “আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টিজগতের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৩; তাক্বদীর অধ্যায় (৪৭); পরিচ্ছেদ- ২] তিনি আরও বলেছেন, إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ: اكْتُبْ. قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ؟ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَىْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَة “নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। অতঃপর তাকে বলেন, ‘লিখ’। কলম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, ‘কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের (ঘটিতব্য) ভাগ্য লিখ।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৭০২; তিরমিযী, হা/২১৫৫; সনদ: সাহীহ]
প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো, আশা, ভরসা ও নির্ভর করে স্বীয় বিষয়কে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করা। সে স্বীয় প্রতিপালক ব্যতীত অন্য কারও কাছে নিজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করবে না। বিভিন্ন দুর্যোগ ও বিপর্যয় তার জন্য কেবল আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা ও তাঁকে আকড়ে ধরার মনোবলই বৃদ্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ يَعْتَصِمْ بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ “আর যে আল্লাহকে আঁকড়ে ধরে, অবশ্যই সে সরল পথ প্রদর্শিত হবে।” [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১০১]
দ্বিতীয় পয়েন্ট:
নিশ্চয় আল্লাহর নির্দেশসমূহ পালন করে এবং তাঁর নিষেধসমূহ বর্জন করে তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে আল্লাহকে হেফাজত করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। নাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে অসিয়ত করতে গিয়ে বলেছেন, “তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) হেফাজত কর, তাহলে আল্লাহও তোমাকে হেফাজত করবেন।” [তিরমিযী, হা/২৫১৬; সনদ: সাহীহ]
অতএব আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং তাঁর নিষেধ বর্জন করে আল্লাহর বিধানাবলিকে হেফাজত করা বান্দার নিরাপত্তা এবং আল্লাহ কর্তৃক দুনিয়া ও আখেরাতে বান্দার রক্ষণাবেক্ষণের একটি অন্যতম মাধ্যম। যদি সে কোনো দুর্যোগে পতিত হয় কিংবা তার ওপর বিপর্যয় আপতিত হয়, তাহলে সে তা আল্লাহর কাছেই সোপর্দ করবে। এ ব্যাপারে আমাদের নাবী বলেছেন, عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ ، وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَه “মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগোজার করে, আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৯; যুহদ ও রাক্বায়েক্ব অধ্যায় (৫৫); পরিচ্ছেদ- ১৩]
সুতরাং মুমিন তার সুখে-দুঃখে এবং সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততায় কল্যাণপ্রাপ্ত হয় এবং কল্যাণের দিকে ধাবিত হয়। বিষয়টি তেমনই, যেমনটি আমাদের নাবী বলেছেন, “মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না।” [প্রাগুক্ত]
·
তৃতীয় পয়েন্ট:
নিশ্চয় ইসলামী শরিয়ত মাধ্যম অবলম্বন করা এবং চিকিৎসার দিকে আহ্বান করাকে সমর্থন করে। চিকিৎসা করা ও সুস্থ হতে চাওয়া আল্লাহর ওপর ভরসা করার পরিপন্থি নয়। ইসলামী শরিয়ত যে চিকিৎসা ব্যবস্থা সমর্থন করে, তা দুই ধরনের চিকিৎসাকে শামিল করে। একটি প্রতিষেধক চিকিৎসা, যেটা রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই গ্রহণ করার হয়, আরেকটা সুস্থতা আনয়নকারী চিকিৎসা, যেটা রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে গ্রহণ করা হয়। দুটো ব্যবস্থার কথাই শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে। আর শরিয়তে চিকিৎসার সেসব নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে, যা মুসলিমের দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্য নিরাপত্তা ও সুস্থতা কার্যকর করবে। যে ব্যক্তি আল্লামাহ ইবনুল ক্বাইয়্যিম বিরচিত ‘আত্ব-ত্বিব্বুন নাবাউয়ী’ পড়বে, সে এ ব্যাপারে আশ্চর্যজনক কিছু বিষয় পেয়ে যাবে, যেগুলো ইসলামী শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে এবং রাসূলে কারীম থেকে বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিষেধক চিকিৎসার ব্যাপারেই আমাদের নাবী বলেছেন, مَنِ اصْطَبَحَ بِسَبْعِ تَمَرَاتٍ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سُمٌّ وَلاَ سِحْرٌ “যে ব্যক্তি ভোরবেলা সাতটি আজ্ওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, সে দিন বিষ কিংবা যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫৭৭৯]
নাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি উসমান বিন আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হাদীসে এসেছে, নাবী বলেছেন, مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُولُ فِى صَبَاحِ كُلِّ يَوْمٍ وَمَسَاءِ كُلِّ لَيْلَةٍ : بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ـ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ـ فَيَضُرُّهُ شَىْءٌ “প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দু‘আটি তিনবার করে পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না: “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুররু মা‘আসমিহি শাইয়ুন ফিল আরযি, ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।” (অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।)” [তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬৯; সনদ: হাসান সাহীহ]
নাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, مَنْ قَرَأَ بِالآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِى لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ “যদি কেউ সূরাহ বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫০৫১] অর্থাৎ, যাবতীয় বিপদ, আপদ ও অনিষ্ট থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে।
‘আব্দুল্লাহ বিন খুবাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, তিনি ﷺ বলেছেন, خَرَجْنَا فِى لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى لَنَا - قَالَ - فَأَدْرَكْتُهُ فَقَالَ : قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ : قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا. قَالَ : قُلْ. قُلْتُ مَا أَقُولُ قَالَ : قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِى وَتُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ “এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামাজ আদায় করানোর জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তার দেখা পেলে তিনি বললেন, বল। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুনরায় বললেন, বল। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বল। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি প্রতি দিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরাহ কুল হুআল্লাহু আহাদ (সূরাহ ইখলাস) ও আল-মু‘আওবিযাতাইন (সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস) পাঠ করবে, আর তা প্রত্যেকটি ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।” [তিরমিযী, হা/৩৫৭৫; সনদ: হাসান]
নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র হাদীসে এসেছে, أنّه كان لا يدع هـؤلاء الدّعوات حين يصبح وحين يمسي: اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِى دِينِى وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِى وَمَالِى ، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِى، وَآمِنْ رَوْعَاتِى ، اللَّهُمَّ احْفَظْنِى مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي “রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু‘আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হেফাযাত করুন আমার সম্মুখ থেকে, আমার পিছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপর দিক থেকে। হে আল্লাহ, আমি আপনার মর্যাদার ওয়াসিলায় মাটিতে ধ্বসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।” [আবূ দাঊদ, হা/৫০৭৪; সনদ: সাহীহ]
এই দু‘আয় রয়েছে বান্দার জন্য চতুর্দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা এবং পরিপূর্ণ হেফাজত।
আর সুস্থতা আনয়নকারী চিকিৎসাক্ষেত্রে নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে মহান দিকনির্দেশনা এবং নানাবিধ আরোগ্য। যেগুলো তাঁর ﷺ সুন্নাতে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো উল্লেখ করলে কিংবা সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলে কলেবর বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পেতে ইবনুল ক্বাইয়্যিম বিরচিত যাদুল মা‘আদ গ্রন্থ দেখা যেতে পারে।
চতুর্থ পয়েন্ট:
নিশ্চয় মিথ্যা রটনার সাথে চালিত না হওয়া সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। কেননা এক্ষেত্রে কতিপয় মানুষ কখনো কখনো এমন কিছু বিষয় ছড়িয়ে বেড়ায়, যেগুলোর কোনো শুদ্ধতা ও বাস্তবতা নেই। ফলে লোকদের মাঝে এমন বিষয়ে ডর, ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি ও বিদ্যমানতা নেই। তাই বিভিন্ন মিথ্যা রটনার সাথে চালিত হওয়া কোনো মুসলিমের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা তার এরূপ কর্ম পরিপূর্ণ ইমান, পূর্ণাঙ্গ ইয়াক্বীন (আস্থা) এবং স্বীয় প্রভুর ওপর যথার্থ ভরসার মতো বিষয়াদিকে ত্রুটিপূর্ণ করে।
·পঞ্চম পয়েন্ট:
যেসব দুর্যোগ মুসলিমের ওপর আপতিত হয়—চাই তা তার সুস্থতার ক্ষেত্রে হোক, বা তার পরিবার ও সন্তানসন্ততির ক্ষেত্রে হোক, অথবা তার ধনসম্পদ ও ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে হোক—সে যদি ধৈর্যের সাথে এবং সওয়াবের আশায় সেগুলোকে গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই তা মহান আল্লাহর নিকট তার জন্য মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ. الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ. أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ “আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরীক্ষা করব; এবং সেসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো। যাদের ওপর কোনো বিপদ আপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের ওপর তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী।” [সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৫-১৫৭]
বস্তুত মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করেন, যাতে করে সে তার অনুযোগ, বিনয়, প্রার্থনা, ধৈর্য এবং আল্লাহর ফায়সালার ওপর নিজের তুষ্টি জানান দিতে পারে। বান্দার ওপর যখন (তাকে) পরীক্ষাকারী দুর্যোগ আপতিত হয়, তখন মহান আল্লাহ বান্দাকে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি তো বান্দার চোখের চোরাচাহনি এবং অন্তরে লুকায়িত বিষয় সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। ফলে তিনি প্রত্যেক বান্দার নিয়ত ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেন। একারণে সে যদি কোনো ব্যাধি বা দুর্যোগ বা সম্পদহানি প্রভৃতির মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত হয়, তাহলে তার কর্তব্য হলো—এর জন্য আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা এবং ধৈর্য ও তুষ্টি নিয়ে বিপদের মুখোমুখি হওয়া, যাতে করে সে ধৈর্যশীলদের প্রতিদান নিয়ে সফলকাম হতে পারে। পক্ষান্তরে যাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা হয়, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, যাতে করে সে কৃতজ্ঞদের প্রতিদান নিয়ে সফলকাম হতে পারে।
ষষ্ঠ পয়েন্ট:
নিশ্চয় সবেচেয়ে বড়ো দুর্যোগ হলো দ্বীনের ব্যাপারে আপতিত দুর্যোগ। এই দুর্যোগ দুনিয়া ও আখেরাতের সবচেয়ে বড়ো দুর্যোগ। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্ষতি, যাতে সামান্য লাভও নেই, এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ের বঞ্চনা, যাতে কোনো আশা নেই। সুতরাং মুসলিম তার স্বাস্থ্য কিংবা সম্পদের ক্ষেত্রে দুর্যোগে পতিত হলে যখন এই বিষয়টি স্মরণ করে, তখন সে স্বীয় দ্বীনের নিরাপত্তার দরুন আল্লাহর স্তুতি বর্ণনা করে।
বাইহাক্বী শু‘আবুল ঈমান গ্রন্থে (হা/৯৫০৭) ক্বাদ্বী শুরাইহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ক্বাদ্বী শুরাইহ) বলেছেন, إني لأصاب بالمصيبة فأحمد الله عليها أربع مرات: أحمده إذ لم تكن أعظم مما هي , وأحمده إذ رزقني الصبر عليها , وأحمده إذ وفقني للاسترجاع لما أرجو فيه من الثواب , وأحمده إذ لم يجعلها في ديني “যখন আমি দুর্যোগে আক্রান্ত হই, তখন চারবার আল্লাহর প্রশংসা করি। এরচেয়ে বড়ো দুর্যোগে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য তাঁর প্রশংসা করি। তিনি যখন আমাকে উক্ত দুর্যোগের ওপর ধৈর্যধারণের তৌফিক দেন, তখন তাঁর প্রশংসা করি। তিনি যখন আমাকে এই বিপদ থেকে উত্তরণ কামনার তৌফিক দেন, তখন তাঁর প্রশংসা করি, যেহেতু আমি এতে সওয়াব প্রত্যাশা করি। আর যখন দেখি, তিনি এই দুর্যোগ আমার দ্বীনের ব্যাপারে দেননি, তখন আমি তাঁর প্রশংসা করি।”
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সবাইকে তাঁর বিধিবিধান সংরক্ষণ করার তৌফিক দেন, আর আমাদের দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার-পরিজন ও সম্পদে ক্ষমা ও নিরাপত্তার প্রদানের মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, বান্দার নিকটবর্তী এবং বান্দার ডাকে সাড়াদানকারী।
তথ্যসূত্র:
https://al-badr.net/
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/
0 Comments