▌কালিমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ:
অর্থ, শর্ত ও মাহাত্ম্য
মূল: ‘আল্লামাহ ড. ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ)·
তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো সর্বপ্রথম ওয়াজিব। এই কালিমাহ মুসলিম হওয়ার সোপানস্বরূপ। বান্দার সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে এই তাওহীদী বাক্যটির ওপর। কারণ এই বাক্যটি বাস্তবায়নের জন্যই মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমানে অসংখ্য মুসলিম দাবিদার ব্যক্তি মুখে এই কালিমাহ পাঠ করলেও তা কথা ও কাজে বাস্তবায়ন করে না। অনেকে তো এর উদ্দিষ্ট অর্থ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নয়। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, অত্র নিবন্ধে নিবন্ধক হিসেবে উল্লিখিত শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব আল বদর (হাফিযাহুল্লাহ) এর গ্রন্থ থেকে শুধু শর্তের আলোচনা নেওয়া হয়েছে। বাকি আলোচনা অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত হয়েছে।
·
মাহাত্ম্য:
তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অনেক গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য আছে। তার মধ্যে কতিপয় নিম্নে উল্লিখিত হলো।
১. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান ইসলামের সবচেয়ে বড়ো রুকন (খুঁটি)। এই কালিমাহর সাক্ষ্যদান ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَان “ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল—এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ সম্পাদন করা এবং ৫. রমজানের রোজা পালন করা।” [সাহীহ বুখারী, হা/৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১৬]
২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সর্বপ্রথম ওয়াজিব। সকল আমলের ওপরে রয়েছে এর গুরুত্ব। যেহেতু এর রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও বিরাট মাহাত্ম্য। এই কালিমাহর দিকেই সবার আগে দা‘ওয়াত দিতে হয়। নাবী ﷺ মু‘আয বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّه “তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছে যারা কিতাবধারী (ইহুদি-খ্রিষ্টান)। সুতরাং, তাদেরকে আহ্বান জানাবে এ সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১৯; মূল শব্দ (টেক্সট) মুসলিমের]৩. সকল রাসূলের দা‘ওয়াতের মূল বিষয় ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দিকে আহ্বান। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ “আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি ওহি (প্রত্যাদেশ) করিনি যে, ‘আমি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। কাজেই তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো’।” [সূরাহ আম্বিয়া: ২৫]
৪. স্বয়ং আল্লাহ, ফেরেশতাবর্গ এবং জ্ঞানীগণ এই কালিমাহর সাক্ষ্য দেন। মহান আল্লাহ বলেন, شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং ফেরেশতাবর্গ ও ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও (সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,) তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই; তিনি মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী।” [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১৯]
৫. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক সফলকাম ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। নাবী ﷺ দা‘ওয়াত দিয়ে লোকদেরকে বলতেন, قُوْلُوْا لَا إلٰه إِلَّا الله تُفْلِحُوْا “তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বল, সফলকাম হবে।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০২২; সাহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হা/১৫৯; সনদ: সাহীহ]
·
অর্থ:সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি ‘আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, আমাদের সম্মানিত পিতা, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্যদানের অর্থ: একথা বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ‘ইবাদতের হকদার নয়। এটা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। অতএব, ‘লা ইলাহা’ অংশটুকুতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের উপাসনার হকদার হওয়াকে অস্বীকার করা হয়েছে। আর ‘ইল্লাল্লাহ’ অংশটুকুতে একমাত্র আল্লাহকেই সকল উপাসনার হকদার সাব্যস্ত করা হয়েছে। সর্বোপরি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সঠিক অর্থ হলো—‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই’।
‘বিহাক্বক্বিন’ শব্দটিকে উহ্য হিসেবে ‘লা’ এর খবর (বিধেয়) মানা আবশ্যক। ‘মাউজূদুন’ শব্দটিকে ‘লা’ এর খবর (বিধেয়) মানা বৈধ হবে না। কারণ তা বাস্তবতার বিপরীত। পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত অসংখ্য উপাস্যের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। (যদি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ করি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,) তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে, তা মূলত তাঁরই ইবাদতের শামিল! এটা সবচেয়ে বড়ো বাতিল বিশ্বাস। এটা ওয়াহদাতুল উজূদে বিশ্বাসী তথা সর্বেশ্বরবাদীদের ‘আক্বীদাহ (বিশ্বাস)। আর সর্বেশ্বরবাদীরাই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড়ো কাফির।
এই কালিমাহর অনেক ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। তার মধ্যে নিম্নে কিছু উল্লিখিত হলো।
(ক) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। এটা বাতিল অর্থ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় সত্য বা মিথ্যা যারই ইবাদত করা হয় সেই হলো আল্লাহ! যেমনটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।
(খ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো স্রষ্টা নেই। এটা কালিমাহর আংশিক অর্থ। কিন্তু এ কালিমাহ দিয়ে শুধু এ উদ্দেশ্য করা হয়নি। কারণ, এর মাধ্যমে শুধু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ্ তথা প্রভূত্বের ক্ষেত্রে একত্ববাদ সাব্যস্ত করা হয়। আর শুধু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা তাওহীদবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এটা মুশরিকদের তাওহীদ। [রাসূল ﷺ এর যুগের মুশরিকরা এই তাওহীদকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তাদেরকে মু’মিন বলে গণ্য করা হয়নি, বরং তারা কাফির হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। (সূরাহ মু’মিনূন: ৮৬-৮৯) – অনুবাদক।]
(গ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই। এটাও উক্ত কালিমাহর আংশিক অর্থ। এটা এ কালিমাহর প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। কারণ কেউ যদি বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহকে এক বলে গণ্য করে, সেই সাথে গাইরুল্লাহকে (আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কাউকে) আহ্বান করে এবং গাইরুল্লাহর জন্য ইবাদতের কিয়দংশ নির্ধারণ করে, তবে সে তাওহীদবাদী নয়। উপরিউক্ত ব্যাখ্যাগুলো বাতিল অথবা অপূর্ণ। প্রচলিত কিছু বইয়ে এ সকল ভ্রান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বলে আমরা এ বিষয়ে (লোকদেরকে) সতর্ক করলাম।
ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ এবং মুহাক্বক্বিক্ব (গবেষক) ‘আলিমগণের নিকটে এ কালিমাহর সঠিক ব্যাখ্যা হলো—“লা মা‘বূদা বিহাক্বক্বিন ইল্লাল্লাহ্” তথা ‘আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই’। যেমনটি পূর্বে গত হয়ে গেছে।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ; পৃষ্ঠা: ৪৫-৪৬; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
·
শর্তাবলি:মুসলিমের জন্য এটা জানা ওয়াজিব যে, শুধুমাত্র মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করলে তা তার কথকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে না। বরং আবশ্যিকভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র হক (অধিকার/দাবি) ও ফারয (কর্তব্য) আদায় করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত তার শর্তসমূহও পূরণ করতে হবে। সকল মুসলিমই জানে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়—এমন প্রত্যেক ইবাদত ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হবে না, যতক্ষণ না তার শর্তসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা হচ্ছে। তাই নামাজ তার নির্দিষ্ট শর্তাবলি ব্যতিরেকে কবুল হয় না, হজ তার নির্দিষ্ট শর্তাবলি ছাড়া কবুল হয় না। সমস্ত ইবাদত কুরআন-সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট শর্ত ছাড়া কবুল হয় না। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কবুল করা হবে না, যতক্ষণ না বান্দা কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞাত কালিমাহর শর্তাবলি পূরণ করছে।
আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্তাবলির প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি এবং সেগুলো সংরক্ষণ করার আবশ্যকিয়তার প্রতি ইশারা করেছেন। তাঁরা ইঙ্গিত করেছেন, এসব ছাড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ গৃহীত হবে না। যেমন:
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। একদা তাঁকে বলা হলো, ﺇﻥ ﻧﺎﺳﺎً ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﻓﺄﺩَّﻯ ﺣﻘﻬﺎ ﻭﻓﺮﺿﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ “লোকেরা বলছে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে সে জান্নাতে যাবে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং তার হক ও ফরজসমূহ আদায় করবে, সে জান্নাতে যাবে।”
প্রসিদ্ধ আরব কবি ফারাযদাক্ব স্বীয় স্ত্রীকে দাফন করছিলেন, তখন হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে বলেন, ﻣﺎ ﺃﻋﺪﺩﺕَ ﻟﻬﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟ ﻗﺎﻝ : ﺷﻬﺎﺩﺓ ﺃﻥ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﻣﻨﺬ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺳﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ : ﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟﻌُﺪﺓ، ﻟﻜﻦَّ ﻟـِ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﺷﺮﻭﻃﺎً، ﻓﺈﻳﺎﻙ ﻗﺬﻑَ ﺍﻟﻤﺤﺼﻨﺎﺕ “এ দিনের জন্য কী প্রস্তুত করেছ?” সে বলল, ‘সত্তর বছর যাবৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যকে (শাহাদাহ) প্রস্তুত করছি।’ হাসান বাস্বরী বললেন, “চমৎকার প্রস্তুতি! কিন্তু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কতিপয় শর্ত রয়েছে। সুতরাং, সাবধান! সতী-সাধ্বী নারীকে কখনো অপবাদ দিবে না।”
ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, যে তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, أَلَيْسَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلاَّ لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ وَإِلاَّ لَمْ يُفْتَحْ لَكَ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে প্রত্যেক চাবির দাঁত রয়েছে, তুমি যদি দাঁত বিশিষ্ট চাবি নিয়ে আস, তবে তোমার জন্য তা (জান্নাতের দরজা) খোলা হবে। অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না।” তিনি দাঁত বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্তের দিকে ইশারা করেছেন। [উপরিউক্ত তিনটি আসারই হাফিয ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর “কালিমাতুল ইখলাস” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। দ্র.: ইবনু রাজাব আল হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ), কালিমাতুল ইখলাসি ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা; পৃষ্ঠা: ১৪; আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৩৯৭ হিজরি (৪র্থ প্রকাশ)।]
কুরআন ও সুন্নাহ অনুসন্ধান শেষে ‘আলিমগণের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, সাতটি শর্ত ব্যতীত ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ গ্রহণযোগ্য নয়। সেগুলো হচ্ছে—
১. কালিমাহর অর্থ জানা। অর্থাৎ, কালিমাহর মধ্যে কী অস্বীকার ও কী সাব্যস্ত করা হয়েছে তা জানা, যা তার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতার বিপরীত।
২. কালিমাহর মধ্যে যা সাব্যস্ত করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, যা কালিমাহ সম্পর্কে সংশয় ও সন্দেহ পোষণ করার বিপরীত।
৩. কালিমাহর প্রতি পূর্ণ ইখলাস (একনিষ্ঠতা/বিশুদ্ধতা) প্রদর্শন করা, যা তার অর্থ ও দাবি বাস্তবায়ন করার সময় শির্ক ও রিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিপরীত।
৪. কালিমাহকে মনে-প্রাণে সত্য হিসেবে জানা, যা তার প্রতি মিথ্যারোপ করার বিপরীত।
৫. কালিমাহয় সাব্যস্ত সত্তা (আল্লাহ) ও তাঁর শরিয়তকে ভালোবাসা, যা তাঁর প্রতি ও তাঁর শরিয়তের প্রতি কোনো প্রকার ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার বিপরীত।
৬. কালিমাহর অর্থ ও দাবির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, যা তার অর্থ ও দাবির প্রতি অবাধ্যতার বিপরীত।
৭. কালিমাহর অর্থ ও দাবি সাদরে গ্রহণ করা, যা তার অর্থ ও দাবির বাস্তবায়নকে প্রত্যাখ্যান করার বিপরীত।
কতক ‘আলিম এই সাতটি শর্তকে একটি পঙ্ক্তির মধ্যে একত্রিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন,
ﻋِﻠْﻢٌ ﻳَﻘِﻴﻦٌ ﻭَﺇِﺧْـﻼَﺹٌ ﻭَﺻِﺪْﻗُﻚَ ﻣَﻊَ ~ ﻣَﺤَﺒَّﺔٍ ﻭَﺍِﻧْﻘِﻴَﺎﺩٍ ﻭَﺍﻟﻘَﺒُﻮﻝِ ﻟَﻬَﺎ
“জ্ঞান, দৃঢ় বিশ্বাস, ইখলাস, আর সত্যবাদিতা,
সাথে আছে ভালোবাসা, অনুসরণ ও গ্রহণ করা।”
আমরা কুরআন ও হাদীসের কিছু দলিল উল্লেখপূর্বক সংক্ষেপে এই প্রত্যেকটি শর্তের উদ্দেশ্য বিশদভাবে জানব।
·প্রথম শর্ত: নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় দিক নিরূপণ করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র উদ্দিষ্ট অর্থ সম্পর্কে জানা, যা তার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতা তথা না জানার বিপরীত। আর এটা এভাবে হবে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক জানবে—এই কালিমাহ আল্লাহ ব্যতীত যাবতীয় উপাস্যের জন্য সকল প্রকার ইবাদতকে নাকচ করে এবং এক আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, আর (সবকিছুর জন্য) আমরা কেবল তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরাহ ফাতিহাহ: ৫) অর্থাৎ, আমরা তোমারই ইবাদত করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করি না। আর আমরা তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না।
মহান আল্লাহ বলেছেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ “সুতরাং জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই।” (সূরাহ মুহাম্মাদ: ১৯) মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ “আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, তারা সুপারিশের অধিকারী নয়, তবে সে ব্যতীত যে সজ্ঞানে (জেনেশুনে) সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” (সূরাহ যুখরুফ: ৮৬)
মুফাসসিরগণ বলেছেন, তবে সে ব্যতীত, যে সজ্ঞানে (জেনেশুনে) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেয়। অর্থাৎ, তারা তাদের জবানে ও অন্তরে যার সাক্ষ্য দেয়, তার অর্থ সম্পর্কে তারা জানে। সাহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ “যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যুবরণ করল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৬) নাবী ﷺ এখানে ‘ইলমকে শর্ত করলেন।
·
দ্বিতীয় শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে, যাতে কোনো সন্দেহ সংশয় থাকবে না। অর্থাৎ, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক এর প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস ও দৃঢ় প্রত্যয় রাখবে—এমন বিশ্বাস, যাতে কোনো সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই। ইয়াক্বীন তথা দৃঢ় বিশ্বাস হলো পরিপূর্ণ ‘ইলম। আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ “মু’মিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ইমান আনে, তারপর কোনোরূপ সন্দেহ করে না, আর তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; বস্তুত তারাই সত্যবাদী।” (সূরাহ হুজুরাত: ১৫) রাসূল ﷺ বলেছেন, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল। যে এ বিষয় দুটোর প্রতি নিঃসন্দেহ বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৭)
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেখানে রাসূল ﷺ বলেছেন, مَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّة “এ বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয়, তাকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দাও, ‘অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই, সে জান্নাতী হবে’।” (সাহীহ মুসলিম, হা/৩১)
·
তৃতীয় শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা (বিশুদ্ধতা) থাকতে হবে, যাতে কোনো শির্ক ও রিয়া (লৌকিকতা) থাকবে না। এটা যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ময়লা আবর্জনা থেকে আমলকে স্বচ্ছ ও পরিষ্কারকরণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আর তা এক আল্লাহর নিমিত্তে করা যাবতীয় ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়তকে বিশুদ্ধ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেছেন, أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ দ্বীন (ইবাদত ও আনুগত্য)।” (সূরাহ যুমার: ৩) মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ “তাদেরকে কেবল এই নির্দেশই দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহরই ইবাদত করে।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ: ৫)
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন, أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِه “কেয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) লাভে সবচেয়ে ধন্য হবে সেই ব্যক্তি, যে একনিষ্ঠচিত্তে (আন্তরিক বিশুদ্ধতা সহকারে) لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ (আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই) বলে।” (সাহীহ বুখারী, হা/৯৯) এখানে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাকে শর্ত করা হয়েছে।
·
চতুর্থ শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে সত্যতা থাকতে হবে, যাতে কোনো মিথ্যা থাকবে না। আর তা এভাবে বাস্তবায়িত হবে যে, বান্দা স্বীয় অন্তরে সত্য জেনে এই কালিমাহ বলবে। যেহেতু জবানের সাথে অন্তরের কথা মিলে যাওয়ার নামই হলো সত্যতা। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ মুনাফিক্বদের নিন্দা করে বলেছেন, إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ “মুনাফিক্বরা (কপট ব্যক্তিরা) যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল’। আল্লাহ জানেন, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, নিশ্চয় মুনাফিক্বরা মিথ্যাবাদী।” (সূরাহ মুনাফিকূন: ১)
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। কেননা তারা মুখে যা বলে, অন্তরে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ বলেছেন, الم. أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ. وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ “আলিফ, লাম, মীম। লোকেরা কি মনে করে, ‘আমরা ইমান এনেছি’ বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল, অবশ্যই আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; আর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী, আর কারা মিথ্যাবাদী। (যদিও আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলার পূর্বেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।)।” (সূরাহ ‘আনকাবূত: ১৩)
আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, একদা নাবী ﷺ বলেছেন, مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّار “যে কোনো বান্দা আন্তরিক সত্যতা সহকারে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল’- তবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।” (সাহীহ বুখারী, হা/১২৮) এখানে সত্যাবাদিতাকে শর্ত করা হয়েছে।
·
পঞ্চম শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে ভালোবাসা থাকতে হবে, যাতে কোনো ঘৃণা থাকবে না। আর তা এভাবে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পাঠক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ﷺ, দ্বীনে ইসলামকে এবং আল্লাহর নির্দেশাবলি পালনকারী ও আল্লাহর সীমারেখার কাছে (নিজেদের) স্থগিতকারী মুসলিমদেরকে ভালোবাসবে। আর যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র বিরোধিতা করে এবং তা ভঙ্গকারী শির্ক ও কুফুরীতে লিপ্ত হয়, তাদেরকে ঘৃণা করবে। ইমানের ক্ষেত্রে ভালোবাসা শর্ত হওয়ার প্রমাণ হলো, মহান আল্লাহর এই বাণী, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ “আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালোবাসার মতো তাদেরকে ভালোবাসে। কিন্তু যারা মুমিন, তারা আল্লাহকে (সবকিছুর চেয়ে) অনেক বেশি ভালোবাসে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৬৫) রাসূল ﷺ বলেছেন, أَوْثَقُ ﻋُﺮَﻯ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ الْحُبُّ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ وَالْبُغْضُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ “ইমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আর আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা।” (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৮৬; সিলসিলাহ সাহীহাহ; হা/১৭২৮; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব; হা/৩০৩০; সনদ: হাসান লি গাইরিহী)
·ষষ্ঠ শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রতি গ্রহণ থাকতে হবে, যাতে কোনো প্রত্যাখ্যান থাকবে না। অবশ্যই এই কালিমাহকে অন্তর ও জবান দ্বারা যথার্থভাবে গ্রহণ করতে হবে। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ গ্রহণ করার কারণে মুক্তি দিয়েছেন, তাদের ঘটনা তিনি কুরআনে বর্ণনা করেছেন। আর যারা তা গ্রহণ করেনি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের প্রতি তাঁর শাস্তি ও তাদের বিনাশসাধনের কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا ۚ كَذَٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ “এরপর আমি আমার রাসূলদেরকে রক্ষা করি এবং তাদেরকেও যারা ইমান এনেছে। এভাবে মুমিনদেরকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য।” (সূরাহ ইউনুস: ১০৩)
আল্লাহ্ তা‘আলা মুশরিকদের ব্যাপারে বলেছেন, إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ. وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ “তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই’, তখন তারা অহংকার করত (প্রত্যাখ্যান করত)। আর তারা বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির কথা মেনে আমাদের উপাস্যগুলো বর্জন করব’?” (সূরাহ সাফফাত: ৩৫-৩৬)
·
সপ্তম শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে আনুগত্য থাকতে হবে, যাতে কোনো অবাধ্যতা থাকবে না। সুতরাং অবশ্যই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথককে আল্লাহর শরিয়তের অনুবর্তী হতে হবে, তাঁর বিধান মেনে চলতে হবে এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে। এর মাধ্যমে সে হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যথাযথ ধারণকারী। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ ۗ وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ “আর যে ব্যক্তি মুহসিন (সৎকর্মশীল/আন্তরিক/একনিষ্ঠ) হয়ে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে, সে তো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কার্যের পরিণাম (ফলের জন্য) আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়।” (সূরাহ লুক্বমান: ২২)
·
এগুলো হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্ত। এর দ্বারা শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শব্দসমূহ গণনা ও মুখস্থ করাই উদ্দেশ্য নয়। কত সাধারণ মানুষই না আছে যাদের মধ্যে এই শর্তগুলো একত্রিত হয়েছে, আর তারা তা সংরক্ষণও করেছে। যদিও তাদেরকে শর্তগুলো বলতে বলা হলে, তারা তা ভালোভাবে বলতে পারবে না। অপরদিকে শর্তগুলোর কত হাফিয (মুখস্থকারী)-ই না রয়েছে, যাদের মুখ দিয়ে তা তিরবেগে বের হয়। অথচ তাদের অনেককেই তুমি দেখবে যে, তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ভঙ্গকারী বিষয়ের মধ্যে পতিত হচ্ছে।
অতএব কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো, ‘ইলম (জানা) ও আমলের সমন্বয় ঘটা। যাতে করে এর মাধ্যমে ব্যক্তি সত্যিকারের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ধারক ও বাহকদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাওহীদী কালিমাহর যথাযথ অনুসরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কেবলমাত্র আল্লাহই এর তৌফিক দিতে পারেন। সুতরাং আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব, তিনি যেন আমাদেরকে এগুলো বাস্তবায়ন করার তৌফিক দেন। যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই।
[‘শর্তাবলি’ শিরোনামের আওতায় এ পর্যন্ত যে কথাগুলো উল্লিখিত হয়েছে, তার সবগুলো ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “ফিক্বহুল আদ‘ইয়াতি ওয়াল আযকার” শীর্ষক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্র.: ফিক্বহুল আদ‘ইয়াতি ওয়াল আযকার; পৃষ্ঠা: ১৫৪-১৫৮; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরি (১ম প্রকাশ)।]
·
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ, এই নিবন্ধের পাঠকদেরকে যথাযথভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে ধারণ করার তৌফিক দান করুন। আর আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে
মূল: ‘আল্লামাহ ড. ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ)·
তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো সর্বপ্রথম ওয়াজিব। এই কালিমাহ মুসলিম হওয়ার সোপানস্বরূপ। বান্দার সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে এই তাওহীদী বাক্যটির ওপর। কারণ এই বাক্যটি বাস্তবায়নের জন্যই মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমানে অসংখ্য মুসলিম দাবিদার ব্যক্তি মুখে এই কালিমাহ পাঠ করলেও তা কথা ও কাজে বাস্তবায়ন করে না। অনেকে তো এর উদ্দিষ্ট অর্থ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নয়। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, অত্র নিবন্ধে নিবন্ধক হিসেবে উল্লিখিত শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব আল বদর (হাফিযাহুল্লাহ) এর গ্রন্থ থেকে শুধু শর্তের আলোচনা নেওয়া হয়েছে। বাকি আলোচনা অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত হয়েছে।
·
মাহাত্ম্য:
তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অনেক গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য আছে। তার মধ্যে কতিপয় নিম্নে উল্লিখিত হলো।
১. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান ইসলামের সবচেয়ে বড়ো রুকন (খুঁটি)। এই কালিমাহর সাক্ষ্যদান ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَان “ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল—এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ সম্পাদন করা এবং ৫. রমজানের রোজা পালন করা।” [সাহীহ বুখারী, হা/৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১৬]
২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সর্বপ্রথম ওয়াজিব। সকল আমলের ওপরে রয়েছে এর গুরুত্ব। যেহেতু এর রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও বিরাট মাহাত্ম্য। এই কালিমাহর দিকেই সবার আগে দা‘ওয়াত দিতে হয়। নাবী ﷺ মু‘আয বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّه “তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছে যারা কিতাবধারী (ইহুদি-খ্রিষ্টান)। সুতরাং, তাদেরকে আহ্বান জানাবে এ সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১৯; মূল শব্দ (টেক্সট) মুসলিমের]৩. সকল রাসূলের দা‘ওয়াতের মূল বিষয় ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দিকে আহ্বান। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ “আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি ওহি (প্রত্যাদেশ) করিনি যে, ‘আমি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। কাজেই তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো’।” [সূরাহ আম্বিয়া: ২৫]
৪. স্বয়ং আল্লাহ, ফেরেশতাবর্গ এবং জ্ঞানীগণ এই কালিমাহর সাক্ষ্য দেন। মহান আল্লাহ বলেন, شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং ফেরেশতাবর্গ ও ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও (সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,) তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই; তিনি মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী।” [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১৯]
৫. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক সফলকাম ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। নাবী ﷺ দা‘ওয়াত দিয়ে লোকদেরকে বলতেন, قُوْلُوْا لَا إلٰه إِلَّا الله تُفْلِحُوْا “তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বল, সফলকাম হবে।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০২২; সাহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হা/১৫৯; সনদ: সাহীহ]
·
অর্থ:সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি ‘আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, আমাদের সম্মানিত পিতা, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্যদানের অর্থ: একথা বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ‘ইবাদতের হকদার নয়। এটা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। অতএব, ‘লা ইলাহা’ অংশটুকুতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের উপাসনার হকদার হওয়াকে অস্বীকার করা হয়েছে। আর ‘ইল্লাল্লাহ’ অংশটুকুতে একমাত্র আল্লাহকেই সকল উপাসনার হকদার সাব্যস্ত করা হয়েছে। সর্বোপরি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সঠিক অর্থ হলো—‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই’।
‘বিহাক্বক্বিন’ শব্দটিকে উহ্য হিসেবে ‘লা’ এর খবর (বিধেয়) মানা আবশ্যক। ‘মাউজূদুন’ শব্দটিকে ‘লা’ এর খবর (বিধেয়) মানা বৈধ হবে না। কারণ তা বাস্তবতার বিপরীত। পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত অসংখ্য উপাস্যের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। (যদি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ করি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,) তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে, তা মূলত তাঁরই ইবাদতের শামিল! এটা সবচেয়ে বড়ো বাতিল বিশ্বাস। এটা ওয়াহদাতুল উজূদে বিশ্বাসী তথা সর্বেশ্বরবাদীদের ‘আক্বীদাহ (বিশ্বাস)। আর সর্বেশ্বরবাদীরাই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড়ো কাফির।
এই কালিমাহর অনেক ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। তার মধ্যে নিম্নে কিছু উল্লিখিত হলো।
(ক) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। এটা বাতিল অর্থ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় সত্য বা মিথ্যা যারই ইবাদত করা হয় সেই হলো আল্লাহ! যেমনটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।
(খ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো স্রষ্টা নেই। এটা কালিমাহর আংশিক অর্থ। কিন্তু এ কালিমাহ দিয়ে শুধু এ উদ্দেশ্য করা হয়নি। কারণ, এর মাধ্যমে শুধু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ্ তথা প্রভূত্বের ক্ষেত্রে একত্ববাদ সাব্যস্ত করা হয়। আর শুধু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা তাওহীদবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এটা মুশরিকদের তাওহীদ। [রাসূল ﷺ এর যুগের মুশরিকরা এই তাওহীদকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তাদেরকে মু’মিন বলে গণ্য করা হয়নি, বরং তারা কাফির হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। (সূরাহ মু’মিনূন: ৮৬-৮৯) – অনুবাদক।]
(গ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো: আল্লাহ্ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই। এটাও উক্ত কালিমাহর আংশিক অর্থ। এটা এ কালিমাহর প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। কারণ কেউ যদি বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহকে এক বলে গণ্য করে, সেই সাথে গাইরুল্লাহকে (আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কাউকে) আহ্বান করে এবং গাইরুল্লাহর জন্য ইবাদতের কিয়দংশ নির্ধারণ করে, তবে সে তাওহীদবাদী নয়। উপরিউক্ত ব্যাখ্যাগুলো বাতিল অথবা অপূর্ণ। প্রচলিত কিছু বইয়ে এ সকল ভ্রান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বলে আমরা এ বিষয়ে (লোকদেরকে) সতর্ক করলাম।
ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ এবং মুহাক্বক্বিক্ব (গবেষক) ‘আলিমগণের নিকটে এ কালিমাহর সঠিক ব্যাখ্যা হলো—“লা মা‘বূদা বিহাক্বক্বিন ইল্লাল্লাহ্” তথা ‘আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই’। যেমনটি পূর্বে গত হয়ে গেছে।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ; পৃষ্ঠা: ৪৫-৪৬; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
·
শর্তাবলি:মুসলিমের জন্য এটা জানা ওয়াজিব যে, শুধুমাত্র মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করলে তা তার কথকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে না। বরং আবশ্যিকভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র হক (অধিকার/দাবি) ও ফারয (কর্তব্য) আদায় করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত তার শর্তসমূহও পূরণ করতে হবে। সকল মুসলিমই জানে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়—এমন প্রত্যেক ইবাদত ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হবে না, যতক্ষণ না তার শর্তসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা হচ্ছে। তাই নামাজ তার নির্দিষ্ট শর্তাবলি ব্যতিরেকে কবুল হয় না, হজ তার নির্দিষ্ট শর্তাবলি ছাড়া কবুল হয় না। সমস্ত ইবাদত কুরআন-সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট শর্ত ছাড়া কবুল হয় না। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কবুল করা হবে না, যতক্ষণ না বান্দা কুরআন-সুন্নাহ থেকে জ্ঞাত কালিমাহর শর্তাবলি পূরণ করছে।
আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্তাবলির প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি এবং সেগুলো সংরক্ষণ করার আবশ্যকিয়তার প্রতি ইশারা করেছেন। তাঁরা ইঙ্গিত করেছেন, এসব ছাড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ গৃহীত হবে না। যেমন:
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। একদা তাঁকে বলা হলো, ﺇﻥ ﻧﺎﺳﺎً ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﻓﺄﺩَّﻯ ﺣﻘﻬﺎ ﻭﻓﺮﺿﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ “লোকেরা বলছে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে সে জান্নাতে যাবে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং তার হক ও ফরজসমূহ আদায় করবে, সে জান্নাতে যাবে।”
প্রসিদ্ধ আরব কবি ফারাযদাক্ব স্বীয় স্ত্রীকে দাফন করছিলেন, তখন হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে বলেন, ﻣﺎ ﺃﻋﺪﺩﺕَ ﻟﻬﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟ ﻗﺎﻝ : ﺷﻬﺎﺩﺓ ﺃﻥ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﻣﻨﺬ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺳﻨﺔ . ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ : ﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟﻌُﺪﺓ، ﻟﻜﻦَّ ﻟـِ ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) ﺷﺮﻭﻃﺎً، ﻓﺈﻳﺎﻙ ﻗﺬﻑَ ﺍﻟﻤﺤﺼﻨﺎﺕ “এ দিনের জন্য কী প্রস্তুত করেছ?” সে বলল, ‘সত্তর বছর যাবৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যকে (শাহাদাহ) প্রস্তুত করছি।’ হাসান বাস্বরী বললেন, “চমৎকার প্রস্তুতি! কিন্তু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কতিপয় শর্ত রয়েছে। সুতরাং, সাবধান! সতী-সাধ্বী নারীকে কখনো অপবাদ দিবে না।”
ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, যে তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, أَلَيْسَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلاَّ لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ وَإِلاَّ لَمْ يُفْتَحْ لَكَ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে প্রত্যেক চাবির দাঁত রয়েছে, তুমি যদি দাঁত বিশিষ্ট চাবি নিয়ে আস, তবে তোমার জন্য তা (জান্নাতের দরজা) খোলা হবে। অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না।” তিনি দাঁত বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্তের দিকে ইশারা করেছেন। [উপরিউক্ত তিনটি আসারই হাফিয ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর “কালিমাতুল ইখলাস” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। দ্র.: ইবনু রাজাব আল হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ), কালিমাতুল ইখলাসি ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা; পৃষ্ঠা: ১৪; আল-মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৩৯৭ হিজরি (৪র্থ প্রকাশ)।]
কুরআন ও সুন্নাহ অনুসন্ধান শেষে ‘আলিমগণের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, সাতটি শর্ত ব্যতীত ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ গ্রহণযোগ্য নয়। সেগুলো হচ্ছে—
১. কালিমাহর অর্থ জানা। অর্থাৎ, কালিমাহর মধ্যে কী অস্বীকার ও কী সাব্যস্ত করা হয়েছে তা জানা, যা তার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতার বিপরীত।
২. কালিমাহর মধ্যে যা সাব্যস্ত করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, যা কালিমাহ সম্পর্কে সংশয় ও সন্দেহ পোষণ করার বিপরীত।
৩. কালিমাহর প্রতি পূর্ণ ইখলাস (একনিষ্ঠতা/বিশুদ্ধতা) প্রদর্শন করা, যা তার অর্থ ও দাবি বাস্তবায়ন করার সময় শির্ক ও রিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিপরীত।
৪. কালিমাহকে মনে-প্রাণে সত্য হিসেবে জানা, যা তার প্রতি মিথ্যারোপ করার বিপরীত।
৫. কালিমাহয় সাব্যস্ত সত্তা (আল্লাহ) ও তাঁর শরিয়তকে ভালোবাসা, যা তাঁর প্রতি ও তাঁর শরিয়তের প্রতি কোনো প্রকার ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার বিপরীত।
৬. কালিমাহর অর্থ ও দাবির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, যা তার অর্থ ও দাবির প্রতি অবাধ্যতার বিপরীত।
৭. কালিমাহর অর্থ ও দাবি সাদরে গ্রহণ করা, যা তার অর্থ ও দাবির বাস্তবায়নকে প্রত্যাখ্যান করার বিপরীত।
কতক ‘আলিম এই সাতটি শর্তকে একটি পঙ্ক্তির মধ্যে একত্রিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন,
ﻋِﻠْﻢٌ ﻳَﻘِﻴﻦٌ ﻭَﺇِﺧْـﻼَﺹٌ ﻭَﺻِﺪْﻗُﻚَ ﻣَﻊَ ~ ﻣَﺤَﺒَّﺔٍ ﻭَﺍِﻧْﻘِﻴَﺎﺩٍ ﻭَﺍﻟﻘَﺒُﻮﻝِ ﻟَﻬَﺎ
“জ্ঞান, দৃঢ় বিশ্বাস, ইখলাস, আর সত্যবাদিতা,
সাথে আছে ভালোবাসা, অনুসরণ ও গ্রহণ করা।”
আমরা কুরআন ও হাদীসের কিছু দলিল উল্লেখপূর্বক সংক্ষেপে এই প্রত্যেকটি শর্তের উদ্দেশ্য বিশদভাবে জানব।
·প্রথম শর্ত: নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় দিক নিরূপণ করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র উদ্দিষ্ট অর্থ সম্পর্কে জানা, যা তার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতা তথা না জানার বিপরীত। আর এটা এভাবে হবে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক জানবে—এই কালিমাহ আল্লাহ ব্যতীত যাবতীয় উপাস্যের জন্য সকল প্রকার ইবাদতকে নাকচ করে এবং এক আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, আর (সবকিছুর জন্য) আমরা কেবল তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরাহ ফাতিহাহ: ৫) অর্থাৎ, আমরা তোমারই ইবাদত করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করি না। আর আমরা তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না।
মহান আল্লাহ বলেছেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ “সুতরাং জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই।” (সূরাহ মুহাম্মাদ: ১৯) মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ “আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, তারা সুপারিশের অধিকারী নয়, তবে সে ব্যতীত যে সজ্ঞানে (জেনেশুনে) সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” (সূরাহ যুখরুফ: ৮৬)
মুফাসসিরগণ বলেছেন, তবে সে ব্যতীত, যে সজ্ঞানে (জেনেশুনে) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য দেয়। অর্থাৎ, তারা তাদের জবানে ও অন্তরে যার সাক্ষ্য দেয়, তার অর্থ সম্পর্কে তারা জানে। সাহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ “যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যুবরণ করল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৬) নাবী ﷺ এখানে ‘ইলমকে শর্ত করলেন।
·
দ্বিতীয় শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে, যাতে কোনো সন্দেহ সংশয় থাকবে না। অর্থাৎ, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক এর প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস ও দৃঢ় প্রত্যয় রাখবে—এমন বিশ্বাস, যাতে কোনো সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই। ইয়াক্বীন তথা দৃঢ় বিশ্বাস হলো পরিপূর্ণ ‘ইলম। আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ “মু’মিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ইমান আনে, তারপর কোনোরূপ সন্দেহ করে না, আর তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; বস্তুত তারাই সত্যবাদী।” (সূরাহ হুজুরাত: ১৫) রাসূল ﷺ বলেছেন, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল। যে এ বিষয় দুটোর প্রতি নিঃসন্দেহ বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৭)
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেখানে রাসূল ﷺ বলেছেন, مَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّة “এ বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয়, তাকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দাও, ‘অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই, সে জান্নাতী হবে’।” (সাহীহ মুসলিম, হা/৩১)
·
তৃতীয় শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা (বিশুদ্ধতা) থাকতে হবে, যাতে কোনো শির্ক ও রিয়া (লৌকিকতা) থাকবে না। এটা যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ময়লা আবর্জনা থেকে আমলকে স্বচ্ছ ও পরিষ্কারকরণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আর তা এক আল্লাহর নিমিত্তে করা যাবতীয় ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়তকে বিশুদ্ধ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেছেন, أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ দ্বীন (ইবাদত ও আনুগত্য)।” (সূরাহ যুমার: ৩) মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ “তাদেরকে কেবল এই নির্দেশই দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহরই ইবাদত করে।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ: ৫)
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন, أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِه “কেয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) লাভে সবচেয়ে ধন্য হবে সেই ব্যক্তি, যে একনিষ্ঠচিত্তে (আন্তরিক বিশুদ্ধতা সহকারে) لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ (আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই) বলে।” (সাহীহ বুখারী, হা/৯৯) এখানে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাকে শর্ত করা হয়েছে।
·
চতুর্থ শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে সত্যতা থাকতে হবে, যাতে কোনো মিথ্যা থাকবে না। আর তা এভাবে বাস্তবায়িত হবে যে, বান্দা স্বীয় অন্তরে সত্য জেনে এই কালিমাহ বলবে। যেহেতু জবানের সাথে অন্তরের কথা মিলে যাওয়ার নামই হলো সত্যতা। আর এ কারণেই মহান আল্লাহ মুনাফিক্বদের নিন্দা করে বলেছেন, إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ “মুনাফিক্বরা (কপট ব্যক্তিরা) যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল’। আল্লাহ জানেন, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, নিশ্চয় মুনাফিক্বরা মিথ্যাবাদী।” (সূরাহ মুনাফিকূন: ১)
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। কেননা তারা মুখে যা বলে, অন্তরে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ বলেছেন, الم. أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ. وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ “আলিফ, লাম, মীম। লোকেরা কি মনে করে, ‘আমরা ইমান এনেছি’ বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল, অবশ্যই আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; আর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী, আর কারা মিথ্যাবাদী। (যদিও আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলার পূর্বেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।)।” (সূরাহ ‘আনকাবূত: ১৩)
আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, একদা নাবী ﷺ বলেছেন, مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّار “যে কোনো বান্দা আন্তরিক সত্যতা সহকারে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল’- তবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।” (সাহীহ বুখারী, হা/১২৮) এখানে সত্যাবাদিতাকে শর্ত করা হয়েছে।
·
পঞ্চম শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে ভালোবাসা থাকতে হবে, যাতে কোনো ঘৃণা থাকবে না। আর তা এভাবে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পাঠক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ﷺ, দ্বীনে ইসলামকে এবং আল্লাহর নির্দেশাবলি পালনকারী ও আল্লাহর সীমারেখার কাছে (নিজেদের) স্থগিতকারী মুসলিমদেরকে ভালোবাসবে। আর যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র বিরোধিতা করে এবং তা ভঙ্গকারী শির্ক ও কুফুরীতে লিপ্ত হয়, তাদেরকে ঘৃণা করবে। ইমানের ক্ষেত্রে ভালোবাসা শর্ত হওয়ার প্রমাণ হলো, মহান আল্লাহর এই বাণী, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ “আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালোবাসার মতো তাদেরকে ভালোবাসে। কিন্তু যারা মুমিন, তারা আল্লাহকে (সবকিছুর চেয়ে) অনেক বেশি ভালোবাসে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৬৫) রাসূল ﷺ বলেছেন, أَوْثَقُ ﻋُﺮَﻯ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ الْحُبُّ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ وَالْبُغْضُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ “ইমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আর আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা।” (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৮৬; সিলসিলাহ সাহীহাহ; হা/১৭২৮; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব; হা/৩০৩০; সনদ: হাসান লি গাইরিহী)
·ষষ্ঠ শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রতি গ্রহণ থাকতে হবে, যাতে কোনো প্রত্যাখ্যান থাকবে না। অবশ্যই এই কালিমাহকে অন্তর ও জবান দ্বারা যথার্থভাবে গ্রহণ করতে হবে। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ গ্রহণ করার কারণে মুক্তি দিয়েছেন, তাদের ঘটনা তিনি কুরআনে বর্ণনা করেছেন। আর যারা তা গ্রহণ করেনি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের প্রতি তাঁর শাস্তি ও তাদের বিনাশসাধনের কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا ۚ كَذَٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ “এরপর আমি আমার রাসূলদেরকে রক্ষা করি এবং তাদেরকেও যারা ইমান এনেছে। এভাবে মুমিনদেরকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য।” (সূরাহ ইউনুস: ১০৩)
আল্লাহ্ তা‘আলা মুশরিকদের ব্যাপারে বলেছেন, إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ. وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ “তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই’, তখন তারা অহংকার করত (প্রত্যাখ্যান করত)। আর তারা বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির কথা মেনে আমাদের উপাস্যগুলো বর্জন করব’?” (সূরাহ সাফফাত: ৩৫-৩৬)
·
সপ্তম শর্ত: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার ক্ষেত্রে আনুগত্য থাকতে হবে, যাতে কোনো অবাধ্যতা থাকবে না। সুতরাং অবশ্যই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথককে আল্লাহর শরিয়তের অনুবর্তী হতে হবে, তাঁর বিধান মেনে চলতে হবে এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে। এর মাধ্যমে সে হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যথাযথ ধারণকারী। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ ۗ وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ “আর যে ব্যক্তি মুহসিন (সৎকর্মশীল/আন্তরিক/একনিষ্ঠ) হয়ে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে, সে তো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কার্যের পরিণাম (ফলের জন্য) আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়।” (সূরাহ লুক্বমান: ২২)
·
এগুলো হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শর্ত। এর দ্বারা শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র শব্দসমূহ গণনা ও মুখস্থ করাই উদ্দেশ্য নয়। কত সাধারণ মানুষই না আছে যাদের মধ্যে এই শর্তগুলো একত্রিত হয়েছে, আর তারা তা সংরক্ষণও করেছে। যদিও তাদেরকে শর্তগুলো বলতে বলা হলে, তারা তা ভালোভাবে বলতে পারবে না। অপরদিকে শর্তগুলোর কত হাফিয (মুখস্থকারী)-ই না রয়েছে, যাদের মুখ দিয়ে তা তিরবেগে বের হয়। অথচ তাদের অনেককেই তুমি দেখবে যে, তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ভঙ্গকারী বিষয়ের মধ্যে পতিত হচ্ছে।
অতএব কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো, ‘ইলম (জানা) ও আমলের সমন্বয় ঘটা। যাতে করে এর মাধ্যমে ব্যক্তি সত্যিকারের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ধারক ও বাহকদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাওহীদী কালিমাহর যথাযথ অনুসরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কেবলমাত্র আল্লাহই এর তৌফিক দিতে পারেন। সুতরাং আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব, তিনি যেন আমাদেরকে এগুলো বাস্তবায়ন করার তৌফিক দেন। যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই।
[‘শর্তাবলি’ শিরোনামের আওতায় এ পর্যন্ত যে কথাগুলো উল্লিখিত হয়েছে, তার সবগুলো ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “ফিক্বহুল আদ‘ইয়াতি ওয়াল আযকার” শীর্ষক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্র.: ফিক্বহুল আদ‘ইয়াতি ওয়াল আযকার; পৃষ্ঠা: ১৫৪-১৫৮; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরি (১ম প্রকাশ)।]
·
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ, এই নিবন্ধের পাঠকদেরকে যথাযথভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে ধারণ করার তৌফিক দান করুন। আর আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে
0 Comments